ফ্ল্যাপে লিখা কথাঃ দুই প্রেমের মাঝখানে দাঁড়ানো এক যুবকের গল্প 'প্রিয়'। একদিকে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রেমের এক জটিলতা আরেকদিকে যমজ ভাই হারানো এক দুঃখি মেয়ের ক্রমশ প্রেমে পড়া। মাঝখানে ওই এক যুবক। সবমিলে আশ্চর্য রকমের এক সরল অথচ জটিল জীবনযাপনের অনুপুঙ্খ চিত্র এই উপন্যাস। এখানে আছে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য, অর্থের সঙ্গে স্নিগ্ধ মন মানসিকতার চিরকালীন দ্বন্দ্ব। মানুষের মনের কোমলবৃত্তি এবং প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে অর্থের যে দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলে দেয় এক শ্রেণীর মানুষ, আবার সেই মানুষরই কেউ কেউ অবনত হয় স্নেহ মমতার অপরিসীম শক্তির কাছে, এই উপন্যাসে আছে সেই ছবি। একদিকে নগর জীবনের নানাবিধ জটিলতা, প্রেম এবং প্রেমকে ঘিরে নানারকমের চক্রান্ত, গভীর ভালবাসায় আবদ্ধ হওয়া দুজন মানুষকে মিলিত হতে না দেয়া, অন্যদিকে এক স্নিগ্ধ গ্রামের কিছু মায়াবি মানুষের চিত্র - সব মিলে অতি সরল আঙ্গিকের এক অনবদ্য উপন্যাস 'প্রিয়'। যেকোনও বয়সের পাঠককে এই উপন্যাস মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে।
Imdadul Haq Milon (Bangla: ইমদাদুল হক মিলন) is a Bangladeshi novelist and editor of the daily Kaler Kantho. Milon graduated from Jagannath College. He went to Germany and after returning, wrote one of his premier works, Poradhinota. Milon authored books on classic stories, historical writings, romantic stories and other genres. He also works as a TV personality in a talk show called Ki Kotha Tahar Sone. He was honored with Bangla Academy Award in 1992.
ইমদাদুল হক মিলনের কোনো বই এর আগে পড়া হয়নি আমার। এটাই প্রথম। বেশ আগ্রহ নিয়েই এবারের বইমেলা থেকে বইটা কিনেছিলাম। পড়ার পর খারাপ বলবোনা। কিন্তু মনে হলো বহুদিন পর যেনো পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবির ফিল পেলাম।
গল্পের প্লট টা একটু বলি:- ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া বিশাল বড়লোক বাড়ির মেয়ে সেতু আর মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শুভর মধ্যে গভীরে প্রেম হয়। সেতুর বাবা মা নেই। বড় দুইভাই মামুন আর স্বপন তাকে অনেক আদরে মানুষ করেছে। এখনো বোন বলতে তারা অন্ধ। এই দুই ভাই মিলে সেতুর সাথে কথা না বলেই অন্য এক বড়লোকের ছেলের সাথে সেতুর বিয়ে ঠিক করে। সেতু এসব জানতে পারলে শুভ কে জোর করে তাকে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য। কেননা এটা ছাড়া শুভকে সে কিছুতেই পাবে না। এরপর তারা পালিয়ে বিয়ে করেছে এই খবর সেতুর বাড়িতে জানানোর পর তুলকালাম কান্ড হয়। সেতুর ভাইরা শুভর বাড়ি যেয়ে বলে আসে সেতুকে ডিভোর্স দিতে। শুভ বীরপুরুষ। সে এসব শুনে রেগে যায়। সে তার বউকে কিছুতেই ডিভোর্স দিবে না। পরবর্তীতে সেতুর ছোট ভাই শুভকে খুন করার জন্য পিছে মাস্তান লাগায়। সেই খবর ঘটনাচক্রে প্রথমে শুভর কাছের বন্ধু নাহিদের কানে আসে আর সে এসে শুভদের জানায়। সে বুদ্ধি দেয় পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত শুভ যেনো তাদের গ্রামের বাড়িতে যেয়ে থাকে। এদিকে সেতুর ভাইরা সেতুকে জোর করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করার জন্য। সেতু বড় বড় ভালোবাসার ডায়লগ ঝাড়ে। এক পর্যায়ে সেতুর বড়ভাই বলে তুই সাইন না করলে ওই ছেলেকে আমরা মেরে ফেলবো। একথা শুনে সেতু বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো বলে ওঠে, "আমার সাথে যা করার করো, তোমরা ওর কোনো ক্ষতি করোনা। দাও কোথায় সাইন করতে হবে আমি করে দিচ্ছি। এরপর ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে সেতু কাঁদতে থাকে। এই জিনিস দেখে ওর ভাইয়ের মন গলে যায়। সে ওই মুহূর্তেই শুভকে মেনে নেয়। এদিকে শুভ নাহিদের গ্রামে যেয়ে নাহিদের সদ্য ভাই মারা যাওয়া আরেক জমজ বোনেট ট্রমা দূর করতে যেয়ে বেশিই ভালোমানুষি দেখিয়ে ফেলে। পরে ওই মেয়ে শুভর প্রেমে পড়ে যায়। শুভ ও এর সাথে অতি ভদ্রলোক সাজে। কথায় কথায় আবার হাত ধরে, গাল ছুঁয়ে দেয়। এদিকে সে যে কেলেঙ্কারির করে এইখানে আসছে তা না জানে নাহিদের বোন না জানে নাহিদের বাপ মা। সবশেষে সেতুর ভাইয়েরা যে সব মেনে নিয়েছে এই লিখে শুভর ভাবি শুভকে চিঠি দেয়। ওই চিঠি শুভর কাছে আনে নাহিদের বোন বর্ষা। চিঠি পড়ে শুভ আনন্দে আত্মহারা হয়ে বর্ষাকে কোলে নিয়ে ঘুরানো শুরু করে। এদিকে তো বর্ষার মনে আগেই ফুটে থাকা লাড্ডু ফাটতে শুরু করেছে। এরপর কোল থেকে নামিয়ে বলে বর্ষা সব ঠিক হয়ে গেছে। সেতুর ভাইরা সব মেনে নিছে। ওহ তোমাকে তো বলা হয়নি আমি এখানে কিভাবে আসলাম, কেনো আসলাম। এখন শোনো। সব শুনে মেয়ের চোখের পানি নাকের পানি অবস্থা আর ব্যাটা বলদ শুভ তখন ওকে জিজ্ঞেস করে, একি বর্ষা তুমি কাঁদছো কেনো!
এটা হইলো কিছু!🙂 এই গল্প লিখছে ২০০ পৃষ্ঠা ধরে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
প্রিয় - প্রেমের উপন্যাস লেখক - ইমদাদুল হক মিলন শুরুতেই বলতে হয় যে এই একই ঘটনা নিয়ে ইমদাদুল হক মিলনেরই আগে আরেকটি বই পড়েছি যার নাম "ভালোবাসার সুখ দুঃখ"। যদিও সেই বইটি এটার তুলনায় ছোট ছিল। এই কাহিনী শুরুর দিকে খুবই সুন্দর কিন্তু শেষে গিয়ে যেভাবে আগের বইটির সাথে মিল পাওয়া গেল সেটা নিয়ে আমি হতাশ। আমি খুব চাচ্ছিলাম যেন সমাপ্তি ভিন্ন হয় কিন্তু মনে হয় লেখক আর তেমন আইডিয়া খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আমি আগের বইটিকেও ভাল রেটিং দিয়েছিলাম এবং এই বইটি সত্যি বলতে ওটার থেকেও ভাল। কারন এটা আসলে আগের কাহিনীটারই বিস্তারিত বর্ণনা। বইটি শুরু হয় বড়লোক একটা পরিবারের দিনযাপনের ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে। সেই বাড়ির একমাত্র মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করে ফেলে মধ্যবিত্ত পরিবারের তার প্রেমিককে। পরে ঘটনাচক্রে জানায় দুজনাই তাদের বাসায় এবং শুরু হয় সমস্যা। বইটির প্রতিটি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই গল্পে যেমন আবেগ আছে তেমনি আছে মজা, যেমন কষ্ট আছে তেমনি আছে সুন্দর প্রেম। আমি এই বইটিকে আগেরটার থেকে বেশি রেটিং দিতাম যদি ওটা পড়া না থাকত কিন্তু কিছুটা রাগ করেই আগেরটার সমান দিচ্ছি। সবাইকে শুধু এই বইটিই পড়ে দেখতে বলব। রেটিং - 8/10