পি. জি. ওডহাউসের 'মাইক অ্যাণ্ড স্মিথ' অবলম্বনে রচিত ।
শামিম আর মনশূর - দুই খোশমেজাজি ডানপিটে কিশোর । শামিম একটি ক্রিকেট প্রতিভা । বৃষ্টির মতো রান ঝরে তার ব্যাট থেকে । জান দিতে পারে বিপন্ন বন্ধুর জন্যে । মানশূরও একজন দুর্ধর্ষ বোলার । কিন্তু এ পরিচয়টা সে গোপন রাখে চরম মুহূর্ত আসার আগ পর্যন্ত । তার প্রতিটি কর্মে শিল্পের ছোঁয়া, প্রতিটি কথায় রসের ধারা । লেখাপড়ায় অমনোযোগের দোষে দু'জনই নির্বাসিত হয় শহরের 'স্বর্গ' থেকে । ইদিলপুরের নিস্তরঙ্গ জীবনে প্রথম আবির্ভাবেই ওরা তুলল প্রাণের ঝড় ।
ভালো লাগলো। খুবই ভালো লাগলো। এক বসাতেই খতম হয়ে গেল বইটা। ভালো লাগার পেছনে আমার মনে হয় কারণ টা একটু অন্যরকম। শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যার যখন ফর্মে ছিলেন তখন তার হাত থেকে যে ধরণের কিশোর উপন্যাস বের হত তার সাথে এটা তুলোনা করলে হয়ত তেমন বিশেষ কিছু নয়। কিন্তু ইদানীং তিনি যেমন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মত অফ ফর্মে আছেন , সেই সময়ে এই টা পড়লাম তাই হয়ত একটু বেশী ভালো লাগলো।
চট্টগ্রামের এক বোর্ডিং স্কুলের প্রেক্ষাপটে ক্রিকেটকে উপজীব্য করে লেখা একটি উপন্যাস। মূল চরিত্র দুটি খুবই উপভোগ্য হওয়ায় পড়তে খুবই মজা লেগেছে। বিশেষ করে মানশূরকে। সাথে সাইড ক্যারেক্টার গুলোও কম যায় না। বর্তমানে কিশোর উপন্যাস নাম নিয়ে যা বের হচ্ছে তার তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকবে বইটা।
একটি আদর্শ কিশোর উপন্যাস। (কিশোরীদের কেমন লাগবে সে ব্যাপারে আমার একটু খটকা আছে। ) পড়ার অনুরোধ থাকল। সেবা প্রকাশনী যে এক সময় কি দুর্দান্ত সব রূপান্তর বের করত তার একটি নমুনা মাত্র।
অসাধারণ একটা কিশোর উপন্যাস পড়ে শেষ করলাম, সিম্পলি মার্ভেলাস! বহু বহুবছর আগে যখন স্কুলের নিচের দিকের ক্লাসে পড়ি (ফাইভ বা সিক্স) তখন বইটা প্রথম পড়েছিলাম যতদূর মনে পড়ে, কিন্তু ঐটুকুই, গল্পের কিছুই মনে নেই এতদিন পরে। শুধু পড়ে ভাল লাগার সুখস্মৃতিটা মনে আছে। সেকারণে আজ এই ত্রিশোর্ধ্ব জীবনে এসে বইটা আবার তুলে নিলাম পরীক্ষা করতে অতীতের সেই ভাল লাগাটা কতটুকু সত্যি ছিল... দেখা গেল, শুধু ভালই লাগল না, আমার মনের আশা পূরণ করে আরও বহুদূর এগিয়ে গেল! ভেবেছিলাম টাইমপাস ফান হিসেবে চলনসই হলেই হবে, কিন্তু এই দুর্দান্ত উপন্যাসটি আমার মনকে এমন মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিয়েছে যে অনায়াসে এটাকে আমার পড়া অন্যতম সেরা একটি বাংলা কিশোর উপন্যাস বলতে পারি। তার মানে হয় বিগত সময়ে আমার মানসিকতা সেই ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ুয়া বালক-আমি থেকেও আরো শিশুতোষ হয়ে গেছে, অথবা বইটাই আসলে সময়কে জয় করা একটি কালোত্তীর্ণ লেখা যেটা যে বয়সেই পড়া হোক না কেন নির্মল আনন্দে মন ভরিয়ে দেবেই! নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে তাই আমি দ্বিতীয় কারণটাই বেছে নিলাম :P
বইটার কাহিনীতে যে খুব একটা নতুনত্ব বা চমক আছে তা কিন্তু নয়, তবে যেটা আছে পূর্ণশক্তিতে তা হল লেখকের মন্ত্রমুগ্ধকর লেখনি, চুম্বকীয় হাস্যরসাত্মক উপস্থাপন আর নিখুঁতভাবে প্রতিটি চরিত্রের অপূর্ব চিত্রায়ণ; যেখানে কোনো চরিত্রকেই মেকি বা বানোয়াট বা অবাস্তব মনে হবে না বরং পাঠকের নিজের সাথে নিজের পারিপার্শ্বিক পরিচিত মানুষের মাঝেই সব চরিত্রের রক্তমাংসের ছায়া খুঁজে পাওয়া যাবে, মনে হবে আরে এরা তো আমারই বন্ধু বা আমারই শিক্ষক! শুধু গল্পের মূল নায়কদ্বয় শামিম ও মানশূরের মাধ্যমে অবিস্মরনীয় দুটি চরিত্র সৃষ্টিই নয়, বাক্কু, গুড্ডু, মোল্লা স্যার, রকিব স্যার প্রমুখ প্রতিটি পার্শ্ব চরিত্রকেই লেখক যেন বইয়ের দ্বিমাত্রিক পাতা থেকে বাস্তবের ত্রিমাত্রিক জগতে তুলে এনেছেন কলমের মাত্র কয়েক ঝানু খোঁচাতেই। আর সেই সাথে গল্পের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে দিয়েছেন সূক্ষ্ণ হাস্যরস, হোক সেটা উত্তরোত্তর আজগুবি সব ঘটনাবলীর কৌতুকময় বর্ণনা বা মানশূরের ক্ষুরধার জিভ ও তীক্ষ্ণ উপস্থিত বুদ্ধিতে শানানো দারুণ সব সংলাপ, যাতে আমি মাঝে মাঝেই হো হো করে ঘর ফাটিয়ে হেসে উঠতে বাধ্য হয়েছি। আর সবকিছুকে ছাপিয়ে আমার পাঠকহৃদয়কে ছুঁয়ে গেছে দুটি জিনিসঃ সকল মানঅভিমান-মারামারি-খুনসুটি-গলাবাজির পরেও স্কুলজীবনের সহপাঠিদের মধ্যকার চিরন্তন বন্ধুত্ব আর ভ্রাতৃত্ববোধ, এবং সাময়িক ক্ষোভদূঃখ উড়িয়ে দিয়ে শিক্ষকদের প্রতি নিখাঁদ শ্রদ্ধাবোধ। শিক্ষকরাও যে কপট রাগারাগি-বকাবকির আড়ালে নিজের মমত্ববোধ ও স্নেহভালবাসা দিয়ে ছাত্রদের জড়িয়ে রাখেন তাদের উন্নতিকল্পে, সেটাও খুবই সুন্দর ভাবে উঠে এসেছে কাহিনীতে। মোট কথা, অসাধারণ সব চরিত্র আর চরিত্রদের মধ্যকার ইন্টারঅ্যাকশন আমার মতে বইটাকে ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে, সাধারণ ফরগেটাবল টাইমপাস ফানের তুলনায় টেনে নিয়ে গেছে দীর্ঘদিন মনে রাখার মত কালজয়ী একটি কিশোর উপন্যাসে। সত্যি বলতে এ ব্যাপারগুলোই আমাকে স্মৃতিকাতর করে তুলেছিল নিজের স্কুলজীবনের সেসব স্বর্ণসময়কে মনে করিয়ে দিয়ে। বইটা শেষ করে আমার নিদারুণ আক্ষেপ রয়ে গেল মানশূর-শামিম-বাক্কুদের সাথে আমি ইদিলপুর স্কুলে আরো কিছুদিন থেকে যেতে পারলাম না বলে।
এ. টি. এম. শামসুদ্দীন পি.জি. ওডহাউসের ক্লাসিক "মাইক অ্যাণ্ড স্মিথ" উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে এই বইটি লিখলেও তিনি বিংশশতকের গোড়ার দিকের সুদূর ইংল্যান্ডের পটভূমি থেকে এমন মুন্সীয়ানার সাথেই নব্বই দশকের বাংলাদেশের পটভূমিতে বাঙ্গালী সব চরিত্রের মাধ্যমে গল্পকে সাজিয়েছেন যে বইটা পড়ার সময় মুহুর্তের জন্যেও মনে হবে না এটার মূলে কোন বিদেশী কাহিনী আছে। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত কাল্পনিক ইদিলপুর ও তার আশেপাশের বাস্তব এলাকার ভৌগলিকতায়ও বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন দেশীয় চালচিত্র আরো পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলতেঃ অদূরের চট্টগ্রাম শহর-সীতাকুণ্ড-পাহাড়তলী ইত্যাদি ও চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল সহ বিভিন্ন প্রকৃত স্থাপনাকে উল্লেখের মাধ্যমে... এসবই এটিকে একটি খাঁটি দেশী গন্ধে মাখা গল্পে পরিণত করে তুলেছে; লেখককে আরো একটিবার সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই।
উপন্যাসের ক্লাইমেক্স মোটামুটি গতানুগতিক হবার পরেও তাই সব মিলিয়ে বইটা শেষ করার পরে আমার মুখে একটা আনন্দদায়ক তৃপ্তির হাসি আপনা থেকেই লেগেছিল, যেই তৃপ্তি গল্পের কল্পনায় মনকে পুরোপুরি ভরিয়ে দিলে প্রতিটি পাঠকই বোধকরি অনুভব করে সময়ে সময়ে, যেটা আমি বাল্যকালে পেতাম মুহম্মদ জাফর ইকবালের "হাতকাটা রবিন", "দীপু নাম্বার টু" বা শাহরিয়ার কবিরের "নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়" অথবা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার কিশোর উপন্যাসগুলো পড়ে। মাঝে মাঝে তাই বেমালুম বিস্মৃত হয়ে আবার নিজের ভেতরকার হারিয়ে যাওয়া সেই বিস্মিত চোখের বালককে ঠিকঠাক মত খুঁজে পেতে খারাপ লাগে না, কি বলেন?
বিঃদ্রঃ বইটা শেষ করে আরেকটা আফসোস থেকে গেল, এটাকে অ্যাডাপ্ট করে নারায়ণ দেবনাথের নন্টে-ফন্টের মত তুখোড় একটা গ্রাফিক নভেল/কমিকস বানানো সম্ভব হত, অথবা দীপু নাম্বার টু-এর মত কিশোরদের জন্য পার্ফেক্ট একটা বাংলাদেশি সিনেমা... অথচ কোনোটিই মোটামুটি নিশ্চিতভাবে অন্তত আমার জীবদ্দশায় হবে না। বিশেষত চট্টগ্রামাঞ্চলের নয়নাভিরাম পাহাড়ী এলাকার পটভূমিতে জমজমাট ক্রিকেটীয় কাহিনীর এই কিশোর চলচ্চিত্রটি দেখতে এখন খুবই ইচ্ছা করছে!
প্রথমটায় একটু নড়বড়ে হলেও দারুণ লেগেছে বইটা শেষ পর্যন্ত। গল্প শামিম কে দিয়ে শুরু হলেও মানশূর এই গল্পের প্রাণ। ওর বুদ্ধিদিপ্ত সব আইডিয়া আর কৌশল অনুসরণ করে একের পর এক বিপদ উৎরে যায় সেই অচেনা পরিবেশে। মানশূর এবং শামিমের বন্ধুত্ব মনে রাখার মতো, দু'জনে একে অপরের বিপদে সক্রিয়।
গল্পে আছে আরও কিছু চরিত্র। কিভাবে স্কুলে নতুন কেউ এলে প্রথমে মিশতে কষ্ট হয় এবং পরবর্তীতে মিলেমিশে এক হয়ে যেতে পারে এসব বিষয় দারুণ ভাবে লিখেছেন লেখক। তাছাড়া গল্পটি একটি বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে লেখা হলেও সেটা এক মুহূর্তের জন্যও বুঝতে দেননি লেখক, বইয়ের ভেতরে লেখা না থাকলে জানতেই পারতাম না আমিও!
আর বাকি রইলো ক্রিকেট? সব কিছুতো সেটাকে ঘিরেই। ভালোই হয়েছে খেলাধুলো, চমকও এসেছে ক্রমশ।
গল্পের খটমটে চরিত্র মোল্লা স্যার কিংবা ভালোমানুষ রফিক স্যারের চরিত্র দুটোও বেশ বাস্তবিক হয়েছে। মোট কথা, দারুণ লেগেছে গল্পটা।
ছিমছাম, এক বসায় চট করে পড়ে ফেলা যায়-এমন একটা বই। মূল গল্পটা জোলো, কী হবে অনুমানযোগ্য। মনে রাখার মতো বিষয় এই বইয়ে কেবল দুটো।
এক হলো মানশূর চরিত্রটার রসবোধ। প্রায়ই জেরোম কে জেরোমের 'এক নায়ে তিনজন' বইটিকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো।
দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে সেবার অনুবাদের অনন্যতা। জেরোম সাহেবের বইটার একটি জাদুকরী অনুবাদ শামসুদ্দীন নওয়াব সেবার পাঠকদের উপহার দিয়েছিলেন। এই বইতেও অনুবাদক মনে করিয়ে দিলেন যে অনুবাদও একটা শিল্প, সেবা সেখানে বাংলাদেশের অন্য প্রকাশনীগুলোর চাইতে এগিয়েই ছিলো সবসময়।
সেবা'র অ্যাডাপ্টেশনটাই আগে পড়েছিলাম, এরপরে সম্ভবত কলকাতা থেকে বের হওয়া মানবেন্দ্র'র অ্যাডাপ্টেশন। সেবা'রটা নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে, এবং বছর তিনেক আগে মূল বইটা পড়ে সেটা নিশ্চিত হলাম। পি জি ওডহাউজ-এর খাঁটি ব্রিটিশ উইট অনুবাদে আনা অসম্ভব একটা কাজ, কিন্তু সেই অসম্ভব কাজটাই করে দেখিয়েছেন এ টি এম শামসুদ্দীন। এতটাই সফল তিনি যে, লেখাটাকে মৌলিকও বলে দেয়া যায়। কাহিনী এমন কিছু না, কিন্তু প্রতিটা কথোপকথন প্রাণভরে উপভোগ করার মত। এবং যে কথাটা খুব কম বই সম্পর্কে খাটে, কিশোর-তরুণ-যুবক-প্রৌঢ়-বৃদ্ধ (জেন্ডার ধরবেন না দয়া করে, সব জেন্ডারের জন্যই বলছি)- সব বয়সের জন্য উপভোগ্য। মানিকজোড় তো পড়তেই হবে, একটু সময় করে মূল ইংরেজিতে 'মাইক অ্যান্ড স্মিথ' (স্মিথের ভাষায়, স্মিথ উইথ আ 'পি')-ও পড়ে ফেলুন অবশ্যই। করোনাকালের এই থমথমে গুমোট সময়ে এক ঝলক মুক্তির সুবাতাস (খুবই ক্লিশে হয়ে গেল উপমাটা, কিন্তু যথার্থ বলেই আমার ধারণা) পাওয়া যাবে। সিরিজে আরো ৩ বা ৪টা বই আছে, এর মাঝে ২য়টা মানে 'স্মিথ দ্য জার্নালিস্ট' পড়া শুরু করেছি অনেকদিন আগে, প্রথমটার কাছাকাছিই উইটি। অনেকদিন ফেলে রাখলেও, এবারে শেষ করে ফেলতে হবে সেটাও।
শামিম আর মানশুর, মানিকজোড় । তাদের গল্প এটা । কিংবা তাদের অধঃপতন অথবা উর্ধগমনে গল্প । অখ্যাত এক স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হল শামীম কে, পুরান স্কুলে রেজাল্ট খারাপ করার কারণে, যদিও সে তুখোড় একজন ক্রিকেটার । দেখা হল আর এক নির্বাসিত শৈল্পিক মানসিকতার সমাজতন্ত্রী গর্বাচেভের অনুসারী , যুদ্ধের মাঠে দুর্দান্ত নিষ্টুর যোদ্ধা , আর গোপনে একজন শিকারী বোলার । তারপরে সে অখ্যাত স্কুল একদিন বিখ্যাত হয়ে গেল দুই মানিকজোড়ের কারণে । আর নির্বাসিত দুই ভদ্রমহদয়ের প্রশংসাতে সবাই হল পঞ্চমুখ । মতামতঃ কৈশরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার মত বই এককথাতে । এ টি এম শামসুদ্দিনের এডাপ্টেশন বলে কথা । হিউমার তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ।