ফলো দ্য স্টার, উশ্মিলকে বলে গিয়েছিলেন ওর ঠাকুরদা। তার সঙ্গে একজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দিয়ে গিয়েছিলেন একটি প্যাকেট। সেই মানুষটির নাম আর একটি প্যাকেট সম্বল করে কলকাতায় আসে উশ্মিল। তারপর পুনরজিতের সহায়তায় সুরু হয় সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষটির অনুসন্ধান। আর সেই যাত্রার ফাঁকে ফাঁকে সামনে চলে আসে তেতাল্লিশ বছর আগের এক উত্তাল সময়ের কলকাতা। সামনে আসে সেই সময়ে নিজের মতো করে মাথা তুলতে চাওয়া আদীপ্তর গল্প। মৌরিমার প্রতি তার ভালবাসার গল্প।
এক-একজন মানুষ থাকে, এক-একটা উপলব্ধি থাকে, যা আমাদের সামনে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করে। যা আমাদের বাকি জীবনের চলার পথটুকু দেখায়। এই সময়ের উশ্মিল আর পুনরজিত আর সেই উত্তাল সময়ের চালচিত্রে আঁকা কলকাতার আদীপ্ত ও মৌরিমা আমাদের সেই পথ চলার গল্পটুকুই বলে। হারিয়ে যাওয়া প্রেম কি ফিরে আসে কখনও? মনে মনে হেরে-যাওয়া মানুষ কি জয়ী হয় শেষবেলায়? শেষবেলায় কি সে মাথা তুলে দেখে আকাশের শীর্ষে স্থির হয়ে থাকা সেই আলোকবিন্দুকে?
এই দীর্ঘ যাত্রাপথ ও তার আলো-ছায়ার ভেতরে মানূশের অবিচল ভালবাসার গল্পই শোনায় ‘কম্পাস’।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
স্মরণজিৎ এর বই পড়ার আলাদা মজা আছে। পড়ার সময়টা বেশ ভালো কাটবে। পড়া শেষ হলে বই কতোটা ভালো বা খারাপ তা পুরোপুরি মাথায় ঢুকবে। "কম্পাস" তো একটানা পড়ে ফেললাম। গল্প এগিয়েছে দুই সময়রেখা ধরে। বর্তমান সময়ের গল্পে নায়িকা উশ্মিল কেন নায়ক জিতুর প্রেমে পড়লো তা অনেক চেষ্টা করেও বুঝতে পারলাম না। উশ্মিল প্রেমে "পড়ার" জন্য অধীর হয়ে ছিলো সম্ভবত ;তা সামনে যে-ই আসুক না কেন। অতীতের গল্প তুলনামূলকভাবে গোছানো। কিন্তু যৌক্তিক না। একজন আমাকে ভুল বুঝেছে। আমি তার ভুল ভাঙানোর কোনো চেষ্টা না করে সারাজীবন পার করে দিলাম একা একা।তারপর নিজের মৃত্যুর সময় পুরনো প্রেমিকা (যার কোনো ঠিকানা ও খোঁজও সে জানে না), তার কাছে স্মৃতিচিহ্ন পাঠালাম ( "তোমার জন্য জীবন পার করে দিয়েছি। দ্যাখো, আমি কতো বড় প্রেমিক!") কোনো মানে হয়? নায়িকা তো মারাও যেতে পারতো এর মধ্যে। বড় কথা, এই মহৎ "ত্যাগী" প্রেমিক সাজার ধান্ধাটা একদম ভালো লাগেনি। লাভের মধ্যে, সত্তরের উত্তাল সময়ের বর্ণনা ভালো লেগেছে। সবমিলিয়ে খুবই সেকেলে প্রেমের গল্প হয়ে গেলো "কম্পাস।"
গল্পটা মোটাদাগে দুইজন মানুষের। দুইটি ভিন্ন সময়ে অথচ একই সরলরেখায় এগিয়েছে কাহিনি। গল্পটা দীপুর। যে ১৯৭১ এর উত্তাল সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। যখন চারদিকে জ্বলছে দ্রোহের আগুন। নকশালবাড়ি আন্দোলন এবং দমন-পীড়ন চলছিল পুরো উদ্যামে। দীপুর বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তারওপর মুক্তিযুদ্ধের কারণে পালিয়ে এসে আত্মীয়রা এসে জুটেছে। দীপুর বন্ধু ইলেশ এবং রচিত। ইলেশরা বাঙালি নয়। কলকাতায় বড় ব্যবসাদার তাদের পরিবার। পড়াশোনার চল নেই। তবু সে নিজ চেষ্টায় এম পড়ছে। ডিগ্রির জন্য নয়। সীমন্তীর জন্যে। দীপুর আরেক বন্ধু কড়া নকশাল। রচিত। সে কথায় কথায় বিপ্লবের বান ডেকে আনে। রচিতও সীমার প্রতি দুর্বল। সীমাও বেশ পাত্তা দেয় রচিতকে। তাই রচিত হলো ইলেশের দু'চোখের বিষ।
মউরিমা দীপদেরই সাথে পড়ে। বনেদী বাড়ির মেয়ে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র এবং ইংরেজিতে উপন্যাস লেখার চেষ্টাকারী দীপু এককথায় মউরিমার জন্য পাগল। কিন্তু মউরিমা?
বর্তমান সময়ের ঘটনা। উশ্মিল কলকাতায় এসেছে একজন নারীকে খুঁজতে। সে শুধু নামটুকু জানে আর জানে ৪৩ বছরের পুরনো কিছু কাছের মানুষের ঠিকানা। এই সম্বল করেই দারুণ স্মার্ট আর ভীষণ সুন্দরী তরুণী উশ্মিল। সে দারস্থ হলো এক প্রাইভেট এজেন্সির। যারা টুকটাক গোয়েন্দাগিরি করে থাকে। সেখানেই কাজ করে জিতু। জিতুকে সঙ্গে নিয়ে উশ্মিল খুঁজতে বের হলো সেই নারীকে। যার সাথে জড়িয়ে আছে মন বিষণ্ণতায় ভরিয়ে দেওয়া একটি গল্প। জিতু বেশি বেশি ভাবছে উশ্মিলকে নিয়ে। কিন্তু জিতু বামন হলে তো উশ্মিল আকাশের চাঁদ। তাহলে উপায়?
দুইটি ঘটনা একই জায়গায় গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু শেষটা সমান সুখের কিংবা দুঃখের হয়না, হয়নি।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখায় আলাদা মাদকতা আছে। ভারী ভারী কথা নেই, ভীষণদর্শন জীবন দর্শন নেই। সাহিত্যমার্গ বিচারে বেশি নম্বর হয়তো নাকউঁচু সমালোচকরা দেবেন না। অথচ স্মরণজিৎ চক্রবর্তী জীবনের গল্পগুলো এতটা নিবিড়ভাবে আঁকেন যেন মনে হয় এই ঘটনাগুলো আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে।
সত্তরের দশকের কলকাতার রাজনৈতিক আবহে লেখা উপন্যাসটা পড়ার সময় বেশ ভাল লাগা কাজ করছিল। জাস্ট একটা লাইন ' দাদু, এত বছর বিয়ে করেনি' এই প্রেমের দ্রোহে উপন্যাসটা শেষে গিয়ে কেমন ম্যাড়মেড়ে হয়ে গেলো। তারপরও পড়ে দেখতে পারেন।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর 'কম্পাস' বইটি মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত। দুটি ভিন্ন প্রেমের গল্প দুটি ভিন্ন সময়ে অথচ সমান্তরালে প্রবাহিত হয়েছে সমগ্র উপন্যাস জুড়ে। লেখক এক সুতোয় দুটি গল্পের মালা গেঁথেছেন যেন। গল্পের শেষে একদিকে আদীপ্ত মুখার্জি মউরিমা সেন... থুড়ি মউরিমা দাশগুপ্তের স্মৃতি মনে আঁকড়ে শুধুই নিঃশর্তে ভালোবেসে সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন। তাদের এই বিয়োগান্তক পরিনতি পাঠকের মনে যেমন বিষন্নতার সৃষ্টি করে তেমনই উশ্মিল ও পুনরজিৎ এর অঘোষিত প্রেমের সুচনার ইঙ্গিত যেন লেখক দিয়ে গেছেন। একটি গল্পের পরিনতি নির্ধারিত হলেও অপরটির আগাম পরিনতি সম্পর্কে পাঠকের মনে যে অনাবিল আনন্দের সঞ্চার করে, তা যেন ওই একজোড়া 'কম্পাস'-এর দুটো দিকের মতই বিপরীত ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
দুটো ভিন্ন সময়ের ভালবাসার গল্প বলেছেন লেখক। কিন্তু দুটো কাহিনী এক সূত্রে বাঁধা। কি সুন্দর, কত মিষ্টি ছিল পুরো বইটা। আবার জীবনের কত ধরনের স্ট্রাগল ও উঠে এসেছে লেখায়। একজন মানুষ তার ভালবাসার জন্য কত কি করতে পারে। একি আসলেই সম্ভব? বইটা পড়া শেষ করে মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো। ভাললাগা আরমন খারাপের মিশেল যেন।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর বই মানেই ভালোবাসার গল্প। আর আমার ওনার লেখা বই একটি বিশেষ কারণে ভালো লাগে - হৃদয় ছোঁয়া কিছু লাইন আর ইউনিক কিছু নামের জন্য। এই বইএর উশ্মিল আর মউরিমা(মৌরিমা এই বানানটা লিখলেই বেশি ভালো লাগে ) নাম দুটি বেশ লেগেছে আমার।
উপন্যাসটিতে একদিকে আদীপ্ত ও মউরিমার প্রেমকাহিনী ও অন্য দিকে উশ্মিল ও পুনরজিৎ এর অব্যক্ত প্রেমকাহিনী আছে। তবে এখানে দুটো সময় আলাদা। সত্যি বলছি প্রথম দিকটা পড়তে তেমন কিছু ইন্টারেস্ট পাচ্ছিলাম না ; আর শেষ দিকটা এসে বুঝতে পারলাম কিভাবে দুটো সময়কে সমান্তরালে রেখে গল্প এগিয়ে চলেছে। শেষে এসে মউরিমার মতো আমারও মনে হয়েছিল - "এভাবে কেউ পারে ভালোবাসতে ?" উফফফফফ্ সত্যিই ভাবা যায় না।হয়ত এরকম প্রেম আজকালকার দিনে Real life এ সম্ভব না, Reel life য়েই হয়। বাস্তবের প্রেমিকরা খুব অল্পদিনেই পুরনো প্রেমিকা ভুলে নতুন প্রেমে ডুব দেয়।
সময়ের স্রোতে ভেসে যায় স��মৃতি, ভুলে যাই ফেলে আসা দিগন্ত , কিন্তু ভালোবাসা , ঠিক ধ্রুবতারা র মতো জ্বল জ্বল করে , অভীষ্ট লক্ষ্যে সে অবিচল, তবু সেই অদৃষ্ট আজও অধরা। তাকে দ���খতে পাবে ছুঁতে পারবে না ।
হৃদয়ে রয়ে গেল উপন্যাসটা, দুটো ভিন্ন সময়, দুটো মানুষের গল্প, এই কলকাতা শহর, আর ওই ধ্রুবতারা , কি অদ্ভুত মিল, কিন্তু কত আলাদা।
বই- কম্পাস লেখক - স্মরণজিৎ চক্রবর্তী প্রকাশক - আনন্দ পাবলিশার্স বিনিময় - ৩৮০ ভারতীয় মুদ্রা পার্সোনাল রেটিং - ৪.৫/৫
বাংলা পাঠক মহলের বিখ্যাত পত্রিকা "উনিশ কুড়ির" মাধ্যমে পরিচয় ঘটে লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর সাথে। সাধারণত প্রেমের উপন্যাস বা গল্প পড়তে আমার বিশেষ আগ্রহ নেই, কিন্তু যদি লেখকের নাম স্মরণজিৎ চক্রবর্তী হয় তখন একটু বইটা টেনে নিয়ে দু চার পাতা উল্টাতে মন চায়। স্মরণজিৎ বাবুর গল্প উপন্যাসের প্রধান যে বিষয়টি আমার ভালো লাগে সেটা হল গল্পের চরিত্রের অনন্য কিছু নাম আর কিছু মন ছুঁয়ে যাওয়া লাইনের জন্য।
উপন্যাসিকাটি পুনরজিৎ ওরফে জিতু এবং আদিপ্ত ওরফে দীপুর হাত ধরে দুটি সমান্তরাল সময়কালের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে তাদের প্রবেশ করানো হয় গল্পের গভীরে। শুরুতেই দেখানো হয়, উস্মিল তার দাদুকে দেওয়া কথা রাখতে সোজা কলকাতায় পদার্পণ করে। মৃত্যুশয্যায় ওর দাদু আদিপ্ত মুখার্জি বলেছিলেন, "ফলো দি স্টার"। হাতে একটা বাক্স, একটা চিঠি দিয়েছিলেন উনি আর বলেছিলেন একটা নাম মউরিমা সেন। এবার উস্মিলের কাজ হল চল্লিশ বছর আগের এই মউরিমা সেন কে খুঁজে বের করে দাদুর দেওয়া চিঠি আর একটি বাক্স ওনার হাতে তুলে দেওয়া। পুনরজিতের সাহায্যে উস্মিল খুঁজতে থাকে সেকালের মৌউরিমা সেন কে। কলকাতার অলি গলির সাথে পরিচয় ঘটে উস্মিলের। একটু রাগী ও দুষ্টু স্বভাবের উস্মিল কে যেন আপন করে নিতে ইচ্ছা করে পুনরজিতের কিন্তু সে সংকোচে পিছিয়ে আসে, তার প্রেম যেন অব্যক্ত থেকে যায়। পারিবারিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের সাথে লড়াই করে হাপিয়ে যাওয়া জিতু প্রেমের থেকে দূরে থাকায় শ্রেয় বলে মনে করে। সময়ের অন্যদিকে লেখক আমাদের সাথে পরিচয় ঘটান ৭১ এর কলকাতার সাথে। দুই দেশ তখন বিপ্লবের আগুনে জ্বলছে। খান সেনাদের অত্যাচার না সহ্য করতে পেরে পূর্ববঙ্গ থেকে অনেক পরিবার পালিয়ে চলে আসছে আর এসে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় গ্রহণ করছে। আদিপ্ত মুখার্জিও এরকম রিফিউজি পরিবারের সন্তান। কিন্তু ওর দাদু দেশ ভাগের সময় এখানে চলে আসেন। কলকাতা তখন নকশাল দ্রোহে পুড়ছে। সেই সময় দীপুর সাথে পরিচয় ঘটে মউরিমার। একদম বাংলা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের মতো ধাক্কা ধাক্কি হয়ে যা তাহ ব্যাপার। মউরিমার কাছে মুখ ঝামটা খেয়ে আপাতত ক্ষ্যান্ত হয় আদিপ্ত। কিন্তু ওই প্রথম দেখাতেই সে ঠিক করে নেয় প্রেম থেকে পরিণয় এই মেয়ের সাথেই হবে। দুজনেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাকোত্তর পাঠরত। আন্দোলনকারি দের জন্য ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনা তাদে দুজনকে আরও কাছে করে দেয়। নদীর হালকা স্রোতের মতো বইতে থাকে তাদের প্রেম।
এবার নিশ্চয় আপনাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, মউরিমা আর আদিপ্তর কি হবে?? আদৌ কি উস্মিল খুঁজে পাবে তার ঠাকুরদার অতি প্রিয় মউরিমা সেনকে?? তারজন্য অবশ্যই পড়তে হবে স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর কলমে "কম্পাস"। পরিশেষে বলি, এই গল্প পড়ে একটু বিষাদে মন ভারী হয়ে আসবে। মনে হবে, একটা মানুষ এইভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারে? নাকি বোধহয় ভালোবাসা এরকমই হয়? একটা মানুষ কিভাবে পারে তার তেতাল্লিশ বছর আগের দেওয়া কথা রাখতে? লেখক ভালোবাসার প্রভাব কে এইভাবে ব্যক্ত করেছেন তার এই লেখনীতে।
পুনশ্চ: ছকে বাঁধা নিয়মে কোনদিন কিছু এগিয়ে চলতে পারেনা, যা পারে তা হয়ত অবিস্মরণীয় হয়না। চড়াই উতরাই এর নাম জীবন। আর আমরা এই চলার পথের বাঁকে বাঁকে খুঁজে পাই এমন কোনও জিনিস যার অধিকার থাকে কিন্তু দাবী থাকেনা। উপহার তোমার, কম্পাস।
এই উপন্যাস কে 5 স্টার দিলে অনেক কম দেওয়া হয়। এত সুন্দর যে একটা লেখা হতে পারে সেটাই আমার কল্পনার বাইরে ছিল। সদ্য পড়া শেষ করলাম। শেষ 4 পাতা পড়ার সময় literally I was in tears... সত্যি "এভাবেও কেউ ভালো বসতে পারে?" এই কথাটা যেন চরম সত্য হয়ে উঠেছে পুরো উপন্যাসে। মৌরিমা র জন্য আদিপ্তর ভালোবাসা এই কথা টাকেই প্রমান করে দিয়েছে। অনেক উপন্যাস পড়েছি, কিন্তু কোনো লেখা যে এইভাবে মন ছুঁয়ে যেতে পারে তা এই উপন্যাস টা না পড়লে জানতেই পারতাম না। সত্তর র দশকের উত্তাল কলকাতা আর বর্তমান র কলকাতার গল্প সমান্তরাল এ চলেছে। কিন্তু আদিপ্তর ভালোবাসা মৌরিমার জন্য আর এদিকে উষ্মিল র জন্য পুনরোজিত র ভালোলাগা দুটোই যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। লেখক এই উপন্যাসের মাধ্যমে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন true love র আসল সংজ্ঞা। স্মরঞ্জিত চক্রবর্তী .. আপনার কাছ থেকে এরকম লেখা আমরা আরো চাই। সত্যিই "follow the star",... ধ্রুবতারা।।
গল্পর শুরু হয় দীপু’কে নিয়ে। দীপু মানে আদীপ্ত মুখার্জি। পটভূমি ’৭১ এর কলকাতা। যখন সারা কলকাতা জ্বলছে দ্রোহের আগুনে; নকশালবাড়ি আন্দোলন, খুন, দাঙ্গা, বোমাবাজি চলছে চারিদিকে পুরো উদ্যমে। অন্যদিকে বাবা, দাদা, বৌদি এবং দাদার ছেলেকে নিয়েই যাদবপুরে কলোনির দু’ঘরের নিম্ন মধ্যবিত্ত বাসা দীপুর। দীপুর জীবন আসলেই খুব সাধারণ। ওদের সংসারটাকে ভালো করার জন্য, বাবা আর দাদার পাশে দাঁড়ানোর জন্য; কয়েকটা বেশি টিউশনি পড়ায় দীপু, ইংলিশে এম এ নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে একটা ভালো চাকরির আশায়। তবে দীপু রাজনীতি করে না। শু��ু এসবেরই পাশাপাশি টুকিটাকি লেখালেখি করে সে। গল্প লেখে, তবে ইংলিশে।
দীপুর ইউনিভার্সিটির বন্ধু, ইলেশ এবং রচিত। ইলেশ বাঙালি নয়। কলকাতায় ওদের গোটা পরিবার বড় ব্যবসাদার। তবু সে ইংলিশে এম এ করেছে। ডিগ্রির জন্য নয়। সিমির জন্য।
দীপুর আরেক বন্ধু রচিত। সে কড়া নকশাল। সে শুধু বিপ্লব বোঝে। রাজনীতি করে পায়ে পা মিলিয়ে, কিন্তু সে ব্যাপারে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যায়। ইলেশ পছন্দ করে সিমিকে আবার সিমির পছন্দ রচিতকে। তাই রচিত হলো ইলেশের দু’চোখের বিষ।
ইউনিভার্সিটিতে একদিন দীপুর হঠাৎ আলাপ একটা মেয়ের সঙ্গে। মউরিমা, মউরিমা সেন। বনেদি বাড়ির মেয়ে। সে প্রেম ও রাজনীতির থেকে দূরে থাকে। তবে মউরিমা বলতে দীপু যেন পাগল। ওর জন্য সব বিপদ নিজের মাথায় নিতে রাজি দিপু। আসলে দীপু মউরিমাকে ভালবাসে। কিন্তু মউরিমা?
বর্তমান সময়(২০১৪)। এক প্রাইভেট এজেন্সি-তে কাজ করে জিতু। একদিন সকালে হঠাৎ তার বস তাকে ডেকে পাঠায় নিজের বাড়িতে। যেখানে সে জানতে পারে এই বিশাল কলকাতা শহরে তাকে খুঁজে বের করতে হবে একজন নারীকে। তবে একা নয় সঙ্গে থাকবে আরেকজন। উস্মিল।
উস্মিলের দাদু মরে যাওয়ার আগে ওর কাছে একটা শেষ আবদার করে। একজন নারীকে খুঁজতে হবে তাকে। সে-ই নারীকে খুঁজতেই কলকাতা আসা উস্মিলের। তাই উস্মিল আর সাথে জিতু, মানে পুরনজিৎ একসাথে নেমে পড়ে কলকাতার পথে খুঁজতে একজন নারীকে।
শুধু একখানা নাম আর ৪৩ বছরের পুরোনো কিছু কাছের মানুষের ঠিকানা দিয়ে কি পারবে তারা সেই নারীকে খুঁজে বার করতে? উস্মিল কি পারবে তার দাদুর দেওয়া একটা চিঠি, আর একটা কাঠের ছোট বক্সটাকে সেই নারীকে দিতে? জিতু কি জানতে পারবে কেন আজকাল সে একটু বেশি বেশি ভাবছে উস্মিলকে নিয়ে? জিতু কি উস্মিলকে ভালবেসে ফেলল? উস্মিলও কি জিতুকে নিয়ে কিছু ভাবে? দীপু কি কোনওদিন হয়ে উঠে পারবে আদীপ্ত মুখার্জি? দীপু কি পারবে মউরিমাকে দেওয়া কথা রাখতে? পারবে কি সে ওই কম্পাস এনে দিতে? আর, দীপু আর জিতু কি তাহলে আলাদা কেউ নয়, বরং একই মানুষের আলাদা দুটো নাম?
এই সকল ইতস্তত প্রশ্নের উত্তর গুলোকে এক সুতোয় বাঁধতে গেলে আর সবটা বুঝতে গেলে আপনাদেরও পড়তে হবে স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর কলমে লেখা উপন্যাস, ‘কম্পাস’।
যারা স্মরণজিৎ পড়েছেন তারা জানান, তিনি কতটা অসাধারণ হয়েও সাধারণ ভাবে লিখতে পারেন। ওঁর প্রতিটা গল্প যেন আমাদের গল্প বলে। এই গল্পও তেমনই। দীপু, জিতু, মউরিমা আর উস্মিল প্রত্যেকেরই গল্পই যেন কোথাও না কোথাও মিলে যায় আমাদের সাথে। কোথাও না কোথাও ঠিক দীপু আর জিতু-র গল্প এক হয়ে যায়। চলে আসে একই সরলরেখায়। এবং তাদের চিরকাল সঠিক পথ দেখাতে থাকে আকাশের ওই, ‘ধ্রুবতারা’।
এবারের মতো আমার সময় শেষ। আজ তবে আসি। বাকি যা বলার তা আর বললাম না। এবারের মতো আমি এই।
Whenever I thought of reading Bengali literature, classics are what which came in my mind. Rabindranath Tagore, Ashapurna Devi, Bankim Chandra Chattopadhyay, they are whom I love with the bottom of my heart. Picking up a contemporary novel, for the first time, was a pleasant change.
I would give it 3 stars out of 5.
⭐- The book had a light hearted tone which I loved. The banter of Aadipta and his college friends made me laugh.
⭐- It doesn't contain a very complex or deep storyline. Nothing memorable or earth shattering. Just a fluffy, sweet, funny romance existing only to soothe one's heart.
⭐-: I loved the character of Punarjeet. The way his relationship with Aankhi was portrayed. Enough of romanticising staying stuck in the past and keep hurting yourself. It's time to love yourself and move on, give love another chance. Give yourself another chance to live your life.
⭐🚫- The character motivations were a bit awry. Especially Ushmil. If she didn't want to marry Chirag, then why was she staying in his father's flat, using his money? It felt like she is a gold digger, at some points.
⭐🚫- The biggest con of this book had to be the absence of emotional jabs. Why didn't it make me feel anything intensely? Where were those heart aching moments? The conclusion was unable to touch my heart.
🐱- I related to Ushmil a lottttt. The way she got angry on lil things. (I am like that sometimes ☠️). But when Punarjeet looks at her and thinks, "Does she knows how cute she looks when she is angry?" I want someone to look at me and think this 😭😭.
🐱- There were some instances where adult jokes were included. (So, kids, stay away 💀💀)
🐱- I would be checking out the other works of the author.
উশ্মিল হাসল সামান্য বলল ইন গুড টাইম তবে হ্যাঁ সেটা কিছুতেই ৪০ বছর হবে না আর ততদিন...
উশ্মিল বলল "ততদিন ফলো the স্টার
ইট উইল লিড ইউ গাইড ইউ আসি "
আচ্ছা এভাবে কি কেউ সত্যি ভালবাসতে পারে ,চল্লিশটা বছর আদীপ্ত মউরিমাকে দেওয়া কথা রাখতে সারা পৃথিবী ঘুরে তার কম্পাসের জোড়া খুঁজতে খুঁজতে নিজের মৃত্যু শয্যায় এসে সেটিকে পেয়ে তার নাতনি কে দিয়ে কলকাতা পাঠানোর কথা মৃত্যু শয্যায় থাকাকালীন কেউ ভাবতে পারে ,একটা মেয়েকে ভালোবেসে শুধুমাত্র তার জন্য অপেক্ষা করে ৪০ টা বছর কেউ আদৌও পার করতে পারে।
অন্য দিকে উশ্মিল দাদুর শেষ ইচ্ছা রাখতে
কলকাতায় এসেছে একজন নারীকে খুঁজতে। সে শুধু নামটুকু জানে আর জানে ৪৩ বছরের পুরনো কিছু কাছের মানুষের ঠিকানা। সম্বল করে সে দারস্থ হলো এক প্রাইভেট এজেন্সির। যারা টুকটাক গোয়েন্দাগিরি করে থাকে। সেখানেই কাজ করে জিতু।
প্রতি নিয়ত বাঁচার জন্য যুদ্ধ করে যাওয়া জিতুকে হঠাৎ করেই ভালোবেসে ফেলে উশ্মিল।
তাদের ভালোবাসা কি সম্পূর্ণতা লাভ করবে নাকি, আদীপ্ত মত করে তারাও একে অপরের অপেক্ষা করে জীবন কাটাবে তবে আমি ওদের নিয়ে আশাবাদী।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তী জীবনের গল্পগুলো এতটা নিবিড়ভাবে আঁকেন যেন মনে হয় এই ঘটনাগুলো আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে।
Altogether a well-rounded and well-grounded experience of two seemingly parallel quests separated by four decades and a half, Smaranjit Chakraborty has subtly varied the tonality and lightness of the inner thoughts of the two male protagonists in keeping with the time and place and is genuinely touching in major portions of this work. Additionally, there are nicely crafted cliffhangers as the narrative oscillates between the two timelines, making this an entertaining read.
Minor gripes include the one-dimensionality of Ilesh of the '70s and Hitesh of the '10s and the ignorance of Mourima of the whereabouts of a 'renowed' Indian English writer (despite the modern media), but the setting, dialogues and an even pace throughout more than make it up for them.
If you're looking for a novel that mixes a deep, old-school love story with a present-day mystery, you have to check out Smaranjit Chakraborty's Compass.
The story kicks off when a young person arrives in Kolkata carrying a strange note from their grandpa that says, "Follow the Star." They also have a secret package they need to deliver to someone.
With the help of an acquaintance, they start a search that eventually unearths a forty-three-year-old emotional love story from a really intense period in Kolkata's history.
What makes this book amazing is how smoothly it weaves the modern search with the dramatic romance from the past. It asks the big questions: Can true love ever come back? And what truths really guide our lives? It’s a beautiful, engaging read about finding your true direction.
প্রেমের উনিশ কুড়ির এর মাধ্যমে পরিচয় ঘটে লেখকের সাথে। তখনই মুগ্ধ হয়ে পড়ি লেখনীর সাথে। এরপর পড়ি কম্পাস। আরো একবার মুগ্ধ হই। গল্পের ভাবনাটি বড়ই সুন্দর । যেভাবে পুরো গল্পটি সাজানো হয়েছে সেটা দেখলে চমকে যেতে হয়। দুটি ভিন্ন সময়ের ভিন্ন গল্পকে একটি সুতোয় বেধে মনোমুগ্ধকর লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন অনবদ্য এক কাহিনী। তার পাশাপাশি তুলে ধরেছেন সামাজিক এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমস্যা । অসহায় করে তুলেছেন প্রত্যেক চরিত্র কে কিন্তু তাদের আবার প্রবল শক্তি দিয়ে সাহসী করে তুলেছেন। আর শেষে খুবই প্রচলিত বিষয় প্রেমের অবিশ্বাস্য গল্পঃ ফুটিয়ে তুলেছেন।
Smaranjit Chakroborty র লেখা উপন্যাসগুলো র মধ্যে এটা আমার প্রথম পড়া উপন্যাস। যারা প্রেমের উপন্যাস পড়তে ভালো���াসেন, নিঃসন্দেহে এটা খুব ভালো লাগবে। যেটা এই গল্পের unique, সেটা হলো কবি এখানে দুটো সময়ের প্রেক্ষাপট সমান্তরাল ভাবে লিখেছেন। এবং গল্পের শেষে দুটো প্রেক্ষাপট এর মিল ঘটছে। এক কথায় অসাধারণ গল্প। ❤️
এ উপন্যাস যতোবার পড়ি ততবারই কখন যেন নিজের অজান্তেই চিকচিক করে ওঠে চোখের কোণ।।এক মূহুর্তের জন্য ঝাপসা হয়ে যায় আকাশের শীর্ষে স্থির হয়ে থাকা আলোকবিন্দু।।আর বুঝতে পারি আদীপ্ত বা পুনরজিৎ আছে আমাদেরই মধ্যে।।আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে।।চোখ বন্ধ করি।।আর স্পষ্ট দেখতে পাই অন্ধকার এক মাঠ চিরে এগিয়ে চলেছে রেলগাড়ি।।আর তার জানলায় বসে আজও আকাশের ঐ তারাটির দিকেই তাকিয়ে রয়েছে এক যুবক।।
Just mon chhuye jaoar moto ekta lekha. Mon kharap kore deoa ar bhalolaga meshano ekta onubhuti theke jay boi ta sesh korar besh kichhudin por porjonto. Smaranjit sir is <3