Jump to ratings and reviews
Rate this book

Assassination of Ziaur Rahman and the Aftermath

Rate this book
The book is a chronology of events surrounding the assassination of late President Ziaur Rahman and the aftermath, as well as a brief commentary on Zias rise to power. The author, who was Deputy Commissioner of Chittagong at the time of Zia's assassination, narrates these events from his perspective. It is a riveting account of the last hours of the most powerful man of Bangladesh that time, and the series of events leading to the capture and assassination of another freedom fighter, late Maj. Gen. Manzoor Hussain. Zia gave birth to a new slogan Bangladeshi nationalism with an Islamic flavor. In doing so he also paved the way for the rehabilitation of the religion based political parties and their leaders who had sided with the opponents of Bangladesh liberation. At the end he was able to cobble together a new political party - The Bangladesh Nationalist Party (BNP) - which was a potpourri of diverse political elements, lefties, centrists, religious zealots, and deserters from other political parties including the Awami League. As Zia busied himself with his newly acquired political power and a besotted political party, he drifted from the original power base the Army, in particular the freedom fighters section that he was aligned with at the beginning. Many of his new political associates were suspects in the eyes of his freedom fighter colleagues for their political past, anti-liberation stand, and their perceived corruption. Zia's life was cut to a short at the peak of his popularity by elements of the very forces that had catapulted him to power, and had provided him the platform to success. From his vantage point, the author doubts if we will ever know if the officers charged and executed were the only people involved in Zia's assassination. If Gen. Manzoor actually gave the leadership to the failed coup attempt, or whether there was a more deep rooted conspiracy that brought bout the fateful events. The truth never came out, neither in the in-camera Army Court Martial or the Army and Judicial enquiries that were set up by Sattar government. Truth became a casualty to cover ups, political shenanigans, and over time, to indifference.

93 pages, Hardcover

First published January 1, 2009

2 people are currently reading
77 people want to read

About the author

Ziauddin M. Choudhury

3 books2 followers

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
7 (70%)
4 stars
3 (30%)
3 stars
0 (0%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 5 of 5 reviews
Profile Image for Muhammad .
152 reviews11 followers
July 17, 2021
বাংলাদেশের ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধময় রাজনীতির রক্তাক্ত ইতিহাসের অন্যতম প্রধান একটি চরিত্র জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আধুনিক রাজনীতির সূচনাকাল পর্যন্ত একটি বড় অংশই জিয়াউর রহমানময়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষক জিয়া। মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে সাহসী ভূমিকা রেখে জিয়া পেয়েছেন ‘বীর উত্তম’ খেতাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর মৃত্যুর পৌনে দু বছরের মাথায়ই জিয়া হয়েছেন দেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি। এই জিয়াই আবার অনেক ঐতিহাসিক এর মতে রিলাক্ট্যান্ট বা অনিচ্ছুক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম নকশাকার হিসেবেও জিয়ার পরিচিতি কম নয়। বাংলাদেশের প্রথম সামরিক একনায়ক এর কুখ্যাতি জিয়ার। জিয়া প্রচণ্ড ক্ষমতালোভীও বটেন। ’৭৫ এর ৭ নভেম্বর ঘটে যাওয়া সিপাহী বিপ্লবে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কর্নেল তাহের যখন জিয়াকে বের করে নিয়ে আসেন, জিয়া তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন ‘তাহের আমার ভাই’। ন’মাস যেতে না যেতেই ’৭৬ এর ২১ জুলাই জিয়া সেই তাহেরকেই ফাঁসিতে ঝোলান; কারণ, তাহেরকে জিয়া তাঁর ক্ষমতালাভের প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখেছিলেন। দল ভারী করে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে জিয়া তাঁর রাজনৈতিক দল বিএনপি গঠন করে দলে ভিড়িয়েছিলেন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের, যা সর্বার্থেই তাঁর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টির পরিপন্থী। জিয়া কি নায়ক? নাকি ভিলেন? এক শব্দের জবাবে এই উত্তর দেয়াটা যথেষ্টই কঠিন, এবং এক শব্দের হ্যাঁ ও না-বাচক উত্তর কেবল তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের পক্ষের ও বিপক্ষের মানুষেরাই খুঁজবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যাঁরা রাজনীতির সাথে কোনভাবেই জড়িত নন, তাঁরা কিভাবে জিয়াকে মূল্যায়ন করবেন? ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার নিমিত্তে ঘটিত সেনা অভ্যুদয়ে নিরব সমর্থন ছিলো’-এই তকমা লেগে যাওয়া জিয়ার নিজের মৃত্যুও ঘটেছে করুণভাবে, আরেকটি সেনা অভ্যুদয়ে। কি কারণ ছিলো তাঁর হত্যার পেছনে? কারা ঘটালো এই হত্যা? পেছন ফিরে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে অবাক হয়ে যেতে হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস এত ঘটনাবহুল, এত মোড়, এত ক্লাইম্যাক্স সেখানে যা হলিউডের অনেক থ্রিলার-সাসপেন্স ছবিকেও রীতিমত প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেবে। ‘অ্যাসাসিনেশন অফ জিয়াউর রহমান অ্যান্ড দি অ্যাফটারম্যাথ’ বইয়ের লেখক জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী জিয়া হত্যার সময়ে হত্যার অকুস্থল চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার ছিলেন (১৯৭৮-৮১)। খুব কাছ থেকে জিয়াকে দেখবার ও তাঁর সাথে মিশবার অভিজ্ঞতা হয়েছে জিয়াউদ্দিনের। তাই জিয়া হত্যার বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ৯৩ পৃষ্ঠার এই বইটি ওপরে উল্লেখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার সম্ভাব্য কিছু রাস্তা দেখাবে, জানাবে ভয়ানক অস্থির সেই সময়ের কিছু অদ্ভুত ঘটনা, যেগুলোর স্মৃতি অন্যতম-এবং ক্ষেত্রবিশেষে একমাত্র-সাক্ষী হিসেবে জিয়াউদ্দিন বহন করে এসেছেন দীর্ঘদিন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকে জিয়া’র সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন ছিলেন মেজর জেনারেল মঞ্জুর, যাঁকে জিয়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। জিয়াউদ্দিন তাঁর বইতে জিয়া এবং মঞ্জুর এর বন্ধুত্বের অন্তরঙ্গতার বিষয়টি বারবার এনেছেন। জ্ঞান, বুদ্ধি ও ধীরস্থির কৌশলের কারণে সেনাবাহিনীতে ‘পণ্ডিত’ বলে পরিচিত মঞ্জুর খুব অল্প বয়েসেই জেনারেল পদে উন্নীত হন যা উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসেই অন্যতম দ্রুততম। বাংলাদেশের ইতিহাসে মঞ্জুর এক ট্র্যাজিক চরিত্র। জিয়াউদ্দিন দেখিয়েছেন জিয়া হত্যাকান্ড ও হত্যার পর চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো অত্যন্ত অগোছালোভাবে যাতে সমন্বয়হীনতা ও তাড়াহুড়োর ছাপ স্পষ্ট বিদ্যমান-লেখকের দাবিতে-যা বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলী জেনারেল মঞ্জুর এর চরিত্রের সাথে একেবারেই বেমানান। ১৯৮১ এর ৩০মে জিয়ার হত্যার পর বেশ কিছু নাটকের অবতারণা ঘটে যা আমাদের খুব বড় কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে।

পলাতক মঞ্জুর কে গ্রেফতার করে হাটাহাজারী থানায় আনবার পর সেনাবাহিনী থানার পুলিশের ওপর চাপ প্রয়োগ করে মঞ্জুর কে তাদের হাতে হস্তান্তর করবার জন্য। উল্লেখ্য যে, মঞ্জুর অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে পুলিশের কাছে ধরা দেন এবং সিভিল আদালতে সাক্ষ্য দানে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মঞ্জুর সেনাবাহিনী থেকে আগেই অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন, অতএব মার্শাল ল তাঁর ক্ষেত্রে আর প্রযোজ্য নয়। মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে কি হবেনা এ সিদ্ধান্ত জানাতে দীর্ঘ গড়িমসি করেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার। সাত্তারের দাবী ছিলো তিনি সেনাবাহিনী প্রধানের (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) সাথে আলোচনা না করে এ সিদ্ধান্তে আসতে পারছেননা! অনেক কালক্ষেপণ ঘটিয়ে বারবার যোগাযোগের পর অবশেষে সাত্তার জানান এরশাদ রায় দিয়েছেন মঞ্জুর কে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে। দোসরা জুন মঞ্জুর নিহত হন সেনাবাহিনির বন্দী সেলে, গুলির আঘাতে (পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল নিহত জিয়ার অনুগত ক্ষুব্ধ সৈনিকেরা ক্যান্টনমেন্টে নেবার পথে মঞ্জুরকে হত্যা করে), জিয়াউদ্দীন উল্লেখ করেছেন,

‘When the doctor was asked to “bandage the wounds” he found Manzoor dead from a single bullet which had pierced his head clean through-not from a volley of bullets’


মঞ্জুরকে কোন আদালতের সম্মুখীন হতে হয়নি, দেয়া হয়নি আত্নপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগও। জিয়া হত্যার ব্যাপারে মঞ্জুরের নিজের বক্তব্য অজানাই রয়ে গেলো। জিয়াউদ্দীন প্রশ্ন তুলেছেন কেন মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হল? কেন বিচারবিহীন অবস্থায় মঞ্জুরকে সরিয়ে দেয়া হলো তাঁর গ্রেফতারের সাথে সাথে? মঞ্জুর কি খুব গোপন কিছু জানতেন? মঞ্জুরকে তো প্রকৃত অর্থে খুন-ই করা হলো, কোন এক অদৃশ্য শক্তির অঙ্গুলিহেলনে। মুক্তিযুদ্ধে বীর উত্তম খেতাব পাওয়া মঞ্জুর কখনো মেনে নিতে পারেননি তাঁর প্রিয় বন্ধু জিয়া ক্ষমতা ধরে রাখতে একদিন দেশের শত্রু রাজাকারদের নিয়ে দল বানাবেন, মন্ত্রিত্বে বসাবেন। তিক্ত ক্ষোভে মঞ্জুর কখনো জিয়ার কোন মন্ত্রী’র সাথে করমর্দনও করেননি। মঞ্জুর কি এই ক্ষোভ থেকে জিয়াকে হত্যা করেছেন? ২০০৯ সালে প্রকাশিত বইটিতে জিয়াউদ্দীন জিয়া হত্যায় মঞ্জুরের ভূমিকার বিষয়ে তাঁর সংশয়বাদের কথা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন যা পাঠকদের মনেও অনেকখানি সঞ্চারিত হবে। সম্প্রতি ডেইলী স্টারে প্রকাশিত (এপ্রিল ২০১৪) লরেন্স লিফশ্যুৎজের নিবন্ধনটিও এই সংশয়বাদকে আরো জোরালো করে। জিয়া ও মঞ্জুর উভয়ের হত্যার পেছনেই একটি চরিত্রই উঁকি দেয়ঃ তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। লরেন্স লিফশ্যুৎজ জেনারেল মঞ্জুরের কন্যা রুবানা মঞ্জুরের একটি সাক্ষাৎকার নেন কিছুদিন আগে। খোলাখুলি সে আলোচনায় মঞ্জুর হত্যার বিচার না পাওয়া নিয়ে রুবানার হতাশার কথা এসেছে। ২০১৪ সালের ৩১মে 'দৈনিক প্রথম আলো'তে সেই সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। লিফশ্যুৎজের সাক্ষাৎকার ও ডেইলী স্টারের নিজস্ব প্রতিবেদনের লিঙ্ক এখানে দেয়া হলোঃ

প্রথম আলো-আমরা ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছি

Daily Star desk report-Manzoor Murder 4-The nation fed cooked-up story

Daily Star desk report-Manzoor Murder 5-Drama over enquiry

এই বইটি পড়ে জিয়া ও মঞ্জুরের বন্ধুসুলভ খুনসুটির চমৎকার একটি গল্প জেনেছি, যা এখানে উল্লেখ করবার লোভ সামলাতে পারছিনা! গল্���টি দুই বন্ধুর অন্তরঙ্গতার পরিচায়কও বটেঃ

মঞ্জুরের আয়োজন করা এক সান্ধ্য পার্টিতে জিয়া গিয়েছেন। সেখানে তিনি দেখলেন দামী কাঁচের খুব চমৎকার কিছু ওয়াইন গ্লাস। জিয়া খোঁচাসুলভ কণ্ঠে মঞ্জুরকে জিজ্ঞেশ করেন, এই গ্লাসগুলো কি শুধু দেখানোর জন্যই না কি ব্যবহারও করা হয় মাঝে সাঝে? মঞ্জুর হাসিমুখে মুখে জবাব দিলেন “এই গ্লাসগুলো ব্যবহৃত হয়ই বটে, শুধুমাত্র বিশেষ কিছু রাতের জন্য। দুঃখের বিষয়, আজকের রাতটা তেমন বিশেষ নয়!”

জিয়াউর রহমান তাঁর দল বিএনপি গঠন করে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের তো দলে টানেনই, সমসাময়িক আওয়ামী নেতাদেরও দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন, তাঁর সে চেষ্টা একেবারে বিফল হয়নি। অনেক আওয়ামী নেতাই জিয়ার দলে নাম লিখিয়েছেন, ভোল পাল্টেছেন, নতুন দলে নতুন সুরে গান গাওয়া শুরু করেছেন। এসবের মাঝেও ব্যতিক্রম ছিলেন কেউ কেউ। জিয়াউদ্দিন উল্লেখ করেছেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য শহীদউদ্দিন ইস্কান্দার-এর কথা, যিনি 'কচি মিয়া' নামে অধিক জনপ্রিয় ছিলেন। বিএনপিতে ডিগবাজী দিয়ে আসার প্রস্তাবে কচি মিয়া জিয়াউর রহমানকে বেশ কড়াভাবে 'না' জানিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কে মরহুম কচি মিয়া আমার বড় খালু; তাঁর স্ত্রী, আমার বড় খালা আরজুমান্দ বানু ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই লেখাটি যাঁরা পড়ছেন, বইয়ের আলোচনায় নিজের আত্নীয়তার সম্পর্কের বিবরণী টেনে নিয়ে আসার অপরাধটি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন আশা করছি! প্রচুর রক্ত দিয়ে তবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে; লাখ লাখ পরিবারকে শরীক হতে হয়েছে অসমসাহসিক আত্নদানে, যে ঋণ কখনো পরিশোধ হবার নয়। শহীদউদ্দিন ইস্কান্দার ও তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা সাহাবউদ্দিন ইস্কান্দার (ভুলু) উভয়ই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সাহাবউদ্দিন যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁদের কথা এই আলোচনায় উল্লেখ করে ওই একই পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি আমার সামান্য দায়িত্বটুকু পালন করলাম মাত্র।

ইতিহাসের অবস্থান স্থিতিতে, ইতিহাসের কোন পরিবর্তন নেই। বাংলাদেশের জন্য এই নিয়ম খাটেনা। বাংলাদেশের ইতিহাস ক্রম পরিবর্তনশীল। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ক্ষমতায় আসীন দলটির নিজস্ব অভিধান অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত হয় রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়গুলো। আগের সরকারে যিনি রাজাকার, পরের সরকারে তিনিই এক প্ল্যাটুন পাক আর্মিকে ৬ গুলির রিভলবারে কাবু করা মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার চার দশকেরও বেশী সময় পরে আজও আমরা ইতিহাসের অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই কে মুক্তিযোদ্ধা, কে রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ তিন লক্ষ না ত্রিশ লক্ষ-এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজ অঙ্ক কষতে বসতে হয়। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে পিতা যাঁর নাম পাঠ্যবইতে পড়ে গেছেন, পুত্র নিজের বেলায় তা পড়েনা, পায় অন্য নাম। মঞ্জুর হত্যায় এরশাদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা কখনো আদালতে আসেনি, বরং আদালতে নেবার জুজু দেখিয়েই দুই রাজনৈতিক দল নিজেদের পকেটবন্দী করে রেখেছে এরশাদকে, পাল্টে গেছে ইতিহাসের গতিপথ আবারো। রাজনীতির পোকার খেলায় স্টেক যখন কোটি কোটি টাকা, একজন আবুল মঞ্জুর ন্যায়বিচার পেলো কিনা কে আর দেখতে যায়। চোখের সামনে ইতিহাসের চরিত্রগুলোকে অদলবদল করে দিলে আমাদের মনে হয় আমরা ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান দেখছি। সঞ্চালক শাহরুখ খান এখন কথা বলছেন, এখনি জামা পাল্টে এসে গানের সাথে নাচছেন, এখনি আবার পরচুলা পরে ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। একই মানুষ, অনুষ্ঠানের গতির সাথে সাথে বিভিন্ন রুপ ধরছেন......রাজনৈতিক খেলোয়াড়েরা কি বোঝেন তাঁদের স্বার্থে তাঁদের মতো করে পাল্টে দেয়া ইতিহাস আমাদের কত লজ্জিত করে?

ফুটনোটঃ যে ঝরঝরে অভিজাত ইংরেজীতে জিয়াউদ্দীন বইটি লিখেছেন, সেটি খানিকটা হলেও বুঝিয়ে দেয় কেন ইংরেজীকে কিং’স ইংলিশ বলা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় লক্ষ লক্ষ এ প্লাস পাওয়া সেরাদের সেরা রা, যাঁরা ভবিষ্যতে সরকারী চাকুরীগুলোতে আসীন হবেন, তাঁরা ক’জন এই ভাষায় লিখতে পারবেন সে বিষয়ে যথেষ্টই সন্দিহান না হয়ে পারছিনা!
Profile Image for Shadin Pranto.
1,463 reviews553 followers
October 5, 2019
"Those who live by sword, shall perish by sword. " - কোথায় যেন লাইনটা পড়েছিলাম।

১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জিয়ার মৃত্যু এবং সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যার আদ্যোপান্ত নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী বইটি লিখেছেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। তিনি সেইসময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ছিলেন।

জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী শুধু তার স্মৃতিকে পুঁজি করে বইটি ফাঁদেন নি। একইসাথে জিয়ার রাজনৈতিক উত্থান নিয়ে লিখেছেন অনবদ্য এক বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণ। আর বইটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে জিয়ার শাসনামলের রাজনৈতিক ইতিহাস।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এটি জেনারেলের রাষ্ট্রীয় সফর নয়। বরং সদ্যোজাত দল বিএনপির চট্টগ্রামের নেতাদের কোন্দল মেটাতে এসেছিলেন জিয়া। সফরসঙ্গী ছিলেন ডা. বদরুদ্দোজা, তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী জামালউদ্দিন, আমেনা বেগমসহ অন্যানো নেতারা। যে দলীয় ঝঞ্জাট মেটাতে এসেছিলেন জিয়া তা বেশ অভিনব। চট্টগ্রামের পার্টি অফিসের দখল কে নিবে তা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব বেশ চরমে পৌছায়। এক গ্রুপের নেতা তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার যদিও আইনত তার দলীয় বলয়ের ঊর্ধ্বে থাকার কথা। এই জায়গাতেই জেনারেল জিয়ার রাজনীতি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর মোশতাকের শাসনের সময় তার সেনাপ্রধান হওয়া কিংবা ১৯৭৫ সালের ৭ ই নভেম্বর তাকে ক্ষমতার আরো কাছাকাছি নিয়ে গেছে।

মোশতাকের বিদায়ের পর চলে গেলেন খালেদ মোশাররফ, তাহেরকে আস্তে করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে নিজের পথ পরিষ্কার করলেন সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করা এই চৌকস জেনারল।বিচারপতি সায়েমকে নামমাত্র রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাখলেন জিয়া। ক্ষমতার মূল কুশীলব হয়েও সরাসরি ক্ষমতা নিলেন না। নৌ আর বিমানবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে হলেন সহকারী আইন প্রশাসক। কিন্তু ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এহেন ক্ষমতা ক্ষমতা খেলা পছন্দ হল না জেনারেল জিয়ার।

১৯৭৬ সালে সারাদেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ। তখন জিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দেন। এবং নিজের ব্যাপক প্রচারণা চালাতে শুরু করেন।সেনাশাসনের জন্য বাংলাদেশ তখন বিশ্বব্যাপী নিন্দিত, চাপের মুখে। এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দিয়ে চাপমুক্ত হতে চাচ্ছিলেন জিয়া। এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাতে ভোটার উপস্থিতি ব্যাপক হয়, সেজন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন জিয়া। তখন নোয়াখালীর ডিসি ছিলে বইটির লেখক। তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। তিনি দাবী করেন তৎকালীন প্রশাসন অত্যন্ত গোপনে ২৫ হাজার করে টাকা পাঠিয়েছিল। কারণ নির্বাচনে যাতে প্রশাসন খরচ করতে পারে! এক্ষেত্রে জিয়া দারুণ চাতুর্যতার পরিচয় দেন। আমলাতন্ত্র, সেনাতন্ত্র আর 'গণতন্ত্র'- এ তিনের মিশ্রণ ঘটিয়ে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার দীর্ঘপরিকল্পনা হাতে নেন। এবং নিজের ১৯ দফার প্রচারে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন।

সেনানায়ক থেকে জননেতা জিয়া। কতদিন আর উর্দি পরে দেশশাসন করা যায়? নিজেকে রাজনৈতিক নেতারূপে হাজির করতে নানা নাহক উপায়ের আশ্রয় নেন জেনারেল জিয়া। তিনি স্রেফ ক্ষমতার জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রচার শু���ু করেন মুসলিম বাঙলাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের। যারা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ধিকৃত হয়েছিল পাকিস্তানপ্রীতির জন্য, যাদের রাজনীতি ছিল মুসলিম লীগকে ঘিরে তাদের সরাসরি পুনর্বাসন করেন তিনি। তাদের নিজের দলে ভিড়িয়ে দল ভারি করেন। শাহ আজিজের মতো লোককে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব দেন। আর হ্যা, তাই বলে ভাববেন না জিয়া তার ক্ষমতার কেন্দ্র সেনাবাহিনীকে ভুলে গেছেন। সবসময় তিনি সেনাবাহিনীকে সন্তুষ্ট রাখতেন। এমন বেশকিছু ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। যেমনঃ চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ উপলক্ষে বেসামরিক মন্ত্রীবহর শাহ আজিজ��র নেতৃত্বে সেখানে হাজির হয়। কিন্তু সামরিকবাহিনী ন্যূনতম থাকার জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। সেনাপ্রধান এরশাদ চূড়ান্তরকম অপমান করেন ডিনারে মন্ত্রীবহরকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে। কিন্তু এতে মোটেও ভ্রুক্ষেপ করেন নি জিয়া। তিনি সরাসরি সেনাবাহিনীকে রাগাতে চান নি। অথচ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ রাখতে বধ্যপরিকর ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার এবং ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে দ্বিধা জিয়ার ছিল না। চট্টগ্রাম সফরে এসে দুই অর্ধপরিচিত পীরের সাক্ষাৎ পেতে জিয়া যা করেছিলেন তা গল্পকেও হার মানায়। এদিকে একদিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সাথে সহঅবস্থান, অপরদিকে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের মতো মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের দূরে সরিয়ে দেয়া নিয়ে একটি বিভেদ, ক্ষোভ জিয়ার প্রতি ছিল।
৩০ মে চট্টগ্রামে নেমেই জিয়া খোঁজ করলেন বিগ্রেডিয়ার আজিজের কাছে মঞ্জুর কেন আসেন নি? উল্লেখ্য, জিয়া যতবার চট্টগ্রামে আসতেন জিওসি হিসেবে মঞ্জুর উপস্থিত থাকতেন।উত্তরে বিগ্রেডিয়ার আজিজ বলেন,

" Brig Aziz replied that Manzoor had injured himself while playing tennis,and was unable to come. Zia smiled and said in a bantering tone, " I think he is playing too much."

কিন্তু মঞ্জুর কখনোই জিয়ার বেসামরিক মন্ত্রীবহরকে গুরুত্ব দিতেন না। এমনকি কখনোই জিয়ার সফরসঙ্গী মন্ত্রীদের সাথে হাত পর্যন্ত মেলাতেন না। এতেই বোঝা যায়, মঞ্জুর কতটা বিরক্ত ছিলেন জিয়ার এই রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নিয়ে।

যাইহোক, জিয়ার খুব কাছের বন্ধু ছিলেন মঞ্জুর। কিন্তু শেষের দিকে সম্পর্কটা ঠিক যাচ্ছিল না। তার সাক্ষ্য এই মঞ্জুরের অনুপস্থিতি আর জিয়ার ব্যঙ্গাত্মক উক্তি সেদিকেই ইঙ্গিত করে।
৩০ মে,রাত ৪ টা। হঠাৎ ডিসি জিয়াউদ্দিনের ফোন বেজে উঠলো। তিনি জানতে পারলেন সার্কিস হাউসে সশস্ত্র আক্রমণ করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত!

জিয়ার সফরসঙ্গী নেতারা খাটের নীচে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন এবং জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী লে. কর্নেল মাহফুজ তার পাশের রুমে থাকলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছেন এবং তিনি ঘটনা ঢাকায় থাকা সেনাপ্রধান এরশাদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সকালেই জানিয়েছেন।সকালে বি. চৌধুরীসহ অন্যানো নেতারা সার্কিট হাউস ছেড়ে চলে যান এবং জনাব মাহফুজও কোথাও চলে যান। অনেকটা সকলের অগোচরে।

ডিসি জিয়াউদ্দিন যখন সার্কিস হাউসে যান তখন দেখতে পান পুরো সার্কিস হাউস যেন কামানের গোলার মুখে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।গেটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশসদস্যরা নিহত হয়েছেন, জিয়ার রুমের বাইরে লাশ পড়ে আছে দুই প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট সদস্যের।মারা গেছেন জিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহসান। আর হ্যা, এও জানতে পারেন সেনাবাহিনীই রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করেছে রাতের আঁধারে।জিয়ার মৃতদেহের বর্ণনা দিয়ে ডিসি জিয়াউদ্দিন লিখেছেন,

" His whole body was riddled with bullets, as through a score of guns had hit him.The only recognisable features was half of his trademark salt and pepper moustache hanging on the undamaged side of his face."

এই বর্ণনা দিয়েই পরের অধ্যায়ে লেখক আলোচনা করেন। বলা ভালো বিশ্লেষণ শুরু করেন এই জেনারেলের উত্থান নিয়ে। মনে করিয়ে দেন তার সাথে জিয়ার প্রথম পরিচয়ের কথা। যখন ডিসি জিয়াউদ্দিন কামারুজ্জামানের পিএস ছিলেন। তখন দেখেছেন কামারুজ্জামান জিয়াউর রহমানকে কতটা পছন্দ করতেন। আবার এও স্মরণ করেন '৭৫ এর মার্চ-এপ্রিল থেকে কামারুজ্জামানের কাছে আসা অনেকটা বন্ধ করে দেন জিয়া। এই অধ্যায় শেষ করেন খুব সুন্দর একটি লাইন দিয়ে,

" Zia focused on his mission to getting the Bangladeshis to know him."

রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর হাতে হত। ঢাকার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ বন্ধ। চট্টগ্রামের বেসামরিক কর্তৃপক্ষ, জনতা এক অস্থির মুহূর্ত পার করছে। কী হয়, কী হয়। হঠাৎ চট্টগ্রাম রেডিও থেকে ঘোষণা শুনতে পেলেন রাষ্ট্রপতি জিয়া নিহত, 'বিপ্লবী কাউন্সিল' গঠিত হয়েছে। দুর্নীতিবাজ সেনাপ্রধান এরশাদ ও বেগ্রেডিয়ার সালামকে বরখাস্ত করা হল। এই ঘোষণা শুনে বোঝা গেল চট্টগ্রামকেন্দ্রিক একটি অভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু যিনি সেনাবাহিনীতে 'বুদ্ধিজীবী'(Pundit) নামে খ্যাত সেই জেনারেল মঞ্জুর কেন এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলেন? আবার ঢাকা রেডিও থেকে পাল্টা ঘোষণা ভাসছে, বিদ্রোহীরা যেন দ্রুত আত্মসমর্পণ করেন। নতুবা তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে। এই পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় অনেকেই আতঙ্কে, গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন!

বেসামরিক প্রশাসন টলমল।ঢাকার সাথে যোগাযোগ নেই।এই আতঙ্কের সময়ে কোনো নির্দেশনা ছাড়াই চলছে বেসামরিক প্রশাসন। কেউ ভেবে পাচ্ছিল কী করবে। এমন পরিস্থিতিতে জানা গেলে, সেনাবাহিনীর একটি ভ্যান এসে জিয়ার মৃতদেহ নিয়ে গেছে।

মঞ্জুরের সাথে দেখা করতে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে গেলেন ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার। লেখক আবিষ্কার করলেন এক অন্য মঞ্জুরকে।এই মঞ্জুরের সাথে হাস্যজ্জ্বল, বুদ্ধিদীপ্ত মঞ্জুরের কোনো মিল পেলেন না লেখক।বিপর্যস্ত মঞ্জুর জানালেন,তিনি সদ্যগঠিত 'বিপ্লবী কাউন্সিল'-এর সদস্য কিংবা নেতা কোনোটাই নন। তিনি এই 'বিপ্লবী কাউন্সিল'-এর মুখপাত্র মাত্র।মঞ্জুর আরো জানালেন,বিপ্লবী কাউন্সিলের দাবী ঢাকা কর্তৃপক্ষ না মানা পর্যন্ত চট্টগ্রামের সাথে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ থাকবে(পুরো সময় সরকারকে এই নামেই ডাকেন বিদ্রোহীরা)।কিন্তু সেনাবাহিনী চট্টগ্রামে মাঠে নামেনি। ৩১ তারিখেও মঞ্জুর সংবাদসম্মেলন একই ধরনের কথাবার্তা বলতে থাকেন।কন্ঠে দৃঢ়তা নেই,দ্বিধা ছিল মমঞ্জুরের।শুধু শুভপুর ব্রিজে চট্টগ্রামের সেনারা মুখোমুখি অস্ত্র ধরে থাকে ঢাকা থেকে আসা সেনাদের দিকে।

১ জুন সকাল দশটা। গণেশ উল্টে গেল।জানা গেল, চট্টগ্রামের সেনারা আত্মসমর্পণ করেছেন। পালিয়ে গেছেন মঞ্জুর। স্ত্রী আর দুই সন্তানসহ মঞ্জুর আশ্রয় নিয়েছেন ফটিকছড়িতে। ফটিকছড়ি থানার ইন্সপেক্টর কুদ্দুস মারফতে লেখক আমাদের জানান, ফটিকছড়ির একগ্রামের কুঁড়েঘরে বসে ভাত খাচ্ছিলেন মঞ্জুর আর তার পরিবার। সেখান পুলিশ উপস্থিত হলে মঞ্জুর তাদের আক্রমণ করেন নি। পালাবার চেষ্টাও করেন নি। এদিকে মঞ্জুরকে সেনা হেফাজতে নিতে জনৈক ক্যাপ্টেন গাড়িসহ হাজির হন।ডিসি জিয়াউদ্দিন চাইছিলেন মঞ্জুরকে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে পাঠাতে। তিনি বারবার নির্দেশনা চাইলেও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাত্তার, এড়িয়ে যান একথা বলে যে এরশাদের সাথে কথা বলে তিনি জানাবেন। অবশেষে সাত্তার জানান মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর হাতেই তুলে দেয়া হোক, এটাই সেনাপ্রধান এরশাদের পরামর্শ।

মঞ্জুর সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠতে চাচ্ছিলেন না। তিনি বারবার বলছিলেন, তিনি আর সেনাবাহিনীর কেউ নন।বেসামরিক লোকমাত্র। তবুও মঞ্জুরকে একপ্রকার মারতে মারতে নিয়ে যান সেই ক্যাপ্টেন। সাথে নিয়ে যান তার স্ত্রী, সন্তানকে।

বাকী ঘটনা সবাই জানেন, সরকারি শ্বেতপত্র মতে মঞ্জুরকে ক্যান্টনমেন্টে আনার সময় কতিপয় 'উচ্ছৃঙ্খল' সেনাসদস্যের গুলিতে মঞ্জুর নিহত হন। আর বিগ্রেডিয়ার আজিজ ডিসিকে জানিয়েছিলেন,চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে নিহত হয়েছেন মঞ্জুর। আর সেনাবাহিনীর এক ডাক্তারের সূত্রমতে, মঞ্জুরকে ঢাকা থেকে আগত এক বিগ্রেডিয়ার তার সেলে গুলি করে মারেন।
কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, মঞ্জুরের মতো চৌকশ মানুষ কেন চট্টগ্রাম থেকে বিদ্রোহ করতে যাবেন? যখন তিনি জানেন তাতে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত।তিনি শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারতেন। কেন আত্মসমর্পণ করলেন? বিচারের মুখোমুখি দাঁড় না করিয়ে তাকে কেন হত্যা করা হলো? কার/কাদের স্বার্থে?

প্রশ্ন জাগতে পারে লেখক জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী যেভাবে জেনারেল জিয়ার চরিত্রবর্ণন করেছেন তা কতটা গ্রহণযোগ্য? উত্তর সোজা।তিনি জিয়াকে যেভাবে চিত্রিত করেছেন তা পুরোটাই ফ্যাক্টভিত্তিক,যুক্তিনির্ভর। তাই এই বইকে মোকাবিলা করতে হলে অবশ্যই যুক্তি দিয়ে,তথ্য হাতে নিয়ে দাঁড়াতে হবে। ভক্তি এখানে অচল।
Profile Image for Mosharaf Hossain.
128 reviews99 followers
January 7, 2018
সাদা চোখে তাকালে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের উত্থান অনেকটা বিস্ময়ের মনে হলেও, কালো সানগ্লাস চোখে দিয়ে তাকালে জিয়ার 'প্রেসিডেন্ট জিয়া' হওয়াটা অতটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু পদে পদে অবশ্যই রোমাঞ্চিত হতেই হবে। কিন্তু দিনশেষে যিশু খৃষ্টের এই উক্তিটি, "Those who live by sword, shall perish by sword" জিয়ার জন্যেও সত্যি হয়েছিল।

১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আততায়ীর হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যু এরপর তার সূত্র ধরে অবরুদ্ধ চট্টগ্রামে মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত নিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন এর এই বই। যিনি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন জেনারেল জিয়ার সেনাবাহিনীর জুব্বা ছেড়ে একজন আম রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার নিরন্তন প্রচেষ্টা, এরপর আচমকাই খসে পড়া।

জিয়াকে যে রাতে হত্যা করা হয় সেদিন প্রেসিডেন্ট জিয়ার আচমকা চট্টগ্রাম সফর। মূলত দলীয় কোন্দলের একটা বিহিত করা জন্যই তার এই যাত্রা ছিল। জুম্মার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দলের দুগ্রুপ কি নিয়ে একের পর এক বৈঠক করে জিয়া। এরপর মধ্যরাতে সুসজ্জিত সেনাদল আক্রমন করে সার্কিট হাউজে। লেখক জানায়, পুরো সার্কিট হাউজই কামান দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ এবং পিজিআর এর সবাই নিহত হয়ে পড়েছিল। জিয়াকে লাশ দেখা বুঝা যাচ্ছিল খুব কাছ থেকেই ব্রাশফায়ার করা হয়েছিল।

জিয়ার সফরসঙ্গীরা খাটের নীচে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পায়। ব্যক্তিগত সহকারী লে. কর্নেল মাহফুজ অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায় এবং সেই মূলত ঢাকায় খবর পাঠায়। লেখকের ভাষ্যমতে, কর্নেল মাহফুজের বর্ণনার সাথে তার রুমের বুলেটের মিল পাওয়া যায় না। এটাও উল্লেখ্য, এরপর এরশাদ সরকারের সময় কর্নেল মাহফুজকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

আর এসব কিছুর জন্য আঙ্গুল যায় মেজর মঞ্জুর দিকে। যদিও মঞ্জু কোনোদিন স্বীকার করেননি তিনি আদৌ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিনা। কিন্তু লেখক ঘটনার দিন বেশ কয়েকবার মঞ্জুর সাথে সাক্ষাৎ করে। এটা বুঝা যাচ্ছিল মঞ্জু একা না। দিনশেষে পাঠক হিসেবে মঞ্জুর শেষ পরিণতির জন্য আমার বেশ আফসোস হচ্ছিল।

মঞ্জু শেষেরদিকে জিয়াকে রীতিমত অবহেলা করা শুরু করেছিল। ঘটনার দিন এয়ারপোর্ট এ নেমেই জিয়া ব্রিগেডিয়ার আজিজেরর কাছে মঞ্জুর খোঁজ করে। আজিজের জবাব ছিল এরকম " Brig Aziz replied that Manzoor had injured himself while playing tennis,and was unable to come. Zia smiled and said in a bantering tone, " I think he is playing too much."

বইটির সবথেকে ভালো দিক ছিল, লেখকের খোলা মনে সব স্বীকার করে নেওয়া। তিনি স্বীকার করেছেন কীভাবে জিয়ার প্রশাসনের নির্দেশে ভোটের আগে টাকা বিলিয়েছেন, স্বীকার করেছেন একজন আমলা হিসেবে কতবার তিনি হাত নোংরা করেছিলেন।

পুরো বইটি অত্যন্ত যুক্তিনির্ভর একটা বই। আর জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্ন, কে কাকে কেন কীভাবে? জিয়াকে কি পরিকল্পনামাপিক সেদিন চট্টগ্রাম নেওয়া হয়? মঞ্জু যদি নেতা না হয় বিপ্লবী মঞ্চের, তাহলে কে ছিল এর নেতা? কেন মঞ্জু সহজ সুযোগ পেয়েও দেশত্যাগ করেননি? অথবা কার আশ্বাসের ভিত্তিতে সে আত্মসমর্পণ করল? বিচারের মুখোমুখি দাঁড় না করিয়ে তাকে কেন হত্যা করা হলো? কার/কাদের স্বার্থে? আর সবথেকে বড়া কথা, জিয়ার উচ্চভিলাষই কি জিয়ার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল?
Profile Image for Abid Arnab.
11 reviews
April 15, 2021
Generally, a book of this size (93 pages) takes me around 2 or 3 hours to finish, whereas this one took around two days! It's not because the typical dillydally that befalls, but because this is a truly remarkable and mesmerizing piece of voucher regarding the rise, fall and the aftermath of the first military regime in the independent Bangladesh. In this current socio-political scenario when an indistinctive analysis of the event surrounding the first military regime is quite arduous to find, this particular memoir of an unfortunate witness happens to shed light from a very neutral perspective. The author was the Deputy Commissioner of Chittagong during the assassination of President Ziaur Rahman. As a civil servant of the government and a close acquaintance of both President Zia and General Manzoor, he provides a narrative of the dreadful incidents of those few days of 1981 as the events unfolded. Zia's rise to power, the ordeal he was willing to go through to legitimize his reign, the factors that brought about his fall - the author discussed everything from his personal experience and interactions with the President. The author also provides the aftermath of Zia's assassination, the actions of General Manzoor as he witnessed, and the eventual killing of General Manzoor and other Army officers in a hasty court martial. The author ends the book questioning the whole trial and assassination of General Manzoor, along with a hope of a fact finding commission in order to unearth the real truth and secrets behind the whole incident.
The author also deserves much appreciation for his dreft stroke of pen in writing such a memoir. The book doesn't seem boring at any point, rather keeps the reader engaged at all time to the gruesome events that it portrays.
Profile Image for Zahidul  Tamim.
113 reviews3 followers
August 14, 2024
This is an anecdote purely from the perspective of the writer, the then deputy commissioner of Chittagong.

The book covers a brief description of Ziaur Rahman's rise into power, and his rule. Then the next 48 hours of Zia's assassination and the court martial.

The book is quite subjective as most of the incidents mentioned in the book are the 1st person encounter of the writer.

Midway through the book I felt the writer is quite opinionated and has an inclination toward the Awami regime ruling thr country from 1971-1975.

The book is quite an enjoyable read.
Displaying 1 - 5 of 5 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.