কিশোর-কিশোরীদের জন্যে হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন একগুচ্ছ প্রবন্ধ, কবিতা এবং গল্প। ছোটদের জন্যে যেভাবে লেখা হয়—সেভাবে লেখেননি তিনি। ছোটদের মনে জাগিয়ে দিয়েছেন সুন্দরকে, স্বপ্নকে, কল্পনাকে।
এই বইতে সংকলিত হয়েছে তাঁর লেখা ১৪টি প্রবন্ধ, ৮টি কবিতা এবং ৩টি গল্প।
প্রবন্ধ— • একফোঁটা চোখের জলের মতো শহীদ মিনার • যে-পুস্তক পাঠ করলে • শব্দ বানাই • এসো কবিতা পড়ি • ওর নাম মেয়ে • উটের গ্রীবার মতো • এসো কবিতা লিখি • এক পয়সার বাঁশি • লাল নীল ছড়া • বুকপকেটে জোনাকিপোকা: শব্দগুলো • ছোটো ছোটো পাখি মিষ্টি মিষ্টি স্বপ্ন • শব্দ থেকে কবিতা • স্বাধীনতার কথা কেনো আমাদের এতো বেশি মনে পড়ে • স্মিতামণি ও তার স্মিত হাসি
কবিতা— • কখনো আমি • শুভেচ্ছা • স্বপ্ন • ধুয়ে দিলো মৌলির জামাটা • ফাগুন মাস • দোকানি • ইঁদুরের লেজ • স্বপ্নের ভুবনে
গল্প— • মহৎ কৃপণের কাহিনী • টাকা দিন • গাড়লস্তানে এক বিকেল
Humayun Azad (Bangla: হুমায়ূন আজাদ) was a Bangladeshi author and scholar. He earned BA degree in Bengali language and literature from University of Dhaka. He obtained his PhD in linguistics from the University of Edinburgh in 1976. He later served as a faculty member of the department of Bengali language and literature at the University of Dhaka. His early career produced works on Bengali linguistics, notably syntax. He was regarded as a leading linguist of the Bangla language.
Towards the end of 1980s, he started to write newspaper column focusing on contemporary socio-political issues. Through his writings of 1990s, he established himself as a freethinker and appeared to be an agnostic. In his works, he openly criticized religious extremism, as well as Islam. In 1992 Professor Azad published the first comprehensive feminist book in Bangla titled Naari (Woman), largely akin to The Second Sex by Simone de Beauvoir in contents and ideas.
The literary career of Humayun Azad started with poetry. However, his poems did not show any notable poetic fervour. On the other hand his literary essays, particularly those based on original research, carried significant value.
He earned a formidable reputation as a newspaper columnist towards the end of 1980s. His articles were merciless attacks on social and political injustice, hypocrisy and corruption. He was uncowed in protesting military rule. He started to write novels in 1990s. His novel Chappanno Hazar Borgomile is a powerful novel written against military dictatorship. Azad's writings indicate his distaste for corrupt politicians, abusive military rulers and fundamentalist Islam. Nevertheless, his prose shows a well-knit and compact style of his own. His formation of a sentence, choice of words and syntax are very characteristic of him. Although he often fell victim to the temptation of using fiction as a vehicle of conspicuous political and philosophical message, he distinguished himself with his unique style and diction.
On August 11, 2004, Professor Azad was found dead in his apartment in Munich, Germany, where he had arrived a week earlier to conduct research on the nineteenth century German romantic poet Heinrich Heine. He was buried in Rarhikhal, his village home in Bangladesh.
In 2012, the Government of Bangladesh honored him with Ekushey Padak posthumously. Besides this, he was honored with Bangla Academy Award in 1986.
ইদকে সামনে রেখে যখন প্রচন্ড বেশি পরিমানে অনুভব করছিলাম নিজের শৈশবকে, ঠিক তখন যেন এক টুকরো শৈশব এনে দিয়েছে হুমায়ুন আজাদের 'বুকপকেটে জোনাকিপোকা'।
প্রচন্ড বিষন্ন অনুভব করতে ইচ্ছে হয় যখন, মনখারাপের কঠিন দিনে যখন কাউকে আঁকড়ে ধরতে মন চায়- একমাত্র তখনি আমি আজাদের লেখার উপরে চোখ বুলাই। কিন্তু কিশোরদের জন্য তার এই লেখা আমাকে আরো একবার বিষন্ন করে তুলেছে আমার শৈশবের জন্য।
তখন খুব ছোটো ছিলাম, এখনকার থেকে অনেকটা বেশি নিষ্পাপ ছিলাম। আমি খুব বেশি স্বপ্ন দেখতাম । আমার স্বপ্নগুলো সব সীমা ছাড়িয়ে যেত যখন আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। কি আশ্চর্য! লেখক তার এই বইয়ে প্রতিটা প্রবন্ধ, কবিতা, গল্পে হাজির করেছেন আমার সেই স্বপ্ন গুলো। আরো একবার আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল শৈশবে। তিনি বলেন,
"আমি শুধুই ভয়ে মরি যদি আমি ঘুমিয়ে পড়ি স্বপ্নদের কী হবে, যদি কোনো দস্যু এসে ভাঙ্গে আমার স্বপ্নকে সে বাঁচবো কেমনে তবে?"
বড় বেলায় এসে তার বড্ড বেশি মন পড়ছে এইদেশকে, স্বাধীনতাকে। তিনি বলেন, "তাছাড়া আমরা সবাই কিন্তু স্বাধীনতা পাই নি। স্বাধীন বাঙলায় একটি ছোট গোত্রই স্বাধীন, আর অধিকাংশ মানুষ তাদের অধীন। তারা কখনো বন্দুক দিয়ে আমাদের ভয় দেখায়। আমরা ভয়ে কাঁপতে থাকি। আমরা প্রবল হয়ে উঠি, প্রতিবাদ করি, আমাদের রক্তে মাটি ভিজে ওঠে... আর তখন তারা পোশাক খুলে বন্দুক ঘরে রেখে আমাদের মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনায়। বলে, দেশ সাধারণ মানুষেরই। তারা বলে এই গণতন্ত্র দিলাম। যেনো গণতন্ত্র তাদের সম্পত্তি।"
'ওর নাম মেয়ে' নামক প্রবন্ধে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন নারীর অবস্থান নিয়ে কথা। তিনি বলেন, "ওর অপব্যবহার করতে চায় সব সমাজ। ওকে ক'রে তুলতে চায় শুধু অভিনেত্রী, করে তুলতে চায় শুধু নর্তকী। বিক্রি করতে চায় শুধু ওর সৌন্দর্য... কোনো সমাজ ওকে মনে করে আগুন, যাকে ঢেকে রাখা দরকার। কোনো সমাজ ওকে মনে করে পন্য, যাকে তারা বিক্রি করে বাজারে বাজারে।" লেখক আরো বলেন, ও মেয়ে, ওর কোটি কোটি নাম। ওর আসল নাম মানুষ।
সব শেষে তিনি বলেছেন 'গাড়লস্তান' নামক এক দেশের গল্প। যেখানে মানুষের মগজ থেকে ময়লা বেশি জমালেই বেশি সম্মান পাওয়া যায়। সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, "মগজ থাকলেই মাথা ব্যথা করে, ভাবতে ইচ্ছে হয়। মগজ না থাকলে কোনো ভাবনা নেই।"
কোন দেশের কথা বলেছেন, বুঝেও বুঝতে পারিনি। আমার মাথায়ও কি যথেষ্ট পরিমানে মগজ নেই ভাবনার জন্য?
কখনো আমি স্বপ্ন দেখি যদি স্বপ্ন দেখবো একটি বিশাল নদী। নদীর ওপর আকাশ ঘন নীল নীলের ভেতর উড়ছে গাঙচিল। আকাশ ছুঁয়ে উঠছে কেবল ঢেউ আমি ছাড়া চারদিকে নেই কেউ।
কখনো আমি কাউকে যদি ডাকি ডাকবো একটি কোমল সুদূর পাখি। পাখির ডানায় আঁকা বনের ছবি চোখের তারায় জ্বলে ভোরের রবি। আকাশ কাঁপে পাখির গলার সুরে বৃষ্টি নামে সব পৃথিবী জুড়ে।
ইশ! শিশুকিশোরদের কতো স্বপ্নময় করে তুলতে পারতেন হুমায়ুন আজাদ। "বুকপকেটে জোনাকিপোকা"র ছুতোয় পরিচয় করিয়ে দিতেন শব্দের স্বপ্নলোকের সাথে!
শব্দের আর বাক্যের বুননে সুন্দরতম এক জগতে নিয়ে যান কিশোরকিশোরীদেরকে। সেই জগত চমৎকার সব ছন্দে ভরপুর,কবিতাদের মিতালি সেথায় রঙিন প্রজাপতিদের সাথে, মজার গল্পরা সেথায় জোনাকিপোকার মতো জ্বলজ্বল করে বুকপকেটে।
কঠিমসব ব্যাকরণের নাম কচিকাঁচা পাঠকরা শোনে আনন্দের সাথে, তারা কল্পনাপটুত্বে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে কবিতা পড়ে, বাস্তবতাকে তারা ধারণ করে স্বপ্নরূপে আর লিখতে বসে কবিতা!
৫ এ ৫ দিতে এতটুকু হাত দূরে থাক, একটা নিউরনও ঝামেলা করেনি। বই মানেই পবিত্র কিছু না। তবে কিছু কিছু বই হয়ে অনেকটা পবিত্ররুপ, অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠে। আমি বলবো, এই বই পড়া ছাড়া কেউ যদি ১৮ পার করে ফেলে তাহলে তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। এই পর্যন্ত অনেকেই অনেক কালজয়ী শিশু সাহিত্য লিখেছেন কিন্তু সহস্র ভিড়ের মাঝেও একজন বাঙালির জন্য "বুক পকেটে জোনাকিপোকা " জোনাকির মতই আলো ছড়াচ্ছে। পড়তে পড়তে মনে হবে প্রতিটি অক্ষর একেকটি সুস্থ জগতের, সুস্থ স্বপ্নের দুয়ার, একেকটি আত্মা পরিশুদ্ধির ক্যাপসুল। আমি হতভাগা এই পড়তে পারি নি এতকাল। এই বয়সে পড়তে গিয়েও কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আর ভাবছিলাম কেন এই বই পাঠ্য করা হয়নি। অন্তত ৩ গল্পের একটি গল্প পাঠ্য করতে পারত। দেশের এই সময়ে এই বইয়ের চেয়ে জরুরী আর কি বই থাকতে পারে? এত দারুণভাবে স্বপ্ন,সম্ভাবনা এবং সমস্যাগুলি শিশুকিশোরদের পাঠোপোযুগী করে লিখেছেন যে বাকরুদ্ধ করার মত। অনেকদিন থেকে বইটা পড়ে ছিল, অন্য কারো বই। কি মনে করে একটি গল্প জোরে জোরে পড়তে গিয়ে গলা ধরে এল।আপনার আশেপাশে ১৮-২০ এর নিচে কেউ থাকলে, এই বইখানা উপহার দিন।
একঝাঁক বিচিত্র বিষয়ের লেখা, ছোটদের জন্য, ছোটদের বড় করে তোলার জন্য। বাইরে থেকে নিতান্ত সহজ মনে হলেও লেখাগুলো যথেষ্ট চিন্তার খোরাক জোগায় , আসলে হুমায়ুন আজাদ স্যার এর বইয়ের বিশেষত্বই তো এটা। এতো দেরিতে পড়লাম বলে আফসোস হচ্ছিল, তবে আরো আগে পড়লে জ্ঞানটা হয়তো নিতে পারতাম, অনুভূতিটা পারতাম কি না জানিনা। যারা আগেই পড়ে ফেল���ছেন, তারা আবার একবার পড়ে দেখতে পারেন।
১৯৯৩ সালে আগামী প্রকাশন থেকে বেরিয়েছিল। গোটাদশেক প্রবন্ধ, কিছু কবিতা আর ৩টা ছোটগল্প নিয়ে এই বই। প্রবন্ধগুলোতে উঠে এসেছে স্বাধীনতা সংগ্রাম, শহীদদের স্মৃতি, ব্যাকরণ, নারী, শব্দ, কবি ও কবিতাসহ প্রমুখ বিষয়। কবিতা সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলো এতো চমৎকার! খুব সহজ আর প্রাঞ্জল ভাষায় বলা হয়েছে কবিতা জিনিষটা আসলে কী? কেন কবিতা পড়লে আমাদের ভালো লাগে, কবিতা কীভাবে লিখতে হয় তা নিয়ে। কবিতাগুলো তার ছেলেমেয়ে স্মিতা, অনন্য, মৌলিকে উদ্দেশ্য করে লেখা, ভালো লাগল এটা। গল্পগুলোতে সমাজের মানুষের কপটতা, দূর্নীতি নিয়ে বলা হয়েছে। সুন্দর একটা বই। ছোটদের উদ্দেশ্য করে লেখা, আরো আগে পড়া উচিত ছিল। একটু আফসোস ও হচ্ছে শৈশবে এসব বই যদি পড়তে পারতাম! বইয়ের কয়েকটা ভালো লাগা অংশ নিচে দিচ্ছিঃ - শহীদ মিনারঃ বাঙালির অশ্রু ও আগুনে গড়া তীর্থ। - বাল্যকালটা ছড়ার কাল, ধ্বনিময় কবিতা পড়ার কাল। - কবিতের কবিতায় অসম্ভবই দখল করে থাকে বড়ো জায়গা। তাঁরা পেরিয়ে যান প্রতিদিনের বাস্তবতাকে এবং আমাদের মনের সামনে হাজির করেন কল্পজগতের সত্য। - আমি একটি কবিতা লিখবো এমন আশা নিয়ে বসে থাকলে কবিতা আসে না। কবিতা আসে বহু কাজের ফাঁকে। কবিতা আর কারো মতো আসে না, কবিতা আসে কবিতার মতো। - তাজমহল সুন্দর সবাই সেকথা বলে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন, “এক বিন্দু নয়নের জল / কালের কপোলতলে শুভ্রসমুজ্জল / এ তাজমহল”! মনে হয়, পৃথিবীতে কেবল তিনিই যথার্থ তাজমহল দেখেছেন। কেননা তিনি কল্পনা করেছেন তাজমহল যেনো কালের কপোলে শুভ্র সমুজ্জল। এখানে তাজমহলের সৌন্দর্য আর তার নির্মাণের বর্ণনা দুটোই ধরা পড়েছে।
২০২০ এ এসে পড়তে গিয়ে দুয়েকটা অসংগতি পাইসি। Though এইটা probably সময়ের গ্যাপের কারনে হইসে। As বইটা পাবলিশ হইসিলো ১৯৯৩ সালে। Also these proves যে আমি হালকার উপর পাতলা দিয়ে woke :p সে যাই হোক বাচ্চাদের প্রবন্ধের বই পড়েও এতো জটিল info পাবো ভাবি নাই। এখানে এখনও hit করার মতো আর শিখানোর মতো অনেক কিছু আছে। কবিতা গুলা বেশ মজাদার। নস্টিলজিক লাগার মতো একটা বই। আই উইশ ২০০৮ এর কোনো বইমেলায় এই বইটা আমি খুঁজে পাইতাম, আফসোস।
"যার মনে আছে কল্পনার আলো, সে সব কিছুতেই কবিতা পাবে।" -হুমায়ূন আজাদ "তুমি যদি দেখতে পাও শব্দের শরীরের রং, শুনতে পাও শব্দের সুর, টের পাও শব্দের সুগন্ধ, তাহলে পারবে তুমি কবি হতে।" - হুমায়ুন আজাদ "আমার বন্ধুরা ছুটে আসে, তুলে নেয় সকলের কাঁধে, আমার শৈশব নদীর জলের মতো বইছে অবাধে।" -হুমায়ূন আজাদ ছোট বেলাকে মনে করিয়ে দেয় বার বার পড়ার মতো বই কিছু জায়গা বাদ দিয়ে।
'আমাদের স্বাধীনতা এখন বিশ বছর বয়স্ক। এখনো তা অটল নয়, শত্রুমুক্ত নয়। তাই তার জন্যে আমাদের এতো ব্যাকুলতা। তাছাড়া আমরা সবাই কিন্তু স্বাধীনতা পাই নি। স্বাধীন বাংলায় একটি ছোটো গোত্রই স্বাধীন, আর অধিকাংশ মানুষ তাদের অধীন। তারা কখনো বন্দুক দিয়ে আমাদের ভয় দেখায়। আমরা ভয়ে কাঁপতে থাকি। আমরা প্রবল হয়ে উঠি, প্রতিবাদ করি, আমাদের রক্তে মাটি ভিজে ওঠে। তবুও আমরা প্রতিবাদ করি। আর তখন তারা পোশাক খুলে, বন্দুক ঘরে রেখে আমাদের মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনায়। বলে, দেশ সাধারণ মানুষেরই। তারা বলে, এই গণতন্ত্র দিলাম। যেনো গণতন্ত্র তাদের সম্পত্তি। এজন্য আমরা স্বাধীন হয়েও সবাই স্বাধীন নই। তাই তো স্বাধীনতার কথা আমাদের এতো বেশি মনে পড়ে।'