গহীন হিমালয়ের মাঝে এক যে ছিল দেশ - নিষিদ্ধ, রহস্যে ঘেরা। কলকাতার এক যুবককে বৌদ্ধ পণ্ডিত সাজিয়ে পাঠাল ব্রিটিশ সরকার। সন ১৮৭৯। ঠিক সেইসময় দার্জিলিঙের এক নিরক্ষর দর্জি চলেছে সেখানে - বিশ্বের দুর্গমতম গিরিখাতের ভেতর বয়ে চলেছে যে নদী, তার অজানা পথের সন্ধানে। ইতিহাস এঁদের মনে রাখেনি। এক অবিশ্বাস্য যাত্রার কাহিনি চাপা পড়েছে সরকারি মহাফেজখানার ধুলোয়। যদিও সেই যাত্রাপথের রেখা ধরে গুপ্তচর, সেনানায়ক, প্রেমিক ও প্রকৃতিবিদেরা গিয়েছে তারপরে।
তার আগেও। রহস্যনদীর পথ, লুকোনো উপত্যকা থেকে শুরু করে স্বজাতির উৎস সন্ধানে বেরিয়ে তারা কখনও কিছুই পায়নি, মারা পড়েছে বেঘোরে, কিংবা খুঁজে পেয়েছে এক নতুন প্রজাতির নীল পপি, ঝর্ণার গায়ে একটি নিটোল রামধনু, অনির্বাণ প্রেম। পাহাড়ি পথের মতো, নদীর মতো বহুধা আখ্যানের জাল ছেয়ে এসেছে উত্তরপূর্ব হিমালয়ে।
সেই জালে আটকা পড়েছেন লেখক। সিমলায় পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে শিংলিলার জঙ্গল, পার্ক স্ট্রিটের গোরস্থান থেকে অরুণাচলের প্রত্যন্ত জনপদে হাতড়ে বেড়িয়েছেন সেই জালের গিঁট, যা খুলতে পারলে মিলে যেতেও পারে শাংগ্রিলার ঠিকানা।
পরিমল ভট্টাচার্য বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখেন। স্মৃতিকথা, ভ্রমণ আখ্যান, ইতিহাস ও অন্যান্য রচনাশৈলী থেকে উপাদান নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এক নতুন বিশিষ্ট গদ্যধারা, নিয়মগিরির সংগ্রামী জনজাতি থেকে তারকোভস্কির স্বপ্ন পর্যন্ত যার বিষয়-বিস্তার। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। কলকাতায় থাকেন।
তিব্বত নিষিদ্ধ দেশ। সেখানে যাওয়ার জন্য দুঃসাহসী মানুষ পাড়ি জমিয়েছে যুগে যুগে; কেউ গেছে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে, কেউ গেছে সরকারিভাবে। ১৮৭৯ সালে এক বাঙালি যুবক শরৎচন্দ্র দাস যেমন ব্রিটিশদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে গেছেন,তেমনি গেছেন দার্জিলিংয়ের এক দর্জি কিন্টুপ। একই যাত্রা কিন্তু ফলাফল ভিন্ন। পরিচয় লুকিয়ে তারা অনেক তথ্য জেনে ব্রিটিশ সরকারের উপকার করেছেন, আবার শরৎচন্দ্র সর্বনাশ ডেকে এনেছেন কিছু নিরীহ তিব্বতির। আগে পরে অনেক বিদেশি অভিযাত্রী ও বাঙালি তিব্বতে গেছেন। লেখক পরিমল ভট্টাচার্যও যাত্রা করেছেন সেদিকে কিন্তু তার মধ্যে উপস্থিত শুধু ইতিহাসচেতনা ও বিস্ময়। পূর্বসূরিদের রোমহর্ষক যাত্রা ভট্টাচার্যকে অভিভূত করেছে কিন্তু তিনি জানেন শাংগ্রিলা নামক অনন্তযৌবনা রাজ্য খুঁজতে যেয়ে এসব "নিরীহ অভিযাত্রী"দের হাতে রক্তের দাগও লেগে গেছে। "শাংগ্রিলার খোঁজে" সেই রোমাঞ্চ ও রক্তের দাগের গল্প।
ভয়াবহ এক মোটর দুর্ঘটনায় জীবন বিপন্ন হতে বসেছিল মার্ক নফলারের। সাত মাস গিটার থেকে দূরে ছিলেন, ফিরে এসে বাঁধলেন শাংগ্রিলা। গিটারের তারে যে কল্পলোকের খোঁজ নফলার পেতে চেয়েছিলেন, ১৯৩৩ সালে দ্য লস্ট হরাইজন বইতে সেটির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জেমস হিলটন। সেই শাংগ্রিলাকে নিয়ে এরপর কত জল্পনা কল্পনা। তবে সত্যি সত্যিই সেই ইউটোপিয়ার খোঁজ পেয়ে গিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের এক নিরক্ষর দর্জি। সেই অভিযান রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো, লেখকের রংদার বর্ণনায় তার চেয়ে উপাদেয় কিছু কমই আছে।
ভ্রমণকাহিনি আর ইতিহাস যারা ভালোবাসেন, এই বই তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। আর যারা বাসেন না, এই বই পড়ার পর বোধ হয় বেসেও ফেলতে পারেন
বইটি নিয়ে লেখার শুরুতেই একটা কথা স্পষ্ট করা দরকার। কিংবদন্তি, গল্প, এমনকি শাস্ত্রে উল্লিখিত শাংগ্রিলা বা সাম্ভালা-র সঙ্গে এই বইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে এই বই কী নিয়ে? কাদের জন্য লেখা হয়েছে এই বই? এই সুমুদ্রিত, সচিত্র বইটি ভারতীয় উপমহাদেশের ভূরাজনীতি (যাকে আমরা সরল ভাষায় জিওপলিটিক্স বলে থাকি), ইতিহাস, অ্যাডভেঞ্চার এবং স্মৃতিচিত্রণ নিয়ে গড়ে উঠেছে। ধারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষাকে ঠেকানোর জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রচেষ্টা। উপাদান হিসেবে এসেছে ভূগোলের ফাঁকফোকর ভরাট করার চেষ্টায় চালানো অভিযান আর সমকালীন তিব্বতের নানা আখ্যান। রয়েছে অমানুষিক প্রতিকূলতা সহ্য করে এগিয়ে যাওয়ার মানুষী উপাখ্যান। কিন্তু এতে কোনো মিথ নিয়ে চর্চা পাবেন না আপনি। তাই যে পাঠকেরা জেমস হিল্টন-এর 'লস্ট হরাইজন'-এ বর্ণিত সেই রহস্যময় দেশটির সুলুকসন্ধান পেতে চাইবেন, বইটি তাঁদের জন্য লেখা হয়নি। যে-সব অধ্যায়ে বইটিকে সাজানো হয়েছে, তাদের শীর্ষনাম তুলে দিলেই এই স্মৃতিচিত্রণের ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে: ১. মারিয়া ব্রাদার্স ২. এক যে ছিল নদী ৩. শাংগ্রিলা বার ৪. লাসা ভিলা ৫. ছোট্ট সবুজ কচি একটা মেয়ে ৬. রিঞ্চেন তেনোয়া ৭. তাশিলুম্ফো ৮. কেসাং লেপচার বাঁশি ৯. বিস্মৃতির শহরে ১০. হীরক শুকরী ১১. ভাঙা নৌকোর যাত্রী ১২. শিকড়ের খোঁজে ১৩. স্মৃতির রাজপুত্র ১৪. আরশিনগরের পানশালা ১৫. গিমমি দ্য ওয়াটারফল! ১৬. কিন্টুপের পথ ১৭. গুপ্তভূমির দরজা ১৮. বেইলি ট্রেল ১৯. পৃথিবীর শেষ দশ মাইল ২০. চমরিঘণ্টার ধ্বনি এরপর রয়েছে 'সূত্রনির্দেশ' নামের একটি অংশ, যা আগ্রহী পাঠককে আরও পড়ার মতো বইয়ের সন্ধান দেবে। পরিমল ভট্টাচার্য প্রজ্ঞা ও লেখনী— দুই বিভাগেই অদ্বিতীয়। তাঁর এই বইটি পড়তে বসেও চোখের সামনে কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়। তাদের কোনোটা ফুটিয়ে তোলে খাড়া পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেওয়া ব্রহ্মপুত্রকে। আবার কোনোটাতে দেখতে পাই গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের আগুনে আক্ষরিক অর্থেই পুড়ে যাওয়া ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে! তাই কিংবদন্তির সাম্ভালার সন্ধান এতে পেলেন না বলে হতাশ হবেন না। বরং খোলা মনে আসুন এই আসরে। হাতে তুলে নিন গরম চা। দেখে নিন, ছোট্ট হিটারের উষ্ণতা আর আলো বাইরের নীল সন্ধ্যার শৈত্য আর ঘনায়মান অন্ধকারকে ঠেকাতে পারছে কি না। দেখে নিন, আশেপাশের বই আর অন্য টুকিটাকি জিনিসগুলো জায়গামতো আছে কি না। তারপর শুরু হোক আপনার নিজস্ব শাংগ্রিলার খোঁজ।
১৭৯২ সালে নেপালের সাথে যুদ্ধের পর থেকে তিব্বত ভিনদেশিদের জন্য হয় নিষিদ্ধ দেশ। সেই যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গোর্খাদের পক্ষপাতিত্ব করায় ব্রিটিশ-তিব্বত মৈত্রী নষ্ট হয়ে যায়। তখন ভারতে শেষ হয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল, রাণি ভিক্টোরিয়ার সাম্রাজ্যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল যুক্ত হয়েছে একছত্র শাসনব্যবস্থা।
সেই নিষিদ্ধ দেশের গহীনে হিমালয়ের মাঝে আছে এক রহস্যে ঘেরা দেশ। ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ সরকার কলকাতার এক যুবককে বৌদ্ধ পণ্ডিত সাজিয়ে সাথে দার্জিলিং এর এক নিরক্ষর দর্জি কে পাঠালেন। গহীন জঙ্গল, দূর্গম গিরিখাতে বেয়ে নেমে গেছে ঝর্ণা ও গিরিখাত এর মধ্যে দিয়ে বয়ে চলছে গভীর নদী যেখানে কখনও কোন মানুষের পায়ের চিহ্ন পড়েনি, সেই অজানা পথ ধরে খুঁজে চলেছেন পরিনতির কথা না ভেবে। যদিও পরে এদেরকে কেউ মনে রাখেনি, না সরকার না ইতিহাস। তবুও পরে অনেক গুপ্তচর, সেনাবাহিনির লোক, প্রকৃতিপ্রেমিক এই পথ ধরেই গেছেন। তবুও খোঁজ মিলেছে সেই চিরশান্তির দেশ শাংগ্রিলা ওরফে শাম্ভালা?
শাম্ভালা এক অনাবিল শান্তির দেশ। বিশেষ কর্মফল অর্জন করার পরেই কেবল মানুষ যেতে পারে সেখানে। কালচক্র তন্তের কিছু কিছু প্রাচীন পুঁথিতেও এর উল্লেখ রয়েছে : এক পবিত্রভূমি, বিশ দিন ধরে অন্তহীন সাদা বালির মরুভূমি পার হয়ে সেখানে যেতে হয়৷ এই শাম্ভালা আসলে হাঙ্গেরিয়দের পূর্বজ ইয়োগোরদের আদিভূমি, এমনটাই অনুমান করেছিলেন কোরোসি৷
সেই আদিভূমির সন্ধানে অনেকগুলো মাহাদেশ ডিঙিয়ে তিনি ভারতে আসেন। ন-বছর ধরে নিবিড় গবেষণার ফল প্রকাশ করলেন এসিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে। এক আশ্চর্য ভূমি-- কোরোসি লিখেছেন, ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখার মাঝে অবস্থিত।
পরবর্তীকালে ভূগোলবিদেরা হিসেব করে দেখিয়েছে, উত্তরে এ অক্ষাংশে রয়েছে পূর্ব কাজাখস্তান -- সবুজ অরণ্যে-ছাওয়া নীচু পাহাড় নদী আর হ্রদ। সাদা বালির মরুভূমি নেই, বরফ ঢাকা পাহাড়ের দেশে গোপন গহীননকোন উপত্যকাও নাই। তাঁর অনুমান যে কোথাও একটা ফাঁক ছিলো, সেটা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন কোরোসি। তাই শাম্ভালার হদিস পাবার পরও দীর্ঘকাল তার সন্ধানে বেরিয়ে পরার কোন উদ্যম দেখা যায় নি তাঁর মধ্যে।
তবে যারা শাম্ভালার রহস্যের ইসারায় সাড়া দিয়ে রহস্যনদীর পথ, লুকোনো উপত্যকা থেকে ���ুরু করে নতুন অজানা কোন জাতির উৎস সন্ধানে বেরিয়ে৷ পড়েছিলেন তারা কখনও কিছুই পায়নি। বহু অজানা পথ ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির নান রহস্য দেখে মারা পড়েছে বেঘোরে। তবে খুঁজে পেয়েছে এক নতুন প্রজাতির নীল পপি, ঝর্ণার গায়ে একটি নিটোল রামধনু, পাহাড়ি পথ, নদী যা বহুবছর ধরে জাল ছেয়ে রেখেছে উত্তরপূর্ব হিমালয়ে।
তবে সেই জালে আটকা পড়েছেন লেখক নিজেও । আর হয়তো তারই ফলে আজ আমরা পেয়েছি চমৎকার এই বইটা।
শাংগ্রিলা বা সাম্ভালা হচ্ছে কাল্পনিক এক জায়গা। এই ইউটোপিয়ান জায়গা কীভাবে এতো পরিচিত হয়ে উঠল তার একটা বিবরণ বইতেই পাওয়া গেল। শুরুতে সেই বর্ণনা জেনে নেয়া যাক।
"১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হল জেমস হিল্টনের দ্য লস্ট হরাইজন- সাহিত্যের গুণবিচারে নিতান্তই সাধারণ মানের একটি উপন্যাস, কিন্তু প্রকাশমাত্রেই সাড়া ফেলে দেয়। ছিনতাই-হওয়া একটি বিমানে ছয় ইউরোপীয় এসে পড়ল গভীর তুষারাচ্ছাদিত তিব্বতে লুকোনো এক চিরবসন্তের উপত্যকায়। সেখানে কুলকুল করে বয়ে চলে স্বচ্ছ জীবন্ত এক নদী, জীবন বয়ে চলে নদীর ছন্দে, দুপাড়ে সবুজ উর্বর বাগিচা বরফগলা ঝর্ণায় বিধৌত, তার ছায়ায় বিছিয়ে থাকে একটি শান্ত জনপদের নকশি কাঁথা। সেখানে উঁচু পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে একটি মঠ, ঠিক যেন প্রস্ফুটিত পদ্ম- তার ধর্ম আর শান্তির বাণী পুষ্পরেণুর মতো বাতাসে বয়ে এসে ছড়িয়ে যায় জনপদের ওপর। এই হল শাংগ্রিলা।
তখনও ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত শুকোয়নি, এদিকে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে আসন্ন আরেকটি যুদ্ধের ছায়া। যন্ত্রজব্দ যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিমের মানুষ প্রাচ্য সাহিত্যে দর্শনে আঁতিপাতি করে খুঁজছে ভিন্ন একটি জীবনবোধ। শাংগ্রিলা হয়ে উঠল সেই বোধের ঠিকানা।
হিল্টনের উপন্যাস নিয়ে হলিউডে সিনেমা তৈরি হল, মার্কিন দেশে হিপি সংস্কৃতি জনপ্রিয় হল, শাংগ্রিলা নামটি ক্রমশ হয়ে পড়ল প্রাচ্য আধ্যাত্মিকতার ব্র্যান্ড নেম। কুহকী রোমান্টিকতারও; হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে মাসাজের তেল, স্পা রিসর্ট থেকে যৌনশক্তিবদ্ধক টনিক, সুগন্ধী ইত্যাদি। ১৯৫৯ সালে চিন তিব্বত দখল করার পর শাংগ্রিলা হারিয়ে গিয়েছিল লৌহপর্দার আড়ালে। বছর তিরিশেক ধরে বিশ্ব জুড়ে বাজার অর্থনীতির হাওয়ায় চিনের দরজা খুলল, ইয়ুনান প্রদেশে একটি কাউন্টির নাম সরকারিভাবে বদলে রাখা হলো সাংগ্রিলা।"
বইতে বেশকটা অভিযানের গল্প পাওয়া যায়। ওসব অভিযানের উদ্দ্যেশ্য বলা যায় নিষিদ্ধ, দুর্গম এবং অজানা তিব্বতের রহস্য ভেদ করা। এসব কাজে আবার অর্থ ও সাহায্য জুগিয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। সুবিশাল ভারতীয় সাম্রাজের পাশে এরকম রহস্যঘেরা এলাকা সম্পর্কে তাদের হাতে তথ্য ছিলো যথেষ্টই কম। তাছাড়া অপরপাশে থাকা চীনের খবরদারিও তাদের চিন্তিত করে তুলেছিল। কিন্তু তিব্বতের তথ্য পাওয়া সহজ নয়। একে তো দুর্গম, তার উপর প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ এই এলাকার তথ্য জোটাতে গুপ্তচর পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হয় ব্রিটিশ সরকারকে। পাহাড়, প্রকৃতি এবং অজানা রহস্য ভেদের আকর্ষণে সে পথে পা বাড়িয়েছিলেন অনেকেই।
এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখিয়েছিলেন বাঙালি শরৎ দাশ। চট্টগ্রামের এই যুবক তিব্বতে যান দুবার। তার উভয় যাত্রা থেকেই প্রচুর ভৌগলিক তথ্য পাওয়া গিয়েছিল এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাকে রায়বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে ব্রিটিশ সরকার। শরৎ দাশের অভিযান এবং তার কথাই বইতে এসেছে সর্বাধিকবার।
সবাই যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গিয়েছিলেন এমনটা নয়। সামরিক অফিসার বেইলি অথবা হাঙ্গেরীয় জাতির ইতিহাস খুজে ফেরা কোরেসি এক্ষেত্রে ভিন্ন উদাহরণ হতে পারেন। বেইলি যাত্রা করেছিলেন অনেকটা কৌতুহলের বসেই। বেইলির সেই যাত্রা বিবরণ থেকেও অনেক এলাকার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। পথিমধ্যে পেয়েছিলেন কিছু চমৎকার ও অনাবিষ্কৃত উদ্ভিদের খোজ যা পরবর্তীতে ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। তবে বেইলির নামটা আরো গুরুত্ববহ হয়ে উঠে যখন তাদের যাত্রাপথকে অবলম্বন করেই টানা হয় ম্যাকমাহন লাইন।
তবে অতোগুলো অভিযানের ভীড়ে কিন্টুপের অভিযানটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের। কিন্টুপ ছিলেন একজন নিরক্ষর দর্জি। কিন্তু তার দারুণ স্মৃতিশক্তির কারণে গুপ্তচর হিসেবে তাকে পাঠানো হয় তিব্বতে। কিন্টুপ যে সময়ে গিয়েছিলেন তখন সাংপো নামে তিব্বতি এক নদীর কথা জানতে পারা গিয়েছিল। এই সাংপোই বহ্মপুত্র নামে বহমান কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। কারণ সাংপো পাহাড়ি নদী, ভূপৃষ্ঠ থেকে ওর উচ্চতা অনেক বেশি। অতো উচ্চতা থেকে কীভাবে এসে বহ্মপুত্রের জলধারায় পরিণত হয় তার জটিল সমীকরণ মেলানো যাচ্ছিল না। কিন্টুপকে দেয়া হয় এই রহস্যভেদের দায়িত্ব। সেই অভিযানে কিন্টুপ বেশ বিড়ম্বনায় পড়েন। ক্রীতদাস হিসেবে তাকে বেচে দেয়া হয়, লামাদের হয়ে কাজ করতে হয় চার বছর। তবে এর মধ্যে কিন্টুপ তার মূল কাজ রহস্যভেদ করে ফেলেন। সাংপোই যে বহ্মপুত্র তা নিশ্চিত হন এবং নদীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিবরণ তিনি মাথায় গেথে ফেলেন। কিন্তু এতো কষ্ট করা সহ্য করা কিন্টুপের পরবর্তী পরিণতি আরো মর্মান্তিক। পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়।
এই সাংপো নদীর কথাও বহুবার এসেছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রত্যাশা ছিল যে সাংপোর মতো উচু অববাহিকার এই নদী সমতলে নেমে আসার পথে নিশ্চয়ই একটা বৃহৎ জলপ্রপাত পাওয়া যাবে। হয়তো নায়াগ্রা, স্ট্যানলি কিংবা লিভিংস্টোন এর মতো দৃষ্টিনন্দন কিছু। এ নিয়ে রোমাঞ্চকর অনুসন্ধান চলে লম্বা সময়। সেসবের কিছু বর্ণনাও নানান প্রেক্ষিতে চলে আসে।
পরিমল ভট্টাচার্য তার চিরাচরিত নন-লিনিয়ার উপায়ে বিবরণ দিয়ে গেছেন। এক তিব্বতি গ্রামের পরিবেশ, গাছপালা, সেখানকার মানুষদের আচার নিয়ে বলার মাঝেই একশো বছর পিছিয়ে তিনি শরৎ দাশের দেখা গ্রামের বর্ণনায় ফেরত গিয়েছেন। কখনো কখনো ওখানকার বিভিন্ন চরিত্রদের জীবনের ছোট ছোট অধ্যায়ের গল্প বলেছেন। এভাবে প্রাসঙ্গিক এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে নানান আলাপ চলে এসেছে। অল্প পাতার মধ্যে এতো গল্পের আধিক্য এবং ব্যাতিক্রমী শব্দমালার ব্যবহার পড়ার গতি স্তিমিত করে দেয়। তবুও দিনশেষে বইটা পড়ার অনুভূতি বেশ উপভোগ্যই বলতে হবে।
আর শাংগ্রিলা? যেহেতু পুরো ব্যাপারটাই কাল্পনিক তাই সরাসরি এর অবস্থানের খোঁজে যাওয়া অবান্তর। কিন্তু প্রত্যেকেই আলাদাভাবে নিজস্ব শাংগ্রিলার স্বপ্ন দেখে, সেই শাংগ্রিলার খোঁজেই কাটিয়ে দিতে হয় পুরো জীবন।
অবিশ্বাস্য সুন্দর আর ভয়ংকর রকম ভালো বর্ণণায় ঠাসা একটা বই। বর্ণনাকে নিছক বর্ণনা বলা যাবেনা,বলা উচিৎ হাজারটা দৃশ্য। পড়তে পড়তে কেবলই সেসব দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে অনাগত ভবিষ্যৎ এর মতো। রহস্যে মোড়া তিব্বতের এমন ম্যাজিকাল বর্ণনা, ভোরের স্বপ্নের মতো সত্যি অনুভূত হওয়া এমন দৃশ্যকল্প পড়তে পড়তে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছিলাম,তলিয়ে যাচ্ছিলাম প্রতিটি পাতায় পাতায়। এমন একটি মাস্টারপিস রচনা করার জন্যে লেখককে সহস্র সালাম।
যতটা রোমাঞ্চকর ভাবে শুরু করেছিলেন লেখক, পুরো কাহিন��তে সমানভাবে সেটা ধরে রাখতে পারেননি। কিন্টুপ দর্জি আর শরতচন্দ্র দাসের অভিযানের আদ্যোপান্ত তিনি বলতে পেরেছেন, পরবর্তী অভিযাত্রিকদের বিষয়ে বর্ণনা করে ফেলেছেন বেশ সংক্ষিপ্ত। ব্যক্তিগত গল্পগুলোর বর্ণনাও অনেক জায়গায় কাহিনির সাথে খাপ খায়নি।
কিছু বই থাকে একটানা পড়া যায় না। খানিকটা পড়ে একটু বিরতি নিতে হয়, যা পড়���াম সেটা নিয়ে আপ্লুত ভাবটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে হয়।
হিমালয়ের ঐ পাড়ের রহস্যের দেশ তিব্বত। সেই দেশটা মাপজোখ করতে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হানা দেওয়া মানুষগুলোর কাহিনীর সাথে মিশে গেছে লেখকের অনুসন্ধান যাত্রা। ভীষণ অরণ্য, খরস্রোতা নদী, দুর্গম গিরিখাত আর দুর্লঙ্ঘ্য পর্বত পেরিয়ে নানা মানুষ হাজির হয়েছেন তিব্বতের দ্বারে। বহুকাল আগে তাঁদের লেখা ভ্রমণকাহিনী আর জরিপ প্রতিবেদনের ফাঁক গলে লেখকের সাথে সাথে আমরাও উঁকি দেই হিমালয়ের ওপাশে। দার্জিলিং-শিমলা-সিকিম-অরুণাচল হয়ে এই পথ আমাদের নিয়ে যায় শীগাৎসেতে, সেখানে জিরিয়ে নিয়ে রাজধানী লাসায়। ঊষর মালভূমির বিস্তৃত প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা এই তিব্বতে যাবার পথটি ভয়ংকর সুন্দর। লেখকের বিবরণ পড়তে পড়তে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বরফে ঢাকা পাহাড়ের পাদদেশে ঘন বন, গিরিখাতের ফাঁকে বয়ে চলা সাংপো নদীর পাড়ে ছোট ছোট বসতি, যেখানে চমরির ঘণ্টা আর গোম্ফার মন্ত্রপাঠ এক হয়ে যায় যবের ক্ষেতে।
এমন ঝরঝরে কাব্যিক ভাষায় প্রকৃতির বর্ণনা শেষ পড়েছিলাম "আরণ্যক" এ।
গহীন হিমালয়ের রহস্যঘেরা পথ ঢুঁড়ে গেছেন কত অভিযাত্রিক। ১৭৭৪ সালে তিব্বত যাত্রা করলেন জর্জ বোগল। এরপর একে একে কত পালাবদল৷ জোসেফ ডাল্টন হুকারের হিমালয় ভ্রমণকাল ১৮৪৭-৫১। ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৯ সনে এক বাঙালি যুবক, নাম শরৎচন্দ্র দাসকে বৌদ্ধ পণ্ডিত সাজিয়ে পাঠাল গহীন হিমালয়ের পথে। একই সময় দার্জিলিং এর দর্জি কিন্টুপ ও পা বাড়াল সেই রহস্যময় পথে৷ এই অভিযানগুলোর কাহিনী সরকারি কাগজপত্রের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে ইতিহাস থেকে৷ কিন্তু লেখক সেই অজানা পথ খুঁজতে চেয়েছেন তাঁর আশ্চর্য মায়াবী ভাষায়। খুঁজতে চেয়েছেন রহস্যময় শাংগ্রিলার পথ। এত অসাধারণ ভাষা আমি দীর্ঘদিন কোন লেখকের লেখায় পেলাম। প্রতিটা শব্দ মায়ায় মোড়া। এক আশ্চর্য ভাষার জাদুকর। একেই তো দার্জিলিং মানেই স্বপ্নপুরী। পাহাড়, কুয়াশা, বৃষ্টির রহস্যের সাথে সাথে এই মায়াবী আখ্যান যেন চোখে মায়াকাজল বুলিয়ে দেয়। এই আশ্চর্য ভ্রমণকাহিনী আর বর্তমানের সেতুবন্ধন লেখক অনুপম ভাষায় রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে উপহার দিয়েছেন এক অমূল্য রত্ন। মোরগের ডাক, কাঠের মেঝেয় পায়ের শব্দ, জল পড়ার শব্দ, দূরাগত গরুর হাম্বা রবে সম্পূর্ণ জেগে উঠি, কিন্তু বাঁশিটা বেজেই চলে।
বছরের ৩৫ নম্বর বই ইতিহাস মিশ্রিত ভ্রমণ কাহিনী শাংগ্রিলার খোঁজে।। বইটি নিয়ে লেখার আগে যেটা বলা দরকার শাস্ত্রে উল্লেখিত শাংগ্রিলা বা সাম্ভালা এর সাথে এই বইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।। পেপারব্যাক বইটির প্রচ্ছদটি এতটাই নিখুঁত যেন আপনাকে হাতছানি দিয়ে নিজের কাছে ডাকবে, যেমন যেকোন নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আমরা আকর্ষিত হই।। ১৯৪ পাতার বই, এইসকল বই এক বসায় পড়ে ফেলার মত নয়, আমার ক্ষেত্রে তো বেশি সময় লেগেছে।। রসস্বাদন করে সময় নিয়ে পড়েছি বইটি, মাঝে মাঝেই টাইমলাইন নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল সেক্ষেত্রে সময়রেখা পেজটির প্রিন্টআউট নিয়ে পড়তে বসেছি।। ভ্রমণ কাহিনী যে এত সুন্দর হতে পারে তার ধারণা হয়তো এই বই না পড়লে বুঝতে পারতাম না।। গল্পের ভিতর গল্প।। ঠিক যেন চোখের সামনে ফুটে উঠছে একের পর এক দৃশ্য - দার্জিলিং, সিকিম, সিগাতসে, লাসা, অরুণাচলের, বরফ আবৃত শৃঙ্গ, পথের মাঝে রডোডেনড্রন আর পাইনের জঙ্গল, নদীপথে গিরিখাত, দুর্গম অঞ্চলে লামাদের মঠ।। অসম্ভব সুন্দর সব বর্ণনা।।
✴️✴️ পটভূমি -
দার্জিলিংয়ের চকবাজার থেকে কিন্টুপকে সাংপোই ব্রহ্মপুত্র কিনা তার খোঁজসহ অন্যান্য গোপন গুপ্তচরবৃত্তির কাজে তিব্বত পাঠান ব্রিটিশ লেফটেন্যান্ট হেনরি হার্মান । নিরক্ষর অথচ বুদ্ধিমান , বিশ্বস্ত , কষ্টসহিষ্ণু ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী কিন্টুপ সুদীর্ঘ চারবছর দুর্গম যাত্রায় শতসহস্র বাধার সম্মুখীন হয় , এই সব প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দশদিনে প্রতিদিন পঞ্চাশটি কাঠের দন্ডে ব্রিটিশ সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সিল এঁটে জলে ভাসিয়ে দেয় সে , ব্রহ্মপুত্রের সমতলপ্রবাহে তা পাওয়া গেলে প্রমাণিত হবে সাংপোই ব্রহ্মপুত্র । এরপর শরৎচন্দ্র দাস , মেধাবী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার , জরিপ ও মানচিত্র অঙ্কনের কাজে দক্ষ , ইংরেজি শিক্ষিত নবীন যুবা গুপ্তচরবৃত্তির কাজে তিব্বত যাবেন । তিনি ফিরে এসে লিখবেন তিব্বতযাত্রার অভিজ্ঞতা। গুপ্তচর হিসেবে তার সংগৃহীত তথ্যে বলীয়ান হয়ে ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড 1903 সালে সামরিক অভিযান করবেন । শরৎচন্দ্রকে যারাই আতিথ্য দিয়েছিল বা বাড়িয়েছিল সাহায্যের হাত তাদের লাসা দেবে মৃত্যুদণ্ড নয়তো অন্ধকূপে নির্বাসন । দার্জিলিংয়ে আছে কোরোসি চোমার কবর । সুদূর হাঙ্গেরি থেকে নিজের জনজাতির ইতিহাস খুঁজতে এদেশে আসেন কোরোসি চোমা , শেষমেশ দার্জিলিংয়ে মৃত্যু হয় তার , যেতে চেয়েছিলেন তিব্বত। কলকাতার পার্ক স্ট্রিট সেমেটারিতে আছে জর্জ বোগেলের কবর । স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে তিব্বতে পাঠান সাংপো ব্রহ্মপুত্রের ভৌগোলিক রহস্য অনুসন্ধান করতে । এছাড়াও আনতে হবে একজোড়া টিস নামক প্রানী, চামরহয় যে প্রানীর থেকে সেই প্রানী একজোড়া আখরোটের বীজ , জিনসেং ও বিশেষ গুণসম্পন্ন অন্যান্য গাছগাছড়া ইত্যাদি । আঠাশ বছরের যুবক বোগেল সঙ্গে নিয়ে গেছিলেন আলুর বীজ তিব্বতের পথে পাহাড়ি জনপদেএই নতুন কন্দর প্রচলন করতে । এছাড়াও ফ্রান্স থেকে তিব্বতে যান আলেক্সান্দ্রা ডেভিড নীল। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় এই মহিলা 1911 সালে ভারতে আসেন , বারাণসী ও কলকাতায় কিছুদিন কাটিয়ে তিনি যান সিকিমে , যুবরাজ টুলকুর সাথে জড়িয়ে পড়েন এক গভীর সম্পর্কে, দুইবার তিব্বতে যান । অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার স্মৃতি নিয়ে দেশে ফিরে তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম তন্ত্র ও ম্যাজিক নিয়ে কুড়িটিরও বেশি বই লিখেছেন । ক্যাপ্টেন এরিক বেইলি ও তার দলবলের তিব্বতে অভিযানের ফলশ্রুতি ম্যাকমোহন লাইন । তার নামে নেফার পথ পরিচিত হবে বেইলি ট্রেল নামে । ফ্র্যাঙ্ক কিংডন ওয়ার্ড পৃথিবী বিখ্যাত উদ্ভিদ সংগ্রাহক। তিনি 1924 সালে সাংপোর গিরিখাতে গেলেন অভিযানে। তিব্বত সংলগ্ন হিমালয় অঞ্চলে চব্বিশটি অভিযান করেছেন তিনি , ব্রিটিশ সরকারের হয়ে গুপ্তচরের কাজ করেছেন , পঁচিশটি বই লিখেছেন , জীবনে তেইশ হাজার অজানা দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ করেছেন । তিব্বতে বিভিন্ন পেশার মানুষ বারবার গেছে গুপ্তচরবৃত্তি করতে। সেইসব গুপ্তচরদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য চরবৃত্তি হলেও আদতে তারা সবাই ছিলেন কমবেশি পাহাড়প্রেমিক , প্রকৃতিপ্রেমিক । অনেকেই আবদ্ধ তিব্বতের মায়ায় ও প্রকৃতির জাদুতে।।
✴️✴️ পাঠ প্রতিক্রিয়া -
এই বইয়ের পাঠ সময় নিয়ে করতে হবে, প্রত্যেকটা টাইমলাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ।। লেখক কখনও দার্জিলিং বা কখনও সিমলা এর বুকসপ এ বসে ভ্রমণ কাহিনী তুলে ধরেছেন বইটিতে, আবার কখনও চন্দননগর এর কোনো একটি বারে বসে গল্প করতে করতে স্মৃতি থেকে তুলে আনছেন কিছু অভিজ্ঞতা।। গল্পের ভিতর গল্প, ইতিহাসের হাতছানি, কালের নিয়মে পাল্টে যাওয়া সমাজ, সব কিছু এসে পড়েছে এই ছোট্ট ১৯৪ পাতার বইটিতে।। প্রকৃতির বর্ণনা এতোটাটি সুন্দর ও সাবলীল যেন মনে চোখের সামনে দৃশ্য দেখছি।। কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গার রুটম্যাপ হয়তো খুজতে চাইলে ব্যর্থ হবেন, শুধু কিন্টুপ বা শরৎচন্দ্রের মত নদীর পাড় বেয়ে উজান যাত্রার সঙ্গী হয়ে পড়ুন, আর লেখকের বর্ণনার মহিমায় হিমালয়ের তুষার আচ্ছাদিত চূড়ায় সূর্যের প্রথম আলো দেখে শিহরিত হন, রডোডেনড্রন শোভিত গিরিখাত অপেক্ষায় আছে আপনার।। তিন শতক ধরে চলা।গুপ্ত অভিযান আর সেই সাথে লেখকের দার্জিলিং, সিকিম আর অরুণাচলের অভিজ্ঞতা, দুই মিলিয়ে বেশ টানটান এডভেঞ্চার এর জমাট লেখনী।। এই বই যেন কাগজে লেখা হয়নি, সুন্দর করে দৃশ্য ধরে ধরে ছবি আঁকা হয়েছে।। বইটি পেপারব্যাক, প্রকাশনীর উপস্থাপনা প্রায় নিখুঁত, শুধু বেইলি ট্রেইল এর আগের এবং পরের কয়েকটি ছবি থাকলে বারবার গুগল ম্যাপ এর সাহায্য নিতে হতো না।।
'espionage and adventure in the high Himalaya' - a sentence crafty enough to make me dream of a place with its captivating beauty, but also a bosom full of dangers. Bhattacharya, during his time in Darjeeling, comes across a document and is introduced to Kinthup- the first man to be sent to Tibet by the East India Company to map the River Tsangpo. His story leads the author to stumble upon other such Stories--of spies, invaders and scholars who embarked on this dangerous journey, with deception and a remarkable skill to map an undiscovered land relying entirely on their memory. Back in the 80s, Tibet guarded its secrets cleverly but there are detailed accounts by men who were willing to take great risks to unlock these mysteries. . Bhattacharya visits Tibet, juxtaposing the information from these books and documents with what he sees himself, a modern day Tibet that has fewer dangers and more hospitable people. Samrat Chandra Das, one such scholar came back to India with manuscripts and data he had personally collected, only to be neglected by the Britishers and kept in place through a book that is also his biography. Eric Bailey, another brave-heart and an officer of the East India company followed similar footsteps and were left in awe of the beauty that Tibet was, despite the hardships. . 'Bells of Shangri-la' is a combination of such experiences through a prose that brings Tibet alive in our minds, tickling the wanderlust bone in our bodies.
গল্পটা কিন্টুপের। বৃটিশদের শাসন চলছে উপমহাদেশ জুড়ে। অতি সাধারণ এক দর্জির দু:সাহসী গুপ্তচর হয়ে উঠার কাহিনি। নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতের পথে অদম্য এক অভিযাত্রীর গল্প..
শাংগ্রিলা একটি কল্পিত নাম, এক কল্পলোকেরই নাম, তিব্বতি পুথিঁতে শাম্ভালা নামে পৃথিবীর বুকে চির শান্তির এক স্থানের উল্লেখ আছে, সেই নামকেই শাংগ্রিলা নাম দিয়ে জেমস হিল্টন দ্য লস্ট হরাইজন উপন্যাসটি লিখেছিলেন। পরবর্তীতে এই কল্পলোক মানুষের কৌতুহল কেড়ে নিয়েছিল, তার সন্ধান অবশ্য আজ অবধি সভ্যজগতের কেউ দিতে পারে নি। তিব্বতের কোথাও হয়তো সেই কল্পলোক আছে এমন ধারণা আগে ছিল মানুষের আজও আছে কি না কে জানে, অবশ্য নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে নি তা কোথায়? তবু সেই কল্পলোকের স্থান নিয়ে মানুষের আগ্রহকে কেন্দ্র করে নানা দেশে গড়ে উঠেছে শাংগ্রিলা হোটেল, বার, এমনকি চীন সরকার তাদের দেশের একটা জায়গার নাম বদল করে রেখেছে শাংগ্রিলা। শাংগ্রিলা হয়ে উঠেছে একটি ব্র্যান্ড নেম। এই বই আদৌ শাংগ্রিলাকে ঘিরে নয় বলেই আমার মনে হয়েছে, নাম যদিও শাংগ্রিলার খোঁজে, এই বইয়ে শাংগ্রিলার চেয়ে বরং ব্রহ্মপুত্র বা সাংপো বা দিহান অভিন্ন নদী কিনা, তার গতিপথ এর সন্ধান বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, কিন্টুপ দর্জি সেই অববাহিকায় এক আশ্চর্য সুন্দর স্থানের খোঁজ পেয়েছিলেন, তবে সেটা শাংগ্রিলা নয় । নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতে সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনের শুরু থেকে তিব্বতে চীন অধিকার পর্যন্ত অনেক মানুষ গিয়েছেন দুঃসাহসী অভিযাত্রায়। তাদের কেউ কেউ গিয়েছেন বাণিজ্য বিস্তারে দূত হিসেবে, কেউ গুপ্তচর হিসেবে, নতুন উদ্ভিদরাজি খুঁজে পেতেও গেছেন কেউ কেউ, কেউ গেছেন সেখানের ভূ-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে, ব্রহ্মপুত্র বা সাংপো নদীর উৎস আর গতিপথের সন্ধানে, কেউ সামরিক অভিযানেও। অষ্টাদশ থেকে বিশ শতক পর্যন্ত চলা এমন অনেক অভিযাত্রীর কথা বলেছেন পরিমল ভট্টাচার্য। আছে কোরেসি চোমার কথা যিনি আদৌ তিব্বতেই পৌছতে পারেন নি, তিব্বতি পুথিঁ নিয়ে চর্চা করে যার কেটেছে জীবনের দীর্ঘ সময়। হাঙ্গেরীর এই অভিযাত্রী মধ্য এশিয়ার কোথাও হাঙ্গেরীয়ানদের আদিপুরুষদের উৎস খুঁজতে গিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিব্বতে, তার ধারণা ছিল তাদের আদিবাসই শাম্ভালা, সেই অভিযান শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায় তার মৃত্যুতে। পরবর্তীতে জানা যায় তার ধারণা ছিল পুরো ভুল। আছে জর্জ বোগল এর কথা, ১৭৭৪ এ যিনি প্রথম ইংরেজ দূত হিসেবে পৌছেছিলেন তিব্বতে, তারপর ডাল্টন হুকার, কিন্টুপ দর্জি, শরৎচন্দ্র দাস, ফ্রান্সিস ইয়ংহাজেব্যান্ড, এরিক বেইলি, আলেক্সান্দ্রা ডেভিড-নীল নামের এক নারী অভিযাত্রী গিয়েছেন তো কতজনই। সবাই ইতিহাসের আনুকুল্য পান নি। ব্রহ্মপুত্রের পথে এক অদ্ভুত সুন্দর জলপ্রপাত আবিস্কার করেছিলেন কিন্টুপ দর্জি। জীবিত অবস্থায় কিছুই পান নি তেমন, শরৎচন্দ্র দাস তবু পেয়েছিলেন রায় বাহাদুর খেতাব আর অনেক সম্মান। সিকিম হয়ে তিব্বত অভিযানের এই ভুলে যাওয়া কাহিনীগুলো জানা হলো এই বইয়ের সুবাদে। এরমধ্যে গোটা চার/পাঁচ তিব্বত ভ্রমণ পড়েছি যার সবই কৈলাস আর মানস সরোবরকেন্দ্রিক ভ্রমণ কাহিনী, সেগুলো আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা অথবা নিছকই ভ্রমণ কাহিনী। পরিমল ভট্টাচার্য নিজে তিব্বতে না গিয়েও পাঠককে বারবার নিয়ে গেছেন বিগত যুগের তিব্বতে, সেই সাথে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন যুগের দার্জিলিং, সিকিম, সিমলা, অরুণাচল আর চন্দননগরেও। দার্জিলিং আর সিকিম এর অতীতও এসেছে বারবার। ভালো লাগার মতো আশ্চর্য এক বই, যেন স্বপ্ন আর বাস্তব মিলে একাকার হয়ে আছে পুরো বইয়ে।
সাংপো-দিহান-ব্রহ্মপুত্র - হয়তো একই নদী, একটি জলে বাঁধা বিনিসুতোর মালা। কিন্তু তাদের প্রাণ ভোমরাটি কোথায় লুকোনো? সেটি কি লুকোনো তিব্বতের অজানা কোনো উপত্যকায় ? যেখানে পাহাড়কে সতত ঢেকে ফেলে মেঘ আর কুয়াশার চাদর? সেই রহস্য উন্মোচনের উপায় কি? কোম্পানির আমল তখন. তিব্বতের সাথে কোম্পানির সম্পর্ক ভালো নয়. তাই তিব্বতের ভেতরকার মাঠ -জনজীবন -প্রকৃতির সঠিক চিত্র জানবার উপায় সহজ ছিল না. উপায় হিসেবে দার্জিলিং এর বুচার বস্তির একটি দর্জিকে লামা সাজিয়ে পাঠানো হল দুঃসাহসিক এক অভিযানে। নিরক্ষর কিন্তু অসামান্য স্মৃতির অধিকারী সেই দর্জির নাম কিন্টুপ। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রায় চার বছর পর সে সত্যিই সফল হয়ে ফিরে আসে, যদিও ততদিনে বদলে গেছে দার্জিলিং। পাহাড়ের গায়ে তখন বসছে টয় ট্রেনের লৌহ পাত. বদলে গেছে সার্ভে অফিসের বড়সাহেবের চেয়ার। যিনি নতুন এলেন, তিনি কিন্টুপ-কে চিনলেন না. ফলে কিন্টুপ ফিরে গেল সেই পুরোনো জীবন- সেলাই মেশিনের ঘড়ঘড় শব্দের মাঝে। এরও প্রায় তিন দশক পর সিমলায় সরকারি দপ্তরে কিন্টুপ-এর ডাক পড়ে. ব্রিটিশ-তিব্বতের সীমানা নির্ধারণের কাজে নেয়া হয় বহুকাল আগে কিন্টুপ-এর আঁকা মানচিত্রের সাহায্য।
পরিমল ভট্টাচার্যের লেখা এক অজানা মুগ্ধতায় ডুবিয়ে দেয়. তার লেখায় অবধারিত ভাবেই এসে যায় কুয়াশার ধুম্রজাল, মেঘেদের আনাগোনা, গাছের পাতা চুইয়ে মাটিতে পড়া বিচ্ছিন্ন সূর্যালোক। সেখানে থাকে পাহাড়ি লোকেদের সরলতা, অভিব্যক্তি, ইতিহাস, জপযন্ত্র, কফির গন্ধ কিংবা মন্দিরের ঘন্টার তীক্ষ্ণ অথচ সংবেদনশীল শব্দ। তিনি পাঠককে টেনে নিয়ে যান পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরার কাছে, যেখানে প্রপাতের গায়ে সৃষ্টি হয় সাতরঙা রামধনু। এসবের মায়াজালে আটকালে সেই বই ছেড়ে উঠে আসা কঠিন।
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে সাধারন বৌদ্ধ লামা । কিন্তু খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলেই বেশ কয়েকটি অসঙ্গতি চোখে পড়বে । এই লামার প্রার্থনা মালায় ১০৮ টির বদলে ১০০ টি পুঁথি - দূরত্ব মাপার জন্য । হাতের লাঠির মাথায় কৌশলে বসানো একটি কম্পাস আর ফাঁপা লাঠির ভেতর রাখা কাগজ্, পেন্সিল । সাধারন লামা নন - ইনি আসলে ব্রিটিস চর - কোড নাম - "পন্ডীত" । বাইরের পৃথিবী থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা তিব্ব্ত থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে বিভিন্ন পন্থা নেয় ব্রিটিস সরকার । ব্রিটিস রাজ্ এবং তিব্ব্তের মধ্যে ছায়াময় গুপ্ত অভিযান এই অসাধারন বইটির মুল বিষয় । শুরু পন্ডীত কিন্টুপের বিষাদময় কাহিনী দিয়ে এবং এর পরে চলে আসে শরৎচন্দ্র দাস্, জোসেফ ডালটন হুকার বা তিব্ব্ত বিজয়ী ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ডের ঐতিহাসিক আখ্যান । শাংগ্রিলা বা তিব্ব্তের অভিযান নিয়ে প্রচুর বই লেখা হযেছে, ভবিষ্যতেও হবে তবে সেই সব তথ্যভিত্তিক বইযের তালিকায় এই বইটির স্থান পাবে না । ঐতিহাসিক anecdotes এর সাথে পাহাড় কে কেন্দ্র করে পরিমল ভট্ট্যাচার্য্যের বহু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বইটিকে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে । লেখকের ভাষা এবং লেখার ভঙ্গীমা গম্ভীর - দার্জিলিঙ্, অরুনাচল, শিমলা বা সিকিম কে কেন্দ্র করে কয়েকটি মন খারাপ করা চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক । তবে কয়েকটি জায়গায় পরিমল বাবু একটু self-indulgent । বর্নিত কয়েকটি ঘটনার সাথে বাকি বইটির সম্পর্ক বুঝতে সাধারন পাঠকের সমস্যা হতেই পারে । বইটি পেপারব্যাক এবং অবভাসের উপস্থাপনা প্রায় নিখুত । তবে তিব্ব্তের কয়েকটা ম্যাপ থাকলে ভালো হতো ।
রেড ভেলভেট কেক। দেখতে ভালো , ইনগ্রিডিয়েন্টস ডিসেন্ট কিন্তু টেস্ট টা কেন যেনো ঠিক জমে নাই। :'( চাঁদের পাহাড় এর মত কিছু একটা ভেবে পড়তে বসছিলাম। সেজন্যেই বোধহয় কিঞ্চিত আশাহত 🙁
অসাধারণ লেখা, এত সুন্দর যে কোন ভ্রমণকাহিনী হতে পারে তা ভাবাই যায় না। গল্পের ভিতর গল্প, ইতিহাসের হাতছানি, কালের নিয়মে পাল্টে যাওয়া সমাজ,সংস্কৃতি কত কি যে এসেছে এই ছোট্ট পরিসরে, না পড়লে বোঝা যাবে না। অবশ্য পাঠ্য।
ছোটবেলায় সাধারণ জ্ঞান বইতে পড়তাম, নিষিদ্ধ দেশ - তিব্বত, নিষিদ্ধ রাজধানী - লাসা। হিমালয়ের কোলে সেই নিষিদ্ধ দেশে যাবার আকাঙ্ক্ষা বরাবরই ছিলো মানুষের। তবে তার সব উদ্দেশ্য আবার মহৎও ছিলো না।
তিন শতক ধরে এক নিরক্ষর দর্জি থেকে শুরু করে কলকাতাবাসী এক ইন্জিনিয়ার, ফ্রেঞ্চ নারী অভিযাত্রী, ইংরেজ প্রকৃতিপ্রেমিকের সেই রোমহর্ষক তিব্বত যাত্রার উপাখ্যান এক মলাটে নিয়ে এসেছেন লেখক। হিমালয়ের গভীর গিরিখাতে সাংপো তথা ব্রহ্মপুত্রের ছুটে চলার পথ, তিব্বতী মঠ-গোম্ফা, রংধনুর ঝরণা, সবুজে ছাওয়া উপত্যকা, নীল পপি, রড্রোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়ায় চাদরে ছেয়ে যাওয়া প্রান্তর, বরফবিস্তৃত পর্বতমালার সৌন্দর্য্যের সাথে ইতিহাসকে জুড়েছেন নিপুণ হাতে। আর তার সাথে সেই রহস্যময় শাম্ভালা বা শাংগ্রিলার মিথ।
শুধু যে বাকিদের তিব্বত অভিযান নিয়েই এই লেখা তা নয়, লেখকের নিজের জীবনের শিমলা, দার্জিলিং, অরুণাচলের ঘটনাবলিও মিলেমিশে একাকার হয়েছে সেই তিব্বতসন্ধানী অভিযাত্রীদের অভিযানের সাথে।
#BellsofShangriLa Scintillating #travelogue. #Tibet demystified. I felt teleported straight into the journey. Hundred marks for this one. I love #ParimalBhattacharya ‘s formula in crafting his story arc. Just stimulating. Kept me on edge.
Bhattacharya discovers a blue felt bound typescript in an antique bookshop on Mall Road in Simla that documented Pundit Kinthup’s clandestine mission sent to Tibet by the Survey of India in 1880 to map the course of Yarling Tsangpo (#Brahmaputra). Around the same time, Sarat Chandra Das was appointed as a British spy to set out to Tibet impersonating as a Buddhist scholar. He found both Sarat’s journal of his espionage work and the Tibetan-English dictionary.
At the peak of the historic #TheGreatGame ,Tibet was the mystical land veiled in mystery not yet explored and needed to be studied before Russia could reach it. Tibet shut itself out from the rest of the world and barred any European from its mountain passes. Only monks and mendicants were permitted. So Kinthup and Sarat were set up to demystify Tibet.
Kinthup was illiterate but with an incredible memory to which he committed all details he saw on his mission. He treaded on dangerously but unfortunately was caught and sold off as a slave where he was tremendously tortured. He broke free and returned to his tailoring work in India as no one took his account seriously. He waited for 30 years until his findings were confirmed. The stories of the lamas, monks and the brutal slavery system practiced in Tibet were shocking illuminations.
Such a striking difference in turn of events for Sarat Chandra Das - respectful and of course he was treated as a credible source. He was successful in his mission and with his capabilities as a civil engineer, he collected a treasure trove of maps, samples of glass plate negatives and topographic data. My favourite was Kinthup’s premise which was an actual #spythriller.
Bhattacharya decides to trail the footsteps of Sarat Chandra Das’s and Kinthup’s journey (also a little bit of Bailey’s route in #ArunachalPradesh) while recounting their adventures with part history, part biography with his own personal encounters. The interspersing process enabled the perfect lens into the past and at the time of Bhattacharya’s contrasting present. He listened to the stories shared by those he met in his path. The miserable stories of young Indian soldiers who were misled into danger, laid their lives in the mountains during the Indo-China war were shared by a veteran he met at a village. Post-war events turned the pristine landscape into filth, debris and pollution. Not to forget corruption. Bhattacharya narrates a story of his meeting of a female con artist on the streets.
Do you know #Shangri-la was a fictitious utopian place in a cult novel which later became a symbol of the mysterious Orient and an actual luxury global brand?
Borrowed from @publiclibrar Read this with a fine Scotch. #Cardhu12
অনেকদিন সময় নিয়ে এই বইটা পড়লাম। হিমালয়ের কোলে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় তিব্বত কিভাবে ক্যাপিটালিজমের দুনিয়ায় এক্সপোজড হলো সেই ইতিহাস গল্পের মত লেখক শুনিয়েছেন। তিব্বতের পথে গিয়েছিলেন জর্জ বোগল, ব্রিটিশ সরকারের আর্জিতে দার্জিলিঙের দর্জি কিন্টুপ গিয়েছিলেন সাংপো নদীর উৎসের খোঁজে । বাঙালি যুবক শরৎ গিয়েছিলেন গুপ্তচর হিসেবে, ক্যাপ্টেন বেইলি গিয়েছিলেন স্রেফ এডভেঞ্চারের নেশায়। ধীরে ধীরে রহস্যময়ী তিব্বতের ঘোমটা সরেছে। তবে তিব্বতের পথে যাত্রা ছিল দুর্গম কিন্তু মায়াময়। তুষারাবৃত পথ, পাহাড়ের ঢালে ছোট ছোট পাহাড়িদের গ্রাম, চমরির দল, শীতের প্রস্তুতি হিসেবে রমণীদের চিজ তৈরির ধূম, বিচিত্র পাখি, ফুল আর থেকে থেকে পর্বতের চূড়ায় সূর্যকিরণের খেলা; সবটাই লেখক তুলে ধরেছেন সুলেখনীতে। যাত্রাপথ তো গেল, তিব্বত কেমন ছিল সে যুগে? লামাদের গোম্ফা, মঠ, তিব্বতি রাজপরিবার, তিব্বতীদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল? দার্জিলিং থেকে শুরু করে লেখক তাঁর সাথে করে নিয়ে গিয়েছেন তিব্বতের গহীনে, সে যাত্রা কুয়াশাচ্ছন শীতের সকালে হালকা রৌদ্র দেখার মতই দারুন উপভোগ্য।
বইটা নিয়ে যতই বলি, আমার ভালো লাগা প্রকাশ পাবে না। হিল স্টেশন, উপজাতি জনগোষ্ঠীর গল্প আমাকে ভীষণ টানে। এর মাঝে দার্জিলিং ও তার আশেপাশের এলাকা আমার বিশেষ প্রিয়। ঐ এলাকা নিয়ে ফিকশন হোক বা নন-ফিকশন, আমার পড়তে বেশ ভালো লাগে।
এই বইটার শুরুতেই সেরকম যে ভালো লাগবে সেটা বুঝছিলাম (সে কারণেই কী এতকাল পড়িনি?), কিন্তু এতোটা ভালো লাগবে বুঝিনি। পরিমল ভট্টাচার্যের চমৎকার ভাষাশৈলী সাথে মোহনীয় লিখনশৈলীর সাথে একগাদা তথ্যের ব্লেন্ড আমাকে তিব্বতের ইতিহাস নিয়ে বেশ অনেকটা আগ্রহী করে তুলেছে। বেশি কিছু না লিখে ফেসবুকে আমার লেখা একটা পোস্টের লিংক দিলাম, কারো ইচ্ছা হলে পোস্টটা পড়ে আসতে পারেন।
Dnf-ed it at 60 pages short from the ending. I'm still counting this as a Complete Read because I believe i gained everything that there was to gain from this book. I don't think the last 60 pages would've added anything more or less to influence my take-aways.
যুগে যুগে কিছু মানুষ ঘরের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে বার বার বেরিয়ে পড়েছে অজানার সন্ধানে। এর পর কী ? "কী আছে শেষে পথের ?" এই প্রশ্ন তাদের ঘুমোতে দেয়নি রাতের পর রাত। আর তাই যথাসম্ভব রসদ জোগাড় করে তারা বেরিয়ে পড়েছে অ্যাডভেঞ্চারে।
'শাংগ্রিলার খোঁজে' এমনই কিছু দেশী বিদেশী দুঃসাহসী অভিযাত্রীর রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চারের জার্নাল যাদের সবার গন্তব্য ছিল পৃথিবীর ছাদ পেরিয়ে কুয়াশায় আচ্ছন্ন দেশ তিব্বত।
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম যুগ থেকেই এই যাত্রার উদ্যোগ হয়েছিল যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ আবিষ্কার বা সাংপো নদীই ভারতের ব্রহ্মপুত্র কিনা সেই বিষয়ে নিঃসংশয় হওয়া। তার জন্য দরকার ছিল নদীর গতিপথ ধরে এক উজান যাত্রার আর সুউচ্চ হিমালয়ের গভীর গহীন গিরিপথের অন্দরে লুকোনো ট্রেইলগুলো খুঁজে বের করা। আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গ, অর্থাৎ কেমন দেশ তিব্বত ? কেমন সেখানকার মানুষজন ? কীভাবে তার সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করা যায় ?
এই দুই উদ্দ্যেশ্যে বারে বারে বিভিন্ন পথ ধরে যাত্রা করেছেন দুঃসাহসী কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে যেমন আছেন জর্জ বোগল, জোসেফ ডালটন হুকার, ফ্রান্সিস ইয়ংহাজবেন্ড বা এরিক বেইলির মত ব্রিটিশ অভিযাত্রী তেমন আছেন অসম সাহসী বাঙালি মাস্টারমশাই শরৎচন্দ্র দাশ ও দার্জিলিংয়ের এক অখ্যাত দর্জি নিরক্ষর কিন্টুপ পন্ডিত। আছেন হাঙ্গেরীয় অভিযাত্রী কোরোশি চোমা ও ফরাসি অভিযাত্রী আলেক্সান্দ্রা-ডেভিড-নীলও। মনে রাখতে হবে এই অভিযানগুলো কিন্তু তিব্বতের শাসকের অগোচরে করতে হয়েছিল কারণ ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে তিব্বতের রাজার বন্ধুত্ব ছিল না। এই যাত্রাগুলোকে তাই এসপায়োনেজ বলা যেতে পারে। 'শাংগ্রিলার খোঁজে' বইতে লেখক এই দুঃসাহসিক অভিযানগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। আক্ষরিক অর্থেই এই বই তাই 'হিমালয়ে গুপ্তচারণার' আখ্যান। তার সঙ্গে আছে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন ও ১৯৬২-র চীন ভারত যুদ্ধের কথাও।
রহস্যময় শাংগ্রিলা বা সাম্ভালার রুটম্যাপ এই বইতে যদি খুঁজতে বসেন তবে আপনাকে হতাশ হতে হবে। কিন্তু যদি আপনি কিন্টুপ পন্ডিতের সাথে জপমালায় পথের দূরত্ব মাপতে মাপতে এক দুরন্ত নদীর পাড় বেয়ে উজান যাত্রার সঙ্গী হন, যদি হিমালয়ের তুষার আচ্ছদিত চূড়ায় পড়া ভোরের প্রথম সূর্যের সোনা রং আলো দেখে শিহরিত হন, কাঞ্চনজঙ্ঘার নাম যদি আপনার বুকের ভেতর আলোড়ন সৃষ্টি করে, যদি রডোডেন্ড্রন শোভিত দুর্গম গিরিখাতের ভেতর হারিয়ে যেতে যেতে আপনি আবিষ্কার করেন এক ঝর্না যার গায়ে মেঘের ওড়নার মতো জলকণায় ফুটে আছে আশ্চর্য রামধনু, হে পাঠক আপনি তবে পেলেও পেয়ে যেতে পারেন শাংগ্রিলার খোঁজ।
শাংগ্রিলা তিব্বতীয় মিথলজির একটা রহস্য শহর। গুপ্ত এই শহরে শুধুমাত্র পুণ্যাত্মারা থাকেন। অনেকেই এই শহরকে চেনেন সাম্ভালা নামে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেশ ভালোভাবেই ভারতবর্ষে জেঁকে বসে ব্রিটিশ প্রশাসন। একে একে বিশ্ব মানচিত্রের শূন্যস্থানগুলো ভরে উঠতে থাকে। তবে প্রবল প্রতাপশালী ব্রিটিশদের নাকের ডগায় তিব্বতের মানচিত্র শূন্যই থেকে যায়। তিব্বতকে জানাতে চাওয়ার সবচে বড় কারণ এর ওপর পাড়েই পরাশক্তি চীনের অবস্থান। ১৭৭৪ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস জর্জ বোগলকে পাঠিয়ে তিব্বতের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুললেও, ১৭৯২ সালের নেপাল-তিব্বত যুদ্ধ সব ভেস্তে দেয়। তিব্বতে ও বন্ধ হয়ে যায় বহিরাগতদের প্রবেশ। অবশ্য ব্রিটিশদের প্রয়োজনীয়তা ফুরায় নি। তারা ভারতীয় এবং দার্জিলিং থেকে পাহাড়ী জনজাতির মানুষদের পাঠাতো বৌদ্ধ ভিক্ষু সাজিয়ে। তেমনি অভিযানে গিয়েছিলেন দার্জিলিং এর দর্জি কিন্টুপ, চট্টগ্রামের ছেলে শরৎচন্দ্র দাস। ১৯০৩ নাগাদ ব্রিটিশ বাহুবলে নতি স্বীকার করে তিব্বত। ১৯১৩ নাগাদ তিব্বতের ওপর চীনের প্রভাব কমলে ব্রিটিশদের প্রবেশ আরো সহজ হয়। কিন্টুপের পথ ধরে অভিযান চালান এরিক বেইলি। চারপাশে বরফে ঢাকা পাহাড়। পাহাড়ের ক্রিভাসে লুকিয়ে থাকা মৃত্যুফাঁদ, পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত সাংপো ক্যানিয়ন(যা ২০০২ সাল নাগাদ পুরোপুরি জয় করা সম্ভব হয়। দুর্গমতার জন্য যাকে ডাকা হয় এভারেস্ট অফ রিভার্স, বৈরি জনজাতির চোখ রাঙানো উপেক্ষা করে অভিযাত্রীরা বের করার চেষ্টা করেন খরস্রোতা সাংপোর (আপারস্ট্রিমে ব্রহ্মপুত্রের নাম) গতিপথ খুঁজতে। কেউবা স্রেফ প্রকৃতির টানে। কেউবা জরিপের কাজে। কেউ স্রেফ গবেষণার নিমিত্তে। তেমনই একজনের গবেষণায় তিব্বতীয় মিথের সাম্ভালা পায় জনপ্রিয়তা। একজন অভিযাত্রীর সাংপোর গিরিখাতে থাকা পেমাং উপত্যকার বর্ণণা মানুষকে দেয় কল্পনার ভিত্তি। উপন্যাস The Lost Horizon পশ্চিমা বিশ্বেও জনপ্রিয় করে শাংগ্রিলার গল্প। তিনশতক ধরে চলা গুপ্ত অভিযান আর সেই সাথে লেখকের অরুণাচল, সিকিম, দার্জিলিং এর কিছু ট্র্যাকিং এর অভিজ্ঞতা, দুইয়ে মিলে প্রকৃতি আর এডভেঞ্চারের জমাট লেখনী। সময়ের সাথে সময় মিলেছে। গল্প মিশেছে গল্পে। হিমালয় জুড়ে চলেছে মানুষের জয়যাত্রা।