Jump to ratings and reviews
Rate this book

হলদে গোলাপ

Rate this book
প্রচ্ছদ- গৌতম সেনগুপ্ত


সমাজের শরীর ও শরীরের সমাজত্তত্ব নিয়ে এক দুঃসাহসিক উপন্যাস এই হলদে গোলাপ। ২০১২-১৩ সাল জুড়ে প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত রোববার-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশকালে পাঠকসমাজ আলোড়িত হয়-যা খুব কম উপন্যাসের ক্ষেত্রেই ঘটে। কাহিনি বয়ানে মানুষের লিঙ্গ পরিচয়ের সমস্যা তুলে আনতে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে খুঁড়েছেন ইতিহাস, নৃ-বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, শারীর বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব। জিনেটিকস, মিথ-পুরাণ...। এক বিশিষ্ট সমালোচক বলেছিলেন 'স্বপ্নময়ের গল্প আমাদের শেকড় খোঁজার কোদাল।" ওই উক্তিটির কথা মনে পড়বে উপন্যাসটি পড়তে পড়তে। এই উপন্যাসটি আসলে এক সংকট-সঙ্কুল মানুষের অনুভূতিগুলি চিত্রিত হয়েছে আশ্চর্য মায়াময় দক্ষতায়। কাহিনির পরতে পরতে মিশে আছে বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলি।
শুধু বাংলা সাহিত্যে কেন, সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যে এর আগে এভাবে কোনও উপন্যাস লেখা হয়নি

"হে ফ্রয়েড, ইয়ুং, পাভলভ, কেইনস, ডকিনস...তোমরা দেখে নাও-মন-পরিবেশ, হরমোন-জিন শুধু নয়, আরও এক প্যারামিটার আছে। যেটা শুক্লা জেনেছে-সেটা স্বপ্ন"।
লিঙ্গ পরিচয়ের সংকটকে কেন্দ্র করে লেখা এই অনাস্বাদিতপূর্ব মানবিক আখ্যানটি স্নাত হয়েছে ভালোবাসার অলৌকিক জলে।

592 pages, Hardcover

First published January 1, 2015

23 people are currently reading
308 people want to read

About the author

Swapnamoy Chakraborty

41 books35 followers
স্বপ্নময় চক্রবর্তীর জন্ম ২৪ আগস্ট, ১৯৫১ সালে উত্তর কলকাতায়। রসায়নে বিএসসি (সম্মান), বাংলায় এমএ, সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেছেন। লেখকজীবন শুরু করেন সত্তর দশকে। প্রথম দিকে কবিতা লিখলেও থিতু হয়েছেন গল্প ও উপন্যাসে। তাঁর লেখা গল্পের সংখ্যা প্রায় ৩৫০। প্রথম উপন্যাস ‘চতুষ্পাঠী’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকায়। পাঠক মহলে সাড়া ফেলেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ এবং কলাম কিংবা রম্যরচনাতেও সিদ্ধহস্ত। তাঁর রচিত ‘হলদে গোলাপ' উপন্যাসটি ২০১৫ সালে আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হয়। ‘অবন্তীনগর' উপন্যাসের জন্য ২০০৫ সালে বঙ্কিম পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কার, সর্বভারতীয় কথা পুরস্কার, তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার, গল্পমেলা, ভারতব্যাস পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। সাহিত্যের বাইরে তিনি গণবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
63 (50%)
4 stars
37 (29%)
3 stars
15 (12%)
2 stars
7 (5%)
1 star
2 (1%)
Displaying 1 - 30 of 30 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,652 reviews419 followers
December 21, 2023
"হলদে গোলাপ" তুমুল জনপ্রিয় বই। বিষয়বস্তু ও বইয়ের দৈর্ঘ্য বিবেচনা করলে এটা যারপরনাই বিস্ময়কর ও স্বস্তিদায়ক। স্বপ্নময় চক্রবর্তী তো "হলদে গোলাপ" এর লেখক নামেই পরিচিত। সুতরাং প্রত্যাশা  বেশি থাকবেই। সে অনুযায়ী উপন্যাসটি ভালো লাগলো না। সাধারণ পাঠকদের বোঝানোর জন্য লেখক প্রচুর তথ্যের অবতারণা করেছেন এবং অনেক স্পর্শকাতর বিষয়ে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন এটা মেনে নিয়েও বলা যায়, এতো বিস্তারিত তথ্য না দিলেও চলতো। ঢালাওভাবে Lgbtq সম্প্রদায়কে নিয়ে লিখিত বলে প্রচারিত হলেও মূলত এটি রূপান্তরকামীদের নিয়ে লেখা। লেখকের দেওয়া কিছু তথ্য বিভ্রান্তিকর। 


উপন্যাসের মূল গল্প বেশ সরলরৈখিক। স্বপ্নময়ের স্বাভাবিক কৌতুকবোধ, শ্লেষ, নিস্পৃহতা বা সমাজবোধ অনেকটাই এখানে অনুপস্থিত। অতিনাটকীয়তা প্রচুর ও কিছু ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। ঘটনার মূলস্রোতের সাথে না মিললেও উপসংহার বিয়োগাত্মক করা হয়েছে জোরপূর্বক। রূপান্তরকামী প্রতিটি চরিত্রই বইতে এমন যে তাদের নিয়ে সর্বব্যাপী নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির সুযোগ আছে। যেমন - টাকা উপার্জনের জন্য পরির পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ হওয়ার ঘটনার সাথে মূল গল্পের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা অনায়াসে পরিহার করা যেতো।

সব মিলিয়ে, "হলদে গোলাপ" আমার কাছে জরুরি, তাৎপর্যবাহী  কিন্তু ত্রুটিযুক্ত উপন্যাস হয়ে থাকবে।


 
Profile Image for Ashis Saha.
106 reviews27 followers
September 9, 2021
যৌনতাকে রগরগে না করে মানবিক করে লিখতে নিশ্চয় সাহসের চেয়েও বেশি কিছু লাগে। দক্ষতা? গবেষণা? মানবিকতা? নিবেদন? যাই লাগুক না কেন, এলজিবিটির উপর এ লেখা একই সাথে সাহসী ও মানবিক। এখানে শারীরিক অনুভূতি যেমন আছে, তেমনি আছে মানসিক টানাপোড়েন। সামাজিক দৈন্যতা যেমন আছে, আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার প্রয়াস।

লেখার বিষয় বাদ দিলেও, শুধু লেখনীর বিচারেই হৃদয়গ্রাহী এ উপন্যাস। পুরো বইয়ের এখানে-সেখানে ছড়িয়ে আছে মুগ্ধতা। একটা উদাহরণ দিচ্ছি -

ট্যাক্সি থেকে নেমে দরজা বন্ধ করার সময় যে-শব্দটা হয়, সেই শব্দটা উপভোগ করে পরি। সেই শব্দ ওর গায়ে মাখে। এই শব্দটা ওর মায়ের গায়ে মাখাতে পারেনি। এরকম আরও কত শব্দ, যা ছিল দূরের, যেমন ডিওডরেন্ট স্প্রে করার লম্বা শব্দ, যা বিজ্ঞাপনে থাকে। আগেও এই শব্দ পেয়েছে, বড় কৃপণ ছিলো সেই শব্দ, মহুর্তের মাত্র, একবার টিপেই হাত উঠিয়ে নিত, যেন বহু দিন যায়, যেন না শেষ হয় সহজে, এখন শুধু সুগন্ধ নয়, শব্দ-ও গায়ে মাখে।


পরির কথা পড়তে পড়তে কেন যেন সাতকাহনের দীপাবলির কথা মনে পড়ে বারবার। মিশে যায় পরি, দীপা আর তাদের সংগ্রাম — নিশ্চিতভাবেই ভিন্ন, আবার যেন একই।
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews305 followers
August 13, 2025
অনেক কিছু জানলাম।
বইয়ের মূল মেসেজটা ভালো লেগেছে। LGBT হোক আর যাই হোক সবাইকে মানুষ বলে, নিজের সমান আরেকটা সত্তা বলে মেনে নিতে পারলেই শান্তি। সেই শান্তি নিজের, সমাজের, সকলের।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews33 followers
August 19, 2023
সমাজে কিছু ট্যাবু থাকে। যে ট্যাবু ক্রমশই ডালপালা ছড়িয়ে বিস্তার ঘটায় ঘৃণা আর অন্ধবিশ্বাসের। ভুল ধারণা ও গোঁড়ামির। সেসব ট্যাবু ভাঙার জন্য দরকার ছিল হলদে গোলাপের। যে গোলাপ দেখতে আদতে নরম, ভঙ্গুর হলেও ভেঙে খানখান করে দিতে পারে প্রচলিত গোঁড়ামি ও ঘেন্নার বয়াম। গোলাপের নরম পাপড়িগুলোই শক্তিশালী হাওয়া হয়ে উড়িয়ে নিয়ে যায় ভুল ধারণার কালো মেঘ।

স্বপ্নময় চক্রবর্তীকে সেলাম জানাতে হয় এমন একটা বই লেখার জন্য।
Profile Image for Rumana Nasrin.
159 reviews7 followers
January 5, 2017
একেবারেই নতুন বিষয়ের উপর বই পড়া হলো একটা, আগে এই বিষয়ে পড়িনি তেমন কিছু। অনেক তথ্যবহুল বই। জেনেছি অনেক নতুন ব্যাপার। তবে বইয়ে সবকিছুর বিশদ বিবরণ আর অনেক শব্দ আমার জন্য একটু বেশী, বেশীই হয়ে গিয়েছিলো। আমি খুশি যে শেষ করতে পেরেছি বিশাল বইটা।
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
August 2, 2023
প্রকৃতি সব গোলাপকে গোলাপিবর্ণের করেনি। কিছু গোলাপ হলদে রঙেও রাঙিয়েছে। আর তার পিঠে বয়ে যাওয়া উত্তরের হাওয়া ছাড়াও আছে পৃথিবীর সবখানে বয়ে যাওয়া অসংখ্য ফিসফাস। ঠিক সেভাবেই সব মানুষের পছন্দ যে এক হবে কথা নেই! পৃথিবী জুড়ে হেট্রো হবে তার কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। মানুষ বিষমকামী যেমন হয় তেমনই কেউ কেউ হয় সমকামী। যদিও বাংলাদেশে সমকামীতাকে অবৈধ হিসেবে ধারণা করা হয়, ঠিক যেমনটা ভারতেও কর হতো। বেশ অনেক বছর আগে ২০০৯ সালে দিল্লীর 'নাজ ফাউন্ডেশন' নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মামলার প্রেক্ষিতে ভারতে ৩৭৭ ধারা থেকে 'হোমো সেক্সুয়ালিটি' শব্দটি বাদ যায়। 'হলদে গোলাপ' বইয়ে উঠে এসেছে ভারতের এলজিবিটি সমাজ। শুধু তাই-ই নয়, হিজড়া সমাজও বইয়ের বিষয়বস্তু। আদতে উপন্যাসটি চিন্তার খোড়াক জাগাবে। এলজিবিটি নিয়ে জানার এক বিস্তৃত ভান্ডার। লেখক তাদের মনোজগতে বিচরণ করেছেন খুব ধারালো ভাবে। সেইসাথে উঠে এসেছে তাদের পরিবার পরিজন সহ নানান বিষয়। আমাদের সমাজেও অনিকেতের মতো উদারচিন্তার মানুষ অনেক দেখা যায়। কিন্তু মুক্তচিন্তা করতে পারলে, অনেক সময় যখন সেই চিন্তার কিছু ফল তাদের মাঝে আসতে শুরু করে তখন অনিকেতের মতো মানুষেরা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। তাদের অবাধ চিন্তা ধারা থাকে ততক্ষণ যতক্ষণ না নিজের কাঁধে বোঝা চাপার আগপর্যন্ত। দুলালীর ছেলে মন্টুকে ঝেড়ে ফেলার মতো অনেকেই ঝেড়ে ফেলে হাতের ময়লা। সে যাই হোক, মানুষের বৈচিত্র্যতার সীমা নেই। কত বৈচিত্র্য, কত বিদগ্ধ জীবন মানুষ পার করে। এক সময় ভারতের এলজিবিটি সমাজ লড়াই করেছে এই সমাজের বিরুদ্ধে। তারা জয় হিসাবে সংবিধানের ৩৭৭ ধারায় পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মাঝে এলজিবিটি জলজ্যান্ত ঘা এর মতো। মানুষ সহজভাবে নিতে পারে না এখনো। তৈরি হয় নোংরা বাক্য। তাদের দেখা হয় ভিন্ন চোখে। মানুষের এই সহজভাবে নিতে না পারার পেছনে অবশ্য অনেক বিষয় কাজ করে। সে বিষয়গুলো টুকটাক আমরা সবাই জানি।

বাংলা সাহিত্যে এলজিবিটি বা হিজড়া সমাজ নিয়ে কাজ খুব একটা দেখা যায় না। কৌশিক মজুমদারের সূর্যতামসী ট্রিলজিতে হিজড়া সমাজকে দেখা যায়। ওদের খোল এবং খোলের গুরুমা সহ বেশকিছু দিক ফুটে উঠেছে। তবে এইদিকে 'হলদে গোলাপ' হল সেই বই, যেই বইয়ের বিষয়বস্তুই এলজিবিটি। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা। লেখক চমৎকার কাজ করেছেন এই নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কোন অবকাশ নেই। হিজড়াদের সমাজ, দৈনন্দিন জীবন, একজন নতুন হিজড়া কীভাবে হিজড়া সমাজের অংশ হয় সবই আছে। তদুপরি হিজড়া বা এলজিবিটি সমাজ নিয়ে আমাদের সাহিত্যে তেমন একটা উচ্চবাচ্য হয় না। বাইরের সাহিত্যে দেখা গেলেও অনেকে এলজিবিটিকে রোগ বলে আখ্যায়িত করতে বসে থাকেন। সেটা দেখা যায় অনেক লেখক এবং পাঠকদের মাঝেও। আসলে আমরা তাদের মনোজগতেটাকে না জেনেই একরকম হেয় করি। সেইদিক থেকে হিসেব করলে এই বই সবার জন্য নয়। কারণ আমাদের দেশের অনেকে এখনো এসবকে সাধারণ ভ���বে নিতে শেখেনি। প্রত্যেক ব্যক্তির পছন্দের স্বাধীনতা থাকা উচিৎ। কিন্তু হাত সেখানেই পড়ে। তাই এলজিবিটি নিয়ে সমস্যা থাকলে না পড়াই শ্রেয়। আর আপনি যদি জানতে চান এলজিবিটি সমাজ নিয়ে, ওদের সমস্যা নিয়ে, কেন একজন মানুষ সমকামী, উভয়কামী, ট্রান্সজেন্ডার কিংবা লেসবিয়ান হয় তারজন্য 'হলদে গোলাপ' উন্মুক্ত। লেখক মাঝে মাঝে বৈজ্ঞানিক সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে হাজির হয়েছেন, যা জানার পরিধিকে আরো বাড়িয়ে দিবে। সব শেষে 'হলদে গোলাপ' উপন্যাস হিসেবেও সুখপাঠ্য। লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী'র সহজ লেখনী বিশাল এই উপন্যাসের পাতায় ডুব দিতে সাহায্য করে অনায়াসে।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
362 reviews34 followers
December 17, 2021
জন্মের পরে মানুষকে শারীরিক কিছু চিহ্ন দিয়ে লিঙ্গ বিভাজন করা হয়ে থাকে। এরই মাঝে এক শ্রেণির মানুষদের উভয়লিঙ্গ হিসেবে ধরা হয়, এদের হিজড়ে বলা হয়। মনে করা হয় জন্মগত ত্রুটির কারনে এরা উভয়লিঙ্গ। চিরাচরিত যে ধারনা এদের সম্পর্কে আমরা জানি এটা আসলে ভুল। জেনেটিক ত্রুটির কারনে হিজড়ে হয়, এটাও ভুল।
কিনসে-র তত্ত্ব অনুযায়ী, সবার মধ্যেই অল্পবিস্তর 'গে' ভাব আছে।

১৯৯৫ সালে রেডিও একটু একটু করে মানুষের বিনোদন এর জায়গা থেকে দূরে যেতে থাকে আর এর জায়গাটা দখল করে নেয় টেলিভিশন। তবে কিন্তু রেডিও হারিয়ে যায় নি তখন, বেশকিছু সংখ্যাক মানুষ তখনও রেডিও শুনতো।আকাশবাণীর রেডিও স্টেশনের প্রোগ্রাম একজিকিউটিভ অনিকেত একজন অদ্ভুত বাতিকগ্রস্ত লোক।
নানা সমস্যা নিয়ে অনেকগুলো চিঠি সে জমিয়ে রেখে তার খেয়ালেই কিশোর কিশোরীদের নানা সমস্যা নিয়ে নতুন এক অনুষ্ঠান শুরু করেন যা "সন্ধিক্ষন" নামে প্রচার হতে থাকে। যে অনুষ্ঠানে কিশোর কিশোরীর সমস্যা চিঠিতে লিখে পাঠালে তার সমাধান দিয়ে থাকেন। এই অনুষ্ঠান শুরুর পর থেকে অনিকেতের সামনে এক নতুন জগত উন্মোচিত হয়। জানতে পারে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ গোলাপের মতই গোলাপ রং না হয়ে হলদে গোলাপ হয়ে ফুটে আছে। হলদে গোলাপও যেমন গোলাপ তারাও তেমনি সমাজেরই মানুষ।

হিজড়াদের বৃহন্নলা নাম দিলেও এরা সমাজে চোখে খুবই অবহেলা ও ঘৃনার। লেখক এই অবহেলিত মানুষদের নিয়ে লিখে ফেলেছেন "হলদে গোলাপ "।

লেখক এই উপন্যাসের শুরুটা করেছেন কিশোর কিশোরীর শারীরিক ও যৌন সমস্যার বিশ্লেষণ ও এর সমাধান নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে। তবে এই সমাধান দেওয়াটা সহজ ছিলো না। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে অনিকেত চরিত্রের মধ্যে দিয়ে লেখক এই হিজড়ে সমাজের কাছাকাছি গিয়ে তাদেরকে আলোচনা নিয়ে এসেছেন।

LGBT (এলজিবিটি) বলতে বোঝায়--লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও
ট্রান্সজেন্ডার অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী।
এই রুপান্তরকামী কিছু মানুষের গল্প, এদের চাওয়া পাওয়া, সমাজে এদের স্থান সবই উঠে এসেছে। এদের নিয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব তথ্য ও ডাক্তারদের পরামর্শ সুন্দর করে গুছিয়ে বলা হয়েছে।
LGBT নিয়ে আছে নানা তথ্য, কিছু ভুল ধারনার সহজ সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সমাধান। এদের আলাদা ধর্ম বিশ্বাস, নিজেদের সংস্কৃতি গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে নিজেদের লড়াই যার সুন্দর সঠিক বর্ণনা।

বিশাল আকারের এই উপন্যাসে লেখক এক দশক থেকে আর একটা নতুন দশকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। তথ্য সমৃদ্ধ এই বইটা অনেকের কাছে অহেতুক কিছু তথ্য ভরা বলে মনে হতে পারে তবে আমার কাছে তা কখনই মনে হয়নি বরং এই তথ্য গুলোই বইটাকে সমৃদ্ধ করেছে। লেখক এক অসাধারণ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন বইটা লিখে। সমাজের কিছু মানুষকে জানতে ও ভুল ধারনা হতে বেরিয়ে আসার জন্য বইটা অবশ্যই পড়া দরকার।
Profile Image for Mehedi Hassan.
46 reviews18 followers
September 1, 2023
কবে, সেই কোন ছেলেবেলায় শোনা এক গল্প, যেখানে এক পুরুষকে দেখেছিলাম হাট থেকে বাজারসদাই সেরে তার বউকে বলেছিল ভাত বাড়তে আর নিজে গিয়েছিল পুকুরে নাইতে। কিন্তু যেই না একটা ডুব দিল লোকটি আর অমনি ঘটে গেল এক অদ্ভুত ঘটনা। ডুব দিয়েছিল যে আর ফের ভেসে উঠল যে, দুইজনে হয়ে গেল আলাদা মানুষ। একজন ছিল পুরুষ আর অপরজন হয়ে গেল রমণী। মানুষের তো এই দুই রকমফের, তাই না?
.
এমন সময় সেই পথে বাণিজ্য শেষে নিজ নগরীতে ফিরছিলেন রূপকথার এক সওদাগর। দীঘির জলে কার ছায়া গো? এত যে বন্দর-নগরী ঘুরিলাম, ওমন রূপসী তো দেখি নাই কোথা? কে তুমি স্বপনচারিণী- তন্দ্রাহরণী? তৎক্ষণাৎ প্রেম নিবেদন সওদাগরের। আর কী আশ্চর্য, যে রমণী ক্ষণকাল আগেও ছিল পুরুষ সেই কিনা লজ্জায় রাঙা হল কুসুমের মতো? তবে কি লজ্জা নারীর শরীরগত স্বভাব? ঈষৎ কম্পিত হাত সে বাড়িয়ে দিল অচেনা প্রেমিক পুরুষের দিকে। পাড়ি জমালো নিরুদ্দেশ নগরীতে। রইল পড়ে ঘরসংসার, রইল পড়ে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত।
.
তারপর দিন গেল, মাস গেল, ঘুরে ঘুরে বছরও গেল বারোটি। সওদাগরের সোনার সংসার তখন ভরভরন্ত। সাতটি সন্তানের জননীর সুখ বুঝি আর ধরে না গো।
.
তারপর একদিন আবার ঘুরতে ঘুরতে সেই গ্রাম, সেই দীঘি। কী সুন্দর টলটলে দীঘির জল। নাইতে মন চায়। বেহারা, পালকি থামাও। এমন পদ্মদীঘিতে না নামলে প্রাণ যে জুড়োবে না। দিলাম একটা ডুব। আর কী আশ্চর্য, সওদাগরের বউ কোথায় গেল? রমণী পোশাক পরিহিত এ যে খাড়া মদ্দা ব্যাটাচ্ছেলে।
.
কোথায় গেল, কোথায় গেল সেই অতীব সুন্দরী রমণী? “বল ব্যাটা, সওদাগরের বউ কোথায় গেল? কোথায় হাপিস করেছিস, শীগগির বল?” বেহারারা যতই তেড়েফুঁড়ে আসে, জোয়ান লোকটা ততই নাঁকি নাঁকি সুরে বলতে থাকে, “আরে আমিই তো সেই নারী, চিনতে পারছোনি? আমিই তো সে।” কেঁদে কেঁদে ছুটে যায় ছেলেমেয়ের কাছে, “ওরে, আমি যে তোদের মা। দশমাস তোদের গর্ভে ধারণ করেছি রে।” কেউ বোঝে না তার কথা, কেউ বোঝে না তার ব্যথা। এখানে ওখানে কেবল কেঁদে কেঁদে ফেরে নারী হয়ে যাওয়া পুরুষটি।
.
মহাভারতে আছে, রাজা ভঙ্গাসনের কথা। একশ পুত্রের জনক ছিলেন তিনি। অথচ যেই না একবার সুযোগ পেলেন নারী হওয়ার অমনি তিনি বলে বসলেন, আর পুরুষ হতে চান না তিনি। কেন? কারণ অনুসন্ধানে জানা গেল, রমণের সময় পুরুষের চাইতে বেশি সুখ বেশি লাভ করে নারীরা। জীবনে রমণ সুখই তো আসল সুখ।
.
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এইখানে থাকলে হয়তো বলে বসতেন, “শরীর, শরীর, তোমার মন নাই, ভঙ্গাসন?” কিন্তু সত্যিই কি কেবল শরীরী সুখের কারণেই যুগে যুগে অসংখ্য পুরুষ চেয়েছে নারী হতে? শরীরই কি সব? মন বলে কি কিছুই নেই? কী কারণে নারী দেহ কামনা করে কিছু পুরুষ?
.
যে দের্দাণ্ড প্রতাপে পুরুষ শাসন করে সমগ্র বিশ্ব তাতে একজন নারীর আগ্রহ হতেই পারে ওইরকম একটা পুরুষ শরীরের। নিজেও যদি ওমন একটা পুরুষ শরীর পেত, তবে অদল বদল করে নিতে চাইত বেশ। কিন্তু একজন পুরুষ কেন চাইবে একজন নারীর ক্ষীণ কোমল দুর্বল শরীর? এ কি কেবলই সৌন্দর্যের তাড়ানায়? নাকি রাজা ভঙ্গাসনের মতো সে আরও তীব্রভাবে পেতে চায় শরীরী সুখ? এই প্রশ্নের আদৌ বুঝি কোনো উত্তর নেই।
.
তবু যুগে যুগে পুরুষ চেয়েছে রমণী হতে। মনে মননে আর শরীরে। অনেক পুরুষ আছে যাদের কথাবার্তা মেয়েলি ধরনের। তাদের মনের মধ্যে কী খেলা চলে? অনেক নারীও চায় পুরুষ হতে। তারা কী ভাবে?
.
এমন ধারার কতকগুলো প্রশ্ন নিয়ে শুরু হয় স্বপ্নময় চক্রবর্তীর “হলদে গোলাপ” নামক বৃহৎ কলেবরের উপন্যাসটি। সময়কাল বিবেচনা করলে সেটা ১৯৯৫ সালের ঘটনা। বিশ্বায়নের পদধ্বনি তখন শোনা যাচ্ছে ঘরের আশেপাশে। কিন্তু লোকে এখনও মন দিয়ে রেডিও শোনে, রেডিওর শ্রোতা অসংখ্য। সেই রেডিও অফিসে চাকরি ���রে আমাদের উপন্যাসের নায়ক, অনিকেত। বিজ্ঞান শাখায় কাজ করে বলে মাঝে মাঝেই তার কাছে আসে অদ্ভুত অদ্ভুত সব চিঠি। বেশিরভাগই কিশোর কিশোরীদের শরীর বিষয়ক প্রশ্ন। কেউ হয়তো স্বপ্নদোষকে নিজের স্বপ্নেরই দোষ মনে করে ব্যথিত, তো কারো আছে ঋতুস্রাব নিয়ে অমূলক ভীতি। অনিকেত তাই একটি প্রোগ্রাম শুরু করে যেখানে ওই সব ভুল ধ্যান-ধারণা ভাঙানো হবে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে।
.
“সন্ধিক্ষণ” নামের সেই অনুষ���ঠানটি প্রচারের পরপরই বেশ আলোচিত-সমালোচিত হতে থাকে। “দেশটা রসাতলে গেল” বলে যেমন ছি ছিক্কার করে কেউ, তেমনি “নাহ্‌, ভালো কথাই তো বলছে অনুষ্ঠানটিতে” এমনও বলাবলি করে লোকে। ধীরে ধীরে জমতে থাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন। অদ্ভুত সব প্রশ্নের ভিড়ে জমতে থাকে মেয়েলি পুরুষ, হিজড়া, রূপান্তরকামী আর সমকামীদের নিয়ে আলোচনা। সমাজে তাদের অবস্থান কোথায় তাই নিয়ে শুরু হয় কথা। এরই অনুষঙ্গ ধরে উপন্যাসের পাতায় একে এক হাজির হতে থাকে মঞ্জু, পরিমল কিংবা পরি, সোমনাথ, দুললা কিংবা দুলালী, চাত্তারা, হাসি, বিকাশ আর মন্টুর মতো বেশ কিছু বর্ণিল চরিত্র আর তাদের জীবন। একসময় অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায় কিন্তু অনিকেতের অন্বেষণ থামে না। আর সেই অন্বেষণের হাত ধরে পাঠকেরা প্রবেশ করতে থাকে মানব সমাজের অতি পরিচিত কিন্তু একইসাথে অনালোচিত এক এলাকায়। তার নাম যৌনতা।
.
অনেক অনেক দিন পর বিশাল সাইজের কোনো উপন্যাস টানা পড়ে শেষ করলাম। শুরু করার সময়েও ভাবিনি এই উপন্যাস এমন করে পড়ে শেষ করতে পারব। ইদানীং এমনটা হচ্ছে, অনেক বই-ই ধরছি, কিন্তু শেষ আর করতে পারছি না। বয়স সম্ভবত একটা ফ্যাক্ট। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, “হলদে গোলাপ” এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এইরকম বিপুল আকারের একটা বই শেষ করতে একদমই বেগ পেতে হয়নি আমায়। লেখকের স্বাদু গদ্যের জোরে তরতর করে পড়ে ফেলা গেছে।
.
সাধারণত বড় আকারের উপন্যাসগুলোয় অসংখ্য চরিত্র থাকে। “হলদে গোলাপ” কিন্তু তেমনটা দেখা যায়নি। অনেকেই চরিত্রই হয়তো এসেছে গল্পের ধারাবাহিকতায় কিন্তু তেমন কোনো ছাপ রাখতে পারেনি পাঠকের মনে। পড়তে পড়তে অনেক সময় এও মনে হচ্ছিল যে, চরিত্রগুলো হয়তো  আসছে লেখকের কোনো একটা বিশেষ বয়ানকে ব্যাখ্যা করবার জন্য। আসছে আর এসে নিজের জানা কাহিনীটুকু কেবল বলে বলে চলে যাচ্ছে। 
.
উপন্যাসটি ২০১২-১৩ সাল জুড়ে প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত ‘রোববার’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে লিখিত বড় কোনো উপন্যাসের ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিকের মনে সম্ভবত  একটা দ্বিধা কাজ করে। দেখা গেল, প্রথম কিস্তিতে যার কথা বলে হয়েছিল, ফের তাঁর কথা বলতে গিয়ে লেখক হয়তো ভাবেন, এর কথা হয়তো পাঠকের আর মনে নেই। তাকে খানিকটা মনে করিয়ে দিই। কিন্তু বই আকারে উপন্যাসটা যখন বেরোয় তখন কিন্তু এই ব্যাপারটাই একটু দৃষ্টিকটু হয়ে পড়ে। কেননা পাঠক তখন পড়ার সময় ভাবে, আরে একে এত বারবার পরিচয় করিয়ে দেয়ার কী আছে? শ দুয়েক পৃষ্ঠা আগেই তো এই লোককে দেখেছিলাম।
.
ধারাবাহিকভাবে লিখিত উপন্যাসের আরও একটি বড় সমস্যা হল পুনরাবৃত্তি। এই দোষে দুষ্ট বিমল মিত্রের প্রায় সকল উপন্যাস, সবচেয়ে বেশি মনে হয় “কড়ি দিয়ে কিনলাম” (একই গল্প তিনবারও করেছেন ভদ্রলোক)। “হলদে গোলাপ” বুঝি সেই গোত্রীয় না হলেও কিছুটা মিলে যায়। যেমন, দুলালের হিজড়া জীবনের ঘটনাগুলো আমরা ইতোমধ্যে একবার দুলালের মুখ থেকে শুনেছি। কিন্তু অনিকেত যখন ভাবে এই নিয়ে উপন্যাস লেখা যায়, তখন ফের দুলাল-বৃত্তান্ত পাঠকের সামনে উপস্থাপন করলে তখন সেটাকে খানিকটা পুনরাবৃত্তি বলেই মনে হয়। তবে এই পুনরাবৃত্তি করতে গিয়েই পাঠক বেশ লাভবানই হয়েছে। আরও গভীরভাবে জানতে পেরেছে হিজড়াদের সমাজ নিয়ে।
.
মূলত লেখকের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফসল হল এই উপন্যাস। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে পাঠক বুঝতে পারবেন, এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে বিস্তর ঘাটাঘাটি এবং খাটাখাটুনির ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে লেখককে। পুরাণ-ইতিহাস-বিজ্ঞান-নৃতত্ত্ব-জীনতত্ত্ব ছেনে ঘেটে এবং অভিজ্ঞতার মিশেল দিয়ে লেখা এক উপন্যাসের নাম “হলদে গোলাপ”।
.
বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত এসেছে উপন্যাসে, তবে তা কখনোই বিজ্ঞানের কেজো কথাবার্তা মনে হয় নি, মনে হয়েছে উপন্যাসের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যেই লিখিত হয়েছে। লেখকের ভাষাভঙ্গি সহজ সরল ধরনের। ছোট ছোট বাক্যে লেখক তাঁর গল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এই ভঙ্গিটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। অনেক আনকোরা নতুন শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন লেখক, যেমন পারিক, ছিন্নি, ছেমো, ছল্লা, বাট্টুলি, যদিও এইসব শব্দ অশ্লীল তথাকথিত সামাজিক ধ্যান ধারনায়। তবু শব্দের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি নতুন কোনো জগতকে।
.
তবে বেশ কয়েকটি বিষয় খারাপ লেগেছে।
.
প্রথমত হল, লেখক যেন উপন্যাস লেখার সময় ভেবেছিলেন, কোনো স্বাভাবিক যৌনতাসম্পন্ন মানুষকে তিনি দেখাবেন না। (এইখানে অবশ্য একটা কিন্তু থেকে যায়। কারণ উপন্যাসটা পাঠের পর যে কোনো পাঠকই ভাবতে বাধ্য হবেন, কোনটাকে আমরা স্বাভাবিক বলছি? সমাজ যাকে স্বাভাবিক বলছে শুধু কি সেটাই স্বাভাবিক? নাকি ব্যক্তি মানুষের কাছে যা স্বাভাবিক সেটাই ঠিক? একেক সমাজে তো একেকটা জিনিস স্বাভাবিক? আমার কাছে যা স্বাভাবিক অন্যের কাছে তাই হয়তো অস্বাভাবিক। গোলাপকে কেন শুধু লাল কিংবা গোলাপীই হতে হবে? হলদে গোলাপ কি নেই? যৌনতা কি শুধু ছেলে মেয়েতেই হয়? অন্য ধরণের হতে পারে না? হ্যাঁ, যৌনতার একটা উদ্দেশ্য যদি হয় প্রজাতি রক্ষা তবে হয়তো তাই, কিন্তু মানুষের যৌনতা তো কেবল প্রজাতি রক্ষার সাথে সম্পর্কিত নয়, তার চাইতেও বেশি কিছু)। অনিকেতের আশেপাশে যারা থাকে, তারা সবাই কোনো না কোনো ভাবে যেন সমকামী কিংবা হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষ হয়ে যাচ্ছিল। এমন কি কখনো হয় একজন মানুষের আশেপাশের সবাই এমন ধারার হবে? মনে হচ্ছিল লেখকের বিশেষ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই এদের আগমন উপন্যাসের পাতায়।
.
আবার দুলালের ছেলে মন্টুকে যখন লেখক খানিকটা নিজের কলমের জোরেই সমকামী পর্যায়ভুক্ত করলেন তখন বিষয়টাকে আমার কাছে বেশ খারাপই লাগল। অথচ তিনি নিজেই কিন্তু বারবার তথ্য প্রমাণ দিয়ে পাঠককে বোঝাচ্ছিলেন, “দেখুন, সমকামিতা কোনো জীনগত ব্যাপার নয়। আইডেন্টিক্যাল টুইন হওয়ার পরেও এক ভাই সমকামী হলে অন্য ভাই হতে পারে বিষমকামী।” তাহলে মন্টুকে কেন তিনি এভাবে উপস্থাপন করলেন? উত্তর জানা নেই।
.
আর তৃতীয় যে ব্যাপারটা খারাপ লেগেছে তা হল, লেখক বুঝি সমকামী মানুষদের প্রেম নিয়ে খুব একটা উচ্চ ধারণা পোষণ করেন না। বিষয়টাকে তিনি মনে হয় কেবলই শরীরী সুখের ব্যাপার হিসেবেই দেখেন। যেমন সমকামিদের মধ্যে যারা টপ-গে আছে, তাদেরকে তিনি উপস্থাপন করেছেন বাই সেক্সুয়াল হিসেবে। যেন এরা প্রেমই করে দুইটারই স্বাদ নেয়ার জন্য। অথচ বাস্তবে কিন্তু অনেক সমকামী প্রেমিক আছে যারা খুব লয়াল। তাহলে এইভাবে দেখানোর কী মানে?
.
যাই হোক, বইটা পড়া শেষে আমি অনুধাবন করলাম, একটা দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তৈরি হয়েছে আমার মধ্যে। আশা করছি, যারা এই বই পড়বে তাদের সবারই এমনটা হবে। আর যে কোনো মহৎ উপন্যাসের বৈশিষ্ট্যই তো এই যে, তা পাঠের আগের মানুষ আর পরের মানুষ আলাদা হয়ে যাবে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে “হলদে গোলাপ” অতি অবশ্যই বাংলা সাহিত্যে মহৎ উপন্যাসের তালিকাতে স্থান করে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।
.
সবাইকে ধন্যবাদ
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
May 31, 2018
১.
এই পৃথিবীর দু'টো মানুষ কখনও এক নয়। তাদের মাঝে বাহ্যিক পার্থক্য যেমন আছে, তেমন তারা মানসিক ভাবেও আলাদা। এমনকি দু'টো মানুষের মাঝে বাহ্যিক মিল থাকলেও মননে, রুচিতে, চিন্তায় পার্থক্য থাকবেই। শরীর, মনের মতো পার্থক্য থাকে মানুষের যৌনতায়।

২.
সময়টা গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি। সে সময়ে টেলিভিশন কেবল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছতে তখনও অনেক বাকি। মানুষের বিনোদন কেবল নয়, ভরসার নামও রেডিও। আকাশ���াণীতে কাজ করে অনিকেত। অনুষ্ঠান বরাবরে তার কাছে বিভিন্ন চিঠি আসে। সেসবের মাঝ থেকে কৌতূহল উদ্দীপক অনেক চিঠি অনিকেত জমিয়ে রাখে। সেসব চিঠিতে কেউ পাঠায় অদ্ভুত সব কবিতা, আবার অনেক কিশোর লিখে পাঠায় তাদের বয়ঃসন্ধি সময়ের অজ্ঞানতা, জটিলতা।

যখনকার কথা বলা হচ্ছে, তখন রেডিও, সাহিত্যকে খুব পূত পবিত্র মনে করা হতো। তাই অনিকেত চাইলেও এমন একটা রেডিও অনুষ্ঠান করা সহজ ছিল না যেখানে অনিকেত এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। কিন্তু পরিবর্তনের হাওয়া হয়ত বইতে শুরু করেছিল তখনই। একটা অনুষ্ঠান করতে সমর্থ হয়েছিল অনিকেত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাহিত্যিক, সমাজ বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত 'টীম' উত্তর দিয়েছিল অনেক প্রশ্নের। আর এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই অনিকেতের সামনে একটি নতুন বিষয় আসে, ঠিক নতুন না, তবে কাজের জন্য নতুন। সমকামিতা।

৩.
অনিকেতের বাড়ির কাজের লোক 'দুলালের মা'। সেই দুলাল প্রথমে সব্জি এবং পরে মনোহরি পণ্য নিয়ে সাইকেলে ঘুরে বিক্রি করতো। দুলালের কথাবার্তা, চলন ছিল মেয়েলী। দুলাল একদিন হারিয়ে গেলো। অনেক বছর পর দুলালকে আহত অবস্থায় যখন পথের ধারে পাওয়া যায়, তখন তার ঊরুসন্ধিতে তার পুরুষত্বের চিহ্নটি ছিল না।

প্রশ্ন হলো, 'লিঙ্গ-চিহ্ন'ই কি একজন মানুষকে 'পুরুষ' কিংবা 'নারী' হিসেবে বাঁচতে বলে? সামাজিকভাবে কিংবা শারীরবিদ্যার ভাষায় হয়ত তা-ই। যার লিঙ্গ আছে, সে পুরুষ, নারীর থাকবে যোনি। কিন্তু, প্রকৃতির খেয়ালে এমন কিছু মানুষ এই মাটিতে বসবাস করে, তাদের বাহ্যিক শরীর থেকে তাদের মন আলাদা। পুরুষের চিহ্নধারী একজন হতে পারেন মনে মনে নারী। কিংবা কোন শরীরে নারীত্বের চিহ্ন নিয়ে মনে মনে কেউ হতে পারে পুরুষ।

অর্থাৎ কেবল শরীরের গঠন নয়, মনই বলে সে নারী, না পুরুষ। দুলালের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। তার মন তাকে বলেছিল সে নারী। দুলাল তাই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কেন?

আমাদের সমাজে মানুষকে বিচার করা হয় বাহ্যিকতা দিয়ে। সেখানে মনের কোন দাম নেই। অন্তর্দহন কেউ দেখে না। সমাজ ঠিক করে দিয়েছে পুরুষ হবে মারদাঙ্গা, নারী হবে ব্রীড়াবতী। তাই কোন পুরুষের মাঝে কমনীয়তা থাকলে তাকে 'লেডিস', 'মাইগ্যা' বলে পরিচিতি দেওয়া হয়। আর যদি মন থেকে সে হয় পুরুষের প্রতি আকর্ষিত, কিংবা তার মাঝে পৌরুষের চিহ্ন কম থাকে তবে তাকে 'হিজড়া' উপাধি দেওয়া হবে।

৪.
হিজড়া শব্দে আজকাল অনেকের আপত্তি আছে। 'তৃতীয় লিঙ্গ' বলে তাদের পরিচয় করাতে চান। কিন্তু 'হিজড়া', 'বেশ্যা' আসলে কোন খারাপ শব্দ নয়, এগুলো গালিও নয়। এসব শব্দকে গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কারা হিজড়া?

মানুষের এই সমাজ বড় অদ্ভুত। এখানে বহু ধরনের মানুষ বাস করে। যাদের অনেকের সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। হিজড়া সম্প্রদায় এমনই। আমরা তাদের সম্পর্কে জানি না, না জেনে ভয় পাই। সমাজ থেকে আপাত বিচ্ছিন্ন এই মানুষেরাও এই ভয়কে পুঁজি করেই নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থাটা করে নেন।

কেউ হিজড়া কেন হয়? অনেক রকম মত প্রচলিত আছে। কোথাও বলা হয় ঋতুমতী নারীর সঙ্গে সহবাসে যদি সে গর্ভবতী হয় তাহলে 'হিজড়া' সন্তান হয়। কিন্তু আসলে তারা কেমন হয়? তাদের লিঙ্গ চিহ্ন কি? সমকামিরাও কি হিজড়া?

৫.
এই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। অনিকেতকে দিয়ে গল্প শুরু করে তিনি আমাদের নিয়ে গেছেন হিজড়াদের বাসস্থান 'খোল'-এ। সেখানে তারা কীভাবে বাস করে, তাদের সমাজের নিয়মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

অনিকেতের পরিচয় হয়েছিল কিছু সমকামীর সাথে, যারা একটি পত্রিকা প্রকাশ করে। সেখান থেকেই অনিকেত জেনেছিল, সমকামী হলেই সে 'লেডিস' হয় না। একজন সমকামী হতে পারে একজন সমর্থ পুরুষের মত। সমকামের বিষয়টা শরীরে থাকে না, থাকে মনে। তারাও সাধারণ মানুষের মতো চার হাত পায়ের মানুষ। পার্থক্য কেবল তাদের যৌন রুচিতে। এখানেই কেউ তাকে বলেছিল, "গোলাপ কেবল গোলাপি হবে এমন তো নয়। গোলাপ তো হলুদও হয়"।

অর্থাৎ মানুষ সবাই এক হবে না, কিছু মানুষ আলাদা হয়।
মানুষের মনে রয়েছে অনেক গলি ঘুঁজি। সেসবে ভ্রমণ করার মতো জটিল কাজটাই লেখক করেছেন এই উপন্যাসে। একজন পুরুষ কেন একজন পুরুষের প্রতি আকর্ষিত হবে? এটা কি কেবল মানসিক?

৬.
না, কিছু শারীরিক বিষয়ও। ক্রোমোজোমের স্বাভাবিক বিন্যাসের ব্যত্যয়ের জন্য একজন পুরুষের মাঝে পৌরুষ কম হয়ে তার ভেতরে নারীত্ব জেগে উঠতে পারে। নারীর ক্ষেত্রে হতে পারে একই ঘটনা। এই পৃথিবী তার বুকে অনেক রহস্য নিয়ে বসে আছে। সেখানে রহস্য মানুষের শরীরেও। তাই কোন পুরুষের জন্ম হয় অপরিণত লিঙ্গ নিয়ে। হরমোনের স্বাভাবিক প্রবাহের ব্যত্যয়ের কারনে সে নিজেকে নারী হিসেবে ভাবতে থাকে। আকর্ষিত হয় পুরুষের প্রতি। সমাজ যখন তাকে মেনে নেয় না, সে চলে যায় সমাজ থেকে দূরে।

আমরা এই উপন্যাসে দেখতে পাই শরীর ও মনের বৈচিত্র্য। যে বৈচিত্র্য, প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি, অথচ সে কারনেই মানুষগুলো সমাজচ্যুত। নিজেরা দোষ না করেও তারা দোষী। কখনও শরীর তাদের ধাওয়া করে, কখনও মন।

ছেলেবেলার বন্ধু মঞ্জুকে স্নান ঘরে ভোগ করতে চেয়েছিল অনিকেত। সেই মঞ্জুর তিরস্কার বয়ে বেড়িয়েছিল অনিকেত, বহুদিন। অনিকেতের স্ত্রী শুক্লা কোনদিন মা হতে পারেনি, কেননা ডিম্বাশয় বাদ দিতে হয়েছিল তার। পরবর্তীতে বিছানায় পুতুল হয়ে পড়ে থাকতো শুক্লা।

বহুদিন পর মঞ্জুর সাথে দেখা হয়ে অনিকেত জেনেছিল, মঞ্জুও বিছানায় কাঠ হয়ে পড়ে থাকতো। ছেলেবেলায় বহুবার যৌন হয়রানির শিকার হয়ে মঞ্জু এমন হয়ে গিয়েছিল। তবু সন্তান ধরতে পেরেছে সে। কিন্তু, তার ছেলে পরিমল সমকামী।

৭.
পরিমল নিজেকে নারী ভাবে। নারী হিসেবেই নিজেকে সে একটু একটু করে গড়ে তুলেছে। নিজের নাম রেখেছে সে পরি।
মঞ্জুর ছেলে পরিকে দিয়ে নতুন সময়ের শুরু। '৯৫ থেকে অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছি আমরা অনিকেতের সাথে। পৃথিবী বদলে যাচ্ছিলো খুব দ্রুত। সেই সঙ্গে বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান আর মূল্যবোধের পরিবর্তে আমরা বুঝতে শুরু করেছি যে সমকামীতা প্রকৃতির বৈচিত্র্যের একটা অংশ। ইন্ডিয়ান পেনাল কোড যাকে 'ক্রিমিনাল অফেন্স' বলেছিল, পশুমেহনের সঙ্গে তুলনা করেছিল, আসলে তা ভুল। এমনকি সমকামী মানুষেরা মানসিক ভারসাম্যহীন কিংবা বিকৃত যৌনতার অধিকারী, সে ধারনাও ভুল।

লেখক আমাদের একটি ভ্রমনে নিয়ে বেড়িয়েছিলেন, যে ভ্রমণের গাইড অনিকেত। আকাশবাণীতে বহুদিন চাকরি করা স্বপ্নময় চক্রবর্তী আমাদের অনিকেতের মাধ্যমে নিয়ে গেছেন একটা সময়ে যেখানে মানুষ কিছু সংস্কার, কিছু অন্ধকার মনের মধ্যে নিয়ে বেঁচে ছিল। যেখানে আপাত স্বাভাবিক মানুষদের ভিড়ে অন্যরা লাঞ্ছনার স্বীকার হতো। অনেক রকমের মানুষই আছে। লেখক তাদের মাঝ থেকে এক ধরনের মানুষকে বেছে নিয়েছেন।

অথচ এই উপন্যাস কেবল সমকামী কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে নয়। তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে ইতিহাস, উপকথা, পুরাণ, রূপকথা, বিজ্ঞান। এই উপন্যাস যেমন দুলাল কিংবা পরির কথা বলে, তেমনি এই উপন্যাস অনিকেত, শুক্লা, মঞ্জুর কথাও বলে। নব্বইয়ের দশক থেকে ২০১০/১১-র বদলে যাওয়া কলকাতার কথাও বলে।

কিন্তু এরই মাঝে, স্বপ্নময় চক্রবর্তী মূল স্রোতে রেখেছেন দুলাল, পরি, অলোকদেড় মতো সমকামী, রুপান্তরকামী মানুষদের। স্রেফ গপ্পো নয়, লেখক বারবার তাদের মনের কথা তুলে আনতে চেয়েছেন। আমাদের বার বার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন এরা আসলে আমাদেরই মতো মানুষ। সুখ দুঃখ, প্রেম ভালোবাসা, আশা আকাঙ্ক্ষা, ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়ে বেঁচে থাকা জীবন।

ছয়শত পৃষ্ঠার এই বিশাল বইকে কয়েকটা কথায় ব্যখ্যা করে বোঝানো সম্ভব না। তবে এটুকু বলতে পারি, অনেক ভুল ধারনা ভেঙে দিতে সক্ষম এই বই। 'হলদে গোলাপ' পড়তে পড়তে কখনও শিউরে উঠতে হবে, কখনও অবাক হতে হবে, কখনও মমরে গিয়ে বিঁধবে কিছু কথা। এমন অসাধারণ একটা বইয়ের জন্য লেখককে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।
Profile Image for Swajon .
134 reviews76 followers
March 28, 2018
গোলাপ কেবল লাল নয়। গোলাপ হলদেও হয় এব��� সেটাও গোলাপ, প্রস্ফুটিত এবং নান্দনিক। প্রকৃতিতে বৈচিত্র আছে, তবে শুধু মানব সমাজেই আছে আইন কানুন, নিজস্ব বিচারব্যবস্থা। তাই গোলাপের রঙ হলদে হলেও পুষ্পসমাজে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য সংবিধানের কোন আইনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট করতে হয় না। সইতে হয় না অপরাপর গোলাপদের চোখ রাঙানি। পরাগায়ন তাদের স্বাভাবিক নিয়মেই হয়।
মানবজমাজে যৌনতার রুচিতে, নিজস্ব বেশভূষায়, সঙ্গী নির্বাচনে যারা আলাদা, টিকে থাকতে হলে তাদের শুধু নিজস্ব গণ্ডীতে থাকলেই চলে না, অস্তিত্বের স্বপক্ষে তৈরি করতে হয় একের পর এক জোরালো সমর্থন। পাশাপাশি আর সব মানুষের মতো নিজস্ব পরিবার, মায়াময় এই মানবজন্ম আর সেসবের কতোই না জটিল রসায়ন ঘটে চলে তাদেরও।
পৃথিবী তার বহুমাত্রিক, বহু রঙের গোলাপদের নিয়ে ভালো থাকুক।

" দ্বিঘাত শরীরে অনেক মায়ার বাস
বাচ্চা নাচাও নেচে ওঠে একতারা
দিকে দিকে শুধু হলুদ সর্বনাশ
বেঁচে থাকা মানে মায়াময় নাড়াচাড়া
আকাশ বোঝে না কতটা জ্বালায় জল
বাষ্প হয়েছে দুনিয়াদারের চোখে
অভিশাপ মুছে যন্ত্রণা চঞ্চল। "

- সৌগত পাল
Profile Image for Rifat Shohan.
34 reviews17 followers
July 7, 2023
"গোলাপের রং তো আমরা গোলাপি-ই বুঝি। পিংক। কিন্তু গোলাপ যদি সাদা কিংবা হলুদ হয়, তবে কি সেটা গোলাপ নয়? আমরাও পুরোপুরি মানুষ। মানুষের সমস্ত ধর্ম আমাদের মধ্যে আছে। আমাদের মধ্যে শিল্পীসত্তা আছে, পরের জন্য দুঃখবোধ আছে, সমাজ সচেতনতা আছে, আবার হিংসা-পরশ্রীকাতরতাও আছে। শুধু ব্যক্তিগত যৌনতার ক্ষেত্রে আমরা আলাদা।"
38 reviews12 followers
April 12, 2020
"সংবিধিবদ্ধ উদ্ধুদ্ধকরণঃ শারীরিক যন্ত্রণা প্রশমনে পাঠাভ্যাস।"

আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত উপন্যাস স্বপ্নময় চক্রবর্তীর "হলদে গোলাপ"। বিষয়বস্তুর নির্বাচন বিবেচনায়ও উপন্যাস হিসেবে বিখ্যাত। প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠা বইটি শারিরীক অক্ষমতার মধ্যেই পড়ে ফেললাম। কিন্তু পড়ে আমার মনে হয়েছে কিছু কেস স্টাডির সমাহার।ডকুমেন্টারি। বৈচিত্র্যময় যৌন জীবনের আখ্যান,ব্যাখ্যান ও বিশ্লেলেষণ।উপন্যাসের সাথে সোমনাথ যে পরে মানবী হয়েছেন, সুধীর চক্রবর্তী এমন বাস্তব চরিত্রের সংযোজন লেখাটিকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা।

সৃষ্টি করেছেন কিছু মানবীয় চরিত্র। দোষেগুণের সমাহার। অসাম্প্রদায়িক মনোভাব।

শুরু কৌশোরকালীন সমস্যা নিয়ে রেডিও প্রোগ্রাম দিয়ে।একে একে উন্মোচন করেছেন মানুষের যৌন জীবনের অনেক না বলা কথার ইতিহাস।

গোলাপ শুধু গোলাপী রঙের নয়, প্রকৃতিতেই রয়েছে হরেকরকম। মানুষের যৌন জীবনের বৈশিষ্ট্যও শুধু একরকম নয়।

মুরগী বাহনে বহুচেরা দেবী ছিল আরেক অজানা তথ্য। পিডোফিলকে না বলা নিয়ে এ্যাডভোকেসীও আছে।

বইটি পড়তে পড়তে এক ঘোরের মধ্য দিয়ে গেলাম।হিজড়া , সমকামী , এস আর এস, ছিন্নি। সাথে অবশেষে যুক্ত হয়েছে বৈষ্ণব সমাজের ধারা। যৌনাচার—যৌন আচার ---- যৌন অনাচার শব্দ নিয়ে ভাবতে শেখায়।

বাংলাদেশে এসব নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। খড়গের তলে কে মাথা দিবে?
Profile Image for Azahar Hossain.
55 reviews9 followers
August 31, 2021
রিভিউ
হলদে গোলাপ - স্বপ্নময় চক্রবর্তী
প্রকাশনী - দে'জ পাবলিকশন
দাম - ৫৫০ টাকা।
পৃষ্ঠা - ৫৯২

অসাধারণ একটি উপন্যাস শেষ করলাম আজ।
কাহিনী - প্রায় ছ'শো পৃষ্ঠা ব্যাপী এই উপন্যাসের শুরু রেডিও অফিস থেকে। সেটা ১৯৯৫ সাল। অনিকেত, যার দৃষ্টিকোন দিয়ে গল্পের জাল ছড়িয়েছে পাতার পর পাতা জুড়ে, রেডিও স্টেশনের প্রোগ্রাম একজিকিউটিভ। কিশোর, কিশোরীদে সমস্যা নিয়ে "সন্ধিক্ষন" বলে একটা প্রোগ্রাম চালু করেন, যা অনিকেতের কাছে এক নতুন জগৎ উম্মোচিত হয়।

উপন্যাস এগোনোর সাথে সাথে আমাদের সাথে পরিচয় হয় দুলাল ( পরে লিঙ্গ পরিচয় বদলে ফেলে হয়ে যায় 'দুলালী') কিংবা পরিমল (পরে যে 'পরি' হয়ে যায়)। এদের নিয়েই চলতে থাকে "হলদে গোলাপ "।

হিজড়া শব্দে আজকাল অনেকের আপত্তি আছে। 'তৃতীয় লিঙ্গ' বলে তাদের পরিচয় করাতে চান। কিন্তু 'হিজড়া', 'বেশ্যা' আসলে কোন খারাপ শব্দ নয়, এগুলো গালিও নয়। এসব শব্দকে গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কারা হিজড়া? মানুষের এই সমাজ বড় অদ্ভুত। এখানে বহু ধরনের মানুষ বাস করে। যাদের অনেকের সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। হিজড়া সম্প্রদায় এমনই। আমরা তাদের সম্পর্কে জানি না, না জেনে ভয় পাই। সমাজ থেকে আপাত বিচ্ছিন্ন এই মানুষেরাও এই ভয়কে পুঁজি করেই নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থাটা করে নেন। কেউ হিজড়া কেন হয়? অনেক রকম মত প্রচলিত আছে। কোথাও বলা হয় ঋতুমতী নারীর সঙ্গে সহবাসে যদি সে গর্ভবতী হয় তাহলে 'হিজড়া' সন্তান হয়। কিন্তু আসলে তারা কেমন হয়? তাদের লিঙ্গ চিহ্ন কি? সমকামিরাও কি হিজড়া? এই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। অনিকেতকে দিয়ে গল্প শুরু করে তিনি আমাদের নিয়ে গেছেন হিজড়াদের বাসস্থান 'খোল'-এ। সেখানে তারা কীভাবে বাস করে, তাদের সমাজের নিয়মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
আকাশবাণীতে বহুদিন চাকরি করা স্বপ্নময় চক্রবর্তী আমাদের অনিকেতের মাধ্যমে নিয়ে গেছেন একটা সময়ে যেখানে মানুষ কিছু সংস্কার, কিছু অন্ধকার মনের মধ্যে নিয়ে বেঁচে ছিল। যেখানে আপাত স্বাভাবিক মানুষদের ভিড়ে অন্যরা লাঞ্ছনার স্বীকার হতো। অনেক রকমের মানুষই আছে। লেখক তাদের মাঝ থেকে এক ধরনের মানুষকে বেছে নিয়েছেন। অথচ এই উপন্যাস কেবল সমকামী কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে নয়। তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে ইতিহাস, উপকথা, পুরাণ, ইসলাম, হজরত আলী, রূপকথা, বিজ্ঞান। এই উপন্যাস যেমন দুলাল কিংবা পরির কথা বলে, তেমনি এই উপন্যাস অনিকেত, শুক্লা, মঞ্জুর কথাও বলে। নব্বইয়ের দশক থেকে ২০১০/১১-র বদলে যাওয়া কলকাতার কথাও বলে। কিন্তু এরই মাঝে, স্বপ্নময় চক্রবর্তী মূল স্রোতে রেখেছেন দুলাল, পরি, অলোকদেড় মতো সমকামী, রুপান্তরকামী মানুষদের। স্রেফ গপ্পো নয়, লেখক বারবার তাদের মনের কথা তুলে আনতে চেয়েছেন। আমাদের বার বার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন এরা আসলে আমাদেরই মতো মানুষ। সুখ দুঃখ, প্রেম ভালোবাসা, আশা আকাঙ্ক্ষা, ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়ে বেঁচে থাকা জীবন। ছয়শত পৃষ্ঠার এই বিশাল বইকে কয়েকটা কথায় ব্যখ্যা করে বোঝানো সম্ভব না। তবে এটুকু বলতে পারি, অনেক ভুল ধারনা ভেঙে দিতে সক্ষম এই বই। 'হলদে গোলাপ' পড়তে পড়তে কখনও শিউরে উঠতে হবে, কখনও অবাক হতে হবে, কখনও মমরে গিয়ে বিঁধবে কিছু কথা। এমন অসাধারণ একটা বইয়ের জন্য লেখককে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।

সবাইকে অনুরোধ করব এই উপন্যাস পড়বার জন্য।
এই উপন্যাস আমাদের যথার্থ শিক্ষা দেয় একটি সহানুভূতিশীল মনন নির্মাণের।

"গোলাপ কেবল গোলাপি হবে এমন তো নয়। গোলাপ তো হলুদও হয়"
Profile Image for Journal  Of A Bookworm .
134 reviews9 followers
January 8, 2025
হলদে গোলাপ
লেখক - স্বপ্নময় চক্রবর্তী
প্রকাশক - দেজ
মূল্য - ৬৫০ টাকা।।

এই বছরের ৩০ নম্বর বই স্বনামধন্য এবং আমার খুব পছন্দের লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী এর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস "হলদে গোলাপ"। বই���ি আমি ভাইফোঁটার উপহারস্বরূপ পেয়েছিলাম ২০২৩ সালে, আর এই বছর বইটি পড়া শেষ করলাম। 'রোববার '-এ ধারাবাহিকভাবে যখন 'হলদে গোলাপ 'বেরোচ্ছিল আমার তখন পড়ার সুযোগ ঘটেনি। বইটির প্রথম দশ পাতা পড়তে পড়তেই মনে হয়েছিল আমি অনিকেতবাবুর টক শো 'সন্ধিক্ষণ'- এর নিয়মিত শ্রোতা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেলেমেয়েদের নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক টানাপোড়েনের যে চিঠিগুলোর উল্লেখ সেখানে ছিল সেগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম নিজের অজান্তেই।

✴️ পটভূমি -

১৯৯৫ সালে রেডিও একটু একটু করে মানুষের বিনোদনের জায়গা থেকে দূরে যেতে থাকে আর তার জায়গা নেয় টেলিভিশন, তবুও রেডিও এর নিজস্ব একটা শ্রোতা বরাবর ছিল, তারা শুধু রেডিওই শুনত। আকাশবাণীর রেডিয়ো স্টেশন এর প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ অনিকেত একজন বাতিকগ্রস্থ মানুষ। নানা সমস্যা নিয়ে তার কাছে যা সব চিঠি আসে টা সে জমিয়ে রেখে নিজের প্র��েষ্টাতেই কিশোর কিশোরীদের সমস্যা নিয়ে শুরু করেন নুতুন এক অনুষ্ঠান "সন্ধিক্ষণ"। যে অনুষ্ঠানে কিশোর কিশোরীদের নানা রকম জিজ্ঞাসা কৌতুহল ও প্রশ্নের সমাধান দেওয়া হয় থাকে।। মনোবিদ দেবলীনা সান্যাল,সমাজতাত্ত্বিক মালা ভদ্র,ডাক্তার বিষ্ণু চক্রবর্ত্তী, স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ ভারতী দে সরকার প্রমুখ চরিত্রগুলো যেন আমারই দেখা খুব চেনা মানুষ। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই অনিকেত এর সামনে উন্মোচিত হয় এক নুতুন জগৎ ও তার মানুষেরা, যারা গোলাপের মত গোলাপী রং না, তাদের রং হলদে। হলদে গোলাপ যেমন গোলাপ, তেমনি এই মানুষগুলোও সমাজেরই অংশ।। লেখক উপন্যাসটি শুরু করেছেন কিশোর কিশোরীদের শারীরিক ও যৌন সমস্যার বিশ্লেষণ ও এর সন্ধান নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে লেখক অনিকেত চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে পৌঁছে গেছেন হিজড়ে সমাজের কাছাকাছি। উঠে এসেছে তাদের জীবন যাত্রা, তাদের চাওয়া পাওয়া, সমাজে এদের স্থান। ট্রান্সজেন্ডার অর্থাৎ নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী। এদের নিয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব তথ্য ও ডাক্তারদের পরামর্শ খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। লেখক এই উপন্যাসের মাধ্যমে এই হিজড়ে সমাজ ও তাদের নিয়ে যে সকল ভুল ধারণা সমাজে প্রচলিত আছে তার সহজ সাধারণ ব্যাখ্যার মাধ্যমে সন্ধান দিয়েছেন।।

✴️ পাঠ প্রতিক্রিয়া -

এই লেখার সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক লেগেছিল তা হল এক অনাবিল সততা ছিল লেখার পরতে পরতে। একেবারে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ এবং বিশ্লেষনী দক্ষতা দিয়ে কথাকার স্বপ্নময় রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবনযাপনের এক আন্তরিক মর্মগাথা রচনা করেছেন।তাদের তথাকথিত 'অশ্লীল' কথ্য ভাষার প্রয়োগ, সামাজিক অবস্থান, মূলস্রোতের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার হৃদয়বিদারক যাতনা যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে উপন্যাসের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে। বিশাল আকারের এই উপন্যাস লেখক এক দশক থেকে আরেক নুতুন দশকে টেনে নিয়ে গেছেন। তথ্য সমৃদ্ধ বইটি অনেকের কাছে মনে হতে পড়ে অহেতুক তথ্য দিয়ে ভরিয়ে রাখা হয়েছে তবে আমর তা মনে হয়নি, আমার মনে হয়েছে এই তথ্য গুলোই বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে। লেখক এক অসাধারণ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন বইটি লিখে, সমাজের কিছু মানুষকে জানতে ও ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে বইটি পড়া অবশ্যই দরকার।
Profile Image for   Shrabani Paul.
395 reviews23 followers
June 16, 2022
🍂✨📖উপন্যাসের নাম - হলদে গোলাপ📖✨🍂
✍️লেখক - স্বপ্নময় চক্রবর্তী
🖨️প্রকাশক - দে'জ
📯(আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত উপন্যাস)
📃পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৫৯১

🍂🍁সমাজের শরীর ও শরীরের সমাজতত্ত্ব নিয়ে সন্ত্রক দুঃসাহাসিক উপন্যাস এই হলদে গোলাপ । ২০১২-১৩ সাল জুড়ে প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত রোববার - এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশকালে পাঠকসমাজ আলোড়িত হয় — যা খুব কম উপন্যাসের ক্ষেত্রেই ঘটে । কাহিনি বয়নে মানুষের লিঙ্গ পরিচয়ের সমস্যা তুলে আনতে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে খুঁড়েছেন ইতিহাস , নৃ - বিজ্ঞান , সমাজতত্ত্ব , শারীর বিজ্ঞান , মনস্তত্ত্ব , জিনেটিক্স , মিথ - পুরাণ ...। এক বিশিষ্ট সমালোচক বলেছিলেন ‘ স্বপ্নময়ের গল্প আমাদের শেকড় খোঁজার কোদাল । ওই উক্তিটির কথা মনে পড়বে উপন্যাসটি পড়তে পড়তে ।
এই উপন্যাসটি আসলে এক সংকট সঙ্কুল মানুষের অনুভূতিগুলি চিত্রিত হয়েছে আশ্চর্য মায়াময় দক্ষতায় । কাহিনির পরতে পরতে মিশে আছে বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলি । শুধু বাংলা সাহিত্য কেন , সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যে এর আগে এভাবে কোনও উপন্যাস লেখা হয়নি ।🍁🍂

💫🍁“ হে ফ্রয়েড , ইয়ুং , পাভলভ , কেইস , ডকিন্স্ . … .. তোমরা দেখে নাও — মন - পরিবেশ , হরমোন - জিন শুধু নয় , আরও এক প্যারামিটার আছে । যেটা শুক্লা জেনেছে — সেটা স্বপ্ন ” । লিঙ্গ পরিচয়ের সংকটকে কেন্দ্র করে লেখা এই অনাস্বাদিতপূর্ব মানবিক আখ্যানটি স্নাত হয়েছে ভালোবাসার অলৌকিক জলে ।🍁💫

📯‘ এলজিবিটি ’ বলে একটা শব্দ চালু হয়েছে ইদানীং । পুরো কথাটা হল : লেসবিয়ান , গে , বাইসেক্সুয়াল , ট্রান্সজেন্ডার ।

#bookrecommendations #goodreads #bengalidra #bengalibookreview #bengalinovel #booklovers #Bengalibooks #boipoka #book #reading #goodreadschallenge #Goodread #happyreading
Profile Image for Farhana Lüba.
216 reviews16 followers
July 8, 2023
পরির জন্য কিছুটা খারাপ লাগছে। বুঝতে পারছি না কেন। পুরো বই পড়ার সময় আমার এটাই মনে হচ্ছিলো, কেউ কেন মেয়ে হতে চাইবে? মেয়েদের মত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চাইবে? যাতে বাসে-ট্রেনে অযাচিতভাবে মানুষজন ছুঁয়ে দেখতে পারে? যাতে করে রাস্তাঘাটে শালীন পোশাক পরার পরেও মানুষের অশালীন দৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়? পরি হয়তো এখন কিছুটা বুঝতে পারবে, মেয়েরা কেন কখনোই চায় না মেয়ে হয়ে জন্মাতে। Or that's probably just me.
সাহিত্যগুণ বিচারে উপন্যাসের শুরুটা বেশ ছিলো। কিন্তু এরপর সবকিছু খুব ডিস্টার্বিং হতে শুরু করলো। পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, শরীরটাই আসল। মন বলে কিছু নেই। সবাই শরীরের সুখে সুখী হতে চায়। এটাই বোধহয় সত্য, আমি হয়তো এখনো এই সত্যের মুখোমুখি হই নি। আবার না-ও হতে পারে।
সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যাগুলো বেশ অ্যাকুরেট ছিলো। আমি স্টেম ব্যাকগ্রাউন্ডের বলে এই ব্যাপারটা আমার ভালো লেগেছে।
কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী, তুচ্ছ শরীর নিয়ে এত মাতামাতি...আমার ভালো লাগে নি। এত যৌনতা আমার ভালো লাগে নি।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Nira Mukherjee.
37 reviews5 followers
October 20, 2023
"দ্বিঘাত শরীরে অনেক মায়ার বাস
বাচ্চা নাচাও নেচে ওঠে একতারা
দিকে দিকে শুধু হলুদ সর্বনাশ
বেঁচে থাকা মনে মায়াময় নাড়াচাড়া
আকাশ বোঝে না কতটা জ্বালায় জল
বাষ্প হয়েছে দুনিয়াদারের চোখে
অভিশাপ মুছে যন্ত্রণা চঞ্চল।"
- সৌগত পাল

গোলাপ কেবল লাল হয় না। গোলাপ হলদে ও হয়। আরও বিভিন্ন রঙের হয় এবং সেগুলোও গোলাপ হিসাবে স্বীকৃতি পায় তার সৌন্দর্য, তার নান্দনিকতা নিয়ে। প্রকৃতিতে বৈচিত্র্য আছে এবং তাই গোলাপের রং হলদে হলেও পুষ্পসমাজে স্বীকৃতির জন্য তাদের সংবিধানের আইনকে চ্যালেন্জ করতে হয় না। হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্টেও যেতে হয় না। সইতে হয় না অন্য গোলাপদের চোখরাঙানি। কিন্তু মানব সমাজে যৌনতার রুচিতে, বেশভূষায়, সঙ্গী নির্বাচনে যারা আলাদা, তাদের চলে এক আশ্চর্য যুদ্ধ - কখনো সমাজের সাথে, কখনো নিজেদের সাথে। মানুষের মন, মনন, চাহিদা, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা যখন শরীরের সঙ্গে প্রতারণা করতে শুরু করে তখনই কোনো এক আড়ালে ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে হলদে গোলাপ গুচ্ছ, তাদের নিজেদের ছন্দে।

এই উপন্যাস এতটাই দীর্ঘ এবং এত রকম চরিত্রে সাজানো যে এর বিষয়ে লেখা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। উপন্যাসের মূল চরিত্র হিসাবেও ঠিক একজনকে বেছে নেওয়া যায় না। উপন্যাস শুরু হয় রেডিও অফিসের বিজ্ঞান শাখায় কাজ করা অনিকেতকে দিয়ে। মাঝে মাঝেই তার কাছে অদ্ভুত অদ্ভুত সব চিঠি আসে, যাতে বেশীরভাগই থাকে কিশোর কিশোরীদের শরীর এবং বয়ঃসন্ধিকাল বিষয়ক প্রশ্ন। অনিকেত 'সন্ধিক্ষণ' নামে একটি রেডিও অনুষ্ঠান শুরু করে এই চিঠিগুলির বিষয় কেন্দ্র করে। কিন্তু এই অনুষ্ঠানটি বেশ আলোচিত এবং সমালোচিত হয়। ধীরে ধীরে জমতে থাকে আরো প্রশ্ন আর এই প্রশ্নগুলোকে ঘিরে থাকা কৌতুহল অনিকেতকে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে। সেই জগতে একে একে হাজির হয়, মঞ্জু - যে অ্যাসেক্সুয়াল। তার ছেলে পরিমল - যে নিজেকে নারীত্বে রূপান্তর করতে চায়, পরিমল থেকে পরি হতে চায়, সোমনাথ, দুলাল থেকে ছিন্নি হওয়া দুলালী, চাত্তারা, হাসি, বিকাশ, মন্টু - র মতো কিছু চরিত্ররা আর তাদের অধরা জীবন। যে জীবনের স্বপ্ন হলদে গোলাপের পাপড়িদের গায়েও ভালবাসার হাওয়া বুলিয়ে যায়।

এবার বলি কি কি ভালো লেগেছে?

শুধুই উপন্যাসের কাহিনীর গতিময়তা নয়, কিন্তু তার সঙ্গে লেখক যেভাবে নৃতত্ত্ব, জীনতত্ত্ব এবং তাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন - সেটা আমার একেবারেই নতুন লেগেছে। উপন্যাসের ভাষাভঙ্গিও সহজ সরল। এবং ছোট ছোট বাক্যে উপন্যাসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই সুবৃহৎ উপন্যাস কখনোই বৃহৎ বলে মনে হয়নি।

খারাপ লাগা বলতে যদিও তেমন কিছু নেই তবে শেষটা আমি একটু অন্যরকম আশা করেছিলাম।

শেষে বলব, এমন উপন্যাস লেখার জন্য কি দরকার পড়ে? দক্ষতা? গবেষণা? নিবেদন? তবে যাই লাগুক না কেনো এই উপন্যাস একই সাথে সাহসী ও মানবিক।

স্বপ্নময় চক্রবর্তীকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি উপন্যাস লেখার জন্য।
Profile Image for Kinshuk Majumder.
205 reviews8 followers
May 20, 2024
"হলদে গোলাপ" - স্বপ্নময় চক্রবর্তী
দে'জ পাবলিশিং
মুদ্রিত মূল্য ₹৫০০ (২০১৫)

আজও আমাদের সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক স্বীকৃতি সেই ভাবে দেওয়া হয় না। এর সাথে রয়েছে লিঙ্গ পরিবর্তনকামীদের সমস্যা। সমাজ ব্যাবস্থার এই সমস্যা নিয়ে লেখা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক দুঃসাহসিক উপন্যাস "হলদে গোলাপ"।

রেডিও সেন্টারের প্রোগ্রাম একজিকিউটিভ অনিকেত এই গল্পের প্রধান চরিত্র। সালটা ১৯৯৫। বয়ঃসন্ধিজনিত সমস্যা, শরীর সম্পর্কে অনেকের অনেক অজানা প্রশ্ন, যা তারা কৈশোর বয়সে বড়োদের কাছে জানতে পারে না এইরকম অনেক চিঠি অনিকেতের টেবিলে প্রায়ই আসে। এই চিঠির প্রশ্নগুলি অনিকেতকে নাড়া দেয়। স্টেশন ডিরেক্টরের অনুমতি নিয়ে অনিকেত, ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন কিছু সমস্যা নিয়ে সন্ধিক্ষণ নামের একটি অনুষ্ঠান শুরু করে। উপন্যাসটিতে অনিকেতের সাথে যোগ হয় আরো কিছু চরিত্র - দুলাল/দুলালী, মন্টু, পরিমল/পরি, শুক্লা, মঞ্জু। অনিকেতের স্ত্রী রুচিশীল সংস্কারী শুক্লা সন্তানহীনতায় ভুগলেও দুলালের সন্তান মন্টুকে নিয়ে আনন্দেই দিন কাটছিল। এরমধ্যে অনিকেত মঞ্জুর সাথে 'ম্যানলি' কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে। মঞ্জু আত্মহত্যা করে। বহিঃআবরনে পুরুষ হলেও দুলাল চায় দুলালী হতে। রূপান্তরিত হতে গিয়ে অবৈজ্ঞানিক উপায় অস্ত্রপ্রচার, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দুলালী মারা যায়। পরিমল 'মেয়েলিপনা' নিয়ে হাজার টিটকিরি-গঞ্জনা সহ্য করে হয়ে ওঠে একজন সফল ফ্যাশন ডিজাইনার।

এই তথ্যসমৃদ্ধ উপন্যাসে লেখকের কলমে উঠে এসেছে হিজড়ে, সমকামী, রূপান্তরকামী এবং এল. জি. বি. টি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার) দের নিয়ে অনেক তথ্য যা আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষকে তাদের সম্বন্ধে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। এমন অসাধারণ একটা বইয়ের জন্য লেখককে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।

"গোলাপের রং তো আমরা গোলাপি-ই বুঝি। পিংক। কিন্তু গোলাপ যদি সাদা কিংবা হলুদ হয়, তবে কি সেটা গোলাপ নয়? আমরাও পুরোপুরি মানুষ। ... শুধু ব্যক্তিগত যৌনতার ক্ষেত্রে আমরা আলাদা।" বাংলা সাহিত্যে এরকম কোনো বই আর আছে কি না তা আমার জানা নেই। উপন্যাসটি আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে যে গোলাপতো হলদেও হয়, আছে, এই সমাজে আপনার আমার আমাদের মধ্যেই! স্বপ্নময় চক্রবর্তীর হলদে গোলাপ সেই শিকড় সন্ধানের গল্প।
Profile Image for Supratim Dhar.
69 reviews3 followers
July 15, 2020
শুরুতেই বলে রাখা ভালো এই বইকে কোনো রেটিং দিয়ে বিচার করার চেষ্টা বৃথা। বইটা হয়তো সবার জন্য নয় এবং আমাকেও পড়ে দেখতে না বললে কখনো ধরতাম না।
বইটির প্রেক্ষাপট তৈরী হয় সমাজের LGBTQ মানুষজনদের নিয়ে। কিন্তু হলদে গোলাপ কারোর নিজস্ব ভালোবাসার অথবা জীবনযুদ্ধের কাহিনী নয়, বরং এর মূল ভাবনাই হলো আমাদের মধ্যে ভুল ধারণাগুলোকে ভেঙে দেওয়া এবং এই বিষয়ে বহুকালের অজ্ঞতায় দাঁড়ি টানা।
লেখকের পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা এক অদ্ভুত গভীরতার জাল বুনেছেন যা শব্দে ব্যাখ্যা করা প্রায় অসম্ভব। কোনো একটি মূল কাহিনী নয়, বিভিন্ন স্তরের মানুষের বিচিত্রময় জীবনযাত্রা ও তাদের স্বপ্ন উঠে এসেছে কাহিনীর পরতে পরতে। সমাজের বাঁধাগতিতেই কাঁটাছেঁড়া হয়েছে তাদের মনন।
এক এক সময়ে তাই মনে হয়েছে শেষ করা অসম্ভব; শুধু দীর্ঘ ব্যাপ্তির জন্য নয়, কঠোর বাস্তবচীত দৃষ্টিভঙ্গি, ভাষা এবং অতি জীবন্ত লেখনির জন্য।

নিজের যৌনসত্তা ও আকাঙ্খা অন্বেষণের এক চিরকালীন আর্তি, মানসিক দ্বন্দ্ব এবং সেই সত্তাকে পৃথিবীর সামনে উন্মুক্ত করার মরিয়া চেষ্টা, এই সব কিছু নিয়ে দিনের শেষে হলদে গোলাপ শেখায় 'আমার আমি' কে মাথা উঁচু করে বাঁচতে, স্বপ্ন দেখতে।

পুনশ্চঃ লিখতে সাহায্য করেছে সৌমিকী।
Profile Image for Ritam Chakraborty.
3 reviews2 followers
July 16, 2018
Who says the rose should always be red? One of the best books ever written in Bengali. It changes our perception of gender and sexuality. It challenges our stereotypes. This book is packed with details, information, and facts. This epic visits every sphere of human sexuality - from bedroom to the slums of transgender community, from paedophilia to ancient rituals, it misses almost nothing. The writing style never lets boredom settle in. A must read for anyone who knows how to read Bangla.
Profile Image for F N.
42 reviews20 followers
February 4, 2024
অনেক কিছু জানতে পারলাম তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ব্যাপারে। কিছু বিজ্ঞান ও বুঝতে সাহায্য করলো। আমি এই ধরনের এতো তথ্য দেওয়া কোনো উপন্যাস আগে কখনো পড়িনি। এখন মনে হচ্ছে যে বইগুলো রেফারেন্স হিসেবে নেওয়া হয়েছে সেগুলো পড়ে দেখি। এক নতুন অভিজ্ঞতা।
আমি চাইছিলাম অনিকেত ওর লেখা উপন্যাসটা যেনো শেষ করে। দুলালীর গল্পটা যেনো বড্ড অজানা রয়ে গেলো।
Profile Image for Kaushik Mandal.
44 reviews
March 31, 2025
"গোলাপের রং তো আমরা গোলাপি-ই বুঝি। পিংক। কিন্তু গোলাপ যদি সাদা কিংবা হলুদ হয়, তবে কি সেটা গোলাপ নয়? আমরাও পুরোপুরি মানুষ। মানুষের সমস্ত ধর্ম আমাদের মধ্যে আছে। আমাদের মধ্যে শিল্পীসত্তা আছে, পরে��� জন্য দুঃখবোধ আছে, সমাজ সচেতনতা আছে, আবার হিংসা-পরশ্রীকাতরতাও আছে। শুধু ব্যক্তিগত যৌনতার ক্ষেত্রে আমরা আলাদা।"
-হলদে গোলাপ
Profile Image for আহসানুল করিম.
Author 3 books27 followers
December 24, 2019
আমার পড়া সবচেয়ে সাহসী বাংলা উপন্যাস। একটা অসাধারণ ডকুমেন্টারি। লিঙ্গ, লিঙ্গ পরিচয়, যৌনতা আর এসবকে ঘিরে থাকা জীবনের যেসব সংকট সম্পর্কে আমি অন্ধকারে রয়ে যাই, এই উপন্যাস সেইসব সেনসিটিভ বিষয়গুলোকে মমতা নিয়ে তুলে ধরে।
Profile Image for Debayan Koley.
39 reviews3 followers
July 23, 2020
শুরুটা যতো আকর্ষণীয়ভাবে হয়েছিল, শেষ অব্ধি সেটা বজায় থাকল না। খুবই গবেষণামূলক কাজ, কিন্তু আন্তরিকতাটা কোথাও শেষ অব্ধি হারিয়ে গেছে মনে হল
Profile Image for Susmita Dey.
19 reviews14 followers
August 6, 2020
My first book about sexuality. Very informative and an eye opener.
Profile Image for Farha Kazi.
28 reviews8 followers
May 17, 2021
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবন নিয়ে লেখা অসামান্য এক বই।
Profile Image for Maruful Apu.
20 reviews
January 13, 2022
প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার উপরে বইটি পড়া হয়েছে মোবাইল দিয়ে। pdf version এ পড়া। এই লম্বা বই কখনো পড়া হয়নি ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে। পড়তে ভালো লাগে বিধায় অত লম্বা বইটা পড়তে পারলাম।
Profile Image for Adity Sanyal.
76 reviews2 followers
August 1, 2021
Gut wrenching.. It was a long read.. I couldn't read continuously.. Horrifying.. But great... Loved it..
Profile Image for Shahin S. Eity.
27 reviews14 followers
May 4, 2016
তথ্যবহুল, কিন্তু তথ্যগুলো মোটেও বাহুল্য হয়ে ওঠেনি। বরং আরো জানার তৃষ্ণা জাগিয়েছে। একইসাথে চরিত্রগুলোর বিন্যাসও স্পষ্ট এবং সুন্দর। কাউকেই লেখক একটা ধাঁচ বা ছাঁচে ঢেলে তৈরি করেননি। প্রত্যেকরই নিজস্ব মুখোশ, মুখোশের আড়ালে নিজস্ব আয়না আছে। আর কিছু চরিত্র পর্দার আড়ালেও আছে - সুস্পষ্ট অবয়ব নেই, স্রেফ আদরা আছে। তাতেই বা খারাপ কী ? পাঠকের কাছে সুযোগ থাকলো সেই চরিত্র নিজের কল্পনায় বুনে নেয়ার জন্য।
Profile Image for Riddhadip Ghosh.
2 reviews41 followers
January 26, 2017
An excellent outcome of simple writing, intellectual thinking and thorough research. Might change your point of view towards the neglected part of society.
Displaying 1 - 30 of 30 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.