বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন শিবরাম চক্রবর্তী। ১৯৩৭ সালে তার প্রথম উপন্যাস "বাড়ি থেকে পালিয়ে" প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে লেখক গ্রামীণ জীবন আর শহুরে জীবনের পার্থক্য দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর সেই পার্থক্য তুলে ধরতেই এই উপন্যাসে আবর্তন হয়েছে এক গ্রামীণ কিশোরের। ১৩/১৪ বছর বয়সী এক কিশোরের বাড়ি থেকে পালানোর গল্প নিয়েই লেখা "বাড়ি থেকে পালিয়ে"! সেই কিশোর বালকটির নাম কাঞ্চন। ভীষণ দুষ্টু, বদরাগী আর গোয়াড় ধরনের ছেলে কাঞ্চন। ভয়ডরহীন এই কিশোর তার নিজের অধিকারের ব্যাপারে খুব সচেতন। বাবাকে ছাড়া পৃথিবীর আর কাউকে ভয় পায়না কাঞ্চন। এই কাঞ্চন একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসে কলকাতায়। গ্রামের পুরোহিতের ছেলের নাম বিনোদের সাথে ঝামেলা করে কাঞ্চন। বাবার শাস্তির ভয়ে সেদিনই বাড়ি থেকে পালায় ছেলেটি। ট্রেনে চেপে পাড়ি দেয় অজানার উদ্দেশ্যে। কাঞ্চন জানে না সে কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে। সেই ট্রেনে করে কাঞ্চনের প্রবেশ হয় কলকাতায়। কলকাতায় এসে অবাক কাঞ্চন। এতো উচুঁ দালানকোঠা, এতো গাড়ি আর এতো মানুষ এখানে! চারিধারে এতো খাবারের হোটেল আর এতো এতো নাম না জানা খাবার। কাঞ্চন ছোট হলেও বুঝতে পারে এই শহরে থাকতে হলে টাকা দরকার, পয়সা দরকার। এ শহর গরীবদের জন্যে না। কিন্তু অচেনা এ শহরে কে তাকে টাকা দিবে? বা কাঞ্চন নিজেই কিভাবে কাজের সন্ধান করবে? কাঞ্চনের সেই গল্প নিয়েই লেখা শিবরাম চক্রবর্তীর "বাড়ি থেকে পালিয়ে"!
Shibram Chakraborty (Bangla: শিবরাম চক্রবর্তী) was a popular Bengali writer, humorist and revolutionary who is best known for his humorous stories. His best known short stories and novels are renowned for their unique use of pun, alliteration, play of words and ironic humor. He was a prolific author who also wrote poems, plays, non-fiction and novels for mature audiences in his long career.He worked as a volunteer in the Swadeshi movement and came under the affection of Chittaranjan Das [চিত্তরঞ্জন দাস]. During this time he became involved with the magazine Bijli [বিজলী] and Forward as a journalist. He later became the publisher of a magazine called Jugantar [যুগান্তর].
His initial foray into literature was as a poet. His first book of poems was called Manush (Man). He worked as a feature writer in daily newspapers and magazines such as Basumati [বসুমতী], Ananda Bazar Patrika [আনন্দবাজার পত্রিকা] and Desh [দেশ]. These were tinged with humor and got him notice in the public eye. Subsequently he started writing stories and novels.
His writing is noted for use of literary puns as a key story vehicle – speculated to be a first in Bengali literature. He is also noted for his self-deprecating humor. An example of this is the convoluted way in which he would spell his name in Bangla in his stories: শিব্রাম চকরবরতি (Shee-bram Cho-ko-ro-bo-ro-ty). He would often put himself into his stories amongst fictional characters. The most famous and recurring characters in his stories are the brothers Harshabardhan [হর্ষবর্ধন] and Gobardhan [গোবর্ধন] and his sister Bini. Advertisements for his books often bill him as the King of Laughter. Aside from funny stories, his other notable writings include the dramatization of Sarat Chandra Chattopadhyay's novel Dena Paona (দেনা পাওনা) under the title Shoroshi [ষোড়শী] (Sixteen Year Old Girl), the political work Moscow bonam Pondicheri [মস্কো বনাম পন্ডিচেরি] (Moscow Versus Pondicheri; ) and the play Jokhon Tara Kotha Bolbe [যখন তারা কথা বলবে] (When They Will Speak). His (so called) autobiography Eeshwar Prithibee Valobasa (ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা) (God Earth Love) is also regarded as one of his best works. During his 60-year career he authored more than 150 books.
বাবার ভয়ে একটা ছোট ছেলের গ্রাম থেকে পালিয়ে কলকাতায় যাওয়া নিয়ে বইটার কাহিনী। অজপাড়াগাঁয়ের ছোট্ট বাচ্চা ছেলের দৃষ্টিকোণ থেকে উঠে এসেছে কলকাতা শহরের বিভিন্ন দিক। হাস্যরসের সাথে পুরো গল্পটা বলেছেন শিবরাম চক্রবর্তী। ভালো লেগেছে। ইচ্ছা হয়েছে, একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে অজানা কোনো শহরে হারিয়ে যাওয়ার।
শিবরামের উপর আমার একটা ক্ষোভ ছিল যে তিনি মানুষকে হাসান উল্টোপাল্টা মানে ঠিক জুতের মনে হয়না তার গল্পগুলি। শিবরাম সিরিয়াস আলাপও হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিতেন। সেই অভিযোগ আমি আজ ঝেড়ে ফেললাম।
প্রাচীন ভারতের নন্দন তাত্ত্বিকরা সাহিত্যে নয়টি রসের নাম করেছিলেন, এর সাথে বর্ণও ঠিক করেছিলেন। এর মধ্যে হাস্যরসের রং হচ্ছে সাদা। কেন? সাদার মাঝে সব রঙের বাস।তাই সব রসই হাস্যরসে মিলতে পারে। যেমন করুণরস, খেয়ালী রস, বীভৎস রস ইত্যাদি। শিবরাম সব রসই আসলে হাস্যরসে মিলাতে জানতেন।
বাড়ি থেকে পালিয়ে সম্ভবত শিবরামের সবচেয়ে পরিচিত লেখা,১৯৪৬ সালে প্রকাশিত৷ পঞ্চাশের মন্বন্তর তখনো বাঙালির স্মৃতিতে তাজা। তাই এখানে ভিখারীরা কুকুরের মুখ থেকে খাবার কেড়ে খায়, মানুষ খেতে পায় না, কুকুর খাবে কেন প্রশ্ন করে। খাবারের বিশাল একটা ভূমিকা আছে উপন্যাসটিতে।
এক ছোট ছেলের জবানে তৎকালীন কলকাতা শহরের চিত্র। স্বরাজ আন্দোলন হচ্ছে, রাস্তায় রাশি রাশি হাড্ডিসার গরীব মানুষ শুয়ে আছে। তার মাধ্যেই একটা ছোট ছেলে ভাবছে, রাস্তায় জল দেওয়া নাকি সার্জেন্ট এর কাজ, কোনটা ভাল? শেষ পর্যন্ত কাঞ্চন কি করল? আপনি থাকলে কি করতেন?
কাঞ্চনের সরলতা হৃদয়স্পর্শী, হাসিও পায়, আবার নিজের ছেলেবেলার অসীম কৌতূহলকেও মনে করিয়ে দেয়। শিবরামের অন্যান্য লেখায় যেমন বেমক্কা যা-তায় হাসি আসে, এলেখা তেমন নয়, মাঝে মাঝে খুব গম্ভীর হয়ে গেছে,কিন্তু হাস্যরসের উপাদান কখনোই হারায়নি।
মা বলত ছেলে বাড়ি থেকে বের হলে হয় বাদশা। গল্পের শেষে তার পরিচয় পাবেন আপনারা। আর সেই বাদশা কি করে? তা জানতে বইটি পড়তে হবে।
বয়সকালে এই বই পড়লে সাড়ে তিন দেবার দু:সাহস দেখাতাম না। বাড়ি থেকে পালিয়ে যত্রতত্র ভ্রমণ, এ তো সব ছোটছেলেরই স্বপ্ন!
তোরো-চৌদ্দ বছরের কাঞ্চনটা খুব পাজি। সব্বাইকে জ্বালিয়ে মারে। তো এই দুষ্টুমির কথা বাবার কানে গেলে তো ভারী রেগে যাবেন বাবা। প্রহার মিস হবে না। একবার পূজারি বামুনের ছেলেকে আচ্ছামতো শায়েস্তা করলো কাঞ্চন। সে খবর পৌঁছে গেল পিতার কানে। পুত্র কাঞ্চনকে পিতা ডাকলেন শাস্তি দিতে। কাঞ্চন বাড়ি থেকে পালালো কলকাতা।
পিতার ভয়ে পুত্র কাঞ্চনের গৃহত্যাগী হয়ে কলকাতায় আগমন এবং আজব শহর কলকাতা দর্শন শেষে ফিরে যাওয়ার ঘটনাই হলো 'বাড়ি থেকে পালিয়ে'।
সাদাচোখে দেখলে এটি কিশোর উপন্যাস। কিন্তু এর ভেতর পুরো সমাজব্যবস্থা, শহুরে লোভী ও মনুষ্যত্ব নিহত হওয়া জীবনের বাস্তব চিত্রের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন প্রাতঃস্মরণীয় শিবরাম চক্রবর্তী। গান্ধিজির স্বরাজের অঙ্গীকার, দেশবন্ধুর ভলান্টিয়ার বাহিনী এবং ইংরেজ জুলুমশাহি শাসনকেও চিত্রিত করেছেন শিবরাম চক্রবর্তী। কিশোর কাঞ্চনের সারল্যের সাথে সাথে সত্যিকার জগতের কদর্যরূপকেও ধারণ করেছেন চক্কত্তি মশাই।
ভারী ভারী বই পড়ে মগজে যানজট লেগে গেলে কিংবা একটু স্বস্তি পেতে পড়তেই পারেন 'বাড়ি থেকে পালিয়ে'। যেখানে একটি সুখপাঠ্য কিশোর উপন্যাস পড়ার সাথে সাথে চমৎকার একটি জীবনদর্শনের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারবেন। মোটকথা একটি কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পড়ুন 'বাড়ি থেকে পালিয়ে '।
পুরোটা কমেডি, মাঝে অ্যাডভেঞ্চার, আর শেষটা খানিক ফ্যান্টাসির মতো।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককার গল্প, নাম না জানা এক গ্রাম থেকে কলকাতা শহরে চলে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এক কিশোর। অনেক মানুষজনের সাথে আলাপ হলো তার, অনেক পেশার মানুষ দেখলো। শুনলো ত্যাগী নেতা সি আর দাশের নাম। গান্ধীজীর "স্বরাজ"-এর স্বপ্ন সম্পর্কে জানলো। স্বরাজ এলে নাকি দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে থাকতে শুরু করবে, তারপর আর কোন চিন্তা নেই। অনুসন্ধিৎসু কিশোর একটা লোককে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা স্বরাজ এলে গরিব লোকজনও বড় বড় দালানে থাকতে শুরু করবে? তাদেরকে আর ডাস্টবিনে কুকুরের সাথে কাড়াকাড়ি করে খাবার খেতে হবে না তো?
কৌতুহলী চোখ, ভবিষ্যত জয় করার স্বপ্ন, দীনহীনের প্রতি দয়ামায়া, মায়ের জন্য ভালোবাসা, বাবাকে ভয়- সবকিছু এই কিশোরটির মাঝে আমরা দেখি। আর কিশোর বয়সের ছেলে তো, মেয়েদের প্রতি কুসুম কুসুম ভালোলাগার ব্যাপারও আছে।
যে বয়সে এই বই পড়া উচিৎ ছিলো সেই বয়সে পড়া হয়নি বলেই হয়তো ১ টা তারকা কম। বাবার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে যায় কাঞ্চন। সেখানে অনেক রকম অভিজ্ঞতা হয় তার। ছোটবেলায় আমারও এমন ইচ্ছে হতো বাড়ি থেকে দুরে কোথাও এভাবে চলে যেতে। কিন্তু ভাবলেই কি আর হয়? আফসোস এই বয়সে এসেও তো এভাবে ঘুরা হলো না।
ঠিক যে বয়সে এই বইটা পড়া উচিত, আমি প্রথম সে বয়সেই 'বাড়ি থেকে পালিয়ে' পড়েছিলাম। এরপর বড়বেলায় এসেও আরো দু-একবার পড়া হয়েছে। অনুভূতি ঠিক আগের মতো অসাধারণ। সেই প্রথম যখন 'বাড়ি থেকে পালিয়ে' পড়ছিলাম তখন বারবার মনে হচ্ছিল,ইশ্ আমিও যদি কাঞ্চনের মতো বাড়ি থেকে পালাতে পারতাম! কিন্তু কখনো বাড়ি থেকে পালানো হলো না। বইটার সঙ্গে যাপনের সময়টুকু ছিলো অসাধারণ।
শিশুদের সরল দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজের বৈষম্য আর রাজনৈতিক কোন্দলকে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। কাঞ্চনের সরলতা ভালো লেগেছে৷ ক্লাস ফো���-ফাইভের বই এই আধবুড়ো বয়সে পড়লাম বলেই তিন তারা৷ নয়তো শিবরাম বাবুর লেখাকে তিন তারা দেবার মতো ধৃষ্টতা আমার মতো চতুর্থ শ্রেণির পাঠকের আছে নাকি?
বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসের উপন্যাসের কথা উঠলেই আমার মনে পড়ে যায় সুকুমার রায় আর শিবরাম চক্রবর্তীর কথা। শিশুদের জন্য তো বটেই বড়দের জন্যও লিখে গেছেন রম্য গল্প। তবে 'বাড়ি থেকে পালিয়ে' উপন্যাসিকাটা শিবরামের চিরায়ত হাস্যরসের ধারায় লেখা নয়। তাই বলে একদমই যে হাসির কিছু নেই তা নয়।
উপন্যাসিকাটা মূলত একটি কিশোর ছেলেকে (কাঞ্চন) নিয়ে। সারাদিন দস্যিপনা করে বেড়ানো কাঞ্চন একদিন বাবার পিটুনির ভয়ে অজপাড়াগাঁ থেকে পালিয়ে যায় চকমকে শহর কলকাতায়। গাড়ি বলতে যে চেনে গরু টানা গাড়ি কলকাতা শহরে গিয়ে সে দেখে মানুষ টানা রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি এমনকি মোটর গাড়িও। গাড়ি দেখে তাজ্জব বনে গিয়ে সে দেখে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ইলেকট্রিক বাতির আলো ঝলমলে করা মিষ্টির দোকান, মনোহারী দোকান, নিত্যব্যবহার্যসহ সারি সারি নাম না জানা পণ্যের দোকান। ভারি অবাক হয়ে ভাবে সে, এত দোকান থেকে এত মালপত্র কারা কেনে? অবাক ছেলের শহরের বর্ণনা দিয়েই কিন্তু শিবরাম থামেননি, 'যে শহরে এত ধনী মানুষ, এত খাবারের দোকান সে শহরে মানুষকে কেন কুকুরের কাছ থেকে ডাস্টবিনের খাবার কেড়ে নিতে হবে?' এমন প্রশ্নও অবাক হওয়া ছেলেটির মুখ থেকে বের করেছেন। এ প্রশ্নটি পাঠকমনকে নাড়া দেবেই। ভাবতে বাধ্য করবে, আসলেই তো, এ শহরে কিসের অভাব? বিভেদটা সৃষ্টি হয়েছে কোত্থেকে, কবে থেকে?
কিশোরের চোখে ঝাঁ চকচকে শহর কলকাতা দেখার পাশাপাশি এরকম ছোট ছোট প্রশ্ন নাড়া দিয়ে যাবে পাঠককে। পুঁজিবাদি সমাজ মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ তৈরী করেছে, করে যাচ্ছে সেটা অল্প হলেও উঠে এসেছে 'বাড়ি থেকে পালিয়ে' উপন্যাসিকায়৷ সব মিলিয়ে, আমার বেশ ভালো লেগেছে। হাতে দেড়-দুই ঘন্টা থাকলে পড়ে ফেলতে পারেন। আশা রাখি খারাপ লাগবে না।
এক কিশোরের চোখে শহর কলকাতা। অল্প দেখা চোখ আর মন দিয়ে বড় বড় জিনিসগুলোকে সরল করে দেখা।
কাঞ্চনের ডানপিটে প্রকৃতি তাকে বড় শহরের নানা স্বরূপ দেখায় আর আমরা পাঠক হিসেবে তার নির্মল আনন্দ নিই। বালকপ্রেম, বন্ধুত্বের কোমলতা, কতিপয় মানুষের উদারতা এসব গল্পে ছাপিয়ে উঠে। কোন নেগেটিভ চরিত্র চোখে পড়ে না। ফলে All that is flowers বলে মনে হয় গল্পটার কাহিনীকে। যেটাকে বেলেন্স করতে ব্যবহৃত হয়েছে শোষণ, স্বরাজ আন্দোলন আর অসমতা। গান্ধী - সি আর দাশের মহৎ উদ্যোগ যেমন এসেছে তেমনি এসেছে দার্শনিক দ্বন্দ্বও।
ভিখারিদের দুর্দশা, পথবাসীদের অবস্থা, আন্দোলনের বেহাল দশা, ধনীদের উৎকট স্বভাব, সাধারণ জনগণের সরলতা - আর এইসব কিছুকে এক বুদ্ধিমান ও সমব্যথী কিশোরের চোখ দিয়ে দেখা - এই হলো শিবরাম চক্রবর্তীর বাড়ি থেকে পালিয়ে।
এক বসায় পড়া যায়। একটুও বোরড লাগে না। মজার এক লেখার স্টাইল। সকল বয়েসেই পাঠযোগ্য বলা যায়।
ডানপিটে এক বালকের বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা শহরে নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতা সম্মুখীনের মজার কাহিনী এই উপন্যাস। উপন্যাসটি যেন সমকালীন সময়ের কলকাতা শহরের একখানি স্থিরচিত্র। শিবরামের আইকনিক হাস্যরসের সম্পূর্ণটা না পাওয়া গেলেও হিউমারের কমতি নেই।
বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসের স্রষ্টা শিবরাম চক্রবর্তীর প্রথম উপন্যাস 'বাড়ি থেকে পালিয়ে' প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে। একটি শিশুর বিস্ময়ভরা চোখ দিয়ে এই উপন্যাসে গ্রাম,শহর ও জীবনকে দেখেছেন শিবরাম। গ্রামের সরল প্রকৃতির মাঝে জন্ম নেয়া ও বেড়ে উঠতে থাকা একটি জীবনকে উপলক্ষ করে গড়ে উঠেছে উপন্যাসটি।
"বাড়ি থেকে পালিয়ে" উপন্যাসটি এক কিশোর এর বাড়ি পালানোর কাহিনী। কিশোর এর নাম কাঞ্চন। ১৩/১৪ বছর বয়সের কাঞ্চন ভারী দুষ্টু। কোন কিছুতেই কোন ব্যাপারে সামান্য ত্যাগ স্বীকারে রাজি নয় কাঞ্চন। ভারী একগুঁয়ে, নিজের অধিকার আদায়ে সদা সচেতন। কোন কিছুতেই সে ভয় পায়না। পৃথিবীতে তার একমাত্র ভয় তার বাবাকে।
পুরুতের ছেলে বিনোদের সাথে এক ক্যাচালের শাস্তি হিসেবে বাবার মুখোমুখি হওয়ার বিড়ম্বনা এড়াতে ট্রেনে চেপে কাঞ্চন অজান্তে চলে আসে কলকাতায়। কলকাতা শহর যেন এক নতুন বিস্ময় হয়ে উপস্থিত হয় কাঞ্চনের চোখে। এত বড় জাহাজ,মটরগাড়ি,হরেক রকম খাবার এর হোটেল,রঙবেরঙ এর জিনিস,বিশাল সব দালান এতসব কিছু দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় কাঞ্চন। সবকিছু যেন আলাদীনের মায়াপুরীর মতো লাগে তার কাছে। কিন্তু এত বড় শহরে অচেনা রাস্তাঘাটে কপর্দকহীন কাঞ্চন একাকী কীভাবে টিকে থাকবে? অনেক টাকা রোজগার করে মা'য়ের জন্য হরেকরকম জিনিস কেনার যে স্বপ্ন বালকটি দেখে,তা কি আদৌ পূরণ হওয়া সম্ভব? কাঞ্চন শেষ অবধি বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছিলো কি?
শিবরাম বাবুর এই বইটির নাম আমি প্রথম জেনেছিলাম হুমায়ূন স্যার এর বইয়ে। তখন থেকেই পড়ার ইচ্ছে থাকলেও বইটি সংগ্রহ করতে পেরেছি মাত্র কিছুদিন আগে। মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। কাঞ্চনের কলকাতা ভ্রমণের কাহিনীতে যেন আমি ফিরে যাচ্ছিলাম আমার ছেলেবেলাতে,যখন আমি মফস্বল থেকে প্রথম ঢাকা শহরে গিয়েছিলাম বাবা মা'য়ের সাথে। কাঞ্চনের চোখ যেন আমার সেই সময়ের বিস্ময়ভরা চোখ! আর লেখক এর কী দারুণ বর্ণনা! হাস্যরস্যে ভরা উপন্যাসটি অল্প সময়ের জন্য পাঠকের বয়স কমিয়ে দিতে সক্ষম! কিন্তু হাসির মাঝেও জীবনবোধ তুলে আনা হয়েছে সুনিপুণ দক্ষতায়। মা'য়ের প্রতি কাঞ্চন এর ভক্তি আর ভালবাসা অদ্ভুত ভাললাগার এক আবেশ ছড়ায় মনে। তৎকালীন কলকাতার রাজনৈতিক ঘটনার আভাস দেয়া হয়েছে রম্যের আড়ালে। জনৈক ব্যক্তির এই কথাটুকু "শিক্ষিত না হলে যতোই কমরেড হও মুক্তি মিলবেনা" গভীর অর্থ বহন করে।
কাঞ্চন অবাক হয়ে দেখে এখানে এই কলকাতাতে মানুষ আর কুকুরে খাবার নিয়ে যুদ্ধ লাগায়। উপন্যাসের এই অংশটুকু উল্লেখযোগ্য, "এত বড় শহর,এখানে এত বড়লোক,লোকের এত টাকা,এমন ভোজ,এমন শোভাযাত্রা আর এখানেই কিনা মানুষকে কুকুরের সাথে কাড়াকাড়ি করে খেতে হয়!"
উপরের অংশটুকু এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার বিরুদ্ধে আক্ষেপ। কাঞ্চন ভাবে সে বড়লোক হয়ে শহরের সমস্ত ফকিরকে ভালো ভালো খাওয়াবে। কেও গরীব থাকবেনা। এর মাধ্যমে শিশু মনের পবিত্রতাই প্রমাণিত হয়।এক কিশোর এর চোখে সব কিছু দেখার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পড়তে হবে "বাড়ি থেকে পালিয়ে"।
রিভিউ- আচ্ছা, কখনো ভেবেছেন, যদি বাড়ি থেকে ছোট্ট বয়সে পালিয়ে যেতেন কোন নতুন শহরে তাহলে কি কি হতে পারতো? নতুন কি দেখতেন, খেতেন কি বা থাকতেন কোথায়? এই উপন্যাস কিশোর বয়েসী একটি ছেলে কাঞ্চন কে নিয়ে। দস্যি ছ��লে বাবার মারের ভয়ে গাঁ ছেড়ে পালিয়ে এসে পড়ে ঝাঁ চকচকে কলকাতা শহরে। চেনা নাই জানা নাই নতুন শহরের গাড়ি, বাড়ি, বিজলি বাতি দেখে কাঞ্চন শুধু অবাক হয়৷ আর চেয়ে চেয়ে দেখে৷ অপরিচিত তারই বয়েসী এক ছেলে তাকে খোকা বললে রাগ করে, আবার কিছুক্ষণ পরই বন্ধুত্ব করতে চায়। কিন্তু রাস্তায় সে কি আর দাঁড়িয়ে থাকবে? সন্দেশের দোকানে চাকরি পাবে শুনে খুশি হয়, আবার পরমুহুর্তেই এক বড়লোক বাড়ির বিয়ে�� অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ে জাঁকজমক দেখে৷ রাত পার হয়ে রাস্তায় নেমে যখন দেখে কিছু মানুষ কুকুরের সাথে ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খায় তখন তার মনে প্রশ্ন জাগে, এত বড় বড় মানুষের মাঝে এত আনন্দ, এত টাকার মাঝেও কিছু মানুষ খেতে পায়না। এ কেমন কথা? রাস্তায় পানি দেয় যে সকাল বেলা তার কাজ দেখে কাঞ্চন বিমোহিত হয়। ভাবতে থাকে এ কাজ যদি আমি করতে পারতাম, কতই না মজা হতো। অনেক বেতন পেতাম আর তা দিয়ে মা কে চুড়ি, টিপ কিনে দিতাম। মায়ের বিলাসিতা হবে ভেবে সে আনন্দ পায়। আবার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর ও হয়ে পড়ে কখনো। এভাবে শহরে ঘুরে ঘুরে কত নতুন অভিজ্ঞতা হয় তার। তারপর? লেখক বইটিতে অসাধারণ ভাবে হাস্য রস এবং বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। একটি শিশু বা কিশোর এই বই পড়ে মজা পাবে এবং অনেক কিছু শিখবেও৷ আবার আমরা যখন বইটি পড়বো তখন কখনো কখনো খোঁচা দেবে একেকটা কথা, যে বাস্তবতা কতটুকু নিষ্ঠুর হতে পারে।
ব্যক্তিগত অনুভূতি-
খুব ভাল লেগেছে বইটি পড়তে। হাসতে হাসতে কয়েকটা জায়গায় গড়িয়ে পড়ে গেছি। আরো কম বয়েসে পড়লে জীবন বাস্তবতা সম্পর্কিত কথাগুলো হয়তো এতটা খোঁচা দিতোনা মনের মধ্যে। নির্মল আনন্দ পাওয়ার মত একটি বই। পড়ে ফেলুন। 🌼
পাড়াগাঁয়ের ছেলে কাঞ্চন বাবার ভয়ে পালিয়ে গেল কলকাতায়। কাঞ্চন প্রথম দেখেই ভাবলো, ওমা! একি! কলকাতা যে বড় অদ্ভুত!
কলকাতার মোটর রিকসা থেকে শুরু করে পার্ক-টার্ক ঘুরে বেড়াতে লাগলো। যা দেখে তাতেই অবাক হয়ে যায়। এরপর এদিক ওদিক করতে একগাদা টাকা হাতে চলে আসলে অনেক অনেক মনিহারি জিনিস কিনে ফিরে চললো গাঁয়ে। পড়ে রইলো মিনি-ডাক্তার-কনক-কলকাতা!
কি এক অদ্ভূত সুন্দর বই! সন্দেশের মতো, মোলায়েম। কিন্তু আবার এতোটাও সরল নয়!
কিশোর উপন্যাসের মধ্যে কি ঢুকিয়ে রেখেছে! স্বরাজ, সি.আর. দাশ এর ভলান্টিয়ার, ধনী-গরিব বৈষম্য, রাজনীতির আঁচ, সমাজের সাদা-কালোর বৈপরীত্য আর সবশেষে কৈশোরবেলার অদম্য স্বপ্ন, আয় করে অনেক অনেক উপহার কিনবো!
মায়ের প্রতি কাঞ্চনের ভালোবাসা অদ্ভূত! এই ব্যাপারটাই আসে ঘুরে ফিরে, কেমন চাপা চাপা, কিন্তু তীব্র! তার মা কখনো স্নো-পাউডার, দামী শাড়ি পরেননি, তার মায়ের হাতে কখনও টাকা থাকে না। সেসব নাকি বিলাসিতা। কাঞ্চনের একটাই স্বপ্ন, সে তার মাকে সব কিনে দেবে। অনেক বিলাসিতা দেবে।
কাঞ্চন মায়ের কোলে বসে থাকে, চারপাশে টাকা ছড়িয়ে থাকে, মায়ের চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ে...
This entire review has been hidden because of spoilers.
সেই কবে কোন ছোটবেলায় বড় বোনের বইয়ের তাক থেকে নিয়ে পড়ার পর বইটা প্রিয় হয়ে গিয়েছিল। তার এক যুগ পর আজকে আবার বইটা শেষ করে পাঁচ তারকাই দিতে বাধ্য হলাম। এখানেই শিবরামের স্বার্থকতা। খুব উঁচুদরের পাঠিকা না হলেও এক যুগে একটু তো পরিপক্ব হয়েছিই। কই? আমার সেই পরিপক্বতা এই বইকে "বাচ্চাদের বই" বলে নাক সিঁটকাতে পারলো না তো...
বইটার নাম হওয়া উচিত ছিলো 'কাঞ্চনের চোখে কলকাতা'। কাঞ্চনের চোখে সাধারণের দুর্ভোগ, জমিদারদের আধিপত্য তুলে ধরেছে লেখক। মাঝে মাঝে ঠোঁটও চওড়া করিয়েছে। সবমিলিয়ে বইটার সাথে দু ঘন্টার প্রশান্তির যাত্রা ছিলো।
(স্পলার আলার্ট) কাঞ্চন নামে এক কিশোর তাদের পুরুতের সমবয়সী ছেলে বিনোদের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সে বিনোদের দইয়ের ভাড় কেড়ে নিয়ে তার মাথায় ঢেলে দেয় এবং ক্ষীরের বাটি কেড়ে নেয়। ফলাফল, কিছুক্ষণ বাদের বাড়ির চাকর এসে খবর দেয় বাবা তার জন্য চাবুক হাতে অপেক্ষা করছে। কাঞ্চন আর বাড়িতে ফিরে না গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় রেল স্টেশনে এবং কোনকিছু না ভেবেই উঠে যায় ট্রেনে। ট্রেন তাকে পৌছে দেয় বর্ধমানে। সেখানে এক পবীত্র হোটেলে আহার সেরে টাকা না দিয়েই আবার উঠে পড়ে ট্রেনে। এবার সে পৌছে যায় কোলকাতা শহরে। কোলকাতায় পৌছে তার বিস্ময়ের সীমা থাকে না। একেবারে অজপাঁড়াগায়ের ছেলে কাঞ্চন অবাক নেত্রে দেখতে থাকে রিকশা, মোটরগাড়ি, ব্যান্ড পার্টি, হাওড়া ব্রিজ, কলের জাহাজ, ইলেকট্রিক বাতি আর হরেকরকম মানুষ। কলকাতায় তার সাথে একের পর এক ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। কখনও সে মিস্টির দোকানে কাজ করার স্বপ্ন দেখে, কখনও সে স্বপ্ন দেখে রাস্তায় জল দেওয়ার কাজ করার। এক বরযাত্রী দলের সাথে চলতে চলতে সে পৌছেঁ যায় বিয়েবাড়িতে। সেখানেই তার পরিচয় হয় মিনির সাথে। মিনিকে তার খুব ভালো লাগে তবে মিনির বড় দাদার শক্ত শক্ত ইংরেজি শব্দের অর্থ বলতে না পারায় খুব লজ্জিত বোধ করে যে। তবে খুব কষ্ট লাগে যখন সে দেখতে পায় বিয়েবাড়ির বাইরে মানুষ আর কুকুর ফেলে দেওয়া খাবার কাড়াকাড়ি করে খাচ্ছে। ইট-পাথরের শহরে সে এই প্রথম মানসিকভাবে ধাক্কা খায়। সে ভাবতে থাকে- “এত বড় শহর, এখানে এত বড়লোক, লোকের এত টাকা, এমন ভোজ, এমন শোভাযাত্রা আর এখানে মানুষকে কুকুরের সঙ্গে কাড়াকাড়ি ক’রে খতে হয়! কাকে দয়া করবে- কার পক্ষে সে দাঁড়াবে? কুকুরের, না মানুষের?” এমন কিছু প্রশ্ন যেকোন বয়সের পাঠকের মনকে নাড়া দেবে নিঃসন্দেহে। এরপর চা’য়ের দোকানে গান্ধীজী, স্বরাজ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা, গরীব মানুষদেরও স্বরাজ হবে ত? স্বরাজ হ’লে তারা ভাল খেতে পারবে, পরতে পাবে? গরীবদের আবর্জনা ঘেঁটে আর পথের এঁটোকাঁটা কুড়িয়ে খেতে হবে না তো?” ভদ্রলোক এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেন না। গল্পের সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনা ঘটে যখন এক ভদ্রলোক তাকে মোটরগাড়িতে তুল নেন এবং একটি রেসের ঘোড়া পছন্দ করতে বলেন। যদিও কাঞ্চন জানতো না ‘রেস’ বিষয়টা কি, তবে মায়ের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা থেকে সে “মাই মাদার” নামে একটি ঘোড়া পছন্দ করে। নাটকীয়ভাবে সেই ঘোড়া জিতে যায় এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুরস্কারের অর্ধেক টাকা পেয়ে যায় কঞ্চন। একবারে এতগুলো টাকা সে স্বপ্নেও দেখেনি কোনদিন। ভদ্রলোক তাকে টাকার সাথে একটি ব্যাগও দিয়ে দেন। এরপর সে মায়ের জন্য, ভাইয়ের জন্য অনেক কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে ফিরে সে মা’এ অবাক করে দেয়। একটি কিশোর উপন্যাস হিসাবে আমি এটিকে দশে দশ দিতে চাই। তবে বইটি সম্পর্কে অন্যরা কি ভাবছে সে গুগলে খুঁজতে গিয়ে দেখলাম। এই কাহিনী নিয়ে একটি চলচিত্রও আছে। পরিচালক ঋত্তিক ঘোটক। ভাবছি এবার ছবিটা দেখতে হবে।
পুরুতের ছেলে বিনোদের সাথে অহেতুক ঝগড়া হতো কাঞ্চনের।একদিন ঝগড়ার খবর বাবার কানে গেলে তিনি কাঞ্চনকে ডেকে পাঠান।বাবার শাসনের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় কাঞ্চন। কপর্দকহীন অবস্থায় ট্রেনে উঠে বসে।চলে আসে জাদুর শহর কলকাতায়।শহরের চাকচিক্যে হকচকিয়ে যায় কাঞ্চন,পরিচয় ঘটে বিচিত্র সব মানুষের সাথে।শোভাযাত্রায় মিশে উপস্থিত হয় এক বিয়ে বাড়িতে। সেখানে পরিচয় ঘটে সমবয়সী মিলির সাথে।তাকে দেখে তারও বিয়ে করার সাধ জাগে। বালকের চোখে ধরা পড়ে কলকাতা শহরে চাকচিক্যের আড়ালে একদল গরিব মানুষ যারা ডাস্টবিনে খাবারের জন্য কুকুরের সাথে ভাগ বসায়।গরিবদের সাহায্য করার বাসনা তার তীব্র হয়ে ওঠে।সে বুঝতে পারে শহরে ঘোড়ার জন্য পানি আছে অথচ মানুষের জন্য নেই।খালিপেটে সে ঘুরতে থাকে শহরময়। কনক নামের এক ছেলের সাথে তার পরিচয় হয়।বন্ধুত্ব স্থায়ী হবার আগেই সে পালিয়ে আসে।অবশেষে পরিচয় হয় এক ব্যক্তির সাথে যিনি তার হাত দিয়ে ঘোড়ার রেসের টিকেট কাটেন।লোকটি রেসে জিতে যায় এবং অর্ধেক টাকা কাঞ্চনকে দিয়ে দেয়।নানা উপহার সামগ্রী নিয়ে মায়ের কাছে ফিরে যায় কাঞ্চন।
লেখক মূলত গ্রামের ছেলে কাঞ্চনের চোখে তৎকালীন কলকাতা শহরের খন্ডচিত্র দেখাতে চেয়েছেন।সে কলকাতা শহরের কুৎসিত ও সুন্দর চিত্র দেখার মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য ধরতে পারে।এটা ছিল তার জন্য একরকম শিক্ষাসফর। আপনাদের কি কখনো বাড়ি পালিয়ে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল??
**উপন্যাসটির ২য় বই "বাড়ি থেকে পালিয়ের পর।" **গল্প অবলম্বনে একটি সিনেমাও আছে।
A happy go lucky story. Everything went in favour of the kid. But, still it felt good. It had a vivid picture of culture of that exact time. The difference between town and village was portrayed nicely. Dialogues were witty as well.
এতদিন পর বইটা পড়লাম! অনেক খোঁজার পর আজকে যখন বইটা হাতের কাছে পাই, তখন দেরি না করে সাথে সাখেই পড়া শুৃরু করে দেই। এক বসায় পড়া শেষ। বাংলা কিশোর সাহিত্যে তার অবদান তার বই না পড়লে বোঝা মুশকিল! লেখক কিশোরদের মন ঠিকই বুঝেছিলেন, শৃুধু কিশোরদের জন্য না, এ বই সমান তালে বড়দের জন্যও উপভোগ্য। (শেষে মিনিকে দেখার প্রচন্ড ইচ্ছা মনের মাঝে ছিলো!)
সবকিছুই কেমন সুন্দর আর সহজ! রূপকথার মতো সব পেয়েছির দেশের গল্প যেন। শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার আসল মজা মনে হয় প্রতিটা লাইনেই, গল্প তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না এখানে।
শালগ্রামের ১৩ কি ১৪ বছরের কাঞ্চন, পাড়ায় তার মতন বিচুটি ছেলে আর দুটোটি নেই। তার এত যন্ত্রণা সইতে না পেরে পুরোতের ছেলে বিনোদ একদিন তাকে শাপ দিয়ে বসে, "তোর কোনো দিন বিদ্যে হবে না দেখিস। ফি বছর তুই ফেল করবি।" ব্রহ্মবাক্য সে তো কোনো সহজ কথা নয়। এত কষ্ট করে সে পড়ে তারপরও ফেল করতে হবে। আর মাঝ দিয়ে তরতর করে পাশ করে বেরিয়ে যাবে বিনোদ? এ সে কি করে মানে! ফলে শাপ কাটান দেয়ার জন্য অস্থির কাঞ্চনের সাথে আরেকধাপ চোটপাট হয়ে গেল বিনোদের। বিনোদের বেশখানেক সত্যি আর কিছু বলা বিচারের বিপরীতে কাঞ্চনের ভীষণ কড়া, সর্বদা চাণক্যের শ্লোক আওড়ানো বাবা যিনি কি না ঐসব শ্লোকের রেফারেন্স টেনে প্রায়শ বলেন, ৭-১৬ অবধি ধরে আচ্ছামত না পিটালে ছেলেপুলে অমানুষ তৈরি হয়; সিন্দুকে তুলে রাখা কাঞ্চনেরই রুপো বাঁধানো চাবুকখানা কাঞ্চনের পিঠেই দেয়ার মনস্থির করা এইবার তার হয়ে গেল। এ খবর পেতেই কাঞ্চন আর বাড়ি মুখো হবে কেন?
যেদিকে দু'চোখ যায় বলে চলতে শুরু করে ট্রেনে চেপে বর্ধমানের শালগ্রাম থেকে সে কলকাতায় চলে এল। 'বাড়ি থেকে পালিয়ে’ কলকাতার জটিল নগর জীবনের এপিঠ- ওপিঠ কিভাবে এক নতুন কাঞ্চন গড়ে নিল তা তো এক অ্যাডভেঞ্চারই বটে। রাজনীতি যে জননীতি নয় আর জীবনটাও যে নদীর এপারওপারে বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে যায়, গল্পচ্ছলে কি দারুণভাবেই সে বার্তাখানি শিবরামবাবু দিলেন!
পুরো গল্পজুড়ে কাঞ্চনের মা অবস্থান নিয়েছিলেন। কাঞ্চনের মাতৃভক্তি, তাকে খানিক বিলাসীতা এনে দেয়ার তার দামি ইচ্ছেটা প্রবলভাবেই তার মনে বয়ে চলছিল সর্বদা। মিনির কথা না লিখলেও তো চলছে না। সীতার মতো বউ পাওয়ার ইচ্ছা সে একবার মাকে বলেছিল। যদিও মিনির দাদার করতে দেয়া ট্রান্সলেশন "আমার একটি গাধা ছিল" কে "আই ওয়াজ আ অ্যাশ" থেকে সংশোধন করে "আই ওয়াজ এ্যান আ্যাশ" বলার পরও মিনি ভারি হেসেছিল; মিনির করতে দেয়া "maintain" এর বানান "men-ten" অর্থ "দশজন মানুষ" বলায় ভারি অপমান করেছিল, তাও সে মিনিকে সীতার জায়গাটা দিতে চায়। কাঞ্চন যে বড় হয়ে মিনির চেয়ে অনেক অনেক বিদ্বান হয়ে মোটরে চেপে, গায়ে সিল্কের পাঞ্জাবি পরে, হাতে রিস্ট ওয়াচ আর পকেটে ফাউন্টেনপেন নিয়ে দেখা করতে যেতে চায় এ পার্টটুকু বিনোদন কি কম দেয়!
দারুণ গল্পটার কয়েকটা ছোটখাটো অসঙ্গতির সবচে বড়টা শেষে ঐ হুট করে ৫ হাজার টাকা পেয়ে যাওয়াটাই। কেমন যেন খাপছাড়া ঠেকেছে।
এখন ঋত্বিক ঘটকের এই উপন্যাসের উপর করা সিনেমাটা দেখতে বসব। তিনি নাকি কিছুকিছু জায়গা পরিমার্জিত করে বেশ খাসা করে বানিয়েছেন।