মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে দেশে ফিরে অদ্ভুত এক রহস্যময় ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে অরনী। মৃত্যুর আগে তার মা রেখে গেছে অদ্ভুত এক ধাঁধা আর ধোঁয়াশা মেশানো অতীত। মায়ের মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত করতে হলে তাকে সমাধান করতে হবে এই ধাঁধার এবং ডুব দিতে হবে অতীতে। পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে তাকে সাহায্য নিতে হয় খুনের সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া মানুষটির কাছ থেকেই। ঘটনার পরিক্রমায় নিজেও সে নাম লেখায় পলাতক আসামির খাতায়। অদ্ভুত এই রহস্য সমাধান করতে গিয়ে একদিকে পুলিশের তাড়া, অন্যদিকে অদৃশ্যভাবে তাদেরকে সাহায্য করতে থাকে অচেনা একদল লোক। ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে সে জানতে পারে সমস্ত রহস্যের বীজ রোপিত আছে ইতিহাসের বিশেষ একটি দিনে, ২৫শে মার্চ, ১৯৭১।
রবিন জামান খান একজন বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক । রবিন জামান খানের জন্ম ময়মনসিংহ শহরে, পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষাতত্বে দ্বিতীয় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। পড়া-পড়ানো, শেখা-শেখানোর চর্চা থেকেই শিক্ষকতাকে পেশা ও লেখালেখিকে নেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংকলনে বেশকিছু মৌলিক ও অনুবাদ গল্প লেখার পাশাপাশি লিখেছেন একাধিক টিভি নাটক। তার মৌলিক থৃলার উপন্যাস শব্দজাল, ২৫শে মার্চ, সপ্তরিপু, ব্ল্যাক বুদ্ধা, ফোরটি এইট আওয়ার্স, দিন শেষে, আরোহী ও অন্ধ প্রহর ইতিমধ্যেই অর্জন করেছে বিপুল পাঠক প্রিয়তা। বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতা থেকে প্রকাশিত তার মৌলিক গ্রন্থ ২৫শে মার্চ, সপ্তরিপু ও শব্দজাল পশ্চিম বঙ্গের পাঠক মহলে ভালোবাসা কুড়িয়েছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসের রহস্যময় ঘটনাবলী, সেইসাথে মানব মনের জটিল মনস্তত্ত্ব বিষয়ে আগ্রহ থেকে উনি বর্তমানে কাজ করে চলেছেন একাধিক ইতিহাস নির্ভর ও সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার উপন্যাস নিয়ে। এরই প্রেক্ষিতে খুব শিঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস বিখন্ডিত, রাজদ্রোহী, ধূম্রজাল, সিপাহী, অশ্বারোহী, মুক্তি। রবিন জামান খান ঢাকায় প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবষেণা করছেন তিনি।
অনেক দিন পরে খুব সুস্বাদু কোন খাবার খাওয়ার পর যেমন একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর বেরিয়ে আসে ভেতর থেকে , এই বইটা শেষ করার পর ঠিক সেরকম ই একটা অনূভুতি হচ্ছে। পারফেক্ট থ্রিলার বলতে যা বোঝায় একদম তা। কোন কিছুর আতিশায্য নেই, থ্রিলারের সব গুলো উপাদান একদম পরিমিত পরিমাণে বিদ্যমান। বিশ্বাস করুন – বই এ ব্যবহৃত ক্লু গুলো একদমই সিম্পল, কিন্ত সেগুলো এমন ভাবে একটার সাথে আরেকটা যুক্ত যে আপনা আপনিই হাত চলতে থাকে পরে কি হয়েছে এটা জানার জন্যে। চরিত্রগুলোর সাথে সাথে একেবারে বই এর শেষে গিয়ে তবেই বইটা রাখতে ইচ্ছা করবে। আর গত কয়েকদিনে পড়া বেশ কয়েকটা থ্রিলার এর মধ্যে বেস্ট ফিনিশিং ২৫শে মার্চ এরই। সবগুলো সুতো একেবারে টেনে নিয়ে গিয়ে একদম শেষে ঠিকমত মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। যা একটু কঠিনই ছিল কারণ একসাথে দুটো টাইমলাইনে কাহিনী এগিয়ে গেছে সমান্তরালভাবে ।
কাহিনীর শুরতে বিক্ষিপ্ত একটা ঘটনা দেখা যায় যা ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ এর সময় ঘটে। কিন্তু এই ঘটনাটাই মূল ভিত্তি গড়ে দেয় পুরো বই এর কাহিনীর। এরপরের অধ্যায়ে দেখা যায় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখে। বই এর নাম দেখে আমি ভেবেছিলাম যে কাহিনী বোধহয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ঘটনা হবে, কিন্তু না! লেখক ঐ রাতটাকে কেবল গল্পের উপাদান হিসেবে ব্যভার করেছেন এখানে। আমরা সবাই জানি যে ঐ রাতে কি ঘটেছিল। বই এ দেখা যাবে যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক কিভাবে ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়েন এক ঐতিহাসিক রহস্যের সাথে, সাথে তার দুজন ছাত্র। এরপর এই দুজনকে ছাত্রকে নিয়ে ছুটে বেড়ান পুরো ঢাকা, পিছনে সবসময় লেগে থাকে পাকিস্তানী বাহিনীর এক কর্নেল । ঠিক এর পরেই কাহিনী চলে আসে বর্তমান সময়ে যেখানে দেখা যায় যে একজন সদ্য বিদেশফেরত তরুণী এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি চলে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর মর্গে । সেখানে তাকে গ্রহণ করতে হবে তার মায়ের লাশ, যিনি কিনা খুন হয়েছেন কয়েকদিন আগেই। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে পায় তার মায়ের দিয়ে যাওয়া একটি ছবি যেখানে তাকে যোগাযোগ করতে বলা হয় ঐ খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া অপরাধীর সাথে। আস্তে আস্তে ঘোলা হতে শুরু করে পরিস্থিতি আর সেই আসামীর সাথে পয়ালিয়ে যায় মেয়েটি সাথে তার মায়ের দেয়া কিছু তথ্য যা ফলো করে উদ্ধার করতে হবে তাকে একটা জিনিস। কাহিনী যত গভিরে যায় ততই দেখা যায় যে প্রাচীন বাংলার একটা কাল্ট ঘটনার সাথে যুক্ত। এভাবে একটার পর একটা ধাঁধার সমাধান করতে করতে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে সে তার সঙ্গীটিকে নিয়ে। প্রায় প্রতিটি সিকুয়েন্স এই একশন আছে যা উপোভোগ্য। আছে বিশ্বাসঘাতকতা , যা কাপিয়ে দিবে ভেতর পর্যন্ত। টুইস্ট এর পরিমান ও সীমিত, যা কাহিনীকে করে তুলেছে আরো বিস্বাসযোগ্য।
চরিত্র গুলো ভালো লাগার আরেকটা কারণ হল, চরিত্রগুলোর মধ্যে অতিরঞ্জিত কিছু নেই। যার যেটুকু জানার কথা সে ততটুকুই জানে। এরকম উপন্যাসের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু স্পেশালিষ্ট মানুষের আগমন ঘটে যারা এই দুনিয়ার যাবতীয় গোপন সংগঠন আর সিম্বলিজম সম্পরকে অবগত। কিন্ত্য এই বই এ সেরকম কেউ নাই। চরিত্র গুলো একদম তার যায়গায় পারফেক্ট, তাই শেষে গিয়ে যখন লেখক সবকিছু মিলিয়েছেন তখন কিছুই আউট অফ প্লেস বলে মনে হয় নি। লেখার মাধ্যমে বাংলাদেশের আইনী ব্যাবস্থার ফাঁকফোকর এর কথাও বের হয়ে এসেছে যা রূঢ় বাস্তব। সব মিলিয়ে দারূন উপোভোগ্য একটা থ্রিলার। আরেকটা আক্ষেপ আগেও করেছি আবারও বলছি, এই যে ভালো গল্প, ভালো আউটলাইন এই বইটা হয়ত দেখা যাবে খুব নগণ্য পাঠকের হাতেই পৌঁছুবে। আশা করছি থ্রিলার প্রেমী সবারই বইটা ভালো লাগবে। রবিন ভাইয়ার কাছ থেকে এরম আরো বই আশা করছি। বিঃ দ্রঃ একটা কথা না বললেই না যে বই যতই ভালোই হোক না কেন, ঐ বানান ভুলগুলো সবসময়ই মেজাজ খারাপ করে দেয়। বাতিঘরের উচিত এই পর্যায়ে এসে এইদিকে একটু নজর দেয়ার ।
দুর্দান্ত একটি থ্রিলার।শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনি একটুও হেলে পড়েনি,কোথাও বিরক্তিবোধ করিনি।পুরোপুরি রোলার কোস্টার রাইড।কাহিনি এগিয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ ও ২০১৪ সালে ঘটা আপাত সম্পর্কবিহীন দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে।একইসাথে ২৫ শে মার্চ রাতে পাক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞের যথাযথ বর্ণনা দেওয়া,সেখানে আবার রোমাঞ্চ সৃষ্টি করা,সেইসাথে ২০১৪ সালের ঘটনায় ঢাকার অলিগলির নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে ইঁদুর বিড়াল খেলা দেখানো, দুই ঘটনাক্রমকে একবিন্দুতে মিলিয়ে দেওয়া মুখের কথা নয়।বলতেই হবে,ঐতিহাসিক থ্রিলার রচনায় লেখকের জুড়ি মেলা ভার। বইয়ের একমাত্র নেতিবাচক দিক হচ্ছে-প্রচুর পরিমাণে বানান ভুল।বাতিঘরের বইগুলোর এই সমস্যা থেকেই গেলো। থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
কাহিনীর প্রয়োজনে বই হয়ে যায় বিশাল সাইজের। আমার খারাপ লাগে না, বরং কেন যেন ভালো লাগে উলটো। পাওয়া যায় স্টোরি টেলিং এর পূর্নাঙ্গ স্বাদ, ফুটে ওঠে কাহিনী আর চরিত্রের ভেতর দারুন গভীরতা।
কিন্তু ৬০-৭০ পেজের একটা নোভেলা কিভাবে ২৭০+ পেজ এর ডেপথলেস উপন্যাস হয় তা ২৫শে মার্চ না পড়লে জানা হতো না। না আছে প্লট এর গভীরতা, না আছে চরিত্রের। তবে লেখক যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে গেছেন সাসপেন্স তৈরী করার, সেদিক দিয়ে এক্সিকিউশনে তিনি স্বার্থক। যায় হোক প্রিয় লেখকের উপর সম্মান রেখে আর স্টোরিং টেলিং এর এক অনবদ্য ক্ষমতার নিদর্শনে বইটা শেষ করতে পেরেছি।
বইয়ের নাম দেখে ভেবেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হয়তো লেখা। যিনি উপহার দিয়েছেন তিনিও তেমন কোন কিছু নিয়ে না বলে বললেন পুরোনো ঢাকার অনেক কিছু পাব তাই পড়ে দেখা উচিৎ। ভাবলাম ইতিহাসেরই বই হবে বুঝি।
তা পড়তে গিয়ে দেখি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ। এরপর ধুম করে কিছু না বলে ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ। তারপর বর্তমান সময়ের ঢাকা শহর কোত্থেকে যেন চলে আসলো। ঘটনার তালগোল খুঁজতে গিয়ে কখন গল্পের মাঝে ঢুকে পড়েছিলাম সে আর মনে নেই। পাঠক এবার নিজেই বের করে নিক সে কাহিনী। লেখকও সম্ভবত তা চেয়েছেন। ঢাকার পটভূমিতে অসাধারণ থ্রিলার লেখা হয়েছে স্বীকার করতেই হল। অনেকটা ভিঞ্চি কোড স্টাইলে যেমন গোপন সংঘের হলি গ্রেইল খুঁজতে যাবার সাথে এর কোন মিল পেলে পাঠককে দোষ দেয়া যাবেনা। যার সাথেই মিল হোকনা কেন গল্পের শেষ পর্যন্ত যে লেখক নিয়ে যেতে পেরেছেন কোনরকম ঝুলে যাওয়া ছাড়াই সেটাই অনেক পাওয়া। ঢাকা নিয়ে বইয়ে লেখক আরো কিছু বইয়ের নাম দিয়েছেন সেগুলো পড়বার চেষ্টাতো অবশ্যই করবো মনে হচ্ছে। লেখার ভাষাও ছিল ঝরঝরে মাঝ মাঝে সেবার কাজীদাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
কিছু ভুল যেমন এসপির মাত্র ৭ বছর পুলিশের চাকরির অভিজ্ঞতা এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার যা সংশোধন করার অবশ্যই প্রয়োজন। আর অনেকক্ষেত্রে এত বেশি নাটকীয়তা আরোপিত লেগেছে। তবে এসব উপেক্ষা করে গেলে পড়বার জন্য দুর্দান্ত।
বইটা অনেকদিন ধরেই টু রিড লিস্টে পরে ছিল। আরাম করে পড়ব বলে ফেলে রাখলাম এতদিন। কিন্তু জীবনে মনে হয় আরাম করে আর বই পড়ার সময় হবে নাহ। তাই এবার পড়ে ফেললাম। বই হিসেবে বেশ ভাল। প্লট ভাল। গল্পের শুরু সিপাহি বিদ্রোহের সময় থেকে। সে সময় থেকে এক গুপ্ত রহস্য একটা সিক্রেট কাল্ট রক্ষা করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরাও এর পেছনে লেগে বের করতে পারে নাই। দীর্ঘদিন ধরে এ ছিল এক চাপা রহস্য। ২০১৪ সালে এসে এক মহিলার খুনের সাথে সাথে উঠে আসে সেই গুপ্ত কাল্ট আর সেই গোপন রহস্য। বাইরের দেশে এমন প্লট নিয়ে অনেক গল্প উপন্যাস থাকলেও আমাদের দেশের নবীন এবং তরুণ লেখকরা এধরনের গল্প উপন্যাস লেখা শুরু করেছেন বেশীদিন হয়নি। কিন্তু বলতেই হবে এরই মধ্যে বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিচ্ছেন। যার প্রমাণ হল এই বইটি। পড়ে দেখতে পারেন। আশাহত হবেন নাহ।
প্রথম কয়েকপাতা পড়ার সময়় রাজে্যর বিস্ময় আর কৌতূহল নিয়ে পড়াশোনা, বাসার কাজকর্ম,আউটিং সব চুলোয় দিয়ে বইটাতে বুঁদ হয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম সব, সবকিছু ঠিকঠাক ছিল শপিং মলের ঘটনা ঘটার আগ পর্যন্ত কিন্তু এর পর থেকেই জানি না কিভাবে বুঝতে পারছিলাম মনিরুজ্জামান আর আফরোজার মধ্যেকার যোগসূত্র,আবু আর কবিরের মধ্যে প্রকৃত মীরজাফটা যে কবির সেটাও, এবং বারবার ট্যাক্সিচালক চাচার হাতের প্রসঙ্গ আসায় সেই যে মনিরুজ্জামানের বিশ্বাসঘাতক ছাত্র তাও জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে গিয়েছিল.
শুধু মাত্র এই আগে থেকেই ধরে ফেলবার ব্যাপারটা না হলে এরকম একটা বই কে ঠিকই সাড়ে তিন তারা না দিয়ে সাড়ে চার দিতাম
রেটিং:🌠🌠🌠.৫০
This entire review has been hidden because of spoilers.
বহুদিন পর এক বসায় কোন বই শেষ করলাম। এত টানটান উত্তেজনার মাঝে বই বন্ধ করা সম্ভব না। ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের ভয়ংকর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুজ্জামান তাঁরই প্রিয় দুই ছাত্রকে নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বন্ধুর রেখে যাওয়া ক্লু। আরেকদিকে ২০১৪ সালে অরনি দেশে ফিরেছেই মায়ের মৃত্য সংবাদে। মা রেখে গেছে তার জন্য কোন এক রহস্য, আর বিশ্বাস করতে বলেছে শুধু তার প্রিয় ছাত্র হাসানকে। কিন্তু হাসানকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে মায়ের মৃত্যুর দায়ে। ১৯৭১ সালের গল্পের অংশটুকুতে প্রচন্ডরকম ভয় কাজ করেছে। গল্পের মধ্যে একই সাথে ওই রাত্রের ভয়াবহতা সাথে ক্লু খুঁজে যাওয়ার প্রতিটা সাহসী পদক্ষেপের বর্ণনা অনেক ভালো লেগেছে। ২০১৪ সালের গল্পও কম যায়না কিছুতে। কিন্তু একদম শেষে গাজীপুরে গিয়ে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলি। কোথা থেকে কে কাকে গুলি করলো বা কি ঘটলো বুঝার জন্য ২বার করে পড়া লেগেছে। এটা হতে পারে ইবুক পড়ার কারণে অনেক জায়গায় জ্যোতি চিহ্নের ব্যবহার ভুল ছিল বা চিহ্ন ছিলইনা, এই কারণে। বানান ভুলের ব্যাপারেও ইবুকের অবদান থাকতে পারে। আফতাব সাহেবের চরিত্রটা আরেকটু বেশি হাইলাইটেড হলে ভালো লাগতো। ১৯৭১ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত রহস্যটা যত্ন করে লালন করা এবং পরবর্তী কারো কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজটা কিন্তু সে না থাকলে সম্ভব হতো না। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা গল্প। রেটিংঃ ৫/৫.
এই বইটা বাংলায় মৌলিক থ্রিলারের সমৃদ্ধ ভুবনেও একটি স্বতন্ত্র ও ভাস্বর দিকচিহ্ন। কথাটা আমি বলছি দুটো কারণে। প্রথমত, তিনটে সময়কালের স্বতন্ত্র ঘটনাক্রম প্রায় একই গতিতে প্রবাহিত রেখেও সূচনা ও অন্তিম লগ্নে তাদের মিশিয়ে দেওয়া মোটেই সহজ ছিল না। লেখক সেই কাজটা করেছেন অদ্ভুত দক্ষতার সঙ্গে। এর জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। দ্বিতীয়ত, উপমহাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী একটি অধ্যায়কে যেভাবে তিনি বিন্দুমাত্র অতিশয়োক্তি ছাড়াই কাহিনিতে ব্যবহার করেছেন, তা রীতিমতো শিক্ষণীয়। এপার বাংলায় যেখানে ভোট হারানোর ভয়ে বিভিন্ন মত ও আদর্শের অনুগামীরা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং বা নোয়াখালির অস্তিত্বই মানতে চান না, সেখানে এমন একটি স্বচ্ছ ও গতিময় প্রয়াস আমাকে মুগ্ধ করেছে। শুধু ক্লাইম্যাক্সটা বড়ো দুর্বল হয়ে গেল। রিভিলেশনটাও কিঞ্চিৎ ঝিমিয়ে রইল। তবু কায়মনোবাক্যে চাইব, লেখকের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক। ইতিমধ্যে এপারের কলমবাগীশেরা এই বইটা পড়ুন শেখার জন্য। তাতে যদি তাঁরা বোঝেন, কীভাবে মরিচঝাঁপি, বিজন সেতু বা গড়বেতার সত্যিগুলোকে থ্রিলারের মোড়কে তুলে আনা যায়— তাহলে হয়তো এপারেও থ্রিলার সাবালক হবে।
অরণি। মায়ের সাথে রহস্যময় কারণে অভিমান করে বিদেশ চলে যাওয়া এক মেয়ে। ৫ বছর ধরে অরণি-আফরোজার মাঝে কথাবার্তা সম্পূর্ণ বন্ধ। আফরোজার খুন হয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় আবার ফিরে আসে তাঁর মেয়ে। কিন্তু খুনি তো ইতিমধ্যে ধরা পড়ে গেছে!
হাসান। ঘাড়ত্যাড়া সাংবাদিকতার কারণে জবলেস। অত্যন্ত প্রভাবশালি এক ব্যক্তির সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে সে আজ বেকার। তবে ক্ষ্যাপাটে এই তরুন হয়ে ওঠে অরণির মায়ের মার্ডারের কট রেড হ্যান্ডেড আসামি। অথচ আফরোজা ছিলেন হাসানের অনেকটা মায়ের মতোন। মৃত্যুর আগে তিনি অরণির প্রতি বার্তা দিয়ে যান যেন সে হাসানকে বিশ্বাস করে। ঢাকা এসে মাত্র মায়ের খুনের আসামির সাথে একত্রে কাজ করতে হবে অরণিকে। কারণ আরো গভীর মিস্ট্রির সমাধান করা প্রয়োজন।
এমন এক রহস্য যার সূত্রপাত অনেক বছর আগেই। ১৮৫৭ সনের সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযু্দ্ধ এবং বর্তমান সময়ে একই সাথে গাঁথা একটি ধাঁধা সমাধানের দিকে। এমন এক রিডল যা ইংরেজ, পাকিস্তানি এবং বর্তমান সময়ের ভয়ানক অপরাধিরা সমাধান করতে চায়। কারণ ঐ রহস্য উন্মোচিত হলে হয় জনমানুষের ভাগ্য পরিবর্তিত হয়ে যাবে অথবা দূবৃত্তদের হাতে পড়লে ঘটতে পারে ঠিক উল্টোটা।
একটি চিরকুট। সেটির ভিতর আছে পা ভাঙা এক ঘোড়ার ছবি এবং একটি কয়েন। যে পা ভাঙা ঘোড়া হল ইংরেজ আমল এবং পাকিস্তান আমলে আমজনতাকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা এক কাল্টের। যে কাল্ট বা গুপ্তসঙ্ঘ এখনো কাজ করে যাচ্ছে। আবার সেই কাল্টের প্রধান প্রতিপক্ষও বসে নেই। তিনটি টাইমলাইনে যে বস্তুর পিছনে আদাজল খেয়ে ছুটছে সবাই তা কি মিলবে? কোন পক্ষ কি এই ধোঁয়াশাপূর্ণ রিডলের সমাধানা করতে পারবে?
এসপি আতিকুর রহমান। সৎ এবং অদম্য এই পুলিশ অফিসার ক্যারিয়ার জীবনে কখনো এত ঘোল খাননি যতটা না অরণি এবং হাসান তাকে খাওয়াচ্ছে। কি তাদের উদ্দেশ্য? কে তাদের পর্দার অন্তরাল থেকে বারবার সাহায্য করছে? দক্ষ এই অফিসার উপরস্থদের চোখ রাঙানি এবং ধমকাধমকি উপেক্ষা করে এক জেদের সাথে জড়িয়ে পড়েন এই ধাঁধাপূর্ণ ঘটনাচক্রে।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ জান বাজি রেখে ছুটছেন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। সাথে দুই বিশ্বস্ত সঙ্গী কবির এবং বাবু্। ঢাকা শহরের উপর নরক নেমে এসেছে। পাকিস্তানি আর্মির নারকীয় তান্ডব সমুদ্রের উত্তাল স্রোতের মত বয়ে যাচ্ছে ঢাকার উপর। এত ঘটনার মাঝখানেও জামান, কবির এবং বাবুকে পাকিস্তান আর্মির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রক্ষা করতে হবে সেই পা ভাঙা ঘোড়ার রহস্যকে। যা কোনভাবে হানাদার বাহিনীর সুদক্ষ এক কর্নেলের হাতে আসতে দেয়া যাবেনা। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, দু'জন অল্পবয়সী ছেলে জানপ্রাণ দিয়ে ছুটে যেতে থাকে।
লেখক রবিন জামান খানের লিখা প্রথম বই এটি। "ঢাকা ট্রিলজি" এর প্রথম আখ্যানও এটি। ইতিহাসকে উপজীব্য করে লিখা এই অত্যন্ত ফাস্ট পেইসড থ্রিলারে চলে এসেছে ২৫ শে মার্চে বাঙালির উপর দিয়ে চলে যাওয়া অমানবিক স্টিমরোলারের এক আখ্যান। যে গল্প মর্মস্পর্শী। অল্প কথায় কিভাবে এক বিগ পিকচার দেখানো যায় সেটি লেখক সুচারুভাবে দেখিয়েছেন। একইসাথে তৎকালীন ঢাকা শহরের করুণ অবস্থা যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এই মানবিক বিপর্যয়ের সাথে একাধিক টাইমলাইনে এত সুন্দর স্টোরিটেলিং রবিন জামান খান করেছেন যে তা মুগ্ধ করার মতোই। লেখক ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো বিভিন্ন ফ্যক্টস চেকিং এর ফিল্টারে ফেলে তার সাথে যুক্ত করেছেন ফিকশন। গল্প কোন জায়গায় ঝুলে যায়নি। তাঁর লেখা পড়ার সময় গল্পকথনে বর্ণনা এমনভাবে দিয়েছেন যে সচেতন পাঠকের মগজে এক ফিল্ম চলতে থাকবে। এটি নাকি তার প্রথম লিখা বই! একদম শুরুতেই যার স্টোরিটেলিং এত মানসম্পন্ন তাঁর বাকি গ্রন্থসমূহ পড়ে ফেলা দরকার। "সপ্তরিপু" অবশ্য আমার সংগ্রহে আছে।
এত কথা লিখার পর অনেকে ভাবতে পারেন আমি মনে হয় অনেক স্পয়লার দিয়ে ফেলেছি। যারা বইটির মধ্য দিয়ে এক রহস্যরোমাঞ্চময় যাত্রা করেছেন তারা জানেন এই রিভিউটি যথাসাধ্য স্পয়লারমুক্ত। অনেক বিস্ময় অপেক্ষা করছে তাদের জন্যে যারা বইটি এখনো পড়েন নি। আমি মূদ্রণপ্রমাদ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাই না তবে এই বইয়ে বেশ কিছু চোখে পড়েছে।
তিনটি টাইমলাইন। সিপাহী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত যে হেঁয়ালি বিদ্যমান ঐ পা ভাঙা ঘোড়ার সিম্বল, কয়েন এবং আরো কিছু বিষয় নিয়ে সেসবের সমাধান লুকিয়ে আছে এক বিশেষ দিনে। এক ভয়াল রাতে। যে তারিখ বাঙালি কখনো ভুলবে না।
২৫ শে মার্চ।
বুক রিভিউ
২৫শে মার্চ
লেখক : রবিন জামান খান
প্রকাশনা : নালন্দা
প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী
নালন্দা প্রথম প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২০২১
জনরা : ঐতিহাসিক থ্রিলার
যুক্তরাষ্ট্র পরিবেশক : মুক্তধারা জ্যাকশন হাইট নিউ ইয়র্ক
পর পর ৩টা বই পড়লাম যাতে কাহিনী প্রেক্ষাপট মোটামুটি ভাবে ২টা ভাগে ভাগ করা। অতীত সময় আর বর্তমান সময়। এই কারনে এই বইটা হাতে নেবার পর প্রথম দিকে কিছুটা মেজাজ খারাপ হয়েছিল তবে যতই পড়েছি ততই মেজাজ খারাপ কেটে গিয়ে ভাল লাগায় মন ভরে গিয়েছে। ফাস্ট ক্লাস থ্রীলার তার চেয়েও ফাস্ট ক্লাস লেখকের পরিনিতি বোধ। আমি বই কিনি মূলত নাম দেখে বইয়ের নাম দেখে ভেবেছিলাম বুঝি ২৫ শে মার্চ এর কালরাত্রি নিয়ে বিশদ ভাবে লেখা কিন্তু উপন্যাসটা ৩টা সময় নিয়ে বিস্তৃত। এক সময় আক্ষেপ করতাম বাংলাদেশি কোন লেখক কেন তার লেখায় ইতিহাস, গোপন কাল্ট এই সবের কথা নিয়ে আসেন না। দিন দিন আক্ষেপ কমে যাচ্ছে। ঋভু সাম্ভালা, ২৫ শে মার্চ পড়ে মনে হল আমাদের দেশের মিস্ট্রি থ্রীলারের ভবিষ্যত খুবই ভাল।
ইতিহাস পড়ে যে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা চলে সেটা রবিন জামান খানের লেখা না পড়লে বুঝতাম না। আমি চেষ্টা করি ওনার ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস গুলো পড়ে ফেলতে। এটা বেশ পরে পড়া হলো,কিন্তু আরাম দিতে ভুলে নি। অবশ্য২৫শে মার্চের বর্ণনার পরে আরাম শব্দটা বোধহয় শোভা দেয়না।
অসাধারণ একটা বই, অতীত এবং বর্তমান টাইমলাইন এর বর্ণনাগুলো সমান গতিতে এগিয়েছে। সপ্তরিপু পড়েই এই বইটা শুরু করেছি বেশি প্রত্যাশা নিয়ে এবং পড়া শেষে বলতে হয় রবিন ভাই প্রত্যাশার সবটুকুই পূর্ণ করেছেন।
ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটা চমৎকার থ্রিলার। ১৮৫৭ এর সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৭১ এর কালরাত্রি আর ২০১৪ সাল- এই তিনটি সময়ের সাথে তালমিলিয়ে কাহিনী এগিয়েছে। একটি মিথকে ঘিরে তৈরি হয়েছে জাল। এক পা ভাঙ্গা ঘোড়ার রহস্য জানতে মরিয়া অনেকেই। সেই সাথে মিলবে বিশ্বাসঘাতকতা, দেশপ্রেম আর সম্পর্কের দায়বদ্ধতা। সত্যি বলতে অনেক উপভোগ করেছি। তবে রেটিং এ ১ টা তারা কম আর ১ টা তারা বেশি দিলাম। কারণ, "Truth is always in front of you"😁😁
'২৫শে মার্চ' বইটিতে তিনটি ভিন্ন সময়কে ঘিরে গল্প বোনা হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্তমান সময়ে এসে শেষ হয়। এর মূল প্রেক্ষাপট মূলত প্রাচীন এক গুপ্ত সংঘ কাল্টকে নিয়ে। শুরুতে গল্প অতীত আর বর্তমানের সমান্তরালে চলছিল দেখে বইয়ে ঠিকমতো থিতু হতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু কয়েক পাতা সামনে যেতেই দেখি টুইস্টের পসরা বসেছে! ২৫শে মার্চে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সেই নির্মম গণহত্যা, ধাঁধা, ইতিহাস, মিথ, গুপ্ত সংঘ, অ্যাডভেঞ্চার, বিশ্বাসঘাতকতা- সবমিলিয়ে বইয়ের প্রতিটি পাতায় ছিল টানটান উত্তেজনা, একদম এক টানে বইটা শেষ করেছি। সূত্র, আরও সূত্র, একের পর এক সূত্র সমাধান করতে করতে অবশেষে সব রহস্যের সমাধান হয়। বইয়ে যে ঐতিহাসিক দৃশ্যগুলো আনা হয়েছে তা সবই বাস্তব। উল্লেখিত লোককথাগুলোও একেবারে কাল্পনিক নয়। শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল, এত বিস্তারিত বিবরণ কেন। শুরুতে প্রতিটা চরিত্রের বিস্তারিত বিবরণ থাকার কারণে বিরক্ত হলেও পরে বুঝেছি এমন বর্ণনা না থাকলে এত মুগ্ধ হয়ে পড়তাম না। সুন্দর উপস্থাপন, সেই সাথে ভিন্নধর্মী কনসেপ্ট। কাহিনী কোথাও ঝুলে যায়নি, বরং সমান গতিতেই এগিয়ে গেছে। এটি লেখকের প্রথম থ্রিলার হলেও লেখনী দেখেই তার প্রতিভার সাক্ষর বোঝা গিয়েছিল। লেখক অনেক বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে এই থ্রিলারটা লিখেছেন, সব মিলিয়ে দারূন উপভোগ্য একটা থ্রিলার! বইটা শেষ করেই মুখে একটা তৃপ্তিকর হাসি চলে এলো। তবে সবচেয়ে বড় টুইস্টটা ছিল, "ট্রুথ ইজ অল ওয়েজ ইন ফ্রন্ট অব ইউ"
রবিন জামান ভাইয়ের "২৫ শে মার্চ" বইটা পড়লাম।অতীত আর বর্তমান দুই সময়ের কাহিনী নিয়ে লেখা অনেক বই দেখছি ইদানিং। এই বইটিতেও অতীত আর বর্তমানের দুটি কাহিনী এগিয়��ছে সমান্তরাল ভাবে।বইটির প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই টানটান উত্তেজনা ছিল। বইটার থিম ড্যান ব্রাউনের ল্যাংডন স্টাইলের।গুপ্তসংঘ,ধাঁধা,অলটাইম দৌড়ের উপর থাকা সব মিলিয়ে বইটি অনেক গতিশীল ছিল।কিন্তু শেষ দিকে এসে ফিনিশং এর সময় মনে হল খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে দেয়া হয়েছে। বইয়ের টুইস্টগুলো আমি আগেই বুঝে ফেলেছিলাম।তবুও পড়তে একটুও খারাপ লাগেনি।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ থেকে ৭১ এর ভয়াল ২৫ শে মার্চ আর ২০১৪ সালের একটা নির্দিষ্ট সময় নিয়ে রচিত রবিন জামান খান ভাইয়ার প্রথম বই ২৫ শে মার্চ।ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আর বর্তমানের মেল বন্ধন বিবেচনায় বইটিকে সফলই বলা যায়।
কাহিনী সংক্ষেপ: ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়। চামড়ার থলিতে থাকা অমূল্য সম্পদটি রক্ষার জন্যে লোকটা পালাতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ। পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জানতে পারলেন তার বন্ধু হাফিজ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।অপ্রত্যাশিত ব্যাপারটার সাথে হাফিজ আরও কিছু একটা রেখে গেছে তার জন্যে।কিছু ধাঁধা আর গোপন ইঙ্গিত।যা শুধু তিনিই বুঝবেন।গোপন জিনিসটিকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজের ছাত্র আবু আর কবিরকে নিয়ে শুরু করলেন এক বিপজ্জনক অভিযান। ২০১৪ সাল। মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে দেশে ফিরে আসে অরনী।বিপাকে পড়ে তাকে সাহায্য চাইতে হয় নিজের মায়ের সম্ভাব্য খুনির কাছে।এদিকে তার মা তার জন্যে রেখে গেছেন একটা কুরিয়ারের খাম,পা ভাঙা ঘোড়ার ছবি,আর একটা কয়েন।কি খুঁজে বের করতে হবে তাকে?
আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো একসূত্রে গাঁথতে বেশি সময় নেবে না।রুদ্ধশ্বাস এই অভিযানে আপনাকে আমন্ত্রণ।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: বইটাকে ভালো বলা যায় নিঃসন্দেহে। রবিন জামান ভাইয়ার প্রথম বই এটা।২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় বইটা। ভালো দিকগুলোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় বইটার গতি অসাধারণ।বোরিং লাগেনি একবারো।১৮৫৭ হয়ে ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ আর তারপর ২০১৪ সালের জুলাইয়ে কাহিনী এগিয়েছে।২৫ শে মার্চের রাতের সাথে ’১৪ সালের জুলাই প্যারালালি এগিয়ে যায়।বেশিরভাগ অধ্যায়ের শেষেই ক্লিফ হ্যাঙ্গার ছিল।গতির সাথে আরো একটা মাত্রা যোগ করেছে এটা। বইয়ের সমাপ্তিটাও ভালো লেগেছে।বিশেষ করে কিছুটা প্রেডিক্ট করতে পারার পরও টুইস্টগুলো যখন ভালো লাগে তখন অনুভূতিটা হয় অন্যরকম।এই বইয়ের টুইস্টগুলো তেমনই। চরিত্রগুলোর দৌড়াদৌড়ি আর ধাঁধাগুলোর সমাধান,ধাপে ধাপে সামনে এগিয়ে যাওয়া আর রহস্যময় চরিত্রগুলোর আনাগোনাও ছিল লক্ষ্যণীয়।অ্যাকশন সিকোয়েন্সে অরুচি থাকলেও এই বইয়ের অ্যাকশনের বর্ণনা বেশ ভালো লেগেছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বইটার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।ঐতিহাসিক থ্রিলার হিসেবে ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো নিখুঁত না হলে লেখা প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা প্রচুর ছিল।এই বইটা পড়ার পর বুঝলাম ঐতিহাসিক থ্রিলারে রবিন জামান ভাইয়া কতোটা দক্ষ।এর আগেও পড়েছি ঐতিহাসিক থ্রিলার।কিন্তু ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলোয় এই বইটা বেটার মনে হয়েছে।১৮৫৭ সালের বর্ণনা,তারপর ২৫ শে মার্চের বর্ণনাগুলো বইয়ের সবচাইতে প্রিয় অংশ।মনিরুজ্জামানের অভিযানের পাশাপাশি ভয়াবহ কুটিল রাতের বর্ণনাগুলো সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। বইয়ে ঢাকার ইতিহাস ও কিংবদন্তি নিয়ে বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্স দেওয়াটা আমার ভালো লেগেছে।মিথ,কাল্ট টার্মগুলোর বর্ণনাও ভালো ছিল।
এবার যে বিষয়গুলো ভালো লাগেনি তা বলি।প্রথমত লিখনশৈলীর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে আমার অনেক সময় লেগেছে।এটা যে লেখকের প্রথম বই তা বারবার মনে পড়ছিল।বাক্যগঠন কিংবা শব্দ প্রয়োগও কিছু জায়গায় দুর্বল মনে হয়েছে। তাছাড়া বেশকিছু প্লটহোল ছিল।একটু সাবধান থাকলেই সেগুলো এড়ানো যেত বলে মনে হয়েছে।লেখা একটু সহজবোধ্য হলে আরো ভালো লাগতো বইটা।নালন্দা থেকে যে রিপ্রিন্ট আসবে,আশা করি ওটাতে ঠিক করে নেওয়া হবে।এডিট করলেই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।
চরিত্রায়ণ: বইয়ের সবচেয়ে দু্র্বল পার্টের একটা চরিত্রায়ণ।ইদানীং চরিত্রায়ণ ভালো না লাগলে বইয়ের প্রতি বিরক্তি চলে আসে।হাসান আর অরনীর চরিত্র বেশ উদ্ভট লেগেছে আমার কাছে।কিছু কিছু আচরণ একটু বেশিই উদ্ভট ঠেকেছে।হাসানকে একটু স্পেশাল করে উপস্থাপনের চেষ্টাও ভালো লাগেনি। তবে মনিরুজ্জামান,আবু,কবির এই চরিত্রগুলোর চরিত্রায়ন বেশ ভালো ছিল।২৫ শে মার্চের পার্টটা পড়েই বেশি মজা পেয়েছি।কর্নেল হাবিবও অ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে চোখে পড়ার মতো।প্রিয় চরিত্র বলতে মনিরুজ্জামানকেই এগিয়ে রাখবো।আর মির্জা বেগ চরিত্রটিকে বেশ ভালো লেগেছে।মনে রাখার মতো।স্বল্প সময়ে মনে জায়গা করে নেওয়া চরিত্র খুবই কম থাকে।এটা সেগুলোর একটা।
প্রোডাকশন:বাঁধাই ভালো।কাগজও ভালো।কালি ঝাপসা ছিল কয়েক পেইজে।প্রচুর প্রিন্টিং মিস্টেক ছিল প্রথম দিকে।আস্তে আস্তে কমে গিয়েছিল। প্রচ্ছদ পছন্দ হয়েছে।দাম বিবেচনায় প্রোডাকশন খারাপ ছিল না।
পরিশেষে বলবো,বইটা ভালো।ভিঞ্চি কোড টাইপ একটা ফ্লেভার ছিল পুরো বইয়ে।উপভোগ করেছি।রবিন জামান ভাইয়া যে সম্ভাবনাময় একজন লেখক ছিলেন বইয়ে সেটা বেশ স্পষ্ট ছিল।সপ্তরিপু পড়বো শীঘ্রই ইন শা আল্লাহ।
বই:২৫ শে মার্চ লেখক:রবিন জামান খান প্রকাশনী:বাতিঘর মুদ্রিত মূল্য:২৫০ পৃষ্ঠা:২৭১ জনরা:ঐতিহাসিক থ্রিলার প্রচ্ছদ:নিউটন রেটিং:৪.২৫/৫
'কাল্ট অফ দ্যা ব্রোকেন হর্স' প্রাচীন ভারতের এক গুপ্ত সংঘ। ধারনা করা হয় তাদের কাছে আছে মোঘল আমলের এক রত্নভান্ডারের নকশা যা সীপাহী বিদ্রোহের সময় লুকিয়ে রাখা হয় পূর্ববাংলার কোন এক স্থানে।
কোন থ্রিলার গল্পে একাধিক টাইমলাইনের কাহিনী পাশাপাশি পড়ার সময় আমার প্রায়ই তালগোল পাকিয়ে যায়। শেষের দিকে যদিও সব সমীকরণ মিলে যায় কিন্তু কাহিনীর বিল্ডিং ঠিকমতো উপভোগ করা যায়না। এই বইয়ের ক্ষেত্রে এই সমস্যায় পড়তে হয়নি। সীপাহী বিদ্রোহের টাইমলাইনে কাহিনী শুরু হলেও, মূল কাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ ও ২০১৪ সাল এই দুটি টাইমলাইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাছাড়া কাহিনী কোথাও স্লো বা 'ঝুলে' না যাওয়ায় বইয়ের ফার্স্ট টু লাস্ট টানা পড়ে যেতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা না।
১. প্রথমেই বলব বাতিঘর প্রকাশনীর বইটিতে প্রচুর বানান ভুল আছে। যেটা খুবই বিরক্তিকর ও আপত্তিকর।
২. গতিশীল কাহিনির একটি চলন্ত বই। এক বসায় শেষ করে ফেলার মত একটা বই। তবে ২৫ শে মার্চ রাতের মনিরুজ্জামান, কবির ও আবুর দৌড়াদৌড়ির বর্ণনাটা একটু বেশিই মনে হয়েছে। তাছাড়া কাহিনি যেখান থেকে শুরু সেই হাফিজের আত্নহত্যাটাও কেমন যেনো অহেতুক মনে হয়েছে। যাই হোক, গল্পের প্রয়োজনে গল্পকারের এসব গল্পের অবতারণা। 'অতিভক্তি চোরের লক্ষণ' সেটা উপন্যাসের চাচার অবস্থাতে দেখেই বুঝা যায়। তাছাড়া গল্পে একজন মন্ত্রী মারা গেল অথচ গল্পে তার প্রভাবই দেখলাম না। এটা একটু বেখাপ্পা লেগেছে।
বেশ ভালো বই। তবে মনে হয়েছে অলটারনেটিভ চ্যাপ্টারে ২৫শে মার্চ আর বর্তমানের ঘটনাবলী না দিয়ে মনিরুজ্জামানের ব্যাকস্টোরি প্রলগ হিসাবে দিলে ভালো হতো। একসাথে টানটান উত্তেজনার দুইটা গল্প পাশাপাশি প্রসেস করা মস্তিষ্কের জন্য একটু কষ্টকর!
বহুদিন পরে এরম একখানা টানটান উত্তেজনায় ভরপুর থ্রিলার পড়লাম। দারুণ লাগলো। খুব সুন্দর স্বাবলীল লেখা, একেবারে ড্যান ব্রাউনের লেখা ইংরেজি থ্রিলার উপন্যাসের ধাঁচে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটা গল্প । একটা থ্রিলার গল্পে যা যা উপাদান প্রত্যাশিত, সবই রয়েছে এতে। এবং তাতে গোটা জিনিসটা বেশ উপাদেয় হয়েছে। চরিত্রগুলো বেশ নিপুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। তাদের মধ্যে আমার প্রিয় অবশ্যই মনিরুজ্জামান স্যার, হাসান আর অরণি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের গল্প, শত্রুর সঙ্গে লড়াই, নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রাচীন গুপ্তধনকে রক্ষা করার মরিয়া চেষ্টা আমাকে আকৃষ্ট করে রেখেছিল।গল্পের খল চরিত্রগুলো বেশ পরিণত। সর্বোপরি যেটা বলতেই হয়, সেটা হচ্ছে ২৫ সে মার্চ ১৯৭১-এর রাতে যে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্যোগ বাংলাদেশের বাঙালিদের ওপরে নেমে এসেছিল, সেই বিষয়টিকে লেখক খুবই সেনসিটিভ ভাবে তুলে ধরেছেন। গল্পের স্বার্থেই যে ঘটনাগুলির উল্লেখ রয়েছে সেগুলি পড়লে যেমন একদিকে চোখে জল আসে, অন্যদিকে আবার রক্ত টগবগ করে ফুটতেও থাকে। সবমিলিয়ে বলতেই হয় যে একটা দারুণ বই দিয়ে বছরটা শুরু করলাম।
পারফেক্ট থ্রিলার বলতে যেরকম বুঝি, এটা একেবারেই সেরকম! সুন্দর একটা রহস্য! আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে সিপাহী বিদ্রোহ এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। লেখার ধরণ দেখলে বুঝা যায়, লেখক ড্যান ব্রাউন দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত! কিছু কিছু জায়গায় বিরক্ত হওয়া ছাড়া পুরো বই পড়তে কোন কষ্ট হয় নি। উল্টো বই টা আকর্ষণ করেছে আমাকে। পুরোপুরি উপভোগ্য। বলতে পারি, আমার পড়া বাংলাদেশি থ্রিলারের পছন্দের তালিকার একেবারে প্রথম স্থানেই এই বইটার নাম আছে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের খুন করে, শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে বাঙ্গালী জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। সেই রাতের নৃশংসতার আড়ালে রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়িয়েছে মেজর তাহের। টার্গেট - অধ্যাপক মনিরুজ্জামান খান, যার কাছে আছে এক পা ভাঙ্গা ঘোড়ার ফটো, আর এমন এক রহস্যের উত্তর যেটার জন্য গোটা পৃথিবীটাও গুঁড়িয়ে দিতে আপত্তি নেই তাহেরের। যে রহস্যের শেকড় প্রোথিত হাজার বছর আগে।
২২শে নভেম্বর, ১৮৫৭।
সিপাহী বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা শহরেও। ট্রেজারির ঘুমন্ত সিপাহীদের গুলি করে মারা হয়েছে, মুহুর্মুহু গুলিতে কেঁপে উঠছে লালবাগ কেল্লা। গুপ্তচর জানিয়েছে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আর্থার মেয়ো যাকে খুঁজছিল সে পরিবিবির মাজারে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এ কী! মাজারে পুরুষের বেশে যে পড়ে আছে এক নারী। রাগে ক্ষোভে চিৎকার করে উঠলো আর্থার মেয়ো। পালিয়েছে মানুষটা! বুড়িগঙ্গার পানিতে সাঁতরে চলেছে সে, কোমরে বাঁধা একটি পা ভাঙ্গা পাথরের ঘোড়া।
৯ই জুলাই, ২০১৪।
মায়ের খুনের খবর পেয়ে পাঁচ বছর পর দেশে ফিরেছে অরনী। মর্গে পা রেখেই জানতে পারে, মা তার জন্য একটি খাম রেখে গেছে। তাতে চিরকুটে যে হাসানকে বিশ্বাস করতে বলেছে মা আফরোজা, তাকেই খুনের দায়ে জেলে ভরেছে পুলিশ! খামের ভেতরে একটি নকশা কাটা কয়েন আর পুরনো রক্তের দাগ লাগা ছবি, ভাঙ্গা ঘোড়ার ছবি!
হাসানকে নিয়ে পালালো অরনী। মায়ের মৃত্যুর রহস্যের সমাধান করতে হবে। পুলিশের হাত থেকে বারবার বেঁচে গেল দুজনে। সবটাই কি ভাগ্যের জোর? না, অদৃশ্য এক হাত চরম বিপদ থেকে উদ্ধার করছে তাদের প্রতিবার! কে সে? জানা নেই তাদের। সূত্র ধরে ধরে এগিয়ে গেল দুজনে, মাথায় নিয়ে আফরোজার লিখে যাওয়ায় শেষ মেসেজ - ট্রুথ ইজ অলওয়েজ ইন ফ্রন্ট অব ইউ।
তিনটে দিন, তিন সময়কাল। একটি হাজার বছরের পুরোনো রহস্য। এই নিয়েই রবিন জামান খানের থ্রিলার '২৫শে মার্চ।' লেখকের প্রথম থ্রিলার এটি। কিন্তু যে জম্পেশ প্লট আর পরিবেশনা নিয়ে তিনি মাঠে নেমেছিলেন, তাতেই বোঝা গিয়েছিল তার প্রতিভার সাক্ষর।
প্রথমেই একটা কথা বলতেই হয়, বাতিঘর প্রকাশনীর কিছুদিন আগের বইগুলোও পড়া একরকম অত্যাচারের সামিল। ভয়াবহ রকমের বানান ভুল তো আছেই, নাম আর শব্দের ভুল ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রে বাক্যের অর্থটাই বদলে গেছে। এই বাক্যগুলোর অর্থ উদ্ধার করা যেন আরেক আরোপিত ধাঁধা! তারপরও বইটা পড়েছি, শুধুমাত্র গল্পের টানে।
ধাঁধা, ইতিহাস, মিথ, গুপ্ত সংগঠন আর বাঙালিদের বারবার রুখে দাঁড়ানোর গল্পের পারফেক্ট ব্লেন্ড নিয়ে '২৫শে মার্চ' থ্রিলারের শুরু থেকেই টানটান উত্তেজনা, থামার কোনো সুযোগ নেই। সেইসাথে ১৯৭১ সালের সেই গনহত্যার ভয়াবহতার আভাসও পাওয়া যায় গল্পটিতে। সমাপ্তিটাও যুৎসই ছিল, কোনোভাবেই মেলোড্রামা হয় যায়নি।
গল্পটা এগিয়েছে অরনী আর মনিরুজ্জামানকে নিয়ে। ২৫শে মার্চের রাতে মনিরুজ্জামান দুই ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে পালাচ্ছে, যেন হাজার বছরের সেই রহস্য গোপন থাকে, অপশক্তির হাতে না পড়ে। এদিকে অরনী হাসানকে নিয়ে ঢাকা শহরে ঘুরছে এই রহস্যের সমাধান খুঁজতে, যার সাথে জড়িয়ে আছে অরনীর মায়ের মৃত্যু। দু' ক্ষেত্রেই আছে প্রাণের ভয় আর পুলিশের তাড়া।
সুত্র খোঁজার ধাঁচ এবং কিছু চরিত্রের প্যাটার্ন আমার কাছে 'দ্য দা ভিঞ্চি কোড' থেকে অনুপ্রাণিত মনে হয়েছে। তবে লেখক যেহেতু তেমন কোনো ডিসক্লেইমার দেননি এবং মৌলিকত্বেরও অভাব ছিল না, তাই এটাকে কাকতালীয় ধরে নিয়েছি। বইয়ে যে ঐতিহাসিক দৃশ্যগুলো আনা হয়েছে তা সবই বাস্তব। উল্লেখিত লোককথাগুলোও একেবারে কাল্পনিক নয়। ঢাকা শহরের ইতিহাস নিয়ে পড়ার সুপ্ত ইচ্ছেটা লেখক আরেকবার জাগিয়ে দিলেন।
হাতে পেয়েও বইটি এতোদিন পরে পড়ার আফসোসে ভুগছি এখন। তবে, শেষ পর্যন্ত ২৫শে মার্চেই পড়লাম!
বই: ২৫শে মার্চ লেখক: রবিন জামান খান প্রকাশনায়: বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারী ২০১৫ প্রচ্ছদ: সিরাজুল ইসলাম নিউটন পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২৭০ মূল্য: ২৫০ টাকা
তিনটে সময়কাল। ১৭৫৭, ১৯৭১, ২০১৪। একটা পা ভাঙা ঘোড়ার মূর্তি। একটা অজানা কাল্ট। একটা প্রাচীন রহস্য।
মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে ফিরে আসে অরনী। এসেই শোনে, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি তার মা আফরোজার। তাকে খুন করেছে তারই স্নেহভাজন হাসান। আর খুনের দায়ে হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু, তার জন্যে রেখ��� যাওয়া আফরোজার শেষ বার্তা বলছে অন্য কথা। "ট্রাস্ট নো ওয়ান, বাট হাসান"। "ট্রুথ ইজ অলওয়েজ ইনফ্রন্ট অব ইউ" এই কথাটিরই বা অর্থ কি?
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পদে পদে বিপদে পড়ছে অরনী। তারচেয়েও বড় কথা, আড়াল থেকে অরনীকে সাহায্য করছে কেউ। কিন্তু, কে বা কারা?
আমার মনে হয়, রিভিউ লিখতে হলে বই পড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই লিখে ফেলা উচিত। বইটা শেষ করেছি প্রায় ৪-৫ দিন৷ কিন্তু, সময়ের অভাবে লেখাই হয় নি। যায় হোক, ফিরে আসি প্রসঙ্গে। বইটা শুরু হয় ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের একটা টুকরো ঘটনা দিয়ে। এরপর কখনো একাত্তর বা কখনো ২০১৪ সাল। অধ্যায়গুলো এমন জায়গায় শেষ হয়, চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে। অগত্যা বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে কখন শেষ হয়ে গেল বুঝতে পারিনি।
একাত্তরের সেই অন্ধকার রাতের বর্ণনা। অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের সাহস আর বুদ্ধিমত্তা ছাপিয়ে একটার পর একটা বিপদে পড়া অসাধারণ থ্রিল দেয়। ২০১৪ সাল, মানে তখনকার বর্তমান প্রেক্ষাপটও লেখক দারুণ একেছেন। বইটা পড়তে পড়তে মনে হবে, আপনি বুঝি সব বুঝছেন, পাজল মেলাচ্ছেন। তবে, শেষ দিকে বুঝবেন, আপনার ধারণা ভুল ছিল।
📙দেশীয় প্রেক্ষাপটে তার উপর একাত্তরের ঘটনা সম্বলিত এমন থ্রিলার আর আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে, অনেকদিন পর জমজমাট মৌলিক থ্রিলার পড়েছি এটা বলতেই হয়।
📙দারুণ লেখনশৈলী, চমৎকার প্লট, দুর্দান্ত উপস্থাপনার পরও দেখা যায় কিছু বই আলোচনার বাইরে থেকে যায়। এই বইটাও তার মধ্যে পড়ে। এর কারণ কি? আমার জানা নেই।
📙এই বইটার একমাত্র ফ্ল "বানান"। এতো বানান ভুল? সিরিয়াসলি? শুরুতে বানান ভুলের মহোৎসব। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, রিভিউ লিখলে আগে বানান ভুলের ফিরিস্তি লিখব। মাঝে তেমন কোন ভুল ছিল না। কিন্তু, শেষে গিয়ে আবার সেই বানান ভুল যা চোখে লাগবেই। গতিময় থ্রিলারে বানান ভুলের কারণে হোঁচট খেলে মেজাজ তো খারাপ হবেই। বাতিঘরের উচিত এই বিষয়ে নজর দেওয়া।
📙প্রচ্ছদ করেছেন, ডিলান। আমার ধারণা, শ্রদ্ধেয় লেখক, নাজিম উদ্দিনই ডিলান নামে প্রচ্ছদ করেন। কাহিনীর সাথে মিলিয়ে দুর্দান্ত প্রচ্ছদ।
মাঝরাতে আচমকা ঘুম থেকে উঠে যদি দেখেন চারপাশে গুলির শব্দ, অসহায় মানুষের আর্তনাদ, চাপা কান্নার শব্দ। পালাতে হবে আপনাকে, কিন্তু সে উপায় নেই! বাইরে ট্যাঙ্ক ভর্তি সৈন্য টহল দিচ্ছে, বের হলেই গুলি। আবার ঘরে থেকেও বাঁচার উপায় নেই, বাইরের গুলি বৃষ্টি আঘাত হেনেছে ঘরেও। যেকোন সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাতে পারেন আপনিও। ভাবলেও গা শিউরে উঠে না? কিন্তু দৃশ্যটা অপরিচিত না আমাদের জন্য। এই দৃশ্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম। সেটা ১৮৫৭ এর সিপাহী বিদ্রোহ হোক, আবার ১৯৭১ এর কাল রাত্রি ২৫শে মার্চ-ই হোক। আমাদের উপরে বর্বরতা কোন শতাব্দীতেই কম ছিল না। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে উত্তাল নগরী তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। এরই মাঝে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছক আঁকছে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঢাকাতে রক্তের বন্যা বইয়ে সমূলে বিনাশ করবে বিদ্রোহিদের। লেঃ ম্যাকফারসন এবং আর্থার মেয়ো খুঁজছে একজনকে। তথ্যমতে তাকে লালবাগ দুর্গে দেখা গেছে। লোকবল নিয়ে তারা চলেছে সেখানে। অতর্কিত হামলা করেও দুর্গের ভেতরে একজনের কঠোর রণকৌশলে ইংরেজ বাহিনীকেও প্রায় পিছু হটতে হয়েছিল। দুর্গের ভেতরে সেই সাহসী ব্যক্তিটি কে ছিল? আর যাকে হন্যে হয় খুঁজে বেড়াচ্ছিল আর্থার তার দেখা কি পেয়েছিল? তাকে খোঁজার কারণ-ই বা কী ছিল ঠিক? ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ। উত্তপ্ত ঢাকায় তখন নিস্তব্ধতা। কর্ণেল হাবিব বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছে নির্দিষ্ট একজনের। ইয়াহিয়ার নির্দেশ, খুঁজে পেতেই হবে জিনিসটা। সাথে সফল করতে হবে রাতের মিশন। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক মনিরুজ্জামান আর তার ছাত্র আবু এসেছে মেডিকেলের মর্গে। আত্মহত্যা করেছেন তার বন্ধু হাফিজ। ঠিক কী কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন হাফিজ তা ঠাওর করতে পারছেন না কেউ-ই। ডাক্তার মনিরুজ্জামানের হাতে তুলে দিলেন হাফিজের মৃতদেহের পাশে পাওয়া একটা খাম, যেখানে মনিরুজ্জামানের নাম লেখা। খামে কিছু জিনিসপত্রের সাথে লেখা একটা নোট "ট্রুথ ইজ অলওয়েজ ইন ফ্রন্ট অব ইউ"। ২০১৪ সালের জুলাই মাস। মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছে অরনী। পাঁচ বছর আগে বাবার মৃত্যুতে মায়ের সাথে অভিমান করে দেশ ত্যাগ করেছিল। দেশে ফিরে অরনী পড়ল আরেক ঝামেলায়। এয়ারপোর্টেই দেরি হলো কোন অজ্ঞাত কারণে, আবার বের না হতেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিল। এমন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন এক বুড়ো চাচা। পেশায় ট্যাক্সি ড্রাইভার। অরনীর গন্তব্যস্থল ঢাকা মেডিকেল মর্গ। সেখানে সাদেকুর রহমান নামে এক লোকের সাথে দেখা অরনীর। আফরোজার পার্সোনাল অ্যাটর্নি তিনি। মৃত্যুর আগে সাদেকুরের কাছে অরনীর জন্য একটা কুরিয়ার রেখে যান। যার ভেতর ছিল একটা খাম। সেখানে কিছু জিনিসপত্রের সাথে একটা নোট আর তার শেষ লাইন "ট্রুথ ইজ অলওয়েজ ইন ফ্রন্ট অব ইউ"। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কি হচ্ছে? সেই ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চে মনিরুজ্জামানের কাছে হাফিজের দেয়া খাম আর নোট কি কালের আবর্তে অরনীর হাতে এসেছে? কী আছে সেই খামে? নোটটাই বা কী নির্দেশ করে? অরনীর পাওয়া নোটে আফরোজা শুধুমাত্র হাসান নামের তার ছাত্রকে বিশ্বাস করতে বলে গেছেন। আফরোজার সবথেকে প্রিয় ছাত্র হাসান। কিন্তু হায়! ম্যাডামের খুনের সন্দেহে-ই বন্দী লোকটাই তো হাসান। কী করে সম্ভব এটা? অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে থানায় হাসানের সাথে দেখা করে অরনী। জানতে পারে মৃত্যুর আগে হাসানের সাথে দেখা করেছিলেন আফরোজা। মৃত্যুর দিনেও একটা নাম্বার থেকে তার কল পেয়ে আফরোজার বাসায় যায় হাসান আর সেখানেই খুনের সন্দেহে আটক হয়। অরনী ভেবে পায় না কাকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু কথায় আছে "বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর"। তাই অরনী হাসানের কথা বিশ্বাস করে আর হাসানের করা পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। সঙ্গে আছে ট্যাক্সি ড্রাইভার আমির চাচা। শুরু হয়ে তাদের নতুন যাত্রা। ওদিকে ১৯৭১ এর সেই কালরাতে মনিরুজ্জামান আর তার দুই ছাত্র আবু ও কবিরকে নিয়ে সন্ধান করে যাচ্ছে হাফিজের দেওয়া খামের ভেতরের সূত্রগুলো সমাধানের। হাফিজের বাড়ি গিয়ে দেখে তছনছ হয়ে আছে সব। সেখানে একটা সূত্র পেয়ে যান মনিরুজ্জামান। সে সূত্র ধরেই এগিয়ে চলেন রেসকোর্স ময়দানের কালীমন্দির, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অফিসে এরপর তার কোয়ার্টারে। সাথে চলছে পাকিস্তানী বাহিনীর ২৫শে মার্চের রাতের সেই ভয়াল তান্ডব। রক্তের নেশায় হন্যে হয়ে আছে তারা। এক রাতেই বাঙালী জাতিকে বিনাশ করে দিতে চায় বর্বর পাক বাহিনী। যাকে যেখানে পাচ্ছে সেখানেই গুলি করছে। সব ���য়সী নারীদের আলাদা করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এমন নৃশংসতা যেন পশুকেও হার মানায়। কোয়ার্টারে এসে মনিরুজ্জামান দেখেন অন্য দৃশ্য। যদিও তিনি তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন গাজীপুরের বাড়িতে। কিন্তু হাফিজের রেখে যাওয়া এক গোপন জিনিস যা মন্দিরের পুরোহিতের মাধ্যমে প্রথমে যায় তার অফিসে এরপর আসে তার বাসায়। কিন্তু বিধিবাম! এখানে হাজির কর্ণেল হাবিব। এরপর কী হবে? খুঁজে কি পাবেন হাফিজের রেখে যাওয়া আমানত? রক্ষা করতে পারবেন কি? না-কি তিনিও হয়েছিলেন কোন ষড়যন্ত্রের স্বীকার? এদিকে অরনী হাসানের করা পরিকল্পনা অনুযায়ী চাচাকে নিয়ে সিএমএম কোর্টের সামনে অপেক্ষা করছে। পরিকল্পনা মোতাবেক হাসানকে নিয়ে পালাবে। কিন্তু এখানেও ভাগ্য সহায় হচ্ছেনা। আরেকটু হলে ধরা পড়েই যেত দুইজন। কিন্তু মাঝে দিয়ে অদৃশ্য কে তাদের সাহায্য করল? কী চায় সে? চোর পুলিশ খেলায় মেতে গেল হাসান অরনী আর এসপি আতিকুর। সৎ থেকে আজীবন চাকরী করা লোকটির ভাগ্য যেন আজ কোনভাবেই তাকে সাহায্য করছেনা। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে আসামী। সে ভেবে পাচ্ছেনা মায়ের সম্ভাব্য খুনিকে কেন বাঁচাতে চাচ্ছে মেয়ে? আফরোজার দেয়া সূত্র ধরে চলে যায় বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে। আর সেখানেই হয়ে যায় তুলকালাম কান্ড। ধরা পড়ে যেতে যেতে কোনরকম বাঁচে দুজন। এবারও সেই অদৃশ্য লোক তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু কে সে? দুজন ছুটে চলেছে পুরান ঢাকার পুরোনো এক অ্যান্টিক শপে, সেখান থেকে ব্রাহ্ম সমাজ উপাসনালয়ে। সেখান থেকে হাজির হতে হয়েছে খন্দকার আহমদ বশির নামে এক লোকের সামনে। আশ্চর্যজনক ভাবে এই প্রতিটা জায়গাতেই মৃত্যুর আগে গিয়েছিলেন অরনীর মা। রেখে গেছেন অরনীর জন্য ছোটো ছোটো সূত্র। মেলাতে পারবে কি অরনী সে ছোটো পাজেলের টুকরোগুলোকে? হাসান অরনীর পার পেয়ে যাওয়া মানে এসপি আতিকুরের ব্যর্থতা। তবে হাল ছেড়ে দেবার লোক সে নয়। নতুন করে নেমে পড়লেন কাজে। আর হাতে পেয়ে গেলেন চমকপ্রদ কিছু তথ্য। সাথে তার জন্য সাপে বর হয়ে এলেন কুয়ালালামপুর ফেরত আফতাব নামে এক ব্যক্তি। মনিরুজ্জামান ধরা পড়ে গেলেও হাল ছেড়ে দেয়ার মানুষ তিনি কখনোই ছিলেন না। শেষ সুযোগ অব্দি তিনি লড়ে গেছেন। সূত্র ধরে যেতে যেতে হাজির হয়েছিলেন তার গাজিপুরের বাড়িতে। কী ঘটেছিল সেখানে? গাজীপুরের ঘটনা সময়ের আবর্তে ২০১৪ সালের মানুষদের কেন ফিরিয়ে আনছে অতীতে? হাসান, অরনী, বশির, আমির চাচা সহ বাকীরা সূত্র ধরে এগোচ্ছে। কিন্তু কীসের পিছে ছুটছে তারা? সেই সিপাহী বিদ্রোহ থেকে বা তারও আগে শুরু হওয়া এমন কী রহস্য যা দাপিয়ে বেড়াচ্ছ ১৯৭১ এ। আবার ২০১৪ এ এসেও সবাইকে দৌড় করাচ্ছে? কোন গুপ্তধন কি? না-কি কোন বিশেষ সংঘ? ঘটনা শেষমেষ হাসান, অরনী, আমির চাচা, বশির, হায়দার আলী, এসপি আতিকুর আর কুয়ালালামপুর ফেরত আফতাবকে নিয়ে ঠেকিয়েছে সেই গাজীপুরেই মনিরুজ্জামানের বাড়িতে। মনিরুজ্জামান আর অরনীর মা আফরোজার সাথে কী সম্পর্ক? কেন সব ঘটনা তাদের নিয়ে যাচ্ছে গাজীপুরের সেই জমিদার বাড়িতে? অরনী কি পেরেছিল তার মায়ের মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটন করতে? সব কিছুতে অদৃশ্যে থাকা সেই সাহায্যকারী কে ছিল? কেনই বা নির্দেশ মেনে সাহায্য করছিল? নির্দেশদাতা কে ছিল? আফতাবই বা কে? আর এই আমির চাচা কেন বিপদ জেনেও সাহায্য করছে অরনীদের? 'ট্রুথ ইজ অলওয়েজ ইন ফ্রন্ট অব ইউ" দ্বারা আসলে কী বোঝানো হয়েছিল? কী সেই সত্য? #পাঠ_প্রতিক্রিয়া: ভালো দিক: আমার কাছে এখন পর্যন্ত লেখকের সেরা বই লেগেছে। ইতিহাস আশ্রিত থ্রিলার আমার অন্যতম প্রিয় জনরা সেজন্য বইটা পড়তে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেছি। বাংলায় ঘটে যাওয়া দুইটা নির্মম ঘটনার বর্ণনা লেখক খুবই দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ১৮৫৭ এর সিপাহী বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও মনে দাগ কেটেছে। আর ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের বর্ণনা প্রতিটা অধ্যায়ে যেভাবে লিখেছেন বারবার অনুভব করছিলাম সে সময়ে মানুষগুলো ঠিক কতটা অসহায় ছিল। কি সময়টাই তারা পার করে এসেছে। ২০১৪ সালের ঘটনার সাথে যেসব একশন সিনের বর্ণনা দিয়েছেন সেগুলো মারাত্মক ছিল। এস্কেপ সিন থেকে গোলাগুলি প্রতিটা বর্ণনা নিখুঁত ছিল। কাহিনিতে থ্রিল ধরে রাখতে পেরেছেন। চরিত্রগুলো দৌড়িয়ে বেড়িয়েছে পুরো গল্প জুড়ে। খারাপ দিক: প্রথম দিকে একটু একঘেঁয়ে লেগেছে পরে অবশ্য সেটা পুষিয়ে গেছে। তবে কাহিনী শেষে এত দ্রুত এগিয়েছে যে চরিত্রগুলোর নিজেদের সময় খুব পেয়েছে। শেষের টুইস্টটা যথেষ্ঠ ভালো হলেও আমার কেন জানি মনে হয়েছে সব পন্ডশ্রম হলো। বাতিঘর প্রকাশনী ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দের। কিন্তু তাদের বাইন্ডিং, বানান ভুল, প্রিন্টিং মিসটেক নিয়ে তারা আমাদের দুঃখ দিয়েই যাচ্ছে। যেমন: হাসান কে অনেক জায়গায় লিখেছে 'হসান', 'হানাস' এমন। ২৭১ পেইজের বই পড়তে গিয়ে বইয়ের বাইন্ডিং অনেকটুকই ঢিলা হয়ে গেছে। এই ব্যাপারে উনাদের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। #প্রচ্ছদ: আগুন লাগা প্রচ্ছদ বরাবরই আমার পছন্দের।
বইয়ের নামঃ ২৫শে মার্চ বইয়ের ধরণঃ থ্রিলার / রোমাঞ্চোপন্যাস লেখকঃ রবিন জামান খান প্রচ্ছদঃ সিরাজুল ইসলাম নিউটন প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকালঃ ২০১৫ পৃষ্ঠাঃ ২৭১ মুল্যঃ ২৩০ টাকা
সার-সংক্ষেপঃ মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে দেশে ফিরে অদ্ভুত রহস্যময় এক ঘটনায় জড়িয়ে অরণী। মৃত্যুর আগে তার মা রেখে গিয়েছেন দুর্বোধ্য এক ধাঁধা আর ধোঁয়াশা মেশানো অতীত। মায়ের মৃত্যুরহস্য উন্মোচিত করতে হলে তাকে সমাধান করতে হবে এই ধাঁধা আর ডুব দিতে হবে অতীতে। পরিস্থিতির চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে তাকে সাহায্য নিতে হয় তার মায়ের খুনের সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া হাসানের কাছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে অরনী ও হাসান নাম লেখায় পলাতক আসামীর খাতায়। অদ্ভুত এই রহস্য সমাধান করতে গিয়ে একদিকে পুলিশের তাড়া, অন্যদিকে অদৃশ্যভাবে তাদেরকে সাহায্য করতে থাকে অচেনা এক লোক। অবশেষে ওরা বুঝতে পারে সমস্ত রহস্যে মোড়া কম্বলটি লুকায়িত আছে ইতিহাসের বিশেষ একটি দিনে, ২৫ শে মার্চ, ১৯৭১!
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ "Truth is always in front of you"
সুন্দর উপস্থাপন। ভিন্নধর্মী কনসেপ্ট। কিছুটা ইতিহাস। সব মিলিয়ে ভালোই লেগেছে। রবিন জামান খান প্রধানত অনুবাদক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও মৌলিক থ্রিলার লেখনিতেও যে তিনি কম যান না, এই বইটি তার প্রমাণ। গল্পটা মুলত এক গুপ্তসংঘ নিয়ে। বাংলা সাহিত্যে এরকম কনসেপ্ট নিয়ে আগে তেমন লেখা হয়েছে বলে জানা নেই। তার উপর কাহিনী এগিয়েছে অতীত আর বর্তমানের সমান্তরালে। তবুও পড়তে গেলে সেটা একবারও মনে হয় না। পাঠককে ধরে রাখার বেশ ভালোই ক্ষমতা আছে লেখকের। সাধারণত লেখালেখির সময় কোন বাস্তব ইতিহাস সম্পর্কে লিখতে গেলে লেখককে কিছুটা সতর্ক থাকতে হয়, পাছে ইতিহাস বিকৃত না হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে লেখক পুরোপুরি সফল হয়েছেন বলে আমার মনে হয়। ইতিহাসের আশ্রয়ে থেকে বেশ ভালোভাবেই এক অসাধারণ রোমাঞ্চ কাহিনী তুলে এনেছেন তিনি।
তবুও বই এর কিছু কিছু বিষয়ে একটু দৃষ্টিকটু লেগেছে... ১. বইয়ের শুরুটা কিছুটা একঘেয়ে লেগেছে। পরে অবশ্য প্রত্যেক পাতাতেই ছিল টানটান উত্তেজনা। ২. কাহিনীর ফিনিশিংটা আরেকটু পরিষ্কার হলে ভালো হতো। ৩. গল্পের কাহিনীর উপর জোর বেশি দেয়ায়, চরিত্র বিশ্লেষণ কম হয়েছে। ৪. "ঠিক সময়ে, ঠিক লোক এসে, ঠিক ঠিক খবরটা দিয়ে গেলো" এই ব্যাপারটা গল্পে খুব বেশী পরিলক্ষিত হয়�� অর্থাৎ টুইস্টের থেকে কাকতালীয় ব্যাপার বেশি তুলে ধরা হয়েছে। ৫. বইয়ে বানান ভুলের পরিমান অনেক বেশী।
কিন্তু এত কিছুর পরেও বইটি তার আবেদন রাখতে এতটুকুও ব্যর্থ হয় নি। লেখকের প্রথম বই হিসেবে যথেষ্ট ভালো একটি বই। প্রত্যেকটা অধ্যায় ই সমান ভাবে উত্তেজনাকর । লেখক অনেক বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে লিখেছেন বইটি। পাঠকের মগজ ও মন উভয় পুষ্টির জন্য পরিপূর্ণ সক্ষম!
কয়েক বছরে বাংলাদেশে ভালো পরিমানে মৌলিক থ্রিলার প্রকাশিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক থ্রিলারও প্রকাশিত হচ্ছে। আমি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলাম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক থ্রিলার গুলো পড়ার জন্য। টার্গেটে প্রথমেই ২৫শে মার্চ ছিলো। ঈদের ব্যস্ততার মাঝে একটু একটু করে পড়ে শেষ করলাম।
বইটার শেষ পাতা পর্যন্ত মনের মধ্যে একটা খচখচানি নিয়ে পড়তে হয়েছে। অমুক চরিত্র কেন এই কাজ করছে? তমুক কেন ওটা বললো? এরকম নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছিলো বইটা শেষ না করা পর্যন্ত। অবশেষে যখন বইটা পড়ে শেষ করতে গিয়ে বড় রকমের একটা টুইস্ট পেলাম। অনেক গল্প, সিনেমায় এমন টুইস্ট দেখা যায় অবশ্যই। কিন্তু "২৫ শে মার্চ " সম্পুর্ন পড়ার আগ পর্যন্ত ধরতে পারি নাই। ধরতে পারি নাই বলেই মনের ভেতর খচখচ করছিলো। লেখক তাই চমৎকার একটা থ্রিলার লেখায় সফল। সমাপ্তিটা সিনেমাটিক টাইপ হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা তাই প্রত্যক্ষভাবেই অনেক কিছু জানতে পারবেন। সিপাহী বিদ্রোহ, মুক্তি যুদ্ধ, প্রাচীন ঢাকার মিথ, পুরোনো ভারতবর্ষের কাল্ট (গুপ্ত সংঘ) এর বর্ননা, আরো অনেক কিছু জানার আছে। লেখককে লেখার আগে প্রচুর খাটতে হয়েছে, বইয়েও সেটা তিনি উল্লেখ করেছেন। পুরো বইয়ের কাহিনী তিনটি ভাগে বিভক্ত সিপাহী বিদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধ আর বর্তমান (২০১৪) । বর্তমান সময়ের অংশে প্রযুক্তির অতিরঞ্জন মুক্ত প্রয়োগ দেখিয়েছেন উনি। সুতরাং চমৎকার একটা ঐতিহাসিক থ্রিলার পাওয়ার আশা করাটা খুব সম্ভব, লেখক সেটা দিতে পেরেছেনও।
সবথেকে ভয়াবহ নেগেটিভ দিক হলো বানান ভুল। পুরো বইয়ে শ খানেক বানান ভুল আছে। বাতিঘরের কিছু বইয়ে এমন অভিযোগ উঠছে আর প্রমানও পেলাম। বইয়ের দামটা অবাক করে দেয়ার মত কম, বাধাই ভালো, ছাপার মান ভালো। কিন্তু তারপরও বইয়ের দাম কম। সাধারণত বইয়ের পৃষ্ঠার দ্বিগুন দাম হয় বইয়ের। মূল্য নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
শুধু সময় কাটানোর জন্যই পড়া না, ঢাকাকে নতুনভাবে জানতে হলেও বইটি পড়তে হবে। পুরো বইয়ে ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনের বর্ননা আছে। ইতিহাস তো জানতে পারবেনই, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আপনার শ্রদ্ধাবোধও বেড়ে যাবে।