মফস্বল শহর সুন্দরপুর। ছবির মতই সুন্দর। প্রকৃতির শোভা ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কিছু নেই বললেই চলে, কিন্তু সবাই জানে রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি! কেন আসেননি, তারচেয়েও বড় কথা কেন অনেকেই সেখানে ছুটে আসে! এক আগন্তুক এসে হাজির হল সেই সুন্দরপুরে। তার গতিবিধি অস্পষ্ট আর রহস্যময়। সে যেটা জানতে চায় সেটা ওখানকার খুব কম লোকেই জানে। আর যখন সেটা জানা গেল তখন বেরিয়ে এল রোমহর্ষক এক কাহিনী। পরিহাসের ব্যাপার হল সেই রোমহর্ষক কাহিনী কাউকে বলার মত সুযোগ সত্যি কঠিন!
MOHAMMAD NAZIM UDDIN (Bengali: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন) is a writer and Translator of more than 26 novels..His original works are NEMESIS, CONTRACT, NEXUS, CONFESSION,JAAL, 1952: nichok kono number noy, KARACHI, RABINDRANATH EKHANE KOKHONO KHETE ASENNI and KEU KEU KATHA RAKHE. These six Thriller novels are highly acclaimed by the readers.
এই বইটিকে আজ অবধি সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত বাংলা বইয়ের সম্মান দিলে বোধহয় আপত্তি উঠবে না। সেই বই, তাও আবার রহস্য-রোমাঞ্চ জঁর-এর, বেশ কিছুদিন আগেই হাতে আসা সত্বেও কেন সেটা এতদিন পড়িনি, তাই নিয়েই একটা আলাদা লেখা হয়। অত আজাইরা প্যাচালে কাম নাই। বরং, আসল কথায় আসি। বইটা কী নিয়ে?
উত্তরবঙ্গের এক মফস্বল শহর সুন্দরপুর। সেখানে, হাইওয়ে-র পাশেই, একটি রেস্তোরাঁ, যার নাম ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’। নামটা অদ্ভুত, তবে তার চেয়েও অদ্ভুত হল সেখানকার খাবার, যা খেলে শুধু পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর নয়, “অগর ফিরদাউস বার রুই-ই জামিন অস্ত, হামিন অস্ত – উ হামিন অস্ত – উ হামিন অস্ত” এমন কথাও বেরিয়ে আসতে পারে। আর তার চেয়েও অদ্ভুত হল সেই রেস্তোরার মালিক, থুড়ি মালকিন, যে আবার সেই গ্রামের হৃতগৌরব জমিদারবাড়ির বধূও বটে। এই মালকিন, মুসকান জুবেরি-র রহস্যভেদ করতে সেখানে উদয় হল নুরে ছফা। কেন? ঠিক কী-কী রহস্য লুকিয়ে আছে ওই রেস্তোরাঁয়, জমিদারবাড়িতে, কবরখানায়,… আর মুসকান জুবেরি’র জীবনে?
বইটা থ্রিলারের জগতে তথা রহস্যরোমাঞ্চ সাহিত্যের অনুরাগী পাঠকমহলে প্রায় কাল্ট ক্লাসিক, এবং এখনও যদি বইটা আপনি না পড়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু সত্যিই অনেক কিছু হারাচ্ছেন। সেগুলো কী-কী? ১. বাঙালির জীবনের সবচেয়ে বড়ো দুটো দুর্বলতা, খাবার আর রবীন্দ্রনাথ, এমনভাবে পাঞ্চ করে একটা গা-শিউরানো লেখা এর আগে কেউ লেখেননি। ২. লৌকিক পটভূমি, কথ্য ভাষা, রাজনীতি, কিছু বেদনার্ত ইতিহাস, এবং কিছু সত্যি কথাকে একসঙ্গে মিশিয়ে এরকম একটা উপন্যাস লেখা যেকোনো ভাষাতেই পরম শ্লাঘার বিষয়। নামি ও দামি অনেকেই যখন রোমান্টিক গল্পে দুটো খুন এবং/অথবা বাড়তি কিছু শয্যাদৃশ্য গুঁজে দিয়েই তাকে থ্রিলার বলে চালানোর চেষ্টা করছেন, তখন বাংলা ভাষায় এমন এক অভিনব কাহিনি নির্মাণ, ও তার নির্মেদ সঞ্চালন দেখে সম্মানে মাথা হেঁট হয়ে যায়। এই গল্পে কি কোনো ত্রুটি নেই? অবশ্যই আছে। (১) এতে প্লটে বেশ কিছু ফাঁকফোকর আছে যেগুলো দিয়ে ধীরগতিতে চলা কাহিনি গড়িয়ে পড়ে যেত, কিন্তু এটি তার গতির জোরে লাফ দিয়ে সেসব পেরিয়ে গেছে। (২) উপন্যাসটি নিয়ে অত্যধিক আলোচনার ফলেই তার শেষের আসল মোচড়টা অনেকের সামনে, কিছুটা পড়ার পরেই, স্পষ্ট হয়ে যায়, ফলে স্তব্ধবাক করে দেওয়ার মতো ইমপ্যাক্ট আর এই উপন্যাসে পাওয়া কঠিন।
সামগ্রিকভাবে এটাই বলার যে আপনি যদি রহস্যরোমাঞ্চ সাহিত্যের অনুরাগী হন, তাহলে এই বইটি অবশ্যই পড়বেন। বইটা কলকাতায় অভিযান-এর শো-রুমে, অরণ্যমন-এ, এবং আরো অনেক জায়গায় সহজলভ্য, তাই ‘পামু কেমনে?’ টাইপের জিনিস জিগাইয়েন না। পাঠ শুভ হোক।
থ্রিলার গল্প পড়তে গেলে প্রায়শ একটা অসুবিধে হয়। অপরাধী কে কিংবা কাহিনী কি হবে অনেকটাই আন্দাজ করতে পারি। রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে কখনও আসেন নি গল্পের প্রথম দুইশ পেইজও মোটামুটি প্রেডিক্টেবল ছিল। এরপরেই শুরু হয়েছে চমকপ্রদ ঘটনা। আগে থেকে আঁচ করার কোনো জো ছিলনা!
প্রথম দিকে গল্পের প্লট অতি সাদামাটা হলেও লেখনী বেশ ঝরঝরে। একটা অধ্যায়ের শেষে ঠিক কোন মুহূর্তে সাসপেন্স তুলে রেখে পরের অধ্যায়ের যেতে হবে এ ব্যাপারে লেখক বেশ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এছাড়া গল্পের ছলে ডাক্তারি প্রফেশন নিয়ে খুব গুরুত্বপুর্ণ একটা কথাও বলেছেন। এই পেশার লোকদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের কোনো শেষ নেই। মাঝেমাঝে অতি বিক্ষুব্ধ এটেন্ডেন্টরা পারলে ডাক্তারকে মারতেও তেড়ে আসে! এককালের এই নোবেল প্রফেশনের প্রতি এখন তাদের তীব্র বিরাগ! এই নির্মম সত্যটা কতজন লোকে জানে বা স্বীকার করে?!
সে যাকগে। বাংলা সাহিত্যে মৌলিক উপন্যাস লেখার যে উদ্যোগ লেখক নিয়েছেন তা প্রশংসার দাবীদার। আগে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ হয়েছি অনেকবার। মৌলিক উপন্যাস আর পড়া হয়ে উঠেনি। এটাই প্রথম এবং এবারও বিশেষ হতাশ হতে হয়নি।
শুধু একটা খটকা থেকে গেছে। থ্রিলার গল্পে সাধারণত দেখা যায় প্রতিটা ছোট বড় চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল গল্পের সাথে তাদের বেশ বড়সড় যোগ থাকে। সেই সূত্র মানতে গেলে এই গল্পে সৃষ্ট চরিত্র ফালুর গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ আমার অনেকবার মনে হয়েছে ফালু না থাকলে গল্পের প্লটের কোনো ক্ষতি হতনা। শুধুমাত্র ছমছমে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ছাড়া তার তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
একটা কাহিনী সুন্দরভাবে গুছিয়ে তিন-চতুর্থাংশ পার করে কিভাবে শেষ অংশে বিশাল গাঁজাখুরি গোঁজামিল দিয়ে সেটা শেষ করা যায় তার ক্লাসিক উদাহরণ। দারুণ ২-৩টা চরিত্র ছিল, কিন্তু ভদ্রলোকের আরো দুইটা বই পড়েও দেখেছি, রহস্যের সমাধান খুবই নীরস, আগের ঘটনাগুলোই প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। অথচ বেশিরভাগ সময় জুড়ে গল্প বেশ ভাল এগোয়। কিন্তু এবারেরটা একদম বাড়াবাড়ি। ররবীন্দ্রনাথের আর কী দোষ, এইরকম গাঁজার নৌকা বাইয়া পাহাড়তলী গেলে নজরুল-হুমায়ূন-সুনীল এমনকি কাসেম বিন আবুবকরও এইখানে কখনো খাইতে আসবেন না।
এই বইটার সঠিক রেটিং হলো ২.৫। যেহেতু ২.৫ দেয়ার উপায় নাই, ২ দেব, যাতে কম রেটিং-এর কারণে এই রিভিউটা পাঠকে পড়ে দেখে।
শুরু থেকে শুরু করি, প্রথম যখন বইয়ের নাম দেখি বছরখানেক আগে, ভেবেছিলাম এটা রুমান্তিক উপন্যাস। পরে জানলাম এটা Thriller বা লেখক নাজিমুদ্দিন সাহেবের অন্য বই অনুসারে বলা যায় 'থৃলার'। আমার ধারণা বাংলা ভাষায় Thriller প্রথম পেপারব্যাক ফরম্যাটে 'সেবা প্রকাশনী'ই এনেছিলো, দস্যু বনহুরও অবশ্য 'রোমাঞ্চপন্যাস' কিন্তু রোমাঞ্চকর গল্পকে ইংরেজি শব্দ 'থ্রিলার' বানানে 'সেইইইই ১৯৫৩ সাল থেকে' সেবা-র কারণে দেখে আসাতেই 'থৃলার' বানানে হোঁচট খেয়ে লেখকের 'থৃলার সংকলন' ধরে দেখা হয়নি।
এই হোঁচটামিটা এই বইতে পরিপূর্ণ রূপে রয়ে গেছে যা থেকে বইয়ের আদ্যোপান্ত হোঁচট খেয়ে খেয়েই পড়তে হলো। বানানরীতি নিয়ে আমাদের বাংলা একাডেমি ইদানীং ই-কার ও ঈ-কার নিয়ে নতুন কিছু রীতি দিলেও সমস্যা হলো যখন লেখকেরা মনের মাধুরি মিশিয়ে বানান লিখতে থাকেন। মানে কিছুটা সঙ্গতি না থাকলে আশলে আঁমিও আমাঁর ইচ্ছামতো চন্দ্রবিন্দু লাগিয়ে, 'ণ' যেখানে হবার নয় ন-ত্ব বিধান না মেনে সেখানে চারটে ন-ণ জুড়ে, ইকার ঈ-কারের দফারফা করে শব্দের অর্থ পাল্টে দীয়ে লিখতেই পারী। ছেলেপুলেরাও ইশকুল টিশকুলে না শিখে 'আমার ক্ষুধা পাই না' টাইপ বাক্য রচনা করতেই থাকতে পারে। কী আছে গেবনে! বাংলা ভাষাই তো!
তা একটু বানানরীতির উদাহরণ দেই: যা ব্যবহৃত হয়েছে -
ভেঁজা ফুল ফোঁটা সুক্ষ্ম নীচু হয়ে, নীচ থেকে - এইটা পড়ে পড়ে চক্ষু ব্যথা হয়ে গেছে আসলে, মানে ভাই, পেলেগ! নীচ - হীন; আর নিচ - down, পেলেগ লাগে ভাই! কৃপনতা গুঁড়ের চা বাঁধা (For author and editor's information - বাঁধা to tie something, বাধা - to protest/stop ঠেঁকছিলো
চন্দ্রবিন্দু একটা ভাঁরি ভাঁলো জিঁনিস। এঁগুলাতে আঁবার ছিলো না - কাঠাল হেটে
আরেকটা সবাই যে ভুল করে সেটাই - ধরন (type) ধারণ (to hold/wear) - বইতে আছে 'ধরণ'।
বানান আরও আছে, তবে আমি ভাষাবিদ না। এভাবে হোঁচট খেয়ে পড়তে গেলে 'থৃলারের' 'থৃল' থেকে বঞ্চিত হই আরকি, সেটাই মুশকিল! বানানের কারণে এই বইয়ের রেটিং হলো ০-১।
বইয়ের প্রচ্ছদ - ১ - It's a shitty cover, I am sorry to say. বাংলাদেশে অবশ্য প্রচ্ছদ শিল্প বলে মনে হয় না কিছু আর অবশিষ্ট আছে। সেবা প্রকাশনী টু যে কেউই কিছু ছবি কোলাজ করে জুড়ে দেয়, সরাসরি বিদেশী ছবি মেরে দেয়া তো আছেই। সম্ভবত এই বইয়ের প্রচ্ছদ দেখেই এটাকে আরও 'লুমান্তিক' কিছু ভেবেছিলাম শুরুতে। যা হতে পারতো ভালো প্রচ্ছদ - একটা হাইওয়ের ধারে একটা নিওন সাইনের রেস্টুরেন্ট, সাইনেই বইয়ের নাম থাকতে পারতো। সম্ভবত এরকম ইমেজ ইন্টারনেট সার্চে পাওয়া যাবে সহজেই, আর ফটোশপ করে নামটা বসিয়ে দিলেই শিল্পীকে অত খাটতে হতো না।
বইয়ের নাম চমকপ্রদ, যেমনটা শুরুতেই বলতে চেয়েছিলাম। এটা বহু পাঠককে আকর্ষণ করবে। সম্ভবত এটা একটা নতুন ট্রেন্ড হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে - নামে চমক দিয়ে পাঠক আকর্ষণ। Which is appreciable. নামকরণে ৪.৫!
How was the thriller then? এইখানে এসে রেটিং কম দেয়ার আরেকটি কারণ - বইটা ভালোই আগাচ্ছিলো, সবই ঠিক ছিলো, বিশেষ করে সমসাময়িক ঘটনাবলী যে লেখক একেবারেই সরকার বা উপর মহলের তোয়াক্কা না করে স্পষ্টভাবে কোন ঘটনার কথা রেফার করছে বলে দিয়েছেন, এইটা বইটাকে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত করে তুলেছে... থুক্কু, ছিলো, তুলেছিলো..
তারপরে আন্দিজের ঘটনা, সেখান থেকে হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের 'শি', মিলেমিশে এটা কন্টেম্পোরারি সাস্পেন্স 'থৃলার' থেকে শেষে অতিপ্রাকৃত, হরর (নাকি 'হড়ড়' লিখবো?) -এ চলে গেল বুঝতে না পেরে তাল হারিয়ে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে গেলাম! (এরচেয়ে সাম্প্রতিক 'অক্টারিন' ভালো ছিলো, রহস্য, রোমাঞ্চ, তথ্য, চরিত্রায়ন সব দিক থেকে।) তথ্য বিভ্রাট আছে কিঞ্চিৎ, বা এডিটিং এ খেয়াল না করা - হাসনাহেনা একরকম সারা বছরের ফুল হলেও গ্রীষ্ম বা বর্ষায় বেশি ফোটে (ফোঁটে না ভাইয়ারা, ফোঁটা is like a 'point'/ a dot), শীতের ফুল না এটা ঠিক।
হ্যাজাক (লিখেছে 'হাইজ্যাক' 😁) বাতির নাম প্রথমে ছফার মনে না এলেও, হুট করে লেখার মধ্যে হাইজ্যাক লিখে দেয়ায়, খাপছাড়া লাগে পড়তে।
আমেরিকায় হাই স্কুল পাশ করেই ডাক্তারি কলেজে পড়া যায় না, আগে অন্য কিছুতে গ্র্যাজুয়েশন (ব্যাচেলরস) লাগে বলেই জানি।
ওভার অল, কাহিনি - ৩.৫
বইয়ের ভাষা নিয়ে একটু আলাপ দরকার মনে হয়, এখানে আমি দেব ৩। সহজ, সাবলিল গতিতে লিখে গেছেন লেখক, দুই এক সময়ে বর্ণনা দিতে গিয়ে নিজের মনের মতো করে কিছু উপমা দিয়েছেন -
'সাদা রঙে রাঙানো' - আমি হেসে ফেলেছিলুম, মানে 'রাঙানো' - কিন্তু আমার এক বন্ধু মনে করিয়ে দিলো, সাদার মধ্যে সাত রঙই আছে কিনা। তা বটে!
'পেট চৌ চৌ করা' - হুম... অকা! আমরা শব্দটা 'চোঁ চোঁ' করা জানি, তবে ঐ আরকি, অকা!
এখন আমি খুঁতখুঁতে পাঠক। আমার এহেন খুঁতখুঁত করা রিভিউ এ কেউ মাইন্ড করলে করতে পারে। পাঠক হিসেবে আমি এই বইকে ৪ দিতে চাই, পারিনি, মূল সমস্যা - বানান। লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক যদি সেগুলোর প্রতি যত্নশীল হন ভবিষ্যৎ এডিশনে, আমি মনে হয় দিয়ে দেব ৪। বা ভবিষ্যতে লেখকের বইতে এমন বানান সমাহার নাই জানলে আমি আরেকবার কষ্ট করবো তার লেখা পড়তে, কারণ নতুনত্ব ছিলো, আর আমি একটানেই পড়েছি, অন্য কিছু ধরি নাই মাঝে।
বাংলা সাহিত্যে নতুন করে নতুন লেখকদের মাধ্যমে যে রহস্য, রোমাঞ্চ, ফ্যান্টাসি গল্পের জোয়ার এসেছে, তা ভালো লাগছে, এই বইটা পড়ে আবারও সেটা মনে হয়েছে।
PS: সামান্য স্পয়লার সহকারে সাজেশন রিডিং - আন্দিজের ঘটনাটা নিয়ে খুব ভালো একটা বই ঐ সেবারই "আন্দেজের বন্দী", যা অনেক বেশি লজিকালি, যুক্তিসঙ্গতভাবে লেখা বলবো আমি, ঠিক কীভাবে কী কাজে বাধ্য হয় কেউ, খাদ্য যে গলধকরণের সময়ে ড্রাই বিফ জার্কি টাইপ ছিলো, এগুলার অনেকটা মানবিক বর্ণনা ওখানে আছে, তো যারা এই বই পড়ে 'ওয়াক থু:!' পর্যায়ে চলে যাচ্ছেন, তারা ওটা পড়ে এই বইয়ের সাথে না মিলিয়ে আন্দেজে কী হয়েছিলো তার আসল ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করতে পারেন।
বইটা শুরু করেছিলাম ভার্সিটির ট্রেনে বসে। ট্রেন থামার পর দেখি আমি এখন কাহিনীর সবচেয়ে জমজমাট অংশে আর এখনই কিনা আমাকে ক্লাস করতে হবে!!!!!! এর চেয়ে বড় অত্যাচার আর কি আছে? !!!!! ক্লাসে ঢুকলেও মন পড়ে আছে রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি এর কাছে। ফলাফল টানা ২টা ক্লাস করছি কিন্তু কি যে ক্লাস করলাম আল্লাহ মালুম এমনকি ক্লাসের থেকে বের হয়ে ফ্রেন্ড কে আস্ক করতে হইছে ম্যাম কোন সাবজেক্ট এর ক্লাস নিছেন। আর এই প্রথম মনে হয়েছে ক্লাস এর স্টুডেন্ট এর সংখ্যা বড্ড বেশি কম। মাত্র ১৫জনের ভিতরে ক্লাস করে আর যাই করা যাক গল্পের বই পড়া যায় না। সবার পিছননে বসলেও মনে হয় স্যার ম্যামের মুখের সামনে বসে আছি। সে যাক গে। ক্লাসের ফাঁকেফাঁকে খাতার নিচে লুকায় বাকিটুকু পড়ে ফেলেছি।এতই তীব্র আকর্ষন আর এত জমজমাট কাহিনী যে অপেক্ষা করতে পারি নি। বইয়ের কাহিনী কোনদিকে যাবে কি হবে একবারের জন্য ও কল্পনা করতে পারি নি। বইটিকে আপনি অনায়াসে হরর বলতে পারেন গোয়েন্দা জনেরাতেও ফেলতে পারেন। একেবারে অন্যরকম প্লট, অন্যরকম কাহিনী বর্ননা, অন্যরকম সমাপ্তি। টানটান থ্রিলার হয়ত না তবে যা লিখেছেন সেটাও এককথায় পাঠককে ধরে রাখার মত। একবার ও বুঝতে দেন নি কি হবে কি হতে পারে ,যেটা আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে। করাচি পড়ার পর মনে হয়েছিল লেখকের লেখার ধার কমে যাচ্ছে কিংবা জনপ্রিয়তার কারনে জাস্ট লেখার কারনে লিখে যাচ্ছেন। এই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের বইটা ধারনা পাল্টাতে সাহায্য করেছে। নাহ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের এখনো দেবার মত অনেক কিছু আছে। বই পড়া আর যে কাজটা ভাল পারি সেটা হল খাওয়া দাওয়া। আমি মোটামুটি লেভেলের ভোজনরসিক। কিছুদিন পর পর বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে খাবার চেখে দেখা আর বাসায় অল্প সল্প গবেষণা করা খুব প্রিয় একটা হবি!!!!! সাহিত্যের আবেঘন ভাষায় বলতে হয় যতবার স্পেশাল স্বাদ এর খাবারের কথা এসেছে সিক্রেট রেসিপির কথা এসেছে জিহ্বে জল চলে আসছে!!!! ইস যদি খেতে পারতাম অন্তত রেসিপি গুলা পেতাম!!! অন্য ধাঁচের এই বইটা আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আটকে রাখবে এই ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে পারি। তো শুরু করে দেন।
ভাল কথা বাতিঘরে এইবার এই রকম হলুদের হোলিখেলা কেন? !!!!যা যা বই কিনলাম কমন কালার হল কালো আর হলুদ। তার ভিতর আবার হলুদ চরম চরম অপছন্দের রং :/
Cannibalism বিষয় উপন্যাস আমি সব সময় এড়িয়ে চলেছি, কিন্তু ভাগ্য খারাপ আমার এবার। প্রচ্ছদ আর নামকরণ আমাকে পুরাপুরি বোকা বানিয়েছে। দুঃখের বিষয়, কোথাও কোনো জাগায় উল্লেখ ছিল না এখানে নরখাদককে কেন্দ্র করেই এই উপন্যাসটি লেখা থাকবে। আফসোস বাংলাদেশের বই রিভিউ প্লাটফর্ম আরো উন্নত হলে আমার এমন বাজে একটা অভিজ্ঞতা হতো না। এখন মনে হচ্ছে বাংলা Mystery-Thriller উপন্যাস ধরার আগে আমার ১০বার ভাবতে হবে।
যাইহোক গল্পটির প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসলেও, উপন্যাসটি পড়ে আমি কিন্তু এক দিক দিয়ে সার্থক। অন্তত একজন প্রতিভাসম্পন্ন বাংলাদেশী লেখকের সাথে পরিচয় হলো। তার লেখা অন্য বইগুলো হয়তো পড়া হবে ভবিষ্যতে।
কাঁটা তারের পশ্চিম প্রান্তের পাঠকদের মধ্যে ইদানিং কালে পূর্বের কোন উপন্যাস যে এটির থেকে বেশি আলোড়ন তুলেছে সেটা অনেক ভাবলেও বলতে পারব না। শুধু পাঠকই বা বলছি কেন, সৃজিত মুখার্জির দৌলতে চলচিত্র বোদ্ধারাও এই বইখানার জনপ্রিয়তার আবর্তে ঢুকে পড়েছেন। ওরকম একটা পেল্লাই শক্তিশেল মার্কা নাম, জাঁকজমক প্রচ্ছদ .... না পড়ে যাই কোথায় বলুন?
লেখকের বর্ণনা বেশ সুন্দর, সাবলীল। প্রথমার্ধে ঘটনা খুব একটা দ্রু���তার সাথে এগিয়ে না চললেও ওই প্রাঞ্জল লেখনীর গুনেই এক নাগাড়ে পড়ে ফেলা যায়। আমি বিশাল কুঁড়ে প্রকৃতির, আশা করি আপনি উপন্যাসের বিষয় বস্তু সম্বন্ধে ধারণা রাখেন, তাই কষ্ট করে টাইপ করছি না। ভালো লাগে গল্পের কুশীলবদের চরিত্রায়ণ, বেশ ত্রিমাত্রিক বলা চলে। আমাদের গোয়েন্দা ছফা, তাঁর আড়কাঠি আতর আলী, এবং অবশ্যই রহস্যের পর্দায় আবৃত মুশকান জুবেরী। কিন্তু শেষার্ধে চমকের নামে যে গরুটিকে তরতর করে শ্যাওড়া গাছের মগডালে চাপিয়ে দেবেন ভদ্রলোক, এটা কে জানত? নিজেকে রহস্য-রোমাঞ্চপ্রেমী বলতে পছন্দ করি, তাই মনটা বেশ খাপ্পা হয়ে গেলো। spoiler এর জালের ওপর দিয়ে সন্তর্পনে পা ফেলেও বলছি, ভালো থ্রিলার কি গাঁজাখুরি ছাড়া লেখা যায়না ? অলৌকিকতাই যদি পড়তে হতো, তাহলে তো আমাদের এপারের ফ্যাক্টরি প্রসূত শত সহস্র তারানাথ fanfic এর মধ্যে মাথা গুঁজলেও পারতাম,তাই না? তা সে যাক গে, এর কল্যাণে আমার যে বাংলাদেশের সাহিত্যের সাথে বহু প্রতীক্ষিত সাক্ষাৎটা হয়েই গেলো, সেটাই সবচেয়ে ভালো ব্যাপার।
আমার রেটিং ৩.৫!! একটা স্পয়লার দেয়ার জন্য হাত নিশপিশ করছে কিন্তু দেওয়া যাচ্ছেনা! আর থ্রীলার গল্পের আসলে রিভিউ ও দেওয়া যায়না। দিলেই সেটা স্পয়লারে রূপ নেওয়ার নিরাব্বই ভাগ চান্স থেকেই যায়! আর থ্রীলারের ব্যাপারে আমার থিওরি হলো, এর কভার থেকে শুরু করে লাস্ট লাইনটা পর্যন্ত রহস্যে ঘেরা থাকবে! এমনকি থ্রীলার গল্পের কোন প্রমোও থাকা উচিত না, অবশ্য তাতে পাঠকের বই বাছাই করতে সমস্যা হয়ে যাবে। যাইহোক, নাজিমুদ্দিন সাহেবের লেখা ভালো লাগার একটা বড় কারণ হচ্ছে তার লেখার ভঙ্গি। পড়ে আরাম পাওয়া যায়, কাহিনী যতোই সাধারণ হোক না কেন পড়তে কেন যেনো ভালোই লাগে, আর সেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত! এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি! যদিও বইটির নামকরণ দেখে বই সম্পর্কে আন্দাজ করা কষ্টকর। আর মাঝপথে এসে বোঝা গেলেও আসলে এর পরিনতি আন্দাজ করতে শেষে যেতে হয়! তবে শেষটা আমার পছন্দ হয়নি। আর এটাই সম্ভবত লেখকের স্টাইল। পুরো গল্পে টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি করে শেষ দিকে খুব সাধারণ একটা ব্যাপার দিয়ে গল্পের সমাপ্তি! কেএসকে সাহেব এখানেও চলে এসেছেন! উনি কি জেফ্রি-বাস্টার্ডের মতো সৃষ্ট একটা ক্যারেক্টার!? হয়তো? কিন্তু কেএসকে কে পছন্দ হয়নাই!
আমি মনে করি থ্রিলারের সার্থকতার বিচারে প্লট =৫০%; গবেষণা =২৫%; আর লেখনশৈলী=২৫% . সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্যতা আমার কাছে কখনোই থ্রিলারের খুব একটা বড়ো গুণনীয়ক নয়। একেবারে গাঁজাখুরি পর্যায়ের হয়ে গেলে তো সেটা প্লটের'ই ব্যর্থতা -সেটা না হলেই ঠিক আছে। অপরদিকে লী চাইল্ড'এর জ্যাক রীচার বা স্টিফেন কিংয়ের আধিভৌতিক নভেলগুলো আপাদপক্ষে অবিশ্বাস্য হলেও, লেখার গুণে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী করে, আর তারপর টানটান প্লটের জন্যে সেগুলো (সবগুলো নয়, কয়েকটা) সার্থক থ্রিলার হয়ে ওঠে। একটা থ্রিলার গল্পের জুতসই প্লট ফাঁদা , তারপর সেটাকে নিয়ে ডিটেলসে গবেষণা করা বেশ কঠিন আর সময়সাপেক্ষ। এই দুটো জিনিস যদি আপনি ভালোভাবে করে ফেলেন (সেটা সোজা নয় বলাই বাহুল্য), তারপর থ্রিলার গল্প লেখাটা খুব কঠিন নয় - একটা ভালোভাবে লেখা থ্রিলারের দুটো মাপকাঠি আছে আমার কাছে : ১) লেখার গতিময়তা ; আর ২) পাঠকের সঙ্গে চালাকি না করা।
তাহলে আমরা যদি বইটাকে এই ছকে ফেলি, তাহলে কিরকম দাঁড়াবে? ১. প্লট : পাঁচে সাড়ে তিন। লেখকের কল্পনাশক্তির প্রশংসা করি - চমৎকার গল্প ফেঁদেছেন। মুশকান জুবেরী , নূরে ছফা , আতর আলী - একেকজন মোক্ষম থ্রিলার-উপযোগী চরিত্র। ঘটনাবহুল টাইট প্লট, একটা সীন শেষ হলেই আরেকটা সীন - মাঝে ঝুলে যাওয়ার কোনো ব্যাপার-ই নেই। চমৎকার। মুশকানের গল্পের আসল খোলাসা নিয়ে অন্যদের ক্ষোভ থাকতে পারে, আমার নেই। সুন্দর দাঁড়িয়ে গেছে - যদিও আসল ব্যাপারটা আমি ধরে ফেলেছিলাম ** একটা তারা কেটে নিলাম লেখার শেষ পর্বটা একদম দস্যু মোহন/কালনাগিনী টাইপ হয়ে গেলো বলে। এটা না করে লেখক যদি আরেকটু ক্রিয়েটিভ কিছু করতেন, তাহলে ভালো হতো। আরও অর্ধেকটা তারা গেলো গল্পের কয়েকটা প্রশ্ন অনুত্তরিত থেকে গেলো বলে। এগুলো কিন্তু লেখকের কুঁড়েমি। লেখার শেষের খোলা তারগুলো জোড়া লাগানোর জন্যে অধ্যবসায় ছাড়া আর কিছু লাগে না। আর যিনি চমৎকার একটা প্লট ভেবেছেন, তিনি একটু সময় দিলেই শেষটাতেও উল্লেখযোগ্য কিছু একটা করতে পারতেন। হা আত্মঘাতী বাঙালী ! “অ্যাটেনশন টু ডিটেল”-এর অভাবেই গেলে তুমি !
২. গবেষণা: পাঁচে দুই. ….. ওকে, আড়াই। 'অ্যালাইভ' সিনেমাটা গুচ্ছ গুচ্ছ লোক দেখেছে। সেইটা দেখে এই চমকপ্রদ প্লটটা মাথায় এসেছিলো লেখকের - তাঁর কল্পনাশক্তিকে বাহবা। চমৎকার তার খেই এই গল্পে নিয়ে আসার। কিন্তু তারপর? এই বিষয় নিয়ে অ্যাত্তঅ্যাত্ত পড়াশুনো হয়েছে - সেটার ছোঁয়া লেখায় কই? পারিপার্শিক ব্যাপারগুলোকে নিয়ে একটু গবেষণা দরকার ছিল। গ্রামীণ বাংলাদেশ নিয়ে আমি কিছুই জানি না - তা নিয়ে লেখকের গবেষণা করতে লেগেছে কি না, গবেষণা ফলপ্রসূ হয়েছে কি না , সেসব বলতে পারবো না। বেনিফিট অব ডাউট লেখককে দেয়া হলো।
৩. লেখা: পাঁচে চার। সেটা কেন মশাই ? পাঁচ'ই তো দিতে পারতেন। নাঃ , চার। বলছি কেন। প্রথমেই জানিয়ে রাখি - লেখক সাংঘাতিক সুন্দর সীন লেখেন - একদম সিনেমার মতন চোখের সামনে ঘটনাগুলো ফুটে ওঠে। যাকে বলে ন্যাচারাল গল্পবলিয়ে। লেখায় গ্যাদগ্যদে প্যানপ্যানে কোনো ব্যাপার নেই, বলিষ্ঠ গদ্য। চরিত্রগুলোকেও চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন - থ্রিলারধর্মী লেখায় চরিত্রের গভীরে ঢুকে যাওয়ার প্রয়োজন স্বাভাবিকভাবেই নেই - তাতে গল্পের গতি পড়ে যায়। লেখক যানও নি। এবারে দুটো আধ-তারা কেন কেটে নিলাম তা বলছি। গুডরীডসেও কয়েকজন বলেছেন যে কোথাও কোথাও একটু খাপছাড়া লেগেছে তাঁদের - সেটা কেন? সেটার কারণ হলো লেখকের বারংবার ন্যারেটার বদল করা-সাধারণতঃ এই ধরণের omnipresent narrator লেখায় একজন বা দুজন চরিত্রের ওপরেই ফোকাস থাকলেই ভালো হয় -পাঠক গল্পের খেই ধরে থাকতে পারেন। লেখক তা করেননি। দ্বিতীয আধ-তারা : এটা ব্যক্তিগত পছন্দ বলতে পারেন। "আতর আলী আর নূরে ছফা কবরখানা দিয়ে যাচ্ছে, পেছন থেকে ছ্যাঁৎ করে একটা ছায়া সরে গেলো (বা) স্থির হয়ে একটা ছায়ামূর্তি তাদেরকেই দেখছিলো" - এই রকমের রামসে ব্রাদার্স টাইপের জিনিস আমার ভালো লাগে না। Jump scares টাইপের পাঠক-ঠকানো মনে হয়। বাকী সব ঠিক আছে। আমি উত্তর-রাঢ়ীয় পশ্চিমবাংলার বাঙালী, পাঁড় ঘটি, বাংলাদেশে যাইনি কখনো - গ্রামের লোকেদের মুখেরভাষা বুঝতে প্রথম প্রথম সমস্যা হচ্ছিলো। কিছুক্ষন পরে অভ্যেস হয়ে যায়। ভাষাটা তো একই - একটু অ্যাডজাস্ট করে না নিলে আমার'ই লোকসান। অনেক ভালো লেখা ফস্কে যাবে।
যাকগে, তাহলে কত দাঁড়ালো? (৫০%X ৩.৫)+(২৫%X ২.৫)+(২৫%X ৪)=৩.৩৭৫. ৩.৫ =৪ তারা। তাহলে তো এইটা ৩ তারা'ই দাঁড়ায়! যাঃ কলা , 3 is NOT a recommendation তো !
এখন আপনার যদি ইচ্ছা হয় যে বাংলাভাষায় মোটামুটি ভালো একটা থ্রিলার লেখা হয়েছে - যেটা আমরা আগে খুব একটা দেখিনি - সেজন্যে একটা তারা বেশি দিতে, তাহলে দিতে পারেন। আমি... ধরে নিন একটা আধা-রেকো দিলাম।
……………………………………………………………………………………... ** একগাদা ডিটেকটিভ বই পড়ার কারণেই বোধহয় স্থান কাল পাত্র সময় বয়স এইসব জিনিসগুলো মাথায় খেলে যায়। আর ২০১৫ সালেই ভারতের খ্যাতনামা হরর লেখক নীল ডিসিলভা তাঁর প্রথম বই 'Maya's new husband' লেখেন - সে বইটার সঙ্গে এর গল্পের মিল নেই, কিন্তু প্রধান চরিত্রদের একটা চরিত্রগত মিল আছে - আর সেইটা খাপে খাপে মিলে যায়। তবে প্লটের আর লেখকের কৃতিত্ব আছে গল্পের টুইস্ট-টা ধরে ফেলার পরেও পড়ার আগ্রহ কমে না বলে।
আমার এমনিতে বাংলাদেশের গ্রাম/মফস্বলের পটভূমিতে লিখা থ্রিলার বেশ ভালো লাগে। নাজিমউদ্দিনের এই উপন্যাসটিও শুরুর দিকে বেশ লেগেছিল। শীতের সময়ে সুন্দরপুর নামক মফস্বলের যে চিত্র এঁকেছেন তা উপভোগ করছিলাম। তাছাড়া পারিপার্শ্বের সাবলীল বর্ণনা উপন্যাসটির মোটামুটি পরিষ্কার একটি চিত্র আঁকতে সাহায্য করছিলো। বলে রাখা ভালো, বাতিঘর থেকে ইদানিংকালে যেসব লেখকদের বই বের হচ্ছে, তাদের ভেতর নাজিম উদ্দিনের লেখার ধরণ অন্যদের চাইতে তুলনামূলকহারে পরিপক্ব মনে হয়েছে।
আবার প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। কাহিনি সাসপেন্সের দিকে এগুনোর সাথে সাথে বিরক্তি লাগা শুরু হলো। এখানে যে ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে জোড়া লাগিয়ে কাহিনী নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে তা কিছুটা আরোপিত। যেন লেখক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন ঐ ঘটনার সাথে একটা যোগসূত্র তৈরি করতেই হবে। তাও না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু চিরযৌবন ধরে রাখার জন্য যে উপায়ের কথা লিখলেন, তা পড়ে যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে বাকি ভালোলাগাটুকুও নষ্ট হয়ে গেলো। এটিকে রূপকথা মনে হচ্ছিল। থ্রিলার লেখকরা গল্পে সাসপেন্স আনার জন্য এরকম আজগুবি জিনিস প্রায়ই ব্যাবহার করেন কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু এটি আমার কাছে বিরক্তি লেগেছে। আর শেষের দিকের কাহিনীটুকু 'The Silence of the Lamb' মুভির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
আরো কয়েকটি বিষয় বেশ খাপছাড়া লেগেছে। থ্রিলার উপন্যাস মানেই যে সাসপেন্স এবং টুইস্ট তাতো নয়। প্রত্যেকটা চরিত্রের মধ্যকার টানাপোড়েনগুলোর মধ্যে সঙ্গতি থাকাও তো একটি ভালো উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য।
শুরুর দিকের ভালোলাগা এবং সাবলীল লেখনীর জন্য ২ তারা।
ছোটবেলার সেবার বইগুলোর পর আর থ্রিলার পড়া হয় নাই। এই বইয়ের লেখকও আমার কাছে নতুনই। তাই বলবো, খুব ভালো এলিমেন্ট না থাকলে আমি এই বইয়ে গলবো না – এমনটাই শুরুতে মনে হচ্ছিলো। বিশেষ করে প্রথম ১৪০ পৃষ্ঠা খুব বেশি ধীর গতিতে যখন যাচ্ছিলো তখন মনে হলো – বইটা কি টিপিক্যাল থ্রিলার? সেই সাথে ছিল কিছু ফোক ল্যাঙ্গুয়েজ আর গালাগালির ধাক্কা – যেটা কন্টেক্সট অনুসারে আসলেও আমার ভালো লাগছিলো না।
কিন্তু শেষটুকু লেখক যেভাবে নিয়ন্ত্রন করেছেন, মাপা মাপা রহস্যের উন্মোচন – ঠিক যেখানে যতটুকু লাগবে ততটুকুই, অনেক কিছু বোঝা গেলেও যখন দেখা গেলো সেটুকুই শেষ না, আর রহস্য উন্মোচন যখন শুধু শেষ অধ্যায়ে না, ধাপে ধাপেই চলছে; কিংবা পাঠককে জোর করে আটকে রাখার চেষ্টাও করা হচ্ছে না – তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম এই বই বেশ সার্থক।
আর যে কারণে আমি এই বইয়ের টাইপোগুলোকেও উপেক্ষা করে গুডরিডসে ৫ দিয়েছি তার কারণ মুশকান জুবেরির শেষ পরিণতি। আমি স্যাডিস্ট – তাই এই গল্পের এন্ডিং আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আর এন্ডিং-এর কারণেই মুশকান জুবেরি এক বিশেষ রকমের একটা থ্রিলার চরিত্রে পরিণত হয়েছে। আমি যদিও ফিকশন কম পড়েছি, কিন্তু আমার ধারণা মুশকান জুবেরির মতো ধারালো, রহস্যময় আর সার্থক নারী চরিত্র খুব কমই আছে। বিশেষ করে এ কারণে, যে মুশকান ঠিক এন্টাগনিস্ট নাকি প্রোটাগনিস্ট সেটাই আমি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
আরো একটা ব্যাপার, শুরুর দিকে অন্যান্য চরিত্রদের নাম আমার পছন্দ হচ্ছিলো না। কিন্তু পরে বুঝলাম অন্যদের আকর্ষণীয় নাম দিলে আমার কল্পনায় আমি মুশকানকে শিপ করতাম ওই মূল চরিত্রের সাথে। লেখক হয়তো এটা ভেবেই সবার নাম এরকম রেখেছেন, যদিও আমি নিশ্চিত না ব্যাপারটা।
মুশকান জুবেরি আরো রহস্যময় হয়ে উঠলো শেষ দুই পৃষ্ঠায়, “...বইয়ের চেয়ে শক্তিশালী খাবার এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি...” – এই অংশে এসে মনে হলো নতুন করে ধাক্কা দিচ্ছে থ্রিলার জানরায় সম্ভাবনাময় একটা নারী চরিত্র। জুবেরির মনস্তাত্ত্বিক জগতে পা দিয়ে জানতে ইচ্ছে হলো, এরকম কোন নারী/ পুরুষ কি আছে? আরো দেখতে ইচ্ছে হলো যে জগতে কি এমন চরিত্র বিচরণ করতে পারে?
যাইহোক, “এ অঞ্চলের ইতিহাস দুর্ভিক্ষের ইতিহাস; এখানে পেটপুরে খেতে পারাটাই সব” – এরকম একটা অঞ্চলে যেখানে টিপিক্যাল লিখাই সবাই খায়, সেখানে মুশকানের মতো একটা চরিত্র তৈরি করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
বইয়ের শেষ পাতা পড়ে শেষ করার পর আপনার মাথায় একটাই ভাবনা চলবে, আপাত দৃষ্টিতে আমরা যাকে খারাপ বলি, সে কী আসলেই খারাপ? নাকি ভালো খারাপ আসলে আপেক্ষিক ছাড়া কিছু নয়?
বাংলাদেশের প্রথম দিককার থ্রিলার। তবে এখনো পড়তে কী ভীষণ ভালো লাগে। এর উপর বইয়ের নায়িকা যদি হয় মুশকান জুবেরি’র মত কেউ। গল্পের আরেক প্রধান চরিত্র নুরে ছফাকে কেমন লেগেছে তা নিয়ে আমি কিছুটা মুশকিলেই পড়েছি। কারণ কোন মেইনস্ট্রীম ছাঁচে একে ফেলা যায় না। অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে কে এস খান তথা খোদাদাদ শাহবাজ খানের চরিত্রের সাথে মিসির আলীর কিছুটা মিল পাওয়া যায়। আর আতর আলীকে নিয়েও বেশি কিছু বলতে চাই না। সে ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম।
কিছু খুটখাট বানান আর টাইপিং ভুল ছাড়া তেমন কোন অসামঞ্জস্য চোখে পড়ে না। এই বইয়ের উপর নির্মিত ওয়েব সিরিজ আসছে সামনে। সেটা দেখার আগে পড়ে ফেলতেই পারেন। নিরাশ হতে পারেন। তবে সময়টা মন্দ কাটবে না।
একটু বইটার প্রব্লেমেটিক এবং সেনসিটিভ বিষয়ে কথা বলবো। স্পয়লার দেয়া ছাড়া যা সম্ভব না. So proceed with caution.
গতকাল নেটফ্লিক্সের রিয়েল লাইফ ট্র্যাজেডি বেসড ফিল্প "Society of the Snow" দেখছিলাম। আন্দিজ পর্বতে প্ল্যান ক্রাসের ঘটনা দিয়ে বানানো সার্ভাইভাল ঘরানার সিনেমা। দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির শক্তির কাছে মানুষ জীবন ঠিক কতটাই তুচ্ছ সেটার স্বরুপ এই সিনেমাটি। আপনি এটা মানতে বাধ্য যারা এই কঠিন সময়টা সার্ভাইব করেছে এবং করেনি তারা সবাই আমাদের রেসপেক্ট, অন্তত সিমপ্যাথি দাবি করে। এই ঘটনা আর দশটা ট্র্যাজিক ঘটনার মতোই সঠিক ইতিহাসে সঠিক তথ্যে প্রচার হবার দাবি রাখে।
কিন্তু নাজিম উদ্দিন সাহেব কি করলে? সেটাকে তার বইয়ের ভিলেন অরিজিন স্টোরি বানালেন। আচ্ছা মুশকান জুবেরীর গল্পটা যদি এমন হতো, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ, গণকবরে ফেলে দেয়া হলো জুবেরীকে। চারদিকে শত্রু বাহিনীর ঘাঁটি, করবের গর্তটাও অনেক। সে আহত। উঠে আসতে পারছে না। বাধ্য হয়ে কাছে থাকা লাশগুলো খাওয়া শুরু করলো সে। আবিস্কার করলো এমন একটা বডি পার্ট যা তার যৌবন অটুট রাখলো বছরের পর বছর। সে এখন পুরোদস্তুর একজন সিরিয়াল কিলার। কি রিডিকিউলাস লাগছে? ধরুন নাজিম সাহেব এই ট্র্যাজেডি নিয়ে লিখতো গল্পটা, তখন কি পাঠক মেনে নিতো? ইতিহাস বিকৃত করার দায় কি তার উপর পড়তো না? নাকি বিদিশি বলে তাদের ট্র্যাজিক ঘটনার দাম নাই পাঠক সমাজের কাছে?
নাকি পাঠক সমাজের কাছে মরালিটির থেকে গল্পের টুইস্ট, শকিং ফ্যাক্টরটাই বড়? পাঠকদের মাঝে এই ক্রিটিক্যাল চিন্তাধারার আগমন এখনো হয়নি?মরালিটি বনাম ক্রিয়েটিভ ফ্রিডম বিতর্কে আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন। তবে প্লিজ লজিক্যাল কথা বলবেন,আমি এখানে তর্ক করতে আসিনি।
পুনশ্চ ১ : লেখকের লেখার কিছু ডেডিকেটেড ফ্যানবেইস আছে যারা পার্সোনাল এট্যাক বলে ঝাপিয়ে পড়েন (পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি) তারা দয়া করে সমালোচনা গ্রহণ করতে শিখুন।
পুনশ্চ ২ : Society of the snow নেটফ্লিক্সে স্ট্রিম হচ্ছে। অবশ্যই দেখার অনুরোধ থাকবে৷ ভালো সিনেমা।
বইটা আমার কাছে সবসময় মনে থাকবে মুশকান জুবেরির জন্য, রূপ, গুণ, ব্যক্তিত্ব, সাহস আর বুদ্ধিমত্তার মিশেলে অনন্যসাধারণ একটা চরিত্র। আতর আলিও ফাটাফাটি একটা চরিত্র। ভাষা, বর্ণনা আর কাহিনির বর্ণনা সবই জোস। সাইলেন্স অভ দ্য ল্যাম্বসের সাথে মিলগুলো যদিও চোখে লেগেছে তাও যথেষ্ঠ উপভোগ্য।
রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি। নামটাই কিন্তু বই এর প্রধান আকর্ষণ । ফেসবুকে লেখকের প্রোফাইলে প্রথম বইটা বের হবার যেদিন খবর শুনি সেদিন থেকেই বইটা পড়ার ইচ্ছা । কিন্তু অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে শেষ করতে পারলাম বইটা । আগে যতগুলা রিভিউ দেখেছিলাম সব গুলোতেই একটা কথা ছিল। এক নিঃস্বাসে শেষ করার মত বই। আমার কিন্তু বেশ অনেক গুলো নিঃশ্বাস ই লেগেছে। প্রথম দিকে কাহিনীর শুরু একেবারে সাদামাটা ভাবেই। আর এই সাদামাটা ভাব বজায় ছিল বই এর প্রায় অরধেক প্রান্ত পরযন্ত। শুরু থেকেই যে একদম রোলার কোস্টার রাইড শুরু হয়ে যাবে এমন না, তবে একটা জিনিসই সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে তা হল কৌতূহল । কাহিনীর বিল্ডাপ ই এমন যে শুরু থেকেই রহস্য জমাট বাধতে থাকে। আর এই ধরনের থ্রিলার এর রিভিউ লেখার সমস্যা হল কিছুই বলা যায় না তাহলেই একটু না একটু স্পয়লার দেয়া হয়েই যায়। এখানে তাই কাহিনীসম্পরকে কিছু বলব না। তবে বই এর অরধেক এর পরে যে মাথা ঘুরানো টুইস্ট আছে তা সবারই ভালো লাগবে আর তখন থেকেই কাহিনী একেবারে উসাইন বোল্ট এর মত দৌড়ানো শুরু করে। নাজিম উদ্দিন ভাইয়ার লেখায় উত্তেজনা থাকবেই। কিন্তু এই বইটাতে কেমন জানি একটু কম কম লেগেছে। আর বই এর প্রধান চরিত্র টাও কেমন জানি একটু নিষ্প্রাণ । আর যাকে ঘিরে সব কাহিনী তার নিজের চরিত্রের গভীরতাও অতটা দাগ কাটতে পারে নি। কেমন জানি বেশী সিম্পল হয়ে গিয়েছে। তবে যে জিনিসটা সবচেয়ে খারাপ লেগেছে তা হল ফিনিশিং , কেমন জানি হুট করেই শেষ হয়ে যায় কাহিনী। আর শেষটাও হয় কোন উপযুক্ত সমাধান ছাড়া। লেখক হয়ত কন কারণে তাড়ায় ছিলেন এরকম মনে হয়েছে। আর সমাধানের ব্যাখাও মন মত হয় নি। এটা একান্তই আমার নিজের মত। সব মিলিয়ে একটা সফল থ্রিলার বলা যায়, কিন্তু নাজিম ভাইয়ার কাছ থেকে এর চেয়ে অনেক বেশী এক্সপেক্ট করি। ও হ্যাঁ বই এ কিন্তু কে এস কেও আছে শেষ এর দিকে ;)
বইটার নাম টা প্রথম থেকেই অদ্ভুত ঠেকেছে। পড়ার ইচ্ছা থাকলেও এবং কৌতুহল সৃষ্টি করা টাইটেল হওয়া সত্ত্বেও কেন জানিনা বইটাকে বারংবার উপেক্ষা করে গেছি। হঠাৎ করে, নিজের উপর নিতান্ত জোর খাটিয়েই পড়ে নিলাম বইটা। পড়ার পর বুঝলাম কি মিস্ করেছি।
বইটির কাহিনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলে অনেক কিছুই স্পয়লার হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হয় আমার তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও গল্পের মূল কাহিনীতে যাচ্ছি না।
গল্পটি সুন্দরপুরের 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি' নামের একটি অদ্ভুত হোটেল কে ঘিরে যার মালকিন মুসকান জুবেরি। এই মুসকান জুবেরি এক রহস্যময়ী নারী এখানে, যাকে ঘিরেই পুরো গল্পটি তৈরি হয়েছে। প্রধান চরিত্রে আছেন ডিবি এর অফিসার নুরে ছফা, যিনি কিছু মিসিং কেস এর তদন্তের জন্য চলে আসেন সুন্দরপুরে। আরও কিছু চরিত্র গল্পটিতে আছে। বলাবাহুল্য প্রত্যেকটি চরিত্রকে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গল্পে। গল্পটি খুব ফাস্ট পেস এবং ঔৎসুকতা সৃষ্টি করে। প্রথম ৬০-৭০ পাতা তেমন কোনো থ্রিল সৃষ্টি করেনি, কিন্তু তার পর থেকেই রহস্যের উদঘাটন হতে শুরু করলে পড়ার গতি আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। গল্পটিতে আধুনিক সভ্যতায় বিজ্ঞান এর কিছু রোমহর্ষকর আবিস্কারের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে।
এক কথায় গল্পটি থ্রিল সৃষ্টি করতে সার্থক হয়েছে, একটি থ্রিলার রহস্যময় বই থেকে পাঠক পাঠিকা যা আশা করে।
4.5/5 বইটার প্রতি ভালো লাগা ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। যেটুকু বলা সম্ভব সেটাও বলতে গেলে স্পয়লার হয়ে যাবে। মুশকান জুবেরির চরিত্রটা আমাকে কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তার রূপ, গুন, বুদ্ধি,সাহস, কঠিন ব্যক্তিত্ব, উপস্থিত বুদ্ধি সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করেছে। শত চেষ্টা করেও মুশকান জুবেরিকে আমি ঘৃণা করতে পারিনি। তার কর্মকাণ্ডে গা ঘিনঘিন করে উঠেছে তবুও তার প্রতি ঘোর লাগা মুগ্ধতা কাটেনি। নুরে ছফা কে তো ভালো লেগেছেই তবে আর থেকেও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে আমার কাছে অদ্ভুতরকম ভালো লেগেছে আতর আলীকে। সবথেকে বেশী খুশি আমি উপসংহার টা নিয়ে। মুশকান জুবেরির মত একটা চরিত্রের পুলিশের হাতে এত তাড়াতাড়ি পতন আমি মেনে নিতে পারতাম না। এই চরিত্রের প্রতি ন্যায় করতে সত্যিই আরও ���িছুটা সময় দরকার। আমি এক্ষুনি পরের সিকুয়েল টা শুরু করব। ০.৫ তারা ওই বইটার জন্যেই বাদ রেখেছি। দেখা যাক পরেরটাতেও লেখক এভাবেই মুগ্ধ করতে পারেন কিনা।
বাবুই বলছিলেন, "২৭১ পৃষ্ঠার বই। ১০৫ পৃষ্ঠা পড়ছি। এতক্ষণে যা বুঝলাম, তুমি একটা মুসকান জুবেরি!" না বাবুই, আমি একদমই মুসকান জুবেরি নাহহহহ।(কিন্তু বইটা পড়ার পর মুসকান হইতে ইচ্ছা করতেছে)
বইটা সংশোধনের কোন চান্স তো নাই তাই যা ভালো লাগছে তা ভালোই, আর খারাপ লাগাটাও বইয়ের একটা অংশ। Read it anyway!
আমি যা পড়ি ওইটার একটা ফিল্ম মাথায় ভিতর চলতে থাকে। এইবার আমার ছবির নুরে ছফা ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী আর জয়া আহসান ছিলেন মুসকান জুবেরি। উনাদের এই চরিত্রে ভালো মানাবে। কি বলেন?
আমার পুরনো জমিদার বাড়িতে থাকার অনেক দিনের ইচ্ছা আর বই পড়ে কুমির পালার ইচ্ছা করতেছে। খাওয়ার রুচি আমার ছোটবেলা থেকে খারাপ তারপরও "মুসকান'স স্যুপ অফ লাইফ" খেয়ে খাবারের মোহে ডুবে থাকতে ইচ্ছা করতেছে।
বইয়ের লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীনকে জানার আগ্রহ বাড়ছে। আই হোপ যে নিচের দুইটা বই এই জীবনে কোন একটা সময় পড়ে ফেলবো।
1. I Had to Survive: How a Plane Crash in the Andes Inspired My Calling to Save Lives, by Pablo Vierci and Roberto Canessa
2. They Lived on Human Flesh, by Enrique Hank Lopez
গল্পের শুরু মাফস্বল শহর সুন্দরপুরে। মুশকান জুবেরি যে কিনা এক জমিদারের নাত বউ, হাইওয়ে রোডের পাশে নতুন এক রেস্টুরেন্ট খুলে। " রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেনি" যেমন অদ্ভুত তার নাম তেমন সুস্বাদু তার রান্না করা খাবার। অনেক দুরদুরান্ত থেকেও লোক আসে তার এই রেস্টুরেন্ট এ খেতে। কিন্তু এই রেস্টুরেন্টই যেন এক রহস্যের মায়া জাল। সাংবাদিক পরিচয় দেয়া ছফা আলি যখন এই রহস্য উদঘাটন করতে চেষ্টা করে মুসকান জুবেরির উপর নজর দারি শুরু করে তখনি সে আটকে যায় আরও রহস্যের মায়া জালে। বেরিয়ে আসতে থাকে চান্চল্যকর সব তথ্য। মুসকান জুবেরির রেস্টুরেন্ট, তার রাজপ্রাসাদ, তার অতীত, গোরখোদকের অ্যাডভানস খুরে রাখা কবর, সবই যেন এক রহস্য ঘেরা গোলক ধাঁধা।
লেখক ভেবেছেন ভালই। ফিকশনের কাজই তো অকল্পনীয়-অবিদ্যমান নিয়ে, সেসব ব্যপারে কিছু বলার থাকে না। তবে লেখকের ভাষাভঙ্গি সাবলীল লাগে নাই, বেশীরভাগ সময় খটমট-হুটহাট। পাসপোর্ট হুইস্কি ওয়াইন হয়ে গেলে বা ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট গুলে গেলে আবার ঝামেলা। মনে হয়না একবার লিখে ছাপতে দেয়ার আগে প্রুফ রিড করা ছাড়া কেউ পড়ে দেখেছে। লেখক থ্রিলারটা এত ভাল ছকে এঁকেছেন যে চিত্রনাট্য প্রায় তৈরি তবে থ্রিলারের ছকের অংক ছাড়াও কিছু কাজ থাকে, এগুলি নজর না দিলে তো খারাপ, তাড়াহুড়া-বেখেয়ালির লক্ষণ। গাঁথুনি-ভাষাভঙ্গি আঁটসাঁট হলে বাংলায় ভাল একটা ক্রাইম ত্রিলার হতে পারতো। যাহোক, এতগুলি রিপ্রিন্ট হয়ে গেলো তবু বিশ্রী প্রচ্ছদটা বদলানো গেলো না!
❝রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি❞ বাংলা ভাষায় মৌলিক থ্রিলারে নতুন জোয়ার এনেছিলো। বইটা নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। বইটা সম্পর্কে মোটামুটি অনেকেই জানেন৷ আমার অনেক আগেই বইটা সম্পর্কে আইডিয়া থাকলেও পড়া হয়ে ওঠেনি।বইটা সম্পর্কে অনেক আলোচনা দেখেছি৷ বড্ড দেরিতে বইটা পড়ার একটা আফসোস তো রয়েই যাবে৷
গল্পের শুরুর সুন্দরপুর গ্রামে একটা রেস্তোরাঁকে কেন্দ্র করে আর সেই রেস্তোরাঁর নামই হচ্ছে ❝রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি❞ ৷ রেস্তোরাঁর অদ্ভুত স্বাদের খাবারের জন্যে বিখ্যাত ; খাবারের কারণে ছুটে আসে নানা প্রান্ত থেকে মানুষ। অদ্ভুত খাবারের মতো অদ্ভুত আর রহস্যময় চরিত্রের নাম মুশকান জুবেরি যিনি রেস্তোরাঁর মালিক৷ রহস্য আর ঘটনা বুঝে উঠার জন্যে আবির্ভাব ঘটে প্রোটাগনিস্ট নূরে ছফার৷ ঘটনা যত এগিয়ে যেতে থাকে রহস্য আর ঘটনা বেশ জমজমাট হতে থাকে৷ আসলে বেশি কিছু লিখতে গেলে স্পয়লার হয়ে যাবে বা একদম ব্লার্ব না জানা অবস্থাতে শুরু করলে বইটা পড়ে ভালো লাগতে পারে। আর আমি ব্লার্ব লিখতে নিজের উপর ভরসা পাচ্ছি না ; স্পয়লার আসতে পারে৷
মৌলিক বাংলা থ্রিলারে দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করে লেখা হয়েছে৷ ছোট-ছোট টুইস্ট উপন্যাসে দেখা মিলবে৷ অ্যাকশন সিন কিংবা ধাওয়া করার সিনগুলোতে একটা থ্রিলিং এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যাবে৷ গল্পের মাঝামাঝি আর শেষদিকে এসে সব কিছু মিলিয়ে দারুণ একটা এক্সপেরিয়েন্সের দেখা মিলবে৷ আমি বলবো যে সময়কালে উপন্যাসটা লিখা হয়েছে ওই সময়কালের হিসেবে বইটা একটা অসাধারণ এক্সপেরিয়েন্স দেওয়ার কথা৷ এই সময়ে এসে নাজিম ভাই লিখলে সম্ভবত আরো অনেক কিছু পরিবর্তন করে লিখতেন৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলবো ক্যারেক্টার বিল্ড আপ নিয়ে। আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র হচ্ছে মুশকান জুবেরি। বাংলা থ্রিলার সাহিত্যে অসাধারণ একটা নারী চরিত্র পাওয়া গিয়েছে৷ শুধু আমারই যে পছন্দ এমন না ; যারা বইটা পড়ে ফেলেছেন তাদের কাছেও পছন্দ এরকম রহস্যময় চরিত্রের জন্যে৷
গল্পের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে গল্পের গতি বেশ ভালোভাবেই এগিয়েছে৷ গল্পের গতি কখনো স্লথ মনে হয়নি। মনে হয়নি স্লো হয়ে গিয়ে থেমে গেছে বা জোর করে সমাপ্তি টানা হয়েছে। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হচ্ছে শুরুর বেশ কিছু পেজ পড়ার পরেই মূল গল্পে প্রবেশ করে ফেলবেন। মাঝামাঝি অবস্থায় চলে আসলে প্রতি চ্যাপ্টারের ফিনিশিং এমন একটা লাইনে শেষ হবে যে নেক্সট পেজে কি আছে পড়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে থাকবেন৷ সাসপেন্স ক্রিয়েট করে রাখার কারণে বলবো যে বইটার জনপ্রিয়তার এতো কারণ৷ নাজিম ভাই স্টোরিটেলিংয়ে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন৷ বইটা পেজ টার্নার নিঃসন্দেহে।
কেন্দ্রীয় চরিত্র নূরে ছফা এবং মুশকান জুবেরির ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট বেশ ভালো হয়েছে। নূরে ছফার চরিত্র বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে৷ মুশকান জুবেরির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখানে নাজিম ভাই বেশ ভালো মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। আমার কাছে মুশকান জুবেরির চরিত্র বেশ ভালো লেগেছে৷ মুশকান জুবেরিকে অসম্ভব লেভেলের কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি যেটা পজেটিভ সাইন৷ রহস্য, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতাসহ সব গুণাবলি ছিলো৷ আতর আলির চরিত্রও বেশ ইন্টারেস্টিং ছিলো৷
অনেকদিন পর লিখলাম৷ বইটা তো পড়ে ফেলেছি সেই কবে। পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে যা বুঝতে পেরেছি সেটা হচ্ছে ঠিক মতো সাজাতে পারছি না, শব্দচয়নের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে আর সব মনের ভাব ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারছি না৷ এনিওয়ে...
এই বইটা বাংলাদেশ আর পশ্চিমবাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বলেই শুনেছি। আগেও একবার হাতে নিলেও শেষ করা হয়ে উঠেনি। এবার যখন দেখলাম এটাকে ভিত্তি করে ওয়েব সিরিজ হয়ে গেল তখন আমার টনক নড়ে গেল। ভাবলাম পড়ে দেখি আসলেই মুশকান জুবেরী বাধনের অভিনয়ের মত লাস্যময়ী কিনা।
আচ্ছা, এবার গল্পে আসি। গল্পটা সুন্দরপুর নামে এক মফস্বলকে নিয়ে। এই সুন্দরপুরে এক অদ্ভুত নামের রেস্টুরেন্ট আছে। নাম তার ’রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি'। অত্যন্ত সুস্বাদু খাবারের জন্য এ রেস্টুরেন্ট খুব বিখ্যাত। নূরে ছফা নামে এক লোক ঢাকা থেকে এই রেস্টুরেন্টে খেতে এসে রেস্টুরেন্টের মালিক মুসকান জুবেরীকে নিয়ে খোঁজখবর করা শুরু করে। কিন্তু অবাক করা সব তথ্য পেতে থাকে নূরে ছফা। যেগুলা আবার কোনটাই ভেরিফাই করা যাচ্ছে না। সুন্দরপুরের সব ক্ষমতাবান লোকের সাথে মুশকানের খুব খাতির। তাই খবর নিতে গিয়ে বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হয় ছফাকে। কিন্তু কে এই ছফা? মুশকান জুবেরীই বা কে? তার এখানে থাকার উদ্দেশ্য কি? মুশকান জুবেরীর রহস্যময় প্রাসাদে এসব কি অদ্ভুত জিনিস? অনেক অনেক রহস্য বইটাতে।
এবার আসি আমার কেমন লাগল। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন প্রকার ছন্দপতন হয়নি। গল্পের সাসপেন্স পার্টগুলা লেখক খুব চমৎকার করে বর্ননা করছেন, সাথে উত্তেজনাটাও পুরোটা ধরে রেখেছেন। মুশকান জুবেরীর চরিত্রটা খুবই শক্তিশালী করে নির্মাণ করা হয়েছে। বাকিগুলাতে তেমন নজর দেয়া হয়নি। কেএস খানকে খুব গুরুত্বপূর্ণ করে উপস্থাপন করতে গিয়েও শেষে তা হয়ে উঠেনি। কিন্তু এসব সত্ত্বেও মোটমাট কথা হল খুব ভাল উপন্যাস লিখেছেন লেখক। সব ভাল হলেও শেষটা আসলে ভাল না। শেষ বলতে গল্পের শেষ বলছি না। আমার খারাপ লাগাটা অন্যখানে। আমার খুব প্রিয় এবং পশ্চিমা দেশের খুব বিখ্যাত এক চরিত্রকে পুরাপুরি নকল করা হয়েছে এ গল্পের মূল চরিত্রে। এমনকি অপরাধীর পালানোর বিষয়টাও হুবহু নকল করে আনা হয়েছে। সে হিসেবে মূল চরিত্র আর তার কর্মকাণ্ড নকল। আর তাই বইটা পড়ে আমি শেষ পর্যন্ত চরম হতাশ। অন্যসময় হলে দুই তারা দিতাম। কিন্তু লেখা খুব ভাল হয়েছে বলে একতারা বাড়িয়ে দিলাম।
এখন কথা হচ্ছে সিরিজের দুই নাম্বার বইটা কি পড়ব???
পুনশ্চ : রিভিউয়ে কেউ নকলের কথাটা বলেন নাই। ধরে নিলাম স্পয়লার হয়ে যাবে দেখে কেউ এটা উল্লেখ করেন নাই। আমি শুধু চরিত্রটার নাম বলে দিলেই বইটা প্রথম ৫০ পাতা পড়েই অনেকের বুঝে যাওয়ার কথা শেষে কি হতে পারে। তাই চরম লোভ থাকা সত্ত্বেও নামটা বললাম না। কিন্তু ক্ষোভটা মিটানোর জন্য আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে চরিত্রটার নাম বলে দিয়েছি। সে আমাকে ব্যাপক গালাগালি করছে এবং আমি ব্যাপারটা বেশ উদযাপন করছি। 😈😆😈😆
Oh my goodness!!😱 বইটা পড়ার পর আমার রিএ্যাকশনটা ঠিক এমনই ছিল,ভাই রে ভাই লেখক কি লিখেছে এইটা !😱 frankly speaking একদম শুরুতে মনে হয়েছে এইটা just over hyped একটা বই প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর ও তেমন আগ্ৰহ হয় নাই,then the mighty lady মুশকান জুবেরি ভেলকি দেখাতে শুরু করল😊প্রতে্যকটা পাতায় পাতায় টানটান উত্তেজনা অনুভব করছে,নুরে ছফা থেকে শুরু করে আতর বা ফালু কেউ দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি,ক্যানিবলিজম নিয়ে যে এরকম একটা masterpiece তাও বাংলাদেশী কেউ লিখতে পারে আমার চিন্তাতিত ছিল,hats off to Mr নাজিম, আমার Goodreads join করার পর এই প্রথম কোন বই 5/5 rating দিতে এক মূহুর্ত ও ভাবিনি.what a book it was,it will be good in my memory as long as I'm alive😊
এই বই নিয়ে কি এমন বলব যেটা আগে বলা হয়নি? ভালো লাগুক বা না লাগুক পাঠকেরা এই বই নিয়ে আলোচনা করবেই। এবং তারা সেটা করেই চলেছে গত কয়েক বছর ধরে। সোশ্যাল মিডিয়া তে খুব বেশি সক্রিয় না থাকার দরুন, 'রবীন্দ্রনাথ...' এর কথা বেশ দেরিতেই জানতে পারি আমি। তারপর যখন দেখি সৃজিত মুখোপাধ্যায় বেশ ঘটা করে এই নিয়ে ছবি করছেন, তখন আর কৌতূহল সংবরণ করতে পারলাম না।
আমার মতো আপনিও যদি গা ভাসিয়ে দেন, তাহলে দেখবেন স্রোতে ভেসে চলে এসেছেন বাংলাদেশের এক মফস্বল এলাকা সুন্দরপুরে। দেখবেন কিভাবে এই এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে এক অদ্ভুত রেস্তোরা 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখন খেতে আসেননি'। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাঁর কি সত্যি এখানে আসবার কথা ছিল? থাকলে, আসেননি কেন? সে সব প্রশ্নের উত্তর নাহয় বইয়েই জেনে যাবেন। তবে তার আগে আমাদের দেখতে হবে, এই যে আপনারই মতন এক নতুন আগন্তুক নূরে ছফা হঠাৎ এসে উপস্থিত হয়েছে সুন্দরপুরে, তার উদ্দেশ্যটা কি? কেনই বা তার এত কৌতূহল রেস্তোরার রহস্যময়ী মালকিন মুশকান জুবেরী'র প্রতি?
গল্প এগিয়ে যায় মোঃ নাজিম উদ্দিনের সাবলীল লেখনীর জোরে। মেদহীন অনাড়ম্বর লেখা, অহেতুক অলংকার বা বর্ণনার অভাবে বেশ গতিশীল। হয়ত গল্পের শুরুটা বেশ সাদামাটা, তবে লেখকের এই সুন্দরপুরের আবহায়াও পাঠকদের মানিয়ে নেওয়ার সময় দেওয়ার প্রচেষ্টা, আমার বেশ ভালো লেগেছে। আমি যাকে বলে বরাবরই স্লো বার্ন থ্রিলারের ভক্ত। অনেকের আবার এটা পছন্দ নাই হতে পারে।
গল্পের মূল চরিত্র নূরে ছফা যে খুব একটা মনে দাগ কেটে যায়, সেটা বলব না। পার্শ্বচরিত্রদের দাপটে ছফা বাবু ঠিক যেন ডার্ক নাইটের ব্রুস ওয়েইন, কতকটা নিজের ছবিতেই ম্লান। তবে কিনা বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথ নামক এই ডিশের সেরা উপাদান অবশ্যই মুশকান জুবেরী। বাংলা থ্রিলার সাহিত্যে এমন একজন দুরন্ত চরিত্র শেষ কবে এসেছিল বলা কঠিন। দৃঢ়, বুদ্ধিমতী এবং ভীষন রকমের ব্যক্তিত্বময়ী, মুশকান জুবেরীর ধন্ধে না পরাটা এক কথায় দুষ্কর। শার্লক হোমসের ভাষায় শি ইজ দ্যা উইমান।
এছাড়াও বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে একটি চরিত্র, যাকে ছাড়া এ গপ্পো মিইয়ে যেত। আতর আলী তুমি হলে এই ডিশের সিক্রেট উপাদান।
যাইহোক, ফিনিশিং এর জোরে লেখক গল্পকে একবারেই ঝুলতে দেননি, এটি যা রক্ষে। তীরে এস তরী বেশ বহাল তবিয়তে ভাসমান। আমার কিন্তু দিব্যি লাগলো 'রবীন্দ্রনাথ'। জনপ্রিয় জিনিস কে খারাপ বলে কেউকেটা হবার ইচ্ছে আমার নেই। তাই বেশ হৃদ্দ চিত্তে চারটে তারা টিপস দিলাম। আর সবশেষে বলছি, বইটি সম্বন্ধে না পরে, বইটি পড়ুন। নানা মুনির নানা মত পড়তে পড়তে একটি সময় এসে বুঝবেন যে গল্পের মেইন টুইস্ট গুলোতে আর চমক লাগছে না। নিজের অজান্তেই বিদেশী গল্পের সাথে বারংবার তুলনা করে চলছেন। ফাঁপরে পড়বেন নিজেই। সিক্যুয়েল পড়বার ইচ্ছে পোষণ করে আমি বিদেয় নিলুম।
( যা: দেখুন, একেবারেই ভুলে যাচ্ছিলাম। রবীন্দ্রনাথে তো আবার টিপস দেওয়া বা নেওয়া দুটোই বারণ। এসব করে মুশকান জুবেরীর রোষানলে পড়ি আর কি।)
সিক্যুয়েলের প্রথম বই "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি"
বইয়ের নাম-ই বোধ হয় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণে এবং প্রাথমিকভাবে কৌতুহল সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
প্রথম ১২০/১৫০ পৃষ্ঠা পড়তে বেশ বেগ পেতে হয়েছে, সাদামাটা সংলাপ, বিচ্ছিন্ন একের পর এক ঘটনা, এমনকি কিছু কিছু জায়গায় বেশ বোরিং। তবে প্লট, আবহ, চরিত্র- যেভাবে তৈরী করা হয়েছে তা পাঠকের কৌতুহল ধরে রাখবে নিতান্তই ঘটনার শেষটা জানার আগ্রহে।
বইয়ের প্রথম তিন-চতুর্থাংশের পাকানো জট যখন শেষ এক-চতুর্থাংশে গিয়ে খুলতে শুরু করে, একের পর এক ঘটনা খুব তড়িঘড়ি করে ঘটে যাচ্ছে মনে হয়। তাক লাগানো বেশ কয়েকটা টুইস্ট আছে, তবে যারা ক্রাইম থ্রিলার পড়ে বেশ অভ্যস্ত, তাদের কাছে প্রেডিক্টেবল লাগাটা বেশ স্বাভাবিক বলা যায়।
নির্দিষ্ট এক চরিত্র যে কিনা শুরু থেকেই আঞ্চলিক ভাষায় কথায় বলে, বেশ কয়েক জায়গায় হঠাৎ করে প্রমিত ভাষা এবং আঞ্চলিক ভাষার সংমিশ্রণে বক্তব্য/সংলাপ দেয় যা পড়তে বেশ অস্বস্তিকর, খাপছাড়া লেগেছে।
এছাড়া, পুরো গল্প শেষ করার পর-ও বেশ কিছু খটকা থেকে যায় যা লেখক ব্যাখ্যা করেনি, আমিও কোনো উত্তর পাইনি।
Intriguing , intoxicating and controversial in equal measures , this could be the perfect example of Bengali fiction taking the next step towards mature writings.
Filled with serpentine twists from the very fast to the last page , there is a reason that this book is the most talked about , debated and sold Bengali book of the year.
Without giving away any spoilers , if there is one Bengali book that’s a must read this year , this is it !
বইটা পড়েই লেখকের প্রতি মুগ্ধতার শুরু, মুসকান জুবেরির রহস্যময়তা প্রচন্ড আকর্ষণীয়, সেই সাথে পটভূমি বাছাই ও পুরো গল্পের আবর্তন ছিল মনোমুগ্ধকর, আমার পড়া অনন্যসাধারণ বাংলা থ্রিলার এটি, loved it.