Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
জহির রায়হানের গল্প সমগ্র মনে করে পিডিএফ নামায় দেখি ওমা এতো হুমায়ূন সাহেবের গল্পের ভাড়ার, অনলাইন সাইডের প্রতারনায় আর নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য রাগে দুঃখে ছয়মাস বইটারে চোখের সামনে থাকার পরেও একবার ছুঁয়ে থুক্কু মোবাইল থেকে বের করে পড়ি নাই
কিন্তু ভালোবাসার উপর আর কতদিন রাগ দুঃখ জমায় রাখা যায়,আর সেই ভালোবাসা যদি একমাত্র আদি অকৃত্রিম বন্ধু বই হয় তাইলে অভিমানের পাল্লা ভারী হলেও ঠিক একসময় তা মিলিয়ে যাই ই,
হুমায়ূন আহমেদ কিছু কিছু লেখিনী আছে এত সুন্দর, সেগুলো না বড় কোনো গল্প না কোনো উপন্যাস আকারে সবসময়ই পাওয়া ও যায় না, এই বইয়ের বেশ কিছু গল্প আছে যা এখানে ওখানে ছাড়া ছাড়া ভাবে পড়া হলেও একসাথে সেই গল্পগুলোর সাথে অন্য আরো অসাধারণ কিছু সৃষ্টির সাথে পরিচয় হওয়ার জন্য ভুল করে করা ভুলটা এখন মোটেও খোঁচাচ্ছে না বরং বেশ ভালোই লাগছে
কোনো এক অদ্ভূত কারণে হুমায়ূন আহমেদ আমার ততটা প্রিয় কোনো লেখক নন যদিও তাঁর প্রায় শ'খানেক বই পড়া হয়েছে ইতিমধ্যে। আমার অবস্থানটা আসলে মধ্যপন্থী, যেখানে এক পক্ষ তাঁকে ‘ স্যার' বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে আর আরেক পক্ষ ‘ বাজারি লেখক ‘ বলে! আমার হুমায়ূন পড়ার বেশিরভাগই পড়া হয়েছে অন্যকিছু পড়তে ভালো লাগছে না বলে বা ‘ তাঁর এই বইটা সবাই পড়েছে, আমাকেও তো পড়তে হয়’ ভেবে! যাহোক, ভূমিকা আর বড় না করি। অনেক জায়গায় দেখেছি যারা হুমায়ূনকে স্যার মানেন ( নিন্দার্থে কিন্তু বলছি না, হুমায়ূন যাঁদের অত্যন্ত প্রিয় লেখক তাদের বুঝাচ্ছি) তাঁরা, যাঁরা হুমায়ূনকে ‘ বাজারি লেখক' বলেন তাঁদেরকে ‘ অন্তত তাঁর ছোটগল্প গুলো পড়লেও আপনাদের মতামত পরিবর্তন হবে' বলে পরামর্শ দেন। তো আমি মূলত এখান থেকেই মোটিভেটেড হই লেখকের গল্পসমগ্র শুরু করতে আর আজ দিন পনেরো পর শেষও করে ফেললাম ৮৫ টি গল্প সম্বলিত প্রায় ৭৫০ পৃষ্ঠার বইটা।
বলতে দ্বিধা নেই, গল্পসমগ্র পড়ার পরও হুমায়ূন সম্পর্কে আমার মূল্যায়নে তেমন বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ঘটে নি। কিছু কিছু গল্প যেমন অসাধারণ মনে হয়েছে তেমনি কিছু কিছু গল্পকে মনে হয়েছে লেখক লেখার জন্যই যেন লিখেছেন। গাণিতিকভাবে বললে, ৮৫ টি গল্পের ৮ টি গল্পকে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে ( মানে ৫/৫ আর কি), ৩ টি গল্প একদম খারাপ লেগেছে (১/৫ আর কি)। এছাড়া ‘ চলে কোনোরকম’ (২/৫) মনে হয়েছে ১৮ টি, মোটামুটি (৩/৫) মনে হয়েছে ২৭ টি, বেশ ভালো (৩.৫/৫) ১২ টি এবং দারুণ মনে হয়েছে ১৭ টি গল্প। মোটের উপর গড়ে ৩.১৭৬৪৭… ( এবার বুঝলাম মানুষজন মুভি বা বইয়ে ৩.৮৮, ৭.৮৫,৯.৯৯ ইত্যাদি রেটিং কিভাবে দেয়!!!)
গল্প সংকলন যেমন হয় আর কি; বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি থেকে শুরু করে ভৌতিক গল্প, সামাজিক গল্প, রোমান্টিক গল্প, রহস্য গল্প সবধরনের গল্পই স্থান পেয়েছে বইটাতে। গল্পগুলোতে লেখক তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বদরাগী বাবা, অদ্ভুত ভবঘুরে কিছু মানুষ, জ্ঞানী টাইপ দারোয়ান এসব চরিত্র এনেছেন। নীলগঞ্জ, আনিস, পরী/জরির মতো নামগুলো ঘুরেফিরে এসেছে বারবার। প্লটের বিস্তৃতির কথা বললে লেখক চরিত্র হিসেবে নিয়েছেন মশার পরিবার থেকে ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণী পর্যন্ত। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সেসব চরিত্রও কেমন কেন একটা ধারা মেনে চলে। অর্থাৎ চরিত্রগুলো নামে, পেশায়, ধরনে ভিন্ন হলেও প্রতিটা চরিত্রের মধ্যেই কেমন যেন একটা মিল থেকেই যায় যা থেকে লেখক বের হতে পারেন নি।
যাহোক, যে গল্পগুলো ভীষণ ভালো লেগেছে সেগুলো হলো খেলা, কল্যাণীয়াসু, অসুখ, চোখ, জলিল সাহেবের পিটিশন, যন্ত্র, লিপি এবং জাদুকর। এখানকার দু-একটা গল্প আগেও পড়া ছিল তবু আবারও মুগ্ধ হয়েছি এবং পরেরবার পড়ার পরেও যে মুগ্ধ হব সেটা বলাই বাহুল্য। সবমিলিয়ে রসিয়ে রসিয়ে সময় নিয়ে পড়ার মতো একটা বই যা মুগ্ধতার পাশাপাশি বিরক্তিরও সৃষ্টি করবে!
এই সংকলনটা একাধিকবার পড়ছি। ছোটগল্পে হুমায়ূন আহমেদের হাত যেন আরও অনেক বেশি খোলতাই, অনেক বেশি জাদুকরি! আফসোস হয়, সাহিত্যের এই শাখায় আরেকটু বেশি সময় দিলেন কেন তিনি! মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জলিল সাহেবের পিটিশন-এর মতো অসাধারণ গল্প ঠাঁই পেয়েছে এ সংকলনে। রূপা'র মতো রোমান্টিক গল্প কমই পড়েছি এখন পর্যন্ত। সংকলনের প্রতিটি গল্পই দারুণ।
ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট দুঃখ ছোট কথা নিতান্ত সহজ সরল, সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি তারি দু-চারটি অশ্রু জল। নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ। অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। জগতের শত শত অসমাপ্ত কথা যত, অকালের বিচ্ছিন্ন মুকুল, অকালের জীবনগুলো, অখ্যাত কীর্তির ধুলা, কত ভাব, কত ভয় ভুল
রবীন্দ্রনাথ কত চমৎকার ভাবেই না বলে ফেলেছেন ছোট গল্পের সংজ্ঞা। এক কথায় হুমায়ুন আহমেদের এই সমগ্রের কেনই তুলনা হয় না। মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার একেকটি গল্প। কিন্ত কি এক অদ্ভুত মায়ার বাঁধনে না আঁটকে ফেলে প্রতিটি চরিত্র। শেষ করার জন্যে মনটা আকুপাকু করছিলো। কিন্ত আবার একেকটা গল্প শেষ করে আরেকটা শেষ করতে ইচ্ছে করছিলো না। আগের গল্পের রেশটা মনের মধ্যে রেখে দিতে ইচ্ছে করছিলো দীর্ঘক্ষণ ধরে। হুমায়ুন ভক্তরদের জন্য মাস্ট রিড কালেকশন।
ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্তই সহজ সরল, সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি তারি দু-চারিটি অশ্রুজল। নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব নাহি উ��দেশ। অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "বর্ষাযাপন" কবিতার এই লাইন গুলো অনেকেরই মুখস্থ। আমাকেও মনে হয় ক্লাস ৯ এ মুখস্থ করতে হয়েছিল।
বইটার কথা যদি বলি, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে পড়া শুরু করেছিলাম বইটা। ৭৩৬ পৃষ্ঠার বই। বলতে গেলে প্রায় সম্পূর্ণ বই টা শেষ করেছি বিছানায়। রাতে যখন ঘুমাতে যেতাম, সাথে সাথে ঘুম না আসলে বইটা নিয়ে কখনো এক পৃষ্ঠা, কখনো একটা গল্প, কখনো বা কয়েক পাতা এই ভাবে আজ শেষ হলো।
বলা যায় ইকটু ইকটু করে এর অমিয় সুধা পান করেছি।
সায়েন্স ফিকশন সমগ্র, মিসির আলি সমগ্র ও হিমু সমগ্র আগেই পড়েছিলাম তাই কিছু গল্প রিপিট ছিল তবে পড়তে ভালো লেগেছে। প্রথম দিকে প্রিয় গল্প গুলোর একটা তালিকা তৈরি করছিলাম পরে দেখলাম, কোন গুলো প্রিয় তার তালিকা করার চেয়ে প্রিয় না কোন গুলো তার তালিকা করা সহজ, অগত্যা বাদ দিলাম।
হুমায়ূন আহমেদ গল্পের জাদুকর, তাঁর এই বইটা থেকে যারা এখনও দূরে আছেন পড়ে দেখতে পারেন, বলা ই যায় আপনার জন্য খুবই সুন্দর মুহূর্ত অপেক্ষা করছে ।
স্বাধীনতা-পূর্ব ছোটগল্পে এসে আমরা দেখতে পাই, ছোটগল্পের বক্তব্যকে ছাপিয়ে নির্মিতির বিষয়টি গুরুত্ব পেতে। এই সময় জনপ্রিয় লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ (১৯৪৮-২০১৩)-এর আবির্ভাব ঘটে। তবে সেই খ্যাতি তিনি পেয়েছেন ছোটগল্প লিখে নয়, উপন্যাসে। ছোটগল্প হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে কম চর্চিত ও কম পঠিত একটি অধ্যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদের আবেগ অনুভূতি ও আকাক্সক্ষা সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে এই ছোটগল্পেই। ছোটগল্পে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সাহিত্যচর্চার বিকল্প পথ ধরে হেঁটেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচকদের ‘চটুল-জীবনবিচ্ছিন্ন’ লেখার যে অভিযোগ, সেটি ছোটগল্পে এসে আর একদম খাটে না। এর একটা কারণ তিনি নিজেই বলেছেন তাঁর শ্রেষ্ঠগল্প গ্রন্থের ভূমিকাতে- ‘লিখতে আমার কখনো ক্লান্তি লাগে না। যতক্ষণ লিখি গাঢ় আনন্দে মন ভরে থাকে। অবশ্যি সব লেখার জন্যে এটা সত্যি নয়। ছোটগল্পের কথায় ধরা যাক। এরা আমাকে খুব কষ্ট দেয়।’ [হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ গল্প, অনিন্দ্য প্রকাশ, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮] অর্থাৎ ছোটগল্প মানুষ হুমায়ূন আহমেদের গোপন ব্যথা থেকে উৎসারিত হয়েছে। একটি গল্প অনেকবার সম্পাদনা করার পরও তিনি অনেক সময় সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। যে কারণে আমরা বলতে পারি- আত্ম-সন্তুষ্টির নয়, ছোটগল্প তাঁর হৃদয়ে ব্যথা হয়ে বেজেছে। সেটি কেন হয়েছে তার উত্তর আমরা পেয়ে যাই তাঁর গল্পগুলো পাঠ করলে। নিশ্চয় তিনি ভৌতিক, অলৌকিক ও কল্পকাহিনিমূলক গল্প লিখেছেন। কিন্তু তাঁর ছোটগল্পের মূল জায়গা হলো মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জীবনবেদনা নিয়ে লিখিত গল্পগুলো। অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃত গল্প কিংবা কল্পকাহিনিতে এসেও আমরা মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তদের সংকটকেই উপজীব্য করে তুলতে দেখি। হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ গল্পই যেন বেহালার সবচেয়ে করুন সুরে রূপান্তরিত হয়।
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ছোটগল্পে নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে একেবারে নতুন কিছু করেননি। গদ্যের শুরুতে বাংলাদেশের ছোটগল্পের যে ধারা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি তারই অগ্রসর উত্তরসূরি মাত্র। তবে তাঁর গল্পের কথাবস্তু চিরকালের হলেও চরিত্র সৃষ্টি একেবারে নতুন ধাচের। বেশিরভাগ গল্প উত্তম পুরুষের বয়ানে লেখা। গল্পে কথক ঘটনার সাক্ষী মাত্র না থেকে উল্লেখযোগ্য পার্শচরিত্র হিসেবে এসেছে। কোথাও কোথাও কথকই মূল চরিত্র। সেই কথক লেখক নিজেই যেমন, আবার কোনো কোনো গল্পে তেমন স্বতন্ত্র চরিত্রও। কথক যেমন ‘জীবন যাপন’ গল্পের নামহীন কথক লেখক নিজে নন। আবার ‘রহস্য’ গল্পের কথক লেখক নিজেই। গল্পে কথকের পরিচয় হিসেবেও উল্লেখ আছে হুমায়ূন আহমেদের নাম। অনেক গল্প একটা গল্প দিয়ে শুরু হয়ে মূল গল্পের সঙ্গে মিশে গেছে। উপগল্প বা গল্পের ভেতরের গল্প হুমায়ূন আহমেদের গল্পে আসে মেদ হয়ে নয়, গতিসঞ্চারের জন্য। মূল গল্পটা হয়ত থাকে বেদনার, কিন্তু শাখা গল্পটি হয়ে ওঠে হাস্যরসাত্মক। হুমায়ূন আহমেদের গল্পে ফ্লাশব্যাকের ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ে না। তিনি অতীত কালেও কম যান। অধিকাংশ গল্পের কাল ঘটমান বর্তমান হওয়ায় পাঠক আকাক্সক্ষা নিয়ে পড়তে পড়তে পরিণতির দিতে এগিয়ে যান। সমাপ্তিতে চমক তেমন থাকে না। থাকলেও খুব মৃদু চমক।
হুমায়ূন আহমেদের গল্পে তাঁর সমসাময়িক গল্পকার শহীদুল জহিরের মতো জটিল নির্মিতি লক্ষ্য করা যায় না। তার প্রয়োজনও পড়েনি। তাঁর বিষয়বস্তুু নির্বাচন ও উপস্থাপন শৈলী দেখলে বোঝা যায় জনপ্রিয় পাঠক হিসেবে তিনি সবধরনের পাঠকের জন্য গল্প লিখেছেন। মর্মস্পর্শী জমজমাট গল্প লেখার প্রবণতা এখান থেকে তৈরি হয়ে থাকতে পারে। ফলে অধিকাংশ গল্প বয়নস্বরের দিক থেকে কিছুটা একঘেয়ে মনে হতে পারে। তবে পাঠের দিক থেকে সুখপাঠ্য ও উপভোগ্য মনে হবে কারণ হুমায়ূন আহমেদের সরল গদ্যের মূল শক্তি হলো হিউমর বা হাস্যরস। তাঁর প্রায় কঠিন কষ্টের গল্পটিও পড়ার সময় কোথাও না কোথাও মৃদু বা মুখপিটে হাসতে হয়। এই জায়গাতে বাংলাদেশের ছোটগল্পে তাঁর সমকক্ষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গল্পে তিনি কেবল ডায়লগ নয়, চরিত্রের নানারকম অদ্ভূত কাণ্ড সৃষ্টি করে পাঠককে চনমনে রাখেন। এ কারণে অনেক সময় তাঁর চরিত্রগুলো বাস্তবের চরিত্র থেকে আলাদা হয়। অদ্ভূত অদ্ভূত কাণ্ড করে বা কথা বলে যে না হেসে পারা যায় না। তবে এই আপাত ননসেন্স কাজ বা কথার পেছনে লুকিয়ে থাকে গভীর কোনো স্লেস। এটা ধরতে পারলে ভাল, না ধরতে পারলেও গল্পপাঠের মজাটা মরে না। বাংলা ছোটগল্পের মূলধারার স্বর হল সিরিয়াস। আবদুশ শাকুরের গল্পে হিউমর আছে, তবে সেটি বুদ্ধিদীপ্ত, ভাষার ম্যারপ্যাচে, সাধারণ পাঠকের বোধে আসার মতো নয়। এখানে হুমায়ূন আহমেদ সফল লেখক। বাংলা সাহিত্যে ইতোপূর্বে ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, পরশুরাম, সুকুমার রায়, শিবরাম চক্রবর্তী, সৈয়দ মুজতবা আলী, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় হাসির গল্প লিখেছেন। তাঁদের গল্পের বেশিরভাগ সময় যা ঘটেছে তা হলো ভার্বাল কমেডি। এবং তাঁদের হাসির গল্পগুলো রম্যগল্প হিসেবে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। কারণ তাঁরা অনেক গল্প লিখেছেন যেখানে হাসানোটাই মূল উদ্দেশ্য। আবার অনেক গল্প লিখেছেন যেখানে কৌতুক করে সমসাময়িক জাতীয় জীবনের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের গল্পে এর কোনোটাই প্রকট হয়ে আসেনি। তবে নিশ্চয় হুমায়ূন আহমেদ তাঁর এই অগ্রজ রসিক লেখকদের কাছ থেকে হাস্যরসের নানা উপাদান বা উপস্থাপনের তরিকা গ্রহণ করে থাকতে পারেন। তুলনামূলকপাঠে তার কিছু নমুনা আমরা পেয়েও যাবো।
status on 18 march: হায়রে রতন, কোথায় ছিলে, যতনে রাখা সন্ধ্যাকালে।
status on finished date: পরিপুর্ণ একটা গল্পসমগ্র। সত্যজিৎ রায় এর "গল্প ১০১" আমার সব চেয়ে প্রিয় গল্পসমগ্র। এই সমগ্রটা প্রায় সমান পয়েন্ট পেয়ে ২ নম্বরে রইল। বইটার প্রতি আমার কিছুটা একান্ত ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আবেগ আর অনুভূতি গুলোকে প্রায় সময় উপর্যুপুরি রূপে নাড়া দিয়েছে কিছু গল্প। বইটা শেষ করতে ইচ্ছা করতেছিল না। শেষ গল্প টা পড়েছি প্রায় ১ মাস সময় নিয়ে। যা হোক, যে গল্পগুলো আবার পড়বখনঃ
হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ কাজ তাঁর ছোটগল্পগুলো। তিনি যে একজন মাস্টার স্টোরিটেলার, সেটা তাঁর সেরা উপন্যাসগুলোতেও যতটা না বুঝা যায়, তারচেয়ে অনেক বেশি বুঝা যায় তাঁর ছোটগল্পগুলো থেকে। প্রতিটা গল্প আলাদা, এবং প্রায় সবক'টাই মাস্টারক্লাস। আমার সবচেয়ে প্রিয় সংগ্রহগুলোর মাঝে এটা একটা। যারা হুমায়ূনের ছোটগল্পগুলো পড়েননি, তারা হুমায়ূনকে চেনেননি।
ভাষাকে সহজ বোধগম্য রেখেও অন্তরে ঢুকতে পারাকে আমি আসল সার্থকতা মনে করি। হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস বন্দনা যতটা চারিদিকে, তার ছোটগল্প বোধহয় ততটাই অগচরে রয়ে গেছে। ভাষায় সেই হাস্যরস, সেই সাদামাটা বাক্য আর সংলাপের ভেতর দিয়ে জড় হয়েছে গভীর, গহিনতম প্লট। শুধু ছোটগল্পের জন্য হলেও হুমায়ুন আহমেদ কে আমি অনেকদিন মনে রাখতে চাই। উপন্যাসের ক্ষেত্রেও দেখাযেতো লেখক ওপেন এন্ডিং খুব রেখে দিতেন। তিনি চাইতেন কিছু গল্প পাঠকেরা ভেবে নিক। কিন্তু আমি অনেক পাঠককে দেখেছি বরঞ্চ ওপেন এন্ডিং রাখায় তারা বিরক্তি প্রদর্শন করছেন। ছোটগল্পে এরকম অসমাপ্ততা একরকম অলংকার। সেই অলংকারে দু হাত সাজিয়ে বসে আছে লেখক সেই কবে থেকে। সেকারণে ছোটগল্প হুমায়ুন আহমেদের সহজাত গল্প বলিয়ে হয়ে ওঠায় কোনরকম বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেনি। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের কথা বলতে চেয়েছেন হুমায়ুন আহমেদ সবখানেই। এই গল্পগুলোতেও সেই ছাপ স্পষ্ট।
জনরা হিসেবে ছোটগল্প আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা সাহিত্যমাধ্যম। এতটুকু পরিসরে ভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য বাঘা বাঘা লেখকদের ঘাম ঝরে। সেখানে হুমায়ুন আহমেদ ছোটগল্প লেখে গিয়েছেন অবলীলায় শতকের বেশি। 'গল্প পঞ্চাশৎ' সংকলনে লেখকের নিজের পছন্দের পঞ্চাশটি গল্প সংকলিত হয়েছে। এখানে গন্ধ, খাদক, জলিল সাহেবের পিটিশন, ভয়, কল্যাণীয়াসু, ফেরা, যন্ত্র, ইত্যাদি অনেকগুলো চমৎকার গল্প রয়েছে। লেখকের ছোটগল্প এমন একটা সময়ে আমাকে সাহায্য করেছে, যখন আমার অস্থিরতায় যাচ্ছিলো। সেই সময় এই বইটা মনটা ভরিয়ে রেখেছে আমার। পঞ্চাশটি গল্প পড়ে আমি তাই আর থেমে থাকিনি, নেট থেকে নামিয়ে বাকি গল্পগুলোও পড়ে নিয়েছি।
আমি যদি সবগুলো গল্পকে খুব ভালো বলি, তা হয়তো একরকম মিথ্যে বলা হবে। তবুও এতগুলো গল্প যে পড়ে বিরক্ত হইনি, এটাই কি সার্থকতা নয়? আমি এ যুগের বেশ কজন সাহিত্যিকের ছোটগল্প পড়ছি এখন। ভাষায় মাধুর্যতা অনেক পেয়েছি, কিন্তু সামান্য কটা বাক্যে মায়া নিয়ে কারবার কিন্তু আমি এখনো কোথাও দেখিনি।
বইয়ের নাম গল্প সমগ্র অথচ সেখানে আমার সবচেয়ে পছন্দের হুমায়ুন আহমেদের ছোট গল্পটাই নেই- 'চোখ'। গল্পের শুরুটা এরকম- "আজ বাদ আসর খেজুর কাঁটা দিয়ে মতি মিয়ার চোখ তুলে ফেলা হবে।" যদিও একই নামে মিসির আলিকে নিয়ে লেখা আরেকটা গল্প আছে সংকলনে।
নিখাদ রম্য বাদে মোটামুটি বাকি সব ধরনের সাহিত্য ধারারই উপস্থিতি রয়েছে গল্পগুলোতে- রোমান্টিক, আধিভৌতিক, সায়েন্স ফিকশন, শিশুতোষ, সামাজিক বাস্তবতা ইত্যাদি। বিষয়বস্তু ও অনুভূতির বৈচিত্র্যের দিক থেকে হুমায়ুনের ছোট গল্পের তুলনা মেলা ভার। তাঁর উপন্যাসের মতো এই গল্পগুলোও পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে ভাষার জাদুকরী আর আবেগের প্রাচুর্যের কারণে।
রুপা, কল্যানিয়াসু গল্প দুটি যে কতবার পড়েছি তার কোনো হিসাব নেই। মন খারাপ হলে এখনো মাঝে মাঝে এই গল্প সংকলন এর কিছু গল্প পড়ি। মামার বাসা থেকে সেই ছোট্ট বেলায় বইটা চুরি করে এনেছিলাম। মামার বাসায় বসেই বইয়ের প্রথম গল্প 'রুপা' পড়ে বাকি গল্প পড়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় ফেরার সময় সাথে নিয়ে চলে আসি।
The stories felt unfinished, and in a lot of them he relied too much on shock factors or climatic/anticlimactic ends that don't match the story's vibe to give the story a meaning, 2which as a writing method didn't work for me at all.
ছোটগল্প লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ খারাপ না। কিছুকিছু গল্প আসলেই অসাধারণ। স্থূল হাস্যরসে ভরা উপন্যাস না লিখে উনি ছোটগল্পের দিকে আরেকটু মনযোগ দিলেই হয়তো বাংলা সাহিত্য উপকৃত হতো।
সুপারন্যাচারাল ব্যাপারস্যাপারের প্রতি হুমায়ুন আহমেদের দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল। বেশিরভাগ গল্পের কাহিনীতে অলৌকিকতা আছে। সাধারণ পৃথিবীর বাস্তবতা নিয়ে গল্প খুব কম। কয়েকটা গল্প ভালো লেগেছে - একটি নীল বোতাম, কুকুর, মন্ত্রীর হেলিকপ্টার, শ্যামল ছায়া, ফজলুল করিম সাহেবের ত্রাণকার্য, যন্ত্র, পানি রহস্য। ভবিষ্যতে আবার যদি হুমায়ুন আহমেদের গল্প পড়া হয়, তাহলে এই গল্পগুলো পড়ার ইচ্ছা রাখি।
বইটা যখন পড়তে শুরু করি তখন আমার সেমিস্টার ফাইনাল চলছিলো। এক্সাম দিয়ে এসেই গল্প পড়ি, কিছুক্ষণ ক্লাসের পড়া পড়েই আবার গল্পে ডুবে যাই৷ এরকম করে ৭৩৬ পৃষ্ঠার বিশাল বইটির ৮৫ টি অসাধারণ গল্প পড়ে শেষ করি ৩-৪ দিনে৷ কিছু কিছু গল্প আশাকরি ���নে থাকবে অনেকদিন পর্যন্ত৷
ছোট গল্প লেখায় হুমায়ূন আহমেদের হাত অসম্ভব ভালো। উপন্যাসের চাইতেও বেশী। কেবল জ্বীন কফিল আর বীনার অসুখ গল্প দুটির জন্যই এই বইটা কিনে ফেলতে পারেন।
জ্বীন কফিল গল্পে একজন মসজিদের ইমামের চরিত্রকে দেখানো হয়, যার স্ত্রীর ওপর খুব খারাপ প্রকৃতির জ্বীন আছর করেছে। এই জ্বীন তার স্ত্রীকে পুরোপুরি পেতে চায়। আর তাই ইমাম সাহেবের প্রতিটা সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই হত্যা করে ফেলে। গল্পের শেষের দিকে মিসির আলীর আগমণ ঘটে।
বীনার অসুখ গল্পটা রাতে পড়ছিলাম। বীনা নামের মেয়েটিকে এক লোক বিয়ে করতে চায়। লোমশ পশু প্রকৃতির একজন মানুষ। হাতের নখ বড় বড়। গায়ে বিশ্রী গন্ধ। বিয়ে নাকচ হয়ে যাওয়ায় লোকটা ওকে অনুসরণ করতে আরম্ভ করে। অতিপ্রাকৃত টাইপের গল্প। পড়তে পড়তে এক সময় ভয় ধরে গেলো। অথচ শেষে গিয়ে কী নিদারুণ মানবিকতার স্পর্শে ভয় কেটে গিয়ে দু'চোখ ভিজে গেলো। হুমায়ূন আহমেদের ছোট গল্পের টার্ন এমনই।
উল্লেখযোগ্য আরেকটি গল্প হলো- খেলা। পুরো গল্পটি দাবা খেলা নিয়ে। খায়রুন্নেসা গার্লস স্কুলের নলিনি রঞ্জন বাবু দাবা খেলা শিখলেন। এমন শেখাই শিখলেন যে তাকে কেউ আর এই খেলায় হারাতে পারে না। গল্পটার শেষটুকু পড়ে মন ভারাক্রান্ত হবে।
রূপা গল্পটি নিয়ে নাটক তৈরি হয়েছে। অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ, আজমেরী হক বাঁধন এবং সম্ভবত আফসানা বিন্দু। রোম্যান্টিক গল্প। পড়ে ভালো লাগার মত।
বুড়ি গল্পটি পড়ার পর এ্যামেরিকার বৃদ্ধদের জন্য খুব কষ্ট লেগেছে।
শিকার, খাদক, ১৯৭১, কবি, সঙ্গিনী এই গল্পগুলো এর আগেও পড়েছি। খাদক গল্পটা নিয়েও নাটক তৈরি হয়েছিলো।
চোখ গল্পটিতেও মিসির আলীর উপস্থিতি রয়েছে। রহস্যময় গল্পটি পড়ে মজা পাবার পাশাপাশি খানিকটা মনও খারাপ হবে। বইয়ের আরও কয়েকটি গল্পে মিসির আলীর উপস্থিতি রয়েছে।
যাই হোক, আলোচনা বড় হয়ে যাচ্ছে। আর কোনো গল্পের কথা উল্লেখ না করি। হ্যাপি রিডিং।