हिंदी : कृश्न चन्दर Urdu Profile:کرشن چندر Krishan Chander was an Urdu and Hindi writer of short stories and novels. He also worked on English.
He was a prolific writer, penning over 20 novels, 30 collections of short stories and scores of radio plays in Urdu, and later, after partition of the country, took to writing in Hindi as well.
He also wrote screen-plays for Bollywood movies to supplement his meagre income as an author of satirical stories. Krishan Chander's novels (including the classic : Ek Gadhe Ki Sarguzasht, trans. Autobiography of a Donkey) have been translated into over 16 Indian languages and some foreign languages, including English.
His short story "Annadata" (trans: The Giver of Grain – an obsequious appellation used by Indian peasants for their feudal land-owners), was made into the film Dharti Ke Lal (1946) by Khwaja Ahmad Abbas – which led to his being offered work regularly as a screenwriter by Bollywood, including such populist hits as Mamta (1966) and Sharafat (1970). He wrote his film scripts in Urdu
ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে চলেছে পেশোয়ার এক্সপ্রেস। দেশভাগের যাঁতাকলে মানুষজনকে নিজের শরীরের মতো খণ্ড খণ্ড ভাগে বিভক্ত হয়ে যেতে দেখেছে সে। তেমনই বিধ্বস্ত, ক্ষতবিক্ষত একদল মানুষ নিয়ে ভারত পাড়ি দিয়ে ছুটে চলেছে এই ট্রেন পাকিস্তানের পেশোয়ারের উদ্দেশ্যে। বগিতে থাকা মৃত লাশগুলোর আত্মা শুষে নিয়ে যেন নিজেই জীবন্ত এক মানবে পরিণত হয় পেশোয়ার এক্সপ্রেস। মৃতের গন্ধে যার দমবন্ধ হয়ে আসে, রক্তের ধারায় যার লাইনচ্যুত হতে চায়, বগিগুলো মুহূর্তে মুহূর্তে ককিয়ে উঠে স্বজন হারানোর দুঃসহনীয় যন্ত্রণায়। ক্লান্তিহীন এই ছুটে চলায় পেশোয়ার এক্সপ্রেস ভুলেই যায় আদতে সে মানুষ নয়, নিছক এক যন্ত্র! তার কাজই ছুটে চলা দূর থেকে দূরান্তে!
দেশভাগের ভয়ানক আর দুঃসহ সেই স্মৃতিকে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে কৃষণ চন্দর যান্ত্রিক এক ট্রেনের মানবিক এক আত্মকাহিনী শুনিয়েছেন। যে গল্প শেষ করলে দমবন্ধ হয়ে আসতে চায়, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় আর জীবনের চরম বাস্তবতা যেন চোখের সামনে পুনরায় নতুন রূপে দেখা দেয়।
দেশভাগ ছিল উপমহাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাগ হওয়া দুই দেশ মিত্র থেকে পরিণত হয়েছিল চিরশত্রুতে। কারণে-অকারণে মানুষ মানুষকে হত্যা করে, জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, সম্ভ্রব নষ্ট হয় অসংখ্য নারীর! তাতে ধর্মের বিশ্বাসে তেমন কোন ক্ষতি হয়না। কেবল নীরবে ঝরে পড়ে অগণিত নিষ্পাপ প্রাণ!
এমনই দুঃসহ, ভয়ানক আর যন্ত্রণাদায়ক কিছু গল্প শুনিয়েছেন উর্দু সাহিত্যের সবচাইতে প্রভাবশালী লেখক কৃষণ চন্দর। তার লেখা অন্নদাতা, ভগবানের সঙ্গে কিচ্ছুক্ষণ এবং আমি গাধা বলছি আগেই পড়েছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত কৃষণ চন্দরের বই পড়ে অবাক হয়ে যাচ্ছি। এই মানুষটা কীভাবে পাঠকের মনের গহিনে এভাবে পেরেক ঠুকে দিতে জানে, তাও কেবল নিজের সহজ আর সাবলীল লেখার মাধ্যমে!
অনুবাদক জাফর আলম মূল উর্দু থেকে এত সুন্দরভাবে বাংলায় এসব বর্ণনা অনুবাদ করেছেন যে বুঝার উপায় থাকে না, এ কি অনুবাদ পড়ছি নাকি মৌলিক রচনা! কৃষণ চন্দরের বই পড়ার পর অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু গলার কিছু একটা আটকে থাকে যেজন্য কিছুই আর বলা হয়ে উঠে না। আবার কিছু লিখতে গেলে হাত ঠিক চলতে চায় না, বারবার কেউ যেন ট্রেন থামার শিকল টেনে ধরে থামিয়ে দেয় হাতটাকে।
শুধু হৃদয়টা নাড়িয়ে দেয়, চোখের নীচে কান্না চেপে যায়, গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, আর বিষণ্ণতা সে তো চাদরের বেশে গায়ের উপর নিশ্চিন্তে চেপে রয়!
রায়ট এমনিতেই সমাজের ডার্ক সাইড। কিন্তু ডার্ক সাইডের ভেতরে যে আরও ডার্ক সাইড থাকে তা লেখক কৃষন চন্দর এই 'পেশোয়ার এক্সপ্রেস' বইয়ে দেখাইয়া দিছে। রায়টকে ঘিরে শুধু খুন খারাবি আর জ্বালাও পোড়াও-ই হয় না, তার পাশাপাশি চলে জোচ্চুরি, সুযোগসন্ধানী কাজকর্ম আর সুবিধাবাদীদের লীলাখেলা। বিশ্ব ইতিহাসে কোনো জাতিরে দাবায়ে রাখার জন্য যে কয়টা তত্ত্ব আবিষ্কার হয়েছে, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে ইংরেজদের 'ডিভাইড এন্ড রুল' টেকনিকটা একেবারে উপরের দিকে থাকবে। একটা দেশকে কীভাবে শান্তিময়তা থেকে ধ্বংস আর আগুনের দিকে নিমেষে ঠেলে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করা যায়, তা ইংরেজদের এই তত্ত্ব অনুধাবন না করলে কল্পনায়ও আসবে না। ও হ্যাঁ, এটা ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে লেখা বই। প্রতিটি গল্প লেখা হইছে সে সময়কার ধর্মীয় বিভেদ নিয়ে। প্রতিটা গল্প ছেয়ে গেছে মানুষরুপী অমানুষদের নৃশংসতা ও বিভৎসতায়। কিন্তু লেখক সাহেবের লেখায় কোনো জড়তা, সংকোচ নেই; মাখনের মত লেখনী। নিঃসংকোচে দাঙ্গার গল্প এভাবে সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরাটাই কৃষণ চন্দরের সার্থকতা। সর্বোপরি ভেবেচিন্তে বইটার আন-অফিসিয়াল নাম দিলাম 'দ্য ডার্ক সাইড অব রায়ট' । মাস্টরিড।
মাঝরাতে এই বই নিয়ে বসা,তারপর একটু পরপর গা শিরশির করার লেখাগুলো পড়ে নিজেকে অনেক অসহায় আর ভীতু মনে হয়েছিল। গাদ্দার বইটির পর লেখকের এই বই আমার মনকে আসলেই ভেঙ্গে দিয়েছে। পতিতার খোলা চিঠি জ্যাকসন এই দুইটি গল্প পড়ে কিছুটা ভালো লেগেছিল ঠিকই কিন্তু বাকি লেখাগুলো পড়ে ভয় জিনিসটা খুব ভালোভাবেই মনের মধ্যে রয়ে গেছে। যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়াবে আমাকে লেখাগুলো।
মনেই হয়না এই কয়দিন অন্য কোনো বই হাতে নিতে পারবো। টানা ৩টা মারাত্মক করুণ বই ( গাদ্দার,জননী আর পেশোয়ার এক্সপ্রেস) পড়ে মন একদম খারাপ হয়ে আছে।
আমার জীবনে পড়া সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বাস্তব গল্প। দ্বিতীয়বার এমন কিছু পড়তে চাই না। আমরা, মানুষেরা আসলে পিশাচ; মুখোশের আড়ালে সেই পৈশাচিকতা লুকিয়ে রাখি। একটুখানি অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দিলেই ভেতরের সেই পিশাচ সব হিংস্রতা নিয়ে বেরিয়ে আসে। দুর্বল স্নায়ুর মানুষের জন্য এই গল্প নয়।
পেশোয়ার এক্সপ্রেস ভারতের উর্দু লেখক কৃষণ চন্দর এর ছোট গল্প সংকলন "হ্যাম ওয়াহসি হ্যায়" এর অনুবাদ। বেশ সাবলীল অনুবাদ করেছেন অনুবাদক জাফর আলম। পেশোয়ার এক্সপ্রেসের গল্পগুলো ৪৭ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পটভূমিতে রচিত। প্রতিটা গল্প যেন একেকটা সমুদ্র। আছে গভীরতা, আছে উথাল পাথাল ঢেউ।
৪৭ সাল, দু'শো বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারত দ্বিখণ্ডিত করা হয় ধর্মের ভিত্তিতে। হিন্দু আর মোসলমানদের জন্য তৈরি হল দুটো আলাদা রাষ্ট্র। শত শত বছরের সম্প্রিতি একদম নষ্ট হয়ে গেল হঠাৎ করেই। বাংলা, পাঞ্জাব, কাশ্মীর জ্বলে উঠলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। রাস্তায়, নদীতে, পুকুরে লাশ আর লাশ। চারিদিকে আগুন। যেন দীপাবলি। ধর্মের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। অথচ এরাই ছিল হাজার বছরের আত্মীয়। লেখক এ বিষয়টাই তুলে ধরেছেন গল্পগুলোতে তাঁর অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রতিটা গল্প আপনাকে আঘাত করবে, আপনাকে রক্তাক্ত করবে। প্রতিটা গল্প আপনার বিবেক কে নাড়া দিবে।
"পেশোয়ার এক্সপ্রেস" একটি অবশ্য পাঠ্য। কৃষণ চন্দর এর লেখনীতে মাদকতা আছে যা আচ্ছন্ন করে রাখে।
ভয়ানক এক বই! দেশভাগের সাথে আরও কতোকিছু যে ভাগ হয়ে গেল। মানুষজন নিজের ভিটেমাটি হারাল, কেউ কেউ হারাল সমস্ত জীবনের জমানো ক্ষুদ্র সম্বল, কারো খোয়া গেল মূল্যবান সম্ভ্রম, কেউ বা নিজের প্রাণটাই হারিয়ে বসল। স্বাধীনতার পতাকায় কালিমা লেপনের নগ্ন বাস্তবতার এক আখ্যান এই বই।
দেশভাগ উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি দেশ মুহূর্তের মধ্যে মানুষকে করে তোলে ভিটাহীন, প্রতিবেশীকে করে তোলে শত্রু। বাংলা, কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবে শুরু হয় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ; পূর্ব কোনো শত্রুতা নয় শুধু হিন্দু বা মুসলিম হওয়ার কারনেই আগুন জ্বলে হাজারো মানুষের বাড়িতে, খুন হয় অসংখ্য মানুষ, নির্যাতিত হয় অসংখ্য মেয়ে। ভয়াবহ সেই প্রেক্ষাপট অবলম্বন করেই কালজয়ী উর্দুভাষী লেখক কৃষণ চন্দর লিখেছেন ‘ হাম ওয়াহসি হ্যায়' নামক গল্পগ্রন্থ যা অনুবাদক জাফর আলম রূপান্তর করেছেন ‘ পেশোয়ার এক্সপ্রেস ‘ নামে।
বইটাতে স্থান পেয়েছে সাতটা গল্প। গ্রাম্য এক মুসলমান, এক প্রভাবশালী হিন্দু, স্বাধীনতার আগে ও পরে শহরের এক আদিবাসীর বয়ান, এক পতিতা, এক কাঠের ট্রেন বা এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানের দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পগুলো বলা হলেও সবকয়টি গল্পের মিল এক জায়গায় – প্রতিটা গল্পই কোনো না কোনোভাবে বলেছে দাঙ্গার কথা। এসব গল্পের মাধ্যমেই লেখক তুলে এনেছেন কিভাবে ব্রিটিশ শক্তি দাঙ্গা বাঁধাতে ভূমিকা রেখেছে, কিভাবে হুজুগের বশে আর প্রতিশোধের নেশায় সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের উপর খড়গহস্ত হয়েছে অপর মানুষ, কিভাবে দাঙ্গা একটি শহরের সম্প্রীতিকে ভেঙ্গেচুরে নষ্ট করে দেয় আর প্রতিটা শহর ও যানবাহন পরিণত হয় লাশের স্তুপে।
লেখকের গাদ্দার উপন্যাসটা পড়া থাকলে দেশভাগ ও দাঙ্গার উপর লেখকের বিতৃষ্ণা জানা যায়। এই গল্পগ্রন্থও তার ব্যতিক্রম নয়, প্রতিটা গল্পের মাধ্যমে লেখক দেশভাগের নেতাদের চপেটাঘাত করেছেন, তাঁদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন তাঁদের ক্ষমতার লড়াই কিভাবে লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে, হত্যার কারন হয়েছে অসংখ্য মানুষের। প্রতিটা গল্পই সেই সময়ের অনন্য দলিল, এত নৃশংস আর মর্মস্পর্শী যে সহ্য করা যায় না! কেউ হুজুগে, কেউ লুটের মালের আশায় আবার কেউবা শুধু কয়েকটা টাকার জন্য যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে তা পড়লে বিস্মিত হতে হয়। পেশোয়ার এক্সপ্রেস আর নেহেরু ও জিন্নাহর কাছে এক পতিতার চিঠি গল্প দুইটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। একটা ট্রেন যতটা দুঃখ পেয়েছে সেই সময়ের মানুষজন যদি ততটা দুঃখ পেত তাহলে কি রক্তের সাগর বইতো উপমহাদেশের পথে-প্রান্তরে?
দেশ বিভাগের গভীর ক্ষত এখনো পুরোপুরি সারেনি। তাই বোধহয় যখনই দেশভাগের ইতিহাস/গল্প পড়ি তখন আবার ব্যাথাটা চিন চিন করে ওঠে। ঘৃণা জন্মে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের প্রতি যারা নিজের জাতকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো টুকরো স্বাধীন রাষ্ট্রের, আর সেখানে হাজার হাজার নিরীহ জনতাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছিলো শুধুমাত্র নিজেদের দাপট প্রতিষ্ঠা করবে বলে। জায়গা-জমি, ধন-সম্পদ, নারীদের সম্ভ্রম সব খুইয়ে ছিলো দেশের সাধারণ মানুষ এই বিরোধে। যতই ইতিহাস ঘাটি ততই ক্ষত-র গোড়াটায় পাক ধরে।
হিন্দুস্তানী উর্দু লেখক কৃষণ-চন্দর সামনে থেকে দেখেছেন এই হিংস্রতা। আর তা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন তার কলমে। লেখকের এমনই কিছু ছোট ছোট ফিকশন আর নন-ফিকশন এর সংকলন এ বই। বিষয়বস্তুর নির্দিষ্টতা থাকলেও গল্পগুলো ছিলো বহুমাত্রিক। 'দেশভাগের দাঙ্গা' বিষয়টা প্রায় প্রত্যেকটা এঙ্গেল থেকেই দেখানোর চেষ্টা করেছেন লেখক। এই ধরুন 'পেশোয়ার এক্সপ্রেস' গল্পটা, ট্রেনের মধ্যে ঘটে যাওয়া সব কিছুর বর্ণনা করছিলো, কিন্তু এটা যে আসলে একটা ট্রেন এর নিজের জবানবন্দীতে সাজানো প্লট সেটা একদম শেষ প্যারাটা না পড়লে বুঝতাম না। একটা শরনার্থী বহন করার ট্রেনেরও যে এই দাঙ্গার প্রতি কিছু ব্যক্ত করার আছে সেটাও তিঁনি তুলে এনেছেন তাঁর লেখায়। আর, প্রতিটি গল্প-কাহিনীতে তার নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বইটির চাহিদা আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এটা কৃষণ চন্দর এর লেখা আমার পড়া তৃতীয় বই। এতো ভালো ভালো লেখা পড়ার পর খুব ইচ্ছে হলো তাঁকে নিয়ে গুগল করি। কিন্তু আজ টানা পাঁচ দিন হলো বাঙলাদেশে ইন্টারনেট অচল। তাই আর হলোনা। তবে বইয়ের শেষে লেখকের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী পেয়েছি, যা আমার লেখক সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেকটাই মিটিয়েছে। আর সেখানে পন্ডিত নেহেরুর সাথে একটা ঘটনার বর্ণনা আছে। বেশ মজাদার ঘটনা!
এ বইটা পড়লে নিঃসন্দেহে মন খারাপ হবে। ভয়াবহ মন খারাপ হবে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় শুধুমাত্র ধর্মের কারণে যে পরিমাণ খুন, হানাহানি, লুটতরাজ হয়েছে সেসব কাহিনী শুনতে পারা মোটেই সহজ কাজ নয়।
এই পৃথিবীতে ধর্মের জন্য যত মানুষ মারা গেছে আর কোনো কারণে কী তত মানুষ মারা যায়?
৪৭ এর দেশ ভাগ আর দাঙ্গার গল্প, যে দাঙ্গা ঘর ছাড়া করেছিল পাঞ্জাব, কাশ্মীর আর বাংলার লাখ লাখ মানুষকে। যত্র তত্র কুকুর বিড়ালের মতো প্রান হারানো আর ধর্ষিত হওয়া মানুষের যন্ত্রনাকে ফুটিয়ে তুলতে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কৃষণ চন্দর লিখেছেন সেই সব মানুষের কিছু গল্প। অদ্ভুত এই সমাজ, অদ্ভুত এই সমাজ ব্যবস্থা যেখানে ধর্মের নাম রব তুলে অবলীলায় ধ্বংস করা হয় স্বাধীনতা, সভ্যতা, কৃষ্টি আর মানুষের জীবন।
বইটা শেষ করার পর একটা খারাপ লাগা অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম, এমন মন খারাপ করা বই না পড়া মনের জন্য অনেক ভালো।
'গাদ্দার' পড়ার পরপরই আমি কৃষণ চন্দরের লেখার প্রতি অনুরক্ত হই। এত সাবলীলভাবে মানবিকতা প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখায়, যা খুবই হৃদয়ছোঁয়া। ছোটগল্পের সংকলন এই বইটি হিন্দু-মুসলিম এর দাঙ্গার পটভূমিতে রচিত৷ পড়তে পড়তে অসহায় বোধ হয়, মনে হয় যে যুগ ফেলে এসেছি, যে যুগে এমন বর্বর কাণ্ড ঘটেছে,কই আজো তো অবস্থার তেমন পরিবর্তন হলো না! পেশোয়ার এক্সপ্রেস আর জ্যাকসন গল্প দুটি খুব বেশি ভালো লেগেছে৷ একটিমাত্র চিঠিতে উঠে এসেছে আপামর বাঙালির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। আর পেশোয়ার এক্সপ্রেস এ ট্রেনের আত্মকাহিনীতে উঠে এসেছে দাঙ্গার নির্মমতা। প্রতিটি গল্পই অস্তিত্বকে নাড়া দিয়ে গেছে।
দাঙ্গার গল্প — যেখানে একজনকে মারলে, নিজ��র একজনকে হারাতে হয়। হিন্দুর রক্ত মুসলমানের রক্তের সাথে আর মুসলমানের রক্ত হিন্দুর রক্তের সাথে মিলে একাকার হয়ে যায়। বছরের পর বছর, কয়েক প্রজন্ম ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসা মানুষগুলোই একে অন্যের গলায় ছুরি ধরে। হত্যা করে, লুটপাট করে, সম্ভ্রম কেড়ে নেয়। এমনই কিছু ছোট গল্প নিয়ে কৃষণ চন্দরের পেশোয়ার এক্সপ্রেস বইটি। যেখানে উঠে এসেছে '৪৭ সালের দেশ ভাগের সময়ের দাঙ্গার কথা। 'পেশোয়ার এক্সপ্রেস' নামক গল্পটি একটি ট্রেনের আখ্যান — যে হিন্দু শরনার্থীদের পেশোয়ার থেকে ভারতে নিয়ে যাচ্ছিল। চলার পথে তার মনে হচ্ছিল একদল জীবন্ত লাশ ��য়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার চাকাগুলো বেদনায় ভারী হয়ে যাচ্ছে, চাকাগুলো পিছলে যাচ্ছে রক্তের ধারায়। পণ্ডিত নেহেরু আর জিন্নাহর কাছে এক পতিতার চিঠি — যে শোনাতে চায় না কীভাবে কেন সে এই পেশাকে আপন করেছে। সে শোনাতে চায় হিন্দু ঘরের বেলা আর মুসলিম ঘরের বতুলের কথা, যে দুইজনকে সে দালালের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে। 'পেশোয়ার এক্সপ্রেস' ট্রেন, অমৃতসর, লালবাগের দাদা কমলাকর, পতিতা, সাধারণ মুসলিম, আংলো-ভারতীয় পুলিশ অফিসার — বিভিন্ন আঙ্গিকে গল্পগুলো উঠে এসেছে, কিন্তু মূল উপজীব্য বিষয় একটাই, তা হলো হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা। *** লেখক পরিচিতি : কৃষণ চন্দর উর্দু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক ও কাহিনীকার। তাঁর জন্ম ১৯১৪ সালের ২৩ নভেম্বর পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা জেলার উজিরাবাদে। তাঁর রচিত ছোটগল্পের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক, গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। ভারতের দেশ ভাগের সময়ের ভয়াবহ দাঙ্গার বিরুদ্ধে যে কয়জন লেখক সোচ্চার হয়েছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৭৭ সালে। ** বইটি অনুবাদ করেছেন জাফর আলম। অনুবাদ যথেষ্ট ঝরঝরে, সাবলীল।
এক কথায় ভয়ংকর। দেশভাগের যা কাহিনি জানতাম তার সবটাই ছিল বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ক। কিন্তু এটি আলাদা। পাঞ্জাবের আলাদা হওয়া নিয়ে এর গল্পগুলো। সবগুলো গল্পই ভাল। পড়লে মন খারাপ হয়ে যায়।
The rape of Nanking এর একটা সংক্ষিপ্ত আর তুলনামূলক অনেক হালকা বা লাইট ভার্সন। বব ডিলানের a hard rain's a gonna fall এর কথা মনে পরে গেলো পেশোয়ার এক্সপ্রেস শেষ করার পর। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা নিয়ে এর আগে অন্য কোন বই পরেছি বলে মনে পড়ে না। এ বিষয়ে এটাই প্রথম বই। জাফর আলমের অনুবাদ ভাল লেগেছে বইটাতে।
এই লেখকের 'গাদ্দার' পড়েছিলাম। কি অসাধারণ একটা বই। সাতচল্লিশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে এই উর্দু সাহিত্যিক রচনা করেছেন “পেশোয়ার এক্সপ্রেস”। ভারত বিভাগের সময় দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত হয় ভারত ও পাকিস্তান। প্রাণ হারায় লাখ লাখ অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশু। ধর্ষিত হয় অসংখ্য নারী। উদ্বাস্তু হয় পাঞ্জাব, কাশ্মীর ও বাংলার লাখ লাখ মানুষ। সেই ভয়াবহ দাঙ্গার বিরুদ্ধে যাঁরা কলম ধরেছিলেন, উর্দুভাষী লেখক কৃষণ চন্দর তাঁদের অন্যতম। পেশোয়ার এক্সপ্রেস-এর গল্পগুলো যেন তারই এক জীবন্ত দলিল।
সাতটি গল্পের শিরোনাম দিয়েই বইটি, যার প্রতিটি গল্পের পটভূমিজুড়ে দাঙ্গা। দাঙ্গার ভয়াবহতা। দাঙ্গায় আতঙ্কিত মানুষ, মানুষের ভেতরে বাস করা হাজারো মানুষের অনির্বচনীয় প্রকাশ। স্থান-কাল-পাত্র ভিন্ন হলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ যে কতটা ভয়াবহ, বীভৎস ও অমানবিক হতে পারে, প্রিয় লেখক কৃষণ চন্দর, এই গ্রন্থভুক্ত প্রতিটি গল্পের প্রতিটি আঁখরে অদ্ভূত, জাত-গল্পকারের অবাক করা শৈল্পিক কারিশমায় জীবন্ত এক দৃশ্যকল্পরূপে গেঁথে দিয়েছেন। আমি পড়ে যেতে থাকি। আবার..আবার..বারবার।
"পেশোয়ার এক্সপ্রেস" এর প্রত্যেকটি গল্প আমাকে অসম্ভবভাবে নাড়া দিয়েছে। আমার নিজের চোখের সামনেই যেন ঘটছে ব্যাপারগুলো। ছুরি দিয়ে ছিঁড়ে ফেলছে একে অপরকে। আমি যেন শুনতে পারছি তাদের আর্তচিৎকার। মানবতা বলে যে কিছু আছে, ভালোবাসা বলে যে কিছু আছে সেটা বিশ্বাসই হতে চায় না। তারা যেন মানুষ না একেকটা পশু এবং অন্যরা তাদের শিকার! ভারত থেকে পাকিস্তানের দিকে মৃত বোঝাই ট্রেন যাচ্ছে অপরদিকে পাকিস্তান থেকে ভারতের দিকেও। তারা পরস্পর উপহার হিসেবে মৃত লাশ বিনিময় করছে। কি হিংস্র! কি ভয়ংকর! ভিন্নধর্মী কোন লাশও যাতে না পড়ে থাকে সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। আমি গল্পগুলো পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটা কি ভয়াবহ! শুধু একটি চিন্তাই আমার মাথার ভেতর ঘুরছিল - বাংলাদেশ যাতে সাপ্রদায়িকতার আঁচড়ে না পড়ে।
একজন মহৎ লেখকের যে গুণ তার সমাবেশ ঘটেছে এই বইয়ে, এইজন্য লেখকের সাথে আমার পড়া বইয়ের অনুবাদক জাফর আলমকে ধন্যবাদ ভাল একটি অনুবাদের জন্য। ওই সময়ের তীব্রতা ও ইতিহাস ধারণের জন্য বইটি অবশ্য পাঠ্য।