Noted litterateur and renowned professor/academician, Narayan Gangopadhyay (Bengali: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়) (real name: Taraknath) was born in Baliadanga in Dinajpur, East Bengal, on February 7, 1919. His ancestral home was in Basudebpur, Barishal. In 1941, he stood first class first in M.A. in Bengali from Calcutta University and later went on to earn his D.Phil for his research in the field of short stories in Bengali literature. He taught at the City College and later at the Calcutta University.
His first brush with writing came during his student years, when he tried his hand at poetry. Later he made his mark as a writer of short stories, novels and plays and also emerged as a critic and journalist. In the early 1940s he wrote a three-part novel called Upanibesh. He also regularly contributed to Shonibarer Chithi and was felicitated by Basumati the famous literary magazine. In his later years, he wrote biting satire on the prevalent social and political issues for Desh under the pseudonym Sunando. Among his famous works are Bitangsho, Surjasarathi, Timirtirtha, Alor Sarani, Ek-tala, Rammohan (play), Chhotogalpo Bichitra, Padasanchar, Samrat O Sreshthi, Ankush, Sahityo O Sahityik, Bangla Galpobichitra, Chhotogalper Seemarekha and Rabindranath. Two of his plays, Bhadate Chai and Agantuk, which were enacted by writers, were highly acclaimed.
Narayan Gangopadhyay is also the creator of Tenida and his adventures—which remain till date most popular among children's literature.
১০ ই আগষ্ট, ২০২৪- নিখাদ বাঙালির 'পটেদা সমগ্র' পড়তে গিয়ে খেয়াল করলাম আমার সবচেয়ে প্রিয় টেনিদাকে ভীষণ মিস করছি আমি। হতচ্ছাড়া পন্ডিত ক্যাবলা, পিলের জ্বরে ভোগা প্যালারাম, আর এদিকে ঢাকাই হাবলা ওরফে হাবলু সেন এদের কথা কিভাবে বেমালুম ভুলে গেলাম আমি! অথচ একসময় আমার ধ্যান জ্ঞান ছিল এই টেনিদা। বই ছেড়ে একসময় ইউটিউবে অনেক কার্টুন ও দেখেছি এদের। স্মৃতির তাড়নায় তাই আবার খুলে বসলাম প্রিয় 'টেনিদা সমগ্র'। আর প্রথমেই 'চারমূর্তি'। চলুক এভাবে কিছুদিন টেনিদা.....
চার মূর্তি পটলডাঙার বিখ্যাত বা লোকসমাজে কুখ্যাত চার চারটে কিম্ভূতকিমাকার শরীরে স্বভাবে মেজাজে একদমই মিল নেই এমন চারজনের গল্প;টিকালো নাকের টেনিদা,প্যালাজ্বরের প্যালা,ঢাকাইয়া হাবুল আর কাজে কৌশলী কেতাদুরস্ত ক্যাবলার গল্প।
সারাদিন কাজের মধ্যে দুই ;খাই আর আড্ডা দিতে দিতে দিনের শেষে বাড়ি গিয়ে শুই এই দুটো কাজ ছাড়া এক ক্যাবলা আর হাবুলের পড়াশোনার জন্য ফি বছর প্রমোশনের সাথে একজামিনারের বিষদৃষ্টি কিংবা টেনিদার মতে তার সুকীর্তির জন্য বছরান্তে একই ক্লাসে পড়ে থেকে পরাজয়ে ডরে না বীর প্রবাদ বাক্যের মান রেখে চলছে।প্যালাজ্বরে চমকে ওঠার পিলের জন্যই হোক বা মাথার মধ্যে পড়া বাদে পৃথিবীজোড়া ফন্দিফিকিরে বন্দী প্যালাই হলো ভজহরি মুখোজ্জে্য একমাত্র আদর্শ সঙ্গী।
চারমুখী স্বভাবের এই চারটি প্রাণীর ঝন্টিপাহাড়ে ঝটিকা সফরের যে ধুন্ধুমার কান্ড কারখানায় শেষ মেষ বাবা ঘুটঘুটানন্দ ,গজেশ্বর আর শেখ ঢুন্ডুরামের জাল নোটের যে জারিজুরি ফাঁস হয়েছে তাতে কেউ কোনদিন আগেভাগে না বললে বুঝতেই পারবে না ইহা না কি টেনিশর্মার গড়ের মাঠে গোরা পিটিয়ে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার প্রথম গল্প।
সময় সুযোগ হলে ঐ লাল পলাশের আগুনের ফাগুনে পাখা মেলে ঢু মারতে পারেন ঝন্টিপাহাড়ের জঙ্গলে। গোবরডাঙার দিব্বি পুরো ব্যাপারটাই,
শেষ কবে কোন বই পড়ে এমন ভাবে হেসেছি মনে করতে পারছি না। :p শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটা ডায়লোগে হাসির উপাদান। আর বিশেষ করে প্যালার ওরকম সহজ সরল বাচনভঙ্গি দেখে আরো মজা লাগলো। আমি ভেবেছিলাম টেনিফা গোয়েন্দা গোছের কেউ হবে। কিন্তু এ দেখি চাপাবাজ!! কেউ হাসতে চাইলে বইটা নিশ্চিন্তে তুলে নিতে পারেন!বাকি বই গুলোও পড়ে ফেলব।
পটলডাঙার চারমূর্তি। টেনিদা। প্যালা। হাবুল। আর ক্যাবলা। আড্ডা দেয় চাটুজ্জেদের রোয়াকে।
টেনিদা ব্রাহ্মণ সন্তান তাই ক্ষিদেটা একটু বেশিই। আর চারমূর্তির লিডারও। তাই চাটুজ্জেদের রোয়াকে বসে আলু কাবলি কি তেলেভাজা, সবটাতেই ভাগ তার বেশি লাগে। প্যালা। পালাজ্বরে ভোগে আর পিলেটা টনটন করে ওঠে। পটল দিয়ে শিঙি মাছের ঝোল আর টেনিদার গাট্টা খায়। কিন্তু ফেল করে প্যালাই টেনিদার যোগ্য শিষ্য। হাবুল। প্যালার গাট্টা খাওয়ার সময় ঢাকাই ভাষায় কমেন্ট্রিটা হাবুলই দেয়। আর মাঝে মাঝে বলে ওঠে, গুল! ক্যাবলা। সবার জুনিয়র কিন্তু ক্লাসে ফার্স্ট বয়। টপাটপ পাস করে আর উপরের ক্লাসে উঠে যায়।
এই চারজনকে নিয়ে উপন্যাস। তাও আবার এডভেঞ্চার উপন্যাস। যোগসর্পের হাড়ির সাথে ভূতের হাসি, সবটাই আছে। মন খারাপ থাকলে কিংবা থাকলে রিডিং ব্লক, এই উপন্যাসের তুলনা হয়না। টেনিদার তুলনা হয় না। তাই কুরুবকের মতো বকবক না করে পড়া না থাকলে পড়ে ফেলুন। মনটা ভারী ভালো হয়ে যাবে। গোবরডাঙার দিব্বি!
❝মেসোমশাই আবার খ্যাঁক-খ্যাঁক করে হেসে বললেন, তার মানে তোমরা যাবে না? ভয় ধরছে বুঝি? টেনিদা এবার তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। তারপর সাঁ করে একটা বুক-ডন দিয়ে বললে, ভয়? দুনিয়ায় আছে বলে আমি জানিনে।- নিজের বুকে একটা থাপ্পড় মেরে বললে, কেউ না যায়- হাম জায়েঙ্গা! একাই জায়েঙ্গা! ক্যাবলা বললে, আর যখন ভূতে ধরেঙ্গা? তখন ভূতকে চাটনি বানিয়ে খায়েঙ্গা!- টেনিদা বীররসে চাগিয়ে উঠল।❞
স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে হুট করেই একটা ছোটখাটো ট্যুরের প্ল্যান করে বসে পটলডাঙার "চার বীরপুরুষ" (নিজেরাই বীর ভাবে আরকি)। ঝণ্টিপাহাড়ে ভুতকে একহাত দেখে নিবে বলা টেনিদাও যখন বাংলোতে ভুতুড়ে কারবার দেখে প্রায় অক্কা পাবার জোগাড় তখন ক্যাবলা পণ করে বসে শেষ না দেখে ছাড়বে না! অন্যদিকে প্যালা আর হাবুলের ভয়ে তো জান যায় যায় অবস্থা। দলপতি হয়ে কি পালিয়ে যাওয়া টেনিদাকে শোভা পায়? পালিয়ে জীবন বাঁচাবে নাকি মুখোমুখি হবে ভুতের?
টেনিদা সমগ্রের প্রথম উপন্যাস "চার মূর্তি"। বই নিয়ে বলার আগে চলুন চরিত্রগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় হয়ে যাক। পটলডাঙার চার কিংকর্তব্যবিমূঢ় চরিত্র, ১. টেনিদা: দলের সভাপতি হলে কি হবে জানটা যে বড়ই দুর্বল। বছরের পর বছর একই ক্লাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গর্বের সাথে। তবে আরও একটা গুন আছে যা সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়, চোখের পলকে সাবাড় করে ফেলে গন্ডায় গন্ডায় খাবার। ২. প্যালা: ফেলুদার যেমন তোপসে সঙ্গী তেমনি টেনিদার সঙ্গী প্যালা, গল্পকথকও। পাঠককে বলবে একের পর এক হাস্যকর মজার অভিযানের গল্প। ৩. হাবুল: ঢাকাইয়া পোলা কিন্তু জুড়ে গেছে টেনিদার সঙ্গে। ৪. ক্যাবলা: বয়সে সবচেয়ে ছোট হলেও দলের মধ্যে যদি কেউ ঘটে বুদ্ধি ও সাহস ধরে তো সে ক্যাবলায়। টেনিদাকে কথার জালে ফাঁসানোর যোগ্যতাও শুধু তারই আছে।
কিশোর উপন্যাস আমার কাছে এমন এক জনরা যে যখনই পড়ি না কেন ভালো লাগেই। মানব মস্তিষ্কের এক অংশ সারাজীবনই এভারগ্রিন বা বাচ্চামিতে ভরা থাকে বলেই মনে হয় আমার। প্রাণখোলা হাসি কার না ভালো লাগে? আর এই কাজটাই নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় করছেন টেনিদা সিরিজের মাধ্যমে। ক্ষুরধার মস্তিষ্কের একদল বন্ধুদের হাতে দুষ্টুদের পরাস্ত হতে দেখেছি কিন্তু একদল হাঁদারামের হাতে? জি হ্যাঁ, বোকাসোকা ও ভিতু তিন সদস্য এবং অতি বুদ্ধিমান ও দুঃসাহসিক ছোকরাদের গল্পই বলা হয়েছে "চার মূর্তি"-তে। যারা ঘুরতে যেয়ে পড়ে যায় বিপাকে। একদিকে ভয়ে কাঁপা-কাঁপি তো অন্যদিকে নিজেকে বীর পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে নেমে পড়ে এক অদ্ভুত অভিযানে কিন্তু কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে আসে! টেনিদার ভয়, প্যালার সংশয়, হাবুলর বোকামি আর ক্যাবলার টিপুনি কাটা দেখে অনেক হেসেছি। ���েষে যেয়ে প্যারার স্বপ্নের বিবরণ... এমন আগামাথাহীন অদ্ভুত মজার স্বপ্ন তো আমরাও দেখি। অনেক অনেক অনেক হেসেছি। মজার একটা বই নিঃসন্দেহে। যারা সেই ফেলে আসা কৈশোরকে মিস করেন বইটা একবার পড়ে দেখতে পারেন।
বহুদিন বাদে পড়লাম। প্রথমদিকের উপন্যাস, তাতে অ্যাডভেঞ্চার বেশি, টেনিদারা সকলেই এখানে incubation পর্যায়ে। সবার প্রাণাধিক প্রিয় চারমূর্তি হয়ে উঠতে এখনও কিছুটা সময় আছে। কোথাও গিয়ে তাই ভালো লাগে, আবার লাগেও না। তিন, সাড়ে-তিন তারা আরকি। পারলে ছবিটাও দেখে নিন।
পটলডাংগা পাড়ার বিখ্যাত চার মূর্তি। সভাপতি টেনিদা, হাবলু সেন, ক্যাবলা আর কথক প্যালারাম।
কাহিনীর শুরু হয় পরীক্ষার পর সবাই কোথায় ঘুরতে বের হবে সেটা নিয়ে। এর মাঝে ক্যাবলার মেসোমশায়ের উপদেশে আর তার কেনা বাসায় ছুটি কাটাতে। তবে সমস্যা হল কিনা বাসায় ভূতের বড়ই উতপাত। তা কি আর ৪ মূর্তি থোড়ায় কেয়ার করে?
নির্দিষ্ট দিনে ট্রেনে চেপে রওনা দিল তারা। তাদের সাথে একই কেবিনে উঠলেন এক বাবা। যার সাথে কিনা মস্ত হাড়ি ভর্তি রসগোল্লা। বাবা ঘুমালে চার মূর্তি সেটাও সাবার করে দেয়।
নির্দিষ্ট সময়ে তারা পৌছায় বাংলোতে। পথি মধ্যে আরো অনেক কান্ডকারখানা ঘটাতে ঘটাতে। কিন্তু এসেই তারা পড়ে ভূতের পাল্লায়। কাহিনী এগোতে থাকে আর চার মূর্তির নির্ভেজাল বিনোদন চলতে থাকে।
টেনিদা সিরিজের প্রথম গল্প। আসলেই কি? কারন অন্যান্য সমগ্রের মতন এটাতে টাইম লাইন ধরে সাজানো নেই। তাতে খুব যে অশুদ্ধ হয়ে গেছে এমনও না। সামান্য যদি কারো রসবোধ থাকে তবে তারা মজা পাবেই এটা পড়ে।
কেউ শৈশবে, নিদেন পক্ষে কৈশোরে এ সমস্ত বই হাতে তুলে দিলো না যে কেন! আপনারা নিজেরা পড়ুন বা না পড়ুন, বাচ্চাদের এসব বই পড়ে শোনাতে, উপহার দিতে কার্পণ্য করবেন না।
আমি মনে হয় সেই হতভাগা বাঙালীদের একজন, যে সুনন্দের জার্নাল পড়ে টরে, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়কে ভালোবেসে এরপর উল্টোপথে টেনিদার কাছে পৌঁছেছে, আর তারও অনেক পরে একদিন হঠাৎ কী মনে করে বইখানা হাতে তুলে পড়তে শুরু করেছে।
বহুদিন পর মন খুলে হাসলাম। যদিও টেনিদা পড়ার বয়স পেরিয়ে এসেছি অনেক আগেই, তাও প্রথম উপন্যাসটা পড়ে মনে হলো বাকিগুলোও পড়া দরকার। এরপর থেকে মন খারাপ থাকলে আগপিছ না ভেবে সোজা টেনিদা নিয়ে বসবো।
বই-এর বাজার একটু ঘাঁটলেই এমন প্রচুর-প্রচুর বই পাওয়া যাবে যারা "দমফাটা হাসির বই" বলে বিজ্ঞাপিত হয়| কিন্তু মাঝেমাঝে, সত্যিই এমন বই-এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়, যেগুলো পড়ার সময় হাসতে-হাসতে পেটে-কোমরে ব্যাথা তো হয়ই, বরং কারণে-অকারণে, স্থানে-অস্থানে তার অংশ-বিশেষ মনে পড়লেই হেসে উঠতে হয় (যার অবধারিত ফল হলো আশেপাশের রামগরুড়ের ছানাদের বিরাগভাজন হওয়া)! এটি তেমনই একটি বই, যাতে হাসি এবং সাসপেন্স লুকিয়ে রয়েছে লাইনে-বেলাইনে, আপনাকে মুহূর্মুহু আক্রমণে কুপোকাত করবে বলে| যদি না পড়ে থাকেন, তবে আপনি ধারণাও করতে পারবেন না আপনি কী মিস করছেন!
বাসায় নতুন বই না থাকায় পুরোনো বই খুঁজে খুঁজে পড়ছি। শেষ কবে কোনো বই পড়ে এতো হেসেছি ভুলেই গেছি। রিভিউ আর কী দিবো? আমাদের পটলডাঙার টেনিদাকে কে না চেনে? তার সাথে ঢাকাইয়া বাঙাল হাবুল সেন, পালাজ্বরের পিলে নিয়ে পটল দিয়ে শিঙি মাছের ঝোল খাওয়া প্যালারাম আর সবচেয়ে ভালো স্টুডেন্ট ক্যাবলা। একেবারে জমে ক্ষীর!
স��কুলের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে আমাদের প্রধান চার চরিত্র ঠিক করলো তারা ঘুরতে যাবেন। তাদের সভাপতি টেনিদা, পড়াশোনায় ভালো ঢাকাই বাঙাল হাবুল সেন, সবচেয়ে ভালো ছাত্র ক্যাবলা আর গল্প কথক পালারাম বাঁডুজ্যে যে এবার থার্ড ডিভিশনে পাশ করলেও করতে পারে। আর টেনিদা ঠিক কবে, কোন পরীক্ষা দিয়েছে এটা কেউ বলতে পারে না।
ক্যাবলাদের বাসায় তার মেসোমশাইয়ের আমন্ত্রণে, তারা ঠিক করে ঝণ্টিপাহাড় যাবে। ট্রেনে স্বামী ঘুটঘুটানন্দের মিষ্টি খেয়ে ফেলার মধ্য দিয়ে অ্যাডভেঞ্চারের শুরু। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে তারা ঝণ্টিপাহাড় পৌঁছায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর থেকেও নানাভাবে তাদের কেউ ভয় দেখাতে চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে হাবলু গায়েব হয়ে যায়।
আসলে কে তাদের ভয় দেখাচ্ছে? আর কেনই বা ওদের উপর এতো ক্ষোভ? আর হাবলুকে কি পাওয়া যাবে?
হাস্যরসে ভরা, অ্যাডভেঞ্চারে টইটম্বুর এক বই। মুহূর্তেই আমি চলে গিয়েছিলাম ছোটোবেলার গরমের ছুটির দিনগুলোতে। যখন গল্পের ডানায় ভর দিয়ে কল্পনা আর বাস্তবের জগতে ঘুরে বেড়াতাম। কিশোর উপন্যাস, হাস্যরসাত্মক গল্প, মজাদার চরিত্র আর স্বল্প পরিসর- সব গুণে গুণান্বিত এই বই। এক বসায় শেষ করে ফেলতে পারবেন আর যারা সহজপাঠ্য আর মজার বই খুঁজছেন, তাদের জন্য একদম আদর্শ। বিশেষ করে, স্কুলের বাচ্চাদের জন্য আদর্শ।
মনে আছে স্কুলের ফাইনাল শেষের শীতের দুপুরগুলোর কথা? দুপুরের শেষভাগ থেকে বিকেল আসার সময়টায় আকাশে যখন হালকা রোদ্দুর ঘুরপাক খায়, কুয়াশা নামবে নামবে, বাতাসে একটা দুঃখ দুঃখ গন্ধ- তখন কম্বলের নিচে গুটিসুটি মেরে গল্পের বইয়ের পাতার পর পাতা উল্টে যাওয়া রুদ্ধশ্বাসে!কখনো ফেলুদা, কখনো তিন গোয়েন্দা,কখনো কাকাবাবুতে ডুব মারা।টেনিদা ঠিক সেই দুপুর ফুরানো বিকেলগুলোর জন্য উপযুক্ত একটা সমগ্র।শীত আসছে।অবসাদ আবার ভিড় করছে।বাইশ বছরের আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে 'চার মূর্তি' পড়তে পড়তে শব্দ করে হাসছি।হুট করে মনে পড়লো-সময় মানবমনের চেয়েও নিষ্ঠুর এক কারিগর।'অপেক্ষা'কে সে চেনেনা।সেই ব্যাডমিন্টন কিংবা বরফ পানির বিকেলগুলো আর ফেরেনা, একত্রিশে ডিসেম্বরে পাবলিশ হওয়া রেজাল্টের ভয়ে আত্মা শুকায়না,সন্ধ্যেবেলার ফুচকা আড্ডা বসেনা,সত্যিকারের হাসিমুখেরা তাড়া করেনা, সময়ের লুপহোল আর চলেনা...
বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি টেনিদা। অন্যসবার চেয়ে ভিন্ন এই টেনিদা। এক চড়ে কান কানপুরে পাঠান তিনি। অকুতোভয়, দুঃসাহসী, বীরপুরুষ বলে দাবি করা মানুষটা ভুতের ভয়ে একেবারেই সিঁটিয়ে যান। বইটা পড়ার ইচ্ছা অনেক কাল থেকেই ছিল। বহুবার পিডএফ নিয়েও পড়তে পারিনি। সমগ্র কিনে পড়ার ইচ্ছাটা ছিল প্রবল। সমগ্র কেনা হয়েছে তাই এইবার পড়া হলো এইটা। দারুণ একখানা বই!
হুটহাট করেই রিডিং ব্লক ধরে মাঝেমধ্যে। হাতে একের পর এক বই,পাতা উলটে যাই, মন বসেনা। খারাপ লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। ঠিক সেইসব মনখারাপ করা মুহূর্তগুলো ভালো করে কিশোরবেলার এই বই
বইপাড়ায় টেনিদা এক পরিচিত চরিত্র। তবে আমার সাথে টেনিদার কালি-কাগজে পরিচয় এই প্রথম। বাতিঘরে গিয়ে একদিন টেনে নিয়েছিলাম নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'চারমূর্তি' নামের বইটা। কিন্তু তখনও জানতাম না স্বয়ং টেনিদা এই বইয়ের মুখ্য চরিত্র। সেদিন অবশ্য কয়েক পাতা পড়ার পর সময় স্বল্পতায় উঠে আসতে হয়েছিল। এরপর বেশ ক'বার বাতিঘর গিয়েও বইটা খুঁজে পাইনি। শেষমেশ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে বইটা নিজের করে নিলাম। পটলডাঙার চারমূর্তি-টেনিদা,প্যালা,ক্যাবলা আর হাবুল সেন। ম্যাট্রিক শেষ করে যখন অলস সময় পার করছিল তখনই ক্যাবলার মেসোমশাইয়ের দাওয়াতে চলে যায় ঝণ্টিপাহাড়ে মেসোর বাংলোয়। কিন্তু সেখানে নাকি ভূত আছে। "পরাজয়ে ডরে না বীর" ভাবনার মতো "ভূতের ভয়ে দমবে না বীর" ভাব নিয়ে রওনা তো দিয়ে দিলো কিন্তু ভূতের ভয় কি সত্যিই পেয়েছিল? বইটা কিশোর বয়সে পড়লে হয়তো বেজায় মজা পেতাম। অনেকের কাছেই শুনলাম হেসে লুটোপুটি খেয়ে গেছেন। বুড়োকালে এখানের অনেক কিছুই বিরস লাগল।কিন্তু হাসির খোরাক ছিলনা একথা বলবো না। বইয়ের অনেক জায়গাতেই মিটমিটিয়ে হেসেছি। তবে শেষদিকে এসে বেশ মজা পেয়েছি। কেমন একটু এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার ভাব চলে এলো! ব্যক্তিভেদে বইয়ের স্বাদ ভিন্ন রকম হতে পারে। যারা এখনো টেনিদার সাথে পরিচিত হননি টুকুশ করে ছোট এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। হয়তো আপনারাও হেসে লুটোপুটি খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
২০১৪ ক্লাস ৬ এ পড়ার সময় সেকায়েপ ও বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র এর পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির কল্যাণে বইটি পড়েছি। ৪ টার দিকে স্কুল থেকে ফিরেই পড়া শুরু করি কয়েক পাতা পড়েই ঘোর লেগে যায়, বিকেলের খেলা বাদ দিয়ে, রাতের পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে সেদিনই বইটা শেষ করেছিলাম। সেই প্রথম পটলডাঙার টেনিদা, প্যালা, হাবলু, ক্যাবলার সাথে পরিচয়, প্রত্যেককেই নিজের বন্ধুদের মধ্যেই কোনো চরিত্র। বইটা শেষ করেছিলাম একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে লেখনী, হাস্যরস, কাহিনী, চরিত্র সবই কিশোর মনে অনেক ভালোলাগা সৃষ্টি করেছিলো। ভাবছিলাম বাপরে এমন বইও হয়, এত দারুণ কিভাবে। মজার ব্যাপার বইটা পড়ার দুই কি তিন বছর পরে জেনেছিলাম এটা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত টেনিদা সিরিজ।
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা নারায়ণ বাবুকে, নিজের অজান্তেই আমার মত অগণিত বাঙালির কিশোর বেলাকে একটু বেশিই সুন্দর করার জন্য। আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে টেনিদা, প্যালা কিংবা হাবলু, ক্যাবলা হয়ে।
বেশ কয়েকদিন থেকে মন খারাপ। বই পড়া তো দূরে থাক,কোন কাজ ঠিক মত করতে পারিনি। মন খারাপ থাকলেও চেষ্টা করি বই পড়ার,তাতে কিছুটা লাভ হয় বটে। কিন্তু এবার তাও করতে মন চাইল না,কারণ হাতের কাছে যে বইগুলো সব কয়টা কেমন জানি কঠিন ঠেকছিল। অগত্যা, একদিন সম্পূর্ণ রকম বই পড়া থেকে বিরত ছিলাম।
কালকে সন্ধ্যায় শুয়ে আছি, হঠাৎ চোখ গেল টেনিদা সমগ্রের উপর। টেনিদা'র গল্পগুলো আগে পড়া ছিল,কিন্তু উপন্যাস একটাও পড়া হয়নি। ভাবলাম,একটা উপন্যাস পড়ি কারণ গল্পগুলো পড়ে বেশ মজা পাইছ��লাম।
যেই ভাবা, সেই কাজ। শুরু করলাম " চারমূর্তি "। একটানা ৫০ পৃষ্ঠা পড়ে নিলাম। বাকিটুকু সকালে উঠেই শেষ করলাম। যতক্ষন পড়েছি,হাসতে হাসতে শেষ। বিশেষ করে প্যালার কান্ডগুলো। এত চমৎকার এবং রসগর্ভ বর্ননা যে পাঠক হাসতে বাধ্য। দারুণ, দারুণ।
গল্প নিয়ে কিছু বললাম না,কারণ এটা সবার পড়া হয়ে গেছে অনেক আগেই।