সৃষ্টির আদিতে কিছুই ছিল না ইহসংসারে – এক শূন্য ছাড়া। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে ‘শূন্য’ থেকেই সবকিছুর উৎপত্তি। অর্থাৎ ‘নাই’তেই ‘আছে’র জন্ম। ধাঁধার মতো লাগছে তো? ধাঁধাই বটে, কিন্তু মিথ্যে নয়। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যার মহাপণ্ডিতদের দৃঢ় বিশ্বাস যে তার সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রকৃতির মাঝেই প্রতীয়মান শুধু নয়, বহুলাংশে দৃশ্যমানও। এই ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বইটি সেই আধুনিক বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যপ্রমাণগুলোর গ্রন্থিত রূপ। এই বইটির লেখকদের একজন পেশাগত জীবনে গণিতবিদ, এবং অন্যজন পেশায় প্রকৌশলী এবং পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে জনপ্রিয় ধারার লেখালিখির সাথে জড়িত। শূন্য নিয়ে দুজনেরই আগ্রহ অসীম। বাংলা ব্লগে, পত্রপত্রিকায় এবং অন্যত্র বহু প্রবন্ধ আমরা লিখেছি শূন্যের মায়াবী রহস্য নিয়ে। আমাদের একজন গণিতবিদের চোখ দিয়ে শূন্যতাকে দেখেছে, অন্যজন পদার্থবিজ্ঞানের চোখ দিয়ে। এই বইটি আমাদের দুই শ্যেনদৃষ্টির সম্মিলন।
হ্যাঁ, শূন্য নিয়ে বরাবরই আমাদের দুর্বিনীত কৌতূহল। শূন্য যেন আমাদের দিয়েছে অসীমকে জানার প্রেরণা। আসলে শূন্য আর অসীম – একই সাথে পরস্পরের প্রতিচ্ছবি ও প্রতিপক্ষ। দুয়ে মিলে রচনা করেছে সংসারের গূঢ়তম রহস্যের আধার। প্রাচীন গ্রিক দর্শনে এরা সৃষ্টি করেছিল বিতর্ক এবং সংশয়, ভারতীয় চিন্তায় আধ্যাত্মবাদ ও দৈবাত্মার দ্বৈতসত্ত্বাবোধ, এবং সেই বোধেরই ফলে গঙ্গার কল্যাণবহ সলিলধারার মতো জন্ম নিয়েছে গণিতের ‘শূন্য’। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও আর শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি যে গণিতকে ‘প্রকৃতির ভাষা’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন, তা এমনি এমনি নয়। গণিতের পাশাপাশি বইয়ে এসেছে পদার্থবিজ্ঞানের শূন্যতার ধারণাও। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের চোখে শূন্যতাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কোয়ান্টাম জগতের শূন্যতা এখনো আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীদের জন্য এক মূর্তিমান রহস্যের আঁধার,বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি রহস্য উদঘাটনের স্বপ্নের জীয়নকাঠি। তাই শূন্য ব্যাপারটা চির-পুরাতন হয়েও যেন চিরনবীন। স্টিফেন হকিং,স্টিফেন ওয়েনবার্গ,অ্যালেন গুথ, আঁদ্রে লিন্ডে, আলেকজান্ডার ভিলেঙ্কিন, লরেন্স ক্রাউসসহ মূলধারার প্রায় সকল পদার্থবিজ্ঞানী আজ মনে করেন, আমাদের এই মহাবিশ্ব একটি ‘কোয়ান্টাম ঘটনা’ হিসেবেই একসময় আত্মপ্রকাশ করেছিল কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে একেবারে ‘শূন্য’ থেকে। পশ্চিমে বিগত কয়েক বছরে এই ধারণার ওপর গবেষণাপত্র তো বটেই, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞানের বইও প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো লিখেছেন এ বিষয়টি নিয়ে হাতে-কলমে কাজ করা প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে এম.আই.টির অধ্যাপক অ্যালেন গুথের ‘The Inflationary Universe’, রুশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ভিলেঙ্কিনের ‘Many Worlds in One’,বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং–ম্লোডিনোর ‘The Grand Design’,বিজ্ঞানী লরেন্স ক্রাউসের ‘Universe from Nothing’ বইগুলো উল্লেখ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলায় এই বহুল আলোচিত ধারণাটির ওপর কোনো পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ এর আগে প্রকাশিত হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের এই ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বইটি সেই অভাব অনেকাংশে পূরণ করবে।
বইটি লেখার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য আমাদের – বাংলাভাষী কিশোর ও তরুণদের মধ্যে আগ্রহ ও কৌতূহল সংক্রমিত করা। আজকের দিনের ছেলেমেয়েদের অনেকেই গণিত অলিম্পিয়াড কিংবা পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে, কিংবা ভবিষ্যতেও করবে। অনেকেই হয়তো বড় হয়ে পদার্থবিজ্ঞান কিংবা গণিত নিয়ে পড়াশোনা করবে। ধারণা করি তারা ‘শূন্য’কে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে শিখবে আমাদের এ বইটি পড়ার পর। ‘গণিত’ অথবা ‘বিজ্ঞান’ কোনো ভীতিকর জন্তুর নাম নয় – এরা জীবনের প্রতিটি আনাচে-কানাচে বন্ধুর মতো, প্রিয়জনের মতো, প্রতিক্ষণে উপস্থিত।
তবে বইটি কেবল শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা ভাবলে বিরাট ভুল হবে। বইটিতে ঘটানো হয়েছে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে আধুনিক ধারণাগুলোর সমাবেশ। সে ধারণাগুলোর অনেকগুলোতেই রয়েছে জটিল গাণিতিক বিমূর্ততা। সেগুলো সাধারণ পাঠকদের জন্য জনবোধ্য ভাষায় প্রকাশ করা অনেকাংশেই দুরূহ। তার পরও আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের সাধ্যমতো। আমরা মনে করি বইটি সকল বয়সের পাঠকদেরই তৃপ্ত করবে যারা গণিত ও বিজ্ঞান ভালোবাসেন। বিশেষ করে যারা দর্শন, গণিত ও বিজ্ঞানের প্রান্তিক সমস্যাগুলো নিয়ে উৎসাহী; আর এ নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের কাজের হদিস পেতে আগ্রহী, তারা এই বইটিতে ভাবনার অনেক নতুন উপকরণ খুঁজে পাবেন।
আমাদের বইয়ের বেশ কিছু অংশ মুক্তমনা ব্লগে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধগুলো প্রকাশের সময় আমরা পাঠকদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো পাণ্ডুলিপির সংশোধন ও মানোন্নয়নে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। মুক্তমনা ছাড়াও বিডিনিউজ২৪ এবং ‘জিরো টু ইনফিনিটি’ পত্রিকায় বইটির কিছু কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে। ফেসবুকে অনেক সময়ই ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বইটির পেজটিকে ঘিরে চলেছে নিরন্তর আলোচনা। অনেকেই ইমেইল করে বা ম্যাসেজ দিয়ে বইটি প্রকাশের তাগাদা দিয়েছেন। বিশেষ করে আমেরিকা-প্রবাসী জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও সুলেখক ড. দীপেন ভট্টাচার্যের কথা আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয়। তিনি পুরো পাণ্ডুলিপি গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়েছেন, জায়গায় জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর মূল্যবান সংযোজন ও পরামর্শগুলো বইটিকে প্রায় নিখুঁত করে তুলতে সাহায্য করেছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এসেছে অস্ট্রেলিয়া নিবাসী পদার্থবিদ ড.প্রদীপ দেবের কাছ থেকেও। তাঁদের মূল্যবান পরামর্শ বইটির মান বৃদ্ধি করেছে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। ফ্লোরিডা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ এবং উদীয়মান লেখক রায়হান আবীরের মূল্যবান অভিমতগুলোও প্রণিধানযোগ্য। ‘বিবর্তনের পথ ধরে’ গ্রন্থের লেখক বন্যা আহমেদও পাণ্ডুলিপির মানোন্নয়নের ব্যাপারে নিরলস ভাবে সাহায্য করেছেন। পাণ্ডুলিপিতে থেকে যাওয়া বহু জটিল বাক্য ভেঙে-চুরে সহজ করে দিয়েছেন। তার এ সংশোধনীগুলো বইটিকে দিয়েছে বাড়তি গতিময়তা। তাদের সকলের কাছেই আমরা ঋণী। আমরা দুজন লেখক বয়সের বিচারে প্রায় ভিন্ন দুই জগতের অধিবাসী। আমাদের সময়, সমাজ, অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে লেখার ধরন পর...
Mizan Rahman (in Bengali: মীজান রহমান) was a Bangladeshi-Canadian mathematician and writer. He specialized in fields of mathematics such as hypergeometric series and orthogonal polynomials. He also had interests encompassing literature, philosophy, scientific skepticism, freethinking, and rationalism. He co-authored Basic Hypergeometric Series with George Gasper. This book is widely considered as the standard work of choice for that subject of study. He also published several Bengali books.
Apart from his teaching and academic activities, Rahman wrote on various issues, particularly on those related to Bangladesh. He contributed to Internet blogs and various internet e-magazines, mainly in the Bengali language, covering his interests. He was a prolific writer and a regular contributor to Porshi, a Bengali monthly publication based in Silicon Valley, California. He was also the member of the advisory board of the Mukto-Mona, an Internet congregation of freethinkers, rationalists, skeptics, atheists and humanists of mainly Bengali and South Asian descent.
তিন আর চারের মধ্যে। ক্রমাগত অপরিচিতিতা বাড়ছিল, স্বাভাবিক ব্যাপার অবশ্য। আর এজন্য কঠিনও লাগছিল। মাঝে হাঁপিয়ে উঠে অন্য বই ধরেছিলাম। পুনারাবৃত্তির সমস্যা এটাতেও আছে। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, দুইজনেই যেহেতু অনেক পড়েছেন সেজন্যই সম্ভবত অপ্রোয়জনীয় কিছু যেমন, বিজ্ঞানীদের জীবনী (তাও অনেকটা বিশদভাবে), ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ টাইপের কিছু কথা দেয়ার লোভটা সামলাতে পারেননি। অবশ্য এ টাইপের লেখা কঠিন কঠিন লেখার মাঝে বেশ আরামও দিচ্ছিল। ব্লগ পোস্ট থেকে বইয়ে রূপান্তরে অনেক কাজ করেছেন কিন্তু আরো কাজ করার সুযোগ ছিলো। তবে কথা হচ্ছে, এরকম রেফারেন্স ওয়ালা বিজ্ঞান বই বাংলা ভাষায় খুব কমই আছে। দু'জন লেখকই আর নেই। একজনকে তো খুন করা হয়েছে। হারালাম অনেক কিছু।
বাংলায় বিজ্ঞানের মৌলিক লেখা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি নেই। যা আছে তারও অধিকাংশকে সাহিত্যের বিচারে মানোত্তীর্ণ বলা যায় না। এই বইয়ের লেখক ড. মীজান রহমান আর ড. অভিজিৎ রায়, দুজনেই সুলেখক হিসেবে পাঠকনন্দিত। দুজনেরই একাধিক পাঠকপ্রিয় বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাভাষী পাঠকদের সৌভাগ্য, বাংলা ভাষায় দক্ষ দুজন সুলেখক এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বই লেখার কাজ নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ফলে, আমরা শুধু একটা অমূল্য বিজ্ঞানের বই-ই পাইনি, পেয়েছি প্রাঞ্জল, সুখপাঠ্য, মজাদার একটা বই, একটা অত্যন্ত উঁচুমানের সাহিত্যগুণ-সমৃদ্ধ রচনা। এই বই নিঃসন্দেহে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান-সাহিত্যের সম্ভারকে সমৃদ্ধ করবে। এই বইটা বাংলার সাহিত্যানুরাগীদের জন্য একটা দুর্লভ উপহার, তার ওপরে বিষয়ের আধুনিকতা আর অভিনবত্ব তো আছেই। বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে এই বইটা শুধু একটা সংযোজনা নয়, অচিরেই একটা যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে পরিচিত হবেআমার দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখকদ্বয় শুধু লেখক হিসেবেই পরিচিত নন, দুজনেই প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীএকজন গণিতজ্ঞ, আরেকজন প্রকৌশলী। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা তাঁরা মুক্তচিন্তক, মুক্তমনের অধিকারী। বিজ্ঞানমনস্কতা তাঁদের মননে, চিন্তায়, চেতনায়। নইলে যত বড় বিজ্ঞানীই হোন না কেন,এই বই তাঁদের পক্ষে লেখা সম্ভব হতো না। আর এজন্যই এই বইটা বিজ্ঞানের অন্য অনেক বই থেকে স্বতন্ত্র।
ভূমিকায় তাঁরা লিখেছেন, “মুক্তবুদ্ধি, বৈজ্ঞানিক চেতনা,যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদকে আমরা এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে মূলমন্ত্র মনে করি”। তাঁরা এই মন্ত্র জপেছেন বইয়ের পাতায় পাতায়, আর পাঠকদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন মুক্তবুদ্ধির চেতনায় সমৃদ্ধ হতে। এই বইয়ের সবচেয়ে বড় অবদান চেতনার সেই সমৃদ্ধি।
অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি,ইউএসএ; ‘আমার চোখে একাত্তর’ গ্রন্থের লেখক।
***************
এক কথায় অনবদ্য। বাংলা ভাষায় লেখা যতগুলো বিজ্ঞানের বই আমি পড়েছি তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা বই প্রফেসর মীজান রহমান ও ড. অভিজিৎ রায়ের ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’। গাণিতিক শূন্য থেকে শুরু করে লেখকদ্বয় কী অবলীলায় ব্যাখ্যা করেছেন মহাশূন্যের পদার্থবিজ্ঞান। এ যেন বিজ্ঞানের এক মহাকাব্য, বিশাল তার ব্যাপ্তি, অথচ একটা এপিসোড থেকে অন্য এপিসোডের মাঝখানে নেই কোনো তাত্ত্বিক শূন্যতা। ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ পড়ে মুগ্ধতায় যেমন পূর্ণ হয়েছি, তেমনি সমৃদ্ধ হয়েছি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের যুগান্তকারী সব তথ্যে ও তত্ত্বে। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনায় ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
ড. প্রদীপ দেব পদার্থবিজ্ঞানী, অস্ট্রেলিয়া; ‘আইনস্টাইনের কাল’ গ্রন্থের লেখক।
***************
অধ্যাপক মীজান রহমান ও ড.অভিজিৎ রায় লিখিত ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বইটি গণিতের শূন্যের মূর্ছনার ঘোড়ায় চড়িয়ে পাঠককে নিয়ে যাবে শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে বর্তমান কালের সেরা বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিকতম ধারণার এক বৈজ্ঞানিক সংগীতানুষ্ঠানে। ‘সৃষ্টির সূচনা’ ধর্ম ও বিজ্ঞান দুটি প্রতিষ্ঠানেরই আগ্রহের বিষয়, যদিও দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া উত্তর সম্পূর্ণ আলাদা। আধুনিক বিজ্ঞান থেকে পাওয়া ফলাফল থেকে আমরা আজ বুঝতে পারছি মহাপরাক্রমশালী কোনো সত্ত্বার হাতে মহাবিশ্ব ‘সৃষ্টি’ হয়নি। বরং মহাবিশ্বের ‘উদ্ভব’ ঘটেছে শূন্য থেকে, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে। সভ্যতার এ পর্যায়ে এসে বিজ্ঞান তার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মহাবিশ্বের উদ্ভব এবং আমাদের অস্তিত্বের রহস্য উন্মোচনে। বাংলাভাষী বিজ্ঞান ও দর্শনে কৌতূহলী পাঠকের অবশ্যপাঠ্য তাই এই বইটি।
রায়হান আবীর গবেষক, বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্সঅ্যান্ড টেকনোলজি, ঢা.বি; ‘মানুষিকতা’ গ্রন্থের লেখক।
***************
“শূন্য থেকে মহাবিশ্ব” বইটি একদিকে সময় ও স্থান এবং অন্যদিকে সময়াতীত ও স্থানাতীত চিন্তার মাঝে এক রোমাঞ্চকর অভিযান। বিজ্ঞান যে গতকালের প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বকে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেয় না, বরং নতুন দিগন্তপ্রসারী চিন্তার প্রবর্তনে ক্রমাগতই আমাদের মনোজগতের বিবর্তন ঘটায়, সেই ধারণাই মীজান রহমান ও অভিজিৎ রায় এক অনবদ্য ভাষায় প্রকাশ করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে এক অবোধ্য মহাবিশ্বকে বোধগম্য করতে বিজ্ঞানের অক্লান্ত প্রচেষ্টার যে ইতিহাস লেখকদ্বয় তুলে ধরেছেন তা যেমন পাঠককে বিস্মিত ও অভিভূত করবে, তেমনই সেই প্রচেষ্টার পরবর্তী ধাপটি কী সেটি জানার জন্য কৌতূহলী করে তুলবে”।
ড. দীপেন ভট্টাচার্য অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ রিভারসাইড কলেজ, ক্যালিফোর্নিয়া গামা-রশ্মি জ্যোতির্বিদ, রিভারসাইড ক্যাম্পাস (ইউসিআর) ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া; ‘দিতার ঘড়ি’ গ্রন্থের লেখক।
শূণ্য থেকে মহাবিশ্ব মীজান রহমান এবং অভিজিৎ রায় ফরম্যাটঃ পিডিএফ প্রকাশকঃ শুদ্ধস্বর পৃষ্ঠাঃ ৪৫০ জনরাঃ নন-ফিকশন, বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের ইতিহাস
গ্রেডিংঃ Exceeds Expectation
শূণ্যকে সংখ্যার আসনে বসানো থেকে শুরু করে বর্তমানের বিগব্যাং- ধারাবাহিকভাবে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস উঠে এসেছে বইটিতে। প্রথম ৭ টি অধ্যায় প্রাচীন বিজ্ঞান ও গণিত থেকে নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস। স্কুল-কলেজ লেভেলের পদার্থবিজ্ঞান পড়া থাকলে সবই পরিচিত কন্সেপ্ট। অষ্টম অধ্যায় থেকে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের বর্ণণা শুরু হয়।
কিছু অপ্রচলিত বাংলা শব্দের ব্যবহারের কারণে মাঝে মধ্যে ধাক্কা খেতে হয়, কিন্তু এছাড়া বইটি বেশ সাবলীল ভাবে লেখা। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ইতিহাস আর বর্তমানের প্রচলিত থিওরিগুলো বেশ সহজবোধ্যভাবেই লেখা হয়েছে। কলেজ লেভেল পর্যন্ত ফিজিক্সের জ্ঞান থাকলে বুঝতে অসুবিধা হবার কথা না।
স্কুল কলেজে বিজ্ঞানের অনেক টপিক ই ফরমুলা মুখস্থ করে , কঠিন ��ঠিন ম্যাথ কষে পার করে এসেছি। কিন্তু 'কন্সেপ্ট' এর জায়গায় দুর্বলতা ঠিক ই রয়ে গিয়েছে। বইটা পড়ার সময় সেই দুর্বলতার কথা নতুন করে বুঝতে পারলাম।
বইয়ে প্রায় ২৮৫ টা রেফারেন্স দেয়া। এর অনেক গুলোই লেখকের পুরনো বই অথবা ব্লগের রেফারেন্স। লেখকের অন্য বই/ব্লগ যারা নিয়মিত পড়েন তাদের কাছে রিপিটিটিভ লাগতে পারে। সময় নিয়ে সবগুলো রেফারেন্স ঘাঁটাঘাটি করে দেখার ইচ্ছা আছে।
২০১৫ সালে বইটি প্রকাশিত। এর পরের পাঁচ বছরে কোয়ান্টাম ফিজিক্স এবং কসমোলজি ফিল্ডের আপডেট গুলো এরকম সহজ ভাষায় কোথাও লেখা হয়েছে কি?
প্রিন্টিং এ কিছু সমস্যা ছিলো। ১০ এর ঘাত গুলো প্রিন্টিং এ খুবই ছোট ফন্ট আসার কারণে পড়া যাচ্ছিলনা। হুট করে এক পেইজে দেখি বাংলা ফন্ট বদলে গিয়েছে।
কলেজে-লেভেল সায়েন্স এর জ্ঞান আছে ব্যক্তিদের জন্য রিকমেন্ডেড।
এই সেমিস্টারে একটা ম্যাথের কোর্স নিলাম, সেটার জন্য পেপার লিখতে গিয়ে আইডিয়া খুজছিলাম। আর অভিজিত দার বই ঘেটে পেয়ে গেলাম আইডিয়া। খুবই বুলশিট আইডিয়া হইসে যদিও। সেই দোষ আর কারও নয় সেটা আমার প্রতিভাহীন মস্তিষ্কের কারণে। যাকগে! বইটা বেশ ভালো লেগেছে।
অভিজিত রায়ের এই বইয়ের মধ্য দিয়ে সায়েন্টিস্ট মীজান রহমানকে অনেকখানি চেনা হল। আর শূন্যতাকে বোঝার কিছুটা চেষ্টা হল সেটাও মন্দ কি!
আমরা যারা বিজ্ঞান মানে বুঝি রসহীন , কষযুক্ত কোন বিষয় তাদের জন্য গল্প আকারে সরল করে লিখে গিয়েছেন লেখক। বিগ ব্যাং থিওরী পড়তে গিয়ে অনেক টার্মই আমরা ঠিক ঠাক বুঝে উঠতে পারি না। সে সব টার্ম গুলো প্রথমে বুঝিয়ে ক্লিয়ার করে তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে গেছে বইটি। আস্তিকতা নাস্তিকতা প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে শুধু বিজ্ঞানের ইতিহাস কিভাবে এগিয়ে এসেছে একদম শুরু থেকে তার বর্ণনা ধরে এগিয়ে একদম বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের জনপ্রিয় থিওরী গুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বাসের দ্বন্দ ওপাশে রেখে কেউ যদি বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী হয় সেক্ষেত্রে ও বইটি কাজে আসবে।
বাংলায় বিজ্ঞান বই লেখাই হয়েছে কম; আর সুলেখ্য বইয়ের সংখ্যা আংগুলের সংখ্যার চেয়েও কম, এই বইটি সেই অল্পসংখ্যক বইয়ের মধ্যে স্থান দিতে হয়। বইটিতে বিজ্ঞানের পাশাপাশি এর ইতিহাসকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সাহিত্যগুণেও বইটি অসাধারণ! পড়তে ত বিরক্তি নয়ই, বরং ভাল লাগার উদ্রেক আসবে।