কে না পড়তে ভালবাসে ভূতের গল্প? বিশেষ করে সে গল্প যদি জমজমাট ভূতের গল্প হয়। ‘ভূতের গল্প ভয়ঙ্কর’ নামে লেখকের প্রথম জীবনে একটি ছোট্ট সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। এখন সেই গ্রন্থেরই নব রূপায়ণ। এবার গল্পসংখ্যা পঞ্চাশটি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এই গল্পগুলির সঞ্চয়কালও সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর। দশ, বছর বয়স থেকে যেসব কাহিনী লেখক প্রথম মায়ের মুখে এবং পরে বিস্মৃতপ্রায় যুগের প্রবীণদের মুখে শুনে এসেছেন, স্রুতিনির্ভর সেই কাহিনীগুলো নিয়েই এই গল্পসম্ভার।ভূত আছে কী নেই সেসব তর্কের ব্যাপার। এই তর্কের কোনও মীমাংসা আজও হয়নি কিন্তু জনশ্রুতিকে তো অবহেলা করা যায় না। ফলে ভূতদের নিয়ে গা ছমছমে ভূতের গল্প আজও জনপ্রিয়। লেখকের সঞ্চয়ের এই পঞ্চাশটি গল্প সব বয়সের পাঠকেরই ভাল লাগবে। কেননা এই সমস্ত গল্পের কোনও বয়ঃসীমা নেই। আর এই বইয়ের সব গল্পই ভূতের। ভূতের নামে অদ্ভুত ব্যাপার-স্যাপার দিয়ে পাতা ভরাননি লেখক। প্রতিটি গল্পে আগাগোড়া ভূত। প্রতিটি গল্পই আদ্যন্ত ভূতের গল্প।
Sasthipada Chattopadhyay (born 9 March 1941) was an Indian novelist and short story writer predominantly in the Bengali language. He was a well-known figure, famous for his juvenile detective stories, namely, the 'Pandob Goenda' series, as well as his contribution to children's fiction in general.
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়-এর জন্ম ২৫ ফাল্গুন ১৩৪৭। ইংরাজি ১৯৪১। মধ্য হাওড়া খুরুট ষষ্ঠীতলায়।
কিশোর বয়স থেকেই সাহিত্য সাধনার শুরু। ১৯৬১ সাল থেকে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় আলোচনীর সঙ্গে লেখালেখি সূত্রে যুক্ত থাকলেও ১৯৮১ সালে প্রকাশিত ছোটদের জন্য লেখা ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’ই লেখককে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’র জনপ্রিয়তার পর থেকে বিরামহীনভাবে লিখে চলেছেন একটির পর একটি বই। মূলত অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, তাই দেশে দেশে ঘুরে যে-সব দুর্লভ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তাঁর প্রতিটি লেখার ক্ষেত্রে।
পঞ্চাশটি গল্পের মধ্যে কিছু মাত্র গল্প মনে দাগ কাটলো, বাকিগুলো গতানুগতিক। তবে পাঠকের বয়স যদি হয় দশ- বারো, তাহলে সে পড়ে মজা পেতে পারে। শুধু ভয় পাওয়ার মধ্যেই যে গল্পগুলো সীমাবদ্ধ রয়েছে তা নয়। খারাপ ভূতের পাশাপাশি উপকারি ভূত আছে। ননসেন্স টাইপ গল্পও আছে। তবে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় গুণী লেখক তাই ঝরঝর করে বই শেষ করতে পেরেছি।
লক্ষ্মী আচার্যির গল্প, বিজলের ডাঙা, রোমহর্ষক, প্রেত আতঙ্ক, শিমুলতলার মাধবী লজ, সন্ধ্যানীড়, অবিশ্বাস্য, অদ্ভুতুড়ে, জোৎঘনশ্যামের বিপদ, বাঁকিপুরের মস্তান, বিদেহী, বেলগাছের মহাপ্রভু এই গল্পগুলোই ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় না দ্বিতীয়বার আর পড়া হবে।
অধিকাংশই নিরীহ সব ভূত। রাতের অন্ধকারে আসে, গল্পগুজব করে, সুগন্ধ ছড়ায়, উপদেশ দেয়, ভোর হতেই মিলিয়ে যায়। যেগুলো একটু খারাপ ওইগুলোকেও সবাই মিলে ধাওয়া দিলে বা ওঝা ডাকলে পালিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে গ্রাম বাংলার প্রকৃতির মনজুড়ানো বর্ণনা, মার্টিন ট্রেন, রাতের প্রকৃতি, খাওয়া দাওয়ার রসালো বর্ণনার জন্য তিন তারা দিলাম।
এই বইয়ের পঞ্চাশটি গল্পের মাঝে গোটা দশেক গল্প আছে যেগুলা শিশুতোষ ভৌতিক গল্প। এগুলো পড়ে ভয় তো লাগবেই না বরং হাসি পায়। একদম ছোটবেলায় বড়দের মুখে যেসব রুপকথার ভূতের গল্প শুনতাম অনেকটা সেরকম ধরনের। এছাড়া বাকি যেই গল্পগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা গল্প বেশ ভালো। বাকিগুলো মোটামুটি মানের, বিষয় বৈচিত্র্যও কম। কিছু গল্পে হালকা ভয়ের ব্যাপার থাকলেও, গা ছমছম করা ভৌতিক বিষয় একদমই নেই। জমজমাট ভূতের গল্প পড়তে চাইলে এই বই পড়ে হতাশই হতে হবে। তবে শুধুমাত্র গল্প পড়ার ইচ্ছা থাকলে বইটি পড়াই যায়। ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় এর আকর্ষণীয় লেখনীর গুণে গল্পগুলো পড়তে ভালোই লেগেছে।
কিছুদিন ধরে খুব ভূতের গল্প পড়তে ইচ্ছা করছিল। কষ্টের বিষয় হচ্ছে, ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো কোন বই পাই না সামনে! এই বইটা দেখে তাই ভাবলাম পড়ে দেখি। কিন্তু এটা পড়ে ভয়ের বদলে ভীষণ মজা পেয়েছি! মজার বই! :D