শান্ত, নিস্তব্ধ এবং কোলাহলহীন একটি অঞ্চল, ওটিয়োসাস, যার সৃষ্টি হয়েছে কোনো একজন ফ্যান্টাসি লেখকের লেখনী শক্তির মাধ্যমে।
চরিত্রগুলোর শান্ত নদীর ঢেউয়ের মত বয়ে চলা জীবন পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায় যখন তারা জানতে পারে যে তাদের লেখকের মাথায় নতুন বুদ্ধির উদয় হয়েছে; লোকটা তার গল্পে একটি দানব সৃষ্টি করতে চায়, এবং সেটা যেন তেন দানব নয়—একটি ভয়ঙ্কর, হিংস্র এবং অত্যাচারী ড্রাগন।
অজানা-আশংকায় কেঁপে উঠল পুরো ওটিয়োসাস। চরিত্রগুলো বুঝতে পারলো যে বইয়ের কাহিনীকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে লেখক অবশ্যই ড্রাগনটার মাধ্যমে অর্ধেক ওটিয়োসাসকেই অগ্নি-স্রোতের নিচে ডুবিয়ে ছাড়বেন।
লেখকের এ হঠকারি সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেয় না—স্বাভাবিকভাবেই।
তারা খুব ভয়ংকর এক সিদ্ধান্ত নিলো—লেখককে হত্যা করবে ওরা...
Asraful Shumon is a bangladeshi fantasy author and editor. He is from the port city of Chittagong, currently living in the same city. Developing a story and drawing it in papers through ink and blot has been his passion since 2014. His early career started online, and after writing several novella, novelette and short stories, he decided to take his passion seriously. His debut novel 'Dragomir' was published in January, 2016, which was a high/epic fantasy mixed with metafictional technique. His second epic fantasy novel 'Kuashia: Spellmaker er onushondhan', the first book of 'Kuashia' pentalogy, was published in 2018. His other two series's are 'Aleya', set in bangladeshi mythological settings and 'mother nature', set in both bangladeshi and world mythological settings.
Besides writing, he likes to spend time reading books, listening to music, humming self-made tunes, watching movies and taking tours.
“হেলো ব্রাদার ।” ‘বাংলায় ফ্যান্টাসিও সম্ভব ?’ ‘হ্যাঁ, তাই তো দেখছি।‘ ‘বাহ, বাহ।‘ - এমন অনুভূতি নিয়েই বাংলার সর্বপ্রথম মৌলিক ফ্যান্টাসি বই ড্রাগোমির পড়া শুরু করেছি।
কাহিনীসংক্ষেপঃ এলিসিয়া উইলোবির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাদের দুই কাজিনের খুনসুটি দিয়ে কাহিনীর শুরু। বাসস্থান – ওটিয়োসাস; একজন লেখকের লেখা বইয়ের ভেতরে তৈরী হওয়া একটা জগত যেখানে দুঃখের লেশমাত্রও নেই। দুঃখ কি জিনিস সে সম্পর্কেই তাদের কারো কোন ধারনা ছিল না। কিন্তু এমন প্লেইন লিভিং’এর কোন বিশেষত্ব নেই। তাই লেখক আবির্ভাব ঘটিয়েছেন এক ড্রাগনের। ড্রাগোমির । ডার্ক ওটিয়োসাস থেকে উঠে আসা ড্রাগোমির উইজার্ডদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার চালিয়ে স্বর্ণাহরণ করিয়ে নেয়। কিন্তু এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা লেখকের কাছে পৌঁছে তাদের ওপর এমন অত্যাচার বন্ধ করার অনুরোধ করবে; আর তা যদি না হয় তবে তারা লেখককেই খুন করবে।
পরীক্ষামূলক কাজঃ আমি “ড্রাগোমির” পড়েছি বেশ কিছু দিন সময় নিয়ে। এর ভেতর বইটার অভিনবত্ব আর সত্যিই কেমন তা বিচার করবার জন্য ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের ৩য় এবং চতুর্থ বইয়ের বাংলা অনুবাদ পড়া অব্যাহত রেখেছি (যেহেতু হুট করে ইংরেজি বাংলার তফাত করতে সমস্যা হবে, নেহাত তা-ই)। তুলনামূলক হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মতো যোগ্যতা বইটার আছে।
ফলাফলঃ “ড্রাগোমির”কে যদি ইংরেজি ট্রান্সলেট করা হয় তবে এটা বিশ্ব মহলে বিপুল পরিমাণ সাড়া ফেলার যোগ্য। এটা পাঠকপ্রিয়তা আর পপুলারিটি ডিজারভ করে। ( উল্লেখ্যঃ চিন্তা-ভাবনা না করে এ কথাগুলো বলিনি। যদি তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে প্রতিটি অক্ষর মিলিয়ে নেবেন। )
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ ড্রাগোমির পড়া শুরু করতেই এলিসিয়া আর বেনজামিনের কাছে বিরক্ত লাগা ক্যারেক্টারগুলো আমারো বিরক্ত লাগা শুরু করেছে। সেই- বিরক্তিকর কবি আংকেল ইভান, অতিরিক্ত ভাব মারা পল জোডিয়্যাক; এমনকি বেনজামিনের সাথে এলিসিয়া, আর এলিসিয়ার সাথে বেনজামিনের ফাজলামির টাইমে ওদেরকেও চাটি মারার ইচ্ছে হচ্ছিল। টুইস্টটা রিয়েলি হাই ক্লাস ছিল। আর, এমন প্লট মাথায় আনার জন্য আমাকে আরো দশ বছর আজাইরা বসে থেকে কাহিনী গুছানো লাগবে। যখন শেষের দিকে এগুচ্ছিলাম তখনই মাথা কেমন আউলিয়ে যাচ্ছিল।
**স্পয়লার অ্যালার্ট**
( প্রথম ১৫/২০ পেইজের মধ্যেই তাদের ভালো সময়টা শেষ হয়ে গেছে। যত আরো পড়ছিলাম ততই মনে হচ্ছিল এই এখনই তো শেষ হয়ে যাবে। তাহলে লেখক বাকি আরো এতোগুলো পেইজ খরচ করে কিইবা লিখেছেন। হুদাই এতো বেশি টানাহ্যাঁচড়া করছেন কেন ! ) কিন্তু না, এই টানাটানির মানে বুঝলাম যখন বইটা পড়া শেষ হয়ে গেল। তাই … সত্যিই - লেখক আসলে হুদাই টানেননি।
যা হোক, বইয়ের কাহিনীটা নিয়ে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। তাই তার জন্য ★★★★তারা। আর, এই পাঁচ নম্বর ★ তারাটা হলো সুমন ভাইয়ার নতুন জনরায় লেখালেখির স্টারটিংয়ের জন্য শুভকামনা ।
মেটাফিকশন কি জানার জন্য বইটা পড়া। যেটুকু বুঝলাম সোজা বাংলায় গল্পের মাঝে যখন লেখক আপনাকে জোর করে গল্প থেকে টেনে বারবার মনে করিয়ে দিবেন যে এটা গল্প, সেটাই মেটাফিকশন। আর এই গল্পে লেখক আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সেটা হল গল্পের চরিত্ররা জানে তারা গল্পের মাঝে আছে। এটা থেকে তৈরি হয়েছে এক ফ্যান্টাসি জগতের। গল্পের থিমটা মোটামুটি আকর্ষণীয়। তবে এটা লেখকের লেখক জীবনের প্রথম দিকের বলে হয়তো অনেক কিছুই একটু গোলমেলে ছিল। ফ্যান্টাসি হাতে গোনা কয়েকটা পড়েছি। কাজেই জানিনা বাকিগুলো কেমন। কিন্তু গল্পের অনেক স্পেল, প্রাণির বিবরণ অনেক কিছুই আমার হ্যারি পটার আর লর্ড অব দ্যা রিংস এর মত মনে হয়েছে। শুরুতে কিছু পরিচিত বিদেশি শব্দের বানান ভিন্ন হওয়াতে বিরক্ত লেগেছে। যেমন বেবিসিটিং পড়ে অভ্যস্ত, কিন্তু বইতে লেখা ব্যাবিসিটিং সব জায়গায়।
শেষে এসে একবারে এত এত মিথ ঢেলে না দিয়ে আরো আগে থেকে দিলে ব্যাপারটা বেশি বোধগম্য হত।গল্পের কাহিনীটা ভাল ছিল। তবে আরো অনেক ভাল করা যেত।
প্রচ্ছদঃ বইটার এই মেটাফিকশন আর ফ্ল্যাপ এর লেখা পড়েই কেনা। কিন্তু এতদিন হাতে নিয়েও রেখে দিয়েছি প্রচ্ছদটা দেখে। প্রচ্ছদটা দেখে অতিরিক্তই চাইল্ডিশ মনে হয়েছে।
শুরুতে একটা কথা বলে রাখি, বাংলা সাহিত্যে এমন গল্প এর আগে পড়িনি। একবারে সম্পুর্ণ নতুন কনসেপ্ট এটা। এমন একটা গল্প পড়ছি, যার চরিত্রগুলো জীবন্ত, যারা জানে যে তারা বইয়ের চরিত্র। এবং এই ব্যাপারটা, এটাকেই বলে ম্যাটাফিকশান। ভূমিকাতে লেখকের লেখা পড়ে এটাই বুঝলাম। ভেরি-ভেরি ইন্টারেস্টিং। বইয়ের কাহিনী খুবই গতিময়, শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত একটুও থেমে থাকার সুযোগ দেয়নি। একটানেই হয়েছে সব। প্রতি চ্যাপ্টার শেষের দিকে এলে ভাবি এবার একটু রেস্ট নেব। কিন্তু তা আর সম্ভব হয় না, কারণ প্রত্যেক চ্যাপ্টারের শেষের দিকে এসে এমন কিছু হয় যাতে পরের চ্যাপ্টারটা পড়তেই হয়।
বইয়ের বর্ণনাভঙ্গিটা খুবই ভালো। সেই সাথে আছে অসাধারণ ডিটেইলিং। প্রতিটা সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয়ের উপর নজর দিয়ে লেখা। বইটা পড়তে গিয়ে আমার মনে হচ্ছিল যেন হলিউড মুভি দেখছি। যেন চোখের সামনেই সবকিছু হতে দেখছি, যেন আমি নিজেই বইয়ের একটি চরিত্র হয়ে গিয়েছি।
চরিত্রের দিকে আসি এবার। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে আনিকা জুলফিকারকে। যদিও শুরুতে বোঝা যাবে না, কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে ওকে ভালো লাগতে বাধ্য। ওর অসাধারণ ফাইটিং স্কিল আর বুদ্ধিমত্তা আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছিল পুরোটা সময়। ওটিয়োসাস গভর্নর প্রধান এবং স্পেশাল ওয়ার্লক ফোর্স এর সাবেক ল্যাফটেনেন্টকে ভালো না লেগে উপায়ই নেই।
এছাড়া আংকেল ইভান খুবই মজার একজন চরিত্র। তার কাজকর্ম যেমন মানুষদের হাসাতে বাধ্য, তেমন তার ম্যাজিকেল ক্ষমতার মাধ্যমে এটাও প্রকাশ হয় যে সম্ভবত ওটিয়োসাসের সেরা উইজার্ড তিনিই। এছাড়া আছে বেনজামিন আর এলিসিয়া, দুই ঝগড়াটে কাজিন। ওদের ঝগড়া আমার মনে বারবার আফসোস জাগাচ্ছিল, ঈশ, যদি আমার ঝগড়াটে কাজিনটা সবসময় আমার সাথেই থাকতো। খুব মিস করেছি ঝগড়াটে ভাইটাকে তখন।
ভিলেইনদের ভিতর অ্যালকাইরিগুলোকে অনেক কিউট লেগেছে। যথেষ্ট ফানি ধরনের ডিমন। ওদের কথা-বার্তা আর কাজকর্মই ওদের ভালো লাগাতে বাধ্য।
এবার আসি যুদ্ধের দিকে। গল্পের ফাইটগুলো যথেষ্ট এক্সাইটিং আর রোমাঞ্চকর। প্রতিটা ফাইটেই ম্যাজিকেল কোনো সলিউশান থাকে যেটা শুরুতে মনে হয় একরকম হবে, কিন্তু পরে বোঝা যায় যে যা ভেবেছিলাম তার ধারে কাছেও নেই। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে আনিকার ফাইটগুলো। মেয়েটা আসলেই অসাম। তবে ক্রাপনিকের সাথে অ্যালিসিয়ার যুদ্ধটা পড়ে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। ক্রাপনিকটা আসলেই ভয়ংকর।
আর বইয়ের শেষে একটা গ্লোসারি আছে দেখলাম। বাংলাদেশি বইগুলাতে এটা দেখা যায় না। বিদেশী ফ্যান্টাসিগুলোতে এটা থাকে। এই ব্যাপারটাও ভালো লেগেছে। গ্লোসারিতে বইয়ের বিভিন্ন ক্রিয়েচার আর চরিত্র সম্পর��কে বিস্তারিত জানা যায়। যারা ফ্যান্টাসির ডাই হার্ড ফ্যান, তারা অবশ্যই পড়তে পারেন এটা। এ দেশে হ্যারি পটার আর পার্সি জ্যাকসনের অসংখ্য ফ্যান আছে, তাদের এটা ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। এছাড়া, যারা প্রচলিত ধাঁচের গল্প পড়তে পড়তে বিরক্ত, পরিবর্তন চান, তারাও পড়তে পারেন এটা।
অনেক দিন পরে একটি বই পড়ে এতটা মজা আর অ্যাডভেঞ্চারের সাধ পেলাম। এই ধরনের পিওর ফ্যান্টাসি উপন্যাস আমরা আরো পাবো লেখকের কাছ থেকে, সেই আশায় বুক বাঁধলাম।
মেটাফিকশন শব্দটার সাথে আমি পরিচিত নই। ফ্যান্টাসি পছন্দ করলেও এর অলিগলিতে আমার পদচারনা ছিল না। সুমন ভাইয়ের লেখার কল্যাণে এখন অনেক সাব-জনরাই এখন সুপরিচিত। আর উনার কুয়াশিয়া পড়ার পর থেকেই প্রথম লেখা ড্রাগোমির পড়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হার্ডকপি কোথাও না পেয়ে অগত্যা পিডিএফের শরণাপন্ন হলাম। বলাই বাহুল্য যে দেশি বইয়ের পিডিএফ আমি তেমন একটা পড়ি না। কোনভাবে পড়া হয়ে গেলেও সেটা জাহির করি না😁।
যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসি, মেটাফিকশন এটাই আমার প্রথম। প্রথম থেকেই একটা মজা কাজ করছিল পড়তে। ঠিক বইয়ের ভাষায় মানে সুন্দর মার্জিত ও প্রমিত বাংলা ভাষায় লেখা না কিন্তু আমার কেন জানি এভাবেই পড়তে ভালো লাগে। একটা পরিচিত, নিজের বা কাছের কিছু মনে হয়। উচ্চমাত্রার পাঠকের হয়ত এরকম ভালো লাগে না। যেমন হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখি অনেকেরই ভাষাগত কারনে ভালো লাগে না, আমার বরং ভাষার জন্যই অসম্ভব পছন্দ হয়েছে লেখাটা। একটা ভিন্নমাত্রার উপন্যাস আগুনপাখি।
ড্রাগোমির ফ্যান্টাসিরও অনেক জটিল মাত্রায় লেখা একটা উপন্যাস। যেখানে ম্যাজিকের (জাদু) নানা উপকরণ আছে, আছে বিভিন্ন রকম জাদু জগতের প্রাণী, সবচেয়ে বড় কথা সেখানে আছে ভয়ানক অগ্রি-উদ্গিরণকারী সুপ্রাচীন ড্রাগন। সবকিছু ছাপিয়ে বারবার শুধু বইয়ের লেখকের হটকারী সিদ্ধান্ত সামনে আসতে থাকে যার বলি হতে থাকে ওটিয়োসাসবাসী। কিন্তু তারা বিনাযুদ্ধে তারা হার মেনে নেবে না। তাই তারা প্রস্তুত হতে থাকে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে।।।
সবশেষে লেখকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি পিডিএফ পড়ার জন্য, আর তারাতারি এটা রিপ্রিন্ট করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া ড্রাগোমির মেটাফিকশন ফ্যান্টাসি আশরাফুল সুমন আদী প্রকাশন পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৬৩ গায়ের মূল্যঃ ২৬০ টাকা . ড্রাগোমির খুব সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম পরিপূর্ণ মেটাফিকশন। বাংলা সাহিত্যে মেটাফিকশনে একটু আধটু ছোঁয়া দেখা গেলেও পরিপূর্ণতা এর আগে কখনো দেখিনি। সে হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এই ড্রাগোমির। মেটাফিকশন কি সেটা বলি। মেটাফিকশন হচ্ছে গল্পের মধ্যে গল্প। অর্থাৎ আপনি যে গল্পটা পড়ছেন সেগুলোর চরিত্র আরেকটা গল্পের অংশ এবং তারা নিজেরাও জানে যে তারা বইয়ের জগতে আবদ্ধ। সত্যি বলতে মেটাফিকশন ধারণাটা আরও বিস্তৃত। তবে আপাতত এতটুকু জানা থাকলেই চলবে। এবার কাহিনী সংক্ষেপে আসা যাক। শান্ত, সুন্দর, নির্জন স্বর্গরাজ্য ওটিয়োসাস। যার সৃষ্টি একজন লেখকেল কল্পণাশক্তির মাধ্যমে। এ অঞ্চলের জীবনযাত্রা খুব সরল এবং তাতে দুঃখের কোন রেশ নেই। হঠাৎই একদিন চরিত্ররা জানতে পারল লেখকের ভয়ংকর একটা পরিকল্পণার কথা। কাহিনীকে আকর্ষনীয় করার জন্য তিনি সৃষ্টি করবেন একটা ড্রাগন, যেটা কিনা ধ্বংস করে দিবে অর্ধেক ওটিয়োযাস। চরিত্ররা মেনে নিত পারল না ব্যাপারটা। ভয়ংকর একটা সিদ্ধান্ত নিল তারা- লেখককে হত্যা করবে। বইয়ের বেশ কিছু চমৎকার দিক ছিল। সবচেয়ে দুর্দান্ত এর প্লটটা। পুরো ব্যতিক্রমধর্মী। শেষের দিকে কাহিনীর মেলবন্ধনটা শরীরে শিহরণ জাগাতে বাধ্য। কাহিনী বেশ দ্রুতগতির। একটা পর্যায়ে এসে বই থেকে চোখ ওঠানোটা রীতিমত কষ্টকর হয়ে উঠবে। ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের কিছু মিথকে লেখক চমৎকারভাবে বইয়ের কাহিনীর সাথে মিলিয়েছেন। মিথগুলো সম্পর্কে আগ্রহ আর ধারণা থাকলে বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে সুখপাঠ্য হবে। আর ফ্যান্টাসিতে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জগৎ তৈরি এবং কল্পণাকে বহুদুর বিস্তৃত করে দেয়া। এ দুই ক্ষেত্রে লেখক মোটামুটি সফল। সব ঠিকঠাক থাকলেও প্রথম সমস্যাটা হচ্ছে ডায়লগ। ডায়লগগুলো অতিমাত্রায় কৃত্রিম। বিশেষত এলিসিয়া এবং বেনজামিন উইলোবির মধ্যকার কথোপকথনগুলো। এই চরিত্র দুটি যথেষ্ট আকর্ষনীয় হওয়া স্বত্তেও এদের সংলাপগুলোর জন্য আবেদন অনেকাংশে কমে গেছ। চরিত্রায়নে আরেকটু দক্ষতার প্রয়োজন ছিল। তবে আঙ্কেল ইভান চরিত্রটা ভাল লেগেছে। অ্যালকাইরিদের মধ্যকার কথোপকথনগুলোও হাসির উদ্রেক ঘটিয়েছে। উপন্যাসের শুরুর দিকটায় লেখনীতে বেশ জড়তা এবং দুর্বলতা চোখে লেগেছে। প্লটটা আরেকটু ভাল লেখনী ডিজার্ভ করে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে বেশির ভাগ দুর্বলতাগুলোই ১৫৪ পেজে এসে আচমকা অনেকাংশেই উধাও হয়ে গিয়েছে। এর পরের অংশে কাহিনী রকেটের গতিতে এগিয়েছে। আরেকটা দুরবলতার কথা বলছি, যদিও এটা বর্ণনার দুর্বলতায়ই পড়ে। কিছু জায়গায় কোন একটা উপাদানের দরকার যখন পড়েছে, হঠাত তখনই সেটার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন ধরা যাক একটি রুমে একশন দৃশ্যে শেকলের প্রয়োজন পড়েছে, শেকলটার কথা ঠিক তখনই বলা হয়েছে যখন সেটা বেয়ে উঠা প্রয়োজন হয়েছে। অথচ রুমের বর্ণনার সময়ই শেকলের বর্ণনাটা দিয়ে দেয়া যেত। ডিটেইল নাহয় পরেই বলা যেত। আর একটা ব্যাপার। লেখকের লেখায় পার্সি জ্যাকসন খ্যাত রিক রিয়োর্ডানের ছায়া দেখতে পেয়েছি। ব্যাপারটা ভাল নাকি খারাপ জানি না, তবে আমার খারাপ লাগে নি। একটা কথা আছে শেষ ভাল যার সব ভাল তার। এই উপন্যাসের ক্ষেত্রে কথাটা খাটে। তানজীম রহমানের আর্কন পড়ার সময় শেষ এইরকন হয়েছে। প্ররথমদিকে বিরক্ত বোধ হলেও শেষের দিকে এসে সেটা চরম উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। এই উপন্যাসের ক্ষেত্রেও শেষ্টুকুর জন্য পুরো উপন্যাসটাকেই ভালো লেগেছে। অতি জ্ঞানী বা অতি অজ্ঞ কিংবা লেখকের হেটার ছাড়া এই উপন্যাস কারো খারাপ লাগবে বলে আমার মনে হয় না। যারা ভারী ভারী বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত, তারা অনায়াসে হালকা চালের এই ফ্যান্টাসিটা পড়তে পারেন। হতাশ হবেন না। আর কঠোর ফ্যান্টাসি প্রেমিদের জন্য অবশ্যপাঠ্য বই ড্রাগোমির। খুব কম পড়া হলেও ফ্যান্টাসি নিয়ে আমার একটা অবসেশন আছে। আমি চাই দেশে ফ্যান্টাসি সাহিত্য দ্রুত এগিয়ে যাক। কিছুদিন আগে দেশি প্রেক্ষাপটের ফ্যান্টাসি দেখলাম, এখন আবার একটু অন্য ধাচেরও পেলাম। সত্যি বলতে আশরাফুক সুমন তার এই প্রথম বইটাতেই নিজস্ব একটা ধারা তৈরি করেছেন। আশা করি এরকম বহু ফ্যান্টাসি তার কাছে পাব। এত বড় এবং এলোমেলো লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার অভিজ্ঞতা খুবই কম তাই পাঠ প্রতিক্রিয়ায় অনেক ভুল আছে। সেগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
বন্ধু আশরাফুল সুমন এর লেখা প্রথম ফ্যান্টাসি উপন্যাস ‘ড্রাগোমি'র পড়া শেষ করলাম। বইটি লেখা হয়েছে ‘ম্যাটাফিকশান' জেনারে। এই ধাচের জেনারে বাংলায় লেখা প্রথম উপন্যাস সম্ভবত এ�� ‘ড্রাগোমির' বইটি। যদিও বছর পাঁচেক আগে হুমায়ুন ফরিদীর একটা নাটক দেখেছিলাম একই জেনারের। তবে বই হিসেবে সম্ভবত ‘ড্রাগোমির' প্রথম বই বাংলা সাহিত্যে। ম্যাটাফিকশান জেনার নিয়ে আমার কৌতুহল ছিল ফরিদীর নাটিকটি দেখার পর থেকেই। বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল। লেখক যেখানে তার চরিত্রের সাথে কথা বলে; চরিত্র তার পরিণতি নিয়ে লেখকের সাথে তর্ক করে। ম্যাটাফিকশান কি? লেখক জবাবে নিজেই উত্তর দিলেন ‘দ্যা স্টোরি; উইদিন এ স্টোরি' মানে গল্পের ভেতর গল্প'। সহজ ভাষায় যদি বলি, তাহলে ম্যাটাফিকশান হচ্ছে সেটাই যেখানে বই এর ভেতর একটি আলাদা জগত থাকে, যে জ��তের চরিত্রগুলোর জীবন আছে, এবং যারা নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত থাকে। ওরাও আমাদের মতই হাসে, কাঁদে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়, মন খারাপ করে, জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
ড্রাগোমির আশরাফুল সুমন( Asraful Shumon) জনরাঃ ম্যাটাফিকশান/ফ্যান্টাসি মলাটের মূল্য: ২৬০ টাকা ( আমি ১৫৬ টাকায় কিনেছি) প্রচ্ছদ: নাজিম উদ্দৌলা( Nazim Ud Daula) প্রকাশনী: আদী প্রকাশন
কাহিনী সংক্ষেপঃ শান্ত, নিস্তব্ধ এবং কোলাহলহীন একটি অঞ্চল, ওটিয়োসাস, যার সৃষ্টি হয়েছে কোনো একজন ফ্যান্টাসি লেখকের লেখনী শক্তির মাধ্যমে। চরিত্রগুলোর শান্ত নদীর ঢেউয়ের মত বয়ে চলা জীবন পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায় যখন তারা জানতে পারে যে তাদের লেখকের মাথায় নতুন বুদ্ধির উদয় হয়েছে; লোকটা তার গল্পে একটি দানব সৃষ্টি করতে চায়, এবং সেটা যেন তেন দানব নয়-একটি ভয়ঙ্কর, হিংস্র এবং অত্যাচারী ড্রাগন। অজানা-আশংকায় কেঁপে উঠল পুরো ওটিয়োসাস। চরিত্রগুলো বুঝতে পারলো যে বইয়ের কাহিনীকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে লেখক অবশ্যই ড্রাগনটার মাধ্যমে অর্ধেক ওটিয়োসাসকেই অগ্নি-স্রোতের নিচে ডুবিয়ে ছাড়বেন। লেখকের এ হঠকারি সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেয় না-স্বাভাবিকভাবেই। তারা খুব ভয়ংকর এক সিদ্ধান্ত নিলো-লেখককে হত্যা করবে ওরা...
ব্যাক্তিগত অভিমত ও রেটিং: প্লট;জেনার ও লেখনীর জন্যে ৫ এ সাড়ে ৩ দিলাম। প্রচ্ছদ এর জন্যে ৫ এ ২.৫। বইয়ের বাইন্ডিং ও কাগজ নিন্ম মানের । এই ধরনের বইয়ে কাগজ অন্তত ভালো মানের দেয়া দরকার। ৬০ আউন্সের কাগজ মান হিসেবে নিন্ম মানেরই। রেটিং পাবার অযোগ্য।
বই পড়ে অনুভুতি: ভালোই লেগেছে। লেখকের গল্প বলার স্টাইল পছন্দ হয়েছে। খুবই স্মার্টলি গল্প চালিয়ে নিয়েছেন। ডায়ালগে ইংরেজির ব্যাবহার আরেকটু রাশ টানলে আরো ভালো লাগত। তবে তা মাত্রাতিরিক্ত হয় নাই -তা বলা যায়। এই ধরনের ভিন্ন ধাচের একটি জেনারে লেখার সাহস করার জন্যে লেখক কে সাদুবাদ জানাই। বাংলা সাহিত্য শুধু কিছু নির্দ্দিষ্ট জেনারে/গন্ডিতে আঁটকে থাকবে কেন? বিভিন্ন শাখায়; ঘরণায় এটি বিস্তৃত লাভ করবে তরুণ এইসব লেখকদের হাত ধরে এই শুভ কামনা রইল।
ভিন্নমত: ড্রাগোমির যেই মাপের বই; এটি হতে পারত বাংলা সাহিত্যের একটি যুগান্তকারী বই। কিন্তু অন্যান্য তরুণ লেখকের মত ভুল প্রকাশনী বাছাইয়ের কারণে বইটি আপামর পাঠকের কাছে পৌছাতে ব্যার্থ হয়। শুধু মাত্র নির্দ্দিষ্ট কিছু বুক শপে ছাড়া প্রকাশনীটির বই সহজে অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। ফলে অন্যান্য বইয়ের মত 'অসাধারণ আলোচিত হইলেও হইতে পারত' ‘ড্রাগোমির' বইটি সেভাবে আলোচনায় আসে নাই। এই জন্যে ভালো ভাবে বই লেখার সাথে সাথে ভালো প্রকাশনী বাছাই করাও খুবই জরুরি। সর্বস্তরে বইটি পৌছাতে ব্যার্থ হয়েছে বলে এটি আলোচনার বাইরেই থেকে গেল। ব্যাপারটি দু:খজনক।
বই পিপাসু পাঠকদের সুযোগ থাকলে বইটি পড়ে দেখার পরামর্শ দিচ্ছি।
ওটিয়োসাসের সৃষ্টি হয়েছে এক ফ্যান্টাসি লেখকের মাধ্যমে। বেঞ্জামিন চরিত্রটি ইদানীং ভয়ংকর কিছু স্বপ্ন দেখছে।কিন্তু সে কাউকে বলতে পারছেনা। তার কাজিন এলিসিয়া তা টের পায়। ফ্যান্টাসি ক্যাটাগরির বই। এ ধরণের গল্পগুলোকে নাকি মেটাফিকশন বলে। অর্থাৎ গল্পের ভেতর গল্প। যাই হোক, এই প্রকৃতির গল্প পড়তে আমার ভালো লাগে না। কিছুদূর এগোনোর পর আর ঠিকভাবে পড়িওনি। পাতার পর পাতা স্কিপ করে গেছি। পড়তে ভালো লাগেনি বলে রেটিংও হয়তো ভালো দিতাম না। তাই রেটিং দিচ্ছি না।
বাংলায় মেটাফিকশন গল্প রয়েছে শুনে যে কেউ হয়ত মাথা চুলকানো শুরু করবে। অনেকে এই মেটাফিকশন কী সেটা ঠাহর করতে খানিক কাঠখড় পোড়াবে এরপরে কাহিনি শেষে এই ঘরনাতে বন্দি হতে খুব বেশি সময় নিবে না। তবে তার জন্য একাগ্রচিত্ত এবং ধৈর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা সুন্দর গল্পের গাঁথুনি প্রথম দিকে যতটা না চমকপ্রদ হবে তার চাইতে শেষের দিকটা দারুণ রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে।
বলছিলাম জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি লেখক আশরাফুল সুমনের লিখা প্রথম ফ্যান্টাসি উপন্যাস ❝ড্রাগোমির❞ সম্পর্কে। আজকের জার্নিটা চলবে লেখকের সৃষ্টি করা ‘ওটিয়োসাস’ জগতের মধ্যে দিয়ে। পাঠক যদি নতুন কিছুর স্বাদ আস্বাদন করার তীব্র ইচ্ছা থেকে থাকে তাহলে এই উপন্যাস একবার হলেও চেখে দেখা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তার জন্য নতুন করে ফ্যান্টাসি ফ্যান হওয়ার দরকার নেই। কারণ আপনার বুঝ থেকে ফ্যান্টাসি প্রত্যক মানুষের ভাবনাতে মিশে থাকে শুধু সেটাকে সঠিক সময়ে উপলব্দি করার কায়দা জানতে হয়।
এই ফ্যান্টাসি উপন্যাস নিয়ে অনেক রিভিউ বিভিন্ন গ্রুপে রয়েছে তাই ভূমিকা বেশি লম্বা করে সময় নষ্ট করবো না।
➲ আখ্যান—
শান্ত, নিস্তব্ধ এবং কোলাহলহীন একটি অঞ্চল, ওটিয়োসাস, যার সৃষ্টি হয়েছে কোনো একজন ফ্যান্টাসি লেখকের লেখনী শক্তির মাধ্যমে।
চরিত্রগুলোর শান্ত নদীর ঢেউয়ের মত বয়ে চলা জীবন পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায় যখন তারা জানতে পারে যে তাদের লেখকের মাথায় নতুন বুদ্ধির উদয় হয়েছে; লোকটা তার গল্পে একটি দানব সৃষ্টি করতে চায়, এবং সেটা যেন তেন দানব নয়—একটি ভয়ঙ্কর, হিংস্র এবং অত্যাচারী ড্রাগন।
অজানা-আশংকায় কেঁপে উঠল পুরো ওটিয়োসাস। চরিত্রগুলো বুঝতে পারলো যে বইয়ের কাহিনীকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে লেখক অবশ্যই ড্রাগনটার মাধ্যমে অর্ধেক ওটিয়োসাসকেই অগ্নি-স্রোতের নিচে ডুবিয়ে ছাড়বেন।
লেখকের এ হঠকারি সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেয় না—স্বাভাবিকভাবেই।
তারা খুব ভয়ংকর এক সিদ্ধান্ত নিলো—লেখককে হত্যা করবে ওরা...
➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
❝ড্রাগোমির❞ উপন্যাস ২৬৩ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ যেটা বইয়ের বিষয়বস্তুর জন্য অবশ্যই বেশি বলবো। গল্পটা লেখক চাইলে প্রায় চল্লিশ পৃষ্ঠার মতো কমিয়ে নিয়ে আসতে পারতেন। তাই পাঠক শুরুতে ধৈর্যহারা না হয়ে পড়ে যেতে হবে ১৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।
উপন্যাস শুরু করার পূর্বে বেশ আগ্রহী হয়ে শুরু করে বুঝতে পারছিলাম না আদতে কী পড়ছি। সত্য বলতে, ভেবেছি ঠাকুরমার ঝুলির কোন গল্প নিয়ে বসেছি। তবে থেমে থাকেনি কারণ কোন উপন্যাস একবার পড়া শুরু করলে সেটা যতই কুরুচি হোক পড়া থামিয়ে অন্য বই হাতে তুলে নেই না। যাই হোক কাজের কথা আসা যাক। উপন্যাসের কাহিনি বা ফ্যান্টাসি ভাষায় যাকে বলা ওয়ার্ল্ড বিলিন্ড সেটা মূলত শুরু হয়ে প্রায় বিরতির পরে। বিরতি বলতে বইয়ের অর্ধেক যখন শেষ এরপর থেকে কাহিনি এগিয়েছে তুমুল গতিতে।
লেখক ম্যাজিকের পূর্ণ ব্যবহার করে দেখানোর সর্বোচ্চ প্রয়াস করেছেন সেটা দেখে বাহবা! না জানিয়ে উপায় নেয়। চরিত্র প্রথম দিকে সামান্য থাকলেও এরপরে চরিত্রের বৃষ্টি সেই সাথে ডিমনিক ক্রিয়েচারের সমন্বিত মিলনমেলা কাহিনিকে করে��ে রোমাঞ্চকর। গল্পের প্রধান ভিলেন কে? আন্দাজ করতে পারছেন ভেবেছেন। তবে সর্বদা যাকে আমরা খারাপ ভেবে নিয়ে থাকি শুরুতে; শেষে দেখা যাবে সে কাহিনির সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
চরিত্রের বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। সেটা নিয়ে আলোচনা না হয় কমেন্টে দেওয়া যাবে, চাইলে এই উপন্যাসের প্রিয় চরিত্র কথা বলতে পারি। এইবার চলে আসি লেখকের পরিশ্রমের অংশ নিয়ে। দৃঢ়তা নিয়ে শুরু করা গল্পে সবই ছিল আপনি গল্পের শেষে এমন অনেক তথ্য জানতে পারবেন যেন পুরো গল্পটা ফ্ল্যাশব্যাকের মতোই চোখের সামনে পুনরায় নাচানাচি করবে। কিন্তু এতসব কিছুর পরেও কোথাও যেন কমতি থেকে গিয়েছে সেটা কোথায়?
হয়ত মনে মনে ঠিকই ধরতে পেরেছেন। লেখকের কাহিনি মন জয় করে নিলেও লিখনী বা বর্ণনাভঙ্গি সেইদিক থেকে কিছুটা ফিকে রয়ে গেল। লিখনীর সাবলীলতা কম ছিল সেই সাথে কিছু সংলাপ মনে দাগ কেটে যেতে পারেনি। হিউমার দিয়ে পূর্ণ সংলাপে একমাত্র আঙ্কেল ইভাব টপকে গেছে বাকিসব মোটামুটি লেগেছে। লেখক ম্যাজিকের টার্ম গুলো যতটা মনোযোগ সহকারে ব্যবহার করেছেন এবং ক্লাইম্যাক্সের বিষয় নিয়ে যে উদ্দীপনা দেখিয়েছেন সেদিক থেকে এত লম্বা সময় ধরে বলা শুরুটা আরেকটু শক্তপোক্ত করার দরকার ছিল। অর্থাৎ শেষটা খুব দ্রুত শেষ হয়েছে কিন্তু শুরুটা ধীরগতির হয়েও অপূর্ণ থেকে গিয়েছে। এতসব কিছু ধরছি গল্পের প্রয়োজনে।
মজা পাবেন লেখকের সৃষ্ট কিছু ক্রিয়েচার আর ডিমনের জন্য। তাদের উপস্থিতি গল্পে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে একইসাথে শক্ত কিছু চরিত্রের দেখা পাবেন যেটার রেশ খানিকটা হলেও মাথায় থাকবে। তাদের ক্ষমতা বা কাজের আলোচনা করছি না কারণ গল্পের মধ্যে এবং কাহিনির শেষে তাদের পরিচিতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই উপভোগ করে যাওয়ার জন্য শুধু পড়তে হবে।
সব মিলিয়ে একবার পড়ে নেওয়ার জন্য ভালো ফ্যান্টাসি উপন্যাস। প্রিয় চরিত্রের মধ্যে থাকবে— আঙ্কেল ইভান, আনিকা এবং ক্রাপনিক। তবে সেরা হ্যান্ড টু হ্যান্ড ব্যটেলে পছন্দ হচ্ছে এলিসিয়া ও ক্রাপনিকের যুদ্ধ। এছারা ক্লাইম্যাক্স ভালো লেগেছে। অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে মেটাফিকশন কী? মেটাফিকশন হচ্ছে গল্পের মধ্যে আরেকটা গল্প। এক গল্পের চরিত্র যখন অন্য গল্পে দিব্যি হেসে খেলা বেড়ায় আদতে সেই চরিত্র নিজেও জানে না সে কোথায় আছে বা কেন আছে!
➢ লেখক, বানান, প্রচ্ছদ—
আশরাফুল সুমনের প্রায় পাঁচটা মৌলিক ও দুইটা অনুবাদ গ্রন্থ বাজারে রয়েছে। পরিপূর্ণতা ঠিক কতটুকু অর্জন করতে পেরেছেন জানি না। বাকি গল্প গুলো পড়লে পার্থক্য ধরতে পারবো তাই বেশি আলোচনাতে না যাওয়াটা উত্তম। তবে লেখকের নিকট কৃতজ্ঞ যে উনি সাহস করে এইরকম একটা গল্পে কে উপন্যাসে রূপান্তরিত করেছে। উপন্যাসে কিছু ধাঁধা রয়েছে যেগুলো ইংলিশে লিখা, রিকুয়েস্ট করবো যদি পরবর্তীতে কোন বইতে এই ধাঁধার খেলা রাখেন তাহলে সেটাকে বাংলায় রূপ দিবেন। কারণ আমরা যখন "তিগো" পড়েছিলাম সেখানে ধাঁধা গুলো বাংলাতে স্পষ্ট করে বলার কারণে নিজেদের ব্যপারটা বুঝতে বিশেষ সুবিধা হয়েছে তাই যেহেতু মৌলিক বই লিখছেন তাই ধাঁধাগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে বাংলাতে রাখার অনুরোধ রইল।
বানানে টুকটাক অনেক ভুল চোখে লেগেছে তবে সেটা তোয়াক্কা করছি না। তবে সংলাপে মাঝেমধ্যে কিছু সমস্যা হয়েছে এইজন্য। ফ্যান্টাসি কাহিনি তাই হয়ত ইংরেজির শব্দের প্রচলন বেশি ছিল।
প্রচ্ছদ করেছেন বর্তমান সময়ের সুলেখক নাজিম উদ দৌলা। উনি কিছু বইয়ের প্রচ্ছদ পূর্বে করেছিলেন, লেখালেখির কারণে হয়ত এই প্রচ্ছদ বানানোর কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে উক্ত বইয়ের প্রচ্ছদ মোটামুটি লেগেছে।
✬ গুডরিডস— ৪.১৫/৫ [৭২] ✭ মূল বই রেটিং— ৩.২/৫
➠ বই : ড্রাগোমির | আশরাফুল সুমন ➠ জনরা : মেটাফিকশন ফ্যান্টাসি ➠ প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০১৫ ➠ প্রচ্ছদ : নাজিম উদ দৌলা ➠ প্রকাশনী : আদী প্রকাশন ➠ মুদ্রিত মূল্য : ২৬০
অপরিচিত জনরা বলে আগ্রহ ছিল বইটার প্রতি। সিনোপসিসে কাহিনী সোজাসাপ্টা মনে হয়েছিল। শেষটায় তা বলা যাবেনা। লেখকের লেখার স্টাইল+সেন্স অফ হিউমার ভাল। ক্যারেক্টারের বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা ভাল দিয়েছেন। লেখায় উপমার ব্যবহার আছে। তবে ইংরেজীর ব্যবহারটা সংযত করলে আরেকটু ভাল লাগত। কাহিনীর ডিটেইলিং একটু বেশি তবে বাচনভঙ্গী সেটা পুষিয়ে দিয়েছে। প্রচ্ছদ বেশি জমকালো করতে গিয়ে চাইল্ডিশ হয়ে গিয়েছে।
ছোট ভাইয়ের পক্ষ থেকে রেটিংটা আমি দিলাম। ছোট ভাইয়ের মতে এটার রেটিং 4/5, আমি তার সাথে আরও 1 যোগ দিলাম... কারণ ভাইকে ১০০ পৃষ্ঠার বই দিয়েও পড়ে শেষ করানো কঠিন। অথচ সে এই বইটা প্রায় 263 পৃষ্ঠা হওয়া সত্ত্বেও খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছে। আমি নিজেও সময় হলে বইটা পড়ে ফেলব। আমার ভাল লাগুক বা না লাগুক রেটিং 5-ই থাকবে। লেখকের জন্য শুভ কামনা রইল।
প্রশংসনীয় ব্যাপার লেখকের প্লট বিল্ডাপের অসাধরণ দক্ষতা। 'টুইস্ট থেকেও সাসপেন্স ইম্পর্ট্যান্ট'- লেখকের এই আদর্শের প্রতিফলন বইতে দেখেছি যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ব্যক্তিগত ভাবে, আমারো মনে হয়, টুইস্ট গল্পের একটা অংশ, তবুও, টুইস্ট থেকেও গল্পের বড় বিষয় সাসপেন্স। যে কারনে জাপানি মার্ডার মিস্ট্রি গুলোতে কে গিলটি জেনেও পুরো বই আমরা পড়ি, আমাদের ধরে রাখে। ঐ টাইপ কিছু।
It Was really an amazing journey to the magical world! <3 গল্প পেড়োনোর পর মনে হচ্ছিলো এই বুঝি ঝুলে গেলো। তবে তা বেশি সময়ের জন্য না। লেখকের অমায়িক স্টোরিটেলিং এবিলিটিতে ক্রিশে ভাব কেটেও গেছে স্লোলি। একদম শেষের দিকে কিঞ্চিত বিরক্তির উদ্রেক ঘটেছে একই জিনিস, একই এক্সপ্লেনেশান ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় বার বার প্রেজেন্টেশান করা দেখে। ঘুরে ফিরে এক কথা ভিন্নভবে বলার প্রয়োজন দেখিনি।
দুই এক জায়গায় প্রশ্নের উদয় হয়েছে, সেটাকে ল্যুপহোল বলাও যেতে পারে। তবে অমায়িক স্টোরিটেলিং এর দিকে তাকিয়ে সেসব প্লটহোল শক্ত অবস্থানে থাকেনা। তবে বই এর পেছনে লেখকের মূল দর্শন টা আমি মনে হয় ধরতে পেরেছি। রাইটিং স্পিরিট খুব ভালো লেগেছে। তবে তিয়াস মেটেনি।
এরকম একটা মাখনের মতো স্মুথ ফ্যান্টাসি উপন্যাস আমি অবশ্যই অন্যান্যদেরকে রিকমেন্ড করতে পারি। বানান ভুল খুব ই সীমিত৷
একটি মৌলিক মেটাফিকশনের অন্যতম প্রধান চরিত্রে নিজের নাম দেখতে পাওয়াটা বেশ মজার! আশরাফুল সুমন ভাই বহুদিন আগে বলেছিলেন এরকম একটি লেখা তিনি লিখছেন, তবে আজই প্রথম পিডিএফ নামিয়ে পড়া হলো। উপন্যাসের বেশ কিছু জায়গায় বিভিন্ন সিনেমার দৃশ্য মনে পড়ে গেছে। তবুও সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট, তবে ভালোমতো বুঝতে গেলে একটু সময় নিয়ে পড়তে হবে। (এ কারের জায়গায় য ফলার আধিক্য চোখে লেগেছে)
আমার পড়া প্রথম ম্যাটাফিকশান। যতটুকু জেনেছি আমাদের দেশে ম্যাটাফিকশান উপন্যাস তেমন একটা নেই। আচ্ছা, ব্যাপারটা কেমন হয়, যদি আমাদের দেশীয় একজন লেখক তার লেখার ধার দিয়ে জে.কে. রাউলিং এর কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাপারটা অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের? আমার বিশ্বাস, আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না। কেন এভাবে বলছি? ওয়েট! বিস্তারিত বলার আগে চলুন উপন্যাসের মূল কাহিনীটা জেনে নেই-
কাহিনী সংক্ষেপঃ শান্ত, নিস্তব্ধ এবং কোলাহলহীন একটি অঞ্চল, ওটিয়োসাস, যার সৃষ্টি হয়েছে কোনো একজন ফ্যান্টাসি লেখকের লেখনী শক্তির মাধ্যমে। চরিত্রগুলোর শান্ত নদীর ঢেউয়ের মত বয়ে চলা জীবন পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায় যখন তারা জানতে পারে যে তাদের লেখকের মাথা��় নতুন বুদ্ধির উদয় হয়েছে; লোকটা তার গল্পে একটি দানব সৃষ্টি করতে চায়, এবং সেটা যেন তেন দানব নয়-একটি ভয়ঙ্কর, হিংস্র এবং অত্যাচারী ড্রাগন! অজানা-আশংকায় কেঁপে উঠল পুরো ওটিয়োসাস। চরিত্রগুলো বুঝতে পারলো যে বইয়ের কাহিনীকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে লেখক অবশ্যই ড্রাগনটার মাধ্যমে অর্ধেক ওটিয়োসাসকেই অগ্নি-স্রোতের নিচে ডুবিয়ে ছাড়বেন। লেখকের এ হঠকারি সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেয় না-স্বাভাবিকভাবেই। তারা খুব ভয়ংকর এক সিদ্ধান্ত নিলো-লেখককে হত্যা করবে ওরা... ------- গল্পের মূল দুইটি চরিত্র বেনজামিন ও এলিসিয়া। সম্পর্কে ওরা কাজিন এবং স্বভাবতই তারা উইজার্ড। এলিসিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কাহিনী শুরু। এই চরিত্র দুইটি এত প্রাণবন্ত এবং মজার যে, প্রথম দিকেই আপনি ওদের খুনসুটি দেখে ঠোঁট প্রসারিত করবেন। একটু এগিয়ে গেলেই আপনার কপালে ভাজ পড়বে। শুধু ভাজই পড়বে না, এখান থেকে কাহিনী নতুন গতি পাবে এবং আপনি অবশ্যই নড়েচড়ে বসবেন। কারণ বেনজামিন নিজের মানসপটে একটা ভিশন দেখতে পায়, যেটাতে ভয়ংকর, আশঙ্কাজনক কিছুর আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু ভিশন দেখার মুহূর্তে ওর শারীরিক অবস্থা এমন হয়ে যায় যে, সবাই ওকে মৃগী রোগীর সাথে তুলনা করে হাসাহাসি করে। কিন্তু ওরা তখনও বুঝতে পারেনি, বেনজামিনের ভিশনের মাধ্যমে ওদের শান্ত, সুখী অঞ্চলে কী ভয়ংকর চরিত্র আসতে যাচ্ছে, একটা হিংস্র, অত্যাচারী ড্রাগন!
বেনজামিনের ভিশনের তেজ বুঝতে পারার পর এলিসিয়া সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাপারটা ওদের থেকে বয়স্ক একজনের সাথে শেয়ার করবে। বইয়ের মোট ১৪টা চ্যাপ্টারের মধ্যে দ্বিতীয় চ্যাপ্টারটা শুরু হবে 'এ হ্যাল্পিং হ্যান্ড' নামে। সেই হ্যাল্পিং হ্যান্ড হলো আংকেল ইভান নামের একজন চরিত্র, যে একাধারে রসিক, কবি, উইজার্ড, বিরক্তিকর, ওটিয়োসাস অঞ্চল সম্পর্কে অভিজ্ঞ একজন মানুষ। তার সাহায্যে ওরা তিনজন মিলে শুরু করবে অভিযান, যেটার মূল উদ্দেশ্য ওদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য গল্পের লেখক অর্থাৎ ওদের স্রষ্টাকে সেই হিংস্র ড্রাগনটাকে সৃষ্টি করতে নিষেধ করা। আর এজন্য বইয়ের পাতা থেকে বের হয়ে লেখকের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে ওদের!
চমকে উঠলেন তো? উপন্যাসের প্রতিটা অধ্যায়ে থাকবে চমক, ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই হিউমার। একবার শুরু করলে আর বেড়িয়ে আসতে পারবেন না। এক পর্যায়ে কাহিনীর গতি ত্বরান্বিত করে আরো কিছু চরিত্র সৃষ্টি হবে, তার মধ্যে আংকেল ইভান এর বন্ধু আনিকা অন্যতম। আনিকা যে কত গুনের অধিকারী, সেটা পড়া চালিয়ে গেলেই বুঝতে পারবেন। ওটিয়োসাসের দুই রাজনৈতিক দলের হেয়ালিপনার কারণে যখন ড্রাগনটা সত্যিই ওদের অঞ্চলে এসে পড়ে, তখন আরো মরিয়া হয়ে উঠে বেনজামিন, এলিসিয়া, আংকেল ইভান এবং আনিকা। ওরা সিদ্ধান্ত নেয়, ড্রাগনের চরিত্র মুছে না ফেললে, স্বয়ং লেখককেই হত্যা করবে ওরা!
লেখকের কাছে পৌছানের জন্য ওদেরকে শ্বাসরুদ্ধকর কিছু পরিস্থির মোকাবেলা করতে হয়, যেসব বাঁধা সৃষ্টিকারী চরিত্র, উপাদান সবই যেমন চতুর, হিংস্র, তেমনি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। লেখক ফ্যান্টাসি সম্পর্কে তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পুরো উপন্যাসে এত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছে যে, প্রতিটা পাতায় পাতায় তার জ্ঞানের বাহার দেখতে পাবেন আপনি। পড়তে গিয়ে কোথাও বিরক্ত তো হবেনই না, বরং ধীরে ধীরে ঘটনাগুলো আপনার ভাবনার বাইরে চলে যেতে থাকবে।
২৬৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটা পড়ার সময় লেখকের কল্পনা শক্তির প্রশংসা না করে পারবেন না। সেই সাথে দেখবেন ভাষার মুন্সিয়ানা, গল্প বলার আকর্ষনীয় ধরণ। মনে হবে আপনি মগজের মনিটরে মুভি দেখছেন। শেষ করার আগেই আপনি মনে মনে এন্ডিং সাজিয়ে ফেলতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না যে আপনি কতোটা বেকুব হতে যাচ্ছেন। ভেবে এলেন যা, তার ধারে কাছেও থাকবেন না আপনি। অনেক কথা লেখে ফেলেছি আমি, কারণ পাঠ প্রতিক্রিয়া গুছিয়ে লেখার অভ্যাস নেই। কিন্তু লেখক শুরু থেকেই যেমন আকর্ষন দিয়ে উপন্যাস চালিয়ে গিয়েছেন, শেষের দিকে এসে আকর্ষন আরো বেড়ে যাবে। এমন এন্ডিং আপনি প্রত্যাশা করেননি এবং এবারও আপনি লেখকের জ্ঞানের প্রশংসা না করে পারবেন না। আমার ইচ্ছা করছে পরিণতি জানিয়ে দেই, কারণ আমি রীতিমতো হাদারাম হয়ে গেছি
কাহিনী সংক্ষেপঃ শান্ত, নিস্তব্ধ এবং কোলাহলহীন একটি অঞ্চল, ওটিয়োসাস। যার সৃষ্টি হয়েছে কোন একজন লেখকের লেখনী শক্তির মাধ্যমে। চরিত্রগুলোর শান্ত নদীর ঢেউয়ের মত বয়ে চলা জীবন পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায় যখন তারা জানতে পারে যে তাদের লেখকের মাথায় নতুন বুদ্ধির উদয় হয়েছে; লোকটা তার গল্পে একটা দানব সৃষ্টি করতে চায়, এবং সেটা কোন যেন তেন দানব নয়- একটি ভয়ঙ্কর, হিংস্র এবং অত্যাচারী ড্রাগন। অজানা আশংকায় কেঁপে উঠল পুরো ওটিয়োসাস। চরিত্রগুলো বুঝতে পারল যে বইয়ের কাহিনীকে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য লেখক অবশ্যই ড্রাগনটার মাধ্যমে অর্ধেক ওটিয়োসাসকেই অগ্নিস্রোতের নিচে ডুবিয়ে ছাড়বেন। লেখকের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেয়না স্বাভাবিকভাবেই। তারা খুব ভয়ংকর এক সিদ্ধান্ত নিল—লেখককে হত্যা করবে তারা...............
আমার পাঠ্যাভিজ্ঞতাঃ বইটা ১৪ টা অধ্যায়ে সমাপ্ত। শুরু হয় এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। গল্পের প্রোটাগোনিস্ট বেনজামিন উইলোবির কাজিন এলিসিয়া উইলোবির জন্মদিন। এই দুইজন সম্পর্কে আর কি বলব। পাঁজির পা ঝাড়া। সারাক্ষণ খুনসুটি লেগেই আছে। দুইজনেরই সর্বদা একটাই চিন্তা, কিভাবে অন্যকে একহাত দেখে নেওয়া যায়। জন্মদিনেও তার ব্যতিক্রম হয় না। বেনজামিনের একটা দুষ্টামির শিকার হয়ে সবার সামনে নাকাল হয় এলিসিয়া। এতক্ষন বইটা বেশ হালকাভাবেই চলছিল। এরপর হঠাৎ করেই নতুন গতি লাভ করে কাহিনী। বেনজামিন একটা, কি বলা যায় একে, ভিশন দেখতে পায়। অনেকটা এক্সট্রা সেনসরি পারসেপশন (ESP) এর মত। লেখকের প্রাঞ্জল বর্ননায় এই ভিশন অংশটুকু পড়তে গিয়ে পুরো মুভি দেখার ফিল পেলাম। এরপর পর্দায় ‘হেল্পিং হ্যান্ড’ হিসেবে আগমন ঘটল এক নতুন চরিত্র আংকেল ইভানের। চরিত্র বটে!! তাকে কি বলা যায়; কবি, জাদুকর, আত্মাভিমানী, নিজেকে জাহিরকারী, বিরক্তিকর—এগুলোর ককটেল। তো যাই হোক, এনাকে দেয়া হয় বেনজামিন এর উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব। ও বলা হয়নি, ভিশন দেখার সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বেনজামিন। তো স্কুলে একবার বেনজামিন একই সমস্যায় পড়লে এলিসিয়ার পরামর্শে আংকেল ইভানের দ্বারস্থ হয় তারা। এডভেঞ্চার বিগিনস। ভ্যালি অফ নেক্সাসে এসে তারা দেখা পায় একজনের। তারপরে বিভিন্ন বুদ্ধি করে তারা পৌঁছে যায় দুঃস্বপ্নের শুরু হয় যেখানে ঠিক সেখানে। মৃত আগ্নেয়গিরি আবার হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। উগরে দেয় গরম লাভা। আর তার সাথে সেখানে জেগে ওঠে......... বুঝতেই পারছেন কে। এরপর ওটিয়োসাসে শুরু হয় ত্রাসের রাজত্ব। গভর্নর হাউসের দুই দলের কোন্দলের সাথে আমাদের আওয়ামী লীগ ও বি এন পির দ্বৈরথ এর মিল আছে অনেক। এমন শংকাজনক অবস্থায় ওদের তিনজনের সাথে যোগ দেয় আরেক জাদুকর আনিকা। এই ক্যারেক্টার টা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সত্যি বলছি, মনে হয়েছে, অনেক ভিনদেশী লোকের মাঝে এ একেবারে আমাদের পাড়ার মেয়ে। সময়ের সাথে সাথে লেখক এই ক্যারেক্টার এর ডেভেলপমেন্ট এমনভাবে করেছেন যে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও তার ছায়ার ঢাকা পড়ে গেছে বেনজামিন উইলোবি। যাই হোক, এরপর বিভিন্ন শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা পরিক্রমায় আর ব্রেনস্টর্মিং এর সাহায্যে বইয়ের কাহিনী পরিণতির দিকে এগোয়। এখানে পাঠকের জন্য অপেক্ষা করে আছে বিশাল এক টুইস্ট। যা কিনা কোনভাবেই আগে থেকে ঠাওর করা সম্ভব নয়।
লেখক, আশরাফুল সুমনের ‘মাদার ন্যাচার’ নামে আরেকটা লেখা আগে পড়া ছিল আমার। সেটাও ফ্যান্টাসি। লেখক সম্পর্কে বলতে চাই যে, তার সবচেয়ে বড় গুন হল কাহিনীর এন্ডিং। অসাধারণ!!! পাঠকের মনে উদ্ভুত প্রায় প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর উনি বিভিন্ন ডায়লগের মাধ্যমে দিয়ে দেন। শেষ করার পর মনে হয়, আরে তাই তো। এমনই তো হবার কথা। অনেকের লেখা দেখেছি, শুরু টা বেশ প্রমিজিং হলেও লাস্টে গুলিয়ে ফেলেন; একেবারে লেজে গোবরে না হলেও, কিছুটা। কিন্তু এই লেখক সবকিছুর এন্ডিং ভালমতই নামিয়েছেন। মেটাফিকশন লেখা আসলে দুরহ ব্যাপার। বেশ সফলতার সাথেই এই দুরহ কাজটা করতে পেরেছেন লেখক। ডায়লগের ব্যাপারে বলব, ভাল হয়েছে। মাঝে মাঝে কিছু চাইল্ডিশ ডায়লগ থাকলেও সেটা দৃষ্টিকটু মনে হয় নি। বরং কাহিনীর সাথে ভালমতই মানিয়ে গেছে। হিউমার টা ছিল মাপা। মোটেও ভাঁড়ামো মনে হয় নি। শেষদিকে কয়েকটা অসাধারণ ইমোশনাল ডায়লগ ছিল। কয়েকবার করে পড়েছি সেগুলো।
মোটকথা আমার জন্য একটা এডভেঞ্চারাস জার্নি ছিল বইটা। রেটিং- ৪.৫/৫ লেখককে ধন্যবাদ এমন অসাধারণ একটা মেটাফিকশন লেখার জন্য। বাংলা ফ্যান্টাসি দুরন্ত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাক এই কামনা করে শেষ করছি আমার প্যাচাল।
জনরাটাই কেমন যেন খটমটে তাই না । মেটাফিকশকন ফ্যান্টাসী। অন্তত আমার মতো পাঠকের কাছে খটমটে লাগাটাই স্বাভাবিক । একে তো ফ্যান্টাসী তার উপ্রে কি ?? হ্যাঁ মেটাফিকশন ফ্যান্টাসী। ফ্যান্টাসীর সাথে সাক্ষাত ঘটে সর্বপ্রথম রাউলিং দাদীর হ্যারি পটার সিরিজের মাধ্যমেই। জাদুর দুনিয়ার সাথে সেবারই প্রথম পরিচয় ঘটে । স্পেল , ম্যাজিকাল টার্ম শব্দ গুলো যেন রক্তে মিশে গিয়েছিল সেই সোনালী সময় গুলোতে। পুরনো সেই অনুভুতি গুলোকে আবারো ফিরিয়ে আনল এই ড্রাগোমির বইটা। হ্যারী পটার পড়ে যেমন হারিয়ে যেতাম হোগার্টসের দুনিয়াতে , হারিয়ে যেতাম হ্যারি, রন ও হারমিওনের সাথে জাদুর দুনিয়াতে। এবারও ঠিক সেভাবেই নিজেকে হারিয়েছি ড্রাগোমিরের মাঝে । বেনজামিনের সাথে এলিসিয়ার সাথে আনিকার সাথে আর যার কথা না বললেই নয় পুরো বইটি জুড়ে যার কমেডির ছোঁয়া বিদ্যমান বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আঙ্কল ইভান :v
আমি এ পর্যন্ত যত ধরনের গল্পই পড়েছি তার মাঝে এই গল্পের কনসেপ্ট একদম-ই অন্যরকম, যেখানে আসলে গল্পের চরিত্ররা একেবারে জীবন্ত ওদের ও হাসি কান্না আছে , দুঃখ আছে , আবেগ আছে । সবচেয়ে এপিক ব্যাপার হল যে ওরা তা জানে যে ওরা শুধু লেখকের খেয়ালের সৃষ্টি।
এ গল্প ওটিয়োসাস নামের এক শান্ত নিস্তব্ধ এবং কোলাহল হীন একটা অঞ্চলের গল্প যা সৃষ্টি হয়েছে এক ফ্যাণ্টাসি লেখকের লেখনীর মাধ্যমেই।
এ গল্প এলিসিয়া আর বেঞ্জামিন এই দুই কাজিনের মাঝের খুনসুটির গল্প যা আপনাকে হাসাতে বাধ্য করবে। কিন্তু ওদের মাঝের অদ্ভুদ বোঝাপড়া টাও আপনার কাছে ভালো লাগতে বাধ্য। দেখা যায় একদিকে কেউ কাউকে বিন্দু মাত্র ছাড় দিতে রাজি না আবার অপর দিকে বিপদে পাশে পাওয়া যাবে দুই কাজিনকেই।
এ গল্প আঙ্কেল ইভানের। এর নাম মনে পড়লেই কবিতার প্রতি আলাদা একটা বিতৃষ্ণা এসে যেতে বাধ্য । পুরো বইতে ফুল প্যকড কমেডি প্যাকেজ হলেন উনি। কিন্তু খালি কমেডিতেই নিজের বৈশিষ্ট্য রাখেন নি তিনি পুরো বইটা জুড়েই তিনি অসাধারণ ম্যাজিকেল দক্ষতারও পরিচয় দিয়েছেন এই গল্পে।
এ গল্প গ্লোসারী দাদুর গল্প। তার রহস্যময়তার গল্প।
ড্রাগোমির নামের এক হিংস্র ড্রাগনের গল্প। তার বাসস্থান ডার্ক ওটিয়োসাসের উপাখ্যানের গল্প।
আরো কিছু রহস্যময়তার গল্প । কিছু মাথা ঘুরিয়ে যাওয়া টুইষ্টের গল্প ।
এই গল্প টা যদি বিদেশী কোনো বেষ্ট সেলিং রাইটারের লেখনীতে লেখা হতো তবে হয়তো এত দিনে হয়তো অনেকের নেক নজরেই পড়ে যেত। দেশী রাইটারের লেখা তো তাই হয়তো তেমন আলোচনা হয়নি বইটি নিয়ে ।
বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু। – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (স্ফুলিঙ্গ)
কবিতাটা হয়তো না আনলেও পারতাম এখানে । কিন্তু কবিতাটি এখানে আনার মুল উদ্দেশ্যই হল আমাদের মাঝের সেই সব পাঠকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া যে আমাদের দেশের রাইটার রাও পারে আন্তর্জাতিক লেভেলের সাথে টেক্কা দিতে। ড্রাগোমির কে অবশ্যই আমি ইন্টার ন্যাশনাল লেভেলের ফ্যান্টাসীর কাতারে ফেলবো।
ফ্যান্টাসির বইয়ের আসল আকর্ষন হল লেখকের পারিপার্শিক অবস্থার পার্ফেক্ট ডিটেইলিং। এখানে একটু এদিক ও দিক হবার বিন্দু মাত্র সুযোগ নেই। আর লেখক তার কল্পনা শক্তির দ্বারা এই কাজ টা খুব সুন্দর ভাবেই করে দেখিয়েছেন ড্রাগোমিরে।
অসাধারণ ভাষা শৈলী , পরিপুর্ণ ডিটেইলিং আর সব গুলো চরিত্রের পার্ফেক্ট ডেভলপমেন্ট বইটাকে একেবারে অন্য লেভেলে নিয়ে গিয়েছে। আর যারা হ্যারির ফ্যান তারা হয়তো আরো ভালো ভাবেই উপভোগ করতে পারবেন বইটাকে।
আরো অনেক কিছুই বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু পাছে না আবার স্পয়লার হয়ে যায় সেই ভয়ে আর সেদিকে এগুলাম না ।
ঘটনার শুরু হয় একটি ম্যাজিকেল সিটি ওটিয়োসাস এ । যেখানের সকল সাধারন মানুষজন উইজার্ড ও উইচ । ওটিইয়োসাস মূলত একজন লেখকের লেখনী শক্তির মাধমে তৈরি । অর্থাৎ একটি বইয়ের ভিতরের জগৎ সেটা । কাহিনীর শুরু হয় বেনজামিন উইলোবি এর মাধ্যমে । সে ই প্রধান চরিত্র বইয়ের আর আমাদের উপন্যাসের নায়ক । ওটিয়োসাসের শান্ত জীবন ধ্বংস করতে লেখক উঠেপড়ে লাগেন। যার অস্তিত্ব সবার প্রথমে বুঝতে পারে বেনজামিন । সে, তার ঝগড়াটে কাজিন এলিসিয়া ও আঙ্কেল ইভানকে নিয়ে এ বিপদ থেকে ওটিয়োসাসকে উদ্ধার করতে অভিযানে নামে । একসময় সেই ভয়ংকর ড্রাগন ড্রাগোমিরের সাথে দেখা হয় ওদের। এটাই মূলত ড্রাগমিরের সংক্ষিপ্ত কাহিনী । কিন্তু এ বইয়ে কাহিনীর ভিতরেও কাহিনী আছে । ম্যাজিক আর পাজল এর মাধ্যমে বেনজামিনরা রহস্য ভেদ করতে থাকে। সাথে যোগ দেয় আঙ্কেল ইভানের বান্ধবি আনিকা ।
ব্যক্তিগত মতামত - সম্পূর্ন বইটি শেষ করার আগে আপনি বুঝবেনই না কিসের মধ্য থেকে যাবেন । আর যা কল্পনা করবেন তা মোটেও মিলবে না আপনার সাথে । পাতায় পাতায় টুইস্ট আর ম্যাজিকে ভরা । প্রকৃত লেখককে যখন খুজে পাবেন তখনও বিশ্বাস হবে না এটা হতে পারে । আরও একটা বড় টুইস্ট আছে । এটা বললাম না আর । মজা নষ্ট হবে। বইয়ে একটা গ্লোসারি আছে। যেটা দেখে অনেক ভাল লাগলো ।
হ্যারি পটারের পর এই প্রথম কোনো বই পড়লাম যেটা ফ��যান্টাসি লেভেলে হ্যারি পটারের কাছাকাছি । আমার মতে এই বইটির অনুবাদ হওয়া উচিত ইংরেজিতে যাতে করে অন্যরা জানতে পারে আমাদের দেশেও জেকে রাওলিং এর মত লেখক আছেন ।
লেখক পরিচিতি – আশরাফুল সুমন । জন্ম চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে অনার্স করেছেন । এখন ভৌত রসায়ন বিভাগে মাস্টার্স পড়ছেন । লেখালেখির শুরু অনলাইনেই । এটিই তার প্রথম একক উপন্যাস । তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যেতে চান, যাতে ওয়ার্ল্ড লিটারেচার এর সাথে বাংলা সাহিত্য একদিন এক কাতারে দাঁড়াতে পারে ।
বইটি সম্পর্কে একনজরে কিছু তথ্য ক্যাটাগরিঃ একক । লেখকঃ আশরাফুল সুমন । প্রকাশনীঃ আদী প্রকাশন । পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৬৩ । অধ্যায়ঃ ১৪ । মূল্যঃ ২৬০ টাকা । (গায়ের মুল্য)
খুব শান্তিপূর্ণ একটা অঞ্চল, নাম ওটিয়োসোস।এখানকার বাসিন্দারা কোন সাধারণ মানুষ নয়, সবাই জাদুকর। শান্ত, সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা, নিবিড় ঘাসে ছাওয়া বনাঞ্চল ওটিয়োসোস যেন স্বর্গরাজ্য।
আসলে দুনিয়ার ভিতর এধরনের কোন এলাকার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়, আর এটাই সত্যি। এই ওটিয়োসোস লেখকের কল্পনা। কিন্তু কি এমন ঘটল যে ওটিয়োসোস এর বাসিন্দাদের ঘুম হারাম হল? জীবনে শান্তির ব্যাঘাত ঘটল?
এলিসিয়া আর বেঞ্জামিন, দুই সদাহাস্যময় কিশোর কিশোরী। খুব ভাল বন্ধু তারা। এলিসিয়ার জন্মদিনে বেঞ্জামিন এর সাথেঘটল এক অদ্ভুত ঘটনার রহস্য সমাধান করতে গিয়ে বের হয়ে আসল এক কঠিন সত্য। গল্পের লেখকই গল্পের জগতে এক ওলট পালট সৃষ্টি করতে চাইছেন।। লেখকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বেঞ্জামিনেরা বেড়িয়ে যেতে চাইল
গল্পের বাইরের জগতে। এদিকে আবির্ভাব ঘটল এক ভয়ানক ড্রাগনের। পায়ে পায়ে বিপদ, বাঁধা, ম্যাজিকেল বাইন্ডিংস মাড়িয়ে বেঞ্জামিনেরা এগিয়ে চলল, সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন আংকেল ইভান। দেখা মিলল গ্লোসারি দাদুর, ওদের সামনে খুলে গেল এক কঠিন সত্যের দ্বার। কিন্তু নিজেরা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারলো না, কি ভয়ানক ও কঠিন বাস্তব অপেক্ষা করছে ওদের জন্য। এভাবেই কাহিনী গুলো জমে উঠেছে আশরাফুল সুমন ভাইয়ের 'ড্রাগোমির ' নামক ফ্যান্টাসি উপন্যাসে।
বইটা পড়ে পাঠক একই সাথে যেমন রোমাঞ্চকর অনুভুতি লাভ করবেন, তেমনি না হেসে পারবেন না। একই সাথে উপন্যাসের শেষ দিকে মনটা কিছু সময়ের জন্য হলেও বিষাদে ছেয়ে যাবে। সব মিলিয়ে এক অসাধারন মৌলিক ফ্যান্টাসি নভেল, আই হ্যাভ এভার রিড। আমার পড়া বেস্ট মৌলিক ফ্যান্টাসি নভেল। সবাইকে বইটি পড়ার জন্য আমন্ত্রণ রইলো।
২.৭ তারা আমি এমন রেটিং দেই না কিন্তু এই বইটা একইসাথে চমৎকার এবং বিরক্তিকর ছিল....
শুরু ও সমাপ্তি দুটোই সুন্দর ছিল...
প্লট চমৎকার...অনেকগুলি চরিত্রের কোনোটাই কম বেশি ছিল না
বিশেষ করে বলবো, শেষের ৬০পৃষ্ঠায় যেভাবে গল্পটা ধাপে ধাপে জট খুলেছে সেটা খুবই ভালো ছিল...!
বিরক্তির সবচেয়ে বড় কারণ ভাষা -_- ভাই আমি ট্রেনকে রেলগাড়ি লিখতে বলছি না কিন্তু বাংলা-ইংরেজির মিশেল চোখে লাগার মত ছিল!
দ্বিতীয়ত, বর্ণনা কোথাও কোথাও অতিরিক্ত লেগেছে, এটার কারণ হতে পারে যেহেতু অনেকরকমের মিথ এসেছে এখানে, লেখক বুঝিয়ে দেয়াটা ভালো মনে করেছেন কিন্তু সেটা কোথাও একটু বেশিই ছিল
কী জানি, অদ্ভুত বই একটা....কোথাও খুব ভালো লেগেছে আবার পরের অংশ খাপছাড়া লেগেছে :/
বি.দ্র: সবার নাম একরকম, আনিকার নাম আরেকরকম, এটার কারণ কী? আনিকার মত আরো দুইজন আছেন গল্পে তাদের নামও তো এমন না...!
বাংলা সাহিত্যের প্রথম পরিপূর্ণ মেটাফিকশন। অসম্ভব রকমের অদ্ভুত সুন্দর একটা বই। ফ্যান্টাসি ঘরনার বই হলেও বইটা খুব অল্প বয়সিদের জন্য মনে হয় না, সম্ভবত। কারন কাহিনী খুব সরল আর মজাদার হলেও ১১ অধ্যায়ে যেখানে মূল গল্পটার জটিলতা ব্যাখ্যা করা হয়, সেটা মাথায় ঢুকাতে হতে পরিণত পাঠক হতে হবে আপনাকে। বইটা পড়ে আমি একরকম মুগ্ধ। একদম নিখুঁত আর জটিল কাহিনীর সাথে লেখকের অসম্ভব রকমের স্মার্ট উপস্থাপন ভঙ্গী। লেখকের ভক্ত হয়ে গেলাম।
বইটি একেবারে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়েছি, বাসায় শেষ করতে পারিনি বলে এটা ব্যাগে করে বহন করে নিয়েছি অতঃপর সুযোগ পেলেই বাইরে পরিবেশ এর চিন্তা না করে পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম। একটা বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলাম ওখানেও এটা আমি পড়ি এক কোনায় বসে। সত্যিই অভাবনীয় কাহিনী এর। :)
প্রথমেই বলতে হয় ড্রাগোমিরের প্লট নিয়ে। কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে সাদামাটা মনে হলেও বইয়ের প্লটটা দারুণ লেগেছে । প্রথমেই আশরাফুল সুমনের প্রশংসা করতে হয় এরকম একটি ব্যতিক্রমী জনরাতে বই লিখে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার জন্য। পরিপূর্ণ মেটাফিকশন জীবনের প্রথম পড়ছিলাম তাই অন্যরকম একটা রোমাঞ্চ কাজ করছিল। একটা বইয়ের ভেতরে আরেকটি বই এবং সেই বইয়ের চরিত্ররা জানে যে তারা এবং তাদের জগতটা শুধুমাত্র একজন লেখেকের কল্পনার ফসল! কিন্তু সেই জগতের তথা ওটিয়োসাসের বাসিন্দাদের কাছে তাদের জগতটাই বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য এবং আমাদের জগতটাই বরং তাদের কাছে অবাস্তব ও ভুতুড়ে। বইয়ের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পরই বুঝতে পারছিলাম যে সামনে দারুণ কিছু অপেক্ষা করছে আমার জন্য। কিন্তু সামনে এগোতেই খানিকটা হতাশ হতে হয়েছে। আর এই হতাশার কারণ ছিল এক্সিকিউশন আর লেখনী। মোট ১৪টি অধ্যায়ে বইটিকে ভাগ করেছেন লেখক। আমার মনে হয়েছে লেখক বইটির উত্তেজনাকর অংশে প্রবেশ করতে এবং কাহিনীটিকে জমিয়ে তুলতে লেখক একটু বেশি সময় নিয়ে ফেলেছেন। প্রথম ১৩০ পৃষ্ঠা পার হতেই বেগ পেতে হয়েছে অনেক । প্রথম ১৩০ পৃষ্ঠা আমার মনোযোগ ধরে রাখতেও পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল। ১৩০ পৃষ্ঠার পরেই বইটি বেশ জমে উঠেছিল যেটা ২৬৩ পৃষ্ঠার স্ট্যান্ডএলোন ফ্যান্টাসির ক্ষেত্রে আরও আগেই হওয়া দরকার ছিল বলে মনে করি। ১৩০ পৃষ্ঠা পার হওয়ার পর কাহিনীও বেশ ভালো গতিতে এগিয়েছে । বিশেষ করে শেষের পাঁচটি অধ্যায় এক বসায়, এক নিঃশ্বাসে পড়েছি। লেখক বইটির অনেক জায়গায়- বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপে ও কাণ্ডকারখানায় হিউমার মেশানোর চেষ্টা করেছেন যা কিছু ক্ষেত্রে আমার ভালো লাগলেও কিছু ক্ষেত্রে লেইম মনে হয়েছে। মূল প্লটের সাথে কিছু মিথকে বেশ ভালমতো ব্লেন্ড করেছেন লেখক। মিথগুলি নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বইটি পড়ার পর।
আগেই ধারণা দিয়েছি যে লেখনী আমার কাছে তেমন ভালো লাগেনি। প্রথম ১৩০ পৃষ্ঠায় যেমন কাহিনীটা জমছিল না তেমনি লেখকের বর্ণনাভঙ্গিও প্রথম ১৩০-৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বেশ দুর্বল মনে হয়েছে। কিন্তু চমকপ্���দ ব্যপারটি হলো যে শেষ ১৩০ পৃষ্ঠায় বর্ণনায় দুর্বলতাগুলি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিলেন লেখক। প্রথম দিকে লেখনীতে যে জড়তাটা ছিল তা অনেকটাই উধাও হয়েছিল শেষার্ধে। কিন্তু বর্ণনাভঙ্গির যেই ব্যাপারটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিরক্তিকর লেগেছে তা হলো অহেতুক অতিরিক্ত ইংরেজি শব্দের ব্যবহার। সংলাপে ব্যপারটা মানা গেলেও বর্ণনায় এত অহেতুক ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করার কোন দরকারই ছিল না। বিষয়টা ভালোই দৃষ্টিকটু লেগেছে আমার কাছে। এমনকি বইটির প্রথম দুই পৃষ্ঠায় যখন লেখক ফোর্থ ওয়াল ভঙ্গ করে সরাসরি পাঠকদের সাথে কথা বলছিলেন তখনও অযথা ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করছিলেন। আর কবিতা আকারের ক্লুগুলোও যদি বাংলায় লিখতেন তাহলে ব্যপারটা আরও অনেক আকর্ষণীয় ও সুন্দর হতো বলেই আমার ধারণা। একশন সিকুয়েন্সগুলির বর্ণনা খুব একটা ভালো লাগেনি, কেমন জানি প্রাণহীন লেগেছে। আর বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু সংলাপ আমার কাছে অনেক বেখাপ্পা লেগেছে। একটা উদাহরণ দেই- ( *......* এর ভেতরের অংশ বই থেকে নেওয়া) *“কোথাও যাচ্ছ নাকি?” “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই! আমাদের যাওয়ার রাস্তাটা তো এদিকেই, ড্রাগোমির। তুমি ওটা ব্লক করে দাঁড়িয়ে আছো, স্টুপিড। সরে দাঁড়াও,” ক্যাজুয়ালি বলল এলিসিয়া।*
ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং ফ্যান্টাসি বইয়ের অনেক গুরুত্বপূরণ একটা অংশ এবং ড্রাগোমির বইতে লেখক এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটিকে বেশ ভালভাবেই সামলেছেন। লেখক ওটিয়োসাসকে মুনশিয়ানার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন বইয়ের পাতায়। ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং বেশ সফল বলা চলে কারণ আমার ওটিয়োসাসের বিভিন্ন জায়গাকে কল্পনা করতে কষ্ট হচ্ছিল না। জায়গাগুলোর নামকরণও যথার্থ মনে হয়েছে।
ড্রাগোমির বইটিতে চরিত্রায়ন মোটামুটি লেগেছে। বেখাপ্পা সংলাপের কারণেই কিছু চরিত্রের প্রতি ভালোলাগাটা কমে গিয়েছিল এবং তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল এলিসিয়া। বেনজামিনের চরিত্রটিকে মোটামুটি লেগেছে। আঙ্কেল ইভানের চরিত্রটি বেশ মজার ছিল এবং মনে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছে। আনিকার চরিত্রটিও আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। এই চরিত্রগুলির জন্য আমাকে ভাবাতে, তাদের জন্য দুশ্চিন্তা করাতে সক্ষম হয়েছেন লেখক। ম্যানিটো, গ্লোসারি দাদু, হেনা ও পাজি অ্যালকাইরিগুলিকেও ভালো লেগেছে। এই চরিত্রগুলির উপ্সথিতি খুব বেশি না হলেও বইয়ে একটি আলাদা মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়েছে । ইনসিডিয়েটর , ক্রাপনিক , কাপ্পা ও এরিয়াস এদেরকে ঘিরে যতটুকু বর্ণনাই ছিল, উপভোগ করেছি। গল্পের মূল ভিলেন বিশালদেহী ড্রাগোমিরকেও ভালো লেগেছে।
ড্রাগোমির বইয়ের ফিনিশিং এক কথায় দারুণ ছিল। ফিনশিংয়ে কোন তারাহুড়োর ছাপ ছিল না । সবকিছুকে যেভাবে শেষে এসে মিলিয়েছেন লেখক তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। শেষের টুইস্টগুলিও যথেষ্ট চমকপ্রদক ছিল এবং লেখক টুইস্টগুলি ডেলিভারিও করেছেন সুন্দরভাবে। ড্রাগোমির বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন সমসাময়িক থ্রিলার লেখক নাজিম উদ দোউলা। প্রচ্ছদ আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগেনি। প্রিন্টিং মিস্টেক খুব বেশি চোখে পড়েনি বইতে। বইটিতে ব্যবহৃত বেশ কিছু টার্ম , ম্যাজিকাল আর্টফেক্ট, ডার্ক ক্রিয়েচার, দানব , ডিমন এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের বিবরণ দেওয়া আছে একদম শেষে। ব্যপারটা সুন্দর লেগেছে এবং বিবরণগুলোও ভালো ছিল।
সর্বোপরি, ড্রাগোমির বইটি আমার মোটামুটি লেগেছে। ড্রাগোমির বইটির কনসেপ্ট নিঃসন্দেহে দারুণ এবং এরকম কিছু আমি আগে কখনো পড়িনি। বর্ণনাভঙ্গি , সংলাপ, চরিত্রায়ন এগুলোর প্রতি আরও যত্নশীল হলে বইটি নিঃসন্দেহে আমার কাছ থেকে পাঁচ তারা আদায় করে নিতে পারত। এগুলির কারণে বইটি পুরোপুরি উপভোগ করা যায়নি । কিন্তু নিজের প্রথম বইতেই ব্যতিক্রমি জনরায় এতো সুন্দর কনসেপ্টে লিখেছেন বলে এসব বিষয়ে লেখককে কিছুটা ছাড় দেওয়াই যায়। এই বইটির পরে লেখকের আরও চারটি মৌলিক বই বের হয়ে গেছে ইতোমধ্যে এবং আমার বিশ্বাস উনার লেখনীও প্রতিটি বইতেই আরও উন্নত হয়েছে। এরকম বিশ্বাস রাখার কারণ আশরাফুল সুমন যে একজন প্রমিজিং লেখক তার ছাপ তার প্রথম বইতেই পেয়েছি আমি। ভবিষ্যতে লেখকের বাকি বইগুলো বিশেষ করে কুয়াশিয়া আর মাদার ন্যাচার পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। লেখকের জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।
ফ্যান্টাসিপ্রিয় এক লেখক লিখে চলেছেন একখানা ফ্যান্টাসি ঘরানার বই। সেই বইয়ের আবার নিজস্ব একটা জগৎ আছে। আর আছে অসংখ্য চরিত্র! চরিত্ররা আবার জীবন্ত! আর তাই লেখকের কাছে যা 'সাহিত্য' মাত্র, সেটাই আবার ওইসব চরিত্রদের কাছে 'বেঁচে থাকার আশ্রয়'!
এবার চলুন বইয়ের জগৎটা সম্পর্কে খানিকটা ধারণা নেয়া যাক।
শান্তির নগরী ওটিয়োসাস। এ তল্লাটে কোনো যুদ্ধ-বিদ্রোহ নেই। নেই কোনো খুনোখুনি! ওটিয়োসাসের উইজার্ড অধিবাসীদের মধ্যে টুকটাক ঝগড়া-বিবাদ যে লাগে না - তা নয়! তবে মীমাংসাও হয়ে যায় খুবই শান্তিপূর্ণভাবে। কেননা ওটিয়োসাসের অধিবাসীরা শান্তিপ্রিয়, আক্ষরিক অর্থেই!
উইলোবি পরিবারকে বলা যেতে পারে ওটিয়োসাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক উইজার্ড পরিবার। এবং উইলোবিরা তিন ভাই। অ্যালেক্স উইলোবি, জর্জ উইলোবি আর ইভান উইলোবি। অ্যালেক্সের চৌদ্দ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েটার নাম এলিসিয়া। আর জর্জের ছেলে বেনজামিন। বেনজামিনের অবশ্য আরও একটা পরিচয় রয়েছে - সে এলিসিয়ার কাজিন।
বেনজামিনের চোখের সামনে হঠাৎ হঠাৎ বেশ কিছু ভিশনারি ইমেইজ ভেসে ওঠে। সেসময় একটি সমতল ভূমিকে নদীতে রূপান্তরিত হতে দেখে সে। নদীটা ছুটে চলে অবিরাম। আর তারপর? তারপর কেমন করে যেন সেই নদীর আশেপাশে সবুজের বিস্ফোরণ দেখতে পায় বেনজামিন। অর্থাৎ ওর কল্পনার মানসপটে আবির্ভূত হয় একটা বন। ওদিকে নদীটা কিন্তু ছুটছেই! ছুটছে তো ছুটছেই! আরও কিছুক্ষণ পর, নদীটার খানিকটা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের মতো আগ্নেয়গিরিটাকে দৃশ্যমান হতে দেখে বেনজামিন। মৃত, কালো এবং আঁধারে নিমজ্জিত একটা ভয়াবহ রকমের আগ্নেয়গিরি! সেটার মুখ থেক গনগনে লাল লাভা বেরিয়ে আসতে শুরু করে! ঘটনার আকস্মিকতায়, লাভার লাল বর্ণটা অগ্নিকুণ্ডের মতো অনুভূত হয় বেনজামিনের কাছে...এক পর্যায়ে দুইখানা বড় বড় লাল বর্ণের অগ্নিকুণ্ড দেখতে পায় সে...এবং কেমন করে যেন বেনজামিন বুঝতে পারে, ওগুলো আসলে অগ্নিকুণ্ড ছিল না! ওগুলো ছিল এক দানবের বীভৎস দুই চোখ! কিন্তু কার চোখ ছিল ওগুলো?
প্রশ্ন হচ্ছে, বেনজামিনের ভিশনারি ইমেইজগুলো কি শুধুই কল্পনা? নাকি ভবিষ্যৎ দর্শনের দুর্লভ একটা ক্ষমতাও ওর আছে? কিন্তু বেনজামিনের তো ভবিষ্যৎ দেখার কথা নয়! কেননা ওটিয়োসাসের গল্পটা লিখে চলেছেন ফ্যান্টাসিপ্রিয় এক লেখক। আর বেনজামিন তো সেই লেখকের সৃষ্ট একটা চরিত্র ছাড়া আর কিছুই নয়! অর্থাৎ ঘুরে ফিরে প্রশ্ন কিন্তু একটাই, বেনজামিনের ভিশনারি ইমেইজগুলোর অর্থ কী?
ব্যাপার হচ্ছে, ওইসব ভিশন দেখার কারণে শারীরিক এবং মানসিকভাবে একটু একটু করে দুর্বল হয়ে পড়ছিল বেনজামিন। কাজেই ভিশনারি ইমেইজগুলোর প্রকৃত অর্থটা জানা ওর জন্য খুব প্রয়োজনীয় হয়ে যায়। এবং এরই লক্ষ্যে, শুরু হয়ে যায় বেনজামিনের অ্যাডভেঞ্চার! আর এই অ্যাডভেঞ্চারে ওর পাশে এসে দাঁড়ায় কাজিন এলিসিয়া এবং ইভান আঙ্কেল।
এরপরের ঘটনা একেবারে দুর্দান্ত! প্রাচীন ওটিয়োসাসের অজানা সব অধ্যায় উন্মোচিত হতে শুরু করে একের পর এক। আগে যেগুলোকে স্রেফ মিথ বলে হেসে উড়িয়ে দিত বেনজামিনরা, সেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে জোরালো প্রমাণ পেতে শুরু করে ওরা। বেনজামিনের ভিশনারি ইমেইজগুলোর প্রকৃত অর্থটাও জানা যায়। আর জানা যায়...ওদের বইয়ের লেখক সম্পর্কে অপ্রীতিকর এক সত্য।
লেখক মহাশয় নাকি ওটিয়োসাসের বইয়ের কাহিনীকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে এক দানব সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করছেন! বলাই বাহুল্য! লেখকের এই দুর্বুদ্ধির কল্যাণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে ওটিয়োসাস! আর তাই নিজেদের স্রষ্টার এই ভয়াবহ উদ্যোগকে শ্রদ্ধা জানাতে পারে না ওটিয়োসাসের উইজার্ড অধিবাসীরা। ফলে তারা গ্রহণ করে এক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত! লেখককে হত্যা করার সিদ্ধান্ত!
এবং লেখককে হত্যা করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসে বেনজামিন, এলিসিয়া, ইভান আঙ্কেল, গভর্ণরের প্রধান উপদেষ্টা আনিকা জুলফিকারসহ ওটিয়োসাসের সকল উইজার্ড অধিবাসীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি লেখককে হত্যা করতে সক্ষম হয় ওরা? তাছাড়া ওটিয়োসাসের শেষ পরিণতিটাই বা কী?
নতুন কিছু জানতে সবসময়ই খুব ভালো লাগে আমার।
তাছাড়া আমার বই পড়ার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, এমন কিছু জানব যা আগে কখনো দেখিনি বা শুনিনি। এইদিক দিয়ে ড্রাগোমির ফুল মার্কস পেয়ে গেছে। কেননা 'মেটাফিকশান' ব্যাপারটা আমার কাছে একেবারেই নতুন ছিল। কাজেই লেখকের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ থাকছে আমার পক্ষ থেকে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ফ্যান্টাসির সাথে নতুনত্বকে মিলিয়ে মিশিয়ে সার্ভ করার ব্যাপারটাকে অব্যাহত রাখবেন তিনি।
ʼʼমনোযোগই সকল ক্ষমতার উৎসʼʼ
ড্রাগোমির পড়তে গিয়ে, এই মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারটা অনেকবার চোখ পড়েছে আমার। এটা কি লেখকের তরফ থেকে আমার জন্য কোনো ক্লু ছিল?
কারণ ড্রাগোমিরের প্রথম ছয়-সাত চ্যাপ্টার পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখা ছিল আমার জন্য খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। কাহিনীর গতি ভীষণ রকম স্লো মনে হয়েছিল তখন। অবশ্য...এরপর গল্পে যখন ওরাকল হেনার আগমন ঘটে, তখন দুর্দান্ত একটা টার্ন নেয় কাহিনীর গতি।
এবং হেনার ধাঁধাগুলো সলভ করা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে একটা ধাঁধার কথা না বললেই নয়!
ʼʼYou will need a key to find the keyʼʼ
কিন্তু একটা ব্যাপার! হেনার বেশিরভাগ ধাঁধাই ছিল ইংরেজিতে। তার মানে কি এই দাঁড়ায় যে, ওটিয়োসাসের প্রাচীন ভাষা ইংরেজি? তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। ড্রাগোমিরে একজনকে বাদ দিয়ে প্রায় সবগুলো চরিত্রের নাম দেয়া হয়েছে ইংরেজিতে। ব্যতিক্রমী চরিত্রটিই আবার আমার সবচেয়ে পছন্দের, আনিকা জুলফিকার।
আনিকার নাম বাংলায় দেয়ার কারণখানা উদ্ধার করতে পারলাম না।
অবশ্য পরবর্তী সিক্যুয়ালের হিন্টও পেয়েছি ড্রাগোমিরে। সেটা নিশ্চয়ই আরও দারুণ কিছু হবে! লেখকের জন্য শুভকামনা রইল। বাংলার ফ্যান্টাসি এগিয়ে যাক।
মেটাফিকশন কি জানার জন্য বইটা পড়া। যেটুকু বুঝলাম সোজা বাংলায় গল্পের মাঝে যখন লেখক আপনাকে জোর করে গল্প থেকে টেনে বারবার মনে করিয়ে দিবেন যে এটা গল্প, সেটাই মেটাফিকশন। আর এই গল্পে লেখক আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সেটা হল গল্পের চরিত্ররা জানে তারা গল্পের মাঝে আছে। এটা থেকে তৈরি হয়েছে এক ফ্যান্টাসি জগতের। গল্পের থিমটা মোটামুটি আকর্ষণীয়। তবে এটা লেখকের লেখক জীবনের প্রথম দিকের বলে হয়তো অনেক কিছুই একটু গোলমেলে ছিল। ফ্যান্টাসি হাতে গোনা কয়েকটা পড়েছি। কাজেই জানিনা বাকিগুলো কেমন। কিন্তু গল্পের অনেক স্পেল, প্রাণির বিবরণ অনেক কিছুই আমার হ্যারি পটার আর লর্ড অব দ্যা রিংস এর মত মনে হয়েছে। শুরুতে কিছু পরিচিত বিদেশি শব্দের বানান ভিন্ন হওয়াতে বিরক্ত লেগেছে। যেমন বেবিসিটিং পড়ে অভ্যস্ত, কিন্তু বইতে লেখা ব্যাবিসিটিং সব জায়গায়।
শেষে এসে একবারে এত এত মিথ ঢেলে না দিয়ে আরো আগে থেকে দিলে ব্যাপারটা বেশি বোধগম্য হত।গল্পের কাহিনীটা ভাল ছিল। তবে আরো অনেক ভাল করা যেত।
প্রচ্ছদঃ বইটার এই মেটাফিকশন আর ফ্ল্যাপ এর লেখা পড়েই কেনা। কিন্তু এতদিন হাতে নিয়েও রেখে দিয়েছি প্রচ্ছদটা দেখে। প্রচ্ছদটা দেখে অতিরিক্তই চাইল্ডিশ মনে হয়েছে।
Very weird. Magical setting but still unpredictable. Surrealistic enjoyment. World-building is praiseworthy. Characters are exceptionally detailed and relatable. Could have gone in so many different directions but I liked the way things ended and were explained. Wanted more from the last chapter - what, I'm not sure. I would be on the lookout for metafictions that bring out a feel similar to this book from now on, I think.
গল্পের শুরু ওটিয়োসাস (উইজার্ডদের শহর) শহরের মনোরোম বর্ণনা এবং একটি বাড়ির বার্থডে পার্টির মধ্য দিয়ে। মূলত শহরটি একটি বইয়ের সৃষ্টি। আর সেই বইটির লেখকের অসাধারণ লেখনীর বলে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে বইয়ে। অর্থাৎ বইয়ে বর্ণনাকৃত প্রত্যেকটি চরিত্রই জীবন্ত! অবাক হবার কিছু নেই। ওয়েট,গল্পের টুইস্ট এখানেই শেষ নয়! আর সেই বার্থডে পার্টির মধ্যদিয়ে গল্পের মূল দু'টি চরিত্র উইলোবি কাজিনস্,বেনজামিন ও এলিসিয়ার দেখা পাওয়া যায় প্রথমবারের মত। একইসাথে প্রথমবারের মত বেনজামিনের একটা অত্যাশ্চর্য ভিশানের কথাও জানা যায়! আর এরপরেই পরিচয় পাওয়া গেল আংকেল ইভানের। আপাত দৃষ্টিতে চরিত্রটিকে মূলত ছন্নছাড়া,কমেডিয়ান মনে হলেও ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে একজন দ্বায়িত্বশীল এবং যত্নবান আংকেলের পরিচয়। আংকেল ইভানের কমেডি আর উইলোবি কাজিনদের দুষ্টুমি যে কারো মুখে হাসি এনে দিতে বাধ্য।
গল্পের মূল আর্কষণ শুরু হয় বেনজামিনের ভিশানের রহস্যভেদ করতে গিয়ে। আর এভাবেই একে একে চলে আসে কিছু অসাধারণ ক্রিয়চারের পরিচয় এবং এদের দ্বায়িত্ব। যাদের মধ্যে মেনিটোকে আমার অসাধারণ লেগেছে। মেনিটোর উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব পালনের নিষ্ঠা ও সততা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। একইসাথে মেনিটোর নিঃসঙ্গতার কষ্ট মন ছুঁয়ে গেছে। গল্পে নতুন মোড় আসে বেনজামিনের ভিশানের রহস্যন্মোচনের দ্বারা। এ অংশে একজন অসম সাহসী আর অসাধারণ উইজার্ড ওয়ারিয়র আনিকার আগমন ঘটে। গল্পে নতুন টুইস্ট তৈরি হয়,প্রধান খল চরিত্র তথা 'ড্রাগোমির' এর আগমনে। এভাবেই শুরু হয় সৃষ্টি আর ধ্বংসের চিরাচরিত যুদ্ধ! বইয়ের চরিত্ররা তখন নিজেদের বাঁচাতে এতোটাই মরিয়া হয়ে ওঠে যে,ওরা বই থেকে বেরুনোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে! উদ্দেশ্য একটাই,ড্রাগোমিরকে থামাতে লেখককে অনুরোধ করা কিংবা প্রয়োজনবোধে লেখককে হত্যা করা!
ওরাকল হেনার সৌন্দর্য্য আর গ্লোসারি দাদুকে খুঁজে পেতে দেয়া ধাঁধাটি সত্যিই চমৎকার ছিলো। আর গ্লোসারি দাদুর নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা বেশ জটিল হলেও দারুন লেগেছে।
ড্রাগোমিরের আর্মিরা তার নির্দেশে শহরের সমস্ত উইজার্ডদের বাধ্য করে সোনার খনি খুঁড়তে। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল,ড্রাগনদের কমন একটি বৈশিষ্ট্য হলো দামি জিনিস,স্বর্ণ,দামি পাথর ইত্যাদির প্রতি লোভ। আর ড্রাগোমিরও এর উর্ধ্বে নয়! সুতরাং সে অত্যন্ত চতুরতার সাথে ডার্ক ওটিয়োসাস (মূল ওটিয়োসাসের মাটির নিচে অবস্থিত অন্ধকার জগত) এর ক্রিয়চারদের,ওটিয়োসাসে নিয়ে আসে। আর এরাই মূলত তার হয়ে ওটিয়োসাস-বাসীদের ওপর খবরদারি ফলায়।
একে একে আংকেল ইভানের মেনিটোর সাথে যুদ্ধ,এলিসিয়ার ডার্ক ওটিয়োসাসের ক্রিয়চারদের সাথে যুদ্ধ আর আনিকার ��ই থেকে বেরুনোর আপ্রাণ প্রচেষ্টা অনেক বেশি এ্যডভেঞ্চারাস ছিল! ব্যাপারটা এমন,যা ভাবছি তার উল্টো হচ্ছে সব। পরিশেষে ড্রাগোমির আর বেনজামিনের যুদ্ধ,কিছু আনটোল্ড সিক্রেট আর শেষের টুইস্টগুলো এক কথায় এক্সপেক্টেশানের থেকে বেশিই অসাধারণ ছিল! লেখকের বর্ণনাশৈলী এতোটাই প্রাণবন্ত যে আমার মনে হয়েছে,আমি কোন ফ্যান্টাসি মুভি দেখছি! এক কথায় সমস্তটা আমার কাছে "ওয়াও!" টাইপ লেগেছে। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়েছি পুরো বইটা। 'হ্যারি পটার' সিরিজের বই পড়ার পরে,আমার মনে হত সত্যিই 'হোগওয়ার্টস' এক্সিস্ট করে। আর ড্রাগোমির পড়েও আমার মনে প্রায় সেইম একটা ফিলিংস কাজ করেছে। সত্যি বলতে কি,আমি গল্পটা অসম্ভব রকমের এনজয় করেছি।
রেটিং-4.5/5 (যদিও কোন গল্পকেই রেটিং দেবার যোগ্য এখনও হইনি। তবুও যেমন লেগেছে, তেমনটাই দিলাম)।
আমার কৌতুহল বেড়ে যায় ঠিক এই জায়গাটাতেই যে গল্পের চরিত্ররা ঠিক কিভাবে বই থেকে বেরুবে আর কিভাবেই বা লেখককে হত্যা করবে? আমি ফ্যান্টাসি গল্প পড়লেও এ ধরনের গল্প কখনো পড়িনি। যদিও আমার ফ্যান্টাসি গল্প পড়া শুরু ‘আশরাফুল সুমন’ এর লেখা থেকে।
যাই হোক, এবার মূল কথায় আসি। এই গল্পের কনসেপ্ট একদম-ই অন্যরকম, যেখানে গল্পের চরিত্ররা জীবন্ত। আর মজার বিষয় হল, তারা এটা ভালভাবেই জানে।
আমার সবকটা চরিত্রকেই ভাল লেগেছে। তবে এলিসিয়া আর বেঞ্জামিন এর খুনসুটি মাখা দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক, যেখানে তারা পরস্পরকে হেনস্থা করতে ছাড়ে না আবার বিপদে পাশে থাকতেও বদ্ধপরিকর। আর এখানে আঙ্কল ইভান হলেন মূল ফান-ফ্যাক্টর, যার কার্যকলাপ মানুষকে হাসাতে বাধ্য। আবার একই সাথে তিনি অসাধারণ ম্যাজিকেল দক্ষতারও পরিচয় দিয়েছেন এই গল্পে। ওটিয়োসাসের ওরাকল অপরূপা সুন্দরী হেনার সাথে আঙ্কল ইভানের ফ্লার্ট আমার বেশ লেগেছে। গল্পের সহজ-সরল অথচ দানব চরিত্র মেনিটোকেও আমার ভাল লেগেছে। মেনিটোর সারল্য আমার মনে ধরেছে, সে প্রচন্ড শক্তিশালী হয়েও কতটা অসহায়, কতটা একঘেয়ে তার জীবন। আর এই একঘেয়েমী জীবনে বৈচিত্র্যের স্বাদ এনেছিল আঙ্কল ইভান টিম।
ইচ এন্ড এভরি ফাইটিং সিকোয়েন্স অফ দিস স্টোরি ইজ অসাম। তবে অ্যালকাইরীগুলোকে অনেক কিউট লেগেছে। যখন এলিসিয়া ওদের মেরে ফেলছিল তখন একটু খারাপ লেগেছে। আর ক্রাপনিক ও এলিসিয়ার ফাইটের অংশটুকু পড়ার সময় একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম।
লেখক যেভাবে ক্রাপনিক এর চরিত্র যেভাবে প্রেজেন্ট করেছেন সেটা সত্যিই ভয়ের। আর লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, আনিকা জুলফিকার যেভাবে দক্ষতার সাথে লড়াই চালিয়ে ওটিয়োসাসকে রক্ষা করেছে তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। আনিকার জার্নিটা অসাধারণ।
গল্পের মধ্যে কোন একঘেয়েমী নেই। গল্প নিজস্ব গতিতে সুন্দরভাবে এগিয়েছে। গল্পের ডিটেইলিং খুব সুন্দর। লেখক প্রত্যেকটা টপিককে সুন্দরভাবে ক্লিয়ার করেছেন, ফলে পাঠকদের বুঝতে একটুও অসুবিধা হবে না। আর গল্পের টান এমন যে, যতক্ষণ না শেষ করছেন শান্তি পাবেন না। আমি ভেবেছি এটুকু পড়ে নিই, বাকি চ্যাপ্টার কাল পড়ব। এই করতে করতে প্রথম দিন ভোর ৪.০০টা অব্দি পড়েছি।
গল্পের বাচনভঙ্গী এতোটা সাবলীল যে পড়তে পড়তে আমিও যেন ওটিয়োসাসের বাসিন্দা হয়ে গেছিলাম। গল্পের চরিত্রের সাথে কখনো হেসেছি, কখনো মন খারাপ করেছি আবার কখনো তালি দিয়ে উঠেছি! গল্পের পুরোটা জুড়েই টান টান উত্তেজনা। আর সমাধানগুলো যা যা ভেবেছি সব ছিল তার একদম উল্টো! সবশেষে একটা কথা অবশ্যই বলব, যারা একটু আলাদা ধরনের গল্প পড়তে চান,এক অজানা জগতে হারাতে চান তারা ‘ড্রাগোমির’ পড়তে পারেন। অবশ্যই খুব ভাল লাগবে। এটা পিওর ফ্যান্টাসি গল্প। এই গল্পে অনেক টুইস্ট এবং টার্নস আছে যেগুলো এর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। তবে একেবার শেষে একটা ছোট্ট কিন্ত দারুণ টুইস্ট আছে যা আমার মনকে ছুঁয়ে গেছে। রিভিউ লিখতে লিখতে আমি আবার হারিয়ে গেছিলাম ওটিয়োসাস এর সেই জগতে! কল্পনার জগতে হারাতে চাইলে আপনাকেও ঘুরে আসতে হবে ওটিয়োসাস থেকে।
গত ৩ দিন আগে আশরাফুল সুমন ভাইয়ার লেখা ড্রাগোমীর পড়ে শেষ করলেও এটা সম্পর্কে লিখতে পারিনি। খেলার উত্তেজনা শেষ হলে লিখব তাই আজ লিখছি।
বইটা পড়ে সত্যি এত্ত বেশি ভাল লাগছিল যে আমি পড়া শেষ করে কিছুক্ষন হা হয়ে বসে ছিলাম। মানে শেষ দিকে এত বেশি টুইস্ট ছিল যে মাথা শুধু একটু পরপর ঘুরতাছিল।।।আর প্রতিমুহূর্তে মনে হয়ছে এরপর কি এরপর কি হবে। যখন ড্রাগনটাকে মেরে ফেলতে লাগছিল বেনজামিন তখন নিজেই ভাবছিলাম বই এখনো অনেকটা বাকি। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যাকে নিয়ে কাহিনী তাকে মেরে ফেললে থাকবে কি আর? আর তখন মনে হয়ছে এই ড্রাগনের জন্য ড্রাগোমীর নামকরণ করা কেমন যেন মনে হচ্ছে। পরে যখন দেখলাম আসল কারণ কী, তখন অবাক না হয়ে পারলাম না।
গ্লোসারি দাদু আর বই থেকে বের হওয়ার ধাধাগুলো এক কথায় অসাধারণ। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি আপনি যখন বইটা পড়বেন তখন এই ধাধাগুলোর জায়গায় পড়ার সময় আপনি লেখকের লেখনীর প্রশংসা না করে পারবেন না। আর আপনার অবাক হওয়ার কথা নাই বা বললাম। বইটা পড়ে নিজেই নিজের উপর রাগ হচ্ছিল ২ কারণে।
১/ দেরী করে শেষ করার জন্য। ২/ প্রথমে বইমেলা থেকে বইটা না কিনার জন্য।
আসলে আমি জানতাম না বইটা সম্পর্কে তাই প্রথমে সংগ্রহ করিনি। পরে একটা ফ্রেন্ডের থেকে শুনে এবং নাজিমউদ্দোলা ভাইয়া, কেপি ভাইয়া ওনাদের পোষ্ট দেখে বুঝছিলাম বইটা কতটা জোস হবে। তারপর আর দেরী করিনি।
আর কিছু বলতে চাইনা।শুধু এইটুকু বলব যদি কেউ এই বইটা সংগ্রহ না করে থাকেন তাহলে একটু কষ্ট করে সংগ্রহ করে নিয়েন। আশা করি আপনারা হতাশ হবেননা।
শুরু থেকেই খুব দারুণ কিছুর আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। লেখক খুব যত্নকরে গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছেন। এটা লেখকের প্রথমবই, এমনটা মনে হয় নি আমার কাছে। প্লট খুবই দুর্দান্ত ছিল। আগে কখনো এমন কনসেপ্টে কোন বই পড়া হয় নি। তাই আরও বেশি উপভোগ্য ছিল।
ভালো না লাগার কথা বলতে গেলে শুধু বইয়ের মধ্যাংশে একটা ফাইট ছিল। সেটা কেন জানি একটু চাইল্ডিশ মনে হয়েছে। তবে একেবারেই খারাপ নয়। হয়তো আরেকটু অন্যরকম হতে পারতো। যদি শুধু ফাইটিং অংশটাকে রেটিং দেই, তাহলে ২.৫/৩ নির্দ্বিধায় দেওয়া যায়।
আর তুলির শেষ আচড় অর্থাত বইয়ের এন্ডিংটাও ভালো লেগেছে। লেখক ওলটপালট করে ফেলেন নি।
পরিশেষে বলতে চাই যে, নতুন পুরাতন সকল পাঠকদের জন্যই এটি একটি সুখপাঠ্য বই। আর নার্নিয়া, হ্যারি পটার ফ্যানদের জন্য absolutely must read!
বাংলা ভাষায় মেটাফিকশন- শুনে প্রথমেই ধাক্কা লাগাটা অবশ্যম্ভাবী বোধ করি। এন্ড সাউন্ডস ইন্টেরেষ্টিং! ধাক্কাটা কম লাগেনি আমার ক্ষেত্রেও :) ভেবেছিলাম কে না কে লিখেছে- কিরাম লিখেছে- আশঙ্কা কাজ করছিলো ভেতরে ভেতরে। আশ্বস্ত হয়েছিলাম এক বন্ধুর মুখে লেখকের কথা জে��ে। লেখ��ের লেখনী নিয়ে পজিটিভ ফিডব্যাক পাবার পর আর দ্বিধা থাকল না। সেই বন্ধুই জোগাড় করে দিয়েছে বইটা। নিজের জন্যই কিনেছিল, এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়েছি কপিটা ওর কাছ থেকে। এন্ড নো হোয়াট, আশাহত হতে হয়নি! দ্যাট অথর ডিড আ হেল অফ আ জব! প্রথম হিসেবে বলতে গেলে ঈর্ষনীয় কাজ করে ফেলেছেন তিনি। কিছু জায়গায় একটু অদ্ভুত লাগতে পারে, বাট ইট'স কমন ইউ নো! আফটার অল ইট'স মেটাফিকশন!