Sheikh Hasina is the current Prime Minister of Bangladesh, in office since January 2009. She previously served as Prime Minister from 1996 to 2001, and she has led the Bangladesh Awami League since 1981. She is the eldest of five children of Sheikh Mujibur Rahman, the founding father and first President of Bangladesh, and widow of the nuclear scientist M. A. Wazed Miah. She is also sometimes referred-to as Sheikh Hasina Wazed, her married name.Hasina is a member of the Council of Women World Leaders, an International network of current and former women presidents and prime ministers.
মৃত্যুর পর স্বর্গে পৌঁছাতে নাকি সত্তর হাজার ঘাঁটি পাড়ি দিতে হয়। এতোটা না হলেও অনেক স্যুট, টাই, কালো চশমার দৌরাত্ম দেখে রুমে ঢুকতেই দেখি প্রধানমন্ত্রী আমার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন।
শেখ হাসিনাঃ তুমি দেখি অনেক পিচ্চি মানুষ! প্রথমেই তোমাকে ধন্যবাদ এই জন্য যে তুমি আমার অনেক আগে প্রকাশিত একটা বই নিয়ে আলোচনার জন্যই এসেছ। জানো, আমার কাছে অনেকে আসে, বই নিয়ে কথা বলার জন্য কেউ আসে না :(
আমিঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। টলটলে পুকুরের পানিতে পড়ে যাওয়া বরুইটার জন্য মন জুড়ে থাকা দুঃখটুকু ভুলতে পারলাম কই? এই লাইন পড়ে তো আমি উদাস হয়ে গেলাম। জানেন আমারও এরকম দুঃখ আছে। প্রথম যে পিঠাটা বানানো হত, সেটা আম্মু আমাদের কাউকে খেতে দিত না, ওটা খেতে না পারার কষ্ট কি কখনও যাবে, বলেন?
শেখ হাসিনাঃ আরে ওতে দুঃখের কি আছে? আম্মু কি তোমাকে বলেনি, ওটা খাওয়া ভালো নয়। নিশ্চয় বলেছে। আচ্ছা, আমি তোমাকে প্রথম পিঠা খাওয়াবো। আমি শুধু বিরানীই রান্না করতে পারি না, অনেক কিছুই রান্না করতে পারি, হুঁউ।
আমিঃ স্মৃতির দখিন দুয়ার পড়ে মনে হল, আপনি যদি গ্রাম ভিত্তিক কোন উপন্যাস লিখতেন তবে খুব ভালো করতেন। ভূমিকায় আনিসুজ্জামান যে প্রশংসা করেছেন ওটা আমারও প্রশংসা কিন্তু। আমার শৈশবের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলি কেটেছে গ্রাম-বাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা-মাটিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাক-জ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝিঁর ডাক শুনে, তাল-তমালের ঝোপে বৈঁচি, দীঘির শাপলা আর শিউলি-বকুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে, ধুলোমাটি মেখে, বর্ষায় ভিজে খেলা করে। কি অসাধারণ একটা লাইন। পথের পাঁচালীকে নিয়ে আপনার যে বিশ্লেষণ সেটা অনেক ভালো ছিল কিন্তু। এরকম লিখা লেখা বন্ধ করবেন না কিন্তু।
শেখ হাসিনাঃ আরে বাহ! এতো প্রশংসা। দাঁড়াও, চা দিতে বলি। ..... কি বললে, চা খাওনা? ও তাহলে আইসক্রিম দিতে বলি।
আমিঃ রাজনীতি তো তেমন ভালো বুঝি না, কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করি আরকি। দেখা যায়, একটা রাজনৈতিক দল অন্য এক দলের হয় প্রশংসা করবে না হয় খুব নিন্দা করবে। মাঝামাঝি কিছু করে না, মানে বুঝাতে চাচ্ছি, যখন যেটা করা প্রয়োজন সেটা করা হয় না। কিন্তু সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে এটা আবার খাঁটে না। দুর্নাম করলেও বিশাল একটা সুনাম করে এরপর করা হয়। এটা কেন? আপনার বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সেনাবাহিনী ও কিন্তু এর বাইরে নয় বলেই আমি মনে করি।
(আইসক্রিম ভালো, হুঁ প্রধানমন্ত্রীর আইসক্রিম বলে কথা)
শেখ হাসিনাঃ তুমি ছোট মানুষ তুমি এসব বুঝবে না। সেনাবাহিনীর সাথে একটু সমঝে চলতে হয় আমাদের। দেখলে না, যে হাঁটুবাহিনীর জন্য আমার আব্বা এতো কিছু করলেন, সেই হাঁটুবাহিনীই তাঁকে মারলো। (গলার স্বর একটু নিচু করে) আমি যে হাঁটুবাহিনী বললাম, তুমি কিন্তু ওটা বাইরের কাউকে বলবেন না, কেমন?
আমিঃ :D এবার সম্ভবত আপনার সাথে আমার ঝগড়া ঝাঁটি হয়ে যাবে। ১৯৮৮ সালে লেখা রাষ্ট্রীয় ধর্ম কার স্বার্থে পড়ার পর এই ২০১৫ সালে আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, কার স্বার্থে?
শেখ হাসিনাঃ দেখ ইমতিয়াজ, আমাদের সবার সাথে চলতে হয়, সবপক্ষকে সন্তুষ্ট করতে হয়। এটা করার জন্যই ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্মও রেখে দিলাম।
আমিঃ আমি বুঝতে পারলাম আপনি প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন। আচ্ছা যাই হোক, পরের প্রশ্ন। আপনি যে যুক্তিতে বিসমিল্লাহ আর রাষ্টধর্মের বিরোধিতা করলেন সেই একই যুক্তির বিপরীতে গিয়ে কিভাবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের বিরোধীতা করলেন? আপনি তো প্রথমেই স্বীকারই করতে চাইলেন না যে, এদেশে বিহারী ছাড়া অন্য কোন অবাঙালী আছে। যাই হোক পরে আদিবাসীদের প্রসঙ্গ আনলেন। (কিছু বলার চেষ্টা করলেন উনি....) না না, আমি জানি বর্তমান বাংলাদেশের সংবিধানে কি আছে। আমি আসলে অন্য প্রশ্ন করতে চাচ্ছি। আপনি বলেছেন, ১৯৭৫ এর আগে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কেউ বলেনি। না ব্যাপারটা সঠিক নয়। সংসদেই আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করার জন্য একটা দল গিয়েছিল। উনি সবাইকে বাঙালি হয়ে যেতে বলেছিলেন।
শেখ হাসিনাঃ তুমি আসলে খুবই ছোট মানুষ। মাঝে মাঝে কিছু জিনিস এড়িয়ে যেতে হয় 3:)
আমিঃ আটাশির বন্যা নিয়ে লেখা বন্যাদুর্গত মানুষের সঙ্গে পড়ে ভালো লাগলো। ভালো লাগলো এই কারণে যে আপনি অসুস্থ হয়েও যেভাবে মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন সেটা জেনে। ধন্যবাদ আপনাকে।
শেখ হাসিনাঃ রাজনীতি করার কারণে অনেক মানুষের ঘৃণা পাই আবার অনেক অনেক মানুষের ভালোবাসাও কিন্তু পাই। তোমাকে তো এখন দেখাতে পারছি না, তবে বলি শুন। আমার কাছে এখনও একটা খামে করে ১০ টাকা রাখা আছে। ওটায় মিশে আছে ভালোবাসা। বন্যা দুর্গত একজন মা মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন আর আমার হাতে গুঁজে দিলেন ওই দশটি টাকার নোট। কত্তো ভালোবাসা, এগুলোর কি কোন প্রতিদান হয়?
আমিঃ অসাধারণ। কিন্তু জানেন, আপনার লেখাটা পড়ে খারাপই লাগছে। আব্দুর রহমান যে আর তার ছেলেকে পাবে না। আর কখনও কি সে সুস্থ হবে? যাই হোক, নূর হোসেন প্রসঙ্গে আসি। উনি যে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ছিলেন, এ কথা অনেকেই জানে না। এটা আপনাকে অবাক করে নিশ্চয়?
শেখ হাসিনাঃ ঝাঁকড়া চুলে হাত বুলিয়ে বোনের দাবী নিয়ে ওকে বলেছিলাম, জামাটা পরে নিতে। ও শুনলো না কথাটা। মরে গেল শেষপর্যন্ত। স্বৈরাচার সরকার ওকে বাঁচতে দিল না।
আমিঃ কিন্তু আপনার কি এখন মনে হয় না, এরশাদের সাথে দহরম-মহরম সম্পর্ক রেখে আপনি নূর হোসেনের আত্মাকে কষ্ট দিচ্ছেন?
শেখ হাসিনাঃ You should know how to do politics. তাছাড়া রাজাকার বিরোধী সবাইকে এক ছাতার নিচে আনতে হবে। সে স্বৈরাচারই হোক আর ইসলামী দলই হোক।
আমিঃওরা টোকাই কেন, বেশ ভালো একটা লেখা। এটার নামে বইয়ের নাম দেয়ায় আমি বলবো, নামকরণ স্বার্থক। আপনি যেভাবে আপনার জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে টোকাইয়ের জীবন বিশ্লেষণ করেছেন সেটা অসাধারণ ছিল। আপনি মান্নানের দায়িত্ব নিয়েছেন সেটা খুব অসাধারণ। আমার আর প্রশ্ন নেই। আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়ার দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সব সময়।
শেখ হাসিনাঃ তুমিও ভালো থেকো। আর এখনই যেও না, একটা সেলফি তুলে নিই আগে :D
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে লেখালেখির প্রবণতা নেই বললেই চলে।সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ব্যতিক্রম।'ওরা টোকাই কেন' মূলত বিভিন্ন সময় লেখা ছ'টি প্রবন্ধ সংকলন।এতে যেমন ব্যক্তিগত ডায়েরির আকারের প্রবন্ধও আছে তেমনি আছে নূর হোসেনকে নিয়েও একটি অসাধারণ লেখা।
'রাষ্ট্রীয় ধর্ম কার স্বার্থে' প্রবন্ধে আছে রাষ্ট্রের ধর্ম থাকলে কি কি অসুবিধা হতে পারে তার আলোচনা।যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতেও সমান প্রাসঙ্গিক।'বাঙালি জাতীয়তাবাদ' এবং 'বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ' নিয়েও একটি নাতিদীর্ঘ কিন্তু সুস্পষ্ট আলোচনা রয়েছে।তাছাড়া 'ওরা টোকাই কেন' প্রবন্ধতে যেমন আলোচনা হয়েছে রাস্তার ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে তেমনি আলোচনা করেছেন নারী অধিকার নিয়ে,গ্রামাঞ্চলে তালাক প্রথার ত্রুটি নিয়ে।রাজনীতিবিদ হয়েও এসব চিন্তাভাবনা চমকপ্রদ। শেখ হাসিনা প্রথাগত লেখক নন।প্রবন্ধগুলোতে লেখকের মুন্সিয়ানা নেই কিন্তু আছে নিজের মতো করে চারপাশকে দেখার আকাঙ্ক্ষা!
ভালো বই। প্রবন্ধ সংকলন। হয়তো রাজনীতির লোক বলেই সব জায়গায় রাজনীতির কথা চলে এসেছে অবলীলায়। তৎকালীন স্বৈরশাসকের শাসনকালের নানা রকম অসঙ্গতির কথা উঠে এসেছে বইটিতে। নিয়মিত লিখেন না বলে ঘটনাপ্রবাহের একটু অমিল মাঝে মাঝে লক্ষ্য করা যায়। সেটার তোয়াক্কা না করলে ভালো লাগবে বইটি। আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লেগেছে শেষের প্রবন্ধ "ওরা টোকাই কেন" প্রবন্ধটি। তবে লেখক পুরো বইতে উপমা ব্যবহার করেছেন বেশ ভালোভাবে। তবে সবচেয়ে ভুগিয়েছে পুরো বইয়ের অনেক বানান ভুল। কেন যেন মনে হয়েছে প্রুফ রিডিং ছাড়াই বই ছাপানো হয়ে গেছে। একারণে রেটিং দিলাম ৩/৫।
নিয়মিত লেখিকা যেহেতু নন, সেজন্য একটা বিষয় বলতে গিয়ে অন্য বিষয়ে হারিয়ে গেছে, খুব গোছানো ভাবে নয়, সেটা নিজেই বলেছে,"কত কথা যে মনে পড়ে। কত কথা যে বুকের গভীরে সাজানো থাকে।কোনটা রাখি কোনটা লেখি। মনের ভাবনার সঙ্গে কলম কি তাল মেলাতে পারে?" সুতারং লেখার গুণাগুণ না খোঁজে লেখার মূলভাবটাকেই প্রধান্য দেওয়াটাই হল মূল বিষয়। লেখিকা তাঁর শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলো, বাবা-মা-প্রতিবেশিদের সাথে কাটানো সময়, স্বৈরশাসক এরশাদও সাধারণ জনগণের অধিকার ইত্যাদি ৬টি গল্প নিয়ে সাজানো একটি প্রবন্ধ।