উপন্যাস টি একটি কাল্পনিক ঐতিহাসিক উপন্যাস । রাজর্ষি-র জন্য একটি "সূচনা" রবীন্দ্রনাথ স্বহস্তে লিখিয়া দিয়াছিলেন, যা নিম্নরূপ:-
“রাজর্ষি সম্বন্ধে কিছু বলবার জন্যে অনুরোধ পেয়েছি। বলবার বিশেষ কিছু নেই। এর প্রধান বক্তব্য এই যে, এ আমার স্বপ্নলব্ধ উপন্যাস। বালক পত্রের সম্পাদিকা আমাকে ঐ মাসিকের পাতে নিয়মিত পরিবেশনের কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার ফল হল এই যে, প্রায় একমাত্র আমিই হলুম তার ভোজের জোগানদার। একটু সময় পেলেই মনটা ‘কী লিখি’ ‘কী লিখি’ করতে থাকে।
রাজনারায়ণবাবু ছিলেন দেওঘরে। তাঁকে দেখতে যাব বলে বেরনো গেল। রাত্রে গাড়ির আলোটা বিশ্রামের ব্যাঘাত করবে বলে তার নিচেকার আবরণটা টেনে দিলুম। অ্যাংলোইণ্ডিয়ান সহযাত্রীর মন তাতে প্রসন্ন হল না,ঢাকা খুলে দিলেন। জাগা অনিবার্য ভেবে একটা গল্পের প্লট মনে আনতে চেষ্টা করলুম। ঘুম এসে গেল। স্বপ্নে দেখলুম—একটা পাথরের মন্দির। ছোটো মেয়েকে নিয়ে বাপ এসেছেন পুজো দিতে। সাদাপাথরের সিঁড়ির উপর দিয়ে বলির রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। দেখে মেয়েটির মুখে কী ভয়! কী বেদনা! বাপকে সে বার বার করুণস্বরে বলতে লাগল, বাবা, এত রক্ত কেন! বাপ কোনোমতে মেয়ের মুখ চাপা দিতে চায়, মেয়ে তখন নিজের আঁচল দিয়ে রক্ত মুছতে লাগল। জেগে উঠেই বললুম, গল্প পাওয়া গেল। এই স্বপ্নের বিবরণ ‘জীবনস্মৃতি’তে পূর্বেই লিখেছি, পুনরুক্তি করতে হল। আসল গল্পটা ছিল প্রেমের অহিংস পূজার সঙ্গে হিংস্র শক্তিপূজার বিরোধ। কিন্তু মাসিক পত্রের পেটুক দাবি সাহিত্যের বৈধ ক্ষুধার মাপে পরিমিত হতে চায় না। ব্যঞ্জনের পদসংখ্যা বাড়িয়ে চলতে হল।
বস্তুত উপন্যাসটি সমাপ্ত হয়েছে পঞ্চদশ পরিচ্ছেদে। ফসল-খেতের যেখানে কিনারা সেদিকটাতে চাষ পড়ে নি, আগাছায় জঙ্গল হয়ে উঠেছে। সাময়িক পত্রের অবিবেচনায় প্রায়ই লেখনীর জাত নষ্ট হয়। বিশেষ যেখানে শিশু পাঠকই লক্ষ্য সেখানে বাজে বাচালতার সংকোচ থাকে না। অল্পবয়সের ছেলেদেরও সম্মান রাখার দরকার আছে, এ কথা শিশুসাহিত্য-লেখকেরা প্রায় ভোলেন। সাহিত্যরচনায় গুণী-লেখনীর সতর্কতা যদি না থাকে, যদি সে রচনা বিনা লজ্জায় অকিঞ্চিৎকর হয়ে ওঠে, তবে সেটা অস্বাস্থ্যকর হবেই, বিশেষত ছেলেদের পাকযন্ত্রের পক্ষে। দুধের বদলে পিঠুলি-গোলা যদি ব্যাবসার খাতিরে চালাতেই হয় তবে সে ফাঁকি বরঞ্চ চালানো যেতে পারে বয়স্কদের পাত্রে,তাতে তাঁদের রুচির পরীক্ষা হবে; কিন্তু ছেলেদের ভোগে নৈব নৈব চ।"
Awarded the Nobel Prize in Literature in 1913 "because of his profoundly sensitive, fresh and beautiful verse, by which, with consummate skill, he has made his poetic thought, expressed in his own English words, a part of the literature of the West."
Tagore modernised Bengali art by spurning rigid classical forms and resisting linguistic strictures. His novels, stories, songs, dance-dramas, and essays spoke to topics political and personal. Gitanjali (Song Offerings), Gora (Fair-Faced), and Ghare-Baire (The Home and the World) are his best-known works, and his verse, short stories, and novels were acclaimed—or panned—for their lyricism, colloquialism, naturalism, and unnatural contemplation. His compositions were chosen by two nations as national anthems: India's Jana Gana Mana and Bangladesh's Amar Shonar Bangla.
রবি ঠাকুর বলতে ছোটগল্প বুঝি। আর বুঝি গান। এর বাইরে সচেতন ভাবে মানুষটির অন্যান্য কোনো কাজেরই অন্বেষণ করা হয়নি। উপন্যাসই যদি পড়তে হয়, তবে কোন উপন্যাস? কেমন উপন্যাস? কিছুটা ছোটখাট, ইতিহাস-রসে সিক্ত? এই ভাবনা দিয়েই, 'রাজর্ষি'-র দ্বারে এসে পৌঁছনো। ভাগ্য ভালো, এমন এক রাজার কাছে এলুম, যে কিনা আমায় তাড়িয়ে দিল না। এ রাজা ভালো। এ রাজার রাজ্যে এলে, ফিরতে মন চায় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়তো বা বুঝেশুনেই ত্রিপুরা ও বঙ্গদেশের একটা সেমি-ফিকশনাল ইতিহাস রচেছিলেন। যার শেষ খাতে উপস্থিত শাহজাহান পুত্র, শাহ সুজার মতন চরিত্ররা। আসল-নকল, বাস্তব-কল্পনার মিশ্র মেলায়, বলতে চেয়েছিলেন, অহিংসা ও মানবিকতার সেই চিরাচরিত গল্প! মনে পড়ে, এই উপন্যাসের একটি ছোট অংশ স্কুলে থাকতে পাঠ্যবইতে পড়েছিলাম। ওই যে, যখন রাজা গোবিন্দমানিক্য, নিজ ভাই নক্ষত্ররায়কে নিয়ে জঙ্গলে চললেন, সেইটুকু। ভারী সুন্দর করে পড়িয়েছিলেন আমাদের বাংলা শিক্ষিকা। এখন ভাবলে মনে হয়, এসব অতীব সুন্দর লেখাকে অসুন্দর করে পড়ানোই অসম্ভব।
একটি তারা কম ব্যয় করছি, কারণ উপন্যাসটির অমন আকস্মিক পরিণতি। কোথাও গিয়ে ভালো লাগায় ছেদ পড়ে। যেন কবিগুরু হঠাৎ করেই লেখাটির রাশ ছেড়ে দিয়ে, বিশ্রাম নিতে গেলেন। কিন্তু আর ফিরলেন না। যাই হোক, বিশ্রাম নিন। কম তো দেন নি, বাংলা ও বাঙালিকে? কেবল পরিণতির ভিত্তিতে এমন একটি উপন্যাসকে ছোট করা যায় না। এসব বই, একটা গোটা জাতির সম্পদ। এমন মন ভালো করে দেওয়া লেখা। এমন শান্তি। মনের অলিন্দে প্রশান্তির সফেন চামর দুলিয়ে, শীতল বাতাস বইয়ে দেয় কেউ। ভারী ভালো লাগে।
রাজার ঋষিসুলভ জীবনের ধারণা রামায়ণের জনক থেকেই সবাই অবগত হয়। তবে রবীন্দ্রনাথের রাজর্ষি সেই ধারণায় আরও ব্যাপ্তি এনে দিল। রাজর্ষি রবীন্দ্রনাথের ঐতিহাসিক উপন্যাস; অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে ত্রিপুরা রাজ্যের আখ্যান। রাজা গোবিন্দমাণিক্য অতি সাধারণ জীবনযাপন করেন। সুকোমল চরিত্রের রাজা ব্যক্তিত্ব যথেষ্ট দৃঢ়। তার ভাই নক্ষত্রমাণিক্য ব্যক্তিত্ববান না হলেও ভ্রাতৃপ্রেম তার আছে। একদিন ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দিরে পূজা দিতে গিয়ে রাজা দুই ছোটছোট অনাথ ভাই-বোনের প্রতি গভীর অনুরক্ত হয়ে পড়লেন। তবে সে সুখে ছেদ পড়ল। মন্দিরে একদিনের পশুবলির ঘটনায় কাহিনীতে বেশ ওলটপালট হয়ে যায়; রাজা পশুবলি বন্ধ করলেন। ফলে রাজপুরোহিত রঘুপতির ক্রোধে পড়লেন রাজা। একের পর এক ষড়যন্ত্র জাল বিস্তার করল মন্দির আর প্রাসাদের মাঝখানে। ক্রিড়ানক হলো সেবাইত জয়সিংহ ও নক্ষত্রমাণিক্য। ঐতিহাসিক গল্প হলেও এর ঐতিহাসিক সংযোগ স্বল্প, মোটাদাগে হয়ে উঠেছে রাজা ও রাজপুরোহিত রঘুপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা। রাজা ও রঘপতি দুজনেই চরিত্রে পর্বতের মতো অটল। দু'জনের এ দ্বন্দ্ব নিয়েই গল্প। উপন্যাসটার অদ্ভুত দিক হলো কাহিনীর মাঝখানে এর ক্লাইম্যাক্স (এই ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত কাহিনীই বিসর্জন নাটকটি); এর পর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা প্রতিশোধের গল্পে পৌঁছায় এবং স্পষ্ট ইতিহাসের সাথে যুক্ত হয়। তখন শাহ সুজা আওরঙ্গজেবের সঙ্গে সিংহাসন দখলের লড়াইয়ে বিপর্যস্ত। তবে গল্পকে শাহ সুজার সঙ্গে যুক্ত করার ঘটনাটা খুব দুর্বল। যদিও রাজা গোবিন্দমাণিক্য যে কাল্পনিক চরিত্র নয় তা শেষ পর্যায়ে জানতে পারি। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে চরিত্রগুলোর উপস্থাপন বরাবর সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। চরিত্রের সংলাপে বুঁদ করে রাখে কাহিনীর ভিতর। এটিওতার ব্যতিক্রম নয়।
'বালক' পত্রিকার জন্য একটি উপন্যাস লেখার তাগিদ পান রবিবাবু। সেই সময়ে তিনি ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন। রাতে ঘুমাতে গিয়ে একজন রাজা, একটি বালক ও বালিকাকে মন্দিরের প্রাঙ্গণে স্বপ্ন দেখেন রবিবাবু। সেই স্বপ্নে পাওয়া কাহিনি নিয়েই লেখা 'রাজর্ষি'। ভালো-মন্দের দ্বন্দ্বে ভালোত্বের জয়গান এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।
ত্রিপুরারাজ গোবিন্দচন্দ্র মাণিক্য। তার রাজ্যের প্রধান মন্দিরে পশুবলি হতো। রাজা প্রতিদিন ভোরে গোসল করতে যেতেন। সেখানেই তার পরিচয় এতিম দুই শিশু: ধ্রুব ও তাতার সাথে। এই অনাথ ভাই-বোনের সাথে রাজার সখ্য গড়ে ওঠে। অপত্য স্নেহ করেন ওদের। একদিন রাজার প্রধান মন্দিরে পশুবলির রক্ত দেখে জ্বরে অসুস্থ হয়ে মারা যায় তাতা। তিনি ধ্রুবকে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। রাজার বোধদয় ঘটে। গোবিন্দমাণিক্য এবার তার রাজ্যে বলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
বলি নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় রাজার প্রধান পুরুত রঘুপতি। এই উপন্যাসের অন্যতম আকর্ষণ রঘুপতি। সে তার পালকপুত্র জয়সিংহ ও রাজার ভাই নক্ষত্ররায়কে দিয়ে রাজা গোবিন্দমাণিক্যকে হত্যা করতে চেষ্টা করেন। তার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। রঘুপতি ও রাজার ভাই নক্ষত্ররায়কে ত্রিপুরা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মনের দুঃখে একটি প্রত্যন্ত গাঁয়ে মিছেমিছি রাজ্যপাট খুলে বসেন নক্ষত্ররায়। অন্যদিকে, ক্রোধের আগুনে দগ্ধ রঘুপতি বুদ্ধি খাটায়। বাংলার সিংহাসনে তখন শাহজাহানপুত্র শাহ সুজা। দিল্লির গদির লড়াইয়ে পরাজিত সুজা ভাই আওরঙ্গজেবের ভয়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং সৈন্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। রঘুপতি অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক। রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় সে শাহ সুজাকে 'ম্যানেজ' করে এবং মোগলসেনার বলে বলীয়ান হয়ে গোবিন্দমাণিক্যকে রাজ্য ছাড়া করার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। প্রথমে ব্যক্তিত্বহীন নক্ষত্ররায় ভাইয়ের বিপক্ষে অস্ত্র ধরার পক্ষে ছিল না। কিন্তু অচিরেই ক্ষমতার স্বাদ তাকে অন্ধ করে দেয়।
গোবিন্দমাণিক্য যেন প্লেটোর দার্শনিক রাজা। সে ভাইয়ের সাথে বিরোধে না জড়িয়ে রাজপাট ছেড়ে বহুদূর চলে যায়।
নক্ষত্ররায় সিংহাসনে বসেন। কিন্তু ততদিনে সে ক্ষমতার উত্তাপে অন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি তাকে সিংহাসনে বসানো রঘুপতিকে পর্যন্ত সে পাত্তা দেয় না। আবার, পৃথিবীর পথে নামেন রঘুপতি। এবার ক্রোধ নয় ; অন্তর জর্জরিত অনুশোচনায়।
কী হলো গোবিন্দমাণিক্যের? রঘুপতি আর নক্ষত্ররায়ের ভাগ্যেই বা কী লেখা আছে? ধ্রুবর কথা মনে আছে তো?
সুন্দর উপন্যাস। তবে, পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল মুসলমানদের প্রতি রবিবাবু প্রসন্ন নন। যখনই মোগল সেনা ও আওরঙ্গজেবের প্রসঙ্গ এসেছে, তখনই তার বাক্যের 'টোন' বদলে গেছে। আসলেই কী রবিবাবুর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছিল নাকি আমি ভুল বুঝেছি?
রাজর্ষি আমার খুব প্রিয় উপন্যাস। স্বপ্নে পাওয়া গল্পের প্লট বলে নয়, ত্রিপুরার রাজাকে আমার এত ভাল লেগেছে আর কোন রাজাকে সেভাবে আজ পর্যন্ত ভাল লাগাতে পারলামনা। রবি ঠাকুর শিখিয়ে গেছেন "এক দেশে ছিল এক রাজা" বাদেও আরও সুন্দর সহজভাবে রাজার গল্প বলা যায়। আর দুই থেকে চার বছরের বেড়ে ওঠা ধ্রুব আর তার হারানো দিদি যেন বিভূতির অপু দুর্গাকে নতুন করে মনে করিয়ে দেয়। অনেকদিন বাদে পড়লাম। ভাবলাম, একই তরকারি দিয়ে পরপর কয়েকদিন ভাত খাওয়ার মতো আলুনি হ���়তো লাগবে। এ ভাবনার দুঃসাহস কোত্থেকে আসলো তা কে বলবে তবে ভাবনা যে মিথ্যা প্রমাণ হলো তাতেই মন বেজায় খুশি! আগে কেন চার তারা দিয়েছিলাম তা অব���্য নতুন করে ভাবাচ্ছে কিছুটা। সংশোধন করে নিলাম।
Great books tell the stories we used to know differently. সত্যিই, লেখার বিচার হয়, মহত্ত্বের বিচার কিভাবে করব? স্বাভাবিক, সরল একটা ইতিহাস আশ্রিত লেখার মধ্যে দিয়েও রবীন্দ্রনাথ আমার প্রাণে দোলা দিয়ে গেলেন।
ব্যক্তিগত একটা ঘটনা শেয়ার করি। এবার কালীপূজায় আমি উপোস ছিলাম, প্রথমবারের মত। উপোস থাকা আমার সমস্যা না। সমস্যা অন্যখানে। যেদিন সারাদিন ভয়ানক ঝড়বৃষ্টিতে ফরিদপুর পুরো ডুবে গেছে। কারেন্ট নাই, তার মধ্যেই মোমের আলোয় আধিভৌতিক পরিবেশে পূজা হচ্ছে মায়ের। ভাল কথা। এমনিই পূজায় বসছে রাত ১২টার পর। তারপর আবার পূজার মাঝে তার মনে হল, বলি দিতেই হবে, দিতেই হবে মানে দিতেই হবে। সমবেত ভক্তদের অনুরোধ উপেক্ষা করে, ওই ঝড়ের মধ্যে, হাঁটুজলে পূজারী নেমে গেলেন বলিতে।
আমার সেদিন এত বিরক্ত লেগেছিল! মা কি রক্তপিপাসু, যে বলি দিতেই হবে? তাও পূজারীর কি ব্যাগ্রতা! দিতেই হবে! কেন রে ভাই! প্রতিজ্ঞা করলাম, যেখানে বলি হয়, সে পূজায় জীবনে আর যাব না।
উপন্যাসে ফেরত আসি।এই বলি নিয়ে রাজা পুরোহিত দ্বন্দ্বের ইতিহাসই এই উপন্যাসের ভিত্তি। প্রতিটি অনুচ্ছেদ পড়েছি আর মহারাজ গোবিন্দমাণিক্যের উপর শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে এসেছে। জানা যায়, ত্রিপুরায় আসলেই এই নামে একজন সন্ন্যাসী রাজা ছিলেন। আহা! বাকিটুকু যেন গুরুদেবের লেখার কল্যাণে অমৃত। প্রতিটি চরিত্র, পজেটিভ হোক আর নেগেটিভ, নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।
ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্য। প্রতিদিনের মতো নদীর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে একদিন তিনি এক অদ্ভূত প্রশ্নের সামনে পড়লেন। হাসি নামের ছোট্ট একটা মেয়ের ছোট্ট একটা প্রশ্ন ‘ এত রক্ত কেন?’ ভীষণভাবে আঘাত করল তার মস্তিষ্ককে। ঘটনাটা হলো দেবী কালির মন্দিরে বলির রক্ত দেখে হাসি প্রশ্নটা করে। আর এই প্রশ্নেই রাজা চিন্তাজগতে ডুবে যান। আসলেই তো দেবীর তো মায়াবী হওয়ার কথা কিন্তু তার নামেই কেন রক্তের বন্যা – এই প্রশ্ন তার মনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে। আর এরপরেই তিনি এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ; তিনি তার রাজ্যে বলি নিষিদ্ধ করেন এবং এই আইন অমান্যকারীর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান দেন।
কিন্তু রাজার এই সিদ্ধান্ত সবাই মানবে কেন?! স্বভাবতই প্রথম প্রতিবাদটা আসে রাজ পুরোহিত রঘুপতির কাছ থেকে। আলোচনায় যখন কাজ হয় না তখন বাঁকা পথ ধরে রঘুপতি, সাথী করে রাজার ভাই যুবরাজ নক্ষত্ররায়কে। শুরু হয় একট গভীর সংকটের। এর মধ্যে এদের সাথে যুক্ত হয় মোগল শাসকরাও ; শাহজাহান-পুত্র শাহ সুজার সাথে সন্ধি করে ত্রিপুরা আক্রমণ করতে উদ্যত হয় রঘুপতি-নক্ষত্র জোট। কিন্তু কোমলপ্রাণ রাজা তো যুদ্ধের মাধ্যমে আরও রক্তপাত করতে চান না, ফলে ঘটনা নেয় নতুন মোড়।
তিনি একদিকে যেমন সিংহাসনে বসে আপন ভাইকেও শাস্তি দিতে কুন্ঠিত হন না তেমনি অন্যদিকে সব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নির্জন বনপ্রান্তেও বাস করতে পারেন। তার সম্পর্কে বলা ‘ তিনি সব ছেড়ে দিয়েও ( ঋষির মতো) যেন সব পেলেন ( রাজার মতো)’ বাক্যটাই একদিকে তার চরিত্র সম্পর্কে বলে আবার অন্যদিকে উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা দেখায়।
ভূমিকাতে লেখক যেমন বলেছেন প্রেমের অহিংস প্রকাশ বনাম হিংস্র প্রকাশের দ্বন্দ্ব এই উপন্যাসটির মূল আলোচ্য বিষয়। একদিকে গোবিন্দমাণিক্যের জীব প্রেমে বলিয়ান হয়ে ও দেবীকে মমতাময়ী জেনে বলি নিষিদ্ধ করা আর অন্যদিকে রয়েছে পুরোহিত রঘুপতির মত আঁকড়ে পড়ে থাকা। এই দুই মতের যে দ্বন্দ্ব তাই পুরো উপন্যাসটিতে বারবার এসেছে। এক মত একজনকে বলি নিষিদ্ধ করিয়েছে, যুদ্ধ করা থেকে বিরত রেখেছে, প্রকৃতির মাঝে সন্তুষ্টি খুঁজে নিতে শিখিয়েছে আর বিপরীত মত বলি বা যুদ্ধের মাধ্যমে বেশি বেশি রক্ত ঝরাতে চেয়েছে, সবকিছু ভোগ করতে বলেছে। তো এই দুইমতের মধ্যে লেখক কোন পক্ষে? তিনি গোবিন্দমাণিক্যের পক্ষে থেকে মানুষের হিংস্রতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, সামাজিক প্রথাকে অস্বীকার করেছেন, আধুনিকতার পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন।
শরিফুল ভাইয়ের রিভিউটা আমি পড়েছি। তিনি অভিযোগ করেছেন, শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথ মাসিক পত্রের অনুরোধে লেখাটা না চাইতেও বড় করেন। এতে নাকি লাস্টে অযথা জটিলতা দেখা দিয়েছে। আমার অবশ্য ঠিকঠাকই লেগেছে।
কোহেরেন্সি একটা বড় গুণ এখানে। পরিচ্ছদ এর পর পরিচ্ছদ পড়ে গেলেও মূল গল্পের ভাষা আর নির্যাস ঠিক ছিল। মাত্র দুটিই তো ক্ষেত্র। একদিকে সন্ন্যাসী রাজা গোবিন্দমাণিক্য, আর অন্যদিকে তার নির্বাসিত সহোদর নক্ষত্র রায় আর নির্বাসিত পুরোহিত রঘুপতি। এদের মাঝে আসা যাওয়া করেছেন নতুন পুরোহিত বিল্বল, পালিত ছোট্ট ছেলে ধ্রুব, শাহ সুজা প্রমুখ। ঘটনার কোহেরেন্সি ধরে রেখে সব কয়টি অনুচ্ছদই আপনাকে এক অনাবিল মহত্তম অনুভূতি দিয়ে যাবে।
একসময় এই গল্পটা আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শোনাব। আর বলব, ইস! মানুষের কি ক্ষমতা! মাঝে মাঝে ভগবানকেও হারিয়ে দেয়!
ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্য। প্রতিদিনের মতো নদীর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে একদিন তিনি এক অদ্ভূত প্রশ্নের সামনে পড়লেন। হাসি নামের ছোট্ট একটা মেয়ের ছোট্ট একটা প্রশ্ন ‘ এত রক্ত কেন?’ ভীষণভাবে আঘাত করল তার মস্তিষ্ককে। ঘটনাটা হলো দেবী কালির মন্দিরে বলির রক্ত দেখে হাসি প্রশ্নটা করে। আর এই প্রশ্নেই রাজা চিন্তাজগতে ডুবে যান। আসলেই তো দেবীর তো মায়াবী হওয়ার কথা কিন্তু তার নামেই কেন রক্তের বন্যা – এই প্রশ্ন তার মনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে। আর এরপরেই তিনি এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ; তিনি তার রাজ্যে বলি নিষিদ্ধ করেন এবং এই আইন অমান্যকারীর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান দেন।
কিন্তু রাজার এই সিদ্ধান্ত সবাই মানবে কেন?! স্বভাবতই প্রথম প্রতিবাদটা আসে রাজ পুরোহিত রঘুপতির কাছ থেকে। আলোচনায় যখন কাজ হয় না তখন বাঁকা পথ ধরে রঘুপতি, সাথী করে রাজার ভাই যুবরাজ নক্ষত্ররায়কে। শুরু হয় একট গভীর সংকটের। এর মধ্যে এদের সাথে যুক্ত হয় মোগল শাসকরাও ; শাহজাহান-পুত্র শাহ সুজার সাথে সন্ধি করে ত্রিপুরা আক্রমণ করতে উদ্যত হয় রঘুপতি-নক্ষত্র জোট। কিন্তু কোমলপ্রাণ রাজা তো যুদ্ধের মাধ্যমে আরও রক্তপাত করতে চান না, ফলে ঘটনা নেয় নতুন মোড়।
ইন্টারেস্টিং একটা তথ্য দিয়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া শুরু করি। এতদিন তো জানতেন কবিরাজরা স্বপ্নে কোনো রোগের ওষুধ পায় বা প্রাচীন যুগের কবিরা স্বপ্নে দেবী কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে কাব্য রচনা করেন ( দুটোই আমার মনে হয় বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর ধান্দা!) কিন্তু কবিগুরুও যে স্বপ্নে উপন্যাসের প্লট পান তা বোধহয় জানতেন না! এই উপন্যাসের প্লট কবিগুরু পেয়েছিলেন ট্রেনের কামরায় ঘুমাতে ঘুমাতে। প্রেমের অহিংস প্রকাশের সাথে হিংস্র শক্তি পূজার দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি যে স্বপ্নটা দেখেন তারই বর্ধিত রূপ এই উপন্যাসটা। আরেকটা তথ্য হলো বাস্তবিকই ত্রিপুরায় গোবিন্দমাণিক্য নামক এক সন্ন্যাসী রাজা ছিলেন অর্থাৎ বইটাকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা চলে।
ছোটবেলায় রাজর্ষি শব্দের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় হয় সন্ধি এবং সমাস পড়ার সময়ে। স্বরসন্ধি পড়ার সময় রাজা + ঋষি = রাজর্ষি বা কর্মধারয় সমাস পড়ার সময়ে যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি তো আমরা সবাই পড়েছি বোধহয়। সন্ধি বা সমাস থেকে এটা পরিষ্কার যে উপন্যাসটিতে এক এক ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যিনি একই সাথে রাজা এবং ঋষির বৈশিষ্ট্য ধারণ করবেন। আর এই রাজর্ষি হলেন রাজা গোবিন্দমাণিক্য। তিনি একদিকে যেমন সিংহাসনে বসে আপন ভাইকেও শাস্তি দিতে কুন্ঠিত হন না তেমনি অন্যদিকে সব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নির্জন বনপ্রান্তেও বাস করতে পারেন। তার সম্পর্কে বলা ‘ তিনি সব ছেড়ে দিয়েও ( ঋষির মতো) যেন সব পেলেন ( রাজার মতো)’ বাক্যটাই একদিকে তার চরিত্র সম্পর্কে বলে আবার অন্যদিকে উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা দেখায়।
ভূমিকাতে লেখক যেমন বলেছেন প্রেমের অহিংস প্রকাশ বনাম হিংস্র প্রকাশের দ্বন্দ্ব এই উপন্যাসটির মূল আলোচ্য বিষয়। একদিকে গোবিন্দমাণিক্যের জীব প্রেমে বলিয়ান হয়ে ও দেবীকে মমতাময়ী জেনে বলি নিষিদ্ধ করা আর অন্যদিকে রয়েছে পুরোহিত রঘুপতির মত আঁকড়ে পড়ে থাকা। এই দুই মতের যে দ্বন্দ্ব তাই পুরো উপন্যাসটিতে বারবার এসেছে। এক মত একজনকে বলি নিষিদ্ধ করিয়েছে, যুদ্ধ করা থেকে বিরত রেখেছে, প্রকৃতির মাঝে সন্তুষ্টি খুঁজে নিতে শিখিয়েছে আর বিপরীত মত বলি বা যুদ্ধের মাধ্যমে বেশি বেশি রক্ত ঝরাতে চেয়েছে, সবকিছু ভোগ করতে বলেছে। তো এই দুইমতের মধ্যে লেখক কোন পক্ষে? তিনি গোবিন্দমাণিক্যের পক্ষে থেকে মানুষের হিংস্রতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, সামাজিক প্রথাকে অস্বীকার করেছেন, আধুনিকতার পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন।
বইটার চরিত্রায়ন খুব সুন্দর। রাজর্ষি গোবিন্দমাণিক্য থেকে শুরু করে ছোট্ট চরিত্র হাসি পর্যন্ত চরিত্রগুলো স্বমহিমায় উজ্জ্বল। রাজার কঠিন ও কোমল দিকের উন্মেষ, রঘুপতির আপন লক্ষ্য অর্জনে যেকোনো পথের আশ্রয় নেওয়া, জয়সিংহের অন্তর্দ্বন্দ্ব, নক্ষত্ররায়ের দূবর্লতা, ধ্রুব বা তাতার সরলতা, হাসির জিজ্ঞাসা – সবকিছু অসাধারণভাবে এসেছে।
বইটা বেশকিছু ছোট ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও তুলে ধরেছে। হাসি আর তাতার সম্পর্ক যেন চিরপরিচিত অপু-দূর্গার কথা মনে করিয়ে দেয়। নক্ষত্ররায়ের ক্ষমতা পেয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়ার দিকটা দূর্বলের হাতে ক্ষমতার স্বরূপকেই পুনরায় স্মরণ করায়। গোবিন্দমাণিক্যের সিংহাসনে বসে ভাইকে শাস্তি দেওয়া ও পরে অন্তঃপুরে কাঁদা – মুকুট পরিহিত যেকোনো রাজার ট্র্যাজেডির কথাই বলে।
প্রেম বা ভক্তির অহিংস প্রকাশের সাথে হিংস্র শক্তি পূজার দ্বন্দ্বের কথা উপন্যাসটি বলেছে ঠিক আছে কিন্তু যে জায়গায় আমার খটকা লেগেছে তা হলো রবীন্দ্রনাথরা তো আগে থেকেই ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী। আর ব্রাহ্মরা যে মাটির মূর্তির পূজা করে না বা বলি সহ হিন্দুদের অনেককিছুই মানে না তা তো আগে থেকেই জানা। তো এই যে বলির বিরুদ্ধে বলা বা রঘুপতির হাত দিয়ে মূর্তি উৎপাটন – এগুলো কি তার পূর্বপুরুষদের কথারই প্রতিধ্বনি হয়ে গেল না?! মানে যেটা বলতে চাচ্ছি, উপন্যাসের কৃতিত্ব লেখক পেলেও এই ধারণা সম্ভবত তার পারিপার্শ্বিক থেকেই এসেছে।
আরেকটা ব্যাপার বলা যায় সেটা হলো বইটার শেষদিকের অতিরিক্ত প্যাঁচানো ঘটনাক্রম। লেখক অবশ্য ভূমিকাতেই স্বীকার করেছেন বালকদের জন্য লেখা বইটা মূল বইয়ের অর্ধেকেই শেষ করার ইচ্ছা ছিল তাঁর কিন্তু পত্রিকার চাপে তাঁকে লম্বা করতে হয়েছে। সম্ভবত তাই অর্ধেকের পর থেকে বইয়ের কাহিনী কিছুটা হালকা হয়ে গিয়েছে। মোগলদের সম্পর্কে কয়েক পাতা ইতিহাসের বই থেকে তুলে দিয়ে তিনি কাহিনীকে মোগলদের সাথে জুড়তে চাইলেও কেমন যেন ঠিক জোড়া লাগে নি সেখানটায়।
তো, সার্বিকভাবে বলা যায় দু-একটা ব্যাপার বাদ দিলে বইটা একটা আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক উপন্যাস ।
রবি বাবুর উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক উপন্যাস হল 'রাজর্ষি'। ত্রিপুরার রাজপরিবারকে কেন্দ্র করে এ উপন্যাসের ঘটনাক্রম আবর্তিত হয়েছে। মুখ্য চরিত্র হিসেবে রয়েছে মহারাজা গোবিন্দমানিক্য, রাজপুরোহিত রঘুপতি, নক্ষত্র রায়(ছত্রমানিক্য), হাসি ও তাতা। প্রচলিত ধর্মীয় সংস্কার হিসেবে বলি প্রথা রদকে কেন্দ্র করে রাজা ও রাজপুরোহিতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এর প্রধান বিষয়। গোবিন্দমানিক্যের প্রাণপ্রিয় হাসি ও তাতা বিশেষত হাসির বিষাদজনক মৃত্যু রাজাকে সংস্কারবিমুখ করে মানবিক রাজায় পরিণত করে। তেজী ব্রাহ্মণ রঘুপতি তার ব্রাহ্মণত্বের জোরে গোবিন্দমানিক্যকে সিংহাসনচ্যুত করে তার নকলনবিশ নক্ষত্র রায়কে সিংহাসনে বসাতে উদ্যোগী হয়। বহু ষড়যন্ত্র ও গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টায় অবশেষে রঘুপতি নক্ষত্র রায়কে ছত্রমানিক্য নামে রাজ্যাভিষেক ঘটান ঠিকই তবে রাজসুলভ অকর্মণ্যতায় অচিরেই প্রজাবিদ্রোহে রাজ্যের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বনবাসী গোবিন্দমানিক্য নক্ষত্র রায়ের মৃত্যুর পর পুনরায় ত্রিপুরার রাজসিংহাসনে আরোহণ করেন। উপন্যাসে রাজা গোবিন্দমানিক্য - নক্ষত্র রায়ের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পাশাপাশি রঘুপতির চারিত্রিক দৃঢ়তা, সত্যের জয় ও অসত্যের পরাজয় স্হান পেয়েছে। সর্বোপরি হাসি, তাতা দুই শিশু চরিত্র উপন্যাসটিকে প্রভাবিত করেছে। ট্র্যাজিক- ঐতিহাসিক উপন্যাসরূপে 'রাজর্ষি' গুরুত্বপূর্ণ।
রাজা-রাজরার গল্প শুনতে কে না ভালোবাসে? আর সেই গল্প যদি হয় স্বয়ং রবি ঠাকুরের লেখা, তাহলে তো পোয়া বারো! ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমানিক্য বলির নামে জীবহত্যা বন্ধ করে দিলেন মায়ের মন্দিরে। সেই শুনে রাজপুরোহিত রঘুপতি সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন। রাজা কে সিংহাসন থেকে সরানোর চক্রান্ত করলেন। প্রথমে রাজার ভাই নক্ষত্ররায় কে দিয়ে, তারপর রাজার প্রাণাধিক প্রিয় ছোট্ট ছেলে ধ্রুব কে অপহরণ করে হত্যা করার পরিকল্পনা করে রাজাকে গদিচ্যুত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সেই কাজে সফল তো হলেনি না, উল্টে নিজের সন্তানতুল্য জয়সিংহ কে চিরতরে হারালেন, এবং নিজে হলেন নির্বাসিত। আবার সেখানেই শুরু করলেন নতুন করে চক্রান্তের বীজ রোপণ করা। গপ্পো মীরের ঠেকে audio story হিসেবে গল্পটি শুনে আরও আনন্দ পেলাম। মীর যথারীতি অসাধারণ। অনির্বাণ ভট্টাচার্যর জয়সিংহ চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় এই চরিত্রটার প্রতি আলাদা ভালো লাগা তৈরী করলো। কিন্তু সবথেকে বেশি মুগ্ধ হলাম রঘুপতি চরিত্রে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়-এর অভিনয় শুনে। রঘুপতি চরিত্রটা অদ্যপন্ত একটা খল চরিত্র। তার একমাত্র redeeming quality তার জয়সিংহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও পিতৃসুলভ স্নেহ। রবি ঠাকুরের কলমের জোর আর শুভাশিস মুখোপাধ্যায়-এর দুর্দান্ত অভিনয় আকৃষ্ট করে রেখেছিল আগাগোড়া। দারুণ একটা ভালোলাগার মধ্যে চলে গেছিলাম গপ্পো শুনতে শুনতে। শুধু শেষটা কেমন যেন তাড়াহুড়ো করে হল। গল্পটার ক্লাইম্যাক্স আরও গুছিয়ে লিখলে ভালো হতো।
রবিবাবু উপন্যাস যে উৎসাহ নিয়ে শুরু করেছিলেন সে উৎসাহ সম্ভবত শেষতক ধরে রাখতে পারেননি। কাহিনী তো বেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ উপন্যাস শেষ করে দেয়ার জন্য তাঁর এত ব্যস্ততা কেন বুঝলাম না। যেন ঘাড়ে ধরে সবাইকে মিলিয়ে দিয়ে উপন্যাসের উপসংহার টানলেন।
Rajarshi...meaning the amalgamation of a saint and a king. To be a king or a saint? Well neither does being a king verify extravagance,nor does being a saint legitimise sin. That is the tale Tagore spins in his oh-so-sultry language. People who like to romanticize Tagore ought to read this novel to realize the depths of human psyche the writer delves into. The toxin of revenge and the peace in relinquishing. The greatest love is where you contain the power to let-go as passionately as the power to hold. Be the love towards a person or abstract. Tagore is,was and will always be beyond the paws of mundane. To comprehend him is to comprehend your own mind,to reject him is to reject the fundamentals of mortality for like so many of his works here too you find the layers of human psychology projected so well. The character of Govindamanikya, born a king and a mundane mortal passes through the various phases of sacrifice to find peace and his lost treasures. And the one who holds on keeps holding to dust.
রাজর্ষি আমার পছন্দের একটা উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ মানেই রোমান্টিক কিংবা সামাজিক উপন্যাস অথবা ছোট গল্প এটাই আমি বিশ্বাস করতাম কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে সাহিত্যের প্রতিটা পাতায় পদচারণ করেছেন তা "রাজর্ষি" পড়ে বিশ্বাস পাকাপোক্ত হলো।
বহুকাল আগে গুপ্তধন নামে রবীন্দ্রনাথের একটা গল্প পড়েছিলাম বেশ রেশ কেটে গিয়েছিল। এখনো আমি ভুলিনি।কিন্তু "রাজর্ষি" যে সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে তা না পড়লে বুঝতে পারতাম না। গুরুর ক্লাসিকাল ফিকশনে যে এ সুন্দর দক্ষতা তা রাজর্ষির প্রতিটা পৃষ্ঠায় ছাপ রেখেছেন।
বলি প্রথা বাংলার ইতিহাসে পুরনো ইতিহাস।যা এক সময়ে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা ছিলো,
বলি নিয়ে রাজা পুরোহিত দ্বন্দ্বের ইতিহাসই এই উপন্যাসের ভিত্তি। প্রতিটি অনুচ্ছেদ পড়েছি আর মহারাজ গোবিন্দমাণিক্যের উপর শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে এসেছে।
ইতিহাস অনেক সময় একঘেয়েমি হয়ে ওঠে।ইতিহাস মানেই যুদ্ধ আর যুদ্ধ,জয় আর পরাজয়ের কাহিনী। তবে রবি ঠাকুরের এই ঐতিহাসিক উপন্যাসে যুদ্ধ আছে বটে তবে শেষ থেকে শুরু কোন পৃষ্ঠায় একঘেয়েমির লেশমাত্র নেই। কারন এ যুদ্ধ ধার্মিক কুসংস্কারের সাথে মানবতার। মানবতাকে পরাজিত করে কেবল রীতিনীতি মেনে চললে ধর্ম হয়না বরং মানবতাই পরমধর্ম--মানবসমাজের কাছে এমনই মহৎ বার্তা পৌঁছানোর উদ্দ্যেশ্যেই এটি রচিত।তবে উপন্যাসের এক লাইনে লেখা "ইতিমধ্যে ঔরঙ্গজেব দারাকে পরাজিত ও নিহত করে দিল্লির সিংহাসনে বসেছেন।"তবে যেসময়ের কথা তিনি বলেছেন তখন ঔরঙ্গজেব সামুগড়ের যুদ্ধে দারাকে পরাজিত করে সিংহাসনে বসেছেন ঠিকহ তবে দারা শিকোহ তখনও নিহত হননি।তিনি পাঞ্জাবে পলায়ন করেছিলেন।তবে এমন এক চমৎকার উপন্যাসের কাছে এরকম তুচ্ছ এক ভূল উপেক্ষণীয়।
রাজর্ষি। রাজা অথচ ঋষি! কে রাজা, কেইবা ঋষি? রবীন্দ্রনাথের মায়াময় সুললিত গদ্দ্যে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে উঠেছে এক রাজার কাহিনীতে। মানুষের শঠতা-হীনতার এই উপাখ্যানে প্রকৃতি কিন্ত বাদ যায় নি। অসাধারণ বর্ণনায় প্রভাত-উষা, নদী-গ্রাম নিয়ে প্রকৃতি তার স্নিগ্ধতা নিয়ে জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। তবুও এই বইটি পড়তে গিয়ে পরতে পরতে মেজাজ চড়ে গেছে! কিন্ত কেন? রবীন্দ্রনাথের লেখার সমালোচনা করার মত ধৃষ্ঠতা আমার নাই, তবুও মনের এই ভাবটা কোনোভাবেই ঝেড়ে ফেলতে পারছি না।
কাকে আমরা এখানে ঋষি হিসেবে দেখতে পাই? গোবিন্দমানিক্য, সন্দেহ নাই একজন স্বচ্ছ মনের মানুষ কিন্তু "পলায়নপর"(escapist) মানুষ মাত্রই কি ঋষি? রাজা হিসেবেই তাকে বিবেচনা করা যাক।নক্ষত্ররায় যখন ত্রিপুরা আক্রমন করছেন, কেবল ভাতৃস্নেহ অন্ধ হয়ে এতগুলো প্রজার ভাগ্য তার মত অবিবেচকের হাতে ছেড়ে দিয়ে তিনি মুক্তি খুজছেন? পাহাড়ী নদীর নির্জন কুটিরে যখন তিনি হালকা হৃদয় নিয়ে জগতের পরম সত্য বুঝে নিতে মগ্ন তখন তারই ফেলে আসা রাজ্যে প্রজারা লুন্ঠিত হচ্ছে মোঘল সৈন্যের হাতে, নক্ষত্ররায়ের অত্যাচারে প্রজারা যখন দিশেহারা তখন তিনি ভগ্নহৃদয়ে ভাবছেন , আহা মানুষের জন্য এই জীবনে কিছু করা হল না! কী করে তাকে 'মহারাজ' হিসেবে সম্বোধন করি? আচ্ছা রাজা-রাজরার হিসেব বাদ দেই, একজন বাবা হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন? যেই ধ্রুবকে তিনি বুকে ধরে বড় করলেন, রাজ্য থেকে পালানোর(খারাপ লাগলেও আমাকে একে কাপুরোষিত পলায়নই বলতে হল) সময় তাকে কার হাতে ছেড়ে দিয়ে আসলেন? সেই নক্ষত্ররায়ের রাজত্বে! এই নক্ষত্ররায়ই(আর রঘুপতি) কি তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে নি? তার আত্নমুক্তির কাছে ধ্রুবের প্রতি ভালোবাসা ম্লান হয়ে গেল! এইরুপ আত্নকেন্দ্রিকতাই বুঝি মহত্তের লক্ষণ? কেবল মাত্র অন্যকে আশ্রয় করেই শেষ পর্যন্ত হয়ত তিনি আবার রাজ্য ফিরে পেয়েছেন, কিন্তু এখানে তার কৃতিত্ব খুব কমই বলা চলে। নির্জনবাসী হয়ে সমস্ত দায়িত্বমুক্ত হয়ে জীবনের স্বাদ নেয়া, ভাবনাটি বেশ রোমান্টিক এবং আকর্ষনীয় সন্দেহ নাই, কিন্তু একে মহিমান্বিত করে কি মানবজীবনকে খর্ব করাই হচ্ছে না?
কে জানে বইয়ের সুক্ষ্ম দর্শন হয়ত আমার অধরাই রয়ে গেল। এই লেখা এরপরও নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ! বিজ্ঞজনেরা সে বিষয়ে আলোকপাত করবেন । ব্যাক্তিগত ভাবে লেখকের মুক্তচিন্তা, সমাজের অসংতি সম্পর্কে সচেতনতা আমার কাছে সবচেয়ে প্রশংসার দাবীদার মনে হয়েছে । তবে এই রঙ্গমঞ্চের নিত্য হাসি-কান্নার খেলায়, একজন বড় অভিনেতার কাঁচা অভিনয়ের নাম করে মঞ্চ থেকে পালিয়ে গিয়ে মঞ্চের সার্থকতাকেই ছুড়ে ফেলে দর্শকদের নিরাশ করাকে আর যাই হোক কেন জানি মহৎ হিসেবে মানতে পারছি না!
This entire review has been hidden because of spoilers.
রবীঠাকুরের ভগ্নহৃদয় কাব্য পড়ে রাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বিমোহিত হয়েছিলেন। এরপর কবির ভূয়সী প্রশংসা করে কবির কাছে দুত মারফত উপহার পাঠান এবং কবির সান্নিধ্য কামনা করেন। এরপর থেকেই রাজ পরিবারের সাথে কবির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কবি ত্রিপুরা ভ্রমনকালে ত্রিপুরার রাজাদের সম্পর্কে অবগত হন। এবং সন্নাসী রাজা গোবিন্দচন্দ্র মানিক্যের প্রতি অনুরক্ত হন। এরপর একদিন তিনি স্বপ্নে রাজাকে দেখেন। সেখান থেকেই এই রাজর্ষি উপন্যাসের সূচনা। জীবনস্মৃতি গ্রন্থে তিনি এই কথা বলার পর থেকেই আমি রাজর্ষি পড়ার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। প্রথম জীবনের উপন্যাস হওয়া স্বত্বেও রাজর্ষি শৈল্পিক দিক দিয়ে অনেক পরিনত। কালের বিচারে অনেক রাজার কথা বলার জন্য আমরাও এক টুকরো ইতিহাস গল্পের মাধ্যমে পেয়ে রোমাঞ্চিত হই। রাজার জীবনবোধ মানুষকে মানুষ হিসেবে চিনতে অনেক সাহায্য করে। এমন উপন্যাস সত্যি মানুষের চিন্তা পরিনত করার জন্য যথেষ্ঠ।
অবাক হতে হয় একশো বছর আগেও রবীন্দ্রনাথ কী তীব্রভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন! তাকে পড়ার আগে শুধু শোনাকথায় বিশ্বাস করে তার সম্পর্কে অনেক ধারণার জন্ম নিয়েছিলো। যেমন প্রচলিত ধারণায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু তাকে পড়তে গিয়ে বুঝা যায় কতটা অবিশ্বাসী আর সংস্কারমুক্ত ছিলেন তিনি! যেটুকু বিশ্বাস তার ছিল তা ছিল স্পিনোজার অজ্ঞেয়বাদী ঈশ্বরের উপর, যে বিশ্বাস অনেকটা অবিশ্বাস��দের বিশ্বাসেরই কাছাকাছি। আর ছিল মানবতার উপর বিশ্বাস।
এই ভূখন্ডে সম্ভবত তিনিই সর্বপ্রথম আধুনিক অর্থে মানবতাবাদী।
উপন্যাসটি সুখপাঠ্য, কাঁচা হাতের লেখা হওয়া সত্ত্বেও।
ঐতিহাসিক উপন্যাস আমার খুব প্রিয়। আর সেটা যদি হয় রবি ঠাকুরের গাঁথুনিতে, প্রিয় ইতিহাসের সাথে যোগ হয় প্রেম - মানব প্রেম, প্রকৃতি প্রেম। ভাষার উৎকর্ষে রবীন্দ্রময়ী বর্ণনায় প্রেমোজ্জ্বল ইতিহাস হয়ে উঠে সুখপাঠ্য। ভাবতে অবাক লাগে শত বছর আগে লেখা প্রতিটি চরিত্র কতটা আধুনিক, এখনো কতটা প্রাসঙ্গিক। জয়সিংহের ধর্মীয় দায়িত্ববোধ আর বিবেকের দংশন যেমন পরিচিত অনুভূতি তেমনি রাজার পতি রঘুপতির শোধ নেয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার প্রতিচিত্রগুলো আমাদের আশেপাশেই সদা বিরাজমান। পড়ে ফেললাম , শেষ হয়ে গেল। আবার কী কেও লিখবে এরকম উপন্যাস?
অনেকদিন ধরেই ঐতিহাসিক কোন উপন্যাস পড়ার জন্য ইচ্ছা করছিল। তবে চিরপরিচিত শরদিন্দুর নয়, অন্যকিছু। "রাজর্ষি" পড়ে সেই ইচ্ছা খুবই সুন্দরভাবে মিটল।
ত্রিপুরা-রাজ গোবিন্দমাণিক্য, তাঁর খল-ভ্রাতা নক্ষত্ররায়, প্রতিহিংসা-পরায়ণ রাজপন্ডিত রঘুপতি, এক নিষ্পাপ দিদি-ভাইয়ের জুটি এবং মুঘল শাসকদের আভ্যন্তরীণ বিবাদ নিয়েই এই উপন্যাসের কাহিনি। সর্বোপরি এ-কাহিনিতে রয়েছে বাসনাতুর মনকে জয় করে মহত্তর পথে মানুষের এগিয়ে চলার কাহিনি।
রঘুপতিকে সারা কাহিনি জুড়ে বহুবার মনে-মনে মুণ্ডপাত করেছিলাম। কিন্তু সবকিছুর পরে সে যথাযোগ্যভাবেই সব হিসেব মিটিয়েছে। শেষে একটা হ্যাপি এন্ডিং পেয়ে তৃপ্ত হওয়া গেল।
No review can justify this beautiful piece of art. The story primarily dealt with Maharaja Gobindomanikko and his transformation into the Saint-King. Strong willed characters like Raghupati and Billan and ofcourse the king made the story quite a treat to read. Rabindranath splendidly delved into the depths of the human psyche and brought out the gems that rejuvenates the mind with its inner beauty.
Raja Gobindmanikya met Tata and Durga while he was ON his morning walk. He felt an instant affection for the siblings and became friends with them in no time. The King did not have children, so he loved them as if they were his own. One day, during the Annual Kali Puja, Durga was shocked to see so much blood from animal sacrifices. She asked the King, “Why is there so much blood? Why does the Goddess need blood for her reverance?” These questions MOVED the King deeply.
Soon after this incident, Durga fell ill and began repeating the same words: “রাজা এত রক্ত কেন?” (“Why so much blood, King?”). Durga passed away in the King’s lap. Devastated by her death, the King decided to ban all forms of animal sacrifice during puja ceremonies. This decision was not WELL-RECEIVED by the priest Raghupati. The priest incited people against the King, SOWING SEEDS OF UNREST. He also manipulated the King’s brother, Nakshatra, TURNING HIM against Govindmanikya.
Raghupati had a foster son, Jay Singha. At first, Raghupati commanded Singha to kill the King. Singha reluctantly agreed and approached the King with the intention of carrying out the act. However, when he met the King, he couldn’t go through with it. Instead, he confessed everything, revealing that Raghupati was behind the plot. Despite learning this, the King did not take any action against Raghupati.
Raghupati, furious with Singha’s betrayal, confronted him and demanded that he choose between loyalty to him or to the King. Devastated and torn between the two, Singha took his own life. This tragic event shook Raghupati to his core, but instead of backing down, he doubled his efforts to turn Nakshatra against the King. Raghupati incited Nakshatra to take the life of Tata, who had been renamed Dhruba after the King took him in as his ward. However, the King caught Nakshatra before any harm could come to Dhruba and EXILED his brother & the Priest from the kingdom for 15 years.
Enraged and seeking revenge, Raghupati allied with Shah Shuja, the Nawab of Bengal, and conspired to attack Tripura. He convinced Shah Shuja to help dethrone Govindmanikya and appoint Nakshatra as the Commander-in-Chief to attack Tripura. When Govindmanikya learned of his own brother’s betrayal, he was heartbroken. Rather than fighting his brother, the King chose to abdicate the throne and become a monk, leaving the state to Nakshatra.
Under Nakshatra’s rule, the condition of the state worsened. Corruption and mismanagement spread like wildfire, and the people suffered greatly. Raghupati, witnessing the misery his actions had caused, began to feel the weight of his sins and was filled with remorse.
Meanwhile, Govindmanikya had left the state alone, without Dhruba, as his uncle had refused to let the boy leave the kingdom. Six years passed. During this time, Raghupati sought out Govindmanikya, begging him to return to his rightful place and take responsibility for the kingdom. By then, Nakshatra had died, leaving the throne empty and the state in DISARRAY. With the help of his priest friend Bilwan, Govindmanikya was reunited with Dhruba. Finally, Govindmanikya returned to Tripura and reclaimed his throne, bringing peace and stability back to the kingdom.
This entire review has been hidden because of spoilers.
প্রায় দেড় বৎসরকাল পর রবীন্দ্ররচনা পড়িতে গিয়া মনে ভাবান্তর ঘটিলো। এতদিন তব কী লইয়া পড়িয়া ছিলাম জানিনা। বাঙালির হৃদয়ের রাজা পুনর্বার আমার হৃদয়খানি দখল করিয়া লইলো। ইতোপূর্বে গোরা ব্যতিত রবিবাবুর সবকটি উপন্যাস পড়িয়াছিলাম ; অল্পবয়স-স্বল্পবুদ্ধি হেতু 'রাজর্ষি' আমার চিত্তাকর্ষণ করিতে পারে নাই। সুনীলের 'প্রথম আলো' পড়িয়া ত্রিপুরার রাজপরিবার সম্বন্ধে বেশ অবগত হইয়াছিলাম। তাই মহারাজ গোবিন্দমাণিক্যের রাজকার্য দেখিতে বিশেষ ঔৎসুক্য বোধ করিলাম। 'যিনি রাজা তিনিই ঋষি' এই ব্যাসবাক্যটি কে উপন্যাসের আগাগোড়া ব্যাপিয়া ধ্রুবসত্য বলে প্রমাণ করিয়াছেন মহারাজ গোবিন্দমাণিক্য। এক রাজর্ষিকে অবলম্বন করিয়া রবীন্দ্রনাথ সমগ্র রচনাটি জুড়ে বারংবার মানবহৃদয়ের ধ্বজাকে সর্ব উচ্চে স্থান দিয়াছেন। শুভ্র হৃদয়ের 'ধ্রুব' যেন প্রতিনিধিত্ব করছে জগতের সমস্ত সুন্দরের-সৌকুমার্যের। ক্ষুদ্র 'তাতা'ই হইয়া উঠিল মহারাজের সমস্ত শুভবোধের প্রেরণা। রবীন্দ্রনাথের ব্রাহ্মধর্মের চেতনা বারংবার ঝংকৃত হইয়াছে ; প্রচ্ছন্নভাবে। ধর্মের পূজা কোনো মন্দিরে নয়, প্রতিমার পদতলে নয়, হইবে হৃদয়-মন্দিরে, শুভবোধের পদতলে- এই আপ্তবাক্যখানি বাহির হইয়াছিল অন্ধ পূজারী পাপাত্মা রঘুপতির মুখ দিয়া। ইহাই যেন বিজয়- সত্যের, সুন্দরের আর গোবিন্দমাণিক্যের পরশপাথর স্বরূপ ও সৃষ্টির যাবতীয় পঙ্কিলতামুক্ত হৃদয়খানির।
বি.দ্র. প্রসঙ্গবহির্ভূতভাবে বলি এই অনতি দীর্ঘ বিরতি না ঘটলে বুঝিতাম না যে রবীন্দ্রনাথ আর বঙ্কিম আমার অন্তর্দেশে সাধুভাষার প্রতি এতখানি বিশেষ দুর্বলতা জন্মাইয়া তুলিয়াছেন। তাই আমি স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনার বিশেষ ধার না ধারিয়াই উপর্যুক্ত পাঠ প্রতিক্রিয়াখানি সাধুভাষায় লিখিবার লোভ সামলাইতে পারিলাম না।
'রাজর্ষি' আমার খুব ভালো লাগা একটি বই। এতে সুন্দর করে রাজার বর্ণনা কেউ করেনি।
এতে ত্রিপুরা রাজ্য কুমিল্লার কথাও বলা হয়েছে। খুব সুন্দর করে মানবতার কথা ছড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ মানুষের জন্য এটাই যেন মূলকথা।
"গোবিন্দমাণিক্য ত্রিপুরার রাজা। ছোট একটি মেয়ে তার ভাবনার চিন্তা উল্টো করে দেয়। তার শিশু মনে একটি প্রশ্ন জাগে, এত রক্ত কেন? হাসি মেয়েটি যেদিন এই রক্তের যাতনায় মারা যায় সেদিন রাজা গোবিন্দ্যও পৃথিবী দেখার নতুন চেতনা প্রাণ। অবলা প্রাণী হত্যার মাঝে দেবীপূজা হয় না তিনি অন্তরে উপলব্ধি করেন।
তিনি যখন দেবীর জন্য গো হত্যা নিষিদ্ধ করেন তখন শুরু হয় পুরোহিত রঘুপতির নানান ছলনা। তার হৃদয় এত কঠিন হয়েছে যে দেবীর কথাও সে আর শুনতে পায় না। তার জীবনের পরম প্রেম জগৎসিংহ যখন মারা যায় তিনি অন্ধ হয়ে যান, শুধু রাজার ধ্বংস কামনা করেন।
ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের যে অসীম শ্রদ্ধা তার বহিঃপ্রকাশ পায় নক্ষত্ররায়ের মাঝে। কুমন্ত্রণায় মানুষের চরিত্র পরিবর্তন হয় তা রবী ঠাকুর খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া ইতিহাসের যোগসূত্র করেছেন নান্দনিকভাবে। সুজা থেকে আরঙ্গজেবের রাজ্য শাসন ও এতে প্রতিলক্ষিত হয়।
মানুষের জন্য কিছু করার জন্য যে রাজার আনন্দ গোবিন্দমানিক্য যেন তার উজ্জ্বলতা। মানুষের জন্য কিছু করে মারা যাওয়াটা মানুষের জীবনের লক্ষ্য তা এতে ব��িঃপ্রকাশ পায়।
প্লটঃ ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্য দেবীর মন্দিরের পশুবলি বন্ধ করে দিলে এর ঘোর বিরোধিতা করেন রাজপুরোহিত রঘুপতি। এরই প্রেক্ষিতে তিনি রাজার বিরুদ্ধে তারই ভাই নক্ষত্ররায়ের সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র রাজার কাছে প্রকাশ হয়ে গেলে তিনি ওদের নির্বাসন দেন। যার ফলে রঘুপতি মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভাই শাহ সুজার সাহায্য নিয়ে রাজা গোবিন্দমাণিক্যকে সিংহাসনচ্যুত করার পরিকল্পনা করেন। সাথে যোগ দেন রাজার ভাই নক্ষত্র রায়। রঘুপতি কি পারবে গোবিন্দমাণিক্য কে সিংহাসন থেকে সরাতে?
★রিভিউঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস "রাজর্ষি" মোটামুটি ভালোই লাগলো। উপন্যাসের শুরুটা অত্যন্ত সুন্দরভাবে হয়েছে,চরিত্রায়ন ও সংলাপ যথাযথ। কিন্ত সমস্যা হলো উপন্যাসের শেষটা অত্যন্ত দ্রুত হয়ে গেল। লেখক উপন্যাসের শেষে বেশ তাড়াহুড়া করেছেন। আরেকটু সময় নিয়ে ঘটনাপ্রবাহের জাল বিস্তৃত করে উপন্যাসটা শেষ হলে আরও বেশি ভালো লাগতো।
This is my second book of Tagore after Gitanjali. This book is set on the backdrop of Mughal empire and about the king of Tripura, who since inception had an spiritual inclination. The very first page of the book will make you realise that the king is no ordinary king but very compassionate and having ascetic psyche. The second chapter of the book made me cry twice. The story moves on eventually you learn and lot, and the whole story makes you think several times about life, compassion, love, hatred, kinship, kingship, diplomacy, brahmanism, अंधविश्वास, stereotypes and many other vivid contours on human emotion.
একদিন ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্য সকালে নদীতে স্নান করতে গিয়ে হাসি ও তাতা নামের দুই ভাইবোনের দেখা পায়। তাঁর সাথে এই দুই ভাই বোনের অনেক ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একবার মহিষবলির পরের দিন, তাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় রাজা লক্ষ্য করেন- নদীর ঘাটে রক্তের দাগ। হাসি জিজ্ঞেস করে - "ও রক্তের দাগ কিসের?" রাজা উত্তর দিতে না পারায়, হাসি তার আঁচল দিয়ে নদীর ঘাট মুছতে থাকে। এর পরেই হাসি জ্বরে মারা যায় ও জ্বরের বিকারে বলতে থাকে— "ও রক্তের দাগ কিসের?"। এরপরই রাজা ঘোষণা দেন, রাজ্যে সব ধরনের বলি দেওয়া বন্ধ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসগুলোর মধ্যে আমার ভালোলাগার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে এই উপন্যাসটি। এত রক্ত কেন! হাসির এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা রাজা গোবিন্দমানিক্য রাজ্যে বলিদান বন্ধ করে দেন। কিন্তু আসলে কি বলিদান এখনও বন্ধ হয়েছে। এখন মনে হয় রবী ঠাকুরের তার সময়ে বসেও যা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন আমরা একবিংশ শতাব্দিতে বিজ্ঞানের চূড়ান্ত জয়জয়াকারের মধ্যেও বুঝি তা উপলব্দি করতে পারছি না। আমরা এখনও ধর্মের নামে বলিপ্রথা ধরে রেখেছি।