হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের স্তম্ভপ্রতীম একাধিক ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে থেকে লব্ধ আপন অভিজ্ঞতা এবং কিছু শোনা গল্পের সমাহার এই বই। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বুঝুন বা না বুঝুন, গল্পগুলো শুনতে বা পড়তে ভাল লাগবে।
বইটা তথ্যবহুল; ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীতের দিকপালদের নিয়ে বেশ অনেক ঘটনা এবং ইতিহাস আছে। কিন্তু স্মৃতিকথায় যে মাধুর্য থাকলে তা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে সেটা একেবারেই অনুপস্থিত। বেশ কাঠখোট্টা লেখা, তবে তথ্যের গুরুত্ব বিচারে ৩ দেয়া গেল।
সংগীতপ্রেমী পাঠকদের জন্য বইটি অনন্য ভ্রমণসঙ্গী হতে পারে। সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগী এই লেখক, নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগ্রহণের স্মৃতির মাধ্যমে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন হিন্দুস্থানি সংগীতের এক গভীর, অসীম ও রহস্যময় জগতের সঙ্গে।
বইটির মূল কাহিনী গড়ে উঠেছে অজিত কৃষ্ণ বসুর জীবনের সংগীতযাত্রার উপর। ছোটবেলায় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী কৃষ্ণচন্দ্র দের কাছ থেকে গানের তালিম নেওয়ার পর, তাঁর জীবনে অদ্বিতীয় মোড় আসে ঢাকায় ওস্তাদ গুল মহম্মদ খাঁর সান্নিধ্যে আসার মাধ্যমে। এমনকি, গুল মহম্মদ খাঁর মেঘমল্লার গাওয়ার কারণে বৃষ্টি নামানোর ঘটনার উল্লেখ যেমন ঐতিহাসিক, তেমনি হিন্দুস্থানি সংগীতের বিশাল জগতের প্রতি অজিতের একাত্ম হওয়ার প্রথম ধাপ। এর পরের অধ্যায়গুলি কলকাতা এসে ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ, তারাপদ চক্রবর্তী, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্যে কাটানো অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা দেয়।
এই বইটি শুধু অজিত কৃষ্ণ বসুর স্মৃতিচারণই নয়, এটি হিন্দুস্থানি সংগীতের এক ধ্রুপদী ইতিহাসও বটে। বইটির মধ্যে বিভিন্ন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীর জীবনের অজানা গল্প ও চমকপ্রদ ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, তানসেনের অলৌকিক ক্ষমতা, বৈজু বাওরার সংগ্রামী জীবন, আবদুল করিম খাঁ এবং ফৈয়াজ খাঁর শিল্পীজীবনের অধ্যায়—এ সকল অশ্রুতপূর্ব আখ্যান বইটির অন্যতম আকর্ষণ।
একদিকে যেমন এটি হিন্দুস্থানি সংগীতের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, তেমনি অন্যদিকে এটি এক সজীব স্মৃতিসাহিত্যও বটে। অজিত কৃষ্ণ বসু তাঁর গভীর অভিজ্ঞতা, অধ্যবসায় এবং আধ্যাত্মিক ভ্রমণের মাধ্যমে সংগীতপ্রেমীদের জীবনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। বইটি পাঠের মাধ্যমে একজন পাঠক কেবল সংগীতের মহান শিল্পীর আত্মবিশ্বাস ও সাধনা সম্পর্কে জানবেন না, বরং সংগীতের জগতের অজানা রহস্যও উন্মোচিত হবে। সংগীতের প্রতি আগ্রহী পাঠক এবং ঐতিহ্যবাহী বাংলার সংগীত সংস্কৃতির প্রতি প্রেমিকরা এই বইটি অতি সহজেই গ্রহণ করবেন, কারণ এটি তাঁদের মনের অভ্যন্তরের একটি প্রগাঢ় সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে উজ্জীবিত করবে।