Jump to ratings and reviews
Rate this book

যে গল্পের শেষ নেই

Rate this book
গল্প আবার সত্যি হয় নাকি? হয়, যদি সে গল্প হয় মানুষের, আর গল্পটার ভিত্তি যদি হয় বিজ্ঞানসম্মত বস্তুবাদী ইতিহাস। লৌকিক-দৈবিক, উচিত-অনুচিত, বিজ্ঞান-অপবিজ্ঞান, সৃষ্টি-ধ্বংস—সবকিছুর পেছনেই আমরা কেবল মানুষকে, মানুষ আর প্রকৃতির দ্বন্দ্বকেই দেখতে পেয়েছি। প্রকৃতির বুকে মানুষের সেই উদ্ভব বিবর্তন আর বিকাশের কথা সঠিকভাবে না বুঝলে মানুষকে নিয়ে কথা বলার জোর থাকে না সবসময়। কাজেই যথাসম্ভব পরিপূর্ণভাবে এসব বোঝার তাগিদ আমাদের বরাবরই ছিল।

পাঠকের এই তৃপ্তি মেটানোর জন্যই দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের এই বইটি লেখা। গল্প বলার ভঙ্গিমায় প্রাঞ্জল ভাষায় লেখক বলে গেছেন মানুষের ইতিহাস।

111 pages, Hardcover

First published February 1, 2000

20 people are currently reading
283 people want to read

About the author

Debiprasad Chattopadhyaya

74 books53 followers
দেব্রীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (English: Debiprasad Chattopadhyaya) ভারতের কলকাতায় ১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ভারতের একজন প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী দার্শনিক। তিনি প্রাচীন ভারতের দর্শনের বস্তুবাদকে উদ্ঘাটন করেছেন। তাঁর লেখাগুলো একাধারে দর্শন ও বিজ্ঞানের সমন্বয়। এছাড়াও তিনি প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্পর্কেও গবেষণা করেছেন। তিনি ১৯৯৩ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
96 (41%)
4 stars
98 (42%)
3 stars
27 (11%)
2 stars
7 (3%)
1 star
5 (2%)
Displaying 1 - 30 of 39 reviews
Profile Image for Masud Sojib.
35 reviews43 followers
August 11, 2016
ধরুন আপনি কাউকে বিজ্ঞানের নানা শাখা প্রশাখার বেসিক বিষয়গুলো তে আগ্রহী করে তুলতে চান। কিভাবে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো, সৃষ্টি হলো গ্রহ-নক্ষত্রপুঞ্জ, তারপর সেখানে কি করে সৃষ্টি হলো পাহাড়-সাগর এবং সর্বশেষ কিভাবে প্রাণের জন্ম হলো। কেমন ছিলো সৃষ্টির প্রথম প্রাণী, ঠিক কিভাবে কোন পথে বিবর্তিত হয়েছে প্রাণী জগত। মানুষ কি পৃথিবীর আদিকাল থেকেই ছিলো? আমরা যেমন দেখছি আজকের মানুষ কে ঠিক সেই রূপেই কি ছিলো আদি মানুষ?

বিজ্ঞানের আলোকে খুব সহজ করে এই প্রশ্নগুলো উত্তর দেয়া যায় আবার অনেক গভীরে ঢুকে বিশদ আকারে ও প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া যায়। উত্তর নির্ভর কররে শ্রোতা কিংবা পাঠকের সক্ষমতার উপর। এর পাশাপাশি কথক কিংবা লেখকের বলার সহজতা ও গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টা শুনতে যত সহজ মনে হচ্ছে আসলে অতটা সহজ কিন্তু নয়। পরিবারের কথা বাদি দিলাম, আমাদের পাঠ্য বই থেকে শুরু করে ক্লাসরুমের কোথাও বিজ্ঞান কে আগ্রহ উদ্দীপক করে তুলা হয় না। ঠিক যতটুকু পড়লে ভালো নাম্বার পাওয়া যাবে ঠিক ততটুকুই মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দাও হলো আমাদের পড়ালেখার মান। না বুঝে কোন কিছু মুখস্থ করা যেহেতু খটমটে সেহেতু আমাদের মাঝে বিজ্ঞান বিষয়ক ভীতি রয়েছে। আপনি নবম-দশম কিংবা দাদ্বশ শ্রেনীর কাউকে জিজ্ঞাস করেন কোন মৌলের কয়টি ইলেকট্রন থাকে সেটি কিভাবে নির্নয় করা হয়েছে, কার ইলেকট্রন শক্তি কত কিংবা কিভাবে এই শক্তি মাপা হয় এবং তার আলোকে কিভাবে নতুন মৌল আবিষ্কৃত হয়? আপনি এগুলোর উত্তর পাবেন না, কারণ এগুলো পাঠ্যবইয়ে নেই।

তাহলে নতুনদের কে আগ্রহী করে তুলতে পাঠ্য বইয়ের বাহিরে আমাদের কে যেতে হবে। গল্প আকারে সহজ করে বলতে পারলেই নতুন প্রজন্ম বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবে। যেমন যদি এভাবে বলি আলো সে শক্তির একটা রূপ, চাইলে সে সেটা নিজের কাছে রাখতে পারে, কিংবা কাউকে দিয়েও দিতে পারে। তাই দেখা যায় আলো যখন কোন ইলেকট্রনকে ধাক্কা দেয় তখন ইলেকট্রন আলোর সেই শক্তিটুকু গাপুস করে গিলে নিয়ে শক্তিশালী হয়, তারপর সেই শক্তি ব্যাবহার করে পরের স্তরে উঠবার চেষ্টা করে। তবে এখানে কথা আছে, ইলেকট্রন মোটেই পেটুক নয়। সব আলোকেই সে গপ করে গিলে ফেলে না। তার যতটুকু দরকার, ঠিক ততখানি পেলে তবেই নেয়। ধরলাম একটা ইলেকট্রন দোতালায় আছে, তেতলায় যেতে তার লাগবে ৫ মাত্রার শক্তি। এখন যদি ৪, ৫ ও ৬ মাত্রার তিনখানা আলো এসে তাকে গুঁতোয়, তখন দেখা যায়- ৪ কিংবা ৬ কে সে পাত্তাই দেয়না। কিন্তু খপ করে ধরে ফেলে ৫ নাম্বারকে, তারপরে উঠে যায় উপরে। একে বলে বিশোষণ (Absorption)। কখনও আবার সেখানে ভাল না লাগলে ইলেকট্রন ফিরে আসে আগের ধাপে। তখন আবার সে ঠিক ততখানি শক্তি ফিরিয়ে দেয় আলো হিসেবে। একে বলে স্বতঃস্ফুর্ত নিঃসরণ (Spontaneous Emission)।

বিজ্ঞানীরা প্রথমে নানান রঙের আলো দিয়ে একটা পদার্থের পরমাণুকে গুতিয়ে দেখেন। এসময় দেখা যায় এক-দু’খানা আলো গায়েব, অর্থাৎ ইলেকট্রন খেয়ে ফেলেছে, বাকিগুলোর কিছু হয়নি। বিজ্ঞানীরা সূক্ষ্মভাবে চিহ্ন দিয়ে রাখেন যে ঠিক কি কি রঙের আলো খেয়ে ফেলল পদার্থটি। এভাবে বিভিন্ন পদার্থের আলো খেয়ে ফেলার যে মানচিত্র আঁকা হয় তাকে বলে- বিশোষণ বর্নালী (Absorption Spectra)। এর পর বিজ্ঞানীরা যন্ত্রপাতি নিয়ে অসভ্যের মত, বিরক্ত পরমাণুদের দিকে তাকিয়ে থাকেন- অপেক্ষা করেন কখন সে ওই আলো ফেরত দেয়। ফেরত দেয়া মাত্র বিজ্ঞানীরা তাকে মেপেটেপে অস্থির করেন। ফেরত আসা আলোর তথ্য দিয়ে পরমাণুদের যে মানচিত্র আঁকা হয় তাকে বলে নিঃসরণ বর্নালী (Emission Spectra)। এই দু’জাতের বর্নালীই হল পরমাণুদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট। বর্নালী দেখেই বিলক্ষন চিনে ফেলেন কোনটা সোডিয়াম আর কোনটা সিজিয়াম। প্রতিটি পদার্থের বর্ণালী সম্পুর্ন আলাদা। কখনও অপরিচিত কোনও বর্নালী পেলে বোঝা যায় যে নতুন কোনও পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এই যে ইলেকট্রনের শক্তি নির্নয় এবং তা দিয়ে মৌল কে চিন্থিত করার কথা বললাম, এভাবে সহজ করে বললে নতুনেরা কি বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী হবে না? অবশ্যই হবে, তেমনি সহজ করে বিজ্ঞান নিয়ে একটি গল্পের বইয়ের নাম “যে গল্পের শেষ নেই”, লেখক দেবীপ্রসাদ চট্রোপাধ্যায়। শুধু বিজ্ঞান নয়, দর্শন-ইতিহাস-অর্থনীতি আর সভ্যতার ক্রমবিকাশ সবকিছুই ধারাবাহিক ভাবে ১১৩ পৃষ্ঠার একটা বইয়ে ওঠে এসেছে স্বাচ্ছন্দময় প্রাঞ্জল ভাষায়। বিবর্তনের পথ ধরে হাঁটতে থাকা প্রাণীজগতের গল্প থেকে বইটি হয়ে ওঠেছে ক্রমশ মানুষের গল্পে। তার সভ্যতার কথা, তার দর্শনের কথা, পৃথিবীকে তার জয়ের কথা। কি করে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে ওঠেছিলো, কেমন ছিলো গ্রীস সভ্যতা, মিশরের পিরামিড় তৈরি সহ ঐতিহাসিন নানান বিষয় এসেছে বইটিতে। ধর্ম জন্মকথন থেকে অর্থনৈতিক দ্বন্ধ, সেই দ্বন্ধ আর বিভেদ থেকে কি করে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মানুষ লিপ্ত হলো সেই গল্পই বলেছেন লেখক।

যে গল্পের শেষ নেই গ্রন্থে লেখক বিজ্ঞানের গল্পের সাথে মানুষের গল্পের যোগসূত্র স্থাপন করে দেখিয়েছেন কিভাবে মানুষ দিনে দিনে পৃথিবীকে রক্তাত্ত করেছে, কিভাবে ধনী-দারিদ্রের বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে আর কিভাবেই তা বছরের পর বছর লালন পালন করা হয়েছে। ফলে বইটিতে যেমন মানুষের জয়ের গল্প আছে, তেমনি আছে পরাজয়ের ও গল্প। এই পরাজয় মানবিকতার পরাজয়, নীতির পরাজয়, মনুষ্যত্বের পরাজয়। বিজ্ঞানের অপার সম্ভাবনার যেমন শেষ নেই তেমনি সাতশ কোটি মানুষের পৃথিবীতে মানুষের গল্পের ও কোন শেষ নেই। লেখা শেষ করি বইয়ের একেবারে শেষের অংশ দিয়ে।

”এই গল্পের আসল নায়ক নায়িকা বলতে তুমি, আমি, আমরা সকলে। তাই গল্পটা শুধু শোনবার বা জানবার ব্যাপার নয়। আগামীকালের অবস্থানটা ও নির্ভর করছে তুমি আমি-আমরা সকলে কতোটা সার্থকভাবে এই গল্পের পরের অধ্যায় রচনা করতে পারি, বুঝতে পারি, জানতে পারি আর সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যিই হাত লাগাতে পারি।”
(ইলেকট্রন নিয়ে ব্যাখাগুলো সচল বন্ধু সাক্ষী সত্যানন্দর)
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
June 7, 2022
কোথা থেকে মানুষ এলো? পৃথিবীটাই বা হলো কেমন করে? সভ্যতার শুরু বা তারও আগে কেমন ছিল সবকিছু? পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব কীভাবে? বিবর্তন জিনিসটা কী? মানুষ কী আসলেই বানর থেকে এসেছে? এরকম অসংখ্য ধ্রুপদী প্রশ্নের উত্তর নিয়ে লেখা হয়েছে ‘যে গল্পের শেষ নেই’। বাংলা ভাষায় এতো সহজে কেউ প্রাণের,মানুষের, পৃথিবীর এবং বিবর্তনের গল্প বলেছে বলে আমার জানা নেই। সহজ ভাষায় গল্পে গল্পে বিজ্ঞানের খটমট বিষয়গুলোও গল্পের মতো মজাদার করে উপস্থাপন করেছেন দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।



বইটা প্রথম অংশে শেষ হয়ে গেলে খুব ভালো হতো। কিন্তু মানুষের গল্প বলতে গিয়ে লেখক টেনে আনলেন সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সামন্তপ্রথা ইত্যাদি। এই অংশে এসে বইটা রঙ হারিয়েছে মনে হয়েছে। বিব্রত হয়েছি চীনকে সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী হিসেবে দেখানোয়। এটুকু বাদ দিলে,বইয়ের প্রথম অংশটুকুর জন্যে এটা চারতারা দাবী করে।



‘যে গল্পের শেষ নেই’ পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল,আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে সমস্ত টিনেজারদের বইয়ের প্রথম খণ্ডটা পড়াতাম! আফসোস,সেই ক্ষমতা নেই। কিন্তু পরিচিত কৌতুহলী কিশোরকিশোরীদের হাতে নির্দ্বিধায় তুলে দেওয়া যায় ‘যে গল্পের শেষ নেই’। চাই কী,বড়রাও নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন৷ বড় হলে তো আর কৌতূহল মরে যায়না!
Profile Image for Ahmed Aziz.
380 reviews69 followers
July 10, 2025
মহাশূন্যে ঘুরন্ত গ্যাসের বলয় থেকে অন্য সব তারার মত সূর্যের সৃষ্টি, সূর্যের চারপাশে ঘুরপাক খাওয়া ধুলোবালির থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি ৪৬০ কোটি বছর আগে। এরপর পৃথিবীর ঠান্ডা হওয়া, চাপে ভিতর জমা হওয়া জলীয় বাষ্প ও খনিজ পদার্থ উঠে আসা, আবহমন্ডলের সৃষ্টি। পৃথিবীর ১০০ কোটি বছর বয়সে সাগরের মধ্যে বজ্রপাত, অতিবেগুনি রশ্মি, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাসের সম্বনয়ে জৈব অনু সৃষ্টি। জৈব অনু থেকে, অ্যামাইনো এসিড, প্রোটিন অণু হয়ে ডিএনএ, আরএনএ ও এক কোষী জীবের সৃষ্টি। এরপর বিবর্তনে এক কোষী জীব থেকে ২০০ কোটি বছরে প্রথমে শ্যাওলা, উদ্ভিদ, বহুকোষী প্রাণী, চোয়ালবিহীন মাছ, নর্মাল মাছ, উভচর, সরীসৃপ (ডাইনোসর), স্তন্যপায়ী, প্রাইমেট এই সিরিয়ালে বিবর্তন। প্রাইমেটদের মধ্যে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আর হাতের ব্যবহার করে, খাদ্য সাইজ করে, চোয়ালের উপর চাপ কমিয়ে, মস্তিষ্ক বাড়ার বিবর্তনে মানুষ, এরপর হান্টার গ্যাদারার যুগ, কামলা খাটা, ওই সময়ের সাম্য, দারিদ্র্য, হাতিয়ারে উন্নতি, ভাষার বিকাশ, পশুপালন, চাষবাস। এরপর হাতিয়ারের উন্নতিতে উদ্ধৃত পন্য, ব্যক্তি মালিকানা, অতিরিক্ত পণ্য দখল করে শাসক আর শোষিত, ধর্ম, পুরোহিত, দেব দেবী হয়ে মানুষে মানুষ অর্থনৈতিক বৈষম্য। ক্রীতদাসদের হাতে গড়ে ওঠা নীল নদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা, মমি, পিরামিড। সিন্ধু সভ্যতা, আর্যদের আগমন, বেদ। গ্রীক সভ্যতা, জ্ঞানবিজ্ঞান, দর্শন, স্থাপত্য, দাস, যুদ্ধ বিগ্রহ। রোমান সাম্রাজ্য, দাস আর ডাকাতি। মধ্যযুগের ইউরোপে সামন্ততন্ত্র, চার্চ, নাইট, ক্রসেড, ব্যবসায়ীদের উত্থান, চাষীর পাশাপাশি কারিগরদের উত্থান। ধনীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউরোপীয়দের সমুদ্র জয়, বারুদ, কামান, বন্দুক, বিজ্ঞানের বিস্তার, রেঁনেসাঁস, উপনিবেশ স্থাপন, লুটপাট। শিল্প বিপ্লব, ধনতন্ত্র বা পুঁজিবাদের উত্থান, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের বিশ্বযুদ্ধ, এটম বোম, মারণাস্ত্র, ঠান্ডা যুদ্ধ, রাশিয়া আর চীনে কমিউনিজমের উত্থান, আবার সাম্যবাদে ফিরতে হবে। বই শেষ।
Profile Image for Sourav Das.
42 reviews76 followers
August 29, 2016
বইটা পড়তে পড়তে বারবার মনে হয়েছে ছোটবেলায় কেন এই বই পড়ি নাই? তাহলে হয়তোবা আরো আগেই দুনিয়ার আসল গল্পটা বুঝতে পারতাম!

পৃথিবীকে মানুষ এখন প্রায় নিজের করে নিয়েছে। তাই পৃথিবীর মূল গল্প আসলে মানুষেরই গল্প। শূন্য থেকে শুরু হয়ে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পৃথিবী বদলেছে তাতে প্রকৃতির সন্তান মানুষের অবদান নেহায়েত কম না। এরই মাঝে একদল মানুষ আবার সেই গল্পের নানারকম শাখাপ্রশাখা ফেঁদে বসেছে। বেশীর ভাগ মানুষের চিন্তা আর জানার অনীহাকে পুঁজি করে সেই গল্প ভুলিয়ে রেখেছে সবাইকে। কে জানে সেসবেরও হয়তোবা মহত্ত্ব আছে!

পৃথিবীকে জয় করার নিরন্তর চেষ্টায় মানুষ ক্রমাগত উন্নতির দিকেই এগুচ্ছে। সেই উন্নতি বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে জন্ম দিয়েছে শ্রেণীবৈষম্যের। বইটার শেষের দিকে লেখক অনেকটা সেই দিকেই ঝুঁকে গিয়েছেন। বইটা লেখার পেছনে নাকি মূল ইচ্ছাটাই ছিল সেরকম। তারপরও আমার কাছে বইটাকে বেশ লেগেছে।

"জ্ঞান মাত্রই বিশ্বাস, বিশ্বাস জ্ঞান নহে"। এই কথাটা ভেতরে নিয়ে, প্রশ্নের আর চিন্তার সীমারেখা না টেনে দিয়ে মানুষ কবে সার্থকভাবে গল্পের পরের অধ্যায়টা লিখবে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। আমরা নিজেরাই আসলে জানিনা আমাদের এই গল্পের শেষ কোথায়!
Profile Image for Susmita Sarker (বাচ্চা ভূত).
193 reviews11 followers
February 14, 2023
বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে এই বই!নন ফিকশন! এমন চমৎকারভাবে গল্পের মাধ্যমে বিজ্ঞান উপস্থাপনা বোধহয় লেখকের পক্ষেই সম্ভব! বেশ ঝরঝরে লেখা: এটা তো আমাদের সবার গল্প। যে গল্পের শেষ নেই!
Profile Image for Opu Hossain.
158 reviews27 followers
February 1, 2023
হতাশ হয়েছি । নাম, জনপ্রিয়তা শুনে যতটা আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসেছিলাম ততটাই হতাশ হয়ে কোন মতে শেষ করেছি। ভেবেছিলাম লেখক বিবর্তনবাদের তথাকথিত নড়বড়ে ভিত্তিপ্রস্তরে ব্যাতিক্রম কিছু চেষ্টা করবেন কিন্তু না আবারও সেই শতাব্দীরও আগের অপ্রমাণিত বৈজ্ঞানিক থিয়োরি নিয়ে পরে থাকা। যদিও লেখক একজন মার্ক্সবাদী ছিলেন আর পাঠককে সেই দিকেই টানার চেষ্টা করেছেন তবুও বেঁচে থাকলে অন্তত এতদিনে তার বিবর্তনবাদ বিশ্বাসে চীর ধরতো বলেই মনে হয়। লেখক দেখে যেতে পারলেন না বিজ্ঞান মহলে তার স্বাদের বিবর্তনবাদ ভেঙ্গে টুকরো হয়ে কম পক্ষে ডজনখানেকের উপরে বিভিন্ন থিয়োরিতে আলদা হয়েছে, যার সব গুলো পুনরায় অপ্রমাণিত আর এদিকে হু হু করে বাড়ছে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের সংখ্যা। যেমনটা Head of the Human genome project এর বিখ্যাত বিজ্ঞানী Francis S. Collins বলেছেনঃ
"I found it difficult to imagine that there could be a real conflict between scientific truth and spiritual truth. Truth is truth. Truth can't disprove truth. I joined the American scientific affliation, a group of several thousand scientists who are serious believersin God, and found in their meetings and their journal many thoughtful proposal of a pathway toward harmony between science and truth. That was enough for me at that point to see that other sincere believers were totally comfortable merging their faith with religious science"

যাইহোক, বইটির সর্বাধিক স্থান বিজ্ঞানের বাইরের বিষয় আলোচনা হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মানুষের স্পর্শকাতর ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে, যেখানে বিজ্ঞানকে হাতিয়ার বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও ধর্ম সম্পর্কে একটু পরিস্কার ধারনা থাকলেই একজন পাঠক বইটির অসংখ্য ভুল দাবী ধরে ফেলতে পারবেন। যেহেতু এগুলো ব্যাখ্যা সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সম্ভব নয় তাই আমরা বইটির গুটি কয়েক দাবী প্রসঙ্গে ধর্ম বা বিজ্ঞানমহল কি বলে দেখার চেষ্টা করি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেতে বিজ্ঞানীদের বিখ্যাত বইতো রয়েছেই পাশাপাশি রাফান আহমেদের বেস্ট সেলিং বই 'হোমো স্যাপিয়েনস: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি' পড়ে দেখতে পারেন।

মুল কথায় আসি, লেখকের মতে প্রানের বিকাশ কোন সৃষ্টিকর্তা ঘটিত ব্যাপার নয়।

তাহলে প্রানের উদ্ভব কি আকস্মিক? প্রানহীন প্রোটিন অনুতে থাকে পাঁচটি মৌলিক উপাদানঃ কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও সালফার। একশোরও অধিক মৌলিক পদার্থ থেকে এগুলো পৃথক হয়ে যাওয়া এবং যথাযথ মাত্রায় মিলিত হয়ে প্রোটিন অনু গঠন করার সম্ভাবনা কতটুকো তা হিসেব করা সম্ভব। কাজটি করেছেন সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত গণিতবিদ চার্লস ইউজিন গাই। তিনি দেখিয়েছেন, আকস্মিকভাবে ঘটনাটি ঘটার সম্ভাবনা যদি হয় ১ তাহলে না ঘটার সম্ভাবনা হল ১ এর পর ১৬০ টি শুন্য বসালে যে সুবিশাল সংখ্যা পাওয়া যাবে সেটি। এবার সময়ের হিসেব কষা যাক। বিজ্ঞানী গাইয়ের হিসেব বলে, প্রোটিনের এরকম একটি অনু সৃষ্টির জন্য যে সময় প্রয়োজন, তা পৃথিবীর বয়সের চেয়ে কয়েক কোটি গুন বেশী। ১ এর পর ২৪৩ টি শুন্য বসালে যে অকল্পনীয় এবং ভাষায় প্রকাশের অতীত সংখ্যা পাওয়া যায় তত বছর লাগবে একাজে। পাঠক ভেবে দেখুন ১ এর পর মাত্র ১০ টি শুন্য বসালে সংখ্যাটি হয় এক হাজার কোটি তাহলে আকস্মিক ভাবে একটি প্রোটিন অনু গঠনের সম্ভাবনা কোথায়? এখানেই শেষ নয়। যদি এই অসম্ভব ব্যাপারটি কোন মহাজ্ঞানী সত্তার মহা পরিকল্পনায় না ঘটে তথাকথিত আকস্মিকভাবে ঘটেও যায়, তাহলে আমরা পাবো একটি প্রোটিন অনু মাত্র। এটি জীবকোষের অপরিহার্য উপাদান হলেও নিজে কিন্তু প্রাণহীন। এই প্রোটিন অণুতে প্রান কোথা থেকে এল তার সঠিক নিশ্চিত উত্তর কিন্তু অবিশ্বাসীরা কোনদিন দিতে পারেনি।

বিজ্ঞান কি আমাদের চিরন্তন সত্য উপহার দেয় না কি তাও পরিবর্তনশীল? Oxford university থেকে প্রকাশিত Philosophy of science: A new introduction বই এর চমৎকার উত্তর করেছেনঃ

"Science is revisable. Hence, talk of scientific 'proof' is dangerous, because the term fosters the idea of conclusions that are graven in stone"

শুধু তাই নয় সেকেলের বিজ্ঞানের তুলনায় একালের বিজ্ঞান এতটাই উন্নত হয়েছে যে মানুষ জন্মগত ভাবেই যে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী হয় আর নাস্তিকতা যে অন্য কিছুর প্রভাবে পরবর্তী জীবনে গড়ে উঠে বিজ্ঞানীরা তাও গবেষণা করে দেখিয়েছেন। যেমনঃ

১.৯ মিলিয়ন পাউনড খরচ করা Oxford University থেকে দুই জন বিশেষজ্ঞর দেয়া নেত্রিত্বের গবেষণার ফলাফল থেকে বেরিয়ে এসেছে যে মানুষের চিন্তা শক্তির বদ্ধমূলেই ধর্মীয় বিশ্বাস জড়িত । এই গবেষণার Project এ জড়িত ছিল বিশ্বের ২০টি দেশের Anthropology, Psychology এবং Philosophy বিভাগের ৫৭ জন বিশেষজ্ঞ। এই গবেষণার যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল সৃষ্টিকর্তা এবং পরকালের বিশ্বাস কি শুধুমাত্র সামাজিক ধারনা থেকে তৈরি নাকি তা মানুষের প্রাকৃতিক আচরণের বদ্ধমূলে আবদ্ধ তা প্রতিষ্ঠা করা। এই Project এর Co-director অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর Roger Trigg বলেনঃ

“We have gathered a body of evidence that suggests that religion is a common fact of human nature across different societies,”

Project এর ডিরেক্টর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Centre for Anthropology and Mind বিভাগের Dr Justin Barrett বলেনঃ
"If we threw a handful on an island and they raised themselves I think they would believe in God."

"Children's normally and naturally developing minds make them prone to believe in divine creation and intelligent design. In contrast, evolution is unnatural for human minds; relatively difficult to believe."

এই আবিস্কারকে নিশ্চিত করার জন্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা আরও গবেষণা করা হয়েছে যেমন Oxford University তে Experimental Psychology Department এর বিজ্ঞানী Dr. Olivera Petrovich উল্লেখ করেনঃ
“Children rely on their everyday experience of the physical world and construct the concept of god on the basis of this experience.”

Dr Petrovich আরও বলেন তার এই ফলাফল অনেক গুলো গবেষণার উপর ভিত্তি করে বিশেষ করে চার থেকে ছয় বছরের জাপানি শিশু অন্যদিকে বিভিন্ন বিশ্বাসের পাঁচ থেকে সাত বছরের ৪০০ ব্রিটিশ শিশু থেকে বের হয়ে এসেছে।
তিনি বলেনঃ
“belief in God develops naturally and that 'atheism is definitely an acquired position.”

সাইকোলজিসট Bruce M. Hood বলেনঃ
"It's futile to try to get people to abondon their beliefs because these come from such a 'fundamental level'"

এগুলো মাত্র গুটি কয়েক তথ্য, এমন আরও অসংখ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য সময় সাপেক্ষ বলে দেওয়া হলনা। আশা করি দৃষ্টি মেলে দেখতে জানলে এটুকও যথেষ্ট।

লেখক বইয়ের এক স্থানে মজার এক দাবী করেছেন, যা নিশ্চিত ভাবে প্রমান করে তার ধর্মীয় জ্ঞান খুবই সাদামাটা মানের ছিল। হা ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে সেটা এ কারনে হতে পারে যে সে সকল ধর্ম গ্রন্থ প্রকৃতরুপে আর সংরক্ষিত নেই কিন্তু ইসলাম যেহেতু তার অবিকল রুপে বিরাজমান তাই একটু লেখকের দাবী তুলনা করা যাক, তিনি বলেছেনঃ

"বনের বাঘকে খাঁচায় পুরে রাখলেও নিশ্চিন্তি নেই; দরকার পরে নিয়ম করে বাঘকে আফিম খাওয়াবার। আফিম খেলে বাঘ ঝিমিয় পরতে পারে এ হেন দুশ্চিন্তার আর কারন থাকবেনা। বাঘের বেলায় যে রকম ব্যাবস্থা, মেহনতকারী মানুষদের বেলাতেও খানিকটা সেই ব্যাবস্থাই গড়ে উঠলো। এই ব্যাবস্থাটার নাম ধর্ম।
...... যাতে মেহনতকারী মানুষেরা মাথা তুলতে না পারে, যাতে তারা ঝিমিয় থাকতে বাধ্য হয়, তারই একটা বড় উপায় বলতে ধর্ম।"

লেখক মূলত ধর্মের মাধ্যমে মেহনতি মানুষের অধিকার বঞ্চিত হওয়ার কথা প্রমান করতে চেয়েছেন। কিন্তু ইসলাম লেখকের এই দাবী প্রত্যাখ্যানতো করেই বরং মেহনতি মানুষের অধিকার সম্পর্কে এতটাই সোচ্চার যে তার জন্য অসংখ্য তথ্য প্রমান না এনে দু একটিই যথেষ্ট। মেহনতি মানুষের উদ্দেশ্যে হাদিসে বলা হয়েছেঃ

“তোমরা শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তার পাওনা পরিশোধ কর”

একজন শ্রমিকের অধিকার কতটা সংরক্ষিত থাকতে এত সুন্দর কথা বলা হতে পারে। তাছাড়া সমগ্র মানবজাতির অধিকার সম্পর্কে নবী (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সেই বিখ্যাত শিক্ষা আমাদের জানায়ঃ

‪“No arab is superior to a non-Arab, nor a non-Arab is superior to an Arab; Neither a white is superior to a black nor a black is superior to a white except by piety and good action.

অসংখ্য তথ্য-প্রমানের ভীরে এগুলো মাত্র ছিটেফোঁটা সুতরাং পাঠক বুঝতেই পারছেন বিবর্তনবাদ আর ইসলাম নিয়ে লেখকের কতটা অগভীর ধারনা ছিল। দুঃখজনক ব্যাপার হল যেহেতু আমাদের সঠিক ধর্মীয় ও বিজ্ঞানের জ্ঞান যথেষ্ট নয় তাই শুধুমাত্র লেখনীর প্রতি আবেগপ্রবনতায় আমরা এমন সব বইকে উচ্চতা দেই যার আসলে স্থান অনেক নিন্মে বিশেষ করে যখন মানুষের বিশ্বাসের স্পর্শকাতর জায়গায় লুকোচুরি খেলা হয় এমন সব বিষয়ে।
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
November 13, 2019
মানুষ কিভাবে এল এই পৃথিবীতে? তার আজকের এই পরিণতির পিছনে দায়ী কে? তার শেষই বা কোথায়? এসব মৌলিক প্রশ্নের উত্তর জানাতেই লেখক লিখেছেন বইটা। কিন্তু তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে লেখক বইয়ের নামটা এমন দিলেন কেন? তাহলে কি গল্পে কোনো অসম্পূর্ণতা আছে? তারও উত্তর লেখক বইয়েই দিয়েছেন। বইটি যেহেতু শুরু হয়েছে আজ থেকে সাড়ে ৪৫০ কোটি বছর আগ থেকে এবং তার শেষ হয়েছে বর্তমান সময়ে, তাহলে লেখক কিভাবে জানবেন ভবিষ্যৎ মানব সভ্যতাকে? তাইতো বইটার নাম ‘যে গল্পের শেষ নেই', মানবসভ্যতার এই গল্প সর্বদা প্রবহমান। তাইতো তিনি বলেছেন, ‘এ গল্পের নায়ক-নায়িকা তুমি, আমি, আমরাই। তাই এ গল্পটা শুধু জানবার বা বুঝবার নয়। আগামীকালের অবস্থানটাও নির্ভর করছে তুমি-আমি-আমরা কতটা স্বার্খকভাবে এর পরের অধ্যায় রচনা করতে পারি, বুঝতে পারি, জানতে পারি, সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যিই হাত লাগাতে পারি।‘

দুই অংশে বিভক্ত বইটির প্রথম অংশে লেখক ডারউইনের তত্ত্বের সাহায্যে দেখার চেষ্টা করেছেন মানুষের বিবর্তনকে। আর তার আগে অবশ্যম্ভাবী যে অংশটা অর্থাৎ পৃথিবী কিভাবে এল, সেখানে ‘প্রাণ’ ই বা সৃষ্টি হল কিভাবে এসবের উত্তর দিয়েছেন। কিভাবে মানুষ এল তা না হয় বোঝা গেল কিন্তু মানুষের আজকের এই উন্নতির কারন কি? তারও উত্তর লেখক দিয়েছেন বইটার দ্বিতীয় অংশে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে। তিনি দেখিয়েছেন হাত আর হাতিয়ারের উন্নতির মাধ্যমে কিভাবে মানুষ সেই বন্য অবস্থা থেকে আজকের অবস্থানে এল, সভ্যতাকে তিনি দেখিয়েছেন হাতিয়ারের উন্নতি ও পৃথিবীকে বশ করার প্রেরণা হিসেবে। কিন্তু পথটা যে মসৃণ ছিল না তা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন শাসক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আর পুজিবাদের সমালোচনা করে আবার আমরা আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে যে কম মূল্য দেই নি তা স্পষ্ট করেছেন তিনি যে গগনচুম্বী দালানের আড়াল থেকে অনাহারীর কান্নার আওয়াজ শুনতে পান তা তুলে ধরে। কিন্তু লেখক তবু আশাবাদী, আজকের এই অবস্থাও একসময় ঘুচবে, আবার আমরা ফিরে যাব আদিম সাম্যাবস্থায়, পার্থক্য হবে শুধু জ্ঞানে, বিজ্ঞানে আর সম্পদে।

বইটা বেশ ভালো লেগেছে। অসংখ্য তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি লেখকের ভাষার মুন্সিয়ানাও একটা বড় কারন। শখানেক পৃষ্ঠার মধ্যেই কি অসাধারণভাবেই না তিনি তুলে ধরেছেন ৪৬০ কোটি বছরের ইতিহাস, সহজেই ব্যাখ্যা করেছেন নানান তত্ত্বকথা! বইটা যদিও কিছুটা সীমাবদ্ধ ( শুধু ডারউইন আর মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা) তবু আমার মনে হয় বইটা সবার পড়া উচিত। আপনি যদি বিশ্বাসী হন তো এটা জানতে যে মানুষের আগমণ সম্পর্কে ডারউইন কি বলে বা পুঁজিবাদী হলে সভ্যতাকে মার্কস কিভাবে দেখেছেন তা জানতে। আর যদি ডারউইন আর মার্কস সাহেবের ভক্ত হোন তবে তো কথাই নেই!

তো আসুন বিশ্বচরাচরকে দেখে আসি ডারউইন আর মার্কস সাহেবের দৃষ্টিতে!
Profile Image for Nabonita Pramanik.
Author 1 book20 followers
June 11, 2021
▪️��িভিউ
▪︎কাহিনি সংক্ষেপ :

❝গল্প❞ তৈরি হয় কেমন করে?

সূচনা থাকবে। মধ্যভাগ থাকবে। আরও থাকবে সমাপ্তি। কিন্তু সমাপ্তি ছাড়া কি গল্প হয়?

পৃথিবী জুড়ে কত শত গল্প। অথচ রুনু সন্ধান করছে এমন একটা গল্পের, যার কোনো শেষ থাকবে না। সেই গল্পের কাহিনি এগিয়ে যাবে বিরামহীন গতিতে।

হঠাৎ করে দেখলে মনে হতে পারে, এমন গল্প থাকা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে একটু যদি পেছনে ফিরে তাকাই, ভেবে দেখি নিজেদের ভুলে যাওয়া ইতিহাস - তাহলে কিন্তু তেমন একটা গল্প আমরা ঠিক পেয়ে যাব। আর এই গল্পের সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা কী জানেন? গল্পের নায়ক আমাদের খুব চেনা। প্রকৃতপক্ষে; আপনি, আমি - আমরা সবাই সেই গল্পের নায়ক। কারণ এই গল্পটা তো আমাদের নিজেদের-ই গল্প!

❝ফরমাশ পেয়েছিলাম এমন গল্প বলতে হবে যে গল্পের শেষ নেই। এহেন গল্প অবশ্য অনেক আছে। কিন্তু তার মধ্যে বেশিরভাগই ফাঁকির গল্প। অথচ যার কাছ থেকে ফরমাশ তাকে কোনমতেই ফাঁকি দেয়া যায় না।❞

ছোট্ট রুনু শুনতে চেয়েছিল এমন একটা গল্প, যে গল্পের শেষ নেই। হ্যাঁ; শেষ থাকা যাবে না। ফাঁকিও থাকা যাবে না। বরং গল্প হতে হবে একেবারে খাঁটি। এবং রুনুর সকল শর্ত পূরণ করে তৈরি সেই গল্পের কথা-ই উঠে এসেছে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায়। এই গল্প, মানুষের গল্প। এই গল্প, আমাদের সকলের গল্প।

কত গল্পই তো পড়ি। কিন্তু নিজেদের গল্পটা ঠিকঠাক জানি তো? সে অনেক আগের কথা! কম করে হলেও সাড়ে চারশ কোটি বছর হবে! এবং এই সংখ্যাটা দিয়েই পৃথিবীর আনুমানিক বয়স ধারণা করা হয়। কিন্তু এখানেও মজার একটা ব্যাপার আছে; পৃথিবীর বয়স গণনা করা হয় কেমন করে? কী সেই উপায়?

তাছাড়া শুধু কি বয়সের হিসেব? সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাপারটাই বা কতটুকু জানি? একসময় পৃথিবীতে জল, পাহাড়, মাটি, গাছ - কিছুই ছিল না। ছিল শুধু আগুন। সেই আগুন নিভে গিয়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিল প্রাণ। খুলে গেল সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। কীভাবে?

❝এই দুনিয়ার মজাই হল ওই। এখানে সবকিছুই বদলে যায়। তার মানে আগে যে রকম ছিল সেই রকমটি আর থাকে না। অন্য রকম হয়ে যায়। এই বদলের একটুও বিরাম নেই।❞

আণুবীক্ষণিক প্রোটোপ্লাজম থেকে শুরু। সেখান থেকে বদলে যেতে লাগল প্রাণের ধারা। ট্রাইলোবাইটদের যুগের শেষে জলের তলে সংঘবদ্ধ হলো নতুন ধরনের প্রাণ, অস্ট্রাকোড্রাম। এককোষী জীব ধীরে ধীরে বহুকোষী প্রাণীতে রূপান্তরিত হলো। এবং এভাবেই একদিন পৃথিবীর বুকে দেখা দিল আমাদের পূর্বসূরি, প্রাইমেট। কিন্তু কীসের গুণে আমরা মানুষ হয়ে উঠলাম? বন্য থেকে সভ্য হয়ে ওঠার গল্পটাই বা কী?

কেবল তো শুরু। আরও কত গল্প বাকি। মিশরের পিরামিড, গ্রীসের সমৃদ্ধি আর রোমের দম্ভ তৈরির গল্প। সভ্যতার ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে মানুষের জিতে যাওয়ার গল্প কিংবা হেরে যাওয়ার গল্প। সবচেয়ে বড় কথা; ভবিষ্যতের পৃথিবীটাকে আপনি, আমি - আমরা সবাই কতটুকু জয় করতে পারি, সেই গল্প যে এখনো বাকি!

▪︎পর্যালোচনা :

ঠিক সময়ে ঠিক বই পড়তে পারার মধ্যে কি কোনো স্বার্থকতা নেই? সেই বইগুলোর কথা ভেবে দেখুন তো একবার; যেগুলোর মধ্য দিয়ে বই পড়ার এই যাত্রাটা আপনি শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে রুচি বদলেছে; বেড়েছে পড়ার ব্যাপ্তি। কিন্তু আজকের দিনের ঋদ্ধ পাঠক হয়ে ওঠার পেছনে গোড়ার দিকে পড়া সেই বইগুলোর অবদানের কথা কি ভুলে যাওয়া সম্ভব?

নিশ্চয়-ই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই না? আমার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। মাত্র বানান করে পড়তে শিখেছি, তখন হাতে পেলাম ❝যে গল্পের শেষ নেই❞। ওই বয়সে ওইরকম একটা বই জাদুর বাক্সের তুলনায় কম আনন্দদায়ক ছিল না আমার কাছে!

তবে আসল মজাটা কোথায় জানেন? এত বছর পর আবারও যখন বইটা আমি পড়ছি, ছেলেবেলার সেই জাদুর বাক্সের আনন্দগুলো কীভাবে যেন ফিরে ফিরে আসছে! আর এখানেই মূলত স্বার্থকতার প্রসঙ্গটা চলে আসে। আমার অন্তত তাই ধারণা।

এবার আসি ❝যে গল্পের শেষ নেই❞ প্রসঙ্গে। সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গবেষণামূলক/ প্রবন্ধ ঘরানার একটা বই; যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে মানুষের শূন্য থেকে শিখরে ওঠার বিচিত্র সব গল্প।

প্রবন্ধের বইগুলো পড়ার ক্ষেত্রে; চরিত্রায়ণের তুলনায় মূল গল্পটাই আমার কাছে বেশি প্রাধান্য পায়। যেহেতু কাঠখোট্টা ঘরানার বই; কাজেই লেখকের লেখার ধরনটা সুন্দর না হলে গল্পটা ঠিক জমে না। এদিক দিয়ে অবশ্য ❝যে গল্পের শেষ নেই❞ যথেষ্ট সফল বলা যায়।

কেননা বিজ্ঞানের জটিল তত্ত্বকথার সাথে ইতিহাস ও দর্শনের মেলবন্ধন ঘটিয়ে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বইয়ের গল্পগুলো লিখেছেন খুবই চমৎকারভাবে। এক্ষেত্রে লেখার ধরন এতটাই প্রাঞ্জল; যার কারণে কমবেশি সকল বয়সের মানুষ-ই বইটা পড়ে আনন্দ পাবে। এবং ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে; বিজ্ঞান কিংবা ইতিহাস নিয়ে যাদের আগ্রহ রয়েছে, তাদের জন্য চমৎকার একটা বই হতে পারে ❝যে গল্পের শেষ নেই❞।

বইয়ের গল্পগুলো এগিয়েছে দুই ধাপে। প্রথম ধাপের গল্পগুলো জুড়ে বর্ণিত হয়েছে পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্ব, প্রাণের ইতিহাস, মানুষের বন্য থেকে সভ্য হয়ে ওঠার কথাসহ আরও অনেক কিছু। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের গল্পগুলোতে কেবলই মানুষের রাজত্ব।

মূলত দ্বিতীয় ধাপের গল্পগুলো-ই বইয়ের প্রধান আকর্ষণ। কেননা এখানেই মিশর, গ্রীস, রোমের মতো প্রাচীন সভ্যতাগুলোর সমৃদ্ধির রহস্যময় গল্পগুলো উঠে এসেছে। সুন্দর অথচ করুণ সব রহস্যের গল্প!

কিন্তু হ্যাঁ; সমৃদ্ধির গল্প তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল। কেননা অফুরন্ত ঐশ্বর্য প্রাপ্তির জন্য কঠিন মূল্য দিতে হয়। আর তাই তো জিতে যাওয়ার যে গল্পটা আমরা জানি; ঠিক তার পেছনে হেরে যাওয়ার গল্পটাও মুখ লুকিয়ে থাকে। সভ্যতার ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে চিরায়ত জয়-পরাজয়ের এই গল্পগুলো উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়। এক্ষেত্রে পাঠক যেন নেতিবাচক বার্তা না পায়, সেজন্য লেখকের সতর্কবাণী কিছুটা এরকম-

❝...মনে রাখতে হবে, তখনকার যুগ ছিল নেহাতই তখনকার মত, তখনকার কালে মানুষের অবস্থা ছিল নেহাতই তখনকার কালের মত।❞

এবং ❝যে গল্পের শেষ নেই❞ পড়ার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। ক্ষুদ্র আকারের এক বই; যা পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত ঘুরিয়ে আনবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানেই শেষ নয়। কেননা এই গল্পের যে শেষ হতে নেই!

[ একনজরে বইয়ের তথ্য ]

▪︎ বইয়ের নাম : যে গল্পের শেষ নেই
▪︎ লেখকের নাম : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
▪︎ বইয়ের জনরা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য/ গবেষণা/ প্রবন্ধ
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
April 9, 2025
সভ্যতার ইতিহাসের হাজারো বই রয়েছে । এই ধরণের বই সাধারণত কঠিন ও সোজাসাপ্টা ইতিহাসের রসকষহীন ভাষায় রচিত হয়ে থাকে । কিন্তু এই বইটাতে এমন একটা বিষয়কে কিশোরপাঠ্য অনুযায়ী সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে । পৃথিবীর ইতিহাস যেন নাতি-নাতনিদের গল্প করছেন দাদু দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় । তাঁকে কি বলা যায় শুধু ইতিহাসবেত্তা নন, একই সাথে মার্ক্সবাদী বা দার্শনিকও বটে; অর্থাৎ এই সমস্ত কিছুর একটা স্বচ্ছ লেন্সের সন্নিবেশ বলা সমীচীন হয় লেখককে? এমন আদুরে ভাষায় লেখার পেছনের কারণ হতে পারে: কঠিনকে ভালোবেসে সত্যকে সহজে নিতে যে কোন বয়সের পাঠক-পাঠিকার যেন ভয় না হয় বরং আনন্দে ও সাগ্রহে জেনে নিতে সুবিধা হয় অপরিহার্য বিষয়টা ।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
April 3, 2023
গল্প কখনও সত্যি হয় না এটা সকলেরই জানা, কিন্তু যদি হয় মানুষের গল্প, আর গল্পটার ভিত্তি যদি হয় বিজ্ঞানসম্মত বস্তুবাদী ইতিহাস, তাহলে সে গল্প কখনও মিথ্যা হতে পারে না।

গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির শুরুতে ছিলো শূন্য। আস্তে আস্তে পরিবেশ ও বিবর্তনের ফলে আসে প্রাণের অস্তিত্ব। গল্পের শুরুটা এমন হলেও শুরুটা একপ্রকার রহস্য।এ রহস্যের সমাপ্তি ঘটে বৈজ্ঞানিকী ব্যখ্যাতে।

লৌকিক --দৈবিক, উচিত--অনুচিত, বিজ্ঞান--অপবিজ্ঞান, সৃষ্টি--ধ্বংস সমস্ত কিছুর পেছনেই আমরা কেবল মানুষকে, মানুষ আর প্রকৃতির দ্বন্দ্বকেই দেখতে পেয়েছি। ক্রমে ক্রমে প্রকৃতির বুকে মানুষের সেই উদ্ভব বিবর্তন আর বিকাশের কথা সঠিকভাবে না বুঝলে, মানুষকে নিয়ে কোন কথা বলার জোর থাকে না সব সময়। তাই সহজ সাবলীল যথাসম্ভব পরিপূর্ণভাবে এ সব বোঝার তাগিদ আমাদের বরাবরই ছিলো।
মহাশূণ্যের মাঝে পৃথিবী সৃষ্টির পর পর্যায় ক্রমে পৃথিবীর বুকে প্রাণের অস্তিত্ব লাভ, ক্রমবি��র্তনের ভলে মানুষের আবির্ভাব। পৃথিবীরর বুকে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে একটু একটু করে সভ্যতার দিকে এগিয়ে আসা একই সাথে বিভিন্ন বিপ্লব এবং তার মধ্য দিয়ে সভ্যতার সূচনা এবং নিজেদের জায়গাটাকে মজবুত করে পৃথিবীর বুকে সৃষ্টিরর সেরা জীব বলে প্রমান করার কাহিনী নিয়েই " যে গল্পের শেষ নেই"।

প্রাক মানুষ, মানুষ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেক মোটা মোটা বই লেখা হয়েছে, এছাড়াও আছে অতি মূল্যবান রেফারেন্স বই। কিন্তু এসব বই থেকে মানুষের কথা ঠিক যেন মন প্রান দিয়ে বোঝা যায় না। হয়তো মুখস্ত করা যায় কিন্তু মন ভরে না সাধারন সহজ বুদ্ধির পাঠকদের। তাই মানুষের সৃষ্টির আগে থেকে যে গল্পটা শুরু হয়েছে, তা বুঝতে ও পাঠকদের তৃপ্তি মিটানোর জন্যই দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় - এর ' যে গল্পের শেষ নেই' বইটি পড়া দরকার।

একেবারে গল্প বলার মতো অবিকল স্বচ্ছন্দ্যময় প্রাঞ্জল কথায় ভরা কাহিনী। একটুও প্রাচীনত্ব, একটুও জড়তার লক্ষণ নেই। শুধুই মানুষের কথা বইটির প্রতিটি পাতায়। হোক না তা বহু বছর আগের লেখা, কথাগুলো আজও সত্য।
Profile Image for Abhishek Saha Joy.
191 reviews56 followers
September 5, 2020
বইয়ের নামটাই তো অদ্ভুত।এমন কোন কি গল্প হতে পারে,যে গল্পের শেষ নেই?হ্যাঁ,হতে পারে!আর সে গল্প হলো মানুষের গল্প।দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সহজ ভাষায় সে-ই মানুষের উদ্ভবের গল্পই বলার চেষ্টা করেছেন।

বইয়ের প্রথম পর্ব অর্থাৎ পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে মানুষের উদ্ভব পর্যন্ত অসাধারণ।বাংলা ভাষায় এরচেয়ে সহজ করে বিবর্তন শিক্ষার বই আমার চোখে পড়েনি।কিন্তু দ্বিতীয় পর্বেই লাগলো গন্ডগোল।মানুষের এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গিয়ে লেখক টেনে আনলেন সমাজতান্ত্রিক আদর্শ।যার ফলে একটা অসাধারণ বই হতে হতেও হলো না।দ্বিতীয় পর্ব ভীষণ ক্লিশে,রঙহীন।সবমিলিয়ে সেজন্যেই তিন তারা!
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
July 8, 2017
'যে গল্পের শেষ নেই' নামটা বেশ অদ্ভুত না? যদি একটা গল্পের শেষই না থাকলো তাহলে পড়বো কেন? কিন্তু লেখক যে এখানে মানুষের গল্প বলেছেন, সেই প্রাগৈতিহাসিক বন্য মানুষ থেকে শুরু করে আজকের মানুষের গল্প বলেছেন, মানুষ হয়তো আরো অনেকদিন টিকে থাকবে এই ধরাধামে, তাই গল্প কিভাবে শেষ করবেন লেখক?

মাঝে মাঝে কিছু কিছু বই পড়ে খুব আফসোস হয়, এতদিন কেন পড়িনি! কিন্তু এই বইটা পড়ে আফসোস হয়েছে ছোটবেলায় কেন পড়িনি! ক্ষীণতনু একটা বই, কিন্তু গভীরতা যেন সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এর মতো, তলহীন। এতো দারুন ভাবে ও এতো সহজ ভাষায় লেখক মানব ইতিহাস তুলে ধরেছেন, ছোটবেলায় এই বই পড়তে পাড়লে মানসিক পরিপক্কতা একটু বেশিই হতো নিঃসন্দেহে। কিছুই কিন্তু বাদ যায় নি এই বইতে, পৃথিবীর জন্ম, প্রানের উৎপত্তি, দানবীয় ডাইনোসর থেকে শুরু করে বিবর্তনবাদ, আদীম মানুষ থেকে ধীরে ধীরে আজকের মানুষে বা হোমো স্যাপিয়েন্সে রুপান্তর, কৃষি যুগ, প্রস্তর যুগ, আধুনিক যুগ, ধর্মের উৎপত্তি, প্রচার, প্রসার, অত্যাচার, যুদ্ধ, বানিজ্য কি নেই এই বইয়ে, কিন্তু সংক্ষেপে সহজ ভাষায়।

পড়ে ফেলুন বিনা দ্বিধায়।
Profile Image for Galib.
276 reviews69 followers
December 21, 2019
তারা বলে, সকল জীবের মধ্যে মিল আছে ; কেননা,সবার শুরু হয়েছে একটা কমন উৎস থেকে । আমরা বলি, সকল জীবের মধ্যে মিল আছে; কেননা, সবার শুরু হয়েছে একটা কমন পরিকল্পনার হাত ধরে ।


যদি ফারাওরা অত্যাচার করেই থাকে তবে সেই কাহিনীগুলো মমির ফিতায় কেনো লেখা থাকবে তা বুঝতে পারলাম না । 😐
( বইটা পড়ার উপযোগী। তবে, ছোটরা পড়লে ভ্রান্ত ধারনায় ডুবে যেতে পারে। তাই সতর্কতা আবশ্যক )
Profile Image for Sudipta.
227 reviews
July 31, 2014
যখন এই বইটি প্রথম পড়েছিলাম তখন এবং এখন সবসময় এর জন্যই দারুন একটা বই। বিজ্ঞানের যুক্তিকে সংগে নিয়ে সাহিত্যের মত করে সুন্দর লেখা খুব কম লোককেই লিখতে দেখেছি। যা তিনি পঞ্চাশ বছর আগেই লিখে গেছেন! [good book]
Profile Image for Tasfia Promy .
96 reviews30 followers
September 25, 2025
#পাঠচক্র_রিভিউয়ার্স
২০২৫ রিভিউ
বিষয়: বই
রিভিউ: ৬৭
বই: যে গল্পের শেষ নেই
লেখক: দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশনী: বুকক্লাব
প্রচ্ছদ: মাশুক হেলাল
জঁরা: দর্শন


কবিগুরু বলেগেছেন,


সহজ কথায় লিখতে আমায় কহ যে,


সহজ কথা যায় না লেখা সহজে।


কিন্তু এই গল্পের কথক, থ্রি ইডিয়টসের র‍্যাঞ্চোর মত পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে যে কোন একটা শক্ত বিষয়কে বেশ সহজে বুঝিয়েছেন।
আমাদের স্কুল-কলেজে সমাজ বিজ্ঞান আর সাধারণ বিজ্ঞান বইতে কোষের গঠন, মানুষের বিবর্তন এই ব্যাপারগুলো এত বেশি জটিল করে তুলে ধরা হত, আমরা বুঝতাম কমই। কিন্তু লেখক এই বইটিতে, পৃথিবী সৃষ্টির শুরু দেখে, মানুষের সভ্যতা সব কিছু এত সুন্দর করে তুলেছেন।
এই কেমন করে সূর্য এল। তারা এল, পৃথিবী এল! কীভাবেই কোষের জন্ম হল, এক কোষ থেকে কীভাবে এই বহুকোষী প্রাণী দিল। পুরো বিবর্তনকে এ রকম ভাবে, অল্প অথচ সাবলীল ভাষায় লেখা যায়, জানা ছিল না। ডারউইন ত্বত্ত কীভাবে এসেছিল জানেন কী? বিশাল গবেষণা আর সাধনা?


আবার আরো কিছু কিছু বিষয় আছে আমরা কখনোই ভেবে দেখি না, যেমন আমরা মানুষেরা পরিশ্রম করি পৃথিবীকে বদলে দিতে। মেহেনত পশুও করে, কিন্তু সেটাকে গতর খাটানো বলে। কারন মানুষ হিসেবে আমরা জানি, আমরা কী চাই আর পশুদের দিয়ে, এই যেমন কলুর বলদকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছি বলেই ওরা কাজ করে। ওরা কিন্তু জানে না ওরা কেন এই কাজ করছে, আমরা জানি, নিজেদের সভ্য করতে।
দু’জন মাঝির মধ্যে যে স্রোত চিনবে, বাতাসের দিক চিনবে সেই তো ওপারে যেতে পারবে তাই না? ঠিক এরকমই অসংখ্য যুক্তি-তর্ক নিয়ে এই বই।


যারা নন ফিকশন একেবারেই পড়তে চান না, তারাও পড়তে পারেন। এটা একাধারে ফিকশন বলতে পারেন আবার নাও বলতে পারেন। লেখক নিজের ভাতিজির সাথে সাথে গল্প শুনিয়েছেন আমাদের।
বইটার নাম যে গল্পের শেষ নেই কেন? আমাদের এই পৃথিবীর শেষ আছে? না নেই তো। বন্য থেকে সভ্য হবার এই যে পরিক্রমা কিংবা চলমান এই গল্পের এই বই। এই গল্পের যেমন শেষ নেই, আমার আলোচনারও নেই।


বইটা বেশ দারুন। বিজ্ঞানের খটমটে দৃষ্টিকোণ থেকে এত সহজে এই দুনিয়াদারী এভাবে বোঝানো যায় সেটা এই বই না পড়লে ধারনা হতো না। যেমন পাললিক শিলার গঠন কী খটমটে, খাতায় নানা রঙ্গে ডঙ্গে এর স্তর বোঝাতে লিখেছিলাম, কিন্তু এই বইতে কী সুন্দর দু কথায় বলে গেলেন লেখক।
সোফির জগৎ বইটা তে দুটো প্রশ্ন ছিল সোফির কাছে। তুমি কে? আর এই পৃথিবী কোথা থেকে এল। সোফির জগত আর এই বইটা কেমন যেন একই সুতোই গাঁথা। বইটা শুরু করেই সোফির জগতের কথা মনে হচ্ছিল, ওমা শেষ পাতায় দেখি বইটার কথা সত্যি আছে।


কী অদ্ভুত না?
Profile Image for Tuhin Chakma.
10 reviews
June 8, 2025
এই সুন্দর বিস্ময়কর পৃথিবীর জন্ম কিভাবে হলো, কিংবা পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব তথা আজকের এই মানুষ আমরা কিভাবে এলাম এতসব জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর নিয়ে লেখা "যে গল্পের শেষ নেই"।

বইটির অর্ধেকখানি পেরিয়ে কিছুটা বোরিং লেগেছে কিন্তু শেষের দিকটা বেশ মজার। আজকের পৃথিবীতে সামন্ততন্ত্র, পূঁজিবাদ যেভাবে জেঁকে বসেছে তার উত্তরণ করতে হলে আমি, আমরা এবং আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।

লেখকের ভাষায়-" মানুষের গল্প হলো তোমার গল্প, আমার গল্প, আমাদের গল্প৷ আর তাই এ গল্প শুধুই শোনবার গল্প নয়। কেননা আমরা আজকে যা করব, যে পথে এগোব, আগামীকাল তাই মানুষের গল্পে নতুন পরিচ্ছেদ হয়ে দাঁড়াবে। আর তাই আমরা এগিয়ে আসব কোমর বেঁধে, আওয়াজ তুলব: পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী গড়তে হবে।"

বইটির প্রথম অংশটির জন্য ৪★ এবং দুনিয়ার সকল শ্রমিক এক হয়ে পূঁজিবাদকে উৎখাত করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে অনুপ্রেরণা যোগায় তার জন্য এক্ট্রা ১★
Profile Image for Jesan.
141 reviews5 followers
January 27, 2021
মানুষের সৃষ্টি,তার বিবর্তন,সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি ও বিবর্তন নিয়ে অনেক সহজ ভাষায় লেখা এই বই। মানুষের এই ক্রমবর্ধমান বিকাশ চলছেই,শেষ কি হবে না আবার নতুন করে গড়ে উঠবে?মূলত আলোকিত হয়েছে ডারউইনের বিবর্তনবাদ আর মার্ক্সবাদ।
Profile Image for Galiba Yesmin.
22 reviews2 followers
Read
August 26, 2020
দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় - ভারতের একজন প্রখ্যাত মার্কসবাদী দার্শনিক ও লেখক। তিনি প্রাচীন ভারতের দর্শনের বস্তুবাদকে উদ্ঘাটন করেছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ হল লোকায়তের প্রাচীন দর্শনকে তিনি বিরুদ্ধপক্ষের বিকৃতি হতে রক্ষা করেন এবং তা সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্পর্কেও গবেষণা করেছেন বিশেষ করে প্রাচীন চিকিৎসক চরক ও সুশ্রুত সম্পর্কে।
পৃথিবীতে সব কিছুর শেষ আছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনেক অনেক কিছুর শেষ দেখেছি আমরা যেমন একটা সামান্য গল্প, গল্প বলা শুরু করলে এক সময় গল্পও শেষ হয়ে যায় কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা গল্পের শেষ আমরা পাইনি, সেই গল্পটি হচ্ছে পৃথিবীর গল্প এবং এই গল্পটাই সব থেকে বেশি বাস্তব গল্প।
বইয়ের নামই বইয়ের পরিচয় তুলে ধরেছে। পৃথিবীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে লেখক সেসব কিছুই প্রতিটা ধাপে ধাপে তুলে ধরেছেন এই বইতে। অতিক্ষুদ্র একটা প্রাণী অ্যামিবা থেকে কীভাবে বিশাল ডাইনোসরের উৎপত্তি!, ডাইনোসরের বিলুপ্ত হওয়া থেকে পৃথিবীর পরিবর্তন এবং মানুষের আগমন; পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে কতো বাধা বিপত্তি পার হওয়া, সমাজ তৈরি হওয়া, জাতি তৈরি হওয়া রাষ্ট্র তৈরি হওয়া, বিভিন্ন জাতির ইতিহাস, কলকারখানা তৈরির ইতিহাস, যুদ্ধ জয় এবং মানুষ হিসেবে আমাদের কী করা উচিৎ ছিলো এবং আমরা আসলে কী করছি সেই প্রশ্ন তুলে ধরা; সব কিছু খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করা আছে এই বই। ছোট একখানা বই কিন্তু এতো গুলো তথ্য পদে পদে মিলিয়ে একসাথে প্রকাশ করার কৌশল দেখেই বোঝা যায় লেখক কতটা পরিশ্রমী!
গল্প পড়ার শুরুতে মনে হচ্ছিলো জীববিজ্ঞান বই পড়ছি, ভালোই লাগছিলো ছোট বেলার পড়া গুলো আবার মনে আসছিলো কিন্তু পড়তে পড়তে যখন ৫০ পৃষ্ঠা পার হয়ে গেলো তখন থেকে বেশ ভালো লাগা শুরু করলো কারণ আপনারা বইটি পড়লেই বুঝতে পারবেন।
আমরা হয়তো সবাই কম বেশি পৃথিবীর গল্পট জানি বিছিন্ন ভাবে বিভিন্ন রূপে কিন্তু সেই গল্পই খুব সুন্দর ভাবে একটা রূপে সহজ ভাষায় লেখক এই বইতে বলেছেন। এই একটা বই যেটা পড়তে আমার বিন্দুমাত্র একঘেয়েমি আসেনি।
এক কথায় বলতে লেখক "দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়" তার 'যে গল্পের শেষ নেই" বইতে সেই গল্পটা বলেছেন সত্যি যেই গল্পের শেষ নেই। ছোটদের উপহার দেয়ার জন্য চমৎকার একটি বই এটি। আপনারাও "দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়" এর লিখা "যে গল্পের শেষ নেই" বইটি সংগ্রহ করুন এবং পড়ে ফেলুন।
শুভ হোক আপনার পাঠ্য কার্যক্রম।
Profile Image for Ibnul Shah.
60 reviews23 followers
July 16, 2022
অসম্ভব ভালো লাগলো বইটা পড়ে!
মানুষের গল্প নিয়ে এ বই। কী সুন্দর একটা গল্প! পৃথিবীর উৎপত্তির কথা দিয়ে শুরু হয়েছে এ গল্প। এরপর একে একে প্রাণের জন্ম, ছোট্ট খুদে প্রাণ থেকে বিবর্তিত হয়ে কেমন করে মানুষ এল, কেমন করে বিজ্ঞানীরা জানলেন সেই আদ্যিকালের কথা- এমন সব ব্যাপার নিয়ে গল্পটা এগিয়ে গেল। চমৎকার লেখনীতে আর সহজ-সরল প্রাঞ্জল ভাষায় বলা হচ্ছে আশ্চর্য গল্পখানা। শত বছর ধরে বিজ্ঞানের এগিয়ে চলার মধ্য দিয়ে জানা গেছে এই গল্প। গল্পের পরের অংশটুকুতে মানুষের পৃথিবীকে জয় করার বীরত্বের কাহিনী। পৃথিবীকে জয় করার উপায়টা লেখক বলেছেন এভাবে-
"পৃথিবীর নিয়মকানুনকে যতো বেশি স্পষ্ট করে চিনতে পারা যায়, মানতে পারা যায়, ততোই এগুলোকে লাগানো যায় নিজের দরকার মতো কাজে; পৃথিবীর ওপর ততখানিই জিত।"
মানুষ কেমন করে সভ্য হলো, কেমন করে নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতিকে চিনতে শিখল সেসবের ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে। অতঃপর মানুষের উত্থান পতনের এক যাত্রা দেখতে পাই আমরা। কৃষির বিকাশ, ধর্মের উৎপত্তি, সমাজব্যবস্থা গঠন, বাণিজ্যের গোড়াপত্তন, ধনী-গরিবের সৃষ্টি, সমাজের শ্রেণিবৈষম্য, অর্থনৈতিক শোষণ ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে এসেছে খুব সহজ ভাষায়, যেটা বুঝতে কারোরই বেগ পেতে হবে না।
মানুষের গল্পের শেষদিকে শুধু মানুষে মানুষে লড়াইয়ের কথা, যুদ্ধের কথা, অশুভ শক্তির কথা। লেখক এরমধ্যেও শুনিয়েছেন আশার গান। আপনি, আমি সবাই এই গল্পের নায়ক নায়িকা- গল্পের পরের অধ্যায়টা কেমন হবে সেটা কিন্তু আমাদের ওপরই নির্ভর করছে!
সবমিলিয়ে অবশ্যপাঠ্য একটি বই।
Profile Image for তৌহিদুর রহমান.
Author 5 books12 followers
June 16, 2020
বইয়ের নামঃ যে গল্পের শেষ নেই
লেখকঃ দেবীপ্রসাদ চট্রোপাধ্যায়
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২ (প্রগতি প্রকাশন)
লেখককে এমন একটা গল্প বলতে বলা হলো যে গল্পে কোনো ফাঁকি থাকবে না, শেষও থাকবে না। এরকম গল্প একটাই হতে পারে--মানুষের গল্প। হ্যা, 'যে গল্পের শেষ নেই' বইটাতে এই মানুষের গল্পই বলা হয়েছে। তাই এটা আমাদের গল্পও বটে। লেখক দেবীপ্রসাদ চট্রোপাধ্যায়ের লেখনী সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। গল্পের মতো করে পড়ে ফেলা যায় তাঁর প্রতিটা বই। এই বইটিও এর ব্যতিক্রম না। আসলে বইটা লেখাই হয়েছে গল্প বলার ঢঙে। ফিকশন স্টাইলে মানুষের ইতিহাস জানো, পৃথিবীর পরিবর্তনকে বোঝো। এই পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে জীবের আবির্ভাব, মানুষ, সমাজ,সভ্যতা, রাস্ট্র একে একে সবকিছুই তুলে আনা হয়েছে অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষায়। প্রতিজ্ঞামতে গল্পে আসলেই কোনো ফাঁকি নেই। গল্পটা যে শেষ হয়েছে তাও বলা যাবে না। কারণ মানুষের গল্পের কোনো শেষ নেই। একটা জায়গা পর্যন্ত এসে গল্প থেমে গেছে ঠিকই। কিন্তু তাই বলে মানুষ থেমে নেই, মানুষের গল্প থেমে নেই।

পুরোটা বই অনেকগুলো ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত। পৃথিবীর বয়স দিয়ে শুরু হয়েছে গল্প। এরপর পৃথিবী এল কোথা থেকে, প্রাণের উৎপত্তি ও এর বিকাশ, পৃথিবীকে জয় করার পেছনে মানুষের মেহনত, চেষ্টা, জ্ঞান-বুদ্ধি, সমাজের বিবর্তন, সভ্যতা, ইত্যাদি ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করা হয়েছে। পড়ার সময় মনে হবে একেবারে সৃষ্টিলগ্ন থেকে পৃথিবীর পরিবর্তনকে যেন উন্মোচন করা হচ্ছে ধীরে ধীরে। এখানে এসেছে ধর্মের কথা; সভ্যতার কথা; শাসক-শোষকের কথা, শোষিত ও নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর কথা; বিবর্তন তত্ত্বের কথা; যুদ্ধের কথা; সামন্তবাদ,ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কথা। এসেছে শহর-নগর পত্তনের কাহিনী, বিনাশের কাহিনী। শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান--কী নেই এই গল্পে। প্রয়োজনমতো সবকিছুই স্থান পেয়েছে বইটার ছোট্র পরিসরে। পৃথিবীর ইতিহাস জানতে শাসক ও নিপীড়িত মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কটা বোঝা অত্যন্ত জরুরী। যাদের হাতে গড়া এই সভ্যতা, যাদের পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে আজকের এই পৃথিবী তাদের কথা, তাদের মেহনতের কথা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে এসেছে সমাজের উঁচু পদে আসীন, শাসক ও আইন প্রণয়নকারীদের ঘৃণ্য চতুরীপনার কথা। বইটার সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে- পড়তে পড়তে মনের মধ্যে অজস্র প্রশ্ন উঁকি দিবে। তবে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। পড়ার সময় প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর পাবেন একেবারে সহজ সরল উদাহরণসহ। শুধু ইতিহাসই নয়; আছে বিজ্ঞান। কীভাবে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা হলো, কীভাবে পৃথিবীর উৎপত্তি হলো, প্রথম জীবের আবির্ভাব ঘটল, এই সকল জীব আবার ক্রমান্বয়ে আরও জটিল আকৃতি পেল ইত্যাদি। আপনার, আমার, আমাদের বা এই পৃথিবী নামক গ্রহটির ইতিহাস যারা জানতে চান তাদের জন্য বাংলায় অবশ্যপাঠ্য একটি বই।
সবশেষে বইটি সম্পর্কে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যটি হুবহু তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না। তিনি লিখেছেন-
'যে গল্পের শেষ নেই'......আমি নিজেই শুধু বিশেষ মনোযোগ দিয়ে পড়িনি, ছেলেদের এবং সাধারণ মানুষদের পড়াচ্ছি। তারা কি বোঝে কতখানি বোঝে কিভাবে বোঝে যাচাই করার জন্য। কঠিন কথা, একেবারে অজানা কথা সহজ করে বুঝিয়ে বলা বা লেখার চেয়ে কঠিন কাজ জগতে খুব কমই আছে। বৈজ্ঞানিকদের জন্য বিজ্ঞানের বই লেখার সময় জানা থাকে তারা কতটা বোঝেন না বোঝেন, তাদের বুদ্ধি আর চেতনা কি ধরনের, কিন্তু অজ্ঞদের বেলা পড়তে হয় মুস্কিলে। তাদের মগজে কি আছে আর কি নেই- যা আছে তার স্বরুপ কি- এসব আন্দাজ করা কঠিন, অথচ শুধু এটুকু আন্দাজ করলেই চলে না। প্রতিনিয়ত তাদের মগজটা কি দিয়ে কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তা না জানলেও চলে না।.....
Profile Image for Munna Bhaiya.
48 reviews1 follower
December 18, 2020
বই : যে গল্পের শেষ নেই
লেখক : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশক : দি স্কাই পাবলিশার্স
ধরণ : ফিকশন্ ( ইতিহাস )
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১০৪
প্রচ্ছদ : মোবারক হোসেন লিটন
প্রথম সংস্করণ : আগস্ট ২০১৭
সংস্করণ : আগস্ট ২০১৭ ( প্রথম মুদ্রণ )
মুদ্রিত মূল্য : ১৪০ টাকা
ISBN : 984-826-072-2




লেখক পরিচিতি :

দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ভারতের একজন প্রখ্যাত মার্কসবাদী দার্শনিক ৷ তার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৯শে নভেম্বর ৷ তিনি প্রাচীন ভারতের দর্শনের বস্তবাদকে উদঘাটন করেছেন ৷ তার সবচেয়ে বড় কাজ হল , লোকায়তের প্রাচীন দর্শনকে তিনি বিরুদ্ধপক্ষের বিকৃতি হতে রক্ষা এবং তা সংগ্রহ ও প্রকাশ ৷ এছাড়াও তিনি প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্পর্কেও করেছেন , বিশেষ করে প্রাচীন চিকিৎসক চরক ও শ্রুশ্রুত সম্পর্কে ৷ ১৯৯৩ সালের ৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ৷


ব্যক্তিগত মন্তব্য :

ভাবুন তো একবার কি এমন গল্প আছে যার কোন শেষ নেই ? বলুন তো মানুষ কিভাবে এল পৃথিবীতে ? বর্তমানের পরিণতির জন্য কে দায়ী ? আর এই পরিণতির শেষ কোথায় হবে ? এসব উত্তরেই এই বইটির সার্থকতা ৷ মানুষের গল্প অসম্পূর্ণ ৷ আর অসম্পূর্ণতার জন্যেই আমাদের গল্পের শেষ নেই ৷ কারণ আমরা নিজেরাই বলতে পারবো না ভবিষ্যতে কি হবে ৷ এজন্যেই বইটির নাম 'যে গল্পের শেষ নেই ' ৷

দুই অংশে বিভক্ত বইটির প্রথম অংশে লেখক ডারউইনের তত্ত্বের সাহায্যে দেখার চেষ্টা করেছেন মানুষের বিবর্তনকে। আর তার আগে অবশ্যম্ভাবী যে অংশটা অর্থাৎ পৃথিবী কিভাবে এল, সেখানে 'প্রাণ ই বা সৃষ্টি হল কিভাবে এসবের উত্তর দিয়েছেন। কিভাবে মানুষ এল তা না হয় বােঝা গেল কিন্তু মানুষের আজকের এই উন্নতির কারন কি? তারও উত্তর লেখক দিয়েছেন বইটার দ্বিতীয় অংশে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে।

এতে দেখিয়েছেন হাত আর হাতিয়ারের উন্নতির মাধ্যমে কিভাবে মানুষ সেই বন্য অবস্থা থেকে আজকের অবস্থানে এল, সভ্যতাকে তিনি দেখিয়েছেন হাতিয়ারের উন্নতি ও পৃথিবীকে বশ করার প্রেরণা হিসেবে। কিন্তু পথটা যে মসৃণ ছিল না তা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন শাসক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আর পুঁজিবাদের সমালােচনা করে আবার আমরা আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে যে কম মূল্য দেই নি তা স্পষ্ট করেছেন তিনি যে গগনচুম্বী দালানের আড়াল থেকে অনাহারীর কান্নার আওয়াজ শুনতে পান তা তুলে ধরে। কিন্তু লেখক তবু আশাবাদী, আজকের এই অবস্থাও একসময় ঘুচবে, আবার আমরা ফিরে যাব আদিম সাম্যাবস্থায়, পার্থক্য হবে শুধু জ্ঞানে, বিজ্ঞানে আর সম্পদে।

লেখক বলেছিলেন, 'এ গল্পের নায়ক-নায়িকা তুমি , আমি , আমরাই ৷ গল্পটা শুধুই জানবার বা পড়বার নয় ৷ আগামীকাল নির্ভর করছে তুমি-আমি-আমরা কিভাবে পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তত হচ্ছি ৷ আর এটার উপরেই পরবর্তী গল্পের সার্থকতা ৷' আমি বলবো বইটি সবারই পড়ার উচিত ৷ আর লেখকের লেখনির প্রান্ঞ্জলতা নিয়ে কোন সন্ধেহ্ নেই ৷ অবশ্যই সুখপাঠ্য ৷
May 13, 2025
পরম স্নেহে একেবারে ছেলেমানুষি ভঙ্গিতে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বুঝানোর মতো। তবে, 'মানুষের শত্রু মানুষ' অংশের পর থেকে কয়েক-নেতিবাচক দিক উপেক্ষা করে ভাবলে দারুণ সব তথ্য উল্লেখ করা ব‌ইয়ে। অভিজ্ঞ পাঠকের জন্য হয়তো কিছু বিষয় পূর্বপরিচিত হতে পারে, কিন্তু কিশোর উপযোগী হিসেবে শীর্ষেই বলা যায়।

মুসলিম এবং হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব বিশ্বাস ও রীতিনীতির ‌ব্যাপারে লেখকের বিতর্কিত স্বভাব ইঙ্গিত পেয়েছে।
১. ডার‌উইনের থিউরি (only theory, not fact) যার কোনো পাকাপোক্ত ভিত্তি নেই। বরং দ্বিধায় ডার‌উন নিজেও তার বন্ধু থমাসকে চিঠিতে লিখেছিলেন ''থিউরির ওপর ১০০% কোনো প্রমাণ নেই''। পরবর্তীতে ডার‌উইনের থিউরি নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ'র ধন্ধ বৈজ্ঞানিকদের ভিড়ে। উক্ত আলোচনাটি ইসলামিক তথ্যের বিপরীত।
২. খ্রিষ্ট জন্মের প্রায় দেড় হাজার বা তার‌ও বেশি বছর আগে, অনেক দিন ধরে অনেক কবির অনেক রচনার সংকলন হচ্ছে বেদ। যার মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে ঋগ্বেদ।
৩. নানান দেব-দেবী ছিলো নেহাৎ ধর্ম উপাসনালয়ের পন্ডিতদের, জমিদারদের সুবিধার্থে বানানো কতোগুলো চরিত্র। যার মধ্যে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েক দেব-দেবী ছিলো মানুষের মতোই যারা একেঅপরের সঙ্গে মিলেমিশে জীবনযাপন করতো। মহত্ত্বের কারণে পরবর্তীতে তারা দেব-দেবীরূপে পূজিত হতেন।

◑ এসব যুক্তির সূত্র ধরে, লেখক প্রকারান্তরে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মগুলোতে "প্রকৃত অর্থে খোদা বা ঈশ্বর বলে কিছু নেই"।

এসব সহ আরো নানারকম বিষয় আছে ব‌ইয়ে। পাঠক তার নিজস্ব বিচারবুদ্ধি দিয়ে ইতি ও ন���তিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করবে এটাই শ্রেয়।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Amzad Hosen.
22 reviews
September 4, 2021
গল্প আবার সত্যি হয় নাকি? হয়, যদি সে গল্প হয় মানুষের, আর গল্পটার ভিত্তি যদি হয় বিজ্ঞানসম্মত বস্তুবাদী ইতিহাসের উপর তাহলে তো কথাই নেই।

কঠিন কঠিন বিষয়গুলো একেবারে সহজ ভাষায় লেখা! আর সুখপাঠ্য তো বটেই।
Profile Image for Mashaekh Hassan.
162 reviews28 followers
April 20, 2020
এইটা একটা ডিসকাউন্ট স্যাপিএন্স
Profile Image for Palash Ray.
46 reviews14 followers
May 29, 2020
এটি Sapiens টাইপের লেখা। বাংলায় এরকম একটি বই আছে জানতাম না। অনেক কিছু সম্পর্কে ভাবতে শেখায় এই বই। ধর্মীয় বিশ্বাস ও অপবিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জয়গান গেয়ে চলে এর প্রতিটি অক্ষর।
Profile Image for Himel Das.
14 reviews
June 20, 2022
বিবর্তন নিয়ে লেখা বই। দৃশ্যপট ভালো ছিলো।
Profile Image for Wasima Obayed Suha.
13 reviews10 followers
January 19, 2023
বইটার শেষ অংশে এসে মনে হলো, অলিভ্যাণ্ডারের ওই কথাটা মানুষের ইতিহাসের ক্ষেত্রেও দারুণ খাটে, "Terrible but great."
Profile Image for Sidratul Muntaha.
24 reviews11 followers
September 22, 2023
বিবর্তনের কিছু বিতর্কিত বিষয় বাদ দিলে। বাকি অংশগুলো আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।
Profile Image for Aditya.
37 reviews6 followers
March 12, 2024
ছোট খাটো জানা বিষয়গুলোই আবার নতুন করে ভাবতে শেখালো এই বই।
Displaying 1 - 30 of 39 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.