‘মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায়’ ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত হয়–যেখানে লেখকের নাম হিসেবে পাওয়া যায় টেকচাঁদ ঠাকুর। উনিশ শতকের কলকাতার শিক্ষিত বাঙালিদের, বিশেষত পুরুষদের জীবনযাপন নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক রচনা ‘মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায়’।
এক ব্রাহ্মণ বালক নিদ্রাবস্থায় স্বপ্নে দেখছে - তার পাশে জ্ঞানগুরু দন্ডায়মান। গুরু তাকে স্বর্গ পরিদর্শন পূর্বক বঙ্গদেশে নিয়ে আসল। এখানে আসার পর হঠাৎ বালকের কর্ণকুহরে একটি চিৎকার প্রবেশ করল। সেদিকে দৃষ্টিপাত করে সে দেখল, একটি গরু হাম্বা হাম্বা করে পালাই পালাই রব ছাড়ছে আর তার লেজ টেনে ধরে একজন মানুষ বলছে, "ওরে তুই গেলে আমি কাকে নিয়ে থাকব? ... তোর জোরেতেই আমার পেট চলে।" ইতিমধ্যে এক শ্বেতবসনা কন্যা একবার স্বর্গ হতে নামছে আবার ফিরে যাচ্ছে। বলছে - "জ্ঞান আমাকে সাহায্য কর, এখানে স্থির হইয়া থাকিতে পারি না।" এইসব দেখে বালক গুরুকে শুধাল, "এ সকল কি?" জ্ঞান উত্তর করল - "যে গরুটা পালাই পালাই ডাক ছাড়ছে, ইহার নাম জাতি, এ অনেক চোট খাইতেছে আর টিকিতে পারে না। তাহার লেজ ধরে যিনি টানছেন, উহার নাম হিন্দুগিরি। জাতি গেলে তার গুমর যাইবে, এ জন্য টানাটানি করিতেছেন। আর ঐ যে কন্যা এক একবার নামছেন ও উঠছেন উহার নাম ধর্ম। বঙ্গদেশে এত অধর্ম যে, তিনি আর তিষ্ঠিয়া থাকিতে পারেন না। এই কারণে আমার আনুকুল্য করিতেছেন।"
এই হল তৎকালীন বঙ্গদেশের সামাজিক অবস্থা। কিন্তু আজও কি তার কোন পরিবর্তন হয়েছে? আমরা নামেতে হিন্দু, নামেতে মুসলমান। হিন্দুয়ানী, মুসলমানগিরির ঠাঁট বজার রাখবার জন্য বাহিরে তার ভেক ধরে থাকি। ভেতরে যে আমাদের অন্তঃসারশূণ্য। "অন্তর মম বিকশিত" না করে "অন্তর তব বিকশিত কর" বলে যারা সাফাই গাই, তাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত হয়নি। তাই ধর্ম কি জানতে পারিনি। আসুন সবাই প্রার্থনা করি, "আমাদের জ্ঞান দাও প্রভু।"
দ্বার বন্ধ করিয়া যবনিয়া আহার ও মদ্যপানে উন্মত্ত হইবে - তাহাতে দোষ নাই - তাহাতে অধর্ম নাই, কিন্তু অন্য কেহ দ্বার খুলিয়া ঐ আহার ও পান পরিমিতরূপে করিলে জাতিচ্যুত হইবে - এ রোগের ঔষধ কি?
তিনি কত শত ব্রাক্ষ্মণের ব্রক্ষত্র কাড়িয়া লইয়াছেন, আর বল ও ছল পূর্বক কত২ ভদ্র স্ত্রীলোকের ধর্ম নষ্ট করিয়াছেন। এই সকল মহা পাপ করিয়া কেবল নাম কিনিবার জন্য শ্রাদ্ধ ও পূজায় দান করিলে কি পার পাইবেন? সে কেবল গরু কেটে জুতা দান।