Sukumar Ray (Bangla: সুকুমার রায়) was a Bengali humorous poet, story writer and playwright. As perhaps the most famous Indian practitioner of literary nonsense, he is often compared to Lewis Carroll.
His works such as the collection of poems Aboltabol (Bengali: আবোলতাবোল), novella HaJaBaRaLa (Bengali: হযবরল), short story collection Pagla Dashu (Bengali: পাগলা দাশু) and play Chalachittachanchari (Bengali: চলচিত্তচঞ্চরী) are considered nonsense masterpieces equal in stature to Alice in Wonderland, and are regarded as some of the greatest treasures of Bengali literature. More than 80 years after his death, Ray remains one of the most popular of children's writers in both West Bengal and Bangladesh.
খেতে ভালোবাসতেন সুকুমার রায়। খেতে যারা ভালোবাসে তারা খাওয়াতেও ভালোবাসে। প্রতি সোমবার সুকুমারের গড়পারের বাড়িতে গুণীজনের সাহিত্য-আড্ডা বসতো। আড্ডার নাম ছিল "Monday Club", যেহেতু সোমবারের আড্ডা। কিন্তু আড্ডার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার বহর এতোই প্রবল হয়ে ওঠে যে সেই ক্লাবের নাম পাল্টে হয়ে যায় "মন্ডা ক্লাব"। সেই সুকুমার যে একদিন "খাই খাই" লিখবেন তাতে আর আশ্চর্যি কিসের?
যারা সুকুমারকে শুধুই "ননসেন্স" পদ্যের লেখক হিসেবে গণ্য করেন, এই বইটা পড়লে তাদের ভুল ভাঙবে। এই বইয়ের ছড়াগুলোতে ননসেন্স নয়, বরং সেন্সের ছড়াছড়ি রয়েছে (আরে! শিবরামের মতো কথা বলে ফেললাম যে!)। প্রথম যে ছড়াটি, "খাই খাই", এটি বাংলা ভাষার ব্যবহারযোগ্যতার অনবদ্য পরিচয় দেয়। কিভাবে? শুধুমাত্র "খাওয়া"— এই ক্রিয়াপদটা ব্যবহার করে আটান্ন লাইনের একটা আস্ত ছড়া লিখেছেন সুকুমার। খাওয়া মানে কি শুধুই ভোজন? আরো কত কি যে খায় মানুষ। মহাজন সুদ খায়। দারোগা ঘুষ খায়। পালোয়ান ডিগবাজি খায়। তেলে জলে মিশ খায়। "ভয় খেয়ে খাবি খায় পাঠশালে ছেলেরা"। কেউ বেত খায়, কেউ গালি খায়। খোকা কাঁদলে মা চুমু খায়। আরো কত কত কত খাওয়ার ফিরিস্তি আছে এই পদ্যে। কিন্তু সুকুমারের ম্যাজিক শুধু ফিরিস্তি দিয়েই থেমে যায়নি। তাঁর অসম্ভব উচ্চমার্গীয় কল্পনাশক্তি এবং ছন্দসৃষ্টির পারদর্শিতা একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। দুনিয়ার সকল মহার্ঘ্য বস্তুর মতো এই ছড়াটার মর্মও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু কখনও অবকাশমতো তলিয়ে ভাবলে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কত শক্তিশালী আমাদের এই বাংলাভাষা, কত শক্তিশালী এই ভাষার কারিগররা। কত ভাগ্যবান আমরা।
আরো অনেকগুলো ছড়া আছে এই বইতে। প্রতিটা ছড়াই সরস মাধুর্যে টলমল করছে। আর, ছন্দের সে কি বাহার! জলের মতো সহজ কিন্তু সন্দেশের মতো উপাদেয়। অথচ গভীরতায় অনন্য। অনেকেই বলেন সুকুমার শুধুই ছেলেভোলানো হাসির ছড়া লিখেছেন (সেদিন একজায়গায় দেখলাম অক্ষয় মালবেরির লেখক মণীন্দ্র গুপ্তও এই কথা বলছেন। অন্য কেউ হলে ব্যাটা আহাম্মক বলে গালি দিতাম। শুধু অক্ষয় মালবেরি লিখেছেন বলে গুপ্তমশাইকে ছাড় দিলাম)। যারা এমন কথা বলেন, তারা কি "জীবনের হিসাব" (যেখানে বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই এবং নিরক্ষর বৃদ্ধ মাঝির কথোপকথন রয়েছে), কিংবা "নিঃস্বার্থ" (যেখানে মানবচরিত্রের নির্লজ্জ হিপোক্রিসির বিষয়টি হাস্যরসের মোড়কে পরিবেশন করা হয়েছে), কিংবা "হিংসুটিদের গান" (সুকুমারের লেখা শ্রেষ্ঠ ছড়াগুলোর অন্যতম, ছড়ার বিষয়বস্তুটি ছড়ার নামকরণেই প্রকাশিত)— এই ছড়াগুলো কি তারা পড়েন নি?
যাই হোক, অনেক কথাই তো বলে ফেললাম। আবোল তাবোল কিংবা হযবরল-র পাশাপাশি এই বইটা নিয়েও আরো বেশি বেশি আলোচনা হওয়া উচিত। আমার মতো জানলা খুলে বাইরে তাকিয়ে পাড়াপ্রতিবেশীর সুখশান্তিকে নিছক অগ্রাহ্য করে সন্ধেবেলা গলা ছেড়ে আবৃত্তি করা উচিত :
ভাবলে গাধা—এই তো মনিব জল হয়েছেন হেসে এইবারে যাই আদর নিতে কোলের কাছে ঘেঁষে। এই না ভেবে এক্কেবারে আহ্লাদেতে ক্ষেপে চড়ল সে তার হাঁটুর উপর দুই পা তুলে চেপে। সাহেব ডাকেন 'ত্রাহি ত্রাহি' গাধাও ডাকে ‘ঘ্যাঁকো’ (অর্থাৎ কিনা 'কোলে চড়েছি, এখন আমায় দ্যাখো!')
আবোল তাবোল এর পরে আর একটি অসাধারণ ছড়ার বই। ছড়া গুলো দুর্দান্ত৷ চমৎকার ছন্দ সহজেই মনকে উদ্দীপ্ত করে। মানুষের সহজাত যে ভালোবাসা ছন্দের প্রতি, তার উপর ভর করে সুকুমারের ছেলেমানুষি আইডিয়াগুলো তৈরি করে সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর ছড়াকারে পরিণত হয়েছে ৷ এ বইটির ছড়াগুলো হল:
দাঁড়ের কবিতা পাকাপাকি খাই খাই পড়ার হিসাব বিষম চিন্তা পরিবেষণ আড়ি অবুঝ অসম্ভব নয় নাচের বাতিক কাজের লোক হিংসুটিদের গান সাধে কি বলে গাধা! নিঃস্বার্থ জালা-কুঁজো সংবাদ তেজিয়ান্ হরিষে বিষাদ হিতে বিপরীত সঙ্গীহারা মূর্খ-মাছি জীবনের হিসাব আশ্চর্য নিরুপায় হারিয়ে পাওয়া নন্দগুপি বর্ষ গেল, বর্ষ এল গ্রীষ্ম বর্ষার কবিতা বর্ষ শেষ শ্রাবণে
লোকে সাধারণত শুরু করে 'আবোল তাবোল' কিংবা 'হ-য-ব-র-ল' দিয়ে। আমার হলো 'খাই খাই' দিয়ে। অনেক ছড়া-কবিতাই ভালো লেগেছে। প্রতিটিতেই হেসেছি, ভেবেছি। কিছু কবিতায় আছে বাস্তবতা। কিছু বর্তমানের সাথেও মিল পাওয়া যায়। কিছু হয়তো ঘটে কিংবা ঘটেছে নিজের সাথেই! যে কবিতার নামে বই, অর্থাৎ "খাই খাই" কবিতাটি সত্যিই অসাধারণ ও হাস্যরসাত্মক ছিলো। বাঙালির প্রায় সবধরনের খাওয়া এসেছে। না, শুধু পেট পুজোর খাওয়া-দাওয়া না। অন্যান্য খাওয়া'ও আছে। কি কি তা আর বলছি না। পড়েই দেখেন!
সুকুমার রায় বাঙলা ননসেন্স পোয়েমের মায়েস্ত্রো৷ এই বইয়ের সব কবিতাই ননসেন্স পোয়েম না। তবে কবিতাগুলো দুর্দান্ত৷ চমৎকার ছন্দ সহজেই কানকে উদ্দীপ্ত করে। মানুষের সহজাত যে ভালোবাসা ছন্দের প্রতি, তার উপর ভর করে সুকুমারের ছেলেমানুষি আইডিয়াগুলো তৈরি করে সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর ননসেন্স রাইম/পোয়েম৷
সুকুমার রায়, আমার প্রথম প্রেম। সাহিত্যের এক অনন্য জ্যোতিষ্ক, যিনি শিশু-কিশোরদের জন্য হাস্যরসের জগতে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তাঁর সৃষ্টি "খাই খাই" বইটি প্রতিভার আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
"খাই খাই" বইটি শুধুমাত্র রসিকতার চমৎকার উদ্ভাস নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চিরচেনা প্রবণতাগুলোর প্রতি একটি সূক্ষ্ম বিদ্রুপ। খাদ্যের প্রতি অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণকে তিনি এমন এক মজার এবং সরস ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, এটি শুধু শিশুদেরই নয়, বড়দের মনেও সমানভাবে দোলা দেয়।
কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে ধরা পড়ে সুকুমার রায়ের বৈচিত্র্যময় শব্দচয়ন এবং অনন্য ভাবনা। তাঁর লেখার শক্তি এমন যে, শব্দগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠে এবং পাঠকদের নিয়ে যায় এক অদ্ভুত রসের জগতে। বিশেষ করে "খাই খাই"-এর ছন্দময়তা ও কল্পনার উচ্ছ্বাস পাঠককে বারবার পড়তে বাধ্য করে।
এই কবিতা শুধুমাত্র হাসির খোরাকই নয়, এটি মানুষের অপ্রয়োজনীয় লোভের প্রতি এক সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও দেয়। সুকুমার রায় তাঁর স্বভাবসুলভ মজার ঢঙে আমাদের জীবনের গভীর সত্যগুলোকে সহজভাবে প্রকাশ করেছেন।
নির্মল বিনোদনের বই। শিশুদের নীতিশিক্ষার ব্যাপারে এই বইটি কাজে দেবে। মজার ছলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা তুলে এনেছেন ছড়াকার। এই বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ছড়া গুলো হল জীবনের হিসাব, আবোলতাবোল, আনন্দ, ফাজিলের ডিকশনারি। বিক্ষিপ্ত মনকে নির্মল করতে এই বইয়ের অদ্বিতীয়টি আর নেই।