Jump to ratings and reviews
Rate this book

গভীর নির্জন পথে

Rate this book
চলতি কথায় যাদের বলে বাউল বৈরাগী দরবেশ সাঁই কিংবা সহজিয়া উদাসীন তাদের কি সত্যিই জানি তেমন করে? দেড়শো বছর আগে উইলসন সাহেব আর অক্ষয়কুমার দত্ত এমনতর নানা উপাসক সম্প্রদায়কে শনাক্ত করে তাদের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত জানিয়েছিলেন। তারপরে কিন্তু এরা হারিয়ে গিয়েছিল গ্রামের গহনে—গৌণধর্ম বিষয়টাই যেন গৌণ হয়ে পড়েছিল বাঙালি বিদ্বৎসমাজে। সেই গভীর নির্জন পথে একাকী পায়ে হেঁটে, দু দশক ধরে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম-বর্ধমান-কুষ্টিয়া-মেহেরপুরের গ্রামীণ পরিমণ্ডল ঢুঁড়ে, নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন ধারার লেখনীতে এবারে লেখক ধরেছেন সেই বিচিত্র ভুবনের অন্তর্গহন বাণী। সারাদেশে ছড়ানো-ছিটানো বিচিত্র সব গৌণধর্ম আর তার সাধক-সাধিকা, রহস্যসংকুল তাদের দেহতত্ত্ব ও সাধনা, সংকেতিক ভাষার ব্যবহার, দ্ব্যর্থক গান আর জীবনযাপনের কবোষ্ণ বৃত্তান্ত বাংলাভাষায় আগে কখনও শোনা যায়নি। পুঁথিপড়া লোকসংস্কৃতিচর্চার আড়ালে, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজ-নৃতত্ত্ববিদ্যার সমান্তরালে অন্তঃশীল রয়ে গেছে এক মায়াবি বিশ্ব। গ্রামে গ্রামে আর গানে গানে গাঁথা সেই লোকায়ত যাপনের আখ্যান যেন জাদু-বাস্তবের ঢঙে রূপ পেয়েছে এ-বইয়ের বিন্যস্ত ছটি অধ্যায়ে। উঠে এসেছে এমন সব মানুষ, চেনা সমাজে যাদের কোনও আদল নেই। শোনা গেছে এমন সব গানের ভাষ্য ও বয়ান যা অপূর্বকল্পিত। ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশেই ‘গভীর নির্জন পথে’ বাঙালি পাঠকদের চমকিত করেছিল। বই আকারেও এক দশকের বেশি জনপ্রিয় এই রচনাধারা খুলে দিয়েছে বাংলার সমাজ সংস্কৃতিচর্চার এক নতুন পথ—বাংলা গদ্যশৈলীরও এক নবনিরীক্ষা।

242 pages, Hardcover

First published July 1, 1989

12 people are currently reading
199 people want to read

About the author

Sudhir Chakraborty

25 books26 followers
Sudhir Chakravarti was born in 19 September 1934 at Shibpur. His father's name was Ramaprasad Chakravarti and his mother Beenapani Chakravarti. He was the youngest of the nine sons of Ramaprasad. Due to the fear of the Japanese bombardings in Calcutta Chakravarti's father had shifted to Dignagar, Nadia,(where they had ancestral lands as Zamindars) from Shibpur, Howrah in his childhood. After that his family came to Krishnanagar, Nadia. Chakravarti completed his studies in Calcutta University and in 1966 married Nivedita Chakravarti. Chakravarti is known for his research works on Folk religion, Lalan Fakir and Cultural Anthropology in Bengal. He spent 30 years researching the folk culture by traveling to different villages all over the West Bengal. He was a professor of Bengali literature since 1958 to 1994,but even after retirement kept on teaching until 2011. Chakravarti worked in Krishnagar Government College, guest lecturer of Jadavpur University and also associated with the Institute of Development Studies, Kolkata. He wrote and edited more than 85 books on various subjects like music, art, folk-religion, cultural anthropology. He was the editor of Bengali literary Magazine Dhrubapada.

He received the Ananda Purashkar in 2002 for his book Baul Fakir Katha and the Sahitya Akademi Award 2004. He got the awards of Eminent Teacher from Calcutta University in 2006, Narasimha Das award and the Dr. Sukumar Sen Gold Medal from the Asiatic Society. He has also been awarded by the Tagore research Institute the title of Rabindratatvacharya.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
40 (66%)
4 stars
12 (20%)
3 stars
6 (10%)
2 stars
1 (1%)
1 star
1 (1%)
Displaying 1 - 18 of 18 reviews
Profile Image for হামিম কামাল.
79 reviews29 followers
August 6, 2023
ভাবনার গতিপথ বদলে দেওয়া বই। আমাদের শেকড়, আমাদের আণবিক স্তর দেখানো এমন গ্রন্থের জন্য সুধীর চক্রবর্তীর কাছে চিরঋণী।
বাউল দর্শনের তত্ত্বীয় গভীরতাই শুধু নয়, বাঙালির স্বকীয় সাধনাচিন্তার মনরসায়ন এখানে ব্যক্ত হয়েছে। এবং এমন ভাষায় যে একেবারে কাঠখোট্টা লোকও ঠোঁটে হাসি ধরে রেখে পড়ে যাবে, আর আজীবন মনে রাখবে।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
July 8, 2022
প্রতিদিন একঘেয়ে সূচিতে দিন কাটাই৷ কর্মক্ষেত্রে যাই, সেখানে ভালোমন্দ নানা বিষয় নিয়ে গল্প হয়। কখনো কখনো হাসির হুল্লোড় ওঠে, কখনো কখনো দেশ নিয়ে, নিজেদের অবস্থান নিয়ে হতাশা জাঁকিয়ে বসে৷
জীবনটাকে একটু অন্যরকম আনন্দ শেখাতে বইয়ের আসলেই বিকল্প নেই। তাই হঠাৎ এমন একেকটা মণিমাণিক্যের সন্ধান পাই, যা মনকে কানায় কানায় পূর্ণ করে তোলে। মনে করিয়ে দেয়, আমি লালল-কবীর-বাউল-ফকিরদের দেশের লোক। কত অত্যাশ্চর্য অজানা রয়েছে ছড়িয়ে, কিছুই না জেনে, অল্প জেনে, নিজেকে পণ্ডিত ভেবে অকারণে আফসোস করে বর্তমানকে নষ্ট করি।
বাউল সম্প্রদায়! এক রহস্যময় ক্ষেত্র। আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের নিজেদের চেয়ে খুব দূরের, খুব গ্রাম্য কেউ মনে হয়। ধুলোমাখা বসন আর রুক্ষ মুখের কোন বাউলকে দেখলে বা তাঁদের গ্রাম্যসুরের গান কানে ভাসলে খুব আগ্রহ বোধ করেন সবাই, এমন দাবি করতে পারবেন না। তলিয়ে ভাবিনা গানের কথার অর্থ৷
কত ধরনের বিশ্বাস ছড়িয়ে রয়েছে সহজিয়া বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে। একটি উল্লেখযোগ্য ধারা সাহেবধনী সম্প্রদায়। অগ্রদ্বীপের মেলা তাদের বাৎসরিক অনুষ্ঠান। সবাই এসে মেলাতে জুটে তখন, পঞ্চতত্ত্ব দিয়ে দীনদয়ালের ভোগ সারে। নিজেরা আনন্দ করে, গান গায়। সুধীর চক্রবর্তী এসব এলাকায় নিজে ঘুরেছেন। নিজে মিশেছেন শরৎ পাল, মাযহারুল খাঁ কিংবা গণেশ পাড়ুইদের সাথে। দীনদয়ালের ভক্তদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম ভেদ একেবারেই নেই। সকলে দীনদয়ালের প্রজা, এইই সবার ভাবনা।
বাউল সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ ভাবনাই গুহ্য, তাদের দর্শন অতি উচ্চমার্গীয়, গানের প্রতিটি শব্দের অন্য ব্যাখ্যা রয়েছে। কৃষ্ণ তাঁদের কাছে যিনি কর্ষণ করেন তিনি, রাধা ক্ষেত্র। আবার অন্য অনেক অর্থ ও রয়েছে। নানান সম্প্রদায়ের নানান দর্শন, শুক্র বা বিন্দুই যার মূলে।
পরকীয়া কেন বাউল সম্প্রদায়ে এত প্রচলিত এরও রয়েছে নানা উত্তর। আবার চারচাঁদ গ্রহণের মতো গোপনীয় প্রথাও রয়েছে। এর অনেকগুলোই সভ্য সমাজের সাথে সাংঘর্ষিক।শহুরে অবিশ্বাসী মানুষের কাছে এর সব ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য মনে হবে না। কিন্তু যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁরা এখনো মানুষে সর্বোচ্চ বিশ্বাস রেখে টিকে তো রয়েছেন!
তাঁদের ভাবনাগুলো জানলে চমকে উঠতে হয়, অন্য আঙ্গিকে ভাবতে হয় জগতের প্রতিটি নিত্য ঘটনার কথা।
সুধীর চক্রবর্তী এর এই প্রবন্ধগুলো এত চমৎকার কাজ! আমি প্রায় ১০ দিন লাগিয়ে অল্প অল্প করে বইটি পড়েছি। একেক লাইন কয়েকবার করে পড়েছি, সব বিশ্বাস যৌক্তিক না লাগলেও মনে হয়েছে নতুন করে দৃষ্টি পেয়েছি। দৃষ্টি পেয়েছি মানুষকে, ধর্মকে নতুন চোখে দেখার। এত কষ্ট, এত পরিশ্রম করে লেখক এই প্রবন্ধগুলোর রসদ জোগাড় করেছেন, গবেষণা করেছেন, সাজিয়েছেন চমৎকার ভাষায়, খোলা গলায় স্বীকার করেছেন নিজের অক্ষমতার কথা, যে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে গিয়েছি।
বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলকে দূরে রেখে গভীর নির্জন পথে পাঠককেও হাঁটিয়েছেন লেখক, পাঠক হিসেবে আমি পেয়েছি অপার শান্তি, মূল্যবান এক অভিজ্ঞতা। বইটি শেষ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি, মনে মনে বলেছি আজীবন মনে রাখার মতো একটি বই পড়ে শেষ করলাম। লেখকের মতোই প্রশ্ন জেগেছে মনে,
'আমি ভাবলাম, দীনদয়াল কোথায় থাকেন? হুদোয় শরৎ পালের ভিটেয়, হরিমতী দিদির বিশ্বাসে না গণেশ বা পচার মতো মানুষের দুঃখের অতলে?'
Profile Image for Camelia kongkon.
29 reviews13 followers
June 10, 2023
বাঙলার গভির নির্জন পথে আঁকাবাকা হয়ে আছে লোকসংস্কৃতির দাগ। এ আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি। পূর্বপুরুষদের পথ হয় দূর্গম, নির্জন। আমাদের মতো মসৃন নয়।
সেই নির্জন পথেই তারা গেয়েছিলেন দ্ব্যর্থক গান।
এই বাংলাতেই এককালে, বাউল, ফকির, দরবেশ, বলরামী, বৈষ্ণবধর্মাবলি, কর্তাভোজের দলের আনাগোনা ছিলো, জীবনযাপনের আখ্যান।

লোকসংস্কৃতি ও লোকসংগীত গবেষক সুধির চক্রবর্তী সেই বাউলদের গান, ফকিরের আখরা, ও তাদের হারিয়ে যাওয়া ও প্রায় নিশ্চিহ্ন ধর্মের ইতিহাস তুলে নিয়ে এসেছেন প্রাচীন কালের পাতা থেকে। গবেষণার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চিরায়ত বাংলার লোকসংস্কৃতি নিয়ে বলে গেছেন।
নদীয়া, বর্ধমান, মুর্শীদাবাদ, বীরভূম, কুষ্টিয়া থেকে ঘুরে সেই লোকসংস্কৃতি ও লোকসম্প্রদায়ের ইতিহাস গল্প লিখেছেন।

সাধকদের মেলায় বসা, তাদের গান শোনা, তাদের অত্যাচারের গল্প, এইসব লোকালয়ের উপধর্মের ওপর সংখ্যাগুরুদের আক্ষেপ থেকে তাদের ওপর আক্রমণ এবং নিশ্চিহ্নকরণের অপচেষ্টা।
বাংলার বাউল ফকিরদের নিয়ে এতো বিশদভাবে আলোচনা আমি আগে পড়িনি। তাদের প্রতাপ এককালে যেমন বিস্তৃত ছিলো তেমনি একসময় হুট করে কালে কালে প্রত্যেকটা উপধর্ম হারিয়েও যায়।
শুধুমাত্র ইতিহাস নয় কালোঅধ্যায়ও জানা যায়। জানা যায় ভন্ড, লোভী, সাধকদের ছড়াছড়ি।
তাছাড়া প্রচুর লোকগানের কলি ব্যবহার হয়েছে সময় বুঝে, যেগুলো প্রতিটি বাক্যের প্রান হিসেবে কাজ করেছে।

অত্যন্ত সুক্ষ্ম এবং মার্জিত লেখা, অবাধ গবেষণার ফলশ্রুতি। তাই পাঠককে নিরাশ করবেনা এই বই। বইটি পড়তে এবং বুঝতে একটু সময় লাগবে এই আরকি কারণ এই ইতিহাসের সাথে আমরা কোনোভাবেই পরিচিত নই। এই লোক ইতিহাসের কৃতিতৃ এখানেই। নিজেকে অনেক সযত্নে মুড়িয়ে রেখেছে।
বইটির সবচে ভালো দিক লেগেছে, লেখকের বুলি বেশ ঝড়ঝড়ে। নন-ফিকশনেও পড়ার গতিতে সমস্যা হয়নি।
অনবদ্য শব্দচয়ন, যেনো পাঠককে হাঁটিয়ে নিয়ে গেছেন গ্রাম বাংলার পুরোনো এক নির্জন পথের মধ্য দিয়ে।
.
.
হ্যাপি রিডিং🌸
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
July 4, 2022
"আপন জন্মের কথা যে জানেরে ভাই
সকল ভেদ সেই তো জানে তার তুলনা নাই।
রজ বীর্য রসের কারণ
এ দেহ হইল সৃজন
যারে ধ'রে সৃজন পালন তারে কোথা পাই?"

মোহময় গানগুলো শুনতে শুনতে মানুষ বিমোহিত হয়। তাই তো এর রচয়িতারা বোধহয় আত্মভোলা হয়!

"অজ্ঞ মানুষে জাতি বানিয়ে
আজন্ম ঘুরিয়া মরে স্বজাতি খুঁজিয়ে ।।
শিয়াল কুকুর পশু যারা
এক জাতি এক গোত্র তারা
মানুষ শুধু জাতির ভারা মরে বইয়ে।। "

গুরু এবং শিষ্যের অপার বন্ধনে এই জগৎ সমৃদ্ধ। গুরু হলেন সেই তরীর মাঝি যে শিষ্যকে পার করে পৌঁছে দেয় স্রষ্টার দরজায়। তাই এই মিল বন্ধনে শত শত বছর ধরে আজও ঠিকে আছে এসব উপধর্মগুলো।

শ্রদ্ধেয় অরুণকুমার সরকারের লেখা চার পাঁচটি লাইন এই ভূমিকাকে আলাদা একটা নতুনত্ব দিয়েছে।

"গ্রাম-গ্রামান্তর ক্রমে চূর্ণ হবে শাখা-প্রশাখায় বর্ধমান শহরের পদক্ষেপে।
যত কলরব পাখির, দিঘির আর গাছের পাতার, ডুবে যাবে।

সেই দুর্দৈবের আগে যাও গ্রামে গ্রামে।
ধুলোয় কাদায় এখনও অনেক কিছু পাবে গান প্রাণ শিল্পের সম্ভার।
মহানন্দে তুলে নাও, ঐতিহ্যকে চিনে রাখো।"



বেশ অনেকদিন আগে 'জলের গান' এর একটা গান শুনেছিলাম। 'আউলা বাতাস' নাম। গানটার কথা বলার কারণ হলো, গানটা বাংলার বাউল ফকিরদের নিয়ে। কিন্তু গানটা আমি বেশ অনেকবার শুনেছি শুধুমাত্র Lyric ভালো লাগে বলে। তার কয়েকটা লাইন নীচে দিলাম-

"পারেনা সবাই হতে বিন্দুধারী
পুরুষের উৎস জানি শুধুই নারী।।
দেহ আর দেহের সুরে মনের ভাষা
আপনাতে খুঁজে বেড়াই ভালোবাসা, ভালোবাসা
বাউলা বাতাস, আউলা চুলে…"

আপাততঃ দৃষ্টিতে গানটা খুব সুন্দর সহজ সরল একটা গান মনে হবে। যেখানে মনের কথা বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু এখানের প্রতিটি লাইনই দ্ব্যর্থক বলে মনে হয়েছে সুধীর চক্রবর্তী সাহেবের 'গভীর নির্জন পথে' পড়ার পর। প্রশ্ন হলো কেমনে? আসলে বাউল ফকিরদের যে গানগুলো আমরা শুনি সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ গানের রয়েছে দ্ব্যর্থক অর্থ। অর্থাৎ আমরা যখন সেই গান শুনি তখন আমরা যে মানেটা বের করতে পারি ঠিক সেরকম আরো একটা মানে রয়েছে গানগুলোর। সেটাই সেই গানের গূঢ় অর্থ, যা সাধারণ মানুষের আড়ালে রয়ে যায়।

বিগত প্রায় সপ্তাহ দুয়েক ধরে 'সুধীর চক্রবর্তী' রচিত 'গভীর নির্জন পথে' বইটির পথে পথে, অলিতে-গলিতে, মেলা, মহোৎসবে ঘুরে বেড়িয়েছি। বইটাকে প্রবন্ধমূলক বই বলা যায়। মোট ছয়টি প্রবন্ধ রয়েছে। যেগুলো বাংলার বাউল, ফকিরদের নিয়ে রচিত। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো বইটি না পড়লে জানাই হতো না যে এই বাংলার(পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ দুটোকেই বুঝালাম) আনাচে-কানাচে কত বৈচিত্র্যময় উপধর্ম রয়েছে। বাউলরা মূলত মানবধর্ম মানলেও তাদের মধ্যে গুরু ভেদে কত আশ্চর্য প্রকার যে বৈচিত্র্য রয়েছে তার বর্ণনা করা অসম্ভব। এই পথের অনুসারীরা মানুষের মাঝেই ঈশ্বরকে খুঁজে থাকেন। তার মূল কারণ হলো বাউলরা বলেন, অদৃশ্য স্রষ্টাকে ভজার চেয়ে দৃশ্যমান স্রষ্টাকে ভজা ভালো।
তাদের গুরুর আসর গুলো নিয়ে কথা বলতে হয়। এই উপধর্মগুলোর রয়েছে নানা ধরণের শাখা। ভিন্ন ভিন্ন মত। তারা মূলত গুরুর অনুসারী হয়ে থাকে। বলা হয় গুরু হচ্ছে শিষ্য আর স্রষ্টার মধ্যে খেয়া। যিনি গুরু পর্যন্ত পৌঁছে দেন। বৈচিত্র্যময় এই জগৎ যতই উজ্জল হোক না কেন। নানান সময়ে ধর্মান্ধদের রোষানলের স্বীকার হয়েছেন এরা। অন্যায় করা হয়েছে তাদের প্রতি। চুল এবং দাড়ি কেটে ন্যাড়া করে দিয়ে চূড়ান্ত অপমান করা হয়েছে। তবুও প্রায় সকলে মুখ বুঝে সহ্য করে আবার অনেকে বিদ্রোহ করে।
বাংলার এই উজ্জল ধারাটা আজ পথে চলতে চলতে হারাবার পথে প্রায়। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে এই গ্রন্থ রচনা করেছেন। তখনই দেখেছেন এদের বিপন্ন অবস্থা। এখনও হয়তো আরো বহু লোক ধর্ম হারিয়ে গিয়েছে এট মাঝেই। সভ্যতার গতির সাথে সাথে গ্রামে গঞ্জে যে চোরা স্রোত বয়ে চলছে আজ থেকে শতশত বছর আগে থেকে সেই স্রোত এখন সভ্যতার গর্ভে বিলীন প্রায়। সভ্যতার নদী পূর্ণ গতিতে বয়ে চললে তখন অনেক নদীকে নিজের মাঝে টেনে নিয়ে নিজের অংশ করে ফেলে। হারিয়ে যায় পুরোনো সেই নদী। তবুও যা আছে সেসবকে সংরক্ষণ করে লেখক আস্ত বই আকারে যে রূপ দিয়েছে তার মূল্য অপরিহার্য। বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সংযোজনও বলা চলে একে।



এই বইটা দিয়েই মূলত বাংলার বাউল ফকিরদের জানার হাতেখড়ি।সেটা নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন। আমি মূলত আগ্রহবোধ করি বইটা দেখার পর থেকেই। পরে সংগ্রহ করে পড়া স্টার্ট করেছি বলা যায়। আমি যেহেতু এই ধারাটা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ছিলাম তাই প্রথমে বইয়ের লেখাগুলো ধরতে কষ্ট হচ্ছিলো একটু। বেশ অনেকখানি পড়ার পর তা লাঘব হয়েছে। তারপর থেকে বেশ ভালোই গতি পেয়েছি কারণ বইটার বেশ অনেকখানি পড়ার পরেই আমি বেসিক জিনিসগুলো ধরতে পেরেছি বলা যায়। যদি বেসিক জানা থাকতো তাহলে প্রথম থেকেই সংযোগ করতে পারতাম। তাই আবার পুনরায় পড়ছি এবং ঘাটতিগুলো মিঠিয়েছি। আর যতই জেনেছি ততই অবাক হয়েছি। কী সুন্দর ভাবে গানের মধ্যেই তাদের সাধনার কথা লিখে গিয়েছে তা না পড়লে জানতামই না। আপাততঃ দৃষ্টিতে সুন্দর বলে পরিগণিত হওয়া গানগুলো যখন চোখের সামনে অন্য মানে তুলে ধরছে তখন মুহূর্তের মধ্যেই একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিলো। বলা যায় নিজের ভিতরে ভিতরে অত্যধিক পুলকিত হচ্ছিলাম বইটা পড়তে পড়তে। কত ধরণের গান যে রয়েছে এই বাংলার মানুষগুলোর ভিতরে তা হয়তো জানতামই না। মেলা, মহোৎসব বাউল ফকিরদের মিলন মেলায় ঘুরে ঘুরে লেখক জোগাড় করেছেন এই লেখার উপাদান। প্রয়োজনে গিয়েছেন মানুষের দরজায় দরজায়।

"সাধনেতে সিদ্ধ হয়েছি।
ভক্তিভাবেতে কেঁদে প্রেমের ফাঁদে
অধর চাঁদকে ধরেছি।
অতি যত্ন করে রত্ননিধি
হৃদয়মাঝে রেখেছি।
ঘুচালে মলামাটি হয়েছি পরিপাটি
করিনে নটখটি
খাঁটি পথে দাঁড়িয়েছি।।"
Profile Image for Protyasha.
Author 1 book52 followers
May 15, 2019
[২০১৬ সালের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে]

'অন্ধ শতছিন্ন গ্রাম্য প্রাণীদের চেয়ে
পৃথক আর-এক স্পষ্ট জগতের অধিবাসী ছিলো'

বই পড়তে গেলে তো কত রকমের অনুভূতিই তো তৈরি হয়; বই বুঝে, পাঠক বুঝে আবার সময় বুঝেও! এখন পড়ছি সুধীর চক্রবর্তীর 'গভীর নির্জন পথে'। স্মৃতিকথার ধাঁচে লেখা বইটির বিষয়বস্তু বিবেচনা করে আমার কাছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে বোধ হচ্ছে। এক কথায় বিষয় হচ্ছে লোকধর্ম। আর লেখনি? একটা ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করা যায় এখানে, 'Witty'। গবেষণার উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে লেখকের স্মৃতি যে বিচিত্র উপাদানে পরিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ হয়েছে তাই নিয়ে লেখা এই বইটি। মনোমুগ্ধকর বললে অনেক কম বলা হয়। ঈর্ষাযোগ্য এই স্মৃতি ভাণ্ডার। তবে এইসব ফালতু ঈর্ষা প্রায় মূল্যহীন। এই বিশেষ রকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে যে অনেক বড় মন লাগে, ধৈর্য লাগে, একদম ভিন্ন রকমের মানসিকতা লাগে সেটা নিশ্চিত। ক্ষণে ক্ষণে টের পাওয়া যায় মানুষ হিসেবে নিজের সংকীর্ণতা। লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা না এসে পারে না।

মাঝে মাঝেই একটা অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি। সজাগ পাঠকের তো সুবিধা অসুবিধা দুইই থাকে। তবে এই বইয়ের লেখক সজাগ পাঠকের কাঁথায় আগুন দিয়ে দিচ্ছেন বলা যায় (নিজেকে সজাগ পাঠক বলে দাবি করছি যে তা নয় :P ;) )। মনে হচ্ছে, এই তো খুঁজছিলাম! আমেজ অনেকটা তপন রায়চৌধুরীর 'বাঙালনামা'র মত। অনেকাংশেই ভিন্ন, তবে কোন অংশেই নিম্নতর নয়। আহমদ শরীফ স্যারের কথাও মনে পরছে অনেক। কেমন যেন একটা 'শিকড়ের সন্ধান' জাতীয় ব্যাপার ঘটছে।

লোকধর্মের গানে, মন্ত্রে, অর্থাৎ বাহ্য আচারে-আচরণে গভীরতর রহস্যের হাতছানি, আবার একটু বুঝিয়ে বললেই জলের মত পরিষ্কার যুক্তি, অবিশ্বাস্য রকমের সরল, কিছু ক্ষেত্রে অকাট্যও বটে। মাঝে মধ্যে ভিতরে কেমন একটা হাহাকারও টের পাচ্ছি। কোথায় জানি পড়েছিলাম যে, এই মাটি অন্য রকম। বাইরে থেকে যাই এসেছে, সে শাসক হোক, তার ধর্ম হোক, তার সংস্কৃতি হোক, স্বীয় চরিত্র ধরে রাখতে পারে নি। এখানকার মানুষ নিজের লজিক দিয়ে, সরল চিন্তা দিয়ে সব বদলে নিয়েছে। ফলে অসংখ্য লোকধর্মের উৎপত্তি হলেও, একটা অন্তর্নিহিত ঐক্য কি চোখে পরে না এর মধ্যে? আমার আসলে আরো অনেক কথা মাথায় আসছে, লিখতে পারছি না। কেমন একটা বিশ্রী সংকোচ হচ্ছে।

দুনিয়াতে 'মাস্ট রিড' বলে কিছু আছে বলে তো মনে হয় না। তবে এই বইটা নিঃসন্দেহে 'গুড রিড'।
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,864 followers
May 4, 2019
ল��কায়ত সাধনার রহস্যময় জগৎ নিয়ে যে গবেষকরা কাজ করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে, তাঁদের মধ্যে সুধীর চক্রবর্তী অন্যতম। শ্রী চক্রবর্তী'র বই পড়লে তাঁর লেখার দু'টি বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে আগে আমাদের চোখে ধরা পড়ে:
১. নীরস নয়, তাঁর লেখনীর সরসতা, সজীবতা এবং সহানুভূতিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়পড়তা ক্ষেত্রসমীক্ষক তো বটেই, নামকরা সাহিত্যিকদের হার মানায়।
২. লোকায়ত সাধনায় ভক্তির বাহ্যিক রূপের গভীরে যে বস্তুবাদী ভাবনার ফল্গুটি বয়ে চলে, সেটি সযত্নে তুলে ধরেন তিনি।
এই বইটি শ্রী চক্রবর্তী'র লেখনীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ধীরেসুস্থে বইটি উপভোগ ক���ুন, যাতে অনন্য লেখনী এবং সুগভীর বিষয়ের এই মেলবন্ধন উপভোগ করা যায়।
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews304 followers
October 5, 2024
আউল, বাউল, ফকির, সন্যাসী, বৈষ্ণব, সহজিয়া, কর্তাভজা, সাহেবধনী এসব লোকধর্ম বা উপধর্ম পালনকারী মানুষের সাথে সুধীরবাবু মিশেছেন বহু বছর, ঘুরেছেন মেলায় মেলায়, আখড়ায় আখড়ায়, করেছেন সাধুসঙ্গ।
এইসকল ধর্মের জটিল বিষয়গুলোকে অনেক সহজ করে তুলে ধরেছেন বইটাতে। তবে সবথেকে বড় কথা উনার লেখায় কাউকে হেয় করেননি, সকলের প্রতি শ্রদ্ধার টোনটা টের পাওয়া যায়। তবে যেখানে এইসব ধর্মকে পণ্য বানানো হয়েছে, গুরুজিরা নিজের স্বার্থ উদ্ধারে মত্ত হয়েছে সেখানে সমালোচনা করতেও ছাড়েননি।
সাবলীল গদ্যে মায়া মায়া ভাষায় লেখা খুবই চমৎকার বই।
Profile Image for Nayeem Samdanee.
58 reviews14 followers
May 29, 2020
‘গভীর নির্জন পথে’ এক অভিযাত্রার গল্প। প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই লেখকের সঙ্গে পাঠকও যেনো অজান্তে নেমে পড়বেন এক নিবিড় অনুসন্ধানে। অন্বেষী লেখক বুভুক্ষের মতো খুঁজে ফেরেন বাঙলার শত শত বছরের পুরোনো লোকধর্মগুলোকে। তাদের তত্ত্বানুসন্ধান করেন। বেশিরভাগ উপধর্মের সঙ্গেই সঙ্গীত ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে আছে। এজন্য আমরা এসবের অনুসারীদের গড়পড়তাভাবে বাউল-ফকির ডেকে থাকি, যদিও এই সরলীকরণ সঠিক নয়।

দীর্ঘকালব্যাপী নিভৃতে থাকা এই সাধকদের পথটি বড়ো দুর্জ্ঞেয়। বাঙলার উপধর্মগুলো সম্পর্কে সাধারণ লোকে এমনিতেই জানে যৎসামান্য। তবে বলা ভালো, এসব ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারীরাই আসলে চান না, মানুষ এগুলো সম্পর্কে খুব বেশি জেনে ফেলে। তাঁরা নিজেদের সাধন-ভজন আর ক্রিয়াকর্ম নিয়ে থাকেন। সমাজের প্রথাসিদ্ধ জীবনযাপনের পথকে তাঁরা বিশেষ একটা মাড়ান না, জোর করে কিছু চাপিয়ে দেবারও চেষ্টা করেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁদের নিজস্ব পথটিকে দলিত করবার অপচেষ্টা হয়েছে অসংখ্যবার। করেছে সংখ্যাগুরু ধার্মিকরা। এক্ষেত্রে হিন্দু কিবা মুসলিম, কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। ফলে সাধকদের ওপরে শারীরিক ও সামাজিক অত্যাচারের খড়্গ নেমে এসেছে বারংবার। বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলা, চুলদাড়ি কেটে ফেলা, ক’টার নাম করবো? এরপরও একাগ্র মানুষগুলো সবকিছু সহ্য করেছেন, কিন্তু আরো গুটিয়ে গেছেন, ফলে তাঁদের একান্ত পথটি হয়ে উঠেছে আরো অনেক বেশি নির্জন।

এই গভীর নির্জন পথে হেঁটে সুধীর চক্রবর্তী বুঝতে চেয়েছেন এসব লোকধর্মের স্বরূপকে। অনুসারীদের ক্রিয়াকর্মের গভীর গোপনীয়তাকে। আপাত সরল গানগুলোর শব্দের ভাঁজে ভাঁজে নিঃসাড়ে লুকিয়ে থাকা নিগূঢ় তত্ত্বগুলোকে পেঁয়াজের খোসার মতো ক্রমশ ছাড়িয়েছেন। সেজন্য লেখক বহু বছর ধরে বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় ভ্রমণ করেছেন; ঘুরেছেন সাধনপীঠে, আখড়ায়, মাজারে, মেলায়, উৎসবে, সাধকের গৃহে। বিভিন্ন তত্ত্ব জেনেছেন, বুঝেছেন, আবার তার পরপরই বুঝেছেন যে, আদতে কিছুই জানেননি, বোঝেননি। এভাবে নিয়ত ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে লেখক খুঁজেছেন সাহেবধনী সম্প্রদায়, বলরামী সম্প্রদায়, কর্তাভজা, ফকিরি আর সহজিয়া বৈষ্ণবধর্মকে।

গভীর নির্জন পথ মোটেও নিষ্কলুষ নয়। এ-পথে অজস্র শঠতা আছে, দুরাচার আছে। ভেকধারী সাধকও আছে অগুণতি। কামার্ত, লোভী, গেঁজেল, বহিরাবরণকেন্দ্রিক মানুষের ছড়াছড়ি আছে। তার মাঝেও লেখক খুঁজে ফেরেন সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাসকে, অত্যাশ্চর্য ধর্মীয় সমন্বয়বাদকে, যেখানে জাতিভেদ নেই, বর্ণশ্রেষ্ঠ বলতে কিছু নেই। ঈশ্বরের বিমূর্ত কিংবা সাকার রূপের আরাধনার চেয়ে ‘মানুষ’-ই তাঁদের কাছে হয়ে ওঠে পরমারাধ্য। ব্যক্তির মাঝে যে ঈশ্বরের বাস, তাঁরা তারই ভজন করেন, ভক্তিভরে।

বইটি পড়ে বেশ ঋদ্ধ হলাম। ননফিকশন হলেও ভাষা বেশ ঝরঝরে। শব্দচয়ন আর বর্ণনাভঙ্গি অনবদ্য। ধারাবাহিকতাও বেশ রোমাঞ্চকর। বিশেষ করে গৌরাঙ্গতত্ত্ব অনুসন্ধানের অংশটি আমার কাছে বেশ চিত্তাকর্ষক মনে হয়েছে।
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
December 13, 2018
কিছু কিছু বই পড়তে পড়তে ডুবে যেতে হয়। অতলে তলানোর পর ঠিক বোঝা যায় না কতোটা ডুবলাম, কোথায় ডুবলাম। তখন আবার ভেসে উঠে নতুন করে ডুব দিতে হয়।
Profile Image for Mahrin Ferdous.
Author 8 books208 followers
June 15, 2021
লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ সুধীর চক্রবর্তী সহজিয়া উদাসীনতা মুঠোয় ধরে 'কঠিন' গবেষণা ও ভ্রমণ পার করেছেন 'গভীর নির্জন পথে'। আর সংগ্রহ করে এনেছেন বাউল, বৈরাগী, দরবেশ, সাঁইদের- দর্শন, যাপন, সাধনা, নির্বেদ, সাংকেতিক ভাষার ব্যবহার ও চমকে ওঠার মতো বৈচিত্র্যময় কাহিনী। এই আখ্যান যেন অন্যরকম এক জাদুবাস্তবতাকে ক্রমশ খুঁড়ে খুঁড়ে দেখা। যা বার বার জানিয়ে দেয়, সহজ কিছুই লুকিয়ে থাকে গভীর-অতলে...
.
বইতে লোকায়ত সাধনার ভেতর-বাহির ও অন্তরের যে রূপ আলো ছড়িয়েছে, পাঠক হিসেবে ধীরেসুস্থে তা উপভোগ না করলে পাঠের আনন্দই বৃথা...
Profile Image for Sadika.
31 reviews
May 20, 2021
মমতার এক আলাদারকম বিচ্ছুরণ আছে, নিষ্ঠার এক অপার্থিব সৌন্দর্য। সেই বিচ্ছুরিত সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে বইটির পরতে পরতে। দীর্ঘ গবেষণার সাক্ষ্য এ বই- তথ্যভারে ভারাক্রান্ত নয় কিংবা নিষ্প্রাণ-নির্জীব তথ্য-সমাবেশ নয়। গভীর নির্জন পথে মানুষ-ভজা পথিকদের সঙ্গে হাঁটতে গিয়ে সুধীর চক্রবর্তী আরেকভাবে মানুষকেই ভজে গেছেন। তাঁর কথায় 'এক মানুষের ফুঁপি ধরে আরেক মানুষ'। লোকধর্মের অতল তলের সন্ধানে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষ, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম, এক মেলা থেকে আরেক মেলা ঢুঁড়ে বেরিয়েছেন। এই অন্বেষণের পথে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন নিবেদিত মানুষগুলো থেকে 'পৃথক মানুষ' হিসেবে। কিন্তু সেটা তাঁর অনুসন্ধিৎসার পথে প্রাচীর হয়ে ওঠেনি। সেকারণেই বইটি নিছক পর্যবেক্ষণ না হয়ে অন্তর্লোকে প্রতিবিম্বিত সপ্রাণ এক চিত্রপট হয়ে উঠেছে।
Profile Image for Debasish Ghosh.
22 reviews51 followers
January 8, 2021
কিছুদিন আগেই এই বইটি পড়লাম আর গতকাল ২রা জানুয়ারীর 'দেশ' সংখ্যাটি হাতে পেলাম । এই সংখ্যাটিতে সুধীর চক্রবর্তী স্মরণে দুটি লেখা আছে যেগুলিতে এই বইটি ছাড়াও সুধীর বাবুর অন্যান্য সৃষ্টি নিয়েও এক সমগ্র আলোচনা আছে । দুটি লেখাই পড়ার পরে মনে হল এই বইটি সম্বন্ধে আমার উপলব্ধি ভাগ করে নিই ।

'গভীর নির্জন পথে' সুধীর চক্রবর্তীর লোকধর্ম ও লোকসংগীতের সাধনায় এক চিরায়ত অবগাহন । এই পথে শুধু যে তিনি বছরের পর বছর একটানা ঘুরেছেন তা নয়, পাঠককেও সামিল করেছেন এই আপ্ত জ্ঞানের জগতে ।

বইটি পড়তে শুরু করলে প্রথমেই বোঝা যায় এই বইটি লেখকের গভীর গবেষণার ফল - বাংলার শত শত বছরের পুরাতন লোকধর্মের স্বরূপ পাঠকের সামনে উন্মোচিত করেছে তাঁর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি । আর এই লোকধর্মের সারস্বত রূপ খুঁজতে গিয়ে সবসময়ই তিনি খুঁজতে চেষ্টা করেছেন ধর্মের পেছনে সত্যিকারের মানুষটিকে । তাই শেওড়াতলার মেলায় নিশিরাতে যখন জাহান ফকির আর শুকুর আলির সঙ্গে আলাপচারিতা করেন, তখনও খুঁজে বার করেন সেই মানুষটিকে যে "বৈধিকে নেই, শরায় নেই, শালগ্রাম শিলায় নেই - নোড়ায় নেই, মন্দিরে মসজিদে নেই । যে খোঁজে মানুষে খোদা সেই তো বাউল" ।

এই যে বাউল সম্প্রদায়, কালের গহনে যাদের পরিচয় বাঙালি বিদ্বৎসমাজ থেকে প্রায় লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সুধীর চক্রবর্তী "সেই গভীর নির্জন পথে একাকী পায়ে হেঁটে, দু দশক ধরে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম-বর্ধমান-কুষ্টিয়া-মেহেরপুরের গ্রামীণ পরিমন্ডল ঢুঁড়ে, নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন ধারার লেখনীতে" আমাদের সম্মুখে এনে হাজির করেছেন । আমরা যাদের বাউল ফকির বলে সরলীকরণ করে থাকি, সেই সব উপধর্মের যে অসংখ্য এবং বিচিত্র রূপান্তর, তাদেরকেই লেখক খুঁজেছেন সাহেবধনী, বলরামী, কর্তাভজা, ফকিরি এবং সহজিয়া বৈষ্ণবধর্মীর রোমাঞ্চকর জীবেনযাত্রার মধ্যে দিয়ে ।

যেকোনো লোকধর্মে সংগীত এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । সুধীর বাবু তাই কোনো কার্পণ্য করেন নি তাঁর লোকায়ত চর্চার লেখনীকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের গানের কলি দিয়ে ভরিয়ে দিতে । জাহান ফকির যখন বলেন "আপনারা থাকুন আপনাদের জাতিত্ব নিয়ে, শাস্তর আউড়ে, মৌলবী আর বামুনের বিধান মেনে । আমরা জাতি মানিনে । আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের মধ্যে, দীনদরিদ্রের মধ্যে আছেন দীনবন্ধু" । তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেন এই গানের কলি দিয়ে :

"
ছোট বলে ত্যাজো কারে ভাই
হয়তো ওর রূপে এলেন ব্রজের কানাই ।
শূদ্র চাঁড়াল বাগদি বলার দিন
দিনে দিনে হয়ে যাবে ক্ষীণ
কালের খাতায় হইবে বিলীন দেখছি রে তাই ।।
"

কিন্তু প্রশ্ন হল এত উপধর্ম সম্প্রদায় যে ছিল তারা কোথায় গেল ? লেখক জানাচ্ছেন যে উচ্চ ধর্মাদর্শ এবং কট্টর মুসলমানদের সক্রিয় দমননীতি বাউল ফকিরদের অস্তিত্বকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল ।

'গভীর নির্জন পথে' সুধীর চক্রবর্তীর জীবনব্যাপী গবেষণার এক অসাধারণ প্রয়াস । অত্যন্ত গভীর ভাবনায় আবীষ্ট তাঁর লেখনী এবং একাধারে সরসতা ও সজীবতার সঙ্গে পরিবেশিত । বইটি পড়তে সময় লাগে কারণ ভাবনার গভীরতা, বর্ণনার পুঙ্খানুপুঙ্খত্ব, ভাষার বৈচিত্র ও রচনাশৈলী পাঠককে চিন্তার এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায় ।
Profile Image for Bratabani .
5 reviews2 followers
January 15, 2023
গভীর নির্জন পথ। অথচ সেই পথের দু-ধারে মানুষের গায়ে গেঁথে থাকে অসংখ্য মানুষ। বাউল-ফকির-দরবেশ-সাহেবধনী-বলরামী-কর্তাভজাদের দল ছড়িয়ে যায় নদীয়া থেকে বর্ধমান, বৃত্তিহুদা থেকে অগ্রদ্বীপ। দেহসাধনার সঙ্গে মিশে যায় ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রবিরোধী অন্তর্ঘাত। সুধীর চক্রবর্তী তাঁর এই বইতে খুঁজে বেড়ান বাংলার গূহ্য সাধনার সেই বিকল্প ইতিহাস যেখানে সংস্কারমুক্ত যৌনতার অচেনা গলিতে নিয়ত জন্মায় নতুন সাধনতত্ত্ব। এ বই বাউল-ফকির নিয়ে গড়ে ওঠা শহুরে ফ্যান্টাসিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। দীনদয়াল, হাড়িরাম, সতীমার উপাসকদের গানে-গল্পে-কথায় শুধু তাদের দর্শন বা সাধনপ্রণালীই নয় উঠে আসে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সঙ্গে লোকায়ত ধর্মের বিরোধের নানা প্রসঙ্গও। মূলস্রোতের চাপে পিছু হটতে হটতে নিম্নবর্ণ ও নিম্নবর্গের মানুষের এই সাধনার ধারা ছড়িয়ে পরে বাংলার গ্রামে গ্রামান্তরে। সহজ সাধনার সেই সান্ধ্য পথ ধরে হেঁটে যান লেখক, মন্ত্রমুগ্ধ হই আমরা পাঠকেরা।
Profile Image for Mahfus.
18 reviews11 followers
May 9, 2021
মানুষেরে জানা যায় কি প্রকারে? আত্মজ্ঞানের জন্য আত্মীয়জ্ঞান প্রয়োজন বটে। কিন্তু পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে জানার পথটা নিতান্ত দুর্গম।
ইতিহাসে যা লেখা হয়, তা প্রথমত বিরস, দ্বিতীয়ত বায়াসড। সাহিত্যে খোজ করলে যা মেলে তাতে অশোক, গোপাল, আকবর বা সিরাজের বর্ণনাই মূখ্য। ব্রাত্যজনের কথা পাই কোথায়? আজ হতে শতবর্ষ আগে দেশ, সমাজ মানুষের সংজ্ঞা ভিন্নতর ছিল, আলাদা ছিল মানুষের জীবন। সেই সময়ে জন্ম হলে আমার জীবন-সমাজ-ধর্মচিন্তা কেমন হত? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবে এই বই।
বাংলার লোকায়ত ধর্ম/দর্শনের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে গৌড়ীয়-সহজিয়া বৈষ্ণবদের বিভেদের সম্ভাব্য কারন ও কাল, ইসলামের প্রসার ও স্বরূপ, বাউল-ফকিরদের আপ্তজ্ঞানের ধাঁরা-কৌশল, ভেতরকার গভীরতা-অন্তঃসারশূন্যতা সমস্তই উঠে আসছে। একাধিকবার পড়ার মতন বই।
Profile Image for Opu Hossain.
158 reviews28 followers
Read
March 31, 2018
একজন পাঠকের যদি একটি গোষ্ঠী বা দলের কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে সে গোষ্ঠী বা দলের নির্দিষ্ট কিছু কাজ সুস্থ না অসুস্থ তার চেয়ে পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠক কি কি দেখছে সেটাই মুখ্য হয়ে উঠে। বিচারকের পরিবর্তে পাঠকের পাঠ কতটা তৃপ্তিদায়ক সেটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। তখন একজন পাঠক ভুলে যায় সমাজে গ্রহনীয় এবং বর্জনীয় বলে কিছু আছে যে গুন বা দোষের মাধ্যমে একজন মানুষ অন্যের চেয়ে আলাদা হয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে বলবো বাউলদের জীবন ব্যাবস্থায় প্রসংশার যেমন কিছু পাওয়া যায় (তারা নিজের খেয়ে অন্যের বনের বাঘ তাড়ানোয় যেমন ব্যস্ত নয়) তেমনি শারিকিরক সম্পর্ক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তাদের অসামাজিক কার্যকলাপও চোখে পরে। একজন লেখক চাইলেই একটি অগ্রহণযোগ্য ব্যাপারকে কলমের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পারে কিন্তু একজন পাঠকের কিছুতেই সেটা গ্রহন করা উচিয় নয়। গভীর নির্জন পথে বইটি বাউলদের সম্পর্কে একটি পরিস্কার ধারনা দেয়, সে হিসেবে লেখককে সার্থক বলা যেতে পারে। । কিন্তু একজন পাঠক যদি বাউলদের জীবন ব্যাবস্থার শারিকিরক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী বিচার করতে না পারে বরং দৃষ্টিনন্দন লেখার মান দিয়ে বইটিকে বিচার করে তাহলে সেটা হবে তার বিচারক হিসেবে অজ্ঞতা। এক কথায় বলতে গেলে বলবো একজন পাঠকের যেমন উচিত নয় বাউল বিদ্বেষী হওয়া তেমনি তার উচিত নয় তাদের জীবন ব্যাবস্থার সব কিছু গ্রহন করে ফেলা এবং সমাজের উচিত হবে তাদের অস্বাভাবিক কিছু দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়ার সহায়তা করা।
Profile Image for Tanvir KLION.
43 reviews6 followers
September 18, 2015
কষ্টকর লেখা, পরিশ্রমের স্বাদ পাওয়া যায়।
Profile Image for Abu Daud Khan.
8 reviews
June 24, 2019
অনেক অনেক দিন পর বাংলা ভাষায়, বাংলা ভাষী লেখকের লেখা পড়ে ভাল লেগেছে , লিখতে ইচ্ছে হোল।
Displaying 1 - 18 of 18 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.