Jump to ratings and reviews
Rate this book

উন্মাদ আশ্রম

Rate this book
বাহিরে বৃষ্টি অবিরাম কোলাহল করছে, ভিতরে আর্দ্র সন্ধ্যা, লোকটার আকস্মিক আবির্ভাবে সন্ধ্যা আরো গাঢ় হয়ে গেল। জহির লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো, এটা কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব?

লোকটা হেসে বললো, ক্যামনে কই বাপ? হইতে পারে এই দুনিয়াটাই একটা স্বপ্ন। ঘুম থেইকা উইঠা দেখবেন, আপনে অন্য কোনো দুনিয়ার অন্য এক মানুষ। ঘুম ভাঙলে এই জীবন, এই জীবনের সব সুখ, দুখ, আফসোস সব ঝাপসা হইয়া যাইবো। মনে হইবো কী আজব একটা স্বপ্ন!

এগুলো সত্য কথা?

সত্যও না মিথ্যাও না, এইগুলা হইলো কল্পনা। ধরেন এমনও হইতে পারে, এই দুনিয়া, চাঁদ, সুরুজ, কোটি কোটি তারা সব ছোটো একটা মাইয়ার মাথার উকুনের পেটের মইধ্যে আছে। মাইয়ার মা উকুনটারে দুই নখের মাঝখানে ধইরা রাখছে, উকুনটা ফুটানো পর্যন্তই এই পুরা জগৎ সংসারের আয়ু। আমাগো লক্ষ কোটি বছর তাগো কাছে একটা নিঃশ্বাসের সমান।

112 pages, Hardcover

Published February 7, 2025

8 people are currently reading
118 people want to read

About the author

Obayed Haq

11 books286 followers
ওবায়েদ হকের জন্ম ১৯৮৬ সালে। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকেন কুমিল্লায়।
প্রকাশিত বইসমূহ-
উপন্যাস-
তেইল্যাচোরা (২০১৪)
নীল পাহাড় (২০১৫)
জলেশ্বরী (২০১৬)
কাঙালসংঘ (২০২১)
আড়কাঠি (২০২৪)
জল নেই পাথর (২০২৪)
উন্মাদ আশ্রম (২০২৫)
গল্প সংকলন-
একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা (২০১৪)
নেপথ্যে নিমকহারাম (২০১৭)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
14 (7%)
4 stars
56 (30%)
3 stars
61 (33%)
2 stars
44 (24%)
1 star
7 (3%)
Displaying 1 - 30 of 57 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
February 23, 2025
ওবায়েদ হকের আগের উপন্যাসগুলো ভালো মন্দ যা-ই হোক, লেখার মধ্যে তাড়াহুড়ো বা অযত্নের ছাপ ছিলো না কখনো। কিন্তু তার নতুন উপন্যাস "উন্মাদ আশ্রম" এ অমনোযোগ ও অবহেলার ছাপ সুস্পষ্ট। প্রথমত, নামের সঙ্গে বইয়ের কোনো মিল নেই। কাহিনি শুরু হচ্ছে একভাবে,একটু পর পর কোনো ইঙ্গিত না দিয়ে আবার অন্যদিকে গল্প মোচড় নিচ্ছে, বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! মনে হয়, মাঝখানের কিছু কিছু অংশ ছাপার সময় বাদ পড়ে গেছে। পাপী মানুষের মধ্যে অনুশোচনা আসা ও তার প্রায়শ্চিত্তের গল্প বাংলা বা বিশ্বসাহিত্য কোথাও বিরল নয়। তারপরও এ ধরনের কাহিনি পড়তে খারাপ লাগার কথা নয়। কিন্তু ওবায়েদ হক জোরপূর্বক আবেগ ঢুকিয়ে তার সহজাত দক্ষতার অপচয় করেছেন। সব মিলিয়ে পুরাই হতাশ।
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
February 20, 2025
ব্যাপারটা এমন না যে হাতের কাছে পড়ার মতো কোনো বই ছিল না। বরং পড়ার মতো এত বই জমে গেছে যে কবে শেষ করতে পারবো তার ঠিক নেই। এর মাঝেই কেন এই বইটা টেনে নিলাম পড়ার জন্য আমি নিজেও জানি না। লেখকের 'আড়কাঠি' পড়ার পর পণ করেছিলাম তার আর কোনো বই পড়বো না। সেই পণ ভঙ্গ করে 'উন্মাদ আশ্রম' পড়ার পর মনে হলো আমার সিদ্ধান্ত আসলেই ঠিক ছিল।

পুরোপুরি পরিকল্পনাহীন একটা লেখা। লেখক কাকে কেন্দ্র করে বা কী কেন্দ্র করে লিখতে চেয়েছেন আমি বুঝতে পারিনি। কখনো এখানে, কখনো ওখানে টাইপ আধাখেঁচড়া লেখা। ওবায়েদ হকের লেখা পড়তে আরাম, এটাই একমাত্র ইতিবাচক দিক।
যেকোনো লেখায় আরোপিত কিছুই আমি পছন্দ করি না। লেখক তার লেখায় সবসময় ঠেসেঠুসে বিষণ্নতা ঢুকাতে চান, যা চরম বিরক্তিকর। আর তিনি তার গল্পের চরিত্রদের মুখ দিয়ে যেসব 'জীবনদর্শন' আওড়ান তা আমার কাছে ইঁচড়েপাকা বাচ্চাদের মুখের পাকা পাকা কথা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
February 19, 2025
পইড়া ফালাইলাম এই বছরের উইশলিস্টের মোস্ট ওয়ান্টেড বই ওবায়েদ হকের 'উন্মাদ আশ্রম'। বই রিলিজড হইছে ৭ ফেব্রুয়ারি। হাতে পাইতেই ঘ্যাটাঘ্যাট।

বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা দেইখা বোঝা যায় না বইটার সারবস্তু আসলে কী। অবশ্য যারা ওবায়েদ হক এর বই জন্য অধীর আগ্রহে বইসা থাকেন তাদের কাছে সারবস্তু জানাটা মূল ব্যাপার না, ওবায়েদ হক নামটাই যথেষ্ট। তবু আমি একটু সারবস্তু বলার চেষ্টা করি।

বইয়ের মূল চরিত্র জহির নামে এক লোক। ধান্দাবাজ টাইপের লোক। সমাজের চাপেই হোক কিংবা নিজগুণেই হোক, তার ভেতরে কোনো নীতি নৈতিকতা নেই। জীবন কাটে তার ধান্দাবাজির পয়সায়ই। এই জহির একদিন ঘটনাক্রমে আশ্রয় নেয় এক পরিত্যাক্ত বাড়িতে। পরিত্যাক্ত বলতে একদমই যে পরিত্যাক্ত তা নয়, কিছু অদ্ভুত মানুষের বাস সে বাড়িতে। সে বাড়িতে গিয়েই জীবনকে অন্যরকম ভাবে দেখার সুযোগ হয় জহিরের।

এইটা আসলে প্লটের একাংশ। এমনিতে মূল প্লট সংক্ষেপে বর্ণনা করা মুশকিল। আলাপ বিশাল হইলে তখন হয়তো বলা যাইতে পারে। ১১২ পেজের বই তো, প্লট আসলে কীরকম সেটা নাইলে বই থেকেই জানলেন, আমি বরং পইড়া কেমন লাগল সেইটা বলি।

ওবায়েদ হক কেমন লেখেন সেইটা তার পাঠকমাত্রই জানেন। এই উপন্যাসিকাতেও তেমনই লেখছেন। মানে সেই দারুণ ফিলোসফিক্যাল ডায়ালগ, গল্পকথকের উপলব্ধি, সাবলীল তরতর করে পড়ে যাওয়ার মতো লেখা; সবই ছিল।

তবে এই প্রথমবার আমার মনে হইলো ওবায়েদ হকের কাছে এক্সাক্ট কোনো গল্প ছিল না।

পড়তে গিয়ে আমার মনে হইছে তিনি কখনো ভাবছেন জহিরকে নিয়েই লিখবেন, সুন্দরমতো জহিরের ব্যাকস্টোরি লিখছেন, কোনো ঝামেলা নাই। আবার ঐ আজব বাড়িতে সকলের সাথে পরিচয় করায়ে দেয়ার টাইমে মনে হইছে তিনি আসলে ঐ বাড়ির লোকজনকে নিয়ে, বাড়িকে বেস করে লিখবেন। ঐখানকার সেটাপটাও ভালো ছিল। এর খানিক পর মনে হইলো, নাহ, তিনি আসলে জহিরের অন্যদিকটাতেই ফোকাস করে লিখবেন, বাড়ি মাড়ি বাদ৷ আর শেষটায় এসে তিনি একটা টুইস্ট দেয়ার যে ট্রাই করলেন সেইটা খুব একটা ভালো লাগে নাই। উনি বিষণ্ণতাটা ওনার লেখার মাঝে আনতে চাইতেছেন না অটো এসে যাইতেছে, বুঝতেছি না। 'জল নেই, পাথর' এ এই বিষণ্ণতাটা খুবই উপভোগ্য লাগছে আর এইটাতে যাও ছিটেফোঁটা আছে, একটু আরোপিতই লাগছে।

এমনিতে ওবায়েদ হক আলাদা আলাদা ভাবে প্রায় প্রতিটা পার্টই সুন্দর করে লিখছেন কিন্তু সব মিলায়া উপন্যাসিকাটা ফ্র‍্যাঙ্কেনস্টাইনের দানবের মত হইছে। এইখান থেকে এক খাবলা, ঐখান থেকে আরেক খাবলা, এইরকম আরকি। আলাদা আলাদা ভাবে ভালো কিন্তু পুরাটা মিলায়া দারুণ কিছু হয় নাই। মানে আগে থেকে গল্পের পরিণতি ঠিক না করে লিখলে যেমন হয় তেমন। এইটা আমি নিশ্চিত যে এরকম না, জাস্ট মনে হইলো আরকি। গল্প বা গল্পাংশ যাই বলি মনে দাগ কাটতে পারে নাই। যেই আমি এখনও গড়গড় করে 'নীল পাহাড়' বা 'জলেশ্বরী'র দুই চারটা উক্তি, ফিলোসফি বইলা যাইতে পারবো, এইখানে সেইরকম দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো কিছু পাই নাই।

সবমিলায়ে আমি খানিকটা হতাশ। এক্সপেক্টেশনের জন্যই হয়তো। তবে ওবায়েদ হক ৩৬৫ দিনে একটা গল্প বলবেন আর সেইটা নিয়া এক্সপেক্টেশন রাখবো না, এতটা সাধু হইতে পারি নাই এখনো।

বাই দি ওয়ে, বায়ান্ন ভালো কাজ করছে। এই বইয়ের দাম রাখছে ২৫২ টাকা যেইটা বইমেলাতেই ১৯০ টাকায় বিক্রি হইতেছে। মানে ওবায়েদ হকের বই চাইলে আরো মিনিমাম ১০০ টাকা বেশিতে বেচতে পারত, প্লাস ব্ল্যাক এডিশন, প্রিমিয়াম, কালেক্টর হ্যান ত্যান বের করতে পারত যেইটা ইদানিং থ্রিলার লেখক, প্রকাশকদের করতে দেখি। এই কাজটা যে বায়ান্ন করে নাই সেইটাকে একটা সাধুবাদ জানানো যাইতেই পারে।
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
February 26, 2025
যাক ভালো, লেখকের গ্রন্থপঞ্জিকার ম্যাচুরিটি সাধনে উন্মাদ আশ্রম ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ওবায়েদ হক ভালো লেখক, ভালো লিখবেন। তাই ট্র্যাডিশন ভেঙ্গে মাঝেমধ্যে এমন ফাইজলামির চমক দেওয়াও প্রয়োজন। এমন দুয়েকটা ফাউলমার্কা বই না থাকলে লেখকদের ফিটফাট-সদরঘাট দুই(দূরা)অবস্থার চাক্ষুষ হয় না। আড়কাঠি (কাঙালসংঘ/ জল নেই, পাথর ওইসব-ও সুবিধার না, তবে আড়কাঠি বেশি অসুবিধার!) পড়ার পর লেখক থেকে চমক-না-পাওয়ার প্রতীক্ষা দীর্ঘায়িত হল। এই আর কি!

( বি:দ্র: এইসব জীবন দর্শন এখন বালখিল্য লাগে )
Profile Image for Arpita Patra.
30 reviews5 followers
June 15, 2025
বইটি উৎসর্গ করেছেন "বুদ্ধিজীবী এবং প্রতারকদের" । এই একটা উৎসর্গ থেকেই ধারণা পাওয়া যায় লেখা কোনদিকে এগোতে চলছে।
গল্পের মূল চরিত্র জহির। জন্ম থেকে এক পা খাটো বলে সমাজে সবাই বাঁকা চোখে দেখে। বাবা মা মারা যাওয়ার পর নিজের সম্পত্তিটুকু বিক্রি করে শহরে আসে নতুন কাজের খোঁজে। সেখানে সে প্রথম ধোঁকা খেয়ে সমাজের চাপে দুষ্ট- ধান্দাবাজ লোকে পরিণত হয় । সময়ের সাথে সাথে সে এক পরিপূর্ণ ঠকবাজে পরিণত হয়।‌ একই রা��্তায় থাকার সুবাদে কাদের'র সাথে পরিচয় ঘটে । একদিন ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করে ছুরিবিদ্ধ কাদেরকে । তারপর জহিরের জীবন যেন মুহূর্তে বদলে যায় । সে আশ্রয় নেয় এক পরিত্যক্ত বাড়িতে। সেখানে কিছু অদ্ভুত মানুষের সাথে পরিচয় হয় , তার মধ্যে ছিল এক কাক - 'ভ্রমর' , যে কথা বলতে পারে । জহির আস্তে আস্তে নিজের পাপ বুঝতে পারে।‌ যাদের সে ঠকিয়েছে তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্ষমা চাইতে থাকে ।‌ তারফলে ভ্রমরের কালো পালক সবুজ হতে থাকে । এভাবেই কি জহিরের সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে ?
"আহা ! মৃত্যুই এত সুন্দর, জীবন না জানি কত সুন্দর ছিল ! "

পাঠ প্রতিক্রিয়া :- ওবায়েদ হকের লেখা প্রথম পড়া বই। লেখক সমাজের সকল দিক এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন প্রতিটি লাইন গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। লেখক জীবন তুলে ধরেছেন, সমাজে থাকা কিছু মানুষের গভীর পর্যবেক্ষণের ফলাফল । কিছু মানুষ অন্যকে ঠকিয়ে শান্তি লাভ করে , আর যখন মৃত্যু আসে তখন সেই পাপ প্রায়শ্চিত্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে লেখক তাদের কথা বলেছেন, বলেছেন সমাজের অনেক স্তরের মানুষের কথা । পুরো লেখা জুড়ে ছিল সূক্ষ্ম অনুভূতি, অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা । জহিরের বর্তমান আর অতীত সময় তুলে ধরতে গিয়ে অনেকটা‌ খাপছাড়া মনে হয়েছে আমার । কিন্তু লেখকের বাচনভঙ্গি আমার মন ছুঁয়ে গেছে , আশা করি লেখকের বাকি সব লেখাগুলো পড়ে ফেলবো ।
Profile Image for Mohammed Minhazz.
279 reviews13 followers
March 2, 2025
অদ্ভুত এক হতাশা নিয়ে শেষ করলাম ওবায়েদ হকের “উন্মাদ আশ্রম।” এত দুর্বল গল্পের গাঁথুনি, গদ বাঁধা বাক্যের গঠন আর প্রতি লাইনে লাইনে সস্তা দার্শনিক যুক্তিতর্ক বেশ বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছে। “নীল পাহাড়” আর “তেইল্ল্যাচোরা” পড়ে যে ওবায়েদ হককে আবিষ্কার করেছিলাম তার এই করুণ পরিণতি আমাকে কষ্ট দিয়েছে। এই গল্পের না ছিল কোন ভালো ফ্লো বা গতি আর না ছিল তেমন ভালো চরিত্রায়ন, একটা বাক্য শেষ করে দম নিতে হতো আর একটা বাক্য শুরু করার জন্য। আমি বুঝিয়ে বলতে পারবোনা আসলে সমস্যাটা কোথায় হয়েছে, লেখক হিসেবে কি তার ব্যাক‌ওয়ার্ড এভুলেশন হচ্ছে? 


বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম আর হতাশা নিয়ে শেষ করলাম। আমি এটা স্বীকার করছি যে অন্যদের হয়তো ভিন্নমত থাকতে পারে তবে আমি যে লেখকের প্রেমে পড়েছিলাম তার ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট পাইনি এই উপন্যাসে তাই একটু ব্যথিত হয়েছি আর কিছুনা। ভবিষ্যতে সজ্ঞানে ওবায়েদ হকের আর কোনো উপন্যাস কিনছি না।



[উন্মাদ আশ্রম 

—ওবায়েদ হক 

পৃষ্ঠা : ১১২

রেটিং : ২.৫/৫]



— মিনহাজ উদ্দিন 

(০২.০৩.২৫)
Profile Image for Md Omar Faruk.
36 reviews3 followers
February 8, 2025

একটা পা শুকিয়ে গেছে বলে জহিরের দিকে সবাই আড় চোখে তাকায়। ঐ দৃষ্টিতে তার জন্যে সহানুভূতি যতটা ছিলো প্রেম ততটা ছিলোনা। তিন হাতপা নিয়ে সে পুরুষের খাতায় নাম উঠাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে বুঝতে পারে- নারীরা স্বীকৃতি না দিলে বলকেরা পুরুষ হয়ে উঠতে পারেনা।

বাবা মাকে হারিয়ে ভাগ্য অন্বেষণে শহরে এসেই ধোঁকায় পড়ে জমানো সবকিছু হারিয়ে ফেলে। সময়ের আবর্তনে শিকার জহির একসময় শিকারী হয়ে উঠে। সময়ে সময়ে স্থান পরিবর্তন করে জীবনে অনেক মানুষকে ঠকিয়েছে, নি:স্ব করে দিয়েছে অনেককে। কিন্তু একটি ঘটনা তার জীবনে ঘুরিয়ে দেয়।

হঠাৎ একরাতে ঘুম জড়ানো চোখ খুলে দেখে তার বিছানায় ছুরি বিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে তার যোগ্য উত্তরসূরী- কাদের। এরপর থেকেই জহিরের সবকিছু এলোমেলো হয়ে উঠে। আশেপাশে মৃত মানুষদের দেখতে পায়, একটি কাক— যাকে অন্য কেউ দেখতে পায়না এবং যে তার সকল কথা জানে যা— কথা বলছে তার সাথে , নাম ভ্রমর। মনে হচ্ছে পাগল হওয়ার প্রথমিক পর্যায়ে আছে জহির, যেন স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যবর্তী এক দুনিয়া।

ছোট কিছু ঘটনা, দুনিয়ার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেয়। অনুধাবন করতে পারে এখনও মানুষের জন্যে মানুষের মনে রয়েছে ভালোবাসা।
একসময় লোকজনকে লুটে নেয়ার সময় বিবেক তার আরামে ঘুমিয়ে থাকতো, আড়মোরা পর্যন্ত ভাঙতো না। কিন্তু এখন সেগুলোর জন্যে অনুশোচনা হয়। প্রায়শ্চিত্ত জহির করতে পারবেনা তবে ক্ষমা চেয়ে ও অনুশোচনার মাধ্যমে হয়তো নিজের অশান্ত মনকে কিছুটা শান্তি দিতে পারবে। তাই যাদের লুটেছে তাদের প্রত্যেকের দোরগোড়ায় উপস্থিত হয় জহির।
তার এই পরিবর্তনের সাথে সাথে ভ্রমরের কালো পালকগুলো সবুজে পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনই কি তার ক্ষমা পাওয়ার ইঙ্গিত! নাকি এই পাপই একসময় তাকে গ্রাস করে নিবে?




যারা ওবায়েদ হক পড়েছেন, লেখকের থেকে তাদের প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকে। তার গল্প তৈরি হয় সাধারণ মানুষদের ঘিরে নিয়ে কিন্তু লেখনী দৃঢ়।

উনার লেখা ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগার সবগুলো কারনই এই বইয়ে রয়েছে। গল্পগুলো হয় একদম সাধরণ এবং উপমার যথার্থ ব্যবহার, পরিমিত ও আড়ম্বরহীন লেখা।
সম্মিলিত মানব চরিত্র, সমাজ বাস্তবতা ও ব্যর্থতা, ধনী-গরীবের সমাজ দেখা- এই nuance গুলো উপমা ও হাস্য পরিহাসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা এবং মানব মনের অন্ধকার এবং সমাজের অসঙ্গতিগুলোকে খোঁচা দেয়া।
চরিত্র কম, গল্পের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন চরিত্রের অবির্ভাব করেছেন এবং গল্প বুনা শেষে সব চরিত্রের উপস্থিতির সার্থকতা দেখিয়েছেন।
শেষটা ছিলো আমার কাছে প্রিডিক্টেবল। তবে ওভারঅল ভালো লেগেছে।

জনরা ঠিক জানি না- জাদুবাস্তবাতার ছোঁয়া রয়েছে। প্রচ্ছদটা অসাধারণ এবং গল্প অনুযায়ী যথার্থ-ই।
Profile Image for Fårzâñã Täzrē.
274 reviews19 followers
March 4, 2025
একটা কথা প্রচলিত আছে, "বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা"। এই কথাটা কেন বললাম জানেন ধরুন আপনি লুকানোর চেষ্টা করছেন। খুঁজতে খুঁজতে এমন একটা জায়গায় গিয়ে পড়েছেন যেখানে নাকি আগে থেকেই সব পাগলের বাস। শুনে হকচকিয়ে গিয়ে থাকলে আরেকটা টুইস্ট দেই, আপনি কাকের সাথে অনর্গল কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরে হ্যাঁ আপনি কাকের কথা সব বুঝতে পারছেন। নাহ আমি একদম পাগলের প্রলাপ বকছি না। চলুন ঘুরে আসি "উন্মাদ আশ্রম" থেকে।

আগে চলুন এই গল্পের প্রধান চরিত্র জহিরের কথা শুনি। জহিরের কথা বলতে চাইলে হয়তো আপনাদের মনে একটু মায়া জাগতে পারে ছেলেটার জন্য। জন্ম থেকেই পায়ে সমস্যা একটু।বাবা ক্যান্সারে গত হয়েছে। বাবার চিকিৎসা করাতে জমি থেকে শুরু করে মায়ের গয়নার ত্যাগ করতে হয়েছে। এরপর বেচারার মা-ও এরপর বেশিদিন টেকেনি। হয়তো বাবার জন্য শোকে কিংবা বাবার সুস্থতার জন্য যে গহনা বিসর্জন দিতে হয়েছে, তার জন্য। ভাইবোনের সাথে যোগাযোগ নেই জহিরের। যা সম্পদ ছিল নিজের ভাগের, সব বিক্রি করে শহরে এসেছে নতুন কিছুর আশায়। জহিরের চোখে রঙিন স্বপ্ন শহরের বুকে হয়তো জীবিকা নির্বাহের পথও খুঁজে পাবে সে। এই শহরে টাকা ওড়ে। ঢাকা জাদুর শহর।

কিন্তু হায়রে! জহিরের ভাগ্যের চাকা সচল হবার বদলে দিন দিন অচল হচ্ছে। চাকরির খোঁজে জুতার তলা ক্ষয় হচ্ছে শুধু চাকরি আর মেলে না। মেসে ভাড়া বাকি, খাবার ঠিকমতো জোটে না। জীবন বড় পরীক্ষা নিচ্ছে তার। হতাশার অন্ধকারে হঠাৎ করেই যেন আলোর দেখা মিললো স্বপনদার সাথে পরিচয় হয়ে। দুজনে ঘটনাচক্রে একই মেসে উপর তলা নিচের তলা এভাবে থাকে কখনো আলাপ হয়নি। এবার আলাপ হতেই জহিরের চোখে পুরনো স্বপ্ন আবার জেগে ওঠে। এবার বুঝি একটা চাকরি হবে। জীবন বদলে যাবে। হাতে কিছু টাকা ছিল, বিশ্বাস করে তুলে দিয়েছিল স্বপন���ার কাছে কিন্তু হায়! শেষে সে ধোঁকা দিয়ে দিলো জহিরকে। টাকাগুলোও পাওয়া গেল না।

জহির এরপর অসৎ পথ বেছে নিয়েছে টিকে থাকার জন্য। মানুষজনের থেকে ঠকিয়ে, জোর করে রোজগারের পথ বেছে নেয় সে। একটা সঙ্গীও জোটে একসময় কাদের। দুজনে মিলে লোক ঠকিয়ে রোজগার ভালোই চলছিল তাদের। কিন্তু একটা রাত জীবনের সকল হিসেব গন্ডগোল করে দিলো। দুজনে মিলে জহিরের ঘরে আকন্ঠ ম*দ খেল,গল্প করলো এবং একসময় ঘুমিয়ে গে��� দুজনে। কিন্তু হঠাৎ করেই জহিরের ঘুম ভাঙলো মাঝরাতে। কাদেরের ছু*ড়ি গাথা নিথর দেহ দেখে জহির চমকে ওঠে। কে মা*রলো! পু*লিশ তো এবার তাকে সন্দেহ করবে। জহির পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

আর ওই যে শুরুতে বললাম বাঘ হয়ে সে ঢুকছে ঘোগের বাসায়। এই পরিত্যক্ত বাড়িতে যারা থাকে তারা সবাই পাগল। একজন আছে কবি, আরেকজন চিত্রশিল্পী। বাড়ির মালিক আরো বড় পাগল। ওদিকে জহিরের মনে বারবার কেউ বলছে পালাও! সেই কাকটাও একই কথা বলছে। এবার এই উন্মাদ আশ্রম ছেড়ে জহির কীভাবে পালাবে? আর সবচেয়ে বড় কথা কাদেরকে কে মা*রলো? খুঁজে বের করতে হবে জহিরকেই। জীবনের জটিল ধাঁধায় জড়িয়ে আমরা একসময় নিজের জীবনের সবকিছু সুক্ষ্মভাবে চিন্তা করে থাকি। জহিরের ভাগ্যে এরপর কী ঘটতে চলেছে সেটাই জানার পালা।

🌼◾পাঠ প্রতিক্রিয়া ◾🌼

ওবায়েদ হকের বই এই প্রথমবার পড়লাম সত্যি বলতে। বই ঠিকই কালেকশনে আছে কিন্তু কেন জানি না এতদিন পড়াই হয়নি। তবে এবারের বইমেলায় লেখকের থেকে সামনাসামনি অটোগ্রাফ আর ফটোগ্ৰাফ দুটোই নেয়ার সুযোগ ঘটেছে তো ভাবলাম বইমেলার নতুন বইটাই পড়া যাক। এবং ছোট এই বইটির লেখা খুবই সাবলীল কিন্তু ভাবের অবতরণ করেছেন লেখক তার বাক্যের মাধ্যমে। সবচেয়ে যেটা চোখে পড়েছে উপমা প্রয়োগ খুবই চমৎকার। একটা বাক্য কত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় এখানে যেন সেটাই চলেছে প্রতি লাইনে। আমার এই দিক থেকে ভালো লেগেছে বেশ। এবং এই ধরনের বই আস্তে ধীরে পড়তে বেশ আরাম।

“উন্মাদ আশ্রম” বইটির মধ্যে লেখক যেভাবে ভাবের অবতরণ করেছেন মনে হয়েছে সমাজের চিরচেনা প্রেক্ষাপট। সাধারণ পরিচিত যুবক জহির। যার জীবন শেষ হয়ে গেছে কিছু অর্থলোভী মানুষের জন্য। আবার তার জীবনের কিছু অজানা অধ্যায় যেটা নিয়ে তাকে অনুতাপ করতেও দেখা যায় নিজ কৃতকর্মের। লেখক প্রতিটি অধ্যায়কে বেশ অন্যরকম করে ফুটিয়ে তুলেছেন বলা যায়।

লেখকের গল্প বলার ধরন অন্যরকম। নিজের গল্পে তিনি যেন বোঝাতে চেয়েছেন অনেক নিগুঢ় কথা। চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ব্যাপক প্রতিটি অধ্যায়ে। চরিত্রগুলোর কথার ফাঁকে ফাঁকে কিছু এমন লাইন ছিল যেগুলো আসলে যেন বলে যায় জীবনের অনেক কিছু। একজন জীবনে ব্যর্থ যুবক, একটি বাড়ি যেখানে বসবাস সব উন্মাদের। বিচিত্র তাদের খেয়াল, আবার সবচেয়ে বড় রহস্যময় ঘটনা কাদেরের মৃ*ত্যু। কিছুটা জাদু বাস্তবতার ধারণাও পেয়েছি তাহলে এই বইটিকে পুরোপুরি সামাজিক উপন্যাস বলা যায় না। লেখক অবতারণা করেছেন কয়েকটি জনরার মিশেল। শেষটায় আরেকটু আশা করেছিলাম অবশ্য। তবুও ভালো ছিলো। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে লিখতে পারেন বলেই ওবায়েদ হক প্রশংসিত নিজের লেখার জন্য।

"কিছু কথা রয়ে যায় বাকি"

সমাজের কালো একটা অধ্যায় আছে যেটা হয়তো খালি চোখে ধরা পড়ে না তেমন। এই সমাজে কেউ টিকে থাকতে অন্যায় করে পেটের দায়ে। এছাড়াও মানুষের ক্ষতি করতে চাওয়ার হাজারটা কারণ থাকতে পারে। কেউ প্রতিশোধের নিমিত্তে করে। কেউ কোনো কারণ ছাড়াই নিজের ভালো থাকার নিমিত্তে। অন্যের ক্ষতি করে, অন্যকে কষ্ট দিয়ে সাময়িক হয়তো ভালো থাকা যায় কিন্তু এমন একটা সময় আসে নিজের কর্মফল নিজেকে উন্মাদ আশ্রমে ঠাঁই দেয়। তখন তীলে তীলে দংশন হয় বিবেক। সেই সময়ে বিবেক কী তবে কাকের রুপে এসে এমন কথা শুনিয়ে যায়? বলে যায় সারাজীবনের সব অন্যায়ের তালিকা। তখন কীভাবে বাঁচা যাবে এসব থেকে? উত্তর মেলা ভার।

🌼◾বইয়ের নাম: "উন্মাদ আশ্রম"
🌼◾লেখক : ওবায়েদ হক
🌼◾প্রকাশনী : বায়ান্ন
🌼◾ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.২/৫
Profile Image for Sakib A. Jami.
334 reviews36 followers
February 16, 2025
ধরুন আপনি খুব বিপদে আছেন। সে বিপদ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। মাথার মধ্যে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কোনমতে নিজেকে বাঁচাতে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন। হয়তো ঘুমঘুম ভাব আসছে। একবার ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল জাগতিক সব বিপদ-আপদ, বিভ্রান্তিগুলো মাথা থেকে দূর হয়ে যাবে। ঠিক তখনই আপনি দেখলেন দুই পায়ে ভর দিয়ে একটি কাক এগিয়ে আসছে। আবার কথাও বলছে। যেন আপনার মনের ভেতরটা পড়তে পারছে। যার কাজ কেবল কা কা করা, আজ সে মানুষের মতো কথা বলছে! এমনটিই ঘটে এই গল্পের মূল চরিত্র জহিরের সাথে। জহিরের মনে হয় সব বিভ্রম। কিংবা পাগল হয়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়।

জহিরের কথা বলতে চাইলে অনেকগুলো শব্দ খরচ করতে হয়। বাবা ক্যান্সারে গত হয়েছে। মা-ও এরপর বেশিদিন টেকেনি। হয়তো বাবার জন্য কিংবা বাবার সুস্থতার জন্য যে গহনা বিসর্জন দিতে হয়েছে, তার জন্য। ভাইবোনের সাথে যোগাযোগ নেই জহিরের। যা সম্পদ ছিল, সব বিক্রি করে শহরে এসেছে নতুন কিছুর আশায়। লোভ মানুষকে এই যান্ত্রিক শহরে নিয়ে আছে। যেখানে প্রাচুর্য আছে, কিন্তু ছোঁয়া যায় না।

একটি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে ঘুরতে জহির ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। তখনই স্বপনদার সাথে দেখা। একটি চাকরি জুটিয়ে দেওয়ার লোভে স্বপন কিংবা মিহিরের মতো লোকেরা মানুষের সর্বস্ব লুট করে নেয়। কেউ কেউ হা হুতাশ করে কপাল চাপড়ায়। কেউ বা এর থেকে শিক্ষা নিয়ে শিকার থেকে হয়ে ওঠে শিকারি। টিকে থাকতে হলে লড়াই করতে হয়। হয় নিজে উপার্জন করো, নয়তো অন্যের উপার্জন কেড়ে নিয়ে বিত্তশালী হও। এই সমাজে এমন ঘটনা তো অহরহ ঘটে!

জহিরের সাথে একদিন কাদেরের দেখা হয় আচমকা। নিজেরই প্রতিচ্ছবি বলেই হয়তো কাদেরকে সঙ্গী করার চিন্তা মাথায় আসে। মুরগি ধরা হয়ে ওঠে প্রতিদিনের কাজ। কখনও হাতির অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়ে ওরা। সেই হাতির দেখাও পায় দুজন। কিন্তু লোভ মানুষকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। এই কাজে কেউ বিশ্বাসযোগ্য হয় না। সে যতই সহচর হয়। এই কাজ করতে গিয়ে নিজ ঘরে কাদেরের ছুরিবিদ্ধ লাশ ভয় ধরায়। পালিয়ে বেড়ানো জহির এক পরিত্যক্ত বাড়ি খুঁজে আশ্রয় নেয়।

সেখানেই কাকটার সাথে প্রথম দেখা। সত্য? না-কি ভ্রম? বুঝতে পারে না। সেই পরিত্যক্ত বাড়ির মালিককে সুস্থ, স্বাভাবিক মনে হয় না। বাড়ির বাসিন্দারাও অনুমোদিত পাগল। কেউ কবি, কেউ বা চিত্রশিল্পী। পাগলদের কত গুণ থাকে!

জহির পথ চলে। যে পথে তার পদচিহ্ন রেখে গিয়েছিল। ভালো কিছু তো করেনি কখনও। তার অতীতের কর্মফলের হিসাবনামা সামনে চলে আসে। তার একমাত্র সঙ্গী মানুষের ভাষ্যে কথা বলা কাক। দিনে দিনে যার কালো পালক সবুজ হয়ে যাচ্ছে।

ওবায়েদ হকের লেখার মধ্যে এক অন্যরকম মাদকতা আছে। সাধারণ কোনো গল্পও যদি তিনি লিখেন, পড়তে আরাম লাগে। মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায়। শব্দচয়ন মুগ্ধ করে প্রতিনিয়ত। উপমা প্রয়োগের পরিমিতিবোধ তার লেখার সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এমনিতে লেখকের লেখা মেদহীন। যতটুকু বর্ণনার প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই বর্ণনার আশ্রয় তিনি নেন। এছাড়া গল্পের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া লেখকের হিউমারগুলো খুব বাস্তব মনে হয়। যার প্রশংসা অবশ্যই করতেই হয়। এমন লেখা মনোযোগ দিয়ে না পড়লে, প্রতিটি বাক্য গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি না করতে পারলে, এই ধরনের লেখা যথাযথ উপভোগ করা যায় না।

“উন্মাদ আশ্রম” বইটির শুরুটা যেভাবে লেখক করেছেন, প্রথম বাক্য ও এর শব্দচয়ন যেন বইটির সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। ভাষার এমন কারুকার্য এক ধরনের তৃপ্তি দেয়। আর এই কারুকার্য ওবায়েদ হকের লেখার পুরোটা জুড়ে বিচরণ করে। লেখার মধ্য দিয়ে না বলেও অনেক কিছু বুঝিয়ে ফেলার গুণ সবার থাকে না।

এই বইটিকে আসলে কোন জনরায় ফেলা যায়? আমার কাছে কিছুটা জাদু বাস্তবতার ছোঁয়া আছে বলে মনে হয়েছে। যার মাঝে সমাজের এক অন্ধকার দিক ল��খক তুলে আমার চেষ্টা করেছেন। মানুষ স্বভাবতই লোভী প্রাণী। লোভ মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে দেয়। আর লোভের বশবর্তী হয়ে প্রতারক চক্রের আবির্ভাব হয়।

আপনার কাছে হয়তো খুব কষ্টের কোনো বিষয় অন্যের কাছে আনন্দের কারণ। আপেক্ষিক এই বিষয় যে যেভাবে দেখতে পারে। মানুষ তার জীবনে বাঁচতে চায়। কেউ কেউ বাঁচার জন অন্যকে মারতে চায়। অন্যের চোখেমুখে যে দুঃখ লেগে থাকে, তাতেই পরিতৃপ্ত হয়ে ওঠে কারো মন।

মানুষের দেখার চোখ ভিন্ন। যার যেই দিকে আগ্রহ, তা ভিন্ন কোনকিছু তার নজরে থাকে না। ফলে টাকার প্রতি যার দৃষ্টি, সে কখনও মায়া মমতা উপলব্ধি করতে পারবে না। মানুষ একই প্রজাতির হলেও স্বভাব, চরিত্র, অবয়ব একে অপরের ভিন্ন। তাদের এই ভিন্নতা, মানসিকতার রূপ যেন এখানে ফুটে উঠেছে।

লেখক জহিরের মধ্য দিয়ে এই সমাজের কিছু মানুষকে তুলে এনেছেন। যারা মানুষের ক্ষতি করেই নিজের সুখ খুঁজে পায়। আর এই ক্ষতি করার কারণ নিজের ভালো থাকা। অন্যকে মেরে নিজেকে উঁচু স্থানে দেখতে হয়তো বেশিরভাগ মানুষই চায়। একই সাথে লেখক উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের পার্থক্য তুলে ধরেছেন। মধ্যবিত্ত এখানে ব্রাত্য। তাছাড়া উপমার মধ্য দিয়ে সমাজের বিভিন্ন সমস্যাকে তুলে আনার চেষ্টা করেছে।

বইটির চরিত্রগুলোর মধ্যে মনস্তত্ত্বের প্রভাবও তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। বইটিতে খুব বেশি চরিত্র ছিল না। তারপরও যে কয়টা চরিত্র ছিল, বেশ স্পট ছিল। চরিত্রগুলোকে বুঝতে পারলে যেকোনো বই বোঝা সহজ হয়ে ওঠে। সেই চরিত্রগুলোকে খুব সহজেই অনুভব করা গিয়েছে। বইটি আমার ভালো লেগেছে এই কারণেই। প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি ঘটনা মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। চরিত্রগুলোকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি। হয়তো এই কারণেই লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে অসুবিধা হয়নি।

শেষটা খুবই চমকপ্রদ। এখানে এক অন্যরকম ভাবনার প্রতিফলন ঘটে। একসময় ধারণা করেছিলাম। কিন্তু তারপরও মনে হয়েছিল এমন কিছু সম্ভব না। লেখক এখানে পুরো কাহিনির গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন। শেষ মুহূর্তে এসেও কাহিনি এতটুকু ঝুলে যায়নি। গল্পের মধ্যেই ছিলেন পুরোটা সময়। পাঠকও চমকিত হবেন বলেই বিশ্বাস। যেমনটা আমি হয়েছি।

এখানে একটা কথা প্রযোজ্য— লেখক গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই বলার চেষ্টা করেছেন। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। একজন লেখকের লেখার শক্তি এখানেই, তিনি তার ভাবনা-চিন্তাগুলো কতটা পাঠককে ছুঁয়ে দিতে পেরেছেন। ওবায়েদ হক যেভাবে গল্পের গতি প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন, খুব মনোযোগ দিয়ে, সূক্ষ্মভাবে যদি অনুভব করা না যায় তাহলে বইটা উপভোগ করা যাবে না। মনে হবে কিছু অগোছালো ঘটনা লেখক শুধু বলে গিয়েছেন। অথচ এই এলোমেলো কাহিনিগুলো একটার সাথে আরেকটা যেভাবে সংযোগ স্থাপন করেছে খুবই সূক্ষ্মভাবে। যা হয়তো পাঠককে ভাবাবে নিজের জীবন সম্পর্কে, আমাদের আচার আচরণ সম্পর্কে, আমাদের কর্ম ও তার ফলাফল সম্পর্কে।

এবারের বইমেলায় যে কয়টি প্রচ্ছদ ভীষণ পছন্দ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম “উন্মাদ আশ্রম”-এর প্রচ্ছদ। বোধহয় সেরাও! কিছু বানান ও ছাপার ভুল বইটিতে ছিল। তবে খুব বেশি পর্যায়ে না। এমনিতে প্রোডাকশন কোয়ালিটি বেশ ভালো হয়েছে।

পরিশেষে, মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, নিজেকে পাগল বলে মনে হয়। “উন্মাদ আশ্রম” সেই ভ্রম কিংবা বাস্তব-অবাস্তবের মাঝামাঝি কিছু একটা। এই সমাজে মানুষের ক্ষতি করতে চাওয়ার হাজারটা কারণ থাকতে পারে। কেউ প্রতিশোধের নিমিত্তে করে। কেউ কোনো কারণ ছাড়াই নিজের ভালো থাকার নিমিত্তে। অন্যের ক্ষতি করে, অন্যকে কষ্ট দিয়ে সাময়িক হয়তো ভালো থাকা যায়; কিন্তু পরবর্তীতে এর ফল ঠিকই ভোগ করতে হয়। চেতন বা অবচেতন মনে অতীতের কর্মফল তাড়া করে বেড়ায়। অনুশোচনায় দগ্ধ হতে পারলে পাপগুলো পরিশুদ্ধ হলেও হতে পারে। এরপর?

◾বই : উন্মাদ আশ্রম
◾লেখক : ওবায়েদ হক
◾প্রকাশনী : বায়ান্ন
◾ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.২/৫
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
May 29, 2025
সারাজীবন বাটপারি করে এসে অবশেষে আফসোস আর অনুশোচনা করা জহিরের গল্প উন্মাদ আশ্রম ১১২ পৃষ্ঠার উপন্যাস যার নাম আদপে সার্থক হয়ে উঠতে পারেনি। এতসব পাপাচার করা জহিরের যতই পাপবোধ হোক না কেন, যতই অনুশোচনা লেখক জহিরের মনে আনুক না কেন জহির পাপীই, এই পবিত্র পাপীর (!) জন্য মনে কোনো সফট কর্ণার তৈরি হতে পারলো না।

উন্মাদ আশ্রম কি আসলেই একটা সম্পূর্ণ কাহিনী বিল্ড আপ করতে পেরেছে কিংবা পরাবাস্তবতাকে কি ঠিকভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পেরেছে আদৌ? অতিরিক্ত উপমা আর ১১২ পৃষ্ঠার গন্ডি পেরিয়ে লেখক কি আরেকটু লিখতে পেরেছেন? সবকিছুর উত্তর হচ্ছে "না"।



নৌকা ভ্রমণ, গাড়ি ভ্রমণ, হন্টন ভ্রমণ প্রভৃতি ভ্রমণ এখন বাদ দিতে হবে। এক নৌকা ভ্রমণে মন দিয়েছি আর কোনো ভ্রমণে মন দিতে উৎসাহ পাচ্ছি না।

২৭ মে, ২০২৫
Profile Image for Zakaria Minhaz.
260 reviews23 followers
March 16, 2025
#Book_Mortem 225

উন্মাদ আশ্রম

অনুশোচনাবোধ। শব্দটার গভীরতা অনেক, যদিও বেশিরভাগ মানুষ একটা জীবন কাটিয়ে দেয় এই অনুভূতির সাথে অপরিচিত থেকেই। যাপিত জীবনে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় আমরা কত মানুষকে কত ভাবেই না কষ্ট দেই। সেটা নিয়ে অনুশোচনা বা অপরাধবোধের জন্ম হয় কি আমাদের মনে? অন্য কোনো সময়ে না হলেও কঠিন বিপদের মুখোমুখি হলে অনেকেরই হয়তো অনুশোচনাবোধ জাগে। আমার অন্তত হয়। মনে হয়, ইশ! যদি ওই সময়ে ওই কাজটা না করতাম, তাহলে হয়তো আজকে আমার জীবনে এত বড় কষ্ট আসত না! তবে এমন মানুষও আছে যাদের মনে বিপদ-আপদ কোনো সময়েই অপরাধবোধ জন্মায় না। কিন্তু মৃত্যুর সময়েও কি অনুশোচনাবোধ জন্মায় না পাষাণ হৃদয়ের মানুষের মাঝে?

কিছু গম্ভীর আলাপ করে ফেললাম। আসলে বইটা নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার মতোন নেই। তাই লেখক যেমন পুরো বই জুড়ে ফিলোসফির ডালা সাজিয়ে বসেছিলেন, আমিও তেমনটাই করলাম। সত্যি বলতে বইটা থেকে একটা জিনিসই শিখেছি তা হলো সময় থাকতে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করানো উচিত। সময় চলে গেলে যত আফসোসই হোক না কেন, নিজের কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত আর করা সম্ভব হয় না।

ভাগ্য বিড়ম্বিত জহির আমাদের গল্পের মূল চরিত্র। কীভাবে সে ধোঁকা খেয়ে পরবর্তীতে নিজেই এক বড় ধোঁকাবাজে পরিণত হয় সেই গল্প আছে বইয়ের অর্ধেকটা জুড়ে। এরপরই গল্পে চলে আসে দারুণ এক টুইস্ট। সেই টুইস্টের পর আমরা পৌছে যাই উন্মাদ আশ্রমে। যেখানে সব উন্মাদেরা একত্রিত হয়েছে।

নগরের আনাচে কানাচে আলোর প্রাচুর্য, মানুষের বুক ছাড়া অন্ধকারের বসবাসের আর কোনো জায়গা নেই।

আশ্রমে জহিরকে দেখা যায় একটা কাকের সাথে কথা বলতে। কুচকুচে কালো রঙের কাকটা জহিরের মনে তৈরি হওয়া প্রতিটা অনুশোচনার বিনিময়ে সবুজ রঙ ধারণ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সকল মানুষকে দেয়া কষ্টের স্মৃতিচারণা শেষে নিজের চরম সত্যের মুখোমুখি হয় জহির। পুরো বইতে বিষন্নতার ছাপ রাখতে চেয়েছেন লেখক। এর মাঝে গিয়াস উদ্দিনের ছেলের অংশটুকু পড়তে গিয়ে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল।

পাপ তারা করে কোটি টাকার, পূন্যের জন্য রাখে খুচরা নোট।

ওবায়েদ হক আমার অত্যন্ত পছন্দের লেখক। উনার সব বই আমার ব্যাপক ভালো লাগে। এমনকি বিদগ্ধ পাঠকদেরকে যেসব বই টানেনি, সেগুলাও আমার খুবই পছন্দের। তবে এই বইটা আসলেই বড্ড এলোমেলো। কেমন যেন খাপছাড���া, তাড়াহুড়োর ছাপ স্পষ্ট। অনেক দ্রুতই দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসতে থাকে। কোনো নির্দিষ্ট ছন্দ নেই গল্পে। লেখকের গদ্যশৈলী বরাবরের মতোই ভালো লেগেছে। তবে মুগ্ধতা আসেনি কেন যেন। লেখকের একেকটা বইয়ে এমন অনেক বাক্য থাকে যা বারবার বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। এই বইয়ে সেই ব্যাপারটার কমতি ছিল। এবং শেষে এসে যথারীতি বড়সড় ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যা আমার মতোন থ্রিলার পাঠকেরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারবে।

তবুও বলব শেষটা আমার ভালোই লেগেছে। বইয়ের যে লুকোনো দর্শন তা ধরতে পারলে অতোটাও মন্দ লাগে না। নিজের জীবনে করা ভুলগুলোর উপলব্ধি হওয়া জরুরি এই বোধটা দেখাতে চেয়েছেন লেখক।

আহা! মৃত্যুই এত সুন্দর, জীবন না জানি কত সুন্দর ছিল!

ব্যক্তিগত রেটিং: ৬.৫/১০ (ওবায়েদ হকের লেভেলে হয়নি। বই শেষ করে বেশ কিছুক্ষণ থতমত খেয়ে বসে ছিলাম। ভালো লাগেনি, আবার মন্দও বলতে পারছি না টাইপ অনুভূতি হয়েছে)

⛺ লেখক: ওবায়েদ হক
⛺ প্রকাশনী: বায়ান্ন (৫২)
⛺ প্রচ্ছদ: শামীম আহমেদ
⛺ পৃষ্টা সংখ্যা: ১১২
⛺ মূদ্রিত মূল্য: ২৫২ টাকা
Profile Image for Afsan Ahmed .
35 reviews2 followers
October 29, 2025
হতাশ???

বইয়ের গল্পটা ভালো ছিলো, লেখক চাইলে সুন্দর করে সাজিয়ে লিখতে পারত। যাই হোক গল্পের ভিতর গল্প, তবে "গিয়াস উদ্দিন এবং শোভার" গল্পের থিম গুলো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পারলে জমে যেত।
Profile Image for Masudur Tipu.
125 reviews2 followers
June 24, 2025
ওবায়েদ হক এই সময়ের অনেকের পছন্দের লেখক।উন্মাদ আশ্রম তার লেভেল এর লেখা হয় নাই বলে মিক্সড প্রতিক্রিয়া রয়েছে। 

মাঝে মাঝে হালকা ধাচের বই পড়তে খারাপ লাগে না, আবার এক টানা না পড়ে, একটু গ্যাপ দিয়ে পড়লেও সাইকোলজিক্যাল লাইন গুলাও ভাল ভাবে রিলেট করা যায়।


অন্য পশু পাখি পেট ভরলে আর খায় না। মানুষের  পেটের সাথে পকেটও আছে, পেট ভরে গেলে পকেটে ভরা শুরু করে। 

পাপ তারা করে কোটি টাকার, পূন্যের জন্য রাখে খুচরা নোট। পূণ্য বিতরণের ব্যবসাটা ভালোই চলে এখানে, এই শহরে পাপির অভাব নেই। 

অনেক টাচি  মুহুর্ত ছিল - 

"রোমেনার ঘরের সামনে সে যেন নিজেকে বসে থাকতে দেখছে,পার্থক্য হচ্ছে একজনের পায়ে ক্রাচ  অন্যজনের পায়ে শিকল। জহির নিজের ছেলের নাম টাও জানতে পারলো না।"

"একবারও কি গিয়াস উদ্দিনের ছেলের ক্লিষ্ট মুখটা তার মনে পড়েনি? ছোট ছেলেটার ঋণ আর শোধ হবেনা। " সমাজকে শোভার নির্মম উপহাস উপহার দেয়া! 


ভালোই সময় কাটলো। বইটার প্রচ্ছদ জোস, শুধু প্রচ্ছদ এর জন্যেই বইটা রাখা যায়।

হুমায়ুন আহমেদ এর অনেক হালকা বইও আমরা আগে পড়েছি। তাই এই বইটা হালকা ধাচের মনোভাব নিয়ে পড়লে খারাপ লাগার কথা না। 

জহিরের নিজের হ্যালুসিনেশন গুলাও বিভ্রান্তিকর। কিন্তু এমন পেশেন্ট অনেক বাস্তবেও আছে, নিজের চোখে এই পেশেন্ট  দেখলে রিলেট করতে পারবেন।


তবে অনেক অল্প কথায় অনেক কষ্টের ঘটনা গুলো ভালোই ফিল করেছি। 

সব বই তো জলেশ্বরী - নীল পাহাড় লেভেলের হবে না, এইটা তো মানতেই হবে।


বই - উন্মাদ আশ্রম 

লেখক - ওবায়েদ হক

প্রচ্ছদ - অনন্যা চক্রবর্তী 

ব্যাক্তিগত রেটিং ৩.৮/৫
Profile Image for Sehemi Akhi.
65 reviews2 followers
April 2, 2025
অবশ্যই পড়বেন সবাই।
এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। 🙂
Profile Image for Edward Rony.
90 reviews9 followers
March 2, 2025
‘ওবায়েদ হক’ আমার কাছে পরিচিত ‘জলেশ্বরী’, ‘তেইল্যা চোরা’ আর ‘নীল পাহাড়’ এর মত অসামান্য গল্প আর সুনিপুণ গদ্যশৈলীর লেখক হিসেবে। তার একমাত্র গল্প গ্রন্থও বেশ ভালো একটা বই।
আমার পরিচিত চিরচেনা ‘ওবায়েদ হক’ এই চারটা বইয়ের পরেই হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ‘কাঙালসংঘ’। ভালো লাগে নি, এরপর ‘জল নেই পাথর’ আর ‘আড়কাঠি’। ‘জল নেই পাথর’ও ভালো লাগেনি। ‘আড়কাঠি’ পড়িনি, সর্বশেষ বই ‘উন্মাদ আশ্রম’ পড়ে আরও হতাশ।

লেখার ভেতর তাড়াহুড়ো, সমাপ্তি টানার একটা ব্যস্ততা, কিছুটা অগোছালো ভাব খুবই স্পষ্ট উন্মাদ আশ্রমে। পড়ার সময় আগের লেখার ছাপও সুস্পষ্ট ভাবে লক্ষ্য করা যায়।
কাহিনীর বিন্যাস, প্রবাহ, পরিণতি যেটাই বলিনা কেন, পছন্দ হয় নি। ওবায়েদ হকের গদ্যশৈলীর মান যদি ভালো না হতো, তা হলে এই বই শেষ করা কঠিন হতো।
আসলে যদি একক বই হিসেবে আমি 'উন্মাদ আশ্রম' এর কথা বলি, এই বইয়ের মান আমার কাছে বিলো এভারেজ হবে। তবে ওবায়েদ হক তার প্রথম তিনটা বইয়ের মাধ্যমে নিজেকে সাহিত্য কর্মকে যেখানে নিয়ে গেছেন, সেই তুলনায় 'উন্মাদ আশ্রম' নেগেটিভে যাবে। ওবায়েদ হকের লেখার মান ‘কাঙালসংঘ’ থেকে ঐযে গ্রাফ নিম্নমুখী, সেটা আর উপরে উঠতেছে না।

প্রকাশনি লেখককে আবিষ্কার করে, লেখকের মান উন্নত করে। তবে ওবায়েদ হকের ক্ষেত্রে এটা উল্টো হয়েছে!
লেখকের লেখার এই মান নিম্নমুখী হওয়ার পেছনে যতটা না লেখক দায়ী তার'চে দায়ী লেখকের প্রকাশক।
শুনেছি লেখক লিখেছেন প্রকাশকের চাপে পড়ে, অনেকটা বাধ্য হয়ে। লেখকে লিখতে দিতে হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে, তবেই রচিত হতে পারে ‘জলেশ্বরী’, ‘নীল পাহাড়’ বা ‘তেইল্যা চোরা’। আর যখন লেখকের বাণিজ্যিকরণ হবে, লেখার জন্য চাপ দেওয়া হবে তখন সেই কলম থেকেই বের হবে ‘কাঙালসংঘ’ বা ‘উন্মাদ আশ্রম’।

উন্মার আশ্রমের প্রচ্ছদ লেখকের একক বইয়ের প্রচ্ছদ হিসেবে সব'চে বাজে লেগেছে। বিশেষ করে মূল প্রচ্ছদ ছবির পাশে যে লাইট পিংক শেডের কালার, সেটা আরও বাজে। বইয়ের নামলিপি পড়তে বেগ পেতে হয়, সফ্ট কপিতে স্পষ্ট হলেও প্রিন্টের পর ভালো লাগেনি।
প্রোডাকশনে আরও বড় একটা কারচুপি দেখলাম। আমরা অনেক সময় দেখেছি, লেখক তার লেখাকে অযথাই টেনে লম্বা করেন, তবে উন্মাদ আশ্রমের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব প্রকাশক পালন করেছেন। পেজ সেটআপ, মাঝের এক পেজ পুরো ব্ল্যাঙ্ক রাখা, ফ্রন্ট সাইজ, এক পেজে দুই লাইন রেখে বাকি পুরো পেজ ফাঁকা রেখে পরের চ্যাপ্টার অন্য পেজে শুরু করা (যদিও একই বইতে অন্য পেজে দুই লাইন রেখে সেই পেজেই পরবর্তীতে চ্যাপ্টার শুরু করছে), দুই তিন লাইনের একেকটা প্যারা (এটা লেখকের লেখনী হতে পারে)। আরেকটা কারচুপি হলে রেগুলান ফ্রন্ট সাইজ থেকে বড় সাইজ ইউজ, মার্জিন বেশি রাখা, প্যারার ভেতর ডাবল স্পেস ব্যবহার করা এমনকি সংলাপ জাতীয় লাইনরে মাঝেও ডাবল স্পেস দিয়ে গ্যাপ বাড়ানো।
এতে করে শুধু পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়ানো হলো।

এসব মিলিয়ে ‘উন্মাদ আশ্রম’ একটা ব্যাড এক্সপ্রিয়েন্স…
Profile Image for Rehnuma.
444 reviews21 followers
Read
February 18, 2025
❛অনেক হয়েছে লোক ঠকানো পরিশ্রম
ঠাঁই দেবে এবার উ ন্মাদ আশ্রম!❜

সৌভাগ্য এক সোনার হরিণ। যার কাছে ধরা দেয় তাকে একেবারে সোনায় সোহাগা করে রাখে। আর যার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার দিকে ভুলেও আর চায় না। ভাগ্যের অন্বেষণে এসে কত পথিক হারিয়ে যায়, খসে যায় জুতোর তলা, কেউবা আবার নিজেকে দুর্ভাগ্যের স্রোতে ভাসিয়ে দেয়। চলছে যেমন চলুক না!
শুকিয়ে যাওয়া খোড়া এক পা নিয়�� জহিরের দুর্গতির শেষ নেই। বাপকে হারিয়েছে ম রণব্যাধিতে। স্বামী হারানোর শোকে কিংবা স্বামীকে সুস্থ করার তাগিদে নিজের জেবর বিক্রির হতাশায় তিনিও দেহ রাখেন। এরপর জগতে আর কীসের বাঁধা? জহির পৈতৃক সম্পত্তির ভাগটুকু নিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে আসে ঢাকায়। কিন্তু নিজের শারীরিক বিকলাঙ্গতা তাকে এগিয়ে যেতে দেয় না। মমতা, করুণার চোখ পেলেও কেন যেন পায়না চাকরি। নারীরা তাকে প্রেমের চোখে দেখে না। ঐ একটু করুণা করে। একটা পায়ের জন্য সে স্বীকৃতি পায় না।
তবুও অনেক কষ্ট করে একটা গতি যাও করতে পেরেছিল সেখানে শুধুই পেলো শুভঙ্করের ফাঁকি। ধোঁকা খেয়ে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে গেল। জীবনের এই চরম পরিহাসে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।
মানুষ জীবন থেকে শিখে, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। জহিরও নিলো। ঠেকে শিখলো তবে এককালের শিকার এখন নিজেকে ঘাঘু শিকারিতে রূপান্তর করলো। মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সে নিজের ব্যাগ ভর্তি করলো। কারো চোখের পানি, দুঃখ, দারিদ্র্য কোনো কিছুতেই তাকে পেতো না। বিবেককে সে কড়া ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে চুপটি করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল। ঘুমন্ত বিবেক তাই দেখলো না কারো সন্তানের আহাজারি, কারো কন্যার বিয়ের কথা, প্রেমের ফাঁদে লুট হয়ে যাওয়া এক নারীর বিশ্বাসের ভাঙন।
এরপরই সে দেখা পেলো কাদের নামক একজনের। যার চরিত্রও বর্তমানে জহিরের মতোই। দুজনে বেশ ভাব হলো। চুনোপুটি ধরে ব্যাগ ভারী করে চলতে থাকে। কখনো আবার চায় একটা হাতি বাগিয়ে ফেলতে। কত স্বপ্ন দেখে কাদের। জহির সে স্বপ্নে সেভাবে সাড়া দেয়না। চলুক না!
তবে কাদেরের ঘ্যান ঘ্যানে একদিন জহিরেরও মত বদলালো। করা যায় এবার হাতি শিকার। পরিকল্পনা সব হয়ে গেল। এখন কাজে লাগানোর অপেক্ষা।
আপন ঘরটায় বসে পান করতে করতে কাদের আর জহির নরম মাংসের কথা ভাবে। এরপর কী হলো? আধো ঘুম, আধো জাগনায় নাকি স্বপ্নে পৌঁছে গেল সে। কাদেরের পরিণতি এমনটাই কি সত্যি?
কোথায় আছে সে? এই কথা বলা কাক কোত্থেকে এলো? নিঃসঙ্গ এই দুনিয়ায় ❛ভ্রমর❜ নামী এই কাকই তার বন্ধু। কিন্তু কাক এতকিছু জানে কী করে?
পলেস্তরা খসা পুরোনো আমলের চ্যাডউইকের বাড়িতে সে পৌঁছুলো কেমন করে জানেনা। অর্ধনগ্ন, নগ্ন, শিল্পী, আঁকিয়ে এত গুণের অধিকারী ব্যক্তিরা এই বাড়িতে একত্র হলো কীভাবে জহির জানে না। এরা সবাই একেক কিসিমের পা গল। তবে কি জহিরও এমন উ ন্মাদ হয়ে যাচ্ছে? নাহয় কথা বলা কাক কেমনে দেখে?
জীবনের একটা ছোটো হাইলাইট দেখে সে। নিজের করা পাপ, অন্যায় আর লোক ঠকানোর স্মৃতিগুলো যেন একের পর এক ভেসে আসে। অনুশোচনা হয়, দুঃখ হয় সেই সাথে সবুজ হয় কাকের পালক। কোথায় আছে সে?
এই দুনিয়া কোন দুনিয়া? আসলেই কি এই দুনিয়া, চাঁদ, সূর্য, মানুষ কোনো কিশোরীর মাথার উকুনের মধ্যে আছে? দুই নখের চাপে পড়লেই সব শেষ হয়ে যাবে?
সত্যি নাকি ভ্রম?

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

❝উ ন্মাদ আশ্রম❞ ওবায়েদ হকের লেখা উপমায় ভরপুর এক উপন্যাস। একে জাদু বাস্তবতার কাতারে ফেলা যায়।
ওবায়েদ হকের লেখা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ঝরঝরে, মেদহীন কিন্তু অর্থপূর্ণ উপন্যাস লেখায় সিদ্ধহস্ত লেখক। এই উপন্যাসটিও লেখকের অদ্ভুত সুন্দর লেখার আরেকটি উদাহরণ।
জহির নামক এক ব্যক্তির জীবনের নানা মোড়, অতীত, বর্তমান আর স্বপ্ন কিংবা ভ্রমের নানা ঘটনা বর্ণনা করেছেন লেখক।
জহিরের মাধ্যমে লেখক সমাজের ঐসব ব্যক্তির কথা উপস্থাপন করেছেন যারা আপন স্বার্থ হাসিল, আপন সুখের জন্য অন্যের মুখের হাসি, শেষ আশাকে ছিনিয়ে নিতেও দ্বিধা বোধ করে না।
পাপের ঘড়া পূর্ণ হলে কি মানুষের মনে অনুশোচনা, অপরাধবোধের জন্ম নেয়?
একই বোধ লেখক জহিরের মধ্যেও এনেছিলেন। কিন্তু সেই অপরাধ খন্ডানোর কোনো উপায় তার ছিল না। অদ্ভুত জায়গা, কথা বলা কাক আর নিজের ঘুমন্ত বিবেকের জাগরণের ফলে যে দংশনের মুখের জহির পড়েছিল তার ইতি নেই। ছিল শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে যাওয়া।
উপন্যাসের মোড় ঘুরে যায় কাদেরের আগমন এবং পরবর্তী ঘটনায়। অদ্ভুত বাড়ি, গগন নামক ব্যক্তি, জোবায়ের, বিশ্বম্ভর এদের উপস্থিতি এবং তাদের বলা কথাগুলো এত দারুণ ছিল যা উপন্যাসে গতি দিয়েছে।
লেখক কিছুটা হাস্যরসের মাধ্যমে, উপমার মাধ্যমে সমাজের অসামঞ্জস্যতা, খারাপ দিকগুলো অপূর্বভাবে তুলে ধরেছেন।
১১২ পৃষ্ঠায় এত সুন্দরভাবে জীবনবোধ, উদাহরণ আর ঘটনার সমাবেশ ঘটানো যায় সেটা শুধু উক্ত লেখক বলেই হয়তো সম্ভব।
ছোটো উপন্যাস বলে গড়গড় করে যদি পড়ে যান তবে হয়তো বুঝতে একটু বেগ পেতে হবে। কারণ ছোটো বাক্যে, উদাহরণ আর উপমায় লেখক কঠিন, গম্ভীর কথাগুলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেগুলো ধারণ করতে, বুঝতে হলে একটু সময় নিয়ে কালো অক্ষরের লেখাগুলো পড়লে উপভোগের মাত্রা সঠিক হবে।
এরকম উপন্যাসে, কিংবা জাদু বাস্তবতায় ভ্রম কিংবা গল্পের আকারে অনেক কঠিন ব্যাপার খুব অপূর্বভাবে ফুটে উঠে। জহিরের মাধ্যমে কিংবা কাকের বর্ণনায় শেষটা অনুমেয় ছিল। তবে শেষে এসে গল্পের যে মোড় নিলো সেটা অবাক করেছে। খারাপ লেগেছে। আরেকজনের ভাষ্যে উপস্থিত চরিত্রের জন্যেও কেমন মায়া মায়া লাগছিল। শেষটা বিষন্ন, কিন্তু ভাবায়।


চরিত্র:

জহির উপন্যাসের মূল চরিত্র। তাকে একত্রে প্রোটাগোনিস্ট এবং অ্যান্টাগোনিস্ট বলা যায় কি?
কখনো তার জন্য খারাপ লাগে, কখনো খারাপ লেগেছে তার কাজ। তবে সমাজটাই কি এমন নয়? খাদ্যশৃঙ্খলে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে যেমন নিমস্তরের প্রাণীকে ভক্ষণ করে সর্বোচ্চ খাদকে পরিণত হতে হয় তেমনি জহির নিজেকে টিকিয়ে রাখতে একই পন্থা কি অবলম্বন করেনি?
কিন্তু গিয়াস, সেই কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা, প্রেমের মাঝে জীবন খুঁজে পাওয়া সেই রাতের পরী তাদের দোষ কী ছিল?
কাদেরকে লেখক প্ল্যান্ট করেছেন সূক্ষ্মভাবে। তার চরিত্রের টার্ন দারুণ ছিল।

প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন:

এবারের বইমেলার অন্যতম পছন্দের প্রচ্ছদ এটি। নামের মতোই অদ্ভুত দর্শন প্রচ্ছদটা উপন্যাসের কাহিনির সাথে মানানসই হয়েছে।
কিছু মুদ্রণ প্রমাদ ছিল। এছাড়া তেমন সমস্যা ছিল না।

❛ঘুম কিংবা জাগরণের মাঝে, বাস্তব-অবাস্তবের মাঝে কি কোনো দুনিয়া আছে? আয়নার মতো স্বচ্ছ কিংবা স্বীকারোক্তির মতো সত্য?❜


Profile Image for N.
12 reviews
March 22, 2025
লেখকের প্রথমদিকের কাজের দিকে ভিন্ন। এইটা ভালো দিক। সব কাজ একই ধারার হইলে পরিপক্কতা আসে না। এইবার লেখক পরাবাস্তববাদ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছেন। খারাপ লাগে নাই। নট হিস বেস্ট ওয়ার্ক কিন্তু দরকারি।
Profile Image for Mehedi Hasan Bappi.
38 reviews1 follower
February 26, 2025
অন্ধকারই পরম সত্য আর প্রকাশ মিথ।


বই : উন্মাদ আশ্রম
লেখক : ওবায়েদ হক
প্রকাশনী : বায়ান্ন '৫২
মুদ্রিত মূল্য : ২৫২
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১২
রেটিং : ২.৫/৫


আলোচনা :


মানুষ তার চরিত্রের অন্ধকার অংশ লুকিয়ে রাখে আর প্রকাশ করে এক মেকি রুপ। এই অন্ধকার অংশে থাকে গোপন আকাঙ্খা, লোভ, লালসা, হিংসা, কাম, ক্রোধ, স্বপ্ন ইত্যাদি। এই অন্ধকার অংশ সমেত, মানুষ মানবিক অনুভূতিসর্বস্ব প্রাণী।

কিন্তু গল্পের "জহির তরফদারের'' এহেন কোন মানবিক অনুভূতি নাই। একদম নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা না করা বিরাট ধান্ধাবাজ গোছের মানুষ। মানুষকে প্রতারিত করে দারুণ সুখ অনুভব করে। এক একটি প্রতারণা, এক একটি অ্যাওয়ার্ড।অবশ্য তার প্রতারক হওয়ার পেছনে নিজে প্রতারিত হওয়ার গল্প আছে।

জহির জন্ম থেকে পঙ্গু। এক পা শুকনো, লিকলিকে গড়নের। হাটে খুড়িয়ে। পঙ্গুত্বের কারণে মায়ের আদর একটু বেশিই পেতো। কিন্তু অল্প বয়সের বাবা ক্যান্সারে পরলোকে পাড়ি জমান। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মায়ের সকল গহনা বিসর্জন দিতে হয়। গহনার দুঃখ মা'কে বেশিদিন সইতেও হয়নি। এরপর যেটুকু সম্পত্তি অবশিষ্ট ছিলো তা বিক্রি করে জহির পাড়ি জমায় জাদুর শহরে। আশা - চাকুরি নামক আলাদিনের চেরাগ তার ভাগ্য পাল্টে দিবে। হাজার চেষ্টার পরেও চাকুরি জুটেনা জহিরের। তখনই তার জীবনে আসে স্বপন নামের একজন। নতুন করে চাকুরির স্বপ্ন দেখায়। অর্থের বিনিময়ে। অর্থের বিনিময়ও হয়, কিন্তু সেই স্বপ্ন আলোর মুখ দেখেনা। স্বপনের হাতেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়।

জহির বুঝে যায়, এই শহরে হয় শিকার কিংবা শিকারী হতে হবে। এরপর বিভিন্ন উপায়ে অসহায় মানুষকে লুট করতে থাকে জহির। জহির মানুষের চেহারা দেখেই বুঝে ফেলে কার মানিব্যাগের জোর কতোটুকু। কাকে ফাঁদে ফেলানো সহজ।


গল্পের মোড় নেয় আচানক কাদেরের সাথে পরিচয় হয়। কাদের তারই হামশকল, ভেটেরান লেভেলের প্রতারক। সঙ্গী পেয়ে যায় জহির। দুজনের ছোটখাটো দান মারতে বিরক্তি চলে আসে। পরিকল্পনা করে বড় দান মারার। একটা বড় হাতিকে ফাঁদে ফেলে পরিকল্পনা মোতাবেক এবং সফলও হয়। সেই সফলতা অর্জনের উদযাপন করতে গিয়ে ভরপুর মদ খায়। বেঘোরে ঘুমোয় দুজনে। ঘুম ভেঙে জহির দেখতে পায় কাদেরের ছুরিবিদ্ধ লাশ। জহির পালিয়ে গিয়ে আশ্র‍য় নেয় এক পরিত্যক্ত বাড়িতে।

এখানেই দেখা মিলে একটা কাকের সাথে। বাস্তব নাকি ভ্রম জহির বুঝতে পারেনা। সেই সাথে পরিত্যক্ত বাড়িতে মালিক সমেত কিছু সার্টিফাইড উন্মাদও পেয়ে যায়। একসময় কাককে একমাত্র সঙ্গী করে বেড়িয়ে পড়ে তার কুকীর্তি উপসংহার দেখার জন্য। শুরু হয় জহিরের পরাবাস্তবতার যাত্রা। এই কাক কেনো তার পিছু ছাড়ছে না? কাক কি তারই ইজম? জহিরেরই পরিণতি কি? জানতে হলে পুরোটা পড়তে হবে।



দূর্বলতা:

হয়তো লেখকের নাম ওবায়েদ হক বলেই আমার প্রত্যাশা ছিলো অনেক। কিন্তু আমার চোখে ওবায়েদ হকের সবচেয়ে দূর্বল আর অযত্নে লেখা বই এটি। ঘটনাপ্রবাহ কখন কিভাবে মোড় নিচ্ছে বোঝা যাচ্ছেনা। ঘটনা শুরু একভাবে, শেষটা অন্যভাবে। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে জোর করে বইয়ে বিষণ্ণতা ঢোকানোর ব্যাপারটা। ওবায়েদ হকের বেশিরভাগ বইয়ের উপসংহারে ঘোর লাগানো বিষণ্ণতা নিয়ে আসে। এই বিষণ্ণতা উপভোগ করা যায়। এই বইয়ের ক্ষেত্রে, উপসংহারের বিষণ্ণতা ভীষণভাবে আরোপিত মনে হইছে।


ভালো দিক: 

ওবায়েদ হকের দারুণ গদ্যশৈলী আর চমৎকার উপমার ব্যবহার। ভদ্রলোক গরুর রচনা লিখলেও আরাম করে পড়া যাবে। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে লেখার চেষ্টা করেছেন। এই ব্যাপারটাকে সাধুবাদ জানাই।

প্রচ্ছদ দারুণ হইছে, হাতে নিয়ে বারবার দেখছিলাম। বায়ান্নর প্রোডাকশন বরাবরের মতোই ভালো।
Profile Image for Musharrat Zahin.
404 reviews490 followers
March 2, 2025
বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে অনেক বছর পর সাইকেডেলিক আর্টের কথা মনে পড়লো। যতদূর মনে পড়ে, সাইকেডেলিক বলতে ড্রাগ নেওয়ার পর যেই হ্যালুসিনেশন হয়, সেটাকে বোঝায়। তো বলা যায় এটা এমন কিছু যা কারো চেতনা, অনুভূতি এবং উপলব্ধিতে গভীর পরিবর্তন আনতে পারে।

একে তো এমন প্রচ্ছদ, তার উপর বইয়ের নামে আবার উন্মাদ আছে, তাই ধরেই নিলাম কোনো পাগলের কাহিনী হবে হয়তো।
.
.
বইয়ের মূল কাহিনী জহিরকে ঘিরে। জহির হল মহা ধান্দাবাজ এক বান্দা, যে মানুষকে ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়৷ তার একটা পা জন্ম থেকেই একটু খাটো, তো যার কারণে মানুষের সিম্প্যাথি পেয়ে টাকা মারা ওর জন্য আরো সহজ ব্যাপার। মানুষের ক্ষতি করার পর তার নিজের মধ্যে এক ফোঁটাও অনুশোচনা কিংবা আবেগ কাজ করে না। এরপর সে ঘটনাক্রমে এক ভাঙাচোরা পরিত্যক্ত বাড়িতে এসে হাজির হয়, যেখানে তার পরিচয় ঘটে কয়েকধরনের পাগল লোকের সাথে। জহিরেরও মনে হতে থাকে যে সেও হয়তো ধীরে ধীরে পাগল হওয়ার পথে, কারণ সে এখন এক কাক বা কাউয়ার সাথে কথা বলছে, যার নাম সে দিয়েছে ভ্রমর। এই ভ্রমর আসলে কেউই না, সে নিজেই। এই বাড়িতে আসার আগে জহির এমন এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে যে তার মাথা আর ঠিক নেই। একধরনের অনুশোচনা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, আর অনুশোচনা থেকেই তৈরি হয়েছে ভ্রমর। ভ্রমর বা তার নিজের সাথে কথোপকথনের পর সে তার করা সবধরনের পাপ কাজের জন্য অনুতপ্তবোধ করে৷ যেই মানুষদের অর্থসাৎ করতে জহির দ্বিতীয়বার ভাবেনি, সেই মানুষদের বর্তমান অবস্থা দেখার জন্য দূর থেকে তাদের কাছে হাজির হয় সে৷ সেই অনুশোচনা থেকেই গল্প আরেকদিকে মোড় নিতে থাকে। অল্প করে বলতে গেলে বইয়ের প্লট এটাই৷
.
.
ওবায়েদ হকের লেখা যে ভালো, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বইটা পড়ে যারপরনাই হতাশ হলাম। পড়তে যেয়ে খুবই কনফিউজিং লাগছিল। মনে হচ্ছিল কাহিনী এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। একবার লেখক জহিরের ব্যাকস্টোরি বলছেন, আরেকবার বাড়ির বাসিন্দাদের, আরেকবার কাদেরের, তারপর রাশুর– খুবই গোলমেলে অবস্থা। বইয়ের শেষের দিকে একটু ইমোশনাল টাচ দিতে চেয়েছিলেন, যেটা দিয়ে আসলে পুরো বইটা আরো হযবরল হয়ে গেছে। একবার মনে হচ্ছিল প্রতিশোধের গল্প, তো আরেকবার মনে হচ্ছিল অনুশোচনার।

মানে যখন মনে হচ্ছিল একটু একটু করে গল্প কথকের সাথে কানেক্ট করতে পারছি, তখনই ধুপ করে গল্প অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছিল যে বেশ তাড়াহুড়ো করে ফিনিশিং টানা। লেখকের অন্যান্য বইগুলোর তুলনায় এটা বেশ দুর্বল। আজকে পড়লাম, দুইদিন পর কাহিনী ভুলে যাব এমন একটা বই৷
Profile Image for Pavel Rezoan.
36 reviews11 followers
March 3, 2025
মানুষ তার জীবনের অন্তিম অন্তর্যাত্রা পর্বে মুখোমুখি হয় প্রার্থনা অথবা প্রায়শ্চিত্তের। যা মানুষের নির্বাণলাভের একটা উপায় তা সে পৃথিবীতে ভালো কাজ আর খারাপ কাজ যাই করুক মানুষ হিসেবে যেমনি হোক এ পর্বের মুখোমুখি তাকে হতেই হয়।

লেখক তার সৃষ্ট চরিত্র জহিরের মাধ্যমে এ বিষয়টি দেখিয়েছেন মনে করি। কথিত আছে মানুষ মরার আগে তার পুরো জীবনকে এক মুহূর্তের ফ্লাশব্যাকে দেখতে পায়। দেখার সময় সে ফিরে যায়, ভুল বোঝে, শুধরতে চায়, ক্ষমা পায়, প্রায়শ্চিত্ত করে অতঃপর ফিরে আসে মৃত্যুর বিছানায়।

ইদানিং গল্প উপন্যাসে জাদুবাস্তবতার প্রয়োগ ক্লিশে হয়ে যাচ্ছে কি-না তা অন্য আলোচনা তবে উন্মাদ আশ্রমে কাক, ভ্রমর আর গগণবাবুর জানালাহীন বাড়ির ব্যপারগুলিতে যাদুর মোহনীয়তার ঘাটতি ছিল। হয়ত জহিরকে অতীতে ফেরাতে অনুষঙ্গ হিসেবে এগুলোর দরকার ছিল। আর মানুষের জীবনের এই অন্তর্যাত্রাকেই জহিরের প্রতারক ও মানুষ ঠকানোর গল্প দিয়ে দেখানো হয়েছে।

উপন্যাসের শিক্ষনীয় বিষয় ও চিন্তা-জাগানিয়া তথা মোরাল অব দ্য স্টোরি শেষ লাইনেই পাওয়া যায়।

-"মৃত্যু যদি এত সুন্দর হয়, জীবন না জানি কত সুন্দর ছিল"-
Profile Image for Ruku.
3 reviews
February 22, 2025
''ভাই আপনি পাগল হলেন ক্যানো?''

———

পাগলদের জীবন কেমন? আমাদের আশেপাশে মাঠে ঘাটে অনেক পাগল দেখি আমরা পাগল দেখলে কি করি? আড় চোখে তাকিয়ে থাকি! কেউ কেউ তো পাগলের সাথে পাগলামো শুরু করি, নানাবিধ প্রশ্ন ক��ে তাদের উত্তেজিত করি। গ্রামের রাস্তাঘাটে তো পাগল দেখলে মানুষ ডিল ছোড়াছুড়ি শুরু করে। যেন তারা মানুষ নয়! অদ্ভুত কোনো জীব!
___

আচ্ছা বাদ দেন আসেন দুই বন্ধুর একটা কাহিনী বলি...

ধরেন আপনার বা আমার এক বন্ধু হঠাৎ করে খু ন হলো। আচ্ছা ধরে নিলাম আমার বন্ধুই খু ন হলো। আর খু ন টাও হলোও আমার ঘরে।আমরা দুই বন্ধু রাতে একসঙ্গে গল্প-আড্ডা দিতে দিতে একসময় আমি ঘুমিয়ে যাই আর ঘুম ভেঙে দেখতে পাই আমার ঘরটা র ক্তে ভেসে যাচ্ছে, আমার বন্ধুর বুকে একটা ৪ ইঞ্চি ছু ড়ি ডোকানো।
কি করবো আমি? পালিয়ে যাবো সেখান থেকে পু লি শে র ভয়ে? পালিয়ে কোথায় যাবো? কাকে বলবো আমি খু ন করিনি? আমি খু নি নই!
কেউ আমাকে বিশ্বাস করবে না, কেউ আমার পক্ষে সাফাই গাইবে না। সবার চোখে আমি অ প রা ধী!

ঘুমঘুম চোখে আমি পালিয়ে গেলাম এক পরিত্যক্ত বাড়িতে। সেখানে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। চোখে খুলে দেখতে পেলাম সরু পায়ের কুচকুচে কালো এক কাক আর বাড়িটাতে অদ্ভুত কিছু মানুষের বাস। কেউ কবি, কেউ শিল্পী, কেউ বা বস্ত্রে বৈরাগ্য, কেউ আবার অধিক বস্ত্রে সজ্জিত!

ঠিক যেন পাগলের কারখানা! যেন উন্মাদ আশ্রম!

আর সেখানে আমার একমাত্র সঙ্গী সেই কাকটি। এখানে প্রতিটা মানুষ যেন বিশাল জ্ঞানী সমাজের মানুষ যাদের পালগ বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের কথা শুনে এবং তাদের মাঝে থেকে মাঝে মাঝে নিজেকে মানষিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়।

কি অদ্ভুত তাই না!
তার থেকেও বেশি অদ্ভুত কাকটা কথা বলে মানুষের ভাষায় যে ভাষা আপনি আমি কথা বলি। আর তার কথা আমি ছাড়া কেউ শুনতে পায় না যে পাখিকে আমি ছাড়া কেউ দেখতে পায় না। সে বাড়ির এক জ্ঞানী মানুষের সাহয্যে কাক টার দিলাম ভ্রমর, কারণ কাকটা আমার ভ্রম আর ভ্রমর কালো হয়।

গল্পের মূল চরিত্র 'জহির' ছোট বেলা থেকেই তার পঙ্গুত্বের জন্য মায়ের প্রিয় পাত্র ছিলো সে, আশেপাশের মানুষগুলো এবং মেয়েদের থেকে ভালোবাসা না পেলেও করুণা এবং সমবেদনা পেয়ে এসেছে বরাবর। তার বাবা গত হন এক ভয়ানক মরণব্যাধীতে তারপর মাও বেশি দিন টেকেনি তা জীবনসঙ্গীর দুঃখে হোক আর মরণব্যাধী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিসর্জন দেওয়া গয়নার শোকেই হোক দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরলোকগমন করেন। এরপর ভিটেমাটি বেচে সব অর্থ-কড়ি ভাইদের সাথে ভাগ-বাটোয়ারা করে জহির পাড়ি জমায় চাকরির খোজে যান্ত্রিক শহরে। শহরের প্রাচুর্য এবং সুন্দরী বৌয়ের লোভে লালায়িত হয়ে জীবনে সচ্ছলতার আশায় দুষ্টু লোকের খপ্পরে নিজের শেষ সম্বল টুকুও হারাতে হয় তাকে।

স্বপণ বা মিহিরের মতো লোকের অভাবে নেই এই শহরে। এদের খপ্পের পড়া মানুষ কেউ বা নিজের সর্বস হারিয়ে সারাজীবন আপসোস করে ম রে, কেউ বা নিজের সর্বস হারিয়ে শি কা র থেকে শি কা রি হয়ে ওঠে।

জহির নিজের বোকামি থেকে শিক্ষা নেয়। নিজের ভেতরের আবেগ ভালোবাসা সমস্তটা ডেকে দেয় ঘুমের অদৃশ্য এক চাদরে। যে চাদর সরাতে পারে না কোনো অসহায় পিতার চাহনি, ভালোবাসার জন্য আকুল কোনো নারীর চোখ বা মৃ ত্যু পথযাত্রী কোনো বালকের দৃষ্টি। নিজের ছল-চাতুরীতায় একের পর এক লুট করতে থাকে শহরের অসহায় মানুষদের। সেই টাকায় তার শহুরে জীবন চলতে থাকে। তারপর হঠাৎ করেই একদিন দেখা হয় কাদেরর সঙ্গে। দু'জনে মিলে তৈরী করে 'বিমল-কুমার' জুটি। অসহায় মানুষদের ফাঁদের ফেলার নিত্য নতুন উপায় আবিষ্কার করতে থাকে।
এভাবে চলতে চলতেই হঠাৎ একদিন খু ন হয় কাদের। দিশেহারা হয়ে পড়ে জহির। যে মানুষের আবেগ ভালোবাসা ঘুমের চাদর সরিয়ে আরমোড়া পর্যন্ত ভাঙ্গে না, যার চোখে অসহায় মানুষ বা ভালোবাসার জন্য অনুভূতি জাগে না,, সে একের পর এক উপলব্ধি করতে থাকে পৃথিবীতে সবাই খারাপ মানুষ নয় সবার মন পাথর নয়!
মানুষ অনুভূতিশীল জীব মানুষের মনে দয়া-মায়া, ভালোবাসা স্হান আছে।
কিন্তু যে মানুষ লোক-ঠকানোকে পুঁজি করে চলে, যার মনে অসহায়ত্ব বা ভালোবাসার জন্য বিন্দু পরিমাণ স্হান নেই যে নিজের সঙ্গীকে বিশ্বাস করে না সে তার সেই সঙ্গীর মৃত্যুতে এতোটা ভেঙে পড়লো!

নাকি এর পেছনে আছে অন্য কোনো রহস্য!

সত্য আবিষ্কারে বেড়িয়ে পড়ে পরিত্যক্ত বাড়িটি থেকে। সঙ্গী? সেই কুচকুচে কালো কাকটা।
একের পর এক সামনে আসতে থাকে তার সারা জীবনে করা পাপ সমূহ। জীবনে কত মানুষকে দুমড়ে-মুচরে নিঃশেষ করে দিয়েছে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে, গোড়া থেকে স্বমূলে উপড়ে ফেলেছে কত মানুষকে! ভিটে মাটি ছাড়া করিয়েছে কত অসহায় পরিবারকে, শেষ সম্বল টুকুও শুষে নিয়েছে কত মানুষের!
মুষড়ে পড়তে থাকে জহির। তবে কি অনুশোচনা! নাকি কর্মফল!
একেক টা ঘটনা একেরপর এক সামনে আসতে থাকে আর ভ্রমরের একটা একটা পালক ধীরে ধীরে সবুজ হতে থাকে!
এখন আর ভ্রমরকে ওতোটা খারাপ লাগছেনা। আর কলঙ্কিত মনে হচ্ছে না।

পাঠপ্রতিক্রিয়া:

'ওবায়েদ হক' এর বই আগে কখনো পড়া হয় নাই। 'উন্মাদ আশ্রম' বইটাই প্রথম পড়া। পাঠকমহলে ওনার লেখার সুনাম বেশ ভালো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যারা ওবায়েদ হক এর বই পড়েছেন তদের মুখে তার প্রসংশা লেগে আছে।
মায়ের হাতের কোনো রান্না ভীষণ মজা হলে স্বাদটা যেভাবে মুখে লেগে থাকে ঠিক তেমন।
কোনো লেখক তার লেখার মধ্যে দিয়ে পাঠকের মন ছুয়ে দিতে না পারলে নিশ্চয়ই পাঠকগণ এমন প্রশংসা পঞ্চ-মুখ হয়ে ওঠে না!

লেখকের লেখায় আসলেই কোনো এক সম্বোহনী ক্ষমতা লুকিয়ে আছে। যে লেখার চরিত্র গুলো আপনার পাঠের মধ্যে দিয়ে জীবন্ত হয়ে উঠবে, যে গল্প আপনার আমার আশেপাশে অহরহ ঘটে থাকে, যে লেখা আপনাকে ভাবাবে।
খুব সাধারণ ভাবে গল্পটা শুরু হলেও ধীরে ধীরে গল্পের কাহিনীগুলো গভীরে যেতে থাকে। একেরপর একর নতুন ঘটনার শুরু হতে থাকে।
পরার সময় আপনি ভাবতে বাধ্য হবেন আপনার পাশের বাড়ির ভাই বা আপনার কোনো এক দুঃসম্পর্কের অসহায় আত্মীয়ও এমনভাবে এক অপরিচিত ব্যাক্তির কাছে নিজের সমস্ত অর্থকড়ির শেষ বিন্দুটাও বিসর্জন দিয়ে এসেছে।
বইটার প্রডাকশন আর কাহিনী পাঠকদের নিরাশ করেনি।
আমারও বেশ ভালো লেগেছে, বইয়ের প্রিন্টিং, অক্ষক বিন্যাস আর বইয়ের মূল বিষয় 'গল্পের প্লট' সবকিছু বেশ সাজানো গোছানো সুন্দর।
আমার কাছে সবচেয়ে ভালোগেলেছে বইয়ের প্রচ্ছেদ আর উৎসর্গ।
ওবায়েদ হক এর বই পড়ার ইচ্ছা অনেক দিন থেকে পোষণ করছিলাম। তাই এবার বইমেলায় তার নতুন বই আসার খবর জানা মাত্র সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম এবার তার বই পড়বোই আর শুরুও করবো ২৫ এর প্রকাশিত বইটা দিয়েই। যেমন ভাবনা তেমন কাজ পড়ে ফেললাম 'ওবায়েদ হক' এর লেখা 'উন্মাদ আশ্রম'। তবে লেখকের লেখনশৈলীর প্রশংসা শুনতে শুনতে মনে হয় একটু বেশি এক্সপেট করে ফেলেছিলাম আমি। বইটা আমার ভালো লাগলেও আহামরি কিছু মনে হয় নাই। তবে এর মানে এমন না যে আমার বইটা খারাপ লেগেছে বা ভালো লাগেনি এমন কিছু। শুধু বলবো যতটা আশা করেছিলাম ততটা না পেলেও নিরাশ হইনি।

শেষকথা:

ছোট্ট এই ১১২ পৃষ্ঠার বইতে লেখক মানুষের জীবনে ভালো-খারাপ দু'টো দিক-ই তুলে ধরেছেন। দেখিয়েছেন সমাজের ধনী-দরিদ্র মানুষদের অবস্থান। কেউ জীবনের তাগিদে ছুটে চলেছে অবিরাম আবার কেউ অপেক্ষায় রয়েছে সেই ছুটে চলা মানুষদের ফাঁদে ফেলার..

জীবন এক অদ্ভুত সুন্দর নাটকের মঞ্চ। এখানে বেচে থাকতে হলে সকলকেই এই নাটকে অংশ নিতে হবে, হয়ে উঠতে হবে নাট্যকার! আর এই নাটকের শেষ কোথায়, সেটা ঠিক করবে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।

বই: উন্মাদ আশ্রম
লেখক: ওবায়েদ হক
প্রকাশক: বায়ান্ন (৫২')
ব্যাক্তিগত রেটিং: ৪/৫
Profile Image for Arafat Rifat.
4 reviews2 followers
April 8, 2025
ওবায়েদ হকের লেখার মান নষ্ট হয়ে গেছে, সর্বশেষ দুটো বই পড়ে এটাই মনে হয়েছে।

উন্মাদ আশ্রমে সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। নীল পাহাড়, জলেশ্বরীর লেখকের কাছথেকে এমন লেখা কখনো আশা করিনি। প্রকাশকেরও গাফিলতি চোখে পড়েছে।

ওবায়েদ হকের বই আর চোখ বন্ধ করে কেনা যাবে না।
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
March 12, 2025
ঠিক কাহিনী জমেনি এবার! তারপর ও ৩ ষ্টার দিলাম। কেন দিলাম? জানিনা। বোধহয় আগের বইগুলোর ভালো লাগা থেকে।
Profile Image for Parvez Alam.
306 reviews12 followers
April 15, 2025
গত বছর লেখকের "আড়কাঠি" পড়ে হতাস হয়েছিলাম কিন্তু এইবার আর লেখক হতাস করেনি। বইটা আসলে থ্রিলার, ওয়াবেদ হক যে টুইস্ট দিয়ে বই লিখবে সেটাই আশা করি নাই।
Profile Image for Fahad Islam.
55 reviews1 follower
April 18, 2025
আমি যাকে খুঁজছিলাম, তাকে পায়নি—কিন্তু যাকে পেলাম, তিনি তার অনুপস্থিতিকেও পূর্ণ করে দিলেন।
Profile Image for Mahrufa Mery.
202 reviews115 followers
November 21, 2025
খারাপ না। আমার আবার বইয়ের রিভিউ দেখার অভ্যাস আছে। দেখলাম এর রিভিউ অত ভাল পরে নাই। কিন্তু আমার ভালই লাগসে। লেখকের লেখার ডাইভার্সিটি বাড়তেসে। এটা ভাল।
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
Read
February 20, 2025
বই শেষ হলেও গল্প বা প্লট কোনোটাই আমার মাথায় সেট হয়নি৷ হলে বলতে আসবো।
Displaying 1 - 30 of 57 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.