চেতন আর অবচেতন মন দুই বন্ধু। তবে তাদের বন্ধুত্বের অর্থ এই না যে একে অপরকে ফুলের শুভেচ্ছায় সুবাসিত করবে, শুভেচ্ছা সম্বলিত কার্ড পাঠাবে। তারা একে অপরকে খুন করবে না এটাই তাদের বন্ধুত্বের মূলমন্ত্র। কিন্তু ব্যাপারটা সবসময় এমন সরল থাকে না। মনের অন্ধকার কুঠুরী খুলে যায়, হুহু করে ঢুকে যায় অশুভ বাতাস, তাতে সওয়ার হয়ে আসে হন্তারক স্মৃতি, খুনে প্রতিশোধ, সহিংস প্লেটোনিক ভালোবাসা, ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণের ছেড়াপাতা। শরীর তখন আর চেতন আর অবচেতন মনের আদেশ আলাদাভাবে মানতে পারে না। গুলিয়ে ফেলে। হারিয়ে যেতে চায় পরাবাস্তব সমান্তরাল জগতে, যে জগতের অস্তিত্ব হয়তো বা ধনী প্রতিবেশীর চর্বিবহহুল শরীরে, ভালোবাসার মানুষের পেলব দেহে, অথবা কোথাও না, কোন এক বিমূর্ত পর্বতমালার মাঝখানের বিভ্রম উপত্যকায়। আমরা এ পথ এড়িয়ে চল সবসময়। পারতপক্ষে দেখতে চাইনা চেতন-অবচেতনের এই সাংঘর্ষিক দ্বৈরথের ফলে উৎপন্ন মনবোমার বিস্ফোরণ। কিন্তু এই গ্রন্থের লেখকেরা তাদের শব্দগুলোকে আদর করে ভুলিয়ে ভালিয়ে প্যারাম্বুলেটরে করে নিয়ে গেছেন এই পথেই। অদ্ভুত এবং বিপদজনক পছন্দ সন্দেহ নেই। সন্দেহ, অবিশ্বাস, ঘৃণা, প্যারানয়া, বিকৃতি আরো অসংখ্য নেতিবাচক অনুভূতিগোষ্ঠী আঁধার টর্চ জ্বালিয়ে খুঁজছে প্যারাম্বুলেটরে আধো আধো বোলে কথা বলা সেই শিশুটিকেই, লালন পালন করে নিজেদের মত অতিকায় করে তুলবে বলে। এই রূপান্তর প্রক্রিয়া দেখার জন্যে পাঠক, আপনাকে স্বাগতম। মনের জানলা দরজা সব খুলে রাখুন অন্ধকার শব্দাবলীর আপ্যায়নের জন্যে।
নাজিম উদ দৌলার জন্ম ১৯৯০ সালের ৪ নভেম্বর নানাবাড়ি কেরানীগঞ্জে। পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলায় হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার আলো বাতাসের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে বেশ কয়েক বছর বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি করেছেন।বর্তমানে দেশের প্রথম সারির প্রডাকশন হাউজ আলফা আই-এ ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। লেখালেখির চর্চা অনেক দিনের। দীর্ঘসময় ধরে লিখছেন ব্লগ, ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে। ২০১২ সালে প্রথম গল্প “কবি” প্রকাশিত হয় কালান্তর সাহিত্য সাময়িকীতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম থ্রিলার উপন্যাস “ইনকারনেশন”। একই বছর আগস্টে প্রকাশিত হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার “ব্লাডস্টোন” তাকে এনে দেয় বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। এ পর্যন্ত ৬টি থ্রিলার উপন্যাস ও ৩টি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখায় মনোনিবেশ করেছেন। সাম্প্রতিককালে তার চিত্রনাট্যে নির্মিত "সুড়ঙ্গ" সিনেমাটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। শান, অপারেশন সুন্দরবন, দামাল, বুকের মধ্যে আগুন, দ্যা সাইলেন্স, লটারি-এর মতো বেশি কিছু আলোচিত সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। অবসর সময় কাটে বইপড়ে, মুভি দেখে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে। সদালাপী, হাসি খুশি আর মিশুক স্বভাবের এই মানুষটি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর বাংলাদেশের, যেখানে প্রত্যেকটি এক হয়ে মানুষ দেশ গড়ার কাজে মন দেবে।