‘অনন্ত অম্বরে’ মূলত হুমায়ুন আহমেদের অটোবায়োগ্রাফি। অবশ্য ‘অটোবায়োগ্রাফি’ শব্দটা ঠিক শব্দচয়ন হয়নি। হুমায়ুন আহমেদ এই বইয়ে ঢালাওভাবে তাঁর নিজের জীবনের কাহিনী এখানে বর্ণনা করে যাননি। বরং তিনি এই বইয়ে নিজের জীবনের কিছু ঘটনা বিক্ষিপ্তভাবে একটা একটা করে বর্ণনা করেছেন। বলাই বাহুল্য, বর্ণিত ঘটনার একটার সাথে অন্যটির বিশেষ কোন সাদৃশ্য নেই। তবে, ঘটনগুলি যথেষ্ট মজার আর উৎসাহব্যাঞ্জক। বর্ণনার সময়ও হুমায়ুন আহমেদ নিজের সাহিত্যিক প্রতিভার সবটাই ব্যবহার করেছেন।
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
হুমায়ূন আহমেদ তার বেশ কিছু বইয়ে লিখেছেন "হে মানবজাতি তোমরা বড়ই অধৈর্য, তোমাদের সবকিছুতেই বড় তাড়াহুড়ো"
এবং একইসাথে আশ্চর্যজনক ও দুঃখজনক হলেও সত্যি আমি উপরোক্ত শ্রেনীভুক্ত নাদান ছাপোষা বান্দা. আমার সবকিছুতেই বড় তাড়াহুড়ো, ধৈর্য নামক বস্তুর সাথে আমার জন্ম থেকেই আড়ি চলছে,না হলে কি কেউ সাতটি মাস পূর্ন করেই মাতৃগর্ভের ওই রকম আরাম শান্তি ছেড়ে এই নচ্ছার অশান্ত পৃথিবীতে নাচতে নাচতে চলে আসে?
তো যথারীতি আমার এই স্বভাবের কারণেই হোক আর অন্য কোনো কারন থাকুক একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গিয়েছিল যে হুমায়ূন সাহিত্যের সিংহভাগ অমৃতের স্বাদ আহরন আমার হয়েই গেছে, প্রিয়তমেষু বইটা পড়ার পর মনে হয়েছিল যাক ষোলকলা পূর্ণ না হলেও নেহাত কম পড়িনি. কিন্তু ঐ যে বললাম আমার অধৈর্য স্বভাব,তবে এটা থাকাতে এবার পোয়াবারোই হয়েছে.বেশ কিছুদিন ধরেই আমার রিডার্স ব্লক চলছে,বড় কোনো বই পড়তে শুরু করেছি বড় জোর ৪০ পাতা পড়ার পর ব্যস বন্ধ করে অন্য বই শুরু আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি,এ নিয়ে একুনে ৫টিবই শুরু করেও শেষ পর্যন্ত তাদের জায়গা হয়েছে ঘরের কোণে.ছোট হালকা বই খুজতে গিয়ে চোখে পড়লো অনন্ত অম্বরে,ছোট কলেবর পড়তে বড়জোর এক ঘন্টা লাগবে চিন্তা করে শুরু করে দেখলাম আরে বাবা এই এত সুন্দর বইটা আমার চোখ এড়িয়ে গেল কিভাবে? হুমায়ূন তার জীবনের টুকরো টুকরো কথা স্মৃতি লিখেছেন এই বইটিতে,তার জীবনী নিয়ে অন্য কোনো লেখা পড়া নেই যেহেতু তাই এই বইখানা আমার জন্য ছিল হাতে চাঁদ পাওয়ার মত.
স্মৃতি হলো মিঠাইয়ের ডাব্বায় লুকানো রং বেরঙের নানা স্বাদের একগুচ্ছ স্বপ্ন,একটা মনে পড়তে না পড়তেই আরেকটা কোথা থেকে যেন টুপ করে সামনে চলে আসে.হুমায়ুনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতয় ঘটেনি.শুরু করেছিলেন তার কলেজ জীবনের কথা দিয়ে,সেখান থেকে ইকোনোমিক্সের ফাঁদ গলে কেমস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের মায়ায় পড়া সত্বেও বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ঢাকা হল বাদ দিয়ে গেলেন আর্টসের মুহসিন হলে শুধু মাত্র সেখানে নতুন লিফট চালু হয়েছিল বলে!যে হলের ৫৬৪ নাম্বার রুমে থেকে তিনি লিখেছিলেন"নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার"এর মতো অসাধারণ সব বই.যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েই তিনি লিখেছেন "দেবী"মত দর্শক সমালোচকনন্দিত মাস্টারপিস.কিংবা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙনে দেখিয়েছেন তার রপ্ত করা জাদুখেলা, রাতের ঘুম কে ছুটি দিয়ে চা খেয়েছেন নীলক্ষেতে,সংসার পেতেছেন শহীদুল্লাহ হলের ছোট বাসায় গুলতেকিন আহমেদকে নিয়ে যাকে দেখে যুবক হুমায়ূনের মনে হয়েছিল এই কিশোরী মেয়েটিকে না পেলে তার জীবনটাই বৃথা যাবে.তিন কন্যার জন্মের সুমধুর ঘটনার সাথে পুত্রের মৃত্যুকেও খুব কাছ থেকে দেখেছেন হুমায়ূন.
শুটিংয়ের ফাঁকে,বাইরে পড়তে গিয়ে এরকম আরো নানা ঘটনা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে আমিও যেন সেই ঘটনার সেই মানুষগুলোর সাথে উপস্থিত ছিলাম.এর বেশি বলতে গেলে স্পয়লার দেওয়ার দোষে দুষ্ট হয়ে যাব. তারচেয়ে বরং বাকিটা পড়ে নিয়ে এই বইখানা মন্ডামিঠাইয়ের মতো মিষ্টি না সর্ষে মতো ঝাঁজালো তার ভার রইলো অন্য পাঠকদের উপর.
"যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া, যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে, যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া..."
হুমায়ূন আহমেদকে লেখক শিবিরে ঈশ্বরতুল্য গণ্য করে দেখার যে প্রবণতা, আত্মজীবনীমূলক রচনাগুলোর মধ্য দিয়ে সেটাকে বারবার চুরমার করে দিয়ে গেছেন স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ। লেখকের লেখার প্রতি মুগ্ধতা থেকে পূজনীয় আচরণের থেকে সাদা কালো বাইনারির বাইরে গিয়ে ধূসর যে জীবনে মানুষ লেখকের বিচরণ সেইটা আমাকে বরাবরই চুম্বকীয় আকর্ষণ শক্তিতে বেঁধে রাখে। আমি অনন্ত অম্বরের পাতায় পাতায় খুঁজে গেছি সেই ধূসর হুমায়ূনকে, টুকরো টুকরো হুমায়ূনকে।
ঝোঁকের মাথায় দুমদাম সিদ্ধান্ত নেয়া,জন্ম-মৃত্যু নিয়ে প্রবল আগ্রহ,অলৌকিক-ব্যাখ্যাহীন ঘটনার প্রতি অপরিসীম কৌতূহল,ম্যাজিক-পামিস্ট্রির প্রতি দুর্বলতা, সংসারত্যাগী মানুষদের প্রতি মুগ্ধতা এইসব কিছু মিলিয়ে তাকে খুব কাছের অতি পরিচিত মানুষই মনে হয়। এর আগে আত্মজীবনীমূলক লেখার মাঝে ছেলেবেলার খণ্ড খণ্ড চিত্র নিয়ে সাজানো স্মৃতিকথার পসরা 'আমার ছেলেবেলা','কিছু শৈশব', আমেরিকায় পিএইচডির গল্পের আসর 'হোটেল গ্রেভার ইন', হাস্যরসের বৈঠকি আলাপ 'এলেবেলে','এলেবেলে ২' পড়া হয়ে উঠলেও 'অনন্ত অম্বরে' পড়বার পর অন্য লেখাগুলোকে তার পাশে একটু ফিকেই মনে হয়েছে। এর ব্যাপ্তি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কালব্যাপী না। সময়ের থেকে বরং নিতান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, মনোলগ,নিজের কাছে নিজে দেয়া কৈফিয়তই প্রধান হয়ে উঠেছে বারবার।
১. রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার প্রতি হুমায়ূনের ভালোবাসার কথা পর্যবেক্ষক পাঠকমাত্রই জানেন।
"I have looked down the saddest city lane I have passed by the watchman on his beat And dropped my eyes, Unwilling to explain. Proclaimed the time was nither wrong nor right I have been one acquainted with the night."
উদ্ধৃত লাইনগুলি তিনি নির্বাচন করেছেন রবার্ট ফ্রস্টের ‘Acquainted with the Night’ কবিতা থেকে। হিমুকে ব্যাখ্যা করার জন্য তা মোক্ষম।
‘নগরের অবসন্ন গলি দেখি না তো চলমান প্রহরিকে পিছে ফেলে যাই নমিত চোখে আমি না বলেই যাই মনে রাখা অর্থহীন রাতের প্রহর জেনেছি আমি এই রাতের সহচর।’
কবি উপন্যাসের নবম অধ্যায়েও আমরা দেখি আতাহার রবার্ট ফ্রস্টের চারটা কবিতার অনুবাদ নিয়ে গেছেন গণি সাহেবের কাছে। আতাহারের উদ্দেশ্যে সাজ্জাদের মুখ দিয়ে যেন হুমায়ূন নিজেই গম্ভীর গলায় বলেছেন, "আমার মাথায় কিছুই ভর করে না। আমি মাঝে মাঝে অন্যের উপর ভর করি। এই মুহূর্তে সিন্দাবাদের বুড়োর মতো ফ্রস্টের কাঁধে ভর করেছি। এবং মনে হচ্ছে উনি পঁচিশ ক্যারেট গোল্ডের কবি। পৃথিবীর বেশিরভাগ কবিই আঠারো ক্যারেটের। খাদ বেশি। পঁচিশ ক্যারেট কবির সংখ্যা কম।"
অনন্ত অম্বরের শুরুটাও তাঁর এই অতি প্রিয় কবির 'A Minor Bird' কবিতার পঙক্তি দিয়ে।
২. মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু নিয়ে হুমায়ূনের ছিল তীব্র আগ্রহ। খুব কাছ থেকে এ দুটি ব্যাপার দেখতে চাইতেন তিনি। মানুষের মৃত্যু দৃশ্য দেখাটা যতটা সহজ, জন্ম ততটা নয়। এক ডাক্তার বন্ধুকে নিজের ইচ্ছার কথা খোলাসা করেন তিনি। কোনো মুমূর্ষু রোগী যদি মৃত্যুশয্যায় থাকে তাকে যেন ফোনে জানানো হয়, তিনি এসে দেখবেন, শুধু একবারের জন্য। হলোও তাই। চল্লিশ বছরের হত-দরিদ্র এক রোগী। সাথে তীব্র খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে, কিন্তু রোগী নিতে পারছে না, ফুসফুস কাজ করছে না। হঠাৎ কি হলো কে জানে, ডাক্তারদের সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে লোকটির খিঁচুনি বন্ধ হলো, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস শুরু হলো। ভদ্রলোকের স্ত্রী হুমায়ূনকে ডাক্তার মনে করে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। মৃত্যু আর দেখা হলো না সেদিন। পরবর্তীতে হুমায়ূন-কন্যা শীলার জন্মদৃশ্য সামনে থেকে দেখার সুযোগ হলো হুমায়ূন আহমেদের(হোটেল গ্রেভার ইন দ্রষ্টব্য) দ্বিতীয় ইচ্ছেটা একদিন পূর্ণ করে দিলো প্রকৃতি। তারই ছেলের মৃত্যু হলো তার চোখের সামনে। দুটো ইচ্ছেই পূর্ণ হলো তার সন্তানদের জন্ম-মৃত্যুর মাধ্যমে। মৃত্যুপথযাত্রী শিশুদের নিয়ে লেখা "The Private Worlds of Dying Children" বইয়ের রেফারেন্সটা চোখের কোণে জল এনে দিতে বাধ্য ���রে। বইয়ের গল্পগুলো পড়ে হুমায়ূন হু হু করে কান্না করেছিলেন। মৃত্যু পথগামী এক নয় বছরের বাচ্চা যে কিনা জানে সে কয়েকদিন পর মারা যাবে। সে তার বাবা মায়ের সাথে প্রচন্ড বাজে ব্যবহার করে। নার্স তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সে কেন এমন কাজ করছে। জবাবে সে বলে, আমি চাই না মারা যাবার পর বাবা মা বেশি কষ্ট পাক। আমি ভালো ব্যবহার করলে উনারা কষ্ট বেশি পাবে এই ভেবে যে আমার মেয়েটা কত ভালো ছিল, ভালো ব্যবহার করত।
হুমায়ূনকে নিশিযাপন মানে গভীর রাত অবধি জেগে থাকার অভ্যাস ধরিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আনিস সাবেত। তারা একসাথে দীর্ঘ রাত পেরিয়ে ভোর অবধি ঢাকার রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বেড়াতেন। পরবর্তীতে দেশের উপর রাগ করে কানাডাপ্রবাসী সেই আনিস সাবেত থ্রোট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে পর আমিও খানিকটা সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি।
৩. অলৌকিক, ব্যাখ্যাহীন,অপার্থিব ঘটনার প্রতি আমার আগ্রহ অনেক। ছোট থেকেই এই ধরনের লেখাজোখা গিলেছি গোগ্রাসে। চাকরিজীবী বাবা-মার শাসন থেকে মুক্ত ছেলেবেলায় ক্রিশ্চান সেমেটারিতে কেটে গেছে আমার বহু বিকেল-সন্ধ্যা শুধু কুয়াশা মাখা আলো আঁধারীতে অদ্ভুত কিছুু প্রত্যক্ষ করবার আশায়। হুমায়ূন আহমেদের অপার্থিবের প্রতি আগ্রহও আমাকে নাড়া দেয় প্রবল। যেমন শবযাত্রা গল্পটা আমার অনেক বার পড়া, ওয়ার্ল্ড ক্লাস হরর স্টোরি। অনন্ত অম্বরে বইয়ে ছেলেবেলার স্মৃতি কতটা বাস্তব কতটা ভ্রম এই প্রসঙ্গ এসেছে বারবার। দেখা গেছে তাঁর ছেলেবেলায় ঘটে যাওয়া এমন অনেক ঘটনাই আদৌ কখনও ঘটে নি,অথচ সেসব স্মৃতি অনেক স্পষ্ট। মিসির আলী সিরিজের দেবী, বিপদ বই দুটোর নেপথ্যকথাও আছে এই বইয়ে।
এছাড়াও সুইস করপোরেশনের হয়ে ছবি বানানোর গল্প,চাওয়ালা মেকুর হৃদয়স্পর্শী কাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডকালীন চিত্র আর পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী হয়েও সর্ষিনার পীর মৌলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহের স্বাধীনতা পদক পাবার ঘটনা,বিয়ের ঘটকালী করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হবার গল্প এমন অনেক টুকরো টুকরো স্মৃতির এক মিশ্র স্বাদের কোলাজ অনন্ত অম্বরে। এসব গল্পে মানুষের পরস্পর বিরোধী বিচিত্র স্বভাবের প্রসঙ্গও এসেছে বারবার। বইটা শেষ করবার পর জন স্টাইনব্যাকের লেখা "ক্যানারি রো" আর "টরটিলা ফ্ল্যাট" পড়ার তীব্র ইচ্ছা আমার মনে জেগেছে।
আত্মজীবনীমূলক অন্য লেখার থেকে অনন্ত অম্বরের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণ অনেক। হয়তো সেজন্যই বারবার এর কাছে ফিরে আসবো। লেখকের মতো নিশিযাপন করতে করতে হয়তো আমারও বারবার মনে হবে, হারিয়ে যাওয়া মানুষরা যেন হারিয়ে যায় নি আছে, আমার পাশেই আছে। এই তো ভালবাসা এবং মমতায় তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এমন অনুভূতি কখনো দিনে হবার নয় তার জন্যে প্রয়োজন চিররহস্যময়ী অম্বর।
বহুদিন পর হুমায়ূন আহমেদ এর একটা বই পড়া হইল। আমার ধারণা ছিল আমি হুমায়ূন আহমেদের মোটামুটি সব বই ই পড়ে ফেলছি। "অনন্ত অম্বরে" বইটা খুঁজে পাওয়ার পর এক ভিন্ন রকম আনন্দ অনুভূতি হতে লাগল। পুরনো একটা জিনিস যেটা অনেকদিন খুঁজে পাচ্ছিনা হঠাৎ খুঁজে পেলাম সেরকম আনন্দ। হুমায়ূন এর কোন একটা বই প্রথমবারের মতন পড়ার স্বাদ আবার পেতে যাচ্ছি এইটা ভেবেই মনটা ভাল হয়ে গেল। আমি বরাবরই অতি অল্পতে মুগ্ধ হই৷ হুমায়ূনের অতি সাধারণ লেখাও আমাকে মুগ্ধ করে। কিশোরী গুলতেকিন এর মতন আমিও হয়ত বিশ্বাস করি, উনার মতন জ্ঞানী মানুষ পৃথিবীতে আর নাই।
বোরিং মাইক্রোকন্ট্রোলার ক্লাসে আধো বৃষ্টিতে বইটা পড়তেছিলাম। হুমায়ূন জীবনের শুরুতে ম্যাজিক শিখছিলেন। টেলিভিশনেও ম্যাজিকের শো দেখানোর সৌভাগ্য উনার হয়। কিন্তু বিয়ের রাতে গুলতেকিন কে ম্যাজিক দেখানোর সময় গুলতেকিন ট্রিক গুলা ধরে ফেলছিল অতি সহজে। তাই দুঃখে হুমায়ূন ম্যাজিক করা ছেড়ে দেন।
কিন্তু আমার মতে কথাটা ভুল, হুমায়ূন ম্যাজিক করা ছাড়েন নাই। তিনি শব্দের সাথে যে জাদুর খেলা খেলছেন তা এক কথায় অনবদ্য।
বইটাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক গল্প আছে যেমন তখনকার দিনেও ক্ষমতাসীন ছাত্র দলের প্রকোপ ছিল। এছাড়া সিনেমা তৈরি করার সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের যে স্মৃতি তা বর্ণনা করছেন।
একটা স্মৃতি উল্লেখ্য, ময়মনসিংহে শ্যুটিং এর সময় ব্রহ্মপুত্র নদে রাত একটায় উনারা নৌকায় চড়ে সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজেন।
আমাকে প্রভাবিত করার ব্যাপারে হুমায়ূন প্রচন্ডরকম সফল। উনার এই আত্মজীবনী আমাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে আমার এখন ইচ্ছে করতেছে কোন একটা নদীর উপর নৌকায় সারারাত বৃষ্টিতে ভিজি।
কিশোর বয়সে যতটুকু মুগ্ধতা নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়তাম ততটুকু মুগ্ধতা নিয়ে আজও পড়েছি। ভবিষ্যতে বুড়িয়ে গেলেও পড়ব হয়ত। জয়তু হুমায়ূন।
বইটা খুব বেশি ভালো লাগার পেছনে হয়তো লেখক যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণনা দিয়েছেন, আমিও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়েছি এই ব্যপারটা থাকতে পারে। কিন্তু লেখক যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণনা দিয়েছেন, আমার দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে খুব বেশি বদলায়নি। নিষ্ঠুরতা এখনো আছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমেছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রূপ বদলেছে। বইয়ের কিছু যায়গা পড়ার সময় চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো, কিছু লিখা পড়ার সময় হাসিতে ফেটে পড়তে হচ্ছিলো, কিছু লিখা পড়ার সময় মনে হচ্ছলো ভালোবাসার চাদর দিয়ে লেখক আড়াল করে দিচ্ছেন। এরকম বিচিত্র লেখা হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কেউ লিখতে পারবেন বলে মনে হয় না। হুমায়ূন আহমেদের খুব কম বইই ৫/৫ দেওয়া হয়েছে। এটাকে ৬/৫ দিলাম।
১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন হূমায়ুন আহমেদ। তাঁর দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেমন ছিল সেটা নিয়ে খোলামেলা স্মৃতিচারণ করেছেন 'অনন্ত অম্বরে'র একটা অধ্যায়ে।
পড়ালেখার মান তখন ভালোই ছিল, শিক্ষকরা তাদের পড়ানোর বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতেন- ক্লাসের সেরা ছাত্র হূমায়ুন আহমেদের ইতিবাচক মূল্যায়ন। কিন্তু ক্লাসরুমের বাইরে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের কোন যোগাযোগ প্রায় ছিলই না বলা যায়। ছেলে-মেয়ে একে অপরের সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলতে দেখা গেলে কঠোর শাস্তি হয়েছে এমন নজির ছিল; আইন ছিল কড়া, সহানুভূতি ছিল বিরল, শিক্ষার্থীদের যেকোন অনিয়মেই কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। আমরা জানি আইন সবার জন্য সমান হয়না, কাদের জন্য আইন শিথিল বা অনুপস্থিত বুঝতেই পারছেন- হ্যা! তখনও সরকার সমর্থিত গুণ্ডা ছাত্রবাহিনী ছিল। তাদের নাম ছিল এনএসএফ, হূমায়ুন আহমেদের বর্ণনা পড়লে বর্তমানের ছাত্রলীগকে এনএসএফের তুলনায় শিশু মনে হবে। একটা মেয়েকে হলের রুমে আটকে ছয়-সাতজন গুণ্ডার নির্যাতন চালানোর মত ঘটনা মহসিন হলে ঘটেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনা জানার পরেও কিছুই ঘটেনি এমন ভান করেছে।
এছাড়াও ক্যান্টিনে/ডাইনিংয়ে গুণ্ডাদের জন্য স্পেশাল রান্না হওয়া, টাকা না দিয়ে বা কম দিয়ে খাওয়ার রীতি তখন ছিল, এখনও আছে। আবাসিক হলের সিট দেওয়া-কেড়ে নেওয়া, হল নিয়ন্ত্রণ করা তখন ছিল, এখনও আছে। এসব ��ামুলি ব্যাপার- অপরাধের পর্যায়েই পড়েনা।
এখনকার মত প্রাইভেট টিউশনি করার রীতি তেমন ছিল না। থাকা-খাওয়া-পড়ালেখার করচ চালাতে না পেরে আত্মহত্যার করতে চাওয়া শিক্ষার্থী তখন ছিল, এখন পাস করার পর বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
সবমিলিয়ে সময়টা তখন ভালো ছিল না। তারপরও সেই অন্ধকার সময়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা অনেক তরুণ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি তখন ছিল। উনসত্তরের গণ���ভ্যুথানে তাদের সক্রিয় ভূমিকা দেখে হূমায়ুন আহমেদের মত অনেকেই হয়তো আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রায় দুই যুগ পরে (১৯৯২) প্রকাশিত 'অনন্ত অম্বরে' পড়ে বুঝতে পারছি - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হূমায়ুন আহমেদ স্যার আর কোন স্বপ্ন দেখেন না। (৭ জুলাই ২০২১)
দুদিন আগে হোয়াটসঅ্যাপে ফরোয়ার্ড করা একটি ছোটো ভিডিও ক্লিপ দেখে, অনেকদিন পরে, হুমায়ূন আহমেদের কিছু বইপত্র পড়ার ইচ্ছে হয়েছে। ভিডিওটি হুমায়ূনের কনিষ্ঠ পুত্রের (দেখে মনে হলো টিনএইজ পার করেনি এখনও)। ক্যামেরার সামনে অবিকল বাবার কায়দায় কাকে যেন দার্শনিক জ্ঞান বিতরণ করছে। তার এই অ-বয়সোচিত ডেঁপোমি দেখে খুবই বিরক্তি লাগলো (অন্য কারো পোলা হলে বিরক্তি লাগার প্রশ্নই ছিল না ; হুমায়ূন আমার ভীষণ প্রিয় লেখক বলেই হয়তো বিরক্তি লেগেছে)। নিতান্ত অল্পবয়সেই এই ছেলে এমন নিখুঁত পোঁদপাকামি আয়ত্ত করলো কীভাবে, এটা ভেবেও বেশ অবাক হয়েছি। "অনন্ত অম্বরে" বইটি হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচারণমূলক কিছু রচনার সংকলন। নিজের জীবনের সম্ভব-অসম্ভব অনেকরকম ঘটনার কৌতূহলকর বর্ণনা দিয়েছেন। কিছু ঘটনা খুবই উপভোগ করেছি। কিছু ঘটনার সত্যতার প্রতি সন্দেহ জেগেছে মনে (যদিও পরিবেশনার চমৎকারিত্বে সেগুলো যেন আরো বেশি উপভোগ করেছি)। বইয়ের একজায়গায় তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন—
“আমি খুব গুছিয়ে সত্যের মতো করে মিথ্যা বলতে পারি।”
অদ্ভুতুরে কাজ করা এবং সেগুলো উপভোগ্য করে উপস্থাপনে হুমায়ূন আহমেদের জুড়ি নেই। এই কাজে মুন্সিয়ানা তিনি বহুবার তার লেখা ও নাটকে দেখিয়েছেন। এই বইটা তার নিজের অদ্ভুত ঘটনার সংকলন৷ আমি মাঝেমধ্যে ভাবি কীভাবে একজন মানুষের সাথেই ক্রমাগত এরকম ঘটে? কই, আমার জীবনের ঘটনাবলি তো বেশিরভাগই সাদামাটা। হুমায়ূন আহমেদের নিজস্ব ব্যাতিক্রমী চিন্তাধারাই কি এসবের কারণ?
বইঃ অনন্ত অম্বরে লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ পৃষ্ঠাঃ৮৮ ১৪ নভেম্বর ২০২০ রেটিংঃ৪ চমৎকার একটা স্মৃতিকথার সম্মেলন এই বইটা। এত সহজ ও সাবলীলভাবে নিজের জীবনের কিছু ঘটনা বইটিতে তুলে ধরেছিলেন তিনি। তার বৈচিত্র্যময় জীবনটাকে জাদুর কাঠি দিয়ে পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন। মানুষের জীবনটা কালো ও সাদা উভয় নিয়েই গঠিত। তাই এর মধ্য হাসি, আনন্দ, পরিতৃপ্তি যেমন আছে তেমন আছে দুঃখ, বেদনা, অসহায়ত্ব। এরই মাঝে তিনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য এবং পাওয়ার এর সাথে এসবের সম্পর্কও দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন কিভাবে একই কাজের জন্য অসহায় ছাত্রের চরম বিচার হচ্ছে, রাজনৈতিক বলে বলীয়ান কারো জন্য তা এমনই শিথিল যে সবাই না দেখার ভান করে। আক্ষেপ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে হানাদারদের সহায়তাকারীকে যখন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেতে দেখে। লিখেছেন মৃত্যু নিয়ে, হাত দেখা নিয়ে ম্যাজিক নিয়ে, নিজের ঝোঁকের মাথায় কাজ করা নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন নিয়ে, সিনেমা বানানোর সময় বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা নিয়ে। ছোটো কোনো বই পড়তে চাইলে ৮৮ পাতার এই বইটি পড়তে পারেন।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের আরো একটা আত্মজীবনী মূলক রচনা পড়লাম নতুন করে। যথারীতি বেশ ভালো লেগেছে। বইটার ভূমিকাটা দারুণ, আর সেখানে একটা কথা আছে এরকম,
আমার অন্তরে এমন সব অন্ধকার আছে যা দেখে আমি নিজেও মাঝে মাঝে ভয়ে চমকে উঠি। কাউকে সেই অন্ধকার দেখতে দেই না। আলোকিত অংশটাই দেখতে দেই, কারণ এই আঁধার আমার আপন আঁধার। আমার নিজস্ব অনন্ত অম্বর।
উপরের কথাটুকু মোটামুটি আমাদের সকলের ক্ষেত্রেই সত্যি। তাই নয় কি! আমরা সাধু মানুষের ভেক ধরে থাকি মনে তীব্র ঘৃণা, আক্রোশ, হিংসা নিয়ে। ফেসবুকের কল্যাণে অবশ্য এসব এখন দেখিয়েও দেই খুব সহজে৷ যা হোক, বইয়ের আলাপে আসি।
প্রথম পর্বটুকুতে লেখকের ঝোঁকের মাথায় করা জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। এমনিতে সকল কাজে ভীষণ গুছানো হলেও, কীভাবে ঝোঁকের বশেই ফলিত রসায়নে পিএচডি করলেন, গুলতেকিন আহমেদকে বিয়ে করলেন তা জানিয়েছেন। গুলতিকেন আহমেদের সাথে উনার বিয়ের বিষয়টা এত অদ্ভুত আর এত ভালোবাসাময়, পড়লেই মনটা ভালো হয়ে যায়। অথচ সেই জীবনটা পরে কোথায় চলে গিয়েছিল!!
পরের অংশে হোস্টেল জীবনের কিছু স্মৃতিচারণ আর ম্যাজিক শেখার গল্প বলা হয়েছে। কীভাবে ম্যাজিকের নেশা কেটেছে সেটাও জানিয়েছেন লেখক।
এরপর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু স্মৃতি। অদ্ভুত ব্যাপার উনার সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি মাস্তানদের যে দৌরাত্ম্য ছিল আজ এত বছর পর বরং আরো ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। অথচ আমাদের আরো সভ্য হওয়ার কথা ছিল! একই হলে একটা মেয়েকে জোর করে ধরে এনে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়, আবার এক ছেলে প্রেমিকাকে গোপনে বিয়ে করে এনে লুকিয়ে রাখে। পাবলিক কিংবা প্রশাসন সবাই ঝাপিয়ে পড়ে, বিয়ে করা ছেলেটার ছাত্রত্ব বাতিল করে হল থেকে বের করে দেয়। কিন্তু ওই মাস্তানদের কিছুই করে না। এই জিনিসও সমাজে এখন প্রবল আকারে দেখা যায়। আমরা দূর্ণীতিবাজ, খুনিদেরকে দেখলে সম্ভ্রমে দাঁড়িয়ে যাই, তেলবাজি করি, হাততালি দেই। আর ভালো মানুষকে নিয়ে মজা নেই, উলটো তার উপর চেপে বসি। কিচ্ছুই বদলায়নি তা নয়, আরো নোংরাভাবে বদলেছে আসলে।
মানুষের জন্ম মৃত্যু কাছ থেকে দেখার নিজের শখের কথা বলেছেন লেখক এরপরে। নিয়ার ডেথ বিষয়ক বেশ কিছু লেখা রয়েছে সেখানে, পড়তে ভালো লেগেছে। লেখকের সন্তানের মৃত্যুর জায়গাটুকু পড়তে গিয়ে চোখ ভিজে উঠেছিল।
ঘড়ি বিষয়ক একটা চ্যাপ্টার আছে। সেই বালক বয়স থেকে ঘড়ি পরার শখ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে নিজের টাকায় প্রথম ঘড়ি কেনা, সেই ঘড়ি হারিয়ে যাওয়া এবং ঘড়ি বিহীন জীবনে অভ্যস্থ হওয়ার ঘটনা রয়েছে এখানে।
শৈশবের স্মৃতি আসলে কতটা সত্য আর কতটা কল্পনা সে বিষয়ক একটা লেখা রয়েছে বইতে। এই অংশটুকুও সুন্দর। আমরা আমাদের শৈশবের স্মৃতি বলতে যা জানি, তা কি আসলেই সত্য? সত্য হলে কতটুকু ��ত্য আর কতটুকুই না কল্পনা?
ভূত প্রেত বিষয়ক অংশটুকুতে লেখকের ভূতের গল্পের প্রতি আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। আরো জানিয়েছেন কীভাবে অকারণেই তীব্র ভয়ে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন তিনি। মিসির আলী সিরিজের প্রথম উপন্যাস দেবী লেখার রসদ কোথা থেকে এসেছে সে কথাও এখানেই জানিয়েছেন আমাদেরকে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে লেখকরা দুই ভাই কীভাবে আশ্রয়ের খোঁজে এখান থেকে ওখানে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তা নিয়ে লেখা হয়েছে একটা চ্যাপ্টার। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার সামান্যতম আঁচ পাওয়া যাবে এই অংশটুকু পড়লে। বাবার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে ৭/৮ বছরের মেয়ে, সেই অবস্থাতে ভাসছে দুজনের লাশ! এই দৃশ্য নিজ চোখে দেখলে আমি কোনোদিন ভুলতে পারতাম না। দেশদ্রোহী সর্ষিনার পীরকে যুদ্ধের ৯ বছর পর স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়। এভাবেই প্রতিটা যুদ্ধে ক্রেডিট পায় বিরোধী শক্তিরা। এটাই আমাদের নিয়তি।
বইয়ের একদম শেষ চ্যাপ্টার মানুষ জাতির মহত্ত্ব কিংবা রাত জাগার গল্প। এই অংশে ভাবার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। বেশ ভালো লেগেছে এটুকু পড়তেও।
এছাড়াও রয়েছে ছবি বানাতে গিয়ে ময়মনসিংহের মেকু নামের চা দোকানির ঘটনা, রয়েছে রামকৃষ্ণ আশ্রমে ভ্রমণ, বিড়াল সংক্রান্ত ঘটনা এবং পামিস্ট্রি ও অ্যাস্ট্রোলজি বিষয়ক ৩টা চ্যাপ্টার। সব মিলিয়ে যথারীতি পাঠ অভিজ্ঞতা দারুণ।
ব্যক্তিগত রেটিং: ০৯/১০ (হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিজীবনের ঘটনা পড়তে ফিকশনের মতোই আনন্দ পাই। যাপিত জীবনের অতি সাধারণ ঘটনাবলীই উনি অত্যন্ত রোমাঞ্চকরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন)
লেখকের আত্মজীবনী। জীবনের বিভিন্ন সময়ের কথা তুলে ধরেছেন। কলেজ জীবন, বিবাহিত জীবন, লেখক জীবনের বিভিন্ন ঘটনা। সময় কাটবে ভালো। আমি ক্লান্তি কাটাতে পড়েছি। ওনার লেখা সাবলীল, তড়তড় করে এগিয়ে যাওয়া যায়৷
তবে, এই বইয়ে একটা বিশেষ জিনিস চোখে এসেছে। লেখক ৮৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন
❝যে মানুষ ঈশ্বরের অংশ তার ভেতর এত ক্ষুদ্রতা কেন?❞
কোনো হিন্দু লেখক লিখলে এটা নিয়ে আপত্তি করতাম না। কিন্তু, হুমায়ূন আহমেদ অনেকের কাছেই মুসলিম, তার ভক্তদের কাছে তিনি ত্রুটিহীন জাদুকর। ব্যতিক্রম থাকতেই পারে।
ওনার এই কথাটা একজন মুসলিমের বিশ্বাস বিরুদ্ধ। আল্লাহ পবিত্র কুরআন বলেন
❝কোনো কিছুই তাঁর(আল্লাহর) সদৃশ নয়❞ (৪২:১১)
কারও বিষয়টা নিয়ে সংশয় থাকলে নিকটস্থ আলিমের থেকেও জেনে নিতে পারেন। যদিও এটা আকীদার বই না, তারপরও সবাইকে এইধরনের বিষয়গুলো থেকে নিজের আকীদা(বিশ্বাস) কে বাঁচিয়ে রাখার অনুরোধ করছি।
হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনী টাইপ বই পড়লে মনে হয়, জাফর ইকবালের বই পড়ছি। এই দু'জনের আত্মজীবনী পড়তে মজা লাগে, সত্যিই। কতো জলদি শেষ হয়ে যায়, মনে হয় এই মাত্রই তো শুরু করলাম।
অসাধারণ এক পাঠ-অভিজ্ঞতা ছিল অনন্ত অম্বরে। হুমায়ূন আহমেদের আত্মজৈবনিক রচনাগুলোর মধ্যে এই বইটি এক ভিন্নরকম অনুভূতির জায়গা দখল করে নিয়েছে আমার কাছে। এটি কোনো ধারাবাহিক জীবনী নয়, বরং তাঁর জীবনের বিচ্ছিন্ন অথচ গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে এমন ঘটনার টুকরো স্মৃতিচিত্রের এক জাদুকরী কোলাজ। কখনো অলৌকিক, কখনো গভীর দার্শনিকতা, আবার কখনো নিখাদ সরল হাস্যরসের মাধ্যমে তিনি পাঠককে নিজের মনের ভেতর নিয়ে গেছেন। বইয়ের পাতায় পাতায় হুমায়ূন যেন নিজেই উপস্থিত, নিঃসঙ্গ রাতের সহচর হয়ে। জীবনের জটিলতাকে সহজভাবে দেখার যে দুর্লভ ক্ষমতা তার ছিল, এই বই তার উজ্জ্বল প্রমাণ। শেষ করে মনে হয়েছে, এমন কিছু বই থাকে, যেগুলো একবার পড়লেই শেষ হয় না। এই ধরনের বই গুলো জীবনের বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপটে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যায় আমাদের।
বইয়ের রিভিউ লেখার জন্যে বইটাকে যত বড় হতে হয়, এই বইটা আসলে মোটেও এতটা বড় না। ‘অনন্ত অম্বরে’ মূলত হুমায়ুন আহমেদের অটোবায়োগ্রাফি।
অবশ্য ‘অটোবায়োগ্রাফি’ শব্দটা ঠিক শব্দচয়ন হয়নি। হুমায়ুন আহমেদ এই বইয়ে ঢালাওভাবে তাঁর নিজের জীবনের কাহিনী এখানে বর্ণনা করে যাননি। বরং তিনি এই বইয়ে নিজের জীবনের কিছু ঘটনা বিক্ষিপ্তভাবে একটা একটা করে বর্ণনা করেছেন। বলাই বাহুল্য, বর্ণিত ঘটনার একটার সাথে অন্যটির বিশেষ কোন সাদৃশ্য নেই। তবে, ঘটনগুলি যথেষ্ট মজার আর উৎসাহব্যাঞ্জক। বর্ণনার সময়ও হুমায়ুন আহমেদ নিজের সাহিত্যিক প্রতিভার সবটাই ব্যাবহার করেছেন।
বইটা শুরু হয় হুমায়ুন আহমেদের এক সকালে ওঠা নিয়ে। দিনটা ছিল মূলত লেখকের জন্মদিন।জন্মদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক হঠাৎ ফিরে গেলেন আমেরিকাতে। ভৌত রসায়নের পিএইচডির কোর্স ওয়ার্ক শেষ করে শেষমুহুর্তে কিভাবে শুধুমাত্র একটি ঘটনাতে, নিজের খেয়ালের বশে তিনি ভৌত রসায়নের কোর্স ওয়ার্ক ফেলে পলিমার রসায়নের পিএইচডিতে ঢুকে গেলেন তাঁর বর্ণনা করেছেন যথেষ্ট রসাত্মকভাবে।
পিএইচডি ঘুরে হুমায়ুন আহমেদ গুলতেকিন প্রসঙ্গে চলে গেছেন, বিয়ে থেকেই আবার বর্ণনা করেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ঘটনাও। এরপর হুট করেই চলে আসে মুহসীন হল, শহীদুল্লাহ হল, ঢাকা কলেজ হোস্টেল। আগেই বলেছি, হুমায়ুন আহমেদ এখানে ঘটনাগুলি বর্ণনা করার সময় কোনরকম ক্রম রাখেননি। খুব সম্ভবত, লেখকের যখন যেটি মাথায় এসেছে সেটি তিনি লিখে ফেলেছেন। এর কোন কোনটি হয়ত এর আগেও এসেছে কোন বইয়ে, লেখক নিজেই সেটি বলেও দিচ্ছেন, তবুও ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন।
তবে সবচেয়ে অভূতপূর্ব ব্যাপার হল, হুমায়ুন আহমেদ শুধু ঘটনা বর্ণনা করেই থেমে যাননি। বেশ কিছহু জায়গাতে তিনি সেই ঘটনার পিছে তাঁর ভাবনাটাও পাঠকের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। হুমায়ুন আহমেদের মনস্তত্ত্বটা এক্ষেত্রে তাই পড়ার সুযোগ হয়েছে বলা যায়।
খাপছাড়া গোছের এই আত্মজীবনী ধাঁচের বইটি পড়ে সত্যি বলতে যারপরনাই আনন্দ পেয়েছি। মাঝে হুমায়ুন আহমেদের সাথে ঘটনাগুলিতে যেমন মজা পেয়েছি, তেমনই রোমাঞ্চ অনুভব করেছি। বইয়ের বর্ণনাতেও হুমায়ুন আহমেদ সাবলীলতা আর প্রাঞ্জলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বইটি ছোট বিধায় এক দিনের ভেতরেই পড়ে শেষ করা সম্ভব। বইয়ের পিছে দেওয়া সময় এমনিতেও বৃথা যায়না, ‘অনন্ত অম্বরে’র পিছে দেওয়া সময় আরো যাবেনা।
' অনন্ত অম্বরে' বইটি হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থসমূহের মধ্যে একটি। হুমায়ূন আহমেদ বইটিতে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট কিছু ঘটনা চমৎকারভাবে উল্লেখ করেছেন।
হুমায়ূন আহমেদের কোনো এক জন্মদিনে তাঁর কন্যারা তাঁকে সারপ্রাইজ দেওয়ার বিভিন্ন চেষ্টার কথা বর্ণনার মাধ্যমে বইটি শুরু হয়। তারপর ঢাকা কলেজে ভর্তি সেখানে কঠিন নিয়মনীতির মাধ্যমে জীবনযাপন আর প্রতি শুক্রবারে বলাকা হলে সিনেমা দেখতে যাওয়া অথবা ম্যাজিক শেখার মাধ্যমে সময় কাটানো। এরপর তিনি ম্যাজিকে পারদর্শী হন এবং পরে হাত দেখাও রপ্ত করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং মহসিন হলে সিট পাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। মহসিন হলে তাঁর রুম নম্বর ছিল ৫৬৪ এই রুমেই তিনি 'নন্দিত নরকে' ও 'শঙ্খচিল কারাগার' উপন্যাস দুটো রচনা করেন। 'তারপর মহসিন হলের বিভিন্ন ছাত্রদের ব্যাপারেও উল্লেখ করেছেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো এক অনুষ্ঠানে তিনি ম্যাজিক দেখিয়ে একটি অনুষ্ঠানেও ম্যাজিক দেখানোর অফার পান। এরপর থেকে বিভিন্ন অধ্যাপকের বাসায় কোনো অনুষ্ঠানে ম্যাজিক দেখানোর দায়িত্ব পেতে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল ও ভয়াবহ সময়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর ভাই জাফর ইকবালকে খুঁজছেন সেই সময়ের ব্যাপারেও কিছু ঘটনা বর্ণিত। এরপর প্রচণ্ড আর্থিক সমস্যার মধ্যেও গুলতেকিনকে বিয়ে করা আর বিয়ের রাতে হুমায়ূন আহমেদ যখন গুলতেকিনকে ম্যাজিক দেখান,গুলতেকিন ম্যাজিকগুলোর কৌশল ধরে ফেলে।এরপর হুমায়ূন আহমেদের মানুষের জন্ম-মৃত্যু কাছ থেকে দেখার আগ্রহের কথাও উল্লেখ করেছেন। বইটি পড়লে 'দেবী' উপন্যাসটি যার ঘটনা নিয়ে লেখা তার সম্পর্কেও জানতে পারবেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ভালো ছাত্র আনিস সাবেতের ব্যাপারে লিখে বইটি শেষ করেন।
🌹পাঠপ্রতিক্রিয়া:
বইটি পড়ে হুমায়ূন আহমেদের ব্যাপারে অনেক অজানা তথ্য জেনে ভালো লেগেছে। বইটি পড়ে আনন্দ পাবেন শুধু শেষে আনিস সাবেতের ব্যাপারে ঘটনাটি পড়ে মনটা একটু খারাপ হবে।
যেহেতু আবার লকডাউন শুরু হয়েছে,তাই আর দেরী না করে বইটি পড়ে ফেলুন।
হুমায়ুন আহমেদ তার জীবনের কিছু খন্ড চিত্র বইটিতে তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, বিশ্ববিদ্যালয় বা সিনেমা তৈরির সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা হাস্যরসাত্মক ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া নিজের জাদু দেখানো, হাত দেখা, বিভিন্ন মানুষের সাথে সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে
"এই জীবনে বেশির ভাগ কাজই করেছি আমি ঝোঁকের মাথায়। হঠাৎ একটা ইচ্ছে হল, কোনদিকে না তাকিয়ে ইচ্ছেটাকে সম্মান দিলাম। পরে যা হবার হবে।"
এরকম ঝোঁকের ইচ্ছেকে সম্মান দেয়ার ছোট্ট কয়েকটা উদাহরণ দিই। সেসময় সায়েন্সের ছেলেদের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ইংরেজী বা ইকনমিক্স পড়া ছিল ফ্যাশন। হুমায়ূন আহমেদও ফ্যাশনমত ইকনমিক্সে ভর্তি হয়ে গেলেন। তাঁর এক বন্ধু পড়বে কেমিস্ট্রি। তাকে নিয়ে গেলেন কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে। হঠাৎ একজন স্যারকে চোখে পড়লো, ভীষণ স্মার্ট, সুদর্শন! সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে ফেললেন, ইকনমিক্স জলে ভেসে যাক, উনি পড়বেন কেমিস্ট্রি! ভর্তি হয়ে গেলেন কেমিস্ট্রিতে! কোন মানে হয়!
পরে পিএইচডি করতে গেলেন ভৌত রসায়নের উপর। দু'বছর কেটে গেছে, কোর্স ওয়ার্ক সব শেষ। একদিন বারান্দায় সিগারেট টানতে টানতে হাঁটছেন, খেয়াল করলেন এক বুড়ো ভদ্রলোককে। ঢুকে গেলেন সেই ক্লাসে। পলিমার রসায়ন বিভাগের প্রধান তিনি। তাঁর লেকচার শুনে তিনি মুগ্ধ! সিদ্ধান্ত জানালেন তাঁকে, তিনি ঐ বিভাগে যেতে চান। ভৌত রসায়নের প্রফেসর শুনে রাগ করলেন, হম্বিতম্বি করলেন, কিছুতে কাজ হলোনা। পিএইচডি করলেন পলিমার রসায়নে।
গুলতেকিনের সাথে তাঁর বিয়ে হয় অমন ঝোঁকের মাথায়। তখন তিনি হতদরিদ্র। লেকচারার হিসেবে ইউনিভার্সিটি থেকে সব মিলিয়ে সাত/আটশ' টাকা পান। বাবর রোডের এক সরকারী বাসায় থাকেন, যেটার এভিকশন নোটিস তখন হয়ে গেছে, ম্যাজিস্ট্রেট নিজে এসে বলে গেছেন বাড়ি ছাড়তে, না ছাড়লে পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে দেয়া হবে। নিতান্ত পাগল না হলে অমন অবস্থায় কেউ বিয়ের চিন্তা করে না। উনি করলেন। গুলতেকিনকে একদিন তিন মিনিট সময় দিলেন ভাবার জন্য, কোর্টে বিয়ে করবে কিনা। গুলতেকিন এক মিনিটেই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন। অথচ তিনি তখন মাত্র ক্লাস টেনের ছাত্রী! কি এক বিস্ময়! পরে অবশ্য কোর্টে তাঁদের যাওয়া হয়নি। কনের বয়স মাত্র চৌদ্দ বলে। বিয়ের পরদিনই তাদের পুরো পরিবারসহ ঐ বাসা থেকে পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে দেয়া হয়।
"আমি এখনো নিশিযাপন করি। মাঝে মাঝে কেমন জানি লাগে। মনে হয় হারিয়ে যাওয়া মানুষরা যেন হারিয়ে যায়নি — আছে, আমার পাশেই আছে। এই তো ভালোবাসা এবং মমতায় তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এমন অনুভূতি কখনো দিনে হবার নয় — তার জন্যে প্রয়োজন চিররহস্যময়ী — রাত্রি। অনন্ত অম্বর।" হুমায়ূন আহমেদের রাত জাগার অভ্যেস যার মাধ্যমে শুরু, তাঁকে নিয়ে এই লাইনটা, যিনি থ্রোট ক্যান্সারে ভুগে মারা যান।
বইটা হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক, তাঁর অভ্যাস, উৎসাহ, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা, যুক্তি, মুক্তিযুদ্ধের কিংবা চিত্রগল্প বানানোর খন্ড খন্ড কাহিনী নিয়ে লেখা। ২৫শে জুলাই, ২০১২ তে কেনা বই আমার। ১৯ তারিখ মৃত্যুর খবরটা শুনে মনে পাহাড় সমান অভিমান জমে ছিল তাঁর উপর। তাও এক সপ্তাহের মাথায় গিয়ে উনার অনেক বই কিনেছিলাম। পড়িনি তখন, কোন বইই পড়িনি কয়েক বছর, শুধু জমে থাকা অভিমানে। সেদিন বাতিঘর গেলাম, দেখলাম বইটা অনেকদিন পর। সচরাচর চোখে পড়ে না এসব বই এখন। পড়লাম অল্প ওখানে, বাসায় এসে হাতে লেখা তারিখ দেখে মনে পড়ে গেল সব।
আপনার দর্শন পাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। নিয়তি হতে দিল না।আপনার বই আবার পড়া শুরু করেছি বলে ভাববেন না সব অভিমান জলস্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছি। একেবারেই না! সব অভিমান জমে থাকুক। এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে না গেলেও পারতেন! আপনি ছেড়েছেন বলে আমিও আপনাকে ছাড়বো, তা হতে দিই কি করে? এজন্য এখনো অধিকাংশ বই পড়িনি, সিনেমা দেখিনি। থাকুক ওসব পড়ে। হবে না'হয় ক্ষণ।
ভালো থাকবেন ওপারে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
A look into the life and thoughts of the highly talented author. The binding of stories in terms of relevance and ambience is spectacular. The easy flowing narration is a gem that is inlaid and interwoven in fragments. 5/5 is not enough to do justice as a rating.
“অনন্ত অম্বরে” বইটি লেখক “হুমায়ূন আহমেদের” স্মৃতিচারণমূলক একটি বই। তিনি তাঁর জীবনের নানা গল্প বা নানা স্মৃতি গুলো লিখে রেখে গেছেন বিভিন্ন স্মৃতিকথামূলক বা আত্মজীবনীমূলক বইগুলোতে।
‘অনন্ত অম্বরে’ বইতে তিনি তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া উত্থান পতনের গল্প, পারিবারিক জীবনের গল্প, ব্যক্তিগত জীবনের গল্প এবং মুক্তি যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে গেছেন খুব সাবলীল ভাবে। লেখকের কিছু ঘটনা আমাকে যেমন করেছে আনন্দিত তেমনি করেছে দুঃখিত। কিছু কিছু স্মৃতিকথা পড়ে খুব হেসেছি আবার কিছু পড়ে হয়েছি ভাবিত।
কেমন মানুষ ছিলেন লেখক হুমায়ূন? এপ্রশ্ন করলে বলবো, তিনি ছিলেন তাঁর মতো। যেমন উদাহরণ দিলে বুঝবেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনমিক্সে ভর্তি হলেন। অথচ তিনি ছিলেন সায়েন্সের ছাত্র। তখন এটাই নাকি ফ্যাশন ছিলো। সেখানে দিন ভালো কাটছিলো। তারপর আবার কি মনে হলো, তিনি ঠিক করলেন কেমিস্ট্রি পড়বেন। অথচ তখন ইকোনমিক্সের পরিক্ষার সময় ঘনিয়ে এসেছিলো। স্যাররা অনেক বুঝালেন তবু তিনি কেমিস্ট্রি পড়বেনই। তিনি ঠিকই কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হলেন। তবে এই ভর্তি হবার পেছনে অদ্ভুত এক চিন্তা কাজ করেছে তাঁর মাথায়। সেটা পাঠকের জন্য তোলা রইলো।
তাঁর মাথায় কোনো কিছু একবার ঢুকলে তিনি সেটাই করবেন। সেটা হোক ভালো বক খারাপ। তিনি বলেন…
“এই জীবনে বেশির ভাগ কাজই করেছি আমি ঝোঁকের মাথায়। হঠাৎ একটা ইচ্ছা হলো, কোনোদিকে না তাকিয়ে ইচ্ছেটাকে সম্মান দিলাম। পরে যা হবার হবে...” এই হলেন তিনি।
তাঁর আরেকটা ঝোঁকের কথা বলি আপনাদের…,
তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার। সামান্য কিছুই বেতন পান। এদিকে সরকারের দেয়া বাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদ করে দিবে বলে নোটিশ দিলো কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে তাঁর গুলতেকিনকে পছন্দ হয়ে গেলো। এদিকে তাদের উচ্ছেদের দিনও ঠিক হয়ে গেছে। তার মধ্যেই একদিন ঝোঁকের মাথায় গুলতেকিনকে ডেকে তাঁকে কোর্টে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলেন, সেটা ভাবার জন্য তিন মিনিট সময় দিলেন তাঁকে। গুলতেকিন অবশ্য একমিনিটেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। তবে যাই হোক তখন বিয়ে হলো না। কিন্তু পরে আরো চমৎকার মাধ্যমে তাঁদের বিয়ে হলো৷ তবে গুলতেকিন বিয়ের পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন যে তাদের ঘরের ফ্যানটা কেউ একজন খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। এবং একে একে সবকিছুই নিয়ে যাচ্ছেন। গুলতেকিন জিজ্ঞেস করলো এসব কী? তিনি কিছু না বলে রিক্সা করে তাকে নিয়ে ঘুরতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এমনই চমৎকার চমৎকার সব স্মৃতিকথায় ভরা বইটি। খুব সুন্দর লেখেনিতে লেখা প্রতিটি অধ্যায়। আছে তাঁর ভয় পাবার স্মৃতির কথা। তিনি রহস্য খুব পছন্দ করতেন। তিনি ‘দেবী’ বইটি লেখেছিলেন একটি সত্যি কাহিনির উপর ভিত্তি করে। সেই কাহিনির শুরু কিভাবে হলো তার বর্ণনা করেছেন তিনি।
আবার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অতি চমৎকার একা কাহিনি বলেছেন তিনি, যাহোক বাকি সবকিছু তোলা রইলো পাঠকের জন্য। এই বিরক্ততম মূহুর্তে বইটি পড়ে পাঠক অন্তত বিরক্ত হবেন না তা বলতে পারি।
বইটির নাম দেখে একটু বিচলিত হলাম পড়ার শুরুতেই। অনন্ত অম্বরে- অর্থ কি?- সীমাহিন আকাশে- আত্মজীবনীমূলক বইয়ের এমন নাম কেন? উত্তর পেলাম বইয়ের শেষে, একদম লাস্ট লাইনে।
হুমায়ূন আহমেদ এর বড় বিশেষ্যত্ব তার লেখার স্মুথনেস। একটাই সমস্যা যে তার বই পড়া অভ্যাস হয়ে গেলে অন্য কোনো লেখকের লেখা পড়তে আর ইচ্ছে হয় না। এই স্মুথনেস অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল। বইটি পড়ার সময় বন্ধু দিপুর সাথে এটি নিয়েই কথা হচ্ছিল। লেখকের জীবন বড়ই বিচিত্রময়। ছোটবেলা থেকে নানা বিচিত্র ঘটনার সাক্ষী তিনি। কলেজ জীবন, ইউনিভার্সিটি লাইফ, বিয়ের গল্প, প্রবাশ জীবনের নানা চিত্তাকর্ষক ঘটনার সাথে জীবনের প্রবাহে বিবিধ মানুষের সাথে ঘটনাবহুল স্মৃতি লেখক এই বইয়ে এঁকেছেন তার চিরায়িত অপ্রতিন্দ্বন্দ্বি গল্প বলার ভঙ্গিতে। লেখনির সহজ-সরল-প্রাঞ্জল্যের সাথে পাঠককে আটকে রাখার দুর্বার ক্ষমতা অনুভব করে যেমন অভিভূত হতে হয়, তেমনি বাক হতে হয় লেখকের বিশাল কর্মযজ্ঞময় ঘটনাবহুল জীবন দেখে। সাধারণ রুটিনমাফিক জীবন যাদের, তাদের কাছে আরাধ্য হয়ে দেখা দেয় এমন বিচিত্র জীবন যাপন করতে পারা।
বইয়ের শুরুতেই লেখক তার এক জন্মদিকনের ঘটনা বর্ণনা করেন। তার মেয়েরা তাকে সারপ্রাইজ দেয়। তার পছন্দের সব গান ক্যাসেট করে রাখে, এই বিশেষ দিনে তারা বাসার সব কাজ করে। লেখক তার জীবন নিয়ে এক পরিতৃপ্তি অনুভব করেন-' বৈশাখ মাসে যখন আকাশ অন্ধকার করে কালবোশেখী আসে, তখন মনে হয়, কি ক্ষতি ছিল পৃথিবী যদি আরেক্টু কম সুন্দর হত।'লেখক মন্টানায় জ্যোস্নাযাপনের স্মৃতি রোমন্থন করেন। 'সুন্দরের সন্ধানে ব্যাকুলতা জাগে'
This entire review has been hidden because of spoilers.