আমাদের চারপাশের জগৎ সত্য না মায়া, এ বহুযুগের দার্শনিক তর্ক। এই প্রশ্ন মাথায় রেখে আমাদের নায়ক, লুবলু একদিন বেরিয়ে পড়ে তার বন্ধু কিমের সঙ্গে। সঙ্গী জুটে যায় লুবলুর বহুদিন আগের এক পুরোনো আলাপী। পথে যেতে যেতে পরিচয় হয় এক সংগীতজ্ঞর সঙ্গে। তারপর নানা ঘটনার ঘনঘটা। নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে জগৎ ও বস্তুবাদের নানা জিজ্ঞাসার মূলে পৌঁছে যায় লুবলু আর পাঠক। এই মূল প্রশ্নের সঙ্গে নানাদিক থেকে এসে মেশে ম্যাজিক রিয়েলিজম, বৌদ্ধদর্শন, নীতিবিদ্যা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও আরও অনেক বিষয়। গভীর দার্শনিক প্রশ্নের সঙ্গতে চলতে থাকে ঝকঝকে রঙিন ইলাস্ট্রেশন।
বাংলা কমিক্সে এতো দৃষ্টিনন্দন ও গভীরতাসম্পন্ন অলংকরণ দেখিনি আগে (স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে কমিক্স অল্পই পড়া হয়।) লেখক তার চরিত্রদের মাধ্যমে আমাদের অস্তিত্ব আর প্রত্যক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন দার্শনিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। লেখা ও আঁকার যুগলবন্দীতে "লুবলুর পৃথিবী" পাঠ হয়ে উঠেছে এক অনন্যসাধারণ অভিজ্ঞতা।
চমৎকার বই। সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে লুই ক্যারল, এডওয়ার্ড হপার, ভ্যান গঘ, বিটলস এবং আরো অনেককে সূক্ষ্ম ট্রিবিউট দিয়েছেন শিল্পী। অলংকরণের মধ্যে একটা অদ্ভুত eerie ব্যাপার আছে, তা এত নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারায় শিল্পীর দক্ষতা সত্যিই প্রশংসনীয়। পড়তে পড়তে"Moebius" ( Jean Giraud) মনে পড়ে, বাংলায় এই মুহূর্তে এই বইটি ছাড়া ওই জঁরায় সেভাবে কাজ করছেন, তেমন কেউ জানা নেই, চার্বাক দীপ্তের থেকে সেই আশা রইল ।
লুবলুর পৃথিবী অদ্ভুত। এখানে প্রশ্নেরা ক্রমাগত ভীড় করে। ঠিক কোনটা সত্য আর কোনটা ভ্রম তা নিয়ে অনুসন্ধিৎসা চলতে থাকে। গল্পটা ভালো, তবে মন কেড়ে নেয় রঙিন ইলাস্ট্রেশন। বেশ নজরকাড়া ভঙ্গিতে করা হয়েছে প্রতিটি অধ্যায়ের গল্প। চাইলেই প্রতিটি পাতায় রঙিন মোহনায় ভেসে যাওয়া যায়। তাছাড়া মাঝেমাঝেই মিলে যায় বিভিন্ন শিল্পীদের দেয়া ট্রিবিউট। সব মিলিয়ে পাঠের অভিজ্ঞতা চমৎকার।
কমিক্স বা গ্রাফিক নভেল, যায় বলি, সেই হিসেবে দারুন। কালার কম্বিনেশন থেকে শুরু ছবি গুলো দুর্দান্ত। কিন্তু পড়া শুরু করতেই শেষ হয়ে গেলো, আর কি জানি একটা মিসিং মিসিং লাগছিল। ভাল লেগেছে অনেক।
বেদান্ত, বুদ্ধ, রবীন্দ্রনাথ - 'লুবলুর পৃথিবী' বইটি চিরন্তন কিছু দার্শনিক প্রশ্নের উপর আলো ফেলেছে। অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের দ্বন্দ্বে ভরা এই জগৎ কি সত্যি নাকি মায়া? সত্যের স্বরূপ কি মানুষ উপলব্ধি করতে পারে কখনো? এই ধরণের কিছু চিন্তাস্রোত বইটি জুড়ে প্রবাহিত। কিন্তু এই জটিল দার্শনিক ভাবনা থাকলেও তার নূন্যতম ভার বইটিতে নেই। লুবলু, কিম, কুনজুম গুলজামাল এবং সিয়াম মাসিকে ঘিরে দৈনন্দিন জীবনের ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে কখনো বাস্তবতাকে পেরিয়ে গিয়ে অপূর্ব দৃশ্যকল্পের বুননে চিন্তাগুলি এসেছে। চার্বাক দীপ্ত নিঃসন্দেহে বাংলা কমিকসের জগতে এই বইটির হাত ধরে বিপ্লবের পথ প্রস্তুত করেছেন।
বই এর প্রোডাকশন কোয়ালিটি দারুন। আঁকা দুর্দান্ত। প্যানেল ফ্লো ন্যাচারাল। কিন্তু গল্পটি ঠিক জমলো না। দ্যা ম্যাট্রিক্স এর দুধে যেন লিটার লিটার জল মেশানো হয়েছে। দক্ষিণ কলকাত্তাইয়া হিপস্টার-মার্কা সারফেস লেভেল এর সেমি-আঁতেল ফিলোজোফি পড়তে পড়তে হতাশা ছাড়া আর কিছুই বোধ হচ্ছিল না। প্রকাশকদের বলব, ভালো লেখকদের দিয়ে কমিক্স উপযোগী মৌলিক গল্প লেখান, তারপর এরকম ট্যালেন্টেড আঁকিয়েদের হাতে ধরিয়ে দিন- কমিকসের বাজার কিন্তু পোটেন্ট।
চার্বাক দীপ্তের নাম শুনলে বাঙালি পাঠকের মনে যে স্বস্তি আসে, এবার সেই স্বস্তি মুগ্ধতায় পরিণত হয়েছে তার নতুন গ্রাফিক নভেল 'লুবলুর পৃথিবী'-তে। এই বই কেবল একটি গ্রাফিক নভেল নয়, এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা পাঠককে তার চারপাশের জগতের সত্যতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। সবার আগে আসি বইটির অসাধারণ চিত্রায়ণ প্রসঙ্গে। বাংলা কমিকসের জগতে এমন বিশ্বমানের গ্রাফিক্স সত্যিই বিরল। প্রতিটি ফ্রেম, প্রতিটি প্যানেল এমন সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে আঁকা হয়েছে যে চোখ ফেরানো দায়। প্রতিটি চরিত্রের আবেগ, প্রতিটি দৃশ্যের আবহ এতো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে মনে হয় যেন কোনো হলিউড স্টুডিওর কাজ দেখছি। চার্বাকের রঙের ব্যবহার জাদুকরী, যা কাহিনীর প্রতিটি মুহূর্তকে জীবন্ত করে তোলে। তবে 'লুবলুর পৃথিবী'-র আসল জাদু লুকিয়ে আছে তার অভিনব গল্পে। গল্পের নায়ক লুবলু তার বন্ধু কিমকে নিয়ে এমন এক যাত্রা শুরু করে, যা পাঠককে নিয়ে যায় দার্শনিক জিজ্ঞাসার এক গভীর সমুদ্রে। আমাদের চারপাশের জগৎটা কি কেবলই মায়া, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো সত্য—এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে কাহিনীর নানা বাঁক ঘুরতে থাকে। ম্যাজিক রিয়েলিজম, বৌদ্ধ দর্শন, নীতিবিদ্যা এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো জটিল বিষয়গুলো অত্যন্ত সাবলীলভাবে মিশে গেছে এই গল্পে। গল্পের গভীর দার্শনিকতা পাঠককে চমকে দেবে, কিন্তু তার থেকেও বেশি মুগ্ধ করবে চার্বাকের গল্প বলার অসাধারণ ক্ষমতা। তিনি গভীর তত্ত্বকে সহজ-সরল ভাষার মাধ্যমে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। লুবলুর যাত্রা শুধু তার নিজের নয়, বরং পাঠকেরও এক আত্ম-আবিষ্কারের যাত্রা। যদি আপনি বাংলা কমিকসের জগতে এক নতুন দিগন্ত দেখতে চান, যদি আপনি এমন একটি গল্প পড়তে চান যা আপনাকে ভাবাবে এবং একই সাথে ভিজ্যুয়াল সৌন্দর্যে মুগ্ধ করবে, তাহলে 'লুবলুর পৃথিবী' আপনার জন্য অবশ্যপাঠ্য। চার্বাক দীপ্ত প্রমাণ করেছেন যে বাংলা গ্রাফিক নভেল আন্তর্জাতিক মানের হতে পারে, এবং তিনি নিঃসন্দেহে সেই পথপ্রদর্শক। এই বইটি কেবল একটি কমিকস নয়, এটি বাংলা শিল্পের এক নতুন ইতিহাস।
পূর্ব ভারতের বাসিন্দা লুবলুর মনে পৃথিবী ও আশেপাশের জগৎ সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন। সে দার্শনিকের মতো অস্তিত্ব বা সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করে। জীবনের কোনো না কোনো সময় আমরাও এমন প্রশ্ন করি বা করেছি। এমন কেন ? এমনটা কি সত্য? এমনটা না হলে কেমন হতো ? অন্যরাও কি এমন টা ভাবছে........ লুবলুর কাছে সন্দেহ হয় আশেপাশের জগৎ কি বিভ্রম ,মায়া না সত্য ,নাকি কারো দেখানো ছবির অংশবিশেষ ? আমরা যেমনটা ভাবছি অন্যেরাও আমাদের সম্পর্কে তাই ভাবে ? লুবলুর ভাবনাচিন্তার মধ্যে এসে পড়ে জাদুবাস্তবতা , বৌদ্ধ দর্শন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ।
লুবলুর পৃথিবী হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পড়িনি, ছোটবেলায় নতুন কমিক্স বই পাওয়ার পর যে উত্তেজনা থাকতো, সেটাই ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। প্রথমেই বলতে হয়—বইটির দাম এক���বারেই সাধ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে। মাত্র ২৯৯ টাকায় এমন একটি বই কীভাবে তৈরি সম্ভব, বুঝে উঠতে পারছি না। গ্রাফিক নভেল এর পোকা হয়েও দামের কারণে অনেক বই কিনতে পারিনা, সেখানে এই বই পাওয়া হাতে চাঁদ পাওয়ার মতন ব্যাপার। এই বইটি আমি অফারে কিনেছি, কিন্তু পুরো দাম দিয়ে কিনতেও একটুও দ্বিধা হতো না। Book Farm কে পাঠকদের কথা ভাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
এই বই লঞ্চের সময় ট্যাগলাইন ছিল—"এমন কমিক্স বাংলায় আগে পড়েননি", আর সেই দাবি সত্যি, অন্ততঃ আমার তাই মনে হয়েছে। ভিআর, এডভেঞ্চার, স্বপ্ন, সত্য অনুসন্ধান, মোমো থেকে ম্যাজিক—সবই একসাথে জায়গা করে নিয়েছে। কিম, সিয়াম মাসি, গুলজামাল—সব চরিত্রই দারুণ লেগেছে। আশা রাখি ওদের সাথে আবার দেখা হবে। তবে আমার প্রিয় চরিত্র সিয়াম মাসি, হয়তো লুবলুর মতন মোমো আমারও প্রিয় বলেই!
লুবলুর মধ্যে দর্শন আছে, কিন্তু তাকে ভারী করে, জোর করে বোঝানোর কোনো চেষ্টা নেই—এটাই এই বইয়ের অন্যতম গুণ। তাই ছোট থেকে বড়—সব বয়সের পাঠকের কাছেই এটি সহজে পৌঁছাতে পারবে।
ছোটবেলায় ছাদে হাঁটতে হাঁটতে মনে হতো, আমি যেন এক বিশাল টিভির ভেতর দিয়ে হাঁটছি, আর কেউ আমাকে সবসময় দেখছে। লুবলুর পৃথিবী শুরুতেই সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনলো। Charbak Dipta বাবুর অনবদ্য ইলাস্ট্রেশন, সঙ্গে শক্তিশালী কনসেপ্ট, প্রাণবন্ত ও সাবলীল সংলাপ বইটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। চরিত্রদের সঙ্গে যেন সরাসরি আলাপ হচ্ছিল।
ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই এই বই উপভোগ করতে পারবে বলেই মনে করি। একেবারে নতুন ধারার এই কাজ উপহার দেওয়ার জন্য এবং বাংলা কমিক্সে এ ধরনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য স্রষ্টাদের অনেক ধন্যবাদ। পড়ে ভীষণ আনন্দ পেয়েছি!
আশা করি, আমরা ভবিষ্যতে লুবলুর পৃথিবী-র আনাচকানাচে ঘুরে বেড়ানোর আরও বেশি করে সুযোগ পাবো।
সত্যি কথা বলতে এই প্রথম কোন বইকে নিয়ে কিছু বলার নেই আমার, কলেজ স্ট্রিটের ছাড়বেলাতে এবার আর যাওয়া হয়নি, তবে এই বইটিকে প্রথম দেখাতেই বেশ পছন্দ হয়েছিল আমার, তখনো জানতাম না বইটির ভেতরে এত মনি মুক্ত আছে, বাজে না বকে কাজের কথা আসা যায়, এই লুবলু হচ্ছে একজন উদাসীন দার্শনিক সে পূর্ব ভারতের একটি ছোট্ট শহরে থাকে, একদিন সে তার বন্ধু কিমের সাথে একটি ম্যাজিক শো দেখার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় অন্য শহরে , রাস্তায় যেতে যেতে তার আলাপ হয় এক অদ্ভুত মানুষের সাথে, নিজেকে তিনি সংগীত বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করলেও তার সাথে কথা বলার পর বোঝা যায় প্রায় সকল বিষয়ে তার জ্ঞান আছে, এবং বইটির আরেক চরিত্র এবং আমার পুরো বইটির মধ্যে থেকে সবথেকে প্রিয় চরিত্র সিয়াম মাসির সাথে তাদের গন্তব্য পথে দেখা হয় এবং সে তাদের ম্যাজিক শো পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এবং তাদের সাথে বসে পুরো শো দেখেন, হঠাৎ করেই চরিত্রকে আমি আমার পছন্দের কেন বললাম তার কারণ গুলো বলি, এই সিয়াম মাছেই উত্তর ভারতের এক ছোট্ট শহরের বাসিন্দা, তিনি চূড়ান্ত ভাবে ডিপ্রেসড হয়ে পড়েছিলেন, এবং সে সময় লুবলু তাকে নানান ভাবে চিন্তাভাবনা করতে শিখিয়েছিল এবং পরবর্তীকালে সে নিজেই জীবনকে গুছিয়ে নিয়ে নিজের মোমো ভ্যানকে সাথে করে ঘুরে বেড়ান। এক কথা শুনে মনে হবে যে, ব্যাস শুধু কতগুলো মানুষ একটা ম্যাজিক শোতে যাবে সেটা নিয়ে পুরো একটি বই, এমন ভাবনার দরকার নেই এই যাত্রাপথের মধ্যে তাদের কথাবার্তায় বা নিজেদের চিন্তা ভাবনায় এমন অনেক কিছু আছে যা আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে, এবং সবার শেষ পেজে ডোডো পাখির যে যে ছবিটি, এক কথায় অসাধারণ,যেমন বইটির কনসেপ্ট তেমনি শিল্পীর অসাধারণ শিল্প, তবে বইটি হাতে নেওয়ার পরে একটা কথাই মাথায় আসছে আমার এরকম কোয়ালিটির একটি কমিকস বই এত কম দামের কি করে বুকফার্ম দিচ্ছে।
গ্রাফিক নভেল আর কমিক্সের মধ্যে কিন্তু পার্থক্য রয়েছে এবং এই বিষয়ে আমি আগেও আলোচনা করেছি, ভবিষ্যতে আবারও করবো। কিন্তু আপাতত এই লুবলুর পৃথিবী নিয়ে এটাই বলব যে, গোটা বই পাড়াতে যে এটা নিয়ে হাইপ তৈরি হয়েছে, এটা সত্যিই তার যোগ্য। সায়েন্স ফ্যান্টাসী জনরা নিয়ে তৈরি হওয়া এই গ্রাফিক নভেলটি নিজের জনরা নিয়ে যেমন সচেতন, তেমনই আবার এটা যাতে পাঠকদের দুর্বোধ্য না লাগে, সেই বিষয়েও হান্ড্রেড পার্সেন্ট সজাগ। হ্যাঁ, ছোট বাচ্চাদের হাতে এই বই অবশ্যই তুলে দিতে পারেন, তারাও নিজেদের মতন বোঝার বুদ্ধি দিয়ে এই গ্রাফিক নভেলটি এঞ্জয় করবে, কিন্তু তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা গভীর বিষয় গুলি হয়তো বুঝতে পারবে না। সেই দিক থেকে একজন ম্যাচিওর মানুষ, এই কাহিনীকে বেশি এঞ্জয় করবে বলেই আমার মনে হয়েছে। ৮ থেকে ৮০, সমস্ত বইপ্রেমী মানুষকেই আমি এই বইটি হান্ড্রেড পার্শেন্ট রেকমেন্ড করতে চাই। আপনি যদি বইপ্রেমী হন, আর এটাকে কমিক্স বা বাচ্চাদের বই ভেবে দূরে ঠেলে দেন, তাহলে এক অসাধারণ পাঠ অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হবেন, সেই গ্যারান্টি আমি দিলাম। তবে একজন পাঠক হিসেবে চার্বাক বাবুর কাছে অনুরোধ করতে চাই, চাইলে এর সিক্যুয়েল চার্বাক বাবু করতেই পারেন, কিন্তু এই কাহিনী পড়ার পর আপনার থেকে একটা বড় এক্সপেক্টেশন কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে, তাই পরবর্তী পার্ট যদি আসে, তাহলে সেটা যেন এর যোগ্য উত্তরসুরি হয়, সেই আশাই রাখলাম আপনার কাছে। তার জন্য যদি একটু দেরি হয় হোক। ভালো জিনিস তৈরি হতে তো সময় লাগবেই। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে এর সাধারণ সিক্যুয়েল না আনারই অনুরোধ রইল।
“লুবলুর পৃথিবী” এক অসাধারণ দার্শনিক কমিকস, যেখানে লেখক খুব অল্প কয়েকটি পৃষ্ঠার মধ্যেই মানবজগতের অস্তিত্ব, মায়া ও বাস্তবতার প্রকৃতি নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছেন। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র লুবলু একজন চিন্তাশীল দার্শনিক, যে বিশ্বাস করে আমরা যা দেখি তা-ই বাস্তব নয়—বরং আমাদের চোখের সামনে কেউ এক ভ্রান্তির পর্দা টেনে দিয়েছে। তার সঙ্গে আছে কিম, কুনজুম গুলজামাল ও সিয়াম মাসি—ভারতের চার প্রান্ত থেকে আসা চারটি স্বতন্ত্র চরিত্র, যাদের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে গল্পটি দর্শন, বাস্তববাদ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মিশেলে গভীর হয়ে ওঠে। বইটির detailed আর্টওয়ার্ক পুরো অভিজ্ঞতাটিকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে; প্রচুর পপ কালচার রেফারেন্স আছে গোটা বই টা জুড়ে । লেখক সরাসরি না বলেও আর্টওয়ার্ক এর মাধ্যমে অনেক কিছু প্রকাশ করেছেন, যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে—আমরা কি সত্যিই বাস্তব জগতে বাস করছি, নাকি কেবল মায়ার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি? আমি বইটি এক সিটিং এ শেষ করে ফেলেছি এবং আমি পরবর্তী পার্টের জন্যে মুখিয়ে রয়েছি। বই টি অবশ্যই সংগ্রহে রাখার মত এবং worth The Hype!
🌁লুবলু,একজন উদাসীন দার্শনিক।সে পূর্ব ভারতের এক ছোট শহরে থাকে। অসীম চিন্তনিশক্তি তার। একদিন সে তার বন্ধু কিমের সঙ্গে ম্যাজিক দেখতে বেরোয়।পথে তার আলাপ তার পূর্ব পরিচিত সিয়াম মাসি এবং এক খ্যাপাটে সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গে। 🌬️আচ্ছা আমরা যেটাকে পৃথিবী ভাবি আদৌ কি সেটা পৃথিবী?এই যে গাছপালা, প্রাণী,এগুলোকে আমরা এই নামে না ডেকে অন্য নামে ডাকি না কেন?কোন এক বস্তুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে একেক জন একেক রকম ভাবে দেখি কেন?��দি এমন হতো,আমরা কোন এক জড় বস্তুর মাধ্যমেই আমাদের স্বপ্নের কোন ঠিকানায় পৌঁছে যেতে পারতাম!কেমন হত তাহলে? 🎏❝লুবলুর পৃথিবী❞ আমাদের বেশ কিছু দৃঢ় সত্য কথা আমাদের সামনে তুলে ধরে, আর লুবলু শুধু একজন দার্শনিকই নয়,গভীর ভাবানুরসিক একটি ছেলে। যার কাজ আমাদের এই সমাজ,আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গিকে একটু ভাবতে শেখানো 🤩।
📗বই~লুবলুর পৃথিবী 🎨প্রচ্ছদ,কাহিনী,চিত্রনাট্য ও ছবি~চার্বাক দীপ্ত ����️প্রকাশক~বুকফার্ম 💷মুদ্রিত মূল্য~২৯৯/-
ইংরেজিতে একটা কথা আছে “right place right time”, পড়াশোনার খাতিরে এবং খানিকটা নিজের তাগিদেই ইদানিং বিভিন্ন ঘরানার দার্শনিক মতবাদ নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম ঠিক সেরকম সময়েই হাতে এসে গেল চার্বাক দীপ্তের মনমুগ্ধ করা এই কাজ। আর্টওয়ার্ক নিয়ে সত্যি বলতে আমার আলাদা করে কোনও কিছুই বলার নেই, এতটাই ভালো কাজ। ম্যাজিক রিয়েলিজম থেকে শুরু করে বৌদ্ধ দর্শন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, মায়াবাদ সাথে সিমুলেশন হাইপোথিসিস দুর্দান্তভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছে এই গ্রাফিক নভেলায়। দর্শনের মত তাত্ত্বিক জটিল বিষয়গুলো বেশ সহজ, সরল ও সাবলীল ভঙ্গিতেই ব্যাখ্যা করেছেন লেখক।
একটি অসাধারণ চিত্রাঙ্কন সহ গ্রাফিক নভেল। ছাপা ও খুব ভালো। এটিতে বেশ কিছু দার্শনিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেমন আমরা যেগুলো দেখছি আমাদের চারপাশে সেগুলি কি বাকি আর কেউ একইরকম ভাবে দেখছে। আমাদের পৃথিবী কি আসলেই আছে না তা এক মায়ার খেলা ইত্যাদি। এত সুন্দর চিত্রাঙ্কন আমি আগে মৌলিক বাংলা কমিক্সে দেখিনি। সেদিক থেকে লেখকের সাধুবাদ প্রাপ্য। আরও অনেক কমিকস ও গ্রাফিক নভেল আগামী দিনে ওনার হাত থেকে দেখতে পাবো আশা রাখি।
বাংলায় সম্পূর্ণ ভিন্নধারার কমিক্স; ড্রয়িংও যথেষ্ট ডিটেইল যুক্ত আর অ্যাট্রাকটিভ। কমিক্স পড়ে ভাবনার জগতে ডুবে আনন্দ নিতে চাইলে বেস্ট চয়েস। একটা স্টার কম গল্পটা আরও ভালো আশা করেছিলাম প্রথমে তবে পুষিয়ে নেবে বাকি উপকরণ। গল্পটা মেইন ফ্যাক্টর বলা যাবে না এর ক্ষেত্রে।
প্রতি পাতায় দর্শণ ঝুড়ি ঝুড়ি।এই দৃষ্টিকোণ পড়ুয়াদের কাছে অনেক সহজে পৌঁছে দেওয়া যেত বলে আমার মনে হয়েছে। দুর্ধর্ষ আঁকা এবং concept. Execution অনেক ভালো হতে পারত।
I loved the pictures, especially the Beatles inspired last picture. But it was so overloaded with philosophical musings, that I got a bit bored and overwhelmed.