Mir Abdus Shukur Al Mahmud (best known as Al Mahmud) was a Bangladeshi poet, novelist, and short-story writer. He was considered one of the greatest Bengali poets to have emerged in the 20th century. His work in Bengali poetry is dominated by his frequent use of regional dialects. In the 1950s he was among those Bengali poets who were outspoken in their writing on such subjects as the events of the Bengali Language Movement, nationalism, political and economical repression, and the struggle against the West Pakistani government.
Notable awards: Bangla Academy Award (1968) Ekushey Padak (1987)
ছোটগল্পের সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই গল্পগুলো ম্লান হয়ে দাঁড়ায়ে আছে কোন এক হারানো বিলের মাঝে। গল্পের প্লট সাধারন, পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে, এমন কোন এলিমেন্টই ঐ অর্থে নেই। তবুও গল্পের ভাষা কখনও কখনও জব্দ করবে পাঠককে। পাঠক হয়তো নীল জলের ভেতর দেখতে পাবে বালির পাহাড়। গল্পগুলো মূলত একরৈখিক, সম্ভাবনাময় কিন্তু পরিণতিতেই মূলত পাঠক আমার মনে লেগেছে ধাক্কা.. কিছুতেই যেন গল্পের শেষ পর্যন্ত আনন্দটা মনে থাকে না।
বই : পানকৌড়ির রক্ত লেখক: আল মাহমুদ প্রকাশনী: আদর্শ মূল্য: ২০০ টাকা মাত্র পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮০ জনরা: গল্পগ্রন্থ
"পানকৌড়ির রক্ত" আল মাহমুদ এর প্রথম গল্পগ্রন্থ। ১৯৭৫ সালে পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হওয়ার পর তার কবি পরিচয় এর সাথে সাথে গল্পকার পরিচয়টা যুক্ত হয়।
প্রখ্যাত কথাশিল্পী আবু রুশদ মন্তব্য করেছেন, "বাংলাদেশ আল মাহমুদের সমতুল্য অন্য কোন কোবির হাত থেকে এত কয়টা ভালো গল্প বেরিয়েছে বলে আমার জানা নেই। এটা তার সাহিত্যিক গুরুত্ব ঈর্ষণীয় একমাত্র যোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস।"
আল মাহমুদের লেখা 'পানকৌড়ির রক্ত' গল্পগ্রন্থে যথাক্রমে পানকৌড়ির রক্ত, কালো নৌকা, রোকনের স্বপ্নদোলা, জলবেশ্যা এই চারটি গল্প আছে।
বইটির নাম গল্পে যদি তাকাই তাহলে আমরা যৌনতার অসাধারণ প্রতীকি ও শিল্পিত বর্ণনা পাবো।মানুষের জীবনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি আল মাহমুদের গল্পের মূল ক্যানভাস। নারীর রূপের বর্ণনা, প্রকৃতির সাথে নারীর তুলনা, পরিবার ও সমাজে নারীর অবস্থান এবং নিয়তির অমোঘতা তাঁর গল্পের কেন্দ্রবিন্দু। এই গল্পে তার লেখায়,"আমি আমার একনলা বন্দুক হাতে ত্রিকোণাকৃতির চরাভূমির নরম পা মাড়িয়ে চলতে লাগলাম। নদীটা যেখানে বাঁক নিয়েছে আমি সেখানে এসে পেশাদার শিকারীর মতো হাঁটু গেড়ে বন্দুক বাগিয়ে বসলাম" প্রকৃতির মধ্যে প্রিয়তমাকে পাওয়ার একটা প্রতীকি ও শিল্পিত বর্ণনা আছে।। ‘‘পানকৌড়ির রক্ত’’ গল্পের প্রতীকী তাৎপর্যের মধ্যে ফুটে উঠেছে স্বদেশ ও পল্লীপ্রকৃতি। গল্পকার খুঁজে পেয়েছেন প্রকৃতির নির্মলতার মধ্যে প্রিয়তমার প্রতিচ্ছবি।রোদে গায়ের পানি শুকাতে-থাকা পানকৌড়ির মাঝে তিনি যেন কেবলই দেখতে পান চুল শুকাতে-থাকা স্ত্রী আদিনার শ্যামল বর্ণের নিটোল কচি-কোমল মুখ।প্রতীকী চিত্রে পানকৌড়ি ও আদিনা এক অপরের পরিপূরক।
"কালো নৌকা" গল্পে উঠে এসেছে নিম্নবিত্ত জেলে সম্প্রদায়ের এক জটিল ও মনস্তাত্বিক সম্পর্কের কথা। এই জটিল কাহিনীর মূল চরিত্র মূলত রাসু আর কালী। আমাদের সুশীল সমাজের প্রেক্ষাপটে তাদের সামাজিক সম্পর্ক হচ্ছে শ্বশুর এবং ছেলের বউ এর । রাসুর ছেলে দামোদরের বউ কালী। কিন্তু লেখকের গল্পে তাদের দাম্পত্য সুখ বেশিদিন টেকে নি। বঙ্গোপসাগরে এক আকস্মিক তুফানে নিখোঁজ হয়েছিল দামোদর। কালী তখন শোকে পাগল পাগল প্রায়। লেখকের শৈল্পিক লেখনীতে,"কালীর ঘুমটা আসলে ব্যতিক্রম ।কালী ঘুমায় না এখানে আসার পর কালীকে চেষ্টা করো ঘুম পাড়ানো যায়নি। সম্প্রতি শ্যামার সেবা যত্নে কয়েকদিন ধরে দুপুরের দিকে কালী আপন মনে বকতে বকতে নেশাগ্রস্থের মত পড়ে থাকে ।আজও কালী এভাবেই পড়ে আছে এখন রাসুকে দেখে উঠে বসলো তারপর আপন মনে বিড়বিড় করতে লাগলো।" কালী যখন শোকে কাতর তখন কালীর দেহ দেখে রাসুর নিজের মৃত স্ত্রীর কথা মনে পড়ে। লেখকের লেখনীতে এই বিষয়টা অত্যন্ত সুন্দর ও করুন ভাবে উঠে এসেছে। পরিশেষে শোকাহত কালী যেন রাসুর মধ্যে তার স্বামী দামোদরকে খুঁজে পায়। আর রাসু ফিরে পায় কালীর মধ্যে তার স্ত্রী সতীকে। লেখকের লেখনীতে,"রাসু দুহাতে কালীর দেহটাকে জড়িয়ে ধরে নৌকার ভেতরে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর উন্মত্তের মতো কালীর গলা, বুকে, ঠোঁটের স্পর্শ দিতে দিতে বলল, তুই সতী, তোর বুকে আমার সতীর গন্ধ। তুই সতী হয়ে যা কালী।"
লেখকের "রোকনের স্বপ্নদোলা" গল্পটিকে একটি মুক্তগদ্য বলা যায়। একটা কাকতালীয় ঘটনার অসাধারণ শৈল্পিক বর্ণনা পাওয়া যায় গল্পটিতে।একটা সুন্দর স্নিগ্ধ রেল ভ্রমণের সাথে সাথে একটা দারুন গল্প মিশে একাকার হয়ে গেছে এখানে। রোকন ও রোকেয়ার চট্টগ্রামে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের প্লাটফর্ম থেকে গল্পের শুরু হয়। তারা যে কামরায় ওঠে সেখানে আগে থেকে একজন ভদ্রমহিলা ও ভদ্রলোক উপস্থিত ছিলেন। কাকতালীয়ভাবে ভদ্রমহিলাটিকে রোকনের খুব চেনা মনে হয়। স্মৃতির গভীরে গিয়ে সে খুঁজতে শুরু করে ভদ্রমহিলাটিকে। এই স্মৃতি খুঁড়তে গিয়ে লেখকের লেখনীতে মুগ্ধ হবে পাঠক। জানতে পারবে রোকন চরিত্রের মেয়ে দেখার আংশিক ইতিহাস । রোকন আর রোকেয়ার বিয়ের ইতিহাস।আর সর্বোপরি ভদ্রমহিলাটির পরিচয়।
কিন্তু গল্পের শেষে আছে এক চমৎকার মোহ,এক রহস্য। বাস্তব আর কল্পনার একটা খেলা। ভাবনাগুলো যখন সামনে চলে আসে, বাস্তবে হয় তখন সেটাই কি ম্যাজিক? নাকি সেটা স্বপ্ন। যেগুলো আমরা ভাবি সেগুলোই কি স্বপ্ন হয়ে ঘুমের মধ্যে ধরা দেয়?
এই গল্পগ্রন্থের আরেকটা গল্প হলো "জলবেশ্যা"।এই গল্প একটি ব্যাতিক্রমধর্মী গল্প। গল্পের প্রেক্ষাপট, বর্ণনা এবং বিষয়বস্তু গল্পটিকে অনন্য করে তুলেছে। গল্পের মূল চরিত্র হচ্ছে একজন জলবেশ্যা বেউলা সুন্দরী যার পেশা নিয়েই গল্পের নামকরণ। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আবিদ আলী ব্যাপারী। সারাদিনের কাজকারবার শেষে আবিদ আলী ব্যাপারী নৌকা বেয়ে রাতের আঁধারে যায় বেউলা সুন্দরীর কাছে। সেখান থেকেই মূলত মূল গল্প শুরু।জলবেশ্যারা সাধারণত রাতেই সক্রিয় থাকে , রাতের অন্ধকারে, জলরাশির মাঝখানে। গল্পের মধ্যেও সেটাই দেখানো হয়েছে। গল্পের বেউলা সুন্দরীর মধ্যে ছলা কলা , রসিকতা আর বেউলার সৌন্দর্য লেখকের লেখনীতে স্পষ্ট উঠে এসেছে। লেখকের লেখনীতে, "যেন কোনো নায়রী নাওয়ের বালক মেঘনার বুকে আঁতকা ভেসে ওঠা গাঙশুশুকির সুডৌল বুকের একাংশ দেখে ফেলে অবাক হয়ে মনে মনে ভাবছে, অমা মাছের আবার বুনি আছে।"
গল্পের বেউলা সুন্দরী খুবই জটিল এবং রহস্যময়ী একটি চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছে। গল্পের প্রয়োজনে বেহুলা লখীন্দর এর রূপক ব্যাবহার করা হয়েছে যা গল্পকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। তাদের রাতিকর্মের পূর্ব বর্ণনা লেখকের গল্পে উঠে এসেছে বেশ আরষ্টতাবিহীন ভাবে। "কোমল স্পর্শে বেপারী বেহুলার গম্বুজের মতো হাঁটুতে হাত রাখলে মেয়েটি অতি ধীরে তার ভারী উরোজগলের একটি ফাঁক করে দিল।" "পায়ের পাতা কাদ অতিক্রম করে গিয়ে সাপের ঝুড়ির ডালায় ঠেকলো । বেপারী বেহুলার এই উদার সম্প্রসারণ একটি অর্থ হে তার ডান হাতের পাশে ঠোঁট ঘষতে লাগলো।" আল মাহমুদের অসাধারণ গদ্যশৈলীর একটি অনন্য দৃষ্টান্ত "জলবেশ্যা"। যেকোনো পাঠকের জন্য একটি সুখপাঠ্য গল্প এটি। ‘জলবেশ্যা’ গল্পটি সম্পর্কে আল মাহমুদ বলেছেন-‘‘ ‘জলবেশ্যা’ আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জেগে উঠেছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আমি যা দেখেছি, তাই উঠে এসেছে গল্পটিতে। জলবেশ্যাদের তো আমি নিজের চোখে দেখেছি, কথা বলেছি। তারপর তাদের নিয়ে লিখেছি।’’ আরেকটি বিষয় হল আল মা��মুদের এই ছোটগল্প 'জলবেশ্যা' নিয়ে কলকাতায় নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র 'টান'। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
কবি আল মাহমুদের প্রথম গল্পগ্রন্থ হিসেবে "পানকৌড়ির রক্ত" একটি সার্থক ও সুখপাঠ্য গল্পগ্রন্থ। অনুভূতির এমন উত্তুঙ্গতা, সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, ঘটনার এমন অভিনবত্ব ও অসাধারণ গদ্যশৈলী আল মাহমুদকে একজন স্বার্থক গল্পকার হিসেবে উপস্থাপন করে। তার লেখা "পানকৌড়ির রক্ত"ই এর প্রমাণ।
ভিন্ন পাঁচটি গল্পের সমাহার। পানকৌড়ির রক্তে- নববিবাহিত আনোয়ার শ্বশুর বাড়ির ফিরাযাত্রায় গিয়ে পাখি শিকারে যায়, প্রথমে সাদা বক শিকার করে পরে দেখতে পায় একটি পানকৌড়ি....
কালো নৌকায় - রাসু জলদাসের পুত্র দামোদর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। দামোদরের স্ত্রী হয়ে যায় পাগল....
রোকনের স্বপ্নদোলা- রোকনের স্ত্রী রোকেয়াকে নিয়ে ট্রেন ভ্রমণে বের হয়, রোকন ঘুমের ঘোরে এক ভয়ানক স্বপ্ন দেখে....
জলবেশ্যা- লালপুর হাটের দালাল আবিদ ব্যাপারী, হাটের পাশের বেদেরার বসবাস তারা নৌকায় বসবাস করে। নৌকায় ক্ষুদ্র আলোর ঝলকানি দেখে আবিদ যায় সেই নৌকায়, সেই নৌকায় থাকে বেউলা সুন্দরী....
বুনো বৃষ্টির প্ররোচনা- ইটাখোলা ব্যবসায়ী মাহমুদ, তার স্ত্রী মরিয়ম শিক্ষিকা। মরিয়ম কাজের মেয়ে জমিলার উপর অতিষ্ঠ হয়ে তাকে কাজ থেকে ছাঁটায় করার দায়িত্ব দেয় মাহমুদকে....
কবি হিসেবে খ্যাত আল মাহমুদ, উনার এক উপন্যাস পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম৷ নীলক্ষেতে বইটি দেখে হাত ছাড়া করিনি। গল্পগুলো দারুণ। শব্দের শৈল্পিক গাঁথুনি মুগ্ধ করে। __ পানকৌড়ির রক্ত আল মাহমুদ প্রথম গল্পগ্রন্থ আদর্শ প্রকাশনী মূল্য : ১৫০ পৃষ্ঠা : ৮০ পিপি : ৮.৫/১০
আল মাহমুদ যে পানকৌড়ির রক্তের মত ছোটগল্প লিখেছিলেন বিশ্বাস হয়না। গল্পটা খুবই সাধারণ এবং প্রেডিক্টেবল ছিল তবুও কি যেন একটা আছে লেখার মধ্যে যা আমাকে গল্পের শেষ শব্দ নিয়ে যায়।