১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় প্রায় অবিচ্ছিন্ন ভাবে এই জার্নালটি লিখেছিলেন, সুনন্দ ছদ্মনামে। সুনন্দর জার্নালে এই সময়ের অন্তর্বর্তী বাংলা ও বাঙ্গালির এক সুন্দর ছবি ধরা পড়েছে। বাঙ্গালির সুখ-দুঃখ আনন্দ বেদনা, তার সংস্কৃতিপ্রিয়তা এবং কর্মবিমুখতা, বাহাদুরি নেবার সস্তা মানসিকতা, শিক্ষার অব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর সঙ্গে বাঙ্গালির সংযোগ ও তার জীবনের ওঠা-পড়া, তার আশা হতাশা নৈরাশ্য, দেশী বিদেশী লেখকের শতবার্ষিকী, খ্যাতনামা লেখক ও বিখ্যাত মানুষদের তিরোধানে জাতির বেদনা এবং সুনন্দরও মর্মবেদনা সমস্তই ধরা আছে এই জার্নালে। জার্নালে যেসব লেখা একান্তই সাময়িক সেইগুলি মাত্র বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত লেখা কালানুক্রমিক ভাবে এই গ্রন্থে ধরে দেওয়া হয়েছে। এই গ্রন্থ একাধারে এই সময়ের বাঙ্গালির জীবন-ইতিহাস, এবং সমাজের দর্পণ।
Noted litterateur and renowned professor/academician, Narayan Gangopadhyay (Bengali: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়) (real name: Taraknath) was born in Baliadanga in Dinajpur, East Bengal, on February 7, 1919. His ancestral home was in Basudebpur, Barishal. In 1941, he stood first class first in M.A. in Bengali from Calcutta University and later went on to earn his D.Phil for his research in the field of short stories in Bengali literature. He taught at the City College and later at the Calcutta University.
His first brush with writing came during his student years, when he tried his hand at poetry. Later he made his mark as a writer of short stories, novels and plays and also emerged as a critic and journalist. In the early 1940s he wrote a three-part novel called Upanibesh. He also regularly contributed to Shonibarer Chithi and was felicitated by Basumati the famous literary magazine. In his later years, he wrote biting satire on the prevalent social and political issues for Desh under the pseudonym Sunando. Among his famous works are Bitangsho, Surjasarathi, Timirtirtha, Alor Sarani, Ek-tala, Rammohan (play), Chhotogalpo Bichitra, Padasanchar, Samrat O Sreshthi, Ankush, Sahityo O Sahityik, Bangla Galpobichitra, Chhotogalper Seemarekha and Rabindranath. Two of his plays, Bhadate Chai and Agantuk, which were enacted by writers, were highly acclaimed.
Narayan Gangopadhyay is also the creator of Tenida and his adventures—which remain till date most popular among children's literature.
পাঁচ তারা যে দাগাচ্ছি, কারণ আর জন্মে আমি সুনন্দ ছিলাম। এই জন্মে খালি লেখালেখির ক্ষমতা আর বুদ্ধি খানিকটা লোপ পেয়েছে আরকি। তাছাড়া আমিও সুনন্দের মত বই ভালোবাসি, সুযোগ পেলেই লিটল প্রিন্স, রবি ঠাকুর বা প্রিয় লেখক চরিত্রদের লেজ ধরে টানাটানি করি; স্মৃতি কাতরতায় ভুগে-টুগে বর্তমানের চেয়ে অতীতেই বেশি বাস করি; দেশকে ভালোবাসি, লোকের হঠকারিতায়, বিবেকহীনতায়, নিষ্ঠুরতায় বা সংবেদনশীলতার অভাবে হতাশ হয়ে পড়ি; নিজেকে ভোলাতে কিছু আশার জাল বুনি,আবারও নিজের বোকামিতে নিজেকে গালি দিই; নিজের মধ্যকার দ্বৈতসত্তার টানাপড়েনে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না; প্রিয় লেখক-কবি-শিল্পীর মৃত্যুতে মুষড়ে পড়ি। এইভাবে একদিন একদিন করে বাঁচতে বাঁচতে, অর্জনে-বর্জনে, হারাতে হারাতে একদিন আমার এই জন্মের ইতি হবে এবং সুনন্দ অন্য কেউ হয়ে বা অনেক কেউ হয়ে জন্ম নেবে।
ধন্যবাদ সুনন্দ, চিন্তার যে জায়গাটায় হয়তো আমি খানিকটা নিঃসঙ্গই বলতে পারেন, সে জায়গায় বছর দুই সাথে ছিলেন। অর্থাৎ একটি দুটি করে জার্নাল পড়তে পড়তে দুই বছর দুই মাস লাগিয়ে দিলাম। বই শেষ হওয়াতে এখন হাহাকার লাগছে।
সেই কবে, করোনায় ঘরে বন্দি হয়ে থাকাকালে টেনিদা পড়েছিলাম৷ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে সেই আমার পরিচয়। এবার আরও কতগুলো বছর কেটে যেতে যেতে সুনন্দর জার্নাল- আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল নারায়ণ পাঠে। সবগুলো লেখাই যে উপভোগ করেছি তা বলা যাবে না কিন্তু ভাল লাগার সংখ্যাই বেশি।
সুনন্দর জার্নালের কিছু লেখা আগেই পড়েছিলাম বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একটা বইয়ে। বইয়ের নামটা সম্ভবত ছিল "নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।। সেরা সম্য রচনা"
কিশোর বয়সে বেশ লেগেছিলো খানিকটা স্যাটায়ার, খানিকটা রসবোধ, খানিকটা যুক্তির মিশেলে লেখা প্রবন্ধগুলো। কোথাও সূক্ষ্ম, কোথায় স্থুল ভাষায় মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র, সমাজ-রাষ্ট্রযন্ত্রের সমালোচনার পাশাপাশি প্রশ্ন তোলা। এই বইটা আমার 'কু-তার্কিক' হওয়ার বাইবেল😛 আমার যুক্তিবাদী সত্ত্বাটার জন্ম হয়েছে এই বই পড়ে।
কিশোর বই বলেই হয়তো বইটায় খুব বেশি লেখা ছিল না। প্রবন্ধগুলো কমনম্যান সুনন্দ নামেই লিখতেন লেখক, জানতাম। কিন্তু সুনন্দর জার্নাল নামে আস্ত একটা বই আছে তা জানতাম না!
অ্যাগেইন নারায়ণ এন্ড হিজ জার্নাল, সিন্স টু থাউজ্যান্ড ফরটিন; 😛😛 আরেকবার পড়ে আবারও খুব ভালো লাগলো।
জার্নালের লেখাগুলো কেন ভালো লেগেছিলো সেগুলোর হালকা আলাপ উপরের এক প্যারায় লিখেছি। আরেকটু এড করি, বিভিন্ন প্রবন্ধে বা ঐতিহাসিক সাহিত্যিক ব্যক্তিবর্গ লেখার সময়ে তিনি যেভাবে বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখার রেফারেন্স দিয়েছেন; তাতে করে বেশ ভালোই বোঝা যায়, মানুষটির পড়াশোনার দৌড় অনেক অনেক লম্বা। অ্যান এন্ডলেস ম্যারাথন....
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প আমার ভীষণ পছন্দের। তারপর টেনিদার ফিকশন। হয়তো তার জন্যেই কলেজ লাইব্রেরিতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'সুনন্দর জার্নাল' দেখে, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়কে নতুন করে আবিষ্কারের নেশা বইটা হাতে তুলে নিয়েছিলা। আরেকটা কারণও বোধকরি ছিলো, তা হলো এর আগে বইটা তেমন কাউকে পড়তে না দেখায়, বেশ আনকমন বই হিসেবেও বইটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম। সে যাকগে, মোদ্দা কথা হলো ভীষণ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে 'সুনন্দর জার্নাল' পড়া হয়ে গিয়েছিলো। সুনন্দ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সুনন্দ ছদ্মনামের নামে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় যে সব জার্নাল লিখেছেন, তারই সংকলন এই 'সুনন্দর জার্নাল'। প্রায় পাঁচশত পৃষ্ঠার বইতে তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন। তার মধ্যে কিছু কিছু জার্নাল ভীষণ ভালো লেগেছে। কিছু কিছু মোটামুটি আর বাকিগুলোকে কিছুই মনে হয় নাই। সেই বাইশ সালে এক আশ্চর্য ভাবেই পড়েছিলাম 'সুনন্দর জার্নাল'। জানি না এই মূহুর্তে পড়লে কেমন লাগবে। তবে পুনঃপাঠের ইচ্ছে তো রয়েই গেলো।
সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক পত্রিকায় প্রকাশিত অনেক রচনাই বই-আকারে প্রকাশিত হবার সময় তাদের ধার এবং ভার হারিয়ে ফেলে| এর কারণ হল: পত্রিকায় প্রকাশের সময় তাদের মধ্যে যদি সমসাময়িক ঘটনার প্রতি অনুরাগ না থাকে, তবে পাঠকের উত্সাহ হয় না| আবার, সেই সমসাময়িকতাই কিন্তু লেখাটিকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়, যখন ঘড়ির কাঁটা আর ক্যালেন্ডারের চক্রান্তে আজকের মরণ-বাঁচন বিষয় কালকেই বাসি হয়ে যায়| এই সব সামলে, বাঙালির বিদ্বুদ্বেগে পরিবর্তনশীল মেজাজ-মর্জির তোয়াক্কা না করে, এই বইয়ের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে বেরোনো লেখাগুলো এখনো আমরা পড়ছি: সম্ভবত এটাই এই বইয়ের সবথেকে বড় বিজ্ঞাপন| প্রশ্ন জাগে, কী বৈশিষ্ট্যের জোরে এই লেখাগুলো এখনো সজীব রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আপনাকে বইটা পড়তে হবে| লেখক (বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অধ্যাপক, "টেনিদা"-র স্রষ্টা) তাঁর এই মননশীল, রসবোধ-সম্পন্ন অথচ ক্ষেত্রবিশেষে অত্যন্ত গভীর লেখাগুলোর মাধ্যমে পত্রিকায় বাঙালির মনের ভুবনকে যে অনায়াসে কতোটা বিস্তৃততর করে তুলেছিলেন, তার প্রমাণ পেতে গেলে এই জার্নাল আপনাকে পড়তেই হবে|
সুনন্দর জার্নাল পড়ছি কিছুদিন ধরে। নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়কে আমরা এখনকার পাঠকরা চিনি টেনিদা দিয়ে। টেনিদা অসাধারণ কাজ সে কথা বলা বাহুল্য। টেনিদার মত এত মনকাড়া প্লট আর মজার চরিত্র বাংলায় ক’টা আছে! কিন্তু নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের সিরিয়াস সাহিত্যের সাথে পরিচয় হলে চমকাতে হয়। তার সিরিয়াস কাজের মধ্যে সুনন্দর জার্নাল বেশ জনপ্রিয়। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় এই জার্নাল তিনি লিখে গেছেন। ১৯৭০ সাল অবদি।
সুনন্দ ছদ্মনামে লেখা এই জার্নাল পড়লে নানা বিচিত্র বিষয় জানা যায়। বিশেষত ওই সময়ে ভারতীয় বাঙালিদের মন মানসিকতা, সামাজিক সমস্যা, বিশ্ব রাজনীতি বা ঘটনা উপঘটনা নিয়ে তাদের ভাবনা শংকা ইত্যাদি। একদম টাইম ট্রাভেল যাকে বলে। শরদিন্দু যেসময় মারা গেলেন, তাকে নিয়ে একটা লেখাও তাতে আছে। ৭০ বছরে মারা গেলেন বলে নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় খুব আফসোস করলেন লেখায়, আর আমরা পাঠকরা তখন হয়তো আফসোস করছি যে ওই লেখার বছরই নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যাবেন। আর তারপরই থেমে যাবে এই অসাধারণ জার্নাল।
মূলত,নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ষাটের দশকে সুনন্দ ছদ্মনামে পত্রিকায় কলিকাতার সমকালীন বিষয়আশয় নিয়েই এ কলামসংকলন লিখেছিলেন দীর্ঘসময় ধরে। হাতেগোনা কয়েকটি প্রবন্ধ সাহিত্য নিয়ে।বেশিরভাগ ই তেল নেই,নুন কম, পটল বেশি ইত্যাদি নিয়ে।
যেহেতু আমি কলিকাতার নই আর ষাটের দশকের তো নই ই তার বইটা আমার হজম করতে বেশ কষ্ট হয়েছে।
১৯৬৩-৭০ পর্যন্ত সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ,সুনন্দ ছদ্মনামে সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা। তৎকালীন বাঙালীর আনন্দ সুখ দুঃখ আশা হতাশা এবং সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক মানসিকতার ছবি ধরা আছে স্বনামধন্য লেখকের সুচারু কলমে।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বোধহয় সবচেয়ে জনপ্রিয় তার 'টেনিদা' আর বড়দের ছোটগল্পগুলোর জন্যে। এই বইয়ে কিন্তু লেখক একদম অন্যরকম। কখনো জীবনযুদ্ধে জেরবার এক মধ্যবিত্ত শিক্ষক ...... কখনো বাউন্ডুলে মন বেকার যুবক......আবার কখনো বা এক অনুভূতিশীল সাধারণ নাগরিক মাত্র। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সংকলনের বেশিরভাগ রচনা আজও কি সমান প্রাসঙ্গিক ! একবার শুরু করলে, বেশ কিছুদিন এই বইটাই যে আপনার সঙ্গী হয়ে থাকবে দিনরাত .....তাতে কোনো সন্দেহ নেই.