Jump to ratings and reviews
Rate this book

জীবন কথা

Rate this book
দুই বৎসর আগে অসুস্থ অবস্থায় করাচিতে বসিয়া আমি আমার জীবনকথা লিখিতে আরম্ভ করি, তারপর দেশে ফিরিয়া এই পুস্তকের প্রথম খণ্ড সমাপ্ত করিলাম। কিন্তু লিখিতে বসিয়া মনে হইল, আমার জীবনকথা বুঝি কোনোদিনই শেষ হইবার নয়। জীবনের সুদীর্ঘ পথ-বাঁকে কতজনের সঙ্গে পরিচয় হইয়া কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি। কতজনের কাছে কত রকমের সাহায্য পাইয়াছি। তাঁহাদের কথাও একে একে লিখিতে হইবে। গ্রাম্য-গান সংগ্রহ করিতে আমাকে উভয় বঙ্গের বহু গ্রামে ঘুরিতে হইয়াছে । কলিকাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও অধ্যাপনাকালে এবং কলিকাতা ও ঢাকা সেক্রেটারিয়েটে চাকরিজীবনে আমার অনেক অভিজ্ঞতা জমা হইয়া আছে। গ্রাম্য-গান প্রচারে আমাকে বহু প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে সংগ্রাম করিতে হইয়াছে। এই উপলক্ষে কলিকাতা ও ঢাকার বহু গায়ক- গায়িকা ও বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে আমার পরিচয় হইয়াছে । এই সকলও লিখিতে হইবে। কিন্তু পুস্তকের কলেবর বৃদ্ধি হইয়া যায় মনে করিয়া এবারের মতো শুধু আমার বাল্যজীবনের ঘটনাগুলিকেই প্রকাশ করিলাম ।
চিত্রালীতে এই পুস্তক ধারাবাহিক প্রকাশ করিয়া সোদর-প্রতিম এস. এম. পারভেজ আমার ধন্যবাদের পাত্র হইয়াছেন। চিত্রালীতে বহু পাঠক পত্র লিখিয়া গ্রন্থকারকে উৎসাহিত করিয়াছেন । একজন লিখিয়াছেন :
‘জসীম উদ্দীনের জীবনকথা পড়িতেছি না মায়ের হাতে পিঠা খাইতেছি।' ইহাদের সকলকেই আমার ধন্যবাদ জানাইতেছি।
পলাশ বাড়ি
১০ নং কবি জসিম উদ্দীন রোড
কমলাপুর, ঢাকা-১৪
৷৷ ১লা জৈষ্ঠ ১৩৭১ ॥
জসীম উদ্দীন

296 pages, Hardcover

First published May 15, 1964

27 people are currently reading
400 people want to read

About the author

Jasim Uddin

56 books86 followers
Jasimuddin (Bangla: জসীম উদদীন; full name: Jasimuddin Mollah) was a Bengali poet, songwriter, prose writer, folklore collector and radio personality. He is commonly known in Bangladesh as Polli Kobi (The Rural Poet), for his faithful rendition of Bengali folklore in his works.

He obtained his BA degree in Bengali from the University of Calcutta in 1929 and his MA in 1931. From 1931 to 1937, Jasimuddin worked with Dinesh Chandra Sen as a collector of folk literature. Jasimuddin is one of the compilers of Purbo-Bongo Gitika (Ballads of East Bengal). He collected more than 10,000 folk songs, some of which has been included in his song compilations Jari Gaan and Murshida Gaan. He also wrote voluminously on the interpretation and philosophy of Bengali folklore.

Jasimuddin started writing poems at an early age. As a college student, he wrote the celebrated poem Kabar (The Grave), a very simple tone to obtain family-religion and tragedy. The poem was placed in the entrance Bengali textbook while he was still a student of Calcutta University.

Jasimuddin is noted for his depiction of rural life and nature from the viewpoint of rural people. This had earned him fame as Polli Kobi (the rural poet). The structure and content of his poetry bears a strong flavor of Bengal folklore. His Nokshi Kanthar Maath (Field of the Embroidered Quilt) is considered a masterpiece and has been translated into many different languages.

Jasimuddin also composed numerous songs in the tradition of rural Bengal. His collaboration[4] with Abbas Uddin, the most popular folk singer of Bengal, produced some of the gems of Bengali folk music, especially of Bhatiali genre. Jasimuddin also wrote some modern songs for the radio. He was influenced by his neighbor, poet Golam Mostofa, to write Islamic songs too. Later, during the liberation war of Bangladesh, he wrote some patriotic songs.

Jasimuddin died on 13 March 1976 and was buried near his ancestral home at Gobindapur, Faridpur. A fortnightly festival known as Jasim Mela is observed at Gobindapur each year in January commemorating the birthday of Jasimuddin. A residential hall of the University of Dhaka bears his name.

He was honored with President's Award for Pride of Performance, Pakistan (1958), DLitt. by Rabindra Bharati University, India (1969) Ekushey Padak, Bangladesh (1976), Independence Day Award (1978).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
84 (69%)
4 stars
30 (24%)
3 stars
5 (4%)
2 stars
1 (<1%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 36 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
January 24, 2023
কী পড়লাম আমি এইটা!!!

বিখ্যাত ব্যক্তিদের আত্মজীবনী আমাদের সমৃদ্ধ করে অনেক সময়। কিন্তু আত্মজীবনী পড়ে চোয়াল ঝুলে পড়ার ঘটনা খুবই কম।এই বইটা পড়ে আমি এতো অবাক হয়েছি!!জসীম উদ্দীনের বাল্যজীবন বৈচিত্র্যময় ও রোমাঞ্চকর ঘটনায় পূর্ণ। শান্ত, স্নিগ্ধ, চিয়ায়ত পল্লীজীবনের চিত্রকরের সাথে যেন মেলানো যায় না বইতে বর্ণিত ঘটনাপ্রবাহ। নিজের পরিবারের সুখদুঃখ,দারিদ্র্যের কথা কবি অকপটে লিপিবদ্ধ করেছেন। তার মা ও নানীর মধ্যকার গভীর মমত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে লেখা অধ্যায়টা এই বইয়ের সবচেয়ে সুন্দর অংশ।জসীম উদ্দীনের গ্রামে একবার এক সন্ন্যাসী আসেন। কবি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ও সেই অল্প বয়সেই সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করেন।একশো বছর আগে হিন্দু গুরু ও মুসলিম শিষ্যের এই ঘটনা সমাজের মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করে।ভাবা যায়? এখন তা চিন্তাই করা যায় না। সেই সময়ের হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক, বিরাজমান বিভিন্ন ছুৎমার্গ খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন কবি। পড়ালেখা শিখতে যেয়ে মুসলিম ছাত্ররা তখন যারপরনাই গঞ্জনা ও যন্ত্রণায় পড়তেন। কারণ বাসায় তাদের সাহায্য করার কেউ ছিলো না। স্কুলেও শিক্ষকরা দুর্বল ছাত্রদের ব্যাপারে ভয়ংকর উদাসীন ছিলেন। ফলস্বরূপ সেসব বিদ্যানুরাগী শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিতেন।
হিন্দু বন্ধুর বাসায় থেকে পড়ালেখা করা ও সেই সময়ের সাম্প্রদায়িকতার বাঁধা উপেক্ষা করে কবি যেভাবে সেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তা পড়ে মুগ্ধ হতে হয়। মহামারির সময় সবাই যখন কলেরা রোগীদের ফেলে রেখে গ্রাম থেকে পালিয়ে যেতো, সেসময় কিশোর জসীম উদ্দীন ও অসম সাহসী কিছু মানুষ বাড়ি বাড়ি যেয়ে অসুস্থদের সেবা করে তাদের বাঁচিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন।বাংলার ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণ ছিলো সেই সময়টা। ছিলেন মহৎপ্রাণ অনেক মানুষ। আর ছিলেন জসীম উদ্দীন। নিজের বেড়ে ওঠার সময়টাকে কালো অক্ষরে অক্ষয় করে রেখেছেন তিনি "জীবন কথা" বইতে। এই আশ্চর্য সুন্দর স্মৃতিকথাটা পড়া থেকে কারোরই নিজেকে বঞ্চিত করা উচিত না।

(১৫ ডিসেম্বর, ২০২২)
Profile Image for Nadia Jasmine.
213 reviews18 followers
March 4, 2023
স্কুল কলেজের পাঠ্যবইয়ের লেখকদের প্রতি আমাদের মধ্যে (অন্তত আমার) একধরণের অনাগ্রহ কাজ করে। যেই কারনে সুসাহিত্য সম্পর্কে একটু পরিণত ধারনা তৈরি না হলে এদের লেখায় ফিরে যাওয়া হয় না। পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের কোন না কোন কবিতা অথবা গদ্যাংশ প্রায় প্রতি ক্লাসেই থাকতো। জানতাম, তিনি পল্লীকবি। লেখক পরিচিতির কল্যাণে কোন এক সময়ে তাঁর জন্মমৃত্যু এর সাল-তারিখও পরীক্ষার জন্য মুখস্থ করতে হয়েছে। কিন্তু এই বই সংগ্রহ করার আগে ওনাকে আলাদা ভাবে আবিষ্কারের ইচ্ছা আসে নি। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হল ওনার যেই বইয়ের মাধ্যমে মোটামুটি বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাঠক তাঁকে চেনা শুরু করেন, আমার সেই ‘নকশিকাঁথার মাঠ’ পড়ারও সৌভাগ্য হয় নি এখনো।

‘জীবন কথা’, 'বাঙ্গালির হাসির গল্প' বাদ দিলে আমার প্রথম জসীমউদ্দিন। কারন, 'বাঙ্গালির হাসির গল্প' ছিল সংগৃহীত গল্পের সংকলন। তাঁর আত্মজীবনী পড়ে আমি এতোটা আপ্লুত হয়েছি যে চেষ্টা করব আস্তে আস্তে তাঁর সব রচনা পড়তে, কবিতা, প্রবন্ধ থেকে শুরু করে গীতিকাব্যও।

পাকিস্তানের করাচিতে থাকা অবস্থায় তিনি এই লেখা শুরু করেন। প্রচ্ছদ নিয়ে আলাদা করে সাধারণত বলি না, কিন্তু, এই বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে বলতে চাইছি। কারন, তিনি নিজে জামদানি শাড়ীর নানা মোটিফ দেখে সেগুলোর মধ্য থেকে একটি বেছে নিয়েছিলেন এবং বাছাইকৃত মোটিফ দিয়েই প্রচ্ছদ পরিকল্পনা করা হয়েছে। বইটি পড়লে এর প্রচ্ছদটি আরো প্রাসঙ্গিক মনে হয়। কারন, এতে তৎকালীন পুব বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা একটি ছোট ছেলের জীবনের যেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সরস বর্ননা উঠে এসেছে, তা কখনো পড়ার সুযোগ পাব ভাবি নি। জামদানির সেই মসলিন যেমন বিলুপ্ত, তেমনি, জসীমউদ্দিনের ছোটবেলায় ফিরে গেলে সেই নিটোল, নিষ্পাপ ও সবুজে ঘেরা ছোটবেলাও যে এখন আর নেই, তা বোঝা যায় এবং বুঝে কষ্টই লাগে।

তাঁর রচনাভঙ্গী সরল, বিনয়ী ও অকপট। নিজের জীবনের নানা প্রাপ্তির কথার পাশাপাশি ছোটখাটো দুর্ভাগ্যজনক, অস্বস্তিকর ও মাঝে মাঝে বেশ অপমানজনক ঘটনাও তিনি সহজভাবে বলেছেন। তাঁর জীবনকে যেসব মানুষ ছুঁয়েছে, যেমন তাঁর অন্ধ এক দাদা, যাদব ঢুলি, সন্ন্যাসী ঠাকুর, সুবোধ ডাক্তার, অতুল ছাড়াও তাঁরা বলতে গেলে বেশিরভাগই পরার্থে জীবন উৎসর্গ করে কিছু না পাওয়া মানুষ। এদের নিঃস্বার্থ জীবন তাঁকে তাঁর জীবনের রূপরেখা গড়তে অনুপ্রাণিত করেছে। তাছাড়াও, কাজেম ফকির, সরিতুল্লা হাজীর মতো চরিত্ররা যে উপন্যাসের বাইরেও অবস্থান করে, তা তিনি লিখে না গেলে অতোটা বিশ্বাস করতে পারতাম না।

গ্রাম বাংলার যেই বর্ননা উনি শুরুতে ছোট একটা মানুষের চোখ দিয়ে আমাদের সামনে এনেছেন, তা মনকাড়া। বনে বাদাড়ে ঘুরে তিনিও অপু দুর্গার মতো ফল পাড়তেন। আমি অবাক হয়েছি জেনে যে তাঁর নিজের গ্রামে সুপারি গাছ ছিল না, কারন হতো না। কিন্তু নানার বাড়ি গিয়ে তিনি সেই গাছে চড়া রপ্ত করেছিলেন। আমার অবাক হবার কারন, সুপারি গাছ বা এরকম আরো কিছু গাছ যে কোথাও হয় বা হয় না, আবার পাখিও যে সব গ্রামে থাকে না, এ তথ্য জানা ছিল না। ছোটবেলায় গ্রামের দৃশ্য আঁকার সময়ে মনে হতো, যে সব গ্রাম একই এবং সেখানে গাছ গাছালি বা পাখিদের আসা যাওয়া একই রকম! তাছাড়াও পড়লাম, ভাপা পিঠা নিয়ে কতো লোকাচার অনুসরণ করে শেষমেশ খাওয়া হয়। শুধু অবশ্য পিঠা না, আরো অনেক খাবার নিয়েই তিনি লিখেছেন। জানতে পেরেছি, লেখাপড়া না জানা লোকজন কি করে আরেক গাঁয়ে বসবাসরত আত্মীয়ের খবর চিঠি না লিখে পেতেন। উপায়টা অভিনব লেগেছে পড়ে। এক গ্রামের লোক আরেক গ্রাম থেকে আসা ভিখারীদেরকে অনুরোধ করতো খবরাখবর বলতে। এরকম আরো অনেক কিছু বইটিতে পেয়েছি, যা শহরের ঘেরাটোপে বন্দি জীবনের কল্পনাতেও আসে নি। যেমনঃ যাদব ঢুলির ঢোল বাজানোর কসরতের বর্ননা রীতিমতো রোমাঞ্চকর। ভালো লেগেছে, মৌলবিদেরকে নিয়ে বলা কিছু কথাও। তিনি বলেছেন, গ্রামের লেখাপড়া না শিখতে পারা মানুষজনকে এরাই কুরআন হাদীসের আলোকে সৎপথে থাকতে উদ্বুদ্ধ করতেন। যেই কারনে, এসব মৌলবিদের সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি জানতে হতো, বিশ্লেষণী ক্ষমতা থাকতে হতো।

কবি ছোটবেলা থেকেই ছন্দে, কবিতায় ডুবতে চাইতেন। নয় দশ বছর বয়সে তিনি বিয়েবাড়িতে কবিগানের আসর দেখতে গিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসার পথে বুঝলেন যে মুখে মুখে কবিতা বানিয়ে ফেলার তাঁর এক সহজাত ক্ষমতা আছে। এই কারনে, কবির লড়াইয়ের প্রতি তাঁর মধ্যে এক দারুন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এরপর এইটুকু মানুষ বেশ পাকা হয়ে উঠেছিলেন এই কাজে এবং তখনকার দিনের তুখোড় সব কবিয়ালদের সাথে তিনি কবির লড়াই করেছিলেন।

অভাবের সংসারে বড় হয়েও লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন তিনি। ছোটবেলায়ই তিনি নানা ধর্ম সম্পর্কে নিজ উদ্যোগে জেনেছিলেন। নিজের ধর্মের প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ছিল, তাই বলে অন্য ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা ছিল না। বইটিতে সাবলীলভাবেই তিনি ধর্মের সমালোচনাও করেছেন। চতুর্থ শ্রেণীতে থাকার সময়ে তাঁর জীবনে যা ঘটেছিল, তা পড়ে অবাক হয়েছি। তিনি সে সময়ে একজন সন্ন্যাসীর শিষ্য হন এবং শাকাহারী হয়ে যান। তাঁর অনেক বয়স হয়ে যাবার পরও ইচ্ছে ছিল হিমালয়ে চলে যাওয়ার। এতো কম বয়সে একটা মানুষ জগত সংসার ত্যাগ করে স্রষ্টার সান্নিধ্য কামনা করেছিলেন, এটা ভাবলে তাঁর জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা মেশানো বিস্ময় জাগে। তিনি পরে কোন এক জায়গায় বইটিতে উল্লেখ করেছেন যে, সন্ন্যাসীর শিষ্য হয়ে তখন যে তিনি অল্পে সন্তুষ্ট থাকা শিখেছিলেন, তা সারাজীবন তাঁকে সাহায্য করেছে।

তাঁর চরিত্রের যেই দিকটা সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে, তা হল, তাঁর ‘সেবক’ হয়ে ওঠা। কিশোর বয়সে তিনি ফরিদপুর সেবা সমিতির সভ্য হয়েছিলেন। তিনি শিখেছিলেন কি করে অসুস্থ একজন রোগীকে সেবা করে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলা যায়। কারন, সাধারণ একটি পরিবারের পক্ষে সেবার নানা উপায় জানা সম্ভব হতো না, যেই কারনে, অকালে অনেক অসুস্থ ব্যক্তি সেবা ও চিকিৎসার অভাবে তখন মারা যেতো। জসীমউদ্দিন অপরিচিত মানুষের বাসায় থেকে, খেয়ে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে এই সেবার কাজ করেছেন। কিছু কিছু মানুষকে বাঁচাতে না পারলেও প্রচুর মানুষকে তিনি সুস্থ করে তুলেছেন আর এই রুগীর সেবার কাজে তিনি ভালো ছিলেন। এই যুগে একজন মানুষ অযথা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সেবা করছে শুধু এটি একটি মানবিক কাজ বলে, তা অকল্পনীয়। তাঁর জীবনের এই অধ্যায় পড়ার সময়ে মনে হয়েছে যে জসীমউদ্দিনের মতো মানুষ পৃথিবীতে সংখ্যায় বেশি থাকা দরকার। কারন, এরাই পারে সেবা দিয়ে পৃথিবীরও অসুখ সারিয়ে দিতে।

বাবার কথা তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন। লিখেছেন তাঁর বাবার তৈরি হিতৈষী স্কুলের কথা, যেখানে তাঁর পড়ালেখা শুরু হয়েছিল। মায়ের কথা লিখেছেন মায়া মিশিয়ে। বিশেষ করে তাঁর মা যখন নিজের বাবার বাড়ি যেতেন, তাঁর মাকে সেই আদর যত্ন করা হতো, তার উপর পুরো একটা অধ্যায় রেখেছেন। নিজের বড়ভাইয়ের প্রতি অভিযোগের কথাও উল্লেখ করেছেন। খুব কম পরিসরে লিখেছেন থিয়েটার জীবনের কথাও।

আমার সবচেয়ে প্রিয় অধ্যায় শেষ অধ্যায়টি, যেখানে তিনি বড়ুকে নিয়ে লিখেছেন। কবি মন দিয়েছিলেন এই মানুষটিকে। কখনো ঠিক সময়ে মুখ ফুটে বলতে পারেন নি বলে এক সময়ে বড়ুর বিয়ে হয়ে যায়। বড়ু সাংসারিক জীবনে সুখী ছিলেন না বলে কবি তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন যেন বড়ু সব ছেড়ে তাঁর কাছে চলে আসে। বড়ু রাজি হয় নি, কারন স্বামীর প্রতি ছিল তাঁর অপত্য স্নেহ ও ভালোবাসা। এ অধ্যায়ে কবিমনের বড়ুকে নিয়ে কল্পনার সরলতা মন ছুঁয়ে যায়।

গত সপ্তাহে শেষ করে এখনো এই বই আর পড়ছি না বলে কেমন খালি খালি লাগছিল। সেই খালি খালি লাগা থেকেই এই রিভিউয়ের অবতারণা। জসীমউদ্দিনের জীবন ভালো মানুষ হতে উৎসাহিত করে। পাঠক হয়েছি বলে তাঁর সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছি। এই পরোক্ষ সংশ্রব জীবনকে আসলেই সমৃদ্ধ করল। আবার কোনদিন এই সুন্দর মানুষটির ‘জীবন কথা’-এ ফিরে যেতে হবে। কারন, পদে পদে ভালো মানুষ হয়ে লাভ নেই, এমন একটা বিশ্রী চিন্তা আমাদের সবার মনে হানা দেয়। সেরকম একটা সময়ে 'জীবন কথা' পড়লে হয়তো ভালো মানুষ না হয়ে উপায় নেই, এই বোধে আবার ফিরে যাওয়া সহজ হবে।
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
October 31, 2021
জসীম উদদীনের সাথে প্রথম পরিচয় কবে মনে নেই। পাঠ্যবই ছাড়াও আম্মুর মুখে মুখে শোনা নিমন্ত্রণ, কবর কিংবা অন্যান্য ছোট ছোট কবিতার মাধ্যমে তার সাথে পরিচয়। তবে খুব সম্ভব ক্লাস ফাইভে জসীম উদদীন সম্পর্কে একটা আর্টিকেল টাইপ ছিল। 'আমার মা' এই শিরোনামে। সেখানে মা কে নিয়ে লেখা ছাড়াও ছিল মায়ের বানানো সুস্বাদু পিঠার গল্প। 'জীবন কথা'বইটা পড়তে যেয়ে দেখি অই গল্পাংশটা এই বইয়ের একটা অংশ। জসীম উদদীনের এই বইটা পড়ব বলে ভেবে রেখেছিলাম অনেক দিন। আসলে সব বই সব সময় পড়ার মুড থাকে না। আর এই এক কারণে না জানি আর কতো কতো বই আমার ফোনে অলস পড়ে আছে আল্লাহ মালুম! এই বই এদ্দিন ফেলে রাখাটা আসলে বিশাল মিসটেক! এতো সুন্দর মায়া মায়া লেখা! আহা বর্ণনা! এত সহজ! এতো সরল! কিন্তু কি গভীর!

পল্লীকবি হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তিটি সম্পর্কে আমার একটা ভুল ধারণা ছিল (হয়তো স্কুলের সিলেবাসে থাকা লেখক পরিচিতিতে ফাঁকি মারার কারণে) আমি ভাবতাম তিনি বুঝি সারাজীবন সেই তাম্বুলখানা গ্রামেই বসে বসে কবিতা রচনা করে গিয়েছিলেন! কী গাধা আমি! অন্য এক জসীম উদদীনকে আবিষ্কার করেছি সত্যি! অবাক লেগেছে সবাই যেখানে আত্মজীবনীতে ভালো ভালো কথা লিখতে ব্যস্ত সেখানে তিনি কী অবলীলায় নিজের সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য, ব্যক্তিজীবনের ছোট ছোট দু:খ, হতাশা, গ্লানি, অভাব, অপমান, লাঞ্ছনার কথাও লিখে গেছেন! একটা মানুষ কী পরিমাণ অসাম্প্রদায়িক চেতনার উদাহরণ হতে পারে এই ব্যক্তি তার উদাহরণ। রিভিউ না আসলে বইটা নিয়ে আমার উচ্ছ্বাস বোধ হয় একটু বেশি পরিমাণে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী করব! এরকম বই তো আর সব সময় হাতে আসে না। প্রতিটা বিষয় নিয়ে, তার লেখা প্রতিটা চরিত্র নিয়ে আসলে ইয়া বড় বড় গল্প লিখে ফেলা যাবে। যার জীবন এতো বিচিত্র সে কেন লেখক হবেন না!! বইটা পড়ে শেষ করেছি, কিন্তু মুগ্ধতা কাটছেই না। একলা মুগ্ধ থেকে লাভ কী? আসেন.. আপনারাও না হয় সঙ্গী হোন...

হাইলি হাইলি হাইলি রেকমেন্ডেড।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
July 9, 2023
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে এক বড় ভাইয়ের টেবিলে বইটি দেখি। সেদিনই নিয়ে এসেছিলাম। প্রায় ছয় বছর আগেকার কথা। কাহিনি হয়তো বিস্মরণ হয়েছি। কিন্তু জসীম উদদীনের গদ্যবৈভবে মুগ্ধ হয়েছিলাম। অল্প-বিস্তর বাঙালি লেখকদের গদ্য পড়েছি। জসীম উদদীনের মতো মিঠে ভাষার গদ্য কারুর পড়িনি। সত্যিকারের পল্লীর প্রতিনিধি জসীম উদদীন। এই মহৎ লেখকের আত্মকথা পাঠ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
Profile Image for শাহ্‌ পরাণ.
259 reviews74 followers
March 15, 2025
প্রায় দেড় বছর সময় নিয়ে বইটা শেষ করলাম। একটা অধ্যায় পড়ে রেখে দিতাম, পড়লেই তো শেষ হয়ে যাবে তাই।

যখনই মনটা খুব খারাপ থাকবে অথবা খুব ভালো থাকবে তখনই আবারো এই বইয়ের কিছু অংশ করে পড়বো।
Profile Image for Ahmed Aziz.
380 reviews69 followers
March 4, 2021
কি সুন্দর ভাষা আর বর্ণনা। সেকালের গ্রামীণ জীবন, প্রকৃতির বর্ণনা, আকাশের মত উদার সব মানুষ আবার মানুষের যত কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, নীচুতা সবকিছুই ছবির মত মূর্ত হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর একদম শুরুর দিকের বাংলার পল্লীজীবনের এক অসামান্য দলিল। শেষেরদিকে প্রেমের টানে অন্য মানুষের বিয়ে করা বউকে ভাগিয়ে নিতে পল্লীকবির চেষ্টাও বর্তমানে বেশ প্রাসঙ্গিক।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
February 10, 2024
সে এক গল্প শুনিয়েছেন বটে জসীম উদদীন! যে গল্পের পাতায় পাতায় মায়া,মায়ার ভাঁজে ভাঁজে গল্প,গল্পের ভাঁজে ভাঁজে ব্যথা,ব্যথার ভাঁজে ভাঁজে সুখ। এই গল্পে জসীম উদদীন কখনো এক নিঁখুত গল্পকার,কখনো প্রেমিক,কখনো দস্যি কিশোর, কখনোবা রাতের পর রাত জেগে জনসেবা করা এক মায়াবী বালক,কখনো আবার পল্লী জীবনের চিত্র আকাঁয় এক নিঁখুত চিত্রকর। আমার পড়া শ্রেষ্ঠতম আত্মজীবনীর তালিকা করলে 'জীবনকথা' উপরের দিকেই থাকবে।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews193 followers
February 23, 2023
এত অকপট স্মৃতিকথা আসলে কম পড়েছি৷ অকপট কিন্তু অসম্ভব সরল, অসম্ভব মায়াকাড়া। পল্লীকবির কবিতার কতোই স্নিগ্ধ। বাল্য আর কৈশোরই এই বইয়ের মূল সুর। তাই পরিপূর্ণ জীবনকথা হয়তো একে বলা যায় না। কিন্তু যে স্মৃতিটুকুর গল্প করে গেছেন কবি, তা আসলে একজন পাঠকের জীবনকে অনির্বচনীয় আনন্দে ভরিয়ে দিতে পারে।
কোন একটা ক্লাসে পল্লীবর্ষা পাঠ্য ছিল আমাদের৷ সেই কবিতার মতো অসাধারণ পরিপূর্ণ গ্রামীণ আলেখ্য আর কোথাও আমি পাইনি সত্যি। বর্ষাকালে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কতবার যে পড়েছি কবিতাটা হিসেব নেই।
জীবনকথা বইটির শুরুর কয়েকটি অধ্যায় ও সেই অনুভুতি ফিরিয়ে দিয়েছিল। ক্লাস ফাইভেই সম্ভবত ছিল আমার মা এর কিছু চুম্বক অংশ আমাদের পাঠ্য। সেটাও একটা চমৎকার অধ্যায় হিসেবে বারবার পড়তাম৷ সম্পূর্ণ অধ্যায়টা এই এত বয়সে এসে পড়লাম!
কত সহজ করে কবি বলে গেছেন তাঁর পরিবারের কথা, গ্রামের কথা। তৎকালীন গ্রামীণ সমাজের একটি সুনিপুণ চিত্র এঁকেছেন কালো অক্ষরে৷
শিষ্যত্ব বরণ করেছিলেন এক হিন্দু সাধুর, এরপরেও কিন্তু তাঁদের একঘরে হয়ে যেতে হয় নি৷ খুবই বিস্ময়কর একটা বিষয়। সাম্প্রদায়িকতা যে ছিল না তখন এমন নয়, মুসলিম সব ছাত্রদের বেশ কিছুটা উদাসীনতাও সহ্য করতে হয়েছে বরাবর, তবুও ছুঁতমার্গ থাকলেও কারো কারো হৃদয়ের স্নেহের ফল্গুধারার প্রবাহ লেখক নিজে অনুভব করতে পেরেছেন।
চিকিৎসা বিষয়ক ভালো অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। অনেক চিকিৎসককে চিনতেন, অল্প বয়সে তাঁদের পরামর্শে সেবা করে সারিয়েছেন কলেরা রোগসহ আরো অনেক রোগ। সেবার আনন্দ একবার যিনি পান, তিনি হয়তো পল্লীকবির মতোই প্রাণ দিয়ে খাটতে দুবার ভাবেন না।
সেইকালেও হোমিও চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য ছিল। চিকিৎসা বিষয়ক লেখকের মতামত অত্যন্ত আধুনিক৷ তিনি যেভাবে ভেবেছেন, আজকের দিনেও অনেকে তা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন।
নানা গঞ্জনা সয়েও কারো সম্পর্কে একটা কটুবাক্য, একটু সমালোচনাও লেখকের কলম থেকে বেরোয়নি। দুই-একটা স্মৃতিকথাতে এত বিশ্রীভাবে অন্যদের সমালোচনা করতে দেখেছি লেখকদের, যে পড়তে মোটেই সুখকর লাগত না। এই বইটা ভীষণ ব্যতিক্রম সেদিক থেকে। সাম্প্রদায়িকতা বা নিরপরাধ হয়েও অন্যায় শাস্তির শিকার হয়েছেন বহুবার লেখক, কিন্তু প্রতিবারই নানা যুক্তি দিয়ে নিজেকে স্বান্তনা দিয়েছেন, অন্যদের সম্পর্কে কোন বিরূপ বাক্য উচ্চারণ করেননি। খুব সুন্দর লেগেছে বিষয়টা।
জসীম উদদীন এর গদ্য সরস আর তাঁর জীবনকাহিনীও ভীষণ বিস্ময়কর। তাই সম্পূর্ণ বইটা পড়ে খুব ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, মনে রাখার মতো।
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews305 followers
January 2, 2022
কী ভীষণ সহজ করে জীবনের কাহিনী শুনালেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। গত কয়েকদিন অফিস থেকে ফিরে গল্প শুনতে বসে যেতাম। আহা! সেই ছোটবেলা, কৈশোর পেরিয়ে তারণ্য। তিনি নিজেও ছিলেন খুব সহজ মানুষ। সহজ মানুষ হওয়া সহজ কাজ না। বেশির ভাগ মানুষের ভেতরে খালি প্যাচ।

অনেক বইতেই টুকটাক করে উনার কথা জেনেছিলাম। ছোটবেলাটা যে এত কষ্টে কেটেছে আন্দাজও করিনি। পদ্মার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে অন্যের আশ্রয়ে থেকেছেন, হিন্দু বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পড়েছেন শুনেছেন রূঢ় কথাও কিন্তু মানুষ হয়ে উঠার পথের ইস্তফা দেননি কখনো।

কি অকপটেই না স্বীকার করেছেন বড়ুর কথা। প্রথম প্রেমের কথা। আহা কি অকালেই না চলে গেল বড়ু।
বইটা চমৎকার কিন্তু পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়। খুব কাছের মানুষগুলো একে একে বিদায় হয় জীবন থেকে। কবির এই কষ্ট যেন পাঠককেও ছুঁয়ে যায়।
Profile Image for Samiha Anu.
36 reviews18 followers
June 3, 2024
বড় মাপের মানুষদের অটোবায়োগ্রাফি পড়লে নাকি বড় হওয়া যায়, আমার বোন বলে প্রায়ই। সেই সুলক্ষ্যে আমরা দু'বোন বেশ কিছু জীবনচরিত পড়েছি, সে সুনীল পড়লে আমি শ্যামল। এইভাবে, একদিন ধরলাম জামদানি শাড়ি প্রচ্ছদের এই সুন্দর বইটা৷ আশা ছিল, গ্রামীণ জীবনকে কাছ থেকে দেখার।

'জীবন কথা' জসিমউদদীনের জীবনের কিছু গল্প। খুবই মিষ্টি লেখনী, আদুরে আলাপ। পড়তে পড়তে মনে হয় স্বয়ং লেখক সামনে বসে আছেন। পল্লিকবির জীবন যে এতো বৈচিত্র্যময় ছিল, আগে জানতাম না।

পুরো বই জুড়ে অসংখ্যবার নিমন্ত্রণ শুনতে পেয়েছি,

"‍তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়?"
Profile Image for Debashish Chakrabarty.
108 reviews94 followers
July 20, 2020
জসীম উদ্‌দীনের জীবনকথা । এক পাঠক এই জীবনকথা পড়ে লিখেছিলেন, "জসীম উদ্‌দীনের জীবনকথা পড়িতেছি না মায়ের হাতে পিঠা খাইতেছি" । পড়ার পর তা শতভাগ সত্যি বলেই মনে হয়েছে । এই জীবনকথা যেন এক অপূর্ব মহার্ঘ । কবির ছেলেবেলায় বাংলাদেশের পল্লীগ্রামের বেড়ে ওঠার স্মৃতি পড়ে আবহমান বাংলার প্রকৃতি আর প্রকৃতির সন্তানদের ছবি চোখে ভেসে উঠল । এই বাংলা এখন অতীত । এর ছিটে ফোঁটার স্বাদও আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয় । সেই হারানো সময় আর প্রকৃতির অবশেষটুকুই এই সব লেখাতে খুঁজে পেয়েছি । আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন, তাদের সমাজ, উৎসব এবং জীবনের সংগ্রাম জসীম উদ্‌ দীনের অভিজ্ঞতার হাত ধরে এই একবিংশ শতাব্দীতে আমার অভিজ্ঞতায় এসে পৌঁছুল শেষ পর্যন্ত । শুধু কি প্রকৃতি আর মানুষ! মানুষের প্রতি কবির অপত্য ভালবাসার আবেশ ছড়িয়ে আছে বই জুড়ে । তবে মনে হয়, এই শহরজীবী অতি আধুনিক মানুষ আমরা, যারা বেড়ে উঠেছি আসলে শহরে । প্রকৃতির সান্নিধ্যের অনুপস্থিতিতে । বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিময় আমাদের জীবন । আমরাই এই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাব । কিন্তু এগিয়ে যাবটা কোথায়? কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছি তার দিকে তাকালেই বুঝতে পারব কি ভীষণ দুর্ঘটনাটা ঘটে গেছে । প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠছে প্রকৃতির সাথে কোন রকম যোগাযোগ না করেই । এই মাটি, জল, জঙ্গল, মাছ, পাখি কিছুর সাথেই কোন রকমের যোগাযোগ হয় নি আমাদের । এই অমানবিক মানুষদের হাতে পরলে পৃথিবীর কি পরিণতি হতে পারে তা বাইরে জগতে চোখ মেললেই বোঝা যায় । যে মানুষের শৈশব কেটেছে প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে, সে মানুষটা যেই চোখে পৃথিবী দেখবে আর অনুভব করবে বাকিদের পক্ষে তা করা সম্ভব কখনোই সম্ভব নয় । দেরি হওয়ার আগেই এই ভুল শুধরে যে প্রকৃতির সাথে মানুষের নাড়ির সম্পর্ক তাকেই পুনস্থাপন করতে হবে । ফিরে আসি জসীম উদ্‌দীনের কাছে । মানুষকে না ভালবাসলে মানুষ বাঁচবে কি করে? কবি নিজে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না মোটেই । বরং কারণে অকারণে ছুটে গেছেন মানুষের কাছে । কুড়িয়েছেন ভালবাসা । জীবন সায়াহ্নে ফিরে তাকিয়ে তার বুকটা নিশ্চয়ই ভরে গিয়েছিল ভালবাসার উষ্ণতায় ।
Profile Image for Syeda Ahad.
Author 1 book131 followers
July 5, 2018
লেখকের ছেলেবেলায় যেসব মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন, যাদের জীবন লেখকের পরবর্তী জীবনে ছাপ রেখে গিয়েছে, সেসব মানুষের স্মৃতিচারণ নিয়ে করা এক আত্মজীবনী। সময়ের ধারার সাথে মিল না রেখে বরং একেকটি চরিত্রের সাথে তার মেলামেশার ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিয়ে লেখা বইটা। সময়ের হিসেবে তাই পড়তে গিয়ে একটু আধটু হোঁচট খেলেও, বরং প্রত্যেক চরিত্রকে আলাদা করে দেখতে ভালো লেগেছে। বিভিন্ন মানুষের প্রভাবে তার জীবনের আর দৃষ্টিভঙ্গির নানান বদলের সাথে সাথে সেই সময়কার সমাজব্যবস্থা, নানান আচার অনুষ্ঠান, সামাজিকতার নিয়ম - অনেক কিছুর ছবিই চোখে ভেসেছে পড়তে গিয়ে। আর সেই সাথে লেখকের মন্তব্যগুলো দেখে মনে হয়েছে সেই সময়ে এত কষ্ট করেও তিনি কতো বড় মনের সাদাসিধা মানুষ ছিলেন। আবার নিজের মনের ভুল ভাবনাগুলিও তিনি অকপটে স্বীকার করে লিখেছেন - এটাও একটা বড় শক্তি, সেসময়ের প্রেক্ষিত��� আরও বেশি। জীবনী পড়তে পছন্দ করেন এমন যে কারোই ভালো লাগবে মনে করি :) আবার ৫০ সালের আশেপাশের সময়ের গ্রামবাংলার জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলেও বইটা বেশ ভালো :)
Profile Image for musarboijatra  .
283 reviews348 followers
December 30, 2021
পল্লীকবি, যাঁর লেখায়, কবিতায়ই আমরা গ্রামের ছবি জ্যান্ত দেখতে পেতাম, সে কবি কেমন করে এত গ্রামীণ-মনা হলেন জানতে ইচ্ছে করেনি?
জীবন-কথা, কবি জসিমউদ্দিনের আত্নকথা। কবিদের গদ্য-ও সুপাঠ্য হয়, তেমনটা এখানেও। পল্লীকবির শৈশব যে বেশ উপাদেয় ছিল তা না বললেই নয়! একেবারে মাটির সোঁদা গন্ধ আর মাছের আঁশের গন্ধ মাখামাখি হলে, তার সাথে ভাপাপিঠার ধোঁয়া মিলেমিশে যেমন এক চমৎকার মনের টানে ফেলে দেয় আমাদের, বইজুড়ে গ্রামের তেমন অনেক রূপই দেখতে পেয়েছি যার অল্পই এখনো গ্রামে খুঁজে পাওয়া যায়। বাকি রাখেননি তিনি কারো কথা-ই! তাঁর স্কুল-মাস্টার বাজান, যিনি বেতন না পেয়েও নিজের পয়সায় স্কুলকে টেনেছেন, সেই সোজাসরল মানুষের কথা আছে, মা নাইয়র গেলে কেমন আপ্যায়ন পেতেন তার ওপর একটা অধ্যায়ই আছে। নানারকম মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন আর তাঁদের থেকে শিখেছেন, বিচিত্র মানুষদের থেকে পাওয়া গভীর জীবনবোধই গড়েপিটে তৈরী করেছিল মানুষটিকে।
মাঝির মুখের ভাটিয়ালি তাঁকে ছন্দ-সুর চিনিয়েছিল, কবিগানের আসরে বসে খেয়াল করলেন, মুখে মুখে ছন্দ বাঁধারও এক স্বকীয় ক্ষমতা আছে তাঁর।
অন্য ধর্মকে জানার যে আগ্রহ ছিল তাঁর, (কেবল ধর্ম না অবশ্য, সবকিছুতেই বেশ একটু তলিয়ে দেখার আগ্রহ কাজ করতো ওনার) তা অবাক করার মতো। এক সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে সন্ন্যাসব্রতে আগ্রহী হয়েছিলেন। শ্মশানে রাতে ঘুমোন শুরু করেন নেহাত শৈশবে। ভাবা যায়? পরেও তাঁর ইচ্ছা ছিল কখনো হিমালয়ে যেয়ে থিতু হবার। সবথেকে অসাধারণ ব্যাপারটা হলো, তিনি দীর্ঘ সময় সেবা সমিতিতে কাজ করেছেন, আর আর্তের জন্য এক ডাকে ছুটে যাওয়াই ধ্যানজ্ঞান করেছিলেন একটা সময়। সংক্রামক যক্ষ্মা রোগী থেকে আরো কত কার সেবা করে গেছেন নিজের শ্রম দিয়ে। কবি'র জীবনে আসলে অজস্র এমন সব মানুষের আগমপ্ন হয়েছিল, যারা মানুষের জন্য করে গেছেন, বিনিময় পাননি, তাও নিঃস্বার্থে করেই গেছেন। তাঁদের থেকেই হয়তো জসিমউদ্দিন অসামান্য একজন মানুষ হবার ছবক পেয়েছিলেন।
একটা অদ্ভুত কথা বলি এবার। আসলে কি, জসিমউদ্দিন যদি কবি না-ও হতেন, সাহিত্য করে যদি এতটা দরকারি কেউ না-ও হতেন যাতে করে ওনার জীবনী পড়তে আমাদের আগ্রহ হয়, তবু তাঁর আত্নজীবনীর মূল্য কোনো অংশে কম হতো না। কারণ যেমন মানুষটার পরিচয় আমরা পাই এই আত্নকথায়, তেমন মানুষ-ই আরো কিছু তৈরী হওয়া দরকার। বাইরে থেকে আমরা তাঁর কবিতাই চিনে এলাম। পল্লীর শ্যামা ঘ্রাণ ছাড়াও জসিমউদ্দীনে দেখার মতো আর কি আছে, তার হদিস পাবেন 'জীবন-কথা'য়।
Profile Image for Anjuman  Layla Nawshin.
85 reviews144 followers
July 14, 2023
বাড়িতে যাইবার দিনে ট্রেনে উঠিয়াই পড়িতে শুরু করিয়াছিলাম পল্লীকবির জীবনকথা। প্রথম কয়েকখানা পর্ব পড়িয়াই অনুশোচনা হইতেছিল, কত আগে এই বইখানা কিনিয়া রাখিয়াছি অথচ পূর্বে কেন পাঠ করি নাই!

পল্লীকবির শৈশব কাটিয়াছে ফরিদপুরের এক প্রত্যন্ত গাঁয়ে। জীবনকথা পাঠ করিতে গিয়া কেবলই উঁকি দিয়া উঠিতেছিল আমার ছোটবেলার নানা স্মৃতি। শূন্যের দশকে কিংবা তাহারও আগে যাহারা পিওর গ্রামে বড় হইয়া উঠিয়াছে তাহাদের জন্য এই বইখানা হইতে পারে নস্টালজিয়া।

পল্লীকবির জীবনের সঙ্গে জড়াইয়া থাকা নানা মানুষের গল্পগাঁথার সুনিপুণ বর্ণনা পুরা বই জুড়িয়া। তাঁহার পিতার কথা, মায়ের কথা, শিক্ষকের কথা, সন্ন্যাসি ঠাকুরের কথা, মেজদির কথা, কেদারীর মায়ের কথা। পল্লীকবিও যে একসময় সন্ন্যাসীঠাকুরের সাথে হিমালয়ের পথে, সেই কেদার -বদ্রিনাথের পথে যাত্রা করিবার পণ করিয়াছিলেন, নিরলস সাধনায় মগ্ন ছিলেন কে-ই বা জানে সেই কাহিনী!

শীতকালে সেই ভোরবেলা উঠিয়া মায়ের পিঠা তৈরী করিবার গল্প, ইলিশ মাছ আনিবার গল্প সবাইকে ফিরাইয়া লইয়া যাইবে গ্রামীণ শৈশবে।

কবির মা রাঙাছুটের বাপের বাড়ি যাইবার গল্প যখন পড়িতেছিলাম, আমার গুঁমড়ে কান্না পাচ্ছিল। পাছে ট্রেনের লোকজন খেয়াল করিয়া ওঠে তাই পাঠ বন্ধ করিয়া দিয়া জানলা দিয়া বাহিরে তাকাইয়া ছিলাম দীর্ঘক্ষণ। খানিক বাদে আবারও পড়া শুরু। এইভাবেই বাড়িতে পৌঁছাইবার পূর্বেই প্রায় পুরো বইখানা খতম। বাড়িতে আসিয়া অবসরে আম্মাকে পড়িতে দিয়াছিলাম রাঙাছুটের বাপের বাড়ি যাইবার গল্প। পড়িতে গিয়া আম্মারও চোখের কোণে যেন উঁকি দিয়াছিল তাহার বাপের বাড়ি বেড়াইতে যাইবার স্মৃতিগুলো।

সেকালে ফরিদপুরে বিবাহিত মুসলিম নারীরাও কপালে পরিতো সিঁদুরের টিপ। হিন্দু মুসলিম মিলিয়া পালন করিতো নানা ধরনের উৎসব। জীবনকথায় আছে,

"আগেকার দিনে গ্রামদেশে পাঁকা মুসলমান খুব কমই দেখা যাইতো। লক্ষ্ণীপুজা, হাওই সিন্নি, ও গাস্বীর উৎসবে সমস্ত গ্রাম মাতিয়া উঠিত।"

সেকালে আশ্বিন কার্তিক মাসের শেষ দিনের আগের রাত্রে গাস্বী উৎসব হইতো। হিন্দুরা আশ্বিন মাসের শেষ দিনের আগের রাত্রে এই উৎসব করিতো আর মুসলমানরা করিতো তার পরদিন। এই উৎসব লইয়া কবির আকাঙ্খা আছিলো-

" এদেশে হিন্দু মুসলিম বহুদিন একত্র বাস করিয়াও দুই সমাজ সমানে যোগ দিতে পারে এমন কোনো অনুষ্ঠান গড়িয়া তুলিতে পারে নাই। এই গাস্বী উৎসবের মধ্যে কোন রকমের ধর্মীয় ব্যাপার নাই। এই উৎসবটিকে ভালোমতো সংগঠন করিয়া ইহাকে হিন্দু মুসলমানের একটি জাতীয় উৎসবে পরিনত করা যাইতে পারে।"

আজকাল মুসলিম নারীরা কপালে টিপ পরিলেই রি রি করিয়া ওঠে চারদিক, সিঁদুরের টিপ তো কোন দূর। এমন বাস্তবতায় পল্লীকবির সেই আকাঙ্ক্ষা কেবলই যেন এক দীর্ঘশ্বাস।

যাহাই হউক, গ্রাম তো এখন বদলাইয়া গিয়াছে। শূন্যের দশকের পর থেকে কূপির আলোও আর নাই গ্রামে। সবাই এখন নাগরিক। তবে যাহারা গ্রামে বাড়িয়া উঠিয়াছেন এই বইটি তাহাদেরকে লইয়া যাইবে ফেলিয়া আসা সেই পল্লীগাঁয়ে। আবার যাহারা শহরে বাড়িয়া উঠিয়াছেন তাহারাও পাইতে পারেন এক অদেখা জগতের স্বাদ। হারাইয়া যাওয়া সেই চিরায়ত বাংলা। পল্লীকবির পল্লীবাংলা।

#happyreading
Profile Image for Ahmad Muddasser.
16 reviews6 followers
October 4, 2018
একজন কবির গদ্য প্রায় সময়ই অসাধরণ। কবি যদি হন মাটির কা্ছাকাছি বাস করা একজন মানুষ, তাহলে তাঁর গদ্যে অবশ্যই মাটির সোঁদা গন্ধ থাকবে। মাটি আর জলে বেড়ে ওঠা ধানের গন্ধ থাকবে। জসীম উ্দদীন একজন প্রাণ প্রৃতির কবি। বেড়ে ওঠা গ্রামে। মানুষ হয়ে ওঠা গ্রামে। কবি জীবনের প্রথম দিকের কথা বলেছেন এই বইয়ে। বেশি বেশি এসেছে এই জীবনে যাদের পাশে এসেছেন বা যাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন নিবিড়ভাবে। অনেকগুলো শিরোনামে ভাগ করা এই বইয়ে একদম গ্রামীণ সরল মানুষের মুখ দেখা যায়। যেমন কেদারীর মা, হানিফ মোল্লা, যাদব ঢুলি। আমার কাছে হিতোইষী স্কুলের শিরোনামে স্কুলে যাওয়া আর স্কুলের পরিচয়ের বর্ণনা খুব আনন্দদায়ক মনে হয়েছে। আমরা স্বপ্নে যেমন সরল সোজা গ্রামের স্কুলের সরল সোজা ছেলেমেয়েদের কথা ভাবি, এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা এমনই। এই বইয়ে এইসব মানুষ আর ৃশ্যপটের মধ্যে একটা চরিত্র দাঁড়িয়েছে। জারি গান শুনতে শুনতে ৈতরী হয়েছে একজন ���্রামীণ কবির পরিচয়পত্র। অসুস্থের সেবা করতে করতে কবি এই বইয়ে ৈরী করেছেন নিজের দয়ালু মুখ। বইটি পড়ার একমাত্র কারণ অসম্ভব সুন্দর গদ্য। অসম্ভব আদুরে অক্ষরে গড়া শব্দ আর বাক্য। পড়তেই হবে এই বই।
Profile Image for Md. Faysal Alam Riyad.
317 reviews26 followers
December 28, 2018
বহুদিন পর কোন বই পড়লাম যার প্রতিটা অক্ষরের বাস্তব চিত্র চোখের ভিতর খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। মাটির যে ঘ্রাণ, সে ঘ্রাণের ভিতর যে মমতা থাকে তা কাউকে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এর লেখায় এ দেশের মাটি ও মানুষের বাস্তব চিত্র খুব সুন্দর ভাবেই ফুটে উঠেছে বার বার। এই বইটি কবির নিজের জীবন কাহিনী নিয়ে রচিত হলেও সাহিত্যের বিচারে এটি একটি চমৎকার বই। “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসের পর এই প্রথম কোন বইয়ের ভিতর গ্রাম্য জীবন, মায়া মমতার চিত্র সম্বলিত অসাধারণ কাহিনী পড়লাম। এ বই না পড়লে পাঠক হিসেবে অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যেত।
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
March 1, 2021
জীবনকথা
জসীম উদদীন

আত্মজীবনী পড়তে আমার বরাবরই ভালো লাগে। কেননা এতে সেই লেখককে সবচেয়ে ভালোভাবে চেনা যায়। লেখকের গান, কবিতা বা গল্প-উপন্যাস বিশ্লেষণ করে লেখকের মতাদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি জানার চেয়ে এটা অনেক সহজ যদিও অনেকটা ঝুঁকি থেকে যায় কেননা সবাই তো আর নিজের সমালোচনা সঠিকভাবে করতে পারেন না। এই ঝুঁকিটা থাকা সত্ত্বেও আমি বারবারই দ্বারস্থ হই বিভিন্ন আত্মজীবনীমূলক বইয়ের। জীবনকথা বইটা পল্লীকবি জসীম উদদীনের আত্মজীবনী ; এতে উঠে এসেছে তাঁর জীবনের প্রথমাংশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তিবর্গ এবং ঘটনার কথা।

এক কথায় বললে বইটা কবির কবি হয়ে ওঠার যাত্রার কথা বলেছে। আর এই কথা বলতে গিয়ে তিনি বলে গিয়েছেন নিজ পরিবারের কথা, তৎকালীন সমাজের উৎসব, সংস্কার, আচারের কথা, যেসব ব্যক্তি তাঁর জীবনে কণামাত্র ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের কথা। কবি হয়ে ওঠার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন তিনি গ্রাম্য জীবনের সহজিয়া ভাবের কথা, কবিগানের মতো গ্রাম্য অনুষ্ঠানের কথা যা তাঁকে জীবনকে সহজভাবে দেখতে শিখেয়েছে, ছন্দ রচনার প্রথম ভীত গড়ে দিয়েছে। এছাড়া বলেছেন তাঁর গুরু শ্মশানবাসী এক সাধুর কথা যাঁর কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন সবাইকে ভালোবাসার শিক্ষা, মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা। গ্রাম্যজীবনের যত উৎসব আর সংস্কার তিনি দেখেছেন বলে গিয়েছেন তাদের প্রতিটার কথা। আর তাঁর জীবনের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি সাধুবাবার কথা যেমন বলেছেন তেমনি বলেছেন তাঁর কবিতার প্রশংসা করা তাঁর শিক্ষকদের কথা, প্রথম কবিতা প্রকাশে সহায়তা করা শশীদার কথা, মা হয়ে ওঠা বন্ধু ধীরেনের মায়ের কথা, বোন হয়ে ওঠা সেজদির কথা, প্রথম ভালোবাসার মানুষ যাকে নিজের করে না পাওয়ায় হতাশা ধরেছে তাঁর কন্ঠে সেই বড়ুর কথা।

বইটার যেদিকটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো কবির গ্রামকে ফুটিয়ে তোলা, গ্রামকে ধারণ করা, গ্রামের পরিবর্তনে হতাশ হয়ে যাওয়ার দিকটা। আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই গ্রামে। যদিও চার-পাঁচ বছর হলো শহরে থাকছি তবু শহরের গতিময়তার সাথে কেন যেন আমি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারি না। গ্রামের সবুজ পরিবেশ, ধীরে চলা মুহূর্ত, গ্রামীন সব সংস্কার -কুসংস্কার, হাজারো অদ্ভুত সব মানুষ আর অসংখ্য ছোট-বড় উৎসব এসবের সাথেই নিজেকে মেলাতে পারি বেশি। তাইতো বইটাতে কবি যখন নিজের গ্রামের কথা বলেছেন তখন আমি আসলে আমার গ্রামকেই দেখেছি ; গ্রামের পরিবর্তন যে খুবই ধীর গতিতে হয় সেটার জন্যই তা সম্ভব হয়েছে। আবার গ্রামের পরিবর্তনে যে লেখক বারবার হতাশ হচ্ছিলেন সে হতাশাটা আছে আমারও। ‘প্রাকৃতিক গ্রাম' থেকে এই যে গ্রামগুলোর ‘শহুরে গ্রাম' হয়ে ওঠা ( জানি সেটা ঘটবেই, দরকারও আছে) সেটা কেন জানি আমাকে বিরক্ত করে। এখন যে আর ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে পারি না, এখন যে শুনতে হয় বিদ্যুৎচালিত তাঁতের শব্দ ; এখন যে দলবেঁধে গোল্লাছুট খেলা বা খালে সাতার কাটা হয় না এখন যে সবাই মোবাইলে ব্যস্ত!

দ্বিতীয় যে দিকটা খুব ভালো লেগেছে সেটা হলো লেখকের কৃতজ্ঞতাবোধ এবং সততা। তাঁর কবি হওয়ার যাত্রায় যাঁদের সামান্যতম অবদানও ছিল তাদের তিনি হৃদয় খুলে প্রশংসা করেছেন। এর পাশাপাশি নিজের যাবতীয় দোষের কথা, ভুলগুলোর কথা সরাসরি, কোনো রাখ-ঢাক না রেখেই বলে দিয়েছেন। বলতে ভোলেন নি যাঁরা তাঁর প্রতি অবিচার করেছেন, বিনা দোষে শাস্তি দিয়েছেন, উপকার পেয়েও অপকার করেছেন তাদের কথাও। নিজেকে নিয়েও মজা করতে ছাড়েন নি তিনি ; বই বিক্রি করে আইসক্রিম খাওয়া থেকে শুরু করে গাছে উঠে থিয়েটার দেখা বা উকিলের নামে বেনামী পত্র লেখা – সবই জানিয়েছেন পাঠকদের।

তৃতীয় ভালো লাগার দিকটা হলো লেখকের গদ্যরীতি। ভূমিকাতে লেখক উল্লেখ করেছেন পত্রিকায় বইটা পড়ে কোনো এক রসিক পাঠক নাকি মন্তব্য করেছিলেন ‘ জসীম উদদীনেন জীবনকথা পড়িতেছি না, মায়ের হাতের পিঠা খাইতেছি'! তাহলেই বুঝুন বইয়ের ভাষা কোন ধরণের! কাব্যিক সেই ভাষায় লেখক যখন গ্রামের উৎসবের কথা, সাধুসঙ্গের সেই দিনগুলোর কথা, তাঁর প্রিয়জনদের কথা লিখেছেন তখন যেন মনে হয় চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছি।

এত ভালো লাগার ভেতরে যে একটা দিক খারাপ লেগেছে সেটা হলো লেখক কোনো সময়কাল ধরে এগোন নি। ফলে তাঁর জীবনকে ধারাবাহিকভাবে বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ মিলে কেমন যেন এক জাল সৃষ্টি করেছেন লেখক, অবশ্য রসালো উপস্থাপনের জোরে তা কাটিয়েও উঠেছেন।

গ্রাম্য কবিগান থেকে যে মানুষটার ছন্দ শেখা সেই মানুষটাকে জানতে, গ্রামকে অন্তরে ধারণকারী এক কবিকে বুঝতে, কবিকে অপার্থিব কিম্ভূতকিমাকার মানুষ ভেবেও শেষ পর্যন্ত কবি হয়ে ওঠা কবিকে খুঁজে পেতে, সাধুর সঙ্গী হয়ে হিমালয়ে রওনা হয়েও ভাগ্যের ফেরে কবি হওয়া কবিকে উপলব্ধি করতে তাই আমন্ত্রণ বইটা পড়ার।
Profile Image for Ronel Barua.
46 reviews4 followers
October 23, 2025
সব বইয়ের রিভিউ লেখা উচিত না, বিস্ময়ে অবাক দৃষ্টিতে কল্পনাতে রাখাই শ্রেষ্টত্ব্।
নির্বাক পাঠ্য আর চোখের জলে ভিজে ভিজে লেখকের সাথে গ্রামে ঘুরে ঘুরে হারিয়েছি শৈশবে—প্রতি মুহুর্তে,প্রতি ক্ষনে।

পল্লীকবি’র হয়তো কোনো স্মৃতি থাকবে না এই পল্লিতে, তবে তার ‘জীবন কথা’ থাকবে মানুষের স্মৃতিতে অনন্তকাল, যতদিন স্মৃতি ধারণ করতে পারবে অনন্ত সৃষ্টিকে।
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
December 24, 2021
২০১৪/১৫ সালে পড়া হয়ত, মনে নাই ঠিক। বা আরও পরে হতে পারে। তবে এরা বলতেছি, নির্দ্বিধায় এই একটা বই বহুদিন পর্যন্ত প্রভাব রাখছে এবং রাখবে
Profile Image for Rafisa Moni.
17 reviews10 followers
May 13, 2024
কবির সাথে সাথে আমিও যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম স্মৃতির পাতার সেই গোবিন্দপুর, তাম্বুলখানা কিংবা কলকাতায়। নিতান্তই অনিচ্ছাসহিত হাতে নেওয়া বইটা শেষ করলাম পরম তৃপ্তি নিয়ে। অতি সুখপাঠ্য!
Profile Image for Uzzal Orpheus.
60 reviews6 followers
June 16, 2023
জীবনে হাতে গোনা মাত্র তিন চারি খানা আত্মজীবনী পড়িয়াছি। ইহারা সকলই সাহিত্যিকের আত্মজীবনী। এইগুলা পড়িয়া এরুপ ধারণা হইয়াছিল যে আমার বয়স বুঝি এখনো আত্নজীবনী পড়ার উপযুক্ত হয়নাই। তারপর পড়িলাম জসীম উদ্দিনের 'জীবন কথা'। নিজের জীবনের কথা যে এত সরস এত প্রাঞ্জল করিয়া লেখা যায় তা এই পুস্তক না পড়িলে অনুধাবন করিতে পারিতাম না। আজ স্বীকার করিতেও কোন দ্বিধা নাই যে কবি জসীম উদ্দিন কে আজীবনই একটা জাজমেন্টাল দৃষ্টিকোন থেকে দেখিয়াছি। পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত দুই একটা কবিতা ছাড়া আর কোন কিছু না পড়েই অবচেতন মন জসীম উদ্দিন কে আজীবন অবহেলায় করিয়াছে। এই পুস্তক পাঠ করিয়ে সেই অজানা পাপ আবিষ্কার করিতে সক্ষম হইয়াছি এবং তার লেখা অন্যান্য গদ্য সমূহ পাঠ করে সেই পাপের খন্ডন করিতে মনে উৎসাহ জাগিয়াছে।

উপরের অংশটুকু সাধু ভাষায় লিখতে আমার কোন চেষ্টা করা লাগেনাই। 'জীবন কথা' র যে আবেশ এখনো মস্তিষ্কে রয়েছে তা বাধ্য করছে সাধু ভাষায় লিখতে। অথচ জসীম উদ্দিন যখন সাধু ভাষায় লিখেলেন পড়তে কী মধুর, কী সরল, কী আরাম আর আমি লিখলাম ছাতার মাথা!
Profile Image for Prithibi.
49 reviews3 followers
December 1, 2025
এ যেন এক অন্য জসিম উদ্দীন ! ছোটবেলা থেকে উনার কবিতা পড়ে পড়ে বড় হয়েছি।মানুষের প্রতি দরদী এক মানুষ, যার প্রাণ কাঁদতো মানুষের কষ্টে। জীবনে এত মানুষের সেবা তিনি করেছেন , হয়তো তাদের আশীর্বাদে তিনি এত বড় হয়েছেন জীবনে। জীবনে চর্চা করেছেন অনেক ধর্ম ও সঞ্চার করেছেন অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।উনার মা, বাবা, দাদু , শিক্ষক, সন্ন্যাসী,বন্ধু বান্ধব সবার জীবনকে নিয়ে তিনি এই বইকে সাজিয়েছেন। উনার লেখায় সবাইকে যেন জীবন্ত দেখতে পাচ্ছিলাম। যেভাবে অকপটে ওদের প্রতি নিজের জীবনের ভুলগুলো তিনি স্বীকার করেছিলেন,আমার মন ছুঁয়ে গেল।আহা! কি সুন্দর সুখ দুঃখের জীবন ছিল কবি জসীম উদ্দিন এর ।এইভাবেই তিনি আমাদের পল্লিকবি হয়েছেন।
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
July 28, 2024
কবি জসীম উদ্দীনের কবিতা আমি থ্রি, ফোর থেকে ই পড়া শুরু করেছিলাম পাঠ্য বইয়ে। তখন পড়তাম,শুধু পড়ার জন্যই। ভালো ভাবে বুঝতে শুরু করেছিলাম ক্লাস নাইনে উঠে "পল্লী জননী" কবিতাটা পড়ে। আমার এখনো মনে আছে কবিতাটা যখন প্রথম পড়েছি,চোখ দিয়ে আপনি-ই জল এসে পড়েছিলো। অদ্ভুত একটা কবিতা। শুরু টা হয় এভাবে,


"রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম,ঘোর-ঘোর- আন্ধার, 

নিশ্বাস ফেলি তাও শোনা যায় নাই কোথা সাড়া কার।



বিষাদের রাত শুরু, রুগ্ন ছেলেকে নিয়ে একলা জেগে আছে মা। ছেলে তার অসুস্থ। অথচ বাঁচার কি আকুতি। মা যেন পাগল প্রায়,এখানে সেখানে মানত করছে,খোদা যেন তার সন্তান কে ভালো দেয়। নিয়তি কেউ খন্ডাতে পারে না। মায়ের সন্তান আর থাকে না মায়ের কোলে। এই মৃত্যুর ভয়াবহতা কবি প্রকাশ করেছেন,পার্শ্বে জ্বলিয়া মাটির প্রদীপ বাতাসে জমায় খেল;

আঁধারের সাথে যুঝিয়া তাহার ফুরায়ে এসেছে তেল।



যতবার এই দুই লাইন পড়তাম,অসহায় মা'টার জন্য  পরাণ উতালপাতাল হয়ে যেত। চোখ ভিজে উঠত। একটা মানুষের সৃজনী শক্তি কতটা পোক্ত হলে,একটা লেখা কতটা মায়া ঢেলে লিখলে,সেই লেখা যতবার পড়ি,ততবার চোখে ভিজে যায়? 


পল্লী জননী আমার প্রিয় কবিতাগুলোর একটা হয়ে থাকবে আজীবন। এই কবিতা পড়েই কবি জসীম উদ্দীনকে জানার তীব্র বাসনা জেগেছিল মনে। তখন জানতে পারিনি,অনেক পরে এসে জানতে পারলাম,এই মহান কবির শৈশব,কৈশোর এবং যুবক বয়সের অনেক গল্প। জীবন কথা বইয়ের মাধ্যমে।  অসাধারণ একটা বই। অ-সা-ধা-র-ণ। জসীম সাহেব দরদ দিয়ে শুধু কবিতা লিখতেন না,তারচে হাজার গুণ দরদ মিশিয়ে তিনি গদ্য লিখতেন,তার প্রমাণ " জীবন কথা"।  অপূর্ব একখানা বই। যত বলি যেন কম হয়ে যাবে! 


" পল্লী জননী " পড়ে একটা মৃদু সংশয় জাগে মনে,কল্পনার আশ্রয়ে এমন মর্মভেদী কবিতা লেখা প্রায় অসম্ভব! " জীবন কথা " আমার সংশয় দূর করে দিলো। জসীম উদ্দীনের পল্লী জননী পুরো কল্পনাশ্রয়ী নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার মিশেল আছে এই কবিতায়। কী সেই বাস্তব অভিজ্ঞতা? 


কিশোর জসীম মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে অসুস্থ, দুস্থ মানুষের সেবা করতেন। কত বিনিদ্র রাত তাঁর কেটেছে,শুধু মানুষের সেবা করতে গিয়ে! সেই গল্প পড়তে গিয়ে মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে আবার কিশোর জসীমের সাহস, গরীবের প্রতি ভালোবাসা এসব দেখে মন ভালো হয়ে যায়। ভাবা যায়,একটা চৌদ্দ-পনেরো বছরের ছেলে সেচ্ছায় রাত জেগে কলেরা আক্রান্ত রোগীর সেবা করছে!


 মানুষ তার কর্মে মহান হয়। উজ্জ্বল হয়। 


এক শৈশবে যত বিচিত্র অভিজ্ঞতা পেয়েছেন কবি,অনেকে তার পুরো জীবন খুইয়ে ও এতটা পান না।  অভাবের সংসার,তাঁর বাবা সংসারের সব খরচ সংকুলান করে উঠতে পারেন না। ফলে নানা কাজে ব্যস্ত থাকতেন,এই অবসর জসীমের জন্যে যেন শাপে বর হয়ে এলো। জসীম গ্রাম চষে বেড়াতো,গ্রামের যাত্রা দল,সাধু সন্ন্যাসী, ডাক্তার, রেলবাবু থেকে শুরু করে সব কিছু তে জসীমের আগ্রহ অসীম।  নিজ চেষ্টায় তিনি শিখে নিতেন সব কিছু। কি অপরিসীম ধী শক্তি। আহা।


 গ্রামে কোন যাত্রা দল এলে,তাদের যাত্রা দেখে, যাত্রার বিভিন্ন গানের অংশ জসীম মুখস্থ করে নিতেন,তারপর নদীর পাড়ে এসে একা একা সবটা নিজে নিজে আওড়াতেন। ডাক্তার একবার রোগীর সেবা করা দেখিয়ে দিলে,জসীম স্বীয় চেষ্টায় সেটা আয়ত্ত করে নিতে পারতেন। একটা মানুষের শেখার শক্তি ইচ্ছে কতটা অদম্য হলে, এমন টা সম্ভব আমি শুধু ভাবি!



আরেকটা চমকপ্রদ গল্প,জসীমের কবিতার হাতে খড়ি হওয়া এবং কবিতা লিখতে শেখার গল্প। যতবার পড়ি যেন, আরো পড়ার বাসনা জাগে। এত দরদী হাতে মানুষটা লিখেছেন,আহা।


কবির জীবনের গল্প পড়তে গিয়ে কয়েকটা জায়গায় খুব জোর হোঁচট খেয়েছি, তার একটা "বৈষম্য "। তখনকার যুগে ও গোঁড়া মানুষের অভাব ছিল না। তারা বৈষম্য করতেন। একটা ঘটনা ছিল এমন," এক পরিবারের সদস্য অসুস্থ। জসীম সেচ্ছায় গিয়ে তাদের সেবায় যুক্ত হলেন। ঐ পরিবারের লোক জন ও খুশি হয়ে জসীমের হাতে রোগীর ভার দিলেন। পরে যখন জানা জানি হয়,জসীম অন্য ধর্মের, তখন তাকে বের করে দেয়া হলো। কত বড় অপমান! তাও এই মহান মানুষ টি এসব গায়ে মাখতেন না,পরের দিন সব ভুলে গিয়ে যুক্ত হতেন মানুষের সেবায়। কত বড় মন হলে এটা সম্ভব আমি শুধু ভাবি! 


শুধু এই কয়েকটি গল্প না,পুরো "জীবন কথা " জুড়ে জসীমের গল্পগুলো যখন পড়তে যাই,পড়তে পড়তে মন আচম্বিতে পুলকিত হয়ে ওঠে। বলতে ইচ্ছে করে," জসীম উদ্দীন  কিছুতেই মানুষের কাতারে পড়েন না,তিনি স্রষ্টা প্রেরিত মহান দূত। "


জসীমের যখন জন্ম এবং বেড়ে ওঠা,তখন এই বাংলা ছিল কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের ভাগাড়। এমন একটা পরিবেশে বসবাস করেও জসীম জদ্দীন ছিলেন "একজন অধুনা মানুষ "। তাঁর চিন্তা বিশ্বাস ঐ সময় কালের চেয়ে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে ছিল। আমার এখনো ভাবতে অবাক লাগে ১৯ 'শ সালের শুরুর দিকে বসে একটা মানুষ বলছেন," আমি হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করি না। মানুষ কে অকাল মৃত্যু থেকে বাঁচাতে হলে ভালো চিকিৎসা দরকার। হোমিওপ্যাথি তে তা অসম্ভব। " এই চিন্তা এই ২০২৪ সালে বসেও অনেক গুণী মানুষ করতে পারে না।জসীমউদ্দীন চিন্তার আধুনিকতার আরো শক্ত প্রমাণ মিলে,যখন তিনি বলেন "ধর্ম যখন রুটিনমাফিক প্রথা হইয়া জীবনে অভ্যস্ত হইয়া যায় তখন তাহা হইতে কোনো উপকার ই পাওয়া যায় না"


"জীবন কথা" পড়বার আরেকটা চমৎকার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তৎকালীন সময়ের গ্রামীণ পরিবেশ,সমাজ,তাদের আচার সম্পর্কে জানতে পারা। প্রতি টা বিষয় জসীম বাবুর দক্ষ হাতের লেখায় যেন চোখের সামনে ফুটে উঠতে থাকে। তেমনি একটা উৎসব আমার বেশ অদ্ভুত লেগেছে, নাম "হাজরা উৎসব"। বেশ অভিনবত্ব আছে এই উৎসবে। হেন উৎসবের কথা আমি আগে কোথাও শুনি নাই।




কবি বলেছেন,এত কিছু মানুষ করে যাচ্ছে, কিছুই থাকবে না। মানুষ টা চলে গেলে,সব মুছে যাবে। অথচ বাংলার মানুষ জসীম উদ্দীন কে ভুলেনি। কোন দিন ভুলবে না। যতদিন এই বাংলা ভাষা থাকবে,ততদিন বাংলাভাষা-ভাষীর কাছে চির উজ্বল হয়ে থাকবেন " আমাদের পল্লী কবি জসীম উদ্দীন "। এই বই নিয়ে লিখতে চাইলে, অনেক কিছু লেখা যায়। কিন্তু এখন কেমন জানি স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি, চমৎকার সব বই পড়ার পরে বিতং করে রিভিউ লেখার চেয়ে,ঐ বইয়ের আবেশে ডুবে থাকতেই বেশি ভালো লাগে।
Profile Image for Asikul Islam  Himel.
39 reviews5 followers
May 18, 2021
বড়ই মনোমুগ্ধকর বই। আমাদের পল্লীকবি তাঁর ছেলেবেলার স্মৃতি খুব সাবলীল ভাষায়, খুব যতনে তুলে ধরেছেন যেমন করে কোনো পল্লীবধূ নকশিকাঁথায় ফুল তোলে সুঁই-সুতোর খোঁচায়;সহজ সরল ভালোবাসায়, ফলে সমগ্র ব্যপারটি হয়ে ওঠে স্বাভাবিক সুন্দর। ' রাঙাছুটুর বাপের বাড়ি ' পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে আমি যেনো নিজের নির্দোষ শৈশবে আবার প্রবেশ করেছি৷ গুণী লেখকদের এটাই বৈশিষ্ট্য, নিজের গল্পটা সবার গল্পের অংশ হিসেবে করে নেয়া৷
Profile Image for Shahida Pervin.
Author 3 books3 followers
January 5, 2021
An impressive autobiography of the writer "Palli Kobi"(The Rural Poet) Jasim Uddin of Bangladesh. I grew up in a village in Bangladesh, of course, after a few generations when 'Jibon Kotha' was written. However, the writer seems only one generation ahead of my father since my father got married late and I am the youngest child of him among four with a 7-year gap with my immediate elder brother. I spent most of my childhood very close to my father, heard lots of stories and memories, and observed the rural life during the time I lived there. Therefore, I can visualize the poverty-ridden rural Bangladesh at that time (Jibon Kohta written in 1964). Extreme poverty, no health system, child marriage, untimely death, inequality, strongly committed benevolent people around, leftist activism, the struggle of the poor students, the culture, food, local source of entertainment song, jatra, and all that. I enjoyed the book fullest. While bias or hostility toward community and sex is not uncommon in many books, this book is such wonderfully balanced I find.
Profile Image for Sharmin Akter.
8 reviews32 followers
June 7, 2020
জীবনকথা : জসীম উদদীন

জসীমউদদীনের " জীবনকথা" এতটাই মনোমুগ্ধকর ও বৈচিত্র্যময় যে কোনটা ছেড়ে কোনটার কাহিনি লিখবো, সেটা ভেবে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা জসীম উদদীনের জীবন কাহিনি খুব সহজেই পাঠককে আকৃষ্ট করে তাঁর সহজ সরল স্বীকারোক্তির জন্য, চুম্বকের মতো পাঠকের মনোযোগ ধরেও রাখে একই কারণে। তাঁর বেড়ে ওঠা নিবিড়ভাবে খেয়াল করলে দেখা যায় প্রকৃতিই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। অতুলনীয় মানবপ্রেম তাঁর মধ্যে কবিত্ব জাগিয়েছে, অদম্য কৌতূহল আর গভীর পর্যবেক্ষণ সেই লেখকসত্তাকে পূর্ণতা দিয়েছে। আর দরিদ্রতা বেশিরভাগ মানুষের মনের সংকীর্ণতা আনলেও তাঁর জীবনে এসেছে আশীর্বাদ হয়ে।

গাঁয়ের প্রকৃতি জসীমউদদীনের হাতে ধরা দিয়েছে পটে আঁকা ছবির মতো। নদীকে কখনও তুলনা করেছেন মুখরা রমণীর মতো কখনও বা বলছেন পল্লীবাসীদের খেলার ঝুমঝুমি। হিজল, তেলাকুঁচ আর মাকালের রঙের আভিজাত্যে বনসুন্দরীর যে রূপের যে বর্ণনা দিয়েছেন, চোখ বুজলেই তার দেখা মেলে। ডাহুক, কানাকুয়ার ডাক আর কাঠঠোকরার ঠোকরের শব্দ দিয়ে যে ভৌতিক আবহ সৃষ্টি করেছেন, সেটাও কল্পনায় অনুভব করা যায়। বাবুই কারিগরের ঘর বানানো - সেই ঘর আলোকিত করার কৌশল পড়ে মন আনন্দে ভরে যায়। পানের বরজের যত্ন নেয়ার নিয়মকানুন পড়ে মনে হয়, পান তো নয়, ঠিক যেন বাবার আহ্লাদী, নাজুক মেয়ে। এরকম আরও অসংখ্য চিত্র এঁকেছেন প্রকৃতির, যেগুলোর শিল্পমান অতি উঁচু দরের। হবেই না বা কেন, জসীম উদদীন পারলে নিজেকে প্রকৃতির মাঝেই বুঝি উজাড় করে দিতেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় এই উক্তিগুলো পড়ে, " ফুলগুলি যখন ফুটিত তখন আমার মনে হইত আমি নিজেই যেন ফুটিয়া উঠিয়া ইহাদের সঙ্গে মিশিয়া গিয়াছি।", " বিড়ালগুলির মধ্যে নিজেই একটি বিড়াল হইয়া উঠি।"

কুসংস্কারে ভরা পল্লীগ্রামের বিচিত্র বর্ণনা এসেছে 'জীবনকথা'য়। আঁতুড়ঘরে হিন্দু নারীদের অমানবিক কষ্ট, মুসলমান বাড়িতে তুলসীগাছ লাগানোয় সমালোচনা, এলোপ্যাথি ছেড়ে হোমিওপ্যাথির প্রতি অগাধ বিশ্বাস, অসচেতনার কারণে নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার কাহিনিগুলো পড়লে মনের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়।

বালক জসীমের জীবনে কখন কোন খেয়াল এসেছে, বোঝা বড় দায়! কখনও তিনি ঢাকায় গিয়ে মৌলবী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন, কখনও বা সন্ন্যাসী হয়ে হিমালয়ের দিকে যাত্রা করতে চেয়েছিলেন। কবিয়াল হতে চেয়েছেন, স্বপ্ন দেখেছেন লাঠিয়াল হওয়ারও। আবার সেই বালকমনে বড় বড় বই লেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই হয়তো হয়ে উঠতে পেরেছেন গ্রামবাংলার প্রাণের কবি।

বড় বড় মানুষের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য সর্বদা লালায়িত থাকতেন বালক জসীম। যার কাছেই শেখার মতো কিছু পেতেন, গুরু মনে করে পরম শ্রদ্ধায় আঁকড়ে ধরতেন। অন্যের মাঝে কোনো গুণের খোঁজ পেলে নিজের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটাতে ত্যাগ- তিতিক্ষা স্বীকার করতে পিছপা হতেন না কখনও। নিজে ভালোবাসার কাঙাল ছিলেন বলেই হয়তো কোনো বাছবিচার ছাড়াই যেকোনো ধর্মের মানুষের সেবা করে নিজের জীবন উৎসর্গ করার সংকল্প করেছিলেন।

সেকালে ম্যালেরিয়া, কোলেরার থাবায় গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। শহরেও আক্রান্ত হতো অগণিত মানুষ। চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন ছিলো অপ্রতুল,সেবা করার মতো লোকেরও ছিলো বড়ই অভাব। জসীম উদদীন স্বেচ্ছায় কত রোগীর পাশে রাত জেগে সেবা করেছেন, গ্রামের লোকের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ' জসীম সাধু' নামে। বড় বড় মনীষীর জীবনী পড়ে আকৃষ্ট হতেন খুব। তাঁদের মতো হতে চাইতেন। এজন্য পরের সেবা করতে গিয়ে কুলির কাজও করেছেন। এত কিছু করেও তিনি যখন লিখেন ' জীবনে কত আজেবাজে কাজ করিয়া সময় নষ্ট করিয়াছি', তখন মনে হয়, জীবনে আত্মতৃপ্তি না আনলেই হয়তো বিরাট মানুষ হওয়া যায়, কোনো কাজ করে আত্মতুষ্টি এলে তো মানুষ থেমে যেত।

"জীবনকথা"- চিত্রালী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো। পাঠকেরা পছন্দের লেখকদের চিঠি লিখে উৎসাহিত করতেন। জসীম উদদীনকে এক পাঠক চিঠিতে জানিয়েছিলেন " জসীম উদদীনের জীবনকথা পড়িতেছি না মায়ের হাতে পিঠা খাইতেছি।" মায়ের হাতের রান্নার মতো উৎকৃষ্ট খাবারের সাথে যখন কোনো লেখকের লেখার তুলনা হয়, তখন সে লেখকের জীবন সার্থক না হয়ে কি পারে?
Profile Image for Zahidul Choyan.
82 reviews20 followers
May 7, 2017
"চাচীর উঠানে কতক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিয় বড়ুর কবরের কাছে আসিলাম। মুক মাটির কবর কথা বলেনা। আমার মনের সান্ত্বনা তাইমাটি খুঁড়িয়া বাহির হইলোনা। আজ বড়ুর কবরের পাশে বসিয়া দুই ফোঁটা চোখের জল ফেলিবার সাধ্যও আমার নাই। আমি তাহার কে যে তাহার কবরে বসিয়া চোখের জল ফেলিব ? জীবনে যাহাকে কোনদিন মনের আকুতি জানাই নাই পাছে লোকে তাকে কিছু বলে; আজ তার কবরের পাশে বসিয়া অশ্রু বিসর্জন করিয��া তার সেই শুভ্র পবিত্র জীবনে কেন কালিমা লেপন করি ? পায়ের উপরে পা ফেলিয়া নদীর ধারে আসিয়া বসিলাম। নদীতে আর কতটুকু পানি ধরে যে আমার অশ্রধারার সঙ্গে প্রতিযোগীতা করিবে?"


"জীবন কথা"। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের জীবনী গ্রন্থ। তাঁর বাল্যকালের এক বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় এই বইয়ে। যৌবন বয়সের কথা খুব কমই এসেছে, যতটুকু এসেছে তা কেবলই ঘটনার প্রয়োজনে। তাঁর অন্যান্য লেখার মতোই এখানেও গ্রামীন মানুষের জীবন আর প্রকৃতি ছিলো মুখ্য বিষয়।

পল্লীকবির জীবনে ছাপ রেখে যাওয়া প্রচুর মানুষ সম্পর্কে কবি চেষ্টা করেছেন কিছু না কিছু লিখে যেতে। কবির কবি হওয়ার পেছনে যাদের নূন্যতম অবদান ও ছিলো কবির তাঁদের কথা উল্লেখ করার চেষ্টা করেছেন।

বইয়ের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক স্থান মনে হয়েছে কবির নানা-নানীর মৃত্যু সময়কালের বর্ণনা।
কবির লেখায় সাধু এবং গ্রাম্য ভাষার এক অদ্ভুত মিশেল রয়েছে, যা তাঁর লেখাকে ক্লান্তিকর হওয়া থেকে মুক্ত রাখে।

জানুয়ারী কবির জন্ম মাস। কবির লেখাকে ভালোবাসলে, তাঁর বৈচিত্রময় জীবন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলে পড়তে পারেন।
Profile Image for MithunKS.
9 reviews35 followers
October 12, 2016
(নট আ রিভ্যু!)

বইটিতে কবি শুধু তাঁর বাল্যকালের ঘটনাবলি তুলে ধরলেও নির্দিষ্ট একটা টাইমলাইন ধরে এই 'জীবনকথা' এগোয়নি। মাঝে মাঝে তাই সময়কালের হিসেব করতে বেগ পেতে হচ্ছিল। উঠে এসেছে কতগুলো চরিত্র ধরে ধরে তাদের ঘিরে কবির স্মৃতিচারণা। শুরু নিজের পিতাকে (বাজান বলে ডাকতেন) দিয়ে, পরপরই আছেন মা-দাদা, আর শেষ হয়েছে গ্রামসম্পর্কীয় এক চাচাতো বোনকে নিয়ে (যার প্রতি তাঁর এক 'যে যাহারে চাই, সে তাহারে পাইনা' ধরণের অনুভূতি ছিল)।

কবির আফসুস, "কত দেশে সুন্দর কন্যার কাহিনী খুঁজিয়া বেড়াই। আমার দেশে আমারই গাঁয়ে এমন সুন্দর কন্যা! এই চাঁদ আমারই আঙিনায় আসিয়া খেলা করিয়াছিল। তখন হাত বাড়ালেই ধরিতে পারিতাম। আজকের চাঁদ যে কত দূরের আকাশে। কোন রকমেই তাকে হাতে নাগাল পাইতে পারি না।"


কবির কবি হয়ে উঠার পেছনের ভিতটা কিভাবে গড়ে উঠেছিল, তার একটা ধারণা পাওয়া যায় বইটি থেকে।

মজা পাইছি, বিশ শতকের প্রথম দশকে কবি যেসব খেলা করতেন, শতকের শেষ দশকে এসেও সেইসব খেলার কিছু কিছু আমিও নিজেও খেলছি।
Profile Image for এইচ তুষার.
15 reviews1 follower
January 9, 2020
বইটার প্রচ্ছদ এক অজ্ঞাত তাঁতির জামদানী শাড়ির বুনন থেকে নেওয়া ! অদ্ভুত না ? কিন্তু পল্লীকবির আত্মজীবনে জামদানীর এই ছোঁয়াই যেন স্বাভাবিক ..

পল্লীকবি তখন রোগশয্যায় .. ঝাপসা চোখে তিনি মনে করার চেষ্টা করেন তাদের ; যাদের সাথে হেঁটে তিনি জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিয়েছেন !

সুদীর্ঘ জীবনে পথে কতজনই এসেছে আবার কতজনই চলে গিয়েছে ! কেউ কেউ চলে গিয়েও রয়ে গেছে হৃদয়ের ভীষণ গহীনে .. কবি সবার কথা লিখে রাখতে চান জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসে .. নইলে যে তার মতো তার স্মৃতিরাও বিস্মৃত হয়ে যাবে !

কবি ঝাপসা চোখে দেখেন তার মমতাময়ী মা কোনো মেঘলা দুপুরে ঘন কালো চুল মেলিয়া মেঝেতে বসে নঁকশী কাথা সেলাই করছেন ..

কবির মনে পড়ে তার বাবার কথা .. হৈতেষী স্কুলের এক হতদরিদ্র শিক্ষক ছিলেন ! বিনাবেতনে কী অমানুষিক পরিশ্রমই না করেছিলেন স্কুলটিকে নিজের পায় দাঁড় করানোর .. স্কুল একসময় ঠিকই স্বচ্ছল হয় কিন্তু তখন আর কেউ এই বুড়ো মানুষটাকে চায় না ! বাধ্য করা হয় অবসর নিতে ! অথচ স্কুলটাকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতেন মানুষটা !

কবির মনের আঙিনায় আসে কাদেরীর মা .. বিধবা ছিলেন .. স্বামী মরার পর এর ওর সংসারে কাজ করেই দিনপাত করতেন !
ভীষন ভালোবাসতেন তিনি আমাদের কবিকে ! মৃত্যুশয্যায় তিনি কবিকে দেখতে চেয়েছিলেন .. কবির হাতদুটো বুকের কাছে নিয়ে কী যেন বলতে চেয়েছিলেন .. পারেন নি ! তাহার কথা হয়ত কেউ মনে রাখেনি কিন্তু মায়ের মতো ভালোবেসে তিনি কবির জীবনে যে প্রদীপ জ্বালিয়ে গিয়েছিলেন তা কখনো অম্লান হয়নি !

কবির কানে আসে তার বৃদ্ধ দাদার গানের সূর ! অল্প বয়সে অন্ধ হয়েছিলেন বলে লেখা পড়া শিখতে পারেন নাই .. কিন্তু এমন কোনো কেচ্ছা শ্লোক গ্রাম্যগান ছিলো না যা তিনি জানতেন না ! তিনি বৃষ্টির দিনে তালপাতার মাদুর বিছিয়ে উঠানে বসে কী যে অদ্ভুত সুরের মূর্ছনা করতো তাহা কবির বালক হৃদয়ে এক ঘরছাড়া উদসীনতা এনে দিতো !

কবির মনে পড়ে তার মেজদি সেজদির কথা ! দুই যমজ বোন - মৃণালিনী আর পঙ্কজিনী ! আপন কেউ ছিলো না তারা .. কিন্তু দুবোনই কবিকে ভীষণ ভালোবাসতেন ! কবিদের অভাব অনটনের সংসারে এই দুইবোন দেবীরূপে আবির্ভূত হয়ে কত ভাবে কত কৌশলেই না কবিকে সাহায্য করেছিলো ! সেজদির খুব শখ ছিলো ভাই তার বড় হয়ে নামীদামী কবি হবে .. ইসস সে যদি এখন বেঁচে থাকতো কী খুশিই না হতো !

পুরো বইটা জুড়েই কবির স্মৃতিকাতরতা আর শৈশবের আম-জাম-ডুমুরের স্মৃতিমন্থন ! অদ্ভুুত সুন্দর এক বই !

জসীম উদ্দীন ব্যক্তিজীবনে খুব স্মৃতিকাতর মানুষ ছিলেন বোধহয় .. তাইতো লিখতে পেরেছিলেন -

" তারপর এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি .. যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি "
Displaying 1 - 30 of 36 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.