বাঙালির জীবনে প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহার নিতান্তই স্বাভাবিক বিষয়। গ্রামগঞ্জ ও লৌকিক জীবনের বিশিষ্ট অনুষঙ্গ এই বিশিষ্টার্থক ধারা। নানাভাবে সৃষ্ট অসংখ্য প্রবাদ-প্রবচন-বাগধারার উৎসের সন্ধান রয়েছে প্রবাদের উৎসসন্ধান গ্রন্থে।
একটা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ সম্ভবত প্রবাদ ও বাগধারা। বেশ কিছু প্রবাদের নাম শুনেই তার অর্থ বোঝা যায় বা অনুমান করে নেয়া যায়৷ তবে কিছু প্রবাদের সুলুকসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। সেই প্রচেষ্টাই করা হয়েছে বইটিতে।
প্রতিদিন কথায় কথায় আমরা প্রবাদ বাক্য, বাগধারা ব্যবহার করি। কিন্তু সেগুলোর উৎপত্তির পেছনের চমৎকার গল্পগুলো ক'জনইবা জানি। সমর পালের 'প্রবাদের উৎসসন্ধান' বই সুযোগ করে দিচ্ছে বাংলায় বহুল প্রচলিত প্রবাদ ও বাগধারাগুলোর উৎস জানার।
বেশিরভাগ প্রবাদের মূলে রামায়ণ ও মহাভারত। যারা এ দুটি পড়েছেন, তারা হয়তো খুববেশি আকর্ষণ খুঁজে পাবেন না। তবে পড়লে রামায়ণ আর মহাভারতের অনেক কাহিনিই পুনরায় পড়া হয়ে যাবে। এই দুইটির বাইরেও কিছু প্রবাদ রয়েছে যেমনঃ খাঞ্জা খাঁ, খয়ের খাঁ, লেফাফাদুরস্তি, গৌরী সেন প্রভৃতির উৎসগুলো সম্পর্কেও জানা হয়ে যাবে গল্প পড়ার ছলে।
সমর পালের লেখনশৈলী হয়তো উচ্চমার্গীয় নয়। তাতে পাঠককে নিরাশ করবে না। বরং সহজসরল লেখনীর গুণে পাঠক দ্রুতই উৎসাহ খুঁজে পাবেন একবসায় বইটা শেষ করতে।
প্রবাদ প্রবচন হল যেকোন ভাষার মুকুটস্বরূপ। একটা ভাষা বা জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সামাজিক রীতিনীতি ফুটে উঠে তার প্রবাদের মধ্য দিয়ে। কথায় কথায় নানা প্রবাদ ব্যবহার করলেও এদের উৎপত্তি নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামায় না। আমার এক বন্ধু তো সবসময় ভুল জায়গায় ভুল প্রবাদ ব্যবহার করে। বেচারাকে শুধরিয়ে দিলে রেগে যায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দেশে আমার বন্ধুর মতো সমস্যাওয়ালা লোক অনেকেই আছে। এই বইটি তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। কোন প্রবাদ কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে তা খুব সুন্দর করে ব্যাখা দেওয়া আছে। তবে বইটির মূল আকর্ষণ হল লেখকের বিভিন্ন প্রবাদের উৎস অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা। বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থ তো বটেই সাথে অনেক ইতিহাস ও ভাষাজ্ঞানের বই তন্ন তন্ন করে তিনি ১১০ টি নীলপদ্ম থুক্কু প্রবাদের উৎস খুজে এনেছেন।
বইটি মোটের উপর বেশ ভাল লাগলেও মনে হয়েছে কিছু প্রবাদের ব্যাখা অতি সংক্ষিপ্ত আবার কিছু প্রবাদের ব্যাখা অতিদীর্ঘ হয়ে গেছে। আবার কিছু পৌরাণিক ব্যাখা ভাল লাগেনি। এ বিষয়ে আমার জ্ঞান অত বেশি না। তবে লেখকের প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য৷ এত ছোট্ট একটা বইয়ে প্রবাদের সাথে সাথে পুরান, সমাজব্যবস্থা ও ইতিহাসের একটা ক্রাশকোর্স সম্পন্ন করানোর জন্য লেখককে অসংখ্য সাধুবাদ রইল।
প্রাচীণ প্রবাদের উৎপত্তি সংক্রান্ত গল্পমালাঃ প্রবাদের উৎসসন্ধান
বাঙালির বাংলা ভাষার সাথে প্রবাদ-প্রবচন ওতপ্রতভাবে জড়িত। অামরা কথায় কথায় বলি "অতি লোভে তাঁতি নষ্ট" কিংবা "ধান ভাঙতে শিবের গীত"। পরীক্ষার খাতায় গদ বাঁধা মুখস্থ উত্তর লিখে দশে দশ নম্বরও পায় অনেকে। কিন্তু এইসব প্রবাদের উৎপত্তির পেছনে যে চমৎকার সব গল্প রয়েছে তা কজনের জানা! অধিকাংশ প্রবাদের উৎপত্তি অবশ্য রামায়ণ কিংবা মহাভারত কেন্দ্রিক। কিন্তু তাছাড়াও অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে এইসব প্রবাদের উৎপত্তি নিয়ে। "প্রবাদের উৎসসন্ধান" তেমন একটি বই যেখানে প্রবাদ-প্রবচনের উৎস নিয়ে অালোচনা করা হয়েছে। অাছে লোকপুরাণের না না গল্প। যা প্রবাদের উৎস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।
আবহমানকাল ধরে চলে আসা মানুষের সুখ- দুঃখ, বিশ্বাস, আচার-আচরণ, সংস্কার, রসবোধ, উপদেশ, নিষেধ এই সবকিছুর স্পষ্ট উপাদান ফুটে উঠেছে লোকসাহিত্যের পরতে পরতে। যা লোকসাহিত্যের অত্যন্ত মূল্যবান উপাদানও বটে। প্রাচীন কাল থেকে চলে অাসা এইসব প্রবাদ-প্রবচন মানে অল্প কথায় ছন্দোবদ্ধ পদে প্রকাশিত মনের ভাব। এককথায় বলা যায়, প্রবাদ-প্রবচনের মাধ্যমে সংক্ষেপে যথার্থ অর্থ প্রকাশিত হয় বা ব্যক্ত করা যায়। যা ব্যক্তি-সমাজ এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনে যেমন শিক্ষণীয়, তেমনি গুরুত্বপূর্ণও বটে।
প্রবাদ-প্রবচন যেমনি পুরাতন তেমনি নবীনও বটে। কারণ প্রবাদ পুনঃ পুনঃ ব্যবহূত হইলেও এর রসহানি ঘটে না। প্রবাদ জনসাধারণের উক্তি বা কথ্য ভাষার সাথেও স্বতস্ফুর্তভাবে ব্যবহূত হয়। এই প্রবাদ ব্যহহারের ফলে ভাষা সরল, সহজ ও সংক্ষিপ্ত। উদাহরণ সরূপ বলা যেতে পারে,
" তোমার প্রতিবেশী তোমার প্রতি যেরূপ ব্যবহার করিবে, তুমিও তার প্রতি তদ্রূপ ব্যবহার করিবে "
—এই সুদীর্ঘ উপদেশটি "আরশিতে মুখ দেখা" এই সংক্ষিপ্ত বাক্যে নিহিত আছে। উপরের সুদীর্ঘ কথার পরিবর্তে গ্রামাঞ্চলে অারশিতে মুখ দেখা কথাটি বেশী ব্যবহারিত হয়। সুতরাং বলা যেতে পারে প্রবাদ হলো সংক্ষিপ্ত, সরল, সরস, অভিজ্ঞতা-প্রসূত উপদেশ বাক্য।
সমর পালের লেখা প্রবাদের উৎসসন্ধানে বইটিতে ১১০টি প্রবাদের উৎস সন্ধান করা হয়েছে। প্রতিটি বর্ণনাই যুক্তিযুক্ত এবং প্রমাণসাপেক্ষ। তিনি এই ১১০ টি প্রবাদের উৎপত্তি সংক্রান্ত গল্প বা ধারণা এখানে ব্যক্ত করেছেন। লেখায় হয়তো অাপন লেখনশৈলী বা সাহিত্য শৈলী স্পষ্ট নয় কিন্তু সহজ সরল বর্ণনায় প্রতিটি রচনা লেখা। যা একজন জানতে চাওয়া পাঠকের মনকে তৃপ্ত করতে যথেষ্ট। বইটি সব ধরনের পাঠকের কাছে সমাদৃত হওয়ার দাবি রাখে। জ্ঞানান্বেষণ ছাড়াও বিচিত্রমুখী তথ্যের জন্য বইটি অত্যন্ত দরকারি।
মানুষের মুখে মুখে যে সমস্ত প্রবাদ সচারাচর ব্যবহূত হয়ে থাকে তা থেকে অতি সংক্ষেপে একটি প্রবাদের উৎস সম্পর্কে অালোচনা করা যাক
" ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির "
ধার্মিক লোকের প্রকৃষ্ট উদাহরণ যুধিষ্ঠির। কোনো কোনো স্থানে অত্যন্ত অধার্মিক ব্যক্তিকেও ব্যঙ্গাত্মকভাবে চিহ্নিত করতে এই প্রবাদ ব্যবহূত হয়। কিন্তু কেন এই অধার্মিক ব্যক্তিকে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বলা হবে তার উৎস সন্ধান করতে গেলে জানতে হবে কুন্তির সন্তান লাভের গল্প। কুন্তি হলেন শ্রীকৃষ্ণের পিসিমা।একবার মহর্ষি দুর্বাসা অতিথিরূপে গৃহে এলে কুন্তি তাকে পরিচর্যায় সন্তুষ্ট করেন। দুর্বাসা তাকে এক অমোঘ মন্ত্র শিখিয়ে দিয়ে যান। এই মন্ত্রের প্রভাবে কুন্তি যে দেবতাকে স্মরণ করবে সেই দেবতা তার নিকটে আসবে এবং তার সাহায্যে কুন্তির পুত্রলাভ সম্ভব। অতঃপর একদিন স্বয়ংবর সভার মাধ্যমে কুন্তির সঙ্গে বিয়ে হলো পাণ্ডুর। পাণ্ডু সন্তান উৎপাদনক্ষম ছিলেন না। তখনকার দিনে উত্তম বর্ণের পুরুষ কিংবা জ্ঞানী ঋষি বা দেবতা হতে পুত্রলাভ বৈধ ছিল। পাণ্ডু কুন্তিকে অনুরোধ করেন এ ধরনের ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদন করতে। কুন্তি ধর্মদেবতাকে আহ্বান করেন। শতশৃঙ্গ পর্বতে ধর্ম দেবতার সঙ্গে সহবাসের ফলে কুন্তির যে পুত্রসন্তান লাভ হয় তিনিই ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ধর্ম পুত্র যুধিষ্ঠির কেন অধার্মিক ব্যক্তিকেও বলা হয়।
অাবার ধরুন অামরা কথায় কথায় বলি অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। কিন্তু লোকপুরাণে এ সম্পর্কে কি গল্প প্রচলিত অাছে জানতে ইচ্ছে করে না? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
" অতি লোভে তাঁতি নষ্ট "
একদা এক সময়ে এক রাজার ���িল এক গাই গরু। দুধ দোহানোর সময় প্রায়ই দুরন্তপনা করত গরুটি। একদিন রাজা ওই অবস্থা দেখে রেগেমেগে চেঁচিয়ে বললেন, ‘কাল সকালে ওঠার পর যাকে প্রথমে রাস্তার ধারে দেখব, তাকেই গাইটি দিয়ে দেব।’ এক তাঁতি রাজপ্রাসাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাজার কথা শুনতে পেল। গরুটি পাওয়ার লোভে তাঁতি মনে মনে নানা ভাবনা ভাবতে লাগল। তাঁতি ভাবল, গরু আনতে গেলে তো দড়ি দরকার। ভেবেচিন্তে ঘরে রাখা কাপড় ���োনার সুতা পাকাতে পাকাতে মোটা দড়ি তৈরি করল। দড়ি বেশ শক্ত করতে অনেক দামের সুতা ব্যবহার করতে হলো। তাঁতির ঘরে ছিল বুড়ো মা। বুড়ি যাতে গরুর দুধ বেঁচে পয়সা নিতে না পারে, সে জন্য তাঁতি মায়ের চোখ নষ্ট করে দিল। পরদিন খুব ভোরে উঠে তাঁতি রাজপ্রাসাদের প্রধান দরজার পাশে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াল। রাজা তাঁতিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তাঁতিও অসংকোচে তার কথা নিবেদন করে গরুটি প্রার্থনা করলেন। শুনে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে দারোয়ান দিয়ে পিটিয়ে তাড়িয়ে দিলেন তাঁতিকে। তাঁতি তাঁর সুতা হারালো, মায়ের চোখ নষ্ট করে দিল অাবার রাজার পিটানি খেতে হল। লোভ করে তাঁতি তার সর্বস্ব হারালো।
ঠিক এমন ভাবে ১১০ টি প্রবাদের উৎপত্তি সংক্রান্ত গল্প বইয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
অনেক প্রবাদের অর্থ আমরা সহজেই বলতে পারি। কিন্তু আমরা কজন এসব প্রবাদের উৎসের খোঁজ রাখি। উৎপত্তির পেছনের যে ঘটনাপ্রবাহ অাছে তা জানে না অনেকে। কিন্তু অনেকে অাবার জানতে চায়, উৎসুক মন নিয়ে বসে থাকে কোথা থেকে জানা যাবে এইসব তথ্য। সমর পালের ব্যতিক্রমী, কষ্টসাধ্য এক গবেষণালব্ধ প্রয়াস এই বইটি। যা পাঠকের মনের খোরাক মেটাতে পারে। প্রবাদের জন্মকথা কিংবা উৎপত্তিস্থল যেমন ইতিহাস, পুরাণ, ধর্মশাস্ত্র, নীতিকথা, লোকাচার ঘেঁটে বের করে যথাযথভাবে উপস্থাপনে শুধু শ্রম নয় মেধা ও মননের সমন্বয়ও জরুরি। তেমনি গতানুগতিকতার বৃত্তমুক্ত গবেষণাকর্মে নিবিষ্ট লেখক আলোচ্য বইয়ে ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, পুরাণ, ধর্মশাস্ত্র, ভাষাতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, ভূগোল, সাহিত্য, কিংবদন্তি সবকিছুর সার্থক মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন অাপন মেধা এবং পরিশ্রম লব্ধ জ্ঞান দ্বারা।
Title: প্রবাদের উৎসসন্ধান Author: সমর পাল Publisher: শোভা প্রকাশ Language: বাংলা Format: Hardcover Edition: 6th Printed: 2021 Pages: 175 Price:
প্রবাদ হল, পরম্পরাগত বাক্য, জনশ্রুতি, জনরব বা কিংবদন্তী। ঠিক কোন আমলে প্রবাদের সৃষ্টি তা যেমন বলা যায় না, তেমনই প্রবাদের কোনও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করাও সম্ভব নয়। তবে প্রবাদ যে মানুষের অভিজ্ঞতা প্রসূত ফসল তাতে সন্দেহ নেই।
মানবজীবনের আনন্দ-মধুর, বেদনা-বিধুর, তিক্ত ও রুক্ষ অভিজ্ঞতার ফসল প্রবাদ। আর লোকসাহিত্যের সঞ্চরণযোগ্যতার গুণে শ্রুতি ও স্মৃতিকে নির্ভর করে সেগুলি লোকসাধারণের মুখচারণা করে আসছে সুদীর্ঘকাল ধরে। প্রবাদ বিশেষ কোনও প্রণেতার প্রযত্ন-সম্ভূত সৃষ্টি নয়, মানুষের প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও অনুভূতির ফসল।
বুৎপত্তিগত দিক থেকে প্রবাদ হলো প্রকৃষ্টো বাদঃ (উৎকৃষ্ট, শ্রেষ্ঠ বা প্রশস্ত উক্তি, কথা, বাক্য বা ভাষণ)। পরম্পরাগত অর্থাৎ পূর্বকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসা জনশ্রুতি কিংবা লোক-সমাজের যুগসঞ্চিত অভিজ্ঞতালব্ধ বোধের সংক্ষিপ্ততম প্রকাশ হলো প্রবাদ।
প্রবাদ অবশ্যই প্রয়োগযোগ্য উক্তি। এ উক্তি সাধারণ যে কোনো উক্তির চাইতে অধিক জোরালো এবং ব্যঙ্গার্থক দ্যোতনা সৃষ্টিকারী।
Oxford Advanced Learner's Dictionary Proverb Short well-known saying that states a general truth or gives advice. Chamber's Dictionary মতে প্রবাদ হলো "A short familiar sentence expressing a supposed truth or moral lesson: a byword: a saying that requires explanation."
লোকসাহিত্য-বিশেষজ্ঞ আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেছেন, "প্রবাদ বা প্রবচন জাতির সুদীর্ঘ ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ততম রসাভিব্যক্তি; ইহা এক দিক দিয়া যেমন প্রাচীন, আবার তেমনই অন্য দিক দিয়া আধুনিক- ইহা পূর্ব হইতে প্রচলিত হইয়া আসিতেছে বলিয়া প্রাচীন, আবার প্রচলিত মনোভাব প্রকাশ করিতেও সহায়তা করিতেছে বলিয়া আধুনিক। বিভিন্নমুখী ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের বহু পরীক্ষিত উপদেশ ও নীতি প্রচার করাই ইহার লক্ষ্য-রূপক ও বক্রোক্তি প্রধানত ইহার অবলম্বন। ইহা যেমন ব্যক্তি ও সমাজ-জীবনের কর্তব্য নির্দেশক, তেমনই সম্পাদিত কার্যাবলিরও রূঢ় সমালোচক।"
প্রবাদের সংক্ষিপ্ততম সংজ্ঞা হিসেবে আশুতোষ ভট্টাচার্য স্পেনদেশীয় উক্তির ইংরেজি ও বাংলা ভাষান্তর করেছেন এভাবে- ' A Proverb is a short sentence based on long experience. অর্থাৎ প্রবাদ হলো দীর্ঘ অভিজ্ঞতার একটি সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি।
যেমন, ধরুন 'সস্তার তিন অবস্থা'। সস্তা হলো সুলভ বা কমদামি। ফারসি সস্ত বা সুস্ত (সিন + সিন + তা) থেকে এটি এসেছে।
অল্পদামি জিনিসের বিষয়ে কোনো খুঁত বা ত্রুটি উল্লেখ করে মানুষ আলোচ্য প্রবাদ প্রয়োগ করে। সস্তায় কেনা জিনিসের যে তিনটি অবস্থা বা ত্রুটির কারণে এই প্রবাদের উৎপত্তি হয়েছে তা হলো;
১) সস্তায় কেনা জিনিস ত্রুটিযুক্ত হয়ে থাকে, ২) দ্রুত ভঙ্গুর বা অকার্যকর হয় এবং ৩) দীর্ঘদিন টিকে থেকে সঠিকভাবে কাজ করে না।
সস্তায় কেনা জিনিসের সহসা বিনষ্ট হবার ভয় থাকে বলে সে জিনিস আবার কিনতে হয় এবং এজন্য অতিরিক্ত অর্থব্যয় হয়ে থাকে। এ কারণে সস্তার তিন অবস্থা অর্থাৎ তা ত্রুটিযুক্ত, ক্ষণস্থায়ী এবং অকার্যকর বলে প্রবাদের প্রয়োগ ঐভাবে হয়ে থাকে।
বা ধরা যাক একটি অতীব পরিচিত প্রবাদ, 'শাঁখের করাত'। শাঁখ হলো সমুদ্রজাত শঙ্খ। শঙ্খবণিক বা শাঁখারিগণ দূর অতীত থেকে শাঁখ থেকে প্রস্তুত সামগ্রীর ব্যবসা করে জীবনধারণ করে আসছে।
নগেন্দ্রনাথ বসু (১৮৬৬-১৯৩৮ খ্রি.) সঙ্কলিত বিশ্বকোষে (বিংশ ভাগ ১৩১৬ বঙ্গাব্দ) বলা হয়েছে; “বাঙ্গালার ঢাকা অঞ্চলের শঙ্খবণিকেরা শাঁখ কাটিয়া সুন্দর সুন্দর চুড়ি, বালা, শাঁখা-বোতাম, পায়ের বেঁকি প্রভৃতি প্রস্তুত করিয়া থাকে। ছোট শাঁখ অপেক্ষা বড় শাঁখের আদর বেশি, কারণ তাহাতে নানা শিল্পকার্য চলিতে পারে। ....শঙ্খ থেকে নানা রকম অলঙ্কার ও ব্যবহার্য উপকরণ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় বিশেষ ধরনের করাত। এই করাতে দু'দিকেই ধার থাকে। এই করাত যারা দেখেছেন, তারা জানেন যে, শাঁখারিরা শঙ্খ কাটার সময় করাত ব্যবহার করতে সামনে ও পেছনে করেন। সাধারণ কাটকাটা করাত শুধু ফিরে আসার সময় কাটে। কিন্তু শাঁখের করাত যেতেও কাটে ফিরে আসতেও কাটে।
সেজন্য বলা হল:
সুজনের সাথে আনের পিরিতি কহিতে পরাণ ফাটে। আসিতে যাইতে কাটে শঙ্খ বণিকের করাত যেমন
উভয় সঙ্কট বুঝাতে কিংবা উভয়দিকে বিপদ বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে মানুষ শাঁখের করাত প্রবাদ ব্যবহার করে।
সংক্ষিপ্ততা, সহজগম্যতা, বাস্তবতা, সরসতা প্রবাদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। সেই সঙ্গে লুকিয়ে থাকে কিছুটা বক্রোক্তির ভাব। প্রবাদে প্রতিভাসিত হয় গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজ-জীবনের কথা, মানুষের দীর্ঘসঞ্চিত অভিজ্ঞতার কথা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতির কথা, মানব ও মানবেতর প্রাণির প্রকৃতি বৈশিষ্ট্যের কথা।
বস্তুত প্রবাদ মানুষের জীবনবোধ ও বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার বাঙ্ময় রূপ।
'আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়'; শুনেছেন? প্রবাদটির আবার অন্য একটি রূপ আছে, 'আগা হাল যে দিকে যায় /পাছা হাল সে দিকে যায়'। অন্ধভাবে অন্যের কাজের অনুকরণ বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে প্রবাদটি প্রযোজ্য হয় ।
যে কৃষক হাল বা লাঙ্গল চালায় তাকে নাংলা বলা হয়ে থাকে। জমি চাষ করার সময় একসাথে একাধিক লাঙ্গল ব্যবহৃত হলে প্রথম চাষি যে দিক দিয়ে লাঙ্গল চালায় পরবর্তী চাষিরাও তার অনুসরণে লাঙ্গল বয় একই পথে। কোনো ব্যতিক্রম ঘটায় না তারা।
আমাদের সমাজে কেউ যদি কোনো কাজ করে এবং তার দৃষ্টান্ত অনুসরণে একই কায়দায় অন্য কেউ চলে তবে আলোচ্য প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
'খর দজ্জাল' প্রবাদটির কথাই ভাবুন না ! ফারসি খর শব্দের অর্থ গর্দভ বা খচ্চর (মঙ্গোলীয় বড়ো ভাষায় খেচরা)। দজ্জাল শব্দটি আরবি। অর্থ-মিথ্যাবাদী, দুর্দান্ত অত্যাচারী, অবাধ্য, দস্যি, দুষ্ট, প্রতারক, শঠ ইত্যাদি।
মহাপ্রতারক ও তরবারির ধার হিসেবেও আরবিতে শব্দটির ব্যবহার আছে।
প্রবাদ কথায় খরদজ্জাল, খাড়াদজ্জাল, খরেদজ্জাল কিংবা খর-দরজাল শব্দ চালু আছে। শাস্ত্রমতে দুর্দান্ত অত্যাচারী ও একচোখা এক লোক কেয়ামতের অব্যবহিত পূর্বে হযরত ইমাম মেহেদির সময় জন্মগ্রহণ করে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে এবং বহুলোকের ইমান নষ্ট করবে।
সেই লোকই হচ্ছে দজ্জাল। সে হবে ভীষণ-দর্শন দানব। তার অত্যাচারে মানবজাতি ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়বে। দজ্জালের বাহন করে অতিকায় গর্দভ। আমাদের সমাজে প্রচণ্ড অত্যাচারী এবং অনিষ্টকারী দুষ্ট মানুষকে খর দজ্জাল বা খর-দরজাল বলে চিহ্নিত করা হয়।
আবার নারী-প্রকৃতি বিষয়ক প্রবাদ, মূলত নারী মনের সৃষ্টি। নারী মহলেই এর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার। এই শ্রেণীর প্রবাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য তীব্র ব্যঙ্গ, তীক্ষ্ম বক্রোক্তি, নারীর ত্রুটি-বিচ্যুতি, চটুল কৌতুক রস প্রভৃতি। নিদর্শন: ‘অকাজে বউড়ি দড়’ (অপ্রয়োজনীয় কাজে বধুর উৎসাহ)।
বহুল প্রচলিত প্রবাদ 'গদাই লশকরি চাল' শুনেছেন নিশ্চই? গদাই হচ্ছে গদাধর নামক ব্যক্তির আদুরে দুলাল কিংবা ডাকনাম। বিষ্ণুও গদাই অর্থাৎ গদা নামক লোহার মুগুর কিংবা মোটা লাঠি ধারণকারী। গদাধর বা গদাইয়ের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে গদাই প্রধান।
লশকর বা লস্কর অর্থ সৈনিক। পদবিটি ৬০০ বছরেরও বেশি পুরানো। এটি স্বাভাবিক যে, সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সৈনিক বা লশকর অস্ত্র (যে হাতিয়ার শত্রুর দিকে ছুড়ে মারা হয়) কিংবা শস্ত্র (মূলত যে হাতিয়ার হাতে ধরে রেখে শত্রুকে আঘাত করা হয়) কাছে রাখে।
অতীতের গদাবহনকারী সৈনিকরা স্বভাবতই অন্যান্য প্রকৃতির অস্ত্রশস্ত্র বহনকারী সৈনিকের চেয়ে ধীরগতিসম্পন্ন ছিল। তাই গদাবহনকারী গদাই নামের সৈনিকরা মানুষের চোখে অলস হিসেবে গণ্য। অলস প্রকৃতির মানুষের চালচলন ও কাজকর্মের মধ্যে 'করছি করবো, হচ্ছে হবে, যাচ্ছি যাবো, উঠছি উঠবো, আনছি আনবো'- এ ধরনের দীর্ঘসূত্রী ভাব লক্ষ করলে সে চালচলনকে গদাই লশকরি চাল বলা হয়।
কখনো কখনো আঠার মাসে বছর- এমন প্রবাদও প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। অলসভাবে কালযাপনকারীকে গতর পোষা নামেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে এদেশে।
লোকসাহিত্যের একটি বিশিষ্ট ধারা এই প্রবাদ। এগুলিতে প্রতিফলিত অতি প্রখর বাস্তববোধ ও জীবনসঞ্জাত অনুভূতি। দুই বাংলা জুড়ে নানা ধরনের প্রবাদের ছড়াছড়ি। লোকশিক্ষার মাধ্যম হিসাবেও এগুলি মূল্যবান।
উল্লেখ্য, ‘ধন যৈবন আড়াই দিন, চামের চ(ই)খে মানুষ চিন’ প্রভৃতি প্রবাদ আপ্তবাক্যের মতোই মূল্যবান। মানুষের মুখে মুখে ফেরে এজাতীয় প্রবাদ। এগুলি বেঁচে আছে প্রত্যক্ষ জীবন অভিজ্ঞতার গুণে, রচনার সরসতার গুণে, ভাষার সাবলীল স্বচ্ছতার গুণে।
বর্তমান গ্রন্থে প্রবাদ-প্রবচন, বাগধারা, প্রবাদমূলক বাক্যাংশ- এমনকি ভাব ও অর্থের দ্যোতনা বহনকারী বিশিষ্টার্থক শব্দের উৎস সন্ধানের চেষ্টা করেছেন লেখক। সে সন্ধান-প্রয়াসে গরুগম্ভীর তত্ত্বকথা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা হয়েছে।
আমাদের বহুবিধ প্রবাদ এসেছে কাহিনী থেকে। আবার অনেক প্রবাদ থেকে সৃষ্টি হয়েছে কাহিনী। অসংখ্য প্রবাদ-কাহিনী হারিয়ে গেছে। আবার নবতরভাবে তৈরি হয়েছে অসংখ্য প্রবাদ।
আমাদের প্রবাদ-প্রবচনের সৃষ্টি অধিকাংশই গ্রামীণ সংঘবদ্ধ জীবন থেকে। সে কারণে আমদের দেশের নানা অঞ্চলে প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচন আমাদের সংস্কৃতিকে পুষ্ট করে রেখেছে।
কিছু কিছু প্রবাদ নানা অঞ্চলে সমভাবে প্রচলিত ঐ সমস্ত এলাকার আঞ্চলিক ভাষায়। কোনো কোনো প্রবাদের শব্দে কিছু পরিবর্তনও লক্ষ করা যায়। অঞ্চলভেদে আবার কিছু প্রবাদ নিতান্তই নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ।
এ কারণে আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচন কার্যকরভাবে সংগৃহীত হওয়া জরুরি। সংস্কৃতি যেমন একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সামাজিক আমিত্বের প্রকাশ, তেমনি সংস্কৃতি তথা লোক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রবাদও অঞ্চল থেকে বিকশিত হয়ে পরিপুষ্ট অবস্থায় ছড়িয়ে গড়ে বৃহত্তর জনসমাজে ।
লেখক বলছেন, "সব কাহিনী যেমন আমাদের কাছে নেই, আবার অনেক প্রবাদের শাব্দিক অর্থ আমাদের জানা নেই। সংখ্যাহীন প্রবাদের মধ্যে অল্প কিছু সংগ্রহের উৎস অনুসন্ধানের প্রচেষ্টাই এই গ্রন্থ।"
সমর পাল মূলত বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদ, নৃতত্ত্ব, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিস্তৃত স্থান ও ব্যক্তিত্ব, লোক সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করেছেন।
তরুণ প্রজন্মকে শেকড়-সন্ধানী হতে আগ্রহী করা এবং আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রকে প্রাগ্রসর করাই তাঁর লক্ষ্য।
সমর পালের বেশ কিছু বইয়ের মাঝে " প্রবাদের উৎসসন্ধান" বইটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বইটা পড়ে জ্ঞান লাভের সাথে সাথে অনাবিল আনন্দ লাভ করা যাবে তাতে কোনই সন্দেহ নাই বিন্দু মাত্র।
ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে প্রবাদ হলো প্রকৃষ্টো বাদঃ। প্রবাদ নিয়ে নানা মনীষী নানা মত ও সংজ্ঞা দিয়েছে। আবার এর গুরুত্ব ও উৎপত্তি নিয়েও আলোচনা করেছেন, দিয়েছেন নানান উক্তি প্রবাদ নিয়ে।
সরল বাঙ্গলা অভিধানে সুবলচন্দ্র মিত্র বলেছেন, " যে জাতির পুরাতত্ত্ব নাই, সে জাতি জাতিই নহে; আর যে ভাষায় প্রবাদ ও প্রবচন নাই, সে ভাষা ভাষামধ্যে পরিগণিত হয় না; উভয়েই আধুনিক। প্রবাদ -প্রবচন বহুকালাগত জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত বাক্য। পুরাতন বলিয়া বা পুনঃপুন ব্যবহৃত হইলেও ইহার রসহানি ঘটে না; এইটিই ইহার বিশেষত্ব।
প্রবাদ-প্রবচন জাতীয় অভিজ্ঞতার ফল। এর রচনা কাল বা রচয়িতার নাম বলা সহজ নয়। তবে এগুলো কোন শ্রেনী থেকে এবং কোন কাজের জন্য সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে বোঝা যায়।
যেমনঃ হালে পানি পাওয়া--এটি নৌকার মাঝির উক্তি। তার পোয়া বার-- এটি পাশা খেলা থেকে গৃহিত। হাতের পাঁচ---এটি তাস খেলা হতে উৎপন্ন।
প্রবাদ জনসাধারনের উক্তি, এ কারনে এর ভাষা হয় সরল ও সহজ। যা সহজে সাধারনের হৃদয়ে অবস্থান করে। এবং মনে রাখা সহজ।
অনেক প্রবাদের মাঝে কিছু প্রবাদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে কালের অতলে।
তবে আজ আমরা যে সব প্রবাদ দেখি এর প্রতিটি প্রবাদ সৃষ্টির পিছনের একটা ঘটনা বা কারন আছে, যে ঘটনা বা কারনের ফলে লোকমুখে প্রচলিত হয়ে প্রবাদে পরিনত হয়েছে।
সেই সব পিছনের ঘটনা গুলোর চমৎকার বর্ণনা তুলে এনেছেন লেখক বইটিতে।
বইটিতে লেখক সময় পাল মোট ১৭৪ টি প্রবাদের পিছনের ঘটনা বা প্রবাদ প্রচলিত হবার মূল ঘটনা বা যে কারনে আজ প্রবাদটা লোকমুখে বেঁচে আছে সেই ঘটনাটা তুলে এনেছেন।
বইটা পড়ে আমার প্রথমে মনে হয়েছে অনেক মজার। এমন কিছু মজার ঘটনা থেকে প্রবাদ হতে পারে যা আগে জানাই ছিলো না। তবে বইটা পড়া শেষে বুঝেছি বইটাতে জানার মতো অনেক অনেক ঘটনা আছে যা আগে জানা ছিলো না।
অনেক ঘটনা ইতিহাস বা ধর্ম থেকে এসেছে যা জেনে ভালো লাগলো তাছাড়া অনেক চরিত্র থেকেও প্রবাদের উৎপত্তি হয়েছে যা লেখক বর্ণনার মাঝে তুলে ধরেছেন।
বহূল প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনের উৎসের গল্প তুলে ধরে সরম পাল লিখেছেন "প্রবাদের উৎসসন্ধান" বইটা। দুনিয়ায় এতো কিছু থাকতে 'কুম্ভকর্ণের' সাথে ঘুমের নামটা কেন জড়িয়ে গেল আর কেনই বা কঠিন প্রতিজ্ঞার নাম হলো 'ধনুর্ভঙ্গ পণ'? ইঁদুরের সাথে খুদের একটা সম্পর্ক থাকতেই পারে কিন্তু 'বিদুরের' সাথে খুদের সম্পর্ক কী? আর 'চিত্রগুপ্তের খাতাতেই' বা কী এমন লেখা থাকে যে তা নির্ভুল হবেই হবে.. তারই উৎস- ইতিহাস তুলে ধরেছেন সমর পাল। পুরাণ, লোককথা, ইতিহাস, ঐতিহ্যের আলোকে খুঁজে বের করেছেন প্রবাদের অন্তর্নিহিত অর্থ। পরিচিত প্রবাদের পিছনের গল্প জানতে বইটাকে সহায়ক মনে হয়েছে। মজা নিয়ে পড়ার মতো বই।
Well researched and sometimes fictionalized (as it seemed). The writer really gave it a good amount of thought and search for laboring this piece. The information was gathered thorough extensive reading, hands down. Kudos!