৮ম শতাব্দিতে ইয়েমেনী কবি আব্দুল আল হযরত আল আফিফ নামে একটি বই লিখেছিল। রাতের বেলা যেসব পোকামাকড়ের আওয়াজ শোনা যায় তাকেই আরবি ভাষায় বলে আল আযিফ। অনেকে এটাকে প্রেতাত্মাদের বিলাপ বলেও মনে করে। এ কিতাব লিখতে গিয়ে আল হযরতকে হাজার বার বাজি ধরতে হয়েছে নিজের জীবনকেই। তাকে ঘুরতে হয়েছে-বহুকাল আগে হারিয়ে যাওয়া অভিশপ্ত নগরী বাবেলের ধ্বংসস্তূপ, আদ্যিকালের রহস্যময় নগরী মেম্ফিসের মাটির তলে নিকশ অন্ধকারে ঢাকা শীতল গলি-ঘুপচি আর দক্ষিণ আরবের মরুভূমি রাব আল খালি'র বালিয়াড়িতে, যাকে ওদেশের লোকেরা বলে দাহনা বা রক্তিম মরু। নিঃশব্দে ঢাকা ভয়াল এই মরুভূমিতে জন-প্রাণির কোনো চিহ্ন নেই। এখানে নিরন্তর দাপিয়ে বেড়ায় মৃত্যু আর অশরীরী প্রেতাত্মার দল। ভাগ্যচক্রে ওখানে গিয়ে হাজির হয় আল হযরত। জ্ঞান অর্জনের নামে জড়িয়ে পড়ে সম্পূর্ণ অজানা এক শক্তির সঙ্গে। অমোঘ ও ভয়ঙ্কর এ শক্তির উৎস অন্য ভুবনে। কোনোমতে জান বাঁচিয়ে আল হযরত ওখান থেকে ফিরতে পারলো ঠিকই, তবে পুরোপুরি বদলে গেলো সে। তার অবয়ব ঘিরে থাকে এমন কিছু, যা মানুষ জানলেও ভুলে যেতে চায়।
এ ঘটনার অনেক পরে, আমেরিকান লেখক এইচ পি লাভক্র্যাফট হারিয়ে যাওয়া এই বইটিকে ইতিহাসের তলা থেকে আবারও বের করে আনেন। নাম দেন দ্য নেক্রোনমিকন। আর তখন থেকেই জেগে ওঠে কৌতূহল-এই বই কি শুধুই কল্পনা? নাকি এর পাতায় পাতায় লুকিয়ে আছে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের রহস্য, জাদুবিদ্যার গোপন সূত্র আর প্রাচীন দেবতাদের পুনর্জাগরণের আহ্বান?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই ঘটনাপটে আসে কুষ্টিয়ার এক হাইস্কুল মাস্টার দীনবন্ধু। একদিন হঠাৎ করে হাতে পেয়ে যায় সেই কিতাবের একটি নকল। পাশে ছিল তার ব্যবসায়ী বন্ধুর সঙ্গী মতলব ধাড়ি, যে আগেই তাকে সাবধান করে দিয়েছিল-ওটা যেন না খোলে সে, কারণ ওটা কোনো বই নয়, বরং মৃত্যুর চিঠি। কিন্তু সাবধানবাণী না মানা এক কৌতূহলী মন কখনোই চুপ করে থাকে না। এভাবেই শুরু হয় এক ভয়ংকর যাত্রা-যেখানে বাস্তব আর বিভ্রম মিশে যায়, অতীত আর বর্তমান এক সুতোয় বাঁধা পড়ে আর একখানা পুরনো কিতাব হয়ে ওঠে নিয়তির ফাঁদ। আপনার কাছেও যদি এই কিতাব এসে পড়ে-তবে জেনে রাখুন, প্রতিটি পৃষ্ঠা একেকটা দরজা। আর একবার খুললে, ফিরে যাওয়ার পথ নেই।
বইটাকে ট্যাগ করা হচ্ছে হরর জনরায়, যেহেতু বইটাতে হরর এলিমেন্টের ছোঁয়া আছে এবং মুহম্মদ আলমগীর তৈমুর সাধারণত হরর জনরায় লিখেন। তবে বইটাকে আমার ‘মূলত হরর’ মনে হয়নি। হ্যাঁ, এখানে হররের, টু বি স্পেসিফিক লভক্রফটিয়ান হররের একটা কন্টেন্ট আছে। সেটা হলো, ‘নেক্রোনমিকন’ বইটা। এটাকে এ বইতে নজ্জুমি কিতাব বলা হয়েছে। তবে ৩২০ পৃষ্ঠার বইয়ের অর্ধেকটা জুড়ে নেক্রোনমিকন, নজ্জুমি কিতাব বা ‘আল-আযিফ’ এর সৃষ্টি নিয়ে ধারাভাষ্যের মত ইতিহাস বলে যাওয়া হয়েছে (ফিকশনাল ইতিহাস বা মিথ বলা যায় যেটাকে)। অধিক বর্ণনার কারণে এ ইতিহাস অনেকের কাছে বোরিং লাগলেও লাগতে পারে, আমার খানিকটা লেগেছে। আর পরের অর্ধেকটাতে কালক্রমে পশ্চিম-বাংলায় এসে পড়া এ নেক্রোনমিকন বইটাকে খোঁজার মিশনকে, একদম ১০০% অ্যাডভেঞ্চার বলে দেগে দেয়া যায়। শেষদিকে কিছু হরিফিক দৃশ্য আছে তবে সেটা একেবারেই নগণ্য।
বইটা আমার মোটামুটি লেগেছে। ভালো লাগার মাঝে আছে বইয়ের গল্পটা, যেটা এক্সক্লুসিভ এবং মিথের ইতিহাস, সেটার সুন্দর। তবে বইটাকে দারুণ না বলে মোটামুটি বলতে হচ্ছে কারণ এক্সিউকিউশন আমার ভালো লাগেনি। একের পর এক ইতিহাস এসেই যাচ্ছে যেখানে ক্ষুদ্র চরিত্রও ভালো পেজটাইম পাচ্ছে (সিনেমায় স্ক্রিনটাইম হলে বইতে পেজটাইম বলা যায় না?), কিন্তু দরকারী জায়গায় বর্ণনা অতীব ক্ষুদ্র এবং শেষটা আবারও দুম করে হয়ে গেছে। কিছু জায়গায় ইলোজিক্যালও লেগেছে তবে সেট আসলে রিডার টু রিডার ভ্যারি করতে পারে। মাফিয়া ট্রায়াডের কাজকারবারও খুব একটা যুতসই লাগেনি। সব মিলিয়ে গল্পটা সুন্দর হলেও এক্সিউকিউশনের জন্য এর আগেও লেখকের ‘দ্য হিউম্যান কাইমেরা’ ভালো লাগেনি, এবারেও ‘নজ্জুমি কিতাব’ খুব একটা ভালো লাগেনি। তবে লেখকের ‘বংশালের বনলতা’ নামক ছোটগল্পটা পড়েছিলাম এবং সেটা আমার অসম্ভব ভালো লেগেছিলো। আর বিবলিওফাইল আরেকটু মনোযোগ দিতে পারতো বানানের দিকে, প্রচুর টাইপো দেখা গেছে বইতে।
এটা কী হলো? এমন সুন্দর করে লিখে এন্ডিং পুরাই যা তা করে দিল -_-
পুরো বইটায় ইতিহাস বেশ বিস্তৃত আকারে লেখা। অই অংশগুলো অনেকের কাছে ভালো না লাগলেও আমার বেশ লাগসে। পুরোটাই বেশ যত্ন করে শুরু করা, ইতিহাস অংশটাও ভালো, স্টোরি বিল্ডিং ভালো কিন্তু মাফিয়া গ্যাং বা রাইভ্যাল হিসেবে যাদের দেখানো হইসে (যতটুকু রাফ & টাফ, গোছানো) অতোটা কার্যকরভাবে প্রকাশ করতে পারে নাই। (আমার মতে) আর এন্ডিংটা পুরাই হতাশাজনক। সব ভালো ভালো কিন্তু শেষে এসে পুরাই ল্যাজেগোবরে অবস্থা। 😕
মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূরের 'সম্ভবত' শেষ উপন্যাস 'নজ্জুমি কিতাব'। ভূমিকাতে তিনি স্পষ্ট করেছেন, এরপর আর হয়তো দীর্ঘ উপন্যাস লেখার ধকল তাঁর সইবে না। 'নজ্জুমি কিতাব' প্রি-অর্ডার করে চাতক পাখির মতো ইন্তেজার করেছি। পাওয়ার পরপরই একবসায় পড়ে ফেলি। কিন্তু বইটি নিয়ে লেখা হয়ে ওঠেনি। তার সর্বপ্রধান কারণ, বইটি আমার প্রত্যাশা পূরণে অসফল। 'বংশালের বনলতা'কে মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূরে অতিক্রম করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পাঠকের প্রত্যাশার চাপ এই বইটি কতটা নিতে পারল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেল।
এইচ পি লাভক্রাফট এই নজ্জুমি কিতাবের কাহিনির মূলস্রষ্টা। অষ্টম শতকের আরব কবি আবদুল আল হজরত চরিত্রটির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এটি কল্পনাপ্রবণ লেখক এইচ পি লাভক্রাফটের সৃষ্টি। তবে ইরামের শহর, রাব আল ঘালি ইত্যাদিকে যত সুন্দর করে মিশ্রণ করেছেন মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূর তা পাঠককে টেনে রাখবে বইয়ের পাতায়।
কাহিনির বুনন রয়েছে বটে। তবে তা নিখুঁত নয়। বইটি ইনফো-ফিকশন। তাই কাহিনির বুননের চাইতে তথ্যভিত্তিক লেখায় লেখকের মন পড়ে ছিল। মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূর ডিটেইলিংয়ের বিশেষ অনুরাগী। সুতরাং, পুরো বইতে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও বিশদ বর্ণনা পাই। যা পড়তে ভালো লেগেছে।
'নজ্জুমি কিতাব' এক অভিযানের নাম। সুদূর অতীতে শুরু হওয়া সেই যাত্রা বাংলাদেশের মাটি পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানকে ঘিরে রেখেছিল।
মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূরের লেখা আগে যারা পড়েননি, তারা এই বইটা দিয়ে শুরু করতে পারেন এবং যারা ওনার লেখার গুণমুগ্ধ, তারা কিছুটা হতাশ হলেও অবাক হবো না।
বিবলিওফাইল কর্তৃক প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ ও পাতা উচ্চমানের। তবে বানান ভুল চোখে পড়ল। ইতোপূর্বে বিবলিওফাইল লেখকের একাধিক বই ছাপিয়েছে। সেখানেও বানানবিভ্রাট এড়াতে পারেনি। মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূরের উচিত হবে, আরও ভালো ও যত্নবান প্রকাশনীকে বই দেওয়া। পড়তে গিয়ে এসব বানানবিভ্রাট বিরক্ত তৈরি করে।
মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূরের ম্যাগনাম ওপাসের শিরোপা 'নজ্জুমি কিতাব' পাবে না। তবে বইটি অবশ্যই পড়ার মতো। হরর ঘরানার সঙ্গে যারা ইতিহাস ভালোবাসেন, তারা নির্দ্বিধায় বইটা পড়ুন। আনন্দেই সময় কাটবে।
৭১০ খ্রিস্টাব্দের সানা থেকে নজ্জুমি কিতাবের ইতিহাস শুরু হয়। সুপ্রাচীন কাল থেকেই আরবের মাটিতে জিন-দেবতা-অপদেবতা তাদের তন্ত্র-মন্ত্র ব্যাপারগুলি চলে আসছিল। কিন্তু একটা পর্যায়ে সেইসব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় আর মানুষ সেসব মন্ত্র ভুলে যায় তবে সেইসব অপদেবতার ধ্বংসযজ্ঞ ভুলে যায় না। মরুভূমির এমন একটা জায়গা আছে যেখানে অপদেবতারা তাদের প্রচণ্ড জিঘাংসা নিয়ে অবস্থান করে। কোন মানুষ সেখান থেকে জীবিত ফিরে আসে না। কেউ ভয়ে সেখানে যায়ও না।
আল হযরত নামে একলোক দেবতা-অপদেবতাদের ডেকে এনে তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করার কৌশল আয়ত্ত করে ফেলে। কিন্তু কোনো একটা কারণে দেবতা তার উপর নাখুশ হয়ে সব ক্ষমতা ফেরত নিয়ে নেয়। তখন আল হয়রত যেসব যাদু-তন্ত্র-মন্ত্র জেনেছিল সেসব নিয়ে আল আযিফ বা নজ্জুমি কিতাব নামে লেখা শুরু করে একখানা বই। তিনভাগের দুই ভাগ লেখার পর কিতাবের আদ্দেকটা চুরি হয়ে যায়। বাকিটুকু দাফন হয়ে যায় আল হযরতের লাশের সাথে তার কবরে।
আঠারো শতকে এক ইংরেজ আল হযরতের কবর থেকে উদ্ধার করে সেই পাণ্ডুলিপি এরপর থেকেই পাণ্ডুলিপির খেল শুরু হয়ে যায়। এটা যার কাছে যায় তার প্রচুর ধন-দৌলত যেমন হয় আবার ধ্বংসও হয়ে যায় কেউ কেউ।
সেই কিতাবের একটা অংশের হদিশ পাওয়া যায় বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার এক গ্রামে। মাওলানা সাহেব এটা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ভয়ঙ্করভাবে খুন হয়ে যান। এসব দেখে দীনবন্ধু চলে যায় কলকাতায় এটার খোঁজ খবর বের করতে।
চাইনিজ মাফিয়াদের সাথে মিলে শুরু হয় রবার্ট ল্যাংডন স্টাইলে ভ্রমণ। খোঁজে বের করতে হবে নজ্জুমি কিতাবের বাকি অংশ।
বইয়ের দুটো অংশ প্রাচীন ইতিহাস, আল আযিফ লেখা হওয়ার কাহিনী, এরপর আরব থেকে ভারতে আসার অংশটা ভালো লেগেছে। কিন্তু ২য় অংশে যেখাকে বর্তমানের গল্প এগুচ্ছে নজ্জুমি কিতাবের বাকি অংশ খোঁজা হচ্ছে এই অংশটা কিছুটা দুর্বল লেগেছে।
এই লেখকের আরো বই পড়া থাকায় উনার লেখার স্টাইল জানা ছিল। প্রাচীন ইতিহাস, আর্টিফ্যাক্ট, অতিপ্রাকৃত, তন্ত্র-মন্ত্র ই���্যাদি মিলিয়ে একটা এ্যাডভেঞ্চার হাজির করেন পাঠকের সামনে। এই স্টাইলটা পছন্দ করি।
এই বইকে লেখক মোটামুটি উতরিয়ে দিলেও প্রকাশনীর আরো একটু সচেতন হওয়া দরকার ছিল। অপ্রয়োজনীয় কিছু স্কেচ এ্যাড করে পৃষ্ঠা বাড়ানো বা পৃষ্ঠার দুই পাশে বড় করে মার্জিন রাখার দরকার ছিল না। প্রচুর টাইপো রয়েছে বইতে। য় এবং ই এর টাইপো হচ্ছে সব থেকে আনাড়ি টাইপো, এটা কোন লেখায় দেখলেই বিরক্ত লাগে। আর বাঁধাইটাও আরেকটু ভালো হইতে পারতো।
ওভারঅল ভালোই লাগছে। একটানে পড়ে ফেলার মতন বই তবে যাকে বলে মুগ্ধতা সেটা হইতে পাড়ি নাই। যারা বইটা পড়বেন তাদের জন্য ছোট্ট একটা পরামর্শ, কাগজ কলম নিয়ে শুরু থেকেই ছক করে নিয়েন আল আযিফ কার কাছ থেকে কার কাছে গেল। আদ্দেক বই পড়ার পর এই ছকের প্রয়োজনীয়তা টের পাইছিলাম।
পড়তে পারেন ইনফো ফিকশন আর সাথে অ্যাডভেঞ্চার এর মিশেল নজ্জুমি কিতাব। তথ্য গুলো বেশ আগ্রহ জাগানিয়া। শেষটা ধুম করেই হয়ে গেল। আরো ভালো হতে পারত। টাইপো আছে অনেক।
আলমগীর তৈমুর এমন একজন লেখক যার লেখা পড়লে রিডার্স ব্লক কেটে যায়। এই বইটাও সেরকম-ই; মীথ, ফ্যান্টাসি, আর ইতিহাসের মিশ্রণে ঝরঝরে লেখা, একবার ধরলে শেষ পর্যন্ত যেতেই হবে। নজ্জুমি কিতাব এক রহস্যময় পাণ্ডুলিপি, যাতে আছে অভিশপ্ত কালো যাদুর খোঁজ, আর তার খোঁজেই নানা কাণ্ড। কিন্তু শেষটা এতটাই তাড়াহুড়ো আর অগোছালো যে, রীতিমত হতাশাজনক। তারপরেও পুরো সময়টা গল্পের ছলে ইতিহাস আর কিংবদন্তী শোনানোর জন্য ৩ দেয়া গেল।
আলমগীর তৈমুরের লেখার সাথে যারা পরিচিত নন, তাদের কাছে বর্ণনার আধিক্য মনে হতে পারে। তবে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। ইতিহাসের বর্ননা এবং পরবর্তীতে দীনবন্ধু- শরৎবাবুর এডভেঞ্চার, এটাও বেশ লেগেছে। "হরর" এলিমেন্ট খুঁজলে পাঠক হতাশ হবেন। কিছু "সুপারন্যাচারাল" এলিমেন্ট আছে। তবে এন্ডিং ততটা ভালো লাগেনি। সম্ভবত লেখক ঐতিহাসিক বর্ণনায় যতটা জোর দিয়েছেন, কাহিনি বিন্যাসে ততটা জোর দেননি। তবুও, সবমিলিয়ে - উপভোগ্য ছিলো
বই: নজ্জুমি কিতাব লেখক: মোহাম্মদ আলমগীর তৈমূর প্রকাশনী: বিব্লিওফাইল মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২০ প্রকাশকালঃ ২০২৫
বইয়ের কাহিনীটা এক হারিয়ে যাওয়া বই এবং সে বই উদ্ধার অভিযান নিয়ে। একটু গুছিয়ে এই বই নিয়ে কিছু বলার আগে উল্লেখ করার প্রয়োজন যে - লেখকের শেষ পড়া বই ছিল সাঝবাতি এবং বিশেষত বইয়ের শেষাংশের জন্য যার পর নাই বিরক্ত ছিলাম, নজুমি কিতাব পড়ে সে বিরক্তি কেটেছে। অনেকদিন পরে এমন একটি বই পেলাম যা আমাকে আবার টানা পড়ে যাওয়ার অভ্যাসে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে এনেছে। ভারতীয় তন্ত্র–মন্ত্র–ভিত্তিক হরর গল্পের বাইরে কিছু পড়তে পারায় ভালো লেগেছে। বই পড়ার মনোযোগের ঘাটতির ভেতর হঠাৎ ‘নজ্জুমি কিতাব’ কয়েকদিনের জন্য আমাকে আবার নিয়ম করে পড়ার অভ্যাসে ফিরিয়ে দিয়েছিল, এ কারণে লেখক কে আলাদাভাবে ধন্যবাদ দিচ্ছি।বইয়ে গল্পের প্রয়োজনে প্রেতচর্চার কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া হর এলিমেন্ট তেমন নেই, জাদু এলিমেন্ট আছে তবে ভয়ের কিছু না। ইসলাম বা খ্রিস্টধর্ম আবির্ভাবের আগের যুগে মানুষ কীভাবে জাদুবিদ্যা, আধ্যাত্মিক / প্রেত চর্চা এবং পরজগত নিয়ে ভাবত এসব বিষয়ে লেখক যেভাবে তথ্য দেবার চেষ্টা করেছেন তা আমার জন্য নতুন তথ্য হওয়াতে আমাকে বেশ টেনেছে। এই অংশগুলো পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যেন এক অচেনা ইতিহাসের দরজা আমার সামনে খুলে গেল। কাহিনিতে ‘আল আযিফ’ কিতাব (প্রেত চর্চার উপর লিখিত কিতাব) ,হারিয়ে যাওয়া ইরাম শহর, রাব আল ঘালি/খালি —এসব উপাদান দুর্দান্তভাবে মিশেছে। উপন্যাসের শুরু এবং মধ্যাংশ উপভোগ্য ছিল। বইটা বর্ণনা বহুল তবে আরবের প্রেতচর্চার উপর কি করে লেখা থ্রিলার গল্পকে তথ্য বা বর্ণনাবহুল না করে লেখকের উপায় ছিল না। বইতে কিছু জায়গায় দারুণ ডিটেইলিং করার চেষ্টা করা হয়েছে যেমন —খাবারের বর্ণনা, প্রাচীন পরিবেশ, লোককথা,এসব পড়তে মজাই লাগে, যদিও কিছু অংশ আবার বাস্তবতার সাথে ঠিক খাপ খায় না।যেমন একজন স্বাস্থ্য মেইনটেইন করা চীনা মহিলা সকালবেলা মাংস দিয়ে খিচুড়ি খাচ্ছেন পেটভরে এই দৃশ্যটা কল্পনা করা কঠিন। এ ধরনের অসামঞ্জস্য বাদ দিলে খাবারের বর্ণনা গুলো মজারই লেগেছে তবে লেখকের যা দুর্বলতা- শেষের অংশ একটু তাড়াহুড়ো এবং অগোছালো বা কেমন একটা এন্ডিং করে ফেলেন। তবে এই বইয়ের ক্ষেত্রে আমি এর চেয়ে লজিক্যাল এন্ডিং কল্পনা করতে পারিনি কারণ তাহলে আল আযিফ কিতাব সম্পর্কে দেয়া মূল ধারণা মিথ্যা হয়ে যেত, তারপরো আরেকটু গোছানো করা যেত এন্ডিংটা। গল্পের গতি, থ্রিল, চরিত্রের গভীরতা—এগুলোর ইন্টেনসিটি শেষদিকে এসে বরাবরের মতই কিছুটা কমেছে। আসলে আমাদের এখানে ইতিহাস, হরর আর মিথোলজি মিক্স করে লেখা থ্রিলার খুব বেশি লেখা হয় না।লেখক এমন একটা এটেম্পট নিয়েছেন এবং ছোটখাটো দুর্বলতা থাকলেও আমি বইটি উপভোগ করেছি।মোটের উপর এটা লাইট রিড ছিল। যারা এ ধরনের জনরা পছন্দ করেন, তারা অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন।আমার মতো কারও রিডিং ব্লক কাটতেও তো পারে! লেখকের কাছে আরো বইয়ের প্রত্যাশা করি এবং মনে করি উনি উনার ডিউ ক্রেডিট পাবেন। এবার একটু বিরক্তির কথায় আসি- বিরক্তি মূলত প্রকাশনা সংস্থার উপর। কারণ: ১) বইয়ের শুরুতে একটা রিভিউ দেয়া আছে সেখানে এই বই বেস্ট বলে দাবি করা হয়েছে যেটা৷ আসলে একটা হাইপ ক্রিয়েশন। এই বইটা ভালো হলেও বইয়ের শুরুতে ওই লোকের করা দাবির মতো সে উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে নাই। কাজেই ধরনের হাইপ ক্রিয়েশন একটু সামলে নিয়ে করা উচিৎ। ২)অ্যাজ ইউজুয়াল বিব্লিওফাইল এর বইয়ের পেজ ভাল হলেও বাধাই এর কোয়ালিটি ভালো না। থান ইটের মত ফিল দেয় একেক্টা বই, স্পাইন উল্টানো যায় না, জোর করে স্পাইনকে নমনীয় করার চেষ্টা করলে পেজ ছেড়ার উপক্রম হয় বই দুই হাতে ধরে পড়তে হয় সেটা পীড়া দায়ক এবং বারবার বলে আসার পরও আসলে বাধাই এর কোন উন্নতি দেখতে পাইনি বইয়ের লেখক আলমগীর তৈমূর না হলে এই বই নাড়াচাড়ার পর আমি আসলে কিনতাম না শুধুমাত্র বাধাই এর এই প্রবলেমের জন্য।
বাংলা সাহিত্যে হরর ঘরানায় সাম্প্রতিককালের অন্যতম আলোচিত বই “নজ্জুমি কিতাব”। এটি শুধু একটি ভয়াল অভিজ্ঞতা নয়, বরং একটি গূঢ়, জাদুময়, কাল্ট-ভিত্তিক জগতের দরজা খুলে দেয়, যেখানে ইতিহাস, ধর্ম, লোককাহিনি আর অতিপ্রাকৃততার মিশ্রণে তৈরি হয় এক ব্যতিক্রমধর্মী থ্রিল।
চলুন পরিচিত হই আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ইয়েমেনে এক নিঃসঙ্গ, অন্তর্মুখী আরব কবি আবদুল আল হযরত–এর সঙ্গে। যার মাধ্যমে এই রহস্য প্রবাহিত হয়। কিশোর বয়সেই যার পিতার রহস্যজনক অন্তর্ধান তাকে ঠেলে দেয় অজানার খোঁজে। লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে এই কিশোর একসময়ে প্রেম, দুঃখ, জ্ঞানের অনুসন্ধান এবং নিষিদ্ধ ভাষার প্রতি আকর্ষণ—সবকিছুর মধ্য দিয়ে এক ভয়াল পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
রাজকুমারীকে ভালোবাসার অপরাধে রাজার নির্দেশে আল হযরতের নির্বাসন ঘটে এক অভিশপ্ত মরু নগরীতে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার রূপান্তর। এক সাধকের মতো অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি সংগ্রহ করেন বিলুপ্ত জাতির নিষিদ্ধ শব্দ, প্রাচীন দেবতা, ভয়াল আচার-অনুষ্ঠানের জ্ঞান। তারই ফলশ্রুতিতে রচিত হয় এক মন্ত্রগ্রন্থ—“আল আযিফ”, যার ভাষা মাত্র বুঝতে গেলেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মানুষ। আরবদের ভাষায়, ‘আল আযিফ’ মানে ‘রাতের পোকার ডাক’—যা তারা মনে করে মৃত আত্মার আকুতি।
বর্তমান গল্প শুরু হয় বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শহরে। এক সাধারণ ব্যবসায়ী অর্জুন, তার বন্ধু এবং এক রহস্যময় চরিত্র মতলব ধাড়ি—এরা পাণ্ডুলিপির খোঁজ পায়। এরপর গবেষণার কাজে যুক্ত হন স্কুল শিক্ষক দীনবন্ধু এবং স্থানীয় এক ইমাম। অদ্ভুতভাবে ইমাম এই বইয়ের কিছু অংশকে গুপ্ত যাদুবিদ্যার বলে চিহ্নিত করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার আকস্মিক মৃত্যু ঘটে এবং দীনবন্ধুও নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর থেকেই শুরু হয় শঙ্কা আর উৎকণ্ঠার ঘনঘটা।
গল্পের পরবর্তী অংশে উঠে আসে এক ভয়াল তান্ত্রিক সাধিকা ম্যাডাম জুই, যাকে প্রথমে সাইকিক মনে হলেও পরে দেখা যায় তিনি এক গুপ্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন “ট্রায়াড”–এর সদস্য। তারা বিশ্বাস করে, কিছু জ্ঞান পৃথিবীর সব মানুষের জানা উচিত নয়, কারণ তা মানবজাতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য শুধু তা নয়, তারা এই জ্ঞানকে ব্যবহার করতে চায় বিশ্ববশ্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য।
লেখক পরতে পরতে উন্মোচন করেছেন অভিচারক্রিয়া, ব*লি, মন্ত্র, র*ক্ত, আ*গুন আর ভ*য়ঙ্কর আচারপদ্ধতির এমন সব দৃশ্য, যা পাঠককে ঠাণ্ডা ঘাম ঝরাতে বাধ্য করে। ম্যাডাম জুই যখন নিজের বুক ফালা ফালা করে, ব*লি দেয় কবুতর, আর ঘরের মেঝে ফেটে বেরিয়ে আসে সাপের দল—এই দৃশ্যগুলো সহজে হজম হতে চায় না।
যদিও পুরো উপন্যাসটি রহস্য আর ভয়ের এক দারুণ নির্মাণ, তারপরও কিছু জায়গায় আমার মনে প্রশ্ন জাগে বা বলা যায় অতৃপ্তি আছে। যেমন, লেখক বিস্তারিতভাবে দেখিয়েছেন আবদুল আল হযরত কীভাবে পাণ্ডুলিপি রচনায় নিযুক্ত হন, তিনি সেই ব্যবহার করে অনেক কিছুই অর্জন করেন, কিন্তু সেসব ব্যবহার করেন কিভাবে? বা তার রূপান্তর কতটা ভয়াল ছিল—তা বেশিরভাগ জায়গায় অস্পষ্ট রয়ে গেছে। আরেকটি চরিত্র ড্রাইভার কিসমত, যার আগমন স্বাভাবিক হলেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ও মোচড় কেন, তা বিস্তারে বলা হয়নি। তার আসল পরিচয় জানা গেলে গল্পটি আরেক ধাপ গভীর হতো। মতলব ধাড়ি চরিত্রটিরও রহস্যময়, কারন তিনি গ্রামে বসে জানলেন কিভাবে বইটি এতো বিপদজনক, তার উপস্থিতি কেবল শুরুতেই সীমাবদ্ধ, পরে তার কোনো ব্যাখ্যা বা ফিরে আসা নেই—যা পাঠকের মনে কিছুটা অতৃপ্তি রাখে।
শেষ কথা হলো সবকিছু মিলিয়ে, নজ্জুমি কিতাব একটি এমন হরর থ্রিলার, যেখানে ভূতের ভয় নেই, আছে ছায়া-ভয়। এটি সেই ভয়, যা শব্দে, আত্মায় বা বিকৃত দেবতার অস্তিত্বে মিশে থাকে। পাঠককে টেনে নিয়ে যায় এমন এক জগতে, যেখান থেকে সহজে ফেরা যায় না। যারা বাংলা সাহিত্যে ভিন্ন স্বাদের, দারুণভাবে লেখা অলৌকিক এবং কাল্ট হরর খুঁজছেন, তাদের জন্য “নজ্জুমি কিতাব” একটি চমৎকার এবং ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হতে পারে।
শুরু আর মধ্যম অংশ বেশ। তারপর শুধু ঘটনাক্রম, জমিয়ে গল্প পড়ার মজা, মূল থিমের বিকাশ, চরিত্রগুলোর সঙ্গে একাত্মবোধ করা এসব কিছুই আর হয় না। অথচ তিনশ পাতার বই।
তবে যা হয়, আলমগীর তৈমুর খাবারের বর্ণনা দিতে শুরু করলে নিজের তৈরি সাহিত্যিক বাস্তবতার কথা খেয়াল রাখেন না। একটা জায়গায় এমন আছে, আল হযরতের মা বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন, কোনও রকমে দরিদ্র মায়বেটার দিন কাটে। কিন্তু বিন ফকিহ তার ঘরে আশ্রয় নিলে তাকে খেতে দেন প্রায় রাজভোগ- ভেড়ার মাংস ভুনা, খম্বুজ রুটি, উটের দুধের সাথে মধু মেশানো সাহন। বেতালেও এই সমস্যা ছিল, যুদ্ধের ট্রমা ও পরিবারের দুরাবস্থাসহ একটা ছেলে তার ভাইকে খুঁজতে ইন্ডিয়ায় গিয়ে একদম ফেলুদার তোপসে হয়ে যায়, চটুল, ভোজনরসিক, সাইট সিয়িং-এ মুগ্ধ।
এছাড়া, নজ্জুমি কিতাবে পরিমিতিবোধের সমস্যা আছে। আরও অনেক অল্পেই সারা যেত। একদম ক্লাইম্যাক্সেও লেখক হুট করে অন্য একটা ঐতিহাসিক গল্পে চলে যান বিনা প্রয়োজনেই যেন বা।
বেতালের সাথে তুলনা দিলে এটা উপভোগ্য বই। সময়টা মন্দ কাটেনি। কিন্তু ঐ যে, দুইশ পাতার পরে আর ক্যাচটা থাকে না, আগ্রহ কমে আসে, গল্প কোন দিকে যাবে বোঝা যায়।
আমি বারবার তার কিছু ছোটগল্পের কাছেই ফিরে যেতে চাইব। অবশ্য, আলমগীর তৈমুর এমন দুর্বল সব বই লিখলেও দেখা যাবে, কৌতুহলবশত পড়ে নিয়েছি আবার। বেতাল শেষ করেও এইরকম কিছুই লিখেছিলাম বোধ হয়। বাংলা ভাষায় উনি দুর্লভ গোত্রের জঁরা লেখক, বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় যার সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারলে ভালো লাগত, সবসময় এইরকম লাগে।
৩.৫ "আল আযিফ"। হ্যাঁ শুধুমাত্র এই নামটা!হ্যাঁ শুধুমাত্র এই নামের বইটা নিয়েই পুরো বইয়েত কাহিনী। আল আযিফ নিয়ে ঐতিহাসিক পার্ট টা দুর্দান্ত ছিল।মানে কিভাবে বইটা লিখা হলো,কি পরিস্থিতি তে বইটা লিখা হলো এই নিয়ে বর্নিত পুরো কাহিনী ছিল দুর্দান্ত।কিন্তু এরপর ই কাহিনী ঝুলে গেল।মানে পরবর্তী পার্ট ছিল বোরিং এবং অতি মাত্রায় টেনে নেওয়ার মতো।জানি ইনফো ডাম্পিং ফিকশন এরকম হয় কিন্তু পুরো টা সময় ধরে একটু থ্রিল বা গা ছমছমে ভাব থাকবে না?এক চিমটে হররের সাথে থ্রিল মিক্সড করে দিলে এই বইটা পাঁচে পাঁচ পাওয়ার মতো ছিল।তবে প্রথম দিকের ফিকশন যা দুর্দান্ত ছিল বলার মতো না।
চব্বিশ দিন আগে যখন বইটা পড়া শুরু করেছিলাম, সেদিন ভাবিনি বইটা শেষ করতে এতদিন লাগবে আমার। প্রথম দিনই একটানে ষাট পৃষ্ঠা তারপর নব্বই পর্যন্ত আর তারপর একশত বিশ পেজে এসেই আটকে যাই আমি। তারপর কোনোদিন দশ পেজ কোনোদিন পনেরো আবার কোনো কোনো দিন না পড়েই পরে ছিলো বইটা। একশো বিশ পেজের পর বইটাই স্লো করে ফেলে আমাকে, এগোতে পারছিলাম না কোনোভাবেই। বিরক্তিও ধরে ফেলেছিলো আমাকে। তারপর আবার গতি পাই ২০০ পেজ ছাড়ানোর পর। প্রায় দুইদিনের পুরো বইটার বাকি ১২০ পেজ পড়া শেষে এখন লিখছি। যদিও ভেবেছিলাম বইটার প্রতিটা পেজেই থ্রীল থাকবে সেরকম কিছু পাইনি, উলটো বিরক্ত হয়েছি বেশ কিছু জায়গায়, মাঝেমাঝে বইটাকে লেগেছে ধামাল মুভির মতো, কোনো কোনো জায়গায় অপ্রোয়জনীয় বর্ণনা বিশ্লেষণ লেগেছে। কোনো কোনো জায়গায় খাপছাড়া। বইটার প্লট ইউনিক ছিলো তাও কেন যেন আমাকে ছুতে পারেনি। যেরকম আশা করেছিলাম কিছুই পাইনি। হতাশ। আর বানান ভুল প্রচুর।
🔹একটি পুরনো পান্ডুলিপি’র রহস্য উদঘাটনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দীনবন্ধু এবং শরৎ বাবু। ঘটনাচক্রে তারা এক চীনে মাফিয়া সংগঠন ”ট্রায়াড” এর সদস্যদের নজরে পড়ে যায় ; তারাও যেকোনো মূল্যে এই ম্যানুস্ক্রিপ্ট (Manuscript) হাতিয়ে নিতে চায়! এই রহস্যময় কিতাব “আল আযিফ” এর লেখক আব্দুল আল হযরত। ১৮২৫ সালে কলকাতা থেকে শাহানামা ছাপা হয়েছিল। সেই দুর্লভ শাহনামার সংস্করণের বিশেষ ৫ টি বইয়ের ভিতরের শেষের দিকে আল আযিফের ছোট একটা অধ্যায় ছাপা হয়। ওই বই প্রথমে খুঁজে পায় দীনবন্ধু। তবে ওটা মূল বইয়ের একটা খন্ড মাত্র। তারা খুঁজে বেড়াচ্ছে পুরো পান্ডুলিপিটা। কেমন করে ইয়েমেনি কবি আল হযরত এর লেখা “আল আযিফ” এর পান্ডুলিপি এই উপমহাদেশে এলো!! জর্জ টমাস,হেনরি ক্রাইটন বা টং অ্যাচিউ এর সাথেই বা এর কি সম্পর্ক!! জানতে হলে এই ডাউস সাইজের বইটি পড়তে হবে।
🖋️পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ গল্পের প্লট এবং কাহিনী সুদূর প্রসারিত এবং বিস্তৃত। ইয়েমেন, সিরিয়া, মিশর থেকে শুরু করে তা এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশ এবং ভারতে। এরই মধ্যে কাহিনীর বহু ডাল-পালা বিস্তার লাভ করেছে।তাই সেসব বিস্তারিত আলোচনায় আর গেলাম না।যারা ইতিমধ্যেই স্যারের গল্প সংকলন -”নিগৃঢ়-২” অথবা “কুহক-কথন” বইগুলো পড়েছেন তারা অলরেডি গল্পটার প্রথম দিকের কিছু অংশ পড়ে ফেলেছেন। তবে ওটা কেবল শুরু মাত্র। মোটা দাগে বলতে গেলে বইটাকে হরর জনরার না বলে বরং এডভেঞ্চার,মিস্ট্রি,থ্রিলার জনরায় ফেলা যায়। নাম দেখে অনেকের ধারণা হতে পারে বইটা হয়ত হরর জনরার, কিন্তু শুরুর দিকে “আল হযরত” এর ঘটনাবলি এবং গল্পের শেষে তন্ত্র-মন্ত্রের কিছু অভিচার ক্রিয়া ছাড়া পুরো বইটা’কে এডভেঞ্চার, সাসপেন্স, থ্রিলার জনরার ধরা যায়। আবার “ইনফো ফিকশন”ও বলা চলে, যেখানে বাস্তব তথ্যের পাশাপাশি কল্পকাহিনীর’ও সংমিশ্রণ ঘটে।
🔸তৈমূর স্যারের কথার সাথে মিল রেখেই বলতে চাই- “এই বইটি ধীর লয়ের লেখা। স্লো বার্নার। পাতায় পাতায় এড্রেনালিন রাশ কিংবা রোলার কোষ্টার রাইড হয়ত সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি।তবে ধৈর্য ধরে পড়লে আশা করি খারাপ লাগবেনা।” সবশেষে বলতে চাই, যারা তৈমূর স্যারের আগের বইগুলো পড়েছেন তারা নিঃসন্দেহে পড়ে দেখতে পারেন। কিন্তু যারা বিগিনার বা স্যারের লেখার ধরনের সাথে পুরোপুরি পরিচিত নন তারা আগে ছোটগল্প সংকলন (নিগৃঢ় ১,২,৩), সাঝঁবাতি এগুলো দিয়ে পড়া শুরু করতে পারেন।
⚠️গুপ্ত সংঘ,গুপ্তবিদ্যা, রহস্য, ষড়যন্ত্র, শিল্পকলা, এবং বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের মতো বিষয়গুলো নিয়ে লেখা যারা পছন্দ করেন; সর্বোপরি ”ড্যান ব্রাউন” এর লেখার সাথে যারা পরিচিত আশা করি তারা রিলেট করতে পারবেন এবং তাদের কাছে ভালো লাগবে।✅
➡️পুনশ্চঃ বইটিতে বানান-জনিত বেশ কিছু ভুলত্রুটি চোখে পড়েছে, প্রুফ রিডিংয়ে আরও নজর দেওয়া উচিৎ ছিল।
পড়ে শেষ করলাম মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর স্যারের লিখা নজ্জুমি কিতাব বইটি। বরাবরের মত উনার বাকি বই গুলার মত এই বইটিতেও অনেক প্রাচীন ইতিহাসের সাথে অতিপ্রাকৃতিক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। কিছুটা ধির গতি নিয়ে বইটা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে চুড়ান্ত পরিনতির দিকে এগিয়েছে। দীনবন্ধু চরিত্র টা কে আরো কিছুটা জায়গা দিলে ভালো লাগতো। যদিও বইয়ের ভিতরে বেশ কিছু ছবি দেয়া আছে, তবে বইয়ের কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন উপাসনালয়ের দেয়ালে খোদাই করা বিভিন্ন দেব দেবীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে কিন্তু কোনো স্কেচ বা ছবি দেয়া নাই, এই বর্ণনার সাথে মিল রেখে স্কেচ বা ছবি দেয়া থাকতো তাহলে আরও ভালো হত।
একটানে পড়ে ফেলেছি ঐতিহাসিক চরিত্র ঘটনাবলি পরে ভজঘট হতে পারে সেই ভেবে। ক্লাইমেক্সের জায়গাগুলো নিয়ে আরো কাজ করা যেত। ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা বেশি রাখতে যেয়ে ভয়ের জায়গাগুলো বলতে গেলে এড়িয়েই যাওয়া হয়েছে। জনরাতে হরর বলা যেহেতু, এই ব্যাপারগুলো খেয়াল করলে ভাল ছিল। বই শুরুর আগেই লেখক বলেছেন দুই বছর লেগেছে প্রায় বইটা শেষ হতে। অনেক জায়গাতেই সেই খাপছাড়া ভাবটা ভালমত চোখে পড়েছে। বাক্যগঠন জটিল হয়ে গেছে অনেক জায়গাতেই। তবুও এটা সুখপাঠ্য। ছুটিটা কাজে লেগেছে বলা যায়।
আরব্য রজনী শেষ করলাম, প্রকাশনীর গাফিলতির কারণে প্রচুর বানান ভুল। পড়তে বিরক্ত লাগে এত বানান ভুল থাকলে। বই নিয়ে ওভার অল খুব বেশি স্যাটিস্ফাইড না হলেও কাহিনী ভালোই লেগেছে। শেষটা আবারও অসন্তুষ্টি তৈরি করে গেল।
শুরু হয়েছিলো বইটা অনেক সুন্দর ভাবে, মাঝে দিয়েও কাহিনী খুব ভালো ছিলো বিশেষ করে আল হযরত এর ইতিহাস কিন্তু শেষ দিকে কেমন যেন একঘেয়েমি লেগেছে, পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো বইটা বড় করতে হবে তাই টেনে যাচ্ছে।