Jump to ratings and reviews
Rate this book

হাসুলী বাঁকের উপকথা

Rate this book
রাঢ়ের 'হাসুলীবাঁকের উপকথা' আপনার অজানা নয়। সেখানকার মাটি, মানুষ, তাদের অপভ্রংশ ভাষা-সবই আপনার সুপরিচিত। তাদের প্রাণের ভোমরা-ভোমরীর কালো রঙ ও গুঞ্জন আপনার পল্লীজীবনের ছবি ও গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই মানুষদের কথা শিক্ষিত সমাজের কাছে কেমন লাগবে জানি না। তুলে দিলাম আপনার হাতে।
ইতি-
তারাশঙ্কর

438 pages, Kindle Edition

First published June 1, 1947

65 people are currently reading
827 people want to read

About the author

Tarashankar Bandyopadhyay

130 books287 followers
Tarashankar Bandyopadhyay (Bangla: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) was born at his ancestral home at Labhpur village in Birbhum district, Bengal Province, British India (now West Bengal, India). He wrote 65 novels, 53 story-books, 12 plays, 4 essay-books, 4 autobiographies and 2 travel stories. For his novel Arogyaniketan, he received the Rabindra Puraskar in 1955 and the Sahitya Akademi Award in 1956. In 1966, he received the Jnanpith Award for his novel গণদেবতা. He was honoured with the Padma Shri in 1962 and the Padma Bhushan in 1969.

Tarasankar is one of those writers of the third decades of the twentieth centuries who broke the poetic tradition in novels but took to writing prose with the world around them adding romance to human relationship breaking the indifference of the so called conservative people of the society who dare to call a spade a spade. Tarasankar’s novels, so to say, do not look back to the realism in rejection, but accepted it in a new way allowing the reader to breathe the truth of human relationship restricted so far by the conservative and hypocrisy of the then society.

He learned to see the world from various angles. He seldom rose above the matter soil and his Birbhum exists only in time and place. He had never been a worshipper of eternity. Tarasankar’s chief contribution to Bengal literature is that he dared writing unbiased. He wrote what he believed. He wrote what he observed.

His novels are rich in material and potentials. He preferred sensation to thought. He was ceaselessly productive and his novels are long, seemed unending and characters belonged to the various classes of people from zaminder down to pauper. Tarasankar experimented in his novels with the relationships, even so called illegal, of either sexes. He proved that sexual relation between man and women sometimes dominate to such an extent that it can take an upperhand over the prevailing laws and instructions of society. His novel ‘Radha’ can be set for an example in this context.

His historical novel ‘Ganna Begum’ is an attempt worth mentioning for its traditional values. Tarasankar ventured into all walks of Bengali life and it’s experience with the happenings of socio-political milieu. Tarasankar will be remembered for his potential to work with the vast panorama of life where life is observed with care and the judgment is offered to the reader. and long ones, then any other author. He is a region novelist, his country being the same Birbhum. He mainly flourished during the war years, having produced in that period a large number of novels and short stories.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
257 (57%)
4 stars
149 (33%)
3 stars
33 (7%)
2 stars
5 (1%)
1 star
4 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 58 reviews
Profile Image for Abu Rayhan Rathi.
108 reviews
September 9, 2021
আমার শব্দভান্ডার একেবারেই সীমিত। তাই কোনো বই ভালো লাগলে ‘দারুণ’, ‘অসাধারণ’, ‘দূর্দান্ত’ ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে দুই-চার লাইনে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেই। কিন্তু এ বই সম্পর্কে লেখার সময় মনে হচ্ছে উপরের বিশেষণগুলো বইটার সঙ্গে একেবারেই মানাচ্ছে না। শুধু ঐ গুটিকয়েক শব্দ দিয়ে কি কোনো বইয়ের অসাধারণত্ব বর্ণনা করা যায়? আমার তো মনে হয় না। আর এই অসাধারণত্বের জন্যই বোধহয় বইটাকে বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক উপন্যাস হিসেবে ধরা হয়।

বইটা পড়ার পর মনে হচ্ছে তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় নিশ্চয় জাদু জানেন! তার লেখনীর মায়াজালে পরে পুরোটা বই পড়ে গেছি একেবারে অভিভূত হয়ে। একটা মূহুর্তের জন্যও বিরক্ত লাগে নি। এটা ছাড়াও উনার আরো দুইটা বই পড়া আছে, ঐ দুইটার বেলাতেও একই কথা। শুধুই মুগ্ধতা!

০৯ আগষ্ট, ২০২১
Profile Image for Soaibuzzaman.
30 reviews
March 8, 2021
হাঁসুলী বাঁকের কথা- বলবো কারে হায়?
কোপাই নদীর জলে- কথা ভেসে যায়।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,759 reviews357 followers
April 1, 2025
"Every landscape tells a story if you know how to read it." – Thomas Cole

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ (১৯৫১) বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নিদর্শন। এই উপন্যাস শুধুমাত্র এক জনজাতির জীবনসংগ্রামের বর্ণনা নয়, বরং আধুনিকতার অভিঘাতে সমাজ ও সংস্কৃতির বিবর্তনের এক গভীর অধ্যয়ন। রাজবংশী ও শবরদের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, তাদের ধর্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলাবদ্ধ সামাজিক কাঠামো এবং আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।

"Nature is not a place to visit. It is home." – Gary Snyder

হাঁসুলী বাঁক নামক কাল্পনিক জনপদটি শাল-পিয়ালের গভীর জঙ্গলে আবৃত, যেখানে প্রকৃতি ও মানুষ একাত্ম। তারাশঙ্কর এই প্রকৃতিকে নিছক পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করেননি; বরং তিনি প্রকৃতিকে জীবন্ত চরিত্রের মতো ফুটিয়ে তুলেছেন। নদীর প্রবাহ, গাছপালার সজীবতা এবং রাতের আঁধারে গভীর জঙ্গলের রহস্যময়তা চরিত্রদের মানসজগতে গভীর প্রভাব ফেলে। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকা মানুষগুলোর জীবনে বাহ্যিক উন্নয়ন কতটা পরিবর্তন আনতে পারে, সেটি লেখক নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।

"History is written by those who have hanged heroes." – Braveheart

এই উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে কুড়িদের জীবনসংগ্রাম। তারা মূলত শিকারি ও কৃষিজীবী, সমাজের মূল স্রোত থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। শৃঙ্খলাপরায়ণ এই জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেয় বরণী সরদার। কিন্তু বাইরের সভ্যতার সাথে তাদের ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও নতুন মূল্যবোধের আগ্রাসন তাদের চিরাচরিত জীবনকে টলিয়ে দেয়। লেখক সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই লড়াইয়ের বিশ্লেষণ করেছেন, যেখানে আধুনিকতার আগ্রাসন কেবল জীবনযাত্রার পরিবর্তনই আনে না, বরং সাংস্কৃতিক ও নৈতিক টানাপোড়েনও সৃষ্টি করে।

"The old world is dying, and the new world struggles to be born." – Antonio Gramsci

উপন্যাসে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে প্রাচীন ও আধুনিকের দ্বন্দ্ব। কুড়িদের সামাজিক কাঠামো একদিকে ঐতিহ্য ও কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ, অন্যদিকে আধুনিকতা ও অর্থনীতির নতুন তরঙ্গ তাদের সেই প্রথাগত সমাজব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। জমিদারি প্রথার ক্ষয় এবং কুড়িদের জীবনে আধুনিক শাসনব্যবস্থার প্রভাব একদিকে আশার সঞ্চার করে, আবার অন্যদিকে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। বরণী সরদার ও অন্য প্রবীণদের মানসিক সংকট, যুবকদের বিদ্রোহ এবং বাইরের জগতের লোভ-লালসা এই দ্বন্দ্বের গভীরতা প্রকাশ করে।

"Language is the road map of a culture." – Rita Mae Brown

তারাশঙ্করের ভাষা অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত ও জীবন্ত। কুড়িদের সংলাপে যে আঞ্চলিক টান, তা কেবল চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্যই প্রকাশ করে না, বরং তাদের সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হয়ে ওঠে। ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’-তে ব্যবহৃত লোকজ শব্দ, আঞ্চলিক কথ্যভাষা ও সরল অথচ গভীর বর্ণনাভঙ্গি উপন্যাসটিকে বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।

"A woman is the full circle. Within her is the power to create, nurture, and transform." – Diane Mariechild

নারী চরিত্রের প্রসঙ্গেও তারাশঙ্কর অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন। পুটলি, ধনিয়া ও অন্যান্য নারী চরিত্ররা একদিকে নিজেদের অস্তিত্বের লড়াই চালিয়ে যায়, অন্যদিকে সমাজের প্রথাগত শৃঙ্খল ভাঙতে চায়। তারা শুধু পুরুষ-নির্ভর চরিত্র নয়, বরং সমাজের পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীর ভূমিকাকে শক্তিশালী করেই তিনি কাহিনির সামাজিক বাস্তবতাকে গভীর করেছেন।

"Tradition is not the worship of ashes, but the preservation of fire." – Gustav Mahler

শেষে যা বলার থাকে: ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ কেবল একটি উপন্যাস নয়, বরং এটি সামাজিক বিবর্তনের এক জীবন্ত নথি। আধুনিকতা বনাম ঐতিহ্য, প্রান্তিক বনাম মূলধারা—এই সংঘাত কেবল কুড়িদের জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমগ্র সমাজের প্রতিচিত্র। উপন্যাসটি কেবল বাংলা সাহিত্যেই নয়, বিশ্বসাহিত্যের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এই উপন্যাসের মাধ্যমে আমাদের চোখে এক নতুন বাস্তবতার দরজা খুলে দিয়েছেন, যেখানে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মানবিক সম্পর্কের জটিলতা এক নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়।
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
September 30, 2024
গ্রাম বাংলা নিয়ে গল্প উপন্যাসের সংখ্যা কম নয়। অনেকেই অনেকভাবে লিখে গেছে গ্রামীণ জীবন, জনপদ, প্রকৃতি নিয়ে। সেই অনেকভাবে লেখার মধ্যে বিশেষভাবে লেখা হাঁসুলি বাঁকের উপকথা।

শেষ কবে তারাশঙ্কর পড়েছিলাম মনে পড়ে না, ঝাপসা লাগে। ঝাপসা স্মৃতিকে দৃশ্যমান করতে আবারো ফিরে দেখা। যতবার পড়া হবে ততবারই নতুন করে কিছু না কিছু পাওয়া যাবে, কারণ কোপাই নদীর তীরে হাঁসুলি বাঁক ঘিরে গড়ে ওঠা কাহার পল্লীতে কম রত্ন ছড়িয়ে রাখেননি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়!

এ মুগ্ধতা শেষ হবার নয়!
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
April 16, 2024
"হাঁসুলী বাঁক" কোপাই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটা বাঁক,যা দেখতে হাঁসুলি গয়নার মতো। কোপাই নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে,কিছু জনপদ। জনপদের একদিকে থাকে,সমাজের উঁচু শ্রেণির লোকজন,কাহারদের ভাষা "বাবুরা বাস করেন। অন্য দিকে থাকে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির লোকজন, বড় লোক বাবু'দের ভাষায় " ছোট লোকেরা "। 


হাঁসুলী বাঁকের উপকথা হচ্ছে " কাহারদের" গল্প। একটা জনপদের গল্প। একটা সময়ের গল্প। কাহারদের জীবনের কথা বলতে গিয়ে,লেখক বলেছেন, আলোর প্রাচুর্য কাহারদের চিরদিনই কম। অন্ধকারে জন্মায়,অন্ধকারে থাকে,অন্ধকারেই মরণ হয়। লেখকের বাক্যদ্বয় আসলে পুরো গল্পের সারসংক্ষেপ। 


যাক,গল্প নিয়ে আমি কিছু বলব না। শুধু একটা চরিত্র নিয়ে একটু বলি। চরিত্র টা হচ্ছে "নসুবালা"। নাম শুনে মনে হতে পারে,নসুবালা নারী। কিন্তু তা না। নসু আকৃতি তে পুরুষ । কিন্তু সে মেয়ের মত সেজে থাকে। মেয়েদের মত কাজ করে। ঝগড়া করে,নাচে। মোদ্দা কথা হলো,সে নিজেকে নারী ভাবতে পছন্দ করে। আমি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম,এটা নিয়ে তাদের সমাজের কোন অসুবিধা ছিল না। কেউ ��োন ঝামেলা করত না। বরং নসুর এই চারিত্রিক ব্যাপার টা সবাই বেশ মজার সাথে নিয়েছিলো। পাড়ায় কোন বিয়ে হলে বা অনুষ্ঠান হলে,নসু যেত। কাজ কর্ম করত। আসার সময় বকশিশ নিয়ে এসে যেতো। খুব সহজ একটা ব্যাপার। এই নসুই শেষ অব্দি গল্পে থাকে,লেখক বড় চরিত্রদের পাশাপাশি " নসুর" চরিত্র টা খুব মায়া দিয়ে এঁকেছেন। এই অব্দি সব ভালো,গোল টা বাঁধে , যখন আমি নসুর চরিত্রকে বর্তমান সময়ের সাথে বা সমাজের সাথে মিলাতে যাই। কী অবস্থা হতো,যদি নসু বর্তমান(২০২৪ সালের সভ্য সমাজ)সমাজে বাস করতো?? ঘুরে ফিরে প্রশ্ন একটাই আসতেসে!!


মুক্ত মনা / উদার মানসিকতার মানুষ আসলে কারা? সেই অন্ধকার যুগের কাহারেরা, নাকি বর্তমানের উচ্চ শিক্ষিত,প্রযুক্তি বেষ্টিত  মানুষেরা?




 
Profile Image for Ranendu  Das.
156 reviews63 followers
July 25, 2016
আজ বিংশ শতাব্দীতে যখন এক শহুরে পাঠক তার আপাত-নিভৃত ঘরে আরামকেদারায় শায়িত হয়ে তারাশঙ্করের ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসটি পড়ছে তখন সেই কোপাই-তীরবর্তী কাহার-কূলের উপকথা পরিবর্তিত হয়েছে এক রূপকথায়! রূপকথাই তো বটে; সে বনোয়ারি, সে সুচাদ পিসি, করালী-পাখী-সুবাসী কেউই তো আর নেই; কোপাই এর জলে সে কাহার পাড়া, সে জাঙ্গলের জমি, বাবাঠাকুরের থান যে কত বার ভেসেছে, কতবার ডুবেছে তার কি হিসেব আছে! নেই, কোথাও নেই। ফলে সে কাহার-জনপদের পুরুষ থেকে পুরুষান্তরে চলে আসা শ্রুতিকাহিনী যা একসময় এক উপভোগ্য উপকথার জন্ম দিয়েছিল তা আজ সময়ের ফেরে আশ্চর্য রূপকথায় পরিনত হয়েছে। সংসদ বাংলা অভিধান মতে উপকথা মানেই রূপকথা। কিন্তু আমার মনে হয়, যেখানে, উপকথা বলে পিতৃ-পুরুষের কাহিনী তার উত্তর-পুরুষ কে, সেখানে রূপকথার কাহিনী সময় নিরপেক্ষ, পুরুষ-নিরপেক্ষ, অন্যকথায় চিরকালীন। কিন্তু উপকথাই হোক বা রূপকথা, উভয়েই আসলে বলে জীবনের, ইতিহাসের আবর্তনের কথা। উভয়েই জোরে জোরে হেকে বলে “সাবোধান সাবোধান! সকল পুরুষ শোন, ভুলে যেও না যে ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে!” ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ তাই একই সাথে যেমন অতীত কালের আখ্যান শোনায়, তেমনি সে পাঠক কে ভবিষ্যকালের আভাসও দিয়ে যায়। অতীত ইতিহাসের ধূসর পরিসরেই ছড়িয়ে থকে ভবিষ্যতের বীজ।
Profile Image for Mehedi  Hasan Mahfuz.
171 reviews27 followers
May 6, 2024
একটি বিশেষ জাতীগোষ্ঠীর সম্পূর্ণ সামাজিক জীবন এই উপন্যাসের মাধ্যমে চিত্রিত করেছেন। সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গের এই কাহার সম্প্রদায়ের মানুষরা মূলত পেশায় পালকিবাহক। কিন্তু সময় ও আধুনিকতার করাঘাতে তাদের পেশা ক্রমে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাওয়াতে তারা হয়ে উঠে পুরোদস্তুর কৃষাণ।শিল্প বিপ্লবের পর সারা পৃথিবীতে আধুনিকতার হাওয়া বইতে থাকে।মোটরগাড়ি, রেল আর কলকারখারখানার বদৌলতে মানুষের জীবন ক্রমে সহজ হয়ে আসে।কাহরদের ও তাই তাদের পিতৃপুরুষের পেশা ছেড়ে ধরতে হয় হালচাষের। সে হালচাষ ও নিজের জমিতে নয়, অন্যের জমি চাষ এবং সেখান থেকে সামান্য ভাগ পায় তারা। পিতৃপুরুষের পেশা কেড়ে নেয়ায় কাহাররা ঘৃণা করে রেল ও কলকারখানাকে। যুগের পরিবর্তন হয়, আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে সর্বত্র, তবুও কাহাররা নিজেদের স্বকীয়তা, বৈশিষ্ট ছাড়তে চায় না। কোপাইয়ের বানে ভেসে গেলো কি অতি বর্ষণে চাষবাসের অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেলো তাতেও তারা দমে না, স্থানু হয়ে থাকে বাঁশবাদি কি জাঙলের পাড়ে। বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগকে তারা দেখে "কত্তার রোষ" হিসেবে।আর তাই সে রোষ কাটানোর জন্য তারা পুজো দেয়, দেয় পাঠা বলি। এভাবেই উপকথায় ভর করে চলতে থাকে তাদের জীবন। এই নিম্নবর্গের মানুষদের মাধ্যমে তারাশঙ্কর দেখিয়েছেন সমাজ পরিবর্তনের চিত্র, মানুষদের মধ্যে জাতি চেতনা আর তথাকথিত উচ্চবর্গের মানুষদের দ্বারা নিম্নবর্গের মানুষদের নিষ্পেষিত হওয়ার করুণ চিত্র।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রত্ন "হাঁসুলী বাঁকের উপকথা"।
এক কথায় বলতে গেলে ইম্প্রেসিভ।
হ্যাপি রিডিং💙
Profile Image for হাসান নাহিয়ান নোবেল.
105 reviews169 followers
March 2, 2018
“কোন্‌ ঘাটেতে লাগায়েছ ‘লা’ও আমার ভাঁজো সখি হে!
আমি তোমায় দেখতে পেছি না।
তাই তো তোমায় খুঁজতে এলাম হাঁসুলীরই বাঁকে—
বাঁশবনে কাশবনে লুকাল্‌ছ কোন ফাঁকে!
ইশারাতে দাও হে সখি সাড়া
তোমার আ-ঙা পায়ে লুটিয়ে পড়ি গা
ও আমার ভাঁজো সখি হে!”


তারাশঙ্করের ভাষাটা দিব্যি মিঠে। প্রেমের ভাষায় তো বটেই, গালির ভাষাতেও সুধা ঝরে ঝরে পড়ে। কেবল ভাষার জন্যেই একের পর এক তারাশঙ্কর উল্টে যাওয়া যায়।

এরপর আমরা খেয়াল করি, ভাষাটা চলতে চলতে যেই গল্পটা বলছে—সেই গল্পেও অমৃত আছে বটে। আমরা আগ্রহ নিয়ে করালীকে খেয়াল করি। খেপা ছেলেটা যখন পটাপট তিনটা বালিহাঁসের মাথা ছিঁড়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে, ‘এই আমার বলিদান হয়ে গেল,’ এবং এরপর মুখে বলিদানের বাজনার বোল খা-জিং-জিং বাজাতে বাজাতে চলে যায়—তখন গোটা পাড়ার সাথে আমরাও স্তম্ভিত হয়ে যাই। কিংবা সুচাঁদ বুড়ি যখন ঘোষণা দেয়, ‘আমি মদ খেয়ে লতুন কাপড় পড়ে লাচব,’ তখন আমাদেরও ইচ্ছে হয়, পাড়ার ছেলেছোকরাদের সাথে ছুটে যাই, বুড়ির কাণ্ডটা দেখি! গল্পটার জন্যেও তো তারাশঙ্কর উল্টে যাওয়া যায়, একের পর এক।

এখানেই শেষ না। এরপর আমরা আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করি, ভাষাটা কেবল গল্প বলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না—সেই গল্পের কাহিনীর ওপর চিন্তার আরেকটা স্তর আছে। বনোওয়ারী কেবল একটা পাড়ার মাতব্বর না, করালী কেবলই এক দ্রোহী তরুণ না। প্রত্যেকে আলাদা একেকটা মেটাফোর। কাহারদের উপকথার আড়ালে লেখক তুলে ধরছেন একটা জীবনবোধকে। এই বোধের জন্যেও কি একের পর এক তারাশঙ্কর উল্টে যাওয়া যায় না?

এবং শেষত, বইয়ের কোনো পৃষ্ঠা থেকে হঠাৎ হুড়মুড় করে একটা বাক্য উঠে আসে—যেটা প্রবল ধাক্কা দিয়ে আমাদের এলোমেলো করে দেয়, আমাদের উঠোনে, আঙিনায় ঝড় তুলতে থাকে। আমরা হতভম্ব হয়ে যাই। কবি-র যেমন ‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে,’ তেমনই হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় আমরা দেখি, ‘কারো ছোঁয়া খেলে জাত যায় না, জাত যায় এঁটো খেলে।’

সর্বনাশ করেছেন তারাশঙ্কর।
Profile Image for Rehnuma.
444 reviews21 followers
Read
July 22, 2025
❛শোনেন শোনেন দেশবাসী, শোনেন দিয়ামন,
হাঁসুলী বাঁকের উপকথা করিব বর্ণন....❜

কোপাই নদীর তীরে বাঁশবাঁদি গ্রামে প্রায় তিরিশ ঘর কাহারের বাস। এদের আবার দুটো ভাগ আছে - পালকিবাহক কাহার আর আটপৌরে কাহার। দুই গোত্রের মাঝে বিবাদ আছে। তবে সংখ্যায় কাহারেরাই বেশি। তারা পালকিবাহক ছিল। অতীতে সায়েব মেমদের পালকি কাঁধে বইতো প্লো-হিঁ, প্লো-হিঁ শব্দে। তাদের দয়াতেই কাহারেরা বাঁচতো। নিচু জাতের দুঃখ হলেও সব মিলে তারা ভালোই ছিল।

তবে ❛বান❜ এলো ঐযে তাতে সায়েব-মেমদের বাড়ি তো ভাসলোই, ভেসে গেল তারাও। কাহারদের মাথায় মনিবের হাত রইলো না। এভাবে হাঁসুলীর বাঁক চলবে কীভাবে? ঘরে খাবার নাই, দুঃখ- এভাবে হয়না।
তাদের দুঃখের দিনে আশার আলো নিয়ে এলো চৌধুরী মশায়েরা। তারা গাঁয়ের জায়গাটুকু নিলো না, তাদের কাজ দিলো। উঁচু জাতের তাদের সেবা করে, বাসন এঁটো মেজে, তাদের জমিতে ফসল ফলিয়��� তার ভাগ, ধার নিয়ে তাদের আবার সুদিন ফিরলো। জাঙলের সদগোপ মহাশয়, ঘোষেদের ভিটেতে কাহারেরা কাজ শুরু করলো। মনিবেরা তাদের কথা ভাবেন, খাজনা দেন, আবার রোগশোকে তাদের পাশে থাকেন। কাজ মন্দ হলে পিঠে দু চার কিল দিতেও ভুলেন না। তবুও তারা মনিবের কাজ করে। মনিবের ঘরে লক্ষী এলে কি সে ছায়া তাদের পড়বে না? তাই তারা কাজ করে। পালকিবাহক থেকে হয়ে গেল কৃষাণ। সভ্যতার ফেরে পালকির চাহিদা কমেছে। তবুও বিয়েশাদিতে পালকির দরকার হলে কাহারেরা যায়, সানন্দে সে কাজ করে। পিতিপুরুষের কাজ যে! বাদ কেমনে দেয়? মাঝে চু রি-ডাকা তি করলেও পালকিবাহক কাহারেরা নিজেদের বদলে��ে। পারেনি আটপৌরেরা। তারা ফসলি কাজ করে না।

কাহারপাড়ার মাতব্বর এখন কোশকেঁধে বনওয়ারী। যে মাতব্বরির ছড়ি ঘুরায় না তার লোকেদের উপর। ধাম্মিক, পুজোর্চা করে, বাবা কালোরোদ্দুর আর কত্তাবাবার কাছে কাহারদের মঙ্গল কামনা করে। পিতিপুরুষের বিধান সে মেনে চলে। এই জনমে নিচু হয়ে জন্মেছে এটাই নিয়তির নেকা মানে সে। এই জনমে যদি ব্রাহ্মণদের সেবা করে কিংবা দু চার কিল খেয়ে পরের জন্মে উঁচু কুলে জন্ম হয় তাতে দোষ কী? সে চায় পিতিপুরুষের বিধান মেনে চলতে। গোটা কাহারপাড়াই দেবতা, অপদেবতা আর নানা উপকথার সঙ্গী করে তাদের খুশি করে চলতে অভ্যস্ত। কথায় বলে, ❛পিথিমীতে যা আশ্চর্য, কাহারপাড়ায় যা আতঙ্কের কারণ❜। বাঁশ বনের শিস শুনতে পেয়ে তারা ভয় পায়। বিশাল বৃক্ষটিকে তারা দেবতা বাস ভাবে, প্রকৃতির নানা খেলায় তারা দেবতার আদেশ, সাবোধান বাণী খুঁজে পায়। ব্যানোও তাই। সে প্রজন্মকে আঁকড়ে রাখতে চায়। চায়না কেউ মনিবের সেবা ছাড়ুক, ছাড়ুক কৃষাণীর কাজ। সে চায়না কেউ দক্ষিণে যাক। কারণ ধম্মে মানা আছে যে। দক্ষিণেই চন্ননপুর। সেখানে র‍্যালের কাজ, মিলের কাজ, সাদা বাবুদের কাজ, কাঁচা পয়সা। তাই বলে পয়সার জন্যে কুল জাত বিসর্জন দিতে হবে? না খেয়ে একবেলা রইলেও বনওয়ারী চায়না তার লোকেরা মিলের কাজ করুক। বছর বছর গাজনে বনওয়ারী পাটায় উঠে। কালারোদ্দুরের কাছে ক্ষমা চায়। মাতব্বরি তার কাছে কখনো ব্যাপক কঠিন লাগে। তাইতো নয়নের মায়ের অভিশাপে প্রতিউত্তর করে না। মাথাকে কি রাগ করা সাজে?

সুচাঁদ পিসি চার কুড়ি বয়েস। সে গায় হাঁসুলী বাঁকের উপকথা। সে সবথেকে পুরোনো। গানের ছলে এই বাঁকের ইতিহাস শুনায়।
কাহারেরা তাদের মতো আছে। তাদের জীবনেও অঙ (রঙ, প্রেম) আছে। অঙের খেলা খেলে তারা। আছে নসু। যে শাড়ি, নোয়া পরে বেজায় নাচে, গায়।
বনওয়ারী যেমন ইতিহাস মেনে চলে তেমনি গাঁয়ে আছে স্রোতের বিপরীতে চলা যুবক। নাম তার করালী। যার মা অঙ করে সেই যে কবে হাঁসুলী ছেড়েছে আর ফেরেনি। করালীও শুরুতে কাহারদিকের মতোই কাজ করতো। ঘোষদের সাথে ঝামেলায় সে কাজ ছাড়লে। যোগ দিলো চন্ননপুরে মিলে। এরপর শুরু তার পরিবর্তন। বিধেন মানে না, মানে না নিচু জাতের কথা, জাত আবার কে দেয়?
এইতো সেই বাবার বাহন চন্দ্রবোড়া সাপটিকে পু ড়িয়ে মা রলে। গোটা কাহারপাড়া হেই হেই করে উঠলো। অক্ষে নেই আর। বাবার বাহনকে মা রা? দেব ক্রোধ পড়বেই। আবার বাবার সেই বিশাল বৃক্ষের চূড়ায় উঠে হাকডাক করে। এসব বাবাঠাকুর মানবে? বিধেনে নাই উঁচু বাড়ি করো, ইতিহাস বলে না, ধম্ম বলে না। করালী তাও কোঠাবাড়ি বানানোর জন্য লেগে পড়ে। এত অনাচার ধম্মে সইবে? করালী তাতে থোরাই কেয়ার করে!
সে উল্টো গাঁয়ের লোকেদের ফুসলাচ্ছে চন্ননপুরে র‍্যালের কাজ করতে, কাঁচা পয়সা, সুবিধা কত কী! কিন্তু লোকেরা বিধেনের বাইরে যেতে চায় না।
এরমধ্যেই দেশে লাগে যু দ্ধু। কোন ইংরেজ আর জার্মানে বেঁধেছে যু দ্ধু তারজন্য এই দ্যাশে নাকি জিনিসের দাম বাড়ে, দব্য পাওয়া যায় না। কত যু দ্ধুই গেল, তাতে হাঁসুলির কী আসে যায়? গান বাঁধে লোকে,

❛সায়েব লোকের লেগেছে ল ড়াই।
ষাঁড়ের ল ড়াইয়ে ম রে উলখাগোড়াই-
ও হয়, ম রব মোরাই উলখগোড়াই।❜

বনওয়ারী যথাসাধ্য চেষ্টা করে যায় পা গলা করালীকে নিয়ন্ত্রণ করতে। তার সাঙাও দেয় পাখীর সাথে। তবুও উ পোলা বাগে আসে না। প্যান্টুল পরে ম্যানদের সাথে ঘুরে।
সময় পেরিয়ে যায়। ঝড়-বাদলা, বানের জলে কাহারের স্বপ্ন ভাসে, ভেসে যায় জমি। মালিকের তোপ বাড়ে, তবুও আশা তারা পেশা ছাড়বে না। কিন্তু অভাব যখন আষ্টেপৃষ্টে ধরে, বিদেশী যু দ্ধের তেজ যখন হাঁসুলীর উপকথাতেও আসে তখন কি বিধেন দিয়ে পেট চলে? শেষ বানে সব ভেসে যায়। হারিয়ে যায় উপকথার পাড়। বনওয়ারীর স্বপ্নের বাঁক কোপাইয়ের তলে বিলীন হয়ে যায়। সায়েব আসে মোটর নিয়ে, রাস্তা বানিয়ে, উজাড় হয়ে বাঁশ বন, বটবৃক্ষ। এইসব দৃশ্য কি বনওয়ারী পারে সহ্য করতে? শিল্পায়নের তোপে, লাভের আশায় শিকড় উপড়ে ফেলা কি সবসময় ভালো? করালীর মতি ফিরবে? সুচাঁদ পিসির উপকথার গল্পে কি আর মাতবে না কাহারপাড়া? কোথায় সেই পালকি বাহকেরা?

❛হাঁসুলী বাঁকের কথা - বলব কারে হায়?
কোপাই নদীর জলে - কথা ভেসে যায়।❜


পাঠ প্রতিক্রিয়া:

❝হাঁসুলী বাঁকের উপকথা❞ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসাধারণ এক সৃষ্টি।
লেখক নোবেল পুরস্কার পাননি বলে আফসোস আছে। উপন্যাসটা পড়লে সেই আফসোসের কারণ বোঝা যায়।
এত মুগ্ধতায় ভরা প্রতিটি লাইন দিয়ে তিনি উপন্যাসটা রচনা করেছেন!
নিচু জাতের কাহার সমাজের জীবন, তাদের অতীত, পেশার বদল, শিল্পায়ন, শিল্প বিপ্লবের সময় তাদের শিকড় ছেড়ে পেটের দায়ে আবার পেশার বদল, আর একবুক আশা নিয়ে পূর্ব পেশায় ফেরার নিঃশব্দ আকুতি প্রকাশ পেয়েছে উপন্যাসের ছয়টি পর্বে।
কোপাইয়ের তীরের হাঁসুলী বাঁকের লোকেদের জীবনকথা কখনো সুচাঁদ পিসির গপ্পে, কখনো গানে কখনো পা গলের সুরে উঠে এসেছে।
তাদের বিধান, ধর্মের পালন, কুসংস্কার, ভয়-ভীতি, অনুষ্ঠান, আচার পালনের বর্ণনা লেখক এত দারুণভাবে দিয়েছেন মনে হচ্ছিল চোখের সামনেই দেখছি সব।
প্রবীণ নবীনের কলহ, তাদের অস্তিত্বের ল ড়াই, শিকড় আকড়ে থাকার বাসনা, অন্যদিকে জাতের নামে অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা দুই ভিন্ন প্রকৃতির চরিত্রের মধ্যে কাহারপাড়ার বাকিদের জীবনের চিত্র এসেছে।
তারা কাজ করে, ঘরে জোয়ান মর্দ থেকে বউ মেয়েরাও থেমে নেই। বাইরে কাজ করছে, সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যেতে মাতব্বরের সাথে মজলিসে বসছে, গান বাঁধছে। কেউ আবার শাপ শাপান্ত করছে। কখনো ঝ গড়া লাগছে, নেচে কুদে ল ড়াই হচ্ছে তো একের বিপদে অন্যে চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে। একই মানুষের পরিস্হিতিভেদে ভিন্ন রূপ, বিপদে কখনো শাপান্তো করে আবার আঁচলবেঁধে সাহায্যে লেগে পড়ার অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য মনে হয় লেখকের বর্ণনাতেই সম্ভব।
উপকথার অতীত ইতিহাসের সাথে বর্তমানের মেলবন্ধন, স্মৃতিচারণ হয়েছে দারুণ। মুগ্ধ করার মতো দৃশ্য ছিল বিয়েতে দুই পাড়ার লোকেদের পালকিবহনের সময়ের ছন্দগান। অভিভূত হয়ে গেছি সেই প্লো-হিঁ শব্দের তালে।
সমাজ ধর্মের তৈরি এই উঁচু নিচু জাতের বেড়া যে কেমন প্রভাব রাখে আর একেই নিত্য স্বাভাবিক বলে মেনে মানিয়ে নেয়ার মধ্যেও সুখের এক বিমূর্ত রেখা টেনেছেন লেখক।
শেষটা কেমন শুন্য শুন্য অনুভূতি দেয়। আবার আশা জাগায়। ইতি বলতে কিছু আছে?
অপূর্ব এক আচ্ছন্নতা ঘিরে ধরবে উপন্যাসের শেষে। খারাপ লাগবে ঝরে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য। কারো শেষ পরিণতি দুঃখ দিবে, কারো উপর বেজায় রাগ হবে। আবার আশার আলো জাগবে। এই তো জীবন।


চরিত্র:

মূল দুই চরিত্র বনওয়ারী আর করালী। একজন প্রবীণ আরেকজন তারুণ্যে ভরা নবীন। দুজনের আদর্শ, মতামত আলাদা। একজন পোড় খাওয়া এখন র ক্ত গরম। তবুও তারা কখনো মিলে থাকে আবার কখনো আদর্শের অমিলে ল ড়ে।
বনওয়ারী চরিত্রটা আমার বেশ লেগেছে। পাড়ার মাথা আসলে যেমন হওয়া উচিত সে তাই। গোঁড়ামি আছে, বিধেনের বাইরে যাওয়া না পসন কিন্তু মনে সে দয়ালু। গোত্রের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তিত। আজীবন তাদের জন্যেই সব করে গেল সে। ভুলচুক কিছু যে নেই, তা নয়। তবে সেটাও গোত্রের জন্যই। আপন কথা ভেবেছে সে কম। তবুও শেষটায় সে ছিল একা। যে সারা পাড়ার জন্য কপাল ঠুকল তার ইতি হলো সর্বশান্ত হয়ে। মানব জীবন কি এমনই?

এদিকেই মন কেড়ে নিবে নসুবালা। দেহটা পুরুষের কিন্তু মনটা নারীর কোমলতায় ভরা। করালীর জন্য সে সব করলেও করালীর শেষের উগ্রতায় সে চুপ থাকেনি। পাশে দাঁড়িয়েছে গাঁয়ের মাতব্বরের দুর্দিনে।
তেমনি পা গলা। গান প্রিয় লোকটির উপস্থিতি ভালো লেগেছে��
সুচাঁদ পিসিকে কখনো এত বিরক্ত লাগবে! আবার কখনো তার ইতিহাসের কথায় মজে যেতে হবে।
করালী - প্রতিবাদের ভাষা, নিয়ম না মানা এক তরুণ। যার দলে গাঁয়ের ছেলে ছোকরা কতক ভিড়েছে। তাকে কি আগাগোড়াই ভালো বলবো? আমার মতে শেষ পরিণতির জন্য সেও কি অনেকটা দায়ী না?
যে নিচু উঁচু জাতের কথা সে বলেছে সেও কি সাদা সায়েবদের পাশে সালাম ঠুকে একই কাজ করেনি? যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মন্দ নয়। কিন্তু তার ফলাফলে শিকড় উপড়ে ফেলা দোষের নয়? শেষদিকের কাজগুলো আমার কাছে করালীকে একজন নেতিবাচক ব্যক্তি হিসেবেই প্রমাণ করেছে।
শেষে কি তার মতি ফিরেছিল? সেই কি হবে নতুন কাহারপাড়ার পরর্বতী মাতব্বর?
তার জন্য হাঁসুলীর বাঁকে তাকাতে হবে। ঐ দেখা গেল কি একটু নতুন বাঁশের গাছ?

❛যে গড়ে ভাই সেই ভাঙে রে, যে ভাঙে ভাই সেই গড়ে -
ভাঙা গড়ার কারখানাতে, তোরা, দেখে আয় রে উঁকি মে রে।❜
Profile Image for Asadullah Hill Galib.
44 reviews2 followers
March 24, 2021
কুসংস্কারাচ্ছন্ন কাহার সম্প্রদায় বাস করে কোপাই নদীর হাঁসুলী বাঁকে। এই কাহারদের জীবন নিয়েই হাঁসুলী বাকের উপকথা। মোড়ল বনওয়ারী, গাঁয়ের বৃদ্ধা সুচাদ, চৌধুরীর ছেলের প্রেমে পরা বসন, তার তেজস্বিনী মেয়ে পাখী, প্রথাবিরোধী, রগচটা ও বিদ্রোহী করালী, বনওয়ারীর প্রথম বউ গোপালী, প্রেমিকা কালোশশী, দ্বিতীয় বউ সুবাসী, মেয়েদের মত চলন বলনের নসুবালা, কথায় কথায় গানবাধা পাগল, সবগুলো চরিত্রই যেন বাংলার হাজারটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন পাড়াগাঁয়ের প্রতিচ্ছবি; চরিত্রগুলোর সাথে মিশে যাওয়া মন্দ নয়।

কুসংস্কার, অভাব অনটন, জমিদার সাহেবদের জুলুম, নব্য গড়ে উঠা কলকারখানার মাতন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাওয়া, প্রকৃতির তান্ডব, এসব নিয়েই হাঁসুলী বাঁকের উপকথা। গ্রামের মোড়ল বনওয়ারীর আধিপত্য, তার অবাধ্য প্রণয়, তার সাথে করালীর দ্বন্দ, ও শেষে আধিপত্য-বউ-গাঁয়ের লোক সব হারিয়ে বনওয়ারীর মৃত্যুর জন্য প্রতিক্ষা, এসবকে কেন্দ্র করেই ছুটে চলেছে হাঁসুলী বাঁকের উপকথা।

শেষমেশ দুর্দান্ত ফিনিশিং! গল্পের সাথে মিশে যেতে পারলে হাঁসুলী বাঁকের জন্য শেষে হাহাকার করতে বাধ্য পাঠক। এই মায়ার জাল তৈরি করাতেই লেখকের স্বার্থকতা।

হাঁসুলী বাঁক, কোপাই নদী, সবই বাস্তব। বীরভূম জেলার অন্তর্গত কোপাই নদী ধরে এগুলেই পড়বে হাঁসুলী বাঁক, আমাদের মেহেরপুর থেকে খুব কাছে। কখনও সুযোগ হলে যেতে চাই এই অতিসাধারণ গাঁয়ে, শুনতে চাই পাগলের গান,

হাঁসুলী বাঁকের কথা - বলব কারে হায়?
কোপাই নদীর জলে - কথা ভেসে যায়।

অথবা বাস্তবের হাঁসুলী বাঁকে না যেয়ে কল্পনা নিয়েই থাকতে চাই; সত্যর মুখোমুখি হওয়া সবসময় সুখকর নয়।

Profile Image for Trinolata Kurchi.
6 reviews4 followers
October 16, 2025
'কাহারপাড়ার নীল বাঁকে শালুকের বনের মধ্যে পদ্মকলি যেমন উদয়াস্ত সূর্যের দিকেই চেয়ে থাকে, তেমনি ওই একজনের দিকেই ছিল তার মনপ্রাণ চোখ সব'। বসন—পাখির মায়ের উদ্দেশ্যে, নসুর বলা এই বাক্য অনেকদিন মনে দাগ কেটে থাকবে।

আরও মনে থাকবে কালোশশীর গাওয়া গীত—

'আমার মনের অঙের ছটা
তোমায় ছিটে দিলে না–
পদ্মপাতায় কাঁদিলাম হে–
সে জল পাতা নিলে না–
টলোমলো–টলোমলো–
হায় বঁধু হে পড়ে গলে–
ও হায়, চোখের জলের মুক্তোছটা মাটির বুকে ঝলে না।'
Profile Image for Angira Datta Dandapat.
28 reviews5 followers
January 2, 2023
হাঁসুলী বাঁকের উপকথা
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
করুণা প্রকাশনা
মূল্য-২৫০ টাকা

অঙ্গিরা

বই দু ধরণের , এক শুধু অভ্যাসবশে পড়ার জন্য আর দ্বিতীয় প্রকারের বই যেগুলি সর্বকালে সর্বযুগে সমান প্রাসঙ্গিক, মননের গভীরে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে পাঠককে প্রকৃত অর্থেই সমৃদ্ধ করে, সাহিত্য চেনায়, সাহিত্যপ্রসাদ লাভে পাঠককে রোমাঞ্চিত করে সেগুলি। সৌভাগ্যবশত মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরই তারাশঙ্করের 'হাঁসুলি বাঁকের উপকথা' বইটি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। হয়তো কম বয়স থেকে বাংলা সাহিত্যের রত্নগুলি পড়ার সুযোগ পাওয়ায় রুচি তৈরী হয়ে গেছে, অল্পে মন ওঠে না। বইটি বারংবার পড়েছি, মজেছি তারাশঙ্করের জাদুতে। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক তারাশঙ্করের লেখার রিভিউ লেখার মতো ধৃষ্টতা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি কেবলমাত্র পাঠ অনুভূতিটুকুই ব্যক্ত করব।

' হাঁসুলী বাঁকের ঘন জঙ্গলের মধ্যে রাত্রে কেউ শিস দিচ্ছে। দেবতা কি যক্ষ কি রক্ষ বোঝা যাচ্ছে না, সকলে সন্ত্রস্ত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে কাহারেরা।

কোপাই নদীর প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় বিখ্যাত বাঁকটার নাম হাঁসুলী বাঁক-- অর্থাৎ যে বাঁকটায় অত্যন্ত অল্প পরিসরের মধ্যে নদী মোড় ফিরেছে, সেখানে নদীর চেহারা হয়েছে ঠিক হাঁসুলী গহনার মত।'

শুরুতেই রোমাঞ্চ, জঙ্গলে কে শিস দেয় গভীর রাতে? কাহারেরা ভয়ই বা পাচ্ছে কেন?
কোপাইয়ের কোলের চড়ায় বাঁশবনের নিরবিচ্ছিন্ন রক্ষাবন্ধনে সুরক্ষিত অঞ্চলে কাহারদের বাস। জাঙল গ্রামের একটা অংশে দু শ্রেনীর কাহারেরা পড়া করে থাকে, বেহারা কাহার এবং আটপৌরে কাহার। লৌকিক জীবনের নানান সংস্কার, দৈনন্দিন যাপন, দেবতা-অপদেবতাদের সন্তুষ্টিকরণের নিমিত্তে পূজা পার্বণ, কাহার রমনীর উচ্চশ্রেণির বাবুদের যৌনতা চরিতার্থ করা এবং আরও বহুবিধ সমাজিক খুঁটিনাটি উঠে এসেছে উপন্যাসটির ছত্রে ছত্রে।
প্রধান চরিত্র গাঁয়ের মাতব্বর বনওয়ারি এবং নব্য যুবক করালীর মধ্যে সেই প্রাচীন নবীনের দ্বন্দ্ব সারা উপন্যাস জুড়ে। প্রাচীন আচার আচরণ, বিশ্বাস আঁকড়ে বনওয়ারি এক ঘোরটোপের মধ্যে থাকতে চায়, রাখতে চায় তার গ্রাম সমাজ। করালী যেন সেখানে এক মূর্তিমান আপদ, পুরনো চিন্তাধারার প্রতি তার প্রতিনিয়ত পদাঘাত। প্রাচীন বিশ্বাস দেবতা কালরুদ্রের সাক্ষাৎ প্রতিভূ বাহন বিশাল চন্দ্রবোড়া সাপটিকে অবলীলায় মেরে ফেলে সে। যে স্থবির জগদ্দল বিশ্বাসে প্রথম আঘাত হেনে সে বুঝিয়ে দেয় সময়ের চাকা ঘরছে। বাবুদের জমিতে চাষ আবাদ করে, মুনিষ খেটে দিনগুজরানের দিন শেষ। বাবু পরিবর্তন হচ্ছে, জমিদার না, ইংরেজ কলের মালিকরাই সেই স্থান নিচ্ছে, কাহার যুবকেরা করালীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাদের পেশা পরিবর্তন করে গিয়ে ভিড়ছে সেখানে। কিন্তু সব পরিবর্তনই কি শুভ? শুভ বা অশুভের দিকে দিকনির্দেশনা লেখকের কাজ নয়, লেখক শুধুই নিরপেক্ষ ভাবে বলে চলেন ঘটনাবলী, পাঠকে নিয়ে গিয়ে ফেলেন সেই ঘটনার মধ্যে, চলচিত্রের মতো ঘটনাপ্রবাহ চোখের সামনে একে একে চিত্রায়িত হতে থাকে, শুধুই মিশে যাওয়া, ভেসে যাওয়া।
প্রেম, সে ও কি নেই? তাও আছে, এবং আছে পুরুষদেহ নারী মনের এক চরিত্র 'নসু'। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে নসু, পাখি, বসন্তের মতো চরিত্র সৃষ্টি অকল্পনীয়। দুর্জয় সাহসের পরিচয় দিয়েছেন লেখক, আসলে এই কারণেই তারাশঙ্কর তারাশঙ্করই, আনপ্যারালাল, সর্বদা শিক্ষণীয়, নমস্য।
কালের নিয়মে পাড় ভাঙে, আবার পাড় তৈরী হয়, পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায় মানুষ। উপন্যাসের শেষে করালীর ধ্বংসাত্মক ক্রিয়ায় মানুষের লোভে বাঁশবনের বাঁশ কাটা হয়ে যায়, অসূর্যম্পশ্যা ভূমি হয় নগ্ন। কোপাইয়ের বানে ভেসে যায় চড়া, বালিতে চাপা পড়ে বাসভূমি, কাহারেরা প্রকৃতই গৃহহীন হয়। কিন্তু করালী? অদ্ভুত পরিবর্তন আসে তার, সে খুঁজতে থাকে বাঁশের মূল, হয়তো, নতুন করে সৃষ্টির লক্ষ্যে।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা উপন্যাস এই 'হাঁসুলী বাঁকের উপকথা', গল্পের গতি, চরিত্রগুলির নির্মান, এবং ঘটনা প্রবাহ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এই উপন্যাস সর্বোচ্চ শিখরে। যতবার পড়ি নতুন করে ঘোরের মধ্যে থাকি, বারবার পড়ি, শেখার জন্য পড়ি, পড়ার আনন্দে পড়ি এই বই।
Profile Image for Anjum Haz.
285 reviews69 followers
June 15, 2019
What a book!! মনে গেঁথে রইবে এই গল্পটি।

কোপাই নদীর এক বাঁক - গ্রাম্য নারীর অলংকার হাঁসুলীর মতোন। সেই বাঁক ঘেঁষে এক জনপদ। বিচিত্র তার গাঁথা।

তাদের কুলের নাম "কাহার"। কাহারকুল। পাল্কি বহন করতো তারা বহু দিন। পাল্কির চল উঠে গেলে কাহারেরা চাষবাসে মন দেয়। জীবন এখানে একরকম - দিনে রোদে পুড়ে ক্ষেতে খাটো, সন���ধ্যে হলে মজলিশে জমা হও। আর বছর ঘুরে নবান্ন, পুজো-পার্বণে আমোদ-আহ্লাদ করো। এর বাইরে কিছু তারা করে না, করতেও চায় না। করতে গেলে আপত্তি - "পিতিপুরুষে (পিতৃপুরুষে) যা করে নি, তা করা বারণ।" যা কিছু তাদের আয়-উপার্জন, তা হলো তাদের রক্ষাকর্তা বাবাঠাকুরের কৃপা, আর জমিদারদের দয়া। রোগ-শোক, ঝড়-তুফান - এসব হলে বুঝে নিতে হয় বাবাঠাকুরের রোষ হয়েছে। তখন তারা বাবাঠাকুরের পুজো-আচ্চা করে, পাঁঠা বলি দেয়, নেচেগেয়ে তারা ডাকে বাবাঠাকুরকে - সদয় হন তিনি।

কাহারদের জীবনাচরণ, মুখের ভাষা, অন্তরের আবেগ-অনুভূতি একটুকু বিকৃত না করে উপন্যাসে রূপ দেওয়া - তারাশঙ্করের বিরাট কীর্তি। প্রতিটা চরিত্র ছিল জীবন্ত, শক্তিশালী - যেন শহরবাসী পাঠক-পাঠিকার মস্তিষ্কে‌ প্রবেশ করে তারই সঙ্গে কথোপকথন করছে। কাহারপাড়ার মাতব্বর বনওয়ারী - সে যেন পুরো কাহারপাড়াকে আগলিয়ে রেখেছে কত্তাঠাকুরের কৃপা অর্জন করে। মাতব্বরি তার "কত্তোব্য"(কর্তব্য)। তাকে মান্য করে প্রায় সকলে, মানে না এক করালী। করালী জোয়ান। পিতিপুরুষের চাষবাসের কাজ না করে সে যায় চন্ননপুরে, কারখানার কাজ করতে। করালী আকর্ষণ করে জোয়ান ছেলেমেয়েদের আর মাতব্বর তাদের রুখে পাপের পথ থেকে, খ্যানত থেকে বাঁচাতে চায়।

আছে নয়ানের মা। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে তার পোড়া কপাল। অপরের সুখ তার কেন সইবে। সারাদিন কাঁদছে আর অভিশম্পাত করতে আছে পাড়ার সকলকে। অন্য লোকের ঘর পুড়লে, সন্তান মারা গেলে তবে তার কান্না থামে, তৃপ্তি হয়। হাঁসুলী বাঁকের উপকথা বলার জন্য আছে এক বুড়ি - সুচাঁদ। সেই পাড়া মাতিয়ে বেড়ায়, তিন পুরুষের ‌ইতিহাস টেনে আনে আর কলহ করে বেড়ায় গোটা পাড়ার সাথে।

আর আছে কাহারদের অঙের খেলা অর্থাৎ রঙের খেলা। নারী-পুরুষের প্রেম-ভালোবাসাবাসিকে এরা বলে রঙ মাখামাখি। সেই অঙের খেলা কোনো নিয়ম মানে না, তার জন্য মানুষ এর সঙ্গে ঘর ভেঙ্গে ওর সঙ্গে ঘর বাঁধে।

সেই আদিকালের কাহারপাড়ায়, তার বাঁশবাগানের আনাচেকানাচে, কোপাইয়ের বুক চিরে আরেক নতুন জমানার বাজনা বাজতে শুরু করে। যুদ্ধ লাগে পৃথিবীতে। ইতিহাসের সাথে সাথে মোড় নেয় সেই উপকথাও।

"হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় এ কখনও ঘটে‌ নাই। বান এসেছে, ঝড় এসেছে, গাঁয়ে আগুনও লেগেছে, মড়কও হয়েছে, পৃথিবীও কেঁপেছে - তাও আছে হাঁসুলী বাঁকের উপকথায়। দাঙ্গা আছে, ডাকাতি আছে, কালোবউ বড়-বউয়ের প্রেতাত্মা আছে, কিন্তু যুদ্ধ নাই। সে যুদ্ধে হাঁসুলী বাঁকের তন্দ্রা নষ্ট হয়, উপকথায় ছেদ পড়ে, এখনকার মানুষের জীবনস্রোত পৃথিবীর জীবনস্রোতের আকর্ষণে ইতিহাসের ধারায় মিশে যায়, সে যুদ্ধ উপকথার কল্পনায় নাই।"
Profile Image for Alif Islam.
22 reviews
May 1, 2022
কেবল ভালো খারাপ এর পাল্লায় ফেলা যায় না উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে, অনেক গুণাবলির মিশ্রণ একেকটি চরিত্র।
বনোয়াড়ি যেমন সাহসী, ধার্মিক, পরোপকারী তবু সে ভয় পায় ভবিষ্যৎ, কামনা-বাসনা তাকে অন্ধ করে দেয়, নিজ গ্রামের মানুষের ঘরে আগুন দেয়।
উপন্যাসের কোন পর্যায়ে কড়ালিকে নায়ক মনে হয়, কখোনো বা বনোয়াড়ীকে। এই ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়েই গল্প এগিয়ে চলে, সাথে হাঁসুলী বাকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্নানা।
তারাশঙ্কর এর কবি উপন্যাসে এর মতোই এখানেও লেখক একেকটি চরিত্রের প্রস্থানে পাঠকের মনে হাহাকার এর জন্ম দেয়।
অসাধারণ সুদীর্ঘ একটি উপন্যাস।
Profile Image for Sneha Dey.
148 reviews3 followers
November 6, 2024
"নটে গাছটি মুড়িয়ে গেল, হাঁসুলীবাঁকের কথা শেষ হয়ে গেল। শেষ কি হয়? কিছুর শেষ কি কখনও হয়েছে? চন্দ্র সূয্যি যত কাল, তার পরেও তো শেষ নাই।"
'হাঁসুলী বাঁকের উপকথা' নিয়ে ভাবাও আমার অদূর ভবিষ্যতে শেষ হবে না।
কোপায় এর তীরে কাহারদের এই উত্থান-পতনের গল্প আমাকে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রেখেছিল।
গল্পে একটা লাইন আমার মাথায় ঘুরেই যাচ্ছে - "করালী হ'ল দৈত কিংবা শয়তান - কিংবা সে-ই হ'ল রাজপুত্র, নতুন কালের মাতব্বর।"
Profile Image for Rajib Majumder.
136 reviews7 followers
April 26, 2021
দীর্ঘ সময় নিয়ে বইটি পড়ে শেষ করলাম। মাঝে বহুবার মনে হয়েছে নাহ আর পড়ব না থাক। কিন্তু যত খারাপই লাগুক আমি সাধারণত খুব কম বইই না শেষ করে রেখে দিয়েছি। এটাতেও ব্যতিক্রম হয়নি। আর তাতেই শেষটুকু পড়ে মন ভরে গেল। পাগলের নতুন গানটিই তো সব
যে গড়ে ভাই সেই ভাঙে রে,
যে ভাঙে ভাই সেই গড়ে
ভাঙা গড়ার কারখানাতে
তোরা, দেখে আয় রে উঁকি মেরে।
Profile Image for Partha Goswami.
130 reviews2 followers
December 16, 2020
আজও বনওয়ারী আর করালী আছে, আছে তাদের লড়াই সর্বত্র...
Profile Image for Mohaiminul Islam.
12 reviews3 followers
March 2, 2023
শেষটা এমন শান্ত, এমন শূন্য, এমন হাহাকার-মেশানো!

"জল ফেলিতে নাই চোখে, জল ফেলিতে নাই
বিধাতা বুড়ার খেলা দেখে যাও রে ভাই।"
Profile Image for Habib Rahman.
74 reviews1 follower
February 18, 2024
কোপাই নদীর প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় যে বিখ্যাত বাঁকটার নাম হাঁসুলী বাঁক _ অর্থাৎ যে বাঁকটায় অত্যন্ত স্বল্প-পরিসরের মধ্যে নদী মোড় ফিরেছে, সেখানে নদীর চেহারা হয়েছে ঠিক হাঁসুলী গয়নার মত। বর্ষাকালে সবুজ মাটিকে বেড় দিয়ে পাহাড়িয়া কোপাইয়ের গিরিমাটি- গোলা জলভরা নদীর বাঁকটিকে দেখে মনে হয়,শ্যামলা মেয়ের গলায় সোনার হাঁসুলী; কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে জল যখন পরিষ্কার সাদা হয়ে আসে _ তখন মনে হয় রুপোর হাঁসুলী। এই জন্যে বাঁকটার নাম হাঁসুলী বাঁক।

এই হাঁসুলী বাঁকের পাশে বাঁশবাঁদি গ্রামে ঘর তিরিশেক কাহারদের বসবাস। কাহাররা হচ্ছে পালকি বাহক ৷ কাহারদের পূর্বপুরুষেরা সেই আদি থেকেই ইংরেজ সাহেব- মেমদের পালকি বয়ে এসেছে। তাদের নীলকুঠিতে শ্রম দিয়েছে। সাহেবদের দুধের মত গায়ের রঙ,সোনালি ধানের মত চুল, আকাশের রঙের মত চোখের রঙ দেখে অবাক হয়ে চেয়েছে। নীলকুঠির এই সাহেবরা ছিল কাহারদের মাথার ছাতার মত। ছাতা ফুটো করে কিছু দুঃখের ফোটা কাহারদের উপর পড়লেও সাহেবদের আশ্রয়ে থেকে কাহাররা সুখীই ছিল বলা চলে ।

তবে সেবার কোপাই নদীর 'পেলয়' বান এসে নীলকুঠি শুদ্ধ সাহেব-মেমদের ডুবালে আশ্রয়হীন কাহারেরা পড়লো মহাবিপদে। এখন কার পালকি বইবে তারা প্লো-হিঁ - প্লো- হিঁ ডাক ছেড়ে? কার জমিতে আবাদ করবে তারা? শেষমেশ পেটের দায়ে বাস্তুহীন,বস্ত্রহীন কাহারদের কেহ যোগ দিল চুরি-ডাকাতির কাজে, কেহবা গেল ভিক্ষা করতে। আবার কেউ কেউ চন্নন নগরে গেল রেলের কাজে। এর মাঝে কেউ আর এলোই না। চিরতরে পাড়ি দিল অজানার উদ্দেশ্যে। অনেক কাহার নারী বিবাহিত সংসার জীবন ফেলে চলে গেল রঙের টানে। কাহাররা ভালোবাসাকে রঙ বলে। ওরা অবশ্য রঙ বলে না। বলে ওং। শব্দের শুরুতে "র" থাকলে সেটা কাহাররা উচ্চারণ করে না। এই রঙের টানে আরো কত মেয়ে যে কাহারদের ছেড়ে চলে যেত। তার আগেই কত্তাবাবা করলেন রক্ষে ৷ সাহেবদের নীলকুঠির ���োমস্তা চৌধুরীরা কাহারদের নতুন মালিক বনলো। কাহাররাও মাথার উপর ছাতা পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

সেই থেকে কাহারেরা জাঙল গ্রামের সদগোপ পরিবার গুলোতে কাজ করে চলেছে। চৌধুরী, মন্ডল, ঘোষদের অধীনে থেকে তাদেরই জমিতে কাহারেরা চাষাবাদ করে। বিনিময়ে দিন মজুরি পায়। আর পায় ধান। মাঝে মাঝে পায় কর্তাদের দেয়া আশীর্বাদ। কাজে ভূল হলে পিঠে ঠেঙানিও পড়ে বইকি। তারপরেও মুনিবের ক্ষেতে কাজ করে মুনিবের গোলা ধানে ভরে দিতে, ঝড়ে মুনিবের ঘরের চালা বেঁধে দিতে, ছেলেপুলের বিয়েতে পালকি বয়ে নেয়ার ডাক এলেই তাদের বর্তে যায়। মনিবদের ঘরে মা লক্ষী আনতে পারলেই কাহারেরা খুশি।কেননা মনিবের ঘরে মা লক্ষী এলে কাহারদের ঘরেও কি একটুখানি পায়ের ধুলো না দিয়ে পারবেন মা লক্ষী?

৪৮ সাল। পৃথিবীতে নতুন সভ্যতার ছোঁয়া লেগেছে চারিদিকে। জমি চিড়ে, দূর পাহাড়ের বুক ফেড়ে রেললাইনে লোহা লক্কড়ের ট্রেন চলেছে ভয়ানক গতিতে। পালকির বদলে ভদ্রলোকেরা এখন গাড়ি ব্যাবহার করেন। কাহারেরা তবুও সেই আদি যুগেই পড়ে রয়েছে ৷ পৃথিবীতে যা আশ্চর্য, হাঁসুলী বাঁকে তা ভয়ের বস্তু। আশ্চর্যকে দেখে তার স্বরুপ ঘেটে দেখবার মত বুদ্ধির তাগিদ ওদের নাই। যদিবা আদি কালে কখনো ছিল, বারবার ঘা খেয়ে খেয়ে তা মরে গেছে। সাহেব সদগোপ বাবুদের শাসন ঠেলে কখনো তা কঠিন এবং ধারালো হয়ে আশ্চর্যকে ভেদ করে ছেদ করে দেখবার মত নির্ভয় বিক্রম লাভ করতে পারে নাই।

তাইতো চন্নন নগরে রেলের কাজে কাচা পয়সা পাবার লোভেও কাহারেরা জমি ফেলে যায় না। তাদের পূর্বপুরুষদের নিষেধ আছে এতে। এর থেকে বরং মনিবের কিল-ঘুষি খাও,কপাল ফুড়ে রক্ত বেরোক তাতে কোনো সমস্যা নেই। উঁচু জাতের এনারা মারলে কাহারদের তাতে জাত যায় না। মনিবেরা কাহার নারীদের গায়ে হাত দিলে ব্রাহ্মণ ভেবে তাদের এই স্পর্ধা মেনে নাও। মনিবের এটো খাও, তাদের ঘরের মরা গোরু, মরা কুকুর বিড়াল ফেলে আসো ভাগাড়ে , এই তো কাহারদের অদৃষ্টের লিখন ৷

কাহারদের মাতবর বনওয়ারী এই অদৃষ্টের লিখনেই বিশ্বাস করে ৷ নিচু জাতের হয়ে এই জনমে কত্তাবাবা যেহেতু পাঠিয়েছে সেহেতু কষ্ট সইতে হবে বইকি। তবে কত্তাবাবার পুজো করে,মনিবের ঠিকঠাক সেবা করে ব্রাক্ষনদের সেবা করলে তবেই না পরের জনমে কাহার জাত থেকে উঁচু জাতে জন্মাবে। বনওয়ারী তাই বেজায় ধার্মিক ৷ নিয়মিত পুজো দেয়,বছর বছর চড়কে চড়ে। মাতবর হয়ে সবার উপর ছড়ি না ঘুরিয়ে বরং সবার খেয়াল রাখে । মাঝে মাঝে মাতব্বরির পদ মনে হয় যেন আগুনে তপ্ত শালের উনোনের খবরদারির আসন। এই মাতবরির কারণেই ছেলেবেলার রঙের মানুষ কালোশশীর ডাকে সাড়া দিতে পারে না বনওয়ারী । পুরো কাহার পাড়াকে বনওয়ারী আগলে রাখতে চায় পূর্বপুরুষদের দেয়া পিতিবিধেন অনুযায়ী।

তবে বিদ্রোহী একজন আছে। মাতবরের, বয়স্কদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেও যে চন্নন নগরে যায় রেলের কাজে। রেলের কাচা পয়সা দিয়ে সবার বারণ সত্ত্বেও পাড়ায় কুঠি বাড়ি তুলতে চায়। কত্তাবাবার শিমুল গাছের চুড়ায় উঠতে যার বুকটি একবারও কাপে না। যে হাপানী রোগী নয়ানের ঘরের খাঁচা ভেঙ্গে যে নয়ানের বউ পাখিকে সাঙ্গা করেছে। সে হলো করালী। রেলের কাজে , যুদ্ধে ইংরেজ সাহেবদের সংগে থাকলে যে পয়সা পাওয়া যায় তার লোভ দেখিয়েও সে কাহারদের তার দলে টানতে পারে না। পুর্বপুরুষের পিতিবিধেন উপেক্ষা করে রেলের কাজে যাবার সে সাহস যে কাহারদের নেই।

তারা বরং গ্রামে আধপেটা খেয়ে থাকতে পারলেই খুশি। জাত গেলে টাকা দিয়ে কি হবে শুনি? কাহার পুরুষেরা তাই ভোরে উঠেই বেরিয়ে পড়ে জমির কাজে ৷ ৯টার সময় রেললাইনের ঝমঝমঝিকঝিক আওয়াজ শুনে কাহার নারীরা এরপরে বের হয়। সদগোপ পরিবারে এটো থালাবাসন মেজে দিতে কি তাদের বাড়ি ঝাট দিতে। বয়স্ক কাহাররাও বসে থাকে না। হেথাই -ওথাই গিয়ে ঘাস কেটে আনা কিংবা গোবর কুড়িয়ে আনার কাজ তারা দিব্যি পারে।

সারাদিন কাজ করে তারা আবার এক হয় মাতবরের উঠানে। সেখানে আসর বসে নারী-পুরুষ সবার। প্রাচীন কালের উপকথার কথা সবাইকে বলে বদ্ধ কালা বুড়ি সুচাদ। তা শুনে সবাই চেষ্টা করে মদ পানে সারা দিনের দুঃখ,বেদনা ভুলাতে। যতটুকু না খেলে ভালো একটা ঘুম হয় না ততটুকুই পান করে তারা ৷ বেশি পানে মাতাল হলে যে সকালে মনিবের কাজে যেতে পারবে না তাই। মাঝে মাঝে অবশ্য তারা আকন্ঠ মদ পানে বুদ হয়ে থাকে। কত্তাবাবার উদ্দেশ্যে দেয়া পুজোতে নাচ-গান,খাবার, হই হট্টগোলের মধ্যে ঘরে বানানো মদ না হলে কি চলে? সেখানে তারা গান ধরে। হাঁসুলী বাঁকের উপকথার গান। সে যে কে রচনা করেছে তা কেউ জানে না।
আমার মনে অঙের ছটা
তোমায় ছিটে দিলে না
পদ্মপাতায় কাঁদিলাম হে
সে জল পাতা নিলে না

বাঁশবনে ঘেরা তন্দ্রা মাখা স্বপ্নসুলভ ছায়াচ্ছন্ন হাঁসুলী বাঁকের উপকথা ফুলে ভরা,বিষে ভরা,রঙে স্নিগ্ধ,বেরঙে উগ্র,হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় বসন্ত তার সাদা রঙের তুলির দাগ। কোপাই নদীর তীরে সেই তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা কাহারদের হাঁসুলী বাঁকের উপকথা। যুদ্ধ আর বন্যা এসে সে উপকথার পটভূমি কতক ভাসিয়ে নিলে, কতক পরিবর্তন করলে। নতুন করে আবার রচিত হয় আরেক হাঁসুলী বাঁকের উপকথা। গান বাঁধে লোকে-
যে গড়ে ভাই সেই ভাঙে রে, যে ভাঙে ভাই সেই গড়ে;
ভাঙা গড়ার কারখানাতে, তোরা, দেখে আয় রে উঁকি মেরে।


চিরায়ত উপন্যাস পড়া আমার শুরু হয়েছিল শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত দিয়ে। এরপরে আর পড়া হয়নি এতদিন। থ্রিলার,ফ্যান্টাসি নিয়েই পড়েছিলাম। হঠাৎ আবার ইচ্ছে জাগলো চিরায়ত উপন্যাস পড়বার। শরৎচন্দ্রের লেখা যেমন পড়তে সহজ , মনে হয় চামচ দিয়ে গিলিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় পড়তে গেলে তেমন নয়। এক্ষেত্রে সাহিত্যের স্বাদ পেতে নিজে চিবুতে হয়। প্রথম প্রথম বইটি পড়ার সময় তাই বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। আসতে আসতে যত এগিয়ে গিয়েছি ততই যেন হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় বলা বনওয়ারী, করালী,পাখি, সুচাঁদ, পানু, রতন,কালোশশী,পরম,পাগলা,নসু, ঘোষ মশাইদের নিয়ে উপকথায় তাদের জীবনের কুসংস্কার, বিদ্রোহ, রঙের কথায় মজে গিয়েছি।

বইয়ের নাম: হাঁসুলী বাঁকের উপকথা
লেখক: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
জনরা: চিরায়ত উপন্যাস
Profile Image for S M Shahrukh.
127 reviews67 followers
April 30, 2018
তারাশংকরের 'হাঁসুলী বাঁকের উপকথা' নিঃসন্দেহে মহাকাব্যিক, যাকে কিনা বলে 'এপিক'। বনওয়ারী আর করালী- এই দুই চরিত্র মূখ্যে থাকলেও এখানে নির্দিষ্ট তথাকথিত মূল চরিত্র নেই, আছে রাঢ় বাংলার একাধিক চরিত্র। বাঁশবাঁদি, বীরভুম জেলায়, সেটাই মূল লোকালিটি, কাহার সম্প্রদায় এখানে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এখানে সময় বর্তমানে দাঁড়িয়ে নেই- অতীত-বর্তমান যেন সমান তালে চ'লছে, ভবিষ্যতও সেই সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। কুসংস্কারের ডুবে আছে কাহারেরা, এক ব্যতিক্রম, করালী। করালীই ভবিতব্যের ইঙ্গিতবহনকারী চরিত্র- অবধারিতভাবে গ্রামের মানুষের শহরমুখো হওয়ার জোয়ার। পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়কালের আগ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়টা এর বর্তমান বলা যেতে পারে। কিন্তু অতীত সর্বদা বর্তমানের পায়ে পায়ে, সঙ্গে ধর্মান্ধতা, সংস্কার, দৈব-ভীত্‌ পরিবর্তনকে গ্রহণ ক'রতে অনীহা। তাই বার বার পাগল কাহার বা বৃদ্ধা সুচাঁদের কথায় আদি অনন্তকালের কথার অনুরণন চলতেই থাকে। উপকথার একটা মানে রূপকথাও বটে।

কাহার সম্প্রদায় এক্ষেত্রে নিম্নবর্গ, তাদের উপর উচ্চবর্গের নিষ্পেশন চলছেই, তা কাহার মাতব্বর বনওয়ারী ও তার চ্যালারা নিয়তি ব'লেই মেনে নিচ্ছে। কিন্তু কঠোর আঘাত আসলো ��রালীর থেকে। শৃংখলভঙ্গের অদম্য স্পৃহা তার ধমনীতে।

অনেক তথ্যবহুল একটা উপন্যাস। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (অন্য দু'জন বিভূতিভূষণ ও মানিক) মধ্যে যে তারাশংকর দুর্বলতম তা প্রকাশ পায় তাঁর লাগামহীন বয়ানে। বার বার এক কথা ব'লে অযথা উপন্যাস দীর্ঘায়ীত হ'য়েছে, অন্তত এক শ পাতা কমে এটাকে আরো 'বেগবান' করা যেতো। এ পর্যন্ত তারাশংকরের যে ক'টা উপন্যাস প'ড়েছি তাতে কেন যেন মনে হয়েছে যে তিনি 'বাংলা সিনেমা'-র স্ক্রিপ্ট লিখছেন।
Profile Image for Anandaroop.
24 reviews2 followers
March 24, 2021
This is my first Tarashankar Bandyopadhyay book. While I kick myself for not having read him sooner, I am also thrilled beyond words that I now have a whole new universe to explore.

This is a story of little people, those who fall through the cracks of history, living out their lives out of the line of sight of mainstream society, until the latter deems their world worthy of exploitation. At a bend in the Kopai river, the Kahars live, starve, farm, hunt, fight and love and die. They are presided over by their local deity, Babathakur, a spirit-god, benevolent and fearsome in equal measure, and landlords who, while not paragons of justice and humanity, could do worse. There is not a lot, but there is enough for everyone. There is also freedom within a set of village rules. Women and men are free to take lovers without raising many eyebrows – a practice indulgently referred to as (R)ong Hoya, to be coloured by someone – and a young man can choose to dress and act like a woman. But the wheels of time turn, and the young are seduced, as they will be, by the wider world. It's also 1939, and a war like none other is coming, and the Kahars and their Babathakur are way in over their heads.

হাঁসুলী বাঁকের উপকথা seemed to me one of the truest books I have read in Bangla, but yet I am very curious to know what modern dalit writers think of it. Whether they see it as yet another case of cultural appropriation.
Profile Image for Mrinmoy Akash.
79 reviews
July 18, 2019
If someone said that Hansuli Banker Upokotha is another tale of ordinary human beings then it probably wouldn't be proper, because this is a story of human beings less than ordinary, at least in this social system. I wonder how someone like Tarashankar could write a novel like this. The life of the 'kaharas' is not something we can truly understand, we are not supposed to. But the little amount we can touch is enough to love this amazing work.
Profile Image for Md. Loshanur Rahman.
2 reviews
March 21, 2018
উপন্যাসে জমিদার - প্রজার পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমস্যা, কৃষিজীবির সাথে যান্ত্রিকতার সংঘাত, যুদ্ধের প্রভাব এবং এই ধরনের আর অনেক কথা আছে। হাঁসুলী বাঁকের কৌমসমাজের গোষ্ঠীজীবন আশ্রিত করে গড়ে উঠে এর পটভূমি।
তারাশঙ্কর দেখিয়েছেন হাঁসুলী বাঁকের গোষ্ঠীজীবনের বিনাশের ইতিহাস তথা মূল্যবোধের বিপর্যয় আর পরিণতিতে কাহার সম্প্রদায়ের নিজ গ্রাম থেকে উচ্ছেদের গল্প।
কাহার গোষ্ঠীর ইতিহাস, জাতি পরিচয়, বাসভূমি, বিশ্বাস অবিশ্বাস, কুসংস্কার, নিত্যদিনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি - এসবই তাদের দিক থেকে দেখিয়েছেন লেখক।
Profile Image for Shuvro Das.
103 reviews3 followers
May 2, 2014
কাহারদের জীবনের অলিগলি ঘুপচি ঘুরে এসে মনে হল সব হারিয়েও বেশ বেচে থাকবে ওরা...সেই উপকথার মতই ওরা টিকে থেকে যাবে হয়তবা সুচাদের মত কোনও বুড়ির মুখেই রেশ থাকবে ওদের।উপন্যাস পড়ে তারাশঙ্কর কে আরেকবার ভাল লাগলো।
Profile Image for Khaled Tamim.
53 reviews3 followers
January 20, 2022
কোপাই নদী তীরবর্তী কাহারপাড়ার কাহারদের যাপিত জীবনের অংশ হয়ে ছিলাম যেন বইটা পড়ার সময়। প্রাচীনত্ব, সংস্কার এর প্রতীকরূপে বনওয়ারী আর নবনবীনের কেতনধারী করালী চরিত্রের মধ্যে সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে উপন্যাসের প্লট।
Profile Image for Monowarul ইসলাম).
Author 32 books177 followers
October 16, 2020
প্রথম দিকে একটু স্লো মনে হলে আস্তে আস্তে গল্পটা জাল বিছিয়েছে।
শব্দের মায়ায় ডুবে ছিলাম।
Profile Image for Sujan Gupta.
26 reviews3 followers
December 25, 2020
১৯৪৭ সালে ইউরোপের মাঠেঘাঠে যখন যুদ্ধের দামামা বেজেই চলছে, তখন বীরভুমের এক জঙ্গলগাঁয়ে একদল কাহার নিজেদের জীবন যুদ্ধে অবিরত ব্যস্ত।
Profile Image for Akib Shahrear.
6 reviews
September 7, 2025
'হাঁসুলী বাঁকের উপকথা' যেন এক অদ্ভুত সময়যাত্রা যেখানে হাজার বছরের এক জনধারার সাক্ষ্য হওয়ার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
Displaying 1 - 30 of 58 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.