Jump to ratings and reviews
Rate this book

খোঁয়ারি

Rate this book
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ খোঁয়ারি। ১৯৮২ সালে এই গ্রন্থ প্রকাশের পর তিনি বাংলাদেশের প্রথম সারির অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন। এই গ্রন্থভুক্ত চারটি গল্পে ইলিয়াস সময়ের ভেতরে থেকেও সময়কে অতিক্রম করা চিরকালের কিছু প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন- নৈসঃঙ্গ, যৌনতা, বার্ধক্য, মৃতু।তাঁর নিজস্ব সময় এই গল্পগুলোতে যথার্থ রুক্ষ শুকন ভাষায় জীবন্ত-স্থির হয়ে পরিণত হয়েছে বাংলা ভাষার চিরায়ত সম্পদে।

88 pages, Hardcover

First published January 1, 1982

16 people are currently reading
375 people want to read

About the author

Akhteruzzaman Elias

27 books240 followers
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার। তিনি মাত্র দুটি উপন্যাস রচনা করলেও সমালোচকরা তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি ঔপন্যাসিক হিসেবেই বিবেচনা করেন। এই দুটি উপন্যাসের বাইরে ইলিয়াস মাত্র তেইশটি ছোটগল্প এবং বাইশটি প্রবন্ধ লিখেছেন। ইলিয়াস সমাজ, রাষ্ট্র এবং জনগণের একজন একাগ্র পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনি তাঁর লেখার চরিত্রগুলোকে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি এবং অবস্থানের প্রতীক হিসেবে সুদক্ষভাবে রূপায়ন করতেন। লেখার সময় তিনি চেষ্টা করতেন ঐতিহাসিকভাবে নির্ভুল থাকতে, ফলে তিনি পাঠকের স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে লেখার অন্তর্নিহিত গুরুত্বকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন সবসময়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যুর ফলে তাঁর সৃজনশীল জীবন খুব দীর্ঘা‌য়িত হতে পারেনি, কিন্তু তাঁর লেখাগুলো বাংলা সাহিত্যে ধ্রুপদী সৃষ্টি হিসেবে স্থান পেয়েছে।

Akhteruzzaman Elias was a Bangladeshi novelist and short story writer. Despite the fact that he only wrote two novels, critics consider him to be one of the finest Bengali novelists. Besides these two books, Elias wrote only 23 short stories and 22 essays. Elias was a good observer of society, state, and people as he created his characters symbolising social classes and positions. He always strived to be historically accurate when writing, even if it meant pushing readers out of their comfort zones. His creative life was cut short by a premature death from cancer, but his writings are regarded as Bangla literature classics.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
118 (49%)
4 stars
93 (38%)
3 stars
24 (10%)
2 stars
5 (2%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 30 of 43 reviews
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
February 16, 2022
বাংলা সাহিত্যর ছোটগল্পের বিষয়বৈচিত্র‍্য—আঙ্গিক—চরিত্র নির্মাণে ইলিয়াস সাহেব নিঃসন্দেহে আনপ্যারালাল্ড এবং বিয়ন্ড এনি কম্পারিজন। লেখক জীবদ্দশায় ক'খানাই-বা শিল্পকর্ম রচনা করেছেন? এক হাতের পাঁচ আঙুলের এক-কর-কাম দুই আঙুলেই আরামসে এঁটে যায় দুটো উপন্যাস, পাঁচটা গল্পগ্রন্থ আর এক-কর-বাড়িয়ে একটা প্রবন্ধগ্রন্থ। এই গুটিকয়েক শিল্পকর্মের মাধ্যমেই ইলিয়াস সাহিত্যঙ্গানে অন্যতম শক্তিমান লেখক হিসাবে অনন্য উচ্চতায় আসন পাকাপোক্ত করেছেন। ইলিয়াসের শক্তির রসদমূলে ঘাটাঘাটি করলে মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে এবং পাইপের ধূসর ধোঁয়াটে-মেঘের-আলোআঁধারির পেছনে সন্ধান মেলে গভীর রাজনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব, সমাজের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাপ্রবাহের উপর অন্তর্ভেদী দৃষ্টিভঙ্গি, ভাষার কারুকার্যে অসামান্য নৈপুণ্য এবং সূক্ষ্ম রসবোধের প্রয়োগ; যা ইলিয়াসের শিল্পকার্যে যোগ করে ভিন্নমাত্রা৷ এইসব ছাড়াও ইলিয়াসের রচনায় অন্য আরেকটা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুণ সহজেই নজরে পড়ে — সেটা হলো গল্পের নিখুঁত চরিত্রচিত্রণ। যেমন, খোঁয়ারি গল্পে সমরজিতের প্রতিকৃতি আঁকতে ইলিয়াস বলেছেন,

"সমরজিতের বয়স ৪০ ছুঁইছুঁই৷ তার তামাটে মুখে প্রথমে চোখে পড়ে উঁচু ও তীক্ষ্ণ নাক এবং পিচ-ওঠা সুকলাল দাস লেনের মতো ঠাসবুননী ব্রণের দাগ এবড়োখেবড়ো নাকের উপত্যকা৷ তারপর আস্তে আস্তে ফুটে ওঠে তার বড়ো বড়ো চোখের গভীরে কোটর৷ নাকের ছায়ায় ঠোঁটের ঢেউ বোঝা যায় না; ঠোঁটের ওপর কাঁচা-পাকা গোঁফ বটবৃক্ষের নিচে ঝোপের মতো, বিনয়ে নুয়ে থাকে "৷

ইলিয়াস ভাষ্কর্যশিল্পীর মত পাথর খোদাই করে সযত্নে নিজের চরিত্রদের প্রতিমা নির্মাণ করেন।

ইলিয়াসের গল্পে সবসময় মুক্তিযুদ্ধের অস্থির সময়কাল এবং স্বাধীনতা-উত্তর দেশের কলুষিত রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার চিত্র বারবার নগ্নভাবে উঠে আসে। 'খোঁয়ারি' গল্পগ্রন্থের নাম-গল্পে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী নোংরা রাজনীতির চাপে আটকে পড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকার সংগ্রাম৷ অমৃতলালের ছেলে সমরজিতের বন্ধু ফারুক-জাফর-ইফতেখার রাজনৈতিক কার্যালাপের সুবাদে সমরজিতদের ভাঙাচোরা চুন-সুড়কি খসে পড়া পুরানো ঢাকার বাড়িটার কিছু অংশ ভাড়া চায়৷ আদপে পুরানো ঢাকায় রাজনৈতিক পার্টি অফিস ভাড়ার বাহানায় তারা বাড়িটা দখলে নিতে চায়৷ কিন্তু সাতচল্লিশের দেশভাগ, চৌষট্টি পূর্ব-পাকিস্তানের দাঙ্গা এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তিন-কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটা ছাড়তে ছোকরাদের হুমকি-ধমকে অমৃতলালের হেলদোল নেই বিধায় সমরজিতকে মদের আসরে বসিয়ে তাঁর বন্ধুরা নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারে তৎপর হয়ে উঠে। একদিকে নেশার ঘোরে সমরজিতের কপালের নিচের রক্তের প্যারেড, অন্যদিকে খোঁয়ারির ভেতর বসে অমৃতলাল বাপা-ঠাকুরদার বাড়িকে ঘিরে হারিয়ে যাওয়া সময় ও মানুষের স্মৃতিরোমন্থন করতে থাকে৷

তারাবিবির মরদ পোলা গল্পের বিষয় হলো যৌনতা। গোলজার আলির দাম্পত্য-জীবনে কোলাহল সৃষ্টি ও তার স্ত্রী সখিনার মনে সন্দেহ ঢুকাতে গোলজার আলির পঁচিশ বছর বয়সী সৎ মা তারাবিবি সারাদিন ভিত্তিহীন আজেবাজে ও উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে বেড়ায়। গোলজার আলির কবেকার সেই পরিচিত মেয়েকে নিয়ে আজেবাজে কথা ছড়ানো-সহ, কামের মাতারি সুরুজের মায়ের সাথেও তারাবিবি মরদ ছেলে গোলজারের অবৈধ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেন। মরদ পোলা গোলজারের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর নাড়া দিয়ে উঠলেও তারাবিবির ছােটো আকারের চোখ জোড়ার ঝলকানিতে একেবারে নিভে যায়। মূলত, ষাটোর্ধ্ব বয়সের রমজান আলীর সাথে নিঃসঙ্গ—একাকী—নিরানন্দ জীবনযাপন ও যৌবনের অতৃপ্ত কামনা-বাসনায় ঘনীভূত হওয়া ক্ষোভের জ্বালা তারাবিবি অন্যর নিন্দাতেই মিটায়। তবে গোলজার আলিও একদিন দুপুরে একা বাসায় মায়ের কথার সত্যতা প্রমাণেই হোক অথবা নিজের ভেতর পুঞ্জীভূত ক্ষোভ কিংবা অদম্য যৌনতার হাউস মিটাতে সুরুজের মাকে ঝাপটে ধরে পিতা রমজান আলির ভর্ৎসনার মুখে পড়লে, তারাবিবিও রমজান আলিকে শাসিয়ে দেয়,
‘'এমুন চিল্লাচিল্লি কর ক্যালায়? গোলজারে কি করছে? পোলায় আমার জোয়ান মরদ না একখান? তুমি বুইড়া মড়াটা, হান্দাইয়া গেছো কব্বরের মইদ্যে, জুয়ান মরদের কাম তুমি ভি বুঝবা ক্যামনে?’'

'খোঁয়ারি' গল্পগ্রন্থের 'খোঁয়ারি' এবং 'তারাবিবির মরদ পোলা' গল্পের গঠন কাঠামো মাধবীলতার ফিকে সুবাসের সঙ্গে কাঁঠালিচাঁপা ফুলের ঘন গন্ধের ন্যায় ইলিয়াসের তুখোড় গদ্যশৈলী করােটির ভেতরটায় একেবারে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। অন্য দুইটো গল্প ' অসুখ - বিসুখ ' ও ' পিতৃবিয়োগ 'ও গল্পের বিষয়-বৈচিত্র্য নির্বাচনে ইলিয়াসের বিচক্ষণ দৃষ্টিকোণের অনন্য দৃষ্টান্ত৷

IMG-8191-20211125-164650-20211223-200402
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
October 31, 2022
"আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ খোঁয়ারি। ১৯৮২ সালে এই গ্রন্থ প্রকাশের পর তিনি বাংলাদেশের প্রথম সারির অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন। এই গ্রন্থভুক্ত চারটি গল্পে ইলিয়াস সময়ের ভেতরে থেকেও সময়কে অতিক্রম করা চিরকালের কিছু প্রসঙ্গ টেনে এনেছন- নৈঃসঙ্গ,যৌনতা, বার্ধক্য, মৃত্যু। তাঁর নিজস্ব সময় এই গল্পগুলোতে যথার্থ রুক্ষ শুকনো ভাষায় জীবন্য-স্থির হয়ে পরিণত হয়েছে বাংলা ভাষার চিরায়ত সম্পদে।"

চারটি গল্প। খোঁয়ারি, অসুখ-বিসুখ, তারাবিবির মরদপোলা এবং পিতৃবিয়োগ।

খোঁয়ারি শব্দের অর্থ মদ খাওয়ার পর অবসাদগ্রস্থ হওয়া। পুরনো ভাঙাচোড়া একটি বাড়িতে সমরজিৎ এবং তার বাবা অমৃতলাল বাস করে।যুদ্ধের সময়ে বাড়ির সবাই ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল।কেউ কেউ ফেরত এসেছে আবার কেউ ভারতেই রয়ে গিয়েছে। যুদ্ধের পর সেই বাড়ির নিচতলায় রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক কার্যক্রমের জন্য বন্ধু ফারুক ও জাফর নিচতলা ভাড়া চায় কিন্তু সমরজিৎ এর পিতা রাজি হয়না পিতৃপুরুষের ভিটায় অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দিতে।পুরো গল্পটাই এক রাতের ঘটনা।

বয়স হলে মানুষের শরীর আর স্বাভাবিক থাকেনা। নানারকম অসুখে আক্রান্ত হয়ে যায় এবং একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।কিন্তু আতমন্নেসা সেদিক দিয়ে মানতে নারাজ।তিনি ওষুধ খেয়েই শরীর সুস্থ রাখতে চান। বিবাহিত মেয়ে মতিবিবি বছরের অধিকাংশ সময়তেই থাকে বাপের বাড়ি।আর অসুস্থ হওয়াতে স্বামী যে ওষুধ -পথ্য এনে দেয় তার প্রতি আতমন্নেসার বড়ই লোভ এবং একদিন তিনি লোভের বশবর্তী হয়ে মেয়ের ওষুধ হস্তগত করেন।

তারাবিবির মরদপোলা মূলত যৌনতা নিয়ে গল্পটি।গোলজার বিবাহিত। গোলজারের বউয়ের সাথে তারাবিবির সবসময় ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। এদিকে বউ বলে তাকে যেন বাপের বাড়ি রেখে আসা হয়। গোলজার যখন তার মাকে বউয়ের ব্যাপারে বলে যে বউকে যেন কিছু না বলা হয়, তখন তারাবিবি তার নিজ ছেলের চরিত্র নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয়। এমনকি ছোটবেলায় কোথায় কি হয়েছে এবং বাড়ির কাজের মেয়ের সাথে পরকীয়ার ব্যাপারেও ছাড় দিতে নারাজ।

পিতৃবিয়োগ নামটা শুনলেই বোঝা যাচ্ছে গল্পটা কোনো এক ব্যক্তির পিতার মৃত্যু নিয়ে।আশরাফ আলি পোস্টমাস্টার। বার্ধক্যে এসে মৃত্যুবরণ করেন।ওদিকে ছেলে ইয়াকুব চাকুরি করে দূরের এক সুগার মিলে।বছরে ছুটি পায়না। তাই আর বাড়িতেও আসা হয়না।��দিকে বাপের বড় সাধ ছিল মৃত্যুর সময় ছেলেকে দেখার। কিন্তু সেটা কি পূরণ হয়!

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা গম্ভীর। সংলাপ কম। কিন্তু তাই বলে লেখার সৌন্দর্য এতটুকুও কমেনি। ধৈর্য ধরে পড়ে যেতে পারলেই আসল সাহিত্যের রস আস্বাদন করা সম্ভব। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for DEHAN.
275 reviews86 followers
July 26, 2025
গতকাল সারাদিন প্রচন্ড হাওয়া দিয়েচে । না ঠিক হাওয়া না। হাওয়া শব্দটা খুব কোমল শোনায়। বাতাস বহেছে হবে।উঁহু ,নরমাল লুতুপুতু বাতাস না, ভালোমানুষের যে মুখোশটা পড়ে ঘুরি সেটা উড়ে যাওয়া টাইপ বাতাস। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কিংবা কলেজের ফাংশনে মেয়েরা কারনে অকারনে একটু পর পর যেভাবে একে অপরের উপর হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে , বাতাসের তীব্রতায় গাছ গুলোর অবস্থাও হয়েছিলো ঠিক তেমন। ভাবলাম একটা বই রোদে পুড়ে অনেক কষ্টে পড়লাম আরেকটা সুন্দর ওয়েদার ডিমান্ড করে। আবার ছাদে গেলাম। আবার ট্যাংকির পাশে।
খোঁয়াড়ি - প্রদীপ কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছে তার পিসতুতো ভাই এর বাসায় বেড়াতে। রাতে ঘুমানোর জন্য তার জায়গা হয় পিসতুতো ভাইয়ের ছেলের ঘরে । সেইখানে তোশকের নীচে এক অদ্ভুত রহস্যময় বইয়ের সন্ধান পায় সে যা তার জীবন বদলে দেয়। কি বই ছিলো সেটি!
অসুখ-বিসুখ- আতমন্নেসার যে একটা শক্ত রোগ হয়েছে এই কথাটা তিনি কাউকে বিশ্বাস করাতে পারেন না । না ছেলেকে, না মেয়েকে , না ছেলের বউ কে কিংবা মেয়ের জামাই কে। সবার একই কথা ‘’আম্মার হইলো মনের ব্যারাম, আসলে উনার কোন অসুখ ই নাই’’।সত্যি বলতে আতমন্নেসার কোন রোগ বালাই কেউ হতে দেখে নি কখনো। সব সময় সুস্থ সবল থাকতো তাই সবার এমন ধারণা । কিন্তু তিনি আজকাল ঘরে শুয়ে শুয়ে বুঝতে পারেন তার শরীরে একটা গোলমাল অবশ্যই হয়েছে। ছোট মেয়ের হাঁপানির জন্য তার জামাই রঙ বেরঙের বোতল ভরতি ঔষধ নিয়ে আসে। কারু পাত্তা না পেয়ে আতমন্নেসা নিজেই নিজের চিকিৎসার উপায় বের করেন।তিনি সুযোগ বুঝে নাতী কে ঘুষ দিয়ে সেই রঙিন বোতল গুলো আনায়, তারপর নাতীকে When there is a will, there's a way বলে পছন্দ মতো একটা বোতল থেকে চার পাঁচ টা ট্যাবলেট ঝেড়ে দেয়। এরপর সব অন্ধকার।
তারা বিবির মরদ পোলা - এটাকে অনেকে যৌনতা বিষয়ক গল্প বলে থাকলেও আমার মনে হয় এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক গল্প । সন্দেহবাতিকগ্রস্থা মায়ের উঠতে বসতে অমুক মেয়ে, তমুক মেয়ে, ইভেন কাজের মহিলা নিয়েও সন্দেহ করার কারণে গোলজার আলীর বৈবাহিক জীবন এখন ডায়াবেটিস রোগীর নোনতা বিস্কিটের মতো হয়ে গেছে।সারাদিন গোলজারের বিরুদ্ধে তার মায়ের এহেন চারিত্রিক আক্রমণ পর্যবেক্ষণ করে বউ নিজেও দিশেহারা আর হোপলেস হইয়া সারারাত কান্নাকাটি করে। তার মায়ের এরকম অভিযোগে গোলজার তার সাধ্যমতো তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং নিজেকে বুঝায় সে ওরকম ছ্যাবলা পুরুষ নয়। কিন্তু এক দুপুর বেলায় কাজের মহিলা কে বাসায় একা পেয়ে তার মনে হয় প্রতিদিন ‘’Sensodyne’’ দিয়া দাঁত মাজি একদিন নাহয় ‘’বিদ্যুৎ কালো নিমের মাজন’’ দাঁতে ঘষেই দেখি কেমন লাগে। তাছাড়া ছ্যাবলা ক্যাবলা বিষয় না, হাজার হোক পুরুষ মানুষ তো। পুরুষ মাত্রই এক্সপ্লোরশীল। পাশের ঘরে শুয়ে থাকা অসুস্থ বাপের কথা একরকম ভুলে গিয়ে সে ব্রাশ করার প্রস্তুতি নিতে গেলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়।
পিতৃবিয়োগ - একগুঁয়ে এক বাবার লাশের সামনে দাঁড়ানো তার সন্তানের মনোজগৎ বিশ্লেষণ। এমন একজন বাবা যিনি কখনোই সন্তানের আবেগ কে প্রশ্রয় দেন নি। এমন একজন বাবা যিনি সবসময় তার সন্তানের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করেছেন। এরকম একজন অসামাজিক, নির্লিপ্ত, গোঁয়ার প্রকৃতির লোকের মৃত্যুর পর দেখা গেলো বাইরের সবার সাথেই তার খুব চমৎকার সম্পর্ক ছিলো, একমাত্র সন্তান আর নিজের আত্মীয় স্বজন ছাড়া। ''তাহলে কি তারা কেউ ই বাবা কে বুঝতে পারে নি নাকি বাবা ই তাদের কাউকে বুঝতে দিতে চান নি? ভদ্রলোক মৃত্যুর মতো সহজ ও স্বাভাবিক একটা ঘটনার পরেও কি তাদের কাছে রহস্যময় হয়ে থাকতে চান নাকি সৃষ্টিকর্তা তাহারে বানিয়েছেন ই এভাবে?’' পার্সোনাল ফেভারেট। পাঁচ তারার তিন তারা এই গল্পের জন্য আর বাকি দুই তারা তিনটি গল্পে সমান সমান কিংবা খাপছাড়াভাবে ভাগ করে দেওয়া হলো।

আর হ্যাঁ খোঁয়ারি গল্পের রিভিউ আসলে খোঁয়ারি গল্পের নয়। অন্য আরেকটা গল্পের। কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল শুধরানোর জন্য ইচ্ছাকৃত ভুলের আশ্রয় নিতে হয় অথবা বলা যেতে পারে অনিচ্ছাকৃত ভুলকে রসালো এবং চকচকে করার জন্য তার উপর ইচ্ছাকৃত ভুলের প্রলেপ দিতে হয়। অর্বাচিন সমাজ এটাকে ভন্ডামি বলে…গোয়ার্তমি বলে । আমি বলি ভুলেক্ট্রোপ্লেটিং কিংবা ভুলভানাইজিং।
Profile Image for Shaon Arafat.
131 reviews31 followers
January 3, 2023
এ-বইটা পড়ার পরে প্রথম যে ব্যাপারটা আমার মাথায় আসলো, তা হচ্ছে - আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে 'আখতারুজ্জামান ইলিয়াস' নামে একটা স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করা উচিৎ। সাহিত্য তো বটেই, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞানেরও বড় একটা অংশ নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের বোঝা হয়ে যাবে।

পড়ার আগে ভালো লাগবে বলে আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু ভাবিনি বইটা মনে এত এত দাগ কাটবে। নতুন বছরে পড়া প্রথম বই এটা, অথচ মনে হচ্ছে সারা বছরের আত্মার খোরাক মিটে গেছে।।
Profile Image for SH Sanowar.
118 reviews29 followers
July 31, 2023
"ফিকশনাল আর্ট" বোধহয় একেই বলে। ছোট্ট একটা বই, চারটে মাত্র গল্প। অথচ পড়ে এমনই পরিতৃপ্ত হলাম যেন হাজার পৃষ্ঠার কোনো বিশাল আখ্যান পড়েছি। যে আখ্যান মাথায় চেপে বসে জংধরা মগজে আঘাত করছে বারবার। যার রেশ কাটানো যাচ্ছে না কোনভাবেই। এমনই গভীর একেকটা শব্দ, একেকটা বাক্য। এরকম অদ্ভুত সুন্দর আর্টিস্টিক কোনো লেখা আর কখনো পড়েছি বা পড়া হবে কিনা জানিনা। ভদ্রলোক এমন দারুণ লিখতেন! আশ্চর্য হই, কষ্টও লাগে।
Profile Image for Hibatun Nur.
159 reviews
September 29, 2025
ঢাকার আদি অধিবাসীদের কুট্টি বলা হয়। এই কুট্টিদের আছে নিজস্ব বাংলা, নিজস্ব এলাকাভিত্তিক কালচার। বইয়ের চারটা গল্পের মূল বিষয়ের (নিঃসঙ্গতা, যৌনতা, বার্ধক্য ও মৃত্যু) পাশাপাশি উঠে এসেছে এই কুট্টিয়ানা।

প্রতিটা গল্প ইউনিক, স্বতন্ত্র।

তবে আমার কাছে যেটা সবথেকে বেশি ভাল লেগেছে সেটা হল বইয়ের সংলাপগুলো। এত রিয়ালিস্টিক সংলাপ আর পড়েছি বলে মনে পড়ে না। যেন কথাগুলো কানে বাজে। আশে-পাশে প্রায়ই শুনি শুনি মনে হয়।
গল্পগুলোর কাব্যিক উপমায় ও রূপক চালে ঠাশা স্রোত বাস্তবতাকেই যেন আরও প্রকট করে তোলে।

তবে খোঁয়াড়ি-র মহত্ব সবচাইতে বেশি। গুরুত্বও। অন্যগল্পগুলো ভাল লাগবে, ভাবাবে। কিন্তু খোঁয়াড়ি দেবে নাড়িয়ে। খোঁয়াড়ির মধ্যে পড়ে থাকবে পাঠক। হ্যাংওভার কাটবে না সহজে।
Profile Image for Tania Sultana.
Author 16 books96 followers
March 16, 2020
এত বেশি রঙ- বেরঙ চরিত্র আর গল্প!
Profile Image for Zabir Rafy.
312 reviews10 followers
June 17, 2025
ইলিয়াসের এই বইটার ভাষা একটু কঠিন, একটু রুক্ষ। সংলাপ কম, শব্দের ঠাস বুননে তুলে আনা মানবজীবনের গল্প।

বাস্তবতাবাদ বলে যেই বিষয়টা আছে, মানবজীবনের অনিবার্য যেই বিষয়গুলো, বার্ধক্য কিংবা যৌনতা, কিংবা মদ-গাজার নেশা; ইলিয়াসের রুক্ষ ভাষায় সূক্ষ্ণ বিষয়গুলো বেশ ভালোভাবেই ধরা দেয়।

বইয়ের প্রথম গল্প খোঁয়ারি, যার মানে দাঁড়াচ্ছে আবেশ, মদ খেয়ে নেশা করে যেমন এক ধরনের ঘোর তৈরি হয়, সেটাই। ইলিয়াসের লেখা গল্প পড়লে এরকম একটা ঘোর তৈরি হয় আমার। স্বল্�� সংলাপের জটিল ভাষার লেখাগুলো মাদকের মতো ঘোর তৈরি করে। পড়ার পরে "বেশ শক্তিশালী লিখনশৈলী বটে" যেই অনুধাবনটা হয় সেটার আবেশ থাকে বেশ কিছুক্ষণ, মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে দুর্বোধ্য বাক্যগুলো।

তবে এসব লেখা একবার পড়ার জন্য নয়৷ বারবার পড়া উচিত। সেক্ষেত্রে হয়তো গল্পের অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন করা যেতে পারে। একবার পড়লে যেটা হবে সেটার নাম "খোঁয়ারি।"
Profile Image for Shakil Mahmud.
90 reviews40 followers
July 15, 2021
শৈল্পিক গঠনশৈলীর বিচারে এই গ্রন্থের সেরা গল্প হলো নামগল্প 'খোঁয়ারি' ও 'তারাবিবির মরদ পোলা'। 'অসুখ বিসুখ' আর 'পিতৃবিয়োগ'- এই দুটি গল্প অত বেশি যুতের লাগেনি আমার কাছে।

খোঁয়ারির শিল্পমান বিশ্লেষণ করতে গেলে বারবার অবাক হতে হয়। এইধরনের অদ্ভুত সুন্দর বিন্যাসে গদ্যসাহিত্য লিখতে ইলিয়াসের আগে কাউকে দেখি নি।

সত্তর দশকের প্রথম দিকে নব্য স্বাধীন দেশে কিছু নব্য "দেশপ্রেমিক" পলিটিক্যাল বাটপার শ্রেণীর উত্থান ঘটে, যাদের ধান্দা থাকে দেশপ্রেমের ঝান্ডা উড়িয়ে পলিটিকাল কানেকশন কাজে লাগিয়ে নিজের আখের গোছানো। তাদেরই একটা গ্রুপ থাকে যারা সমরজিতের পরিচিত। তারা আসে সমরজিতের বাপ দাদার আমলে বানানো ভাঙ্গা-চোরা বাড়িটাকে পুরান ঢাকা অঞ্চলের অফিস বানানোর জন্যে দখলে নিতে, যে বাড়িটা সমরজিতের ভাষায় 'খোঁয়ারি'। তারা এসে ঢুকতেই — মাধবীলতার ফিকে সুবাসের সঙ্গে কাঁঠালিচাঁপা ফুলের ঘন গন্ধ জীবজন্তুর করােটিতে হঠাৎ করে ঢুকে মগজের সাজগােজ এলােমেলাে করে দেয়। মাধবীলতা তাে গেটের ওপর দ্যাখাই যাচ্ছে। কাঁঠালিচাঁপার ঝাড়টা কোথায়?

তাদের উদ্দেশ্য করে সমরজিত বলতে থাকে — 'তাইলে আইছাে?' দরজা খােলার ক্যাচক্যাচ শব্দের সঙ্গে সমরজিতের কথা শুনলে মনে হয় পুরােনাে তক্তপােষে ঘুমিয়ে পাশ ফিরতে ফিরতে স্বপ্নের মধ্যে কেউ গােঙাচ্ছে।

সমরজিতের চেহারার বর্ণনায় ইলিয়াসের তুখোড় এবং তীব্র গদ্যশৈলীর আরেক নমুনা দেখা যায়— সমরজিতের বয়স ৪০ ছুইছুই। তার তামাটে মুখে প্রথমে চোখে পড়ে উঁচু ও তীক্ষ্ম নাক এবং পিচ-ওঠা সুকলাল দাস লেনের মতাে ঠাসবুনুনী ব্রণের দাগে এবড়ােখেবড়াে নাকের উপত্যকা। তারপর আস্তে আস্তে ফুটে ওঠে তার বড়াে বড়াে চোখের গভীর কোটর।

অথবা সমরজিতের ভাঙা চোরা ঘরের ভেতরের বয়ান— এই ঘরের দরজা ভেজানাে ছিলাে। ধাক্কা দিতেই কপাট দুটো দুজন অন্ধ ভিখিরির মতাে দুদিকে ঢলে পড়ে। সবগুলাে ঘরের দেওয়ালে খিচিয়ে-থাকা দাঁতের গোড়ায় ছ্যাতলার মতাে হলুদ জ্যোৎসা।

নব্য স্বাধীন দেশের নব্য গুন্ডা জাফর, ফারুক কিংবা তাদের পাকি বন্ধু ইফতিখারের সাথে খোঁয়ারির ভেতরে বসে হুইস্কি খেতে বসার বয়ানেও ইলিয়াসের অভূতপূর্ব লেখনশৈলী চোখে পড়ে— সমরজিতের কপালের নিচে তখন রক্তের প্যারেড, লেফট রাইট লেফট রাইট লেফট! তার লম্বা চুমুকে প্রায় দেড় আউন্স পরিমাণ হুইস্কি গলায় গিয়ে ফের ওপরে উঠে করোটির ময়লা সাফ করে।
ময়লা জমে ভােতা-হয়ে-যাওয়া এককালের গােলাপী জিভটাকে ভালাে করে ঝাঁকাবার জন্য সমরজিৎ হুইঙ্কির একটা পাতলা লেয়ার বিছিয়ে রাখে তার ওপর, প্রত্যেকটা ঢোক গেলার আগে ভালাে করে ভিজিয়ে নিচ্ছে একবার। বাঙলা মদ গিলে গিলে জিভের ওপর শ্যাওলা জমে গেছে। স্কটল্যাণ্ডের তরল রোদ একেক বার গড়িয়ে যেতেই জিভ শুকিয়ে খটখটে হয়ে যাচ্ছে।


এরকম অদ্ভুত, খানিক ফ্যান্টাসি খানিক সুররিয়েলিজমের লেয়ার বসানো গদ্য একেবারেই যেন নতুন! এই নতুনত্ব যেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসে আমার করোটিতে ধাক্কা মারে।

'তারাবিবির মরদ পোলা' গল্পের মূল ভিত্তি হলো যৌনতা। অনেকে এই গল্পটিকে ফ্রয়েডীয় যৌনতার ক্যাটেগরিতে টেনে নিয়ে যেতে চাইলেও আমি সেটা সমর্থন করিনা। আমার মতে, এইটা যতটা না ফ্রয়েডীয় যৌনতা, তার চেয়ে অনেক বেশি 'ইলিয়াসীয় যৌনতা'। কারন গল্পের গঠনশৈলীতে ইলিয়াসের মৌলিকতা এবং স্বকীয়তা এতটাই প্রবল যে, সেটাকে অন্য কারো লেখনীর কাঠামোর বিচারে বিশ্লেষণ করতে যাওয়াটা অন্যায়।
গল্পের শুরুটা হয় এভাবে— ভেতর থেকে তারাবিবির একটানা সংলাপ কানের ফুটো দিয়ে মাথায় ঢুকে এলোমেলোভাবে আঁচড়াতে শুরু করলে গোলজার আলির সাজানো গোছানো রাত্রিবেলাটা একেবারে তছনছ হয়ে গেলো।

দুর্দান্ত গদ্য একেবারেই! একদমই ইউনিক শব্দ চলাচল!

এরপর তারাবিবির মরদ পোলা গোলজার আলির সিনেমা দেখে রাতে বাড়ি ফিরে আসার বয়ান—
এই দরজা খুব মােটা, খুব পুরনাে ও ছিদ্রসমৃদ্ধ। একটি অন্যতম ছিদ্র মুখ লাগিয়ে সে স্ত্রীকে ডাকতে যাবে, এমন সময় তার কানে আসে তারাবিবির দীর্ঘ ক্ষোভধ্বনি, 'তুমি তাে একখান মরা মানুষ। তামামটা জিন্দেগী ভইরা খালি বিছানার মইদ্যেই পইড়া রইছে, একটা দিন বুঝবার পারলা না আমি ক্যামনে কি পেরেশানির মইদ্যে ঘরবাড়ি চালাই। কি একখান পােলারে প্যাটে ধরছিলাম, হায়রে আল্লা, হাসরের দিন আমি আল্লারে কি জবাব দিমু? রাইত হইছে বারােটা না একটা, ঘরের মইদ্যে অরে পাইবা না। কৈ কৈ কার লগে রঙ কইরা বেড়ায়, আমি জানি না, না?' এই সংলাপে গােলজার আলির সারাটা সন্ধ্যা, ব্লো-ফাটানাে রঙিন চলচ্চিত্র, রাস্তায় নিয়নের আলােতে ঘুষির নাচন-সব একেবারে ঘােলা হয়ে যায়। নিজেকে আর নিজের দখলে রাখতে ইচ্ছা করে না, নিজের বিবেচনা ও সুখ-দুঃখের সমস্ত দায়িত্ব অন্ধকার ল্যাম্পােস্টের নিচে হলদে-কালাে নালায় গড়িয়ে দেওয়ার জন্য সে আকুপাকু করে।

গোলজার আলি তার নিজের জন্ম নিয়ে বাপের উপরে ক্ষোভ ঝাড়ে এইভাবে— বাপে হালায় বুইড়া বিয়াটা না করতো তে জিন্দেগীতে দুনিয়ার মইদ্যে পয়দাই হইতাম না! - পৃথিবীতে কোনোদিন না আসবার সেই সুখ থেকে তাকে বঞ্চিত করাটাও বাপের পক্ষে খুব অন্যায় কাজ হয়েছে।

সারাদিন ঘরে বসে তারাবিবির প্রধান কাজ থাকে তার পোলার বউ সখিনার কাছে পোলার নামে আজেবাজে কথা ছড়ানো। তেমনি একদিন এই মরদ পোলা মায়ের উপর খেপে যায় বউয়ের কাছে তার নামে বাজে কথা ছড়ানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে। কিন্তু তারাবিবির দৃষ্টির তীব্রতার নিচে গোলজার আলি মিইয়ে যায়। সেই বয়ানটা এরকম—
তারাবিবির গােটা মনােযােগই এখন গােলজারের দিকে ন্যস্ত। মেঝেতে সে বসেছে পা ছড়িয়ে। তার দুই পায়ের পাতাই এপিঠওপিঠ সম্পূর্ণ দ্যাখা যাচ্ছে। ডান পায়ের ওপরের পাতায় এগজিমার ঘা; এগজিমাটা মনে হয় তার পোষা, অবসর মতাে চুলকায়, সেটা কখনাে বাড়ে, কখনাে কমে। এখন তার বাড়ার ঋতু। ছড়ানাে পায়ের পাতা থেকে মায়ের প্রিয় ঘায়ের একটি কি দু'টি পুঁজের বিন্দু গােলজারের দিকেই তাকিয়ে আছে। তারাবিবির মাথার কাপড় তার খোঁপার সঙ্গে আটকে গেছে, তার ছােটোখাটো গর্তে উঁচু-নিচু ভরাট লম্বা কালাে মুখ, চওড়া ও রেখাহীন নির্বিকার কপালের ওপর সাদা কয়েক গোছা চুলের নিচে কালো চুলের রাশি এবং তার ছােটো আকারের চোখ জোড়া গােলজারের চোখের সামনে ঝলক দিয়ে উঠলে সে একেবারে নিভে গেলাে।

মরদ পোলার মারদানী টিকতে পারে না মায়ের সামনে। কামের মাতারি সুরুজের মার সাথে গোলজার আলির সামান্য কথা বলা নিয়ে তারাবিবির অনেক সন্দেহ। তারাবিবির ধারণা, তার মরদ পোলা একটু সুযোগ পেলেই সে অঘটন ঘটিয়ে দিবে। সেই ধারণাকে সত্যি করতেই যেন একদিন দুপুরবেলায় গোলজার আলির মা আর বউ বাইরে যায়। খালি বাসায় যখন পাশের রুমে বৃদ্ধ বাপ রমজান আলি শুয়ে শুয়ে গোঙ্গায়, তখনি মরদ পোলা গোলজার আলির ভেতরে এক অবাধ্য কামনা মাথাচাড়া দেয়। সুরুজের মা গোলজারকে ভাত খেতে ডাকতে আসে এবং তারপরেই —
কথা বলতে ���লতে সুরুজের মা বুকের ওপর শাড়ির আঁচল গুছিয়ে রাখে। সেদিকে চোখ পড়তেই হঠাৎ কি হয়, গোলজারের চোখ, মুখ ও গলার হাল্কা সুর একেবারে উবে যায়। সেই সুরের জায়গায় তার ইচ্ছা-নিরপেক্ষ বোঁবোঁবোঁ ধ্বনির এলােমেলাে চলাচলে ওর করােটির ভেতরটা একেবারে ঠাসা হয়ে যায় এবং সমস্ত শরীরের রক্ত সেদিকেই উজান বইতে বইতে বিপদসীমা অতিক্রম করে। খাটের স্ট্যাণ্ড ধরে দাঁড়িয়ে আছে সুরুজের মা। নিজের মাঝারি দৈর্ঘ্যের শ্যামবর্ণের শরীরটা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গোলজার প্রায় একটি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় মেঝের উপর। সুরুজের মা কপালের একটুখানি ও ভ্রুর সবটা কুঁচকে তাকে দেখছে। তার কপাল ও ভ্রু ফের সম্প্রসারিত হতে হতে গোলজার তার ডান হাত হ্যাঁচকা টানে তাকে সামনে নিয়ে আসে। তার বুকের সঙ্গে লাগানো সুরুজের মার মাথা, মাথার লালচে কালো চুলে পুরনো পচা নারকেল তেলের গন্ধ।

অভূতপূর্ব, মৌলিক, বাস্তব ও পরাবাস্তবতার মিশেলে এমন তীব্রতম মস্তিষ্কভেদকারী গদ্য লেখার ক্ষমতা অন্য কোনো লেখকের মধ্যে দেখিনি আমি। ইলিয়াস পুরোপুরি রকমের স্বকীয়, পুরোপুরি রকমেরই ইউনিক। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আমাদের মাস্টারক্লাস ইলিয়াস একজনই। আর কেউ আসবেনা কখনো, যিনি এইভাবে শব্দ সাজাতে পারেন।
Profile Image for Chandreyee Momo.
219 reviews30 followers
March 16, 2023
লেখকের লেখার ধরন, গল্পের বিষয়স্তু, প্রতিটা লাইনে এতটুকু বিষয়েরও ডিটেইলস। আমি মুগ্ধ। এমনভাবেও লেখা যায়? এত ছোট্ট কিন্তু বিশ্লেষণধর্মী বিষয়ের চারটা গল্প এই বইটায়। প্রতিটা গল্প মনে দাগ কেটেছে।
লেখকের অন্য কোন বই আগে কেন পড়িনি ভেবে আফসোস হচ্ছে।
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
February 23, 2021
প্রথমে বলে রাখি এই বইটা আমার প্রিয় বইয়ের একটা হয়ে গেল! ❣️ এই ইলিয়াস লেখাকে আর্টের উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং সেটা যতটা উপরের স্থানে নিয়ে যাওয়া যায়।
এই বইয়ের অনেক স্থানে প্রতিটি লাইন এক একটা শিল্পের তুলিতে আকা painting এর মতো লাগছিলো। একজন পরিদর্শক মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে,, সেই painting খুবই যত্নে, অনেক সময় নিয়ে আকা, যা কিনা প্রমাণ করে উনি বেশ উন্নত পর্যায়ের শিল্পী

যেমন এই বইয়ে উনি লেখাতে গ্রামের মুখের ভাষা, সচরাচর গালিগুলো দিয়ে বাঙালি মানুষের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন, যেখানে ছিল বাস্তবিকতা এবং শিল্পের ছুঁয়া! মনে হবে কোনো গ্রামে বা কোনো বিল্ডিংয়ে গিয়ে আপনি বইয়ের চরিত্রের কাজকর্ম, কথাবার্তা নিজ চুখে প্রদর্শন করছেন।

গল্পগুলো নিয়ে কিছু কথাঃ---
উনি মত খাওয়া মানুষের গল্প বলে লেখার মাধ্যমে আপনাকে মত/হুইস্কি খাওয়ার মতো পিনিক দিবেন।
আবার, ওষুধের বোতল, ট্যাবলেট, অসুস্থ মানুষ এগুলোকো নিয়ে যাবেন আর্টের পর্যায়ে নিজের মুগ্ধ করা লেখার মাধ্যমে.....

এখানে যেমন আছে কোনো এক সন্দেহপ্রবণ মা-এর গল্প, যিনি তার বিবাহিত ছেলেকে এবং ছেলের বউকে সবসময় সন্দেহের চোখে দেখেন। তেমন আবার আছে বাপ-মরা এক ছেলের গল্প, যেখানে মৃত মানুষটিকে দেখতে এসে গ্রামের মানুষের মুখে বিভিন্ন কথার সমারোহ এবং ছেলের তার মৃত বাবার প্রতি কান্নাঝরা আবেগ

বইয়ের গল্পগুলোঃ
১। খোঁয়ারি
২। অসুখ-বিসুখ
৩। তারা বিবির মরদ পোলা
৪। পিতৃবিয়োগ
33 reviews3 followers
February 28, 2022
৬৮ পৃষ্ঠার বই।
চারটা ছোট গল্পে টগবগ করে ফুটছে যেন বাস্তবের রূঢ়তা ও মানব আচরনের কদর্যতা!
পড়তে পড়তে সেঁকা লেগে ফোস্কা পড়ে আমাদের ধোপদস্ত করে রাখা চিন্তা ভাবনায়।
মানবজীবনের এইসব রূঢ় কদর্য বিষয়াবলী আমরা সবাই কম বেশি জানি, তবুও লুকিয়ে বাচিয়ে ঢেকে রাখতে চাই লজ্জার আবরনে। কিন্তু, ইলিয়াস স্যার ওপরে ফিটফাট করে রাখা জীবনের কিংবা মানসিকতার ধার ধারেননি তার লেখায়। চমৎকার লাগলো তার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ "খোঁয়ারি" (১৯৮২)
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
May 13, 2021
এরকম ভালো বই পড়ে শেষ করার পরে একটা আবেশ,একটা পরিতৃপ্তিবোধ, একটা আনন্দ বা দুঃখবোধ অথবা দুটোই একসাথে মনে ছড়িয়ে যেতে থাকে। এইধরনের বইগুলো মাথা থেকে যায় না। মাথায় মগজে মনে থেকে যায়, ভাবের ডালপালা বিস্তার করে আরো আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
August 9, 2020
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এই গ্রন্থে চারখানা গল্প আছে। সবগুলো গল্পই দারুণ। অনেক সময় নিয়ে, রয়ে-সয়ে প্রত্যেকটা গল্প পড়লাম এবং বরাবরের মতোই মুগ্ধ হলাম।
Profile Image for Mehedi  Hasan Mahfuz.
171 reviews27 followers
October 24, 2023
রিডার্স ব্লকে পড়ে ফালা ফালা হয়ে গেছি।সার কথা কিছুই ধরতে পারি না। আরেকবার পড়া লাজিম!
Profile Image for শৌণক.
112 reviews17 followers
July 3, 2023
অদ্ভুত সুন্দর। প্রত্যেকটা গল্প। সবচেয়ে সুন্দর বোধহয় খোঁয়ারি আর পিতৃবিয়োগ।

এই ভদ্রলোকের লেখা এত অসাধারণ ক্যান?
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
October 22, 2025
পিতৃবিয়োগ’ গল্পটার জন্যই বইটাকে পাঁচ তারা দেওয়া যায়! ‘খোঁয়ারি’ গল্পটা তেমন ভালো লাগেনি, তবে বাকিদুটো বেশ ভালো ছিল।
Profile Image for Fahmida Yeasmin.
32 reviews4 followers
July 15, 2022
৪ টা গল্প, ৪ টাই সুন্দর, তবে ১ আর ৪ নাম্বার নিয়ে কোনো কথা হবে না 🤟🤟🤟
Profile Image for Jahid Hasan.
135 reviews160 followers
March 24, 2018
পুরান ঢাকার অলিগলি হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ খেয়াল হয় এই সমস্তই লেখা আছে!
এইসব মিহি কারুকাজ করা পুরোনো দালান, ধুকধুকে দেওয়াল, খড়খড়ির জানালা এই পথঘাট-- এই সমস্তই লেখা আছে খোঁয়ারি বইয়ের পাতায়।
মনে হয় যেন এই প্রকান্ড পাঁচিলের ওপাশেই উঁচু স্বরে নিজেদের সংলাপ ঝালাই করে নিচ্ছেন সেইসব পরিচিত চরিত্র। তাদের কন্ঠের আবেশে এই সমস্তই ভারি আপন মনে হয়।
খুঁজে পেতে ইচ্ছে করে সমরজিতের মাধবীলতায় ঢাকা উঁচু গেটওয়ালা দোতলা বাড়িটি। কখনো কখনো রাত করে ফিরে এলে যে বাড়ির থামগুলো আদর করে জড়িয়ে ধরতেন অমৃতলাল। ঐ বাড়িটা কি ওদের দিয়ে দিল সমরজিৎ?
কিংবা সদরঘাট থেকে আলুবাজারের দিকে যেতে যেতে একদিন যে অচেনা পথ দেখে মায়ায় পড়েছিল আতমন্নেসা। তার সেই মায়াবী চোখে সারি সারি ওষুধের শিশি কেন এতো অপূর্ব লেগেছিল?
হয়ত এখানেই কোথাও আওড়ানো তারাবিবির গল্পের সেই শেষ সংলাপটি এখনো কেমন সুতীব্র তীক্ষ্ণ শোনায়!
অথবা বাবার আজন্ম পরিচিত মুখ এবং ব্যক্তিত্বের ভিন্নতার দোলাচলে দুলতে দুলতে পিতৃবিয়োগের পর কোথায় নিঃসঙ্গ যাত্রা করলো ইয়াকুব?
পুরান ঢাকার এই সঙ্কীর্ণ গলিপথ ধরে যেতে যেতে তাদের প্রত্ত্যেকের কথাই ভীষণ মনে পড়ে যায়। যারা সংলাপের দরুণ নিছক গল্পকে পাশ কাটিয়ে একসময় রক্তমাংসের মানুষে পরিণত হয়েছিল।
Profile Image for Tahmid Sadik.
18 reviews
May 14, 2017
'ভেতর থেকে তারাবিবির একটানা সংলাপ কানের ফুটো দিয়ে মাথায় ঢুকে এলোমেলোভাবে আঁচড়াতে শুরু করলে গোলজার আলির সাজানো গোছানো রাত্রিবেলাটা একেবারে তছনছ হয়ে গেলো'
অথবা
'বারান্দার টবে ফুলগাছ পোষে কে?' -- এইসব ফুলগাছ পোষার ব্যাপার আমারে ধাক্কা মারে, দম বন্ধ হয়া যাইবার চায়। ব্যাটায় মনে হয় একখান চাবুক লইয়া বইছিল লেখার সময়।
Profile Image for Salawat Ullah.
29 reviews32 followers
February 27, 2017
আখতারুজ্জামান ইলয়াসের বিখ্যাত উপন্যাসদুটো একটু আকারে বড় বিধায় আপাতত এই গল্পের বই পড়ে তার লেখার একটু স্বাদ নিলাম।
Profile Image for ahmed • srabon.
35 reviews
May 17, 2023
৬৮ পৃষ্ঠার বইটা গ্ৰাউন্ডব্রেকিং এবং এক্সেপশনাল, কারণ এটা প্রকাশের পর আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লেখক হিসেবে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যান এবং বাংলা সাহিত্যে 'ইলিয়াসীয়' ভঙ্গি পাকাপোক্ত আসন গেড়ে নেয় ー এমনটাই বলা হয় তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্ৰন্থ "খোঁয়ারি" সম্বন্ধে। ভালো খাবার আমি গপগপিয়ে খাই, কিন্তু ভালো বই আমি অত্যন্ত ধীরেসুস্থে পড়ি। তিনদিন লাগিয়ে "খোঁয়ারি", "অসুখ-বিসুখ", "তারাবিবির মরদ পোলা", এবং "পিতৃবিয়োগ" পড়ার পর মনে হলো, ইলিয়াস সাহেবের লেখা নিয়ে আর যা-ই হোক, অত্যুক্তি করা হয় না।

কিন্তু তারপর এই গল্পগ্ৰন্থটাকে নিয়ে যাবতীয় আলাপ আর ডিসকোর্স দেখে মনে হলো, আর সকলে যে বইটা পড়েছে আমিও ঠিক সেটাই পড়েছি তো? "খোঁয়ারি" আর "তারাবিবির মরদ পোলা" -কে মাস্টারপিস বলা হচ্ছে, হক কথা, তাতে আমার দ্বিমত নেই। কিন্তু "অসুখ-বিসুখ" আর "পিতৃবিয়োগ" নাকি জুতসই লাগেনি অনেকেরই। সিরিয়াসলি?? আমার কাছে তো এ দুটো গল্পই বইয়ের সেরা দুটো গল্প মনে হলো। "খোঁয়ারি" গল্পটা নিঃসন্দেহে অসাধারণ একটা গল্প ー কোনো কিছুকে ভালো বলা হলে যে অপর কিছুকে খারাপ বলা হচ্ছে, এর কোনো মানে নেই। প্রতিটা গল্প স্বতন্ত্র, প্রতিটা গল্পের নিজস্ব মেরিট আছে।

"খোঁয়ারি" শব্দের অর্থ নেশা লাগা, হ্যাংওভার জাতীয় কিছু। গল্পটা নেশা লেগে থাকার গল্প। সমরজিৎ পুরো গল্প জুড়ে হ্যাংওভারে থাকে। পুরনো জৌলুসের অস্তমিত চাঁদের মতো নিজের বাপ ঠাকুরদার ভিটেবাড়িটার হ্যাংওভার। নিজের আইডেন্টিটির সাথে আপোস করে চলার ফলে লেগে যাওয়া নেশা। দেশ নতুন করে জন্ম নিয়েছে। সকলে জেগে উঠছে। সমাজ-কাঠামোর পুনর্বিন্যাসে নিজের মতো ভাগবাটোয়ারার করে নিচ্ছে যারা সজাগ। সমরজিৎ তখনো বিগত নেশার ঢেকুর তুলছে ー মিলিটারি আক্রমণের শিকার একটি গ্ৰাম, অঝোরে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি, তাঁর কাঁধে একটি পুরো পরিবারকে ওপারে পৌঁছে দেবার জিম্মা। একটি বিদ্যুতের চাবুক সারা আকাশকে এপার থেকে ওপার অবধি চিরে ফেলে ー এবং আকাশের অন্যপ্রান্ত থেকে সে শুনতে পায় কেউ বলছে ー বাড়িটা আমাদের দিতে হবে। আর সমরজিতের ভেতরটার পুরনো নেশা তোতাপাখির মতো বারবার জবাব দেয় ー "বাপে দিবার চায় না"। নেশার আসক্তি নিয়ে অঢেল গল্প আছে, কিন্তু নেশার পর লেগে থাকা অবসাদ নিয়ে এমন অনন্য গল্প আর হয়তো নেই। একটি টবে গাঁজার গাছ গজায় বলে টবের অন্য গাছগুলো মরে যায়, এবং গাঁজার গাছটিতে ও পোকা ধরে ー এমন একটি সুন্দর মেটাফোর আছে গল্পের শেষে। আজকালকার বাংলা গদ্যগুলিতে ইংরেজি শব্দের বাহুল্য কেমন খাপছাড়া ও বিখাউস লাগে যেন। লেখক হিসেবে ইলিয়াস সাহেবের মুন্সিয়ানার নমুনা হলো এই গল্পে একগাদা ইংরেজি শব্দও বাংলা পদবিন্যাসে অত্যন্ত সাবলীলভাবে এঁটে যায়‌, মনে হয় বাংলা গদ্যেরই প্রাঞ্জল অংশ।

এ বইটিতে আমার প্রিয় গল্প "অসুখ-বিসুখ"। আমার মনে হয় লোকে এ গল্পটাকে 'বার্ধক্যের' গল্প ভেবে ভুল করে। আমার ব্যক্তিগত তফসিরে গল্পটা 'সুস্থতা'র। অন্য মাত্রার একটি মনস্তাত্ত্বিক গল্প। আতমন্নেসা অসুস্থ হতে চায়। সে চায় তার রোগ-ব্যামো নিয়ে সকলে মাতামাতি করুক ー এ উছিলায় তাকে কেউ দেখুক অন্তত। সুস্থতা সকলের কাম্য ও প্রার্থনা, এবং এই একটি কামনাকেই আমরা সবচেয়ে স্বাভাবিক মনে করি। কিন্তু এ গল্পটি সুস্থতা ও অসুস্থতার কনসেপ্টকে একটি ভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক ফ্রেমওয়ার্কে ফেলে চিত্রায়িত করে। আতমন্নেসা যৌবনে ঈর্ষনীয় সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিল, হাওয়া পানি তাকে কক্ষনো ঘায়েল করতে পারতো না। তার প্রায়শ অসুখ লাগা স্বামীর সেবা করে তার দিন কাটতো‌। নিজের শরীরের ভালো খারাপ নিয়ে সে কক্ষনো মুখে রা কাড়েনি। কিন্তু সত্যিটা হলো তার অসুস্থতাকে কেউ কোনোদিন পাত্তা দেয়নি। স্বামী জীবনে খোঁজখবর নেয়নি। এমনকি গর্ভাবস্থার স্পর্শকাতর সময়তেও আত্মীয় ননদেরা তার ওপর হুকুমবাজি করেছে। নিজের স্বাস্থের প্রসঙ্গে আতমন্নেসা ছিল উপেক্ষিত। এই উপেক্ষা তার মনস্তত্ত্বে গভীর দাগ ফেলে এবং এক পর্যায়ে মনোবিকারে পরিণত হয়। বৃদ্ধা হবার পর সে নিজের অসুস্থতাকে পূঁজি করে সকলের মনোযোগ কাড়তে চায়। নিজের অসুস্থ মেয়ের স্বামী-সোহাগ দেখে ঈর্ষান্বিত হয়। ওষুধের শিশি তার কাছে মনে হয় মহামূল্যবান শো-পিস (my precious!) আর তা দিয়ে সে ঘর সাজাতে চায়। অবশেষে যখন তার ক্যান্সার ধরা পড়ে ー তার হাতে যেন ঈদের চাঁদ এসে ধরা দেয়। আতমন্নেসার চরিত্রটি একটি অভিনব মনস্তাত্ত্বিক নিদর্শন ও বইটিতে আমার প্রিয় চরিত্র।

তেমনই একটি মনস্তাত্ত্বিক গল্প "পিতৃবিয়োগ"। বিয়োগ আসলে কিসের? কার বিয়োগ? ইয়াকুবের ছেলেবেলায় তার মনে একটি অলমোস্ট অ্যাবসেন্ট ফাদার ফিগারের যে প্রগাঢ় গম্ভীর ভাস্কর্য তৈরি হয়। মৃত্যুর পর সেই ফিগারটির চরিত্রের দ্ব্যর্থকতা ইয়াকুবের গম্ভীর ভাস্কর্যটিকে ধীরে ধীরে ধুলিস্মাৎ করে দেয়। গ্ৰামের লোকেদের দেয়া বর্ণনার সাথে অবচেতনে দেখা ভাস্কর্যটির বেদনাদায়ক অমিল দেখে সে ভাবে ー বিয়োগ কার? কে চলে গেল?

বেশিরভাগ বই পড়ে বলে দেয়া যায় যে বইটা বারবার পড়ার মতো, না একবার পড়ে বাহবা দিয়ে ভুলে যাবার মতো। এ বইটার বেলায় বলতে পারছি না, এটা বারবার পড়তে পারবো না এই একবারই।

Actual Rating ー 8.7/10
Profile Image for Humaira Tihi.
79 reviews28 followers
March 4, 2024
পাশাপাশি রেখে অনেকগুলি বই পড়ার মূল কারণ একটাতে কোন বেগতিক অবস্থায় পড়লেই যাতে ইমার্জেন্সী স্টেপ নেয়া যায়। এর আগে এমন বিপদে পড়েছিলাম অনেক বছর আগে। টিউশনি তে গিয়ে তাদের সামনে পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে বই পড়তে পড়তেই হঠাত করে ইন্দির ঠাকরুণ মারা গেলেন। আমি এমনকি, উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার ও সুযোগ পাই নাই। চোখের পানি সুতরাং লুকানো গেলো না। ছেলেটা লেখা বাদ দিয়ে অবাক হয়ে দেখে আমাকে। তারপর বলছিলো, আপু আপনাকে পানি এনে দেই? এত মন খারাপের বই পড়েন কেন?

আমি তো আর জেনে শুনে মন খারাপের বই পড়ি নাই, এখনো পড়ি না। থ্রিলার, বাচ্চাদের বই, সায়েন্স ফিকশন, একটু হিস্টরিকাল ফিকশন বা এ জাতীয় বই পড়ে ফেলা যায়, বড়জোর ক্লাসিক (ট্র‍্যাজেডি না) কোন ফিকশন। কোন বই পড়তে গিয়ে কোথাও কোন মন খারাপের আভাস পেলেও রেখে দেই। সামনে আগাই না। খাল কেটে কুমীর কে আনবে?!

অথচ, এই বইটা! প্রথম গল্পের অর্ধেকটা পড়েই বুঝে গেছিলাম কপালে খারাবি আছে! আমি জানতাম, আর পড়া উচিত না। এটা রেখে দেয়া দরকার। কিন্তু পারি নাই। ভদ্রলোক বেশি রকমের ভালো লেখেন। বর্ণনা এত স্পষ্ট যে ভিডিও দেখলেও এত বিস্তারিত চোখে পড়ত না আমার। রীতিমত নিজের উপর টর্চার করলাম।

এরকম ���কটা রিভীউ পড়ে কনফিউশন তৈরী হইতে পারে। চারটা গল্পই সেরা। সেরা মানে চূড়ান্ত পর্যায়ের সেরা! কিন্তু সমস্যা একটাই। অক্ষিকোটরে গাজী ট্যাংক নিয়ে বসলে আরকি সমস্যা...

আবুল হাসানের 'পরিত্রাণ' নামের একটা কবিতা আছে। সেই কবিতার কয়টা লাইন ছিল
"আমি যেনো তোমাদের এইসব সাংঘাতিক
সুখ দুঃখ তৃষ্না,
কাম কুয়াশার কুয়াশা চিনি না,
আমি যেনো কোনদিন একা একা
তোমাদের এইসব ঘাত প্রতিঘাতময়
অশ্রু শিল্প সভ্যতার ভাঙ্গন চিনি না,
ক্রন্দন চিনি না,
ক্লান্তিও চিনি না..."

যাই হোক, শক্তচিত্তের সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য রিকমেন্ডেড। আর কান্নাকাটিতে আপত্তি না থাকলেও রিকমেন্ডেড।
Profile Image for Ziggy Saren.
14 reviews
November 21, 2022
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ “খোঁয়ারি"

গঠনশৈলী-ই বলি আর ভাষাশৈলী-ই বলি দুদিক থেকেই ইলিয়াস সাহেব শৈল্পিকতাকে দারুণভাবে ছাপিয়ে গেছেন। বইটি মূলত চারটি গল্পের সম্মিলিত একটি গল্পগ্রন্থ। চারটি গল্পে যথাক্রমে নৈসঃঙ্গ, বার্ধক্য, যৌনতা ও মৃত্যু, মানবজীবনের এই চার অকাট্য সত্যকে তিনি বেশ দক্ষতার সাথেই ফুটিয়ে তুলেছেন।

চারটি গল্পই যে ভালো লেগেছে তা আর বলার অবকাশ রাখে না। তবে “অসুখ-বিসুখ” গল্পের প্রথম পাতা পড়ার পরে মনে হচ্ছিলো লেখকের মাথায় দুটো গাট্টা মেরে আসি। খাবার খেতে খেতে এই গল্পটি না পড়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ রইলো।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে “পিতৃবিয়োগ” গল্পটি।
“তারা বিবির মরদ পোলা” গল্পে মূলত যৌনতাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একটা উদাহরণ দিই; এই গল্পের শেষাংশ:

❝ তারাবিবি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে স্বামীকে থামিয়ে দেয়, “এমন চিল্লাচিল্লি করো ক্যালায়? গোলজারে কি করছে? পোলায় আমার জুয়ান মরদ না একখান? তুমি বুইড়া মরাটা, হান্দাইয়া গেছো কব্বরের মইদ্যে, জুয়ান মরদের কাম তুমি বুঝবা ক্যামনে?”

লেখার মানের দিক বিবেচনায় কেনো আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে অ্যানপ্যারালাল বলা হয়, কেনো তার লেখার গঠনশৈলী আমাকে মুগ্ধ করেছে তার উদাহরণ এই বইয়ের নাম গল্প “খোঁয়ারি” থেকেই বরং দিই,

❝ মাধবীলতার ফিকে সুবাসের সঙ্গে কাঁঠালিচাঁপা ফুলের ঘন গন্ধ জীবজন্তুর করোটিতে হঠাৎ করে ঢুকে মগজের সাজগোজ এলোমেলো করে দেয়। মাধবীলতা তো গেটের ওপর দ্যাখাই যাচ্ছে। কাঁঠালিচাঁপার ঝাড়টা কোথায়?

পার্সোনাল রেটিং ৪.৭/৫
Profile Image for Fayezur Shoikot.
9 reviews
September 16, 2020
বাংলাদেশী সাহিত্যিকরা এইরকমই শক্তিশালী যেইরকম ছিলেন ইলিয়াস আর তার গল্পের বই খোঁয়ারি।
Profile Image for Shuvongkar Shitu.
44 reviews17 followers
March 17, 2021
ইলিয়াস শুধুই একজন লেখক নন, ইলিয়াস একজন চিত্রশিল্পী। বাংলা বর্ণমালার ৫০ টি বর্ন ইলিয়াসের কাছে রঙ। কার-ফলা এইগুলি হচ্ছে তুলি। ইলিয়াস ছবি আঁকেন নির্মোহ ভাবে। সকালে ছবি আঁকেন, দুপুরে ছবি আঁকেন, বিকেলে ছবি আঁকেন, গোধূলিতে ছবি আঁকেন, গভীর রাতে ছবি আঁকেন। অসম্ভব সুন্দর সেই ছবিগুলি। অন্যকে সেসবের সৌন্দর্য্য বর্ননা বুঝাতে হয় না, নিজের ভিতর লালন করতে হয় এবং সেসব সৌন্দর্য্যের ভিতরে ঘোর লেগে পরে থাকতে হয়।

আমি চাঁদকে শুধু চাঁদই দেখি। কিন্তু ইলিয়াস দেখেন 'চ' এর মাথায় উঠে চন্দ্রবিন্দুর অবিরাম নৃত্য। সেই অশালীন নৃত্য সহ্য করতে না পেরে 'চ' এবং চন্দ্রবিন্দু উভয়েরই পাছায় লাথি দেয় আ-কার এবং সবগুলির অনাচার সহ্য করতে না পেরে সবগুলির গলায় দড়ি বেঁধে নিয়ে গিয়ে শূলে চড়ায় 'দ'।

ইলিয়াস এক ঘোরলাগা ভাললাগার নাম। শব্দের ইন্দ্রজাল সৃষ্টিকারী এক মহান জাদুকরের নাম। তাঁর লেখার সমালোচনা করার দুঃসাহস দেখানো আমার জন্য প্রশ্নাতীত। আর খোঁয়ারি সেও তো ইলিয়াসেরই সৃষ্টি, অসাধারণ সুন্দর!!!
Profile Image for Imam Tuheen.
28 reviews
March 3, 2018
এ বইয়ের চারটি গল্পের মধ্যে "আসুখ-বিসুখ" ও "পিতৃবিয়োগ" গল্প দু'টি বেশ ভাল লেগেছে। "তারাবিবির মরদপোলা" গল্পটিও উপভোগ্য। তবে "খোঁয়ারি" গল্পটি হয়তো আমি উপভোগ করতে পারিনি।
Profile Image for Tahrim Sakib.
1 review
January 30, 2025
আমার বরাবরই আখতারুজ্জামানের বই পড়তে ভয় লাগে। কেন জানি মনে হয় তার বই পড়ে বুঝার মতো এখনো আমার এতটা জ্ঞান বুদ্ধি হয়নি। খোঁয়ারিতে চারটি গল্প আছে। আখতারুজ্জামানের গল্পের সাথে নাম নির্বাচন বরাবরই আমাকে অবাক করে। এমন নিখুত নাম তিনি কোথায় পেতেন জানিনা।

খোঁয়ারি বইয়ের গল্পগুলো হলো
১.খোঁয়ারি
২. অসুখ-বিসুখ
৩. তারাবিবির মরদ পোলা
৪. পিতৃবিয়োগ

১. খোঁয়ারি গল্পের মূল বিষয়ে আছে একটা জীর্ণশীর্ণ বাড়ি। যে বাড়িটা একসময় জৌলুশে পূর্ণ ছিল। বাড়িতে বসত করা মানুষদের স্মৃতি বহন করছে অমৃতলাল। সাতচল্লিশে দেশভাগের পূর্বে দেশে হিন্দু -মুসলিম সামজিক অবস্থা। পাকিস্তান হওয়ার পূর্বে যারা দাপটের সঙ্গে বসবাস করতো তারা হয়ে গেলো সংখ্যালঘু। যার প্রভাব বাড়ির উপরেও পড়ে।

২. অসুখ-বিসুখ গল্পে লেখক দেখিয়েছেন মৃত্যুও মানুষকে আনন্দ দেয় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে না পারার কষ্ট থেকে। গল্পের আতমন্নেসা পরিবারের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনযাপন দেখে ঈর্ষান্বিত হয়।

৩.তারাবিবির মরদ পোলা গল্পে তারাবিবি তার স্বামীর সাথে সংসার করতে গিয়ে জীবনের প্রতি এমন বিতৃষ্ণা এসেছে যে তিনি অন্যের সুখ দেখতে পারেননা।

৪. পিতৃবিয়োগ গল্পটা অদ্ভুত একটা মায়ার গল্প। পিতার মৃত্যুর খবর শুনে এসে জানতে পারে ইয়াকুবের কাছে পিতা একজন গম্��ীর চরিত্রের লোক হলেও বাকিদের কাছে একজন রসিক মানুষ। জানতে পারে মা মরে যাওয়ার পর পিতার একাকিত্বের কথা।
Displaying 1 - 30 of 43 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.