মার্ডার মিস্ট্রি হয়তো পড়েছেন আগে, কিন্তু পজেশন মিস্ট্রি ? কোন অশুভ শক্তির ছায়া পড়েছে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারের একমাত্র মেয়ের ওপর-- সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নিয়োগ করা হলো অদ্ভুত এক মানুষকে; অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার সাথে যার আছে নিবিড়, তিক্ত অভিজ্ঞতা । কিন্তু তদন্তে ডুব দেবার পরই বুঝতে পারলো চোরাবালি আসলে কতোটা গভীর । একা একা সমস্যার জট খোলা সম্ভব নয়, অন্য এক ধরনের বিশেষজ্ঞের সাহায্যের দরকার । দরকার একজন রিচুয়াল ম্যাজিশিয়ানের । ওরা দু-জন মিলেও কি এই মারাত্মক রহস্যের জাল ভেদ করতে পারবে ? প্রতি পদে অপেক্ষা করছে বিপদ--ছায়ার আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে আছে অকল্পনীয় ক্ষমতাধর এক আততায়ী । আর্কন-খ্যাত তানজীম রহমানের হরর থৃলার অক্টারিন-এর পাতায় লুকিয়ে আছে খুন, জাদু, কিংবদন্তি আর চক্রান্তের আশ্চর্য এক উপন্যাস যা চুম্বকের মতো আপনার মনোযোগকে আকর্ষণ করবে ।
আর্কনটা মন্দ ছিল না। এটাও মন্দ না। বিশেষ করে একই সাথে কয়েক লাইনের ম্যাজিকের ব্লেন্ডিংটা খুব সুন্দর। সুরা, ন্যাচার ম্যাজিক, কেওস ম্যাজিক, জিন রিলেটেড ম্যাজিক-এগুলোর ব্লেন্ডিংটা হয়েছে খুব দক্ষ হাতে। বইয়ের প্রায় প্রতিটা পাতাতেই এন্টিসিপেশন ধরে রাখার মত উপাদান আছে। পুরাটা পড়তে সময় লেখেছে ৪ থেকে ৪.৫ ঘন্টা। সো বুঝতেই পারা যায়। আর ম্যাজিক ডুয়েল শোণিত উপাখ্যানেও আছে। কিন্তু এটা আরও বেশী বিস্তৃত ও সিকোয়েন্সটাও বেটার।
তবে সমস্যা হল, ডিটেইলিং এর মনোযোগের অভাব। এটা আসলে আমাদের জাতিগত সমস্যা বলে মনে হয়! আপনি-তুমি, টাইম লাইনের সমস্যা, যা নিয়ে লিখছি তার সম্পর্কে আরেকটু খোজ খবর না নেয়া আর অনেক জায়গায় এ্যাম্বিগিয়াস বাক্য রেখে দেয়া যা কাহিনীর উপরে কোন ইমপ্যাক্টই ফেলে না।
১. প্রথমে আসি নামকরণ নিয়ে। অক্টারিন-এটা কি জিনিস তা মাত্র এক/আধ পাতার মাঝেই শেষ। গল্পেও সম্ভবত এর কোন ইমপ্যাক্ট নেই। মনে হয় নামটা অক্টারিন, শুধু মাত্র এ কারণেই শব্দটার ইন্ট্রোডাকশন। ২. আপনি-তুমির বিভ্রাট মাত্র এক জায়গায়। সো এটা টাইপো বলে বাদ দেয়া যায়। ৩. নতুন আর পুরাতন বানানরীতি খুবই কনফিউজিং। সুন্দরি কোথাও কোথাও সুন্দরী! তবে এটাও খুব কম। ৪. আয়াতুল কুরসীর মত একটা জিনিস ভুল ছাপা হবে, এটা মেনে নেয়া কঠিন। ওমা খলফাহুম হয়ে গিয়েছে খাইফাহুম। খলফ-পেছনে/আড়ালে খইফ-ভয় (যতদূর মনে পড়ে অর্থ এটাই) ৫. গল্পের প্রধান চরিত্র মুমিন কামিল (মাস্টার্স সমমানের) পাশ করে ঢাকা ভার্সিটিতে অনার্সে ঢোকে। আমার জানামতে এটা সম্ভব না। লেখক মে বি এবতেদায়ীটা ওভারলুক করে গিয়েছেন। তবে আমি ভার্সিটি স্টুডেন্ট না, সো আমারও ভুল হতে পারে। ৬. টাইম লাইন বিভ্রাট-মুমিনের সাথে যখন জহুরি কাকার দেখা হয়, তখন সে বারো বছরের বাচ্চা। এরপর তোমার ছাতার সাইজ আমার চেয়ে বড় মানে বোঝায় যে বছর পার হলেও তা ২/৩ বছরের বেশী হতেই পারে না। এদিকে ওর মা-বাবা অন্য কোথাও পাঠাবার জন্য ব্যস্ত। তাই 'ফাজিল' (ডিগ্রী সমমানের) শেষ হতেই ঢাকা পাঠিয়ে দেয়া হল। ব্যস্ত হলে ৫+ বছর অপেক্ষা করার কারণ কি? ৭. ইউনিভার্সিটি পড়া অবস্থায় মুমিন দেখেছে সার্জারির ছাত্ররা কয়েন হাতে নিয়ে প্রাকটিস করছে। 'সার্জারির ছাত্র' থাকবে ঢাকা মেডিক্যালের হলে বা পিজির হলে। যেকোন খানে মুমিন এটা দেখতে পারে, এমনকি বাসে বসা অবস্থাতেও। কিন্তু 'এই কাজটা মুমিন আগেও দেখেছে ইউনিভার্সিটিতে থাকতে। যে ছাত্ররা সার্জন হবার জন্য পড়ালেখা করছিলো তাদের কয়েকজন এটা প্রাকটিস করত।' - পড়ে মনে হয় নিজের হলে দেখেছে। ক্লিয়ার করলে ভাল হত। ৮. পুরোপুরি ভাবে মেদহীন বলা যায় না। যদিও কোথাও ছন্দ পতন হয়নি বা কোথাও বিরক্ত লাগেনি, তাও ৫০/৬০ পাতা কম হলেই ভাল হত। কারণ, এই মেদের ফলে মনে হয়েছে শেষে এসে হঠাৎ করে শেষ হয়ে গিয়েছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল সুলায়মানের ফ্যাক্টরির প্রথম অভিযান। অসাম একটা সিকোয়েন্স, কিন্তু কাহিনীতে ইম্প্যাক্ট? জিরো। অনেকটা এমন-এত বড় যোদ্ধাকে যে হারাতে পারে, সে নিজে কেমন যোদ্ধা বুঝে নাও। এই যদি হত, তাহলে এ্যাকিলিস আর হেক্টরের যুদ্ধের এত বিস্তারিত বিবরণ দিতে হত না। (স্পয়লার এড়াবার জন্য ঘুরাতে পেচাতে হচ্ছে)। আর এই কারণে লাষ্ট সিকোয়েন্সটা শো ডাউন না হয়ে হয়েছে.....দুই অপরিচিতের ডুয়েল। পাঠক জানছে ভিলেন কে, কেন এসব করছে। কিন্তু ক্যারেক্টার জানছে না। ভিলেনের ক্যারেক্টারও খুব ডেভেলপড না। ৯. এই পয়েন্টটা অহেতুক বলা যায়, তাও বলি। আগাথা ক্রিস্টির কুমারী নাম আগাথা মেরি ক্ল্যারিসা মিলার। ২৪ বছর বয়সে তিনি আর্চিবল ক্রিস্টিকে বিয়ে করেন। মেয়েদের নাইটহুড নেই, তবে ডেমহুড আছে। তিনি ডেম, এবং আমার সবচেয়ে পছন্দের চার অথারের একজন। তাঁকে 'মিস ক্রিস্টি' বলে সম্বোধন না করলে হত না?
৩.৫ স্টারস একচুয়ালি। (পারশিয়াল রেটিং আসলেও চালু করা উচিত)। বইটা কে কোন জনরা তে ফেলব তা নিয়ে চিন্তায় আছি । নিঃসন্দেহে বই এর মূল উপাদান হরর । কিন্তু শুধু হরর থ্রিলার বললেও কমতি থেকে যাবে । এর চেয়ে আরবান ফ্যান্টাসী বলাই আমার কাছে উপযক্ত বলে মনে হয় । গত বছরে আমার পড়া সেরা বইগুলোর মধ্যে একটা ছিল লেখকের প্রথম বই আর্কন । সে থেকে প্রত্যাশার চাপ অনেক বেশিই ছিল বইটার উপর । এটুকু বলতে পারি যে হতাশ করেননি লেখক । ভালোই লেগেছে বইটা । বইটা খোলার পড়ে প্রথমে যে জিনিসটা চোখে আটকাবে তাহল সূচিপত্রের পাতাটা । সেখানে একটা টাইমটেবিল করে দেয়া আছে যে কোন অধ্যায় কখন পড়তে হবে । এরকম কিন্তু আগে কোথাও দেখিনি । ভালো লেগেছে ব্যাপারটা । আর যেকোন জিনিস ভালো লাগার পূর্ব শর্ত হল, প্রথম দেখায় জিনিসটা কেমন লাগল ? সে বিবেচনায় বইটা ১০ এ ১০ পাবে । কভারটা বই এর সাথে একদম মানানসই । জোড়াতালি দেয়া কভার না । হাতে নিয়ে ভালো লাগে বইটা । এবার আসি মূল বই এর ঘটনার । প্রধান চরিত্রের নামটা হচ্ছে মুমিন । মুমিনুল ইসলাম মুমিন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিস বিষয়ে পাশ করার পর এখন একটা বাচ্চাদের স্কুলে ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক । নিরীহ ধরণের মানুষ , কারো কোন সাতপ্যাঁচের মধ্যে নাই । নিজের মত থাকে । কিন্তু একটা বিষয়ে অন্য কারো চেয়ে আলাদা সে । তা হচ্ছে জীন তাড়ানো । একটা কথা বলে নেই এখানে যে বই এর বেশ অনেকাংশ জুড়েই আছে জীন এর ব্যাপারটা । অনেক কিছু জানতে পেরেছি এই ব্যাপারে । জেনে আগ্রহ ও বেড়ে গেছে ব্যাপারটাতে । আমদের দেশ এর মিথের একটা অন্যতম উপাদান হচ্ছে জীনের আসর করা । এই জিনিসটাও বেশ ভালো মত ফুটে উঠে এসেছে বইটা তে । কিছু কিছু জায়গার বর্ণনা আসলেও ভয় ধরিয়ে দেয়ার মত :/ । একদিন মুমিন এর ডাক পড়ে তার স্কুলের মালিকের বাসায় । ও বাসার সবার ধারণা মালিকের মেয়ের উপর ভর করেছে কিছু একটা । তাই মুমিন এর কাজ তাকে সুস্থ করে তোলা । এই কাজ করতে গিয়ে আটকে যায় মুমিন । তখন সে শরণাপন্ন হয় বই এর আরেক মূল চরিত্র অ্যানিমার কাছে । সে একজন ম্যাজিশিয়ান । তারপর দুজন মিলে ঘটনার শেকড় উপড়াতে গিয়ে পড়ে যায় আরো গভীর বিপদে । সামনে একটা গা শিউরানো বিপদ বের হয়ে আসে যা পুরো পৃথিবীর মানুষের জন্যেই ভয়াবহ । বইটা পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারবে যে লেখক জানেন যে তিনি কি লিখছেন আর কেমন অডিইয়েন্সের জন্যে লিখছেন । আর ম্যাজিকাল এলিমেন্ট এর ব্যাবহার গুলোও ছিল গোছানো । আমার খালি অসঙ্গতি লেগেছে বই এর মাঝে গিয়ে, কিছু কিছু জায়গা ছিল যার বর্ণনা না দিলেও বই এর ঘটনার কোন সমস্যা হত না । এটকুই চোখে পড়বে আসলে । কিন্তু শেষটা বড্ড তাড়াহুড়োয় হয়ে গিয়েছে । এত সুন্দর বিল্ডাপ এর পরে ভিলেন এর কাছ থেকে আরেকটু ফাইটব্যাক আশা করেছিলাম । লেখায় কোন জড়তার ছাপ ও নেই । একটা প্লট থেকে আরেকটা প্লট এ বিচরণ ও খুব সাবলীল । আরো ভালো ভালো বই আশা করছি লেখকের কাছ থেকে সামনে ।
নাহ! এই ভদ্রলোক, মানে তানজীম রহমান যে একটি জিনিয়াস— এ-কথা না মেনে উপায় নেই। এই উপন্যাসটার কথাই ভাবুন। কাহিনি শুরু হল এক অতি বীভৎস হত্যাকাণ্ড দিয়ে— বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না। তাহলে কি এই রহস্যের অনুসন্ধান নিয়েই গড়ে উঠতে চলেছে বইয়ের বাকিটা? স্ট্রাইক জিরো! এক অতি সাদামাটা শিক্ষকের কাঁধে চাপল এক মস্ত বড়ো দায়িত্ব। সেটা পালন করার মতো পুঁজি কি আদৌ আছে তার কাছে? উহুঁ! আর সে-কথা সবচেয়ে আগে স্বীকার করবে সেই। তাহলে তাকেই কেন বেছে নেওয়া হল এই সমস্যার সমাধানের জন্য? স্ট্রাইক ওয়ান! সেই মানুষটির ব্যাকস্টোরি পড়তে গিয়েই আপনার ঘাড়ে লেগে থাকা ছোট্ট চুলগুলো দাঁড়িয়ে পড়বে। আপনি বুঝবেন, এই উপন্যাস ঠিক সহজ ছক মেনে এগোবে না। চলতে থাকবে কাহিনি। অচিরেই কেন্দ্রীয় চরিত্র মুমিনের মতো আপনিও পড়বেন একেবারে অথই জলে। নানা চরিত্রের সন্দেহজনক আচরণ আর স্বার্থের মধ্যে ঘটনাটা প্রাকৃত না অপ্রাকৃত— সেটাই আপনি বুঝতে পারবেন না। অসহায় হয়ে আপনি স্পেশালিস্টের সন্ধান করবেন। সে কে হতে পারে? অজস্র পুথিপত্রের মাঝে নিবিষ্ট অধ্যাপক? কালো চশমার আড়ালে নিজের ভয়াল শক্তিকে লুকিয়ে রাখা কোনো বেদনার্ত আত্মা? নাকি আয়রন মেইডেন টি-শার্ট পরা, অগোছালো ঘরে মোরগ পোষা আর নিজস্ব রেসিপি দিয়ে শরবত বানানো এক হাসিখুশি বাচাল মেয়ে— যে নিজেকে 'অ্যানিমা' বলে ডাকে? স্ট্রাইক টু! এইভাবে, ধাপে-ধাপে লেখক এই কাহিনিতে উত্তেজনা আর বৈচিত্র্যের পারদ ঊর্ধ্বমুখী করেছেন। আমরা ছিটকে গেছি এক ভয় থেকে আরেক ভয়ে। লেখক আমাদের জানিয়েছেন কিংবদন্তি আর বিশ্বাসের নানা স্তর সম্বন্ধে— যে ভাঁজগুলোয় লুকিয়ে থাকে অবিশ্বাস্য আতঙ্কের উপাদান। একদম শেষে পৌঁছে আমরা দেখেছি আসল শত্রুকে। কিন্তু তাকে দেখে ক্রোধ বা ঘৃণার বদলে অসহায়তা, আর অনেকটাই ক্ষমার ভাব জমা হয়েছে আমাদের মনে। আমরা আরও ভালোভাবে চিনেছি প্রটাগনিস্টদের। শেষতম লাইনটা পড়ার পরেও আমরা পাতা উলটে দেখতে চেয়েছি— আরও কিছু আছে নাকি? স্ট্রাইক... এন! যদি আপনি ভয়ালরসের অনুরাগী হন, তাহলে এই গতিময়, বহুস্তরীয়, বৈচিত্র্যময় এবং বহু সম্ভাবনার জন্ম দেওয়া বইটি আপনার কাছে অবশ্যপাঠ্য। তানজীম রহমানের আরও মৌলিক লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
হরর টাইপ বই এক আধটা পড়ে ফেললেও জীবনেও রাতে পড়ার মতো ভুল কখনও করি না। কাজেই, বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা সময় সূচির সম্পুর্ণ বিপরীত সময়ে পড়েছি। যেমন, লেখক যদি বইয়ের আসল মজা পাবার জন্য ঐ সূচিতে লিখে রাখেন রাত বারোটা কিংবা একটার দিকে এই চ্যাপ্টারটা পড়বেন, বেস্ট হয় একলা একলা পড়লে। দেখা গেছে, দিনের ফকফকা আলোতে এক ক্লাশরুম ভর্তি ছেলে-মেয়ের মাঝখানে বসে বসে আমি বইয়ের ওই চ্যাপ্টারটা পড়ছি। এই করে করে গেলো অনেকদূর। এন্ডিঙের কাছাকাছি এসে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। যখন বই পড়া শেষ হলো, ঘড়িতে তখন রাত দুইটা কি আড়াইটা। -_- বাতাসে পর্দা উড়ছে, আর পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে অন্ধকার। আর আমার মনে হচ্ছে অন্ধকার থেকে বইয়ে বর্ণিত যাবতীয় জ্বিন ও অন্যান্য স্পিরিটেরা আমার দিকে তাকিয়ে হ্যা হ্যা করে হাসছে আর মুখ ভ্যাংচাচ্ছে! ঘুমে চোখ টুলটুল, তাও ঘুমাতে পারছি না ভয়ে। রুমমেটকে বুঝিয়ে পরপর কয়েক রাত লাইট জ্বলিয়ে ঘুমিয়েছি। কী যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা! তাও কপাল ভালো এন্ডিংটা ঠিক পছন্দ হয় নাই, তাই পুরাটা বই পড়ে ঠিক যতটুকু ভয় পাবার কথা ছিল, অতোটা পাইনি। শেষ দিকে সব কিছু এতো দ্রুত শেষ হয়েছে মনে হচ্ছিল, প্রকাশক হয়তো বা লেখককে খুব তাগাদা দিচ্ছিলেন বইটা শেষ করার জন্য, তাই লেখক কোনমতে ইতি টেনে ডেডলাইন পার হয়ে যাওয়া থেকে বেঁচেছেন। আরও কিছু পৃষ্ঠা বাড়লে মানে আরেকটু বিশদ বর্ণনা হলে বোধহয় আরও বেশি ভালো হতো, পাঠক আরও বেশি ভয় পেতো (আর আমি হয়তো বা মরে ভূত হয়ে যেতাম, যাকগে ভালোই হয়েছে যা হবার)
বইয়ের রিভিউ লিখতে যেয়ে বিশালাকারে নিজের অভিজ্ঞতা ফেঁদে বসলাম :3 আসলে আমার কাছে অক্টারিন মানেই ভয়ে বেশ কয়েক রাত ঠিকমতো না ঘুমাতে পারা। কারও কাছে হয়ত বা আমার কথাগুলো অত্যুক্তি বলে মনে হতে পারে। তাই আগেভাগে স্বীকার করে নিচ্ছি আমি কিন্তু প্রচন্ড রকমের ভীতু একটা মানুষ। ধন্যবাদ।
***** প্রথমবার বইটা পড়ে যে ভয় পাইসিলাম, স্পেসিফিক সব কারণ বা ডিটেইলস পরবর্তীতে হুবহু মনে না থাকলেও মনের মাঝে একটা 'ভয়' বাসা বেঁধে ছিল। এন্ডিং নিয়ে তখন বেশ কিছুটা আপত্তি ছিল আমার কিন্তু এবারে অক্টারিন রিভিশন দিয়ে আপত্তিটা কাটলেও পুরোটা বই দুর্দান্ত ভাবে এগিয়ে শেষদিকের তাড়াহুড়া নিয়ে এখনও আমার আপত্তি আছে। যা হোক.. এবারে অক্টারিন জগৎ:সবুজ পড়ার পালা। সেই কারণেই বইটা আবার পড়া। দেখা যাক.. কী আছে কপালে।
অক্টারিন পড়ে মনে হল লেখকের বড় ধরনের সাহস আছে :3 এই আই এসের যুগে ইসলামের সাথে ম্যাজিক মিলানো সাহসের বিষয়। আমি ইসলাম নিয়ে তেমন কিছু জানি না জানার যে খুব বেশি ইচ্ছা আছে এই রকমও না । তবে আমার ক্ষুদ্র জানা শোনায় যত টুকু বুঝেছি কিছু জিনিসে ঘাপলা আছে।যেমন ইয়াজুজ-মাজুজের ব্যপারটা ইসলাম নিয়ে জ্ঞান খুবই কম কিন্তু মনে হয় ইয়াজুজ-মাজুজ শুধুমাত্র আল্লাহ তালার নির্দেশই বের হবে । ( শিওর না খুব সম্ভবত সূরা কাহাফে আছে কিংবা দ্যা এরাইভালে দেখেছিলাম) এক তান্ত্রিক এসে বের করবে জিনিসটা ইসালামের সাথে যায় না।
বাকি কিছুই ধরতে পারছিনা কারন জানি না যেই জিনিস জানি না সেই জিনিসে ভুল ধরা যায় না। অবশ্য ফিকশনে ভুল ধরতে যাওয়াটাই বোকামি, তাও মুসলিমরা খুব এরোগেন্ট টাইপ বলে লেখকে ছিলে ফেলতে পারেন এই বইয়ের জন্য ।
আরেকটা জিনিস নিয়ে লাগতে পারে ম্যাজিকের বিষয়টা। ম্যাজিককে খুব সম্ভবত ইসলামের শত্রু কুফরি টাইপ কাজ মনে করা হয়। তাই একজন কালিম পাস হুজুর ম্যাজিকের সাহায্য নিবে জিনিসটা কারো কাছে পছন্দ নাও হতে পারে। যদিও আমার কোন কিছুও মনে হয় নি। জ্বীন নিয়েও বলার কিছু নাই। এক সময় যেটাকে জিনে ধরা বলা হত সেটা এখন মানসিক সমস্যার ক্যাটাগরিতে ফেলাহয় । মানুষ হবার এই এক সমস্যা সময়ের সাথে সাথে জ্ঞানের চেঞ্জ আসে। ম্যাজিক জিনিসটা আমার খুবই পছন্দ । ভয়াবহ ধরনের পছন্দ এক সময় নিজে নিজে ম্যাজিক করার ট্রাই করতাম। ১০১ট্রিক্স থেকে কিছু জিনিস শিখেওছিলাম। তবে সত্যি বলতে কি ট্রিকসের প্রতি আগ্রহ নাই কিছু না পেয়ে ট্রাই মেরেছিলাম আর কি। ম্যাজিক প্রিয়তার কারনেই অ্যানিমা চরিত্রটা বেশ পছন্দ হয়েছে ।
ভিলেনের ক্যারেক্টারাইজেশন খুবই বাজে যে কিনা বাংলাদেশের সেরা সেরা ম্যাজিশিয়ানদের ঘোল খাওয়াতে পারে, সেরা একজনকে মেরে ফেলতে পারে তার উপস্থিতি, ফাইটব্যাকটা আরো ভাল হওয়া দরকার ছিল যদিও শুরু একেবারে শেষে না গিয়ে বুঝা যায় নি ভিলেনকে।
হরর-মিস্ট্রি রিডার্স দের জন্য অত্যান্ত সুপাঠ্য মোটামুটি বড় সাইজের উপন্যাস টি।
উপন্যাসের এই ব্যাপার টা দারুন লেগেছে, লেখক চরিত্র, ইভেন্ট সম্পর্কে হাত খুলে লিখেছেন, যদিও প্রয়জনের থেকে বেশিই বড় করে ফেলেছেন যা রাবার এর ফিল দিয়েছে, তবে আমার কাছে একটু ডিটেলস এ লেখা দারুন লাগে। এক কথায় লেখকের লিখনশৈলী বেশ ভালো ছিল।
পল্ট এর দিক থেকে আম��র কাছে শেষের আগ পর্যন্ত ইউনিক লেগেছে । যদিও গল্প পার্সন টু পার্সন ভ্যারি করে, তবুও ইউনিক একটা গল্প এক্সিকিউশন এবং প্লটের তুলনায় যদিও এন্ডিং এ বেটার করার চান্স ছিল, সব মিলিয়ে আমার কাছে বেশি ভালোই লেগেছে।
আর কি চাই মৌলিক হরর মিস্ট্রি/ আরবান থ্রিলারে?
★গল্পের মাঝে ছোট কিছু যায়গাই খেয় হারিয়ে ফেলা, যেখানে কোনো ডিটেইলিং এর দরকার নেই সেখানে ২-৪ পাতা এক্সট্রা লেখা - সামান্য কিছু ভুল ছিল অবশ্য। যেগুলা চেষ্টা করেছি অভারলুক করে গল্পে ফোকাস করার। অবশ্য এগুলোর এফেক্ট যদি গল্পে পরতো তাহলে অবশ্যই তা অভারলুক করে যেতে পারতাম না।
লেখক মশাইয়ের স্টোরিটেলিংটা দুর্দান্ত রকমের সুন্দর। রোলারকোস্টারের মতো সম্পূর্ণ বইটা শেষ করেছি। তয় যতটুকু আশা রেখে শুরু করেছিলাম ততটুকু কোনভাবেই পূরণ করতে পারেনি। একচুয়াল রেটিং ৩.৫ । কিশোর বয়সে কিংবা আজ থেকে ৮ বছর আগে পড়লে তখন ৪ ই দিতাম। বইটিতে কিঞ্চিৎ হতাশার জায়গা দুইটা। প্রথমত মুল গল্পের থেকে পার্শ্বগল্পটাই অনেকখানি যায়গা খেয়ে ফেলেছে যেটার এতো বেশি প্রয়োজন হয়তো ছিল না। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে শামস সুলাইমানের বাড়িতে ঘটা দুইটা সিকুয়েল। দ্বিতীয়ত, চরিত্র নির্মাণ। অ্যান্টাগনিস্ট চরিত্রটার চরিত্রায়ন একদম দূর্বল। আর মুমিন পোলাডারে নিয়া অনেক আশা ভরসাও ছিল। কিন্তু পানি পড়া ছাড়া আর কিছুই পারে না। অথচ ব্যাকস্টোরিতে জহুরিকাকার যা একখান ভূমিকা লেখক দিয়েছিলেন , ভাবছিলাম মুমিনের মধ্যেও তার ছিটেফোটা খানিকটা থাকবে। কিন্তু কিসের কি! মুমিন আমাকে হতাশ করলো। মুমিন না লেখক? এইটা লেখকই হবে। মুমিনের উত্থানটা আরেকটু সবিস্তারে আশা করেছিলাম। অ্যানিমার মতো একটা শক্ত ভীত মুমিনের মধ্যে আশা করছিলাম।
দুটো বড়সড় অপ্রাপ্তীর মধ্যেও লেখাটাকে ৪ তাঁরা দেওয়ার কারণ সময়টা ২০১৬ সাল। মনে হয় না ২০১৬র আগে কোন পজেশন মিস্ট্রি পড়েছি। পড়লেও এতোটা জ্বলজ্বলে বাতির মতো চোখের সামনে আসেনি। আমন্ত্রণ জানানোর কিছু নেই। রেটিং আর রিভিউ সংখ্যা দেখলেই যেকারোরই বইটা পড়তে মন চাইবেই।
বাতিঘর প্রকাশনীর লেখকদের জন্য কি কোন নির্দেশনা থাকে যে, বইয়ের ৮৫% জুড়ে কাহিনী গুছিয়ে নিয়ে এরপর ঝড়ো বাতাসে লুঙ্গি তুলে ট্রেন ধরার জন্য দৌড়াতে হবে? আর সে এমনই দৌড় হবে যে, আগের কাহিনীর পুরো আমেজটার বারোটা বেজে গিয়ে পাঠক দাঁত কিড়মিড় করবে গোঁজামিলের জন্য? রীতিমত হতাশাজনক। পুরো কাপড় ভালভাবে বুনে শেষে সুতো কোনমতে গিঁট বেঁধে দিলে আস্তে আস্তে কাপড়টাই খুলে যায়, এটা বোঝানোর জন্য কিছু ভাল সম্পাদক এই দেশে কবে আসবে? একটা বই যদি ৩৮৪ পৃষ্ঠা দেখে ৩০০ টাকা খরচ করে পাঠক কেনে, তাহলে আরো ৫০-৬০ পৃষ্ঠা পড়ার জন্য বাড়তি ২০ টাকাও সে খরচ করবে। আর যে সেটা করবে না, সে এমনিও ৩০০ টাকা দিয়ে বই কিনবে না। বইটা নিয়ে বলি। লেখাটায় বিষয়বৈচিত্র্যের জন্য ৪ দেয়া যেত; বেশ নতুনত্ব আছে। ধর্মীয় আচার-বিশ্বাসের সাথে ম্যাজিক মিলিয়ে বেশ ভাল একটা প্লট ছিল। লেখক বেশ ভাল স্টোরিটেলার, কিন্তু একান্তই আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি, লেখার ধরণটা অনেকটা চিল্ড্রেন'স হররের মত; মানে আমার বয়স ১৫ বছর হলে হয়তো ভয় পেতাম, এখন মনে হচ্ছে বিষয়টা যে ধরণের সিরিয়াস (দুনিয়া ধ্বংস করে দেয়ার মত ব্যাপার-স্যাপার, মৃত্যু, নৃশংসতা), লেখার ধরণে সেই সিরিয়াসনেসটা একেবারেই আসেনি। অনেকটা--"শুনছো নাকি, কালকে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে? ও, তাই নাকি, তাহলে তাড়াতাড়ি চলো ভিলেন ব্যাটাদের আটকে দেই।" অ্যান্ড ইট'স সিম্পলি লাইক দ্যাট।ম্যাজিকের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো প্রয়োগের জায়গাগুলো বেশ ছাড়া ছাড়া, সবকিছুই যেন বেশ সহজে হয়ে যাচ্ছে। ২টা পোলাপান ভাবলো ভয়ঙ্কর কোন শক্তিকে আটকাবে, ৩৭০ পৃষ্ঠা প্যাঁচানোর পর তাকে শেষ করতে ২ মিনিটও খরচা হলো না। ইফ এভরিথিং ওয়্যার দ্যাট সিম্পল! কিন্তু পজিটিভ ব্যাপারটা হলো, ঐ ৩৭০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত, খানিকটা ছেলেমানুষি ধরণের ডায়ালগ আর লেখা দিয়েও, গল্পের ধরণের কারণে টেনে পড়া গেছে। মূল প্রটাগনিস্টদের মাঝে মুমিনের ক্যারেক্টারটা মোটামুটি ডেভেলপড, অ্যানিমারটা নিয়ে আরো কাজ করা যেত, খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাকগ্রাউন্ড যেহেতু। (উদাহরণ হিসেবে একই প্রকাশনীর আমের আহমেদ-এর 'পাপপিঞ্জর' বইটার কথা বলা যায়। সেখানে মূল প্রটাগনিস্ট নিশা'র ক্যারেক্টারটা এত দারুণভাবে ডেভেলপ করা হয়েছে যে, নায়ক তো নায়ক, আমি নিজেই নিশা'র প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। এত শক্তিশালী নারী চরিত্র এত সুন্দরভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড সহ গড়ে তোলা হয়েছে যে, চরিত্রটার কোন কথা বা আচরণ বা ক্ষমতা কোথাও বিন্দুমাত্র খাপছাড়া লাগে না।) ভিলেন কাউকেই বিশেষ পাত্তা দেয়া হয়নি, যেটা ভয় পাওয়ানোর জন্য জরুরি ছিল। তারপরেও ৩ দিতাম, কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে ভূমিকায় একটা হালকা স্টান্টবাজি দেখে। বইয়ের এত নাম্বার চ্যাপ্টার ঘড়িতে এত বাজলে পড়তে হবে, লেখক বলেছেন। ওকে, এনাফ। যদি লেখক চান ১২ বছরের (হুম, ১৫ থেকে ১২তে নামালাম) বাচ্চা এই বই পড়বে, অথবা পাঠকের ম্যাচ্যুরিটি ১০-১২ বছরের বাচ্চার মত হবে (যদিও আজকালকার ১০-১২ বছরের বাচ্চারাও আমাদের চেয়ে স্মার্ট), তাহলে হয়তো এই স্টান্ট কাজ করতে পারে, নাহলে এসব কথাবার্তা বিরক্তিই বাড়ায় শুধু। বাংলাদেশের পাঠক সমাজকে ছাগল মনে করার একটা প্রবণতা লেখকদের মাঝে আছে; এই সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে নিজের লেখার মানই অনেকটা বাড়বে, এটা কেন তারা বোঝেন না কে জানে! ভাল পাঠক প্রচুর পড়ে, এবং ভাল লেখা-মন্দ লেখা চেনার ক্ষমতাও তার আছে, কাজেই তার বুদ্ধিমত্তার দিকে একটু সম্মান রাখলে, পাঠকও আপনাকে সম্মান করবে। রেসপেক্ট ইজ মিউচুয়াল, সো ইজ রিডিকুল।
বইটা হাতে পাওয়ার পর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম, পড়া শুরু করার জন্যে। লেখক পড়ার যে সময়সূচি দিয়েছিল শুরুতে, ওটা যে না বুঝে দেয়নি, এটা আমার আগেই বোঝা হয়ে গিয়েছিল।
পড়া শুরু করেছিলাম যখন, তখন রাত তিনটার উপরে বাজে; এই বিশেষ সময়টা খুবই রহস্যময়, বেশিরভাগ অতিপ্রাকৃত ঘটনাই এই সময়টাতে ঘটে থাকে বলে আমার বিশ্বাস। অক্টারিন পড়ার সর্বোতকৃষ্ট সময় আমার মতে, এটাই—রাত তিনটার দিকে।
গল্পটা শুরু হয় হাশেম নামে এক দারোয়ান এর পয়েন্ট অফ ভিউ এর মাধ্যমে। চ্যাপ্টার এর শেষেই লোকটা অতিপ্রাকৃত বৃক্ষের আক্রমণে মারা যায়। কিন্তু ওই চ্যাপ্টারটার মাধ্যমেই খুব গুরুত্বপূর্ন একটা ফোরশ্যাডো করা হয়েছিল। আর সেটা হচ্ছেঃ সামথিং হিউজ ইজ কামিং।
পরের চ্যাপ্টারে গল্পটা চলে যায় একজন অপ্রকাশিত ন্যারেটর এর কাছে; একজন থার্ড পারসন অমনিশিয়েন্ট ন্যারেটর যিনি বর্ণনা করতে থাকেন প্রধান প্রটাগনিস্ট মুমিন সম্পর্কে। এই ‘অল নোয়িং’ ন্যারেটর মুমিনকে পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েই বিদায় নেন আর এরপরই গল্পটা চলে যায় সরাসরি মুমিনের কাছে। ক্যামেরাটা গিয়ে সেট হয় মুমিনের চোখের ভেতরে। এরপর থেকেই থার্ড পার্সন লিমিটেড পয়েন্ট অফ ভিউতে ন্যারেট করা হতে থাকে গল্পটি। পুরো উপন্যাসটিতে কয়েকটি TPL POV ব্যবহার করা হয়েছে, যা লেখকের সিগন্যাচার স্টাইল বলেই মনে হচ্ছে আমার কাছে।
আমাদের গল্পের নায়ক, মুমিন, কোনো এক স্কুলের ইসলাম শিক্ষার টিচার। তার কথা-বার্ত��� আর চরিত্রের বর্ণনায় আমাদের মাথায় ফুটে উঠে সেই মাদ্রাসা ছাত্রের কথা, যাকে আমরা আমাদের আশেপাশে দেখি; শান্ত, সহজ-সরল, ভদ্র, অপ্রয়োজনীয় কথা বলে না ইত্যাদি। সেদিন স্কুলে ঢোকার পর হেডস্যার তাকে ডেকে পাঠায় এটা জানানোর জন্যে যে ওদের স্কুলের চেয়ারম্যান ম্যাডাম ওকে বাসায় যেতে বলেছেন—কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ন নিশ্চয়ই, নাহলে এভাবে হুট করে ডেকে পাঠাতেন না।
ম্যাডামের বাড়িতে গিয়ে মুমিন জানতে পারে যে তার মেয়ে আয়েশা গত দুই সপ্তাহ ধরে বিছানায় শুয়ে আছে, কিছুতেই উঠছে না! ম্যাডামের ধারণা, এটা একটা জিনের কাজ। আর সেই জিন তাড়ানোর জন্যেই মুমিনকে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে।
মুমিনের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। যে তমশাচ্ছন্ন কূপ থেকে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল জীবনের অনেকগুলো বছর, সেই অপার্থিব, অন্ধকার গহ্বর আবারো ওকে খুঁজে পেয়েছে।
কী সেই অন্ধকার গহবর?
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ গাড়িতে করে ফিরে আসার সময় মুমিনের ফ্ল্যাশব্যাক হয়, সে অতীতের চোরাবালিতে হারিয়ে যায়। এবং এইভাবে ফ্ল্যাশব্যাক টেকনিকের মাধ্যমে লেখক খুব চাতুর্যের সাথে বর্ণনা করেছেন মুমিনের ছোটবেলার কথা। জানা যায়, কেন সে এই ব্যাপারটার মুখোমুখি হতে এত ভয় পায়। ঘটনাটা রাতের দুইটা-তিনটার সময় পড়লে সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তিরও হাড় কেঁপে উঠা অস্বাভাবিক নয়।
যাই হোক, এরপর মুমিন এক সপ্তাহ অনেক চেষ্টা করলো; জিন তাড়ানোর যত উপায় আছে, সব প্রয়োগ করলো আয়েশার উপর। কিন্তু ফলাফলঃ জিরো।
এরপর সে এই ব্যাপারে সাহায্য করার জন্যে খুঁজে বের করলো একজন ম্যাজিশিয়ানকে, যার নাম, অ্যানিমা—আসল নাম নয়, ছদ্ম নাম। জাদুকরেরা তাদের আসল নাম কখনো প্রকাশ করে না। And that is for a good reason.
মুমিন আর অ্যানিমা এরপর থেকে একের পর এক অবিশ্বাস্য আর অসম্ভব অ্যাডভেঞ্চার করতে থাকে, সেই সাথে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে রহস্য সমাধানের পথে, যা পড়তে গিয়ে হাতের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়, যেন ওদের স্থির অবস্থায় বসে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
এভাবে একের পর এক ম্যাজিকেল আর হরিফিক ঘটনার মাধ্যমে লেখক গল্পটিকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে গিয়েছেন। গল্পটা সমাপ্ত হওয়ার পর আপনার মনে হবেঃ যাহ শালা, এটার সিরিজ হলে তো মন্দ হয় না!
আমার মনে হয় না, নিরাশ হতে হবে—যদি আমি গল্পের ভেতরের সংকেতগুলো ঠিকমতো বুঝে থাকি।
উইজার্ডিং ডুয়েলগুলো নিয়ে অবশ্যই বলা উচিত। উইজার্ড আমরা সবাই চিনি, কিন্তু তাদেরকে দিয়ে যে এরকম নতুন উপায়ে যুদ্ধ করানো সম্ভব, এটা আগে কখনো দেখিনি বা শুনিনি। উইজার্ড ফাইটগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় চমৎকার।
একদম শেষের যুদ্ধটাও আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে, যেমন হওয়া উচিত ছিল, ঠিক তেমনই হয়েছে।
গল্পে ব্যবহৃত উপমাগুলো একদম বুকে লাগার মতো। সিমাইলকে ভালোভাবে ব্যবহার করলে যে কী করা সম্ভব, সেটা অক্টারিন পড়লেই বোঝা যায়।
গল্পের একদম শেষদিকে এসে অডিয়েন্স সারোগ্যাট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মুমিনকেই। পাঠক যা যা জানতে চেয়েছে, সবগুলো প্রশ্নই মুমিন নিজের মুখে করেছে অ্যানিমার কাছে, যে ওগুলোর প্রত্যেকটির সঠিক উত্তর দিয়ে পাঠকের কনফিউশান দূর করেছিল। মনে হচ্ছিল যেন মুমিনের জায়গায় পাঠক বসে আছে, আর অ্যানিমার যায়গায় লেখক বসে আছে, উত্তর দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক।
গল্পে বলার মতো সমস্যা চোখে পড়েছে মাত্র দুই যায়গায়। প্রথমটাতে TPL POV থেকে হুট করে জাম্প দিয়ে TPO POV-তে চলে গিয়েছিলেন লেখক; পাঠক এইমাত্র ছিল মুমিনের মাথায়, হঠাত করেই চলে গেল ম্যাডামের মাথায়। তবে সেটা খুব অল্প সময়ের জন্যেই ছিল। দ্বিতীয় সমস্যাটা ছিল রুহুল আমিনের ঘটনায়—যেটার কারণে মুমিন জিন এর মুখোমুখি হতে চাইতো না। ওখানে একটা জায়গার বর্ণনাটা এমন ছিল যে, যার পারস্পেক্টিভ এ বর্ণনাটা করা হচ্ছে, সে দেখেনি, এমন কিছু বলে ফেলা হয়েছে। মানে থার্ড পার্সন লিমিটেড ছেড়ে হঠাত করেই অমনিশিয়েন্ট মোড় এ চলে গিয়েছিল ন্যারেটিভটা। তবে এই দুটো সমস্যা আসলে বিশাল সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা দুটো ডিঙ্গি নৌকার মতোই, সামগ্রীকভাবে দেখলে চোখেই পড়ে না।
ছোটবেলা থেকেই জিনের কথা প্রায় সবার মুখেই শুনে আসছিলাম।কিন্তু জিন নিয়ে ফার্স্ট কোন বই পড়লাম।
আমি যতোটা ভয় পাবো ভাবছিলাম ততোটা পায়নি।ওয়েল... পাইনি বলে আমার জন্য ভালো হয়েছে।(আমি হরর জনরার বই পড়িনা কারণ আমি জিন,ভূত,পেত্নী, চুড়েল এইসব খুবই ভয় পাই....এতো ভয় পাই যে, রাতে বাথরুমে একা যেতে সাহস পাইনা :p) কিন্তু আর্কন পড়ে রাইটারের ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম, তাই অক্টারিন দেখে না পড়ে থাকতে পারলাম না(তার উপর এত সুন্দর প্রচ্ছদ দেখে পড়ার লোভ সামলাতে পারিনি)।
কেন জানি আমার আর্কনটাই বেশি ভালো লেগেছিল।(অক্টারিন খারাপ লেগেছে তা কিন্তু না) মেবি আমার হরর জনরা পছন্দের না তাই আর অক্টারিনের প্রোটাগনিস্টকে পছন্দ হয়নি।আ্যনিমাকে "আপনি" বা "আপু" বলে ডাকাটা ও কেমন জানি লেগেছিল।অক্টারিন নিয়ে আর একটু ডিটেইলস আলোচনা করলে অবশ্য ভালো হতো। এছাড়া, সবকিছুই ভালো লেগেছে স্পেশালি, অসাধারণ লেখার স্টাইল,ফিগার অফ স্পিচ এর যথোপযুক্ত ব্যবহার এবং অবশ্যই বইটি পড়ার আদর্শ সময়সূচী(এইটা বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল)। লেখকের নেক্সট বইয়ের জন্য শুভকামনা রইল।আশাকরি,আমরা আরো ভালো বই পেতে যাচ্ছি লেখকের কাছ থেকে।
নববর্ষের নবজাগরণের হাওয়ায় মাতোয়ারা সবাই,আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে পুরাতনের বিদায়সুর।এদিকে আমি বসেছি "অক্টারিন" নিয়ে। এমন ফুরফুরে মেজাজে ওদিকে ঢাকার প্রাসাদসম এক বাড়িতে তখন মহাবিপদের আশঙ্কা।এক কিশোরী মেয়েকে জাদুটোনা করে বাণ মেরে ছিটকে নিয়ে আসা হয়েছে স্বাভাবিকতার সহজাত প্রবৃত্তি থেকে;এক নিঃসঙ্গ ঘরে বিছানায় বন্ধ চোখের মণির দ্রুত ছটফটানিতে যেন এক নিথর মৃতদেহ পড়ে। কিন্তু কেউ কি তখন জানত? সেই জাদুটোনায় সীমানায় সে,বা তার পরিবার শুধু মন্ত্রজালে আটকে নেই,আছে পুরো মানবজাতি!
সেই অদ্ভুতুড়ে পজেশন মিস্ট্রিতে সমাধানে সঙ্গী হয়ে ওঠে স্বয়ং মারাবুতের শিষ্যত্ব গ্রহণকারী জ্বীন স্পেশালিস্ট মুমিনুল ইসলাম মুমিন এবং নানাবিধ জাদুবিদ্যায় পারদর্শী মেটালহেড অ্যানিমা।এবার যতই কাহিনী মেলায় তার আপন ডালপালা,ততই ভয়...রহস্য...থ্রিল...জাদু...সাসপেন্স...সবকিছু মিলে এক উদ্ভট চিত্রকর্ম এঁকে যেতে থাকে সেই ফ্যাকাশে ক্যানভাসে- অক্টারিনের দুর্লভ রঙে!
সেই দারুণ যাত্রার সঙ্গী হয়ে বইয়ের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পেরিয়ে শেষ ক্রান্তিলগনে কিছু মনের কথা কইতে আমি এখানে হাজিররর...!
তো এক নিকশ কালো আঁধার রাতে গা ছমছমে আবহে বইটাকে হা করে খুলে কয়েক পৃষ্ঠা উল্টে দেখি ওমা!বই পড়ার আবার সময়সূচী দেওয়া-তাও আবার অধ্যায় ভাগে ছক কেটে।স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমার দুই ভ্রু না কুঁচকে পারলো না। সময় নামক মহা গোলমালে ফেসে ঠিক করলাম রাত ১২টার পরে স্বল্প আলোয় নিজ বেডরুমে বইখানা পড়া শুরু করব।(সে সময় আমার বারান্দায় বসে কম্বলমুড়ি দিয়ে পড়লে বেশ হতো...)তাই যে ভাবা,সেই কাজ।
প্রথম অধ্যায়ে আমার কমন সেন্স গেল অষ্টম আশ্চর্যে-"বৃক্ষোভ"?!এরপর থেকে আমার সেই কমন সেন্সের পারদ কমল না,বরং হু হু করে বাড়তে লাগল।অবশ্য মাঝ�� কিছু সংলাপে হু হা করে হাসতে গিয়ে মাঝরাতে আমার পিতৃদেব-মাতৃদেবীর কঠিন বকুনি সহ্য করতে হয়েছে(সে আর বলতে...)।
বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী জাদুকর সুলায়মানের ব্লেড ফ্যাক্টরি+অফিস অভিযানে,বিশেষ করে দ্বিতীয় ও শেষ অভিযানে আমার হাতজোড়া থেকে করতালির বৃষ্টি থামছিলই নাহ!কি দারুন টানটান উত্তেজনা,কি চমৎকার নাটকীয় ঘটনাভঙ্গিমা! জি বাংলা-স্টার জলসার মেগা সিরিয়ালের ড্রামাটিক এক্সপ্রেশনকে যেন অবলীলায় হার মানিয়ে ফেলল!
কাহিনীর একদম শেষে এসে আমি খাই বড়সড় একটা ধাক্কা।আমাদের এই মূল অ্যান্টাগনিস্টের ন্যায় একটা আস্ত রামগাধা আমি দ্বিতীয় পিস দেখিনাই(কতকটা লাইট ইয়াগামির ডার্ক ভার্শন)!শুধুমাত্র...শুধুমাত্র মানবজাতির অত্যন্ত নিকৃষ্ট রূপ দেখে সে এমন সর্বোচ্চ মাত্রার স্টুপিড আর ঝুঁকিপূর্ণ ছেলেখেলাটা যে করতে গেলো,সেটা ভাবতেই রাগে আমি উপ্তপ্ত হয়ে পড়ছি।ইনি ফকির বেশে শত আলোকবর্ষ লম্বা একখান ম্যাজিক স্পেল ছত্রছায়ায় যেন একতারায় টুংটাং করে গাচ্ছেনঃ- ~ "এসো ইয়াজুজ-মাজুজ,এসো এসো। তাপসনিঃশ্বাসবায়ে, মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে। 'মানুষ' নামক নিষ্ঠুর গারবেজ,ঝেটিয়ে দাও দাও দাও এসো এসো।।"
অবশেষে একটা অতৃপ্তির তুমুল রেশ রেখে সমাপ্তি ঘটল এই "অক্টারিন" নামক অলৌকিকতা আর রহস্য-ভয়ে ভরপুর এই অসাধারণ থ্রিলারের।
"আর্কন" এর তুলনায় বেশ মার্জিত,পরিণত লেখনীতে কলম চালিয়েছেন লেখক।কাহিনী বিন্যাসও বেশ চিত্তাকর্ষক। তবে কিছু মতামত...
১)তানজীম রহমানের জ্ঞানের তৃষ্ণা এবং গবেষণা-পড়াশোনা প্রচুর, বিশেষ করে মিথলজি আর অকাল্ট সম্মন্ধ্যে।তাঁর কাছে আছে অপার তথ্যের সম্ভার-সেই তথ্যগুলোকে যেন আগ্রহী হয়ে জানাতে চান পাঠকদের।সেই তথ্যগুলো নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে সম্ভবত বেশ কিছু চমৎকার এবং অনন্য প্লট নির্মাণ করে ফেলেছিলেন,আর সেই প্লট বা কনসেপ্ট পূর্ণতা পেয়েছে "আর্কন" এবং "অক্টারিনে"। তবে সেই তথ্যগুলোকে ফিকশন ফর্মে পরিবেশন করতে গিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁকে;গল্পে তথ্যের আধিক্য কিছুটা বন্ধুরতা সৃষ্টি করেছে। ২) ডিটেইলিংয়ে আরেকটু যত্নশীল হতে হবে। ৩)জিহাদের মানসিক রোগের পার্টে আমার সমস্যা বেঁধেছে।তাদের ফ্যামিলি ডক্টর এতো চিকিৎসা করে তার রোগ নিরাময় করতে পারল না,কিন্তু অ্যানিমে এক দেখায় শুধু রোগনির্ণয় নয়,তাকে কাউন্সিলিং করে কিছুটা স্থিতিশীল করে ফেলল।জিহাদের ডক্টর কি আদৌ কি সাইকোলজিস্ট?স্ট্রেঞ্জ।ভেরি স্ট্রেঞ্জ। ৪)মুমিনকে কট্টর মৌলবাদী না দেখে বেশ খুশি হয়েছি। ৫)বইয়ে রক-মেটাল প্রেফারেন্স আমাকে রীতিমত বিস্মিত করেছে!এখনো যে মানুষ এ ধরণের মিউজিক শোনে,ভাবতেই অবাক লাগে।আমার অন্যতম পছন্দের ইন্টেরেস্টকে এভাবে বইয়ে ভিভিড ভাবে দেখা আমার জন্য কল্পনাতীত।বইয়ের মাঝপথে একবার রক-মেটাল ব্যান্ড "টুল" এর "ফর্টি সিক্স অ্যান্ড টু " গানের রেফারেন্স ছিল।সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে,সেই গান যে অ্যালবামে অন্তর্ভুক্ত ছিল,সেই অ্যালবামের নাম "অ্যানিমা"!
Never thought that I'd find a Bangla book that successfully blends jinns, metalheads, Ayatul Kursi and Chaos Magic together - a very pleasant surprise.
ব্রিটিশ লেখক টেরেন্স ডেভিড জন প্র্যাচেট তার 'দ্য কালার অব ম্যাজিক' বইয়ে একটা রঙ এর কথা বললেন। যে রঙটা নাকি সবাই দেখতে পায় না। শুধুমাত্র সেসব চোখের কাছে এই রঙটা ধরা পড়ে যেসব চোখ জাদুময় বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীল। যেমন: বেড়াল কিংবা জাদুকরেরা। সবুজ, হলুদ, বেগুনি রঙের মিশ্রণে এমন অতিপ্রাকৃতিক রঙটার নাম 'অক্টারিন'। এবং এ নামটা নিয়ে গোঁটা একটা উপন্যাসও লেখা হলো।
উপন্যাসটার একদম শুরুতে জানলাম, দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারের একমাত্র মেয়ে আয়েশার ওপর অশুভ শক্তির ছায়া পড়েছে। এবং সেটা কেন হলো, কিভাবে হলো, কে করলো—এ সমস্ত প্রশ্নের ময়না তদন্ত করতে নেমে পড়েন গল্পের কেন্দ্রীয় দু'জন চরিত্র। একজন ধর্মীয় মতাদর্শের, অপরজন জাদুবিদ্যায় পারদর্শী।
সমস্ত বই জুড়ে একের পর এক চ্যালেঞ্জ। রহস্য উন্মোচন করার তাড়া। ভয়ঙ্কর জীবের বর্ণনা। বিপদ। গল্প শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ মীমাংসা। সবমিলিয়ে উপন্যাসটা লিখতে গিয়ে প্রয়োজনের জায়গাগুলোতে বিশাল পড়াশোনা করেছেন লেখক। প্লট গাঁথতে গিয়ে নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন খুব সাবলীলভাবে। লেখা অত্যন্ত সুখপাঠ্য। অধ্যায় গুলোও বেশ গোছানো।। এত এত তথ্য, ব্যাখ্যা সবকিছুই কোনরকম তালগোল প্যাঁচালো না। প্রায় চারশো পাতার মত একটা বই কোনরকম পড়তে হ্যাপা ছাড়াই পড়ে ফেললাম। লেখক এমন অদ্ভুত সমস্ত ভয়ের জীবের বিবরণে একদম ফার্স্ট ক্লাস। তবে পরবর্তীতে অতিরিক্ত বর্ণনা পড়তে পড়তে অবসাদ চলে আসছিল।
বইয়ের বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলা জরুরি। যেসব বিষয় বইয়ের ভিত্তিটাকেই নাজুক করে দেওয়ায় যথেষ্ট। যেমন:
১. কুরআনে ব্যবহৃত শব্দ সিহর (সাধারণত জাদু হিসেবে সংজ্ঞায়িত) ইসলামে নিষিদ্ধ, তবে সিহর-এর সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণে কিছুটা মতপার্থক্য বিদ্যমান। জাদু একটি অশরীরী বিশ্বাসব্যবস্থার বিস্তৃত পরিসরকে অন্তর্ভুক্ত করে; যার মধ্যে রয়েছে মায়াবিদ্যা (যার উদ্দেশ্য সাধারণত অতিপ্রাকৃত শক্তির সহায়তায় ঘটনাপ্রবাহ পরিবর্তন করা। এছাড়া ষাটটি কুরআনের আয়াত জাদু সম্পর্কিত বলে জানা যায়। অনেক আয়াতে জাদুবিদ্যাকে নেতিবাচকভাবে বর্ণনা করা হয়। এটি এমন এক গোপন জ্ঞান, যা মানুষের জানা উচিত না; রাসুলুল্লাহ বলেছেন, 'সাতটি ধ্বংসাত্মক গুনাহ থেকে বাঁচো।' এই সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজের মধ্যে 'জাদুবিদ্যা' একটি। ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী জাদুবিদ্যা শেখা, করা, অন্যের উপর প্রয়োগ করা বা বিশ্বাস করা হারাম। যারা জাদুকরের সাহায্য নেওয়াও গুনাহের কাজ। এতকিছুর রেফারেন্স টানার উদ্দেশ্য হচ্ছে: গল্পের প্রধান চরিত্র মুমিন যথেষ্ট ধার্মিক, শুরু থেকে পজেসড আয়েশাকে ব্লাক ম্যাজিক করা হয়েছি কিনা সেটা যাচাই করতে একজন জাদুকরের সাহায্য নেয়। জাদুবিদ্যার মিশেলে ইসলামি কায়দায় শয়তান দমন প্রক্রিয়াটা কি বেশ বিতার্কিক নয়?
২. সেকান্দার, যার কুরআনের পুরোটা মুখস্থ ও আবৃত্তি করার গুণ ছিল। প্রথমদিকে তিনি কেন ইবনে সিনার মত এত বড় জাদুকরের (যিনি নেপালে এসেছিলেন তুলপা বানানোর জন্য) সহচর্য হলেন? ইসলামে তুলপা বানানো স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ (হারাম) বলেই গণ্য করা হয়।
৩. আয়াতুল কুরসী হলো সূরা বাকারার একটি আয়াত। আলাদা করে কোন সূরা নয়। কিন্তু একটা অংশে যখন জ্বিনরা আক্রমণ করছিল, তখন বার বার সূরা বলেই সম্ভোধন করা হচ্ছিল।
৪. ইউনিভার্সিটিতে থাকতে সার্জনদের কয়েন দিয়ে প্রাকটিস করতে দেখেছে মুমিন। ওদিকে বলা হলো, মুমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ এ পড়াশোনা করেছে। যেকোন জায়গাতেই সে এটা দেখতে পারতো। কিন্তু কথাটাকে আরেকটু ক্লিয়ার করলে ভালো হত।
৫. সুলায়মানের ফ্যাক্টরি অভিযানের যাত্রাটা আরেকটু কম দীর্ঘ হলে ভালো হত। এত বিস্তর বর্ণনা কাহিনিতে খুব বেশি ইফেক্টিভ ছিল কি?
৬. ফিকশনে ভাষা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাষার বৈচিত্র্যতা এবং প্রাঞ্জলতা একটা বানোয়াট গল্পকে সত্য করে তুলতে পারে। গল্পে কাজের মেয়ে চরিত��রে যিনি ছিলেন তার মুখে পুরোপুরি শুদ্ধ ভাষার ব্যবহার না করলে বোধহয় খুব ভালো হত!
৭. কিছু কিছু জায়গায় বর্ণনা অতিরিক্ত লেগেছে।
৮. অ্যানিমার বন্ধু তারিক হঠাৎ করে আতিক হয়ে গেল কি করে?
৯. শেষটা শেষ হলো খুব তাড়াহুড়ো ভাবে।
নেতিবাচকতা বাদ দিলে বলবো—পজেশন মিস্ট্রি হিসেবে 'অক্টারিন' মোটামুটি সফল। আরো বছর পাঁচেক আগে পড়তে পারলে আনন্দটা বোধহয় বেশি পেতাম!
বেশ ভালো একটা বই। লেখক যে অনেক পড়াশোনা করে বইটা লিখেছেন সেটা বেশ স্পষ্ট। বেশকিছু তথ্য আর তত্ত্বের কথা এনেছেন যেগুলো সম্পর্কে আরও জানার ইচ্ছা জন্মেছে। পুরো বইতে লেখক থ্রিল আর হররটা ধরে রাখতে পেরেছিলেন। প্রথম পৃষ্ঠার সেই অদ্ভূত ঘটনার ব্যাখ্যা জানার জন্য তাই প্রায় চারশো পৃষ্ঠার বইটা পড়তে তেমন একটা বিরক্তি আসেনি। এই থ্রিল ধরে রাখা আর পাতার পর পাতা ভৌতিক সব কর্মকাণ্ড দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া বইটার পজিটিভ দিক।
আর যদি নেগেটিভ দিক বলি তাহলে বলব কিছু জায়গায় অতিরিক্ত লম্বা করার কথা। এছাড়া বলা যায় ভিলেন চরিত্রটা ততটা ফোটাতে না পারা, শেষটা বেশি তাড়াহুড়ো করা। প্রধান চরিত্র মুমিনের একজন পাঞ্জেগানা নামাজি হয়েও জ��দুর প্রতি এত ভক্তি কিছুটা বেখাপ্পাও লেগেছে অবশ্য। মোটের উপর, ভালো।
গল্পের প্রধান চরিত্র মুমিন - এক হাইস্কুলে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষকতা করে সে। অতীতের কিছু অপ্রিয় স্মৃতি সময়ে সময়ে তাকে তাড়া করলেও আপাতত-সাধারণ জীবন বেশ নির্বিঘ্নে কেটে যাচ্ছিলো তার। কিন্তু বেশিদিন সেরকম চলতে পারলো না - এক শুক্রবার সকালে নাশতা খাবার জন্য বসতে না বসতেই ফোনকল আসলো হাইস্কুলের এসিস্ট্যান্ট হেড আজগর স্যারের কাছ থেকে।
শুক্রবার কল পেয়ে যতোটা না অবাক হলো মুমিন, তার চেয়ে বেশি অবাক হলো "ম্যাডাম" এর তরফ থেকে তার ডাক পড়েছে শুনে। ম্যাডাম হলেন এক প্রয়াত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কলিমুদ্দিন-এর স্ত্রী, যার ফান্ডের টাকায় মুমিনদের হাইস্কুলটি চলে। তার তো কোনো দরকার থাকবার কথা নয় মুমিনের সাথে! কিন্তু না গিয়ে উপায়ও নেই, অতএব ম্যাডামের পাঠানো গাড়িতে করে তার প্রাসাদসম বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো সে।
সেখানে অপেক্ষা করছিলো আরো বড় বিস্ময়, তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো এক গুরুদায়িত্ব। ম্যাডামের মেয়ে আয়েশা অসুস্থ - কোনো স্বাভাবিক বা পরিচিত ধরণের অসুখ নয় সেটা। কয়েকদিন ধরে একটানা ঘুমাচ্ছে সে, একবারও জেগে উঠে নি - ডাক্তাররা কোনো উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারছে না। এবং এই অসুখের সাথে সাথে শুরু হয়েছে বাড়িতে আশ্চর্যজনক আর ব্যাখ্যাতীত সব ঘটনা। কি ভর করেছে আয়েশার উপর? কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তিই তো ঘটাচ্ছে এসব! আর মুমিন কি পারবে এ সমস্যার সমাধান করতে?
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ
এক লাইনে মতামত হলো - বহুদিন পর কোনো বাংলাদেশী বই পড়ে এত ভালো লাগলো। এখন বিস্তারিত আলোচনায় আসি।
পজেশন মিস্ট্রি/থ্রিলার এই জন্রার বই আমার কাছে নতুন নয়, বাইরের বেশ অনেকগুলো বইই পড়া হয়েছে। তাই বিশাল কিছু ভেবে পড়া শুরু করি নি শুরুতে, কিন্তু ভালো লাগার সর্বপ্রথম কারণ হলো চমৎকার এফোর্ট। দেশী লেখকদের মধ্যে যে জিনিসটা দেখতে পেলে সবচেয়ে প্রথমে এপ্রিশিয়েট করার চেষ্টা করি তা হলো পড়াশুনা, রিসার্চ করে আর পরিশ্রম নিয়ে লেখাটা - কারণ এখন এটার অভাবই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
নতুন কিছু ইনফরমেশন জানতে পারলাম, আর লেখার ধরণও ভালো লাগলো। গতিশীলতা ছিল, ধরে রাখার মতো উপাদান ছিল। ভয়ের ব্যাপারটায় বলবো - ভয় পাবেন কি পাবেন না এটা আসলে ব্যক্তিগত ব্যাপার, সবাই একই জিনিসে ভয় পায় না। তবে গতকাল রাতে পড়তে গিয়ে আমার নিজের কয়েক জায়গায় খুব গায়ে কাঁটা দিয়েছে। কিন্তু একবসায় পড়েও উঠেছি।
নেগেটিভ দিক বলতে গেলে মুনিম চরিত্রটাকে তেমন ভালো লাগে নি, আরেকটু স্ট্রং হতে পারতো সম্ভবত। আমার পছন্দের চরিত্র অ্যানিমা, আর ছোট্ট একটুখানি সময়ের জন্য উদয় হওয়া যিনি প্রত্যক্ষভাবে চলন্ত গল্পে ছিলেনও না সেই জহুরি চাচা। ছোটখাট কিছু ভুল, টুকটাক বানান একদম খামচে না ধরলে সুখপাঠ্য একটা বই।
"পজেশন মিস্ট্রি" এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিল বইটাকে এত আগ্রহ নিয়ে পড়ার জন্যে। এরকম বিষয় নিয়ে এই প্রথম কিছু পড়লাম। বলতে দ্বিধা নেই, অসম্ভব ভালো লেগেছে। এত ডিপলি ব্ল্যাক ম্যাজিক নিয়ে লেখা, আর প্রত্যেকটার এত সুন্দর বর্ণনা(যদিও কোথাও কোথাও অতিরিক্ত বর্ণনা ছিল), এত গুছানো লেখা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। আর ভয় পাওয়ার কথা না হয় বাদ ই দিলাম :/। সব ই ঠিকঠাক ছিলো, কিন্তু এন্ডিংটা যে বড্ড তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো। এরকম পাওয়ারফুল ভিলেইনকে এত সহজে হারিয়ে দেওয়া ঠিক হলো না। আরেকটু ফাইটিং দেখানো উচিত ছিলো। এজন্যেই ১ তারা কর্তন।
হরর বলতে আমাদের মাথায় যে কথাটি সবার আগে ভেসে উঠে তা হল একটা পুরাতন জমিদার বাড়ি আর সেখানে ঘটা কিছু অদ্ভুত ঘটনা । অথবা এমন কোন কিছু ঘটনা সেটার সাথে একটা পুরাতন বাড়ির সম্পর্ক থাকবেই । ঘটনাটা স্বাভাবিক । কারণ আমাদের হরর সম্পর্কে ধারনাই হয়েছে মুভি দেখে আর বিদেশী লেখকদের বই পড়ে । যার প্রভাব দেখা যায় আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে তো বটেই হরর গল্প বা বই লেখকদের মাঝেও । কারণ খুব কম বইই আছে যেটাতে কোন পুরাতন বাড়ির অস্তিত্ব নেই অথবা সেই বড়িকে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা ঘটে নাই । এর কারণ সম্ভবত আমাদের দেশের হরর লেখকদের হরর পড়া শুরু হয় বিদেশের লেখদের বই পড়ে অথবা “সাইলেন্ট হিলের” মত মুভি দেখে । ফলে তাদের গল্পের উপাদানে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে সেই প্রভাব । কিন্তু আমরা কেউ চেষ্টা করি না আমাদের দেশীয় কোন পটভূমিতে হরর গল্প লেখার । অথচ হরর গল্পের উপাদার সংগ্রহের জন্য যে পুরাতন বাড়ির কাছে যাওয়া লাগে না বরং আধুনিক ঢাকাতে থেকেই ফ্ল্যাটে যে হরর গল্পের উপাদার পাওয়া যায় তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে “অক্টারিন”। শুধু দরকার একটু স্বদিচ্ছা ।
প্রথমেই বলি লেখকের লেখকের লেখার কথা । গতবার যখন “আর্কন” পড়েছিলাম তখনই বলেছিলাম যে তানজিম রহমানের লেখাতে কোন ফাক ফোঁকর নেই । মানে লেখা মাঝখানে ঝুলে যায় না । অথবা মনে হয় না যে শুধু শুধুই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরছেন বা যে ক্যারেক্টারের সাথে যা যায় না তাই জোর করে জুড়ে দিচ্ছেন । যদিও “আর্কন” আমার কাছে অসাধারণ হয়ে উঠতে গিয়েও সেকন্ড হাফের জন্য শুধুই সাধারণ হয়ে রয়ে গিয়েছিল । কিন্তু তখনই বলেছিলাম “তাহজিম রহমানের মধ্যে যে সম্ভাবনা আছে তা বর্তমানের এই জনরায় লেখা আর কোন লেখকের মধ্যে নাই । এই জনরায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাহজিম রহমান যে এক সময় রাজত্ব করবেন সেটা সবাই সময় হলেই দেখেবেন।” কথাগুলো একটু ত্যালত্যালে হলেও মন থেকেই বলছি । অক্টারিনের মাধ্যমে তিনি শুধু এক ধাপ এগিয়ে গেলেন । প্রথম একশ পৃষ্ঠা পড়ে মনে হচ্ছিল যেন নীল গেইম্যানের কোন হরর ফ্যান্টাসি পড়ছি শেষের দিকে এসে মনে হচ্ছিল যেন হরর কিং স্টিফেন কিং এর কোন বই পড়ছি । কিছুক্ষন পর মনে হচ্ছে আসলে জিম বুচারের বই পড়ছি । আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে হ্যারি ড্রেসড্রেনের সাথে বইয়ের ম্যাজিশিয়ানের অনেক মিল বিশেষ করে স্পেল আর ম্যাজিক চর্চার টার্মগুলোতে । যে কারণে ক্যারেক্টারটা আপন আপন লেগেছে অনেক grin emoticon ।
প্লট – অদ্ভুত কারণে অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছে দেশের এক প্রভাবশালী পরবারের মেয়ে । চারদিকে ঘটতে লাগল অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা যার কোন উত্তর দিতে পারছে না ডাক্তারা । পরিবারের লোকজন ধরে নিচ্ছে মেয়েটির উপর জিনের আছর পড়েছে । ডাক পড়ল মাদ্রাসা থেকে পাস করা ছাত্র মুমিনের । এই বিষয়ে রয়েছে যার অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা । ঠেকায় পড়ে আসতে হল মেয়েটিকে ভালো করতে । কিন্তু সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা কাঁটিয়ে কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছে না মুমিন মেয়েটির সমস্যা , তাই বাধ্য হয়ে সাহায্য নিতে হল অ্যানিমা নামের একটা একজন ম্যাজেশিয়ানের । অতলের তল পেটে দুজনে নামল এক অসম যুদ্ধে । যাদের উইপর নির্ভর করছে অনেক কিছু ।
সত্যি কথা বলতে বইটা শেষ করার পর আমার শুধু একটি কথাই মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল “ব্রাভো” । আর কিচ্ছু না । ম্যাজিক কে এত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বইতে মনে হবে “আসেন ভাই আমিও একটু ম্যাজিক করি” । ম্যাজিকের মত মত জটিল জিনিসকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্যই বইটা আর বেশি ভালো লেগেছে । জিন আর জিন জাতি নিয়েও খুব ভালোভাবে আলোচনা করা হয়েছে । কিন্তু সে আলোচনা আবার ইতিহাসের ক্লাস হয়ে যায়নি । যতটুকু না হলেই নয় ঠিক ততটুকুই বর্ণনা করা হয়েছে । লেখক যে বেশ ভালো হোমওয়ার্ক করেছে বুঝাই যাচ্ছিল । প্রতিটি ক্যারেক্টারকে খুব ধীরে সুস্থে বর্ণনা করা হয়েছে । মূল ক্যারেক্টারগুলোর নিজ নিজ দর্শন আর তাদের নিজ নিজ যুক্তিগুলো ভালো ছিল । বইতে যে উপমাগুলো ব্যাবহার করা হয়েছে তা আসলেই দেখার মত ।
******************************************************************************************* স্পয়লার এলার্ট - ফিনিশিং নিয়ে কয়েকজনের আপত্তি থাকলেও আমার কোন আপত্তি নাই । একবারে পারফেক্ট হয়েছে । কারণ এতবড় একজন জাদুকরের সাথে কোনভাবেই জাদুর মাধ্যমে পারা সম্ভব ছিল না অ্যানিমার পক্ষে । তবে ফিনিশিংটা আরেকটু বিস্তারিত হলে ভালো হত। একটা জিনিস ভালো লেগেছে এতদিন শুধু দেখতাম বিদেশী লেখকদের বইয়ে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার হাতঁ থেকে বাঁচাতে লড়ছে নায়ক নায়িকারা । পৃথিবী মানে যে নিয় ইয়র্ক আর আমেরিকা নয় আর তা বাঁচাতে আমাদের দেশের নায়ক নায়িকারাও সক্ষম তা দেখে আনন্দ হচ্ছে ভীষণ tongue emoticon । তানজিম ভাইয়ের কাছে একটা প্রশ্ন মুমিনের মত একটা ছেলে যে কিনা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছে সে “ইয়াজুজ মাজুজ” সম্পর্কে জানবে না এটা কি বিশ্বাসযোগ্য ? পুরো বইতে একটা বিষয়ই খটকা লেগেছে ।
অক্টারিন যদি বিশুদ্ধ রং এর প্রতিশব্দ হয় তাহলে একদম নিখাদ আনন্দ, টানটান উত্তেজনা,একের পর এক চমক আর সবশেষে অনেক দিন পর একটা অসাধারন বই পড়ার যে তৃপ্তিকে যে একসাথে কি বলে তা আমার শব্দের জাদুকর তানজীম রহমান কে জিজ্ঞেস করতে হবে.
রেটিং;!?এই বইয়ের জন্য ১০০/৫ দিলেও কমই পড়বে, অনেক দিন লিটারেলি অনেক দিন এমন ভালো কিছু পড়ে শান্তি লাগেনি 😊
হরর গল্পের স্বার্থকতা কি ? তা যদি ভয় পাওয়া হয় তাহলে এই বই স্বার্থক। অনেকদিন পরে বাংলাদেশের টিপিক্যাল হরর বই থেকে একদমই আলাদা কিছু পড়লাম। মূল ভিলেন চরিত্র আর ছোটখাট খটকা বাদ দিলে বেশ ভালো মানের বই। হরর প্রেমীদের জন্য হাইলি রিকমেন্ডেড।
I read it for my year-long book challenge 2024 for the prompt "A mood read"
এতো বছর কেন লাগলো এই বই পড়তে এর উত্তর আমার জানা নেই। ফেব্রুয়ারি মাসটা আমার জন্য খুব-ই মেন্টালি ড্রেইনিং মাস ছিলো, তাই কোন কোনদিন একদম-ই বই হাতে নিতে পারি নি তবে যেইসব দিনগুলোতে পড়তে পেড়েছি অল্প অল্প করে বইটি পড়েছি এবং মুখিয়ে থেকেছি সামনে কি হবে। আমি একদম কমসম স্লো-বার্ণ পড়তে পছন্দ করি সেই হিসেবে এই বই আমি বেশ এঞ্জয় করেছি। কন্সেপ্ট, স্টোরিটেলিং- খুব ভালো লেগেছে!
২০১৬'র বইমেলায় একই সাথে আদী আর বাতিঘর থেকে দুটা বই বের হয় যেগুলো হালের পাঠককে তাদের নিজ নিজ জনরার স্বাদ প্রায় প্রথমবারই দিয়েছিল। আদী প্রকাশন থেকে সৈয়দ অনির্বাণের 'শোণিত উপাখ্যান' যেটা আদতে বাংলাসাহিত্যের প্রথম *সফল* আরবান ফ্যান্টাসি। একইসাথে বাতিঘর থেকে অক্টারিন, আর পজেশন মিস্ট্রি আগে হাতে পেলেও অক্টারিন সে হিসেবে প্রথম সফল পজেশন মিস্ট্রিই বলা যায়।
পাঠকের কাছে এই দুটা বই যুগলবন্দী হয়ে হাজির হওয়ার কারণ আছে। শোণিত উপাখ্যানে আনা হয়েছে ভারতবর্ষের স্থানীয় কল্পকাহিনীর অতিপ্রাকৃতদের, যাদেরকে মূলত হিন্দুইজমেই বিশ্বাস করে আসা হয়েছে। চূড়েল, যক্ষ, স্কন্ধকাটা, ডাকিনী, পিশাচ, বৈতাল... বহু বছরে সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া নামগুলোকে এবার এনাটমিকালি ছিঁড়েখুঁড়ে দেখার সুযোগ করেছেন যেন শোণিতের লেখক। অন্যদিকে অক্টারিনের ভিত্তি মুসলিম মিথে উল্লেখিত অতিপ্রাকৃতরা । যতবারই তাদের উল্লেখ এসেছে তাদেরকে 'জ্বীন' বলেই ধরে নেওয়া হয়েছে সরাসরি, এবার তাদের মুখোমুখি হওয়ার কায়দা ধর্মীয় হোক আর কাল্পনিকই হোক। শোণিত উপাখ্যানে অতিপ্রাকৃতরা থাকলেও ওটা হরর না। আমার নিজের ভাষায়, শোণিত যদি পাওয়ার মেটাল হয় অক্টারিন হবে ডার্ক মেটাল। কখনো কখনো 'ভয় পাওয়ানো'র কাজটা অক্টারিনের দ্বারা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু কেন?
প্রথমেই আসি বইয়ের শুরুতে। প্রিফেইসের আগেই লেখক বইটা পড়ার একটা সময়সূচী সাজেস্ট করেছেন, তাঁর মতে এই সময় মেনে বইটা পড়লে বেশি উপভোগ্য হবে। সময়গুলো মূলত রাত ১০টা-১১টার পরের সময়। এবং মানতেই হবে, কাল রাতে বই শুরু করে আজ রাতে শেষ করার মাঝখানে বইটা আমাকে জাঁকিয়ে ধরেছিল কেবল রাতের সময়গুলোতেই। আমি হররের ফ্যান না কোনোদিক থেকেই, আর হরর উপন্যাস মনে হয় এটার আগে আর পড়িনি। অক্টারিন পড়তে গিয়ে খোলা জানালার দিকে পিঠ দিয়ে পড়ার সাহস অন্তত হয়নি কখনো কখনো। কিন্তু কেন? অক্টারিনের উপস্থাপন তো এতটাও শক্তিশালী না যেটা আমাকে ওই মূহুর্তটার শক্ত কল্পনা করতে বাধ্য করবে!
জবাবটা হয়তো মুভি থেকে দেওয়া যেতে পারে। হরর মুভি দেখেছি কেবল হলিউডেরগুলো, কিন্তু সব ক্ষেত্রে এই নিশ্চয়তাটা মনে কাজ করছিল যে যা ঘটছে তা ভয়ঙ্কর হলেও কাল্পনিক, তাঁর স্থায়িত্ব মুভির রানটাইমের মাঝেই। কিন্তু যখন 'দাব্বে' বা 'সিচ্চিনে'র মতো মুভি দেখলাম (যেগুলোর উল্লেখ করতেই আমার ঘাড় শিরশির করে উঠছে!), লক্ষ্য করলাম সেখানকার ফেনোমেনা মূলত 'জ্বীন' কেন্দ্রিক, যে জ্বীনে বিশ্বাস করার শিক্ষা আমার ধর্মীয় পরিমন্ডল থেকে পেয়ে এসেছি, আর যখনই তাবিজ বা কুফরী কালামের কথা উল্লেখ করা হচ্ছিল, যখন আমি সত্যি ফীল করতে পারছিলাম যে 'এমনটা আমার সাথে ঘটতে পারে', তখনই আসল ভয়টা কাপিয়ে দিয়ে গিয়েছিল আমাকে।
বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষিতে অধিকাংশ পাঠক জ্বীনেদের কথা শুনে বড় হয়েছে, অন্ধকারের একলা মুহূর্তগুলোয় যার ভয়ে থেকেছে- যখন হরর গল্পে তাদের অবতারণা হয় তখন সে গল্প তাঁর জন্য মোক্ষম হরর না হয়েই যায় না। অক্টারিন এই জায়গাটি থেকেই তাঁর সফলতাটুকু কুড়িয়েছে কেননা জ্বীনদেরকে 'পজেশন' হিসেবে উপস্থাপন করে পুরো গল্পে জ্বীনের আছরকে মোকাবেলা করা বা এই নিয়ে কাহিনী আবরতন করার কাজটি উল্লেখ করার মতো আর কোথাও হয়নি। তাছাড়া, জ্বীন শুনলে পাঠকের কাছে কাউকে জ্বীনে আছর বা পজেস করার ঘটনাই মাথায় আসবে আগে। শৈশব থেকে যে ভয় থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে এসেছি তাকে নিয়ে কাজ করেই আমাদের 'অক্টারিন' নিজের ভরাডুবি থেকে বেশ ভালভাবেই উৎরে গিয়েছে।
কাহিনীতে দেখা যায়, মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের সাধারণ 'হুজুর' এবং স্কুলশিক্ষক মুমিন, যার আবার অতীতে জ্বীন তাড়ানোর অভিজ্ঞতা হয়েছিল, এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েকে সাহায্য করতে হাজির হয়। অশুভ শক্তির মোকাবেলায় একসময় তার সাহায্যকারী হয় অ্যানিমা। দুজনের ভোল-চাল আবার পুরোই বিপরীত। রহস্যের গভীরে যেতে যেতে বের হয়ে আসে নিগূড় অন্ধকার। সত্যটা যতক্ষণে টের পায় ওরা দুজন তখন পুরো পৃথিবী সঙ্কটের মুখে আর ওরা মারাত্নক অসহায়। সব পাঠকের আপত্তি এই বইয়ের এন্ডিং নিয়ে। অনেক বড় একটা সঙ্কট তৈরী করা হয়েছিল, ধরমমতের সাথে সাযুজ্য রেখে। তারপর এক চরম অসহায় অবস্থা থেকে প্রটাগনিস্টদের সফল করে দেওয়া হলো একটু চালাকি আর কয়েক মিনিটের ধাআকা একশনের মাঝেই। এভাবে না হলে ভালো ছিল।
তবে আমার ভালো লাগেনি প্রতিটা দৃশ্যের অপ্রয়োজনীয় ডিটেইল পড়তে। কিছু ইছু দৃশ্য টানটান লেগেছে, আবার খুব ক্রুশিয়াল সময়ে যেখানে খুব দ্রুত অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছিল, সেখানে লেখক লেখা বাড়িয়ে পড়ার গতিকে ব্যহত করেছেন। তাছাড়া সবশেষে কাহিনীও আহামরি কিছু ছিল না। মাঝখানে লেখক প্রটাগনিস্টদের ভালরকম বিপদে ফেলেছিলেন একবার, দৃশ্য শেষে যার আউটকাম ছিল শূন্য। বইটা পাশেই আছে, শেষ করলাম যে এক ঘন্টা হলো, এখনো যদ্দূর রেশ আছে সত্যি বলতে তা কিছু দৃশ্যের উত্তেজনার, আর কিছু না। যতবারই অতিপ্রাকৃতের মোকাবিলা এসেছে, দুঃখজনকভাবে কোনোটারই কমব্যাট ডিজাইন মনে রাখার মতো না।
শেষ কথা। বইয়ে যত রকম এন্টিটির কথা এসেছে- মারিদ, ইফরিত, ঘুল, তুলপা, উয়াজুজ-মাজুজ... দে অল ডু এগজিস্ট। দে রিয়েলি ডু। অবশ্য যদি আপনি মুসলিম হন তবেই।
এই 'সত্যিই এগজিস্ট করা' স্বত্বাদের নিয়ে ফিকশনে কাজ করার সাহস লেখক জানামতে প্রথমবারই করেছেন বলে আমি অক্টারিনকে সাধুবাদ জানাই। তানজীম রহমান বর্তমানের তরুণ লেখকদের মধ্যে প্রমিজিং একজন। তাঁর গল্প পড়েছি কয়েক জায়গায়। আর্কন পড়িনি। অক্টারিন অনেক ভাল একটা উদ্যোগ হলেও তানজীম রহমানের উচ্চতার হয়নি। দিনশেষে ব্যাক্তিগত ৪/৫ (good) রেটিং দেওয়া বইটার ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায়, বইটা কি আমি আর কাউকে রেকমেন্ড করবো? বিলকুল। আফটার অল, না পড়লে মিস করতে হবে। বইটা *অন্তত* এতটুকু ইন্টারেস্টিং।
বইঃ অক্টারিন লেখকঃ তানজীম রহমান জনরাঃ হরর, চিলার, পজেশন মিস্ট্রি প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ গাত্রমূল্যঃ ৩৮০ টাকা পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩৮৪
আশরাফুল সুমন ভাই অক্টারিনের বিভিন্ন দিক তুলে খুব চমৎকার (আমজনতার চোখে খটমইট্টা) একটি রিভিউ দিয়েছিলেন। উনি লেখক মানুষ, সেই সাথে একজন এডিটরও। গল্পের থিম ছাড়াও লেখার কৌশলের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় তার চোখে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ধরা পড়ে। তাই সেসব নিয়ে তিনি লিখতেই পারেন। আমি একজন নগন্য পাঠক মাত্র। আক্ষরিক অর্থেই রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার নাই। আমি শুধু বইটা পড়ে শেষ করার পর আমার ব্যক্তিগত অনুভূতিটুকু আপনাদের জানাতে পারি। :)
বইটা খুলতেই সম্পূর্ণ নতুন আর ভিন্নধর্মী একটা জিনিস চোখে পড়েছিল। লেখক বইয়ের সাথে পড়ার একটা সময়সূচী ঠিক করে দিয়েছিলেন। সেই সাথে এটাও বলে দিয়েছিলেন যে, সূচি না মানলে সমস্যা নেই, তবে সূচি মেনে পড়লেই বইটা পড়ে সর্বোচ্চ তৃপ্তি পাওয়া যাবে! আমার খুব ইচ্ছা ছিল লেখকের বেঁধে দেয়া সময়ানুযায়ী বইটা পড়তে। কিন্তু আমি ব্যস্ত মানুষ, চাকরি-পড়াশোনা অনেক কিছু সামলিয়ে তবেই আমার জন্য পড়ার সময় বের করতে হয়। লেখকের দেয়া সময়ানুযায়ী বইটি পড়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে আমি লেখককে আশ্বস্ত করতে চাই, এতে আমার তৃপ্তি বিন্দুমাত্রও কমেনি। অসাধারণ লিখেছেন আপনি। জীবনে খুব কম বই-ই আমাকে এতটা মজা দিতে পেরেছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ধনী পরিবারগুলোর মাঝে একটি হল সৈয়দ কলিমুদ্দিনদের পরিবার। স্বামীর অবর্তমানে মিসেস কলিমুদ্দিনই সবকিছু দেখাশোনা করেন। এই পরিবারের একমাত্র মেয়ে আয়েশা, একদিন হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ে আর ঘুম থেকে জাগেনি। ডাক্তাররা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও তার কোন সমস্যা ধরতে পারেনি। তার দেহের সকল কার্যক্রমই স্বাভাবিক, শুধু ঘুমটাই ভাঙ্গছে না। মিসেস কলিমুদ্দিন ভাবলেন তার মেয়ের পার্থিব কোন সমস্যা যেহেতু ডাক্তাররা ধরতে পারছেন না, তাহলে সমস্যাটা কি অপার্থিব? ডাক পড়ল গল্পের নায়ক মুমিনুল ইসলাম মুমিনের।
মুমিনুল ইসলাম মুমিন, সত্যি বলছি এত হাবাগোবা নায়ক আমি আমার জীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। বেচারাকে আরেকটু চালাক দেখালে কি এমন ক্ষতি হত লেখকের? বেচারারে সবাই খালি ধমকায়! থ্রেটের উপর রাখে! আর বেচারা কাউকে কিছু বলতেও পারেনা, সইতেও পারেনা! বলদা একটা... :p
মুমিনের নিজের ছোটবেলার খুব ভয়ংকর একটা অভিজ্ঞতার কারণে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অপার্থিব জগতের বাসিন্দাদের কাজে আর কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না। কিন্তু ম্যাডাম কলিমুদ্দিনের কাছ থেকে দায়িত্ব পেয়ে তার নিজের কাছে করা প্রতিজ্ঞা তাকে ভাংতেই হল। কিন্তু কাজে নেমে দেখল অপার্থিবতার এই বিশাল জগতে সে এখনো শিশু, তার আরো অভিজ্ঞ কারো সাহায্য দরকার, একজন রিয়েল ম্যাজিশিয়ানের।
মুমিনের সাহায্যার্থে এগিয়ে এল গল্পের নায়িকা দূর্দান্ত স্মার্ট অ্যানিমা, যে কিনা নিজেই বলে বেড়ায় যে এটা তার আসল নাম নয়। হাবাগোবা নায়কের সাথে দূর্দান্ত স্মার্ট নায়িকা, অন্যদের কাছে কেমন লেগেছে জানি না, কিন্তু আমার কাছে অসাম লেগেছে! মজা পেয়েছি পুরো বইতে অ্যানিমা মুমিনকে যতবারই ডেকেছে তার পুরো নাম ধরে ডেকেছিল দেখে, আর মুমিন তাকে ডাকত আপা! নায়ক কখনো নায়িকাকে আপা ডাকে? বলদা -_-
মুমিন আর অ্যানিমা কাজে নেমে দেখে ঘটনা তারা যেমন ভেবেছিল তার চেয়েও অনেক ভয়াবহ। শক্তিশালী কোন এক প্রতিপক্ষ অশুভ একটা শক্তিকে পৃথিবীতে ডেকে আনতে চাচ্ছে, চাচ্ছে পুরো পৃথিবীটা ধ্বংস করে দিতে। পুরো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ওদের দুজনের হাতে। পৃথিবীকে বাঁচানোর এক অসম লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে ওরা দুজন।
সত্যি বলতে কি, বইটা যে থিম নিয়ে লেখা হয়েছে এই থিম নিয়ে যে আদৌ লেখা সম্ভব এমনটা কখনো ভাবতেও পারিনি। লেখক সত্যিই অসাধারণ একটা কাজ দেখিয়েছেন। প্লট নির্বাচন থেকে শুরু করে বর্ণনাভঙ্গি, সবকিছুই মারাত্মক ছিল। কাহিনী বর্ণনা এত নিখুঁত ছিল যে পুরো ঘ��নাটা ভিজ্যুলাইজেশন করতে একটুও কষ্ট হয়নি, মনে হচ্ছিল বই পড়ছি না, কোন মুভি দেখছি। বইয়ের সবচেয়ে অসাধারণ পার্ট ছিল ম্যাজিক্যাল ফাইটগুলো। ছোটবেলায় আলিফ লায়লা দেখে যেমন শিউরে উঠতাম, ঠিক তেমনি শিউরেছি। আহ.... আর কবে এমন আরেকটা মাস্টারপিস পড়ার সৌভাগ্য হবে কে জানে।
অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে বইয়ের কলেবর বাড়ানোর জন্য কাহিনীকে অযথা ঝুলানো হয়েছে। বিশেষ করে মুমিনের ছোটবেলার কাহিনী এত বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করতে গিয়ে। আমারও তেমনটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু ভুলটা ভেঙ্গে যায় কাহিনীতে মূল ভিলেনের আগমন ঘটার পর। ভিলেনকে দেখানোর জন্য পূর্বের কাহিনী বর্ণনার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া মুমিন কেন এত হাবাগোবা, সেটাও তার পাস্ট না জানলে জানা যেত না! :p
মজা লেগেছে বইয়ের একেবারে শেষ লাইনে এসে মুমিনকে অ্যানিমার আসল নাম বলা দেখে। আফসোস হয়েছে একসাথে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আসার পরেও মুমিন আর অ্যানিমার মাঝে কিছু হতে হতে গিয়েও হল না দেখে। বোকাচোদা পাবলিক, আরেকটু স্মার্ট হলে ঠিকই অ্যানিমাকে পটিয়ে ফেলতে পারত। ইচ্ছা করছিল মুমিনের পাছায় একটা লাত্থি দিই! -_-
গত বইমেলায় বের হওয়া আর্কন পড়ে লেখক তানজীম রহমানের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আর অক্টারিন পড়ার পর তার লেখনীর প্রতি আমার মুগ্ধতা মাত্রা ছাড়িয়েছে। অন্যদের কথা জানি না, গত দশ বছরে আমার পড়া বইগুলোর মাঝে এটাই সবচেয়ে সেরা। ^_^
শুরুটা করেছিলাম আশরাফুল সুমন ভাইয়ের রিভিউর কথা দিয়ে। শেষটাও করি তার রিভিউর একটা কথা দিয়ে। তিনি লিখেছেন- 'এই বই যদি বাংলায় প্রকাশিত না হয়ে পশ্চিমা কোন দেশ থেকে ইংরেজিতে প্রকাশিত হত, তবে এটা নিশ্চতভাবেই ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার হত।'- এই কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। :)
বেশ কিছুদিন ধরেই বইটা পড়বো পড়বো ভাবছিলাম কিন্তু বইটা খুলতেই যখন দেখলাম লেখক একটা পড়ার সময় সূচি বিষয়ক সাজেশান দিয়েছেন তখন ভাবলাম তার সাজেশানটাই ফলো করি। কিন্তু ব্যস্ত লাইফে একদম চ্যাপ্টার টু চ্যাপ্টার টাইম বেঁধে পড়াটা একটু ডিফিকাল্ট। তাই বইটা বেশ কিছুদিন ফেলে রেখে খানিকটা সময় ম্যানেজ করে হাতে নিয়ে বসে পড়লাম পড়তে, তার সাজেশান যতটা সম্ভব মানতে। মজার বিষয় হচ্ছে আমি তার সাজেশান প্রায় কিছুই মানতে পারিনি। কারণ বইটা আমাকে এমনভাবে আকৃষ্ট করেছে আমি পড়ার দুদিনে যেখানেই গিয়েছি সেখানেই এটা সাথে করে নিয়ে গিয়েছি (এমনকি অফিসেও)। এখানেই একজন লেখক স্বার্থক বলে আমি মনে করি।
বিরাট ধনী পরিবারের মেয়ে আয়েশার ওপর অতিপ্রাকৃত কিছু একটা ভর করেছে। কিন্তু সেটা কি তা সম্পর্কে কারও কোন ধারণা নেই। আর জ্বীন বা অতিপ্রাকৃত কিছু ভর করলে সাধারণত যে বিষয়গুলা পরিলক্ষিত হয় আয়েশার ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। আয়েশার সমস্যা একটাই, তা হলো সে ঘুমুচ্ছে, ঘুম থেকে উঠছে না। সাধারণ দৃষ্টিতে এটাকে কোমায় চলে যাওয়া মনে হলেও ডাক্তাররা বলছে আয়েশার মাঝে তেমন কোন লক্ষণ নেই। এ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেয়া হয় মুমিনুল ইসলাম মুমিনের। মুমিন পেশায় একজন স্কুল টিচার কিন্তু অতিপ্রাকৃত ব্যাপারে তার টুকটাক জ্ঞান ছিলো। সে জ্ঞান কাজে লাগাতে গিয়ে মুমিন দেখে সে আসলে আয়েশার সমস্যাটা ধরতে পারছে না। জ্বীন ভর করলে সে বিষয়গুলা হয় বলে সে জানতো আয়েশার ক্ষেত্রে তা হয় না। সে খুঁজতে লাগলো এক্সপার্ট কাউকে। আর খুঁজতে খুঁজতে সে পেয়েছে উপন্যাসের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অ্যানিমাকে। বইতে অ্যানিমা একজন ম্যাজিশিয়ান। তো এই অ্যানিমা আর মুমিনের আয়েশা সমস্যার সমাধান ঘিরেই পুরো গল্প আবর্তিত হয়। আর শেষ দিকে জানা যায় একটা ভয়ংকর তথ্য, আয়েশার এমন অবস্থার জন্য কে দায়ি আর তার ওপর আসলে কি ভর করেছে।
লেখা সম্পর্কে একদমই অল্প কিছু মতামত দেবো।
পজিটিভ পয়েন্ট
১. প্লট খুবই চমৎকার। সত্যি বলতে এরকম প্লট যে কারও মাথায় আসতে পারে এমনটা আমার ধারণায় ছিলো না। ২. লেখনী গোছানো এবং সুপাঠ্য। কোন অংশকে অতিরিক্ত মনে হয়নি আমার কাছে। ৩. চরিত্রায়ন একদম পারফেক্ট। বিশেষ করে অ্যানিমা চরিত্রটি বেশ ভালো লেগেছে।
নেগেটিভ পয়েন্ট
১. ফিনিশিং তাড়াহুড়ো করে দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছে। কিংবা এটাও হতে পারে লেখাটার মাঝে এতটাই ডুবে ছিলাম যে চাইছিলাম না বইটা শেষ হোক। ২. এরকম শক্তিশালী একজন ম্যাজিশিয়ানের মৃত্যুটা খুব সহজ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।
পুরো বইটা সবদিক থেকে এতই চমৎকার যে নেগেটিভ পয়েন্টগুলা বলতে গেলে কোন পয়েন্টই না। লেখকের কাছ থেকে ভবিষ্যতে 'আর্কন', 'অক্টারিন' এর মত এরকম ডিফ্রেন্ট কিছু আশা করছি।
This entire review has been hidden because of spoilers.
মুমিনুল ইসলাম মুমিন। মাদ্রাস থেকে পাস করে, ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে সে। মাস্টার্স করার আগে কিছুটা টাকা পয়সা জমানোর জন্যে একটা স্কুলে চাকুরি নেয় সে। সব কিছু ভালই কাটছিল একটা সময় পর্যন্ত। ছক কাটা রুটিনের মাঝে চলত মুমিন। তার রুটিনে গোলমাল বাধে একদিন যখন তার স্কুলের মালিকের বাসায় ডাক পড়ে।
মালিকের মেয়ে অসুস্থ। তাকে সুস্থ করতে হবে!!! আকাশ থেকে পড়ে মুমিন। সে কিই বা করতে পারে এই বিষয়ে। তখন তাকে জানানো হয় তার জ্বিন তাড়াতে পারার ক্ষমতার কথা অজানা নেই তাদের কাছে। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্বিন তাড়ানোর। কিন্তু কাজ হাতে নিয়ে অতাল সমুদ্রে পড়ার মতন অবস্থা হয় মুমিনের। কোন কিছুই কাজ করছে না ম্যাডামের মেয়ে, আয়েশার উপরে।
এমন সময়ে তার সাথে পরিচয় হয় অ্যানিমার। যার মাধ্যমে সমাজের থেকে লুকানো অন্য একটা দিকের পরিচয় হয় মুমিনের। জাদুবিদ্যা। অ্যানিমাকে সাথে নিয়ে আয়েশার চিকিৎসা করতে থাকে মুমিন। কিন্তু ঘটনা যত সহজ ভেবেছিল তার চেও বেশী ঘোরালো হয়ে উঠতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পুরো মানব জাতির প্রতিই হুমকি হয়ে দাঁড়ায় ঘটনাটা। কি হয়েছিল আসলে? তারা কি আসলেও পারবে আয়েশাকে সুস্থ করে তুলতে?
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ হরর বরাবরই আমাকে টানে। কেন আল্লাহ ভাল জানেন। (ভূতে অবিশ্বাসী আমি) যদিও হরর উপন্যাসের তুলনায় হরর ছোট গল্পগুলো কেন জানি বেশীই ভাল লাগে। দেশীও হরর অবশ্যই। বিদেশী হরর কেমন যেন মেকি মেকি লাগে। ভয় পাবার কিংবা গাঁ শিরশিরে অনুভূতির তুলনায় বরং বিরক্তি চলে আসে সহজে।
এই বই পড়ার আগেই অনেক কথা কানে এসেছিল এই বই নিয়ে। বই গ্রুপ গুলোতে রিভিউ পড়ে কী স্পয়লারও খেয়ে ফেলেছিলাম। যখন জানলাম হরর থ্রিলার স্বভাবতই হতাশই হয়েছিলাম। হতাশা কাটতে শুরু করে বই পড়া শুরু করার পর থেকে। যখন থেকে আমার প্রিয় দেশীয় পটভূমিতে অনেকটা বাস্তবতার আলোকে জ্বিনদের(এইটা বিশ্বাস করি) নিয়ে কাহিনী এগিয়েছে।
সম্পূর্ন অন্য ধরনের একটা প্লট। মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে শেষ করলাম।
এক কথায় দুর্দান্ত লাগলো। পুরটা সময় এক ধরনের মোহের মাঝে ছিলাম। ইসলামের কিছু ঘটনার সাথে জাদুবিদ্যার মিশেলে অদ্ভুত এক কাহিনীর জন্ম দিয়েছেন লেখক। মোহ কাটার পর বিস্তারিত রিভিউ দেব।
তানজীম রহমানের আরেকটা মাস্টারপিস। "অক্টরিন" আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। আশা করি বইটা পড়ে কেউ হতাশ হবেন না। পয়সা উসুল। বইয়ের শুরুতে বইটা পড়ার একটা টাইম শিডিউল দেওয়া আছে সেটা ভাল লেগেছে। বইটা পড়ার সময় সবাই চেষ্টা করবেন টাইম শিডিউল অনুযায়ী পড়ার। পড়লেই বুঝবেন লেখক টাইম শিডিউল টা শুধু শুধু দেয় নি।