আমি ওয়েষ্টার্ণ পড়ি না বহুদিন। বেনন, ওসমান আর জেসাপ এর আমলে পড়তাম। এরপর চার-পাঁচ বছর পড়া হয় নাই। মাঝখানে কয়েকটা পড়তে গিয়ে বুঝলাম-পাঠকের মৃত্যু ঘটিয়াছে। অনেকদিন পর রক্ষক বইটাতে পরিচিতি সব নতুন লেখকের নাম দেখে এক কপি বাগিয়ে ফেলেছিলাম। এতদিনে পড়া শেষ হলো। কাজের কথায় আসি। প্রথম তিনটা গল্প-বেড়া, কাউবয় আর একশ রাইফেল নিয়ে কথা বলার দুঃসাহস দেখাব না। আমার মনে হয় না রওশন জামিল, কাজী মাহবুব হোসেন বা কাজী মায়মুর হোসেনের সমমানের ওয়েষ্টার্ণ লেখক এখন আছেন। এই সংকলনে মায়মুরদার ওয়েষ্টার্ণ আর আরমান ভাইয়ের ওয়েষ্টার্ণ থাকলে আরও জমত, বাট একশো রাইফেলের মতো চাইল্ডহুড ফেভারিট থাকায় সেই শূণ্যতা পূরণ হয়ে গিয়েছে। ৪। গানম্যান-তারক রায়ঃ নাইসলি কন্সট্রাক্টেড স্টোরি লাইন। বোঝা যাচ্ছিল শেষে এমনই কিছু হবে। হয়েছেও তাই, কিন্তু তারপরও চমকটা ছিল। সুন্দর অনুবাদ, ভালো গল্প। সাসপেন্স ছিল, কী হয় কী হয় ভাবটাও ছিল ভালোমতোই। ৪.৫/৫ ৫। পানির দর-সৈয়দ অনির্বাণ ভাইজানের লেখার ধরনের আমি ভক্ত। কিন্তু এই গল্পটা প্রথমবার যখন রপতে পড়ি, তখনও কেন জানি ভালো লাগে নাই। এখনোও লাগল না। একটু বেশি...সহজ পরিস্থিতি। নামের দ্ব্যর্থবোধক অর্থ ছাড়া আসলে আর কিছুই ভালো লাগে নাই। ২.৫/৫ ৬। বাউন্ট হান্টার্স-প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার গল্পের বেসিসটাও কাকতালীয় মনে হয়েছে, এন্ডিংটাও যুতসই হয় নাই। মাঝখানে অনেকগুলো অসামঞ্জস্যতা আছে। আমেরিকানরা সাধারণত 'মিটার' ব্যবহার করে না, ফুট ব্যবহার করে; ত্রিশ মিটার বা একশ ফুট রাইফেলের জন্য কোনও দূরত্বই না; একই সময়ে দুই দিক থেকে দেহের দুই জায়গায় বুলেট প্রবেশ করাতে হলে একেবারে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ পর্যন্ত মিলে যেতে হবে; (স্পয়লার) বাউন্টি দেবার মালিক শুধু মেয়র হবার কথা না, সে দিতে না চাইলে কাউন্টি শেরিফ বা গভর্নরের কাছে যাওয়া যেত; পনের হাজার ডলার অনেক টাকা, এতটাকা যার বাউন্টি তারে ধরতে রেঞ্জার বা ইউ এস মার্শাল পাঠাবার কথা। ইত্যাদি ১.৫/৫ ৭।রক্ষক-ইমতিয়াজ আজাদ অনেকটা গ্যানম্যানের মতো গল্প। তবে এখানে সাসপেন্স কম, মানবিক দিকটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড কাহিনী হলেও বেশ ইমোশনাল। ঝরঝরে লেখনি। ৪.৫/৫ ৮। মিনেসোটা ফটোগ্রাফি-মুহাম্মাদ তানভীর মৌসুম রম্য গল্প, কিন্তু কেন জানি ফুটে ওঠেনি। চলনসই। মৌসুমের কাছে আরও বেশি কিছু আশা করি ২.৫/৫ ৯। সাজা-জুনায়েদ কবীর সংকলনের শেষ বড় গল্প। এই লেখকের লেখা আগে পড়েছি বলে মনে পড়ছে না। দারুণ অনুবাদ। তবে কাহিনী শেষের দিকে এসে একটু দ্রুত লয়ে এগিয়েছে। মূল চরিত্রগুলো বাদে অন্যগুলো ঠিক ডেভেলপ হবার সুযোগ পায়নি। অথচ শেষের দিকে বেশ কিছু চরিত্র ছিল, যেগুলো আরেকটু স্পটলাইটের দাবীদার। যাই হোক, ছোট পরিসরে যা এসেছে তা-ও মন্দ না। অনুবাদ ঝরঝরে। ৪.৫/৫
'রক্ষক' বেশ মোটাতাজা বই, ৭টি গল্প ও ২টি উপন্যাসিকা আছে। কাজী মাহবুব হোসেনের 'বেড়া' গল্পে আধা-মেক্সিকান রক্তের পরিশ্রমী র্যাঞ্চার পল সিরেনোকে বর্ণবাদ ও ঈর্ষার মোকাবিলা করতে হয়। 'কাউবয়' গল্পটাও খারাপ নয়। 'পানির দর' গল্পে দেখা যায়, স্বামীহত্যার প্রতিশোধ নিতে পশ্চিমে ফিরে এসেছে নরিন পিটার্স। এই কাজের জন্য দুজন লোককে ভাড়া করে নরিন, যারা পরষ্পর প্রতিদ্বন্দ্বী বা চিরশত্রু-- একজন আউটল, একজন বাউন্টি হান্টার। পানির দর অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হওয়ার দাবি রাখে। 'একশো রাইফেল' সম্ভবত আগে বই হিসেবে ছাপা হয়েছিল, কিন্তু বইটা দুষ্প্রাপ্য। জন রাইটার নামে একজন পরিবার-অন্তপ্রাণ সাধারণ সেটলার আমেরিকান আর্মি ও অ্যাপাচিদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। অন্যরকম একটা কাহিনি। 'মিনেসোটা ফটোগ্রাফি' একজন ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার, এক আউটলর মৃতদেহ, এবং কয়েকজন খ্যাতিলোভী লম্যানকে কেন্দ্র করে মজার গল্প, মানানসই ঝরঝরে হাস্যরসাত্মক ভাষায় লেখা হয়েছে। 'গানম্যান' গল্পে কর্তব্যপরায়ণ মার্শাল জিম ফর্বস বাধ্য হয় পিস্তলবাজ জ্যাক মোহাভের মুখোমুখি হতে। গল্পটা মাঝামাঝি। 'বাউন্টি হান্টার্স' গল্পটার মূল আইডিয়া খারাপ নয়, কিন্তু ঘটনা প্রায় পুরোটাই বর্ণনাধর্মী, পাঠকের চোখের সামনে ঘটছে না; তাই তেমন উপভোগ্য হতে পারেনি। 'রক্ষক' গল্পের প্লট অনেকটাই 'গানম্যান'-এর মত। এন্ডিংটা মোটামুটি ভালো ছিল। 'সাজা' প্রায় একটা উপন্যাসই, সংকলনের ১১০ পাতার মত জুড়ে আছে। দুই প্রভাবশালী র্যাঞ্চারের ষড়যন্ত্রে সপরিবারে একজন ক্ষুদ্র র্যাঞ্চার নিহত হওয়ার পনেরো বছর সান সিটিতে হাজির হয় ন্যাশ নামে এক রহস্যময় লোক। গল্পটা মাঝামাঝি। হ্যারি মার্টিন নিজের অতীতের কথা গড়্গড় ফাঁস করে দিচ্ছে এটা বেখাপ্পা লেগেছে।
আরও একটি ওয়েস্টার্ন যাত্রা সমাপ্ত হলো। মজার ব্যাপার হচ্ছে বইতে আমারও একটি গল্প রয়েছে! সাধারণত নিজের বইয়ের ভালমন্দ নিয়ে বিশেষ কথা বলি না। এটা নিয়েও বেশি কিছু বলব না। অল্প কথায় শেষ করব।
রক্ষক বইটি মূলত ২ টি উপন্যাস/উপন্যাসিকা এবং একগুচ্ছ গল্পের সমাহার। যার মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে কাউবয় ও বেড়া গল্পদুটি। দুটিই সেবার ওয়েস্টার্ন স্বর্ণযুগের লেখক কাজী মাহাবুব হোসেনের রচনা। এছাড়া রক্ষক গল্পটির সমাপ্তি ভালোই লেগেছে।
বইয়ের উপন্যাস/উপন্যাসিকা দুটি হচ্ছে, একশো রাইফেল, সাজা।
ওয়েস্টার্ন ধারার পাঠকরা বইটি পড়ে দেখতে পারেন। ভাল সময় কাটবে আশাকরি। :)
ছোটগল্পের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে "বেড়া", "মিনেসোটা ফটোগ্রাফি", আর বড় কাহিনি দুইটার মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে "একশো রাইফেল"; বইয়ের শেষ কাহিনি "সাজা"-ও অসম্ভব ভাল লেগেছে...
একটা উপন্যাস (সাজা - জুনায়েদ কবির, ১১২ পৃষ্ঠা), দুটো উপন্যাসিকা (একশো রাইফেল - কাজী শাহনূর হোসেন, ৭০ পৃষ্ঠা, বেড়া - কাজী মাহবুব হোসেন - ৪৬ পৃষ্ঠা) এবং ছোট-বড় আরও হাফ ডজন ওয়েস্টার্ন গল্প - সব একটা বইয়ের মধ্যে! আমার সবচেয়ে প্রিয় ওয়েস্টার্ন লেখক, বাংলা ভাষায় ওয়েস্টার্ন ঘরানার প্রবর্তক কাজী মাহবুব হোসেনের দুটো গল্পই দুর্দান্ত লেগেছে, বিশেষ করে 'বেড়া' পড়ে পূর্নাংগ উপন্যাসের স্বাদ পেয়েছি। আসলে সবগুলোই লেখাই ছিল কম-বেশি উপভোগ্য। লেখক ইসমাইল আরমান সম্পাদিত আগের ওয়েস্টার্ন গল্প সংকলনগুলোর মতই অনবদ্য হয়েছে এটাও। তবে এই সংকলনটা বিশেষ���াবে ভাল লাগার কারণ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত এবং জনপ্রিয় লেখকের পাশাপাশি এক ঝাঁক তরুন, সম্ভাবনাময় ওয়েস্টার্ন লেখকের লেখা স্থান পেয়েছে এটায়। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের প্রতেকেরই পুর্নাংগ ওয়েস্টার্ন উপন্যাস প্রকাশিত হবে সেবা থেকে।