Jump to ratings and reviews
Rate this book

সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ

Rate this book
এই কাহিনী একটি যুদ্ধের। সেই যুদ্ধের দেয়ালে নানা চলকের লুকোচুরি, দেশপ্রেমের ঢেউ আর বিশ্বাসঘাতকতার চোরাস্রোত, দাবার বোর্ডের গুটি হয়ে বহু মানুষের হাঁটাচলা।

এই কাহিনী একটি যুদ্ধোত্তর দেশের। সেখানে বহুমাত্রিক সব জটিল গণিত, আলোকের যত অনন্তধারার সঙ্গী দুর্ভাগ্যের অন্ধকার।

‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’ এই দুই সর্পিল সময়ের পটে দাঁড়ানো একজন সরল মানুষের গল্প।

448 pages, Hardcover

First published February 1, 2015

79 people are currently reading
1386 people want to read

About the author

Shuhan Rizwan

7 books1,107 followers
Shuhan Rizwan is from Bangladesh. His debut novel, a historical fiction named 'সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ (Knight in the Oblivion)' was published in 2015; since then, he published 3 more full-fledged novels. His novels often centered around the geo-political nuances and predicaments of life in contemporary Dhaka.

Apart that, Shuhan is a screenwriter too, and the recipient of Chorki Best Screenplay Award-2022.

Being a Mechanical Engineering Graduate, Shuhan choose to be a fulltime writer since 2020. Now when he is not writing in his muddled studio, he spends most of his time reading, traveling with his wife and watching sports events.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
525 (67%)
4 stars
209 (27%)
3 stars
26 (3%)
2 stars
9 (1%)
1 star
4 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 189 reviews
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,356 followers
August 13, 2024
ইতিহাস আমার বেশ পছন্দের বিষয়। দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় বা পরের সময়কাল নিয়ে অজ্ঞানতা ছিলো, আছে অনেকটা এখনো, যতোটা থাকা কদ্যপি গ্রহণযোগ্য নয়। উত্তরাধুনিক কাব্য বা বিদেশি রোমান্টিক টিন ফ্লেভারের উপন্যাস পাঠের চাইতে নিজের দেশকে জানা জরুরি, অন্তত নিজে তাই ভাবি। এ বইয়ের শেষটায় সহায়ক গ্রন্থাবলীর বেশ লম্বা একটা তালিকা আছে। জীবন অগাধ নয়, তবে বেঁচে এবং ভাগ্যে থাকলে সময় করে সবগুলো পড়ার ইচ্ছে রাখি।

'সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ' ইতিহাস নয়, উপন্যাস, মূলত তাজউদ্দীন আহমেদের জীবনী। উপন্যাসটি সাজানো দুটি খণ্ডে। প্রথমটি পূর্ব খণ্ড, একাত্তরের ২৫শে মার্চ, অপারেশন সার্চলাইটের গল্প থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ডিসেম্বরে,দেশ স্বাধীনকালীন সময়ে। দ্বিতীয়টিকে বলা হয়েছে উত্তর খণ্ড, ১৯৭২ থেকে যার সমাপ্তি ১৯৭৫এর নভেম্বরে, জেলহত্যা দিবসে।
এই ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত যে তাজউদ্দীন আহমেদ, সেই একাত্তরের সেনাপতি আর বাংলাদেশের ইতিহাস প্রায় সমান্তরাল। সার্বভৌম, প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন যারা দেখেছিলেন আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য নিঃস্বার্থভাবে যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম একজন।
তাজউদ্দীন আহমদকে জানা জরুরি এজন্যেই।

দূর্ভাগ্যবশত বিস্মৃতির ধূলোবালিতে ঝাপসা-ই রয়ে গেছেন তাজউদ্দীন, একাত্তরে অসাধ্য সাধন করেছিলেন যিনি, ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আলোচনা করে, সীমান্ত এলাকায় নিরন্তর ছোটাছুটিতে একত্রিত করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের, গঠন করেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। প্রায় একাই। দুইশত ছেষট্টি দিনের সে গল্প তিনি বলে যেতে পারেন নি তাঁর মুজিব ভাইকে।
ফলাফলে ঘাতকের নির্লজ্জ বুলেটবর্ষণে হারিয়ে গেছেন ৪ নভেম্বর, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথানের দিনে সংগ্রাম চালিয়ে নেয়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এগার দফার সমর্থনে জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ বর্জন করা কামরুজ্জামান, বহু সংগ্রামের অক্লান্ত যোদ্ধা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সঙ্গে, ঢাকা নিউ জেলের এক নং ঘরে। চারটি আশ্চর্য উজ্জল নক্ষত্র..
মৃত্যু নিশ্চিত করতে রক্তাক্ত অবস্থায় কারাগারের মেঝেতে পড়ে পানির জন্য মিনতি করতে থাকা মৃতপ্রায় নেতাদের শরীরে বেয়োনেট চার্জ করে ফিরে গিয়েছিলো ঘাতকেরা, রিসালদার মোসলেমউদ্দীন ও তার দলবল। বাধা দেয়নি কেউ, ছিলোই না কেউ তখন, দেওয়ার মতো।

ইতিহাস নিয়ে ভ্রান্তি ছড়াছড়ির শেষ নেই। যেমন এতোদিন ধরে আরো অনেক মিথ্যা গল্পের মতো জানতাম মেজর ডালিমের স্ত্রী এবং শেখ কামালের ব্যাঙ্ক ডাকাতির বানানো ঘটনাগুলো। জানতাম খন্দকার মোশতাক ছিলেন মীরজাফর, জানা ছিলো না কতোটা। এখনো জানা হলো না পুলিশ হেফাজতে সিরাজ শিকদারের মৃত্যুর পর আসলেই কি বঙ্গবন্ধু সংসদ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? জানা হলো না এতোটাই কি অসম্ভব ছিলো শেখ মুজিবের পক্ষে একবার, অন্তত একবার বসে মুখোমুখি জেনে নেওয়া একাত্তরে, তাজউদ্দীন, সেই নয় মাস কীভাবে একা সামলেছেন সব! প্রচণ্ড অভিমান, সময়ের স্বল্পতা কিংবা নিছকই ভাগ্যের পরিহাস শেষমেশ হতে দেয়নি সেটা, অকথিত রয়ে গেছে তাঁদের কতো গল্প!
নইলে আমাদের ইতিহাস আজ কতো অন্যরকম হতে পারতো!
লিসেন। আই ডোন্ট গিভ আ ড্যাম এবাউট শেখ মুজিব, রক্তলাল চোখে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছিলেন ভূট্টো।
‘ইমোশনাল এপ্রোচে তাকে দমিয়ে ফেলা যায়।
বাট... দ্যাট লিটল ম্যান বিহাইন্ড হিম, দ্যাট লিটল নটোরিয়াস ম্যান, ফাইল হাতের ওই তাজউদ্দীন- তাকে আটকানো বড় শক্ত।
দিস গাই ইজ ভেরী থরো। দিস তাজউদ্দীন, আই টেল ইউ, উইল বিকাম ইউর মেইন প্রবলেম!
ছোটখাটো গড়নের নির্মোহ নটোরিয়াস ভদ্রলোকটির কথা জানা ছিলো সামান্যই। ব্যক্তি তাজউদ্দীনকে যতোটা জানায় এই বই, মাথা নত হয়ে আসে। (অবশ্য উপন্যাসের একদম শেষটায় অংশে লেখক এবং তাজউদ্দীন কন্যার পাঠচক্রের দৃশ্যপটটি মনে হয়েছে নিছক বাহুল্য। একতারা কেটে রাখা সেই বিরক্তি থেকেই।)
এর আগের বাকিটা জানার উৎস ছিল দু'খণ্ডের তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি, আমি বিজয় দেখেছি, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি, মূলধারা: '৭১, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার তাজউদ্দীন কন্যা সিমিন হোসেন রিমি বা অন্যান্যদের আর্টিকেল বা ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের অংশবিশেষ ইত্যাদি।

বাংলাদেশের ইতিহাসের নিঃসঙ্গ সারথীটিকে নিয়ে ব্যপ্ত কলেবরে এরকম একটি লেখা খুব, খু-ব জরুরি ছিলো।
সুহান রিজওয়ান, আপনাকে ধন্যবাদ।

Good friend, good book and...
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews622 followers
March 15, 2017
খুব বেশি ভালো বইয়ের এই একটা সমস্যা। কোন বিশেষণ দিয়েই ঠিকমতো বিশেষিত করা যায় না। অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। বহুদিন পর এরকম একটি বই পড়লাম। অনেকদিন থেকেই একটু একটু করে পড়েছি। উত্তরখণ্ড পড়েছি অনেক সময় নিয়ে। পূর্বখণ্ড পড়েছি আজকে বাসে বসে। ভাগ্যিস বইটা সাথে ছিল। নাহয় বাসে বসে ৬ ঘণ্টা কাটানো দুঃসাধ্য হত।

বইয়ের উত্তর খন্ড শুরু হয় ১৯৭১ এর মার্চ মাস থেকে। পূর্বখণ্ডে আছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের টুকরো টুকরো ঘটনা। আমরা বেশি জানি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের অবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতার কথা, সাধারন মানুষের দুরাবস্থার কথা। দেশের বাইরে দেশের জন্য যে যুদ্ধ চলছিলো তা বেশিরভাগেরই অজানা। এই অজানা যুদ্ধই উঠে আসে উত্তরখণ্ডে। সাথে আরও আছে যুদ্ধের টুকরো টুকরো ঘটনা। পূর্ব খন্ডে আছে দেশ স্বাধীনের পরের অবস্থার কথা। সেও তো এক যুদ্ধ। দুই যুদ্ধের একজন মহান যোদ্ধা তাজউদ্দীন আহমেদ। তাকে নিয়েই এই উপন্যাস।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি আবেগি। পূর্ব খন্ড পড়তে গিয়ে বেশ সময় লাগলো। কারণ বাধ না মানা আবেগ। দুই নাম্বার সেক্টরে যুদ্ধ করতে আসা ছেলেদের দলকে যখন খালেদ মোশাররফ ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তখন দলের সবচেয়ে ছোট ছেলেটি গলার রগ ফুলিয়ে চেঁচিয়ে উঠে, "বাসায় যাবো কেন? আপনার ক্যাম্পে না নিলে না নেবেন, বাসায় যেতে বলেন কেন? আপনাদের সাথে যুদ্ধ করতে না দিলে অন্য জায়গায় গিয়ে যুদ্ধ করব। আপনি আমাদের ফিরায় দেয়ার কে? বাংলাদেশ কি আপনার একার?" এইরকম এক একটা ঘটনা পড়ি আর বই বন্ধ করে রেখে দেই। যতই পড়ি খালেদ মোশাররফ, মেজর হায়দারদের সুপারহিরো মনে হয়। সুপারম্যান, ব্যাট্ম্যান আমাকে আকর্ষণ করে না। দেশের এই সুপারহিরোদের একই কথা, একই ঘটনা ঘুরে ফিরে একেক জায়গায় পড়ি আর আরও বেশি ইম্প্রেসড হই।

যখন দেশের ভিতর এই সুপারহিরোরা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, দেশের বাইরে বসে স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার তখন আরও এক যুদ্ধ সামাল দিতে ব্যস্ত। এই যুদ্ধে নেই কামান, বন্দুক। আছে বিরোধিতা। দলের বিরোধিতা, বিদেশের বিরোধিতা। একটি দেশকে স্বাধীন ঘোষণা করলেই তো ���াজ শেষ হয়ে যায় না। চাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। চাই বিদেশের সাহায্য। আবার সাহায্য করতে গিয়ে আবার কেউ যেন আবার দালালি দাবি করে না বসে সেদিকেও দিতে হয় মনোযোগ। এই কাজগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব থাকে সরকারের কাঁধে। সেই সরকারের প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। এমন দুর্দিনে রাজনীতির সাথে জড়িত সবাই সরকারকে সবসরকম সাহায্য করবে এটাই আশা করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। এইসময়েও দেখা যায় মতভেদ। মন্ত্রিত্ব নিয়ে মন কষাকষি। এতকিছু সামাল দিয়ে যুদ্ধের খোরাক যুগিয়েছেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য পৃথিবীজুড়ে ছুটোছুটি করেছেন যে সুপারহিরো তার নাম তাজউদ্দীন।

রাজনীতিবিদ তাজউদ্দীন থেকে ব্যাক্তি তাজউদ্দীন যেন আরও বেশি উজ্জ্বল। কম কথা বলা, কম আবেগ দেখানো এই মানুষটির মনে আছে পাহাড় সমান ভালোবাসা আর উদারতা। যতই পড়ি ততই মুগ্ধ হই। মুগ্ধ হই মানুষটির নীতিতে অটল থাকার অসম্ভব শক্তি দেখে। মুগ্ধ হই যখন উনি প্রতিজ্ঞা করেন যে মুক্তিযুদ্ধের চলাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মত তিনিও পরিবার থেকে দূরে থাকবেন। অবাক হই যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েও নিজের কাপড় নিজেই ধুতে বসে যান।

এবার আসি পূর্ব খণ্ডের কথায়। দেশ এখন স্বাধীন। তাজউদ্দীন এখন স্বাধীন দেশের অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হোন আর অর্থমন্ত্রী হোন মানুষটির জন্য কিছুই যেন পরিবর্তন হয়নি। আগের মতই নিরলস সাধনায় দেশের জন্য কাজ করে যান। এর মধ্যে দেশে নানারকম বিশৃঙ্খলা। শেখ মুজিব ভীষণ রকমের আবেগি মানুষ ছিলেন। তার পাশে সবসময় দরকার ছিল তাজউদ্দীনের মত এমন একজন যিনি বাস্তববাদী, নির্ভীক। যিনি বিনা সংকোচে মুজিবের সমালোচনা করতে পারেন। কিন্ত অবাক করার মত বিষয় হল তাজউদ্দীন যখন দেশের ভাঙ্গা অর্থনীতি জোড়া দিতে ব্যস্ত ওই সময় মুজিবের পাশে স্থান করে নেন খন্দকার মোশতাক। তাজউদ্দীন অকপটে স্বীকার করেছেন তিনি বাংলাদেশের চেয়ে বঙ্গবন্ধুকে বেশি ভালোবাসেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে বুঝেছিলেন। তাই বলেছিলেন, “স্বাধীনতা ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আর কোন অস্তিত্ব নাই, আর কোন পরিচয় নাই। স্বাধীন বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। পরাধীন বাংলায় বঙ্গবন্ধু ফিরে আসবেন না।” কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যাকে উনি দেশের থেকে বেশি ভালবেসেছেন সেই মানুষটি তাকে ভুল বুঝেছেন জীবনের শেষ সময়ে। মুজিব ভাই বন্ধু আর শত্রু চিনলেন না, এই আফসোস তাজউদ্দীনের সাথে আমারও হয়েছে। তাজউদ্দীনের সাথে আমারও অভিমান হয় বঙ্গবন্ধুর উপর, আর সবার উপর। তাজউদ্দীন নাহয় মুখ ফুটে সেই নয় মাসের কথা বঙ্গবন্ধুকে বলেন নাই। কিন্তু আরও মানুষ তো ছিল। তাদের তো দায়িত্ব ছিল বঙ্গবন্ধুকে সেই নয় মাস মন্ত্রীসভা কিভাবে কাজ করেছে তা জানানো। কে ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আর কে ছিল বিপক্ষে। হায়রে, নিশ্চুপ থাকার ভয়াবহ প্রতিদান দিতে হল বঙ্গবন্ধুকে, তার প্রতি সদা অনুগত চার নেতাকে আর দেশবাসীকে।

পরিশেষে, এলোমেলোভাবে এত কথা বলার ইচ্ছা আমার ছিল না। এই বইটি নিয়ে কথা বলা শুরু করলে অনেক কথাই বলা হয়ে যায়। লেখক অনেক পরিশ্রম করে বইটি লিখেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় বইয়ের শেষ পাতাগুলোয়। লেখককে অশেষ ধন্যবাদ এত চমৎকার বইটি আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। উপন্যাসের ছলে লেখক যে ইতিহাস আমাদের জানিয়ে দিলেন তা সবার জানা খুব জরুরি।
Profile Image for মাশুদুল Haque.
Author 19 books1,008 followers
October 13, 2023
এ ধরণের উপন্যাস যত বেশি লেখা হবে ততই আমাদের জন্য মঙ্গল। শাহাদুজ্জামানের ক্রাচের কর্ণেলের মত কাব্যিক শিরোনাম আর ফোরস্যাডোইয়িং দিয়ে দিয়ে সাজানো- তাতে আমার কোন আপত্তি নেই, কারন স্টাইল হিসেবে সেটা চমৎকার।
সুহান রিজওয়ান এর পরবর্তী কাজের জন্য মুখিয়ে রইলাম।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
January 23, 2016
আমার একটা আফসোস ছিল যে , যখন থেকে আমি বুঝে পড়তে শিখেছি কিংবা যখন থেকে আমার পাঠক সত্তার জন্ম – সেই সময়কালে এমন খুব, খুব কম বই প্রকাশেরই সাক্ষী হতে পেরেছি যেগুলো সম্পর্কে বলতে পারব যে একজন বাংলাদেশি হিসেবে এই বইটা অবশ্যই পড়া উচিত । কিন্তু সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ আমার সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছে । বইটা পড়ার পর আমার অনুভূতি কেমন সেটা প্রকাশ করার জন্যে আরো কিছু বলার দরকার আছে কি? তবুও কিছু কথা না বললেই নয় ।
এই যে আমাদের এই বাংলেদেশ, এই দেশকে স্বাধীন করার পেছনে কিন্তু বড় একটা ভূমিকা ছিল একজন নিঃসঙ্গ সেনাপতির । বিশাল এক মহীরুহসম নেতা শেখ মুজিবের ছায়ার পেছনে যার ছায়া মলিনপ্রায় । তিনি তাজউদ্দীন আহমেদ । মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশীরভাগ উপন্যাস ই রচিত হয়েছে এর সম্মুখ সমরকে ঘিরে । কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধের পেছনেও ছিল রাজনীতি ও কূটনীতির জটিল এক খেলা । আর সেই খেলায় আমাদের কান্ডারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ফাইল হাতে ‘নটোরিয়াস’ এই মানুষটি । একজন ‘পলিটিশিয়ান’ ও একজন ‘স্টেটসম্যান’ এর মধ্যে যে কি পার্থক্য তা এই মানুষটার চরিত্র বিশ্লেষণ এই বোঝা যায় । কিন্তু সাহিত্যের ক্ষেত্রেও কেমন জানি অবহেলিত ছিলেন তিনি । সেই অভাববোধই পূরন করলেন লেখক দক্ষ হাতে । আমাদের এই রাজনীতি বিমুখ “আই হেট পলিটিক্স মনোভাবের প্রজন্ম ও আশা করি আগ্রহী হবে এই ইতিহাসের প্রতি ।
বইটি দুইটি খণ্ডে বিভক্ত । পূর্বখণ্ড- যেখানে বর্ণিত হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালিন সময়ের ইতিহাস রচিত হওয়ার গল্প । আর উত্তরখণ্ডে বর্ণিত হয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেই ইতিহাস মুছে ফেলার গল্প । ছোট ছোট অধ্যায় আর আকর্ষণীয় শিরোনামে বর্ণিত বইটা শুরু করার পর থেকে হাত থেকে নামাতে ইচ্ছে করেনি । প্রথম খণ্ডে তাজউদ্দীন আহমেদের পাশাপাশি প্লট এর অন্যতম মূল চরিত্র ছিলেন জাহানারা ইমাম, ক্র্যাক প্লাটুন এর পাশাপাশি আরো অনেকে । কিন্তু আমার কাছে উত্তরখণ্ডের যুদ্ধপরবর্তী কালীন ইতিহাসের বর্ণনাই বেশি ভালো লেগেছে । একটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল এইটুকু জুড়ে । যার সমাপ্তি হয় শেষ লাইনে । আর লেখকের লেখার ধরণেও কোন ধরণের জড়তা নেই। প্রথম উপন্যাস- এর কোন ছাপই নেই ।
বই এর নামকরণ এও কিন্তু সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায় । আরবী ভাষায় তাজ অর্থ মুকুট বা শিরস্ত্রান । আর আমাদের স্বাধীনতা চলাকালিন সময়ের নীরব এক সাক্ষী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ ।  কোন ধরণের ভুল ই ধরতে পারিনি ,কেবল পূর্বখণ্ডে বার বার পয়েন্ট অফ ভিউ পরিবর্তিত হওয়াতে ফোকাসটা কেমন যেন তাজউদ্দীন আহমেদের উপর থেকে সরে যাচ্ছিল বলে আমার মনে হয়েছে । কিন্তু উত্তরখণ্ডে এর কোন প্রভাব পড়েনি । ইতিহাস এর অবিকৃত উপস্থাপনাও প্রশংসার দাবীদার । লেখকের কাছ থেকে সামনে আরো ভালো ভালো বই আশা করছি ।
Profile Image for Nusrat Mahmood.
594 reviews737 followers
April 25, 2015
বাংলাদেশের একজন নায়ক ছিল, গ্রীক পাতালদেবতা হেডিসের মতো। হেডিস যেমন দেবরাজ জিউসের ক্ষমতা, ঐশ্বর্য এবং অন্যান্য দেবতাদের রুপ ও ধামাধরা স্বভাবের আড়ালে পরে আজীবন অবহেলিত থেকেছেন; তাজউদ্দীন আহমেদ নামের অদৃশ্য মুকুট পরা সারাক্ষণ ফিটফাট অথচ সাধারণ থাকা, নিজ চরিত্রগুনে বলীয়ান ফাইল হাতের 'নটোরিয়াস' লোকটি বাংলাদেশের রাজনীতির মহানায়ক শেখ মুজিবর রহমানের প্রখর ব্যাক্তিত্যের ��ড়ালে পরে থেকেছেন চিরকাল। ক্রোনাস এর রাজত্ব শেষ হবার পর সবার ষড়যন্ত্রে হেডিসকে ঠকিয়ে যখন পাতালরাজ্য দেওয়া হলো সে তাও তার প্রতিবাদ করেছিল। তাজউদ্দীন আহমেদ কে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিবাদ তো দূরে থাক, নিজের প্রাপ্যটুকু নিয়ে আক্ষেপ পর্যন্ত করতে দেখা যায়নি। কূটকচালের শিকার হয়ে অনেক বেশি অভিমানী এই লোকটি যতটুকু পারেন দিয়ে গেছেন দেশকে, প্রাপ্যের হিসেবটা মিলিয়ে সবটুকু বুঝে নিতে চাননি কখনো। 'সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ' বইটা গল্প বলে গেছে এই তাজ নামের মানুষটার, যে কখনো মাথা নোয়াতে শিখেনি। দুই দলের রেষারেষিতে পরে 'হেট পলিটিক��স' আর 'না ভোটের' জেনারেশনের কয়জন এই ইতিহাসের বরপুত্রকে চিনে তা ভাবনার বিষয়। সেই ভাবনার অবসান ঘটাতে পড়ার বইয়ের পাতায় জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমান আর স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম এবং ছবির আড়ালে চাপা পরে যাওয়া তাজউদ্দীনকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে লেখক এক বিরাট দায় রক্ষা করেছেন।

বড় বেশি সুন্দর বই, বড় বেশি সুন্দর লেখনী। মনছোঁয়া আকর্ষণীয় সব শিরোনামসহ সব ছোট ছোট চ্যাপ্টার যা মনোযোগ ধরে রাখে শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত। আমার মতে একটা লেখার জরুরী দিকগুলোর একটা হলো পারফেক্ট শুরু এবং পারফেক্ট সমাপ্তি যা এই বইটায় আছে তাই হাত থেকে বইটা নামানোর পরও মনে রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে 'Everybody is paid back by their own coins' কথাটার গুরুত্ব মনের উপর ভারী হয়ে বসে। কিছু কিছু জায়গায় যদিও মনে হয়েছে কারো কারো কোন সিদ্ধান্ত বা কাজের পিছনের কারণটাকে একটু ডিফেন্ড করে লেখা হয়েছে তা নিয়ে মাথা বেশি ঘামাইনি কারণ মন তখন উৎসুক ছিল ব্যাক্তি, নেতা, মন্ত্রী, পিতা, অনুসারী তাজউদ্দীন আহমেদকে জানতে। বারবার তার সাথে একালের রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের তুলনা করতে গিয়ে কোত্থেকে জানি হাসি গুড়গুড়িয়ে উঠে এসেছে। স্টেটম্যান আর পলিটিশিয়ানদের পার্থক্য খুব বেশি নগ্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে।

এতদিন মনে একটা হাহাকার খুব গোপনে লালন করতাম যে জীবনে যত বই পড়েছি তার মধ্যে 'most influential' বইয়ের তালিকা করতে গেলে ৯৮% দেখা যেত বিদেশী লেখকের বই। 'সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ' বইটা সে আফসোসের জায়গাটা ধ্বংস করে দিয়েছে। গত বছর গর্ব করেছিলাম শরীফুল হাসানের 'সাম্ভালা' পড়ে যে আমাদের দেশ থেকে আজকাল কেউ আন্তর্জাতিক মানের এডভেঞ্চার বই লিখেছে। এ বছর ইচ্ছা করছে এ বইটি অনুবাদ করে বিশ্বের সবাইকে পড়তে দিয়ে জানাই যে আমরা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব ধারায় কি চমৎকার ভাবেই না আমাদেরই একজন রাজপুত্রের গল্পকে উপস্থাপন করতে পারি। প্রথম প্রকাশিত লেখায় এতো বেশি গুছানো ও পরিণত লেখা আশা করিনি, লেখককে অভিনন্দন ইতিহাসকে অবিকৃত করে প্রায় সঠিকভাবে কয়েকজন কাণ্ডারিকে কলমের জোরে আমাদের মাঝে তুলে ধরবার জন্য।আর পাঠক হিসেবে সুহান রিজওয়ান সাহেবের কাছে প্রত্যাশার পারদ যে এখন আকাশচুম্বী তা বলাই বাহুল্য। তবে আমি জানি এ প্রত্যাশা পূরণ করবার সামর্থ্যও লেখকের আছে কারণ 'সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ' বইটি নিজেই তার সাক্ষী।
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
October 17, 2017
"The problem with reading a good book is that you want to finish the book but you don’t want to finish the book."

অনেকদিন আগে ডারিয়া টুইট করেছিল কথাটা। মধুর একটা সমস্যা! আমি চাচ্ছিলাম এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি জাদুকরী এই বইটা। আবার মনে হচ্ছিল পড়লেই তো শেষ হয়ে গেলো!

শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। বইটা শেষ করার পরেও দীর্ঘসময় ধরে স্তব্দ হয়ে বসে ছিলাম। কি সুন্দর একটা বই! কি অদ্ভুত সুন্দর!

বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে একজন সত্যিকারের নেতা ছিলো আমাদের যে নেতা গ্রীক রুপকথার সব দেবতাকেও হার মানায়! লেখকের ভাষায় - "একজন সাধারণ মানুষ, যিনি পৃথিবীর অন্য কোনো দ্রাঘিমাংশেও হাতঘড়িতে বাংলাদেশের সময় ধরে রেখে নিজেকে আড়াল করে ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলেন সহকর্মীদের নিয়ে। একজন সাধারণ মানুষ, যিনি সময়ে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়তেন লাজুক কিশোরীদের মতো অথচ বাংলাদেশের শত্রুদের সামনে শুধু ফাইল হাতেই ছিলেন ভীষণ নটোরিয়াস। একজন অতি সাধারণ মানুষ, যাকে পড়া যায়, ধরে আনা যায় ইতিহাসের অ্যাসাইনমেন্ট খাতায়, অথচ পাওয়া যায় না দ্বিতীয়বার। আজ, মৃত্যুর এত বছর পরেও তাজউদ্দীন নামের সে সাধারণ মানুষটি হেঁয়ালির মতোই অস্পষ্ট। কী ব্যাকরণে, কী ইতিহাসে।"
ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের মহাপরিচালক রুস্তমজির সঙ্গী গোলোক মজুমদার অবাক স্বরে মন্তব্য করেছিল, "স্যার, আই ওয়াজ রং। দিস গাই ইজ নট আ পলিটিশিয়ান। হি ইজ আ স্টেটসম্যান!"
বেনজির আলী ভুট্টো সবচেয়ে ভয় করতো তাজউদ্দীন আহমদ নামের এই নায়ককেই।

"শাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ" বইটা পড়ে তাজউদ্দীন আহমদের প্রতি মুগ্ধতার রেশ কিছুতেই কাটছে না! মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই তিনি আহত শিশুর মতো দেশটাকে আগলে রেখেছিলেন পরম মমতায়। প্রচন্ড নীতিবান এই মানুষটি মিথ্যে সমালোচনার তোপের মুখে ছিলেন অবিচল। অস্থির সময়েও কখনও হতাশ হননি। আশার আলো খুঁজে বেড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে ভুল বুঝেছিলো এটাই ছিলো তাঁর জীবনের সবচাইতে বড় কষ্ট।

অসম্ভব সুন্দর শিরোনামে ছোট ছোট অনেকগুলো অধ্যায়ে লেখা বইটা পড়তে গিয়ে কখনও হেসেছি, কখনও কেঁদেছি, আবার কখনও খন্দকার মোশতাকের উপর প্রচণ্ড রাগে ছটফট করেছি। নীলাভ চোখের যুবক সায়মন ড্রিং যখন বিশ্ববাসীকে যুদ্ধাহত দেশটির অবস্থা জানানোর জন্য প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে লুকিয়ে রাখা নোটবই আর ফিল্মরোল সাথে নিয়ে প্লেনে চড়ে তখন মানুষকে নতুন করে বিশ্বাস করতে শিখেছি। আবার কখনও খালেদ মোশাররফ, জাহানারা ইমাম, রুমী, ক্র‍্যাক প্ল্যাটুন, দুই নাম্বার সেক্টর, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ এইসব চেনা মানুষের গল্প পড়তে গিয়ে প্রচণ্ড আবেগে আচ্ছন্ন হয়েছি।

অসম্ভব সুন্দর এই বইটার জন্য সুহান রিজওয়ান এর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নাই!
আর পড়ুয়াদের জন্য "আ মাস্ট টু রিড" একটা বই।
Profile Image for Emtiaj.
237 reviews86 followers
September 16, 2016
আমার প্রিয় গ্রিক দেবতা প্রমিথিউস। ন্যায় এবং অন্যায় কোনটার পক্ষে না থেকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকাটা আমি ঘৃণা করি। কিন্তু তারপরেও প্রমিথিউস আমার প্রিয় দেবতা। কারণ সে মানুষকে ভালোবাসতো। স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে যে মানুষকে সভ্য করতে চেয়েছিল তাকে ভালো না লেগে পারে না।

জীবনটা মিথ না। বাস্তবতার মাঝে দাঁড়িয়েও তাজউদ্দীন আহমেদ নামক একজন মানুষকে আমার স্বর্গের দেবতা মনে হয়। প্রমিথিউস মানুষ সৃষ্টি করেছিল। তাজউদ্দীন হয়তো মানুষ সৃষ্টি করেন নি, কিন্তু বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন। (জন্ম শব্দটার সাথে বঙ্গবন্ধু মানায়, কিন্তু আমার মাথায় অন্য কোন শব্দ আসছে না) বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে লেখা কোন বই পড়ি তখন আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষের সাত জন্মের ভাগ্য তারা বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন নামক পারফেক্ট রাজনীতিবিদ পেয়েছে। এবং আমার এটাও মনে হয়, এদেশের মানুষের চৌদ্দ জন্মের ভাগ্য যে তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাজউদ্দীন নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিউরে উঠতে হয় উনি যদি না থাকতেন তবে কি হত এই ভেবে।

সামাজিক বিজ্ঞানে পড়া কয়েকজন দালাল ছাড়া সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে, এ কথা আমার ঠাকুরমার ঝুলির কোন গল্পের মতোই মনে হয়, যখন মুক্তিযুদ্ধের বইগুলোর পৃষ্ঠা উল্টাই। মিটিং মিছিল করা রাজনীতি না করলেও আমি বিশ্বাস করি, জীবনের অনেক কিছুরই সাথে রাজনীতি জড়িয়ে আছে। তো মুক্তিযুদ্ধের সাথে রাজনীতি থাকবে বা মুক্তিযুদ্ধই যে একটা রাজনৈতিক ঘটনা একথা ভাবতে অসুবিধা কোথায় বা এর মধ্যে সমস্যা কেন খুঁজি?

খন্দকার মোশতাক খন্দকার মোশতাক (প্রথমটা গালি, পরেরটা নাম) যখন বলে, আমাকে তোমরা মক্কায় পাঠিয়ে দাও, আমি হজ্জ্ব করব, কিংবা স্বাধীনতা চাও নাকি বঙ্গবন্ধুকে চাও, দুটো কিন্তু একসাথে হবে না, কিংবা শেখ মণির কিসের মন্ত্রিসভা, এটা কি ফাইলে ডুবে থাকার সময় নাকি? কিংবা মোশতাকের পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার চিন্তা, কিংবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ধর্মঘট কিংবা বিতর্কিত মুজিব বাহিনীর ভূমিকা কিংবা মন্ত্রিসভার সাথে সেক্টর কমান্ডরদের বিরোধ, বাম দলগুলোর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নাকি বিপক্ষে থাকবে এই দ্বন্দ্বে ভোগা এসব পড়লে মনে হয়, রাজনীতির মধ্যে পলিটিক্স ঢুকে একাকার হয়ে গিয়েছিল সে সময়টায়, কলুষিত করেছিল সময়টাকে।

ঠিক এ সময়টাতে একজন দেবতা ছিল যিনি সবকিছুকে ছাপিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন। মানুষটা ভারতে আসার সময় একটা চিঠি লিখেছিল তাঁর স্ত্রীকে, সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাথে মিশে যেও, তাঁর পরিবার যখন এসে পৌঁছালো, তখন শুধু এটুকুই বললেন, ও তোমরা এসে গেছ? প্রতিজ্ঞা করেছিল, দেশের ভাবনাই আগে, পরিবার থাকবে পরের চিন্তায়। কি আশ্চর্য! মানুষটা তাঁর কথা পুরোপুরি রক্ষা করেছিল! এতো দলীয় কোন্দল, এতো অভাব, এতো আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করে ঠিকই পালন করেছেন তাঁর দায়িত্ব। আমি অবাক হয়ে যাই, কীভাবে পেরেছিল!

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছিল, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির পরিপূর্ণ আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তাঁর ভূমিকা প্রবল ব্যক্তিত্বময়। একটা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত, গরীব দেশের অর্থমন্ত্রী এতোটা personality এতোটা guts নিয়ে চলতে পারে কীভাবে? এখন তো আমার ছোট্ট চোখে এরকম মানুষ ধরা পড়ে না। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এ সময়টা বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হতাশারও। পাকিস্তানের প্রেতাত্মাকে পেছনে ফেলে যেখানে এগিয়ে যাওয়ার সময় তখন দেশকে টেনে ধরার পণ করেছিল মোশতাকের মত বিশ্বাসঘাতকেরা। জাতির জনকের আশেপাশে তাজউদ্দীনের মতো মানুষেরা ঠাঁই পেল না, পেল মোশতাকের মত মানুষেরা। উদ্ভট উঠের পিঠে চলছিল এ স্বদেশ, সত্যিই হতাশার ছিল সেটা।

মুক্তিযুদ্ধ কালীন একটা ঘটনায় মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রতিজ্ঞা করেছিল, মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না। আমার এ ঘটনাটা মনের মধ্যে থাকে। ভাবি মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারাবো কেন? কিন্তু বিপরীতে এটাও মনে পড়ে যায়, বঙ্গবন্ধুও তো বিশ্বাস করেছেন সবকিছু, সবাইকে। কিন্তু সেই বিশ্বাসের মর্যাদা কি রেখেছিল তাঁকে ঘিরে থাকে চাটুকার আর বিশ্বাসঘাতকের দল? জাতির পিতা, জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করা চার নেতা এভাবে খুন হয়ে গেল? খুব কষ্ট হয়, খুব কষ্ট।

পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে ভাবি, তাজউদ্দীন আহমেদের কি কোন ব্যর্থতা নেই? উনি যে চাটুকারদের বর্ম ভেদ করে বঙ্গবন্ধুর কাছে পোঁছুতে পারলেন না। উনি তো বঙ্গবন্ধুকে বোঝাতে পারলেন না যে, উনার উচ্চাভিলাষ আছে, কিন্তু সেটা মুজিব ভাইকে হটানোর না, দেশকে উপরে তোলার। বিশাল বটবৃক্ষের কাছে চাটুকার ছাড়া কেউ পৌঁছুতে পারে না, জাতির অন্ধকার নেমে আসল।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাস নিয়ে, একজন দেবতার কাহিনী নিয়ে লেখা উপন্যাস। অতএব এখানে খুব বেশি বানানোর কিছু নেই। লেখক করেননিও এ কাজটা। অসাধারণ সাবলীল একটা উপন্যাস। মনে হয় লেখকের করোটিতে স্থাপন করা আছে, চৌদ্দ হাজার চারশত আর পি এম এ ঘুরা বিশাল ধারণ ক্ষমতার একটা হার্ডডিস্ক। একটু একটু করে মালা গাঁথার মত করে ভরিয়ে তুলছে সাদা পৃষ্ঠা। দিনশেষে হয়ে উঠেছে ক্লাসিক একটা উপন্যাস। বইয়ের অধিকাংশ ঘটনাই জানা হলেও আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম সুহান রিজওয়ানের লেখনীর গুণে। কি অসাধারণ! অধ্যায়গুলোর নাম কি অসাধারণ! বিশেষভাবে বলতে হয় পরিশিষ্ট অংশটার কথা। এরকম আগে পড়িনি তো। একজন নতুন লেখক এতো ভালোভাবে লিখেন কীভাবে? বাংলার গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেইজ যদি এটা লিখতো তাহলে কি অবস্থা হতো একবার চিন্তা করেই তো শিউরে উঠি!

তাজউদ্দীন আহমেদকে হাইলাইট করা হলেও এটাকে আমি অনন্যসাধারণ মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী উপন্যাস বলবো। বইটার একটা অসাধারণ ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয়। অনলাইনে বিচরণ করার কারণে প্রতি মুহূর্তে ছাগুদের মুখোমুখি হতে হয়। উদ্ভট সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন জিজ্ঞেস করে, এম জি ওসমানী কেন ১৬ ডিসেম্বার উপস্থিত থাকে নি, এটা নিশ্চয় ভারতের ষড়যন্ত্র! এ প্রশ্নের এবং অসংখ্য উত্তর দেয়া আছে এ বইয়ে।

এই কথাটা না লিখলেও হতো, কিন্তু মনে যখন এসেছিল তখন লিখেই ফেলি। নৌ কমান্ডোদের অসাধারণ সাফল্যের অপারেশন জ্যাকপটের ব্যপারটা কেন আসে নি? কিন্তু পড়তে পড়তেই এর উত্তর পেয়ে গিয়েছি :D

সমালোচনার যেটা সেটা হচ্ছে, প্রথমভাগে তাজউদ্দীন আহমেদ যেন একটু আড়ালে রয়ে গেল। কিন্তু পরেরভাগে সেটা ভালোভাবেই এসেছে। কিছুটা যেন, প্রথমদিকে পুরোপুরি নায়ক নন। জাহানার ইমামের ঘটনা কি খালেদ মোশাররফের কারণে এতটা গুরুত্ব পেয়েছে? যদি তা না হয় তবে বলবো, ওটা বড্ড বেশি পরিমাণে এসেছে। একইভাবে প্রশ্ন করতে হয়, খালেদ মোশাররফের যুদ্ধকাহিনী এতোটা এসেছে, তাহলে কেন কর্নেল তাহের বা জিয়াউর রহমানের ব্যাপারটা আসেনি? যেহেতু উপন্যাসটায় তিনটা অভ্যুত্থানই এসেছে। (কিছুটা স্ব-বিরোধী প্রশ্ন হয়ে গেল যদিও :/ )

ইতিহাস পড়তে আমার বরাবরই ভালো লাগে। আর এটাতো অসাধারণ। বইটা নিজে পড়ুন, অন্যকে পড়তে বলুন :)

"আসুন আমরা এমনভাবে কাজ করি, যেন পরবর্তীতে যখন ঐতিহাসিকরা ইতিহাস রচনা করবেন তখন আমাকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।"

আপনাকে ভালোভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কি?

Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
April 12, 2017
একটা মাস্ট রিড বুক। প্রত্যেকের পড়া উচিত, কেউ পড়তে না চাইলে দরকার হলে ঘাড় ধরে জোর করে পড়ানো উচিত। বইটা মূলত তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে। ছোট খাট জীবনীও বলা চলে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ- ব্যাপারটা এমনি এমনি আসেনি, এর পিছনে রয়েছে কিছু কিছু আনুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, আত্মত্যাগ আরও আর হৃদয় উজার করা দেশপ্রেম। বাংলাদেশের সেই ঘটনাবহুল দিনগুলোর সাক্ষী তিনি, আড়ালেই থেকেছেন সবসময়। ছিলেন শেখ মুজিবের ছায়া হয়ে। পরবর্তীতে যখন মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হল, তখন শক্ত হাতে ধরেছেন দেশের হাল...
দেশ স্বাধীন হল... কিন্তু নীরবে নিভৃতে থাকা মানুষটার স্বভাবের পরিবর্তন হল না একটুও। তখনও হাল ধরেছিলেন। এরপর একসময় চলেও গেলেন। বলা ভাল চলে যেতে বাধ্য করা হল... তাও সেই লোকচক্ষুর আড়ালেই।
অসাধারণ একজন চরিত্র এই তাজউদ্দীন আহমদ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি তাঁকে নিয়ে লেখালেখি হয়েছে খুব কম। সুহান রিজওয়ানের এই বই থেকে সেই নিভৃতচারী, বাংলাদেশের কল্যাণকামী এই রাজনীতিবিদ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আর বোনাস হিসেবে শিক্ষাও নিতে পারি।
তখনকার দিনের রাজনীতিবিদদের আত্মা কাঁপিয়ে দেয়ার মতো জুটি ছিল মুজিব-তাজউদ্দীন জুটি । আহা! ভুল বোঝাবুঝি গুলো যদি না হতো! ইতিহাসের সেই ঘিনঘিনে চরিত্রগুলো যদি না থাকতো! বাংলাদেশের এই হিরোদের যদি ট্রাজিক মৃত্যু না হতো! এই অনেকগুলো যদি কিন্তু না থাকলে আরও অনেক কিছুই হতো, হতে পারতো।
যা হোক, অসাধারণ একটা বই। তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে এ বই থেকে, জানা যাবে তখনকার রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি, যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের অবস্থা,আর সেই সাথে সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া একটা রাষ্ট্রের টিকে থাকার সংগ্রাম, কিছু নোংরা মানুষের ক্ষমতার লোভ। যার ফলে বলি হতে হয় এইসব মহামানবদের।

এক কথায় অসাধারণ...
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
September 12, 2020
শেষ করলাম সুহান রিজওয়ানের ম্যাগনাম ওপাস 'সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ'। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী ঘটনাকে ক্রোনোলজিক্যাল অর্ডারে সাজিয়ে লেখা হয়েছে এই উপন্যাস।

বইয়ের শেষে লেখকের সহায়ক গ্রন্থের তালিকা দেখে একইসাথে অবাক ও মুগ্ধ হলাম এটা ভেবে যে, একজন লেখক হওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রচুর পরিশ্রমী একজন পাঠকও। উপন্যাসটি লেখার আগে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে লেখককে, এটা খুব ভালোভাবেই ���োঝা গেছে।

যাই হোক, এবার লেখনী প্রসঙ্গে আসি। অতীব সুন্দর ভঙ্গিমায় প্রতিটি ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুধু পড়েই গেছি। যতই পৃষ্ঠা উল্টিয়ে সামনে এগিয়েছি, তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে মুগ্ধতা ও মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা ততই বেড়েছে।

পরিশেষে বলতে চাই, খুবই সুপাঠ্য একটি বই। যারা মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য তো এই বই অবশ্যপাঠ্য। যারা আগ্রহী না তাদেরও পড়া উচিত, না পড়তে চাইলে জোর করে পড়ানো উচিত।

লেখকের পরবর্তী উপন্যাস 'পদতলে চমকায় মাটি' পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকলাম।
Profile Image for অপরিচিত আবির.
19 reviews5 followers
September 22, 2019
প্রথমেই বইটির কিছু খুঁতের কথা বলি যা আমার বেশ চোখে লেগেছে।

বইটির পূর্ব খন্ডে তাজউদ্দীন আহমেদের প্রসংগ এসেছে ছাড়াছাড়া ভাবে। এক অধ্যায় হয়তো তাজউদ্দীনের প্রবাস সরকারের দিনগুলি দেখাল এরপর আবার পরবর্তী দুই বা তিন অধ্যায় হয়তো ক্র্যাক প্ল্যাটুনের কাহিনী বা অন্য কোন গৌণ চরিত্রের(বইয়ের গৌণ চরিত্র, ইতিহাসের নয়) রোজনামচা। এ কারণে মাঝে মাঝেই মূল চরিত্র, তাজউদ্দীন এবং মূল কাহিনীঃ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠিত করার ইতিহাস অনেকটাই ফোকাসের বাইরে চলে গিয়েছে।

প্রথম খন্ডে তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে যে অধ্যায়গুলো আছে সেগুলোকে একটু স্থুল দৃষ্টিতে দেখলে দুভাগে ভাগ করা যায় - প্রবাস সরকারের দিনকাল এবং অন্যদের জবানীতে তাজউদ্দীনের পূর্বকথা। তাজউদ্দীনের পূর্ব কথা, তাঁর ছোটবেলা বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমার প্রচন্ড আগ্রহ ছিল স্বাভাবিকভাবেই, এবং সুহান সেটা আমার কাছে পৌঁছিয়েও দিয়েছেন এই বইয়ের মাধ্যমে। কিন্তু "অমলিন এক গোলাপ", "ভুট্টোর ভয়", "ক্যানভাসের ওপাশে" বা "অদ্ভূত এক প্রধানমন্ত্রী" অধ্যায়গুলোতে পূর্বকথা বর্ণিত হয়েছে তাজউদ্দীনের আশেপাশের মানুষদের স্মৃতিচারণায়। অধ্যায়গুলোর একটা কমন ধারা ছিল, তাজউদ্দিনের অতীতের একটা অ্যাক্ট বর্ণনা করা হবে এবং স্মৃতিচারণকারী উপসংহার টানবেন তাজউদ্দীনের মহত্বের ওপর রিফ্লেক্ট করে - যেটা আসলে আমার কিঞ্চিৎ অতিশায়ন মনে হয়েছে। অ্যাক্টের বিবরণটাই যথেষ্ট হতো হয়তো।

পূর্ব খন্ডে কাহিনীর সুতো প্রায়ই ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে কারণ জাহানারা ইমাম, রুমী, খালেদ মোশাররফ এবং আরো কিছু চরিত্রকে সেখানে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যাদের সাথে তাজউদ্দীন আহমদের কাহিনীর সরাসরি কোন সম্পর্ক ছিল না। এতে উপন্যাসের ফোকাস সরে গিয়েছে প্রায়ই। আর কিছু চরিত্র সম্পর্কে আরো জানার ইচ্ছে ছিল তারা আরো ফোকাস পেতে পারতেন, বিশেষ করে জোহরা তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবু সাঈদ চৌধুরী - তাজউদ্দীনের কাছের মানুষেরা।

পূর্বখন্ডের এই মিসিং এলিমেন্টগুলোকেই সুহান প্রবল পরাক্রমে নিয়ে এসেছেন তাঁর বইয়ের উত্তর খন্ডে। উত্তর খন্ডের কাহিনী অত্যন্ত সাবলীল, টানটান উত্তেজনায় ভরপুর, পাঠককে ধরে রাখার সকল মালমশলাই সেখানে আছে। উত্তর খন্ডে তাজউদ্দীনই পেয়েছেন স্পটলাইটের আলো, যদিও সেই সময় অনেক শক্তিশালী চরিত্র বাংলার মাটিতে ছিল - কর্নেল তাহের, মেজর জলিল, মাওলানা ভাসানী, খালেদ মোশাররফ, মেজর জিয়া, রশিদ-ফারুক গং... এদের প্রত্যেকজনের ঐ সময়কার ভূমিকার ওপর আলাদা আলাদা উপন্যাস লেখা সম্ভব। কিন্তু উত্তর খন্ডে লেখকের ফোকাস নিবিষ্ট ছিল আমাদের প্রধান চরিত্র মুকুট নামের মানুষটির ওপর। হয়তো এ কারণেই বাসে বসে যখন আমি বইয়ের শেষ লাইনটা পড়ে শেষ করি এক অদ্ভুত বিষন্নতা ভর করে আমাকে, যার জন্য দায়ী সুহান রিজওয়ান।

প্রথম বই এবং প্রথম উপন্যাস হিসেবে সুহানের কাজ চমৎকার হয়েছে। ভাষার কারুকাজ, প্রকৃতি বা পরিবেশের বর্ণনা, বেশ কিছু অধ্যায়ের ক্লাইম্যাক্স বা ক্লিফহ্যাঙ্গারগুলো ছিল চরম আকর্ষণীয়। ইতিহাসের অজানা অংশগুলোর সংলাপগুলো সুহান এমং কৃতিত্বের সাথে পূরণ করেছেন যে আসলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে যে ঐ সময় ঐ চরিত্ররা আসলে এভাবেই কথা বলেছিলেন, এভাবেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অধ্যায়গুলোর নামকরণগুলো অসাধারণ, প্রতিটিই মনে রাখবার মতো।

তুলনা যদি করতে গেলে শাহাদুজ্জামানের "ক্রাচের কর্নেল"ই সম্ভবত সবচেয়ে নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী। সাহিত্য হিসেবে মার্কিং করতে গেলে শাহাদুজ্জামানের অন্যান্য অনেক লেখার তুলনায় ক্রাচের কর্নেল হয়তো একটু কম মার্কই পাবে, কিন্তু তবুও "ক্রাচের কর্নেল" সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের উপন্যাসগুলোর একটি। একইভাবে মনে হচ্ছে সকল সাহিত্যগুণ, শিল্পমান, উপন্যাসের সার্থকতা ইত্যাদি ব্যাপার ছাপিয়ে "সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ"ও আমার ঐ বুকের কাছের পছন্দের তালিকাটায় অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে। সুহান রিজওয়ানের প্রতি স্যালুট এবং এক রাশ হিংসা রেখে গেলাম।

Let’s just talk about some complaints first, before we get to the praising part.

The first half of the book will seem a bit incoherent to most readers, as the writer sacrificed disbursing more insight onto our protagonist(Tajuddin Ahmed) and what was happening with his life and around him, than revisiting historical moments that doesn’t concern our protagonist directly. Most of these historical moments we experience by first hand accounts of lesser characters, some are fictional characters and some are historical characters that are important to the history no doubt but mostly unrelated to the main characters. I’d like the same historical moments to be seen through the eyes and perspective of Tajuddin and/or people around him at that time. This type of narration breaks the chain of thought and emotion surrounding the building up of the main character and loses focus for the reader.

The chapters in the first half that focuses on Tajuddin can be roughly divided into two categories, Tajuddin of present(1971 is the present for the book) and Tajuddin of the past(his upbringing) told from the perspectives of people around him. The latter category chapters were a little bit formulaic for my liking, it goes as this - a third person experiences or talks about an act by Tajuddin and the chapter ends with the narrator reflecting upon how great Tajuddin is. I think the writer should’ve left out the reflection part and trusted his readers to figure out the ruminations for themselves. It seemed a bit patronizing.

The first half had some major historical characters and days, bits and pieces from their daily lives in 1971 which was fascinating to read, don’t get me wrong. But as a reader I would more like to read about historical characters that stayed around Tajuddin like his wife Zohra Tajuddin or Syed Nazrul Islam, rather than characters unrelated to Tajuddin’s affairs.

The complaints I stated about the first half of the book seemed immediately answered as the writer delved towards the second half with force and focus.The second half of the book focuses totally on our main character, his day to day life, his struggles. A reader can sprint from the middle of the book to the finish line in a breath as the writer builds up the drama, the mysteries and the tension taut like a bowstring over the last chapters. Especially readers who are unaware of the actual history will definitely have their hearts beating fast, brows sweating, cursing under their breaths and manically shuffling through the pages as they learn more about what unfolds next in this amazing leader’s life. You would want to skip through to the end, to see what happens next but you can’t. Shuhan’s beautiful phrasing of thoughts, his melodious melancholic descriptions oozes delicacy through his words which will struck beautiful chords in your mind’s eardrums, you can’t escape it. Some lines are so poetic, that even though you are in a hurry to learn the predicament of the protagonist, you will read it again, and again and then maybe jot it down hastily on a napkin to be used in a future facebook status before moving on. And you will definitely do a double take when you eventually learn that this is the writer’s first attempt at a novel and first published book.

As a mere average reader, I don't dare dissect the technicality of Shuhan’s writings. So I will not walk on that path. But the cliffhangers, the climaxes to each plight, each dilemma is crafted in a supreme way that will keep you hanging until you fall for the writer, and keep asking for more. The dialogue and conversations between historical characters are painted so exquisitely that even though they are fictional, you would want to believe that’s how it went down. Your mind will paint that part of history using the borrowed colors from Shuhan’s writings.

Historical fictions are always a pick for me, should be for anyone who is either a history buff or a fiction fan. You learn the history by delving into the body and mind of the characters themselves and see them and yourself in a different light. You reflect on history in a different way, it changes you. To me, that is how a good historical fiction works. And Shakkhi Chilo Shrostran is a good historical fiction, it changed me. Tip of my hat to Shuhan Rizwan, hope he outdoes himself with every other book he writes.
Profile Image for Nazrul Islam.
Author 8 books228 followers
May 11, 2016

সত্যি কথা বলতে এই মূহুর্তে কোনকিছু নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু আরো বড় সত্যি কথা হল বইটি যদি কেউ পড়ে আর তাহলে তার জন্য এই বইটি নিয়ে কিছু কথা বলা ফরয। কারণ বইটি এমন একজনকে কেন্দ্র করে লেখা যাকে আমরা মনেই করি না। যাকে নিয়ে হয় না কোন অনুষ্ঠান বা আলোচনা সভা। যার ��ম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানে না আমাদের তরুণ সমাজ। যে ব্যাক্তিটি দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় এত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলো , একাত্তরের নেতাহীন সময়ে যিনি ধরলেন হাল। সমস্ত চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে যিনি এনে দিলেন স্বাধীনতা সেই তাজউদ্দীন কে নিয়ে এই বই। যিনি বঙ্গবন্ধুর প্রবল ব্যাক্তিত্বের নিচে চিরটাকাল চাপা পড়ে ছিলেন। যিনি সৌরভ ছড়িয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধুর পিছনে থেকে। যার সম্পর্কে ভূট্টো বলেছিল "দ্যাটস লিটল ম্যান, দ্যাটস নটোরিয়াস তাজউদ্দীন। আই অ্যাম এফরেইড অফ হিম "। বঙ্গবন্ধুর পিছনে চিরটাকাল ফাইল হাতে থাকার কারণে যাকে পাত্তা দেয়নি পাকিস্তান সরকার।

একাত্তরে উত্তাল সময়। বঙ্গবন্ধু জেলে। নেতাহীন বাংলাদেশের সশস্ত্র সংগ্রামে যিনি ধরলেন নাবিকবিহীন জাহাজের হাল। দলের ভিতরের ক্ষমতালোভী হায়েনা আর দেশের বাহিরের সব কূটচাল ধংস করে যিনি একেক পর সঠিক সিদ্ধান্ত নি��়ে দেশকে বিজয় এনে দিয়েছিলেন। বাকপটু ছিলেন না তিনি। তাই বঙ্গবন্ধুর মত তার তর্জনীর কোন পাওয়ার না থাকলেও নিষ্ঠা ,সততা আর ব্যাক্তিত্ব দিয়ে তা পুষিয়ে দিয়েছিলেন। এক কাপড়ে সারাদিন অফিস করে রাতের আধাঁরিতে যিনি ময়লা জামাটি ধুতেন পরেরদিনের জন্য। যিনি শপথ নিয়েছিলেন যতদিন পর্যন্ত দেশ স্বাধীন করতে না পারবেন ততদিন বাসায় থাকবেন না। যার পদত্যাগ সম্পর্ক জনৈক আমলার মন্তব্য "কি বলেন স্যার। এ তো আর কেউ নয়। এতো তাজউদ্দীন। অর্থমন্ত্রী থাকার পুরোটা সময় তো ভিক্ষা করেই কাটালেন। কিন্তু ভিক্ষুকেরও যে আত্নমর্যাদাবোধ থাকে তা দেখিয়ে দিয়েছে তিনি। "
কিন্তু ইতিহাস তার পক্ষে কথা বলে নাই। বঙ্গবন্ধুর অদূরদর্শীতা আর আশপাশের চাটুকারদের জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার অচিরেই যার স্থান হয় আস্তাকুড়েঁ। তবুও তিনি বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে যান নাই। দুরদর্শী তাজউদ্দীন ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শত্রুদের। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তখন পরে রয়েছেন ঠুলি। সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন। চাটুকারকা তাকে বুঝতে দিচ্ছে না দেশের সত্যিকারের পরিস্থিতি। স্বাধীনতা এনে দেওয়া মানুষ তখন অবাঞ্চিত। আফসোস করে যার বুক চিড়ে বেরিয়ে আসে একটি মন্তব্য " আমি কি ফেলনা হয়ে গেলাম? দেশকে কি আমার আর কিছুই দেওয়ার নাই? "
জীবনের শেষ মূহূর্তের আগ পর্যন্ত যিনি দেশের সাথে বৈঈমানি করার চিন্তাও করেন নাই নিজের মৃত্যু জেনেও।

বইতে শুধু তাজউদ্দীন নয় সাথে সাথে উঠে এসেছে স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা কুশিলবদের নাম।ক্র্যাক প্লাটুনের খালেদ মোশাররফ যার নাম শুনলে ২ নাম্বার সেক্টরের সব মুক্তিযোদ্ধা বিনা দ্বিধায় জীবন দিতে
রাজি ছিল , ট্রেইনার ক্যাপ্টেন হায়দার। যিনি অবুঝ শিশুর মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন " মাই বয়েজ, মাই বয়েজ " বলে যখন শোনেন ক্রাক প্লাটুনের রুমি,জুয়েলরা ধরা পড়েছে।

৭৫-৮০ এই কয় বছরে দেশের অনেক সূর্যসন্তান কে জীবন দিতে হয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধুর কিছু ভুল ডিসিশন আর চাটুকারদের ধরতে না পারার কারণে। নিজের জীবন দিয়ে তার মাসুল তিনি দিয়েছেন সেইখানে সঙ্গে করে নিয়েছেন নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, মনসুর হাসান ,তাজউদ্দীন, খালেদ মোশাররফ, কর্নেল তাহেরের মত সূর্যসৈনিকদের।

আফসোস থেকে যায় দেশের এত সূর্য সন্তান মরল সেই উত্তাল সময়ে কিন্তু মোশতাক আহমেদ নামক ছুঁচোটা রয়ে গেল ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

তাজউদ্দীন কে নিয়ে এমন আরেকটি অসাধারণ বই আগে লেখা হয়েছে কিনা জানা নেই। কিন্তু এই বইটি সবার জন্য অবশ্য পাঠ্য।
পুরো বইতে কোন সমস্যা নেই দুই একটা জায়গা ছাড়া। বইতে রক্ষীবাহিনীকে পজিটিভ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ইতিহাস কিন্তু এইকথা বলে না। এই জায়গাটায় আরেকটু সতর্ক হয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা প্রয়োজন ছিল। তবে লেখক বলতে পারে "আমি তো বলেই দিয়েছি এটা ইতিহাস না। ঐতিহাসিক বই "। সেইজন্যই যতই ঐতিহাসিক বই বলি না কেন শেষ পর্যন্ত তো ইতিহাসের সঠিক তথ্যই আশা করে সবাই। আরেকটি ব্যাপার হল যেহেতু বইটি তাজউদ্দীন কে নিয়ে উনাকে আরেকটু স্পেস অনায়াসেই দেওয়া যেত। উনার বই হিসেবে উনি স্পেস পেয়েছেন খুবই কম।

আরেকটি ব্যাপার হল কথাবার্তার মধ্যে সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ। বইয়ের কুশিলবরা চলিত ভাষায় ( নিজের গ্রামের ভাষা) কথা বলবে এইটাতে অস্বাভাবিকতার কিছু নাই কিন্তু এর মধ্যে ধুম করে ঢাকার চলিত ভাষা ঢুকে পড়া বেমানান।

সর্বশেষে বলতে চাই It's a classic
Profile Image for Camelia kongkon.
29 reviews13 followers
February 6, 2023
".....কোকিলও কি দেশদ্রোহী যদি সে আপন মনে কারো
নাম ধরে ডাকে
কুলও দন্ডিত হবে যদি কিনা সেও কোনো নিষিদ্ধ কবরে
একা নিরিবিলি ঝরে
আর এই আকাশও যদি বা তাকে অকাতরে দেয় স্নিগ্ধ ছায়া,
তাহলে কি আকাশেরও দেশপ্রেম নিয়ে কেউ
কটাক্ষ করবে অবশেষে!"


🍁সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রান।
সুহান রিজওয়ানের প্রথম বই এটি। এবং প্রথমেই বাজিমাত করে দিলেন লেখক। মুক্তিযুদ্ধ মনেহয় প্রায় বাঙালিরই একটা আবেগের স্থান। কিভাবে ছাত্র থেকে চাষা, মধ্যবিত্ত থেকে ক্ষমতাবানেরা যুদ্ধে যাত্রা করেছিলো এসব বিবরণ সবসময় চোখে পানি নিয়ে আসে।
তবে সত্য বলতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো তথ্যবহুল বই খুব কমই আছে। ইতিহাস এতো সুন্দর করে বর্ননা করা যায় এই বই না পড়লে সেই কথা আসলেও বিশ্বাস করা যায়না।
নবম দশম শ্রেণীর ২০১৯ সালের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইটি যারা আমরা পড়েছিলাম এদের সবচে অপছন্দের চ্যাপ্টারই বোধহয় প্রথম চ্যাপ্টার ছিলো। এতো এলোমেলো করে ইতিহাস ছিলো তাতে বাংলাদেশের। খুব বোর হতাম। যাদের কথা এই বইতে বলা হয়েছে তাদেত চিনেছিলাম পাঠ্য বই থেকেই।মুখস্থ করার স্বার্থে যাতে এক্সামে মার্ক ভালো আসে।
অথচ এই বইতে সেই সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর, কামরুজ্জামানের গল্পই পড়লাম।পড়েছি মোশতাক আহমেদের বিশ্বাস ঘাতকতার কথা। জাহানারা ইমামের গল্প, তাজউদ্দীন আহমেদের ফুলের মতো পরিবার, আর ইতিহাসে উল্লেখ না থাকা তারেকুল আলমের কথাও। কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো সেই রাতে তারেক?
খালেদ মোশাররফ, কর্ণেল হায়দারের করুণ পরিনতির বর্ণনা।
এটা যেনো মুক্তিযুদ্ধের তাজউদ্দীন আহমেদের সেই হারিয়ে যাওয়া কালো ডায়েরিই, কোনো অলৌকিক বলে সুহান রিজওয়ানের হাতের মাধ্যমেই ফিরে এসেছে।
মুক্তিযুদ্ধের গল্প বা উপন্যাসই আমার বেশি ভালো লাগে, সেই হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের পরের গল্প কখনোই হজম করতে পারিনা। ওটা অনেক বড় একটা কালো অধ্যায়। ষড়যন্ত্র আর কুমন্ত্রণার অধ্যায়। রাজনীতির কালো সময় কারোরই পড়তে হয়তো ভালো লাগেনা। তবে,এ বইতে পড়তে পড়তেই কেঁদেছি। মানুষকে বিশ্বাস করতে বড় ভালো লাগতো যে তাজউদ্দীনের সেই তাজউদ্দীনের কি অভিশপ্ত মৃত্যু!
বঙ্গবন্ধুর থেকেও আমার কাছে মনে হয়েছে স্বল্পভাষী এই তাজউদ্দীনই আমাদের বাংলাদেশ ফিরিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদের কাছে।
নরম মনের মানুষটা বেলী ফুলের উষ্ণ গন্ধের মানুষ, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ আজও আপনাকে অনেক ভালোবাসে।

সুহান ভাইকে(ভাই বলেই সন্মোধন করলাম) ধন্যবাদ। শেষে বই লেখার রেফারেন্স গুলো পড়লাম। ভবিষ্যতে যদি কোনোদিন এমন বই অন্যকেউ লেখে তবে জানবেন সেখানের রেফারেন্সে "সাক্ষী ছিলো শিরস্থান" এর নামও থাকবে।
ইমোশনাল হয়ে নিতান্তই নিজের পাঠপ্রতিক্রিয়া জানালাম। এটাকে রিভিউর পর্যায় ফেলানোর সাহস আমার নেই।
হ্যাপি রিডিং❤️
Profile Image for Ruhin Joyee.
51 reviews149 followers
March 5, 2018
স্বাধীনতার পর পর তাজউদ্দিন আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধুর মধ্যে সৃষ্টি হওয়া দুরত্ব সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভে বঙ্গবন্ধুর অবদান সবাই কমবেশি জানলেও তাজউদ্দিন আহমেদ কি করে শক্তভাবে হাল ধরে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ঐ কঠিন সময়ে, এ কাহিনী বেশিরভাগের কাছেই অজানা। মুলধারা ৭১ বইটাতে তাজউদ্দীন আহমেদের সেই অবদান পুংখানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ আছে। এই বইটি এক্সপ্লোর করেছে সেই যাত্রার আবেগের দিকটি। কেমন অনুভব করতেন তাজউদ্দীন সেই সকলের মাঝে একাকী দিনগুলোয়? আমরা তা কোনোদিনই জানতে পারবো না; তবু সুহান রিজওয়ানের এই বইটি আমাদের কল্পনার দ্বার খুলে দেয় এবং আমাদের মনে করায় যেন আরেকটু জানতে পারলাম এই মহান নেতাকে।

স্বাধীনতার আগের সময়টুকুকে অনেক গুলো আলাদা চরিত্রের চোখ দিয়ে দেখা হয়েছে বইটির প্রথম অংশে। এই অংশটুকু আমার একটু খাপছাড়া লেগেছে। কোনো কোন চ্যাপ্টারের শেষে মনে হয়েছে যেন সাহিত্য ভ্যালু বাড়ানোর জন্য কিছু উপমা জুড়ে দেয়া হল। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট যত্ন সহকারে করা হয়নি। বইটার কন্টেক্সটের বিস্তৃতি করতে গিয়ে যেন একটু এলোমেলো হয়ে গেছে। কিন্তু স্বাধীনতার পরের অংশে এই অনুভূতি আর হয়নি, তরতরিয়ে এগিয়েছে বই। খন্দকার মোশতাক, ফারুক রহমানদের কুকর্মের কাহিনী পড়ে ঘৃনায় রি রি করে ওঠে শরীর। আর এক অদ্ভুত বেদনায় ছেয়ে যায় মন, বঙ্গবন্ধু এবং চার নেতার করুন পরিনতির কথা ভেবে। এই পাঁচ জন বেঁচে থাকলে আজ বাংলাদেশ কেমন হত তা নিয়ে ভাবা আমি বন্ধই করতে পারিনা। খারাপ লাগে সেই 'হতেও পারতো' বাংলাদেশের জন্য।

সুহান রিজওয়ানের লেখনী আরও পরিপক্ক হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে এবং তিনি ভবিষ্যতে আমাদের এরকম আরও উপন্যাস উপহার দেবেন আশা করি। এই বইটি আমি মনে করি প্রতিটি বাংলাদেশীর পড়া থাকা উচিত।
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
February 11, 2021
বইটা পড়তে পড়তে ভেবেছিলাম বিশাল এক রিভিউ নিয়ে হাজির হবো!!
তবে যে বই নিয়ে আমার এতটা আবেগ জড়ানো আছে, যে ব্যক্তির জন্য আমি হয়ে উঠেছিলাম উৎকন্ঠিত, যে বইয়ের সাথে জড়িয়ে আছে আমার হাসি-কান্না,, সে বই নিয়ে রিভিউ লিখে আমার অনুভূতির বিন্দু পরিমাণ প্রকাশ করতে পারব বলে মনে হয় না

এই যে তাজউদ্দীন, এই লোকটার মতো সৎ, নিষ্টাবাদ, সাহসী, দেশপ্রেমিক, কর্মঠ, সত্যবাদী একজন নেতা আর কোনো জন্মে বাংলাদেশে আসবে বলে মনে হয় না... এই লোকের প্রতি বেশ আবেগ কাজ করেছে যতক্ষণ পড়েছি!!
এখন "তাজউদ্দীন" যেন এক আবেগের নাম আমার কাছে.... এই মানুষটার প্রতি কতটা মুগ্ধ, কতটা অবাক তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব

আমি শুধু ভাবি "আজ দেশটা আরো কিছুটা সুন্দর হতো যদি সেদিন জেলে ঐ নেতাদের হত্যা করা না হতো!"
তবে স্বাধীনতা অর্জনের পরের এত এত রক্তের স্রোতে যেন "স্বাধীনতা" মুখ থুবড়ে পড়েছিল

এই বই শুধু ব্যাক্তি তাজউদ্দীন নিয়ে নয়!
এই বইয়ে উঠে এসেছে স্বাধীনতা কালীন ভেতরর রাজনীতির গল্প(যতরকমের ষড়যন্ত্র চলছিল সব), দলের ভেতরের কোন্দল, স্বাধীনতা কিভাবে অর্জিত হলো, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা.....
সুতরাং এই বইটি যেন পুরো বাংলার কথা বলে....
স্বাধীনতা সময়ের, পরের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা পড়তে এই বইটি আবশ্যিক
Profile Image for Amlan Hossain.
Author 1 book67 followers
February 20, 2015
ইতিহাস বড় নির্মম। সে শুধু বিজয়ীদের মনে রাখে, বিজিতদের আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলতে তার এতটুকু কুন্ঠা নেই। বসুন্ধরা বীরভোগ্যা, সিংহাসনের অধিপতিই বেঁচে থাকেন ইতিহাসের পাতায়। আর যারা সিংহাসনে বসান, বিস্মৃতিতে তলিয়ে যাওয়াই তাদের অমোঘ নিয়তি।
তাজউদ্দিন আহমেদকে কতটুকু চিনি আমরা ? চোখ মুদলে হয়তো ভেসে ওঠে কালো চশমা আঁটা গৌরবর্ণের একজন স্মিতহাস্য মানুষের ছবি। তাঁকে কতটুকু জানি আমরা ? শুধু জানি জেলহত্যাকাণ্ডের নির্মম বলি হতে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কুশীলবকে। ব্যস, এটুকুই। এর বেশি জানার তাড়নাও হয়তো বোধ করিনি কখনও। মাঝে মাঝে সেটা একটু মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও আবার তলিয়ে গেছে যাপিত জীবনের কৃষ্ণগহবরে। সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ- আমাদের সেই লোকটিকে চেনায়। যাঁকে না জানলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্নিগর্ভ সময়ের কাহিনি। যাঁকে না চিনলে জানা হবে না বাংলাদেশের কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফোটার গল্প ।

ইতিহাসের পথ সরলরেখায় চলে না। তার পথ বহতা নদীর মতো আঁকাবাঁকা, আবার কখনও দুর্গম গিরিখাতের মতো অননুমেয়, সামনে কোন গহবর মুখব্যাদান করে আছে আগে থেকে বলা মুশকিল। ইতিহাসের বহুঘাত সমীকরণে চলকও অনেক বেশি, যেগুলোর কোনোটাই উপেক্ষনীয় নয়। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে যেমন বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যায় না, তেমনি তাজউদ্দিনকে বাদ দিয়ে কল্পনা করা যায় না সেই অস্থিতিশীল সময়টা। কিন্তু সেই জটিল গোলকধাঁধার আদি পথটাকেই অনেকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলেন। এতোদিনের সেই অপরিশোধিত ঋণ চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে হয়ে গিয়েছিল পর্বতপ্রমাণ। সাক্ষী ছিলো শিরোস্ত্রাণ- ইতিহাসের সেই দায় মিটিয়েছে পরম মমতাভরে, ঘুঁচিয়েছে অনেকদিনের আক্ষেপ-অতৃপ্তি।
একটা উপন্যাসের সার্থকতা কী? আরেকটু যদি নির্দিষ্ট করে বলি, একটা ঐতিহাসিক উপন্যাস আসলে কখন সফল ? সুখপাঠ্য হওয়াটাই কি তার সার্থকতা ? বা ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ত থাকাটাই কি সবকিছু? সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ- এই দুই মাপকাঠিতে কতটুকু উৎরে গেছে ? অন্তত প্রথম মানদন্ডে সেটিকে পূর্ণ নম্বরের কাছাকাছি দেওয়াই যায়। উপন্যাসটা অনেকটা রোলারকোস্টারের মতো, সময়ে সময়ে বাঁক নিয়েছে তীব্রভাবে। পাতায় পাতায় ছড়িয়ে থাকা আবেগ-রোমাঞ্চের নাগরদোলায় উঠে বসলে পাঠকের সাধ্য কী সেখান থেকে নামবার ? ঔপন্যাসিক তাই পাঠককে নিজের অজান্তেই তুলে নিয়ে যান রূপকথার সেই আকাশছোঁয়া কল্পদ্রুমে, উপন্যাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেখান থেকে পাঠকের নামা দুঃসাধ্যই।


তারপরও কথার পিঠে কথা থেকে যায়। উপন্যাসের পূর্বভাগ যেটি, সেটির বিপুল বিস্তারে কখনও পাঠক খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন। সেখানে অসংখ্য চরিত্রের ছড়াছড়ি, কিন্তু কোনোটিই তেমন বুনোট বাঁধতে পারেনি। এই জায়গাটা একটু বাড়তি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। বোঝাই যাচ্ছিল, নাটাইটা আছে তাজউদ্দিনের হাতে, কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে সেটা যেন খানিকটা হাতছাড়া হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ক্যানভাসের অনেকটুকুই লেখক তুলি দিয়ে আঁকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যে তাজউদ্দিনকে চেনার জন্য চিত্ত পিপাসিত, সেটা যেন পুরোটা মেটেনি পূর্বভাগে। উত্তরভাগে অবশ্য সেই তৃষ্ণাপূরণ হয়েছে ভালোভাবেই, তাজউদ্দিন এখানে অনেক বেশি বর্ণিল, অনেক বেশি মানবীয়।
কিন্তু ব্যক্তি তাজউদ্দিনকে চেনার যে দুর্মর আকাঙ্খা, সেটা কতখানি পূরণ হয়েছে? ছেলেবেলায় মুকুট নামের প্রতিবাদী ছেলেটি কীভাবে দিনে দিনে মহীরূহ হয়ে উঠল? জোহরা তাঁর জীবনে কী করে এলো? রাজনীতিবিদ , প্রশাসক এমনকি পিতা তাজউদ্দিনও তার অনেকটুকু ছায়া বিস্তার করে ছিলেন পুরো উপন্যাসে। কিন্তু প্রেমিক বা স্বামী তাজউদ্দিনকে কতটুকু জেনেছি আমরা ? যে জোহরা সারাজীবন এই কর্মপ্রাণ মানুষটির পাশে দাঁড়িয়ে সব ঝড়-ঝঞ্ঝা সয়েছেন, তাঁকেই বা আমরা কটুকু জেনেছি ? এখ��নে হয়তো পাঠ�� হিসেবে একটু অতৃপ্তি থাকতে পারে।
ইতিহাস ও কল্পনা কখনও কখনও সাংঘর্ষিক হতে পারে। পরিমিতিবোধের লাগাম ধরে রাখতে না পারলে সময়ের ক্যানভাসে কল্পনার পোঁচ দেওয়াটা হতে পারে আত্মঘাতী। সেই পরিমিতিবোধে লেখক দুর্দান্তরকম সফল। বাস্তব বেশ কিছু চরিত্রের মতো তারেকুল আলম, আলাউদ্দিন বা আবদুল বাতেন নামের কাল্পনিক ব্যক্তিরাও এখানে অনেকটা অংশ জুড়ে আছেন। তবে তাদের কেউই মূল কুশীলব নন, গল্পের প্রয়োজনে তারা এসেছেন। আবার গল্পের প্রয়োজনেই তারা বিদায় নিয়েছেন। লেখক তাদের দিয়ে তৃতীয় আম্পায়ারের ভূমিকায় বলাতে চেয়েছেন সময়ের নিরাবেগ ইতিহাস। আলাউদ্দিনরা তাই সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য ভূমিকাহীন মানুষদের প্রতিনিধি। সেই বাষ্পরুদ্ধ সময়ের অসংখ্য অসহায় সাক্ষী।
সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ এভাবেই ঠাসবুনোনী ভাষায় বলে চলেছে ৭১ থেকে পরবর্তী চার বছরের কাহিনি। ইতিহাসের মনযোগী পাঠককে উসকে দেবে অতীত খুঁড়ে আরও মণিমাণিক্য খোঁজার। তবে খুব সম্ভবত, ইতিহাসবিমুখ পাঠকের কাছেও অনেকদিনের ঝাপসা হয়ে অস্পষ্ট একটা ছবি একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, ঘমিয়ে থাকা ধূসর নিউরোনে পলকা হলেও একটু টোকা পড়বে। লেখক, বোধকরি এখানেই শ্লাঘা অনুভব করতে পারেন অনেকটা।





Profile Image for মোহতাসিম সিফাত.
180 reviews50 followers
August 17, 2025
তাজউদ্দীন আহমেদকে নিয়ে লেখা খুব সুন্দর একটা বই। বাংলাদেশের যেকোনো ইতিহাস লেখা হলেই এই মানুষটাকে কেন যেন সবাই এড়িয়ে চলে। এই বইটা অনেক দিক থেকেই কমপ্লিট মনে হয়েছে, তবে প্রকাশকালীন সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ এড়ানোর জন্যে কিছু জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচলিত তথ্য পেয়েছি। বইটা ২০২৪ পরবর্তী সময়ে লেখা হলে কেমন হতো ভাবছি।

সুহান রিজওয়ানের লেখা, কাহিনী চিত্রায়ন, উপমা ব্যবহার, উপস্থাপনা সবই সুন্দর। এই বইটা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে ধরতে পারি। সকলের পড়া উচিত।
Profile Image for Hasnat Sujon.
36 reviews15 followers
February 19, 2018
বইটা কিনেছিলাম অনেক আগেই। পড়া হয়ে উঠেনি। বলা ভালো পড়ার সময় করে উঠতে পারিনি।

শাহবাগ থেকে মহাখালীতে আমার অফিসের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। ঢাকা শহরের যানজটের জন্য ৮ কিলোমিটার যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। পৃথিবীতে কি আমরাই একমাত্র দেশ, যেখানে দূরত্ব সময়ে মাপা হয়? অফিসে গেলে গবেষণা কর্মে হাতেখড়ি দিতে ব্যস্ততা, বাসায় ফিরলে পেপার (আমার বাংলার মাঝখানে ইংরেজি ব্যবহার করতে ভালো লাগে না। বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রের চেয়ে অবশ্য পেপার-ই ভালো) লেখা নিয়ে ব্যস্ততা। এই দুয়ের মাঝখানে আমার গল্পের বই পড়ার সময়টুকু হচ্ছে মাঝখানে যানজটে বাসে বসে থাকা সময়টুকু। ৪৩৫ পৃষ্ঠার পুরো বইটা শেষ করেছি এই যানজটে বসে।

একটা বই ভালো কি না, তা বোঝার একটা সহজ উপায় আছে। বইটি পড়া শেষ করার পর আপনার যদি মনে হয়, আপনি লেখকের প্রতি তীব্র মমত্ববোধ অনুভব করছেন, তবে বইটি অবশ্যই ভালো। সুহান রিজওয়ান, শাহবাগ আসলে চা খেয়ে যাবেন , আমার এখানে। দাওয়াত রইলো।

পুরো একটা টালমাটাল সময় এই দেশটাকে যে ব্যক্তি আঁকড়ে ধরে আগুনের নদী পাড়ি দিয়েছিলেন কাগজের নৌকায়- সেই তাজউদ্দীন আহমেদকে নিয়ে লেখা। সময়টা আমাদের সংগ্রামের। সাথের কুশীলব আছেন দেবতার আসনে বসা বঙ্গবন্ধু আর সাপের আসনে বসা খন্দকার মোশতাক।

পুরো বইটা ছোট ছোট অংশে ভাগ করা। একেক জনের বয়ানে একেক ভাগ। সকল বয়ান মিলে পুরো উপন্যাস- এক কাহিনী। কিছু জায়গায় মনে হয়েছে এই বয়ানগুলো বেশি দ্রুততার সাথে এগোচ্ছে। আরেকটু যদি বর্ণনা দেয়া যেতো, আরেকটু যদি গভীরে যাওয়া যেতো- মনে হয় স্বাদটা আরেকটু ভালো হতো।

তাজউদ্দীনকে নিয়ে আর কোন উপন্যাস লেখা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। হোক বা না হোক, বাঙালীদের জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য।
4 reviews1 follower
February 12, 2015
‘আনপুটডাউনেবল’।
প্রথমেই চমকিত হলাম A Guy Fawkes night rhyme এর শুরুর ৬ লাইন পেয়ে। V for Vendetta দেখা কেউ সেই লাইনগুলো ভুলতে পারবে কি? বুঝতে পারলাম লেখক ‘আমাদেরই লোক’।
এরপর শুরু হল ‘রোলারকোস্টার’ রাইড।৭১ এর মার্চ থেকে রক্তঝরা ৭৫। পূর্ব খণ্ডে জানা হল একটি জাতির জন্মের ইতিহাস।উত্তর খণ্ডে এসে জানলাম সেই ইতিহাস মুছে ফেলবার ইতিবৃত্ত। লেখক যথার্থই এই সময়কে সমীকরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর চলকগুলো স্থির থাকে না। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো গিরগিটি আছে। আছে ছদ্মবেশী সরীসৃপ। মুক্তিযুদ্ধ আর তাঁর ঠিক পরের সময়ের দলীয়, জাতীয় আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি যেন কল্পিত Game of Thrones কেও হার মানায়।
উপন্যাসটির নায়ক তাজউদ্দীন আহমদ। ‘হেইট পলিটিক্স’ প্রজন্মের( আমি নিজেও আছি এই দলে) কাছে তাজউদ্দীন অস্পষ্ট চরিত্র। তাই এই উপন্যাসটি ‘ফাইল হাতে নটোরিয়াস’ তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আমাকে নতুন করেই পরিচয় করিয়ে দিল - বলব। হাজার পলিটিশিয়ানের ভিড়ে স্টেটসম্যান তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন সর্পিল সময়ের সমীকরণের ধ্রুবক। নীতির প্রশ্নে কেউ তাঁকে টলাতে পারে নি।
খন্দকার মোশতাক এই উপন্যাসের মূল ভিলেন। প্রতিক্রিয়াশীল মোশতাক শুরু থেকেই তাজউদ্দীনের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। মোশতাকের বাহ্যিক চরিত্রে ভাঁড়ামোর ইঙ্গিত স্পষ্ট – প্রধানমন্ত্রীর পদ না পেয়ে কেঁদেকেটে মক্কায় যেতে চাওয়া, বেগম মুজিবের পা ধরে শিশুর মত কান্না, অকারণে হে হে করে হেসে তেল দিয়ে কথা বলা ইত্যাদি। ভিতরে ভিতরে সে মহা ধুরন্ধর এক পলিটিশিয়ান। আমি বলব তাজউদ্দীনকে দূরে ঠেলে দিয়ে আর মোশতাককে বুকে টেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভুল করেছিলেন। এই ভুলের প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

জিয়াউর রহমান, শেখ মণি, ভাসানী এঁদের সম্পর্কেও অনেক ‘ইন্টারেস্টিং’ তথ্য জানলাম।

উপন্যাসটি শিরোনামসহ ছোট ছোট চ্যাপ্টারে লিখা। শিরোনামগুলো অসাধারণ!

বইয়ে একটা তথ্যগত ভুল পেয়েছি। বেতার তরঙ্গ ইথারে ভাসার কথা দুইবার এসেছে। যাই হোক, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা ভুল হলেও সাহিত্য হয়ত ইথারের প্রতি ক্ষমাশীল। আরেকটা জিনিসটা রিভিউতে আসা ঠিক না তারপরেও বলছি – যুক্তবর্ণের ল অনেক জায়গায় আসে নি। গ্লোব-গোব, প্লেন-পেন,শ্লেষ – শেষ, আল্লা – আলা ইত্যাদি।
Profile Image for Sarah Haque.
427 reviews105 followers
December 2, 2018
Finished this a few hrs ago. It's a bit overwhelming for me because I'm usually sensitive regarding the history of Bangladesh. What I liked the most about this book was the alternating viewpoints. Be it war or country or self interest, everyone has their own version of struggle and that made this journey wonderful.

I had been detached from history for a while. Reading this book felt like remembering it all over again, connecting the dots between what I had known earlier and the gaps I had.

Certainly this is not a nonfiction or couldn't be used as reference but the feelings and emotions behind this book have to be authentic. The effort behind this piece is remarkable. It felt so sincere.
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
March 7, 2022
"একদম অজানা অচেনা এক একজন মানুষও কীভাবে যেন স্মৃতির অংশ হয়ে যায়।" যারা পড়ুয়া তারা জানে এ লাইন কতো সত্য। এই যে এতো বই,এতো চরিত্র, তার কিছু কিছু আমাদের সাথে রয়ে যায়। চিনি না জানিনা, অথচ সুক্ষ্ম এক মেলবন্ধনের সূচনা হয���।
এই বইয়ে যাদের নাম আছে,তাদের বেশিরভাগের সাথে পরিচয় ইতিহাস বা বাবা-মায়ের বিষ বই আউটবই থেকে। হয়তো একটু একটু আলাদাভাবে সবাইকে নিয়ে পড়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে সবাইকে এক জায়গায় এনে পড়া হয়নি। সুহান রিজওয়ান কেনো প্রিয় কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি এই বই ধরিয়ে দেবো। নন-ফিকশন নয়,তবুও ইতিহাসের হাত ধরে চলা এই বই যে কতো আপন মনে হবে,তা শুরু থেকেই বুঝা যায়৷ বইয়ের শেষে সহায়ক এক গ্রন্থ তালিকা আছে। আমার গোল হলো এই সবগুলো বই সংগ্রহ করে পড়া।

হোম! "দিস ইজ মতিউর রহমান।... অ্যান্ড আই এম গোয়িং হোম।"-একটা লাইন যে শরীরের প্রতিটা কোষে আলোড়ন তুলতে পারে,জানা ছিলোনা। খুব ছোট বেলাতে মতিউর রহমানকে নিয়ে সিনেমা দেখেছিলাম একটা।কালে কালে নাম ভুলে গেছি।কিন্তু ধুম করে সে সিনেমার দেখার পরের অনুভূতি চলে এলো।
ঠিক এমনই কতো অনুভূতি জমা করে রাখা এই বইয়ে!ইতিহাস, মানুষ সবাইকে আপন করে দিয়ে গেলো। রাগ,অভিমান,মায়া,বিজয়ের খুশি, ভাঙনের দুঃখ সব মিলিয়ে অসাধারণ। এই নিয়ে ২য় বার পড়া এই বই আমার,ভবিষ্যতে আরো পড়বো।
Profile Image for Naser  Hossain.
26 reviews48 followers
February 2, 2016
Reading this book was long overdue, yet as a product of a small, globally neglected patch of land somewhere in South Asia that the Chinese literally call " Mèngjiālā (pronounced: Munjala)" or "The Flooded Plains", this was just one of those things that you had to get finished. This is a story about Bangladesh, or more like the meteoric rise and fall of the architects of the nation - with a special attention given to one, líder político in early South Asian politics, an obscure character named Tajuddin Ahmed.

First, I express my respect for the author to research and write about an issue of such grave but poorly rewarded consequences as Tajuddin Ahmed. Having been born in Bangladesh and magnetized by the chaotic, bloody beginning of the land I call "home", I for one have been overcome with nationalism from time to time- only to be tied down by earthly comfort and procrastination. So researching into the shroud that surrounds the dark chapters of our country has not materialized (yet) in my daily routine. But here is a scrawny little fella from my alma mater who took on the challenge and actually accomplished it, bringing about tiny memories and shivers down the spines of all those like me who wanted to research, write or read more about Bangladesh before and after 1971, and especially about Tajuddin, arguably without whom I would not be able to call myself a Bangladeshi.

Onto the content of the book then. My first impressions after reading a few chapters was that the language and the literary structure was a bit "rushed", as if the author was trying to pack a lot of info into the pages a bit too hastily. Then the issues about the publishers and the printing house was brought to my attention by a random stranger, and it all made sense. If you are looking for a grammatically and historically immaculate novel full of statistics and numerics, this is not the book for you. But if you want to strengthen the inner belief you have about Bangladesh producing heroes once, heroes that fought for and stood for what they believed in against unimaginable odds, heroes that were unequivocally loyal and righteous to the cause of the land, the people and the idea of Bangladesh- then this book will bring that secret, unapologetic smile to your face :) The author's weakness in binding contemporary yet discontinuous string of events at the beginning of the book might disappoint at first, but be patient as the book grows on you as the chapters progress. Even if you have always had a vague, somewhat misconstrued idea about what happened, what went wrong with one of the most promising nations of the 20th century at its inception- get ready to ride a bandwagon of surprises, emotions, joy, deceit and melancholy. Although, you might already know what happens at the climax, the book will still make you feel a little sad inside- thinking about all that could've been done or should've been done to right the wrong in this troubled nation.

As I write this, a jumbled up and angry storm rages outside, reminding me, strangely about the epic space saga "Star Wars". The same kind of storm that was in the heart of the forgotten second in command of the free Republic of Bangladesh right after independence was won. Battling enemies inside and outside of his ranks, this humble character proved his mettle through superior diplomacy and unquestionable loyalty to the "Anakin Skywalker" of Bangladesh, Shaikh Mujibur Rahman...perhaps even silently screaming out at the slow decrepit spiral down- "You were the chosen one! You were to bring balance to the force, not leave it in darkness". The book brings to light the character conflict between two great friends, aides and compadres of each other we always heard about but never truly explored; the book talks about the emotional bonding and betrayal that Tajuddin felt when the country he saw nucleate started disintegrating ...one fibre at a time, as hyenas bit into it's inner core. Mixing political topography with the stories of everyday characters, the author tries to "fictionalize" an apparently bloody, non-fictitious set of events in order- and he does a decent job doing that. We are introduced to everyday characters, named like hundreds of other average Bangladeshis, perhaps future auteurs, politicians, singers, political activists in making and are encouraged to look through their eyes into the lives of the chess-pieces on the board. The author goes a long way to explain the ultimate betrayal to the people of Bangladesh, sadly from almost everyone but the few good men- the men who lead Bangladesh into victory and then fell into an unfair incarceration of deceit and nepotism. But ultimately, what I love most about the book is how the rollercoaster that is Bangladesh is given a personal touch through small segments describing the innate feelings of the author, the personal moments and undulation of emotions that the author felt in the many lonely, absconding afternoons and evenings as he made his way back to his residence...almost like a mirror image of a person that I *used to be as I slung my head down while walking back home through Dhaka University. "These roads, these very roads have seen the rise and fall of so many...what am I doing here? Why is that Tajuddins are seldom seen these days? Are they even relevant today or should they have adopted more Machiavellian ways? " So many unanswered "What ifs" clouds the mind of the author and the readers- and there in is the success of the book, that this book made you think...think about what could've been..think about heroes lost, but battles won.

Thank you Shuhan!
Profile Image for Amanna Nawshin.
191 reviews57 followers
October 25, 2017
প্রশ্নঃ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাম কি ছিলো?
উত্তরঃ তাজউদ্দীন আহমেদ।
এই বই পড়ার আগে তাজউদ্দীন সম্পর্কে আমার জ্ঞান ওইটুকুই ছিলো, এখনো যে অনেক জেনে গিয়েছি তাও না, তবে মানুষ তাজউদ্দীন এর যে চিত্র লেখক এঁকেছেন তাতে তিনি অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে কোন কিছু লিখার ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত ভয়ংকর একটা ব্যাপার, আর এই কাজ যারা করেন তাদের আমার সাহসী ব্যক্তি বলে মনে হয়। সেই হিসাবে লেখক সুহান রিজওয়ান একজন দুঃসাহসী; তিনি একই সাথে স্বাধীনতার আগের ও পরের গল্প, গল্পের নায়ক ও খলনায়কদের গল্পের মাঝ দিয়ে মানুষ তাজউদ্দীনের যে না বলা গল্পটি বলেছেন তা এক কথায় অসাধারণ। বঙ্গবন্ধুর মহীরূহের ছায়ায় চিরকাল থেকে যাওয়া এই কালো চশমা পরা চিরবিনয়ী মানুষটি যে কি অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের অধীকারি ছিলেন যে কিনা তার ব্যাক্তিত্ব গুনে হয়ে উঠেছিলেন প্রতিপক্ষের ত্রাস! তারপরো তাজউদ্দীন রা শুধু রয়ে যান পাঠ্যবইয়ের এক সংক্ষিপ্ত উত্তরে আর ইতিহাসের বড় বড় ঘটনার আড়ালে চলে যায় তাঁদের পাহাড় সম ব্যক্তিত্ব! “সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ” তাই এক লিখিত সাক্ষী হয়েই সাক্ষ্য দিয়ে যাক “ওয়ান ম্যান আর্মি” তাজউদ্দীন আহমেদের পক্ষে, আর বেঁচে থাকুক ইতিহাসের পাতায় যুগের পর যুগ!
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
June 12, 2021
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে বঙ্গবন্ধুর নামে পরিচালিত হয়েছে সেটা সবাই জানেন। কিন্তু যুদ্ধের নয় মাস বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে কে চালালো দেশ? কে সংগঠিত করল মুক্তিযুদ্ধ? কে আনল বৈশ্বিক স্বীকৃতি? আবার স্বাধীন দেশে প্রথম ‘শহীদ' হলেন কে? উত্তর একটাই, মানুষটা তাজউদ্দীন আহমদ। যুদ্ধের পূর্বে, যুদ্ধকালীন এবং স্বাধীন দেশে এই মানুষটার ভূমিকার কথা জানাতেই তাঁর এক অনুরাগী লিখেছেন এই বইটা। একদিক থেকে বইটাকে বঙ্গতাজের জীবনী বলা যেতে পারে কিন্তু একটু খেয়াল করলেই পরিস্কারভাবে দেখা যায় বইটা কেবল এক ব্যক্তির জীবনী নয় বরং বইটা একটা সময়ের দলিল যখন মহাকালের গর্ভ থেকে জন্ম হচ্ছিল এক নতুন দেশের। বইটা বলেছে নতুন দেশটার জন্ম ও বেড়ে ওঠার সময়ের ধাত্রীরূপে কাজ করা মানুষের কথা।

লেখক যেমনটা বলেছেন বইটা কোনো ইতিহাসের বই নয় বরং একটা উপন্যাস। বইটা ইতিহাসের বইয়ের মতো পদে পদে রেফারেন্স দেওয়া কাঠখোট্টা কোনো বই না যা কেবল আমাদের সামনে তথ্য-ই উপস্থাপন করে যাবে। বরং বইটা উপন্যাসের আদলে লেখা একটা ইতিহাসের বই যেখানে লেখক ঐ সময়ের ইতিহাসের তথ্যগুলোর নির্যাস নিয়ে নিজের কল্পনাকে বেশ খানিকটা উন্মুক্ত করেছেন।

তো কেমন লাগলো বইটা? একবাক্যে বললে দু-একটা ব্যাপার ছাড়া পুরো বইটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা লেখক যে উদ্দেশ্য নিয়ে বইটা লিখেছেন বলে তাঁর ভূমিকাতে উল্লেখ করেছেন, ( তাজউদ্দীন সম্পর্কে পাঠককে আগ্রহী করে তোলা, ইতিহাসে তাঁর অবস্থানকে যাচাই করা) আমাকে দিয়ে তাঁর সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে।

কি কি ভালো লেগেছে তার তালিকা করতে গেলে প্রথমেই আসবে বইটার নামকরণের কথা। ‘ সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ ‘ নামটাই যেন বইটার সারমর্ম বলে দিচ্ছে। লেখক তাজউদ্দীনের ভক্ত হলেও তিনি ইতিহাস সচেতন, তাইতো তাজউদ্দীনকে সেনাপতি বানানোর কোনো চেষ্টা তিনি করেন নি। বরং তাঁর তুলনা দিয়েছেন সেনাপতির শিরস্ত্রাণের সাথে, আর কেই না জানে, সেনাপতির পর তার শিরস্ত্রাণ-ই যুদ্ধ সবচেয়ে ভালোভাবে দেখে, সেনাপতিকে আগলে রাখার মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়! আবার সেনাপতি যখন বিজয়ী বেশে ফেরেন তখন কিছুদিন সেনাপতির মাথায় থাকলেও অচিরেই সিংহাসন, রাজদণ্ডের কাছে জায়গা হারায় শিরস্ত্রাণ! তো মুজিব যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি তখন তাজউদ্দীনের জন্য শিরস্ত্রাণের চেয়ে ভালো উপমা আর কি হতে পারতো!

এরপরে আসি মূল বিষয়বস্তুতে। সচরাচর ইতিহাসের বই বা ফিকশন যেখানে কোনো একজন ব্যক্তিকে আঁকড়ে ধরেই থেমে যায় বা একটা কালকে সম্বল করে সেখানে এই বইটা উৎরে গিয়েছে উভয়কেই। বইটা একদিকে যেমন শুধু এক ব্যক্তি তথা তাজউদ্দীনকে ধরেই থেমে থাকে নি আবার অন্যদিকে শুধু যুদ্ধ বা যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থায় সীমাবদ্ধ না থেকে তুলে ধরেছে পুরো সময়টা। মোটামুটি ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ উঠে এসেছে এখানে আর কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাজউদ্দীন থাকলেও এসেছে ঐ সময়ের সব ঐতিহাসিক চরিত্র এবং কিছু কাল্পনিক চরিত্র। ফলে একটা সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া গিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তীকালের বাংলাদেশের। আবার কেন্দ্রীয় চরিত্র তাজউদ্দীনের জীবনের নানা ছোটখাটো বর্ণনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জানা-অজানা বিষয় লেখক এত দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন যে তাজউদ্দীন ব্যক্তিটার উপর শ্রদ্ধা বাড়তেই থাকে পুরো বই জুড়ে।

তৃতীয়ত বলা যায় লেখকের বর্ণনাভঙ্গি ও ভাষারীতির কথা। ছোট ছোট শিরোনামে ভাগ করে ঘটনা বর্ণনার কৌশল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসাধারণ হয়েছে। কিছু কিছু অসাধারণ, কাব্যিক এবং বিষয়বস্তুর সাথে দারুণভাবে মিলে যাওয়া শিরোনাম তো মুগ্ধ-ই করেছে! শিরোনামে ভাগ করার ফলে বইটা পড়তে কোনো বিরক্তি আসে নি, একেক স্থান-কাল-পাত্রের ঘটনা জানা গিয়েছে একটা শিরোনামের ভেতরেই। লেখকের ভাষারীতির কথাও বলতে হয়। এই দিকটাতেও লেখক দশে দশ পাবেন। তাজউদ্দীনের প্রতি অনুরাগকে লেখক এক মায়াবী ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। কোথাও যুক্তি, কোথাও ভক্তি, কোথাও আক্ষেপ – লেখকের ভাষার ব্যবহার-ই তাঁর পরবর্তী কাজগুলোর প্রতি আগ্রহী করতে যথেষ্ট। ভুললে চলবে না লেখকের বইটা রচনার জন্য নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের কথাও। তাজউদ্দীন কন্যা সিমিন হোসেন রিমির সাথে সাক্ষাৎকার থেকে শুরু করে গ্রন্থতালিকায় দেওয়া তাঁর সহায়ক বইয়ের তালিকা তাঁর কাজটার প্রতি সিরিয়াসনেস বোঝাতে যথেষ্ট।

এবার একটু অন্যদিকে আসা যাক। প্রথমেই বলতে হয় লেখকের সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্রগুলোর কথা। আলাউদ্দীন, আব্দুল বাতেন, তারেক, মেসবাহদের প্রাসঙ্গিক রাখতে লেখককে যে প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে সেটা সহজেই বোঝা যায়। প্রতিটা ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহাসিক চরিত্রে যাওয়ার আগে আলাউদ্দীন বা বাতেনের উক্ত ব্যক্তির সাথে খাতির আছে পড়তে পড়তে একসময় বিরক্তি এসে যায়! আলাউদ্দীন এমন এক চরিত্র যাকে বঙ্গবন্ধু নাম ধরে ডাকে, তাজউদ্দীন একান্তে সাক্ষাৎকার দেয়, খালেদ মোশাররফ চেনে, গণভবনের প্রতিটা কর্মচারী যার ভাই লাগে! আবার মেসবাহদের বয়ানে মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তীকালের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে বিতর্কগুলোর জবাব বলাতে গিয়েও লেখক কিছুটা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন, ওদের বয়ানে এমন অনেক কথা দিয়েছেন যা ঐ সময় জানা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। ওভারঅল লেখকের ভাষার ব্যবহার ভালো লাগলেও কিছু শব্দ বা বাক্যাংশের পুনঃ পুনঃব্যবহার চোখে লেগেছে। মহাকাল জানে, সময়ের ঘড়ি, ইতিহাসের চাকা এরূপ কিছৃ শব্দাংশ। বলতে হয় লেখকের অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে যাওয়ার দিকটা নিয়েও। শাহাদুজ্জামানের মতো ‘ক্রাচের কর্নেল ‘ বানিয়ে না ফেললেও কিছু জায়গায় লেখক অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে গিয়েছেন বলে মনে হয়েছে।

তো বইটা কি আমি অন্যদের পড়তে বলবো? উত্তর হলো অবশ্যই। এমন তথ্যসমৃদ্ধ, মায়াময় ভাষার, বিস্তারিত বই সচরাচর পাওয়া যায় না। তো বইটা পড়ুন, আবিষ্কার করুন এক নতুন মানুষ, এক নতুন সময়কে।
Profile Image for শাহ্‌ পরাণ.
259 reviews74 followers
September 12, 2025
কী অসম্ভব দরদ দিয়ে একটা মানুষ একটা দেশকে ভালবাসতে পারেন; কী অসম্ভব দরদ দিয়ে একটা মানুষ একটা নেতাকে ভালবাসতে পারেন; কী অসম্ভব দরদ দিয়ে একটা মানুষ একটা দেশের সাত কোটি মানুষের জন্য ছোট্ট একটা বুকে এতখানি ভালোবাসা ধরে রাখতে পারেন - সেই কথা তাজউদ্দীন নামক মানুষটাকে না জানলে জানা হবে না কখনো।

মানুষের বিশালতার সীমা থাকে, থাকা উচিতও, কিন্তু কিছু কিছু মানুষের বিশালতা আকাশকে ছুঁয়ে যায়; এবং আশ্চর্যের বিষয়, সুবিশাল আকাশ আমাদের মাথার উপর থাকলেও যেমন আমাদের অগোচরেই থেকে যায় বেশিরভাগ সময়, তাজউদ্দীন নামক মানুষটাও আমাদের ইতিহাসে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনেকটা অগোচরেই রয়ে গেলেন।
Profile Image for Farhana.
325 reviews202 followers
April 2, 2017
বইটার কলেবর দেখে সালমান রুশদির Midnight's Children এর কথা মনে পড়ে। হিটলার কেন তার Mein Kampf এ
' প্রোপাগান্ডা ' শব্দটার উপর বারবার এত ফোকাস করেছে তা এখন বুঝতে পারা যায়। স্টেটসম্যান আর রাজনীতি 'জীবি' দের মাঝে যেভাবে রাজনীতি বারেবারে প্রকৃত স্টেটসম্যানদের ছেড়ে গিয়ে তাদের পথচলায় ক্রমশ নিঃসঙ্গ করে তোলে , কোহেনের Beautiful Losers থেকে একটা কথা নিজের ভাষায় বলতে গেলে, "When it falls on people from out of the trees
they think it's Rotten Fruit."
Profile Image for Ummea Salma.
125 reviews121 followers
August 18, 2020
যে বইয়ের পিছনের ৩-৪ পৃষ্ঠা জুড়ে দেওয়া রেফারেন্স এর তালিকা দেখে রীতিমতো বিস্মিত আমি, সেই বইয়ের সম্পর্কে দু চার কথা লিখতেও কিরকম হাত কাঁপে!

"সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রান" মূলত ঐতিহাসিক উপন্যাস যেখানে তাজউদ্দীন আহমদকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে '৭১ এর মার্চ থেকে শোকাবহ ৭৫' এর ঘটনা সাজিয়ে লেখা হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে গল্পের মত করে।

আজীবন পাঠ্যবইয়ে মুখস্থ বুলির মত "বাংলাদেশ এর অস্থায়ী সরকার এর প্রধানমন্ত্রীর নাম তাজউদ্দীন আহমদ বা ৩রা নভেম্বর জেলহত্যা দিবস" এতটুকু ই পড়ে এসেছি এবং সত্যি কথা বলতে তাজউদ্দীন সম্পর্কে আমার জানাশোনার দৌরাত্ম্য ও অতটুকু ই ছিলো। তার বর্ণাট্য অথচ ট্রাজিক জীবন বা তার ক্যারিয়ার আর তার শেষ পরিনতি সবকিছু সম্পর্কেই একটা আবছা আবছা ধারণা। এই বই পড়ে হয়তো পুরোটা না কিন্তু অনেক কিছু ই জানলাম এবং বারবার মনে একটা প্রশ্ন ই জাগছিল পুরোটা সময় জুড়ে যে এই মানুষটা যদি না থাকতো তাহলে কি আদৌও আমরা স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহন করতে পারতাম!?!
যাকে নিয়ে স্বয়ং ভুট্টো পর্যন্ত বলছিলো, "I am not afraid of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman. But you will see an average short guy behind him holding files, that guy is the ultimate danger"

তাজউদ্দীন কে নিয়ে শেষের পৃষ্ঠায় লেখকের নিজের প্রকাশিত অনুভূতি পড়ে মনে হয় এরকম টা তো আমিও অনুভব করছি সেই পুরোটা সময় জুড়ে-
"একজন সাধারণ মানুষ, যিনি পৃথিবীর অন্য কোনো দ্রাঘিমাংশেও হাতঘড়িতে বাংলাদেশের সময় ধরে রেখে নিজেকে আড়াল করে ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলেন সহকর্মীদের নিয়ে। একজন সাধারণ মানুষ, যিনি সময়ে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়তেন লাজুক কিশোরীদের মতো অথচ বাংলাদেশের শত্রুদের সামনে শুধু ফাইল হাতেই ছিলেন ভীষণ নটোরিয়াস। একজন অতি সাধারণ মানুষ, যাকে পড়া যায়, ধরে আনা যায় ইতিহাসের অ্যাস���ইনমেন্ট খাতায়, অথচ পাওয়া যায় না দ্বিতীয়বার। আজ, মৃত্যুর এত বছর পরেও তাজউদ্দীন নামের সে সাধারণ মানুষটি হেঁয়ালির মতোই অস্পষ্ট। কী ব্যাকরণে, কী ইতিহাসে।"

বইয়ের উত্তর খন্ডের চেয়ে পূর্বখন্ড আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়েছি। স্বাধীনতার আগের ঘটনা আমাকে ততোটা বেশি আলোড়িত করেনাই যতটা করেছে স্বাধীনতা পরবর্তী ৪-৫ বছরের ঘটনা।
শেখ মুজিবের দেশের মানুষ বা তার চারপাশের মানুষের প্রতি অতিরিক্ত আস্থা, মোশতাকের প্ররোচনায় পড়ে তাজউদ্দীনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ, মুজিবের উপর তাজউদ্দীন এর অভিমান বা তাকে বলতে না পারা যুদ্ধের সময়ের ৯ মাসের নানা ঘটনা, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, মোশতাকের ক্ষমতা দখল, চার নেতা সহ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, চার নেতাকে হত্যা!
খন্দকার মোশতাক কে আপনি যদি মীরজাফরের সাথে তুলনা করেন সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় স্বয়ং মীরজাফরকেও অপমান করা হয়ে যায়। এই লোকটার প্রতি রাগে ক্ষোভে আপনার রক্ত টগবগ করে ফুটতে বাধ্য হবে। যদি সেদিন চার নেতাকে এরকম নৃশংস ভাবে হত্যা না করা হতো তাহলে আজ বাংলাদেশ কোথায় কোন অবস্থানে থাকতো সেটা ভাবতেও বিষ্ময় লাগে।

অসম্ভব সুন্দর এই বইটার জন্য সুহান রিজওয়ান কে অসংখ্য ধন্যবাদ। তার কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
আপনার ইতিহাস বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহ আছে তাই এই বইটা আপনার জন্য মাস্ট রিড, আমি বলবো মোটেও না। যার বই পড়ার প্রতি এক বিন্দু ও আগ্রহ নেই এই বইটা তার জন্য ও মাস্ট রিড। এটা সবার ই পড়া উচিত। অন্তত দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে যে মানুষগুলো পর্দার আড়ালে থেকেও কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছে বা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেরও কোন রোলার কোস্টারের ভিতর দিয়ে ৪-৫ টা বছর অতিবাহিত হয়ে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে এটা সবার ই জানা উচিত।
Profile Image for Galib.
276 reviews69 followers
August 30, 2019
মুক্তিযুদ্ধ আর তার পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাকে ক্রোনোলজিকেল অর্ডারে সাজিয়ে উপন্যাসটা লেখা হয়েছে । ( মেইন ফোকাসে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ )

খন্দকার মোশতাক আর শেখ মনির জন্ম না হলে , কিংবা নভেম্বরে চার নেতাকে হত্যা করা না হলে আজ বাংলাদেশের ইতিহাসটা অন্যরকম হতে পারতো ।

খালেদ মোশাররফ সম্পর্কে খুব একটা জানতাম না । এখানেও অনেক কিছু নাই । কিন্তু , যেটুকুই আছে , ওটুকুতেই তার প্রেমে পরে গেছি ! :D

( পড়ার সময় কেনো বানান ভুল চোখে পরেনি ! অনেক যত্নশীল ছিলেন লেখক ।)
Profile Image for Habib Rahman.
74 reviews1 follower
May 13, 2024
রাস্তায় মিছিল নেমেছে। অমুক নেতাকে প্রশংসায় ভাসানো গগনবিদারী স্লোগানে কান পাতা দায়। উষ্কখুষ্ক চুলের এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে পাশ থেকে মিছিল দেখছেন । আজকে এদেশের ইতিহাসের পাতায় এক বিশেষ দিবস। মেহেরপুরের এক আম্র কাননে এই দিনেই সবুজ শ্যামল এ দেশকে শত্রুদের ধূসর ছোঁয়া থেকে রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন এদেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল চারটি নক্ষত্র। তিনি ভেবেছিলেন বোধহয় তা উপলক্ষেই মিছিল বেরিয়েছে। কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল যখন মিছিলের পিছনের দিকে ছোকরা বয়সী একজনকে কীসের মিছিল হচ্ছে তা জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন শহরের ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা মাদক ব্যবসার দায়ে জেলে গিয়েছিলেন। আজকে তার জেলমুক্তি হিসেবে মিছিল বের করা হয়েছে। এক ঢোক সেভেন আপ আর দুটো সিংগারার পাবার আশায় সবাই চলেছে দূর্নীতিবাজ এ নেতার বাসভবনে। এদিকে সেই বিশেষ দিবসের কথা কারো যেন মনেই নেই ।

তার চোখ যায় রাস্তার পাশে অবহেলায় বড় হতে থাকা একটি অপরিচিত গাছের উপর। প্রখর রোদ্দুরের মাঝে এক চিলতে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়া গাছটির ছায়া যেন অভাগা এ দেশের সেই চার নক্ষত্রের মত। যুদ্ধের টালমাটাল সময়ে ক্যাপ্টেনবিহীন,দিক হারানো জাহাজ যে নক্ষত্রদের আলোয় পথ সোজা রেখেছিল, লক্ষ্যে পৌছুবার পর সে নক্ষত্ররাই আজ যেন বড় ম্রিয়মান। তিনি হতাশ হয়ে পড়েন । এদেশের মানুষের স্মৃতি গোল্ডফিশের মত তা তিনি জানেন। নতুন ইস্যু পেলে পুরনো ইস্যু তাদের মাথায় থাকে না । তাই বলে এদেশে স্বাধীনতা যাদের হাত ধরে এসেছে তাদেরকেই মানুষ এভাবে ভুলে যাবে? ব্যর্থমনোরথে তিনি ফিরে চলেন। আচমকা তার মধ্যে কি যেন এক আলোড়ন হয়। এদেশের মানুষকে সেই চার নক্ষত্রের মাঝে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র সম্পর্কে জানাতে একটি বই লেখার চিন্তা তার মাথায় আসে। স্বাধীনতার বরপুত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরে যার অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল স্বাধীনতা আনয়নে তাকে নিয়ে লেখা মোটেই কোনো সহজ কাজ নয়। পর্বতসমান কঠিন সেই কাজটি তিনি সুচাড়ুভাবে সম্পন্ন করবেন একদিন। মানুষ তখন জানবে , আমাদেরও একজন তাজউদ্দীন ছিলেন।



সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ তাজউদ্দীন আহমদ এর গল্প। এ গল্প আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এ গল্পের কালি ছিল বঙ্গবন্ধুর ডান হাতের তর্জনী। যা দ্বারা লিখিত হয়েছিল আমাদের দেশের স্বাধীনতার মহাকাব্য। যে মহাকাব্যে পঙক্তি জুড়ে দিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ ।

বঙ্গবন্ধুর প্রবল ব্যক্তিত্যের আড়ালে থাকা এ মানুষটি প্রিয় নেতার অনুপস্থিতিতে যুদ্ধের সময় দেশকে আগলে রেখেছিলেন পক্ষীমাতার ন্যায়। যুদ্ধের পুরোটা সময় দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সংঘাত যেমন সামলেছেন তেমনি বহির্বিশ্বের করা নানা চক্রান্তও ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন দৃঢ় হাতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে আজীবন পরিচয় দেয়া মানুষটি যুদ্ধের সংঘাতকালীন সময়ে নেতার চেয়ার আগলে রেখেছিলেন নেতার আগমণের অপেক্ষায়। অবশেষে নেতা যেদিন আসলেন তার ঘাড় থেকে যেন পর্বতসমান এক দায়িত্ব নেমে গেল। কোথায় দুদন্ড হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন তার আগেই আরেক চক্রান্তের জালে আটকা পড়লেন। সুবিধাবাজ,চাটুকার ঘেরা বঙ্গবন্ধু ও তাকে ভুল বুঝলেন । মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যাবতীয় অর্জনে তাজউদ্দীন শেখ সাহেবকেই ঠেলে দিয়েছেন সামনে, ভুলেও কখনো নিজেকে সামনে আনেননি। তাই তো তার বিদায় যেন দল থেকে হলো অনাড়ম্বর ভাবেই। এর কিছুদিন পরে এ দেশ থেকেই তাকে সহ দেশের সূর্যসন্তানদের বিদায় করে দেবার চক্রান্ত শুরু হবে। পাকিস্তানী হানাদারদের সব চক্রান্তের জাল ছিন্ন করতে পারলেও তিনি হেরে যাবেন এবার। যে মানুষটির অবদান দেশের স্বাধীনতা আনয়নে এত বেশি তাকেই স্বাধীন বাংলাদেশে এভাবে বিদায় নিতে হবে, এর কোনো মানে হয়!



বইটি দুটি খন্ডে বিভক্ত। বইটির পূর্বখন্ডে মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই বেশি আলোচনা করা হয়েছে। ব্যক্তি তাজউদ্দীন এর কথা এখানে কমই এসেছে। উত্তরখন্ডে আলোচনা করা হয়েছে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে আগমণের পরবর্তীকালীন ঘটনা। তবে পুরো বই জুড়েই ছিল এদেশের স্বাধীনতায় মুকুট নামে পরিচিত তাজউদ্দীনের নানা অবদানের কথা। বইটি পড়া শেষে তাই প্রশ্ন জাগে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে প্রিয়জনহীন,অভিভাবকহীন অবস্থায় যেভাবে স্বার্থহীন ভাবে তিনি দেশ সামলেছেন অন্য কেউ হলে কি তা পারত? এ দেশকে কি তার থেকেও কেউ বেশি ভালোবাসতে পেরেছিল? মনে হয় না । ক্ষমতালিপ্সু খন্দকার মোশতাক তা হলে পাকিস্তানের সাথে আবার মিলে যেতে আমেরিকার সাথে যোগাযোগ করতেন না । কিংবা স্রেফ ব্যাক্তিত্বের দ্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ মণি তাজউদ্দীনের প্রকাশ্য বিরোধিতা করতেন না । স্বাধীনতার পরে দল থেকে, নেতার ছায়াতল থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার পরেও তাজউদ্দীন থেকে বেশি দেশকে কেউ ভালোবেসেছিল কি? মাওলানা ভাসানী তা হলে কীভাবে পারেন বঙ্গবন্ধুকে নিজের পুত্রসমান বলবার কিছুদিন পরেই মুজিবের খুনি মোশতাকের সাথে সহাস্য করমর্দন করতে। কিংবা সেই কালরাত্রিতে সপরিবারে খুন হওয়া দেশের অভিভাবকের মৃত্যুতেও কীভাবে জিয়া অবিচল কন্ঠস্বরে বলতে পারেন " সো হোয়াট? আপহোল্ড দ্য কন্সটিটিউশন! " । দেশকে তীব্রভাবে ভালোবেসে যাওয়া তাজউদ্দীন আহমদ তাই একজনই ছিলেন এদেশে।


সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণে তাজউদ্দীন আহমদ এর পাশাপাশি এ দেশের আরো সূর্যসন্তান এবং শুভানুধ্যায়ীদের কথাও এসেছে। ছয়দফা থেকে শুরু করে একেবারে কর্ণেল তাহেরের করুণ পরিণতি পর্যন্ত ইতিহাসের নানা জানা-অজানা তথ্য বইয়ে উঠে এসেছে। বইটি লিখতে লেখকের বেশ খাটুনি যে হয়েছে তা বোঝা যায় বইয়ের শেষে তথ্যসূত্রে একগাদা বইয়ের লিস্ট দেখে। এত এত বই পড়ে তা থেকে মাত্র কয়েকশো পেজের এরকম একটা অমর গল্প বলার অসাধ্য কাজ করবার জন্য লেখককে অভিবাদন জানাই। তুখোড় সম্পাদনার কারণে বানান ভুলও তেমন চোখে পড়েনি।


সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণের আরেকটি অনবদ্য ব্যাপার হচ্ছে প্রতিটি চ্যাপ্টারের শেষে লেখকের দূর্দান্ত ফোরশ্যাডোয়িং। মুক্তিযুদ্ধে ১৪ ডিসেম্বরের পর একইভাবে ৭৫ পরবর্তী সময়ে অভাগা এ দেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের ম্লান করে দেবার সফল চক্রান্ত সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশ জানি। তবুও বই জুড়ে লেখকের শব্দ বুনটের গুমোট আবহাওয়া যেন আমাদের দম আটকানো এক অনুভূতি দেয়। একেকটি চ্যাপ্টারের শেষে মনে আশংকা জাগে না জানি কি হয় এখন ! এছাড়াও সাবলীল লেখনীর জাদুতে তড়তড় করে কখন যে বিশাল সাইজের বইটি শেষ হয়ে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না ।



অনেকদিন ধরেই সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ বইটি পড়বার অপেক্ষায় ছিলাম। বইটি গোগ্রাসে গেলার পর মনে হয়েছে যে দীর্ঘ এ অপেক্ষা সার্থক ছিল। ভালো লিখবার অক্ষমতার কারণে বইটিকে আরো ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলবার ব্যর্থতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।



সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ
সুহান রিজওয়ান
প্রকাশকঃ বাতিঘর
মুদ্রিত মূল্যঃ ৮০০টাকা
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৫/৫
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
April 7, 2019
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ পর্যন্ত কম সংখ্যক বই লেখা হয়নি। স্মৃতিচারণ থেকে শুরু করে বিশ্লেষণ, উপন্যাস-গল্প থেকে শুরু করে ‘ফ্যাক্ট’ নিয়ে লেখা নানা ধরনের বই রয়েছে। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত ব্যক্তিগত ভাবে আমি কিছুটা অতৃপ্তিতে ভুগেছি, কেননা বেশীরভাগ বইয়েরই উপজীব্য বিষয় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস-সে ফিকশন হোক কি নন ফিকশন। কোন বই হয়ত শুরু হয় ঊনসত্তর থেকে কিন্তু একাত্তরের ডিসেম্বরের পরের কথা আর বলে না।

শাহাদুজ্জামানের ‘ক্রাচের কর্নেল’ যদিও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের কথা বলে কিন্তু সে বই পুরোপুরি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কর্নেল তাহেরকে পৌরাণিক নায়কের মতো করে উপস্থাপিত এ বইয়ে তাই কিছু খামতি থেকে যায়। তাহমীমা আনামকে যদিও অনেকে পাত্তা দিতে চাননা, কিন্তু তাঁর ‘দ্য গুড মুসলিম’ এক্ষেত্রে অনন্য একটা বই, অন্তত আমার কাছে। কিন্তু সে বই যুদ্ধের পরে একটি পরিবার একটি চরিত্রের বদলে যাওয়ার কথা বলে।

Shuhan Rizwan এর ‘সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ’ বইটি এই সকল ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম। কেন্দ্রীয় চরিত্র তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থাৎ বইটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কিন্তু ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়েও বইয়ে একে একে উঠে এসেছে যুদ্ধকালীন গুরুত্ব বহন করা প্রায় প্রতিটি মানুষ। উঠে এসেছে দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মী তাজউদ্দীনের ব্যক্তি জীবন। পাশপাশি তাঁর সহকর্মী হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, আবু সাইদ চৌধুরী; কেউ বাদ পড়েননি।

যুদ্ধকালীন এবং পরবর্তী সময়ে একটা ধুয়া উঠেছিল যে তাজউদ্দীন আহমদ আসলে বঙ্গবধুকে সরিয়ে নিজে গদি দখলের চেষ্টা করেছেন। সে কথা যে মিথ্যা এবং ভুল তা অনেক ভাবেই প্রমাণ করা সম্ভব কিন্তু একটা বই যখন তাজউদ্দীনকে কেন্দ্রে রেখে লেখা হয় তখন সেখানে কি আড়ালে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বঙ্গবন্ধুর? এ কাজটিও মুনশিয়ানার সাথে করেছেন লেখক। স্বাধীনতার মহান নায়ক কিন্তু স্ব মহিমায় অধিষ্ঠিত।

বইটি একটি উপন্যাস, এলিট পাঠকদের ভাষায় ‘ফিকশন’। কিন্তু ‘ফিকশন’ হলেও বইয়ে এমন কিছু বিষয় লেখক তুলে এনেছেন যা এযাবৎ কোন অনেক নন-ফিকশন বইয়েও আসেনি। যেমন আত্মসমর্পণে ওসমানীর অনুপস্থিতি। যুদ্ধের সময়ে ভাসানীর অবস্থান, ইত্যাদি।

বহু লোকেই বলে স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান আসলে একচ্ছত্র ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু একটা দেশ নয় মাসের যুদ্ধের পর কোন অবস্থায় থাকে, সে কথা কেউ বলতে আগ্রহী না। আমরা, বাঙালীরা যেন উচ্চপদস্থ কাউকে দোষারোপ করার জন্য মুখিয়ে থাকি। এমনকি যুদ্ধ নিয়ে লেখা বহুল পঠিত বইগুলোতেও এ সম্পর্কে তেমন কিছু নেই।

সুহান রিজওয়ান এ কাজটি করেছেন অনেক যত্ন নিয়ে। যুদ্ধের পর দেশের অবস্থা, মানুষের মনোভাব তুলে ধরেছেন তিনি। অনেকে বলতে পারেন লেখক বায়াসড, কিন্তু বায়াসড বলতে পারছি না আমি কেননা তিনি আমাদের দেশনায়কের ভুলের কথাও বলেছেন। সম্ভবত তাজউদ্দীন আহমদকে কাজ করতে না দেওয়া তাঁর অন্যতম ভুল ছিল। যে মানুষটা নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে, পরিবারকে এবং নিজেকে বঞ্চিত করে দেশের কাজে ব্রতী হয়েছিলেন।

একটা দেশ প্রগতি সাধন করতে পারে তখনই যখন দেশের মানুষ কাজ করবে সৎ ভাবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই দেশপ্রেম থেকে যুদ্ধ করেছিলেন, অনেকে করেছিলেন সময়ের প্রয়োজনে। কিন্তু সে সাময়িক বিহ্বলতা কেটে গেলে কঠিন বাস্তবের সামনে একের পর এক ভুল করে গেছে অনেকে। সে ভুলের পাশপাশি ছিল কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক আর শীর্ষ ব্যক্তিদের কিছু ভুল। সে সবের মাঝে অভিমন্যুর মতো একা লড়াই করতে চেয়েছিলেন একটি মানুষ, যার নামের অর্থ মুকুট।

তাজউদ্দীন আহমদ; তাজ অর্থ মুকুট। মুকুট নামের সে মানুষটি ছিলেন বাংলাদেশের শিরস্ত্রাণ। তাকে কেন্দ্রে নিয়ে লিখিত এ উপন্যাস কেবল ব্যক্তিক্রন্দ্রিক নয়। এ উপন্যাস একটা সময়ের কথা বলে, লড়াইয়ের কথা বলে। সম্ভাবনার কথা বলে।
Profile Image for Fahim.
35 reviews47 followers
February 20, 2015
এ এক অস্থির সময়ের উপাখ্যান। যে সময়ে রোলার কোস্টারে চেপে বসা বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তিত হচ্ছিল ক্ষণে ক্ষণে। যুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধোত্তর নবজাতক বাংলাদেশের মাঝে দাঁড়িয়ে যে মানুষটি খুব কাছ থেকে ধারণ করেছেন সে সময়কে, সেই বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদকে নিয়েই সুহান রিজওয়ানের ‘সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ’।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার পড়া উপন্যাসের সংখ্যা হাতেগোনা, চট করে বলতে গেলে ক্রাচের কর্ণেলের কথা মাথায় আসে সবার আগে। সচলায়তন ব্লগে কিছু অনুচ্ছেদ পড়ার কারণে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম বইটির জন্য। ধন্যবাদ সুহান, দেয়ালের হুমায়ুনের মত হতাশ করেননি আপনি, বরং ছাড়িয়ে গেছেন ক্রাচের কর্নেলকেও।
সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ’ পড়তে পড়তে টের পাচ্ছিলাম ভেতরের কাঁপুনি, বিশেষ করে তর্জনীতে স্বাধীনতা অংশটুকুতে মনে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণে যেন আমিও উপস্থিত, টলোমলো জাহাজের ক্যাপ্টেনের প্রতিটি নির্দেশ যেন শুনতে পাচ্ছিলাম পরিষ্কার। আবার নক্ষত্রপতনে ক্রোধে, অসহায়ত্বে ছটফট করেছি, বুকের ভেতরে তখন চলছে আলোকের অনন্তধারাদের ��ন্য অবিশ্রান্ত ক্রন্দন। পাঠ শেষে অনুধাবন করলাম, তাজউদ্দীনকে নিয়ে জানতাম না কিছুই, তাই নতুনভাবে তাজউদ্দীন পাঠে আগ্রহী হলাম।
লেখা নিয়ে বলার কিছুই নেই, চমৎকার প্রচ্ছদ, সেই সাথে বইয়ের শেষে সংযুক্ত নির্ঘণ্ট সমৃদ্ধ করেছে বইটিকে। তবে মুদ্রণ প্রমাদ গুলো বিরক্তির উদ্রেক করেছে মাঝে মাঝে।

লেখকের কাছে প্রত্যাশা বেড়ে গেল অনেক বেশি।
শুভকামনা।
Displaying 1 - 30 of 189 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.