ইতিহাস কথা বলে – বিজয়ীদের কথা । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় – অতীত গৌরবের সাক্ষ্য । কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ঘটনাবলির কতটুকু তাতে অটুট থাকে ?
অসামাজিক কিন্তু তুখোড় পুলিশ অফিসার কায়েস হায়দারের কাঁধে চাপল অদ্ভুত এক কেস সমাধানের ভার । পরিস্থিতি এমনই দাঁড়াল যেখানে যুক্তি কাজ করে না । রহস্য মানব অবলালের কাছে সাহায্য চাইল কায়েস । দু’জনে মিলে নেমে পড়ল তদন্তে । কিন্তু কেঁচো খুড়তে গিয়ে এ যে সাপের বাসা !
একের পর এক অতিপ্রাকৃতিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলো কায়েস আর অবলাল । আধুনিক ঢাকা শহরে এ কী নাটক জমে উঠেছে ! শুধু পিশাচ, স্কন্ধকাটা, চুড়েল আর শক্তিশেলধারী যাদুকরই নয়, এর পেছনে রয়েছে আরও গুঢ় কোন রহস্য ।
জড়িয়ে পড়ল আরও অনেকে--সুদর্শনা মীরানা মোরেস, যে কি না প্রতি রাতে একই স্বপ্ন দেখে । শখের অকালটিস্ট নাজিম আর ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রিয়াস–-কারা এরা ?
ধীরে ধীরে উন্মোচিত হলো ভয়াবহ এক চক্রান্তের জাল । সামনে রয়েছে শৈলেন ভট্টাচার্যের ভয়ঙ্কর দলবল, কিন্তু নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে অসীম শক্তিধর কেউ, কী তার পরিচয় ? দেড় হাজার বছর আগে ঘটে যাওয়া এক প্রলয়ঙ্কর ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় সে । নিষ্ফল বসে প্রহর গোণা ছাড়া কি কিছুই করার নেই ? নাকি কেউ বাড়িয়ে দেবে অযাচিত সাহায্যের হাত ?
সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে রক্তের মাঝে । শোণিতের উপাখ্যানে ।
- মামা, কী বই পড়? - শোণিত উপাখ্যান। - গণিত উপাখ্যান? - না মামা, শোণিত উপাখ্যান। - ওহ, কেমন বই? - ফ্যান্টাসি... আরবান। - লেখক কে? - সৈয়দ... অনির্বান। - কেমন বই মামা? - একশন, ম্যাজিক, খুনাখুনি... পুরাই তামাতামা! - ভুত নাই? - বলে কি ভূত নাই! গোটা বইই তো ভূতের গোডাউন। পৃষ্ঠা উল্টালেই পিশাচ! বাঁধাইয়ের ফাঁকে ফাঁকে যক্ষ আর বৈতাল। - কন্ধকাটা আছে মামা? - খালি কি স্কন্ধকাটা! স্কন্ধকাটা, যক্ষ, ডাকিনী, বৈতাল, চূড়েল সবই আছে। - চূড়েল কি মামা? - চূড়েল হচ্ছে ডাইনীর খালাতো বোন। চুড়েলদের পায়ের পাতা থাকে উল্টো দিকে, এরা নানা রুপ নিতে পারে। একটা ফিচারে পড়েছিলাম, বিশ্ব বিখ্যাত শিকারি জিম করবেট নাকি একবার ভারতের জঙ্গলের মধ্যে চূড়েল দেখেছিলেন। সেখানে অবশ্য চূড়েল লেখা ছিল না, লেখা ছিল চোড়েইল। - চোড়েইল কোথায় থাকে মামা? ঢাকায়? - নাহ। তোর ঐ একুরিয়ামে মোড়েঈল থাকার সম্ভাবনা যতটুকু, ঢাকাতে চোড়েইল থাকার সম্ভাবনা ততটুকুই। - তাহলে চোড়েইল কোথায় থাকে। - গ্রামের দিকে থাকে সাধারণত। এখন নড়াইল বা সরাইলের প্রত্যন্ত কোন গ্রাম থেকে সেই চোড়েইল যদি তোর তোর বেডরুমে চলে আসে, তাহলে চিন্তা কর অবস্থাটা। - আমার ভয় লাগছে মামা। - ভয় লাগারই কথা। - স্কন্ধকাটা, যক্ষ, ডাকিনী, বৈতাল, চূড়েল ওদের মারে কে? যাদুকর? - যাদুকর এবং পুলিশ। যৌথ প্রযোজনা বলতে পারিস। এরা এত ভয়ংকর যে এদের সাইজ দেয়ার জন্য একটা নায়ক যথেষ্ট না, এই জন্য লেখক যৌথ নায়কের ব্যবস্থা করেছেন। - ওদের নাম কি। - একজনের নাম কায়েস, ... উঁহু... ইমরুল কায়েস না... কায়েস হায়দার। কায়েস একজন পুলিশ অফিসার। আরেকজন হচ্ছে অবলাল, অবলাল হচ্ছে যাদুকর। অবলাল হচ্ছে রহস্যমানব। - নায়িকা নাই মামা? - আছে না আবার। নায়িকার নাম মীরানা। মীরানাও যাদুকর। - আমার ক্লাসে মীরা নামের একটা মেয়ে আছে। মীরা মোড়ল। - এর নাম অবশ্য মীরা না, এর নাম হচ্ছে মীরানা। মীরানা মোরেস। - আর দুষ্টুলোক কে? - দুষ্টুলোকের নাম হচ্ছে শৈলেন। শৈলেন ভট্রাচার্য। - শোয়াইলেন ভট্রাচার্য? - উঁহু, শোয়াইলেন ভট্রাচার্য না। শৈলেন ভট্রাচার্য ... তবে চাইলে শোয়াইলেন ভর্তাচার্যও বলতে পারিস। নায়কদের মেরে শোয়াইয়া ফেলতে চায়, ভর্তা বানিয়ে ফেলতে চায়। - শোয়াইলেন ভর্তাচার্য কী করে মামা? - সেই তো সব করে। স্কন্ধকাটা, যক্ষ, ডাকিনী, বৈতাল, চূড়েল, তান্ত্রিক ... সবই তো সেই আমদানী করেছে। - কেন মামা? - সেইটাই তো রহস্য। সে খুব খারাপ কিছু একটা করতে চায়। তোকে বরং ঘটনা সম্পর্কে হালকা পাতলা ধারণা দেই।... অদ্ভুত এক কেস সমাধানের ভার পড়ল পুলিশ অফিসার কায়েসের কাঁধে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, সেইখানে কোন যুক্তিই কাজ করে না। তখন রহস্য মানব, যাদুকর অবলালের কাছে সাহায্য চাইল সে । দু’জনে মিলে নেমে পড়ল তদন্তে । কিন্তু টিকটিকি খুজতে গিয়ে বের হয়ে আসলো ডাইনোসর! আধুনিক ঢাকা শহরের মধ্যেই একের পর এক অতিপ্রাকৃতিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হইলো কায়েস আর অবলালের! ওরা বুঝতে পারল, শুধু পিশাচ, স্কন্ধকাটা, চুড়েল, তান্ত্রিক আর যাদুকরই না, এর পেছনে আছে আরও গুপ্ত কোন রহস্য। ঘটনাক্রমে ঘটনায় জড়িয়ে পড়ল আরও অনেকে মানুষ, - মীরানা মোরেস। সে আবার প্রতি রাতে একই স্বপ্ন দেখে! শখের অকালটিস্ট নাজিম আর ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রিয়াস। ধীরে ধীরে প্রকাশিত হইল ভয়াবহ এক চক্রান্তের জাল। যার সামনে আছে শৈলেন ভট্টাচার্যের ভয়ঙ্কর দলবল, কিন্তু পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে অসীম শক্তিধর অন্য একজন। কিন্তু তার পরিচয় জানা যায় না। কিন্তু কি চায় সে। সে চায়, দেড় হাজার বছর আগে ঘটে যাওয়া এক প্রলয়ঙ্কর ঘটনা আবার ঘটাতে। - তাহলে শোয়াইলেন ভট্রাচার্যের উপরেও একজন আছে? - হুম। যদিও তার পরিচয় দেয়া হয় নাই, বাট আই গেস, তার নাম হবে শয়তান ভট্টাচার্য। - মামা? - হুম। - ভয় লাগছে মামা। - ভয় লাগারই কথা, এইগুলা তো আর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের কিউট কিউট ভুত না। আর এই বই আন্ডা বাচ্চাদের জন্যও লেখা না। বড়দের জন্য লেখা বই, পাতায় পাতায় রক্তারক্তি কাণ্ড। - অনেক রক্ত? - হুম, আমার তো মাঝেমধ্যে বই রেখে টিস্যু দিয়ে হাত মুছে নিতে হইছে। ... এই দেখ, এখনও হাতে রক্ত লেগে আছে! - ঐ টা মশার রক্ত! তুমি একটু আগে হাত দিয়া মারলা। - মশার রক্ত! যাই হোক, বাদ দে। ঘুমাতে যা এখন। - শোণিত মানে কি মামা? - শোণিত মানে রক্ত। - এই জন্যই বইয়ের নাম শোণিত উপাখ্যান? শুধু রক্তারক্তি কান্ড? - এক হিসেবে সেটা বলা যায়। তবে আরও গভীর তাৎপর্যপুর্ন বিষয় আছে শোণিত উপাখ্যান নামকরণের পেছনে। পড়লে বুঝতে পারবি। - কি গভীর বিষয়? - সেইটা এখনও রহস্য। লেখক ক্লিফ হ্যাংগার রেখে দিছে। - ক্লিফ হ্যাঙ্গার কী মামা? - ক্লিফ হইল গিয়া উঁচু পাহাড়ের কিনারার মত একটা জায়গা। আর হ্যাংগার তো চিনিসই, ঐ যে যেটায় করে দোকানে কাপর ঝুলায়া রাখে। - তো? - আরে বুঝলিনা? ... বইয়ের শেষে লেখক পাহাড়ের কিনারে হ্যাঙ্গারে কাপর ঝুলায়া রাখার মত কইরা পাঠকদের ঝুলায়ে রাখছে। - লেখক তো তাহলে খুবই খারাপ! - হুম, তা বলা যায়!
আমি ইম্প্রেসড। সত্যি যখন বইটা পড়া শুরু করি তখন কোন ধারণাই করি নাই যে বইটা একটুও ভালো লাগবে । আরবান ফ্যান্টাসি -আমার একটা পছন্দের জনরা। বিশেষ করে ড্রেসডেন ফাইলস পড়ার পর এর প্রতি ভালো লাগা আরো বেড়ে যায়। ভরপুর একশন, ম্যাজিক, একটা হেভি ওয়েট ভিলেন আর বড় ধরণের কন্সপিরেসি- এই হল উপাদান। আর শোণিত উপাখ্যান এ এর সবগুলোই ছিল। বেশ ভালো পরিমাণে। লেখক জানেন যে তিনি কি লিখছেন এবং কাদের জন্যে লিখছেন। :) সত্যিই ভালো কাজ। যেহেতু সিরিজের প্রথম বই তাই স্বভাবতই প্রথম প্রথম অনেক কিছুই অপরিচিত লাগছিল। কিন্তু গল্প সামনে যাওয়ার সাথে সাথে প্লট আস্তে আস্তে সামনে বের হয়ে আসে। মূল ক্যারেক্টার দুইজন কায়েস-একজন পুলিশ অফিসার আর অবলাল - একজন যাদুকর। দুইজনই মারদাঙ্গা, অস্ত্র চালনায় এক্সপার্ট। আর দুইজনই আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত। একজন বাস্তব জীবনের আর একজন অতিপ্রাকৃত। তো কায়েস এমন একটা কেস এর সামনে পড়ে যে, অবলালের সাহায্য দরকার হয়ে পড়ে, আর সেই কেস এর মধ্যে দিয়েই আস্তে আস্তে কেঁচো খুড়তে বেড়িয়ে আসে এনাকোন্ডা। বই এর শুরু থেকে শেষ অবধি একশন ছিল, এর মাঝেই আস্তে আস্তে ক্যারেকটার ডেভেলপমেন্ট। যেহেতু প্রথম বই তাই শেষে গিয়ে অনেক কিছুই ঝুলে আছে। সামনের বই এ দেখা যাবে কি হবে। আমার যে জিনিসটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হল গল্পের মাঝে দেশী সব মিথ এর ব্যাবহার যেমন - যক্ষ, স্কন্ধকাটা, চূড়েল, ডাকিনী, বৈতাল, তান্ত্রিক এগুলো। আর লেখা খুবই সাবলীল। পড়তে অসুবিধে হয় না। আগামি বই এর অপেক্ষায় থাকলাম।
বীভৎস এক খুনের ঘটনা দিয়ে শুরু। দুই ভাইয়ের একজন নিহত,আরেকজন মারাত্মকভাবে আহত হয়ে কোমায়। ঘটনার তদন্তে জড়িয়ে পড়ে অসামাজিক অথচ সুদক্ষ পুলিশ অফিসার কায়েস হায়দার। আহত রাশেদুনের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত হয়ে প্রথমেই এক অজানা আক্রমনের শিকার হতে হল তাকে।
শুরুটা বেশ সাদামাটাই লাগছিল বলব। বইয়ের ভূমিকায় দেখেছিলাম "আরবান ফ্যান্টাসি"। আমাদের দেশীয় ��্রেক্ষাপটে এই ধরণের কোন লেখা সম্ভবত এখনও হয়নি। তাছাড়া লেখকের প্রথম বই, স্বাভাবিকভাবেই কোন আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছাড়াই বইটা শুরু করেছিলাম।
এসময়েই আচমকা আবির্ভাব ঘটল অবলাল নামক এক রহস্যময় চরিত্রের। অবলালের সাথে কায়েস হায়দারের পরিচয় বছর চারেক আগে, এক অতিপ্রাকৃত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পরিচয় থেকেই দু'জনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শুরু। অবলাল নামক চরিত্রটাকে একদমই কোন ছকে ফেলা যাবেনা, তার গতিবিধি অথবা পরিচয় কোনটাই জানা নেই। পেশায় বলা যায় অতিপ্রাকৃত জগতের এবং অপশক্তির বিরুদ্ধে সাধারণের রক্ষক। রাশেদুনের ওপর হামলার ধরণটা স্বাভাবিক না ঠেকায়, তার সম্পন্ন হতে হয় কায়েস হায়দারকে। উন্মোচিত হয় অপরিচিত জগতের ভয়াবহ রহস্যের স্বরুপ।
আসতে থাকে একের পর এক আক্রমন। অতিপ্রাকৃত জগতের শত্রুগুলো কিন্ত বিদেশী ফ্যান্টাসির প্রাণী নয়। আমাদের উপমহাদেশের যক্ষ,পিশাচ, স্কন্ধকাটা, মায়াবিনী চুড়েল - এরাই ঘুরেফিরে এসেছে ভয়াবহ রুপে। আর হ্যা, বই পড়ার আগে চূড়েল শব্দটায় আমার খানিকটা আপত্তি ছিল। কিন্তু যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশের তন্ত্রমন্ত্র , হিন্দু মিথের ডার্ক এলিমেন্টস এবং ইতিহাস আসতে যাচ্ছে, তাই চুড়ে্ল, বৈতাল - এসব মানিয়ে গেছে খুব সহজেই। নতুন কাঠামোর একটি উপন্যাস লিখতে গিয়ে গতবাধা প্রথা অনুসরণ করেননি কোথাও। প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই এধরনের নিরীক্ষার স্বার্থক প্রতিফলন ঘটেছে। পরিচিত নামের অতিপ্রাকৃত শক্তিগুলো, ঘটনাপ্রবাহ কে আরো অনেক বেশি গতিময় করেছে। উন্মোচিত হতে চলেছে গভীর ষড়যন্ত্র, যার পেছনে রয়েছে সমাজের উঁচু শ্রেণীর হাত।। শৈলেন ভট্টাচার্য নামক ভয়ংকর তান্ত্রিক ও তার দল মিলে পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাচ্ছে হাজার বছর পুরানো প্রলয়ংকর ঘটনার, বলি হতে যাচ্ছে নিরীহ মানুষ।
গল্পের প্রয়োজনেই এসেছে সুদর্শনা মীরানা মোরেস, অকাল্টিস্ট নাজিম, আবির্ভাব ঘটেছে ক্যাপ্টেন আন্ড্রিয়াসের। আবছা আবছা ভাবে জানা গিয়েছে হোয়াইট হ্যান্ড এবং গ্রে ব্রাদারহুড নামক দু'টি সংঘের কথা। সূচনা ঘটতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক কিছু ঘটনার বিবরণের। প্রলয় ঘনিয়ে আসার আগে কারা থামাবে এ চক্রান্ত? মিলবে কি পরিত্রাণ? সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে রক্তের মাঝে - শোণিতের উপাখ্যানে!
১৬০ পৃষ্ঠার বই, ৩৫/৩৬ পৃষ্ঠার পর থেকে দুর্দান্ত গতিময়। একের পর এক দুর্ধর্ষ একশান আর টুইস্ট। বিশেষ করে অবলালের একরোখা, জেদী ভাবটা চোখে পড়ার মতো।
সব সুতো জোড়া লাগবে ভাবতে ভাবতে যখন শেষ পৃষ্ঠায় চলে এসেছি, তখন মাত্র শুরু হতে যাচ্ছে এক অজানা উপাখ্যানের,হাজারো বছরের পুরানো ইতিহাসের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বন্ধ করতে হয়েছে বইটা।
শোণিত উপাখ্যান - ট্রিলজি হিসেবে আসবে যতদূর জানি। প্রথমটা বর্তমান, এরপর অতীত আর অতঃপর। ঘন্টাখানেক আগে বইটা শেষ করেই আমি বুভুক্ষের মত অপেক্ষা শুরু করেছি ট্রিলজির দ্বিতীয় বইয়ের। আশা করছি শীঘ্রই পাব।
উত্তেজিত অবস্থায় পরীক্ষার আগের রাতে রিভিউ লিখতে বসে গেলাম (এবং উত্তেজনার চোটেই অগোছালোভাবে খাপছাড়া কথা লিখে ফেললাম )
শোণিত উপাখ্যান ট্রিলজির প্রথম বই এটি। প্রকাশকাল নভেম্বর ২০১৫। ইদানিং যে বাংলাদেশে ফ্যান্টাসি জনরার জনপ্রিয়করণ হয়েছে তার অন্যতম কৃতিত্ব এই ট্রিলজি কে দেয়া যায় ই।লেখকের ভাষ্যমতে তখনকার সময়ে এই জনরার কাজ হয়নি।সেই হিসেবে বাংলা ভাষায় ফ্যান্টাসি জনরার একটা দুর্দান্ত debut হয়েছে বলা যায়।
শোণিত উপাখ্যান বর্তমান পড়ে বেশ ধন্দে তে পড়ে আছি।লেখক এমন একটা জায়গায় বইটি শেষ করেছেন যে পাঠক প্রায় চিৎকার করে উঠবে বাকিটা জানার জন্য। ট্রিলজির শুরু হিসেবে অত্যন্ত চমৎকার। আর পুরো ট্রিলজি ফ্যান্টাসি জনরার হলে ও এই বইটিতে হরর এলিমেন্ট ভীষণ রকমের আছে। কয়েকটা জায়গায় বেশ ভয় পেয়েছি। শীঘ্রই অতীত কাহিনী জানতে বসবো। wish me luck!
আরবান ফ্যান্টাসি একটা অদ্ভুত জিনিস। যেটা ভাল লাগে, কারণ ছাড়াই লাগে। যেটা মন্দ লাগে, সেটাও কারণ ছাড়াই লাগে। এই যেমন ড্রেসডেন ফাইলস সিরিজটা নামকরা আ.ফ্যা. হলেও, পড়ে এক বিন্দু মজা পাই নাই। আবার নিলে গেইম্যানের ওশেন এ্যাট দ্য এন্ড অফ দ্য লেন, গ্রেভইয়ার্ড পড়েছি মন্ত্র মুগ্ধের মত। তাই এই বই নিয়ে একটু দ্বিধা ছিল। কিন্তু বেশী ক্ষণ থাকেনি।
লেখক বই এর দিকে মনোযোগ দিয়ে লিখেছেন কিনা, সেটা বোঝা যায় ডিটেইলিং এ। অনেকেই দেখা যায় এদিকটায় নজর রাখেন না। কাহিনী আর বাক্য বুননের দিকে নজর রাখতে গিয়ে এদিকটা অবহেলিত রয়ে যায়। কাউকে কাউকে তো এমনটাক বলতে শুনেছি যে, ফিকশন লেখকের নাকি স্বাধীনতা আছে ইচ্ছামত লেখার। ফ্যান্টাসিতে যে আছে, তা নিশ্চিত। কিন্তু তাই বলে Loose end রাখার কি দরকার?
শোণিতের প্রথম পজেটিভ দিক আমার মতে এটাই - দেয়ার ইজ ভার্চুয়ালি নো লুজ এন্ডস। যেটা আছে, সেটা থাকবেই। কারণ... নাহ থাক, স্পয়লার না দেই
পরের পজেটিভ দিক হচ্ছে-বিভিন্ন হরর এলিমেন্টের যতটা সম্ভব উপমহাদেশীয় করণ। আমাদের দেশের বা সংস্কৃতির ব্যাপ্তি কিন্তু অনেক। হ্যারি পটারের ম্যাজিক ওয়ান্ডের আগেই, আমরা সোনার জাদু কাঠির সাথে পরিচিত। আবার গ্রীক পেগাসাস চিনি বা না চিনি, পক্ষীরাজ ঘোড়া চিনতে আমাদের ভুল হয়না। চুডেল, স্কন্ধকাটা, বেতাল - এসবই আমাদের সংস্কৃতির। কিছু একটা দরকার পরলেই বিদেশ থেকে ভাড়া করে আনার প্রয়োজন আমাদের নেই। সেদিকটাও পরিষ্কার বই থেকে। যদিও, দুই একটা ওয়েষ্টার্ণ হরর ক্যারেক্টার এতে ঢুকে গিয়েছে, তবুও ওদের আপিল বিপিএল এর কুমিল্লার বিদেশী খেলোয়ারদের মত (কাপ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশীর হাতেই)।
প্রথম থেকেই ফাস্ট পেসড, যথেষ্ট এ্যাকশন সিকোয়েন্স আর মাঝে মাঝে হালকা ব্রিদার - মচৎকার উপস্থাপনা। নতুন লেখক, প্রথম বই। কিন্তু প্রথমটাই ট্রিলজির অংশ। তবে মনে হয়, আদী কেন প্রথমেই এই রিস্ক নিল সেটা পরিষ্কার।
একেবারে যে দূর্বল দিক নেই, তা না। অবলালের সাথে কায়েসের প্রথম সাক্ষাতের ব্যাপারটা একটু বেশী এক্সপোজার পেয়েছে মনে হয়। আরেকটু কম হলে মন্দ হত না। তবে খুব বেশীও নেই, তাই ছাড় দিলাম।
পরিচিত লোকজনের লেখা বই এর আনবায়াসড রিভিউ দেয়া কঠিন কাজ। গেইম্যান সাহেবের একটা কমেন্ট আছে - যদি তোমার ব্যবহার ভাল হয় আর তুমি ডেড লাইন রাখতে পার, তাহলে যাই লেখ না কেন-প্রকাশক/পাঠক পছন্দ করবেই। পরিচিত জনের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটাই হয়। তবে আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে আনবায়াসডভাবেই বলা যায়-বই ভাল হইছে।
বছরের শেষ দিনে আলোচিত নতুন বই শোণিত উপাখ্যান পড়লাম। বইয়ের কাহিনিসংক্ষেপ দিতে যাচ্ছি না, বরং আমার অনুভূতি বলি।
#ভালো_দিকঃ ফ্যান্টাসি ঘরানার লেখালেখি এখনো পর্যন্ত বাংলা ভাষায় একদম কম হয়েছে; তার মানে বাংলা ফ্যান্টাসির কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। বাংলায় ফ্যান্টাসি নিয়ে কাজ মানে একদম গোড়া থেকে শুরু করা। আর আরবান ফ্যান্টাসি তো আরো জটিল বিষয়। আমার ধারণা হাই ফ্যান্টাসির চেয়ে আরবান ফ্যান্টাসির জগতটা ঠিকমত তৈরি করা ও ধরে রাখা তুলনামূলক কঠিন। হাই ফ্যান্টাসিতে লেখক তাঁর নিজের তৈরি জগতের নিয়মকানুন নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আরবান ফ্যান্টাসিতে সেই সুবিধা নেই; লেখককে তাঁর কাল্পনিক এলিমেন্ট ও ঘটনাপ্রবাহকে আমাদের পরিচিত দুনিয়ার প্যাঁচঘোঁচের মধ্যেই ঢোকাতে ও চালাতে হবে। শোণিত উপাখ্যান বইয়ে এই কাজটা লেখক ভালোভাবেই শুরু করেছেন বলে আমার মনে হয়েছে।
তারপর আরেকটা খুব ইন্টারেস্টিং ও ইতিবাচক দিক হলো, দেশীয় ফকলোর ও সুপারন্যাচারাল জিনিসপত্র ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছে। আমার সবসময়েই ধারণা যে দেশী ফ্যান্টাসিকে একটা স্বকীয় শক্তিশ��লী রূপ দিতে গেলে এইসব নিয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। স্কন্ধকাটা, চুড়েল, বেতাল, শবসাধনা, তান্ত্রিক, এইসব কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করেছেন লেখক। চেষ্টা যে শতভাগ সফল তা না, সেটার কারণও পরিষ্কার-- আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ সবকিছুকে ছোটদের জিনিস বানিয়ে রেখেছি। এগুলোকে ফ্যান্টাসিতে নিয়ে আসার অবস্থায় আনতে বিরাট পরিমাণ কাজ করতে হবে।
বইয়ে দৃশ্যায়ন, খুঁটিনাটি বর্ণনা করা হয়েছে অনেক যত্নের সাথে। মারামারির দৃশ্যগুলো চমৎকার। কাহিনি গতিময়, কোথাও ঝুলে পড়েনি। আরো বড় কথা কোনো বেখাপ্পা ছেঁড়া সুতো নেই। বোঝা যায় লেখক জানেন তিনি কি লিখতে চাচ্ছেন।
পিশাচ, চুড়েল, তান্ত্রিক এদের ভিন্ন ভিন্ন রকমের শক্তি ও কাজকর্মের বর্ণনা ভালো লেগেছে। কিভাবে চুড়েল তৈরি হয় তার ব্যাখ্যাটা দারুণ। শবসাধক তরন্দীদেবকে বেশ পছন্দ হয়েছে আমার।
আরেকটা কথা বলতেই হয়-- শোণিত উপাখ্যান বইয়ে বানান ভুল, ছাপার ভুল খুব কম। এটা একটা বিরাট পাওয়া।
#দুর্বল_দিকঃ অনেক কিছু হবে, হতে যাচ্ছে - এটা বই শেষ করার পর আমার অনুভূতি। কিন্তু এই বইটাতে সেই অনেককিছুর খুব অল্পই ঘটেছে। এটা ট্রিলজির প্রথম বই হওয়ার কারণে হতে পারে। বইয়ে আমরা খুব অল্পই দেখতে জানতে পারছি, এটা যেমন কিছুটা হতাশ করে, আবার পরের বইটা পড়ার জন্য আগ্রহও বাড়ায়। তাই এটাকে ইতিবাচক দিকও ধরা যায়।
তারপর চরিত্রায়নে আসি। মূল দুই প্রোটাগনিস্ট কায়েস ও অবলালের চরিত্রগুলো কিরকম? কায়েস টাফ, সাইলেন্ট ধরনের লোক। অবলাল আরেকটু টাফ, আরেকটু সাইলেন্ট ধরনের লোক। পাশাপাশি প্রায় একরকম দুটা চরিত্র থাকলে দুজনেরই ফুটে ওঠার সুযোগ কমে যায়। একজনকে একটু কোয়ার্কি গোছের করলে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং হবে। মীরানা মোরেস সম্ভবত বারো বছর বা আরো বেশি সময় ধরে সাদা হাতের এজেন্ট। কিন্তু তার কাজকর্মে তেমন অভিজ্ঞতার ছাপ দেখলাম না। সাদা হাত কি এরকম ইনকম্পিটেন্ট আচরণ করা কাউকে এতদিন রাখবে? মীরানার চরিত্র বিপদাপন্ন কন্যা হওয়ার দিকে যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখলে ভালো হবে।
সবমিলিয়ে শোণিত উপাখ্যান ট্রিলজি বেশ ইন্টারেস্টিং হতে যাচ্ছে বলে আশা করা যায়।
কমপ্লিট স্যাটিফিকশন নিয়ে প্রথম খন্ড পড়লাম শোনিত উপাখ্যান ট্রিলোজির। শুরুর সময় বইটা সম্পর্কে ধারনাই ছিল না, লেখক সম্পর্কেও না৷
বাট ট্রিলোজির জন্য লেখক আগ্রহ কে তুঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছেন! যেমন প্লট, তেমনি দারুন লেখনি। আসলেই ক্রেজ ডিসার্ভ করেন লেখক। পরবর্তী বই পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম!
আর্বান ফ্যান্টাসি বলতে ঠিক কী বোঝায়? বাংলা সাহিত্যের পাঠ্যপুস্তকে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। তাই নিজের মতো করেই এর উত্তর দিই। যে কল্পকাহিনির পটভূমি ও অধিকাংশ চরিত্র নাগরিক, কিন্তু যার ঘটনাক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির বদলে জাদু বা বিভিন্ন কিংবদন্তির উপজীব্য অলৌকিক শক্তিই মূল নিয়ামক— তাকে আমরা আর্বান ফ্যান্টাসি বলতে পারি। পশ্চিমবঙ্গে এই ঘরানার সার্থক উদাহরণ হতে পারত 'কালসন্দর্ভা'। কিন্তু গ্রামীণ পটভূমি ও তন্ত্রের নানা রূপ ও প্রয়োগ-পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তাকে অকাল্ট থ্রিলার বলাই সঙ্গত। কিন্তু আলোচ্য বই খাঁটি আর্বান ফ্যান্টাসি। এর বিষয়বস্তু কী? একটি হত্যারহস্যের সমাধান করতে গিয়ে গল্পের প্রধান চরিত্র কায়েস বুঝতে পারে, এ বড়ো কঠিন ঠাঁই। পুলিশি নিয়মতন্ত্রের মধ্যে সীমিত থেকে এর সমাধান করা যাবে না বুঝে সে সাহায্য নেয় এক রহস্যময় চরিত্রের। তারপরেই গল্প এগোয় ঝড়ের বেগে। রক্তপিপাসা, লালসা, প্রতিহিংসা, ক্ষুধা— এইসব আদিম প্রবৃত্তিতাড়িত নানা অপশক্তির মধ্যে লড়াই দেখতে-দেখতে কখন যে বই শেষ হয়ে যায়, বোঝাও যায় না! এই বইয়ের ভালো দিক: ১. অসম্ভব গতিময় প্লট ও ছিমছাম লেখনী। ২. পাশ্চাত্যের ডেমন, দেশজ পিশাচ, যক্ষ— সবকিছুকে অক্লেশে মিশিয়ে যে কাহিনিটি নির্মিত হয়েছে, তা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। এই বইয়ের একমাত্র দুর্বলতা: যেখানে এই বই থেমেছে তাকে ক্লিফ-হ্যাংগার ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না! সুযোগ পেলে অবশ্যই পড়ুন।
ভালো লেগেছে। দেশীয় পটভূমিতে অতিপ্রাকৃত ব্যাপার স্যাপার আর অতিপ্রাকৃত প্রাণী লেখক খুব চমৎকার ভাবে সাজিয়েছেন। কম বয়সী লেখকের প্রথম বই হিসেবে ভাষা যথেষ্ট সাবলীল ছিলো, আর এটা পড়ার আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ট্রিলজির প্রথম বই হিসেবে ঠিক আছে। দেশীয় প্রেক্ষাপটে বেশ ভালোই আরবান ফ্যান্টাসির পসরা সাজিয়েছেন লেখক। কাহিনীর শুরু একটি বীভৎস খুনের মাধ্যমে। ব্যাখ্যা দিয়ে খুনের দৃশ্যের অস্বস্তি ভালোই ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। ঢাকা শহরের মধ্যে দানব, অদ্ভুত প্রাণী, স্কন্ধকাটা, চুডেল এসবের ভালো প্রয়োগ দেখানো হয়েছে। মূল চরিত্র উইজার্ড অবলাল ও সাধারণ মানুষ পুলিশ ইন্সপেক্টর কায়েস। দুজনেরই সমকক্ষ মনে হয়েছে, কেউ কম বা বেশি নয়। অবলাল কিছুটা হ্যারি ড্রেসডেন দ্বারা অনুপ্রাণিত মনে হলেও হ্যারি ড্রেসডেন থেকে শতভাগ আলাদা। এটা লেখকের স্বার্থকতা। অদ্ভুত গুপ্তসংঘ, শোনিত মন্দির, গরীবের নেভারনেভার(এস্ট্রাল) এসবের ব্যাখ্যা ভালোই দিয়েছেন। তবে অনেক রহস্য অসমাপ্ত এই পর্বে। এজন্য পরের পর্বটা পড়তেই হচ্ছে। এই বইয়ের সবথেকে বিশেষ দিক মূল চরিত্রদের ডেভেলপমেন্ট। লেখক চরিত্র ডেভেলপমেন্ট ও ব্যাকস্টোরিতে মোটেও কার্পণ্য করেননি। এটা ভালো দিক। হুটহাট করেই ইচ্ছা হল চরিত্র বসিয়ে দিলাম এমন না। তবে বইয়ের প্রথম অংশের পরিধি চাইলেই বড় করা যেত। দেখা যাক দ্বিতীয় পর্বে কি আছে। তবে দেশীয় প্রেক্ষাপটে প্রশংসনীয় আরবান ফ্যান্টাসি এইটা, বলতেই হচ্ছে।
আরবান ফ্যান্টাসি জিনিসটা আমার কাছে নতুন। তবে আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো হাস্যকর হবে কারন, ঢাকা শহরের মত জায়গায় ভুত, প্রেত, চুড়েল, স্কন্ধকাটা, বৈতাল, যক্ষ এসব বেশ বেমানান। তবে বইটা মোটেও বেনান মনে হয় নি। প্রথম দিক থেকেই বেশ গতিসম্পন্ন গল্পটা। একের পর এক ঘটনা ঘটছে। তাই পড়তে মজাই লেগেছে। লেখকের লেখার ধরন বেশ সাবলিল... প্লট বেশ মজবুত ও তথ্যবহুল। আমার কাছে অহেতুক কিছুই মনে হয় নি। প্রতিটা চরিত্রের তার নিজস্ব গতি আছে।
যদি, নেগেটিভ কিছু মনে হয় তা হল লেখকের এক কথার রিপিটেশন চোখে পড়েছে বেশ কয়েকবার। আর জোর করে চ্যাপটগুলোকে ছোট করার প্রবনতা আছে বলে মনে হয়েছে। আরেকটু বিশদ সে করতেই পারতো।
আর, পাঠকদের রীতিমত একপ্রকার আন্ধকারে রেখেই গল্প শেষ করেছে লেখক। আমার মনে হয় এর পরের পর্বে গল্প জমে উঠবে। সে রকমই আভাস দিয়েছে লেখক। :)
ভাল লাগল। বেশ ভাল লাগল। দেশীয় পটভূমিকায় জমাটি ফ্যান্টাসি বলতে যা বুঝায় এ ঠিক তাই! সাবলীল লেখনী পড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা করেছে। আছে দেশীয় সব কিংবন্দন্তী আধিভৌতিক অস্তিত্বের সমাগম। বেতাল, যক্ষ, চুড়েল, পিশাচদের ভিড়ে আটকে পড়া নায়ক এবং রহস্যমানব আবলাল। আরও আছে কিছু সঙ্ঘ যারা এসবের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর। চিরচেনা ভালমন্দের লড়াই, এবং রহস্য। এ গল্প কেবল শুরু হয়েছে, শেষ হতে বহু দেরি! অপেক্ষায় আছি, শেষ পর্ব কবে হাতে পাব তার।
সচরাচর আমি এইসব ভূতের বইটই পইড়া মজা পাই না। অনেকদিন পর এই বইটা কি মনে কইরা পড়া শুরু করলাম। সেরা। দেশী ওয়েস্টার্ন অতিপ্রাকৃত সব এলিমেন্টস নিয়ে অনবদ্য একটা গল্প ফেঁদেছেন লেখক। শেষের টুইস্ট টাও একদম গেম অফ থ্রোনস এর প্রতি পর্বের এন্ডিংয়ের মতো চখাম। যাই পরের পার্ট শুরু করি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, রুমের মেইনটেন্যান্স করার জন্যে কালকেই আমাকে একলা একটা রুমে শিফট করছে। ঘুমানোর আগে এই বইটা পড়তেছিলাম। একটা অংশে গিয়ে বিশাল ভয় পাইছি। তাড়াতাড়ি লাইট অফ কইরা আয়াতুল কুরসী পইড়া কম্বল মুরি দিয়া ঘুম। সকালে উঠে বাকিটা পড়লাম। হেহে।
আমার রেটিং ৪.৫!! একথা কখনোই অস্বীকার করিনা যে হাতে লিখে ভয়ের অনুভূতি প্রকাশ করাটা যথেষ্ঠই কষ্টসাধ্য ব্যাপার, কিন্তু তারপরও বই এর জন্রায় হরর শব্দটা দেখলেই একরাশ আশা ভরসা মনের মধ্যে বাসা বাঁধে। মুভি দেখার ক্ষেত্রে হোক আর বই পড়ার ক্ষেত্রেই হোক, এই হরর জন্রার যে একটা আলাদা আবেদন আছে সেই ব্যাপারটা আমি কেন কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। আর এই কারণেই কি না কে জানে অনেক বড় বড় সাহিত্যিকগনও কোন না কোন সময় এই জন্রায় সাহিত্য চর্চার ব্যাপারে একটু হলেও ঢুঁ মেরে গিয়েছেন। যাই হোক, ওই যে বললাম, বই এর জন্রায় হরর শব্দটা দেখলেই একটু অন্যরকম অনুভূতি হয়, সেই অনুভূতি থেকেই বইটা পড়েছি রাতের বেলা, তা না হলে আবার ফিলিংসটা ঠিক আসে না। কিন্তু বই শেষ করার পর মনে হলো সেটা না করলেও চলতো কারণ এমন ভয়ের কোন গল্প এটা না, বরং থ্রিলিং বললেই যথার্থ হয়! অতিপ্রাকৃত ব্যাপারগুলো যতো কম দৃশ্যপটে আনা যায়, ততোই ব্যাপারটা ভয়ংকর হয়। একটা রহস্য মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে যেটা ভয় পেতে সাহায্য করে। কিন্তু এই বইতে এমন কোন ব্যাপার স্যাপার নেই, তাতে একটু আশাহত হলেও একটা নতুন ধরনের হরর থ্রীলারের সাথে পরিচিত হতে পেরে বেশ ভালোই লেগেছে! লেখক এই গল্পে অতিপ্রাকৃত শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য কিছু শক্তিশালী চরিত্রের অবতারণা করেছেন। আর এই কারণেই গল্পটা থ্রীলারে রূপ নিয়েছে। আরবান ফ্যান্টাসি, হিস্টরিক্যাল ফ্যান্টাসি, হরর-থ্রীলার সব মিলিয়ে সুন্দর একটা গল্পই হয়েছে। কিন্তু গল্পটা শেষ হয়নি। শৈলেন ভট্টাচার্য এরপর কি পদক্ষেপ নিলো সেটা সম্ভবত পরের বইতে আছে বলেই ধরে নিচ্ছি। কিন্তু অসম্পূর্ণ অবস্থায়ও একে সম্পূর্নই মনে হয়েছে। একটা খুনের ঘটনা দিয়ে গল্পের শুরু, কি এক বেষ্টনীর জন্য যক্ষ নামিয়ে ফেলা হয়েছে! ঘটনার তদন্তে গিয়ে ইন্সপেক্টর কায়েস অতীত কোন ঘটনার সাথে এর মিল খুজে পায় এবং কাল বিলম্ব না করে খুজে বের করে অবলালকে! অবলাল হলো অতিপ্রাকৃত শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টকারী একজন যুবক যে কিনা হোয়াইট হ্যান্ডের হয়ে কাজ করছে! হোয়াইট হ্যান্ডের কাজ হলো অতিপ্রাকৃত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া। আর শৈলেন ভট্টাচার্য হলো অতিপ্রাকৃত শক্তির উপাসক, কোন একটা বৃহৎ কার্যসাধনে তাদের যক্ষ নামাতে হয়েছে কিন্তু একটু ভুলের কারণে তারা ঝামেলায় পরে যায় আর সেই ঝামেলা বাড়তে থাকে অবলালের হস্তক্ষেপের কারণে। অতিপ্রাকৃত শক্তির সাথে দ্বন্ধ-সংঘাতে আগাতে থাকে গল্পের কাহিনী! বাংলা সাহিত্যে এমন হরর-ফ্যান্টাসি-থ্রীলার জন্রায় গল্প আরও লিখা হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে আমার জন্য এটা সম্পূর্ণই নতুন একটা ব্যাপার! এবং এটা আমার পছন্দ হয়েছে!
বাহ্! এই বইটা পড়ে আমার মাথায় এ শব্দটাই প্রথম আসলো,আরবান ফ্যান্টাসীকে উপজীব্য করে এত সুন্দর উপভোগ্য কিছু যে বাংলাদেশের কেউ লিখতে পারে ভেবেই অবাক লাগতেছে.তমিস্রা সিরিজ যতটা আগ্ৰহ নিয়ে শুরু করেছিলাম শেষে যেয়ে পুরোটা ঘেঁটে গিয়েছিল, এখন শোণিত সিরিজের প্রথম বই তো বাজিমাৎ করে দিল,বাকি দুটো পড়ে চেকমেট হয় কি না তাই দেখার বিষয়
দ্বিতীয়বারের মতো পড়লাম। একদম আনকোরা আর যথেষ্ট মুগ্ধতা নিয়ে পড়ছি। এত সুন্দর ভাবে গুছিয়ে ডিটেইলস ছিলো কোথাও ঢিলেঢালা ভাবে আগাইছে বলে মনে হয়নি। যেখানে যতটুকু দরকার ততটুকুই ছিলো। আমার পছন্দের তালিকার প্রথম সারির বই এই ট্রিলজি। ❤️
লেখকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায় বইটির সফট কপি পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমার পড়া ফ্যান্টাসি উপন্যাসগুলোর মাঝে অন্যতম এই শোণিত উপাখ্যান। এখন অধীর আগ্রহে হার্ডকপি রিলিজের অপেক্ষায় আছি...
“আচ্ছা! তাহলে শাকিব খান এখানে থাকে?” বাংলাদেশের একটা অতি বিখ্যাত পাঁচতারা এপার্টমেন্ট গোছের কিছু একটা, যেখানে দেশের নামীদামী মানুষ আর দেশের খ্যাতনামা নায়ক-নায়িকারা থাকেন সেরকম একটা প্যালেস গোছের একটা এপার্টমেন্টের সিকিউরিটির সাথে কথা বলবো বলে এগোতেই একটা বাচ্চা বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। সাইকেলে করে। কিন্তু একি! এই বাচ্চার সাইজ এতো বড় কেন? দেখতে দুই বছর, কিন্তু আকারে এটাক অন টাইটানের বাচ্চা টাইটানগুলোর মতো! আমি বললাম, “এতো কিউট বাচ্চা, এতো বড়ো কেন?”
বলতে না বলতেই বাচ্চা শুনে ফেলে চেঁচিয়ে বললো, “সিকিউরিটি!!! এখনি একে শাস্তি দাও!!!” সিকিউরিটি আর কোন কথা না শুনেই আমার হাত একটা বিশাল ব্লেড (পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারিবিয়ানে পাবলিক মৃত্যুদন্ড যে ব্লেডগুলোতে দেয়া হতো) সেগুলোতে নিয়ে মুহূর্তেই ঘচাং। কোন ব্যথা নাই, কিন্তু দেখতে পাচ্ছি কাটা হাত, মাংস....
না। শোণিত এর কাহিনীর কিছুই বলিনি এতক্ষণ। বললাম আমার একটা মাথামুন্ডুহীন দুঃস্বপ্নের কথা। -_- যেটা দেখেছি এই বইটার ৫০ পৃষ্ঠা পড়ে যে ঘুমটা দিয়েছিলাম তখন। তাও কি বলবো – একেবারে দিনে দুপুরে ঘুমটা দিয়েছিলাম। -_-
যারা আমাকে বইটা পড়তে সাজেস্ট করেছিলেন তাদের আমাকে “হরর এলার্ট” দেয়া উচিৎ ছিল। >_< (তাই লাইট জ্বালিয়ে রাত জেগে বইটা শেষ করলাম। রাত থাকতে ঘুমানো যাবে না। লাইট অফ করা তো বহু দূর!)
যাইহোক শেষের দিকে অবশ্য ওরকম ভয়টা থাকলো না কারণ, গল্পটা তখন গ্রাজ কিংবা ইউজ্যুয়াল হরর এর মতো না থেকে 'মন্সটার এন্ড হান্টার' গোছের গল্প হয়েছে। অর্থাৎ বেশ ভালো এবং শক্তিশালী একটা দলও আছে যারা প্যারানরমাল-মন্সটার হান্টার।
তবে শুরুতে কিছু খারাপ লাগা ছিলো। কায়েসের প্রাথমিক পরিচয় দৃশ্যে/ ডায়ালগে না এসে বর্ননায় এসেছে। কিন্তু একবার হলেই হতো, বেশ কয়েকবার কায়েসের/ অবলালের একই দক্ষতার কথা বারবার বলা হচ্ছিলো বলে ভালো লাগছিলো না। হোলস্টার নিয়ে এক পৃষ্ঠা প্রায় স্কিপ করেই দিতাম। আর হুট করেই যেন অবলালের সাথে পরিচয়ের ঘটনা এসেছে। পরে অবশ্য ঘটনাটা শুনার পর খারাপ লাগেনি। মোট কথা ৩০-৫০ এর পর আমার মনোযোগ ভালো এসেছে। অতিরিক্ত কালক্ষেপণ করে জট খোলাটাও ছিলো, মানে “আচ্ছা বলছি সব”/ “প্লিজ, খুলে বলুন” – এই জাতীয় বাক্য খুব বেশি এসেছে, তারপরও যেন দু' এক পৃষ্ঠা খরচ না করা পর্যন্ত আসল কথাটা আসলো না – এমন মনে হয়েছে বেশ কয়েকটা জায়গায়।
তবে কিছুক্ষণ পরপরই একশন সিন এসেছে, যেগুলো মূল গল্প বলার আগে ধীরে ধীরে সব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রকে তুলে ধরার প্রয়াস বলা যায়। মোটকথা শুরুতে আমার মতো কারো খারাপ লাগলে বলবো – এটা শেষ করার মতো একটা বই। অন্তত, একটা সিম্পল পুলিশি কেইস পড়তে হবে না নিশ্চিত। লেখকের কল্পনাশক্তিই শুধু প্রশংসার দাবীদার না। কিছু কিছু ব্যাপারে লেখক গবেষণা করে লিখেছেন বোঝা যায়। বিশেষ করে মানা বা আত্মিক শক্তিটা কিভাবে কাজ করে এবং বাস্তবিক কিভাবে এপ্লিক্যাশন করা যায় সে ব্যাপারগুলো, আর অস্ত্রসস্ত্রের ব্যাপারগুলো তো আছেই। তবে, এটাও ঠিক হঠাৎ করেই বই শেষ হয়েছে। সিকুয়েল আসলেও এভাবে শেষ হওয়াটা অড লেগেছে। কারণ, পুরো বই জুড়ে যে দৃশ্যগুলো ছিলো সেসব প্রায় একই।
তবে শেষটুকু আমার পছন্দ হয়নি। একদম হঠাৎ একটা বই শেষ হয়ে গেলো। কয়েক পার্টের বইতেও সাধারণত প্রতিপার্টে একটা ভালো স্টোরি-এন্ডিং থাকা উচিৎ। জিনিসটা হ্যারি পটার পার্ট সেভেনকে মুভি করতে গিয়ে যেভাবে মাঝখানে শেষহলো – তেমন হয়েছে। আর তাছাড়া, পুরো বই জুড়ে একশন সিনগুলো একদন একই রকমেরই। একটা জায়গায় যায়, আর মন্সটার দিয়ে আক্রমণের শিকার হয়, তারপর মারামারি এবং কোন একভাবে বেঁচে যাওয়া – স্টোরি প্রোগ্রেস যথেষ্ট না। বেশ ভালো কিছু চরিত্র ছিলো যেগুলো আরো ভালো কোন ট্যুইস্ট বা প্লট/ সিনে থাকার যোগ্য তারা।
বি.দ্র. তরঙ্গকে আমার ভালো লেগেছে। সে যদি মাঝে মাঝে ঐ পঁচা পঁচা শব্দগুলো না বলতো তাহলে আমি তার ফ্যান-আর্ট করতাম।
আধুনিক ঢাকা শহরের এক বাড়িতে পাওয়া গেলো ভয়াবহভাবে বিকৃত হওয়া এক লাশ। লাশের তদন্ত করতে গিয়ে একের পর এক অদ্ভুত এবং ভয়াবহ সব ঘটনার মুখোমুখি হতে হলো ইন্সপেক্টর কায়েসকে। সাহায্যের আশায় সে ছুটে গেলো আরেক অদ্ভুত মানব অবলাল এর কাছে। দুইজনের তদন্তে উদঘাটিত হতে লাগলো একের পর এক ভয়াবহ সব রহস্য। আমরা যা দেখি আর বিশ্বাস করি, তার বাইরেও কি অন্য কোনো জগৎ আছে? আধুনিক ঢাকায় পিশাচ, চুড়েল, তান্ত্রিক সহ ভয়াবহ সব অতিপ্রাকৃত সত্ত্বারা একযোগে কি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে? জানতে হলে ঘুরে আসতে হবে সুদূর অতীত থেকে। সেই অতীত যেখানে রাজত্ব করেছিলো চেঙ্গিস খান, আটিলা দ্য হান কিংবা সম্রাট বাবর৷ সব রহস্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে রক্তের মাঝে, শোণিত ধারার মাঝে।
পরিচিত অনেক পাঠকের মুগ্ধতা এবং আরো অনেকের নিয়মিত রেকমেন্ডেশনের কারনে অবশেষে পড়ে ফেললাম বহুল আলোচিত শোণিত উপাখ্যানের ৩টি পর্ব। যেহেতু ৩টা বইই একে অপরের সাথে খুবই কানেক্টেড তাই তিন বইয়ের পূর্ণাঙ্গ রিভিউর শেষ অংশটা পাওয়া যাবে শেষ বইয়ে। তবে প্রতিটা বইয়ের খুঁটিনাটি আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করবো।
আরবান ফ্যান্টাসি হিসাবে পড়া শুরু করেই একটা ধাক্কা খেলাম। প্রথম অধ্যায়টা দেখি পুরোদস্তুর হরর! এই গা ছমছমে হরর ভাইবটা ছিলো ছিলো পুরো বই জুড়েই। সাথে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছিলো বিভিন্ন রহস্য আর মাথায় তৈরী হওয়া প্রশ্নের সংখ্যা। একটার পর একটা ঘটনা এমন আকর্ষনীয়ভাবে আর দ্রুততার সাথে ঘটে চলছিলো যে বইটা হাত থেকে রাখা সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমাদের জানাশোনা দুনিয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকা অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বাদেরকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক তা বেশ ভালো লেগেছে। শুরুর দিকে কায়েসকে হাইলাইট করে গল্প শুরু হলেও অবলালের এন্ট্রির পর পুরো ফোকাস চলে যায় তার দিকে। শুরুতে মনে হচ্ছিল জিম বুচারের সাড়া জাগানো আরবান ফ্যান্টাসি সিরিজ ড্রেসডেন ফাইলস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছেন লেখক। তবে যতোই এগুতে লাগলাম ততই ভিন্নতাগুলো প্রকট হতে লাগলো। ড্রেসডেন ফাইলস অনেক লাইট টোনের গল্প, সেই তুলনায় শোণিত অনেক ডার্ক এবং গ্রিম। পিশাচ, স্কন্ধকাটা, চুড়েল, যক্ষ, বৈতাল; এমন অনেক ধরণের অতিপ্রাকৃতিক চরিত্র এনেছেন লেখক বইতে। যার প্রতিটার বর্ণনাই বেশ ভীতিকর ছিলো। বইয়ে বেশকিছু একশন সিকুয়েন্স ছিলো, যার প্রত্যেকটাই দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো। স্বাভাবিক অস্ত্র এবং অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা 'মানা' এর ব্যবহার সম্বলিত একশন সিকুয়েন্স গুলোতে লেখক দূর্দান্ত কাজ দেখিয়েছেন।
তবে বইটা একদম হুট করেই শেষ হয়ে যাওয়াটা বেশ বেমানান লেগেছে। যতোই কানেক্টেড হোক একটা সিরিজের প্রতিটা বইয়েরই সাধারণত কিছু সুতো ছেড়ে গেলেও মোটামুটি একটা এন্ডিং দেয়া হয়৷ আমার কাছে ট্রিলজির পুরো সেট ছিলো বিধায় আমি একটা শেষ করেই অন্যটা শুরু করতে পেরেছি। কিন্তু যে সময়ে বইগুলো বের হয়েছে সেই সময়ের পাঠকদের কথা চিন্তা করে বেশ খারাপ লেগেছে। রহস্যের পর রহস্য আর প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন সাজিয়ে, একটারও কোনো উত্তর না দিয়ে এভাবে হুট করে বই শেষ করে দেয়ার পর যদি আমাকে এক দেড় বছর অপেক্ষা করতে হতো আমি হয়তো এই বইটা নিয়ে বেশ বিরক্তবোধ করতাম।
লেখকের লিখনশৈলী কিছুটা ফ্ল্যাট মনে হলেও প্লট, গল্পের গতিশীলতা আর অমন দুর্ধর্ষ একশন সিকুয়েন্সগুলো সেটাকে কাভার করে দিয়েছে। তবে প্রচুর বানান ভুল পড়ার সময়ে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। আর বেশ কিছু সিচুয়েশনে লেখকের একই রকম শব্দচয়নটাও চোখে লেগেছে। তবে বাংলা মৌলিকে এমন কিছু না পড়ার কারনেই কিনা, ওভারঅল বেশ উপভোগ করেছি বইটা।
গল্পের শুরু দুই ভাই এর একজন এর খুন আর আরেক ভাই গুরুতর আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এই কেসে জড়িয়ে পড়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর ইন্সপেক্টর কায়েস। তার সাথে রয়েছে অবলাল নামক সাদা হাতের একজন উপরস্থ ব্যক্তি। ক্রমে কাহিনীতে এসে পড়ে যজ��ঞ, পিশাচ, স্কন্ধকাটা, চুড়েল সহ আরও অনেক অতিপ্রাকৃত বস্তু। সিজনের প্রথম বই হওয়ায় কাহিনী অসমাপ্ত। বইটি একটানে পড়ে ফেলা যায় কোনো রকম বিরক্তি ছাড়াই। অনেকগুলো ক্যারেক্টার থাকায় প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও ঘটনা আগাতে থাকলে সব ক্লিয়ার হয়ে যায়। আরবান ফ্যান্টাসি নিয়ে আগ্রহ থাকলে আর দেরি কেনো? পড়ে ফেলুন ঝটপট।
রিভিউ : শোণিত উপাখ্যান - বর্তমান জনরা : আরবান ফ্যান্টাসি লেখক : সৈয়দ অনির্বাণ প্রকাশকাল : নভেম্বর ২০১৫ (আদী প্রকাশন) মূদ্রিত মূল্য : ২০০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৬০ -------------------------------------------------------------------------------------------------------- "শোণিত উপাখ্যান - বর্তমান" গল্পটি টিপিক্যাল মার্ডার মিস্ট্রি এর মতো একটি খুনের মাধ্যমে শুরু হয়।ডাক পড়ে ডিটেকটিভ কায়েস হায়দারের। কিন্তু সে হঠাৎ আক্রমণের শিকার হলে অবলাল চরিত্রটি হাজির হয়। এর ভিতরে ঢাকার ভিতরে ঘটতে থাকে অনেক অতিপ্রাকৃত ঘটনা।আসতে থাকে স্কন্ধকাটা, চুড়েল, বেতাল এরকম নানা অতিপ্রাকৃত প্রাণী। এর ভিতরেই এক তান্ত্রিক হাজার বছর আগের এক ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে চাচ্ছে।এখন এই রহস্য গুলোর একটির সাথে আরেকটির কি সম্পর্ক আর এর পরিণতিই বা কি তা জানতে হলে পড়তে হবে "শোণিত উপাখ্যান-বর্তমান ". _____________________________________________________________________
রেটিং :৯/১০( "শোণিত উপাখ্যান - বর্তমান" মূলত ট্রিলজির প্রথম পার্ট।আরবান ফ্যান্টাসি হিসেবে গল্পটি খুবই উপভোগ্য।বিশেষ করে বিদেশী হরর এলিমেন্ট (ভ্যাম্পায়ার,ড্রাকুলা ) এর পরিবর্তে দেশীয় হরর ( স্কন্ধকাটা, চুড়েল, বেতাল ) এলিমেন্ট গুলো ভালো লেগেছে। অনেক চরিত্রই গল্পের প্রয়োজনে এসেছে যার ভিতরে ম্যাজিশিয়ান অবলালের চরিত্রটি সবচেয়ে ভালো ছিল।তবে মীরানা আর তার এজেন্সি হোয়াইট হ্যান্ড এর কাজ একটু ধোয়াঁশাই লাগলো।গল্প অনেক ফাস্ট পেসড আর এন্ডিং টা " শেষ হইয়াও হইলো না শেষ " টাইপের (অনেক ক্লিপহ্যাঙ্গার রয়েছে )সুপাঠ্য বই ,বানান বা ছাপার ভুল চোখে পড়েনি।এক কথায় হরর বা আরবান ফ্যান্টাসি যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য বই "শোণিত উপাখ্যান - বর্তমান"।ট্রিলজির বাকি পার্ট গুলির জন্য অপেক্ষায় রইলাম।)
এই বই এ শুধুমাত্র কাহিনীর স্টার্ট হয়েছে বলে যেতে পারে,পরের পার্টে হয়ত পুরো কাহিনীর প্রকাশ হবে।তবে পুরো বই এ লেখক মুগ্ধ করেছেন।এটা তার প্রথম লেখা ভাবতেই অবাক হওয়া লাগে।
বইয়ের নাম - শোনিত উপাখ্যান - বর্তমান ক্যাটাগরি - ফ্যান্টাসি লেখক - সৈয়দ অনির্বান প্রকাশকাল - নভেম্বর ২০১৫ প্রকাশনী - আদী প্রকাশন মূদ্রিত মূল্য - ২০০ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৬০ রেটিং - ৪.৫/৫
কাহিনী সংক্ষেপ:-
ইতিহাস কথা বলে- বিজয়ীদের কথা।ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- অতীত গৌরবের সাক্ষ্য।কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ঘটনাবলির কতটুকু তাতে অটুট থাকে ? অসামাজিক কিন্তু তুখোড় পুলিশ অফিসার কায়েস হায়দারের কাঁধে চাপল অদ্ভুত এক কেস সমাধানের ভার।পরিস্থিতি এমনই দাঁড়াল যেখানে যুক্তি কাজ করে না।রহস্য মানব অবলালের কাছে সাহায্য চাইল কায়েস।দু’জনে মিলে নেমে পড়ল তদন্তে।কিন্তু কেঁচো খুড়তে গিয়ে এ যে সাপের বাসা ! একের পর এক অতিপ্রাকৃতিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলো কায়েস আর অবলাল।আধুনিক ঢাকা শহরে এ কী নাটক জমে উঠেছে!শুধু পিশাচ, স্কন্ধকাটা, চুড়েল আর শক্তিশেলধারী যাদুকরই নয়, এর পেছনে রয়েছে আরও গুঢ় কোন রহস্য।জড়িয়ে পড়ল আরও অনেকে--সুদর্শনা মীরানা মোরেস, যে কি না প্রতি রাতে একই স্বপ্ন দেখে।শখের অকালটিস্ট নাজিম আর ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রিয়াস–কারা এরা?ধীরে ধীরে উন্মোচিত হলো ভয়াবহ এক চক্রান্তের জাল।সামনে রয়েছে শৈলেন ভট্টাচার্যের ভয়ঙ্কর দলবল, কিন্তু নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে অসীম শক্তিধর কেউ, কী তার পরিচয় ? দেড় হাজার বছর আগে ঘটে যাওয়া এক প্রলয়ঙ্কর ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় সে।নিষ্ফল বসে প্রহর গোণা ছাড়া কি কিছুই করার নেই ? নাকি কেউ বাড়িয়ে দেবে অযাচিত সাহায্যের হাত ? সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে রক্তের মাঝে।শোণিতের উপাখ্যানে।
ব্যাক্তিগত মতামত:-
প্রথমেই বলে নেই যে বইটি ত্রয়ী অর্থাৎ ট্রিলজির প্রথম।দ্বিতীয়ত, এটা একটা ফ্যান্টাসি ঘরনার বই।ফ্যান্টাসি বইয়ের একটা দিক হলো এখানে কল্পনা জগতকে টেনে আনা যায় অনায়াসে।লেখক ও তাই করেছেন তবে সম্পূর্ন দেশীয় প্রেক্ষাপটে।যেমন ছিল গল্পের সুন্দর গাঁথুনি তেমনি ছিল সুন্দর একটা প্লট।।এবং তৃতীয়ত, নতুন একজন লেখকের পক্ষে একটা ট্রিলজি লেখা যতটুকু কঠিন তারচেয়েও বেশি কঠিন ট্রিলজির প্রথম বই দিয়ে পাঠক প্রিয়তা পাওয়া।সে দিক থেকে লেখক সফল (অন্ততপক্ষে আমার মতে)। চতুর্থত, সবথেকে বড় যে ব্যাপারটা নতুন লেখকদের ক্ষেত্রে হয় তা হল গল্পের ডিটেইলিং এর অভাব।কিন্তু লেখক যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এক্ষেত্রে।
প্রতিটা চরিত্রই ছিল প্রয়োজনীয় এবং মানান সই।বিশেষ করে কায়েস,অবলাল এবং মীরানা (এছাড়াও আরো আনেকে আছে)।গল্পের শুরুতে কায়েস কে পাওয়া গেলেও অবলালের প্রবেশ কিছু পরে তবে মীরানার অনেক পিছে।কায়েস একজন পুলিশ অফিসার আর অবলাল একজন রহস্য চাদরে মোড়া ব্যাক্তিত্ব আর মীরানা একজন স্পেশাল এজেন্ট।কায়েস আর অবলালের সাথে পরিচয় হয় এক অপ্রাকৃতিক ঘটনার মাধ্যমে ৪ বছর আগে।আর আবলালের সাথে মীরানার পরিচয় ...থাক পড়েই দেখুন।
বইটিতে আরো যা আছে -যক্ষ,পিশাচ, স্কন্ধকাটা, মায়াবিনী চুড়েল এদের ভয়াবহ শক্তির বর্ননা,বেশ কিছু একশন সিকুয়েন্স,হোয়াইট হ্যান্ড এবং গ্রে ব্রাদারহুড নামক দু'টি সংঘের অল্প বিস্তর পরিচয়।এবং এক অতিপ্রকৃত ষড়যন্ত্র যার ফলে প্রলয়ের সম্ভাবনা।
লেখককে অনেক ধন্যবাদ বইটা লিখার জন্য এবং ধন্যবাদ জানাই আদী প্রকাশনকে বইটা প্রকাশ করার জন্য।অপেক্ষায় রইলাম ২য় বইয়ের।
একেকটা দিন সবকিছুই পক্ষে যায়। আজ দুপুরবেলা যেমন একটা চলমান বড় রকমের ঝামেলা থেকে মাস চারেকের জন্য আপাত ছাড়া পেলাম, সন্ধ্যার পর এশেজে বেন স্টোক্সের অমানুষিক এক ইনিংসে মতি নন্দীর উপন্যাস ধরণের এক টেস্ট জয় দেখলাম ইংল্যান্ডের, আর রাতে একদমই কোন প্রত্যাশা না করে কেনা আনকোরা এক নতুন লেখকের একটা বই একেবারে ফ্লাইং কালারস নিয়ে বেরিয়ে গেল। অভিনব প্লট (বাংলা ভাষায়), টান টান গতি, আর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সুতোগুলো নিখুঁতভাবে জোড়া দেয়া, এমন বই পয়সা দিয়েই কেনা উচিত, এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে দেখলে বলতে হবে, কাস্টমার এটা কিনে পড়লে সর্বোচ্চ ভ্যালু ফর মানি পাবেন। একশন আর ভয়, দু'টোই ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। পরের পর্বটা ভাল হোক বা না হোক, পাঠককে পড়তেই হবে। এত দারুণ একটা বইয়ের রেটিং ৪ কেন? এডিটিং আর সংলাপের দুর্বলতা। বর্ণনা যতটাই সিরিয়াস, সংলাপ ততটাই ছেলেমানুষি এবং কাঁচা, বইয়ের মেজাজের সাথে পুরোই বেখাপ্পা। আশা করি পরের পর্বগুলোতে সেটা কমে আসবে। ভাল কিছু সম্পাদক কেন জরুরি, সেটা এরকম দারুণ বইয়ের সাধারণ ত্রুটিগুলো দেখলেই বুঝা যায়। আর ইন্সপেক্টর কায়েসকে একেবারে বাংলার জেমস বন্ড বানিয়ে ফেলা হয়েছে, এদেশের আইনরক্ষী বাহিনীর সাথে মোটেই যায় না। তারপরেও, থ্রি চিয়ার্স।
আরবান ফ্যান্টাসি ঘরানার বাংলা বই এই প্রথম পড়লাম। এই ঘরানার বইয়ের কাহিনীতে মূলত আধুনিক শহরের পরিবেশে সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে জাদু, অতিপ্রাকৃত ঘটনা কিংবা কাল্পনিক চরিত্রের মিশ্রণ দেখা যায়। তবে এই বই শুধু আরবান ফ্যান্টাসিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়নি, বরং এর পাশাপাশি ছিল থ্রিলার এবং হররেরও ছোঁয়া। বইটা তিনটা খণ্ডে বিভক্ত: বর্তমান, অতীত ও অতঃপর। . . ফ্ল্যাপে থাকা লেখাটা পড়লেই বইয়ের প্লট সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারনা পাওয়া যায়। "ইতিহাস কথা বলে – বিজয়ীদের কথা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় – অতীত গৌরবের সাক্ষ্য। কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ঘটনাবলির কতটুকু তাতে অটুট থাকে? অসামাজিক কিন্তু তুখোড় পুলিশ অফিসার কায়েস হায়দারের কাঁধে চাপল অদ্ভুত এক কেস সমাধানের ভার। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়াল যেখানে যুক্তি কাজ করে না। রহস্য মানব অবলালের কাছে সাহায্য চাইল কায়েস। দু’জনে মিলে নেমে পড়ল তদন্তে। কিন্তু কেঁচো খুড়তে গিয়ে এ যে সাপের বাসা! একের পর এক অতিপ্রাকৃতিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলো কায়েস আর অবলাল। আধুনিক ঢাকা শহরে এ কী নাটক জমে উঠেছে! শুধু পিশাচ, স্কন্ধকাটা, চুড়েল আর শক্তিশেলধারী যাদুকরই নয়, এর পেছনে রয়েছে আরও গুঢ় কোন রহস্য। জড়িয়ে পড়ল আরও অনেকে–সুদর্শনা মীরানা মোরেস, যে কি না প্রতি রাতে একই স্বপ্ন দেখে। শখের অকালটিস্ট নাজিম আর ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রিয়াস–-কারা এরা? ধীরে ধীরে উন্মোচিত হলো ভয়াবহ এক চক্রান্তের জাল। সামনে রয়েছে শৈলেন ভট্টাচার্যের ভয়ঙ্কর দলবল, কিন্তু নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে অসীম শক্তিধর কেউ, কী তার পরিচয়? দেড় হাজার বছর আগে ঘটে যাওয়া এক প্রলয়ঙ্কর ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় সে। নিষ্ফল বসে প্রহর গোণা ছাড়া কি কিছুই করার নেই? নাকি কেউ বাড়িয়ে দেবে অযাচিত সাহায্যের হাত? সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে রক্তের মাঝে।" . . প্রথম খণ্ডটা শুরু একটা মৃত্যু দিয়ে। কয়েক হাত ঘুরে সেই কেসের দায়িত্ব পরে ইন্সপেক্টর কায়েসের হাতে। ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে দৃঢ় ব্যক্তি সেইই। কিন্তু ওই মৃতদেহ দেখতে গিয়ে কায়েদের প্রায় ভিরমি খাওয়ার মতো দশা। এমনই বিকৃত সেই মৃতদেহ। মানুষ বা কোনো জন্তু-জানোয়ারের পক্ষে এমন কাজ করাটা সম্ভবই না। সেইসঙ্গে একটা গা শিরশিরে অনুভূতি কায়েসের চারপাশে জাঁকিয়ে বসে। এমন অনুভূতি চার বছর আগে আরো একবার পেয়েছিল সে। ঠিক কী ঘটেছিল চার বছর আগে? এসময়েই আচমকা আবির্ভাব ঘটল অবলাল নামক এক রহস্যময় চরিত্রের। অবলালের সাথে কায়েস হায়দারের পরিচয় হয় বেশ কয়েক বছর আগে। পরিচয়ের সূত্রপাত এক অতিপ্রাকৃত কেসকে কেন্দ্র করেই। সেটাও আবার আরেক ঘটনা। তো সেই কেসে একসাথে কাজ করতে যেয়েই দুইজনের পরিচয়, সেখান থেকে বন্ধুত্ব। আস্তে আস্তে আমরা জানতে পারি অবলাল সাদা হাত নামের এক সংস্থার সদস্য। এই সাদা হাতের কাজ হল অতিপ্রাকৃত জগতের এবং অপশক্তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের রক্ষা করা। তো কেসের সমাধান করার জন্য কায়েস চার বছর পর আবারও অবলালের শরণাপন্ন হয়। এরপর শুরু হয় একের পর এক অতিপ্রাকৃতিক আক্রমণ। একে একে আমরা দেখতে পাই যক্ষ,পিশাচ, স্কন্ধকাটা, মায়াবিনী চুড়েল, বৈতাল, জীবনমৃতসহ নানান মিথোলজিক্যাল চরিত্র। সাথে থাকে ভারতীয় উপমহাদেশের তন্ত্রমন্ত্র, হিন্দু মিথ, কিছু ডার্ক এলিমেন্টস এবং চার হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস। . . দ্বিতীয় খণ্ডটা শুরু হয় প্রথমটার লেজ ধরেই। দ্বিতীয় খণ্ডের নামই যেহেতু অতীত, তাই বোঝাই যাচ্ছে যে আমরা চলে যাব একদম পেছনের দিকে, তবে মুঘল সাম্রাজ্যে। এখানে আমরা দেখতে পাই সম্রাট বাবর বেশ চিন্তিত। কারণ অতিপ্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন শাহজাদা হুমায়ুনের আয়ু আর বেশিদিন নেই। কিন্তু নিজের উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি হুমায়ুনকেই বেছে নিয়েছেন। তাই যেভাবেই হোক হুমায়ুনকে তাঁর বাঁচাতেই হবে। সেই সময় সম্রাট বাবরের দরবারে তাঁর প্রধান দেহরক্ষী রাদু আলাখ ওরফে বাঘাতুরের হাত ধরে হাজির হলো শোণিত মন্দিরের প্রধান পুরোহিত লোহিত ও উপপ্রধান অবলোহিত। এভাবে শুরু হয় দ্বিতীয় খণ্ড। একই সমান্তরালে মাঝে মাঝে আমরা বর্তমানের কিছু ঘটনাও দেখতে পাই। যেমন অবলালের রহস্য কী, কেন ঢাকা শহরে অশুভ অতিপ্রাকৃতের ঘটনা বেড়ে চলছে, সাদা হাতের কাজ কী ইত্যাদি। এই খণ্ডে পাঠকদের সাথে পরিচয় করানো হয় বেশ কিছু নতুন চরিত্রের। যার মধ্যে হাফ ভ্যাম্পায়ার ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রিয়াস ও সাদা হাতের প্রতিনিধি মীরানা মোরেস অন্যতম। . . এই বইয়ের শেষ খণ্ডে ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান করা হয়। যেখানে দেখানো হয় শৈলেন ভট্টাচার্যের গড়া অদ্ভুত এক দল। যেখানে আছে ব্যান্ডেজে আগাপাশতলা মোড়ানো যংকসুর, কালো জাদুকর ডমিনিক বায়রান, জীবন্মৃত সত্ত্বাদের উপাসক তান্ত্রিক তরন্দীদেব সহ বেশ কিছু পিশাচ আর চুড়েল। তারা সকলে মিলে প্রাচীন ও ভয়ঙ্কর এক যজ্ঞের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ওদেরকে খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে আছে সাদা হাতের অপারেটিভ অবলাল ও তার দল। এই যজ্ঞটা যদি শৈলেন ঠিকমতো পালন করতে পারে, তাহলে নরক নেমে আসবে পৃথিবীর বুকে। অতিপ্রাকৃত অন্ধকারে ছেয়ে যাবে সবকিছু। . . রক্তের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এই উপাখ্যানের বর্তমান ও অতীতে চলেছে একাধিক সংগ্রাম। ক্ষমতার জন্য লড়াই, টিকে থাকার জন্য লড়াই, ন্যায়ের পক্ষে ও বিপক্ষের লড়াই; সবকিছুই এখানে দেখানো হয়েছে। আর প্রতিটি লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এক অদ্ভুত শক্তি, যার নাম বেসেলি। এই বেসেলি সবার মাঝে থাকে না। কেবল বীরদের মাঝেই এই রক্তধারার মিলে। বেসেলিধারী ব্যক্তি কখনোই কোনো লড়াইয়ে হারেন না। কিন্তু যখন দুই বেসেলিধারীর মধ্যে লড়াইটা হয়, তখনই তৈরি হয় ভয়াবহ তাণ্ডব। . . লেখক শুরুতেই বলে দিয়েছেন যে ঐতিহাসিক রেফারেন্স টানা হয়েছে তার কিয়দংশ সত্যি হলেও বেশির ভাগই কল্পনা প্রসূত। তবে মূল গল্প ভালো লাগলেও, চরিত্রগুলো নিয়ে আরেকটু কাজ করা যেত। এখানে আমরা শুরু থেকেই দেখতে পাই রাফ অ্যান্ড টাফ পুলিশ অফিসার কায়েসকে। এরপর কাহিনীর সাথে সাথে গল্পের অন্য চরিত্রগুলোরও আবির্ভাব ঘটে। এই যেমন অস্ত্র চালনায় বিশেষভাবে দক্ষ প্যারানরমাল এক্সপার্ট অবলাল, সাদা হাতের প্রতিনিধি মীরানা মোরেস, অকাল্টিস্ট নাজিম, ক্যাপ্টেন আন্ড্রিয়াস, শবসাধক তরন্দীদেব। তো বলা যায় যে এখানে এখানে দেশীয় ভূত-প্রেত যেমন পিশাচ, স্কন্ধকাটা, চুড়েল, তন্ত্রসাধনা, অতিপ্রাকৃত শক্তি, থেকে শুরু করে বিদেশি ভ্যাম্পায়ার বা জীবন্মৃত– সবকিছুই একটু একটু করে পেয়ে যাবেন। প্রথম বইটা পড়ার পর মনে হয়েছিল নিশ্চয়ই পরেরগুলো আরো ভালো হবে৷ কিন্তু তখনও বুঝিনি যে এরপর থেকে ভালো লাগার হার কেবল কমতেই থাকবে। প্রথম খণ্ডে লেখক বেশ ভালো একটা ক্লিফ হ্যাঙ্গার তৈরি করতে পেরেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী বইয়ের ক্লিফ হ্যাঙ্গার ততটা শক্তপোক্ত হয়নি৷ প্রথম বই আগাগোড়া পুরোটাই ভালো ছিল। দ্বিতীয় বইয়ের মুঘল আমল অর্থাৎ অতীতের অংশটা ভালো লেগেছে, বর্তমানের পার্টটা ভাল��� লাগেনি। আর তৃতীয় বইয়ে আসলে ভালো লাগার মত কিছু পাইনি। জাস্ট শেষে কী হয় সেটা জানার জন্যই পড়ে যাওয়া। লেখার ধরন নিয়ে বলতে হলে বলব যে ভালোই ছিল, সাবলীল লেখা। তাছাড়া দেশীয় প্রেক্ষাপটে লেখা, তাই খারাপ লাগার কথাও না। আগের ভার্সনের তুলনায় নতুন ভার্সনের কভারটা দারুণ লেগেছে৷ বানান ভুলও একটু কম চোখে পড়েছে। বাংলা ফ্যান্টাসি বইয়ের তালিকা তৈরি করতে হলে এই সিরিজকে সেই লিস্টের একটু উপরের দিকেই রাখব। তিন বইয়ের গড় রেটিং ৩.৫/৫।