Buddhadeb Guha (Bengali: বুদ্ধদেব গুহ) is a popular Bengali fiction writer. He studied at the well-known St Xavier's College of the University of Calcutta.
His novels and short stories are characterized by their dreamy abstractness and romantic appeal. His essays reveal the soul of a true wanderer providing some of the most beautiful renditions of travel in Bengal. His love for forests and nature provide the background for many of his novels.
A highly successful chartered accountant by profession, and an accomplished musician, Guha is very urbane in his lifestyle. He was one of the first to create characters representing easy-going, upper middle-class modern Bengali families, whom readers could identify with, and that gave him instant popularity.
He is the recipient of many awards including Ananda Puraskar, 1976; Shiromani Puraskar; and Sharat Puraskar.
The Library of Congress has over fifty titles by him. His most famous novel, according to many, is Madhukori. It is considered a milestone in Bengali literature. He is also the creator of Rijuda, an imaginary character who moves about in jungles with his sidekick Rudra. The jungles that he wrote about were mainly in Eastern India.
এখানে লেখক মানুষের মনের কোণে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত বাসনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।গল্পের প্রেক্ষাপট বাংরিপোসি, বইএর পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে বাংরিপোসির প্রকৃতি। প্রথমেই বলি কিছু কিছু জায়গায় প্রিন্টিং এত খারাপ ছিল যে পড়তে খুব অসুবিধা হয়েছে। অরির চরিত্রটা বেশ লেগেছে, আসলে সে মেয়েদের মেয়ে দের মতো করে ভালোবাসতে জানে তাই হয়ত ভালো লেগেছে। পিকু চরিত্রটা একটা পাষন্ড,সে মেয়েদের মন তো বোঝেই না, সম্মান পর্যন্ত দিতে জানে না। সব মিলিয়ে পড়তে ভালোই লাগলো। লেখক এখানে একটা বড় মানের কথা বলেছেন যেটি আমার খুব ভালো লাগলো, সেটি এখানে উল্লেখ করছি - “বিয়ে মানে কি দুটি শরীরেরই নৈকট্যই? এক খাটে একজন পুরুষ আর একজন নারীর সহবাস? ছেলে বা মেয়ের বাবা কী মা হওয়াই কি বিবাহিত জীবনের পরম গন্তব্য? "
পরকীয়া সম্পর্কের গল্প এটি। গল্পের মূল চরিত্র কিশা (নায়িকা), তার হাসব্যান্ড পিকু, অরি ( নায়ক) আর আছে পিকু কিশার একমাত্র সন্তান টুবলু।তারা সকলে মিলে বেড়াতে যায় বাংরিপোসি।পাহাড়ের কোলে সবুজে মোড়া উড়িষ্যার ছোটো ঠিকানা বাংরিপোসি।কোনো বিখ্যাত স্থান না হলেও প্রকৃতির কোলে দুটো দিন নিভৃতে কাটানোর আদর্শ ঠিকানা। কিশা বিবাহিত হলেও অরি তাকে ভালোবাসে। অন্যদিকে কিশাও দুর্বলতা অনুভব করে অরির প্রতি, কখনো কখনো তার নিজেকে অরির কাছে শঁপে দিতে ইচ্ছা করলেও পেরে ওঠে না , দুজনে এক হতে পারে না মাঝে যে বড়ো বাধা সামাজিকতার, কিশা যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। শেষপর্যন্ত কি তারা সামাজিক বাধা পেরিয়ে এক হতে পারে ? অন্যদিকে বেড়াতে গিয়ে ২দিন যেতে না যেতেই হঠাৎ পিকু গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে একটি শিশুকে চাপা দিয়ে দেয়। এরপর ? পিকু কি তার পাপের শাস্তি পায়?
পরকীয়াকে গ্লোরিফাই করা ভালো লাগে না। বাস্তবে কিছু সিচুয়েশনে আত্মসম্মান সহ পিছিয়ে আসাই উচিত, যতই তা মনের বিরুদ্ধে হোক না কেন।যেহেতু এটি কাল্পনিক গল্প, তাই উচিত অনুচিতের প্রশ্ন হয়ত অবান্তর। আমার খুব ভালো লাগেনি।
This entire review has been hidden because of spoilers.
বুদ্ধদেব গুহের জটিল এক ভালোবাসার প্রেক্ষাপট নিয়ে ঝরঝরে উপন্যাস 'বাংরিপোসির দু' রাত্তির'। বাংরিপোসি, মূলত একটা জায়গার নাম ভারতের। সবুজ ঐ জনপদে বেড়াতে যায় গল্পের নায়িকা কিশা ও তার স্বামী সন্তান, নায়ক অরি। মূলত এখান থেকেই শুরু...
অরির জীবনে খুব ভুল সময়ে সঠিক মানুষ হয়ে এসেছিল কিশা। যাকে সে আগলে রাখতে চেয়েও পারেনি। যতই আঁকড়ে ধরতে গিয়েছে ততই দূরে সরে গিয়েছে। কোনদিন প্রান খুলে বলতেও পারেনি ভালোবাসি। অরি ভুলে যেতে চাচ্ছিল সবকিছু, কিন্তু ভালোবাসার তাঁতে যে একবার তাঁত বুনেছে, সে কি এত সহজে মুক্তি পাবে? অরি আবারো আজ অনেকদিন পরে তার সামনে। তবে আজ প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। অরির সঙ্গী এখন স্বামী সন্তান।
পুরো গল্পের প্রথম থেকেই পাঠক অনুভব করতে সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ এক সম্পর্কের। তার থেকে বড় হয়ে পাঠকের চোখে ধরা পড়বে, মনের সাথে বাস্তবতার বিষন্নতায় ভরা যুদ্ধের। এই লড়াই মনের সাথে মনের, শরীরের সাথে শরীরের। যেখানে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে একের অধিক প্রান।
গল্পের নায়িকার বসবাস ছিল দ্বিধায় বরা এক জগতে। একসময় যাকে সবথেকে ভালবেসেছিল আজ তার সঙ্গ তাকে আর বাস্তবতার স্বাদ দেয় না। তার কাছে মনে হয়, "বড় একঘেয়ে, বড় দাসত্বর, বড় ভুলে থাকা, ভুলিয়ে রাখার এই বিবাহিত জীবন। মেয়ে মাত্রই জানে।"
গল্পের অন্য মূল চরিত্র অরির, হাঁপিয়ে উঠেছে বাস্তবে বাস করতে করতে। তাইতো সে নিজের প্রতি বিরক্ত হয়ে বলে, "বাস্তব বড় একঘেয়ে। চরম আনন্দও পুরোনো হয়ে যায়। পরম পাওয়াও অভ্যাসের কানীন হাতে কলুষিত হয়। তার চেতে এই-ই ভাল। কিশা তাঁর স্বপ্নে থাকুক, তার মনে, তার শরীরে; প্রতি মুহূর্তে।"
বুদ্ধদেবের গুহের লেখার তুলনা শুধু সেইই। এত্ত সুন্দর করে প্রতিটা ডিটেইলস হাজির করেন চোখের সামনে, মনে হয় চরিত্র গুলোকে বুঝি হাত দিতে একটু হলেই ছোঁয়াই যাবে। মাঝেমধ্যে শরীর শিহরে উঠে, মগজ জুড়ে প্রিয় মানুষের ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে। চোখের সামনে ভেসে উঠে তাদের, যারা একসময় ছিল আমাদের। ভালোলাগার এক ঝড় উঠে আমার প্রতিটা লোমকূপে।
তবে এই বইয়ে বেশ ভালো একটা এন্ডিং থাকলেও, চরিত্রগুলো ততটা শক্তিশালী হতে পারেনি। আশপাশের চরিত্রও আগের লেখার মত করে, রাখেনি কোন বড় ভূমিকা।
তবে দিনশেষে এই বই একটা সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ সম্পর্কের বই এবং অবশ্যই অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নয়। আর যারা অবিবাহিত তাদের এই বই না পড়াই ভালো। বিবাহ নামক সামাজিক "অস্থিরতার" উপরে হয়ত রাগই ধরে যাবে।
প্রথম থেকে লেখক এত্তই বিরক্ত ছিলেন বিবাহের উপর, বইয়ের শুরুতেই নায়কের মুখ দিয়ে লেখক প্রশ্ন ছুঁড়েন, "বিয়ে মানে কি দুটি শরীরেরই নৈকট্যই? এক খাটে একজন পুরুষ আর একজন নারীর সহবাস? ছেলে বা মেয়ের বাবা কী মা হওয়াই কি বিবাহিত জীবনের পরম গন্তব্য? এই ভুলে থাকা, ভুলে যাওয়া, এই চোখে ঠুলি পরানো জ্যান্ত ও জান্তব পুতুল খেলা?"
অরি এক পোড়খাওয়া এতিম ছেলে। অন্যদিন, কিশা পিকুর স্ত্রী হলেও অরির বড় ভালো লাগে তাকে। তারা সবাই বাংরিপোসিতে বেড়াতে আসে দুই রাতের জন্যে। কাছাকাছি এসে একে একে প্রকাশিত হয় অনেকের চরিত্রের ভেতরের দিক, যা দিনের বেলা মুখোশের আড়ালে থাকে। কিশা কি অরির ভালোবাসা বুঝতে পারে? নাকি, বেছে নেয় তার যাপিত বাধা জীবন? - এ টানপোড়নের গল্প নিয়েই এগিয়ে চলে কাহিনী।
"Bangriposir Du Ratri" (Two Nights at Bangiriposi), is a novel by the celebrated Bengali writer Buddhadev Guha. I stumbled upon the book while browsing the internet. I was immediately hooked, as Bangiriposi is close to my ancestral village, Jagannath Khunta, and is filled with childhood memories.
Bangriposi was the terminal point of a narrow gauge railway line, now converted to broad gauge. During my childhood, we visited Bangriposi every time we vacationed in our village. I still remember the panoramic beauty of the place, complete with its hills, forest, and rapid-flowing rivulets.
The novel transports three adult characters from their mundane city lives into this wild, magical environment. Among them are a married couple and an unmarried, affluent bachelor in his forties, still searching for his life partner. He finds the lady accompanying them intellectually compatible and appreciates her human values and attitudes. The moonlit nights at Bangriposi play a pivotal role in the unfolding of the plot. The characters’ secret desires simmer, but societal norms and lurking dangers—akin to the wild nature—restrain their passions.
The husband, portrayed as selfish and cruel, inadvertently fuels the attraction between his wife and the other man. Yet, physical manifestations of their longings remain elusive. Buddhadev Guha tantalizes readers, leaving much to the imagination. However, scenes like a snake’s ferocity (and its ruthless killing by the husband) and a tragic road accident compensate for the lack of overt physical action.
In these two nights at Bangriposi, the characters’ inner fulcrum is fully revealed. The novel evokes echoes of “Lady Chatterley’s Lover,” exploring love, desire, class, gender, and sexuality. In this novel Bangriposi plays a significant role as a perfect foil to the artificial, busy, and selfish life of Kolkata, stripping the characters of all their pretensions.
কিশা, তার বর পিকু, ছেলে টুবলু, পিকুর বন্ধু অরি, এই চারজনের বাংরিপোসি যাওয়া এবং সেখানে দু দিনের ঘটনা এবং দুর্ঘটনা নিয়ে এই গল্প। অরি একদম ক্লাসিক্যাল সিনেমার নায়ক, পেশাগতভাবে প্রচন্ড সফল, অবশ্যই ধনী এবং রুচিশীল একটি চরিত্র। পুরোনো প্রেমকে ভুলতে না পারা তার প্রধান অন্তরায় নতুন সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে। আশেপাশে কিশার জ্বাজ্যল্যমান উপস্থিতি বারবার তাকে আকর্ষণ করে, অথচ তারপরেই তার মনে পড়ে যায় যে কিশা বিবাহিতা। যত সে কিশার কথা ভাবে, তত বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির ওপর, এবং শ্বেতকেতু মুনির আরোপ করা বৈবাহিক বিধিনিষেধ (Dos and Don’ts) এর ওপর অরির বিতৃষ্ণা জন্মাতে থাকে।
অন্যদিকে পিকুর চরিত্রটি যেন কালি লেপে আঁকা, সে খল, কুটিল বুদ্ধি। মানবচরিত্রের যাবতীয় সুকুমার প্রবৃত্তি তার মধ্যে আশ্চর্য রকম অনুপস্থিত। অমন সুন্দর প্রকৃতির মধ্যে কিশার সাথে খানিক রোমান্টিক কথোপকথন তো দুরের কথা, স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মানটাও পিকু দেয়না।
এই দুজন বিপ্রতীপ পুরুষের মাঝে কিশা একজন দোলাচলে ভোগা মানুষ। পিকুর সাথে ঘর করতে করতে তার নিজস্ব ভালোখারাপ লাগা, আত্মসম্মানের নটেগাছটি মুড়িয়ে এসেছে প্রায়। অরির অনুচ্চারিত আবেগের সারজল পেয়ে মাঝেসাঝে আবার সেইসব অনুভূতি জেগে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে পড়ে যায় সে কেবল পিকুর বৌ নয়, টুবলুর মা ও বটে।
এসব নিয়েই গল্প। তা পড়তে পড়তে কলেজের এক সিনিয়রের কথা মনে পড়ে গেল। সে ছিল ধুরন্ধর কিপ্টে। আমাদের গ্যাঙ তখন প্রায় শুঁয়োপোকার মতন, সামনে যাই পায় চিবিয়ে ছিবড়ে করে দেয়, তারা অব্দি কোনোদিন সেই সিনিয়রের কাছ থেকে একটি আধুলি অব্দি খসাতে পারিনি। তো সেই দাদা পড়ল প্রেমে। একদিন দুজনকে ক্যান্টিনে দেখে আমরা কজন সদাক্ষুধার্ত বালক চুপিচুপি গিয়ে খাওয়ানোর আবদার করলাম। সবাইকে অবাক করে দাদা সেদিন চাউমিন খাইয়ে দিলো। তারপর মাঝেসাঝে এদিক ওদিক দেখা হলে কখনো কুলফি, কখনো বা বাদামভাজা ইত্যাদি ইত্যাদি। মাসকয়েক পর হঠাৎ দাদা আবার যে কে সেই, ঝালমুড়ি খাওয়ানোর আবদারে সেই আগেকার মত পকেট উল্টে দেখিয়ে দিলো। তৎকালীন বৌদি আমাদের হয়ে কিছু একটা বলতে গিয়ে দাবড়ানি খেয়ে গেলো।
এখন এল এইচ এস ইজ ইক্যুয়াল টু আর এইচ এস করে যদি দেখি, মনে হয় খুব চড়া সাদা আর কুচকুচে কালো রঙে আঁকা অরি আর পিকু, দুটোই আমাদের মধ্যেরই লোক নয় কি? হয়তো আমরা আসলে পিকু, কাউকে ইমপ্রেস করতে চাইলে, বা কিছু পাওয়ার থাকলে কিছুক্ষণের জন্য অরি হয়ে যাই। আবার কাজ হাসিল হলে অরির টাই কোট ছেড়ে পিকুর গেঞ্জি বারমুডা গলিয়ে ফেলি।
বিষয়বস্তু:- অরি, পিকু, কিশা ও টুবুল বাংরিপোসির বাংলোয় ঘুরতে আসে। অরি তার অতীত জীবনে যে মেয়েটিকে ভালোবেসেছিল সে তাকে ছেড়ে গেছে বহুদিন। বর্তমানে পিকুর স্ত্রী কিশাকে ভালোবেসে ফেলেছে সে। অন্যদিকে কিশা ও পিকুর দাম্পত্য সম্পর্ক ক্রমশ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শ্বেতকেতুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কিশাকে সবার সামনে দিয়ে মাথা উঁচু করে নিয়ে যেতে চায় অরি, আবার পরক্ষণেই স্বামী-স্ত্রী-পুত্রের সুখী সংসার দেখে কিশার জীবনে নিজেকে বাইরের লোক বলে মনে হয় তার। তাদের এই অসামাজিক, পরকীয়া প্রেমের পরিণতি কী? কিশা কি তার সাজানো সংসার, তার সন্তানকে ছেড়ে অরিকে বেছে নেবে? নাকি শুধুমাত্র অভ্যেস আর সংস্কারের বশে অসুখী দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখবে দিনের পর দিন?
পাঠ অনুভূতি:- "এর বেশ একটা নেশা আছে। এই পরকীয়ার । এই লজ্জামাখা ভয় ভয় গোপনীয়তার, এই ভালোবাসার ; এই ঝুঁকির।" এই উপন্যাসের মূল বিষয় পরকীয়া প্রেম। পিকু ও কিশা স্বামী- স্ত্রী, তাদের সন্তান । "পুরুষ আর নারীর শারীরিক সম্পর্কর মতোই, রুচি- অরুচি, পছন্দ- অপছন্দ, দেখা- না দেখা কত অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত দাম্পত্য সম্পর্কে।" অথচ কিশার উপলব্ধি "ওর সঙ্গে রুচির,সংস্কারের, মানসিকতার কোথায় যেন এক গভীর বিরোধ আছে পিকুর।" এ যেন শুধুই অভ্যেস আর সংস্কারের বশে একসঙ্গে থাকা, সন্তান আর শ্বশুর বাড়ির সকলের মুখের দিকে চেয়ে। এই বন্দি জীবনে অরি তার কাছে খোলা বারান্দার মতো। একটা অ্যাক্সিডেন্টের পর পিকুর চরিত্রের স্বার্থপরতা, অকৃতজ্ঞতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবুও কিশা পিকুকে বাঁচানোর কথাই আগে ভাবে, কারণ সে তার সন্তানের জনক। কিশা খুব বেশি হলে সবার অগোচরে দু- একটা চুমু খেতে পারে অরিকে, তবুও অপমান, অসম্মান সত্ত্বেও পিকুকে ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে পারে না। সমাজ, সংস্কার, সন্তান তাকে সংসারের নাগপাশে বেঁধে রেখেছে। তাই সবকিছুর পরেও সে বলতে বাধ্য হয়, "কিন্তু আমি যে ওর স্ত্রী, ওর ছেলের মা। আমার তো কোনো বিবেক নেই, ভবিষ্যৎ নেই আলাদা, ওর সঙ্গে আমি যে এক হয়ে গেছি।" উপন্যাসটি নারী - পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে ভাবায়। তাছাড়াও এতে আছে প্রকৃতির নিখুঁত বর্ণনা –নিমফুল, করৌঞ্জ, চাঁপা ফুলের ঘ্রান, বৃষ্টিভেজা ও জ্যোৎস্নাস্নাত বাংরিপোসির সৌন্দর্য্য। সবমিলিয়ে এ উপন্যাস পাঠককে নিরাশ করবে না।
কলকাতা থেকে সুদূর বাংরিপোসিতে দুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে অরি, পিকু, কিশা আর টুবলু। জঙ্গলের মধ্যে এসে অরি সামাজিক বাধা-বিপত্তির কথা মাথা থেকে সরিয়ে পিকুর স্ত্রী কিশার সান্নিধ্য প্রত্যাশা করে, তবে শুধু দুরাতের জন্য নয়, সারাজীবনের জন্য। সংকীর্ণমনা, স্বার্থপর, গড়পড়তা স্বামী পিকুর থেকে কিশাও মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু অন্যতম বাধা তাদের ছেলে টুবলু।
প্রথম রাতের অভিসার সফল হলেও দ্বিতীয় দিনেই ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। পিকুর মতো ভীতু, সংকীর্ণমনা মানুষের চরিত্র আরো বেশি করে প্রকট হতে দেখা যায়। এর মধ্যে অরি কিছুটা হলেও নতুন ভাবে আবিষ্কার করে কিশাকে।
দ্বিতীয় রাতে অরি আর কিশার মধ্যে এমন অনেক কিছু কথা বলা, না বলা হয়ে থাকে।
তবে গল্পের মূল ব্যক্তি এক পৌরাণিক চরিত্র, শ্বেতকেতু। শ্বেতকেতুকে অরি বার বার তার ভাবনার মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছে, নিন্দে করেছে।
স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গল, প্রকৃতির সুন্দর বর্ণনা রয়েছে বুদ্ধদেব বাবুর লেখায়। অরির আত্ম-বিশ্লেষণ গল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পিকুর চরিত্র ভালো হলে তাহলে গল্পে একটা দ্বন্দ্ব দেখা যেত।
"ঘর যতখানি সত্য বারান্দাও ততক্ষাণি সত্য। যদি কোনো নারী বলেন যে, তাঁর মনকে তিনি ঘরের মধ্যেই আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছেন চিরদিন, তাহলে হয় তিনি সত্য কথা বলেন না; নয়ত তিনি আত্মবঞ্চনাতে বিশ্বাস করেন।"
প্রেমহীন জীবনে প্রতি মুহূর্তে দগ্ধে মরছে অরি। কিন্তু এর জন্য দায়ী কে? তার প্রাক্তন প্রেমিকা রুমি- যে তার সাথে ভালোবাসার নামে প্রতারণা করেছে? নাকি কিশা- যে স্বামী পুত্রের বাঁধন ছিড়ে অরির কাছে আসতে পারছে না? নাকি এসবের মূলে রয়েছে উদ্দালক পুত্র শ্বেতকেতু- যে বিবাহের সূচনা ঘটিয়ে নারী জাতিকে শিকল পরিয়েছে?
বুদ্ধদেব গুহের অন্যান্য উপন্যাসের মত পাঠক এখানেও খুঁজে পাবেন প্রকৃতির মনোরম বর্ণণা। এই উপন্যাস পড়তে বসে পাঠকের ভাবনার জগত নাড়া খাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শক্ত শব্দবাধুঁনির এই উপন্যাস এক বসায় পড়ে শেষ করার মত। ব্যক্তিগত রেটিং: ৩/৫
জটিল এক ভালোবাসার প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা উপন্যাস হলো এটি। কিশা, পিকু এবং অরির কাহিনী নিয়ে লেখা বই। পিকু চরিত্রটা একটা পাষন্ড, অরির চরিত্রটা বিরক্তিকর এবং কিশা কে নিয়ে কিছুই বলার নেই। চরিত্রগুলো ততটা শক্তিশালী হতে পারেনি।
বুদ্ধদেব গুহের অন্যান্য উপন্যাসের মত এখানেও প্রকৃতির মনোরম বর্ণণা রয়েছে।
"ভালোবাসার তাঁতে যে একবার তাঁত বুনেছে, সে কখনওই জিততে পারে না। কোনোদিনও না।"
"যে সম্পর্কের ভিত নড়ে গেছে, যাতে আর আন্তরিকতা নেই, তাকে ছিন্ন করাই শ্রেয়। একরকমের মুক্তি তো।"
"বিয়ে মানে কি দুটি শরীরের নৈকট্যই? এক খাটে একজন পুরুষ আর একজন নারীর সহবাস? ছেলে বা মেয়ের বাবা কি মা হওয়াই কি বিবাহিত জীবনের পরম গন্তব্য? এই ভুলে থাকা, এই ভুলে যাওয়া, এই চোখে ঠুলি পরানো জ্যান্ত ও জান্তব পুতুল খেলা? ব্যস্ এই-ই সব? নিজের আমিত্বকে, নিজের স্বাতন্ত্রকে এমন করে মাটি চাপা দিয়ে সেই কবরের উপর দাম্পত্য জীবনের ফুল ফোটানোর চেষ্টার মধ্যেই কি বিয়ের সবটুকু সার্থকতা?"
"টাকা তো ফেরত হয়ই। কিন্তু যে সময়ে যা দেওয়া যায়, সেই সময়ের মূল্য কি শোধা যায় কখনও কাউকে? আর ভালোবাসা?"
"তবু কেন? কেন এমন ভিখারি সাজানো নিজেকে, এত ছোট করা, এত কষ্ট পাওয়া? আরও কষ্ট পেতে হবে জেনেও?"
"ভালোবাসা এমনই। লুকিয়ে থাকে, লুকিয়ে আসে, লুকিয়ে ফোটে আবার কোনোদিনও এমনি করেই লুকিয়ে ঝরে যায়। তার আসা-যাওয়ার, বাসা-বাঁধার, ঝরে-যাওয়ার শব্দ শোনা যায় না কানে। দেখা যায় না তাকে।"
"কল্পনা বড় কষ্টের। কল্পনায় কাউকে পাওয়া আনন্দের নয়, বড় প্রলম্বিত যন্ত্রনার তা, বড় অভিশাপের। বাস্তবের পাওয়া স্বল্পকালের। কিন্তু বাস্তবে পাওয়ার পর আর সে কল্পনা থাকে না।"
"বাস্তব বড় একঘেয়ে। চরম আনন্দও পুরানো হয়ে যায়। পরম পাওয়াও অভ্যাসের কানীন হাতে কলুসিত হয়।"
"কচুরিপানার দিন বুঝি শেষ হল। নোঙর পেয়েছে ওর মন। এখন আর ঝরের নদীতে মোচার খোলার মতো ভাসাবে না।"
"ভালোবাসার সব আনন্দ ভালোবাসারই মধ্যে। বদলে সে কি পেল তার মধ্যে তার মূল্য একেবারেই বদ্ধ নয়।"
"রবীন্দ্রনাথের গানের মানে শ্রোতার বিভিন্ন বয়সে বিভিন্নতায় বুঝি ভাস্বর হয়ে ওঠে মস্তিষ্কের আর অনুভূতির কোষে কোষে।"
"সময় বড় দ্রুত যায়, শেষ হয়ে যায় জীবন। আর কতদিন? কতকাল তোমার জন্য এমনি করে বসে থাকব আমি?'
"কে যে কী পেয়েছে জীবনে, আর কে যে কী চায়, তা কেউই জানে না। যা পেয়েছে, তার দাম নেই কানাকড়ি কারও কাছেই। আর যা পায়নি, তার জন্য কাঙালপনা।"
"বইয়ের মতো বন্ধু হয় না, বইয়ের জগতের মতো জগৎ আর দুটি নেই। বই দুঃখ দেয় না, ধার শোধ না দিয়ে নিজেকে ছোট এবং বন্ধুকে ব্যথিত করে না। বইয়ের ঈর্ষা নেই, বই পরশ্রীকাতর নয়, যারা জীবনে অনেক করেছে অন্যের জন্য এবং বদলে অনেক বঞ্চিত ও অপমানিত হয়েছে, তাদের কেবল বইয়ের জগতে বাস করাই ভালো। তাতে শুধু আনন্দ।"
"ইচ্ছাভরা ভাবনায় ভর করে মানুষ নিজে যা নয়, নিজেকে তাই-ই কল্পনা করে কিছুক্ষণের জন্যে নিজের কাছে এবং পরের কাছেও এক ক্ষণিক উচ্চতায় ও প্রাপ্তিতে, নিজেকে উন্নত ও প্রাপ্ত করে। যা আমাদের সাধ তার অনেকই কম হয়। প্রত্যেকেরই। আমরা যে হেরে যাই জীবনের কাছে, প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে, ভাগ্যের কাছে, এই হারটা আমাদের মধ্যের আমিত্ব বড় সহজেও অবলীলায় স্বীকার করতে রাজি থাকে না।"