ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা ........শাহানাকে পাওয়া গেল তিনতলার বারান্দায়। সেখানে একটা ইজি চেয়ারে আধশোয়া হয়ে বসে ছিল। আমাকে দেখেই সোজা হয়ে বসল। তার বসার ভঙ্গিটা ছিল অদ্ভুত। একটা ক্লান্তির ভঙ্গি। বাবু ভাই কি তাকে কিছু বলেছে ? বিশেষ কোনা কথা। যার জন্য একটি মেয়ের হৃদয় তৃষিত হয়ে থাকে। আমি খুব নরম স্বরে বললাম, বাবু ভাই কি তোমাকে কিছু বলেছে ? শাহানা জবাব না দিয়ে অন্যাদিকে তাকিয়ে রইল। বারান্দার আলো কম বলেই এতক্ষণ চোখে পড়েনি, এখন দেখলাম শাহানার গলা ভেজা। সে তার ভেজা গাল গোপন করার জন্যই অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। কারো গোপন কষ্টে উপস্থিত থাকতে নেই। আমি ঘুরে দাঁড়ালাম।..........
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
উপন্যাসের শেষটা হয়তবা অনেককে সন্তুষ্ট করবে না। রাত কেটে হঠাৎ করে দিনের আলোর আগমনের সমান্তরালেই এক রাতের এই গল্প শেষ হবে। নতুন দিনের নতুন গল্প বলার প্রয়োজনীয়তা লেখক বোধ করেননি। কিন্তু চাইলেই পাঠকের পক্ষে সম্ভব এই একরাতের কাহিনী থেকেও অনেক অন্তর্নিহিত ভাব অনুধাবন করা।।
তা যদি সম্ভব নাও হয়, তবু পাঠককে খুব বেশি হতাশ হতে হবে না। সুখপাঠ্য এই লেখা কিছুটা সময়ের জন্য পাঠককে ঠিকই কাহিনীর জালে ধরে রাখতে পারবে।
পুরো উপ্যনাসটি ঘিরে রয়েছে 'দাদা'র মৃত্যু নিয়ে। 'দাদা'র অবস্থা খুব একটা ভাল না। যেকোনো সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে। তাই, জলদি ডাক্তার ডাকা হচ্ছে। আর, এই ফাঁকেই লেখক প্রতিটি চরিত্রের বর্ননা দিয়েছেন। মানুষটার (দাদা) মুসিবত শুরু হয়েছিলো অনেক দিন আগে থেকেই। তিনি যখন ভাত খেতে বসতেন তখন তিনি নাকি দেখতে পেতেন একটা কালো রঙের বিড়াল থাবা দিয়ে তাঁর সঙ্গে ভাত খাচ্ছে।
টগর'র বিল্ডিং'এ আরেকটি পরিবার থাকে। রমিজ রাজা। কোনো ছেলে নেই। চারজন মেয়ে রয়েছে। তাদের সবার চেহারার ধরণ প্রায় একইরকম। এর মধ্যে নীলু-কে টগর'র বেশ ভালো লাগে। যদিও সে নীলু-কে প্রায়শই 'তুই' করে সম্বোধন করে।
তবে, 'দাদা'র এই অবস্থা দেখে টগরের বাসায় ফুপু (মগবাজারের) এলেন। তিনি সারাক্ষণই তার ছেলে (ফরিদ) - এর জন্যে মেয়ে খুজঁতে অস্থির। নীলু-কে তার নিজের ছেলের জন্যে পছন্দ হয়। এছাড়া, শাহানা নামের এক মেয়ে যে কিনা, দুই বিয়ে করে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যভাবে জামিল মুক্তিযুদ্ধ'র কালে বই আনতে টিকাটুলি-তে গিয়ে হুট্ করব হারিয়ে যায়। দ্বিতীয় ছেলেটি ছিল বইপড়ুয়া। কিন্তু, সে শাহানা-কে পচ্ছন্দ করতো না। এদিকে 'বাবু' আবার শাহানাকে পচ্ছন্দ করে। এইভাবেই উপ্যনাসের বিভিন্ন চরিত্র বর্ণনার মাধ্যমে উঠে এসেছে।
চমৎকার সম্ভাবনাময় একটি কাঠামোর ওপর দায়সারা মাটির প্রলেপ। ইহাই 'একা একা'-র প্রকৃত রিভিউ। হুমায়ূনের জাদু-কলমে আমরা পড়তে পাই একটি রাতের কাহিনী। যা পরিধিতে ছোট হলেও, অভিঘাতে আরও অনেক বেশি কার্যকরী হওয়া উচিত ছিল। কারণ, লেখাটির অন্তরে উদীয়মান মৃত্যুর রঙ।
একজন মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধের শেষ নিশ্বাসের অপেক্ষায় বসে থাকে তাঁর একান্নবর্তী পরিবার। ক্রমাগত খসে পড়ে কাগুজে মুখোশ। প্রকাশ পায়, প্রহর গোনার ওজোর। বেহিসেবী সব ক্ষ্যাপাটে চরিত্র। অন্ধকার তাদের ধরণ। বিশ্রী তাদের হাবভাব। হাসি পায় মাঝেমধ্যেই। হুমায়ূন আহমেদ বলে কথা। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমা। কঠিন আবহে, হিউমারের ছোঁওয়া থাকবে না, তা হয় না। তবুও, এই কালো কমেডির জঙ্গলে, উপলব্ধির ঘড়া সামান্য বেশীই শূন্য থেকে যায়। এখানেই পাঠক হিসেবে, আমার আক্ষেপ।
কতকটা চেনা গন্ডিতে বসে, (উদ্ভট) অচেনা শোকযাপন পড়তে গিয়ে, আলাদা করে পেলাম না কিছুই।
উপরন্তু, লেখক নিজেই কিছুটা বিভ্রান্ত যেন। একখানা ম্যাচিউর মনস্তাত্ত্বিক কাহিনী লিখতে বসে, দুর্বল হয়েছেন অহরহ। 'স্লাইস অফ ডেথ' প্রমিজ করে, এগিয়ে দিয়েছেন চিরাচরিত 'স্লাইস অফ লাইফ'-এর বাটি। আবেগী হয়েছেন বোঝা যায়। একটা ভালো, আলোকিত, এন্ডিংয়ের কাছে পৌঁছেই তাই কলম নামিয়ে রেখেছেন হাসি মুখে। আশ্চর্য দৃঢ় এই ফাইনালিটি। ঠিক যেন ঈশ্বরের নিদান। এর ওপর, আমার-আপনার আলাদা করে কিছু বলার থাকে না।
পড়ার সময় কেন যেনো মনে হচ্ছিলো এই লেখাটায় জহির রায়হান এর কয়েকটি মৃত্যু বইটার ছায়া আছে। বার বার মনে হচ্ছিলো গল্পের প্লটটা কয়েকটি মৃত্যু থেকে নেওয়া। যাই হোক, কয়েকটি মৃত্যু খুব ধারালো লেগেছে আমার কাছে। প্রতিটা পৃষ্ঠা যেনো হাতুড়ি দিয়া বিবেক কে আঘাত করতেছিলো, ধনী মানুষের মৃত্যুর অসুন্দর দিকগুলো জহির রায়হান ফুটিয়ে তুলেছেন ধারালো শব্দ দিয়ে। একা একা গল্পের প্লট টাও একই রকম। একজন মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। এই গল্পের সবচেয়ে সুন্দর দিক ছিলো একেকটা চরিত্রকে সুন্দর এবং আলাদা করে খুব অল্প ভাষায় ফুটিয়ে তোলা। এটা সবাই পারে না, হুমায়ূন আহমেদ বলেই পেরেছেন। আর গল্পের ধাচ টা তার নিজের মতোই রেখেছেন। একজন মানুষ যখন তার সারাজীবনের মানব ফসল(সন্তান, নাতি, নাতিন) কে সামনে নিয়ে মরতে পারে সেটি হয়তো তার কাছে সবচেয়ে সুন্দর মৃত্যু হতে পারে। অবার অবস্থাভেদে এই মৃত্যুটাও একটা অসুন্দর মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। মৃত্যু সুন্দর বা অসুন্দর যাই হোক, মরতে তো হয় একাই। তবুও যারা বেচে থাকে, তারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে নিতে মৃত্যুকে ভুলে যায় কতো সহজে।
এক রাতের ঘটনা, অনিবার্য মৃত্যু এবং জীবনের রুঢ় বাস্তবতার পোস্টমর্টেম করা হয়েছে এই ছোট্ট উপন্যাসে। পড়তে পড়তে মনে হয়, খুব সহজে বলা এই গল্পটা অতোটা সহজ নয়।
“পৃথিবীতে এত অক্সিজেন, কিন্তু তার বৃদ্ধ ফুসফুসটাকে তিনি আর ভরাতে পারছেন না।”
একজন বৃদ্ধ মানুষের মৃত্যুর আগের কিছু মুহুর্তের বর্ননা দেওয়া হয়ে এই বইতে। আহামরি কোন গল্প না হলেও সুখপাঠ্য। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে একেকটা চরিত্রের আবেগ-অনুভূতি এত সূক্ষ্ম ভাবে তুলে ধরার বিষয়টা। আপনাদের কি এরকম কখনও হয়েছে যে কোন আত্মীয় মারা গিয়েছে এবং সে বাড়িতে গিয়ে আপনি ছোট ছোট অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করছেন এবং মৃত মানুষটির জন্য যতটা ব্যথিত হওয়া উচিত ততটা হতে পারছেন না। এবং এসব ভেবে নিজেই লজ্জা পাচ্ছেন। আমার কিন্তু এরকমটা প্রায় হয়। গল্পের সাথে এই বিষটির খানিকটা মিল আছে, সেজন্যই বললাম। “একজন মানুষ শ্বাস নেওয���ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে, আর আমরা এত সহজে নি:শ্বাস নিচ্ছি। আমার দাঁড়িয়ে থাকতে লজ্জাই লাগলো।
কেন পড়লাম জানি না। খুবই ছোট একটা উপন্যাস - দাদাসাহেবের মৃত্যুর দিন রাত্রিতে পরিবারের সবাই এক ছাদের নিজে জড়ো হয় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে যা যা কাহিনি হবার হয়। হুমায়ূন আহমেদের সব উপন্যাসে তো ঘুরেফিরে একই চরিত্র থাকে। অপদার্থ কপট বড় চাচা, মহাবলদ বড় চাচি, কূটনা বড় ফুপু, শক্ত চরিত্রের অধিকারী বাবা, বাবার স্ত্রী মূল চরিত্রের মরহুমা মা যিনি বেঁচে থাকতে ছিলেন দাদার নয়নের মনি, দুর্বলপ্রকৃতির দূর্নীতিবাজ ছোট চাচা, মহাসুন্দরী আড্ডাবাজ ছোটচাচি, বিশাল বড়লোক চরিত্রহীন দুই ফুপা, বড় চাচার হিমুটাইপ ছেলে বাবু ভাই, মরা মেজো ফুপুর ঘরপোড়া দু:খিনী মেয়ে শাহানা এবং অবশ্যই অসম্ভব সুন্দরী প্রতিবেশী-কন্যা নীলু যে সদ্য এমএ পাশ বেকার মূল চরিত্রের প্রেমে শুধুশুধুই হাবুডুবু খায় - do I even need to describe the story at this point? You know everything that happened. Of course Babu bhai was in love with Shahana and had forced himself on her at some point. Of course there was a kechal with sompotti started by the Fupus.
Of course the ending was abrupt and oddly dissatisfying.
Well, I know why I did this. I did it for the nostalgia. Can you blame me?
হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর বই লিখেছেন। অধিকাংশেরই তেমন সাজানো গোছানো সুনির্দিষ্ট কোনো কাহিনী নেই। তারপরও একটানে পড়ে ফেলা যায়, কোনোটা বিনা কারণে ভাল লেগে যায় আবার কোনোটা বিনা কারণেই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় :S
এই বইটার তেমন কোনো কাহিনী নেই। একজন বয়স্ক লোক মারা যাচ্ছেন। সেই রাতেরই বর্ণনা। যদিও একটা সূক্ষ্ণ বিষয় দেখা যায়! এই যে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই তেমন ভাবে। একসময় যে লোকটা আয় করে পরিবারের উন্নতি সাধন করেছেন এখন তিনিই অনেকটা বোঝা স্বরূপ। তার সাথে কথা বলা যায় না, সমস্তই বাজে বকেন এখন; একা একা!
টগরের দাদা খুব অসুস্থ। তার শারীরিক অসুস্থতার খবর শোনে মেয়েরা চলে আসেন তাকে দেখতে। আর ছেলেরা তো ছিলই। তবে টগরের বড় চাচা ( বাবু ভাইয়ের বাবা ) বেশ হম্বিতম্বি করছেন। এটাই তিনি ভাল পারেন। এ পরিবারে এছাড়া তার কোনো অবদান নেই। পরিবারের মেজো ছেলে অর্থাৎ টগরের বাবা গুরু গম্ভীর প্রকৃতির লোক, তাকে সবাই বেশ সমীহ করেন বলে মনে হল। আর ছোট চাচার তেমন খবরাখবর পাওয়া গেল না। তবে এই দুর্দিনে ছোট চাচী বাড়ি নেই। তিনি আছেন চট্টগ্রামে তার ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখাদেখি হচ্ছে। এমন অবস্থা জানলে হয়তো যেতেন না। আর উনার এই বোকামির জন্য এ বাড়ির মেয়েরা এসে অসন্তোষ প্রকাশ করার সুযোগও পেতো না। ছোট চাচীর সন্তান নেই। যাইহোক, এ বাড়িতে শাহানা নামের এক দুর্ভাগা মেয়ে থাকে। দু'বার বিয়ে হয়েছিল। ১ম স্বামী যুদ্ধের সময়কালে বই কিনতে বাইরে যায়, আর ফিরে আসে নি। ২য় স্বামীর তাকে খুব একটা পছন্দ হয় নি; তাই এখন যোগাযোগ তেমন নেই বললেই চলে। শাহানা টগরের ফুফাতো বোন। এ বাড়িতেই আছে মা মারা যাওয়ার পর থেকে। শাহানাই দাদার কাছের মানুষ।
তো এমন একটা দিনে বাবু ভাই মদ্য পান করায় এটা নিয়ে বেশ হইচই লেগে যায়। ছোট ফুপাই সবাইকে জানায় কথাটা। পুনশ্চঃ এই ফুপার বিরুদ্ধেই কিশোরী গৃহকর্মীকে রেইপের একটা খবর ছাপা হয়েছিল, যা অনেক টাকা-পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। আবার ওদিকে বড় ফুপু এসে তার বাবার জন্য একটু দুঃখ প্রকাশ করা শুরু করলেও শাড়ি পরা নীলুকে দেখে তাতে ক্ষান্ত দিতে হয়; এখন মূল বিষয় নিজের ছেলে ফরিদের জন্য নীলু পাত্রী হিসেবে ঠিক হবে কিনা তা খতিয়ে দেখা। পুনশ্চঃ নীলু রমিজ সাহেবের মেয়ে এবং টগরদের অনেক বছরের ভাড়াটিয়া। তবে আসলেই ভাড়াটিয়া কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। রমিজ সাহেব তার চার মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন অনেকদিন তবে ভাড়ার টাকা ঠিকঠাক দিতে পারেন না। টাকা পয়সার ঝামেলা থাকেই। আজ রাতে এদের বাড়িতে রান্না হয় নি। এ থেকে ওদের দৈন্য দশা সম্পর্কে অবগত হন ফুপু। তাই রেগে যান টগরের উপর, কেন সে জেনে শুনে এমন গরীব ঘরের মেয়েকে তার ফরিদের জন্য সাজেস্ট করছিল!!
এরমধ্যেই বাবু শাহানাকে বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করে টগরের কাছে। আবার ওদিকে নীলুকে তুই সম্বোধন করলেও নীলুকে কেমন পছন্দ হয় টগরের।
টাকা-পয়সার ভাগ বাটোয়ারা নিয়েও বেশ আলোচনা হয়ে যায়।
যাইহোক, অবশেষে দাদা মারা যান।
এইতো! মানুষ তো আসলেই একা। একা একা!
~১৬ এপ্রিল, ২০২১
This entire review has been hidden because of spoilers.
.....শাহানাকে পাওয়া গেল তিনতলার বারন্দায়। সেখানে একটা ইজি চেয়ারে আধশোয়া হয়ে বসে ছিলো। আমাকে দেখেই সোজা হয়ে বসলো।তার বসার ভঙ্গিটা ছিলো অদ্ভুত।একটা ক্লান্তিকর ভঙ্গি।
বাবু ভাই কি তাকে কিছু বলেছে। বিশেষ কোন কথা।যার জন্য একটি মেয়ের হৃদয় তৃষিত হয়ে থাকে।
আমি খুব নরম স্বরে বললাম,বাবু ভাই তোমাকে কিছু বলেছে?? শাহানা জবাব না দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।
বারন্দার আলো কম বলেই এতহ্মন চোখে পড়েনি, এখন দেখলাম শাহানার গাল ভেজা। সে তার ভেজা গাল গোপন করার জন্যই অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
কারো গোপন কষ্টে উপস্থিত থাকতে নেই। আমি ঘুরে দাঁড়ালাম।........
গল্পটা একটা রাত নিয়ে। প্রভাবশালী এবং পয়সাওয়ালা এক পরিবার। যার গোড়াপত্তন যে ব্যক্তিকে নিয়ে সেই আজ মৃত্যু শয্যায় শায়িত। সে অবস্থায় পরিবারের নানা লোকের আগমন হয়। কেউ আসে মায়ায় আর কেউ আসে ধান্ধায়। সেরকম পরিস্থিতিতেই সবার নিজের জীবনের ছোট বড় স্মৃতি নিয়ে গল্পটা গড়ে উঠেছে। টিপিকাল হুমায়ুন আহমেদের বই। এমন কিছু ইম্পরট্যান্ট বিষয় নাই এ বইটার মধ্যে। লেখক কখনই নিজে তার গল্পের ডীপে যান না। সো বইটা নিয়ে আমার এক্সপেকটেশন যা ছিল তাই পেলাম।
উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায় যৌথ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যটি একজন মৃত্যু পথযাত্রী। দীর্ঘদিন মানসিক অসুস্থতার সাথে দিনযাপন করে একদিন মাঝরাতে তার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। উপন্যাসে এমন একটা সময় দেখানো হয়েছে যখন একটি পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ একসাথে অপেক্ষা করছে মৃত্যুর জন্য। সবাই বুঝতে পারছে লোকটি রাত পার করতে পারবে না, যেকোনো মূহুর্তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। মৃত্যু ঘা��টি মেরে আছে আশেপাশেই। মাঝরাতে এমন সময়ে কেমন হওয়ার কথা বাড়ির মানুষগুলোর মানসিক অবস্থা?
কেউ ভীষণ স্বাভাবিক, কেউ অস্থিরতা কমাতে আবোলতাবোল বকে যাচ্ছে, কেউ আবার এরমধ্যেও নিজের চিরায়ত স্বার্থান্বেষী রূপ লুকোতে পারছে না, কেউ আবার সবকিছুর মধ্যে থেকেও নেই। ঔপন্যাসিক পুরো গল্পটা বর্ণনা করেছেন টগর নামক একটি চরিত্রের বয়ানে যে কিনা মৃত্যুপথযাত্রীর নাতি হয় সম্পর্কে। আর আছে ভাড়াটিয়া রমিজ সাহেব এবং তার চার মেয়ে। যার মধ্যে একটি মেয়ের নাম নীলু এবং মেয়েটি টগর ভাইয়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা বয়ে বেড়াচ্ছে যা টগর নামক লোকটি বুঝতে পারছেন না বা বুঝতে চাচ্ছেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা যাদের জন্য গভীর মমতা পুষে রাখি তারা ব্যাপারটা ভীষণ যত্নে পাশ কাটিয়ে যায়।
একজন অসুস্থ মানুষ, মৃত্যু শয্যায় রয়েছে! তাকে ঘিরেই সমগ্র উপন্যাসের উত্থান পতন। মানুষের জীবন কতটা বৈচিত্রের তা হুমায়ূন স্যার দারুণ ভাবে উল্লেখ করেছেন এ উপন্যাসের মাধ্যমে। মানুষ না চাইতেও সবসময় তাকে নিজের স্বার্থের পিছেই ছুটতে হয়। এ দুনিয়ায় কেউ কারো নয়। মৃত্যুশয্যায় বাবা, অথচ সন্তানদের মাঝে চিন্তা, তিনি কি রেখে যাচ্ছেন, তার মৃত্যুর পর কাকে কাকে জানাতে হবে না হলে তাদের বংশমর্যাদায় কালি লাগবে। মেয়েরা ব্যস্ত, আলমারিতে বাবা কত ভরি সোনা রেখে যাচ্ছেন তাদের জন্য। এছাড়াও ধনি দরিদ্রদের যে ব্যাবধান তাও লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন তার লেখনীতে। আমার কাছে উপন্যাসটা দারুণ লেগেছে।
তেমন ভাল লাগে নি । গল্পের কোন শুরু নেই, পরিণতিও নেই । মানুষের মৃত্যুর সময় তাঁর চারপাশের ঘটনা নিয়ে উপন্যাস হুমায়ুন আহমেদ আরও লিখেছেন । এই বই মনে কোন দাগ কাটতে পারল না । কোন চরিত্রের গভীরতা নেই, সময়ের কোন আগা মাথা নেই । তাঁর উপন্যাসের মত আকর্ষণ অবশ্যই আছে । এরপর কি হবে, এখন কি হবে ...... মনে হতেই থাকে, তবে শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না, যা অত্যন্ত হতাশ করেছে । "শেষ হইয়াও হইল না শেষ " সবসময় ভাল লাগে না ।
'' আমাদের গুষ্টিতে পীর ফকির কেউ নেই । দাদার বাবা ছিলেন চাষা । জমিজমা তেমন ছিলো না তাই শেষের দিকে পানের ব্যবসা শুরু করেন । সেতাবগঞ্জ থেকে পানের ঝাঁকা মাথায় করে এনে নীলগঞ্জ বাজারে বিক্রি করতেন । এতে তেমন কিছু ভালো মন্দ না হওয়ায় ডিমের কারবার করতে চেষ্টা করেন । চাষা সমাজ থেকে নির্বাসিত হন ডিম বেচার কারণে । তাঁর দুটি মেয়ের বিয়ে আটকে যায় । ডিম বেচা ব্যাপারীর সঙ্গে আর যাই করা যাক সম্বন্ধ করা যায় না। ''
আচ্ছা কখনো কি নিজেকে খুব একা একা লেগেছে? হ্যাঁ লেগেছে অনেকেরই। কিন্তু পরিবারের সবার মাঝে থেকেও একা থাকা, এমনকী কখনো হয়েছে? ভাবা যায় এমন একটি পরিবারের কথা? যেখানে সবাই আছে কিন্তু কেউ নেই। সবাই এক সাথে খাচ্ছে কিন্তু কেউ জানে না কার জন্য কার কতটুকু আবেগ। সেটা হবে অদ্ভুত এক পরিবার।
”একা একা” বইটির কথক টগর। সে তার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া একটি রাত্রির কথা বলে যাচ্ছে।
টগরের দাদা এই মধ্যে রাতে মৃত্যুর খুব সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়েছেন। তার বুক হাঁপড়ের মতো ওঠানামা করছে। যে কোনো সময় যমদূত জান নিয়ে চলে যাবে।
বড় চাচা, যার পরিবারে তেমন কোনো কাজ নেই। সে এই দুপুর রাতে একা কাজ পেয়ে হামকে তোমকে শুরু করে দিয়েছেন। একে ডাকো, তাকে ডাকো, ড্রাইভার গাড়ি বের করো…, এই হলো তার কাজ।
দাদাকে দেখতে মগবাজার থেকে বড় ফুপু চলে আসছেন, মিরপুর থেকে আসলো আরেকজন। বড় ফুপুতো কেঁদেকেটে চিল্লাচিল্লি করে বাড়ি মাথায় তুললেন। আবার একটু পরই দেখা যায় তার ছেলের বিয়ের জন্য পাত্রি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন।
ফুপারা শুরু করলেন কে কি পাবেন। এর মধ্যে পারিবারিক ডাক্তার আসলে, বলা ভালো কবিরাজ আসলেন। কারণ তিনি লতা পাতায় বিশ্বাসী। তবু এবার আসার সময় সাথে করে ডিগ্রিধারী এক ডাক্তার নিয়ে আসছে। তিনি আবার খুব বিরক্ত হয়ে বারবার হাতঘড়ি দেখছেন। কিন্তু কেন দেখছেন তাও বোধহয় তিনি জানেন না।
এই যখন অবস্থা, তখন অন্যদিকে টগরের চাচাতো ভাই বাবু একা ঘরে লাইট বন্ধ করে হতাশায় ভুগছে। সে এই বাড়ির অস্থায়ী মেয়ে শাহানাকে পছন্দ করে! কিন্তু কেন? না মানে বলছি যে, এই শাহানার আগে দুই বিয়ে হয়। প্রথমজন বিদেশ গিয়ে আর আসেননি। আর দ্বিতীয়জন ১৯৭১ সালে অস্থির সময়ে হারিয়ে যান। তাহলে এ প্রেমের মানে কী?
টগরদের বাড়ির একমাত্র ভাড়াটিয়া রমিজ রাজা। তিনি কখনোই ঠিক সময়ে বাড়া পরিশোধ করতে পারতেন না। তবু তাকে শহরের এখানে সেখানে বসে বিরিয়ানি বা কাবাব খেতে দেখা যায়। অথচ ঘরে তার চার মেয়ে অভুক্ত। চার মেয়ে নীলু কখন যেনো হঠাৎ করেই বড় হয়ে যায়। টগরের তা নজরে আসে না। তাকে সেই ছোট থেকেই তুই করে বলে আসছে, সেটা এখনো অব্যহত রয়েছে। সেটা নিয়ে নীলু তাকে প্রশ্ন করে টগরকে। টগরের তখনই নজরে আসে নীলু বড় হয়ে গেছে।
★★★
“হুমায়ূন আহমেদ” স্যারের লেখা বই “একা একা"। বইটি একটি পরিবার নিয়ে। তবে সেটা মূলত একটি রাত্রির ঘটনা নিয়ে। পরিবারের প্রতিটা সদস্যই আলাদা। তাদের রয়েছে ভিন্ন জগৎ।
আহামরি কোনো গল্প না ঠিকিই, কিন্তু স্যারের চিরাচরিত লেখন শৈ���ী পাঠককে নিয়ে যাবে বইয়ের শেষ পর্যন্ত। মমত্ববোধ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, অবহেলা সব কিছুই আছে এবইতে। ছোট এই উপন্যাস পড়ে আমার সময়টা অন্তত নষ্ট হয়নি।
আমরা এই পৃথিবীতে একাই এসেছি এবং মৃত্যু হলে একাই প্রস্থান করবো এটাই চিরাচরিত সত্য।কিন্তু আমরা এই সত্যটাকে গ্রহণ করেও,করি না।একা একা উপন্যাসটি শুরু হয়ছে একজন গরুজনের মুমূর্ষু অবস্থা দিয়ে।এই বৃদ্ধ বাড়ির মাথা,তিনি মারা যাবেন তার আগে বাসার সবার কীরকম অবস্থা তার একটা বর্ননা দিয়েছেন লেখক।টগর যিনি উপন্যাসের ন্যারেটর,তার দাদা আজ জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।টগরের বড় চাচা একজন অতিশয় বোকা লোক যিনি জীবনের সবকিছু তে পরাজিত,আজ তিনি মহাব্যস্ত।কাকে ফোন দিতে হবে কিংবা ডাঃ ডাকতে হবে এইরকম কাজ নিয়ে তার ব্যস্ততা। তার ছেলে বাবু যিনি লোকদেখানো জিনিসে বিশ্বাসী নয়,অনেক বাস্তবধর্মী কথা তার মুখ থেকে বের হয়।একজন লোক মারা যাচ্ছেন তাই তার ছেলে-মেয়েরা তো শেষ দেখা করতে আসবেন এটাই স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো না,টগরের বড় ফুফু,ছোট ফুফু,ফুফা আসলেন।আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন তারা ঠিক জানেন না,কোন পরিস্থিতি তে কী বলতে হয়!!বড় ফুফু এমন এক মহিলা যিনি শুধু নিজের কথাই ভাবেন!!তার বাবা মারা যাচ্ছেন এতে তার মাথা ব্যথা নাই,তার মাথা ব্যথা মায়ের গহনার অংশ নিয়ে,তার ছেলের বিয়ে নিয়ে।বাসায় আরো অনেক মানুষ আছেন যারা টগরদের ভাড়াটিয়া কিন্তু তারা যত টা কষ্ট পাচ্ছেন বা কাজ করছেন এই মুহুর্তে তার ছিটেফোঁটা কাজ বা কষ্ট কোনটা পাচ্ছেন না বড় ফুফু। এক জন মানুষ এখনো মারা যায় নি,কিন্তু তার মৃত্যুর পরে যেন সামাজিকতার কোনরূপ কমতি না হয়,এই সব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত বাড়ির জামাই। অনেক নাটকীয়তা অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে টগরের দাদাজান মারা যান।কিন্তু তার মৃত্যু কে ঘিরে কিছু মানুষের জীবনে ঝড় নেমে আসে।ভাড়াটিয়া রমিজ আর তার মেয়ে নিলু,টগর,তার ফুফাতো বোন শাহানা,বাবু সবার জীবনে নেমে আসে হতাশা আর অনিশ্চয়তার কালো অন্ধকার। কেন তাদের জীবনের এই ভগ্নদশা,কেন তাদের এই হতাশা, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে উপন্যাস টি পড়তে হবে।♦️♦️♦️ মূলত,উপন্যাসটি বাস্তবধর্মী।মানুষ আসলে অনেক সময় তুচ্ছ জিনিস নিয়ে ভাবে কিন্তু বড় বড় অনেক জিনিস যা গুরুত্বপূর্ণ তা অবজ্ঞা করে ফেলে মনের অজান্তে।মানুষ যেমন স্বার্থপর ঠিক এই মানুষের ভিতরে ভালবাসা আর সহমর্মিতা আছে বলেই পৃথিবী তে মানুষ সবকিছুর থেকে আলাদা।😔😔
২ বছর আগে ২৯ জানুয়ারী রাত ১২/১ টার দিকে আমার অশীতিপর দাদুকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য ঘর থেকে বের করা হয়েছিলো,পেছনে সমস্ত নাতি-নাতনিদের ভীড়,এই বৃদ্ধের সারাজীবনের সম্বল তার আদরের কিংবা শাসনে বড় করা ছেলেপুলেরা,ছেলেপুলেদের বৌয়েরা সবাই চাচ্ছে এই কাটখোট্টা বুড়ো ভালো হয়ে ফিরে আসুক।বাড়ির দরজার সামনে নিশুতি রাতের অ্যাম্বুলেন্স এর শব্দ যে কতো হাহাকার করা অনুভূতি দিতে পারে সেটা সেদিন টের পেলাম বোধহয়,আমার দাদু স্ট্রেচারে করে বেরোচ্ছেন,পেছন পেছনে বেরোচ্ছে তার সাদা মিনি বেড়াল টা,বৃহস্পতিবার রাতের ভরা পূর্নিমা,মাটির রাস্তা ঝলমল করছে,দাদুর পুতি শ্রেনীর এক বছর খানেকের বাচ্চা তার বাবার সাথে এই রাত দুপুরে এম্বুল্যান্স এর কাছে এসেছে,সে বোঝেনা মৃত্যু কি।একদিকে এই অশীতিপর,হাড়কিপন বৃদ্ধ তার জীবনের শেষ কয়েকটা মুহুর্ত বেঁচে থাকার জন্য যমে-মানুষে লড়াই চালাচ্ছে আর অন্যদিকে এক বছর বয়সী সেই বাচ্চা তার বাবাকে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দেখাচ্ছে " বাবা,ওই যে চাঁদ"। কি অদ্ভুত,কি বিচিত্র জীবন,কারো কারো জন্য যেই দিনটা শুধুই একটা সাদামাটা দিন,কারোর জন্য সেটাই হয়তো শেষ অথবা শুরু, কে জানে?
প্রত্যেক বৃহস্পতিবার,প্রত্যেক পূর্নিমা,প্রত্যেক রাত দুপুর কিংবা আমার প্রত্যেকটা ভালোতে এই বুড়োকে আমি চোখের জলে মনে করি এবং এই বইটা পড়তে পড়তেও আমি তাকেই মনে করেছি!!
মৃত্যু আমাদের জীবনের অবশ্যম্ভাবী সত্য, কিন্তু সাহিত্যে এটিকে সবসময়ই চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা যায়। যখনই কোনো গল্পের কেন্দ্রে একজন মৃত্যুপথযাত্রীর যন্ত্রণা এবং তার আশপাশের মানুষদের আবেগ, দ্বন্দ্ব, ও সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকে, তখন সেটি আমার জন্য দারুণভাবে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এই গল্পটা ঠিক সেই সম্ভাবনাটা নিয়েই শুরু হয়েছিল।
প্রথমে ভেবেছিলাম, এটি হবে এক গভীর, হৃদয়বিদারক গল্প, যা আমাকে ভাবতে বাধ্য করবে। কিন্তু পড়তে গিয়ে বুঝলাম, লেখক যেন পুরো প্লটটির সঙ্গে ন্যায়বিচার করতে পারেননি। চরিত্রগুলো গভীরভাবে গড়ে ওঠেনি, তাদের আবেগ বা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা ঠিকমতো ফুটে ওঠেনি। আমি চাইছিলাম চরিত্রগুলোর মাধ্যমে মৃত্যুর বাস্তবতা আর জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোকে অনুভব করতে, কিন্তু পুরো বিষয়টাই যেন উপরিতলীয়ভাবে ছুঁয়ে গেছে।
সবচেয়ে খারাপ লেগেছে, এমন সম্ভাবনাময় একটি প্লটকে লেখক এতটা নষ্ট করলেন! এই গল্পে মৃত্যুর গভীরতা, চারপাশের মানুষদের অপরাধবোধ বা ভালোবাসার প্রকাশ—এসব যদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যেত, তবে এটি একটি অসাধারণ সাহিত্যকর্ম হতে পারত।
পড়ার শেষে মনে হলো, একটা ভালো গল্পের আশায় সময় ব্যয় করলাম, অথচ পেলাম ব্যাগভর্তি আর্বজনা। এই প্লটের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ঠিকমতো কাজে লাগাতে না পারা আসলেই হতাশাজনক।
একজন মানুষ তার সারা জীবনে সম্পদের পাহাড় বানানোর পর, যখন শেষ বয়সে কেবলই মৃত্যুর অপেক্ষা করে, তখন সেই সময়টা তার কিভাবে কাটে..?!!!
শয্যাশায়ী একজন মানুষের মৃত্যুর অপেক্ষারত এই একাকিত্বকে লেখক খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।
এই উপন্যাসটিতে একজন ৮০+ বয়সী কিভাবে কঠিন সময়গুলো কাটাচ্ছেন তা আপনি অনুভব করতে পারবেন। যখন ছেলে-বউ, মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনীতে বাড়ি ভর্তি, তবুও এই বয়স্ককে সঙ্গ দেয়ার কেউ নেই। কষ্টে গড়া সম্পদগুলো উত্তরসূরীরা ভোগ করায় ব্যস্ত, তাও কেউ জানতে চায় না এই সম্পদের মালিক কেমন আছেন। এই পাহাড়সম সম্পদ দিয়ে না পাওয়া যায় দু-দন্ড কথা বলার মতো মানুষ আর না পাওয়া যায় শারীরিক যন্ত্রণা থেকে নিরাময়। বইটা শেষ করার পর একটা বিষাদে ছেয়ে যাবে আপনার মন।