কোলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র ওয়েলেসলি স্ট্রিট এবং পিটার্স লেনে অবস্থিত মডার্ন ইন্সটিটিউশনকে একবাক্যে আদর্শ স্কুল বৈ অন্য কোনো বিশেষণে ভূষিত করবার জো নেই। স্কুলের প্রধান ক্লার্কওয়েল সাহেব স্বদেশী লোক না হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা ও শিক্ষার্থীর প্রতি অনুরাগ তাঁকে করেছে অনন্য। লোকে তাই স্কুলটাকে ক্লার্কওয়েল সাহেবের স্কুল বলেই বেশি চেনে। এই স্কুলকে ঘিরেই জীবন কেটে যাচ্ছে যদুবাবু, ক্ষেত্রবাবু, নারায়ণ বাবু, মি: আলম, জ্যোতির্বিনোদ, রামেন্দুবাবু সহ আরও অনেকের। সাথে আছেন নিচু ক্লাসে ইংরেজি পড়ানো তরুণী মিস সিবসন। কিন্তু একসময় এই দেদীপ্যমান জ্ঞানের আঁতুড়ঘরেই গড়ে ওঠে নানান ভ্রান্তির বেড়াজাল। এরই মাঝে দামামা বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। শিক্ষক মহলের নিকট কারাগারসম এই চার দেয়ালের স্কুলটা সহসা হয়ে ওঠে এক মায়ার আশ্রয়। অথচ সেই স্কুলে কান পাতলে আজও শোনা যায় ক্লার্কওয়েল সাহেবের সেই অমোঘ বাণী “যদি না পোষায়, মাই ডোর ইজ ওপন…”
Bibhutibhushan Bandyopadhyay (Bangla: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bangali author and one of the leading writers of modern Bangla literature. His best known work is the autobiographical novel, Pather Panchali: Song of the Road which was later adapted (along with Aparajito, the sequel) into the Apu Trilogy films, directed by Satyajit Ray.
The 1951 Rabindra Puraskar, the most prestigious literary award in the West Bengal state of India, was posthumously awarded to Bibhutibhushan for his novel ইছামতী.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতার এক স্কুলকে কেন্দ্র করে এ উপন্যাসের কাহিনি গড়ে উঠেছে। নিজের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা বিভূতির প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। জানা যায়, লেখক নিজেও ছদ্মনামে উপন্যাসে উপস্থিত (ক্ষেত্রবাবু।) স্কুলের প্রধান একজন ইংরেজ সাহেব,তার নিয়মানুবর্তিতা ও নিষ্ঠার সাথে এদেশের দরিদ্র শিক্ষকরা প্রায়ই পাল্লা দিয়ে পারতেন না। তাদের দিন কাটতো ধারদেনা ও টুইশন করে, অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে। তবু বয়ে চলতো জীবন। আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না বলেই হয়তো অদ্ভুত একতা ছিলো সবার মধ্যে। দারিদ্র তাদের স্বভাবে এনে দিয়েছিলো হীনতা ও কৃপণতা। এদের নিয়ে বিন্দুমাত্র করুণার উদ্রেক করার চেষ্টা না করে শুধু মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন বিভূতি। যদুবাবুর কর্মকাণ্ডে আমরা বিরক্ত হই কিন্তু এর পেছনের কারণ বুঝতে আমাদের সমস্যা হয় না। জীবন এমনই। জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর বোমা পড়ার ভয়ে কলকাতায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া ও মানুষজনের দলেবলে গ্রামে পালিয়ে যাওয়ার বেশ কৌতূহলোদ্দীপক বিবরণ আছে বইতে। "অনুবর্তন" আরো অনেক আলোচনা ও পাঠকের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।
অনেকদিন পর বাংলা সাহিত্যের করুন রস এর সাথে নতুন করে পরিচিত হলাম অনুবর্তনের দারিদ্রতার তীব্রতার মাধ্যমে। হঠাৎ মগ্ধতা আমার ভাষা কেড়ে নেয়। শুধু মুখের না, হাতের ও। চিন্তা গুলোও তখন বড্ড ছটফট করে। মুগ্ধ হলো কি নিয়ে তাই নিয়ে ভাবে! ভাজ্ঞিস বিভূতি-ভূষন বাংলায় জন্মেছিলেন!
স্কুল ছেড়েছি ৩ বছর হতে চললো, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে পরিচয়ের প্রায় ৯ বছর। সেই চতুর্থ শ্রেণীর গণ্ডমূর্খ যখন ছিলাম তখন পথের পাঁচালী হাতে তুলে নিয়েছিলাম। সেই সময়ের আমি আর এই সময়ের আমির মধ্যে বিশাল তফাত। তবুও সেই সময়ের আমি পথের পাঁচালী পড়ে সেই কি কান্না! সেই থেকে ঠিক করে ফেললাম দ্বিতীয় বারের মতো পথের পাঁচালী আর কখনো পড়বো না। ছুঁয়েও দেখবো না বইটা। সেই কথাটা দিব্যি মেনে চলছি এখনো। যদিও জানি যে এখন পড়লে আরো ভালোমতো বুঝবো, কিন্তু ভালোমতো বুঝবো বলেই পথের পাঁচালী আর পড়িনি কখনো। কিন্তু সেই চতুর্থ শ্রেণীর হাবাগোবা আমি বিভূতিভূষণকে আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন হিসেবে মেনে নিলাম।
এরপর একে একে আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী, দেবযান আরো কত বই পড়লাম। তবুও যেন আঁশ মিটে না। শেষমেশ অনুবর্তন নিয়ে বসলাম পড়ার জন্য। খুবই ছোট একটা বই কিন্তু একই সাথে অনেক শক্তিশালী লেখনী। সেই সময়ে আমাদের সমাজে নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষদের করুণ অবস্থা, দুর্দশা উঠে এসেছে।
ক্লার্কওয়েল সাহেবের স্কুলে মাস্টাররা সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনেক খাটনি খাটেন। তবুও অনেক মাসের শেষে বেতন পাননা। অনেকের এত কম বেতনে ঘরে বউ রাখার মতো অবস্থা নেই। প্রত্যেক শিক্ষকই প্রতিদিন ভাবেন, 'এই দিলাম স্কুল ছেড়ে!' কিন্তু শেষমেশ স্কুলের প্রতি টানের কারণে স্কুল এর চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন না। তবুও ছাত্রদের পড়ানোর জন্য, তাদের শিক্ষার আলোয় উজ্জীবিত করার জন্য তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। স্কুলের প্রতি টানের কারণে কোনো শিক্ষক স্কুল ছেড়ে যেতে না পারলেও বোমা হামলার ভয়ে অনেক শিক্ষকদের চলে যেতে হয় সব ছেড়ে।
বইটি পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। খুবই আন্ডাররেটেড একটা বই। আমি এর আগে এটার নাম কখনো শুনিনি। পারলে অবশ্যই পড়ে দেখবেন।
অনুবর্তন আমার খুব পছন্দের একটা উপন্যাস। তারকা আরো কয়েকটা বেশি দেওয়ার উপায় থাকলে অবশ্যই দিতাম। বিভূতিভূষণ এর পথের পাঁচালী , আদর্শ হিন্দু হোটেল , দৃষ্টিপ্রদীপ পড়ার পর আমার কেমন লেগেছিলো মনে করতে পারি না। কিন্তু অনুবর্তন ... অনুবর্তনে একটা অদ্ভুত কিছু ছিলো যেন আপনার মনে হবে উপন্যাসটা শুধু আপনি একা না ; আপনার সাথে সাথে উপন্যাসের চরিত্র গুলোও উপন্যাসটি পড়ছে। আমার পুরো সময়টা মনে হয়েছে যে সত্যিই ওয়েলসলি স্ট্রিটের আর পিটার লেনের মোড়ে ক্লার্কওয়েল সাহেবের ইস্কুলটা ছিলো... সেই ইস্কুলে কিছু শিক্ষক ও ছিলো আর ছিলো...আরও কত যে ছিলো ।
'পথের পাঁচালী', 'অশনী সংকেত','ইছামতী' এগুলো যেমন সর্বজনবিদিত, কেন জানি 'অনুবর্তন' উপন্যাসের সাথে সবাই সেই পরিমাণ পরিচিত নয়।অথচ এই বইটাও সমান প্রশংসার দাবি রাখে।
'চাঁদের পাহাড়' এবং' আদর্শ হিন্দু হোটেল' বাদে বিভূতিভূষণের আর যেসব উপন্যাস পড়েছি তার সবগুলো পড়েই অনেক হাহাকারবোধ হয়েছে।
এই বইটা নিয়ে অনেক আলোচনা হওয়া উচিত। তথাকথিত ভদ্র আর ইতর সমাজের মাঝামাঝি মধ্যবিত্ত সমাজ নিয়ে অনেক কথা হয়৷ কিন্তু আরও একটা স্তর আছে, নিম্ন-মধ্যবিত্ত। এই স্তরকে উপেক্ষা করেননি লেখক, ওনার অন্যান্য লেখার মতোই। কিন্তু এই উপন্যাসটা আলাদা ছিলো, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকসমাজের তৎকালীন সময়ের দুর্দশা! রাখালবাবুর ছোট একটা কথা ছিলো, যেখানে তার প্রতিবেশী পুতুলের বিয়েতে হাজার টাকা খরচ করেন অথচ তার ঘরে খাবার নেই বলে ক্ষেত্রবাবুর পকেট থেকে আট আনা দিতে হয়৷ অর্থের নিষ্ঠুরতা, দারিদ্র্যের নিদারুণ রূপ আর চিরঞ্জীব সামাজিক বৈষম্য সবকিছু ছিলো এখানে। রাজত্বের কলকাঠি যার হাতেই থাকুক, মুঘল বা ইংরেজ কিংবা বাঙালী...বাংলার বেশিরভাগ লোক দরিদ্র ছিলো এবং এখনও আছে৷ এই কঠিন বাস্তব সমসময় জমিদার তালুকদারদের শৌখিনতার জৌলুসে ঢাকা পড়ে গেছে৷ কিন্তু সেই আড়ালে যদুবাবুরা সবকালেই বিনা ���িকিৎসায় মারা গেছেন, সবকালেই তাদেরকে চিন্তা করতে হয়েছে মাসের শেষে কী হবে। অপূর্ব লেখাটি পড়ে বারবার স্কুলজীবনের সকল স্নেহশীল শিক্ষকের কথা মনে পড়েছে। সবাই ভালো থাকুক।
বিভূতি বাবুর লেখা পড়লে কেমন যেন একটা অস্থির লাগে। মধ্যবিত্ততার টানাপোড়েন আর তাতে মানিয়ে নিয়ে মানুষের কোন মতে মাথা গুঁজে টিকে থাকা- এ দেখতে দেখতে অক্ষম ক্রোধে মাথা কুটতে ইচ্ছে হয়। শতাব্দী ধরে এই চলে আসছে,এর কি কোন শেষ নেই?
Anubartan perhaps is Bibhutibhushan Bandyopadhyay's most underrated novel. Gleaned from his life, and the situation in Kolkata (erstwhile Calcutta)in the time of WW II; the novel portrays the turbulent lives of teachers of a school run by an Englishman. Featuring a medley of characters from self-serving teachers to benevolent and dedicated ones - this touching piece of work really moved me. Unlike most of his stories, Anubartan's background is mostly the city...and some glimpses of rural Bengal. It shows the characters devastated by the economic and psychological effects of war and memories. A must read, in my humble opinion.
উপন্যাসটা পড়ার সময় এক ঝটকায় চলে গেলাম স্কুল লাইফে। তখন প্রায়শই স্কুল টিচারদের কাছে প্রাইভেট টিউশনিতে যেতাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তখন শিক্ষকরা নিজের বাসায় পড়াতেন। তাই আমরা শিক্ষার্থীরাও যেন তাদের পরিবারের অংশ হয়ে যেতাম। এছাড়াও ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ায় সরাসরি শিক্ষকদের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। তাই তাঁদের আরও ভালো মতো বোঝার সুযোগ হয়েছিল।
উপন্যাসটা পড়ে যেন সে সময়টাতে ফিরে গিয়েছিলাম। কলকাতার শহরতলীর এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্রিটিশ ক্লার্কওয়েল সাহেব হেডমাস্টার। সেখানে মিস সিবসন, আলি সাহেব, যদুবাবু, ক্ষেত্রবাবুসহ আরও অনেকেই শিক্ষকতায় নিয়োজিত।
তাদের মধ্যে হররোজ নানারকম কার্যকলাপ হয়। শিক্ষকতা পেশায় বেতন কম হওয়ায় সবাই প্রাইভেট টিউশনি করান। ক্লার্কওয়েল সাহেবের কর্তৃত্বে সবাই যেন থরহরি কম্পমান। রামেন্দুবাবু নতুন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার পরে সে কর্তৃত্বে কিছুটা ছেদ পড়ে। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে পড়ে।
একটা সময় সবকিছুরই যেন ছন্দপতন ঘটে। শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের টানাপোড়েনে আটকে যান সবাই। এ স্কুলটা যেন তখন মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে রাখে সবাইকে।
বিভূতিভূষণের সব লেখার চেয়ে একে বেশ আলাদা চোখে দেখতে হয়। কাহিনির প্রকৃতিতে এটি তার অন্যান্য লেখার চেয়ে আলাদা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কলকাতার এক স্কুল ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসে ফুটে ওঠেছে লেখকের নিজের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা। তৎকালীন সময়ের শিক্ষাব্যবস্থারও বেশ ধারণা পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে চায় না, অনেক শিক্ষকই ফাঁক পেলে ঠিকমতো পড়ান না; এ যেন আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সত্যিই শক্তিমান লেখক ছিলেন। কি সহজে জীবনের কঠিনতম অনুভূতিগুলোর বর্ননা দিয়েছেন এই উপন্যাসে। পড়তে পড়তে নিজেকে কখন চরিত্রগুলোর সাথে জড়িয়ে নিয়েছিলাম ধরতেই পারি নি। এক কথায় অসাধারণ উপন্যাস অনুবর্তন।
জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারাটা সবচেয়ে বড় জয়। যে আত্মা আর শ্রী বৃদ্ধির টানে মানুষ গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমায়, সে শহর তাদের হারিয়ে দেয় নানা ঘাত প্রতিঘাতে। শহুরের ধূলোময়লা, শ্যাওলা জমা ঘিঞ্জি বাসা গুলো, আলোহীন নিস্তব্ধ কুটির গুলোতে মানুষ বাঁচতে চায় সুখে। কিন্তু সুখের ছিঁটেফোঁটাও সেখানে থাকে না। ছেঁড়া শার্ট, বগলদাবা করা তাঁলি দেওয়া জুতা নিয়ে শহরে উন্নতির খোঁজ করে মানুষ।
যা নেই, তা দেখানোর তাগিদে ঘুরে। আমি না হয় দুবেলা না খেয়ে থাকলাম, সুন্দর কোর্তা না পড়তে পারলাম তবু কেন মানুষকে বলা আমি সুখে আছি। এই তো মিথ্যে আড়ম্বরপূর্ণতা।
বিভূতি বাবু যা লিখে তার কোনো তুলনা কোনোকিছুর সাথে দেওয়াটা মুশকিল। তার কাঠামোবদ্ধ চরিত্র গুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া মুশকিল। তিনি চরিত্র গুলোকে এমন সুন্দর করে আঁকেন যে ঘৃণা করতে হয় মেকি মিথ্যেকে। যদুবাবার চরিত্রটাকে তিনি এমন করে লিখেছেন, আমি বারবার বিরক্ত হয়েছি তার হিপোক্রেসি দেখে। সে উপন্যাসে না থাকলে কি এমন হতো! তার বড় বড় কথা বলা আমাকে পীড়া দেয়। মাঝে মাঝে আমি পড়তেই চায়নি বইটি। এই ফালতু চরিত্রটা আমাকে শেষ পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয়েছে।
সৌন্দর্য কখনো মানুষের বাহ্যিক আবরণে থাকে না। সৌন্দর্য থাকে সৃষ্টিতে। লেখকের সৌন্দর্য তার গল্প বলায়। তিনি যে নান্দনিকতা দিয়ে কিছু স্কুল মাস্টারের কথা বলেছেন, সাথে যুদ্ধ, ইতিহাসের একটা অংশ, আধুনিক কলকাতা, গ্রামীণ জীবনের সম্পর্ক যেন চরিত্রগুলোর মাঝে সদা স্বপ্ন। সাথে একনিষ্ঠ ভাবে মানুষের কল্যাণকামনা কারী ক্লার্কওয়েল সাহেব যেনো বাঙলার উন্নতির চিত্র।
বইটির সারসংক্ষেপ হলো, কলকাতার একটি স্কুলের মাঝে চাকরী করা শিক্ষদের জীবন ব্যবস্থা ওঠা-নামার বর্ণনা। যদু, শ্রীশ, ক্ষেত্র, নারায়ন, মি: আলম, জ্যোতিবিনোদ, রামেন্দ্রু, সাহেব ও ম্যামের জীবন কথা বলা চলে। স্কুল শিক্ষদের সেই মানুষ গড়া, তাদের ছিন্ন অবস্থা বইয়ের প্রতিটি জায়গায় উল্লেখ করা। শিক্ষক হয়ে তারা মানুষ তো গড়ে তুলছে, নি���েদের কোনো কিছু তারা জীবনে করতে পারেনি। ক্লার্কওয়েল সাহেবের স্কুলে কিছু শিক্ষক ধরনীর রূপ।
"এইটুকু ভাবিয়াই সুখ। এই ছাত্রের দল তাহাদের বাল্যজীবনের শত সুখস্মৃতির আধার তাহাদের স্কুল ও স্কুলের শিক্ষকদের ভুলে নাই..." উপন্যাসটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি বয়েজ স্কুল, যার নাম ক্লার্কওয়েলস মডার্ন ইনস্টিটিউশন। স্কুলটির বিভিন্ন ঘটনা, ছাত্র- শিক্ষক সম্পর্ক এব�� বিশেষ করে শিক্ষকদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা- এসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই উপন্যাসের কাহিনী এগিয়েছে। হেডমাস্টার ক্লার্কওয়েল সাহেব, স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করার জন্য তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম, প্রবীণ শিক্ষক নারাণবাবুর আদর্শ, যদুবাবু, ক্ষেত্রবাবু, জ্যোতির্বিনোদ মহাশয়, নতুন শিক্ষক রামেন্দ্রবাবু, এছাড়াও রয়েছেন মিঃ আলম, মিস সিবসন এবং আরও অনেকে। শিক্ষকদের মধ্যে কেউ আদর্শবান, কারোর বা ফাঁকিবাজ হিসেবে বদনাম, আবার কারোর স্বভাব হেডমাস্টারের কাছে অন্যান্য শিক্ষকদের বদনাম করা। তবে অধিকাংশ শিক্ষকের মধ্যে একটিই কমন ব্যাপার — আর্থিক অনটন। স্কুলের যৎসামান্য বেতন, ছাত্রদের বাড়িতে গিয়ে টুইশন পড়িয়ে সামান্য আয়, অপমান-অসম্মান এভাবেই প্রায় সবার জীবন কাটে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। কোনো কোনো বিশেষ ছাত্রের প্রতি শিক্ষকদের সন্তানসম স্নেহের দিকটিও লক্ষণীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কলকাতার চিত্র উপন্যাসে ফুটে উঠেছে।
বিভূতিভূষণ এর লিখা নিয়ে আমার কিছু নতুন বলার নেই। প্রথমে চমক পেয়েছিলাম আদর্শ হিন্দু হোটেল পরে, দ্বিতীয় বার চমক পেলাম এই বই টি পরে। ওনার মতো করে কেউ লিখে না। একটি স্কুল কে কেন্দ্র করে, স্কুল এর টিচার দেড় ঘিরে, তাদের জীবনের ভয়াবহ দুঃখ কষ্ট ঘিরে লিখা এই বই টি আমার মন কে কেড়ে নিয়েছে। শেষ হয়ে যাওয়ার পর ও মনে পড়ছে হেড মাস্টার ,নারায়ণ বাবু, ক্ষেত্র বাবু, যতীন্দ্র বাবু, যদু বাবু এদের কথা, এদের জীবনের কথা। টাকার অভাবে জীবন চালাতে কি কষ্ট!!!! আহারে শেষ টা কি কষ্টের। এতো কষ্টের স্কুল , এতো হয় হল্লার, এতো রেষারেষি, কিছুই আর থাকলো না। সেই চা এর দোকান। সেই সব টিচার রা একসাথে চা খাওয়া। জীবন হয়তো এমন ই। ঠুনকো.....
খুবই সহজ স্বাভাবিক ভাষায় কিছু সহজ স্বাভাবিক শিক্ষকের কর্মজীবন ও ব্যাক্তিগত জীবনের অন্তর্নিহিত জটিল অনুভূতির এক অনন্য সৃষ্টি। প্রত্যেকটা চরিত্রই কতটা আপন ও প্রাণবন্ত লেগেছে তা আমি শব্দের দ্বারাই বা কীভাবে প্রকাশ করি। মহত্বের মাঝে লুকিয়ে থাকা দূর্বলতা এবং দূর্বলতার মাঝে লুকিয়ে থাকা মহত্বের এক আকস্মিক ঘাত-প্রতিঘাত। বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ যখন নিজের জীবনের সাথে মিলানোর চেষ্টা করলাম তখন যেনো আমার এই আমিত্বই বসবাস করা শুরু করলো উপন্যাসের চরিত্রগুলির মধ্যে।
অনেকদিন পর এমন অনবদ্য ও উপভোগ্য একটি উপন্যাস পড়লাম। প্রতিটি চরিত্র এত জীবন্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল তাদের চোখের সামনেই দেখছি, তাদের মনোভাবও যেন অনুভব করতে পারছি। বিশেষ করে শিক্ষকদের করুণ অবস্থা মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে।
সবচেয়ে বেশি মনে দাগ কেটেছে যদুবাবু চরিত্রটি—একজন বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষ, যার জীবন যেন ফাঁকিতে ভরা। তার চালাকিতে যেমন বিরক্তি এসেছে, তেমনি তার অসহায়ত্ব ও পরিণতি হৃদয় স্পর্শ করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে তার স্ত্রীর জন্য।
This is a small novel revolving around a group of school teachers teaching in a school during the pre-independence phase and depicting the deplorable state of their life. I consider this book as another gem coming out of Bhibhuti Bhushan Bandopadhyay.
বেদনায় নীল হয়ে যেতে হয় এই উপন্যাস পড়ে। বিভূতি মে কেন এরকম করেন!!! অনেক আগে পড়েছিলাম। এসব বই পড়ে মুড নষ্ট হয়ে যায় এরপর আর পড়ার ইচ্ছা থাকে না। এসব বই দিনের প্রথমভাগে পড়লে পুরো দিন বিষন্নতায় শেষ হবে
বিভূতিভূষণ সবসময়ই অনবদ্য, সবসময়ই মায়াঘেরা, চোখের কোণে জল এএনে দেয়া লেখা লিখতেন। নিস্তরঙ্গ কাহিনী। মানুষের জন্য, প্রকৃতির জন্য কী করে এত মায়া যে ধরে রেখেছিলেন বিভূতি আমি জানি না। যতবার পড়ি এই বিষয়টিতে মুগ্ধ হই। নিজেকে মনে হয় অসম্ভব দীন। বাঁচতে শিখি নতুন করে।