Moinul Ahsan Saber (Bangla: মঈনুল আহসান সাবের; born 1958) is a fiction writer of Bangladesh. He is the executive editor of popular weekly magazine Saptahik 2000 (সাপ্তাহিক ২০০০), published from Dhaka.
His father, Ahsan Habib, was one of the main modern poets of Bangladesh and Saber emerged as a writer and gained fame with the publication of his first novel Porasto Sahish (পরাস্ত সহিস) in 1982.
আমরা কিসের পেছনে ছুটছি?? কিসের সন্ধানে আমরা এমন অস্থির, নিরুপায়? কেন আমরা এতটা বিষাদগ্রস্ত, একাকী, বিষন্ন, প্রত্যাহত?
কেন আমরা অস্থির? আমরা নিজকে খুজে পাইনা বলেই কি আমরা অস্থির? (হয়তো খুজে পেলে স্থির হতাম?) আমরা কি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছি আমরা কে? নাকি আত্মভীতি আর নিজের সামনে নিজের দাড়াতে ভয় বলেই আমরা এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়না??
সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্যের বিষাদে সাজিয়েই তো জীবন চালাচ্ছি.... কত গুপ্ত-সত্যের ভার নিজের কাধে নিয়ে যে জীবন চালাচ্ছি!! যে মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে যে চলছি!
আমরা কিসের অভিযানে নেমেছি..?? এই অভিযানের শেষ কি আছে?? শেষ হলেও এর পরের শুরু কোথায়?? ....... ............ এটাই ছিল বইটি পড়ে আমরা মস্তিষ্ক নাড়া দেয়া চিন্তা এবং এখানেই বইটি বিষয়বস্তুর অনেকটা এসেছে বলে মনে করি... বইটি হলো জীবন নিয়ে গভীর philosophyএর আড্ডা, গভীর পর্যবেক্ষণ এবং অনেকগুলো সত্য কথার সম্মেলন...
বইটিতে যা বলা হয়েছে তা যেন আমাদের ই কথা, আমাদের ই নিজেদের চিন্তাভাবনা.... শুধুমাত্র লেখক তা বইয়ের পাতাতে তুলে ধরেছেন
প্রিয় সু, লেখকের দার্শনিক মার্কা কচকচানি ভরতি এতো গুলো চিঠি পড়ে তুমি যদি বিরক্ত হয়ে থাকো আমি লেখকের হয়ে সত্যিই তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি৷ আসলে লেখকের চিন্তাভাবনা যে কত উচ্চমার্গীয় সেটা সম্পর্কে তোমাকে একটা আইডিয়া দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো বলে আমার ধারণা। তবে আমার মনে হয় তুমি সবকটা চিঠি আমার মতো মনযোগ দিয়ে পড়ার প্রয়োজনও মনে করো নাই৷ দুই এক লাইন পড়েই হয়তোবা চিঠি খামে ঢুকিয়ে তোষকের নীচে রেখে দিয়েছ ৷ একজন বুদ্ধিমতী নারী তাই করবে। এতে দোষের কিছু নাই।
আমি বলি, এই যে ব্রাদার হ্যালো আমি কে? এইটুকু আমাকে শুধু বলো। কোত্থেকে এসেছি আমি, ঠিকানাটা কী এ জীবনে কী দেখেছি, কী দেখিনি। হুমায়ূন আহমেদের এই চার লাইন দিয়ে লেখাটা শুরু করার কারণ 'ঠাট্টা' পড়েছেন এমন পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন৷ কারণ, ঠাট্টা উপন্যাসের গোটা অংশ জুড়েই রয়েছে আত্মান্বেষণ এর একটি প্রক্রিয়া। বিখ্যাত কবি এবং মনীষী আহসান হাবীব তনয় বাংলা একাডেমি এবং একুশে পদকজয়ী লেখক মইনুল আহসান সাবের এর কেবল একটি বই এর আগে আমি পড়েছিলাম। 'লিলিপুটেরা বড় হবে' পড়ে আমার মনে হয়েছিল, দারুণ একটা সাহসী রাজনৈতিক লেখা। তাঁর অন্য একটি বই পড়তে আমার বেশ কয়েক বছর দেরি হয়ে গেল৷ মইনুল আহসান সাবের এর লেখা এত সাবলীল, এত সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধি সম্পন্ন, অথচ তাঁর লেখা বই নিয়ে আলোচনা প্রায় চোখেই পড়ে না। আমি নিজেও তাঁর লেখা এত কম পড়েছি, কিন্তু ঠাট্টা পড়ে কিছু না লেখা অন্যায়। এই প্রবীণ লেখকের এই লেখাটি তার বিষয়, দর্শন এবং সেটা পাঠকের কাছে এমন অনবদ্য স্টাইলে পৌঁছে দেয়ার কারণে নিশ্চিতভাবে কালজয়ী হওয়ার দাবি করে, সম্ভবত কালজয়ীই। সু বলে একজনকে লেখক চিঠির মাধ্যমে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করছেন, একেবারে সারিবদ্ধ চিঠিগুচ্ছ নয়। কিন্তু সবটা মিলিয়ে মূলভাব এবং স্থিতিটা স্পষ্ট। সু, নামটাও বেশ ব্যঞ্জনাময়, হয়তো প্রতীকী। কে এই সু? সে কি কোন নারী-পুরুষ নাকি সকল পাঠকের প্রতিচ্ছবি? যাকে অকপটে নিজের সমস্ত ধারণা ব্যক্ত করে চলেছেন লেখক? যে সু যেকোন ক্ষেত্রেই নির্লিপ্ত থেকে জীবন এরকমই বলে মত ব্যক্ত করে, অথচ এর আড়ালেই জীবন যে আসলে কতরকম সেই মারাত্মক সত্যিটি দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। আত্মানুসন্ধানে মগ্ন এবং স্থির প্রতিজ্ঞ লেখক বাড়িঘর ছেড়ে পথে নেমেছেন, উদ্দেশ্য নিজের উৎস খোঁজা। নিজেকে সব কিছু থেকে বিযুক্ত করা। তার মধ্যে নানান চিন্তার উন্মেষ ঘটেছে, তিনি দেখতে চেয়েছেন সত্যকে৷ কিন্তু উপলব্ধি করেছেন অন্ধের হাতি দেখার মতো করেই যেসব সত্যি আমরা জানি, তা আসলে খণ্ডিত। প্রশ্ন তুলেছেন, স্বাভাবিক কাজের একটু ব্যতয় ঘটলেই আমরা যাদেরকে পাগল আখ্যা দিয়ে বসি, সেই সাধারণের চাইতে একটু আলাদা মানুষেরা আমাদেরকে কোন চোখে দেখেন? মধ্যবিত্ত জীবনের সমস্ত দৈনন্দিন আচরণ, যার অনেকটাই শঠতায় ভরা, সেগুলোর দিকে আঙুল তুলেছেন লেখক। কিন্তু শান্তভাবে। পৃথিবী বদলে দেয়ার বা মানুষ বদলে দেয়ার কোন সংকল্প নিয়ে উপন্যাসটা যেন লিখেন নি তিনি। বরং উপন্যাসটাকে দাঁড় করাতে চেয়েছেন আমাদের সকলের আয়না হিসেবে। আমাদের কাজের অর্থ কি শেষ পর্যন্ত আমরা খুঁজে পাই? জগতের সমস্ত রহস্য কি উদঘাটন করা যায় চাইলেই? নাকি দিনশেষে পরিণত হয় এই সব আয়োজন এক মস্ত ঠাট্টায়? কে জানে! হুমায়ুন আজাদ 'যে-বই জ্বালে ভিন্ন আলো ' সেসমস্ত বই পড়ার পরামর্শ দিয়ে গেছেন৷ এই বইটি সেই ভিন্ন আলো জ্বালা এক অপার্থিব কিংবা দারুণভাবে পার্থিব দর্শনের কথা বলে যায়। যে দর্শনের মধ্য দিয়েই লালিত হচ্ছি আমরা, মানুষেরা। উৎসর্গপত্রে ঋগ্বেদ এর একটি লাইন উদ্ধৃত করা, 'সর্বপ্রথমে অন্ধকার দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল।' লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, এখনো কি তা নয়? চমৎকার সাবলীল লেখনশৈলীর পাশাপাশি নানান বইয়ের রেফারেন্স দেয়া উপন্যাসটিতে। অকারণ নয়, অযাচিতভাবে দেয়া উপদেশ নয়, বরং অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। যেসব লেখা আমাকে একটি হতে আরো পাঁচটি বই পড়তে আগ্রহী করে, তাদের আমি অন্যতম সেরা সাহিত্যের আওতায় রাখি। ঠাট্টা আরো অনেক কারণেই সেরা হয়ে থাকবে, এর পাশাপাশি৷
'ঠাট্টা' উপন্যাসটার রিভিউ না করে লেখকের মস্তিষ্কে ঢোকার বৃথা চেষ্টা করা যাক। লেখক চিঠির ঢংয়ে লেখা এ বইটার শুরু করেছেন খুবই ক্যাচি কিছু বাক্য সমেত যেগুলো পাঠককে টেনে ধরবে, চমকিতও করবে। তারপর শুরু হবে মানুষের সেই চিরাচরিত বিহ্বলতা, নিজেকে খুঁজে ফেরা নিয়ে বিস্তীর্ণ আলাপন, যা বলা হবে 'সু' কে, যে কি-না কথকের ঘনিষ্ঠজন, এবং এর মূল থিম 'আমি দূরে যাচ্ছি' ও 'আমি নিজেকে খুঁজে ফিরছি' এই দুই। উত্তম পুরুষে লেখা এ গ্রন্থে লেখক তার নিজস্ব ফিলোসোফি এবং বিভিন্ন বইপত্র থেকে ধার করা ফিলোসোফি দেদারসে লিখে গেছেন। এটাকে একপ্রকার একাডেমিকের কাতারে ফেলে আশাবাদীতা ও নৈরাশ্যবাদের দ্বন্দে নিয়ে গেলেও ভুল কিছু হবে বলে মনে হয় না। কিছু সময় দেখা গেছে ভাবনার জগতে বাস করছেন কথক, আবার কিছু সময় ভাবনা ছেড়ে বাস্তবে ফেরত আসতেই তিনি দেখেন পকেট ফাঁকা। পেটে দানাপানি না থাকাকে তখন মনে হয়েছে প্রকৃত অসহায়ত্ব। প্রগাঢ় চিন্তক মন তখন কাজের বিনিময়ে খাদ্য যোগাড় করছে। বইয়ের অনেক জায়গায়ই বেশ কিছু ভালো দর্শন ইমপ্লিমেন্ট করা হয়েছে সত্য। আবার কিছু জায়গা, মূলত পাঁচের তিনই, চলতি পথের নিরর্থক ভাবনা। ঈদসংখ্যায় এরকম খাপছাড়া লেখা প্রায়ই চোখে পড়ে থাকবে আপনাদের বোধ করি। হোক তা, তবুও গদ্যের টানে পড়ে ফেলা যায়।
কাব্যিক ধাঁচের গদ্য। মঈনুল আহসান সাবের তো একাডেমি প্রাপ্ত লেখকও বটে। এবং এ বইয়ে শেষ কয়েকটা লাইনে তিনি যা খুঁজে পেয়েছেন তা হলো, আমরা যার পেছনে ছুটছি, কিংবা যা খুব কষ্টার্জিত উপার্জন আমাদের, তা অন্য কারো কাছে রোজকার মামুলি ব্যাপারই হয়ত। অনেক সহজকে আমরা অনেক কঠিন করে রাখছি সারাটা জীবন। আবার আমার কাছে যা সহজ তা অন্যের কাছে দুর্বোধ্যও হতে পারে। প্রত্যেক ব্যাপারেরই বিপরীতমুখীতা বারংবার পোর্ট্রে হয়েছে পুরো উপন্যাসে।
স্পয়লার লিখিনি। এ উপন্যাস নির্দিষ্ট কোনো ঘটনাপঞ্জিকে কেন্দ্র করে নয়। সুতরাং পড়তে ইচ্ছা করলে পড়ে ফেলতেই পারেন।
" পর্বতের মূষিক প্রসব " বলে যে কথাটা প্রচলিত আছে তার একদম সার্থক প্রমাণ হলো এ বই। শুরুর লাইন থেকে একদম শেষের কয়েক পাতা আগ পর্যন্ত যে চমৎকারিত্বের আবেশ, তা শেষের কয়েক পাতায় লেখক যেভাবে " ঠাট্টাচ্ছলে " একদম আবর্জনায় পরিণত করে দিলেন, তাতে বলতেই হয় এ বইয়ের নাম " ঠাট্টা " ব্যাতিত অন্য কিছু হওয়ারই ছিলো না।
বইয়ের প্রথম অর্ধেক বেশ অসংলগ্ন লাগছিল, মনে হচ্ছিল শুধু শুধু কিছু লিখতে হবে তার জন্যই লেখা। কিন্তু তারপর একদম জমে গেল। অন্ধের হাতি দর্শন, সামনে নদী পেছনে বনভূমি নিয়ে সবাই মিলে একীভূত হয়ে যাওয়ার কন্সেপ্ট, মাঝ সমুদ্রে জেলেদের সাথে গিয়ে মাছ ধরা দেখা সবই ছিল অপূর্ব এক অভিজ্ঞতা। এন্ডিংটা যদিও খুব একটা অবাক করেনি তবে অসাধারণ।