স্কুলে প্রতিবছর সেকায়েপ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এর ২০ টি বই পড়ার সুযোগ হত।যদিও সবগুলো কোনো বছর ই শেষ করি নাই তবু অনেক বই পড়া হয়েছে। এটাও স্কুল থেকে নিয়ে পড়া বই। গ্রীক, রোমান এদের ইতিহাস নিয়ে সবার মধ্যে ই একরকম আকর্ষণ আছে৷ আমিও অবাক হয়ে ই পড়ি এই বইগুলো। কিন্তু এখন মনে হয় আগের কার মানুষ দের মধ্যে কত গোঁড়ামি ছিল। এসব আজকাল কল্পনা ও করতে পারব না আমরা। তারা আপাতঃ ঠুনকো(!) বিষয় নিয়ে ও মহাযুদ্ধ লাগিয়ে দিত।বড়ই অদ্ভুত ছিল তখনকার জীবনযাপন।লোকে বলে আগের কার মানুষ রা খুব সোজা সরল ছিল কিন্তু আমার মনে হয় পুরো উল্টো।
একটা মজার বিষয় হলো যেভাবে ট্রয় নগরী ধ্বংস হয় সেই ঘোড়া টা কে আমি কি কারণে হাতি ভেবে বসে থাকি সেটা এখনো রহস্য আমার কাছে।।
নিয়তির লিখন বড় বিচিত্র। এই খ্যাতি, সমৃদ্ধির চূড়ায় আবার কখন পতন হবে কেউ জানে না। আবার এই পতনের মধ্যে দিয়েই নতুন করে শুরু হবে ইতিহাস। গ্রিকদের হাতে ট্রয়ের ধ্বংস হওয়া ছিলো অনিবার্য হেলেন তো এক উছিলা মাত্র। আহা বেচারি হেলেন দেবতাদের খেয়ালের এক বলির পাঁঠা।
আব্বুর কাছে গল্প শুনেছি অনেকবার। পড়েছিও সংক্ষিপ্ত আকারে। এখানে সেই ১০ বছর ধরে চলা ভয়ংকর যুদ্ধের বিবরণ পড়া হলো। আর পড়া শেষ করে একটা কথাই মাথায় এলো, "নিয়তির লিখন, না যায় খন্ডন।"
স্কুলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছোটো একটা লাইব্রেরি ছিল, সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে বই কিংবা ম্যাগাজিন(নাম ভুলে গেছি) নিয়ে পড়া যেত । ক্লাস সেভেনে থাকতে পড়েছিলাম :D
দেবতা ও মানুষ নিয়া লেখা।দাত ভাঙ্গা নাম গুলো আসতেই থাকে।গল্প পড়তে থাকবেন এক চরিত্র যেয়ে নতুন আরেকটা চরিত্র আসবে।এইসব নাম মনে রেখে গল্প পড়াটাও অনেক কষ্টের। যাই হোক তেমন বিশেষ একটা ভালো লাগে নি।তাই দুই দিলাম।
জিউস পত্নী হেরা,কন্যা আথেনি ও দেবী আফ্রোদিতির মধ্যে সবচেয়ে কে বেশি সুন্দরী তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা হলো।বিচারক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলো প্যারিসকে।প্রতিটি দেবীই তাকে বিভিন্ন উপহার দেওয়ার লোভ দেখালো। কিন্তু আফ্রোদিতির উপহার ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী রমণী হেলেনের সাথে প্রেম। আর তাতেই রাজি হয়ে আফ্রোদিতিকে সুন্দরী হিসেবে নির্বাচন করলো এবং নিজের স্ত্রী ইনোনিকে ভুলে গিয়ে হেলেনকে পাওয়ার উদ্দেশ্য গ্রিসে যাত্রা করল। সেখানে প্যারিস মেনেলাউস ও তার স্ত্রী হেলেনের আতিথ্য গ্রহণ করে এবং সুযোগ বুঝে হেলেনকে নিয়ে পালায়। হেলেন উদ্ধারে গ্রীক বাহিনী ট্রয় নগরে যুদ্ধ যাত্রা করে।দেবতারা দুই দলে বিভক্ত হলে গেল।ট্রয়িদের পক্ষে যোগ দিল দেবতা জিউস,আফ্রোদিতি, অ্যাপোলো,আরেস।অন্যদিকে গ্রীকদের পক্ষে যোগ দিল হেরা, আথেনি।এছাড়া ট্রয়ীদের পক্ষে ছিল মহাবীর হেক্টর। হেক্টরকে প্রতিরোধ করতে গ্রীক বীর আগামেমনন,মেনেলাউস,ডায়ামিডিস, একিলিস যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লো।শুরুতে একিলিস যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি,ফলে হেক্টর যমদূতের মতো গ্রীক বাহিনী ধ্বংস করতে থাকে। একিলিসের বন্ধু প্যাট্রোক্লাসকে হেক্টর হত্যা করে ফলে বন্ধু হত্যার শোধ নিতে একিলিস যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং হেক্টরকে হত্যা করে। এদিকে প্যারিস দেবতা অ্যাপোলোর সাহায্য নিয়ে হত্যা মহাবীর একিলিসকে।আবার হেরাফ্লিসের হাতে মৃত্যু হয় প্যারিসের। যুদ্ধের শেষ দিকে গ্রীকরা একটি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।তারা একটি বিরাট কাঠের ঘোড়া তৈরি করে রেখে যায়, যার ভিতরে ছিল একদল গ্রীক বাহিনী। ট্রয়ীরা ঘোড়াটিকে নিজেদের নগর প্রাচীরে নিয়ে আসে।রাতে গ্রীক বীরেরা ঘোড়া থেকে বের হয় এবং ট্রয় নগরী ধ্বংস করে। ট্রয়ীদের পক্ষে একমাত্র জীবিত ছিল ইনিয়াস, যে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
যুদ্ধ ও হত্যা ছাড়া বইটিতে দেখা যায় বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালোবাসা বা পুত্রের জন্য পিতার মমত্ববোধ। এটা আমার অনেক পছন্দের একটি বই।
This entire review has been hidden because of spoilers.
স্কুলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচির আওতায় যে সিলেবাস ছিল তাতে এই বইটা ছিল। সিলেবাসে থাকায় বইটা পড়েছি। যথেষ্ট কাঠখোট্টা লেখা। মাথায় কিছু ঢুকে নাই। চরিত্রগুলো বারবার ভুলে যেতাম। কার সাথে কি হলো সেটাও ভুলে গিয়েছি। আর বইটা পুরোপুরি শেষ করতে পেরেছি কিনা সেটাও মনে নাই। আর যাই হোক অন্তত ক্লাস সিক্স কিংবা সেভেনের বাচ্চাদের পাঠ্য উপযোগী বই নয় এটা।
ক্লাস ৯ এ পড়ার সময় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গাড়ি থেকে নিয়েছিলাম। তখন এই বই পড়ে ভাবতাম আমি গ্রিস সম্পর্কে কত কিছু জেনে গেছি। তারপর প্যাগান ধর্ম সম্পর্কে নানাবিধ ব্যাখা ও দেবতাদের পদবী ও কাজ সম্পর্কে জেনে তা নিয়ে আশেপাশের বন্ধুদের সাথে বেশ আলোচনা করতাম। বলা যায় দারূণ এক কিশোর উপন্যাস।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সুবাদে কৈশোরেই পড়ার সুযোগ হয়েছিল। এখনও মনে দাগ কেটে আছে গল্পটা। এই বই হাত থেকে রাখা অসম্ভব। এত সুন্দর মিথলজি। এত সুন্দর শব্দচয়ন। এত সুন্দর কাহিনি।