সপ্তদশ শতাব্দীর বাংলা বিশেষত প্রাক্-পলাশিকাল এই গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে বাংলার যে লক্ষণীয় সমৃদ্ধি ছিল, পলাশি-পরবর্তীকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের হাতে তার অবনতি ঘটে বলে লেখক মনে করেছেন। বাংলার বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের সাহায্যে তিনি দেখিয়েছেন সম্পদশালী হওয়ার কারণেই ইংরেজ কোম্পানি বাংলাকে হস্তগত করার চেষ্টা করে, প্রদেশের অবক্ষয়ের কারণে নয়। ইংরেজের বাংলা জয় হঠাৎ ঘটেনি বা তৎকালীন অরাজকতার জন্য নয়, কারণ তিনি দেখিয়েছেন পলাশির আগে বাংলায় আর্থিক বা রাজনৈতিক কোনও সমস্যা ছিল না। যোগসাজশের তত্ত্বও তিনি খারিজ করেছেন। অবক্ষয়ের জন্য নয়, সপ্তদশ শতকে ব্যবসাবাণিজ্যে বাংলার অগ্রগণ্য ভূমিকার কারণেই ইউরোপীয়দের কাছে এই প্রদেশ অত্যন্ত লোভনীয় হয়ে উঠেছিল। এই তত্ত্বের সমর্থনে বাংলার ব্যবসাবাণিজ্য ও ব্যবসায়ীদের ক্রিয়াকলাপ প্রামাণ্য নথিপত্রসহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন লেখক। বাংলার ব্যবসায়ীদের লাভজনক ব্যবসাবাণিজ্যই যে বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূলে, ইউরোপীয়দের বাণিজ্যের কারণে নয়— এই মত প্রামাণ্য নথিপত্রের সাহায্যে উপস্থাপনা করেছেন। ইউরোপীয় ও ভারতীয় অভিলেখ্যাগারে সংরক্ষিত নথিপত্রের ভিত্তিতে রচিত এই গ্রন্থটি ইতিহাস ও অর্থনীতির ছাত্রদের এবং সাধারণ পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
সুশীল চৌধুরীর জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ.।ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি-এইচ. ডি.।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগে অধ্যাপনা। ওই বিভাগেরই ‘ইউনিভার্সিটি চেয়ার’ পদে আসীন ছিলেন ১৯৭৮ থেকে ২০০২।বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন পর্যায়ক্রমে। উপস্থিত থেকেছেন নানা সেমিনারে। বর্তমানে রয়্যাল হিস্টরিক্যাল সোসাইটি, ইংল্যান্ডের ফেলো এবং ইউ. জি. সি., ভারতের এমেরিটাস ফেলো।উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: দি প্রিলিউড টু এম্পায়ার: প্লাসি রেভেলিউশন অফ সেভেনটিন ফিফটি সেভেন; মার্চেন্টস কোম্পানিজ অ্যান্ড ট্রেড; ট্রেড অ্যান্ড কমার্শিয়াল অরগানাইজেশন ইন বেঙ্গল ইত্যাদি।