Jump to ratings and reviews
Rate this book

চতুষ্পাঠী

Rate this book
একদিকে প্রবল সংকটে দেশভাগ-পরবর্তী বাংলা—যেখানে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বাঙালি আর তার অবশিষ্ট মূল্যবোধ, অন্যদিকে গুটিপাঁচেক ছাত্রছাত্রী নিয়ে চতুষ্পাঠী টিঁকিয়ে রাখার মহাকাব্যিক লড়াই লড়ছেন অনঙ্গমোহন কাব্যব্যাকরণতীর্থ। ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগের জন্য আর কোনো তৃতীয় ব্যক্তি, যিনি কিনা পুরোহিত অপরিহার্য কিনা—সেই কূট প্রশ্নের উত্তর খুঁজে যায় অনঙ্গমোহনের দার্শনিক মন, খোঁজে আত্মার স্বরূপ। অচল পয়সার মতো ইংরেজি না-জানা এই আচার্যদেব আর তাঁর পৌত্র, পিতৃহীন বিলুর চোখ দিয়ে ক্যালাইডোস্কোপের মতো উদ্‌ভাসিত উত্তাল ষাটের দশক। চাল নিয়ে হাহাকার, মিষ্টান্ন নিয়ন্ত্রণ আইন, ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলি, ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে পুড়তে থাকা ট্রাম—ভয়ংকর এক সময়। কিন্তু সমসময় এ উপন্যাসে এ&

255 pages, Kindle Edition

First published January 1, 2014

5 people are currently reading
171 people want to read

About the author

Swapnamoy Chakraborty

41 books35 followers
স্বপ্নময় চক্রবর্তীর জন্ম ২৪ আগস্ট, ১৯৫১ সালে উত্তর কলকাতায়। রসায়নে বিএসসি (সম্মান), বাংলায় এমএ, সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেছেন। লেখকজীবন শুরু করেন সত্তর দশকে। প্রথম দিকে কবিতা লিখলেও থিতু হয়েছেন গল্প ও উপন্যাসে। তাঁর লেখা গল্পের সংখ্যা প্রায় ৩৫০। প্রথম উপন্যাস ‘চতুষ্পাঠী’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকায়। পাঠক মহলে সাড়া ফেলেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ এবং কলাম কিংবা রম্যরচনাতেও সিদ্ধহস্ত। তাঁর রচিত ‘হলদে গোলাপ' উপন্যাসটি ২০১৫ সালে আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হয়। ‘অবন্তীনগর' উপন্যাসের জন্য ২০০৫ সালে বঙ্কিম পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কার, সর্বভারতীয় কথা পুরস্কার, তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার, গল্পমেলা, ভারতব্যাস পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। সাহিত্যের বাইরে তিনি গণবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
38 (59%)
4 stars
21 (32%)
3 stars
1 (1%)
2 stars
4 (6%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 20 of 20 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,651 reviews418 followers
April 13, 2023
এই গল্পটা অনেকবার বলা হয়ে গেছে। অনেকবার বলা হচ্ছে। অনেকবার বলা হবে। আমি নিজেই এ গল্প কতোবার পড়েছি তার ইয়ত্তা নেই। দেশভাগের গল্প,মানুষের বাস্তুভিটা হারানোর গল্প, ছাপোষা মধ্যবিত্ত থেকে পথের ভিখিরি হওয়ার গল্প কতোজন যে কতোভাবে লিখেছেন! তবু অনঙ্গমোহন আর তার "চতুষ্পাঠী"র গল্প কেন এতো গভীরভাবে দাগ কাটলো মনে? স্বপ্নময় চক্রবর্তীর সার্থকতার রহস্য কী?

"চতুষ্পাঠী"র কাহিনি সহজ, নিরাভরণ। পণ্ডিত অনঙ্গমোহন আর পরিবারের গল্পটি নিঃশব্দ পতনের, ক্ষয়ের। লেখক কোথাও কিছুই চাপিয়ে দিচ্ছেন না। যা ঘটার ঘটছে আমাদের চোখের সামনে। ধীরে ধীরে একটা পরিবার আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে "বাঁচা,শুধুই বাঁচা" মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বেঁচে থাকছে। নিজের অহং বজায় রেখে কীভাবে বাঁচতে হবে জানা নেই অনঙ্গমোহনের। এই বৃদ্ধ তার জ্ঞান,গরিমা, আভিজাত্য বজায় রাখার চেষ্টা করছেন অথচ আমরা জানি তিনি সফল হবেন না।শেষ পর্যন্ত শুধু বেঁচে থাকাটাই সত্যি হবে। লেখক এই বাঁচার গল্পটা বলেছেন ঈশ্বরের মতো নির্বিকারত্ব নিয়ে। গল্পের চরিত্রগুলোকে তিনি কখনোই করুণার পাত্র বানিয়ে তোলেন নি।
"চতুষ্পাঠী" মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি লাভ করেছে কারণ জীবনের প্রতি তীব্র আসক্তি ও তার নির্লিপ্ত নিষ্করুণ উপস্থাপন সার্থক মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্য।

"ওঁ শন্ন আপো ধন্বন্যাঃ শমনঃ সন্তু নৃপ্যাঃ হে জল, হে ফুটন্ত জল, হে চায়ের জল, আমাদের মঙ্গল কর। ওঁ আপো হি ষ্ঠা ময়োভুব স্তা ন ঊর্ধ্বে দধাতন... হে জল, চায়ের জল হে, আমাদের অন্নভোগের অধিকারী কর। রমণীয় ব্রহ্মের সঙ্গে সংযুক্ত কর। কারণ অন্নই ব্রহ্ম। আমারে বাঁচাও।"

অনঙ্গমোহন, চূড়ান্ত পতনের ঠিক আগে কেমন লেগেছিলো আপনার? বুকের ভেতরটা কি খুব ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো? হোলো না, হয় না, সবকিছু ভেঙে পড়ে!

("চতুষ্পাঠী"র অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দিয়ে আমাকে বইটা পড়তে বলেছিলো বিমুক্তি।প্রাজ্ঞ এই পাঠকের জন্য ভালোবাসা।)

*২২শে মার্চ, ২০২২
Profile Image for বিমুক্তি(Vimukti).
156 reviews89 followers
January 31, 2022
মহৎ সাহিত্যের জন্য পাঠকপ্রিয়তা ঠিক কতোটুকু প্রয়োজন, তা আসলে ভাবার বিষয়। অবশ্য এই ভাবনাটাই অপ্রয়োজনীয়। একটা সময় আসে, যখন সাহিত্যকে আমরা শুধু নিজেদের করে নিতে শিখি। এই যে আমরা জীবনের উত্তাল সময়ে, ভবিষ্যতকে অন্ধকার ঘরে ফেলে রেখেও সাহিত্যে ফিরে আসি, এ আসলে কীজন্য? নিজের জন্যই। সমাজের কোনো স্তরে, কোনোভাবেই জায়গা করে নিতে না পারলেও সাহিত্যের একেকটি অংশে আমরা নিজেদের হাত পা মেলে শুয়ে থাকার সুযোগ দিই।
এ বই অনেকটা দুর্ঘটনাবশত আমার হাতে এসে পড়ে, হয়তো জীবনের শ্রেষ্ঠ দুর্ঘটনা।
বইয়ের নাম 'চতুষ্পাঠী'। অর্ধেকের মতো পড়ার পর বারবার মনে হচ্ছিল নামকরণটা বোধহয় ঠিক হলো না। কোথায় চতুষ্পাঠীর গল্প? এখানে তো লেখক দেশভাগের পর ছিন্নমূল এক পরিবারের গল্পই কথার পর কথা সাজিয়ে বলে গিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখছেন! পরবর্তীতে অবশ্য আমার ভ্রান্ত ধারণাটা মিহি বাতাসের সাথে ধীরে ধীরে উড়ে যায়। নিজের অজান্তেই খেয়াল করি, অনবদ্য এক চতুষ্পাঠীর গল্প অসাধারণ এক রাস্তায় এগোচ্ছে।
অনঙ্গমোহন এক ক্ষয়িষ্ণু পণ্ডিত, দেশভাগের পর নিজ ছেলের পরিবারের সাথে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে একটা টোল(চতুষ্পাঠী) খোলে সরকারের দাওয়া ভাতাতেই ওনার চলে যেতো। গল্পের শুরু থেকেই যে ওই এক মন খারাপ বইয়ের পাতায় জায়গা করে নিলো, তা আর প্রস্থান করে নি। জগদীশ এবং তার স্ত্রী অঞ্জলি দু'টো ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের জন্য নিজের সবকিছু দিয়ে সংগ্রামে নামে। সঙ্গে মাথার উপর আরেক বৃদ্ধ অনঙ্গমোহনের ভার। তাও বোধহয় পরিবারটা উতরে যেতো, কিন্তু সংসারের মাথা জগদীশের অকালমৃত্যু সবকিছু তছনছ করে দেয়। ভেঙে পড়ে সকল খুঁটি। তখন আবার অঞ্জলিকে কাজে নামতে হয়। বিলুকেও নামতে হয়। কেউ অফিসে কাজ করে, কেউ ঠোঙা বানায়, কেউ দেয়ালে পোস্টার সেটে দেয়। আর টোলের টাকায় যে নিজের ভরণপোষণের খরচ পুরো মিটে না, এটা জেনে অনঙ্গমোহনকে অন্ন ধ্বংসের অনুশোচনায় পুড়ে মরতে হয়। এই সংগ্রাম, এই সংগ্রাম যে কতোটা নির্মম! এই নির্মমতাকে এভাবে কতোজন লেখক ফুটিয়ে তুলতে পারতেন?
আর কী লিখব? বেশ কিছুদিন আগে পড়ে শেষ করেছিলাম। এখন স্মৃতি ঘাটতে গিয়ে কয়েকটি সংলাপ, কয়েকটি খণ্ড খণ্ড দৃশ্য আমাকে একদম কুপোকাত করে ফেলছে। এতো শক্তিশালী ছিল বইটির প্রতিটি বর্ণ!
বিলুর 'বিষ সন্দেশ', অথবা,"চিড়া আবার কী, চিড়ে বলেন," ওয়েটারের এই সংলাপে পূর্ববঙ্গের ভাষার প্রতি প্রচ্ছন্ন বিদ্বেষ,রাতে স্বপ্নার পাশে শুয়ে অঞ্জলির,"বিশ্বাস কর মা, কিছু হবে না" বলা, অথবা সিড়িতে দাঁড়িয়ে অনঙ্গমোহনের কাছে সুমিতার সেই স্বীকারোক্তি,"অজিতবাবুর অফিসে রিসেপশনিস্টের-এর চাকরি খালি আছে"।
এ শব্দগুলো, এ লাইনগুলো একেকটি মহাকাব্য। এই সংলাপগুলোতে যে গল্প লুকিয়ে আছে, তা পৃথিবীর কোনো মহাকাব্যের ধারণ করার সামর্থ্য নেই। এ শব্দগুলোকে আমি শক্তিশালী না বলে থাকি কীভাবে!

আর বইয়ের শেষটুকু? এ বই তো শেষ হওয়ার আগেই হাজার বার শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রতি পরিচ্ছেদের শেষেই বুকে জমে থাকা বছরের সবচে' বড়ো দীর্ঘশ্বাসগুলো ছাড়ছিলাম। আর যখন প্রকৃতপক্ষেই একদম ইতিতে চলে আসলাম, তখন আর শেষ করার শক্তিটুকুও আমার ছিল না। শেষের লাইনগুলোর দিকে শুধু চোখ বুলিয়ে গিয়েছি।
সংস্কৃতের পণ্ডিত, বিখ্যাত অধ্যাপকের সন্তান অনঙ্গমোহন পেটের দায়ে এবং মোচড়ে চায়ের দোকান খোলে মন্ত্রপাঠ করছিলেন,

অনঙ্গমোহন কেটলিতে চাপানো ফুটন্ত জলের দিকে তাকিয়ে বলতেই থাকেন— ওঁ শন্ন আপো ধন্বন্ন্যাঃ শমনঃ সন্তু নূপ্যা হে জল, হে ফুটন্ত জল, হে চায়ের জল আমাদের মঙ্গল কর। ওঁ আপো হি ষ্ঠা ময়োভুব স্তা ন উর্ধ্বে দধাতন…হে জল, হে চায়ের জল হে, আমাদের অন্নভোগের অধিকারী কর। রমণীয় ব্রহ্মের সঙ্গে যুক্ত করো। কারণ অন্নই ব্রহ্ম। আমারে বাঁচাও।

কারণ অন্নই ব্রহ্ম। আমারে বাঁচাও।
Profile Image for Nahar Trina.
Author 13 books60 followers
August 25, 2021
কিছু কিছু বই পাঠে কেমন এক বোধ জন্ম নেয়। পাঠক চাইলেও যেন সেটা এড়াতে পারেন না ।  শব্দের আড় ভেঙে চরিত্রগুলো দিব্যি চিবুক নাড়ে। তাদের অবয়ব ছুঁয়ে থাকা বিষাদ কিংবা লুকোনো দুঃখ বড় স্পষ্ট চোখে দেখা যায়। 'দুঃখ' শব্দের মাঝখানে যে বিসর্গ, সে তখন সত্যি সত্যি দু'ফোটা অশ্রুবিন্দু হয়ে টলটল করে, জ্যান্ত হয়ে ওঠা অনঙ্গমোহন কিংবা বিলুর দু'চোখে। মুছিয়ে দেবার অসহায় ইচ্ছে জাগে। এমন বই পাঠ শেষে থম ধরে বসে থাকতে হয়। কাহিনির বিষাদ, যেমন বেদনাক্রান্ত করে, তেমনই কিছু অপরাধবোধও কোথাও একটা জাগিয়ে তোলে। দুঃখী-নিরন্ন মানুষগুলোর বিপরীতে নিজেদের যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও সন্তুষ্টির মুদ্রা স্বভাবে রপ্ত করতে না পারার অক্ষমতায় অপরাধবোধটা দানা বাঁধে।

যে কোনো বই পড়বার আগে পাঠক মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক , কেন পড়বো এ বই? না পড়লে কী যায় আসে! একটা দশকের রাজনৈতিক-সামাজিক উত্থান-পতন, বা ঘটে যাওয়া ইতিহাসের ভাষ্যে যাঁরা আগ্রহী, স্বপ্নময় চক্রবর্তীর 'চতুষ্পাঠী' উপন্যাস তাঁদের জন্য আনন্দপাঠ হবে নিঃসন্দেহে। আখ্যান প্রিয় পাঠক আপনি? সেও অসম্ভব রকমের আছে 'চতুষ্পাঠী'তে। এমন চমৎকার আখ্যানের গড়ানো, যা পড়তে গিয়ে  পাঠক হি��েবে আপনি বাধ্য হবেন বলতে - উফ্ এতদিন কেন পড়িনি এ বই! বাড়িয়ে যে বলছি না সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝবেন 'চতুষ্পাঠী' পাঠ শেষে।  'চতুষ্পাঠী' অর্থ টোল/পাঠশালা। উপন্যাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র এক সময়কার গর্ব আর অহঙ্কার হিসেবে চিহ্নিত টোল বা পাঠশালা।

পৃথিবীতে কোনো কিছুর অবস্হানই চিরকালের জন্য নয়। সৃষ্টির ভেতর ধ্বংসের বীজ বোনা থাকে। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে যা কিছু আমরা গড়ে তুলি, একটা সময় পেরিয়ে সেটা তামাদি হয়। এই সত্যিটা সবাই সমানভাবে গ্রহণে সক্ষম নন। হাতের মুঠো খুলে পুরোনো সময়ের অভ্যস্ততাকে যে বা যাঁরা ভাসান দিতে পারেন না, তাঁরা পদে পদে কষ্ট পান। মরমে মরেন শতবার। দেশভাগের অভিঘাতে ভিটেমাটি হারা বাঙাল আচার্য অনঙ্গমোহন, যিনি একজন টোলপণ্ডিত, অসম্ভব সৎ একজন মানুষ। সংস্কৃতকে যিনি ষাটদশকে বসেও ভাবেন বাংলাভাষার অহংকার। ইংরেজির অবস্হান তাঁর চৌহদ্দি থেকে যোজন দূরত্বে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে টোল পণ্ডিত যে নিতান্তই অজেকো, এই সত্যিটা বুঝলেও সপাটে স্বীকারে তাঁর আত্মগরিমায় ভরপুর মন কেমন কুণ্ঠিত। তিনি ভালোভাবেই বোঝেন তার অষ্টমশ্রেণি পাশ ছেলে জগদীশের কারণে তাদের 'অনাহারে কালাতিপাত করতে হয়নি।' কিন্তু ভাগ্যের মার খাচ্ছেন এখানেও, একমাত্র ছেলের অকাল প্রয়াণে কোনোভাবে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাটাও দায় হয়ে ওঠে এক পর্যায়ে। সরকারী পঞ্চাশটাকার সামান্য অনুদান অনঙ্গমোহন আর তার ছেলের বৌ, পৌত্র, পৌত্রী, শ্যালকপুত্র বেষ্টিত সংসারের থালায় অন্নের যোগানে তৃপ্তি না দিলেও ছাত্রীর  'আচার্য' সম্বোধনে কী ভীষণ তৃপ্তি পান। তাঁর মনে হয় আনন্দই ব্রহ্ম। বাস্তবতার দারুণ ঝামায় সেই মানুষটা যখন পথে নামেন ঠোঙা বিক্রির ছুতোয়। দোকানে দোকানে যাচ্ছেন- কিন্তু আত্মসম্মান বাধা দিচ্ছে- মুখ ফুটে বলা যাচ্ছে না ঠোঙাগুলো রেখে কিছু পেলে ঘরে উনুন জ্বলবে। কিংবা ফুটপাতে নিজের সংগ্রহের বইগুলো বিক্রির আশায় নিয়ে যাওয়ার অংশটা--- আহা! যেন কোনো ক্ল্যাসিক সিনেমার অজর দৃশ্য, পাঠক মনে যা চিরকালের জন্য দাগ বসিয়ে দিচ্ছে। পাঠক বুকের ভেতর কিছু একটা গড়ানোর অনুভূতি টের পেতে পেতে পাঠ এগিয়ে নেবেন। ছোট্ট বিলু, যে তার অসুস্হ বাবার জন্য সন্দেশ কিনছে-- সন্দেশ রাস্তায় গড়িয়ে পড়েছে...আহ্! অস্ফূটে পাঠক ককিয়ে উঠবেন--- প্রিয় ছাত্রীকে উপহার হিসেবে দেওয়া বইয়ের শেষ পরিণতি উদ্ধারের মর্মন্তুদ অংশে পাঠক মাত্রই অশ্রুসিক্ত হতে বাধ্য। আর নাই বলি...কোনো ভাবেই এমন অসাধারণ একটা উপন্যাসের কাহিনি বলে দিয়ে যাঁরা এখনও পড়েননি তাঁদের আনন্দ মাটি করতে চাই না। স্বপ্নময় চক্রবর্তীর 'চতুষ্পাঠী', এক পিতামহ আর পৌত্রের চোখ দিয়ে একটা দশককে দেখতে পাওয়ার অপূর্ব উপাখ্যান। যে উপাখ্যানের ভাঁজে ভাঁজে আছে দেশভাগের ফুঁপিয়ে ওঠা হাহাকার। ইংরেজি না জানা, সময়ের বিচারে অচল হওয়া এক সংস্কৃত পণ্ডিত অনঙ্গমোহনের নিদারুণ দগদগে আবিষ্কার-- অন্ন-ই ব্রহ্ম! 
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
April 22, 2023
" দুঃখ শব্দটার মাঝখানে বিসর্গটা যেন চোখের দু-ফোঁটা জল "

দেশভাগ,একটা একটা বিষাক্ত কাঁটার নাম। যে কাঁটা একটা দেশের মানচিত্র কে করেছে দু-টুকরো,  দেশের মানুষের হৃদয় কে করেছে কয়েকশ টুকরো। দেশ ভাগের অভিশাপের বলি যে কত মানুষ, তা বলা দুঃসাধ্য।  এই অভিশাপ যাদের ছুঁয়েছে,তারাই শুধু জানে এর তীব্রতা।

লেখক " স্বপ্নময় চক্রবর্তী " আমাদের শুনিয়েছেন দেশভাগ নামক অভিশাপে অভিশপ্ত এক ব্যক্তি তথা তার পরিবারের গল্প। গল্পের নাম " চতুষ্পাঠী "।

শ্রীঅনঙ্গমোহন ভট্টাচার্য কাব্যব্যাকরণতীর্থ। একটা সংস্কৃত টোলের অধ্যাপক। দেশ ভাগের পর পূর্ব বাংলা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন পশ্চিমবাংলায়। সহায় সম্বলহীন অবস্থায় তার এক মাত্র ভরসা ছিল পুত্র জগদীশ। পুত্রের অকাল মৃত্যু তে উবে গেল শেষ প্রদীপ। ঘরে হানা দিল আরেক অভিশাপ " দৈন্য "।

দেশ ভাগের অভিশাপ তাও কাটল,আরেক দেশে আশ্রয় পেয়ে! কিন্তু এই দৈন্য কিভাবে কাটবে? অনঙ্গমোহন কোন কিছুতে নিজের সততা,নিজের নিষ্ঠা বিলিয়ে দিতে রাজি নন। ছলচাতুরী করে মানুষ ঠকানোতেও রাজি নন অনঙ্গমোহন। আবার কোন হীন কাজ করতে মান খোয়ানোর ভয় তার। কিন্তু পেট সে কথা মানবে কেন? অন্ন ছাড়া সে কিছু বোঝে না,অন্ন ছাড়া কিছুই হয় না। অনঙ্গোমোহন তাই বলেছিলেন " অন্ন প্রাণময়। অন্ন আনন্দময়। অন্নই ব্রক্ষ। "

এই অন্নের কষ্ট ঘুচতে অনঙ্গমোহন অনেক চেষ্টা করেছে,আত্মবিসর্জন দিয়ে অন্য দশটা পন্ডিতের মত ছলচাতুরী করতে। কিন্তু একজন সত্যিকার নিষ্ঠাবান কে কোন প্রপঞ্চকতা হারাতে পারেনি,একমাত্র দরিদ্রতা ছাড়া। দারিদ্র্য তাকে ঠিক হারিয়েছে,তাও নয়। নিজের সততার সাথে আপোষ না করে, " কষ্ট " জয় করার সহজ যে পথ ছিল তাকে বেছে নিয়েছেন অনঙ্গমোহন। তাই তো তিনি বলছেন, " ওঁ শন্ন আপোঃ শমনঃ সন্তু নূপ্যাঃ। ওঁ আপো হি ষ্ঠা ময়োভুব স্তা ন ঊর্ধ্বে দধাতন.....

অনেক দিন ধরে আমার ইচ্ছে, " দেশভাগ-মুক্তিযুদ্ধ " অব্দি ডিটেল পড়া শোনা করব। কোন রকম শুরু করা যাচ্ছিলো না ব্যাপার,অনেকের কাছে পরামর্শ চেয়েছি,কেউ সে ভাবে সাহায্য করেনি। ফলে আমার আগ্রহে ও ভাটা পড়ে। " চতুষ্পাঠী " দিয়ে শুরু করলাম,দেখি কত দূর যেতে পারি। এই চমৎকার বইটির সন্ধান দিয়েছিল "হারুন " ভাই।

স্বপ্নময় চক্রবর্তীর লেখা আগে কখনো পড়িনি,এই প্রথম। দারুণ। পড়তে একটা আরাম আছে উনার লেখা,যদিও ভাষা খানিক কঠিন। কি চমৎকার একটা গল্প ফুটিয়ে তুললেন। বিলু যখন চাল ঘরে আনার সময় ভাবছে," চাল নয়,সে যেন আস্ত গোবর্ধন ধারণ করেছে। " এই কথাটা বড্ড লাগলো বুকে,এমন বাক্য লেখা চাট্টিখানি কথা নয়। কোথায় যেন পড়েছিলাম,যে সত্যিকার জিনিস অনুভব করে সে-ই চমৎকার লিখতে পারে। স্বপ্নময় নিজেও একজন উদবাস্তু পরিবারের সন্তান ছিলেন,এজন্য হয়ত তাঁর লেখায় পুরো বিষয়টা অনবদ্য ভাবে তুলে আনতে পেরেছেন, ঠিক ঠাক ভাবে ছুঁতে পেরেছেন কষ্ট দুঃখ গুলোকে। সর্বোপরি দেশ ভাগের যন্ত্রণা কে।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
June 2, 2022
পুরনোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচা যায় না৷ যুগের সাথে নিজেকে বদলাতে হবে। এই ধরনের উপদেশবাক্য হরহামেশাই বর্ষিত হয় বর্ষীয়ানদের উপর। কিন্তু আজন্ম লালিত অভ্যাস এবং বিশ্বাস কি এক কথায় উপড়ে ফেলা সম্ভব? কিন্তু হাজার বছরের সংস্কার যা আজকের দিনে অনেকের চোখেই তুচ্ছ তা বহন করে সত্যিকার অর্থে বেঁচে থাকা একটি দরিদ্র, বাস্তুচ্যুত, অক্ষম পরিবারের পক্ষে যে কতটা কঠিন, কতটা সংগ্রামের তা উপলব্ধি করাটাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না৷
স্বপ্নময় চক্রবর্তী এর চতুষ্পাঠী সেই ভাঙন ধরা সময়ের কথা বলে যখন দেশ কেবল ভাগ হয়েছে, ভাগ হয়নি মানুষের মন। তবুও মানুষকে এপার থেকে ওপারে যেতে হয়েছে। নিজস্ব পরিচয় নিয়ে কুণ্ঠিত থাকতে হয়েছে। তেমনই এক পরিবার অনঙ্গমোহন কাব্যব্যাকরণতীর্থ এর। সংস্কৃতি ভাষায় পণ্ডিত তিনি, চালান একটি টোল/চতুষ্পাঠী। তাঁর চোখে সংস্কৃত আজো হীরার খনি। সংস্কৃতকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান তিনি, মৃত ভাষাটিকে জীবিত রাখতে চান তাঁর টোলের মাধ্যমে। টোল চালানোর জন্য কমপক্ষে পাঁচ জন ছাত্র দরকার, নয়তো সরকারি অনুদানটুকুও বাতিল হয়ে যাবে। সেই ছাত্র জোগাড়েও হিমশিম খেতে হয় তাঁকে৷ কেউ আজকাল সংস্কৃত পড়তে চায় না৷ তবুও তাঁর চোখে সুমিতা একজন আদর্শ ছাত্রী। সেই আদর্শ ছাত��রীর পরিণতি পাঠকদের বিমূঢ় করে। তার আচরণ এবং মানসিকতার ছদ্মবেশে পাঠকেরা দুঃখিত হন। বেশি দুঃখিত হন অনঙ্গমোহনের দুঃখে।
পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন অনঙ্গমোহনের ছেলে জগদীশ। অকালে মারা যাওয়ায় পুত্রবধূ অঞ্জলিকে কাজে নামতে হয়। নাতনী স্বপ্নাকে লাঞ্চিত হতে হয় বৃদ্ধ হেড়ম্বের হাতে। এদিকে নাতি বিলু, একমাত্র অবলম্বন পরিবারটির, সে বুঝতে পারে না কী হচ্ছে আশেপাশে। বয়সন্ধি থেকে ধীরে ধীরে পূর্ণ যুবক হবার সময়টিতে তার আশেপাশে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা তাকে সচকিত করে।
'ট্রাংক খুললেন অনঙ্গমোহন৷ যত্নে রাখা রিফিউজি সার্টিফ���কেট, দেশের বাড়ির জমির পরচা, পূর্ণচন্দ্র চতুষ্পাঠীর অনুমোদনের চিঠি, বিদ্যোৎসাহদায়িনী সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত প্রশস্তিপত্র, বিসম্যাগ ট্যাবলেট, এসিনার কৌটো, ইলেক্ট্রিক লোশনের শিশি, মাধুরী কালির খালি কৌটো।'- মনে করিয়ে দেয় মানুষের স্মৃতিকে ধরে রাখার ব্যর্থ কষ্টকর এক চেষ্টার কথা।
অনঙ্গমোহন সৎ এবং আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন। তাই তাঁর পূজারী বামন হওয়া হয়ে ওঠে না৷ ' আমার কী ক্ষমতা আছে যে, মন্ত্রদ্বারা আবাহন কইরা ঘটের মধ্যে দেবতারে আনতে পারি। ফলফলাদি নৈবেদ্য দিয়া তারে তুষ্ট করি?'
এই জটিল প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আবার শেষকালে কেবল বাঁচার আশায় অন্নই ব্রহ্ম এই গভীর সত্য অনুধাবন করেছেন এবং চায়ের দোকানে কাজ নিয়েছেন।
এই যে একজন মানুষের বিশ্বাস এবং তাঁর মানসিক জগতের তোলপাড়, এত চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন লেখক! আগাগোড়া বিষাদে মোড়া বইটিতে পাঠক একাত্ম হয়ে অনঙ্গমোহনের দুঃখে দুঃখিত হন, বিলুর জন্য ছটফট করে মন। এদের ভবিষ্যতটা যেন একটু ভালো কাটে, কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে বসেন পাঠক। এখানেই উপন্যাসটির সার্থকতা।
Profile Image for Ratika Khandoker.
300 reviews33 followers
July 21, 2025
"....ফলারের সময় পরিবেশনকারীকে অনঙ্গমোহন বললেন,দধির সংগে কিঞ্চিৎ চিড়া দেও।পরিবেশনকারী বলল- চিড়া কি আবার,বলুন চিড়ে।একটু পরে অনঙ্গমোহন বললেন,সামান্য গুড়ে দেও।একথা শুনে সে হেসে উঠল।একজন ভাটপাড়ার পণ্ডিত টিপ্পনী কাটল,'বাঙালা যদি মনুষা,হরিহরি,প্রেতাস্তদাকিদৃশ্য।'..."

দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে এপারে এসে,অনঙ্গমোহন তাঁর বাঙাল ভাষার জন্য এমন কতোই না ঠাট্টার শিকার হন।তাতে তাঁর আত্মসম্মানবোধ এতটুকুও ক্ষুণ্ণ হয়না।শত বিপদ-আপদ,ভিটে-মাটি আপনজন হারানোর পরেও বৃদ্ধ বয়সের দুর্বল শরীরে অনঙ্গমোহন হৃদয়ে এক শক্তপোক্ত আদর্শ ধারণ করেন।সেই আদর্শের মূলবীজ সংস্কৃত।সংস্কৃত তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-গরীমা।একে কেন্দ্র করেই তো সারাটা জীবন আবর্তিত হলো,এর আলোয় আলোকিত হয়েই তো তিনি পণ্ডিতমশাই,কাব্যব্যাকরণতীর্থ,সমাজের সম্মানিত এক ব্যক্তি।

কিন্তু ৬০ এর দশকের বঙ্গসমাজে যখন নানা ধরনের বিপ্লবের উত্থান হচ্ছে,যখন সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট টালমাতাল,একমুঠো ভাতের যোগান মানুষের অসাধ্যপ্রায়-সে সময় কোথায়ই বা সে সমাজ,আর কোন মুলুকেই বা সম্মান?

এই কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্যেও
অনঙ্গমোহন চেষ্টা করেন তাঁর চতুষ্পাঠী চালিয়ে যেতে,এতো শুধু গুটিকয়েক ছাত্রসমেত কোনো বিদ্যাপীঠ নয়,এতো তাঁর আত্মপরিচয়,আত্মসম্মান।এর সাথে আপোষ কি হয়?

তবুও আপোষ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়-
"...আহারে দু'গাল অন্নের জন্য,ভাতের জন্য।..."
পিতৃহারা বিলু,তার দাদু অনঙ্গমোহনকে নিয়ে অর্থযোগানে নামে।বন্ধুর সে পথের শেষ কোথা?

এবছর পড়া ভালো বইগুলোর মধ্যে চতুষ্পাঠী থাকবে।
এই বইগুলো ভীষণ বাস্তব।ভীষণ ভাবায়,কাঁদায়,মনকে পলিমাটির মতো নরম করে,আবার শক্ত ও হতে শেখায়।
Profile Image for Samiur Rashid Abir.
217 reviews44 followers
July 21, 2025
এ গল্প বহুবার পড়েছি, এমন আখ্যান বহুবার শুনেছি। তাও আবার পড়তে ইচ্ছে করে, বার বার ভাবতে ইচ্ছে করে। স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ন্যারেটিভ টা ইন্টারেস্টিং, শতবার শোনা একটা গল্পকে তিনি নতুন আঙ্গিকে লিখেছেন। আসলে এই কাহিনী তো আমাদের চিরায়ত জীবনের ই কাহিনী!

বি.দ্র: কেউ কি সবগুলো সংস্কৃত শ্লোক বুঝেছেন, আমি অনেকগুলোই বুঝি নাই, সংস্কৃতের ব্যবহার এই বইয়ের সবচেয়ে ইউনিক দিক হলেও কিছু কিছু জায়গায় মূল ভাবার্থটা অজানা ই রয়ে গেল।
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
November 28, 2020
বইটার কথা আগে জানতাম না বা নামও শুনিনি।কিন্তু সেদিন লাইব্রেরিতে আচমকা বইটা হাতে আসে।প্রথমেই ফ্ল্যাপ পড়ে মুগ্ধ হই।আর কৌতূহল বোধ করি এটা জেনে যে অনেকের মতে বইটা নাকি বাংলা সাহিত্যের সেরা ১০০ বইয়ের একটি।তো এরপর শুরু করা এবং কোথা দিয়ে যে প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার বইটা শেষ হল টেরও পেলাম না।
চতুষ্পাঠী হল এক ধরনের টোলের মত যেখানে শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহে এসে ব্যাকরণ, কাব্য,বেদ আর দর্শন শেখে।

বইটা আসলে পুরোটাই ভালো লেগেছে।তার মধ্যে বিশেষত অনঙ্গমোহনের সততা ও সংগ্রাম।তার নিজের প্রতি বিশ্বাস,নিষ্ঠা,দায়বদ্ধতাও উল্লেখযোগ্য।তাছাড়া উঠে এসেছে সমাজের নিগূঢ় বাস্তবতা। বিধবাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, বসদের অাচরণ,নিম্নবিত্তদের কষ্ট সবই উঠে এসেছে বইটিতে।উঠে এসেছে এক শ্রেণির মানুষের ধর্ম নিয়ে ব্যবসা,জ্ঞানপাপীদের আচরণ।
Profile Image for Journal  Of A Bookworm .
134 reviews9 followers
June 2, 2025
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া- ২০/২০২৫

চতুষ্পাঠী
লেখক - স্বপ্নময় চক্রবর্তী
প্রকাশক - দে'জ পাবলিশিং
মুদ্রিত মূল্য - ২৫০ টাকা।।

বছরের ২০ নম্বর বই, স্বপ্নময় চক্রবর্তী এর লেখা প্রথম উপন্যাস চতুষ্পাঠী।। আমরা সকলেই জানি, লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী ২০২৩ সালে তাঁর বই 'জলের উপর পানি'র জন্য বাংলা ভাষা বিভাগে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন।। সেই বিখ্যাত বইয়ের প্রিক্যুয়েল 'চতুস্পাঠী', যা লেখকের লেখা প্রথম উপন্যাসও বটে।। বইটি আমি পুরোনো হিসেবে সংগ্রহ করেছিলাম, ১৫০ পাতার একটি উপন্যাস, লেখক ১৫০ পাতার মধ্যেই লিখেছেন একটা মহাকাব্য।। লেখক এই উপন্যাসে বলেছেন দেশভাগের পর ছিন্নমূল এক পরিবারের গল্প।।

পরিবারের প্রধান অনঙ্গমোহন ভট্টাচার্য কাব্যব্যাকরণতীর্থ।। পূর্ণচন্দ্র চতুষ্পাঠী এর পণ্ডিতমশাই তিনি।। চতুষ্পাঠী হচ্ছে বেদ অধ্যয়নের পাঠশালা, সংস্কৃত ভাষায় বেদ, ব্যাকরণ, শাস্ত্র, কাব্য পড়ানো হয়ে থাকে।। অনঙ্গমোহন ভট্টাচার্য দেশভাগের পর, উদ্বাস্তু তকমা নিয়ে ওপার বাংলার ভিটেহারা মানুষদের সঙ্গে সপরিবারে আশ্রয় খুঁজেছেন এপার বাংলায়।। ছেলে জগদীশ, ছেলে বউ অঞ্জলী ও নাতি নাতনি কে নিয়ে ওঠেন বাগবাজারের ভাড়া বাড়িতে।। বহু কষ্টের পর ছেলে জগদীশ চাকরি পায় একটি মাড়োয়ারি দোকানে ম্যানেজার হিসেবে, নামেই ম্যানেজার বেতন অত্যন্ত কম, তারপর নিজে টাইপিং শিখে একটি টিনের কারখানায় চাকরি পায় জগদীশ, তবে এখানেও যা বেতন পায় তাতে তার সংসার চলে না, তাই অফিস ফেরত সে দুটো টিউশনি করায়।। অনঙ্গমোহন ভট্টাচার্য একজন ক্ষয়িষ্ণু পণ্ডিত যিনি সংস্কৃত ভাষার একটি টোল চালান, যার জন্য সরকারের থেকে একটি ভাতা পান, যাও খুবই স্বল্প।। জগদীশ এবং তার স্ত্রী অঞ্জলী নিজেদের সর্বস্ব টুকু দিয়ে চেষ্টা করতে থাকেন নিজের ছেলে মেয়ে বিলু ও স্বপ্নার ভবিষ্যতের জন্য, সঙ্গে মাথার উপর অনঙ্গমোহন এবং তার ভাগ্নে অসীম এর ভার।।
পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষ অনঙ্গমোহনের ছেলে জগদীশের অকালে মৃত্যু হয়।। জগদীশের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি টিনের কারখানায় তাঁর চাকরিটি পান।। যে সংসারে একদিন অনঙ্গমোহনের স্ত্রীর পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল না, পরিস্থিতির কারণে তাঁরই পুত্রবধূকে চাকরি করে সংসার চালাতে হচ্ছে।।
সরকার থেকে ছানা সন্দেশ মিষ্টি ওপর নিয়ন্ত্রণ আইন আনায় টিনের কৌটা তৈরি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।। তখন পুরো পরিবার মিলে শুরু করে ঠোঙা বানানোর কা��, সঙ্গে বিলু পোস্টার মারার কাজ ও করতে থাকে।। আর টোলের ভাতা বাবদ অনঙ্গমোহন যা পান তাতে তার নিজের একার পেট চলে না তার সাথে আবার অসীম।। এই অন্ন ধ্বংসের অনুশোচনায় অনঙ্গমোহন দগ্ধে দগ্ধে পুড়ে মরতে থাকেন।। এই সংগ্রাম যে কতটা নির্মম কতটা নিষ্ঠুর তা লেখক নিজগুণে ফুটিয়ে তুলেছেন।। উপন্যাসিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী আমাদের চারপাশে প্রায় শুকিয়ে আসা সংস্কৃত শিক্ষার শুধু যে প্রাচীন ধারাটির নানা টানাপোড়েনের কথা বলেছেন তা শুধু নয় তিনি তার সঙ্গে ষাটের দশকে পশ্চিমবাংলার আর্থ সামাজিক চেহারা, বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনের জলছবি এঁকেছেন।।

🔰🔰 পাঠ প্রতিক্রিয়া -

সত্যি বলতে এই বই আরো আগে পড়া উচিৎ ছিল।।অনঙ্গমোহন এবং তার পৌত্র বিলুকে কেন্দ্র করে গত শতাব্দীর ষাটের দশকের বাঙালি নিম্নবিত্ত পরিবারের
জীবন যুদ্ধের ধারাবিবরণী এই আখ্যানটি।। সংসারে একজন ক্ষয়িষ্ণু পণ্ডিতমশাই এর অক্ষমতার চিত্রটি যেটা লেখক আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন, তা এক কথায় অসাধারণ।। কিছু কিছু লেখা চোখের সামনে যখন ভেসে উঠছে তখন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, রাগে অভিমানে অন্ন স্পর্শ করবেন না ঠিক করেছেন অনঙ্গমোহন, দুপুরের খাবারে পছন্দের মোচার ঘন্ট দেখে অনঙ্গমোহনের মনে হচ্ছে ব্রাহ্মণের এই লোভ হীনতার লক্ষণ।। তারপর সেই খাবার খেয়ে কলপাড়ে জীবনে প্রথম বারের জন্য বাসন মাজতে বসেন।। আরো কিছু দৃশ্য যেমন - অভাবের তাড়নায় যখন অনঙ্গমোহন নিজের সব পছন্দের সংস্কৃত বইগুলি কলেজ স্ট্রিট নিয়ে যান বেঁচে দেওয়ার জন্য, কিন্তু পারেন না।।
দেশভাগ পরবর্তী আশ্রয়হীন এক সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত অনঙ্গমোহনের শুধুমাত্র জীবন সংগ্রাম নয়, তার ধর্মসংকট ও আদর্শ তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।। একটি নির্দিষ্ট ভাষার সঙ্গে ধর্মের যে যোগাযোগ সেটি যেমন তিনি অস্বীকার করেছেন তেমনি তিনি সেই যুগে দাঁড়িয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।। দেশভাগ পরবর্তী বাস্তব জীবন সংগ্রাম এর একটি উপন্যাস চতুষ্পাঠী, যারা দেশভাগ নিয়ে লেখা পড়তে চান তারা এই বই মিস করবেন না।। আগাগোড়া বিষাদে মোরা বইটিতে পাঠক একাত্ম হয়ে অনঙ্গমোহনের দুঃখে দুঃখিত হন, বিলুর জন্য ছটফট করে মন।। এদের ভবিষ্যতটা যেন ভালো কাটে, এই প্রার্থনা করতে বসে পাঠক আর এখানেই উপন্যাসটির এবং লেখকের স্বার্থকতা।। বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে বইটি অত্যন্ত আন্ডাররেটেড, এর থেকে অনেক কমা সাহিত্য অনেক অনেক বেশি আলোচিত।।
Profile Image for উজবুক.
17 reviews15 followers
July 29, 2021
আধা ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করতেসি, রিভিউ টিভিউ কিছুই লিখতে পারতেসি না।
আমার এখন ইচ্ছা করতেসে এ বইয়ের হাজার কপি কিনে রাখি, আর পরিচিত সব বই পড়ুয়াদের বাসায় গিয়ে একেক কপি হাতে তোলে দিয়ে বলি, পড়েন। প্লিজ পড়েন।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
November 30, 2025
সাতচল্লিশের দেশভাগ নিয়ে বাংলা ভাষায় লেখা সাহিত্যের সংখ্যা গুণে শেষ করার মতো নয়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও উৎকৃষ্ট যেসব উপন্যাস আছে, সেই পঙক্তিতে এই উপন্যাসকেও বসাতে হয়।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
August 6, 2021
বইঃ চতুষ্পাঠী
লেখকঃ স্বপ্নময় চক্রবর্তী
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
প্রচ্ছদঃ সব্যসাচী হাজরা
পৃষ্ঠাঃ ১৮৯
মূল্যঃ ৩৫০ টাকা।

উত্তর কলকাতার এক উদ্বাস্তু পরিবারে ১৯৫১ সালের ২৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। সত্তরের দশক থেকেই তিনি ছোট গল্পে অনন্য। তিনশোর মত ছোট গল্প এবং কুড়িটির বেশী উপন্যাস লিখেছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তিনি বঙ্কিম স্মৃতি, মানিক, তারাশংকর, আনন্দ পুরস্কার সহ আরও বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর কিছু বই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে।

লেখক তাঁর লেখাতে দেশলাইয়ের সেলসম্যান, রসায়নাগার, ভূমি-রাজস্ব দপ্তর, আবহাওয়া বিভাগ, বেতার দূরদর্শনের জীবিকার মত নানান বিষয়ে লেখকার বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

চতুষ্পাঠী হচ্ছে বেদ অধ্যয়নের পাঠশালা। যাকে পাঠশালা বা টোল বলা হয়। এখানে সংস্কৃত বিষয়ে পড়ানো হয়ে থাকে।
পূর্ণচন্দ্র চতুষ্পাঠীর পন্ডিতমশাই অনঙ্গমোহন কাব্যব্যাকারণতীর্থ। দেশ ভাগের ফলে অনঙ্গমোহন সপরিবারে চলে আসেন কলকাতাতে। থাকেন ভাড়াবাড়ীতে। বহু চেষ্টায় ছেলে জগদীশের একটা চাকরি হয় টিনের কৌটা তৈরির কারখানায়। তবে যে বেতন পায় জগদীশ তাতে সংসার চলে না তাই সে রাতে অফিস থেকে ফিরে ছেলে পড়ায়। অনঙ্গমোহন চতুষ্পাঠী র জন্য ডি এ পান কোন বেতন পান না। তবে যা পান তার সবটাই সংসারে খরচ করেন তবুও ঠিকঠাক চলে না সংসার।
হঠাৎ একদিন রাতে জগদীশ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং দুই দিনের অসুস্থায় মারা যায়।

জগদীশের ছেলে বিপ্লব ডাকা নাম বিলু। সে মনে করে তার কারনে বাবার মৃত্যু হয়েছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে সবাই দিশাহারা। মৃতের শোকের থেকে নিজেদের বেঁচে থাকার চিন্তাটাই প্রবল হয়ে ওঠে ছিন্ন মূল এই পরিবারের। এখন কে ধরবে এই সংসারের হাল?

দেশভাগ পরবর্তী আশ্রয় হীন এক সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত অনঙ্গমোহনের জীবনসংগ্রাম শুধু নয়, তাঁর আদর্শ এবং ধর্মসংকটও বিশেষ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে "চতুষ্পাঠী " তে। একটি নির্দিষ্ট ভাষার সঙ্গে কোনো ধর্মের সম্পর্ককে তিনি অস্বীকার করেছেন এবং একই সাথে প্রশ্ন তুলেছেন ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র নিয়ে। তাছাড়া দেশ ভাগের ফলে দেশের ও জীবনযাপনের চিত্র লেখক তুলে ধরেছেন বইটাতে।

দেশভাগ পরবর্তী বাস্তবজীবন চিত্রের একটি অসাধারণ বই "চতুষ্পাঠী "। বিজ্ঞজনেরা মনে করেন বাংলা ভাষায় এ যাবত প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ একশোটি উপন্যাসের মধ্যে " চতুষ্পাঠী " অবশ্যই রয়েছে। যারা দেশভাগ নিয়ে লেখা পড়তে চান তারা অবশ্যই পড়তে পারেন বইটা।
Profile Image for Souptik Paul.
13 reviews2 followers
April 26, 2024
📌২০২৪ সালের #পাঠপ্রতিক্রিয়া - ১১

📖চতুষ্পাঠী
✍️🏻স্বপ্নময় চক্রবর্তী
🖨দে'জ পাবলিশিং
🔖১৩০ (এপ্রিল, ২০১৭ সংস্করণ)

🌻আমরা সকলেই জানি, লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী ২০২৩ সালে তাঁর বই 'জলের উপর পানি'র জন্য বাংলা ভাষা বিভাগে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। বিলু, অনঙ্গমোহনকে আজ সবাই প্রায় ঘরে ঘরে চেনেন। সেই বিখ্যাত বইয়ের প্রিক্যুয়েল 'চতুস্পাঠী', যা লেখকের লেখা প্রথম উপন্যাসও বটে।

🌻অনঙ্গমোহন এমন এক কালের ���াক্ষ্য বহন করে চলেন, যে কালে একটা কাঁটাতারের বেড়া দুইটি দেশকে আলাদা করে দিয়েছে। উদ্বাস্তু তকমা নিয়ে ওপার বাংলার একদল ভিটেহারা মানুষ সপরিবারে আশ্রয় খুঁজেছেন এপার বাংলায়। কুন্ঠিত ও উদ্বিগ্ন হয়েছেন নিজ সংস্কৃতিচ্যুত হওয়ার ভয়েও। এমন এক কালের, এমন এক পরিবারের কথা বলেন অনঙ্গমোহন কাব্যব্যাকরণতীর্থ। অনঙ্গমোহন পুত্র জগদীশ, পুত্রবধূ অঞ্জলি, নাতি বিলু, নাতনি স্বপ্না এবং ভাগ্নে অসীম সহ বাগবাজারের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। অনঙ্গমোহন সংস্কৃতের পন্ডিত। তাঁর একটি টোল বা চতুস্পাঠী রয়েছে। সরকারি অনুদান পাওয়ার জন্য তাঁর চতুস্পাঠীতে ন্যূনতম পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রয়োজন। অনঙ্গমোহন কোনোক্রমে পাঁচজন শিক্ষার্থী যোগাড় করেছেন, যার মধ্যে একজন তাঁর নাতি, একজন তাঁর নাতনি, একজন তাঁর ভাগ্নে, একজন স্থানীয় ডাক্তার এবং আর একজন সুমিতা, যে চতুস্পাঠীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী।

���পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষ অনঙ্গমোহনের ছেলে জগদীশের অকালে মৃত্যু হয়। জগদীশের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি টিনের কারখানায় তাঁর চাকরিটি পান। যে সংসারে একদিন অনঙ্গমোহনের স্ত্রীর পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল না, পরিস্থিতির কারণে তাঁরই পুত্রবধূকে চাকরি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। অনঙ্গমোহনের ভাগ্নে তথা শিক্ষার্থী অসীম তাঁদের টানাটানির সংসারে থেকে ব্রহ্মচর্য পালন করছে, এই নিয়ে অনঙ্গমোহন এদং অঞ্জলির মধ্যে মনোমালিন্য থাকলেও পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে অনঙ্গমোহনের ছাত্রী সুমিতাকে কেন্দ্র করে।

🌻অনঙ্গমোহনের ছাত্রী সুমিতার সাথে অনঙ্গমোহনের এক তুলনামূলক স্বচ্ছল প্রতিবেশীর অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘটনাক্রমে এরপর সমগ্র উপন্যাসটি অন্যদিকে মোড় নেয়। সেই ছাত্রীর আচরণে পরিবর্তন এবং পরিণতি পাঠককে কষ্ট দেবে। পাঠক এরপর আরও দুঃখ পাবেন যখন অনঙ্গমোহনোর নাতনি তাঁরই বন্ধুর দ্বারা ধর্ষণের স্বীকার হবে, তাঁর পুত্রবধূ চাকরিহারা হবেন এবং সেই চাকরি পুনরায় ফিরে পাবার জন্য তাঁর কাছে কুপ্রস্তাব আসবে। আর বিলু? বয়ঃসন্ধিতে পা দেওয়া এই কিশোর তার আশেপাশে ঘটে যাওয়া উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং বাড়ির পরিবেশের আকষ্মিক পরিবর্তনে কি করে উঠবে বুঝে উঠতে পারবে না। তবে পাঠক সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবেন অনঙ্গমোহনের অসহায়তায়। যাঁর আর্থিক সম্বল নেই, চতুস্পাঠীর পন্ডিত সংসারের বোঝা টানতে একদিন ঠোঙাও বানাবেন। উপন্যাসের শেষে এসে তিনি উপলব্ধি করবেন অন্নই ব্রহ্ম। এরপর তিনি তাঁর নাতি বিলুর সাথে চায়ের দোকান খুলবেন, সেই চা যা তিনি একদিন পছন্দ করতেন না। এরপর থেকেই শুরু লেখকের বিখ্যাত উপন্যাস 'জলের উপর পানি'।

🌻আপনি কি এই বইটি পড়েছেন? যদি পড়ে থাকেন, তাহলে আমাকে কমেন্টে অবশ্যই আপনার পাঠপ্রতিক্রিয়া জানাবেন। আর যদি না পড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই দ্রুত পড়ে ফেলুন। 'জলের উপর পানি'র পাঠপ্রতিক্রিয়া খুব শীঘ্রই লিখব। আবার খুব শীঘ্রই অন্য কোনো বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া নিয়ে হাজির হব। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, ভালে ভালো বই পড়ুন। চলি।
Profile Image for Gain Manik.
335 reviews4 followers
July 9, 2024
দেশভাগের দুর্দশায় জর্জরিত গুরুকুল/টোল/চতুষ্পাঠীর আচার্য অনঙ্গমোহন। তার বাবা ছিলেন আরো বড় সংস্কৃতজ্ঞ। কিন্তু দেশভাগের পর তো আর টোল দিয়ে সংসার চলে না, অনঙ্গমোহনের যুবক পুত্র নেফ্রাইটিক সিনড্রোমে মারা যায় বোধহয়। এখন কে দেখবে এই সংসার যেখানে নাতি নাতনি আছে। পুত্রবধূকে পুত্রের বদলি হিসেবে একটা কনফেকশনারিতে চাকরিতে পাঠাতে তার কনজারভেটিভ মাইন্ড সেট চুরমার হয়ে যায়। তাও পাঠায় । কিন্তু তখন মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যে কোন এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসায় ওই ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়। অনঙ্গমোহন আবার সমুদ্রে পড়েন।
তিনি সংস্কৃত ভাষা জানেন, ব্রাহ্মণ। কিন্তু বেদ মন্ত্র উচ্চারণ করে তার বিনিময়ে টাকা নেবেন অর্থাৎ দেব ভাষা বিক্রি করবেন এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না সে। তাই তো সে তার নাতনির বরের চা দোকানে চা বিক্রি শুরু করে যেহেতু নাতনির স্বামীটি দু'দিন আগেই চা বানানোরত অবস্থায় দোকানের সামনেই কোন এক আন্দোলনে পুলিশের গুলি খেয়ে মারা গেছে। নাতি টিকে পড়াতে হবে স্কুলে চতুষ্পাঠীতে পড়ালে তো আর পেট চলবে না। এ এক অলৌকিক গল্প।
Profile Image for Soumyadip.
3 reviews
August 6, 2022
প্রবহমান সময়, দিন বদলের এক অনুপম ভাষ্য। এক শক্তিশালী কথাকারের একেকটি দক্ষ মোচড়ে এই উপন্যাসের একেকটি খণ্ডাংশ যেন গত শতাব্দীর পাঁচের দশকে বাংলা এবং বাঙালির হৃদয়ের গোপন কোণে সঙ্গোপনে থেকে যাওয়া অনুভূতিগুলির স্রোতোধ্বনি তুলে ধরেছে।
Profile Image for Ashis Saha.
106 reviews27 followers
March 17, 2022
বাস্তবধর্মী উপন্যাস। বিলু আর অনঙ্গমোহনের কষ্টগুলো যেন বুকে এসে লাগে। কাহিনী আরেকটু গতি পেলে আরেকটু ভালো লাগতো মনে হয়।
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
September 3, 2024
স্বপ্নময় একটা লেখা! মায়াময় এক গল্প!
খুব ছোট গন্ডিতে ঘোরাফেরা করা গল্পটার ব্যাপ্তি কী বিশাল!
Displaying 1 - 20 of 20 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.