Malloban is set in North Calcutta in the winter of 1929. The eponymous protagonist, a lower-middle-class office worker, lives in College Street-a locality known for its bookstores, publishing houses, and universities-with his wife Utpala and their daughter Monu. The novel unfolds through a series of everyday scenes of dysfunction and discontent: bickering about bathrooms and budgeting, family trips to the zoo and the movies, a visit from Utpala's brother's family which displaces Malloban to a boarding house, and the appearance of a frequent late-night visitor to Utpala's upstairs bedroom. Meanwhile, the daughter Monu bears the brunt of her parents' "unlove." Arguably the most beloved poet in modern Bangla after Tagore, Jibanananda wrote a significant number of novels and short stories discovered and published after his death. Malloban is his most popular novel.
Jibanananda Das (bn: জীবনানন্দ দাশ) is probably the most popular Bengali poet. He is considered one of the precursors who introduced modernist poetry to Bengali Literature, at a period when it was influenced by Rabindranath Tagore's Romantic poetry. During the later half of the twentieth century, Jibanananda Das emerged as the most popular poet of modern Bengali literature. Popularity apart, Jibanananda Das had distinguished himself as an extraordinary poet presenting a paradigm hitherto unknown. It is a fact that his unfamiliar poetic diction, choice of words and thematic preferences took time to reach the heart of the readers. Towards the later half of the twentieth century the poetry of Jibanananda has become the defining essence of modernism in twentieth century Bengali poetry.
অসহনীয় যন্ত্রণার সীমারেখায় অসীম ধৈর্য্যের যে পাহাড় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার নাম মাল্যবান। অথচ রোজকার ব্যর্থতা, অতৃপ্তি, রুক্ষ-শীতল দাম্পত্য,না পাওয়ার বেদনাভারে ক্ষয়ে যায় সেই পাথুরে বুক। মাল্যবানের সৃষ্টির ফল্গুধারাও শুকিয়ে যেতে থাকে তার ভাবনার মতো। রামায়ণে বর্ণিত সীমাহীন ধৈর্য্যের প্রতীক মাল্যবান পর্বত আসলে সংসার সীমান্তে খোদ জীবনানন্দ। চরম উদাসীনতার মাঝে ধূসর রুক্ষ দাম্পত্যের পীড়া,আক্ষেপ মাল্যবানের প্রতিটা অনুচ্ছেদের বোবা চিৎকার। এইসব প্রসঙ্গেরই ঘুরেফিরে পুনরাবৃত্তি ঘটে জীবনানন্দের গল্প-উপন্যাসে। সেগুলো যে প্রকৃতপক্ষে কবির অসুখী দাম্পত্য জীবনেরই প্রতিফলন, তা নিয়ে তর্কের সুযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে জীবনানন্দ দাশ নিজের জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দৃশ্যগুলোকেও নিজের শরীর থেকে মাংস খুবলে নেয়ার মতো করে রক্তমাংস দিয়েছেন তাঁর রচিত চরিত্রগুলোকে। আর তাই মাল্যবানকেও বলা যেতে জীবনানন্দের একটা ‘ডাইভারসিফাইড অটোবায়োগ্রাফি’। যারা তার দিনলিপি পড়েছেন, তারা আরো বেশি করে মানেন এ কথা। জীবনানন্দের মৃত্যুর পর তাঁর প্রকাশিত লেখাগুলো যখন প্রকাশিত হচ্ছিল, মাল্যবান প্রকাশ করতে কবিপত্নী লাবণ্য দাশের ছিল ঘোরতর আপত্তি। জীবনানন্দ গবেষক ভূমেন্দ্র গুহর লেখা থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।
উপন্যাসটি মাল্যবান আর উৎপলার যন্ত্রণাজর্জর সহাবস্থানের গল্প বলে। মাত্র কিছুকাল বিবাহিত জীবনের স্বাদ পেয়ে এমন এক স্তরে তারা এসে পৌঁছেছে যেখানে একে অন্যের কাছে ধোঁয়াটে। মাল্যবান ভিন্ন ঘরে শুয়েও রাত্রিরে অস্থির হয়ে ঢুকে পড়ে স্ত্রীর ঘরে, বিবাহের তারিখে উৎপলার শরীরের স্বাদ পাওয়ার তীব্র নেশা তাকে পেয়ে বসে, অন্যদিকে উৎপলার নির্জীব নিরাসক্তি এক মেরুপ্রমাণ বিবিক্তির দিগন্তে নিক্ষেপ করে মাল্যবানকে, যেখানে দাঁড়িয়ে মাল্যবান বুঝতে চায় এক অদৃশ্য মহাশিল্পীর অনন্ত রহস্যময় সৃষ্টিতত্ত্ব, বিড়াল-বিড়ালী,ইঁদুর কি পাখির ডিম হয়ে ওঠে যন্ত্রণার তীক্ষ্ণ অনুসন্ধেয় চিত্রকল্প। কিন্তু না, সবকিছুর উত্তর পায় না সে – চুপিসারে আমাদের মনে এসে যায় জীবনানন্দের অবিস্মরণীয় উচ্চারণ— ❝জানি— তবু জানি নারীর হৃদয়— প্রেম— শিশু— গৃহ– নয় সবখানি; অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়— আরো-এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে; আমাদের ক্লান্ত করে ক্লান্ত— ❞
নিজের অজান্তে, তিলতিল করে, প্রথমে মুনিয়া, তারপর শোভনাও শেষে লাবণ্যর দ্বারা নিষ্পেষিত, ব্যবহৃত ও প্রত্যাখ্যাত হতে হতে উৎপলা চরিত্রটি গড়ে তুলেছেন। বিস্মিত হয়ে একটি গল্পে আমরা দেখি,একজন মহিলাকে কীভাবে সামান্য লুচি-মাংসের আস্বাদ, ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া আসন্ন যৌনতার আস্বাদকে ভুলিয়ে দেয়। উৎপলা এবং মাল্যবান মুহূর্তের কোনো নরম অনুভূতির দ্বারা আক্রান্ত নয়, সব ঘটনার ঊর্ধ্বে যেন তারা। আর এই উপন্যাসটিতে ঘটনা যাই ঘটছে তা খুব ক্যাজুয়ালি ঘটে, কোন গতি নেই তার যেন। অথচ কোনো কোনো মুহুর্তের স্পন্দনকেও যেন নিঃসাড় করে রেখেছেন লেখক।
মাল্যবান পড়তে গিয়ে আমার বারবার মনে হয়েছে প্রিয় লেখক রবিশংকর বল জীবনানন্দের গদ্যভাষা থেকে অনুপ্রাণিত। আসলে আমরা তো নিজেদের স্বপ্নকেও বিশ্লেষণ করি না বা করতে শিখিনি। নিজেদের স্বপ্নও তো আমাদের কাছে একপ্রকার দুর্বোধ্য অনুবাদ অনুপযোগী সান্ধ্যভাষার ছেঁড়া ছেঁড়া প্রলাপের মতো। জীবনানন্দ দাশের অনেক গল্প-উপন্যসের পটভূমিকে পুরোপুরি বাস্তব বলা যায় না,বরং স্বাপ্নিক ভাবালুতায় আক্রান্ত ফাঁদ মনে হয়। রবিশংকর বলের ছায়াপুতুলের খেলা,স্বপ্নযুগ পড়লেও কাছাকাছি অনুভূতিই হয়। যদিও এর মাঝেও শোনা যায় রবিশংকর বলের কাহিনী কাঠামোর একান্ত নিজস্ব স্বর, আনোখা কাঠামো। ‘হলোই বা স্বপ্ন, কিন্তু স্বপ্নের ভেতরেও মরে তো গিয়েছিল সে ; মরে গিয়ে মানুষ আবার বসে বসে জীবিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে কী করে! বাস্তবিক স্বপ্ন এমন হিজিবিজি---মানুষের বুদ্ধি, বিচার, চেতনার দু-কান কেটে ছেড়ে দেয়।’
মাল্যবানের অশ্রুত অন্ধকার বাক্য পড়ে পড়ে বারবার ধাক্কা খেয়েছি। মাল্যবান বলছে,❝স্বপ্নের কী জানেন ফ্রয়েড? ভিয়েনা শহরে বসে গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে স্নায়ুরোগীদের স্বপ্ন নিয়ে কোনো মানবজীবনের তত্ত্ব বানানো যায় না। চড়কের মাঠে কোনোদিন তো আর যাবেন না ফ্রয়েড সাহেব,স্বপ্নের আর কী বুঝবেন...❞ কী ভয়ঙ্কর রকমের আধুনিক একজন চিন্তক জীবনানন্দ দাশ ভেবে অবাক হই। এও মনে হয়েছে,পৃথিবীর যে কোনো অংশের পাঠকের চেয়ে বাঙালি পাঠক কত বেশি নিরুত্তাপ, আত্মবিশ্বাসহীন। নয়তো মাল্যবান নিয়ে চর্চা হিমালয়ী গৃধিনীর মতো বিলুপ্তপ্রায় কেন?
কোনোদিন কি এই শীত ফুরোবে,রাত, আমাদের ঘুম? ফুরোবে না, ফুরোবে না।
"মাল্যবানের অবকল্পনা আছে,অবপ্রতিভাও।চেতনার একটি সূর্যের বদলে অবচেতনার অন্তহীন নক্ষত্র পেয়েছে সে।"
আগাগোড়া বিষণ্ণতায় মোড়া,দাম্পত্য জীবনের করুণ,কঠোর উপাখ্যান "মাল্যবান।" বাংলা ভাষায় দাম্পত্য জীবন নিয়ে এতো নির্মোহ,এতো নির্দয় লেখা হয়তো আর একটিও নেই।
জীবনানন্দ দাশ তো তাঁর জীবনের রক্ত-মাংস, শিরা-উপশিরা, হৃদয়-মস্তিস্ক, ঘাম-পানি(চোখ), সবকিছু দিয়ে নির্দয়ভাবে জীবনের বাস্তব (সময়ের) গল্প লিখেছেন। জীবনের আগাগোড়া এমনভাবে বোধহয় কেউ লিখেননি। এজন্যই জীবনানন্দের গদ্য অসহ্যকর। এজন্যই জীবনানন্দের গদ্য থেকে আমাদের অনেক কিছু নেয়ার আছে।
'মাল্যবান' উপন্যাসে আমরা একজন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল এবং সামাজিকভাবে ব্যর্থ পুরুষের গল্প শুনবো। স্ত্রীর কাছে যে ভীষণভাবে অবহেলিত। তবুও মাল্যবান তাঁর স্ত্রীকে ভালোবাসতে চায়। স্ত্রীর গুণের প্রশংসা করার পাশাপশি দোষ নিয়েও নিন্দা করতে বাধে না তাঁর। দয়া আর ভালোবাসার মধ্যে কোনটা মহৎ? এই প্রশ্নে সে দ্বিধান্বিত। আবার ফ্রয়েডকে নিয়ে যখন মাল্যবান ব্যঙ্গ করে তখন তা মোটেও অহেতুক মনে হয় না। আর মাল্যবানের অদ্ভুত স্বপ্নগুলোতেও যেন নির্মম সত্য ঘাপটি মেরে ঘুমিয়ে থাকে।
বাঙালির দাম্পত্য জীবন ভীষণ অসহ্যকর। কোনো পরিবারে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে স্বামী অবহেলিত; কোনো পরিবারে অবাধ স্বাধীনতার জন্য স্ত্রী অবহেলিত। আর আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের পরিবারগুলো অত্যন্ত সৃজনশীল উপায়ে সবকিছু সহ্য করে ডিভোর্স ছাড়া মৃত্যুর আগ অবধি সুখে-দুঃখে একসঙ্গে থাকে। যদিও ইদানিং ডিভোর্সের পরিমাণ বাড়ছে এবং তা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তেই থাকবে। আর বাবা-মায়ের অসুস্থ দাম্পত্য সম্পর্ক মনু'র মতো অবো�� সন্তানদের জীবনও ধ্বংস করে দেয়।
মাল্যবান, উৎপলা আর মনু'র মতো পরিবার যেন বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য অর্থাৎ পরিবারের গল্প বলে। তবে উত্তরণের উপায় আছে তো; অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা যার জন্য প্রকৃত শিক্ষা জরুরি। তবে শিক্ষার সংজ্ঞাতে আপনারা সবাই ভুল করেন। মর্মাহত!
বৈবাহিক জীবন আনন্দময় এবং উপভোগ্য তখন ই হয় যখন দুই পক্ষই একে অপরের সাথে মানিয়ে চলতে পারে,পরস্পরের যত্তসব মার্কা আচরণ হজম করতে পারে,অভিযোগ থাকলেও তা যে সবসময় প্রকাশ করতে নাই সেটা কায়মনোবাক্যে স্বীকার করে যারা, তাদের ই মনে হয় বিবাহ করে সুখী হবার যোগ্যতা আছে। জীবনানন্দ বাবুর মাল্যবান উপন্যাস ''স্বামীর উপর করা স্ত্রীর মানসিক অত্যাচারের'' একটা ঐতিহাসিক আখ্যান । উৎপলা অর্থাৎ মাল্যবানের স্ত্রী মাল্যবান কে মোটেও পছন্দ করে না। উঠতে-বসতে দৌড়ের উপর রাখে। স্বামীরে অপমান করার উপর কোন পুরস্কার থাকলে সেটা উৎপলাকে চোখ বন্ধ করে দিয়ে দেওয়া যায়। প্রচন্ড মানসিক পীড়নের স্বত্বেও মাল্যবানের সংসার করে যাওয়ার ধৈর্যের অগ্নিপরীক্ষায় পাশ করার চেষ্টা নিয়েই উপন্যাসের গল্প । ঐ সময়ে স্বামীর প্রতি এমন আচরণ আসলেই অবিশ্বাস্য। তখন তো শুনেছি প্রায় বছর কুড়ির তফাৎ থাকলেও বৃদ্ধ মানুষের সাথে কিশোরী চোখমুখ বুজে সংসার করেছে। তাহলে মাল্যবানের সাথে এই অবিচার কেন! কারণ তো অবশ্যই আছে। দুই পক্ষের ই আছে। মাল্যবান উপন্যাসটি সম্ভবত জীবনানন্দ দাশের নিজের জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে প্রভাবিত হয়ে লেখা। ''একজন কমলালেবু'' তে পড়েছিলাম জীবনানন্দ বাবুর স্ত্রী লাবণ্য দেবী তাঁর উপর ঠিক সন্তুষ্ট ছিলেন না। আহা! যুগে যুগে স্ত্রীর সন্তুষ্টি অর্জন করতে গিয়ে যে কত মানুষকে......দেখো দেখি কান্ড! আমার স্ত্রী নাই এমনকি আমার ও সমালোচনা করতে বাধোবাধো ঠেকছে। যাই হোক মাল্যবানের কথায় আসি। এই লোকটার উপর আমার করুণাও হয় আবার গর্ব ও হয়। এতো অপমান সহ্য করেও নির্লিপ্ত থাকার মতো অসম্ভব কাজটা মাল্যবান যেন খুব সহজেই করে....তার এই চোখমুখ বুজে স্ত্রীর মুখঝামটা শুনা দেখে তাকে স্ত্রৈণ বলবেন নাকি মেরুদণ্ডহীন বলবেন নাকি শান্তিপ্রিয় মানুষ বলবেন সেটা আপনার বিবেচনা (বললে বিশ্বাস করবেন না খাবার ঘরে একদিন উৎপলা খেতে খেতে বলে ফেলে " এত বড় পৃথিবীতে একজন মেয়েলোক ও তোমার সঙ্গে খাতির করা দরকার মনে করলো না, না ভালোবাসা, না স্নেহশ্রদ্ধা, না মমতা- সহানুভূতি.. কোনকিছু কেরানী বাবুটিকে দেবার মতো নেই কারু। ওহ আমার একাই বুঝি দিতে হবে সব....") কি সাংঘাতিক মহিলা রে বাবা! তবে উৎপলারে আমার ভালো লেগেছে। তার মধ্যে বিশেষ কিছু একটা আছে... সংসার করতে খুব একটা আগ্রহী নই তবে এরকম কাউকে পেলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হইলেও হইতে পারে।
জানিনা কেন এত ভালো লাগলো - প্রিয় মানুষ জীবনানন্দের লিখা বলে,নাকি উপন্যাসের মূল চরিত্র মাল্যবান এর জীবনের সবকিছু নিয়ে উদাসীন স্বভাবের সাথে আমার নিজেরও কোথাও একটু প্রচ্ছন্ন মিল আছে বলে!
সাধারণত আত্মজীবনী বলতে আমরা লেখকের স্বরচিত জীবনচরিত বা আত্মকথাকে বুঝি। অন্যদিকে, আত্মজৈবনিক উপন্যাসে লেখক তাঁর জীবনের ঘটনাগুলোকে সরাসরি প্রকাশ না করে রূপকের আশ্রয় নেন। বাস্তবতা এবং কল্পনাশক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে লেখক আত্মজৈবনিক উপন্যাস রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যে আত্মজৈবনিক উপন্যাসের বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'শ্রীকান্ত'। এছাড়াও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কবি', মীর মশাররফ হোসেনের 'উদাসীন পথিকের মনের কথা', আল মাহমুদের 'যেভাবে বেড়ে উঠি', আহমদ ছফার 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' প্রভৃতি উপন্যাসের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এরকম আরেকটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস হল কবি জীবনানন্দ দাশের 'মাল্যবান'।
কবি জীবনানন্দ দাশের প্রথম উপন্যাস 'মাল্যবান'। উপন্যাসটি কবির মৃত্যুর পর ১৯৭০ সালে গ্রন্থিত হয়। উপন্যাসটি মাল্যবান নামের একজন ছাপোষা কেরানির সংসার জীবনকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে। দীর্ঘ পনের বছর চাকরি করলেও সংসারের খরচ যোগাতে মাল্যবান হিমশিম খায়। কোলকাতার কলেজ স্ট্রিটের দ্বিতল একটি বাড়িতে স্ত্রী উৎপলা ও মেয়ে মনুকে নিয়ে তার সংসার। সংসারের খরচ মেটাতে গাধার মত পরিশ্রম করে গেলেও আদতে মাল্যবান 'চিনির বলদ' ছাড়া কিছু না। উৎপলা সব সময় তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে যেত। সে ও মনু থাকতো দোতলার আলো-বাতাসে ভরপুর বড় একটি ঘরে। আর মাল্যবান থাকতো নীচতলার ছোট্ট স্যাঁতসেঁতে একটি খুপরি ঘরে। অর্থাৎ উৎপলা জীবনের একটি বড় সময় জুড়ে মাল্যবানকে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করে গেছে। ফলে যা হবার তাই হয়েছিল। মাল্যবান ও উৎপলার সংসার জীবন সুখের হয়নি।
উপন্যাসে আমরা দেখি, মাল্যবান সংসারের খরচের লাগাম টানতে শশব্যস্ত থাকলেও উৎপলা সে বিষয়ে উদাসীন ছিল। স্বামীকে সংসারের বিভিন্ন ব্যাপারে চাপে রেখে উৎপলা এক ধরনের বিকৃত আনন্দ লাভ করতো। উপন্যাসের এক পর্যায়ে উৎপলার মেজদা-মেজবৌঠান তাদের বাসায় বেড়াতে আসলে উৎপলা মাল্যবানের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে। পুরো উপন্যাস জুড়েই এরকম অবহেলা ও দুর্ব্যবহারের প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে।
যাই হোক, এ করুণ কাহিনী লিখতে আর ভাল লাগছে না। এবার 'মাল্যবান' উপন্যাসের চরিত্রগুলো বিশ্লেষণ করা যাক। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র মাল্যবান। মূলত 'মাল্যবান' হল রামায়ণে বর্ণিত একটি পাহাড় যা ধৈর্যশীলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। পুরো উপন্যাসে আমরা এই ধৈর্যশীল মাল্যবানকেই পেয়েছি। স্ত্রীর শত দুর্ব্যবহারেও সে কোন প্রতিবাদ করে না। তাঁর অসুখী দাম্পত্য জীবনের যে চিত্র উপন্যাসের প্রতি পৃষ্ঠায় চিত্রিত হয়েছে তা আমাদের কুড়ে কুড়ে খায়। আবার কখনো কখনো রাগও জন্মায়। মাল্যবান কেন উৎপলার প্রতি আরো কঠোর হতে পারেনি- এই প্রশ্নের জবাব খুঁজেছি পুরো উপন্যাস জুড়ে।
'মাল্যবান' উপন্যাসের আরেকটি প্রধান চরিত্র উৎপলা বা পলা। সাধারণত নারী বলতেই আমরা এক মমতাময়ী, স্নেহময়ী, স্নিগ্ধ রূপ কল্পনা করি৷ কিন্তু উৎপলা আর দশটা নারী চরিত্রের চেয়ে আলাদা। একজন সামান্য কেরানির বউ হিসেবে সে মোটেও সুখী নয়। ব্যক্তি জীবনে পলা বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু মাল্যবানের সীমিত আয় তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে বাঁধাস্বরূপ। নিজের ইচ্ছামত সুযোগ-সুবিধা সে চাইলেও মাল্যবানের কাছ থেকে পায় না। আর এ নিয়েই তার যত রাজ্যের অভিযোগ! মাল্যবান আর তার চিন্তার মাঝে তাই যোজন যোজন ফারাক। ফলে সংসারের প্রতি, মাল্যবানের প্রতি, একমাত্র মেয়ে মনুর প্রতি সে সব সময় উদাসীন থেকেছে।
উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে রয়েছে মনু, গয়মতী ঝি, ঠাকুর, বিপিন ঘোষ, মনোমোহন, সত্যেন, রমা, ধীরেন বাবু, অনুপম বাবু, অমরেশ, মেজদা, মেজবৌঠান প্রমুখ। এসব চরিত্র উপন্যাসের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে এবং একমাত্র মনু বাদে আর কোনো চরিত্রের উপস্থিতি উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ অবধি চোখে পড়েনি। গল্পের প্রয়োজনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে একেকটি চরিত্রের উদয় ঘটেছে এবং গল্প কিছুদূর এগিয়ে যাবার পরে সে চরিত্র আর অগ্রসর হয়নি। এর মধ্যে মনু নামের বাচ্চা মেয়েটির জন্য খারাপ লেগেছে। বাবা-মায়ের অসুখী দাম্পত্য জীবনের প্রভাব সরাসরি পড়েছে এই ছোট্ট মেয়েটির উপর।
দুইজন বিপরীত মেরুর মানুষ যখন সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে একসাথে চলতে শুরু করে, তখন কি ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে 'মাল্যবান' উপন্যাসটিতে তার প্রতিচ্ছবি দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। উপন্যাসটি যেমন হঠাৎ করে শুরু হয়েছে, তেমনি হঠাৎ করেই যেন শেষ হয়ে গেছে। যখন জানতে পারলাম 'মাল্যবান' উপন্যাসের আড়ালে প্রিয় কবি ��ীবনানন্দ দাশ নিজের জীবনের গল্প বলে গেছেন, তখন যেন অবিশ্বাস্য লাগছিল। 'জীবনানন্দ' নামের মাঝে 'আনন্দ' থাকলেও বাস্তব জীবনে কবি কতটা কষ্টকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন ভাবলে নিজের অজান্তেই দু'ফোঁটা অশ্রুজল গাল বেঁয়ে আসে। অনেকে ধারণা করেন, জীবনানন্দ দাশ সংসার জীবনের এই গ্লানি সহ্য না করতে পেরে ট্রামের তলে পড়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। এই উপন্যাসটি পড়লে তার কারণ কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা যায়। অতি সাম্প্রতিক সময়ে আরেক প্রিয় কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান তাঁর "একজন কমলালেবু" বইয়ে ব্যক্তি জীবনানন্দের এ দুঃসহ জীবনের চিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে এঁকেছেন।
'মাল্যবান' নিয়ে আরেকটু ঘাঁটাঘাঁটি করতে যেয়ে জানলাম, জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর এই উপন্যাসটির প্রকাশ ঠেকাতে তাঁর স্ত্রী লাবণ্য দাশ অনেক চেষ্টা করেছিলে, কিন্তু সফল হননি। পরবর্তীতে লাবণ্য দাশ নিজেও জীবনানন্দকে নিয়ে 'মানুষ জীবনানন্দ' নামের একটি বই লিখেছেন। খুব ইচ্ছে আছে বইটি পড়ার। কে জানে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের জবাব হয়তো তিনি এই বইয়ের মাধ্যমে দিতে চেয়েছেন!
সবশেষে বলা যায়, বেশিরভাগের পাঠকের মত আমার কাছে জীবনানন্দ দাশ কখনো 'রূপসী বাংলার কবি', কখনো 'ধুসর পাণ্ডুলিপির কবি', কখনো 'তিমির হননের কবি', আবার কখনোবা 'নির্জনতার কবি'৷ ঔপন্যাসিক জীবনানন্দের সাথে পরিচয় হল 'মাল্যবান'-এর মাধ্যমে। তাঁর অঘোষিত আত্মজৈবনিক উপন্যাস 'মাল্যবান'। কবির অসুখী দাম্পত্য জীবনের ছায়া পড়েছে এই উপন্যাসে। আসুন, ঔপন্যাসিক জীবনানন্দের সাথে পরিচিত হই 'মাল্যবান' উপন্যাসটি দিয়ে।
এতো বিষন্নও জীবন হয়? গুটি কয়েক চরিত্র। মাল্যবান, উৎপলা, মনু... এই তো। শেষ দিকটায় অমলেশ নামের একজন। একটা বেড়ালছানা। সবাই মিলেমিশে তৈরী করে ফেলেছে কি বিষন্ন এক জীবনের আখ্যান। সম্পর্কের জটিলতা, ভালোবাসার নির্লিপ্ততা কত কঠোর হতে পারে অথচ কী স্বাভাবিক-সাবলীল ভাবেই না এসব পাতা জুড়ে লিখে গেছেন ধূসরতার কবি।
উপন্যাস জুড়ে মুখচোরা মাল্যবানের কষ্ট, একাকীত্ব আঁকা অথচ পড়া শেষে উনার পাশাপাশি উৎপলার কথাও ভেবে চলছে মন। বিষন্নতা উৎপলার জীবনেও তো কম নয়। তার মন প্রকোষ্ঠে যে কিসের এক ব্যত্যয় ঘটে গেছে যেটার কারণে দাম্পত্য সম্পর্কে এতোটা শীতল সে, মাতৃত্বে নির্লিপ্ত... অথচ অন্য কারো ক্ষেত্রে তো সে এমনটা নয়!
তবে পুরো উপন্যাসটা ভালো লেগেছে ভীষন। শুরু করে দু-চার পাতা পড়ার পর কিছু কারণে পড়া বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। কাল রাতে হাতে নিতেই এক টানে শেষ। যেটুক সময় পড়ছি, পড়ার পরেও বুঁদে ছিলাম বত্রিশ নম্বর বাড়ির দোতালা আর নিচ তালায়।
"....মাল্যবান থেকে উৎপলা হাত দশেক দূরে একটা বেঞ্চিতে বসেছিল,কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই মাল্যবানের মনে হতে লাগল:এইটুকু ব্যবধান ঘোচাতে- সত্যিই যদি ঘোচাতে পারা যায়- উৎপলার পক্ষ থেকে আহবান আসবেনা কোনোদিন।...."
উৎপলা কোনোদিন আহবান করে না,কিংবা করলেও তা কখনোই ঠিক তার হৃদয়নিঃসৃত হয়না,ফলে মাল্যবান আর তার স্ত্রী উৎপলার মধ্যকার এই দশ হাত দূরত্ব আনন্ত্য হয়ে থাকে।
বইখানার পাঠ প্রতিক্রিয়া একটাই-অস্বস্তিকর। এ যেন কারো দাম্পত্যজীবনে অনুপ্রবেশ,আর সেই দাম্পত্য ভীষণ বিষবৎ।আবার এসব নাকি লেখকের নিজ জীবন থেকেই নেয়া!
স্বামীর প্রতি উৎপলার নিরুত্তাপ,শীতল আচরণ,আবার যেকোনো বিষয়ে তার উত্তপ্ত বাক্যবাণ আমার-ই মনের মধ্যে চাপ ফেললো। মাল্যবান উরফে আমাদের লেখক কিভাবে তা সহ্য করেছেন(বা করতে পারেননি) ভেবে অবাক হলাম।
যাহোক,এজন্যই সাল্লু ভাই সবার আইডল হওয়া উচিত। 💁♀️
Now regarded as one of the finest voices in Bengali literature second only to Tagore, Jibanananda Das was hardly known to readers in his own lifetime. He published seven volumes of poetry and gained much critical success towards the end of his life, but some of his most accomplished and well-loved works – including this novella – were found in a trunk long after his premature death from being hit by a tramcar.
Certain details from Das's biography remind me of two poets I greatly admire – Frank O'Hara and Fernando Pessoa; his gift, too, was comparable to theirs (Allen Ginsburg wrote of it in City Lights Journal in 1964, a decade after Das had passed).
The poet's biography is also significant to his fiction, and this fiction in particular: Das's personal life is considered by many as the major influence behind Malloban, which tells the story of an unhappy marriage that ebbs and ebbs. It is, in fact, one of the most depressing books I have ever read, with its themes of marital 'unlove' and disharmony, its constant notes of existential unfulfilment that cut through the very bone of the story.
The narrative moves in and out of the protagonist's consciousness, and its structural intricacies can make it easy for the reader to miss the subtleties with which the author uses his characters to comment on and interrogate the forces of patriarchy, caste, colonialism, and capitalism. The tense relationship between husband and wife and the consequential neglect of their only child are devastating as they are, but the thematic focus here is on the damaging effects of the rigid norms that the aforementioned systems have on our connection with ourselves, other humans, and with nature. Malloban is very much an ecological novel; the author contrasts his characters' alienation from each other with the harmony of the natural world through a series of real and symbolic encounters with nature. Over thirty different species of birds and at least twenty five different kinds of trees and plants feature in the novel as symbolic both of the characters' mental states and the discomfiture of their painful coexistence.
At the same time, Malloban is also a critique of the human ecosystem in late-colonial Bengal, its idiomatic prose working skillfully to bring human violence – that of caste, class, and gender – in relief by depicting it unfavourabley vis-a-vis the violence of the natural world. Das's characters are instrumental to this, as those who both recognise the speciousness of social prejudices and are complicit in furthering them.
Das's language is rich in colloquiallisms deeply rooted in Bengali culture both 'high' and 'low,' something that has made Malloban so famously difficult to translate. This English translation by the scholar Rebecca Whittington is by no means perfect, but it does a brilliant job of introducing the writer's genius to anglophone readers. It has afforded me a taste of Das's formidable talent, and I would love to one day be able to read this book in the original.
মাল্যবান ও উৎপলার দাম্পত্য জীবন নিয়ে উপন্যাস । ঠিক উপন্যাস কিনা বুঝে ওঠা দায় কারণ জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে যারা জানেন তারা বুঝবেন বাস্তবিক জীবনানন্দ ও লাবণ্যর সংসারের গল্পটাই যেন । তাই বলা যায় লেখকের জীবনের টুকরা-টাকরা ঘটনার সন্নিবেশই বরং ।
৫ তারা কেন দিলাম? লেখক আমার প্রিয় কবি তাই নাকি এই গভীর রাতে বই পড়ে এতটাই মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হলাম সে প্রশ্ন আসতেই পারে। সত্যি বলতে বহুদিন পরে মানব-মানবীর সম্পর্কের টানাপোড়েনের গভীর মনস্তাত্বিক বিষয় নিয়ে লেখা একটা উপন্যাস পড়লাম বাংলায়। লেখক কবিতায় তার সময়ের চেনাজানা ব্যকরণ ভেঙ্গে লিখেছেন। দেখা যাচ্ছে সেই পরীক্ষা নীরিক্ষা করতে ছাড়েননি উপন্যাসেও। ৫০ এর দশকে বাংলায় এই ধরণের প্লট নিয়ে লেখা জীবনানন্দ ছাড়া অন্য কেউ লিখতে পারবার কথা স্বপ্নেও ভেবেছিল? পড়তে পড়তে জীবনানন্দের নানাবিধ বিজ্ঞানভিত্তিক পড়াশোনা টের পাওয়া যায়। এমনকি ফ্রয়েড পর্যন্ত পড়েছেন। তাই হয়তো মূল চরিত্র মাল্যবানকে দিয়ে বলিয়ে নিয়েছেন "স্বপ্নের কী বোঝেন ফ্রয়েড সাহেব? হ্বিয়েনা শহরে বসে গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে স্নায়ুরোগীদের স্বপ্ন নিয়ে কোন স্বপ্নতত্ত্ব বানানো যায়না। চড়কের মাঠে কোনদিন তো আর যাবেন না ফ্রয়েড সাহেব।" লেখার ভাষাও তাই ঠিক প্রথাগত নয় বরং অনেকটাই স্বপ্নের মত যেমনটা তার কবিতাগুলো। কেমন ঘোর লেগে থাকে। এ বই নিয়ে প্রচুর সমালোচনা/আলোচনা পড়েছি অন্তর্জালে, ক্রোড়পত্রে। উপন্যাসের প্লট নাকি পুরোটাই জীবনানন্দ এবং তার স্ত্রী লাবণ্য দাশের দাম্পত্য জীবনকে ঘিরেই লেখা। যদিও আমার সেটা একবারের জন্যও মনে হয়নি। জীবনানন্দ লেখা নিয়ে খেলতেই ভালবাসতেন; তা সে হোক কবিতা কিংবা উপন্যাস। এই স্বপ্ন, ঘোর লাগা, আবছায়া লেখায় তিনি তৎকালীন দেশীয় সমাজে নারী-পুরুষের যৌনতার মনস্তাত্বিক সম্পর্ককে উপজীব্য করেই লিখতে চেয়েছেন। সেখানে উপন্যাসের প্রেমহীন দাম্পত্যজীবনের গল্পে স্বামী না স্ত্রী কার কতখানি দোষ খুঁজতে গিয়ে লেখকের বাস্তবজীবনের সাথে মিল ভাবতে যাওয়া অমূলক।
জীবনানন্দ দাশের মাল্যবান পড়া মানে যেন এক অস্বস্তিকর শূন্যতার দিকে ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়া। তাঁর কবিতার মতোই এই উপন্যাসও এক ধরনের ঘোর তৈরি করে, কিন্তু সেই ঘোরে আলো কম, ছায়াই বেশি।
ভীত,অমেরুদণ্ডী ,কিছুটা ন্যাতানো গোছের নায়ক মাল্যবান এবং অহংকারে জর্জরিত তার স্ত্রী উৎপলা তথা 'পলা' আর মাঝখানে তাদের ছোট্ট মেয়ে মনু যে নীরবে সবচেয়ে বেশি আঘাত পায়। পুরো বই জুড়ে এক ধরনের থমথমে ঠান্ডা শীতলতা; দাম্পত্যের অন্ধকারে আটকে থাকা দুই মানুষের ক্লান্তি গ্লানি বিরক্তি সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় বাস্তবতা। পড়তে পড়তে একটা অদ্ভুত অস্বস্তি জাগে, যেন কবি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাইছেন মানুষের সম্পর্ক কত নিঃশেষিত হতে পারে, কত দিনের আকাশে কী অদৃশ্য ক্ষত জমে থাকতে পারে এবং মানুষের সহ্য করার ক্ষমতার ব্যাপ্তি কত দূর যেতে পারে।
জীবনানন্দ তাঁর সময়ের থেকে নিঃসন্দেহে অনেক এগিয়ে ছিলেন। তাই হয়তো এই উপন্যাস জীবদ্দশায় প্রকাশের সাহস পাননি। পরবর্তীতে জানা যায় কবির নিজের জীবনের সাথেও এর বেশ কিছু মিল ছিল এবং তাঁর স্ত্রী লাবন্য দেবী নাকি উপন্যাসটির প্রকাশে বাধা দিয়েছিলেন। আজকের পাঠকের চোখে মাল্যবান একটি আধুনিক ট্র্যাজেডি যেখানে ফ্রয়েডিয়ান মনস্তত্ত্ব , রোজকারজীবনের শূন্যতা এবং অস্তিত্বের ক্ষয় একসাথে দেখা যায়। সব মিলিয়ে যে ভাষা এবং অভিজ্ঞতা তৈরি হয় তা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলোর কথাও মনে করিয়ে দেয়, যদিও তাঁদের শৈলী সম্পূর্ণ আলাদা।
মাল্যবান আনন্দের জন্য একেবারেই পড়া যায় না। কিন্তু একবার পড়ে ফেললে তার অন্ধকার, নীরব ব্যথা, শীতলতা আর নৈরাশ্য মনের ভিতরে বাসা বেঁধে বসে। শুধুমাত্র প্রিয় কবি হওয়ার কারণে নয় , জীবনানন্দের কবিতার মতোই তাঁর উপন্যাসগুলোও সমান চর্চার দাবি রাখে, যা আমাদের বারবার ভাবায়। যারা ক্লাসিক এবং মনস্তাত্ত্বিক গভীরতার বই পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই উপন্যাস একদম উপযুক্ত।
কোন সন্দেহ নেই এটা জীবনানন্দ দাসের বাস্তব জীবনের অনেকখানি থেকেই নেয়া। আহা! কী অসুখী দাম্পত্যই না তার ছিলো! পুরো উপন্যাসটাই যেন এক অনুযোগনামা। প্রচণ্ড শীতল, প্রচণ্ড নির্বিকার, একই সাথে আগ্রাসী। মাল্যবান নামক পুরুষটি তাআর স্ত্রী উৎপলার কোন আচরণ নিয়েই তেমন অনুযোগ করেন না, সব কিছুই সয়ে নেয়, পাঠক জানে এই উপন্যাসের, এই অসম্পর্কের কোন পরিণতি নেই, পাঠক শুধু তৈরি থাকেন নিত্যনতুন ধাক্কা সামলে নিতে। মাল্যবান যদি এখন না পড়ে যখন লেখা হয়েছিলো তখন পড়তাম, তাহলে কী পরিমাণ ধাক্কা খেতাম তাই ভাবছি! সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকা, অনেক আধুনিক, অনেক পীড়ন দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন উপন্যাস এই মাল্যবান।
'মাল্যবান' জীবনের এক অদ্ভুত অধ্যায়ের গল্প। যে অধ্যায়ে একই ছাদের তলায় বাস করা দুজন মানুষের মধ্যে অসীম দূরত্ব। বাইরের জগত যার খোঁজ রাখে না। শুধু একসাথে থাকতে হবে বলে থাকা, ভাগ্যকে মেনে নিয়ে জীবনযাপন। সম্পর্কের প্রতি একধরনের নির্লিপ্ততা। স্পষ্ট অবহেলা। কোথাও কোনো ভালোবাসা নেই, শ্রদ্ধাবোধ নেই। দুজন মানুষ ক্রমাগত দগ্ধ হচ্ছে নিজের যন্ত্রণায়।
বইয়ের নামঃ মাল্যবান লেখকঃ জীবনানন্দ দাস বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস প্রকাশনাঃ নিউ স্ক্রিপ্ট (ভারত) প্রচ্ছদঃ সত্যজিৎ রায় প্রথম প্রকাশঃ ১৯৭০ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৬৮ গায়ের মূল্যঃ ১২০ টাকা . ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা ও বিন্দু বিন্দু জলের সমন্বয়ে যেমন মহাদেশ ও সাগর অতল গড়ে ওঠে, ঠিক তেমনি অসংখ্য অনুভূতির গল্প নিয়ে সৃষ্টি হয় একেকটি জীবনের গল্প। এ গল্পে যেমন হাসির অনুভূতি থাকে, তেমনি থাকে কান্নার অনুভূতি। প্রদীপের পাদদেশে যেমন আলোর ঠিক পাশেই অন্ধকার যেমন তার সরব উপস্থিতির প্রমাণ দেয়, ঠিক তেমনি জীবনের গল্পে হাসির পাশেই থাকে কান্না। তবে কিছু কিছু জীবনের গল্পে বেশ ব্যতিক্রম চোখে পড়ে। কিছু মানুষের জীবনের গল্পে শুধু দুঃখের গল্প বেশি থাকে, যার পরিমাণের তুলনায় সুখের অনুভূতির পরিমাণকে অতি নগণ্য-ই বলা চলে! এমন অঘটনের কোনো ব্যাখ্যা হয়না, যাকে আমরা হরহামেশাই "দুর্ভাগ্যের নির্মম পরিহাস" বলে আখ্যা দিয়ে থাকি।
এমনই এক দুর্ভাগা মানুষের জীবনের গল্পকে উপজীব্য করে লেখা উপন্যাসের নাম "মাল্যবান"। রূপসী বাংলার কবি বলে পরিচিত জীবনানন্দ দাস এ উপন্যাসের রচয়িতা। এ উপন্যাসের মাধ্যমে মূলত অসুখী মানুষের জীবনের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ একজন মানুষের জীবনের নানা প্রতিচ্ছবি কেন্দ্রীয় চরিত্র নির্ভর এ উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য বিষয়। মাল্যবান নামক এক কেরানীর জীবনের নানা দিক এখানে ঔপন্যাসিকের নিপুণ তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে। সারা জীবন অসুখী জীবন কাটানো এ চরিত্র চিত্রণের ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিকের ব্যক্তিগত জীবনের ছাপ বা প্রভাব অনেক বেশি সুস্পষ্ট ছিল। উপন্যাসের কাহিনীর সাথে হুবহু মিলে না গেলে তার ব্যক্তিগত জীবনের সাথে উক্ত উপন্যাসের কাহিনীর অনেক বেশি সাদৃশ্য রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিগত জীবনে, বিশেষত সাংসারিক ও দাম্পত্য জীবনে দারুণভাবে অসুখী ছিলেন জীবনানন্দ দাস। এ কারণে তিনি নিজের জীবন নিয়ে বেশ হতাশ-ও ছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন ট্রামের তলে পড়ে। এটা নিছক কোনো দুর্ঘটনা ছিল না বলে অনেকে মত ব্যক্ত করেছেন। অতি সাম্প্রতিক কালের অন্যতম জনপ্রিয় ভাষাশিল্পী শাহাদুজ্জামান তার লেখা "একজন কমলালেবু" শীর্ষক বইয়ে ব্যক্তি জীবনানন্দের দুঃখময় জীবনের চিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে এঁকেছেন। এ বইটিকে লেখকের বায়োগ্রাফি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। অনুরূপভাবে, মাল্যবান উপন্যাসটিকে এ বিবেচনায় তার নিজের আত্মজীবনীতুল্য বই হিসেবে বিবে��না করা হলে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না বলে আমার ধারণা।
উপন্যাসের গল্পের শুরু হয় মাল্যবান নামক এক কেরানীর পরিচয়ের মধ্য দিয়ে। অফিসের ছাপোষা কেরানী মাল্যবান তার অফিস জীবনের পাশাপাশি সাংসারিক জীবনেও দারুণ অসুখী একজন মানুষ। সংসারে তাকে শুধু অর্থ উপার্জনের এক জ্যান্ত কল হিসেবে ধরা হয়। একজন মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সম্মানটুকুও সে পায় না। দাম্পত্য জীবনে স্বামী হিসেবে তার স্ত্রীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের পরেও যথাযথ অধিকার বা সম্মান--- কোনোটাই তার সাড়ে তিন আঙুল চওড়া কপালে জোটে না কখনোই। এক কথায়, সাংসারিক ক্ষেত্রে তার নিজের স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই। স্ত্রী উৎপলার খেয়াল-মেজাজের উপরে নির্ভর করে তাকে চলতে হয়। অর্থাৎ সংসারে সে চরম অবহেলিত এক প্রাণী। নিজের অর্থকষ্টের দরুন সে এসবের প্রতিবাদ করতে চাইলেও করতে পারেনা। মুখ বুজে বউয়ের স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেওয়া ছাড়া তার হাতে দ্বিতীয় কোনো উপায় থাকে না। এভাবেই এগিয়ে চলে উপন্যাসের গল্প। একসময় হঠাৎ এক দমকা ঝড়ে মুহূর্তেই পাশার দান যায় উল্টে! কিন্তু কীভাবে? সে রহস্যের কূলকিনারা করতে চাইলে আপনাকে পড়ে যেতে হবে উপন্যাসটির শেষ পাতা অবধি!
এবার আসি চরিত্র বিষয়ক আলোচনায়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাকে রাখা হয়েছে, তা নতুন করে বলা বাহুল্য। মাল্যবান চরিত্রের মধ্য দিয়ে এক সাধারণ কেরানীর জীবন কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে সে দুর্বল হবার কারণে সবসময় তাকে বিভিন্ন ভাবে বউয়ের নানা লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সর্বদা মুখ বুজে সইতে হয় তাকে। স্বামীর অধিকার বা সম্মান দূরে থাকুক, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সম্মানটুকুও সে পায় না। এভাবেই এগিয়ে চলে একজন সাধারণ মানুষের জীবন। এর পাশাপাশি উক্ত চরিত্রের মধ্য দিয়ে এক অর্থে একজন মেরুদণ্ডহীন কপর্দকশূন্য মানুষকে উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তার দুর্বলতা যেমন সত্য, তেমনি এ অবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে তার নিশ্চুপ থাকা প্রকাশ্য দিবালোকের মত সত্য। তার এমন আচরণ নিজের মেরুদণ্ডহীন মানসিকতার পরিচয়ই বহন করে।
উপর্যুক্ত চরিত্রের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছে উৎপলা। ব্যক্তিগত জীবনে একজন সামান্য কেরানীর বউ হিসেবে সে সুখী নয় মোটেও। ব্যক্তিগত ভাবে বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী এ নারী তার নিজের ইচ্ছামত সুযোগ-সুবিধা এ সংসারে থেকে পায় না কখনোই। আর এ নিয়েই তার যত রাজ্যের অভিযোগ-অনুযোগ! তার এ অভিযোগ, অনুযোগ পরিমাণে এত বেশি যে তার যেন প্রতি ক্ষণে উঠতে বসতে অভিযোগ! অন্যদের সাথে তুলনা করে নিজের এ অসুখী ভাব বাড়িয়ে তুলতে তার যেন জুড়ি নেই। পাশাপাশি নিজের স্বামী, সংসার ও সন্তানের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিণী এ নারীর উদাসীন ভাব সহজেই চোখে পড়ে। এক কথায়, উক্ত চরিত্রের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক নিজের অমতে বিয়ে করা একজন চিরায়ত নারীর চিত্র তুলে ধরেছেন। এ চরিত্রকে আমি ঠিক চিরায়ত বাঙালি নারী বলে মেনে নিতে নারাজ। কেননা, তৎকালীন সময়ে বাঙালি মেয়েদের প্রায় সময়েই নিজেদের অমতে বিয়ে হত আর তাদেরকে তা নিরবে মেনে নিয়ে সংসার ধর্ম পালন করতে হত। এর ব্যতিক্রম চোখে পড়ত না বললেই চলে। অবশ্য বর্তমান যুগে এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। যা হোক! ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া হয়ে গেল বেশ খানিকক্ষণ!
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মধ্যে রয়েছে মনু, গয়মতী ঝি, ঠাকুর, বিপিন ঘোষ, মনোমোহন, সত্যেন, রমা, ধীরেন বাবু, অনুপম বাবু, অমরেশ, মেজদা, মেজবৌঠান প্রমুখ। এসব চরিত্র কেন্দ্রীয় বা অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোনো চরিত্র হিসেবে রাখা হয়নি ঠিকই, তবুও গুরুত্বের বিচারে এগুলো খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। গল্পের প্রয়োজনে এসব চরিত্র চিত্রণ এ উপন্যাসের গল্পকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বরাবরের মত। তবে অন্যান্য গল্পের সহায়ক চরিত্র চিত্রণের তুলনায় এটার ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ে। এ উপন্যাসে অনেকগুলো সহায়ক চরিত্র থাকলেও একমাত্র মনু বাদে আর কোনো চরিত্রের উপস্থিতি উপন্যাসের শুরু থেকে শেষাবধি আমার চোখে ধরা পড়েনি। গল্পের প্রয়োজনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে একেকটা চরিত্রের উদয় ঘটেছে। গল্প কিছুদূর এগিয়ে যাবার পরে সে চরিত্র আর অগ্রসর হয়নি। এ বিষয়টি উক্ত উপন্যাসের গল্পটিকে আলাদা এক স্বকীয়তা প্রদান করেছে, যা সচরাচর দেখা যায় না; বিশেষ করে বাংলা উপন্যাসে।
এতক্ষণ তো উপন্যাসের গল্প ও চরিত্র নিয়ে কচড়া কম হলো না, মশাই! এবার একটু ভাষারীতি নিয়ে আলাপ করা যাক! প্রথমত উক্ত উপন্যাসটির রচনাকাল বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের একেবারে শেষভাগে হলেও এ ক্ষেত্রে চলিত ভাষারীতি অনুসরণ করা হয়েছে। পুরো উপন্যাস জুড়ে উপন্যাসের ভাষারীতি বেশ সহজ, সাবলীল-ই মনে হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও একটু দুর্বোধ্য লেগেছে বৈকি! বিশেষত, যেসব জায়গায় ঔপন্যাসিক তার নিজস্ব জীবনদর্শন তুলে ধরেছেন, তার ভাষারীতি একটু জটিল লেগেছে আমার কাছে। এছাড়া কিছু জটিল উপমার প্রয়োগ ক্ষেত্রবিশেষে এ জটিলতাকে কিছুটা হলেও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে হয় আমার। তবে একটু সময় নিয়ে পড়লে এর গূঢ় অর্থ বুঝতে পারা সচেতন পাঠকের পক্ষে খুব একটা কঠিন হবে বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না আমি।
সর্বোপরি, এ কথা বলতে চাই, ভালো-খারাপের মিশেলেই মানুষের সৃষ্টিকর্ম! মানুষের কোনো কিছুই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্মের মত স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এদিক থেকে এটাও এ অমোঘ নিয়মের ব্যতিক্রম নয় কোনোভাবেই। কবি হিসেবে জীবনানন্দ দাস দুই বাংলার মধ্যকার সীমানা পেরিয়ে যতটা খ্যাতি অর্জন করেছেন, ডজন খানেক উপন্যাস লিখেও তিনি সে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি বলে আমার ধারণা। তবে এটাকে তার উপন্যাসের সাহিত্য ও গুণগত মান বিচারের একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা মস্ত বড় ভুল হবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় মহিলা কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করা কবি কুসুমকুমারী দাসের গর্ভজাত সন্তান হবার সুবাদে কবিতা ছিল তার রক্তে। তবে তিনি শুধু কবি পরিচয় নিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং কবিতার গণ্ডি পেরিয়ে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। যা হোক, উপর্যুক্ত ভালো ও মন্দ দিকগুলো মাথায় রেখে কেউ এ বইটি পাঠে আগ্রহী হলে তাকে যে মনঃক্ষুণ্ণ হতে হবে না, এটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া যেতেই পারে।
I was introduced to Das's poetry back in my MA when a professor (who I admire and talk to a lot to this day) explained a course on embodiment through his poetry. I was enamoured and read a collection of his poetry. Since then I was always eager to read a novel written by him. This year I found out that a translation of his work was out in 2022. After one read through the plot of the novel I knew that this is what I wanted to read RIGHT NOW! It was desperation that drove me to pick this book up and consume it with utmost indulgence. Set in 1929 Calcutta, we are introduced to Malloban who is unable to sleep in his apartment in College Street on his 42nd birthday. His wife has stopped sleeping with him. His daughter his growing thinner. Malloban is lost and is unable to figure out the purpose of his life. He imagines being a child again back at his village when he'd chase birds, star-gaze, luxuriate in the colours and smells of flowers and imagine being a writer of sorts. But his job as a clerk has limited his ability of being in a profession where he could think. Thought is what is important to Malloban. In the city and time he lives in, it is this he feels he is being robbed of. I do not think a novel could be more timely. We live in times where our ability to think is being stolen from us at an unexpected speed. I was spellbound reading Das's forethought of the kind of lives one is entering into with time. It is this thoughtlessness and unlove nature of his marriage that has made him sad and lonely. In recent times, I have not read a novel from India that explores solitude and loneliness this densely. It reminded me Marquez's work. The solitude that Malloban feels is guttural. It is emotional, sexual, intellectual and cultural. I felt every sentence of this novel viscerally. Somewhere I wish we got to see more of Utpala's side because I felt she was grossly made to show as an antithesis to Malloban. Nonetheless, the protagonist here does steal the show. I will keep coming to this book. I want to. I already feel a stinging desire to open the book and read it from the beginning.
এই উপন্যাসটি জীবনানন্দ দাশের একমাত্র প্রকাশিত উপন্যাস।এটি মূলত আধুনিক বাঙালির যন্ত্রণা, উদ্বেগ ও নৈরাশ্যের মনোজগৎকে চিত্রিত করে। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র মাল্যবান, যিনি জীবন ও সম্পর্কের জটিলতা, বিষাদ এবং দারিদ্র্যের মধ্যেও এক অন্তর্গত রোমান্টিকতা ধারণ করেন। উপন্যাসের কাহিনি মাল্যবান নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। মাল্যবান এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। তিনি কর্মজীবনে অসফল, পরিবারে অবহেলিত এবং দাম্পত্য জীবনেও চূড়ান্ত অশান্তির শিকার। তাঁর সুহাসিনী, সংসারের নানা বাস্তব সমস্যায় ক্লান্ত হলেও একসময়ে মাল্যবানের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল হন। ঔপন্যাসিকের তুলির ছোঁয়ায় মাল্যবান একজন স্বপ্নবিলাসী, চিন্তাশীল মানুষ। মাল্যবানের প্রধান সমস্যা এটিই যে তিনি বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না। তাঁর চারপাশের মানুষ, পরিস্থিতি এবং সমাজের সঙ্গে চিরন্তন দ্বন্দ্ব তাঁকে ঠেলে দেয় একাকীত্বের দিকে।
জীবনানন্দের কাব্যিক গদ্যশৈলী মাল্যবান উপন্যাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সংলাপ, বর্ণনা ও চরিত্রের আত্মকথনের মধ্যে এক ধরনের দার্শনিকতা ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ভাবনা প্রকাশ পায়। তিনি বিমূর্ততা ও সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মাল্যবানের অন্তর্জগত তুলে ধরেছেন। বস্তুত নগরজীবনের একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা, হতাশা, অবসাদ ও বিষন্নতা মাল্যবান চরিত্রের মাধ্যমে অত্যন্ত সুচারু ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।বাঙালি মধ্যবিত্ত মানুষের iconic emblem হয়ে ওঠেন মাল্যবান। দ্বিতীয়ত, মাল্যবান ও সুহাসিনীর সম্পর্কের টানাপোড়েন কেবল পারিবারিক নয়, বরং গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও অস্তিত্বের সংকটের ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয়ত, প্লটের মধ্য দিয়ে জীবনানন্দ ফুটিয়ে তুলেছেন বাস্তবতা ও কল্পনার সংঘর্ষ। মাল্যবান একদিকে বাস্তব দারিদ্র্য ও পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে আবদ্ধ, অন্যদিকে কল্পনার এক মুক্ত, অথচ অস্থির জগতে বিচরণ করেন।
এই উপন্যাস একেবারে প্রচলিত কাহিনিনির্ভর উপন্যাস নয়, বরং এটি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও জীবনদর্শনের মিশ্রণে গঠিত। পাঠকের কাছে এটি হয়তো ধীরগতির মনে হতে পারে, কিন্তু জীবনানন্দের কাব্যময় গদ্য ও সূক্ষ্ম জীবনবোধ একে অনন্যতা দিয়েছে। মাল্যবানের নিঃসঙ্গতা ও দার্শনিক ভাবনা পাঠকের মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
উপন্যাস: মাল্যবান লেখক: জীবনানন্দ দাশ প্রথম প্রকাশকাল: ১৯৭০
জীবনানন্দ দাশ কবিতার জন্য বিখ্যাত, অথচ তিনি যে উপন্যাস লিখেছেন তার আবিষ্কার হয়েছিলো, তার মৃত্যুর অনেক বছর পরে তা প্রকাশ হওয়ায়। মাল্যবান তার লেখা প্রথম উপন্যাস। খুবই বাস্তবধর্মী লেখা, এতো কঠিন ভাষায় জীবনের বাস্তবতা পড়তে গেলে হাঁপিয়ে উঠতে হয়। অথচ মানুষের জীবনের বাস্তবতা অনেক কঠিন৷ এই উপন্যাসের শুরুটা খুব সাধারণ ভাবে, শুরুতেই মাল্যবানকে তার নিজের জীবন বাস্তবতার বিশ্লেষণ করতে দেখা যায়। মধ্যবিত্ত জীবনে আর্থিক ভাবে অসচ্ছলতা, স্ত্রীর প্রেম না পাওয়া কিংবা সংসারের প্রতি বিমুখতা, অতীতের সাথে জীবনের তুলনা কিংবা ভবিষ্যৎ এর ভাবনা ইত্যাদির মিশেলে পরিপূর্ণ মাল্যবান মনোজগৎ, দুঃখজনক বাস্তব সত্য। মাল্যবান তার সাংসারিক জীবন, স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্কে বিশ্লেষণ, নিজের অতীত, দাম্পত্য জীবনের রস কষ হীনতা, অনেক কিছুর সমীকরণ ইত্যাদি ভাবনায় বিভোর হতে দেখি। মাল্যবানকে কোন ছকে ফেলা উচিত তার হদিশ করে উঠতে পারি না। কিন্তু অনুভূতি গুলো খুব চেনা পরিচিত একান্ত রকমের। তার নিজের সংসারেই একধরনের একাকীত্বের জীবনে কিভাবে সে জড়িয়ে গেলো, তার হদিশ খুঁজে কুল পায় না। সমাজে এরকম অনেক মাল্যবানেরা আছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক টা যদি শুধু নামে হয়, আর কিছু নয়, তাহলে বিয়ে নামের সম্পর্কটা একটা আবদ্ধ গন্ডির মতো লাগে। মাল্যবান খুব সাধারণ একজন মানুষ, মাঝেমধ্যে এমন কেউ কেউ থাকে যারা সাতে ও থাকে না কারো পাঁচে ও থাকে না, একটু মুখ তুলে কিছু বলাটাকেই ঝামেলা মনে করে, নিজের খোলস থেকে বের হয় কিভাবে তা জানে না। এমন একজনের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ দেখতে দেখতে আমাদের এরপর পরিচয় হয় উৎপলার সাথে, যে কৌশলী ও চতুর এবং তাদের একমাত্র মেয়ে মনু।
উপন্যাসে যতো এগোনো যায়, এই যে মাল্যবানের মনের একটা আক্ষেপ দেখা যায়, একধরনের খেদ উৎপলা অন্যরকম হলো না কেনো, কিংবা তার মনের মতো, হয়তো উৎপলার দিকটা আমরা জানি না কিন্তু উৎপলার মনেও কি কোনো টান পাওয়া যায় মাল্যবানের জন্য? এই যে পরিবারে সম্মতিতে বিয়ে হয়েছিলো, এত বছরের সংসারে থাকার পর আদতেও কি জোড় মেলে! উপন্যাসের পরতে পরতে যে গা ছাড়া ভাব অনুভব হয়, যেনো বোধ হয় তাদের মিলেমিশে থাকাটা ক্রমশই পোড় খাওয়া সম্পর্কে রূপ নিতে থাকে, খুব চিকন সুতো দিয়ে যেনো কোনোমতে সম্পর্ক তাদের টিকে আছে। মাল্যবান এর সবসময় উৎপলাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছা কিন্তু উৎপলা যেনো তাকে আরো দূরে ঠেলতে ব্যস্ত। তেলে- জলে সংসার করতে বসেছে যেনো। সেই পুরোনো বিশ্বাস বিয়ে করেছে বলে তাই ছেড়ে যাওয়া যাবে না, কিন্তু কোনোমতে বেঁচে থাকো তাও একসাথেই তো থাকতে পারছো, এ কেমন যেনো। তারাও এর গন্ডি ছেড়ে বের হওয়ার কথা ভাবে না। কিন্তু হয়তো এরমধ্যেও দাম্পত্য জীবন চলে যায়, যে যার মতো জীবনের ব্যস্ততায়। পাঠক হিসেবে আমার মাঝেমধ্যে উৎপলার গা ছাড়া ভাবটা সহ্য হতে চায় না, মাল্যবানের জন্য মায়া ও হয়৷ কিসের এতো ক্ষোভ তার সমাজের উপর বোঝা যায় না, যেখানে নিজের মেয়েকে পর্যন্ত যত্নে রাখার ইচ্ছা তার উবে যায় যেনো দিনকে দিন। উৎপলা তার নিজস্ব জগৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এ নিত্যদিনের এক গল্প কোনো খাপছাড়া দুই হৃদয়ের। যেখানে নিজের স্ত্রীর প্রতিই মন আসে না, না আসে তার নিজের স্বামীর জন্য কিন্তু সংসার করতে হয়। তাও এতোকিছুর মধ্যে মাল্যবান তার ধৈর্যের জীবন পার করতে থাকে। পুরো উপন্যাস জুড়ে মাল্যবানের বর্ণনার ভাষা অত্যন্ত সুন্দর, জীবনানন্দ দাশ কবিতার জন্য বিখ্যাত কিন্তু তিনি যেনো নতুন নতুন শব্দ জুড়ে উপন্যাসে কবিতার মতো গল্প লিখেছেন।
তার পুরোনো জীবনের স্মৃতিচারণ, মনের দ্বন্দ, বিষন্নতা, মায়া, আক্ষেপ, ধৈর্য, উদাসীনতা, জীবনবোধ, সবকিছুকে অন্য চোখের দেখা ইত্যাদি উপন্যাস জুড়ে ছড়ানো। পরিবেশ প্রকৃতির সুন্দর বর্ণনা আছে, কোথাও কোথাও তার সবকিছুকে একভাবে নিজের মতো বিশ্লেষণ করে দেখার চিন্তাভাবনা ও দেখা যায়। একধরনের মিথ শোনা যায়, এ উপন্যাস কবি জীবনানন্দ দাশের নিজের অসুখী দাম্পত্য জীবনেরই ছায়া। লিখলে অনেককিছুই বিশ্লেষণ করা যায় এই উপন্যাস নিয়ে, শুরুর মতো শেষটাও কেমন সাধারণ, বিষন্নতায় আচ্ছন্ন করে তোলে। পুরো উপন্যাসের শেষে এসেও যেনো শেষ মনে হয় না। আমার কেমন অসম্পূর্ণ মনে হলো, বাস্তবের মতো, আমরা জানি না আমাদের আগামীকাল কি ঘটবে, অনূভুতিটা যেনো এমন পেলাম। হ্যাপি রিডিং ✨
Malloban is the considered to be the best-known novel by the renowned Bengali poet Jibanananda Das (1899-1954).
Malloban, the protagonist of the book, is a low-level office worker living in Calcutta with his younger wife Utpala and their daughter Monu. I would hesitate to call this a story, it is more a collection of mainly domestic scenes, set in the year 1929, in which we witness the sorry and dysfunctional relationship between Malloban and Utpala. It does not seem to be a completely loveless match from Malloban’s perspective, he certainly expresses an unrequited physical desire for her, but it is certainly a corrosive one in which neither parent appears to reflect on how badly it is affecting their daughter.
I found this a difficult and unrewarding book. The prose is nice, although often idiosyncratic, but I failed to engage with the characters, much less find enjoyment from the tedious manner in which their relationship drags meaninglessly along.
মাল্যবান আর উৎপলা দুই চরিত্রের প্রতিই এতটা বিরক্তি লাগছে যে পিটাইতে মন চাইছে। 😑😑এতটা মেরুদন্ডহীন পুরুষ আর ঔদ্ধত্যপূর্ণ মহিলা দুইই সাংসারিক জীবনে অকল্যাণ বয়ে আনে।বইটা যে জীবনানন্দ বাবুর নিজের জীবনেরই প্রতিফলন এটা বইয়ের প্রথম কিছু পৃষ্ঠা পড়ার পরেই বুঝতে পারছিলাম। জীবনানন্দ দাশ তাঁর নিজের জীবনকেই যেন তুলে ধরেছেন মাল্যবানের মধ্য দিয়ে।
জীবনানন্দ সবচেয়ে পছন্দের কবি কিন্তু তার প্রতি এই ভালোবাসা আমাকে উপন্যাস এর রেটিং এর তারা বাড়াতে সাহায্য করলো না। লেখকের লেখনী, বর্ণনা, উপমার অলঙ্কার এসবের সুন্দর ছোঁয়া রয়েছে বটে। এটাও শুনেছি, পড়েছি যে অনেকটাই নিজের বিষাদময় দাম্পত্য জীবনকে রূপক দান করেছেন। কিছু কিছু অধ্যায় মন ছুঁয়েছে ঠিক ই। তবুও সম্পূর্ণ বই জুড়েই যখন শুধু একটাই বিল্ডাপ যে "উৎপলা কত খারাপ" ব্যাপার টা তেমন মনো:পুত হয় না ।
কবিতা অনুধাবন করবার ক্ষমতা আমার খুবই কম, তাই কবি জীবনানন্দ দাশ ও তাঁর কবিতা সম্পর্কে কিছু বলা আমার পক্ষে ধৃষ্টতা। কিন্তু মাল্যবান শেষ করে অন্তত এটুকু বলতে পারি যে, মাল্যবান বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস গুলোর একটি।
ধন্যবাদ দিতে হয় ভূমেন্দ্র গুহকে, রিট্রাইভ করেছেন যিনি এই অসাধারণ উপন্যাস। উপন্যাস তো লেখকের বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। তাই ভাবি জীবনানন্দ তার জীবন যাপন করেছেন কতটা নিস্পৃহ হয়ে! উপন্যাস নয় অটোবায়োগ্রাফি এটা!
বইটি পড়ে ভাষার যত না উন্নতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বেদনাহত হয়েছে মন। শেষের দিকে আর মন বসছিলো না। এত নিষ্ঠুর। মানুষ এতো নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে পারে না। এই বইটি ভগ্ন হৃদয়ের মানুষের জন্য নয়। এইটুকুই বলবো। তবে জীবনানন্দ পড়তে চাই, বুঝতে চাইলে বইটিকে জরুরি মনে হয়েছে।