Subodh Ghosh (Bengali: সুবোধ ঘোষ) was a noted Bengali author and journalist, with Kolkata-based daily newspaper Ananda Bazar Patrika. His best known work Bharat Premkatha, about the romances of epic Indian characters, has remained a sensation in bengali literature world. Many of his stories have been adapted for making of great Indian films, most notably Ritwik Ghatak’s Ajantrik (1958) and Bimal Roy’s Sujata (1959), and even today filmmakers search his works for suitable plots. He won the Filmfare Award for Best Story twice, for Bimal Roy's Sujata (1960) and for Gulzar’s Ijaazat in 1989.
"শুন বরনারী " হুমায়ূন আহমেদের খুব প্রিয় উপন্যাস।উপন্যাসের নায়কের নাম হিমাদ্রি বা হিমু।সম্ভবত এ বই থেকেই হুমায়ূন তার সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রের নাম রেখেছেন। তাঁর সূত্র ধরেই বইটা পড়া হলো। এ এক আশ্চর্য প্রেমের উপন্যাস।শুরু থেকেই এমন সব ঘটনা ঘটতে থাকে যা সাদা চোখে আজগুবি মনে হবে। সুবোধ ঘোষ চরিত্রদের উড়তে দিলেও নিজের পা মাটিতেই রেখেছিলেন। তাই মূল দুই চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, শ্রেণিদ্বন্দ্ব, চরিত্রগুলোর বাস্তবসম্মত পরিণতি - সব মিলিয়ে ভীষণ ভালো লাগলো। বিশেষত দুর্দান্ত এক উপসংহারের জন্য এ উপন্যাসের কথা আমার বহুদিন মনে থাকবে।
সত্যি বলতে পড়ার সময় যতটা কনফিউজ ছিলাম, পড়ার পর আফটার ইফেক্ট এর শর্ট টাইম প্রিয়োডে আরো কনফিউজ হয়ে বসে আছি।
হ্যা, গল্প টা পড়া অবশ্য ওই একই কারন, আমাদের হিমুর নামের অরিজিন সম্পর্কে আরো ধারনা নেওয়ার জন্য! কিন্তু পড়তে গিয়ে ৮০ বছর আগের লেখায় বেশ আটকে গেলাম।
আমার কাছে বেশ অদ্ভুত ভাবে ভালো লেগেছে। কখনো কোনো সিকোয়েন্স এত বেশি ভালো লেগেছে যাতে মনে হয়েছে সেরা কিছু ডায়লোগ পড়ছি, আবার কিছু যায়গায় মনে হয়েছে এর থেকে ক্রিঞ্জ আর হতে পারে না! এমনকি গল্পের একেকটা অংশ একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির নাড়া দেয়৷
তবে চরিত্রের গঠন আর মনস্তাত্ত্বিক দিক বিশ্লেষণ ছিল অসাধারন। আর মাস্টারক্লাস এন্ডিং! হয়তো এই দুই এর জন্য কারোর কাছে সেরা একটা বই হতে পারে।
আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।
সুনীলের এই দুই লাইনের তর্যমা দিয়ে যেনো হিমু ওরফে হিমাদ্রি শেখর দত্তের চরিত্রটি রূপায়িত হয়েছে। হিমুর কেউ নেই, সে নিতান্তই একা মানুষ। তার পাড়ার সকলের কাজের প্রয়োজনে হিমু নামটি সবার আগে উচ্চারিত হয় কিন্তু সে পাড়ার কোন আনন্দের আয়োজনে নিমন্ত্রিত অতিথির সমাদর সে পায়না। সে সবার কাজ করে দেয় কিন্তু তার বিনিময়ে কোন পারিশ্রমিক সে নেয় না। বোকার মত খাটে, তাই সকলে তাকে বোকা বলেই জানে।
আসলেই কি হিমু বোকা? আসলেই কি সে কিছু বোঝে না? কেনইবা সে অন্যের কাজ করে দেয় এভাবে? কেনইবা সে মানুষের কাছে এভাবে অপমানিত হয়েও বারবার মানুষের কাছে ফিরে যায়? তার কি কোন ব্যাক্তিত্ববোধ নেই?
এর উত্তর দিতে হলে নিচের কোটটি বলতে হয় Sometime, you just have to play the role of a fool to fool the fool who thinks they are fooling you
হিমু হয়তো বোকার চরিত্রে অভিনয় করা এমন একজন মানুষ যে আসলে তার চারপাশের মানুষের ভেতরের কুকুরটাকে দেখতে চায়। দেখে মজা পায়, নিজের ভেতরের কুকুরটাকে খুন করতে চায় বা পারে অথবা হিমু এসবের কিছুই চায় না, সে চায় একটু সম্মান, একটি বালুকণার মতো ছোট একটু ভালোবাসা।
যূথিকা হলো এই গল্পের মূল নারী চরিত্র। বিত্তশীল পরিবারের চিরচেনা অহংকারী মেয়ে যূথিকা। যিনি কারো অনুগ্রহ নেননা বা কাউকে অনুগ্রহ করেনও না। এমনই একটি মেয়ে বাধ্য হয় হিমুর অনুগ্রহ নিতে, তখন যূথিকার অহংকার মিশে যায় মাটিতে। অনুগ্রহ জিনিষটা কখনো কারো কাছ থেকে না পেয়ে বড় হওয়া যূথিকা যখন হঠাৎ করে হিমুর কাছ থেকে এমন ভাবে পেয়ে গেলো, তখন সে মোহগ্রস্থ হয়ে গেলো, হয়তো নিজেরই অজান্তে ভালোও বেসেছিল হিমুকে। অন্যদিকে যূথিকার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে নরেনের সাথে। শেষমেশ কী হয়? জানতে চাইলে পড়ে ফেলুন বইটা।
আমরা সবসময় মুখে একটা কথা বললেও আমাদের ভেতরে আরেকটা কথা থাকে, আরেকটা চিন্তা থাকে। লেখক প্রতিটা চরিত্রের এই ভেতরের কথাকে, ভেতরের চিন্তাকে এতো সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যে মুগ্ধ হতে হয়েছে।
বইয়ের ভালো লাগা লাইনঃ পৃথিবীর ভয়ানক চালাকেরা ভয়ানক বোকা সেজে থাকে।
হুমায়ূন আহমেদের একটা বই পড়তে গিয়ে এই বইটার নাম জানতে পারলাম। পড়তে গিয়ে খেয়াল করলাম এখানকার প্রধান চরিত্রের নাম হিমু, অন্যদিকে হুমায়ূন আহমেদের লেখায় বিখ্যাত একটি চরিত্রের নামও হিমু। এখানকার হিমুর সাথে আমার চিরপরিচিত হিমুর কোনো মিল না থাকলেও, চারিত্রিক দিকে থেকে কিছুটা ছায়া হলেও লক্ষ্য করা যায়। যদিও জোর দিয়ে বলা যায়না যে, এখানকার হিমু থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বিখ্যাত চরিত্রের নাম হিমু রেখেছেন।
এই উপন্যাসটা বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস গুলোর মধ্যে পরে, যতদূর জানি এটা থেকে চলচিত্রও নির্মিত হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বইয়ের কাহিনী বা গল্পের যে একটা স্রোতের মতো বয়ে যাওয়ার ব্যাপার আছে সেটা ভালো লাগেনি। এই গল্পে হিমুর চরিত্রের মধ্যে নিজস্বতা ধরে রাখার মধ্যে যে একটা ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায়, অন্যান্য মূল চরিত্রের মধ্যে সেটা খুঁজেই পাওয়া যায়না। চারু ঘোষ এর রুচিশীল পরিবারের মধ্যে কিছু নীচতা যেমন বেমানান মনে হয়ছে, সাথে অন্যতম প্রধান চরিত্র যুথিকার মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন হুটহাট হয়ে যাওয়াটাও খাপছাড়া মনে হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ছোটখাটো ব্যাপার আছে যা আমার কাছে বেশ অদ্ভুত রকমের নাটকীয় মনে হয়েছে। গল্প-উপন্যাসে হুটহাট নাটকীয়তা পছন্দ করেন যারা, বা এমনটা যাদের সহ্য হয় তাদের কাছে ভালো লাগবে বলেই মনে হয়।
যখনি হুমায়ূন আহমেদের একটা লেখায় পড়লাম এই বইখানি ঊনার অত্যন্ত প্রিয়(ঊনি লিখেছেন লেখাটা পড়ে ঊনি বরাবরই আবেগে আপ্লুত হয়ে যেতেন), তখনই অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে ইন্টারনেট থেকে সফট কপি নামিয়ে পড়া শুরু করে দিলাম। প্রথম দুই পাতা পড়ে যখন বুঝতে পারলাম এই বইয়ের নায়কের নামও হিমু, তখন তো রীতিমতো গা ঝাড়া দিয়ে শয়ন থেকে উঠে বসেছি। আরেব্বাস, বইখানি আমাদের হিমুর জন্মদাতা নাকি?
তো যাই হোক, এই বইয়ের হিমুর সাথে ঢাকার হিমুর খুব একটা মিল নেই। ইনি হলুদ পাঞ্জাবি না পরে নীল রঙের পাঞ্জাবি পরেন। খালি পায়ে হাটারও বদ অভ্যেস নেই। ঊনার পায়ে চটি জোড়া থাকে। আর হুমায়ূন আহমেদের হিমুর মতো অহরহ দার্শনিক বুলিও কপচান না। নিতান্ত সহজ সরল ভালো মানুষ।
লেখক বোধহয় শরৎচন্দ্রের স্টাইলে লিখতে চেয়েছিলেন। যদিও শরৎবাবুর উপন্যাসের ধারেকাছেও যেতে পারেন নি। হাই এক্সপেক্টেশন ছিল। তবে ঠিক ততোটা ভালো লাগেনি। রেটিং:2.7
পুনশ্চ: শুনেছি এই গল্প নিয়ে একটা সিনেমা আছে। আর যাই হোক সিনেমার শেষের দৃশ্যটা যে দারুণ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
কলেজে থাকতে পড়া। নামটা হুমায়ূন আহমেদের কোনোএক বইতে পেয়েছিলাম। এই বইয়ের নায়কের নামও কিন্তু হিমু। অবশ্যই বিখ্যাত কথাসাহিত্��িক সুবোধ ঘোষ হুমায়ূন আহমেদের অনেক আগে হিমু নামটি করায়ত্ত করেছিলেন।অবশ্য সবাই নামটি দখল করেছে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের বিখ্যাত সেনাপ���ি হেমচন্দ্র ওরফে হিমুর থেকে৷ আকবর এই হিমুকে নিজ হাতে কতল করেছিল।
সুবোধের অবোধ হিমু আর হুমায়ূনের উদ্ভট হিমুতে তফাৎ আসমান-জমিন।
যতটুকু মনে পড়ে নায়ক খুব গোবেচারা ধরনের লোক। অপরের উপকার করাই বিশিষ্ট দরিদ্র হিমুর জীবনের ব্রত। অপরদিকে, নায়িকা বড়লোকের মেয়ে। রূপ এবং টাকার গর্বে গরবিনী।
বাংলা সিনেমার কাহিনির সাথে মিল পাবেন। ওহ্! বলতে ভুলে গেছি, 'শুন বরনারী ' নিয়ে একখানা ফাটাফাটি সিনেমা হয়েছিল। উত্তম কুমার ছিলেন হিমু। অপরপক্ষে কে ছিল মনে নেই।
কাহিনির জন্য চার তারকা দিই নি। দিয়েছিলাম বাক্যের গাঁথুনি আর বইটা শেষ করার পর দীর্ঘদিন একটা চমৎকার অনুভূতি নিজের মধ্যে আবিষ্কার করেছিলাম সেইজন্য।
টলোমলো প্রেমের কাহিনি পড়ার ইচ্ছে অনেক আগেই চলে গেছে। কিন্তু তারপরও চিরন্তন সাহিত্য বলে কথা! মস্তিষ্কে মাঝে মধ্যে রোমান্সের প্রতি পুরনো ভালো লাগাটাকে জেগে উঠতে দেখি। তখন অনেক খোঁজাখুঁজি করে ক্লাসিক একটা রোম্যান্টিক উপন্যাস খুঁজে নিই (এখন আর হালকা সাহিত্য পড়ে সময় নষ্ট করার মতো বিলাসিতা মানায় না)। এভাবেই পড়া শুরু করেছিলাম সুবোধ ঘোষের "শুন বরনারী"। বইটা পড়ার পেছনে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো, সেটা জাগিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। অনেক বছর আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম, হুমায়ূন তার বিখ্যাত হিমু চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন শুন বরনারী উপন্যাসের নায়ক "হিমাদ্রি শেখর দত্ত" থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। তখন থেকেই মাথায় এই বইটার কথা ঘুরত। কিন্তু পড়া শুরু করতে করতে কেটে গেলো অনেকগুলো বছর।
যাক, বেটার লেট দ্যান নেভার।
এই প্রথম একটা উপন্যাস পড়লাম, যেটার কোনো চরিত্রকেই ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসা তো দূরের কথা, পছন্দই করতে পারিনি। প্রধান প্রধান চরিত্রগুলো হয় খুব বেশি সরল, নয় খুব বেশি কুটিল, বা খুব বেশি অহংকারী। এমন সর্বোচ্চ ধরনের অনুভূতিপরায়ণ চরিত্রগুলোর সাথে আমার চারপাশে দেখা মধ্যম অনুভূতির মানুষগুলোকে মিলাতে পারিনি। এজন্যেই হয়ত কাউকে আপন মনে হয়নি।
তবে লেখক মানুষের মনস্তত্ত্বকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। এদিক দিয়ে তাকে বাহবা না দিয়ে পারছি না।
মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া সামাজিক মর্যাদা, রীতি নীতি অনুযায়ী অনেক কাজকেই আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব, অবাস্তব বলে মনে হয়। বেশিরভাগ মানুষই স্বপ্ন দেখে যায় সমাজের আরোপ করা নিয়ম কানুন ভাঙার, কিন্তু বাস্তবায়িত করতে সাহস পায় না। হাতে গোনা যারা পারে সেই সীমাবদ্ধতা ভাঙতে, তাদেরকে আমরা ব্যতিক্রমের খাতায় ফেলে রাখি। তাদেরকে দেখি খারাপ হিসেবে। ফলে অন্যরা নিয়ম ভাঙার প্রস্তুতি নিলেও মাঠে নামার আগে নিজের কাছেই হেরে বসে। ফলে আর এগোনোই হয় না। এই কারণে অনেক সাধ, আহ্লাদ, ইচ্ছেকে চাপা দিতে হয় হিমালয়ের পাদদেশে। মানুষের মনের এই যে দ্বিধা, একে স্বচ্ছভাবে দেখতে পারবেন উপন্যাসে। পড়তে পড়তে মনে হবে, লেখক একটু রঙ চড়িয়ে লিখলেও আদতে আপনার-আমার মনের ভাবই ধরে ফেলেছেন।
************ স্পয়লার **************
হুমায়ূন আহমেদের হিমু নামক চরিত্রটার উৎস যদি সত্যিই এই উপন্যাস হয়ে থাকে, তবে দুটো কথা বলতে চাইঃ
১) "হিমু" নামটা এই উপন্যাসের নায়কের নাম থেকে নেওয়া হয়েছে। ২) হিমাদ্রি শেখর দত্তর সরলতা, সাধুতা, মহানুভবতা, আর এই তিন বৈশিষ্ট্যের প্রতি দৃঢ় থাকার মনোভাবটাও হুমায়ূনকে প্রভাবিত করেছে।
হিমু বললেই হূমায়ুন আহমেদ এর হিমুকেই আগে মনে পড়ে। হুমায়ুনের হিমু বাস্তবতার প্রতি উদাসীন, তাকে কোন মায়ায় বাধা যায় না, প্রেম তার কাছে একটা খেলা। কিন্তু সুবোধ ঘোষের হিমু ঠিক তার উলটো পরকে খুব দ্রুত আপন করে নেয়, মানুষের কাজে লেগে থাকাটাই যেন তার জীবনের সার্থকতা। হয়ত আগের জন্মে পরোপকার আর ভালোবাসায় ঠকে গিয়ে সুবোধ ঘোষের হিমু জন্ম নিয়েছে । যূথিকার স্বার্থপর অবহেলার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে রূপাকে নিঃস্বার্থ অপেক্ষায়।
পড়তে পড়তে যূথিকার প্রতি তীব্র রাগ আর বিরক্তিই লেগেছে। মাঝে মাঝে তো "জেটালাল" এর মতো চেচিয়ে উঠতে ইচ্ছে হয়েছে "Aey pagal Aurat". শুধুমাত্র নিজের খামখেয়ালির জন্য আরেকজনের জীবন কত সহজেই এলোমেলো করে দিতে পারল। তবে উপন্যাসটাতে প্রেম ছাড়াও শ্রেণী বৈষম্যের ব্যাপারটাও চমৎকারভাবে তুলে এনেছেন লেখক। আবার বড়লোক ঘরে বিয়ে হওয়াটাই মেয়েদের জীবনের একমাত্র মোক্ষ - এই হীন মনোবৃত্তির প্রতিও কটাক্ষ করেছেন।
শেষ করলাম সুবোধ ঘোষের লিখা বই "শুন বরনারী।" বইয়ের শুরুটা যেভাবে হয়েছিলো, সেটা আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছিলো। "হিমু" চরিত্রের বিল্ডআপটা খুবই অসাধারণ লেগেছে। শুধু হিমু বললে ভুল হবে অবশ্য। প্রত্যেকটা চরিত্রকেই খুব ভালো লেগেছে। এইদিক থেকে সুবোধ ঘোষের প্রশংসা না করে পারছি না। ভেবেছিলাম, খুব অসাধারণ কিছু একটা পেতে চলেছি হয়তো। কিন্তু গল্প সামনে যাবার পরে আশাহত হয়েছি বলতেই হয়। প্লটটা কেমন জানি জমলো না। অথবা, এই জনরা হয়তো আমার জন্য না। অনেক জায়গাতেই বেশ বোরিং লেগেছে।
সবমিলিয়ে বলবো, এভারেজ। অনেকের কাছে ভালো লাগতে পারে। তবে আমার ভালো লাগার মতো কিছু মনে হয়নি।
দুঃখকে বুকে চেপে রেখে মানুষের উপকার করে যাওয়া।হিমু চরিত্রটি অনেকের কাছে অতিরঞ্জিত লাগতে পারে কিন্তু সমাজে এমন মানুষ হয়তো খুবই কম কিন্তু আছে।তাদের আমরা ভবঘুরে বলে নাক সিটকাই।উত্তম কুমারের অভিনয়ে সিনেমাটা আরো চমৎকার হয়েছে।
বই : শুন বরনারী লেখক : সুবোধ ঘোষ ঘরানা : প্রেমের উপন্যাস প্রকাশকাল : ১৯৬০ পৃষ্ঠা : ১৫১
কিছু কাহিনি থাকে, যেগুলো মনের গভীরে একটা অন্যরকম হাহাকারের জন্ম দেয়। বুক চিড়ে বেরিয়ে আসা কিছু নিষ্ফল দীর্ঘশ্বাসের কারণ হয়। সুবোধ ঘোষের 'শুন বরনারী' উপন্যাসের কাহিনি এমনই। বইটা সম্পর্কে আগ্রহ সেই হুমায়ূন সাহিত্য পড়ার সময় থেকেই। গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ তাঁর অনেক রচনায় সুবোধ ঘোষের এই বইটার কথা উল্লেখ করেছেন। দ্বিধাহীন চিত্তে প্রকাশ করেছেন 'শুন বরনারী'-এর প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ ভালোলাগা। প্রিয় লেখকের ভালোলাগার বইয়ের প্রতি যে আগ্রহ জন্মাবে, সেটাই স্বাভাবিক। তারপরো, দুস্প্রাপ্যতার কারণে বইটা পড়া হতে হতে অনেকদিন চলে গেলো। অগত্যা অন্তর্জাল থেকে 'শুন বরনারী'-এর সফটকপি ডাউনলোড করেই ইচ্ছাটা পূর্ণ করলাম।
হিমাদ্রিশেখর দত্ত (হোমিও)। গিরিডির একটা বিশেষত্বহীন বাড়ির বাইরে এমনই একটা নামফলক লাগানো। আমাদের এই হিমাদ্রিশেখর দত্তকে কেউ কিন্তু এই নামে ডাকেনা। লোকে তাকে হোমিও হিমু, হিমুদা এসব নামেই ডেকে অভ্যস্ত। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, নামের পাশের 'হোমিও' কথাটার সার্থকতাও কখনো কেউ পরখ করে দেখতে যায়নি। কেউ কখনো হিমুকে ডাক্তারি করতে দেখেনি। বরং লোকসমাজে তার পরিচয় নিস্বার্থ একজন মানুষ হিসেবে, যে পরোপকারকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশন হিসেবে নিয়েছে।
গিরিডির অনেক কলেজপড়ুয়া মেয়ের ভ্রমণসঙ্গী হয়ে হিমু তাদেরকে দূরবর্তী শহরগুলোতে নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে আসে। আর এসব ব্যাপারে মেয়েদের অভিভাবকরাও নিঃসঙ্কোচে ও নির্ভয়ে হিমুর ওপর নির্ভর করে। আপাতদৃষ্টিতে নিরামিষ স্বভাবের এই মানুষটা চেনা-অচেনা নানা মানুষের বিভিন্ন বিপদে বিপদভঞ্জন হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু তারপরো কেউ কখনো হিমুকে তাদের একজন ভাবেনা। হিমু যেন আসবাবপত্রের মতো। প্রয়োজনে ডাক পড়ে। আর প্রয়োজন ফুরালেই হিমু তাদের কাছে হয়ে যায় অচেনা কেউ। কিন্তু অদ্ভুত স্বভাবের এই মানুষটা কখনোই এসব নিয়ে মনখারাপ করেনা। বরং স্বার্থপর স্বভাবের গিরিডিবাসীর ডাক পেলেই ছুটে যায় তাদের উপকার করতে।
বাড়ির নাম 'উদাসীন'। অদ্ভুত নাম, তাইনা? বাড়ির এই অদ্ভুত নামের মতোই এর বাসিন্দারাও অদ্ভুত স্বভাবের। উকিল চারু ঘোষের বাড়ি এটা। যাঁর জীবনের একমাত্র নীতি হলো, 'কারো উপকার করবেও না, কারো থেকে উপকার নেবেও না।' কিন্তু ভবিতব্যের লিখন হয়তো একটু অন্যরকমই ছিলো। চারু ঘোষকে সাহায্য চাইতে হলো হিমু দত্তের কাছে। একমাত্র মেয়ে যূথিকা ঘোষকে পাটনা পাঠানোর জন্য হিমুর দারস্থ হলেন তিনি। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই আমাদের হিমাদ্রিশেখর দত্ত ওরফে হিমুর জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। নানা ঘটনাচক্র তন্বী যূথিকা আর বোহেমিয়ান হিমুকে এমন একটা জায়গায় এনে দাঁড় করালো, যেখানে অনুরাগ আর আত্মমর্যাদাবোধের যুগপৎ যাওয়াআসা। দুজন মানব-মানবীর জীবন হয়ে উঠলো মাহাত্ম্যপূর্ণ।
ব্যক্তিগত মতামত : একটা স্বীকারোক্তি দেই। প্রেমের উপন্যাস আসলে কখনোই আমার আগ্রহের বিষয়বস্তু ছিলোনা। হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উপন্যাস 'দিঘির জলে কার ছায়া গো' পড়ার পরে আর কোন প্রেমের উপন্যাস পড়াও হয়নি। 'শুন বরনারী' পড়েছি অনেক আগে থেকে লালন করা আগ্রহের বশবর্তী হয়ে। এবং পড়ার পরে একটা জিনিস বুঝেছি, প্রিয় লেখক কেন সুবোধ ঘোষের এই সাহিত্যকর্মটাকে এতো পছন্দ করতেন।
'শুন বরনারী' পুরোপুরিভাবে কোন প্রেমের উপন্যাস না। এতে হিমাদ্রিশেখর দত্ত ওরফে হিমু নামের চরিত্রটাকে আর দশটা আটপৌরে চরিত্রগুলো থেকে একেবারে আলাদা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে তার পরোপকারী স্বভাবের সাথে একইভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বোহেমিয়ান এক নির্লিপ্ততা। এই উপন্যাসের যূথিকা দত্ত চরিত্রটাও প্রতিনিধিত্ব করেছে একজন তরুণীর বাঁধভাঙ্গা আবেগের। সমস্ত ব্যাপারস্যাপার মিলিয়ে উপন্যাসটা সাধারণ কোন প্রেমের উপন্যাসের চেয়েও হয়ে উঠেছে আরো বেশি কিছু। আর লেখক সুবোধ ঘোষের জাদুকরী লেখনী সত্যিই দারুন উপভোগ্য ছিলো।
যেহেতু পিডিএফ পড়েছি, সেহেতু প্রচ্ছদশিল্পীর নাম, প্রকাশনী, মূল্য - এমন অনেক ব্যাপারেই জানতে ও জানাতে পারিনি। আগ্রহীরা চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন 'শুন বরনারী'। আলাদা একটা স্বাদ পাবেন আশা করি।
শুন বরনারী পড়া এক অভিজ্ঞতা, যা আমাকে মানব মনের গোপন কুঠুরিতে আর সমাজের চাপিয়ে দেওয়া প্রত্যাশার সাথে লড়াইগুলোতে ডুবিয়ে দিয়েছে। উপন্যাসটির প্রতি আমার আগ্রহের কারণ রোমান্স নয়, বরং হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র হিমুর মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে সুবোধ ঘোষের এই বইটি ছিল। হুমায়ূন আহমেদের ভালোবাসার এই বইটি খুঁজে বের করার চেষ্টায় অনেকদিন পার হয়েছে, আর অবশেষে পেয়ে পড়তে শুরু করলাম, যা আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে।
শুন বরনারী -এর হিমু আমাদের পরিচিত হলুদ পাঞ্জাবি পরা দার্শনিক হিমু নয়। এই হিমু নিতান্তই এক সাধারণ, নীরব, সহানুভূতিশীল মানুষ, যাকে তার ছোট্ট শহরের মানুষজন প্রয়োজনের সময় মনে করে, কিন্তু পরে সহজেই ভুলে যায়। “হোমিও হিমু” নামে পরিচিত এই হিমুর চরিত্রটি আমাকে আকর্ষণ করেছে তার নিঃশব্দ ও নিরলস সেবামূলক কাজের জন্য, যা তাঁকে সমাজে অনাদৃত এক “কেউ নয়” হিসেবে দাঁড় করায়। অথচ তার মাঝেও থাকে সামান্য সম্মান বা ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা।
উপন্যাসে হিমুর জীবনে বড় পরিবর্তন আসে যখন তাকে আইনজীবী চারু ঘোষের মেয়ে, দৃঢ়চেতা এবং আত্মনির্ভরশীল যুথিকার সঙ্গে পাটনার পথে যেতে বলা হয়। যুথিকা এমন এক নারী, যিনি কখনো কারো উপর নির্ভর করেন না, তবুও নিয়তির কারণে তাকে হিমুর ওপর নির্ভর করতে হয়। এই যাত্রায় তাদের মধ্যকার অদৃশ্য দ্বন্দ্ব ও অনুভূতির পরিবর্তন ধীরে ধীরে তাদের উভয়কেই নতুনভাবে উপলব্ধি করায়।
এই উপন্যাসের অন্যতম বিশেষ দিক হলো, সুবোধ ঘোষের দক্ষ হাতে প্রতিটি চরিত্রের গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। হিমুর চরিত্রটি যেন জীবনকে এক আয়নায় দেখায়—যেখানে মানুষের প্রকৃত রূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হিমুর চরিত্র যেন আমাদের চেনা চরিত্রগুলোর মনের ভেতরের দিকগুলো উন্মোচন করে দেয়।
অন্যদিকে, যুথিকা এমন এক নারী, যার অহংকার ও দৃঢ়তা, হিমুর সাদামাটা সহানুভূতির মুখোমুখি হয়ে এক অদ্ভুত দ্বিধায় পড়ে। তার বিয়ে ঠিক হয়েছেই, কিন্তু হিমুর প্রতি জন্মানো নতুন অনুভূতি ও সম্মান তার নিজের ভেতরে এক অন্তঃসারশূন্য লড়াই সৃষ্টি করে।
শুন বরনারী নিছক ভালোবাসার গল্প নয়; এটি মানব সম্পর্কের নীরব ও গভীর সংগ্রাম, আত্মসম্মান ও নিঃশব্দ দয়ার কাহিনী। সুবোধ ঘোষ অত্যন্ত সুন্দরভাবে মানুষের এই গোপন অনুভূতি, চেপে রাখা আকাঙ্ক্ষা ও চরিত্রের গহীনের দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তুলেছেন। এই বইটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় কীভাবে সমাজের রীতি-নীতির মধ্যে থেকেও নিঃস্বার্থ সহানুভূতি ও মানবিকতার বিচ্ছুরণ সম্ভব। এটি এমন একটি উপন্যাস, যা পড়া শেষ করেও দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে রেশ রেখে যায়, মানুষ ও তাদের দমিয়ে রাখা ইচ্ছার প্রতিচ্ছবি হিসেবে।
মূল কাহিনিতে ঢুকার আগে হিমাদ্রী বাবুর ক্যারেক্টারের বর্ণনা পড়েই মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। খুব বেশি কিছু না, হিমু সাহেবের কলার ধরে দুই চারটা ঝাঁকুনি দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হচ্ছিল, 'মানুষ এতো ভালোমানুষ ক্যান হবে? ক্যান? মানুষের উপকার করাই বা কি ধরণের বাতিক?'
শেষ দিকে রাগ উঠেছে যূথিকার উপর। কি চায় এই মেয়ে নিজেও জানে না।
‘হিমু’ হুমায়ুন আহমেদের একটি কালজী সৃষ্টি। হিমুর অদ্ভুত জীবনদর্শন, নানারকম খামখেয়ালীপনা এবং নাটকীয় কার্যকলাপে প্রত্যেক পাঠকই মুগ্ধ হন। তবে ‘হিমু’ চরিত্রটিকে সম্পূর্ণ মৌলিক বলা যায় না, বিশেষ করে নামটির ব্যপারে তো নয়ই। হুমায়ুন আহমেদ নিজের আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন ‘হিমু’ নামটি তিনি নিয়েছিলেন ��থাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের “শুন বরনারী” উপন্যাসের একটি চরিত্র থেকে। হুমায়ুন আহমেদের লেখা থেকেই আমি প্রথম সুবোধ ঘোষের নাম জানতে পারি এবং ‘শুন বরনারী’ উপন্যাসটি পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। শুন বরনারী একটি প্রেমের উপন্যাস। নায়কের নাম হিমাদ্রিশেখর দত্ত (হোমিও) হলেও আশেপাশের সকলে তাকে হোমিও হিমু বা শুধু হিমুদা নামেই ডাকেন। পেশায় একজন হোমিও ডাক্তার। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে একটু আলাদ এই মানুষটি নিঃস্বার্থ এবং পরোপকারী। গিরিডি’র (ভারতের একটি জায়গার নাম) একটা সাধারণ বাড়িতে একাকী বসবাস করেন হিমু, প্রতিবেশীর যেকোন প্রয়োজনে ছুটে যান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। বিশেষ করে গিরিডির কলেজপড়ুয়া মেয়েদেরকে নিরাপদে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতে অভিভাবকদের কাছে হিমুই একমাত্র ভরসা। তবে প্রয়োজনে কাছে ডাকলেও হিমুকে কেউ তাদের একজন ভাবে না, প্রয়োজন শেষে তাকে ভুলে যায় স���াই। তাই ননীবাবুর মেয়ের বিয়েতে মহল্লার সকলেই নিমন্ত্রণ পেলেও সকলেই ভুলে যান হিমুর কথা। তবে হিমুর তা নিয়ে কোন দুঃখ নেই। হিমুর এমন নির্লিপ্ত আচরণ পাঠকের কাছে তাকে কিছুটা বাক্তিত্বহীন করে তোলে এবং স্বাভাবিক ভাবেই পাঠক হিমুর জন্য কষ্ট অনুভব করেন। কিন্তু হিমুর মধ্যেও যে একটা গভীর ব্যক্তিত্ববোধ আছে সেটা অবাক হয়ে পাঠক আবিষ্কার করে যখন উদাসীনের (বাড়ীর নাম) উকিল চারু ঘোষের একমাত্র মেয়ে যূথিকা ঘোষকে পাটনা পাঠানোর জন্য ডাক পড়ল হিমুর। চারু ঘোষ অত্যন্ত বাস্তববাদী মানুষ, তিনি একটি কঠোর প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন করে চলেছেন—কাউকে উপকার বা অপকার করবেন না, নিজেও কারো কাছ থেকে উপকার নেবেন না বা অপকার করার সুযোগ দেবেন না। যূথিকাকে পাটনায় পৌছে দেওয়ার জন্য যখন তিনি হিমুকে পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা জানালেন তখন তা হিমুর আত্মসম্মানে লাগল এবং স্পষ্টভাবেই জানালেন টাকার বিনিময়ে তিনি এই ধরনের কাজগুলো করেন না। পরে যূথিকা স্বয়ং হিমুকে অনুরোধ করেন তাকে পাটনায় নিয়ে যেতে এবং তখন হিমাদ্রি না করতে পারেন না। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই হিমাদ্রিশেখর দত্ত ওরফে হিমুর জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। ট্রেনের ভিতর যূথিকা হিমুকে যতই নিচু প্রকৃতির একজন মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে থেকেন ততই তিনি পরিচিত হতে থাকেন হিমুর কর্তব্যপরায়ণতা, হিমুর ব্যক্তিত্ববোধ, হিমুর সুক্ষ্ম অনুভূতির সাথে। যূথিকার পাটনায় যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল নরেনের সাথে দেখা করা এবং তাকে জয় করা। কিন্তু ক্রমেই তিনি হিমুর কাছেই পরাজিত হতে থাকেন। পাটনা থেকে ফিরে যুথিকা বংশ আভিজাত্যের গর্বে যার পা মাটিতে পড়ে না সেই কিনা ছোট দুটি ভাইকে সাথে নিয়ে জীবনে প্রথম বারের মত পায়ে হেঁটে গিরিডির পথে পথে হিমুকে খুঁজে বেড়ান। শুধু তাই নয় যূথিকার চরিত্রে আসে কিছু অভাবনীয় পরিবর্তন সে তার জন্মদিনে চাকর, মালী আর ড্রাইভারকে নিজে হাতে খাবার খাওয়ানোর উদ্যোগও নেয় যা ছিল উদাসীনের রীতিনীতির পরিপন্থী। নিজেকে ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যূথিকা আবিষ্কার করার চেষ্টা করে সে আসলে কি চায়। নরেনের সাথে যখন যূথিকার বিয়ের সবকিছু প্রায় ঠিক তখনই আরোও একবার তার পাটনা যাওয়ার-আসার সঙ্গী হতে হয় হিমুকে। এবং এবারই যূথিকা হিমাদ্রীকে জানিয়ে দেয় নরেনকে সে বিয়ে করবে না, সে ভালোবাসে হিমুকে। হিমুও স্বীকার করেন যূথিকার প্রতি তার দূর্বলতার কথা। হিমাদ্রী রাজী হন যূথিকাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। সামাজিক মর্যাদা ভেঙ্গে নতুন পৃথবী গড়ার স্বপ্নে দুজন মানব-মানবীর জীবন হয়ে উঠলো মাহাত্ম্যপূর্ণ। কিন্তু বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে বসে হিমাদ্রীর পাশে নিজেকে বসিয়ে আজন্ম আভজাত্যে লালিত যূথিকা বুঝতে পারে কি ভুল সে করে ফেলেছে। যূথিকা সংশোধনের পথ খুঁজে খুঁজে যখন মরিয়া ততক্ষণে হিমু হারিয়ে গেছেন কোন অজানায়। কেননা হিমু বুঝতে পেরেছিলেন যূথিকার কৃতকর্মের মধ্যে আছে শুধুই বাঁধভাঙ্গা আবেগ, বাস্তবতার রূঢ় ছেনির আঘাতে যা মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙ্গে মিশে যাবে ধুলিরকণার সাথে। যদিও হুমায়ুন আহমেদের হিমু এবং সুবোধ ঘোষের হিমুর মধ্যে অনেক পার্থক্য তারপরেও কিছু সূক্ষ্ম মিল আমার চোখে ধরা পড়ে যেমনঃ নিঃস্বার্থ পরোপকার ছাড়াও দুজনেই নিজেদের প্রখর বুদ্ধিমত্তাকে চমৎকার ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। দুজনেই সূক্ষ্মভাবে ভালোবাসার বন্ধন থেকে সবসময় নিজেকে মুক্ত রেখেছেন এবং দুজনের মধ্যে পাওয়া যায় গভীর নির্লিপ্ততা। তবে একথা বলার কোন অপেক্ষা রাখে না যে, হুমায়ুন আহমেদ হিমুকে আপন মনের মাধুরী দিয়ে এমন অনন্যভাবে গড়ে তুলেছেন যে, হিমু স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বাংলা সাহিত্যের মহাকাশে হিমুর উজ্জ্বল্য কখনই ম্লান হবে না বরং আগামী প্রজন্ম হয়তো আরো বেশিই হিমু হতে চাইবে। সর্বশেষ বলতে চাই, সুবোধ ঘোষ তার জাদুকরী লেখনী দ্বারা উপন্যাসটি দারুণ উপভোগ্য করে তুলেছেন।
ডাক্তার হিমাদ্রিশেখর দত্ত। নামে ও পদে ভারী হলেও বাস্তবে খুবই হালকা মানুষ, হোক সেটা স্বভাবে বা জীবনযাত্রায়। নামে ডাক্তার হলেও তাকে কেউ কখনও ডাক্তারি করতে দেখে নি, তার অন্নসংস্থান হয় বাচ্চাদের পড়িয়ে এবং সবচেয়ে বড় কথা তার দিন কাটে মানুষকে সাহায্যে করে। কোনো বৃদ্ধকে ডাক্তার দেখাতে হবে, কোনো মেয়েকে কলকাতায় পৌঁছে দিতে হবে বা অন্যকিছু – হিমাদ্রি বা হিমুকে ডাকলেই সব সমস্যার সমাধান। পরের উপকার করার এই বাতিকের জন্য গিরিডিতে সবাই একনামে চেনে তাকে।
শহরের প্রান্তের এক বাড়ি উদাসীন। নামে উদাসীন হলেও এর মালিক হরি ঘোষ কিন্তু উদাসীন নন বরং অঢেল টাকার মালিক। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের মূলনীতি একটাই – কারো উপকার করব না, কারো উপকার নেব না। এহেন ঘোষ পরিবারও হিমুকে ডাকতে বাধ্য হলো যখন বড় মেয়ে যূথিকাকে পাটনা নিয়ে যাওয়ার আর কেউ ছিল না।
নরেনের সাথে অভিসারে রওনা হওয়া যূথিকাকে সঙ্গ দিলেও ভাগ্যের মারপ্যাঁচে একে অপরের দিকে আকৃষ্ট হলো হিমু আর যূথিকা। কিন্তু একদিকে বোহেমিয়ান হিমুর জীবনযাত্রা আর অন্যদিকে দুজনের শ্রেণি বৈষম্য – এই দুই বাঁধাকে টপকানো যে বড়ই কঠিন।
আমার মনে হয় বাংলাদেশে যত মানুষ এই বইটা পড়েছে তার একটা বড় অংশ বইটা পড়েছে হুমায়ূন আহমেদের জন্য কেননা তাঁর প্রিয় বইয়ের তালিকায় এই বইটার কথা তিনি যে স্পষ্ট করে বলে গিয়েছেন। আর আমার মতো যারা সরাসরি হুমায়ূনের দ্বারা প্রভাবিত হন নি তারাও হয়তো বইটা হাতে নিয়েছে কোনো হুমায়ূন-ভক্তের কারণে! আরেকটা কারণ এটা যে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র হিমু অনেকাংশেই অনুপ্রাণিত হয়েছে এই বইয়ের নায়ক হিমুর দ্বারা।
যাহোক, আমার কথায় আসি। সংক্ষেপে বললে বইটা আমার ভালো লাগে নি। তার সবচেয়ে বড় কারণ বইয়ের কোনো চরিত্রকেই আমি পছন্দ করতে পারি নি। হিমু, যূথিকা, লতিকা, কণিকা মামী, নরেন, চারু ঘোষ, শীতাংশু – কোনো চরিত্রই আমার স্বাভাবিক বা বৈচিত্র্যময় মনে হয় নি। চরিত্রগুলো সকলে কেমন এক খুব একমাত্রিক – হয় খুবই সরল বা খুবই জটিল। হিমুর কথাই ধরুন। এত সাধু কোনো মানুষ হয়! উপকার করতে গিয়েও যে হাসিমুখে অপমান সহ্য করে, যার আত্মমর্যাদাবোধ কখনও বড় হয়ে দাঁড়ায় না, যাকে সবাই ফুটবলের মতো লাথিয়ে বেড়ায়। আর যূথিকা তো কি চায় নিজেই জানে না, কখনও নরেন কখনও হিমু এই করতেই তার দিন শেষ। ওদিকে নরেনও কেমন যেন যূথিকা আর লতিকার মাঝে ঝুলতে থাকে। এছাড়া মামী শুধু বিয়ে বিয়ে, লতিকা শুধু ফাঁদে ফেলা, শীতাংশে মাছের খাবারের মতো টোপের কাজ করতেই দিন পার করে।
বইয়ের যে একটা দিক ভালো লেগেছে সেটা হলো লেখক বেশ ভালোভাবে কয়েকটা চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন। আর শ্রেণি বৈষম্যের দিকটাও সুন্দরভাবে এসেছে। সমাজে আমরা চাইলেই যে সবকিছু করতে পারি নি, নিজের সামাজিক শ্রেণি যে আমাদের অনেককিছু করতে বাধ্য করায় বা অনেককিছু করতে বিরত রাখে সেটা উঠে এসেছে।
সবমিলিয়ে, একবার পড়ার মতো বই যা পড়ে নিশ্চিন্তে ভুলে যাওয়া যায়।
"হেসে ফেলে যূথিকা - তার মানে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার সাহস তোমার নেই। হিমু - না নেই। যূথিকা - কেন? যূথিকার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তীব্র তীক্ষ্ণ ও যন্ত্রণাক্ত একটি দৃষ্টি তুলে তাকিয়ে থেকে হিমু বলে - তোমাকে ভালোবাসি বলে।"
হিমাদ্রি দত্তকে লোকে হোমিও হিমু নামে ডাকে।কারো বিপদে কিংবা প্রয়োজনে তাকে দেখা যাবেই।কেউ বেড়াতে যাবে বা কাউকে আনতে হবে, সঙ্গী নেই তো চিন্তা কিসের - হিমু আছে তো।সে সবার সফরসঙ্গীর দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয় কিন্তু প্রতিদান দিতে চাইলে তাকে আর প্রয়োজনে পাওয়া যাবে না।তার কাছে লোকে একেবারে শেষসময়ে ঔষধ নিতে আসে,হিমু জানে এখন আর ঔষধে কাজ হবে না।তাই সে শেষযাত্রার শবসঙ্গীর প্রস্তুতি নিয়েই যায়। উদাসীন বাড়ির মেয়ে যূথিকাকে পাটনা পৌঁছে দেওয়ার ডাক পড়লো হিমুর। সেখানে আছে নরেন, যার সাথে যূথিকার বিয়ের কথা চলছে।ট্রেনে বারবার যূথিকাকে আনা-নেওয়ার মাধ্যমে হিমুর সাথে তার প্রেম হয়ে যায়। যূথিকা ভীষণ জেদি মেয়ে।সে হিমুর সাথে বন্ধুত্ব বা ট্রেনে আসা- যাওয়ার সময় তাকে ভালোবাসতে পারে কিন্তু চালচুলোহীন হিমুকে সে বিয়ে করতে চায় না।এ কথা সে হিমুকে বলতে চায় কিন্তু সহজ-সরল হিমু যে সত্যিই তাকে ভালোবেসেছিল।
একবার কোথায় যেন পড়লাম,হুমায়ুন আহমেদের "হিমু" চরিত্রটি নেয়া হয়েছে "শুন বরনারী" বই থেকে। ঠিক তার পরের দিনই হুমায়ুন আহমেদের "দ্বৈরথ" বইটিতে এই বইয়ের সম্মন্ধে পুনরায় জানতে পারি; একইসঙ্গে পড়তে আগ্রহ বোধ করতে থাকি। . বেশ সহজ সাবলীল লেখা। আর হ্যা!হিমুর সাথে "হিমাদ্রির" নাম ছাড়া অন্যকোন মিল পাই নি।
সুবোধ ঘোষের একটি গল্প "চতুর্থ পানিপথের যুদ্ধ" পড়ে মোহিত হয়েছিলাম। এরপর আনন্দ পাবলিশার্স - এর গল্পসমগ্র ১ ও ২ এর কিছুটা পড়েছিলাম, যদিও সেরকম আর ভালো লাগেনি। উপন্যাসটিও তাই। কাহিনীর প্রথমার্ধ হিমাদ্রীশেখর দত্তকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু যখন থেকে লেখক যূথিকা ঘোষের মনের অবস্থা বর্ণন শুরু করলেন, তখন থেকে হোমিও ডাক্তারবাবু হারিয়ে যেতে লাগলেন, এখানে বলাই বাহুল্য, উপন্যাসটি পড়া না হয়ে থাকলে এই রিভিউ আর পড়বেন না, রসভঙ্গ হতে পারে। সবশেষে ডাক্তারবাবু হারিয়েই গেলেন, কিন্তু হেরে গেল যূথিকা ঘোষ। মনে বহু প্রশ্নের উদ্রেক করে দিয়ে যায় বটে, যেমন উদাসীন - এর নারী যূথিকা ঘোষ স্বামী বিবেকানন্দের নামও শোনে নি, কাজেই "নরেন"কে তার চিনবার কথা নয়। শব্দ নিয়ে বিস্তর খেলা হয়েছে উপন্যাসে। কিন্তু যুথিকা ঘোষের চরিত্র বিশ্লেষণ অপেক্ষা, তার অহঙ্কার ভেদ করে খেয়ালী দীনতার কথা জেনে পাঠকের রাগ ছাড়া কিছুই ধরবে না। আমার মনে হয় লেখক বাস্তব কথাই লিখেছেন, তাই তাঁর ওপর কোন রাগ নেই। আক্ষেপ যূথিকা ঘোষের মতো লোকের ওপর, খেয়ালী দীনতার মতো আত্মকেন্দ্রিক আর কিছু নেই। এসব মানুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকাই বা কেন আর তাকে নিয়ে পৌনে দুশো পাতার বই - ই বা পড়া কোন দরকারে! বরং হিমাদ্রী যদি কেবল বাতিকগ্রস্ত পরোপকারী না হয়ে একটি লক্ষ্য তুলে ধরতে পারতো (যা অবশ্যই আছে তার জীবনে, কারণ বাতিকগ্রস্ত কেউ এমনি এমনি হয় না), তাহলে গ্রন্থটি জীবন বদলে ফেলার উপাদান রাখতো। চারু ঘোষের মেয়ে যুথিকা ঘোষ ভাবে বাতিক, তার চোখেই যেন সমগ্র উপন্যাসটি দেখা। শুন বরণারী কথার মানে - শোনো উৎকৃষ্ট রমণী, বিবাহের জন্য প্রকৃত পুরুষের চয়ন করা শেখো। তোমার "অহঙ্কেরে মেয়ে" চরিত্র শুধু বাইরের প্রলেপ, অন্তরে তুমি আরোও লোভী, আত্মকেন্দ্রিক। ডাক্তার হিমাদ্রীর প্রতি যেমন তোমার কোন ভয় নেই, আকর্ষণ নেই, কিছু নেই, তেমনি কেতাদুরস্ত, সন্দেহবাতিক, লম্পট নরেনবাবুর কাছে তুমি দাসীসুলভ। আর তাতে "উদাসীন"এর "কালচার" আহত হয় না। মহীয়সী, তুমি প্রেম লাভের যোগ্যা নও। সাধারণতঃ দেখা যায়, ট্র্যাজিক কাহিনী বাজারে চলে বেশি। এই প্রথম দেখলাম বিয়োগাত্মক কাহিনী অবলম্বনে ছায়াছবি উত্তম কুমার আর সুপ্রিয়া চৌধুরীর কাহিনী বদলে ফেলা হয়েছে মিলনাত্মক সমাপ্তি ঘটিয়ে। সেই যূথিকা ঘোষ, "হিমাদ্রীবাবু" বলে তার প্রথম ডাক, হোক না স্বার্থের খাতিরে, তাও হিমাদ্রীর মনে সাড়া ফেলেছিল, সেটি সিনেমায় দেখানো হয় নি, বরং সংলাপটি চারু ঘোষের স্ত্রী, যূথিকার মাকে দিয়ে সারানো হয়েছে। এটি আমার পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। আমার জীবনে পড়া তিনটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের নাম যদি বলি, প্রথম - আদর্শ হিন্দু হোটেল, দ্বিতীয় - পদ্মা নদীর মাঝি, তৃতীয় - এই বই।।
ন্যাকামির জন্য যে গানকে দুমিনিট সহ্য করতে না পেরে এক সন্ধ্যায় যুথীকা গানের আসর ছেড়ে উঠে এসেছিল, সেই গানটিই এক গভীর রাতে, শো করে বাতাস কেটে অন্ধকার চাদরে ঢাকা নির্জন মাঠ-ঘাট পেড়িয়ে যাওয়া এক ট্রেনের কামরায় যুথীকাকে বিহবল করে দেয়। পাশে বসা সংসারে আপাত উদাসীন ও নির্বিকার হিমুকে মনে হয় অতি আপন, মর্মের সবচেয়ে গভীর কুঠুরিতে যার জন্য বাজছে ভালোবাসার সুর, সে নিজেও জানেনা আপনাতেই কখন তার মুর্ছনা শুরু হয়েছে, গিরিডী-পাটনার ট্রেন যাত্রার আড়ালে। সেই রাতে, অতি সংক্ষিপ্ত কিছু কথাতে, এতদিন যা ছিল অব্যক্ত, দুজনার ভালোবাসার স্রোত এক হয়ে উঠে এক অপূর্ব কল্লোল তুলে। কিন্তু, এই অতি শুদ্ধ ও অকৃত্রিম ভালোবাসা কি সমাজের আর সব কিছুকে, স্বার্থ আর জীবনের দেনাপাওনাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে? যুথী কিংবা হিমু তাদের কি সেই মনের আর ভালোবাসার জোর আছে? না থাকলে বৃথাই কেন পরোপকারের বাতিকে মোহগ্রস্থ, সর্বদা মানুষের অবহেলা পেয়ে আসা হিমুর নিরেট হ্রদয়ে ঝড় তোলা? আকাশের বিশাল মত যাদের হৃদয় তারা অবশ্য কখনো কখনো হেরে গিয়েও যেনে জিতে যায়, আপাত কাপুরুষের মত কাজও যেন তাদের জন্য বাস্তবে মহৎ সাহসের একটি কাজ। হিমু তো তাদেরই দলের একজন, তার জন্য কষ্ট হচ্ছে কেন? আর যুথী সত্যিই জয় পেল তার মনের আশা পূর্ণ করতে পেরে?
বইটির কথা প্রথম জানতে পারি হুমায়ূন আহমেদের কোনো একটি লেখায়। তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন বইটির সরলতা আর মানবীয় আবেগের এই অপূর্ব প্রকাশ দেখে। বোধ করি, সুবোধ ঘোষের লেখার এই ধরণ তাকেও প্রভাবিত করেছে বেশ। এই বইয়ে হিমাদ্রি শেখর দত্ত ওরফে হিমুর মধ্যে হুমায়ূনের হিমুর বেশ একটি ছায়া দেখতে পাই, হয়ত এই চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয় জন্ম নেয় আমাদের 'হিমু'।
বহুদিন পর সহজ এবং সাধারণ ভাবে লেখা, হয়ত অতি জটিল তত্ত্ব যাতে নেই, বইটি মন ছুয়ে গেছে। চুলচেরা বিশ্লেষণে বসলে কত কিছুই হয়ত অর্থহীন লাগবে, কিন্তু গাড়িতে জ্যামে বসে বসে যুথীকা আর হিমুর মিষ্টি কথোপকথন, গিরিডি-বাসী অদ্ভুত কিছু চরিত্রের সুখ-দুঃখের দুটি কথা আর হিমুর নির্বিকার মহানুভবতা আর মানবিকতা বেশ মাতিয়ে রেখেছিল মন, প্রভূত আনন্দ পেয়েছি।
বইটা সম্পর্কে বেশ ভালো ধারনা ছিল, অদ্ভুত এক চ��িত্র ন��য়ে গল্প, এরকম। তবে জত গর্জে তত বর্ষে না।
ছাই ফেলতে ভাঙ্গাকুলো প্রবাদের বাস্তব রূপ হিমু। একে তীর্থে নাও তো তার বিয়ের বাজার কর কিংবা মেয়ের দল কে কলেজে দিয়ে আসো, সব খানেই তার ডাক পড়ে। সে কে, সে কোন জাত, কোত্থেকে এলো, কেন এল কেউ জানেনা। তবে গত বছর খানেক ধরে নিজেকে উজার করে দিচ্ছে।
এই গিরিডির এক অদ্ভুত পরিবার ঘোষ পরিবার, তাদের বাড়ির নাম আরো অদ্ভুত। “উদাসীন।” এদের বড্ড অদ্ভুত স্বভাব, নিজেরা যদি কোন আয়োজন করে তা বাড়ির চাকর থেকে মালি খেতে পারবে না। হয়তো অতিথি কেউ এসে বসলে এক গ্লাস পানিও জুটবে না। বাড়ির বাইরে কারো পা রাখা তো চলবেই না, সাথে কার না নিলে তো বড় সড় না। উদাসীন মোটেও না, বরং অতি সচেতন আর অদ্ভুত পরিবারের মেয়ে যুথিকা। তার অধিকাংশ দিন কাটে গিরিডির বাইরে, মামীর বাড়ি। সেখানে কোন এক বোম্বে প্রবাসী নরেন তার বাগদত্তা।
যুথিকা কে আনা নেওয়া বলাইবাবু নামে এক লোক করে, কিন্তু বাতের ব্যাথায় কাতর সে। কারো উপকারের ধার ও ধারি না, করি না নীতিতে বিশ্বাসী এই ঘোষ বাবুর মেয়ের জন্য এবারে ডাক পরে হিমাদ্রীর। পেশা হোমিওপ্যাথি ডাক্তার হলেও, ডাক্তারীর ধার ধারে বলে মনে হয় না। তো আত্মঅহংকারে ভোগা যুথিকা শেষ স্টেশন পর্যন্ত চেষ্টা করে যায় হিমুকে অপমানের, যা ইচ্ছে তাই করে। কিন্তু কে জানত, হিমাদ্রীর মতই অবিচল হিমুর এই চারিত্রিক রূপ বদলে দেবে যুথিকার স্বভাব। একদিকে বাগদত্তা নরেন, অন্যদিকে হিমাদ্রীর মতই অবিচল হিমুর অবিচলতা টলিয়ে দেয় যুথির অহমিকা। কিন্তু এর পর?
আহামরি কোন গল্প না, খুব সাধারণ আর চেনা গল্প। ছোট খাটো, না বিরহের উপন্যাস বলা চলে না প্রেমের। এই চলছে চলুক, জানি কী হবে শেষে এরকম আর কী। উদাসীন বাড়ির কথা প্রসঙ্গ কতকটা কমিক রিলিফের মত, মত, কিন্তু না। সেই ট্রেন যাত্রা থেকে যেন পাঠক বুঝবেন কী ঘটছে, ঘটবে। এই আর কী। আধুনিক ভাষায় বললে ক্রিঞ্জ বলা হবে, ভাগ্য সে সময় সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, এই নামে মুভিও আছে বলে। দেখার ইচ্ছে আর নাই, হয়তো কোন কালে না জেনে দেখেও থাকতে পারি।
This novel literally rendered me tearful. Eyes were pouring while reading. Just can't express the felling of my arid heart. I have understood why Humayun Ahmed took the iconic name from here.Himu is a dreary desert devoid of oasis. Everyone used him on their demand. On the contrary it also revealed the condescending characters of the rich people(as inhabitants of novel-mentioned palace prefer Sumonto the richer to Naren the rich). It unraveled the mystery of why being helpful is not a bliss but you have to be durable to imbibe agonizing pain as well. Now counseling myself with a sigh, I won't read it further to relieve myself.
চিরন্তন বাংলা উপন্যাসগুলোর প্রতি বরাবরই আমার ঝোঁক। প্রায় আশি বছর আগে লেখা একটি উপন্যাস, অথচ কি আশ্চর্য সামঞ্জস্যপূর্ণ! হিমাদ্রী শেখর দত্ত উরফে হিমু যে আদতে আমাদের হুমায়ূনের হিমু সৃষ্টির নেপত্থে ছিলো উপন্যাসটি পড়ার পর বুঝতে পারলাম। গল্পের গাঁথুনি ভারী মজবুত। বইটির সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার চরিত্রগুলোর ডেভেলপমেন্ট এবং মনোবিশ্লেষণ। হালকা কিংবা অনেক জায়গায় বড্ড বেশি নাটকীয় তবে সুন্দর একটি সময় কেটে যাবে বইটির সাথে।
প্রথম দিকে ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। নিজে বোকা সেজে অন্যকে বোকা বানানোর বিষয়টা হিমু বা হিমাদ্রি চরিত্রে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। কিন্তু পরে পরে বোরিং।
লেখকের একটা বিষয় মারাত্মক বিরক্ত লেগেছে। তা হলো কোনো রকম সর্বনাম ব্যবহার না করে বার বার বিশেষ্য ব্যবহার করাটা। যূথিকা কিংবা হিমাদ্রিকে নিয়ে যদি পর পর ৪/৫ টা লাইন থাকে, লেখক প্রতিটা লাইনেই তাদের নাম নিয়েছে।
প্রেমের উপন্যাস কখনোই আমার আগ্রহের বস্তু ছিল না, তাও নিতান্ত আগ্রহের বশবর্তী হয়ে বইটা পড়া। সাধারণ গল্প, সাধারণ গোছগাছ, এছাড়া আর তেমন কিছু মনে হয়নি।
তবে এটা স্বীকার করবো যে, লেখক লেখেন ভালো। আর শুধুমাত্র এটার টানেই উপন্যাস শেষতক পড়া হয়েছে।