ঠিক কেন ফিলিস্তিনিদের ওপর রক্তাক্ত আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইলিরা? কীভাবে এর সূত্রপাত? ঘুরে ফিরে বারবার গাযার নামই বা কেন আসে? ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা গাযার ইতিহাস কী? কীভাবে ফিলিস্তিনিরা উড়ে এসে জুড়ে বসা ইসরাইলের কাছে ভূমি হারালো? নিজ ভূমিতে নিজেরাই কীভাবে পরাধীন? ফিলিস্তিনের হামাস, ফাতাহ- আর ওদিকে ইসরাইলের জায়োনিস্ট সরকার, আইডিএফ- এসব মিলিয়ে পবিত্র ভূমিতে রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী? ৭ অক্টোবরের ঘটনা কী? জায়োনিস্টদের পরিকল্পনার শুরুটা হলো কখন? ভবিষ্যতে কী হতে পারে? পশ্চিম তীরেও কি একই ঘটনা হবে?
ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের রক্তাক্ত আগ্রাসন নিয়ে তো অনেক বই-ই রয়েছে, কিছু বই আপনাকে নিয়ে যাবে অনেক গভীরে। কিন্তু এই 'গাযার গর্জন' বইটি লেখার চেষ্টা করা হয়েছে সকলের জন্য উপযোগী করে- মলাটবদ্ধ দেড়শো বছরের বিস্তারিত ইতিহাস। এ বইটি পড়ে ফেললেই যেন যেকোনো পাঠকই বুঝে যান পবিত্র ভূমিতে ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসনের আগাগোড়া ইতিহাস। স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্ন আর কতদূর!
Born in Bangladesh, Abdullah Ibn Mahmud passed his childhood in Dubai, the UAE, the tourists' heaven. Returning to his home country, he passed his intermediate from Science department in 2011 from Notre Dame College, Dhaka. After that, he started his B.Sc. in the top-most engineering university of the country, BUET (Bangladesh University of Engineering & Technology) in Electrical & Electronic Engineering (EEE). After obtaining B.Sc., he went on to pursue MBA in 2017 and finished the degree from the highest academic institution in the business line, IBA of Dhaka University.
He started his writing career during his undergrad life and earned huge popularity through his historical writings published in the Bangla version of the popular analyst platform of South Asia, Roar Global. His writings on Roar Bangla have accumulated over 3.6 million readers in the last two years alone.
Abdullah loves to read and impart knowledge to those who like easy-reads. He is one of the pioneers of the country who popularized the reading of non-fiction or history-based contents. His favorite topics include- myths, theological history, tech, and he totally adores Dan Brown & J. K. Rowling, having grown up reading their fictions, but making a career of non-fiction, mostly. His published works now total up to 6, with quite a few in the pipeline, including approved translation works.
শৈশবের গোড়ার ছয়টি বছর কেটেছে আরব আমিরাতের দুবাইতে। ২০১১ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করে আন্ডারগ্র্যাড শুরু করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎকৌশল বিভাগে। ২০১৭ সালে বুয়েট থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
ভার্চুয়াল জগতে লেখালেখির সূচনা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঢোকার পর থেকে। বুয়েটে শেষ বর্ষে থাকাকালীন লেখা শুরু করেন রোর বাংলা প্ল্যাটফর্মে, যেখানে জনপ্রিয়তা পায় তার শতাধিক ফিচার, তার লেখাগুলো পঠিত হয় সাম্প্রতিক সময়েই প্রায় ৩৬ লক্ষ বার। ভালোবাসেন নতুন কিছু জানতে এবং জানাতে; প্রযুক্তি আর ফিকশন ছাড়াও পছন্দের বিষয়- বৈশ্বিক ইতিহাস, মিথ এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব।
প্রকাশিত নন্দিত বইগুলোর মাঝে আছে- ইহুদী জাতির ইতিহাস, অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে, এলিরিন, দ্য প্রফেট, সিক্রেট মিশনস, ইত্যাদি।
❛পিতা তার ছোট্ট সন্তানকে শেখাচ্ছে বো ম্বিংয়ের ঐ ভয়ানক শব্দ একটা খেলা। ওরকম শব্দ হলে খুশি হতে হবে। এক ছোট্ট শিশু হাতে পাথর নিয়ে ছুঁড়ছে সামনের মারণঘাতি ট্যাংককে। সন্তানের বয়স হিসাব করে মাংস মেপে জানাযা হচ্ছে। একটু খাবারের জন্য সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।❜
পরিচিত মনে হচ্ছে কি ঘটনাগুলো? হ্যাঁ, এই ঘটনাগুলোই নিয়মিত হয়ে আসছে একটি দেশে। এটাই তাদের নিত্যনৈমিত্তিক স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে আসছে। বুঝতেই পারছেন, বলছি ফি লি স্তি ন নামক মৃ ত্যুপু রী র কথা। ❛পবিত্র ভূমি❜ নামক প্রতিশ্রুতি, যা সৃষ্টিকর্তা করেছিলেন এক জাতির কাছে। তার রেশ ধরে হাজার বছরের ভিত থেকে বিগত কয়েক বছরে ভূমির দাবিতে চলে আসছে এক সংঘাত। যার মূলে আছে সেমিটিক তিন ধর্মের বিশ্বাস, ঐতিহ্যের নগরী জে রু জা লেম।
তিন ধর্মেই আছে এই নগরী নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী। সেমেটিক ধর্মের মধ্যে সবথেকে পুরোনো ধর্ম ❛ই হু দী❜ ধর্ম। যার সূচনা হয়েছিল মূসা (আ) এর মাধ্যমে। এর ইতিহাস আরো অনেক গভীরে। ইয়াকুব (আ) এর দেখা স্বপ্ন যাকে ❛জ্যাকব'স ল্যাডার ড্রিম❜ বলা হয় সেই থেকে শুরু হয়েছিল পবিত্র ভূমি তথা প্রতিশ্রুত ভূমির ইতিহাস।
আজকের ফি লি স্তিন নামে আমরা যে রাষ্ট্রকে চিনি তার আদি নাম ছিল কেনান বা কেন্যানভূমি। একসময় এই কেনানের অধিবাসীরা ছিল পৌত্তলিক। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী মূসা (আ) মিশর থেকে তার জাতিকে নিয়ে যাত্রা করেন এই প্রতিশ্রুত ভূমির উদ্দেশ্যে। এরপর শাস্তিস্বরূপ তারা ৪০ বছর এদিক সেদিক ঘুরে অবশেষে পা রাখে এই ভূমিতে। ইতিহাসে আরো সামনে এগোলে জানা যায় গা যা শহর এবং উপত্যকার ইতিহাস। দুটো কিন্তু ভিন্ন জিনিস উপত্যকার একটি অংশ হলো শহরটি। এর ইতিহাস হাজার হাজার বছরের। অনেক সাম্রাজ্য এবং জাতির শাসন চলেছিল এই উপত্যকা। নানা শাসন পেরিয়ে এখানে ই হু দী রা আশ্রয় নেয় পৌত্তলিকদের হটিয়ে। এরপর তাদের আবার হটিয়ে এখানে জায়গা করে নেয় নতুন শাসন। এভাবে চলতে চলতে ফি লি স্তি ন হয়ে উঠল মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ।
এরমধ্যে ইহু দী রা পৃথিবীর নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। এভাবেই কেটে গেল সময়। এরপর উনিশ শতকে আবার ই হু দী সংকট শুরু হলো এক আর্টিলারি অফিসারের কেলেংকারীর মাঝে দিয়ে। মূলত একেই জা য়ো নিস্ট আন্দোলনের শুরু বলা যায়। আর্টিলারি অফিসারের সন্দেহজনক বিশ্বাসঘা ত ক তার কাহিনি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। যদিও শেষে তার দোষ ছিল না এমনটাই প্রমাণ হয়। বলে রাখা ভালো আর্টিলারি সেই অফিসারের নাম ছিল আলফ্রেড ড্রায়ফাস এবং বলাই বাহুল্য তিনি ছিলেন একজন ই হু দী। এই ঘটনায় ই হু দী বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়লে তাদের আলাদা রাষ্ট্র এবং দেশের স্বপ্ন দেখেন থিওডোর হার্টজেল নামের এক লোক। এভাবেই শুরু হয় রাষ্ট্র হিসেবে ইস রা ইলে র স্বীকৃতি পাবার ইতিহাস।
শুরুতেই তারা নিজেদের দেশ হিসেবে ফি লি স্তি ন কে দাবি করে বসেনি। ইউরোপ, এশিয়া কিংবা অন্যকোথাও জায়গা দাবি করেছিল। তবে বারবার জাতি হিসেবে তাদের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা থেকে থেকে একসময় তারা ফিরে যায় তাদের অতীতের পরিচয়ে। এখানেই আসে ফি লি স্তিনকে আপনভূমি হিসেবে পাওয়ার কথা। কারণটা অবশ্যই ধর্মীয়। তাদের ধর্মগ্রন্থ বলছে সৃষ্টিকর্তা তাদের এই ভূমি দিবেন সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখানেই নির্মিত হয়েছিল হযরত দাউদ (আ) এর পুত্র হযরত সোলায়মান (আ) (কিং সলোমন) এর নির্মিত টেম্পল। যা ❛ফার্স্ট টেম্পল অফ সলোমন❜ নামে পরিচিত। যা ধ্বং স হয়েছিল এবং পুনরায় নির্মিত হয়েছিল এবং ৭০ সালে আবার রোমানদের দ্বারা ধ্বংস হয়। তারা তাদের প্রতিশ্রুত ভূমিতে ফিরে আসতে চায় কারণ এখানেই আসবে তাদের প্রতিশ্রুত মসীহ (ইসলামী মতানুসারে ভন্ড মাসীহ বা অ্যান্টি ক্রাইস্ট)। সে তাদের উদ্ধার করবে, ভূমি ফিরিয়ে শাসন করবে বিশ্ব আর তখন সবাই এক ধর্মের ছায়াতলে থাকবে। এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বলা যায় একরকম উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল তারা। ফি লিস্তি নে র স্থায়ী নাগরিকদের উপর শুরু করে তারা নির্যাতন, নির্বাসন আর নিপীড়নের এক তাণ্ডব। যার মূল অতি প্রাচীনকাল হলেও নিকটতম অতীত থেকেই যা মা রা ত্বক আকার ধারন করতে থাকে।
সেই শুরুটাই হয় ১৯৪৮ সালে। এরমধ্যেই অতীতে হয়ে গেছে দুটো বিশ্ব যু দ্ধ। শেষ যু দ্ধের সবথেকে বড় কিংবা মূল ভিকটিম ছিল ই হু দী রাই। সেই তান্ডবের কথা বিশ্ব জানে। ছিল তাদের প্রতি সহমর্মিতাও। এরপর নিজেদের শক্তি যুগিয়ে কয়েক বছর পরই তারা নেমে পড়ে ফি লি স্তি নকে নিজেদের করে নিতে। এক আ ক্রমণে দখল করে ফেলে অনেকটাই। তাদের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর কাছে নতজানু হয়ে যায় স্থানীয়রা। শুরু হয় র ক্তক্ষ য়ী এক ইতিহাসের। যেখানে শো ণিত ধারার অংশ ফি লি স্তিনের মূল অধিবাসীদেরই।
১৯৪৮ আসার আগে শুরুটা উনিশ শতক থেকে হলেও ক্রমে এর বীজ বপন হতে থাকে ১৯০১ থেকে যা ধারাবাহিকভাবে আছে আজকের এই ২০২৫ সালেও। এবং দুঃখজনকভাবে সত্যি ক্রমেই পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ আর ভবিষ্যত অনিশ্চিত। জে রু জা লেম, গা যা, পশ্চিম তীর কিংবা ফি লি স্তিন কথাটা আসলেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায় মুসলিম, ই হু দী এবং খ্রিস্টান ধর্ম। তবে এর সাথে সেমিটিক আদি এবং শেষ ধর্মই বেশি জড়িত।
উনিশ শতকের শেষ থেকে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে হার্টজেলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শুরু হয় জায়ো নি জম সংঘ। বছর বছর তাদের সম্মেলন, বিভিন্ন দেশে নিজেদের দাবি উত্থাপন, স্বীকৃতি চাইতে চাইতে অবশেষে গিয়ে অনারব, অমুসলিম দেশগুলোর স্বীকৃতি প্রাপ্তির মাধ্যমেই শুরু হয় তাদের যাত্রা। এরপর আপনভূমির দাবিতে নানা চুক্তি, আলাপ আলোচনা হতে হতে দেয়া হয় তাদের ফি লি স্তিনে র একটু জমি। তবে ক্যান্সারের মতোই তারা অল্প করে আসতে আসতে ছড়িয়ে পড়ে, বাড়িয়ে ফেলে তাদের মানচিত্র। আগে যা ছিল জলপাই বনে ঘেরা দুধ এবং মধুর স্থান সেখানেই নিজেদের মূল গড়তে শুরু করলো তারা। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুরু হলো গোয়েন্দা সংস্থা। যার আধুনিক রূপ দুর্ধর্ষ আজকের ❛মো সা দ❜। এর আগে তারা জড়িয়ে যায় মিশর, আরবের সাথে যু দ্ধে। কখনো সেটা সুয়েজ খাল নিয়ে, কখনো জায়গার দাবি নিয়ে কখনো নিজেদের দাপট দেখাতে। একসময় স্বীকৃতি না পেলেও ধীরে ধীরে অনেকগুলো দেশ তাদের স্বীকৃতি দেয় রাষ্ট্র হিসেবে। যার নাম হয় ❛ই সরা ইল❜। পতাকায় আছে স্টার অফ ডেভিড। তবে অস্বীকৃত থেকে যায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছে। সময় গড়ায়, অত্যাচারের পাল্লা ভারি হতে থাকে গা যার মানুষগুলোর উপর। দখল হতে থাকে তাদের নিজেদের ভূমি। আপন ভূমিতেই তারা শরণার্থী, নির্যাতিত হয়ে বাস করে। একসময় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এখানেই তৈরি হয় পি এল ও, হা মা স, ফাতা হের মতো সংঘটনের। আক্র মণ পাল্টা আ ক্রমণ চলতে থাকে। হাজার লাখে প্রাণ দিতে থাকে মুসলিম আর হাজারের বিপরীতে ই হু দী প্রাণ হারায় শতক। ধীরে ধীরে ভূমির দাবি যতটা না ধর্মীয় তার থেকে বেশি হয়ে দাঁড়ায় অস্তিত্বের কিংবা দাপটের। সবথেকে অল্প সংখ্যক বিশ্বাসী নিয়ে কীভাবে তারা টিকে আছে এই প্রশ্ন আসতেই তো পারে? এখানেই আসে পশ্চিমা দেশ, মিডিয়া এবং তাদের নীরব সমর্থন। এমনকি মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোও চুপ থেকে যায়। নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। একেবারে হাত না ধুয়ে ফ��ললেও ঝাড়া দিয়ে রাখে। এদিকে মা রা পড়তে থাকে গা যার হাজারো অধিবাসী।
১৯০১ থেকে ২০১২ বা ২০১৪ পযর্ন্ত এই সংঘাত প্রাণহানি চলতেই থাকে। এরমধ্যেই তৈরি হয় ই সরা ইল নামক রাষ্ট্র। যার সরকার তৈরি হয়, তৈরি হয় নিজস্ব বাহিনী, রাজধানী। নিজেদের আরো শক্তিশালী করে ফেলে তারা। অপরদিকে আপন ভূমি রক্ষায় গা যা বাসীও প্রতিরোধ করতে থাকে। তবে সেটা যে পর্যাপ্ত নয় তার প্রমাণ তাদের পরিস্থিতি। ইস রাই লের শক্ত প্রতিরোধ, প্রযুক্তির কাছে পেরে ওঠেনি গা যা বাসী। সাথে বহির্বিশ্বের নীরব সমর্থন আর গা যাবাসীর দুঃখের প্রতি মায়াকান্না তো আছেই। এভাবে করেই ঘনিয়ে এলো বিশ্বব্যাপী কোভিডের করাল গ্রাস। ২০২১ এ আবার অস্থির হয় পরিস্থিতি। কেন? করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে তৈরি হয় ঝামেলা। উড়ে এসে জুড়ে বসা জাতিটি বাগড়া দেয়। ফলশ্রুতিতে আবার শুরু হয় ঘাত প্রতিঘাত।
আচ্ছা প্রশ্ন তো আসতেই পারে এই যে এত বছরের সংঘাত এরমধ্যে কি কখনোই শান্তি চুক্তি হয়নি? কিংবা যু দ্ধ বিরতি হয়নি? উত্তর , হ্যাঁ। হয়েছে। তবে সেটা সাময়িক। শান্তি চুক্তির চুক্তিগুলো কখনোই দুইপক্ষ ঠিকভাবে মেনে নেয়নি। হা মা স মেনে নিলেও দেখা গেছে জুড়ে বসা জাতিটি তাদের দখলদারিত্ব ছাড়তে রাজি হয়নি। সরিয়ে নিতে চায়নি তাদের সেনা, কিংবা সেটেলমেন্ট। এভাবেই চুক্তি হয়েছে, ভেঙেছে আবার আক্রমণে শো ণিত হয়েছে গা যা। তাদের দাবি অপনভূমি থেকেই আসল অধিবাসীদের সরিয়ে তারা বাস করবে। পাশাপাশি একই ভূমিতে দুটি রাষ্ট্র সহাবস্থান আদৌ কি করতে পারে?
সময়টা ২০২৩ সালের অক্টোবর ৭। একেবারে কোনো পূর্ব জানাশোনা ছাড়াই অতর্কিতে হা মা স আ ক্রমণ চালায় তেল আবিব ঘাটিতে। যার কোনো আগাম পূর্বাভাস পায়নি প্রতিপক্ষ। এমনকি আয়রন ডোমও এই তুমুল আঘাত রুখতে পারে না। ফলে ক্ষতি হয় বেশ। তবে সেই ক্ষতি সাময়িক। তুমুল ভাবে আবার তাণ্ডব শুরু হয় গা যা বাসীর প্রতি। রক্ষা পায়না রাফাও। পুরো নগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। শিশু, নারী, যুবা কেউ বাদ যায়না। তবে শিশু প্রাণনাশের হারটাই বিশ্ববাসীর কাছে ধরা দেয় বেশি।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে ১৫ মাসের এক নিষ্ঠুর হ ত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ২০২৫, জানুয়ারি ১৯ এ এসে যু দ্ধবিরতি হয়। তবে এরমধ্যেই হারিয়ে গেছে ৪৭ হাজারেরও বেশি (৭০হাজার হতে পারে) গা যা বাসীর প্রাণ। ধ্বংস হয়ে গেছে নিজেদের আবাস, স্মৃতি, হারিয়ে গেছি পরিবার, ছোট্ট শিশুটা ফিরবে না আর। হাসপাতাল, সুযোগ সুবিধা সবই তান্ডবের নিচে চাপা পড়ে গেছে। তবুও টিকে আছে আপনভূমির প্রতি মমত্ববোধ। এত অত্যাচারও তাদের টলাতে পারেনি। এবারের তান্ডব এতই ভয়াবহ ছিল যে আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠানেরাও আখ্যা দিয়েছে গা যায় এর আগে এত ভয়াবহতা হয়নি। বলা হয়েছে, ❛গা যা শিশুদের জন্য মৃ ত্যু উপত্যকা❜ এবারের ধ্বং সযজ্ঞে শিশুদের ছোট্ট মৃ তদেহ বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। কিন্তু পবিত্র ভূমির দাবিদারদের টলাতে পারেনি। ধর্মের নামে নৃশংসতাকে এখন কেউ বলছে না ❛জ ঙ্গিবা দী কিংবা টে রোরিজ ম❜।
আপনি জানেন কি ঠিক কোন কারণে ২০২৩, অক্টোবরের ৭ এ হা মাস এই কাজ করেছিল? এখানেই আসে মিথ, ধর্ম আর প্রচলিত এক কথা। তৃতীয় টেম্পল নির্মাণের জন্য লাল বাছুরের কাহিনি। এ নিয়েও আছে মতভেদ।
তবে শেষমেষ চলছে বিরতি। কিন্তু কতদিন?
গা যা বাসীর আর্তনাদ, গর্জন শুনতে শুনতে কতগুলো যুগ কেটে যাবে জানা নেই। শান্তিচুক্তির নামে কোনো ফাঁক ফোকর বের করে আবার যে হানা দিবেনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। একটা স্বাধীনতার জন্য আর কতগুলো জেনারেশন বিলুপ্ত হয়ে যাবে সেটাও অনিশ্চিত। পবিত্র ভূমির দাবি নিয়ে যেমন কুরআনে আয়াত নাযিল হয়েছিল। তেমনি আয়াত আছে এই দাবি কাদের পর্যন্ত পৌঁছুবে না। শান্তির বুলি দিয়ে যারা নার কীয় হ ত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তারাই টিকে আছে।
ফি লি স্তিনে র স্বাধীনতার স্বপ্ন আর কতদূর? ভবিষ্যতে কী হবে সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা আর নীল আসামনের অধিশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেই কাটাতে হবে। গা যার গর্জন শুনতে কি পাও হে বিশ্ববাসী?
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
কিছু বই আছে শুরু করার আগেই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আব্দুলাহ ইবনে মাহমুদের লেখা ❝গা যার গর্জন❞ বইটা খুলেই কেমন দমে গেছিলাম।
বইয়ের শুরুই হয়েছে মন বিস্বাদে আক্রান্ত করে দেয়া বিধ্বস্ত গা যার কতগুলো চিত্র দিয়ে। লা শের সারি, গণ কব র, শিশুর মৃ ত দেহ, খাবারের অপেক্ষায় থাকা শরণার্থীদের করুণ চিত্র দেখে দমে গেছিলাম। সামনে আগানো ঠিক হবে?
লেখক এই বইটি লিখেছেন ফি লি স্তিন তথা গা যার উপর পবিত্র ভূমির দাবিদারদের করা হ ত্যাযজ্ঞকে ঘিরে। একে জে নোসাইড বলাটা কি ভুল?
সেমেটিক তিন ধর্ম নিয়ে লেখক বেশ গবেষণা করেন। এর আগেও তিন এই ধর্মের ব্যাপারে লেখকের লেখা বেশ কিছু বই পড়েছি। হাজার বছরের ইতিহাসকে এক মলাটে সুন্দরভাবে তুলে ধরার প্রয়াস লেখকের। এবং পাঠক হিসেবে এই বিষয়ের লেখা আমার খুব ভালো লাগে। এই বইটি পড়ার পর আমি থম মে রে ছিলাম। কী লিখবো? এত হ ত্যার কথা লিখতে লিখতে সেই হ ত্যা হওয়া মজলুমের র ক্ত আমার হাতেও লেগে যাবে কি? বইটির শুরু হয়েছে এক বছর আগের একটা অপারেশন ঘিরে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে লে বানন আর সি রিয়া জুড়ে পেজার বি স্ফোরণ হয় একযোগে। যার মূলে ছিল পবিত্র ভূমির দাবিদার চক্র। যারা অপারেশনটির নাম দেয় ❛অপারেশন গ্রি ম বি পার❜। এখানেও হ ত্যা যজ্ঞ চলে মুসলিম দেশে। লেখক অধ্যভিত্তিক শিরোনাম দিয়ে শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফি লি স্তিন আর ভূমির দাবিদার ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইতিহাস এসেছে একেবারে শুরু থেকে। ইতিহাসে গা যা কেন গুরুত্বপুর্ণ, গা যা আগে কী নামে পরিচিত ছিল সেসব ইতিহাস এনেছেন। এসেছে ইতিহাসের গ্রন্থে প্যা লেস্টা ইন দেশের উল্লেখের নথি। মিশর, গ্রিক ইতিহাসের বইতেও এসেছিল উল্লেখিত দেশটির নাম। কেনান ভূমি থেকে আজকের গা যা, রাফা কিংবা পশ্চিম তীরের ইতিহাস লেখক ধাপে ধাপে এনেছেন।
লেখকের আগের বই পড়া থাকায় এই ইতিহাসের ক্রম বুঝতে অসুবিধা হয়নি। লেখক উল্লেখ করেছেন যেহেতু এখানে পুরো লেখাই গা যা তথা ফি লি স্তিন কেন্দ্রিক তাই তথ্যের রিপিটেশন এসেছে। যারা শুরুতেই এই বইটি পড়বেন তাদের অবশ্য পুনরাবৃত্তি হবে না। বিধায় বইটি প্রথম পাঠ হিসেবে উপযুক্ত।
হাজার হাজার বছরের ইতিহাস পেরিয়ে গা যায় ভূমির দাবিদারদের আগ্রাসন, বিশ্ববাসীর নীরবতা, আরব দেশগুলোর গা ছাড়া ভাব, কারো একটু চেষ্টা এবং প্রাণ দেয়ার বিস্বাদ ইতিহাসে ভরপুর বইটি। জা য়ো নি জম কী করে এলো তার ইতিহাস আমার জানা ছিল না। মূল তথা প্রচলিত ইতিহাস জানলেও এর উদ্ভাবকের ইতিহাস এবং একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের এই নার কীয়তা সে ব্যাপারে পূর্ণ ধারনা পেয়েছি বইটা পড়ে।
উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের শুরু থেকে একবিংশ শতাব্দীতেও ফি লি স্তি ন আর দাবিদার ইস্যু বিশ্ববাসীর জন্য অনন্য বিষয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লেখক বইতে বিস্তারিত ভাবে এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। কেন ফি লি স্তিন কেই বেছে নেয়া হলো সে বিষয়ে আগেও জানা ছিল এখানে আরও ব্যাখ্যা সহ জানা গেছে। এসেছে হি ব্রু বাইবেল, কুরআনের ব্যাখ্যা। আবার এসেছে ব্যাখ্যাকে ঘুরিয়ে নিজের মতো করার ব্যাখ্যা।
বিশাল ইতিহাস যদি টুকরো টুকরো করে জানানো হয় তবে সেটা বুঝতে সুবিধা। সে উদ্দেশ্যেই লেখক ১৯০১ থেকে প্রতি দশ বা বিশ বছরকে একত্র করে ১২ ভাগে প্রায় ১২৩ বছরের ইতিহাস ব্যাখ্যা করেছেন।
এরপর এসেছে ২০২৩ থেকে ২০২৫ এই ১৫ মাসের ঘটনা। একদম নিকট অতীতের কথা সেজন্য এই বিষয়ে বেশ ধারনা ছিল এবং ঐ সময় থেকে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আলাদা ভাবেই খবর রাখত��ম। বিধায় বুঝতে সুবিধা হয়েছে। সাথে ছবির ব্যবহার ছিল বলে পড়ার সাথে সাথেই ঘটনাগুলোর চিত্র দ্বিতীয়বারের মতো দেখে নেয়া গেছে। লেখক ও এক কিছু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন আবার কিছু জায়গায় অল্প তথ্য দিয়ে রেফারেন্স দিয়েছেন।
পুরো বইটা পড়তে আমার সময় লাগেনি বেশি। সেটা লেখকের গুন নাকি এই বিষয় নিয়ে জানার অদম্য কৌতূহল থেকেই কখন যে শেষে এসে গেছি বুঝিনি।
স্বাভাবিকভাবেই পড়তে গিয়ে আমি আবেগগ্রস্ত হয়েছি, দাবিদারদের অদ্ভুত দাবি আর ব্যাখ্যা এবং নিজেদের ভালোর ডিব্বা বানানোর প্রয়াস দেখে অজান্তেই রেগে গেছি।
লেখক শ��ষের অধ্যায়গুলোতে স্বাধীন এক ফি লি স্তি নের স্বপ্নের যাত্রা কতদূর আর এই দূরত্ব যেতে কত প্রাণনাশ হবে সে কথাও ব্যক্ত করেছেন। এসেছে ধর্ম গ্রন্থের উদৃতি। অনেকগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দারুণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এসেছে দেশটির পতাকার ইতিহাস। পতাকার ব্যাখ্যা এবং একে ঘিরে থাকা আবেগ।
তবে সবাই কি এই আগ্রাসনের পক্ষে? বিশেষ করে মোড়ল দেশগুলো?
সে নিয়ে আছে দ্বন্দ্ব। দেখা যায় খোদ দাবিদার পক্ষের অনেক লোক এক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। নিজ সরকারের এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তারা, করছে আন্দোলনও। তবে সেটা এই ম্যা সাকারের ভয়াবহতার কাছে কতটা শক্তিশালী বড় প্রশ্নের বিষয়!
শেষের অধ্যায়ের পুরোটাই আমার কাছে রিপিটেড লেগেছে। সেম ইতিহাস আগের বইতেও পড়েছি। এখানে নতুন হিসেবে আপডেটেড তথ্য ছিল এইটুকুই।
একজন মুসলিম হিসেবে আমিও আশা করি বিধ্বস্ত গা যা একদিন স্বাধীন হবে। ততদিনে কি এসে যাবে মাসীহ? শুরু হয়ে যাবে Armageddon? শেষ জমানা তো আমরাই। তবে একদম শেষ কোথায় কিংবা কবে?
রিভিউ ধারনা থেকেও বড় হয়ে গেছে। কেউ পড়বে না তাও জানি। তবে এমন ইতিহাসের কোনটা থেকে কোনটা বাদ দিবো ভেবে পাইনি। যদিও অনেক কিছুই আলোচনা করিনি। শুধু অপেক্ষা করে যাই হয়তো একদিন ফুরোবে আ গুনের দিন। সেদিন হয়তো বাস্তবায়ন হবে স্বাধীন ফি লিস্তি ন। আল আকসা কম্পাউন্ডে হয়তো আর র ক্ত ঝরবে না। মাংসের দলা থেকে কেজি মেপে সন্তানের ম র দেহ অনুমান করে নিতে হবে না।
প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন:
Now we'll have a long (!!) talk about the quality!
প্রচ্ছদ অসাধারণ হয়েছে একদম মানানসই এটা নিয়ে কোনো কথা নেই।
তবে বইয়ের বাঁধাইয়ের মান নিয়ে কিছু না বলেই নয়। দুইদিন আগেই আমি একই লেখকের একই প্রকাশনী থেকে ২০২২ সালে আশা একটা বই পড়ে বইটির মানের বিশেষ করে প্রোডাকশনের দারুণ প্রশংসা করেছি। ২৭০ পৃষ্ঠার বইটির দাম ৬০০ ছিল কিন্তু সেটা একেবারেই ন্যায্য ছিল। এই বইটির প্রতিও আমি একই আশা রেখেছিলাম। কিন্তু আশায় বুলডোজার! বইটিতে অনেক ছবি সংবলিত আছে। ১২ পৃষ্ঠা ক্যালেন্ডারের পাতার মতো পৃষ্ঠায় (এই পাতার নাম ভুলে গেছি) কালারফুল ভাবে দেয়া ছিল। এটাই বইটির ভালো দিক। এছাড়া বইটির বাঁধাই অতিরিক্ত শক্ত। খুলে পড়তে রীতিমতো যু দ্ধ করতে হচ্ছিল। টান দিতে গিয়ে ভাবছিলাম বই না ছিঁড়ে যায়। এই বইটি ২৬৪ পৃষ্ঠার,গায়ের মূল্য ৫৪৭ টাকা। বর্তমানে পৃষ্ঠার দাম বাড়তি বিধায় খরচ বেড়ে যাবে বলে পুরোটা রঙিন করা হয়নি মানলাম। তাই বলে বাঁধাইয়ের ব্যাপারে একটু যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল। কেমন ফোলা ফোলা একটা ভাব রয়ে গেছে বইতে। মানে পুরো বন্ধ করা যায় না। যদিও আমি আশা করেছিলাম আগের বইটির মতো এটিও পুরোটাই রঙিন হবে। রঙিন না হলেও বাকি ব্যাপারগুলো চাইলে নজর দেয়াই যেত। এই ধরনের ইতিহাস ভিত্তিক বইগুলো একটু উন্নত প্রোডাকশন দিলে পাঠক হিসেবে সংগ্রহে রাখতে শান্তি লাগে।
❛ইতিহাস, মিথ আর ভবিষ্যতের সম্ভাব্যতা নিয়ে সেমেটিক ধর্মের এই ভূখন্ড ভুগে আসছে। ভুগে আসছে নির্যাতিত মুসলিমরা। শেষ জমানার শেষের অপেক্ষায় আছে জাতি। শান্তি মিলবে কি? লা শের স্তূপ থেকে আশার সঞ্চার হতে কতদিন কেউ জানে না। ততদিনে কে আত্মপ্রকাশ করবে? মাসীহ, ভন্ড মাসীহ এতকিছুর মধ্যে ফি লিস্তি ন বাসীর শান্তি কই? গা যার গর্জন একদিন স্বাধীনতার সুরে পরিণত হোক, ইনশাআল্লাহ।❜
কিছু বই শুধু তথ্য দেয় না, আবেগের গভীরে স্পর্শ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের "গা/যার গর্জন" তেমনই একটি গ্রন্থ। বইটির প্রথম পাতাতেই এক অদ্ভুত ভারাক্রান্তি অনুভব করেছি—যেন ইতিহাসের নির্মমতা হাত বাড়িয়ে আমাকেও টান দিয়েছে।
গা/যার বেদনাঃ প্রথম অধ্যায়েই ধাক্কা লেখক গা/যার ধ্বংসস্তূপ, শরণার্থী শিবিরে ক্ষুধার্ত শিশুদের চোখ, গণকবরের নীরব সাক্ষ্য দিয়ে বই শুরু করেছেন। এই চিত্রগুলো শুধু কল্পনা নয়, বাস্তবের করুণ প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি লাইনে যেন রক্তের গন্ধ মিশে আছে। ফি/লি/স্তিনের ওপর দখলদারদের নৃশংসতাকে "গণহত্যা" বলাই যথেষ্ট—এ প্রশ্নই বারবার উঠেছে মনে।
ইতিহাসের স্তরেঃ গবেষণার গভীরতা লেখক সেমেটিক ধর্মত্রয়—ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামের ইতিহাস-দর্শন নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন। তার আগের বইগুলোতেও এই বিষয়ে পাণ্ডিত্য দেখা গেছে। এখানে গা/যার ইতিহাসকে তিনি কয়েকটি পর্বে ভাগ করেছেন—প্রাচীন কানান, ফিলিস্তিনের উল্লেখ মিশরীয় ও গ্রিক নথিতে, উসমানীয় শাসন থেকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেট, ১৯৪৮-এর নাকবা, এবং বর্তমানের ধ্বংসযজ্ঞ। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ২০২৪-এর "অপারেশন গ্রিম বিপার"—যেখানে লেবানন ও সিরিয়ায় একসাথে হামলা চালানো হয়।
ক্রনোলজিক্যাল অ্যাপ্রোচঃ ১৯০১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ১২৩ বছরের ঘটনাকে ১২টি ভাগে সাজানো। ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্সঃ তাওরাত, বাইবেল ও কুরআনের ব্যাখ্যার পাশাপাশি দখলদারদের বিকৃত ব্যাখ্যাও উন্মোচন করেছেন।
চিত্র ও রেফারেন্সঃ বইয়ে কিছু ঐতিহাসিক ছবি ও ম্যাপ যুক্ত করা হয়েছে, যা বোঝার সুবিধা বাড়িয়েছে।
আবেগ ও যুক্তির সমন্বয়ঃ বইটি পড়ার সময় রাগ, হতাশা, অনুকম্পা—সবই উপলব্ধি করেছি। দখলদারদের "নিরাপত্তার অজুহাত" বা "ঐশ্বরিক দাবি"র অসারতা ফাঁস করতে লেখক কখনও যুক্তির খণ্ডন তুলে ধরেছেন, কখনও ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। শেষ অধ্যায়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু সেখানে কিছু পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করেছি ।
কিছু প্রশ্ন যা রয়ে গেলঃ
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা কি কখনও ভাঙবে? ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা কি এই নিপীড়ন থামাতে পারবে? শেষ যুগের নিদর্শন হিসেবে এই সংঘাত কী মাসিহের আগমনের ইঙ্গিত?
এক কথায়, গাযার গর্জন শুধু একটি বই নয়—একটি ইতিহাস, একটি প্রতিবাদ, একটি প্রার্থনা। যারা ফিলিস্তিন ইস্যুকে গভীরভাবে বুঝতে চান, তাদের জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য। যদিও শেষের দিকের কিছু অংশে পুনরাবৃত্তি আছে, তবুও বইটির গবেষণা ও লেখনীশৈলী প্রশংসার দাবিদার।
বইটি বন্ধ করার পরও গাযার চিৎকার কানে বাজছে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্ন কি সত্যি হবে? নাকি অন্তিম যুদ্ধ-এর আগেই শেষ হবে আমাদের সময়? প্রশ্নগুলো আজও অনুক্ত...
আব্দুল্লাহ ইবনে’র বইগুলো পড়তে আমার বেশ ভালো লাগে। তবে সাম্প্রতিক বইগুলো কেন যেন মনে হয় খুব তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হয়েছে। ফলে পড়ার পরও এক ধরনের অপূর্ণ তৃষ্ণা থেকে যায়।
গাযা গর্জন বইটির শুরুটা যেমন উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, পরের অংশে শুধু একটার পর একটা ঘটনা বলা হয়েছে। ঘটনাগুলোর প্রবাহ একসাথে সম্পর্কিত করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। যেমন—ইসরাইলের এক অলিম্পিক দলকে অপহরণ করার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু কীভাবে করল, কোথায় করল, কোথায় আটকে রাখল—এসব বিষয় স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি। বইয়ের বাকি অংশগুলো পড়তে গি��়ে মনে হচ্ছিল যেন ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে পড়ছি।
শেষের দিকে বাইতুল মুকাদ্দাস নিয়ে একটি পরিশিষ্ট ছিল। সেখানে কিছু জায়গায় আমি পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কোনটা মসজিদুল আকসা সেটা বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল, যদিও তিনি সেই পরিচ্ছেদে একাধিকবার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আশা করি, সামনে তিনি বিষয়গুলো আরও নিজের মতো করে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরবেন।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়—তার বেশিরভাগ বইয়ের প্রোডাকশন মান খুবই দুর্বল। ছবিগুলোর অবস্থান (placement) ঠিক নেই, অনেক ছবির মানও খারাপ, বইয়ের ফরম্যাটিংও সঠিক নয়। বাইতুল মুকাদ্দাসের যে ছবি দেয়া হয়েছে, সেটি আরও বড় করে, আরও আকর্ষণীয়ভাবে দেয়া যেত। ছবিগুলো দেখে কোনো আরাম পাওয়া যায় না। অথচ বইয়ের দাম অনেক বেশি। এত টাকা নিয়ে এই ধরনের প্রোডাকশন মান একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পুথি, বেঙ্গলস বুক বা সতীর্থ প্রকাশনার বইয়ের প্রোডাকশন ও ফরম্যাটিং দেখলে মন ভরে যায়। কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের প্রকাশিত বইগুলোতে সেই মান পাওয়া যায় না।