Jump to ratings and reviews
Rate this book

বোবা কাহিনী

Rate this book
নক্সী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট- এর মতো মহাকাব্য গাথা স্রষ্টা কবি জসীম উদদীনের অসাধারণ কথাসাহিত্য ‘বোবা কাহিনী’। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক ক্ষেতমজুরের অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক জীবনের চরম দুর্দশা ও তার বিরুদ্ধে দুই প্রজন্মের লড়াই। নিঃস্ব দুঃস্থ কৃষিজীবী আজাহের ক্ষেতমজুর দশায়; নিজের শ্রমে-ঘামে যুদ্ধ করে যায় আরো বেশী ফসল ফলিয়ে নিজের ভাগ্য বদলের, সম্পন্ন কৃষক হবার। কিন্তু তার স্বপ্ন আর সম্ভব হয় না; তার পরের প্রজন্ম বছির লড়ে যায় শিক্ষাদীক্ষা লাভ করে তথাকথিত অবস্থাপন্ন বা ভদ্রগোষ্ঠীর স্বাছন্দ্য আনয়নে; বছিরের স্বপ্ন তার নিজের পরিবারের এবং পুরো্ গ্রামের মানুষের আর্থিক দুর্গতি মুক্তির।

গ্রামীণ জীবনের হৃদয় ছোঁয়া ভাষায় লেখক জীবনযুদ্ধের গাথা তুলে এনেছেন, তা সাধারণ স্বাক্ষর পাঠক থেকে উচ্চশিক্ষিত বোদ্ধা পাঠককে একই ভাবে আটকে দেবে উপন্যাসটির শুরু থেকে শেষ বাক্যটি পর্যন্ত। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী শক্তির বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে; সেই সময়কালের সুদখোর মহাজনদের , গ্রামীণ হাতুড়ে ডাক্তারদের , শহুরে আইনজীবী, মৌলবাদী ধর্মব্যবসায়ী ও পীরতন্ত্রের এবং সর্বোপরি জমিদার ভূস্বামীদের শোষণ-যাঁতাকল দরিদ্র কৃষক প্রজাকুলের ওপর কতোটা নির্মম স্টীমরোলার চালিয়েছে তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা ওঠে এসেছে এই গল্পে। দরিদ্র ক্ষেতমজুর আজাহরে তার স্ত্রীকে প্রান্তিক কৃষকে উত্তীর্ণ করার লড়াই চালিয়ে গেছে-প্রচন্ড প্রতিকুল সমাজে ফসল ফলানো প্রানান্ত প্রয়াসে।

গ্রামীন হাতুড়ে ডাক্তারদের শাইলকসম চিকিৎসা ব্যবসায়ে ও ভুল চিকিৎসায় তাদের প্রাণপ্রিয় কন্যাসন্তান বড়ুর মৃত্যু ঘটে কলেরায়। তাদের পরের প্রজন্ম বছির বাবা-মায়ের জীবনযুদ্ধ থেকে উদ্ধুদ্ধ হয়ে শিক্ষাদীক্ষা লাভে এগিয়ে যায়, সে গ্রামীণ মানুষের ম্যালেরিয়া, কলেরা প্রভৃতি রোগে অসহায় মৃত্যুর অবসান ঘটাতে চায়, সর্বহারা দিনযাপনের গ্লানির মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে উন্নত বিশ্বে জীবানুতত্ব শিক্ষা লাভের সুযোগ খুঁজে পায়; কিন্তু তার জন্য বছর বছর অপেক্ষায় থাকা নিজের ভালোলাগার মানুষ ফুলিকে নিষ্ঠুরতায় প্রত্যাখ্যান করে যেতে হয় তাকে। এই ট্র্যাজেডী এই দেশের জীবনসংগ্রামরত দারিদ্রপীড়িত মানুষের প্রতিদিনের গল্প। এই কাহিনী প্রতিটি পাঠকের নিজের জীবনের গল্প রূপে ধরা দেবে।

165 pages, Hardcover

First published August 1, 1964

5 people are currently reading
159 people want to read

About the author

Jasim Uddin

56 books86 followers
Jasimuddin (Bangla: জসীম উদদীন; full name: Jasimuddin Mollah) was a Bengali poet, songwriter, prose writer, folklore collector and radio personality. He is commonly known in Bangladesh as Polli Kobi (The Rural Poet), for his faithful rendition of Bengali folklore in his works.

He obtained his BA degree in Bengali from the University of Calcutta in 1929 and his MA in 1931. From 1931 to 1937, Jasimuddin worked with Dinesh Chandra Sen as a collector of folk literature. Jasimuddin is one of the compilers of Purbo-Bongo Gitika (Ballads of East Bengal). He collected more than 10,000 folk songs, some of which has been included in his song compilations Jari Gaan and Murshida Gaan. He also wrote voluminously on the interpretation and philosophy of Bengali folklore.

Jasimuddin started writing poems at an early age. As a college student, he wrote the celebrated poem Kabar (The Grave), a very simple tone to obtain family-religion and tragedy. The poem was placed in the entrance Bengali textbook while he was still a student of Calcutta University.

Jasimuddin is noted for his depiction of rural life and nature from the viewpoint of rural people. This had earned him fame as Polli Kobi (the rural poet). The structure and content of his poetry bears a strong flavor of Bengal folklore. His Nokshi Kanthar Maath (Field of the Embroidered Quilt) is considered a masterpiece and has been translated into many different languages.

Jasimuddin also composed numerous songs in the tradition of rural Bengal. His collaboration[4] with Abbas Uddin, the most popular folk singer of Bengal, produced some of the gems of Bengali folk music, especially of Bhatiali genre. Jasimuddin also wrote some modern songs for the radio. He was influenced by his neighbor, poet Golam Mostofa, to write Islamic songs too. Later, during the liberation war of Bangladesh, he wrote some patriotic songs.

Jasimuddin died on 13 March 1976 and was buried near his ancestral home at Gobindapur, Faridpur. A fortnightly festival known as Jasim Mela is observed at Gobindapur each year in January commemorating the birthday of Jasimuddin. A residential hall of the University of Dhaka bears his name.

He was honored with President's Award for Pride of Performance, Pakistan (1958), DLitt. by Rabindra Bharati University, India (1969) Ekushey Padak, Bangladesh (1976), Independence Day Award (1978).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
38 (50%)
4 stars
27 (36%)
3 stars
9 (12%)
2 stars
0 (0%)
1 star
1 (1%)
Displaying 1 - 17 of 17 reviews
Profile Image for Abid.
135 reviews23 followers
March 13, 2025
জানিনা কেনো এত চমৎকার একটা বই নিয়ে কখনোই কোনো পোস্ট বা রিভিউ চোখে পড়েনা। আমারও হয়তো কখনো এই বই পড়ার জন্য হাতে নেওয়া হতোনা, যদিনা আচমকাই বইটা গিফট হিসেবে পেতাম। কিন্তু পড়া শুরুর পর মুগ্ধ হয়েছি। গ্রামীন নিসর্গ, অভাবী মানুষের জীবন- কখনো কখনো বিভূতিভূষণকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। আরো স্পেসিফিক্যালি বললে 'পথের পাঁচালি'কে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। যাদের পথের পাঁচালি ভালো লেগেছে, তাদের এই বইটিও ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।
9 reviews9 followers
March 11, 2015
গ্রন্থালোচনাঃ বোবাকাহিনী

ক্রীসমাসের ছুটিতে কিছুটা কাউচ পটেটো হয়ে বাইরের তুষারপাত দেখেছি আর হাতে ছিলো গরমা গরম সবুজ চায়ের সাথে পড়া না পড়া কয়েকটি বই আর কিছু দুর্দান্ত সিনেমা। ছোটবেলা থেকে পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের কবিতা পড়েছি তবে সেগুলো বেশীরভাগই টেক্সট বইয়ে। সহজ সরল জীবন কথা, গ্রামীন রুপ এই তার লেখার প্রধান উপজীব্য বলে ধারনা ছিলো। নিজেদের শহুরে জীবনের সাথে অনেক সময় রিলেট করতে পারিনি বলে বেশীর ভাগ সময় আগের যুগে গ্রামে এমন হতো এই মনোভাব নিয়ে পড়ে গেছি।

আমার বাড়ি যাইও ভোমর, বসতে দেব পিঁড়ে,
জলপান যে করতে দেব শালি ধানের চিঁড়ে।
শালি ধানের চিঁড়ে দেব, বিন্নি ধানের খই,
বাড়ির গাছের কবরী কলা গামছা বাঁধা দই।

কিংবা

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।

নয়তো

এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!


আমাদের আটপৌরে শহুরে জীবনে আমরা কাকেইবা এমন উদাত্ত আহবান করি? কোথায় বা তাদের আপ্যয়নের জন্যে শালি ধানের চিঁড়ে। ভেন্না পাতার বাড়িই বা আমরা কোথায় দেখেছি? এসমস্ত মিলিয়ে পল্লীকবি সর্ম্পকে ধারনা ছিলো সহজ সাধারণ কাব্যকথা লিখে গেছেন তিনি। বইয়ের তাক এপার ওপার করতে যেয়ে হাতে পরলো তার “বোবাকাহিনী” উপন্যাসটি। অনেক আগে একবার পড়েছিলাম, হালকা হালকা মনে ছিলো। আবারো পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে ধরতে গেলে প্রায় এক নিঃশ্বাসে শেষ করলাম বইটি। হাতে নিয়ে আর ছাড়তে পারিনি, এভাবে কাহিনী আর ভাষা দুইই আবার টেনে নিয়ে গেছে।

ছোটবেলায় শুধু মুগ্ধ পাঠিকা হয়ে পড়ে গেছি কিন্তু এবার পড়তে পড়তে পল্লীকবির দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে ভাবছিলাম। এতো এতো আগের দিনে বইটি লেখা যেটাতে তিনি বার বার ধর্মের নামে গরীবকে শোষণ করা, ধর্মের আফিম খাইয়ে দিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করিয়ে দেয়ার ব্যাপারগুলো তুলে এনেছেন। দেখিয়েছেন গ্রামে যেমন ছিলো শোষন তেমন ছিলো ভালবাসা, শহুরে হঠকারিতা। স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে, নিজের প্রয়োজনের জন্যে ধর্মকে ব্যবহার শিক্ষিত রাজনীতিবিদদের সূক্ষন চালকে তার দক্ষ লেখনীর মাধ্যমে তুলে এনেছেন। কতো চাতুরতার সাথে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনে দিয়ে পাশাপাশি বাস করা প্রতিবেশীকে শত্রু করে তোলা যায় উঠে এসেছে তার লেখায়। এই জিনিসটি যে তিনি ততো আগে উপলব্ধি করেছেন এবং তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছেন সেটি তার এই বইটি না পড়লে আমার জানাই হতো না তার সম্পর্কে। পল্লীকবির জীবনকে দেখার দৃষ্টি আর তার তা নিয়ে তার চিন্তা – ভাবনা, বইটি পড়ে তার সম্পর্কে আমার ধারনা বদলে গেছে। তিনি এতোটা অসাম্প্রদায়িক আর মুক্তমনা ছিলেন, কোন ধারনাই ছিলো না।

বইটির সবচেয়ে বেদনার্ত অংশ ছোটবোন বড়ুই আর ভাই বছিরের ভালবাসা।আমাকে বারবার পথের পাঁচালীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো, অপু-দুর্গা। দরিদ্র সংসারে নিদারুন অভাব কিন্তু আদাড়ে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় দুই ভাইবোন মনের সুখে, ফল কুঁড়িয়ে খায়, ফুল কুঁড়িয়ে মালা গাঁথে। আছে পথের পাঁচালীর সেই বিষন্নতা, প্রকৃতির অবাধ স্বাধীনতার কোলে কিশোর কিশোরীদের উদ্দাম বেড়ে ওঠা অনেক ক্ষেত্রেই অনায়সে শহুরে ছেলে মেয়েদের হিংসার কারণ হতে পারে। কিন্তু কলেরায় ভুগে ডাক্তার আর ওষুধের অভাবে বড়ুই এর মৃত্যু দুর্গার মতোই বড্ড করুণ। কাঁদিয়ে আকুল ভাসায়। আমি যেনো চোখের ওপর সেই দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিলাম, কি নিপুন ভাষায় না বর্ননা করে গেছেন সেই দুঃখ গাঁথা। ভাই বছির প্রতিজ্ঞা করলো, যেভাবেই হোক তাকে ডাক্তার হতেই হবে। বড়ুই এর মতো আর কাউকে যেনো অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে না হয়। গরীবের পাশে থাকবে সে, ডাক্তার যেনো আর শুধু শহর আর ধনী লোকদের জন্যে না হয়। ফুলির ভালবাসা অগ্রাহ্য করে চলে যায় বছির গ্রামের লোকদের তার পানে আশা করে থাকার কথা ভেবে, বোন বড়ুইয়ের কবরে করা তার প্রতিজ্ঞার কথা ভেবে ......... যদিও আজকেও বাংলার গ্রামে গ্রামে ডাক্তার আর ঔষধের দৈন্যতা ঘুচেনি। বহু বছিরের বলিদানও রক্ষা করতে পারছেনা বাংলাদেশকে।


সব মিলিয়ে অন্য এক জসীমউদ্দিন ......... অন্য এক জগত ......। এতোটাই বাস্তব সেই পৃথিবী যেনো আমি নিজের চোখে সব দেখতে পাচ্ছিলাম ......... অসীম মুগ্ধতা আর শ্রদ্ধা লেখকের জন্যে

লেখাটি উৎসর্গ করা হলো আমাদের শান্তকে
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
August 25, 2021
গ্রাম্য যুবক আজাহের। বাপ-মা, পরিবার কিচ্ছু নেই তার, নেই কোনো সহায়-সম্পত্তিও। এ বাড়ি, ও বাড়ি মজুর খেটে দিন যায় তার। কিন্তু একসময় সে অনুভব করে লাল টুকটুকে একটা বউ আর একটা স্থায়ী ঠিকানার দরকার তার। মেনাজদ্দী মাতবরের সহায়তায় আর শরৎ সাহার কাছ থেকে করা ঋণে একসময় দুই-ই পেয়েও যায় সে। বউ আয়েশাকে নিয়ে ভালোই কাটছিল তার দিন ; সারাদিন মাঠে কাজ, মাঝে মাঝে রহিমুদ্দী কারিগরের গান আর রাতে বউকে জড়িয়ে নিশ্চিন্ত ঘুম। একসময় পরিবার বড়ও হয় তার ; আয়েশার কোল জুড়ে আসে বছির আর বড়ু।

কিন্তু এই নিশ্চিন্ত জীবন অচিরেই শেষ হয় আজাহেরের। শরৎ সাহার কাছ থেকে করা পনের টাকার ঋণ কখন যে সুদেআসলে পাঁচশ টাকা হয়ে যায় এবং তার বদৌলতে তার জমিজমা সব নিলামে উঠে যায় তা সে টেরও পায় না! বাড়ি ছাড়তে হয় আজাহেরকে। নতুন জায়গায় এসে তার জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় একটাই, যে কোনো মূল্যে বছিরকে শিক্ষিত করে সমাজ থেকে দুর্নীতি আর প্রতারণা দূর করা। বছিরও বাপের কথা বুঝতে পারে, তাইতো শুরু হয় বছিরের নতুন জীবন – পাঠশালার জীবন, শহুরে জীবন। ডাক্তার হতেই হবে তাকে, সমাজ থেকে দূর করতে হবে রোগ-শোক, দুর্নীতি, দুঃশাসন।

পল্লীকবি যখন উপন্যাস লিখবেন তখন যে তা পল্লীজীবন ঘিরেই আবর্তিত হবে তা তো বলাই বাহুল্য। এই উপন্যাসটা মোটামুটি দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমাংশে রয়েছে আজাহেরের জীবন আর দ্বিতীয়াংশে বছিরের জীবন। বছিরের জীবনের একটা অংশ শহরের কাটলেও উপন্যাসটি সামগ্রিকভাবে গ্রাম কেন্দ্রিক। গ্রামের সৌন্দর্য, অর্থনীতি, বিনোদন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সমস্যা, মহাজনদের দাপট – বলতে গেলে পুরো গ্রামীণ জীবনই উঠে এসেছে বইটাতে। আর এইসব অব্যবস্থাপনার বিপরীতে আছে আমাদের নায়ক বছির যাকে প্রতিটা অবহেলিত সমাজ চিরদিন প্রত্যাশা করে এসেছে।

বইটার সবচেয়ে ভালো লাগার দিক নিঃসন্দেহে বইটার গ্রামীণ সমাজের উপস্থাপনা। শরৎ সাহাদের মাধ্যমে মহাজনদের দাপট, কবিরাজ ও হাতুড়ে চিকিৎসদের মাধ্যমে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা, আরজান ফকিরদের মাধ্যমে লোকগীতির টিকে থাকার সংগ্রাম, বচন মোল্লাদের মাধ্যমে অশিক্ষার স্বরূপ, ব্যবসায়ীদের ধুরন্ধরতা ও লোকা ঠকানো, গ্রামীণ সমবায় ও উৎসব ইত্যাদি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। সাথে শহুরে সমাজকেও এনেছেন প্রয়োজনমতো। রমিজউদ্দীনের মাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টিকারী, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, করিমদের মাধ্যমে শহুরে ভাসমান লোকদের জীবন এসবও উঠে এসেছে বইটাতে।

আরও দুইটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বছির ও বড়ুর চমৎকার ভাইবোনের সম্পর্ক এবং ফুলু-বছিরের প্রেম। বছির ও বড়ুর সম্পর্ক নিশ্চিতভাবেই সবাইকে অপু-দূর্গার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই একই দুষ্টুমি, ভালোবাসা, দারিদ্র, শোক, প্রকৃতি। বছির-ফুলুর প্রেম যদিও ততটা বর্ণিত হয়নি তবু শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে গল্প সেদিকেই ধাবিত হবে। শেষটা আরেকটু অন্যরকম হলে যদিও ভালো লাগতো তবু এই পরিণতি আর আশাবাদও ভালো ছিল। মোটের উপর, ভীষণ স্নিগ্ন, প্রকৃতি ঘেঁষা, জীবনধর্মী অথচ আশাবাদে ভরপুর এই উপন্যাসটি ভালো লাগতে বাধ্য।
Profile Image for Anjum Haz.
285 reviews69 followers
March 30, 2025


পল্লীকবি জসীম উদদীনের বিভিন্ন লেখা পড়া হয়েছে তার কাব্যগাথা সোজন বাদিয়ার ঘাট, নকশি কাঁথার মাঠ, আবার তার বাঙালির হাসির গল্প, বিদেশ নিয়ে লেখা স্মৃতিকথা থেকে। কিন্তু পল্লী জীবন নিয়ে পুরোদস্তুর উপন্যাস যে তিনি লিখেছেন, জানা ছিল না। গুডরিডস ফ্রেন্ড আবিদের রিভিউ দেখে জানতে পারলাম।

খেজুরপাটি বিছিয়ে যেমনি বসতে দেয় গ্রামে, তেমনি নকশা করা একটা পাটির ছবি বইয়ের প্রচ্ছদে। দু’শ পাতার খানিকটা কম এই বই। ক্লাসিক্যাল বাংলা উপন্যাস পড়া হয়েছে বিভূতিভূষণের, তারাশঙ্করের, মানিকের। বাংলার দৈন্য গ্রাম সমাজের সাথে পরিচয় হয়েছে সেখান থেকেই। তবে সেকালের মুসলমান গ্রাম সমাজ নিয়ে বেশি একটা পড়া হয়নি, ওই পরীক্ষা পাশ দিতে হাজার বছর ধরে ছাড়া। বাঙালি মুসলমানদের এবং ঠিক আমার দাদাবাড়ি এলাকার ও পাবনা-সিরাজগঞ্জের লোকজনের মুখের ভাষার উক্তি দিয়ে একটা দারুণ বই পড়তে পারবো, ভাবি নি। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল কাটাচামচ, ছুরি ফেলে দিয়ে হাত মাখিয়ে পেট ভরে ডাল ভাত খাচ্ছি। এমনই সরল ও অন্তরগামী এই জনপদের কথা—তাদের মুখের ভাষা এমনই মায়া কাড়ে। সারিন্দার মতো বেজে চলে তার সুর শহুরে পাঠকের অন্তরে। গ্রামের সেই বোবা মাটি যার বুক চিরে সোনা ফসল ফলে, লাঙ্গল দেয়া বলদ গাই গরু দুটি, কাঁঠাল কাঠে বানানো সারিন্দা ও তার উপরে একটি পাখি—এই বোবা অস্তিত্বের কথা পাঠকের কাছে পৌঁছে যায় উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে।

কৃষক আজাহেরকে নিয়ে বইয়ের গল্প শুরু হয়। তারপর তার পরিবার। খুব মজা লাগলো তারা কিভাবে তাদের পরিবারকে সম্বোধন করে জেনে। আমাদের বাবা মারা যেরকম একে অপরকে ডাকে—অমুকের মা, অমুকের আব্বা বলে, ওপার বাংলায় “ওগো শুনছ” এমনটাও বলার চল আছে। আজাহেরের অঞ্চলে তারা বলে “আমাগো বাড়ির উনি”। আর আমাগো বাড়ির উনির সাথে তারা তৃতীয় পুরুষে কথা বলে। যেমন “আমাগো বাড়ির উনি কি ভাত খাইছে,” যার অর্থ দাঁড়ায় “বউ, ভাত খেয়েছ?”

এমনই সরল তাদের জীবন। শরমে মরিয়া যায় তাহারা ঘরণীর সাথে মুখ ফুটে কথা বলতে।
বেচারী আজাহের! কত মাঠের কঠিন বুক সে লাঙলের আঘাতে ফাড়িয়া চৌচির করিয়াছে—কত দৌড়ের গরুকে সে হেলে-লাঠির আঘাতে বশে আনিয়াছে। কত দেশে-বিদেশে সে পৈড়াত বেচিয়া কত বড় বড় লোকের সঙ্গে কথা কহিয়াছে, কিন্তু যে তাহার সারা জীবনের সঙ্গী হইয়া তাহার ঘর করিতে আসিল, তাহার সঙ্গে কথা কহিতে আজাহেরের সাহসই কুলাইয়া উঠিতেছে না, কি করিয়া সে কথা আরম্ভ করে—কোন্ কথা সে আগে বলে কিছুই তাহার মনে আসিতেছে না।

তাদের সীমিত চাওয়া পাওয়ার কথা ভেবে অবাক হয়ে যাই—
অনেক বড় হইতে তাহারা চাহে না। মাথা গুঁজিবার মত দু’খানা ঘর, লাঙল চালাইবার মত কয়েক বিঘা জমি আর পেট ভরিয়া আহার ;—এরি স্বপ্ন লইয়া তাহারা কত চিন্তা করে, কত পরামর্শ করে, কত ফন্দি-ফিকির আওড়ায়।

তাহার পরিবারে যেমন তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে তেমনি এই গরু দুইটি। এদের সঙ্গে সে কথা কহিতে পারিত। এই বোবার ভাষাও সে হয়ত কিছু বুঝিতে পারিত। তার সকল সুখের সঙ্গে সকল দুঃখের সঙ্গে সমসুখী সমদুখী হইয়া ইহারা তাহার স্বল্প পরিসর জীবনটিতে জড়াইয়াছিল।

উপন্যাসের ঘটনার মধ্যে চলে আসে সে সময়ের সমাজ ব্যবস্থা, ধর্ম, আচার অনুষ্ঠান। ইসলামের প্রচার প্রসারে যেভাবে ব্যবসায়িক ব্যবহার হতো, সেটা এতো প্রাসঙ্গিক ছিল।
“খোদা তায়ালা জাল্লা জালালুহু পাক পরওয়ারদেগার কোরান শরিফমে ফরমাইছে, ” এই পর্যন্ত বলিতেই গাঁয়ের এক বৃদ্ধ লোক আহা–হা করিয়া কাঁদিয়া উঠিল,

অশিক্ষিত চাষা-ভুষো, তারা পড়তে জানে না। মওলানাদের মুখের ভাষাই তাদের কাছে কোরআনের মত সত্য। এদেশের মানুষ পালা-পর্বণে গীত শুনে, নৌকা বাইচ করে। তাদের পূর্বপুরুষের পেশা ও গ্রাম জীবনের এন্টারটেইনমেন্টও বটে। মওলানার ওয়াজ যখন তার চূড়ান্ত ইতি ঘটাতে চায়, অশিক্ষিত মানুষও হক-কথায় দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।
“কিন্তুক মোড়ল সা’ব ! আল্লার দোজগের জ্বালা কি দুনিয়ার দোজগের চায়াও বিষম? আমার পুলা–ম্যায়ারা কুনুদিন বাতের দুঃখু পায় নাই। কাইল তারা যখন বাত বাত কইরা কানবি, আমি খাড়ায়া খাড়ায়া তাই হুনব, আল্লার দোজগে কি ইয়ার চায়াও দুষ্কু?”

পাক ভারতে মুসলিম রাজত্ব শেষ হইবার পর একদল মাওলানা এদেশ হইতে ইংরেজ তাড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন। সহায়-সম্পদহীন যুদ্ধ-বিদ্যায় অনভিজ্ঞ সেই মুসলিম দল শুধুমাত্র ধর্মের জোরে সে যুগের ইংরেজ-রাজের অত্যাধুনিক অস্ত্র-সজ্জার সামনে টিকিয়া দাঁড়াইতে পারিল না। খাঁচায় আবদ্ধ সিংহ যেমন লৌহ-প্রাচীর ভাঙিতে না পারিয়া আপন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিঁড়িয়া খাইতে চাহে, সেইরূপ এই যোদ্ধার দল নানা সংগ্রামে পরাজিত হইয়া হৃত-সর্বস্ব হইয়া ক্ষোভে দুঃখে আপন সমাজ দেহে আক্রমণ চালাইতে লাগিল। স্বাধীন থাকিতে যে মুসলিম সমাজ দেশের চিত্র-কলায় ও সঙ্গীত-কলায় যুগান্তর আনয়ন করিয়াছিল, আজ তাহারাই ঘোষণা করিলেন গান গাওয়া হারাম—বাদ্য বাজানো হারাম, মানুষ ও জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কন করা হারাম।

গরিব কৃষক ঠকে ঠকে শেখে যে ছাওয়াল-পাওয়ালগের ল্যাহাপড়া না শিহালি তাদের অপমানটার বদলা নেওয়া হবে না।
মাস্ষ্টারের নির্দেশ মত রান্না করা হাঁড়ীর পিছনে লাউপাতা ঘসিয়া তাহাতে পানি মিশাইয়া তাহারা কালি তৈরী করিয়াছে। তাহা দোয়াতে ভরিয়া সেই দোয়াতের মুখে রশি বাঁধিয়া হাতে করিয়া ঝুলাইয়া লইয়া তাহারা স্কুলে চলিয়াছে। খাগড়া-বন হইতে লাল রঙের খাগড়া বাছিয়া তাহা দিয়া কলম তৈয়ার করিয়াছে। আর কলা পাতা কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করিয়া লইয়াছে। তাহার উপরে মাষ্টার মহাশয় ক, খ প্রভৃতি বর্ণমালা লোহার কাঠি দিয়া লিখিয়া দিবেন। তাহারা উহার উপরে হাত ঘুরাইয়া বর্ণমালা লেখা শিক্ষা করিবে।

আগে হাঁটাপথে স্কুলে যাতায়াত করিতে হইত। তাহাতে স্কুলে পৌঁছিতে তাহাদের এত ঘন্টা লাগিল। এখন ধান খেতের পাশ দিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া নাও দাড়া দিয়া নৌকা চালাইতে হয়। তাই দেড় ঘন্টার আগে তাহারা স্কুলে পৌঁছিতে পারে না। যেদিন বৃষ্টি হয় একজন বসিয়া বুকের তলায় বই-পত্রগুলিকে কোন রকমে বৃষ্টির হাত হইতে রক্ষা করে। কিন্তু তিনজনেই ভিজিয়া কাকের ছাও হইয়া যায়। সেই ভিজা জামা কাপড় শুদ্ধই তাহারা স্কুলে যায়। স্কুলে যাইয়া গায়ের জামা খুলিয়া শুখাইতে দেয়। পরনের ভিজা কাপড় পরনেই থাকে।

এ যেন ট্রেনে চলতে চলতে বাবার মুখে শোনা তার সেই বছরে-ন’-মাস-পানিতে-ডুবে-থাকা সিরাজগঞ্জের এক গ্রামের ছেলেবেলার কাহিনী। আবার কখনো চোখে জল আসে গ্রামের অকৃত্রিম জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের ধাক্কা দেখে।
“আমাগো গান কেউ পোছেও না। দিনি দিনি বাপু কাল বদলায়া যাইত্যাছে। এহন এসব গান কেউ হুনবার চায় না। ওই যে থিয়েটার না কি কয়, নাচনাআলীরা যে সব গান গায় লোকে হেই রহম গান হুনবার চায়। তা হে গান ত আমার জানা নাই।”

এ যেন মায়ের পিঠা বানানোর নাট্যভিনয় ! মাকে এই পিঠা বানাইতে তাহারা কতবার দেখিয়াছে, দেখিয়া দেখিয়া তবুও তৃপ্তি হয় না। শীতের দিনে মা শেষ রাতে উঠিয়া ভাপা–পিঠা বানায়। ছেলে–মেয়ে দুইটি মায়ের সঙ্গে উঠিয়া কতবার তাকে ভাপা–পিঠা বানাইতে দেখিয়াছে।

এই জায়গাটা পড়ে মনে হল নানিবাড়িতে এভাবে আমরা নানীকে কত পিঠা বানাতে দেখেছি। তেল-পিঠা খুব পছন্দ ছিল, নারকেলের খোলের মধ্যে পিঠার পুর নিয়ে নানী চুলায় দিতেন। সেই স্মৃতিটা মনে পড়ে যায় এইটুকু পড়ে।

জসীমউদ্দীন বুঝি তার লিখায় কাব্য না করে থাকতে পারেন না। তাই উপন্যাসের বাক্যগুলোর মাঝেও কবিতা আটকে আছে।
দিনে দিনে হায়রে ভাল দিন চইলা যায়। বিহানের শিশির ধারা দুপুরে শুখায়। বারো জঙ্গ করে মর্দ্দ কিতাবে খবর, তের জঙ্গ লেখা যায়রে টঙ্গির শহর।

অশিক্ষিত জনপদের এই সরল সাধারণ জীবন, তাদের জীবনের যুদ্ধ—আজকে শহুরে ব্যস্ত দিন শেষে, সম-অধিকার, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর সিভিল যুদ্ধ শেষে, যখন বইয়ের পাতায় পড়ি, কতই কনট্রাস্টিং মনে হয়। তাদের সেই গল্পটা এখন অন্যরকম একটা অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। ভীষণ ভীষণ মায়াবী লাগলো তাদের এই বোবা কাহিনী।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
August 21, 2016
সংগ্রামী কৃষক আজাহেরের কাহিনী, কাহিনী তার পুত্র বছিরের। গ্রামবাংলার চিরাচরিত ঘটনা সহজীয়া ভাষায় গল্পের মতো বলে গিয়েছেন পল্লীকবি।
Profile Image for Fareya Rafiq.
74 reviews1 follower
July 24, 2022
বইঃ বোবাকাহিনী
লেখকঃ জসীমউদ্দিন
ধরণঃ চিরায়ত সামাজিক উপন্যাস




"এই কথা মনে রাইখ, তোমারে যে দুঃখ আমি দিয়া গেলাম তার চাইতে অনেক দুঃখ আমি আমার মনের মদ্দি  ভইরা লয়া গেলাম।"

দরিদ্র কৃষক আজাহেরের একটা বউ একটা সংসারের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বললেই কি আর হয়? চাল-চুলোহীন লোককে কে বিয়ে করবে? তার উপর আবার নাই তার বাপ-মায়ের ঠিকানা। নিজের অতীত জানে না, জানেনা কন চাষার ঘরে তার জন্ম, কি তার পরিচয়।
তবুও একদিন মেনাজদ্দি মাতব্বর দক্ষিণ ভাটপাড়া গ্রামের আলিমদ্দির মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে। শুধু বিয়ে ঠিক করলেই কি আর গ্রামের বিয়ে হয়? যার আগে-পিছে কেউ নেই তার বিয়ের বরযাত্রী হবে কে? এবারেও সমস্যার সমাধান করে দিল মেনাজদ্দি মাতব্বর। ফরিদপুরের খলিফাপট্টি থেকে আনা পিরান পড়িয়ে, নিজের গায়ের চাদর দিয়ে পাগড়ি বেধে, বার্নিশের জুতা পড়িয়ে 'নওশা' সাজিয়ে নিয়ে চলল গ্রামেরই আরো পাচ-ছয়জন লোক সাথে নিয়ে। হাসি-ঠাট্টায় রাতের নিভৃতে বিয়ে হয় আজাহেরের। একটা ছোট্ট ঘর হয়,যেই ঘরে তার বউ বিপদে আপদে তাকে আশ্রয় মনে করে। বউকে লাল-নীল মেশানো সোনালি পাড়ের একটা শাড়ি দেবার স্বপ্ন দেখে। বউএর আগমনে তার মনে নতুন রং ধরে, কাজ করার উৎসাহ বেড়ে যায়। 
তারপর একদিন আজাহেরের ঘর আলো করে আসে বছির আর বড়ুর মতো মিষ্টি দুটো ছেলে মেয়ে। হেসেখেলে দিন কাটতে থাকে আজাহেরের।
কিন্তু সুখ যার কপালে নাই, সে কে আর চাইলেই জীবনভর সুখ ভোগ করতে পারে? আজাহেরের সুখও টিকল না। বিয়ের সময় ধার করা টাকা তার গলায় ফাঁসের মতো জড়িয়ে পড়ল। ছোট একটুখানি সঞ্চয়, বাড়িঘর, জমি সব দখলে চলে যায় মহাজন শরৎ শাহার।সেই ফাঁস থেকে মুক্তি পেতে ছাড়তে হল নিজের গ্রাম। তবুও সুখের নাগাল পেলো না। নতুন গ্রামে গিয়ে আজাহারের সাথে নামতে হল ছেলে বছিরকে এক নতুন যুদ্ধে। মৃত্যু যেখানে আঁধারে ঘাপটি মেরে থাকা হায়েনার মতো। এই যুদ্ধ টিকে থাকার যুদ্ধ, প্রতিশোধের যুদ্ধ।নীরব প্রতিশোধ, সেই অন্যায়ের প্রতি যার জন্য বোন বড়ুকে সাজা ভোগ করতে হয়েছে অকালে।

পাঠ প্রতিক্রিয়া :
ছোটবেলা থেকেই পল্লীকবির লেখা আমার ভীষণ ভালো লাগতো।  একটা প্রতিযোগিতার সূত্রে কবির এই বইটির সাথে আমার পরিচয় ঘটে। এর আগে আমি জানতাম না কবি উপন্যাসও লিখেছেন। যদিও এটাই কবির একমাত্র উপন্যাস। 
পল্লীকবির লেখায় লোকজীবন ও গ্রাম-বাংলার ছাপ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু এই উপন্যাসে লেখক শুধু গ্রামের প্রকৃতি আর সেখানকার মানুষজনকেই তুলে ধরেননি, তুলে ধরেছেন তাদের কর্মময় ব্যস্ত আর সংগ্রামী জীবন,তাদের বিনোদন,উৎসবের আমেজকে। রহিমদ্দীর গলায় ছন্দে ছন্দে তুলে ধরেছেন গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-আমেজের কথা।
উপন্যাসের শুরুতে আজাহেরকে মূল চরিত্র বসালেও কাহিনীর চাকা ঘুরিয়ে আজাহেরের ছেলে বছিরকে মূল চরিত্রে সার্থকভাবে স্থান দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং আমার মতে সেটা পেরেছেন।  পুরো উপন্যাস জুড়ে দুটো আলাদা চরিত্রের ভিন্নরকম টিকে থাকার লড়াই যেভাবে তুলে ধরেছেন,  তাতে লেখকের লেখনীর পরিপক্বতার ও নিপুণতার পরিচয় বেশ ভালোভাবেই পাওয়া যায়। এটাকে থ্রিলার ধাচের গল্পের মতোই উত্তেজক মনে হয়েছে। গল্পে আজাহের ও বছিরের কাহিনী সমান তালে চলেছে, যেটা চিরায়ত কাহিনীতে দেখা যায়না।  এই দিক থেকে লেখকের উপন্যাস স্বতন্ত্রতা লাভ করেছে।
গল্পের নায়ক,খলনায়ক, পার্শ্বচরিত্র সবাইকেই সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। একটা সার্থক লেখার এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
আজাহেরের বিয়েতে যেসব রীতি, হাসি-আনন্দের ছবি তুলে ধরেছেন তা যেন আমাদের নানি-দাদিদের মুখে শুনে আসা গল্পেরই এক প্রতিচ্ছবি৷ বরযাত্রীর সাথে বুদ্ধির খেলা, বাড়িতে ঢোকার সময় বকশিস চাওয়া, বকশিস দেয়া নিয়ে দর-কষাকষি, বউয়ের লাজুকতা সব কিছুই যেন আমাকে সেই মুহূর্তে বিয়ে বাড়িতে থাকার অনুভূতি দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আজাহেরের বিয়েতে আমি নিজেও উপস্থিত বর-কনের সাথে।
গল্পে শুধু আবেগ দিয়েই লেখক বাস্তবতাকে তুলে ধরেননি। কিছু জায়গায় হাস্যরসও যোগ করেছেন। যেমন,  "
এখন বিবাহ-বাড়ির নিকটে  আসিয়া জুতাজোড়া কাধেঁরগামছা দিয়া মুছিয়া তাহার মধ্যে অবাধ্য পা দুটি ঢুকাইয়া দিল।এই কার্যটি করিতে বলিষ্ঠ-দেহ মোড়লকেও সেই জুতোজোড়ার সঙ্গে প্রায় পনর মিনিট যুদ্ধ করিতে হইল।"
উপন্যাসটির খারাপ লাগা বলতে আমার কিছুই মনে লাগেনি।  তবে পড়ার পর "সবচেয়ে ভালো লাগা"-র তারতম্য হয়েছে। যেমন, উপন্যাসের একদিকে আজাহেরের সুখী সংসারকে ভালো লেগেছে, আবার যখন বছির আর বড়ুর ছেলেবেলার খুনসুটি পড়ছিলাম তখন আজাহেরের সংসার জীবন থেকে বেশি ভালো লাগছিল। আবার গ্রামান্তর হবার পর নতুন জীবনে টিকে থাকার চেষ্টা,সেখানে গ্রামবাসীর সমবেত জীবন আগের গ্রামের চেয়ে ভালো মনে হয়েছে।
নতুন গ্রামে মানুষরা যেভাবে আজাহেরের মতো অপরিচিতকে একজন দূর সম্পর্কের আত্নীয়ের কথায় আপন করে বিয়েছিল সেই ঘটনাটুকু পড়তে আসলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করেছে৷ কত সহজেই মানুষকে আপন করে নেয়া যায় লেখক চোখে আঙুল দিয়ে তা যেন বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন।ল আবার মহাজন শরৎ শাহার চরিত্রের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন দুর্বলের উপর সবলের জুলুমের চিত্র, গ্রামের মানুষের অপারগতার চিত্র।
নতুন গ্রামে বছির-বড়ুর সাথে ফুলীর বেড়ে উঠা, বছিরের প্রতি ফুলীর অন্যরকম ভালো লাগা সব যেন অপার্থিব, অকৃত্রিমতার এক ছাপ ফেলে দিচ্ছিল। ফুলীর নিরব ভালোবাসার কথা জেনেও বছির যেভাবে তাকে দূরে করে দিচ্ছিল তাতে মনে হয়েছে লেখক একটু বেশি কঠোর হয়ে গেলেন বছিরের জীবনের যুদ্ধের জন্য। তবে বছির-বড়ুর বেড়ে উঠার চিত্রের কিছু অংশে বিভূতিভূষণের ছাপ রয়েছে মনে হয়েছে। তবে কাহিনী পাঠকের মনে ধরলে এসব বিষয় উহ্য রাখা যায়।
উপন্যাসটা পড়ে আমার ফুলী আর বড়ুর জন্য খারাপ লাগতে শুরু করেছিল। লেখক কি নিদারুণ কষ্ট দিয়ে লেখাটা শেষ করেছেন ভেবেই মন খারাপ হচ্ছিল। কি এক আকাঙ্ক্ষা,  গভীর মমতায় উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন ভাবতেই মনে হয় এমন লেখনী শুধু পল্লিকবির হাত থেকেই পাওয়া সম্ভব৷
".... আমারে মনের মতো কইরা কানতি দাও। কবরে যে ঘুমায়া আছে সেই একজন ক্যাবল আমার কান্দন শুনতি পায়।......বুকের বোবকাহিনী যাহার কহিবার ভাষা নাই, সে যদি কাঁদিয়া কিছুটা সান্ত্বনা পায়, তাহাকে কাঁদিতে দাও!”
Profile Image for নিশাত জাহান ঊষা.
63 reviews30 followers
April 19, 2021
গল্পটা গাঁয়ের চাষা আজেহারের, সাতকুলে যার কেউ নেই। একটা আপন গৃহ হবে, টুকটুকে বউ হবে, মাঠ থেকে ফিরে বসতে পারবে সুন্দর লেপাপোছা উঠোনে, বউকে কিনে দিবে টুকটুকে শাড়ী... এসব ভীষন শখের স্বপ্ন তার। সেই উদ্দেশ্যে তিনকুড়ি টাকা জমিয়ে গাঁয়ের মাতব্বরের কাছে যেয়ে মনের ইচ্ছাটা জানায় সে লজ্জায় রাঙা হয়ে। গাঁয়ের সব লোক যেনো স্নেহ-ভালবাসার আকর। তারা একে অন্যের সুখে সুখী হয় আর দুঃখের সময়ে এমনিভাবে পাশে থকে যেনো বিপদটা নিজের! তারা সবাই মিলে বরযাত্রী চললো ভিনগাঁয়ে, আজেহারের কনে নিয়ে আসতে।

মোড়ল বাব়বার আজেহারকে শিখিয়ে দিয়েছিলো যেনো সে কম কম হাসে আর একটু লজ্জা পায়। কিসের কি! টুকটুকে বউকে দেখে আজেহার ফিক করে হেসে দিয়েছিলো সব ভুলে। লেখক আজেহারের অনুভূতি বোঝাতে লিখেছেন, মাঠভরা সর্ষে ক্ষেতে বাতাস বয়ে গেলে যেমন ঢেউ উঠে, ঠিক তেমনই ঢেউ বয়ে গেলো আজেহারের বুক জুড়ে। গল্পটা এমনিভাবে ভীষন ভালোলাগা নিয়েই এগুতে থাকে। কিন্তু ঘটনার ধারাবাহিকতায়, দারিদ্রের তাড়নায় ভিনগাঁয়ে পাড়ি জ‌মায় আজেহারের পরিবার! ক্রমেই গল্পটা হয়ে ওঠে বছিরের। আজেহারের ছোট্ট ছেলে বছির।

এই গল্পের সাথে হেসেছি, বিভিন্ন জাগায় কেঁদেছি। পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের যথার্থ উপাধী, কি মারাত্নক সুন্দর ছবি এঁকেছেন গ্রাম বাংলার। কি সুন্দর সৃষ্টি এই উপন্যাস। অদ্ভুত সুন্দর।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
June 4, 2022
আজাহার এই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা, নিজের বলতে কেউ নাই কিছু নাই। অন্যের বাড়ীতে কাজ করে, থাকে কিন্তু কাজের পারিশ্রমিক সে কখনও পায় না, আর চাইলেই তখন সেখানে তার ঠাই হয় না।
তবুও তার মনে ইচ্ছা জাগে নিজের একটা ঘরের এবং সেই ঘরে নিজের আপন একজন মানুষের। সে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে গ্রামের মোড়ল এর সহায়তায় বিয়ে করে। অনেক উচ্ছাস, আনন্দ নিয়ে শুরু করে নতুন জীবন, অচেনা অজানা একজন মানুষ হঠাৎ করে নিজের আপন জন হয়ে ওঠার এক তিব্র আশা নিয়ে।

পল্লী কবি জসিমউদদীন এর "বোবা কাহিনি" গ্রাম বাংলার চির পরিচিত এক রুপ। যেখানে মানুষে মানুষে ভালোবাসার সাথে স্বার্থপরতা, ঠকানো সম পরিমানে বিরাজমান। ইংরেজ সরকারের আমলের সেই সময়ের গ্রামের জীবন বড়ই জটিল ও কঠিন সেখানে টিকে থাকাটা এক কঠিন ব্যপার। লেখকের চমৎকার সব লেখা মতই এই বইটাও।
Profile Image for Mir Mohammad.
13 reviews27 followers
April 25, 2023
কি এক অসাধারণ লেখনীর হাত পল্লীকবির। কবির প্রতি "কাজলা দিদি" কবিতার মধ্য দিয়ে যেই ভালো লাগার শুরু, "বোবা কাহিনীর" মতো গল্পের মাধ্যমে তা গুণোত্তর হারে শুধু বাড়েই। আজাহের নামক বালকের কষ্টের জীবনের পথচলা দিয়ে শুরু, সেখানে ক্ষণে ক্ষণে সুখের পরশ আসে যা দুঃখের হামাম দিস্তায় কোন ধনীর হাতে পিষ্ট হয়। সেই পথচলা গ্রামের কৃষকের সারাজীবনের। তো তা চলতে চলতে আজাহেরের ছেলে বছিরের আরেক কষ্টের জীবন শুরু হয়। দুই প্রজন্মের কষ্টের জীবনের এক ডায়েরি এই বই।

পল্লীকবির লিখায় ফুটে উঠে গ্রামের হতদরিদ্রের বিয়ে বাড়ির আয়োজন, হাসি-তামাশা। আবার সুদ দেয়া লোকের নির্মম আচরণ, জঙ্গলের বন্য ফুলের বর্ণনা, বন্য ফল কুড়িয়ে নেয়া বালক-বালিকার সখ্যতা, আসল বাংলা গ্রামের চিত্র।
Profile Image for Saiful Islam.
58 reviews1 follower
August 21, 2023
শুরুটা হয় এক গ্রাম্য দিনমজুর আজাহেরের বিয়ে করার স্বপ্ন নিয়ে। আর সবার মত তারও একসময় বিয়ে হয়। দুটো বাচ্চা হয়। সাংসারিক জীবনে প্রবেশের পর অনেক উন্নতিও ঘটে আজাহেরের। কিন্তু হঠাৎই কালো মেঘ জমে আকাশে। বিয়ের সময় ১৫ টাকা ঋণ করেছিলো শরৎ সাহার নিকটে। সেই ঋণ সুদে বৃদ্ধি পেয়ে এমন অবস্থা হয় যে একসময় বাড়িঘর,জমিজমা সব দখল করে নেয় সেই কেউকেটা শরৎ সাহা। খুব নিখুতভাবে গ্রামের মানুষের সরলতার দুর্বলতার দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়।
এরপর নতুন এক গ্রামে চলে আসে আজাহেরের পরিবার। জীবন যুদ্ধে হার মানেনা তারা। নতুন গ্রামের মানুষদের সহায়তায় আবারো তাদের নতুন ঘর ওঠে, উঠোনে শাক-সবজির গাছ জন্মায়।
এখানেই কি শেষ? না শেষ না। জীবন কখনো কাউকে শান্তি দেয়না পুরোপুরি। তবুও জীবন এগোতেই থাকে....
"পথের পাঁচালি" র অপু দুর্গার কথা বারবার মনে পরে যাচ্ছিলো বছির,বড়ুর অরণ্যের উন্মাদনায়।
আবার বছিরের মাদ্রাসায় স্থান নেয়ার সময়টুকুতে "লালসালু" মনে পরে যাচ্ছিলো।
এই বইটাকে বলা যায় অনেকগুলো বইয়ের মিশ্রণ। অনেককিছু মিশিয়ে আমরা যেমন খাবারের নতুন আইটেম বানাই ঠিক সেরকম। তবুও ভালোই...
Profile Image for Md. Mahmudur.
5 reviews1 follower
February 5, 2024
করুণ উপাখ্যান, ঘটনার পরম্পরা ও প্রাণ - প্রকৃতির শৈল্পিক বর্ণনায় জসীমউদ্দিন যেন এক অনবদ্য শিল্পী, এই বই পড়তে গিয়ে আমার হিয়া, আমার চিত্তের মধ্যে ভাবাবেগের যেরূপ উত্থান - পতন ঘটেছে তা বলে বোঝানো দায়। আর শেষের ১০ পাতা আহা! পড়ে মনে হইছে কী সুন্দর! আমি এ কী পড়লাম! আহা! আহা! মন জুড়ায়ে গেল। (শিল্প, সঙ্কট, সমাপ্তি) সেরা👌
Profile Image for Panna Roy.
7 reviews3 followers
August 11, 2022
সত্যিকারের মন জুড়ানো বোবা কাহিনী।
6 reviews2 followers
September 14, 2019
কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের কাহিনী শোনার মতো কেউ থাকেনা, বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনের খোঁজ থাকেনা, ঘর বাড়ি সেটাও থাকেনা। আজাহের তেমনই একজন মানুষ,যার নিজের অতীত সম্পর্কে সঠিক মনে নেই। স্রোতের শ্যাওলার মতো ভেসে চলেছে যার জীবন। নানান জায়গায় ভেসে ভেসে, এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি ঘুরে ঘুরে তার জীবনের পঁচিশটি বছর পার করেছে। কিন্তু সবাই তাকে ঠকিয়েছে, কেউ ক্ষেত খামারে কাজ করিয়ে, কেউ গরু বাছুর তদারকি করিয়ে, মনের ইচ্ছে মতো খাটিয়ে বেতন না দিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।জীবনে ঠকতে ঠকতে সে ঠিক করেছে আর ঠকবে না,বেতন না নিয়ে কারো বাড়িতে কাজ করবে না। কিন্তু ��েতন নিয়েই বা কি করবে? তার মা নেই, বাবা, নেই, তাই ঠিক করে সে বিয়ে করবে। সেজন্য সে কঠোর পরিশ্রম করে। তাকে আশ্রয় দেয় গ্রামের মিনাজুদ্দী মাতব্বর। বিয়েও করিয়ে দেয়। বিয়ের সময় সে সুদে পনেরো টাকা ধার নেয় জোতদারের কাছ থেকে। সেখান থেকেই তার জীবনের কাহিনী শুরু, যা প্রত্যেকটি কৃষকের বোবা কাহিনী, যা তারা মুখ ফুটে বলতেও পারেনা।

আজাহের বিয়ে করে ঘরে আনে টুকটুকে বউ। লক্ষীমন্ত বউ, সংসারের উন্নতির জন্য যে স্বামীর সাথে প্রাণ দিয়ে খাটে। দুজনের পরিশ্রমে সংসার হয়ে উঠে সোনার ফসল, আজাহের যেখানেই হাত দেয় সেখানেই সোনা ফলে। দুটো ফুটফুটে ছেলে মেয়ে হয়, বছির আর বড়ু। সোনার সংসার বলতে যা বুঝায় আজাহেরের তাই, কিন্তু সেই সোনার সংসারে নেমে আসে জোতদারের করাল থাবা। পনেরো টাকার বদলে সে কত পনেরো টাকা দিয়েছে তার হিসেব নেই কিন্তু সেই পনেরো টাকা পাঁচশো টাকা হয়ে তার জমিজমা, গরু সব নিয়ে যায়। আজাহের আবার হয়ে যায় ভাসমান মানুষ,এবার সে একা নয় পুরো পরিবারসহ।

আজাহের পরিবার নিয়ে আসে ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে, যেখানে পুরো গ্রামবাসী তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ম্যালেরিয়া, কলেরা আর মশার জন্য গ্রামের অর্ধেক মানুষ মারা যায়। এখানে এসে আজাহেরের ছেলে মেয়ে অনেক খুশি হয়, তারা তাদের খেলার সঙ্গী পায় গ্রামের মাতব্বরের ছেলে মেয়েকে। সারাদিন বল জঙ্গলে ঘুরে ফিরে তারা ফুল,ফল পাখি দেখে, আর নানান খেলা খেলে। কিন্তু এখানে আজাহেরের দূর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনা। একদিনের বেদ বমি হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায় তার মেয়ে বড়ু। ডাক্তারদের ফিস যোগাড় করতে না পারার কারণে প্রথমে হাতুড়ে ডাক্তার পরবর্তীতে মেয়ের লাশ নিয়েও অন্য ডাক্তারের ফিস দিতে হয়। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করে সে একদিন মস্তবড় ডাক্তার হবে। কিন্তু গরীবের ছেলের এতো বড় স্বপ্ন কি সত্যিই পূরণ হবে?
তাছাড়াও তার কেউ নেই যে তাকে সাহায্য করবে, শহরে আছে আরো বড় বড় জোঁক যারা গরীবের রক্ত চুষে খায়। তারা কি দিবে বছিরকে উপরে উঠতে, নাকি গরীব সারাজীবন মার খেয়ে যাবে সমাজের করাল গ্রাসে?

পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ পল্লীকবি জসিম উদ্দীন প্রকৃত অর্থেই পল্লীকবি। বোবা কাহিনী বইটিতে তিনি গ্রামের প্রকৃতির যে চমৎকার ভাব ফুটিয়ে তুলেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়। বইটা পড়ার সময় আমার শুধু পথের পাঁচালির কথা মনে পড়ে গেছে। বছির আর বড়ু যেনো অপু আর দুর্গারই আরেক রূপ। এটা সেই সময়ের কাহিনী যখন বৃটিশ শাষকের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে আর গ্রামীণ সুদখোর জমিদার, জোতদার, শহুরে রক্তচোষা আইনজীবী আর মৌলবাদী ধর্ম ব্যবসায়ী আর পিরতন্ত্রের জাতাকলে পিষ্ট হচ্ছিলো সাধারণ গরীব মানুষ। এটা সে সাধারণ মানুষের বোবা কাহিনী, যা তারা কখনো মুখ ফুটে বলতে পারেনা।

অনেক অনেক ধন্যবাদ Mostanoor Sarker Moon কে এতো সুন্দর একটা বই গিফট করার জন্য।

বইয়ের_নামঃ বোবা কাহিনী
লেখকঃ জসীম উদ্দীন
প্রকাশনীঃপলাশ প্রকাশনী
মূল্যঃ ১২০ টাকা
Profile Image for Md. Mahmudul Hasan.
36 reviews
January 2, 2020
পল্লীকবি জসিম উদদীনের একমাত্র উপন্যাস বোবা কাহিনী। পল্লী তাঁর যাবতীয় রচনার উৎস এটাকে মিথ্যা প্রমাণ না করেই তিনি এটা পল্লীর এক পরিশ্রমী কৃষকের পারিবারিক আখ্যানকে তুলে ধরেছেন। পল্লী সন্তান হওয়ার কারণে অনেক কিছু জানা তাই অতটা আগ্রহ সৃষ্টি করতে না পারলে মোটামুটি এক রকমের উপন্যাসে পরিনত হয়েছে। ভালবাসার এক অন্য রকম সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যাবে। বিদায়বেলায় সেই অন্য রকম বিদায় নানা কথা মনে করিয়ে দিবে। সাধারণত আমরা বলতে পারতাম মেয়েটাকে ফিরায় নাও দিতে পারতো কিন্তু আমিতো উপন্যাসে লেখক না তাই আমার মতামত কাজের না। কিন্তু লেখক কৃষকের ছেলের জীবন সংগ্রাম অনেকটা নিখুঁতভাবে তুলে ধরা চেষ্টা করে। হয়তো আমার চাহিদার সাথে মিলিয়ে যায়নি তারপরেও সেই সময়ে প্রেক্ষাপটে বাংলার অবস্থা বিবেচনা করে বলা যেতে পারে কবির এক অসাধারণ উপহার এই উপন্যাসটি।
Profile Image for Muzibur Rahman.
5 reviews1 follower
February 7, 2017
I had a curiosity to know about the traditional Bengali culture and this book completed that. Wow !! The more I read the more I became astonished - not only for the story it tells but also for the style of this writer. I knew Jasimuddin as a poet and I think almost every Bengali also does. But who knew that he was a so good novelist ! Hats off to Jasimuddin. Well, who didn't read this, I am recommending this book as good as the other famous novels like সুর্যদীঘল বাড়ি ('The Ominous House' by Abu Ishaak ) or হাজার বছর ধরে ('For Thousands of Years' by Jahir Rayhan).
Displaying 1 - 17 of 17 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.