রিকশাচিত্র, কৃষি, দেশভাগ এবং চলচ্চিত্র-দেশীয় সংস্কৃতির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো এই কয়েকটি বিষয় ঘিরে আবর্তিত হয়েছে ডকুফিকশন ঢঙে এবং একই সাথে প্রথম ও তৃতীয় ব্যক্তির বর্ণনাভঙ্গিতে লেখা উপন্যাসটির কাহিনি। পৃথিবীর কেউ নয়, এমন দুজন প্রতিবেদকের নির্মোহ চোখে উঠে এসেছে ধানচাষ নিয়ে সিন্ডিকেটের রাজনীতি, কৃষক হয়েও চাষ করতে না পারার যন্ত্রণা, নগর অভিবাসন, নৈতিক স্খলন আর আত্মপরিচয় ভুলে নিজেও হয়ে ওঠা তাদেরই মতো, যাদের কারণে বাংলার কৃষি আজ মুমূর্ষু। প্রসঙ্গক্রমে চলে এসেছে রিকশাচিত্রের দর্শন আর সাংস্কৃতিক সেতু হিসেবে এপার-ওপার বাংলার চলচ্চিত্রের প্রভাব-শ্রেণিবিভাজনে চলচ্চিত্র-রুচির পার্থক্য। সাতচল্লিশের প্রেক্ষাপটে দেখা দিয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া দেশে কীভাবে উত্তম কুমার হয়ে ওঠেন দুই বাংলারই ফ্যাশন-আইডল আর কী করে গণ-আন্দোলনের প্রাক্কালে নায়িকা কবরীর প্রেমে পড়ে একজন সিনেমার পোস্টার আঁকিয়ে উন্মাদপ্রায় হয়ে যায়, মুক্তিযুদ্ধের কী প্রভাব পড়ে চলচ্চিত্রশিল্পে আর চলচ্চিত্রের পোস্টার কী করে হয়ে ওঠে যুগপৎ ব্যক্তিগত আর জাতীয়। পাশাপাশি আছে উনবিংশ শতকে ব্রিটিশ চা-ব্যবসায়ীদের শিকার হওয়া দুজন নর-নারীর উন্মাতাল প্রেম, বিতাড়ন, পাহাড় থেকে আদিবাসী গ্রামের আশ্রয় শেষে সমতলে এসে কৃষকে বিবর্তিত হওয়া, ভাষার রূপান্তর, নীলচাষের ষড়যন্ত্র, ধর্মবিভাজন আর টিকে থাকার যুদ্ধের ইতিহাস। সুদূর এবং অদূর অতীত এসে বর্তমানের সাথে মিশে এই উপন্যাসকে করে তুলেছে ত্রিকালদর্শী।
ইমরান খানের জন্ম বাগেরহাটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। সেবা প্রকাশনীর রহস্য পত্রিকা দিয়ে ছাত্রজীবনে লেখা প্রকাশ শুরু। পরবর্তীতে দৈনিক প্রথম আলো, কালি ও কলম, শব্দঘর, দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক সংবাদে গল্প লেখেন। ‘ যন্ত্র ও জন্তু’ তাঁর দ্বিতীয় গল্প সংকলন। প্রথম গল্প সংকলন ‘জলাধারে স্রোতস্বিনী’ ২০১৮ সনে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। প্রথম উপন্যাস ধাতব সময় এর জন্য পেয়েছেন কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০১৫। তাঁর ছোটগল্প ’জ্যামিতিক জাদুকর’ ২০১৮ সনে কমনওয়েলথ ছোটগল্প পুরষ্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পায়।
নিরীক্ষাধর্মী ও অভিনব এ উপন্যাসে অনেকগুলো স্তর। প্রথমে কৃষক সাত্তারের বঞ্চিত হয়ে শহরে এসে রিকশাচালক হওয়া, তার সূত্র ধরে রিকশা পেইন্টার দয়াল দাশ এবং তার মাধ্যমে কাহিনির মূল কুশীলব ভাদবীর ও অখিলা প্রবেশ করে গল্পে। প্রথমে পাঠকের মনে হতে পারে লেখক অস্থিরচিত্তে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, এক গল্প থেকে অন্য গল্পে ছোটাছুটি করছেন কিন্তু পড়তে পড়তে বোঝা যায় পুরো কাহিনি পেঁয়াজের খোসার মতো স্তরবিশিষ্ট হলেও তাদের আন্তঃসংযোগ বেশ গভীর। কাহিনি প্রথম ও তৃতীয় পুরুষে বর্ণিত আর তা বয়ান করছে ভিনগ্রহের প্রতিবেদকরা।তাদের চোখে ধরা পড়ে বাংলার শ্রমজীবী মানুষের শত শত বছরের বঞ্চনা ও রক্তাক্ত হওয়ার ইতিহাস। কিন্তু প্রতিবেদকদের "নির্মোহ " হতে হবে, তাই তারা স্থির ও অকম্পিতভাবে ইতিহাস বর্ণনা করে যায়।এ বর্ণনায় অতিশায়ন নেই, রাখঢাক নেই, আবার নেই করুণাও। প্রোপাগান্ডা উপন্যাসের মতো একপাক্ষিকভাবে তাদের মানবিক সত্তা অস্বীকার করে শুধু নির্যাতিত হিসেবে উপস্থাপিত না হয়ে তারা রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হন। ব্রিটিশ শোষণ, আদিবাসীদের সংগ্রাম, দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা চলচ্চিত্র, রাজনৈতিক অস্থিরতা জড়িয়ে আছে পুরো কাহিনিতেই। প্রতিবেদক তথা লেখকের বয়ানে ও বইয়ের শিরোনামে চাপা কৌতুকের ছাপ সুস্পষ্ট। রিকশা পেইন্টিং নিয়ে দীর্ঘ এক উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না,
"রিকশাচিত্রে আপনি জয়নুল আবেদীনকে খুঁজবেন না দয়া করে। এটা আমজনতার পেইন্টিং। মানুষের লোভ, পশুপ্রবৃত্তি, প্রেম, ঘৃণা, ধর্মাবলম্বন সবই এই রিকশাচিত্রে এসেছে।.... রিকশাচিত্রে ন্যায়-অন্যায় বা উচিত-অনুচিত খুঁজতে যাবেন না, এখানে খুঁজবেন আমজনতা।.... এইসব চিত্রে মাথা ঘামানোর উপকরণ কম, এসব চিত্রে বিশ্বদরবারে উপস্থাপিত উচ্চমার্গীয় শিল্পকর্মের মতো কোনো নিগুঢ় তাৎপর্য লুকিয়ে নেই যে একজায়গায় দাঁড়িয়ে থুতনি চুলকাতে চুলকাতে আধাঘণ্টা তাকিয়ে থাকবেন। রিকশা একটি বাহন, এই বাহন তৈরি করা হয়েছে চলার জন্য, রিকশায় আঁকা চিত্রগুলোও চলমান। আমজতার আবেগানুভূতি জানলেই এক নজরে রিকশাচিত্রের তাৎপর্য ধরে ফেলা সম্ভব।"
লেখক হয়তো শ্লেষাত্মকভাবে বলতে চান, রিকশাচিত্রে আঁকা ঝকঝকে উত্তম কবরীর ছবি বা তাদের সিনেমার মতো বাস্তবে নির্যাতিতরা সুখী উপসংহার পায় না। রিকশাচিত্রের মধ্যে গভীর কিছু নেই বলে হয়তো লেখক হিসেবে নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করতে চান। কারণ যাদের জন্য লেখা, তারা কি আদৌ এর সুফল পাবে? তবু সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে, লিখে যাওয়া - প্রতিবাদ করাই লেখকের জীবনধর্ম। দিনশেষে সবই নিষ্ফল ও শূন্য।
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে সিনেমায় ব্যবহৃত ট্যাগলাইন। স্বাভাবিকভাবেই তাই সিনেমার গল্প আছে। তবে সিনেমা এখানে মূখ্য নয়। তিনটি আলাদা সময়ের আলাদা গল্পের মূল চরিত্র বলতে গেলে শোষণ-শোষিত এবং তাদের প্রতিক্রিয়া।
লেখক গল্পগুলো এনেছেন প্রতিবেদকের মারফতে, যিনি রিক্সাচালকদের নিয়ে একটা ভিন্নধর্মী নিবন্ধ লেখার কথা ভাবছেন। শুরুর গল্পের চরিত্র সাত্তার গ্রামে কৃষিকাজের সাথে জড়িত ছিলো। কিন্তু সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সংসার চালানো মুশকিল বলে সে ঢাকায় চলে আসে কাজের সন্ধানে। খুচরো কিছু কাজ করে সে থিতু হয় রিক্সাচালক হিসেবে। এই অংশটুকুতে কৃষকদের বর্তমান দূরবস্থা, একজন ব্যাক্তির রিক্সাচালক হয়ে উঠার গল্পের চেয়েও প্রাধান্য পেয়েছে এসব বিষয়ে লেখকের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও অভিমত।
রিক্সা নিয়ে নানান আলোচনা করতে করতে চলে আসে রিক্সা পেইন্টিং এবং একজন পেইন্টারের কথা। শুরুতে দয়াল দাস কীভাবে পেইন্টার হলো সেই গল্প শুনতে কিছুটা পেছনপানে ফিরতে হয়। মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন সেই গল্পে যুদ্ধ নেই তবে তার আবহ আছে, প্রভাব আছে। দয়াল দাস এবং তার গুরুর চরিত্রটা শক্তিশালী হলেও বইতে স্থান পেয়েছে কম। কারণ এরপরই লেখক আমাদের আরো পেছনে নিয়ে যান দয়াল দাসের পূর্বপুরুষের গল্প শোনাতে।
এবারের ঘটনা ব্রিটিশ শাসনামলে। তাদের সাম্রাজ্যবাদের যাতাকলে পিষ্ট হওয়ার গল্পের সাথে সমানতালে চলে বেচে থাকার লড়াই। এখানে দুই প্রধান চরিত্র ভাদবীর এবং আখিলা বাঙালি নয়। তাদের এই অঞ্চলে আসার ঘটনাবলীও খুব একটা সুখকর নয়। এখানে চা বাগান, পাহাড়, তেভাগা আন্দোলনের কথাও চলে আসে। এতোকিছু না আনলেও বোধ হয় চলত। তবে তাদের বেচে থাকার সংগ্রামের কথা পড়তে ভালো লাগে। এই গল্পটা এতোটাই দীর্ঘ হয় যে একসময় ভুলেই যাই প্রতিবেদক দয়াল দাসের পূর্বপুরুষের কথা শোনানোর কথা বলেছিলেন। আলাদা করেই অংশটুকু নিজস্ব আবেদন তৈরি করতে পেরেছে।
আখিলা-ভাদবীর গল্প শেষে দয়াল দাসকে আর ফিরিয়ে আনেন না লেখক। তার বদলে তিনি ফেরেন রিক্সাচালক সাত্তারের কাছে। এবার তার রোজকার কর্মকান্ড এবং চিন্তাধারায় আরো ভালোভাবে প্রবেশের সুযোগ দেন। এই অংশটার তীব্রতা মারাত্মক।
তিনটা আলাদা গল্পের মাঝে যোগসূত্র সামান্যই, তাতে অবশ্য সমস্যা হয়না খুব একটা। আলাদা করে ঘটনাগুলো ভিন্ন এবং আগ্রহ জাগাতে সক্ষম।
সংযোজনঃ বইতে যৌনদৃশ্যের রগরগে বর্ণনা আছে কয়েকটা। তবে সেগুলো অপ্রয়োজনীয় নয়। শুধু এসব বর্ণনা করেই ক্ষান্তি দেননি বরং সেক্স ব্যাপারটাকে ট্যাবু করে রাখা, এড়িয়ে যাওয়া নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন। শেষদিকে রিক্সাচালক সাত্তারের ঘটনায় প্রচুর খিস্তি আর চলিত শব্দের ব্যবহার আছে। সেখানে প্রতিবেদকের কথোপকথনে বলেন "চুদাচুদি, শুনতে খারাপ শুনাচ্ছে? তবে পতিতাসঙ্গ লেখে দেন"। অন্য জায়গায় এরকম বেশ্যা, খানকি শব্দের বদলে দেহপসারিনী লিখে মান উদ্ধারের কথা বলেছেন।
খুব সময় নিয়ে (মাঝেমধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত) আস্তেসুস্থে নাটাই থেকে সুতা ছেড়ে ভালোভাবে ঘুড়ি ওড়ানো হলো, কিন্তু গুটিয়ে নেওয়ার মুহুর্তে হ্যাঁচকা টান মেরে সব ভণ্ডুল করে দেওয়ার মতো ব্যাপার বেশ কয়েকবার এই উপন্যাসে ঘটেছে। ভাদবীরের তীরে ইংরেজ বধের কারণ ও পরিণাম জানা যায় না। তবে ভাদবীরের যে কিছু হয়নি তা বোঝাই যায় এবং তখন মনে হয় ইংরেজরা এত সহজে ছেড়ে দিল (যতই তাদের খারাপ সময় যাক)! এমনকি হত্যা পরবর্তী প্রতিক্রিয়াও লেখক জানাতে আর ইচ্ছুক হন না।
আর অসঙ্গতির কথা কী বলব! অখিলার সঙ্গে ভাদবীরের সম্পর্কের বাঁধন আলগা হচ্ছিল ঠিক আছে, তাই বলে ২০ বছর পরে হঠাৎ তার ভাই আর ছেলে আসলো (ভাদবীরকে তারা কীভাবে খুঁজে পেল আর দেখামাত্রই চিনে ফেলল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়) আর সে সব ফেলে এমনকি অখিলাকে কিছু না বলে রওনা দিল আদিভিটা দক্ষিণ ভারতের উদ্দেশে! ১৭-১৮ বছরের ছেলেকে প্রৌঢ় ভাদবীর কীভাবে কোলে নিয়ে হাঁটা দিল, আর এত বড় ছেলেই বা কেন বাপের কোলে ওঠে আঙুল চুষতে লাগল, জানি না। ব্রিটিশ রাজের অন্তিম সময় চলছিল, জমিদার ইরাজ ভূঁইয়া আর নায়েব গণপতি সেন তাই প্রজাদের সঙ্গে নরম আচরণ করছিল, প্রজাদের সঙ্গে এদের বড় ধরনের বিরোধের কথা কোথাও নেই, উল্টো এদেরকে দুর্বল আর জমিদার ও নায়েব হিসেবে তুলনামূলক ভালো বলেই দেখানো হয়েছে, কিন্তু হঠাৎই দুর্গাপূজার নাম করে সব কৃষককে এক জায়গায় জড়ো করে ইংরেজদের দিয়ে কচুকাটা কর���নো হলো। আর বলা হলো এই হচ্ছে তেভাগা আন্দোলন (যত আলগোছেই হোক, সবকিছু লেখকের ছুঁয়ে যাওয়া চাই)। কৃষক, জমিদার আর ইংরেজদের এই যুদ্ধে অখিলাকে দেখা গেল অতিমানবী রূপে। তীর-ধনুক দিয়ে সে একাই বধ করে ফেলল শত্রুপক্ষকে। এবং তার ছোড়া তীরে বিদ্ধ হয়ে কল্যাণীর মারা যাওয়া আর কল্যাণীর সন্তানকে (যে কি না ভাদবীরেরই ঔরসজাত সন্তান) নিজের জিম্মায় নেওয়াকে অতি-নাটকীয় বললেও কম বলা হয়। ভিনগ্রহী দুই প্রতিবেদক সুন্দর সুন্দর বাংলা শব্দ সহযোগে প্রতিবেদন তৈরি করে, অথচ টাকা কী বস্তু তারা তা জানে না! কী যে বিরক্তিকর ছিল এদের কথোপকথন!
রিকশা পেইন্ট আসলো, তার কারণে আসলো পেইন্টার দয়াল দাস, এরপর এসেছে দয়াল দাসের পূর্বপুরুষের কাহিনী (বইয়ের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে এই কাহিনী), এসব না আসলে কী অন্য যে গল্প অর্থাৎ সাত্তারের গল্প, সেটার উনিশ-বিশ হতো? হতো না। দুর্বলভাবে জোড়া দিয়ে দুই টাইমলাইনে দুইটা আলাদা গল্প বলা হলো। ইমরান খানের গদ্য মন্দ নয়, আবার প্রশংসা করার মতোও কিছু নয়, চলনসই আরকি। কিন্তু সামগ্রিকভাবে উপন্যাসটা তা-ও না। খুবই হতাশ হলাম পড়ে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
শ্রেষ্ঠাংশে উত্তম ও কবরী। নামটাই আগ্রহজাগানিয়া। উপন্যাস পাঠের শেষে সেই আগ্রহ পরিপূর্ণ হওয়ার আনন্দটা থাকল। পরিপূর্ণ কী আসলে? একটু আফসোস তো থাকেই। থাকছেও।
প্রথমে বলে নেওয়া ভালো মূলত যে বিষয়গুলো নিয়ে উপন্যাস আবর্তিত হয়েছে তার মূল বিষয় হচ্ছে নিম্নবিত্তের জীবন। আরও যথার্থভাবে বললে, কৃষি, রিকশাচালকের জীবন, একজন রিকশা পেইন্টারের কবরীকে নিয়ে অবসেশন। এটা একটা টাইমলাইনের গল্প। আরেকটা টাইমলাইন ডিল করেছে সেই রিকশা পেইন্টারের আদি পুরুষ ভাদবীর ও তার প্রেমিকা/ সাথী অখিলার গল্প, যেই গল্পে এসেছে ব্রিটিশ শাসনের সময়, কৃষক আন্দোলন, চা বাগানের অত্যাচারের গল্প। ( এগুলো আমার আগ্রহের জায়গা নয়)
আমি যখন পড়তে শুরু করেছিলাম অভিনব ন্যারেটিভ স্টাইলে গল্পটা একটু স্লো শুরু হলেও রিকশা পেইন্টার দয়াল দাসের গল্পটা আসতেই আগ্রহ অসীমে উঠে যায়। বিশেষ করে উর্দু সিনেমার ছবি আঁকা নিয়ে তার ভেতরে যে অন্তর্গত দ্বন্দের সূচনা হয় আমাকে আভাস দেয় উপন্যাসটা হয়তো এই দয়াল দাসকে নিয়েই হবে। লেখক আমার আগ্রহ বজায় রাখার জন্য অন্য টাইমলাইনে ঝাঁপ দেয়। ঐ টাইমলাইনটা নিজেই আলাদা একটা স্বতন্ত্র উপন্যাস হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে চাইলে দীর্ঘক্ষণ পর লেখক আবার তাকে বর্তমান টাইমলাইনে নিয়ে এলেও দয়াল দাসের গল্প বরং চলে যায় রিকশাচালক সাত্তারের জীবনে, যে মূলত গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে কৃষির সিন্ডিকেটের কারণে। দুই টাইমলাইনে আমার চাওয়া মতো গল্পটা না এলেও ইমরান খানের ভাষার ওপরে দুর্দান্ত দখল সেই আক্ষেপটা মিলিয়ে দিতে পারে।
তবে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, পরস্পরের ভাষা না বোঝা ভাদবীর আর অখিলা যে নতুন ভাষা শিখে দীর্ঘ সব সংলাপে যায়, সেটা কী বাস্তবতার নিরিখে উতরে যায় কিনা?
ইমরান খানের বেসাত ও বসতিও পড়ে ফেলতে হবে। আমাদের সময়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক।